সুওয়াল: আপনি যা জানতে চেয়েছেন, তার সারসংক্ষেপ হলো- আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত উনার ২য়
বর্ষ ৫ম ও ৬ষ্ঠ সংখ্যায় (বা নবম সংখ্যায়) লংমার্চ নাজায়েয বলা হয়েছে। কিন্তু মাসিক
মদীনার আগষ্ট ১৯৯৩ ঈসায়ী সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে প্রশ্নের জাওয়াবে লংমার্চকে
জায়েয বলা হয়েছে। এর মধ্যে কোনটি সত্য? আপনি আরও জানতে চান, মদীনার
সম্পাদক সাহেব লিখেছেন লংমার্চ-এ যারা মারা গেছে তারা শহীদ অথচ আমাদের উল্লেখিত
পত্রিকায় বলা হয়েছে একমাত্র দ্বীনি জেহাদে যারা মারা যায়, তারাই
শহীদ হয়। আর অন্যান্য যেমন দুর্ঘটনায়, পানিতে পড়ে, ছাদ
ধ্বসে, সন্তান হবার সময় যারা মারা যায়, তারা শহীদী দরজা পায়। তাহলে আপনার
মতো লোক কোনটি মেনে নেবে?
জাওয়াব : প্রথমে একটা কথা জেনে রাখবেন, যে কোন ফতওয়া দিতে হলে প্রথমে পবিত্র
কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ,
পবিত্র ইজমা শরীফ ও পবিত্র কিয়াস শরীফ উনাদের ভিত্তিতে দিতে
হয়, কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
هاتوا برهانكم ان كنتم صادقين.
অর্থঃ- “তোমরা
যদি সত্যবাদী হও,
তাহলে দলীল পেশ কর।” আমরা যে ফতওয়া দিয়েছি, তা পবিত্র
কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ্ শরীফ উনাদের ভিত্তিতে। আর মাসিক মদীনার সম্পাদক
সাহেব কোন দলীলই পেশ করেননি। আপনার আরও জেনে রাখা উচিত মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব
জুলাই ’৯৩ সংখ্যায় লংমার্চকে তাবুকের জেহাদের সাথে তুলনা করেছেন। অথচ তখন লংমার্চের
কোন অস্তিত্বই ছিলনা। যদি তাবুকের জেহাদকে লংমার্চ বলা হয়, তাহলে হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার তায়েফ গমন,
হিজরত ও অন্যান্য নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের
হিজরত দ্বীনি সফর ইত্যাদি প্রত্যেকটিকেই লংমার্চ বলতে হবে। আর হযরত আদম আলাইহিস
সালাম উনার আসমান থেকে জমিনে আগমন বা অবতরণকে সবচেয়ে বড় লংমার্চ হিসেবে আখ্যায়িত
করতে হবে। অর্থাৎ সমস্ত নবী রসূল আলাইহিস সালামই লংমার্চকারী।
মহান
আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ولا
تلمزرا انفسكم ولا تنابزوا بالالقاب بئس الاسم الفسوق بعد الا يمان- ومن لم يتب فا
ولئك هم الظالمون.
অর্থঃ “তোমরা
পরস্পর পরস্পরকে দোষারূপ করোনা এবং পরষ্পর পরস্পরকে অশোভনীয় লক্বব (বা উপাধি)
দ্বারা সম্বোধন করোনা। (কেননা) ঈমান আনার পর অশ্লীল নাম দ্বারা ডাকা গুণাহ্ এবং
যারা এটা হতে তওবা করলো না তারা যালেমের অন্তর্ভূক্ত।”
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক আমাদের নিজেদেরকে
দোষারোপ করতে এবং পরস্পর পরস্পরকে অশ্লীল, বিশ্রী, অশোভনীয়, খারাপ ও ইসলামী
শরীয়তবিরোধী লক্বব (বা উপাধি) দ্বারা সম্বোধন করতে নিষেধ করেছেন। আর মহান আল্লাহ পাক
তিনি এটাও বলেছেন, পবিত্র
ঈমান গ্রহণ করার পর কাউকেও কুফরী, ফাসেকী
লক্বব (উপাধি) দ্বারা সম্বোধন করা গুণাহ এবং নিকৃষ্টতম কাজ। কাজেই উম্মতকে খারাপ
নামে সম্বোধন করলে যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিস
সালাম এমনকি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে খারাপ নাম তথা লংমার্চকারী হিসেবে
সম্বোধন করলে তার কি অবস্থা হবে, তা সহজেই অনুমেয়। অথচ আকাঈদের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
الانبياء
عليهم السلام كلهم منزهون عن الغائر والكبائر ولكفر والعبائح.
