সুওয়ালঃ বর্তমান যামানায় কিছু সংখ্যক নাস্তিক্যবাদের ধারক, মুক্তবুদ্ধির প্রবক্তা, তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী, কুশিক্ষিত মুরতাদ, বিধর্মীদের পদলেহী ও উচ্ছিষ্টভোগী দালাল, আশাদ্দু দরজার জাহিল, মানবরূপী নিকৃষ্ট পশ্বাধম, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা দ্বীন ইসলাম ও মুসলমান উনাদের বিরূদ্ধে অশালীন, অশোভনীয়, কাল্পনিক ও হেয়ালীপূর্ণ, মনগড়া বানোয়াট, মিথ্যা ও বিদ্বেষপ্রসূত, হেয়পূর্ণ ও আক্রমনাত্মক, ভিত্তিহীন ও দলীল প্রমাণাদি বহির্ভূত ইত্যাদি নানাধরণের অমূলক মন্তব্য ঢালাওভাবে প্রচার করে বেড়ায়। এ সমস্ত কুমনোবৃত্তির অধিকারীদের পবিত্র শরীয়ত উনার কি ফয়সালা? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় এধরণের কুপ্রবৃত্তির অধিকারীরা ছিলো কি? যদি থেকে থাকে তবে তাদের বিরূদ্ধে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি ব্যবস্থা নিয়েছেন?
জাওয়াবঃ হ্যাঁ, এধরণের অনেক কুলাঙ্গার ও কুমনোবৃত্তিধারী নির্বোধ ছিল, যাদের ঘটনা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হলো কাআব ইবনে আশরাফ। যে- ১। কিছু কুশিক্ষিত ও কুলাঙ্গারদের অর্থের বিনিময়ে তার পদলেহী করে দ্বীন ইসলাম ও মুসলমান উনাদের বিরূদ্ধে অপ-প্রচার করতো।
২। সে নিজেও কবি হবার কারণে স্বরচিত দ্বীন ইসলাম বিদ্বেষপূর্ণ কবিতা রচনা ও প্রচার করে বেড়াত।
৩। সে কিছু গায়িকা দাসী-বাদীর মাধ্যমে তাদের দিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তথা দ্বীন ইসলাম বিরোধী গান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাওয়াতো ।
৪। বদরের যুদ্ধে যে সমস্ত কাফির মারা গিয়েছিল কাআব ইবনের আশরাফ তাদের স্মরণে শোঁকগাথা রচনা করে কোরাইশদের শোনাত এবং তাদেরকে মুসলমান উনাদের বিরূদ্ধে উত্তেজিত করে তুলতো।
৫। এমনকি সে হযরত উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম ও মুসলমান মহিলা উনাদের বিরূদ্ধে অপবাদ রটনা করে বেড়াত। ইত্যাদি কারণের জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার মৃত্যুদন্ড দান করেন।
যা নিম্নের পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে- হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, কাআব ইবনে আশরাফ হতে পবিত্র দ্বীন ইসলাম ও মুসলিম জাতিকে মুক্তি দেবার জন্য কেউ প্রস্তুত হতে পারে কি? সে ইসলামদ্রোহিতা এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যাতনা প্রদানে চরমে পৌঁছে গিয়েছে। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাছলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নামক পবিত্র মদীনাবাসী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা এ কার্যের জন্য প্রস্তুত হলেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন- ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কি অন্তরের সঙ্গে চান যে, এ দুরাচার পাপময় জীবনকে আমি শেষ করে ফেলি? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ’। তখন ঐ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরজ করলেন, আপনার সম্বন্ধে কিছু কৃত্রিম অভিযোগ প্রকাশে অনুমতি দান করুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সে অনুমতি দান করলেন।