অর্থঃ- সমস্ত নবী আলাইহিস
সালাম কবীরা, সগীরা, কুফরী, শেরেকী এমনকি অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র।” সেখানে কিভাবে নবী রসূল আলাইহিস
সালাম গণকে লংমার্চকারী হিসেবে সাব্যস্ত করা যেতে পারে? আর করলে
সেটা যে কত বড় গুণাহ্,
তা সহজেই উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা উপলব্ধি করা যায়। অর্থাৎ
এটা নাজায়েয ও হারাম এবং জায়গা বিশেষে কুফরী। যেখানে পাপাত্মা ইসলাম বিদ্বেষী, ইসলাম
ধ্বংসকারীদের অগ্রপথিক,
নাস্তিক্যবাদের ধারক ও বাহক মাওসেতুং লংমার্চের প্রতিষ্ঠাতা, প্রবর্তক, তার
প্রবর্তিত লংমার্চ কি করে নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম উনার সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে
পারে। এটা কখনই সম্ভব নয়। বরং এটা অজ্ঞতা, জেহালত, বাচালতা
ব্যতীত কিছুই নয় এবং যারা এ সমস্ত কথা বলে থাকে, তাদেরকে প্রলাপকারী ছাড়া কিছুই
বলা যেতে পারে না। এই জাওয়াবে মদীনার সম্পাদক সাহেব এবং আরও যারা এই ধরণের জাওয়াব
দিয়ে থাকে এবং সমমত পোষণ করে, তাদের প্রত্যেকেরই এটা মারাত্মক ভুল। আরও উল্লেখযোগ্য যে, মাসিক
মদীনার সম্পাদক সাহেব জাওয়াব দেবার পর বলেছেন, এটা আমার বিশ্বাস। কিন্তু সম্মানিত
ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে এভাবে বিনা তাহকিকে জাওয়াব দেয়া শুদ্ধ নয়।
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
عن
ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من افتى بفير علم
كان اثمه على من افتا (رواه ابو داود
“যে
ব্যক্তিকে ইলম ব্যতীত ফতওয়া দেয়া হয়েছে, অতঃপর সে তদানুযায়ী কাজ করেছে, তার
গুণাহ্ যে তাকে ফতওয়া দিয়েছে, তার উপরই পড়বে।” (আবু দাউদ শরীফ)
এরকম আরও
মাসিক মদীনার এবং অন্যান্য পত্রিকার ভুল জাওয়াবের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি আমাদের
কাছে সুওয়াল পাঠিয়ে থাকেন এবং এ সকল সুওয়ালের সঠিক উত্তর আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের
পত্রিকা মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনার ‘সুওয়াল-জাওয়াব’ বিভাগে
পর্যায়ক্রমে দিতে থাকব। এ প্রসঙ্গে
উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি মালেকী মাযহাবের ইমাম উনার
সীরতগন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে, হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রথম যেদিন ফতওয়ার
মসনদে বসলেন মুফতী হিসেবে,
ফতওয়া দেয়ার জন্য সেদিনই উনার কাছে ৪০টি মাসয়ালা বা সুওয়াল
আসলো। তিনি ১৮টার জাওয়াব দিয়েছেন এবং বাকী ২২টির জাওয়াবে বলেছেন, অর্থাৎ ‘আমি জানি
না’ যখন জাওয়াব শেষ হয়ে গেলো এবং সুওয়ালকারীগণ চলে গেলো, তখন উনার
নিকটবর্তী যে সকল বড় বড় আলেমগণ বসেছিলেন উনারা বললেন, “হে হযরত
ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি আপনি কি সত্যিই ঐ ২২টি মাসয়ালার জাওয়াব জানেন না? তখন হযরত
ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, “হ্যাঁ, আমার
জানা আছে, তবে ১৮টি মাসয়ালায় আমার পূর্ণ তাহকীক আছে, তাই জাওয়াব দিয়েছি, আর বাকী
২২টি মাসয়ালায় পূর্ণ তাহ্কীক নেই, হতে পারে বর্তমানে ২২টি মাসয়ালা সম্বন্ধে আমার যে ফয়সালা
আছে পূর্ণ তাহকীকের পরে তার ব্যতীক্রমও হতে পারে। এই লোকগুলি অনেক দূর থেকে প্রায়
৬ মাসের রাস্তা অতিক্রম করে আমার কাছে এসেছে মাসয়ালা জানার জন্য। এখন যদি আমি বিনা
তাহকীকে তার জাওয়াব দিয়ে দেই যা পূর্ণ শুদ্ধ নয়, তবে তার ভিত্তিতে তারা আমল শুরু
করবে, আর পরে যখন আমার পূর্ণ তাহ্কীক হবে এবং তা যদি বর্তমান ফয়সালার ব্যতীক্রম
ফয়সালা হয়, তাহলে তাদেরকে কে এই ফয়সালার বিশুদ্ধ বা পূর্ণ তাহকীক সম্বলিত মতটি জানাবে? যেহেতু
আমি তাদের বিস্তারিত পরিচয় বা ঠিকানা জানি না। আর এজন্য হয়ত আমাকে মহান আল্লাহ পাক
উনার কাছে জওয়াবদিহি ও পাকড়াও হতে হবে। কেননা মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক বলেছেন,
فاسئلوا اهل الذكر انكنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “যদি
তোমরা না জান, তাহলে যারা জানেন ও অভিজ্ঞ, তাদেরকে জিজ্ঞেস করে নাও।” সেজন্য আমি তাদেরকে বলেছি আমি
জানি না। অর্থাৎ আমার পূর্ণ তাহ্কীক নেই। যাতে যার পূর্ণ তাহকীক আছে, তার কাছ
থেকে জেনে নাও। কাজেই কোন মাসয়ালাই পূর্ণ তাহ্কীক ছাড়া বলা জায়েয নেই বরং হারাম।
এর উপরই আমাদের, মাসিক মদীনার সম্পাদক সাহেব ও সকল মুসলমানের চলা উচিত। কে শহীদ বা কে শহীদ নয়, এটা তার
নেক নিয়ত ও নেক আমলের উপর ফয়সালা এবং মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক তিনিই সে বিষয়ে পূর্ণ
ওয়াকিবহাল। জেনে রাখা দরকার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আছে যে, একবার
একজন ছাহাবী আলাইহিস সালাম মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, “ইয়া
রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি জেহাদে যোগদান করে জেহাদের ফযীলত
লাভ করতে চাই এবং গণীমতের মালও হাছিল করতে চাই, এটা কি শুদ্ধ হবে?” তখন মহান
আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন,
“তুমি যদি গনীমতের মালের আশায় জেহাদ কর, তাহলে
জেহাদের ফযীলত হাসিল করতে পারবে না।”
কাজেই এ পবিত্র
হাদীছ শরীফ দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যায়, একমাত্র
জেহাদের নিয়ত থাকলেই জেহাদের ফযীলত হাসিল করা যায়। জেহাদের সাথে অন্য কোন নিয়ত
মিশ্রিত করলে জেহাদের ফযিলত পাওয়া যায় না। আরও পবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ আছে, এক
জেহাদে এক বিধর্মী একজন ছাহাবীর সম্মুখে কলেমা শরীফ পাঠ করেছিল। তথাপি সেই সাহাবী
তাকে কতল করেছিলেন। এ সংবাদ যখন নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট
পৌঁছাল, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আমি
তোমার থেকে এ বিষয়ে জুদা,
কেননা তুমি একজন মুসলমানকে হত্যা করেছ।” তখন সেই ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই ব্যক্তি তো ভয়ে কলেমা শরীফ পাঠ করেছে। তখন নূরে মুজসাসমা, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তুমি কি তার অন্তর চিরে দেখেছিলে?” কেননা
ফতওয়া জাহিরের উপর বাতিনের উপর নয়। আরও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে, এক
জিহাদে এক ব্যক্তি খুব বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করছিল এবং কাফিরদেরকে বিপর্যদুস্ত
করছিল। তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা তার প্রশংসা
করলেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “এই লোক
জাহান্নামী।” তখন একজন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ঐ লোককে অনুসরণ করতে
লাগলেন এই তত্ত্ব লাভ করার জন্য যে, কেন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে জাহান্নামী
বললেন।
কিছুক্ষণ
পর ছাহাবী দেখলেন,
ঐ ব্যক্তি আহত হয়ে ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে আত্মহত্যা করলো।
তখন বুঝতে পারলেন মহান আল্লাহ পাক উনার
রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথার হাক্বীকত।
যেহেতু
মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জ্ঞান দিয়েছেন, তাই নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানতেন যে, সেই লোক আত্মহত্যা করবে এবং তা
পূর্বে বলে দিয়েছিলেন। এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, জিহাদে
শরীক হলেই শহীদ হওয়া যায় না। কারণ অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা
হয়েছে,
انما الا عمال با لخواتم.