অতঃপর ঐ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাআব ইবনে আশরাফের নিকট উপস্থিত হয়ে কৃত্রিম অভিযোগ পেশ করার উদ্দেশ্যে বললেন “হে বন্ধু! ঐ লোকটা (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সর্বদা আমাদিগকে দান-খয়রাতের জন্য উৎপীড়ন করতে থাকে, আমাদিগকে মস্ত বড় চাপের মধ্যে ফেলে দিয়েছে, বাধ্য হয়ে আমি আপানার নিকট কিছু ধার নিবার জন্য উপস্থিত হয়েছি।” কাআব ইবনে আশরাফ বললো- তোমাদেরকে আরো বহু ক্ষতিগ্রস্থ হতে হবে, এমনকি তোমরা বিতৃষ্ণা হতে বাধ্য হবে। ঐ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উত্তর করলেন- একবার যেহেতু উনার দলভুক্ত হয়ে পড়েছি, এখন শেষ ফলাফল না দেখে ত্যাগ করা উত্তম মনে করছি না। কিছু সময়ের জন্য আপনি আমাকে ধার দিন। কাআব ইবনে আশরাফ ঐ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথাবার্তায় আকৃষ্ট হয়ে ধার দিতে স্বীকৃত হলো এবং বললো ধার দেব, তবে কোন বস্তু রেহেন (বন্দক) রাখতে হবে। হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “কোন বস্তু রেহেন রাখব”? সে বললো- “স্ত্রীকে রেহেন রাখুন”। হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, “আপনার ন্যায় সুন্দর পুরুষের নিকট স্ত্রী রেহেন রাখা যায় কি?” সে বললো, “তবে পুত্রগণকে রেহেন রাখুন।” হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, “তা করলে আজীবন আমার বংশের নিন্দা শুনতে হবে।” এর পরিবর্তে আমি অস্ত্র জমা রাখব। শেষ পর্যন্ত এটা সাব্যস্ত হলো। অতঃপর হযরত মুহম্মদ ইবনে মাছলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দ্বিতীয় আরেকজন ছাহাবী হযরত আবু নায়েলা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি কাআব ইবনে আশরাফ-এর দুধ ভাইও ছিলেন উনাকে সঙ্গে নিয়ে অস্ত্র-শস্ত্রসহ রাত্রে তার বাড়ী গিয়ে তাকে ডাকলেন। কাআব ইবনে আশরাফ সুদৃঢ় কিল্লার ভিতর অবস্থান করত। ঐ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমদ্বয়কে কিল্লার ভেতর ডেকে আনল এবং সে উপর তলা হতে নেমে আসার জন্য রওনা হলো। তার স্ত্রী বাঁধা দিয়ে বলল, “আপনি কোথায় যাচ্ছেন? আমি রক্তের গন্ধ পাচ্ছি। সে বলল- ভয়ের কারণ নেই; আগন্তুক আমার বন্ধু হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আমার দুধ ভাই হযরত আবু নায়েল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। কারও ডাকে সাড়া না দেয়া ভদ্রলোকের কাজ নয়; যদিও বিপদের আশংকা থাকে। হযরত মুহম্মদ ইবনে মাসলামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আরও দু’ব্যক্তিকে সঙ্গে এনেছিলেন, উনাদেরকে নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করলেন। উনাদেরকে তিনি আগেই বলেছিলেন “কাআব ইবনে আশরাফ আমার নিকটবর্তী হলে আমি যেকোন অজুহাতে তার মাথার চুল শক্তভাবে ধরব এবং তখন তোমরা তার গর্দান কেটে ফেলবে।
কাআব ইবনে আশরাফ নীচের তলায় নেমে আসল। ঐ ছাহাবী বললেন, আপনি যেরূপ সুগন্ধী ব্যবহার করেছেন সেরূপ সুগন্ধী আমি জীবনে দেখিনি। সে বলল- আমার স্ত্রী সুগন্ধীর অনুরাগিনী অধিক, সেজন্য আমি বেশী বেশী সুগন্ধী ব্যবহার করি। হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন “আপনার মস্তক হতে ঘ্রাণ নিতে পারি কি? সে বলল হ্যাঁ। এ সুযোগে ঐ হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার মাথার চুল শক্তভাবে ধরলেন এবং সঙ্গীদ্বয়কে ইশারায় বললেন, “তোমাদের কাজ করে ফেল। উনারা তৎক্ষনাত তার গর্দান কেটে ফেললেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট চলে আসলেন। যারা এসমস্ত উক্তি করে, এদেরকে যারা সাহায্য সহযোগিতা করে, আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেয়, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ যেকোনভাবে সমর্থন করে, তারা সকলে মুরতাদ হবে এবং তাদের উপর মুরতাদের হুকুম বর্তাবে অর্থাৎ তাদের স্ত্রী তালাক হবে, হজ্ব বাতিল হয়ে যাবে, সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। তাদেরকে তিন দিন সময় দেয়া হবে তওবা করার জন্য এবং যদি তওবা করে তবে ক্ষমা করা হবে। অন্যথায় একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এবং এরা মারা যাবার পরে যারা জানাযা নামায পড়ে বা পড়ায় অথবা জানাযায় সাহায্য সহযোগিতা করে তাদের সকলের উপরেই মুরতাদের হুকুম বর্তাবে।
আবা-৮
0 Comments:
Post a Comment