অর্থঃ “শেষ
আমলের উপরই ফয়সালা।”
লংমার্চ
শব্দ ব্যবহার করাই নাজায়েয। যা আমরা পূর্বেই দলীল দ্বারা প্রমাণ করেছি এবং
উদাহরণস্বরূপ আরও উল্লেখ্য যে, মাংস বলাও জায়েয নেই, কারণ হিন্দুরা গরুকে মা বলে এবং
তার গোশ্তগুলিকে অংশ হিসেবে মাংস বলে। আরও যেমন- বিশ্ব ব্রহ্মান্ড শব্দ ব্যবহার
করা জায়েয নেই। কারণ,
হিন্দুরা মনে করে বিশ্ব ব্রহ্মের ডিম বা আন্ডা। তাই তারা
বিশ্ব শব্দের সাথে ব্রহ্মান্ড শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। অথচ ব্রহ্ম হলো হিন্দুদের
দেবতার নাম। কাজেই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড শব্দটা ব্যবহার করা জায়েয নেই। আবার হিন্দুরা
গান্ধির নামের সাথে মহাত্মা শব্দ ব্যবহার করে থাকে। কেননা যার আত্মা মহান, তাকে
মহাত্মা বলা হয়। আর যেহেতু গান্ধির আত্মাকে তারা মহান মনে করে থাকে, তাই তার
নামের আগে তারা মহাত্মা শব্দটা ব্যবহার করে থাকে যা ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে
নাজায়েয। কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন,
ان شر الدواب عند الله الذين كفروا.
অর্থঃ- “নিশ্চয়ই
যারা কাফির, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট
নিকৃষ্ট প্রাণী।”
(পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)
কাজেই কোন কাফির বা বিধর্মীকে মহাত্মা বলা জায়েয নেই। এ
প্রকার আরও অনেক শব্দ রয়েছে, যা ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে ব্যবহার করা জায়েয নেই। কাজেই
কেউ যদি গরুকে মা মনে করে তার গোশতকে মাংস বলে, বিশ্বকে ব্রহ্মের আন্ডা মনে করে
বিশ্বব্রহ্মান্ড বলে,
কাফেরদের আত্মাকে মহান মনে করে তাদেরকে মহাত্মা বলে, তাহলে
সেটা আকীদাগত দিক থেকে কুফরী হবে। এ প্রকার আরও একটি শব্দ হলো লংমার্চ। এ লংমার্চ
শব্দ ব্যবহার করা নাজায়েয এবং যেহেতু এটা বিধর্মীদের আবিষ্কৃত একটি পদ্ধতি, তাই এটা
করাও নাজায়েয। আর এটার মধ্যে যারা মারা যাবে, তাদেরকে উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ
শরীফ মোতাবেক শহীদ বলাও শুদ্ধ হবে না। কারণ ইসলামী শরীয়ত উনার ফয়সালা হলো জাহেরের
উপর, বাতেনের উপর নয়।
কেউ কেউ বলতে পারেন পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আছে,
ان
الله لا ينطرالى صوركم واعمالكم لكم ولكن ينظرالى نيتكم وقلوبكم.
অর্থঃ “নিশ্চয়ই
আল্লাহ পাক তিনি তোমাদের সুরত ও আমল দেখেন না বরং তিনি তোমাদের নিয়ত ও অন্তর
দেখেন।”
কাজেই এই
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে কেউ যদি বলে লংমার্চ শব্দ ব্যবহার করা
নাজায়েয এবং লংমার্চ করাও নাজায়েয, তা সত্ত্বেও যদি কেউ নেক নিয়তে
নেক কাজের উদ্দেশ্যে করে,
তাহলে তা জায়েয হবে না কেন? এর জাওয়াবে বলা যায়, কেউ যদি
ছিনতাই, ডাকাতি বা অন্য কোন অবৈধ পন্থা অবলম্বনের মাধ্যমে ধন-সম্পদ উপার্জন করে, সেই পয়সা
দিয়ে মসজিদ, মাদ্রাসা, লঙ্গরখানা, এতিমখানা, দুঃস্থের সেবা ইত্যাদি করে, তাহলে তাতে কি তার নেকী হাসিল হবে? কখনই নয়।
বরং নেক নিয়তের সাথে সাথে নেক আমলও থাকতে হবে। যেমন নিম্নোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে আমরা দেখতে পাই,
وعن
جابر عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر فقال: انا نسمع احاديث من يهود
تعجينا افترى ان نكتب بعضها- فقال امتهو كون انتم كما تهوكت اليهود والنصارى؟ لقد
جنتكم بها بيضاء نقيه ولو كان موسى حياما وسعه الا اتباعى. (رواه احمد وبيهقى فى
شعب الايمان)
অর্থঃ- হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর ফারুক আলাইহিস
সালাম যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে বললেন, আমরা
ইহুদীদের অনেক ধর্মীয় কাহিনী, কথা-বার্তা, নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শ্রবণ করে
থাকি, যা আমাদের নিকট ভাল লাগে। আমরা ওটার থেকে কিছু লিখে রাখতে পারবো কি? তখন নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “তোমরা কি
তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে দ্বিধাগ্রস্ত বা বিভ্রান্ত রয়েছ? যেভাবে
ইহুদী নাসারাগণ বিভ্রান্ত রয়েছে? মহান
আল্লাহ পাক উনার কসম,
আমি তোমাদের নিকট সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও পরিপূর্ণ দ্বীন
এনেছি। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম যদি এখন থাকতেন, তাহলে উনাকেও আমার দ্বীন অনুসরণ
করতে হতো।” এখানে হযরত উমর ফারুক
আলাইহিস সালাম উনার নিয়ত অবশ্যই নেক ছিল কিন্তু বিধর্মীদের নিয়ম-কানুন, কথা-বার্তা, ধর্মীয়
কাহিনী অনুসরণ করা যেহেতু নেক আমলের অন্তর্ভূক্ত নয়, তাই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা করতে
নিষেধ করেছেন। সুতরাং নেক নিয়তের সাথে সাথে নেক আমলও থাকতে হবে। কাজেই যাতে নেক
আমলই হয় না, তাতে কিভাবে শহীদ হয়?
কেউ কেউ বলতে পারেন, যারা না জেনে লংমার্চ করতে গিয়েছে
তাদের ক্ষেত্রে কি ফয়সালা হবে? সে ক্ষেত্রে জাওয়াব হলো- প্রথমে তাদের জন্য ইলম অর্জন করা
ফরজ ছিল এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল, তা করা জায়েয অথবা নাজায়েয হবে
কিনা। কাজেই যেহেতু তারা না জেনে গিয়েছে সেহেতু সেটাও তাদের ভুল হয়েছে। কারণ ফরজ
পরিমাণ ইলম অর্জন করার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। প্রশ্নকারী এ সংখ্যার জাওয়াব এবং গত সংখ্যার
লংমার্চের জাওয়াব বার বার পড়লে লংমার্চ সম্বন্ধে ছহীহ ফয়সালা বুঝতে সক্ষম হবেন।
আবা-১১
0 Comments:
Post a Comment