মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ-পনির,মাখন ও ঘিয়ের পাত্রে সংরক্ষিত মধু


 
মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ-পনির,মাখন ও ঘিয়ের পাত্রে সংরক্ষিত মধু

২৫. পনির (جُبْـنَةٌ) যুবনাহ

পনির একটি চর্বি জাতীয় খাবার। পনির তৈরির মূল উপাদান দুধ।

পনির সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ اُتِـيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِـجُبْـنَةٍ فِيْ تَـبُـوْكَ فَدَعَا بِسِكِّيْنٍ فَسَمّٰى وَقَطَعَ‏ 

অর্থ: “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে তাবুক জিহাদের সময় কিছু পনির পেশ করা হয়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিসমিল্লাহ পড়ে একটি চাকু দিয়ে সেগুলো কাটেন এবং কিছু গ্রহণ করেন। (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ্: হাদীছ শরীফ নং ৩৮১৯)

পনির প্রস্তুত প্রণালী:

উপকরণ: গরুর খাঁটি দুধ ৮ কাপ বা ২ লিটার, লেবুর রস ১/৪ টেবিল চামচ, লবণ ১ চা চামচ (মিহি গুঁড়ো), পাতলা সুতি কাপড়।

প্রণালী:

১. একটি বড় পাত্রে মাঝারী আঁচে দুধ জ্বাল দিতে হবে। জ্বাল দেওয়ার সময় দুধ যাতে পুড়ে যেতে না পারে সেজন্য ক্রমাগত নাড়তে হবে।

২. অতঃপর এতে লেবুর রস দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে নাড়তে থাকতে হবে। এর ফলে প্রায় সাথে সাথেই দুধ কিছুটা ছাড়া ছাড়া হয়ে যাবে (দুধে যদি কোনো পরিবর্তন না আসে তাহলে আরো কিছুটা লেবুর রস দিতে হবে এবং চুলার আঁচ বাড়িয়ে ধীরে ধীরে নাড়তে হবে)।

৩. দুধ ছানা হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে বড় ছাকনির উপর পাতলা সুতি কাপড়ে রেখে দুধ ঢেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ছানাগুলোকে ধুয়ে ফেলতে হবে যাতে লেবুর রস ধুয়ে চলে যায়।

৪. এরপর লবণ যোগ করতে হবে স্বাদমত। তবে খুব বেশি দেয়া যাবে না, কারণ পরে আবার লবণ দিতে হবে।

৫. লবণ দিয়ে ছানাকে মাখিয়ে ছানা সহ কাপড়টিকে খুব শক্ত করে পেঁচিয়ে চিপে নিতে হবে বা কাপড়সহ ছানা সমান কিছুর উপর রেখে চেপে চেপে বসিয়ে ছানার উপর ভারী কিছু দিয়ে চাপা দিয়ে রাখতে যেন সব পানি ঝরে যায়। ভারী কিছু দিয়ে চাপা দেয়ার ফলে পনির শক্ত আকার ধারণ করবে। সব পানি ঝরে গেলে ৪/৫ ঘণ্টা পর পনিরের বলটিকে বের করে ঠাণ্ডা কোনো স্থানে বা ফ্রিজে রেখে দিতে হবে।

৬. সাধারণভাবে লবণের প্রলেপ পনিরে ফাঙ্গাস জমা থেকে রক্ষা করে। তাই কয়েক ঘণ্টা পর পনিরটি বেশ জমে গেলে ঝুড়ি থেকে বের করে নিয়ে এর গায়ে কাঠি দিয়ে কিছু ছিদ্র করে নিয়ে সম্পূর্ণ পনিরে ভালো করে লবণ মাখিয়ে আবার ঝুড়িতে ভরে একটি ঠাণ্ডা স্থানে রেখে দিতে হবে। লবণ বেশি খেতে চাইলে পরপর কয়েকদিন এভাবে লবণ মাখিয়ে ও উল্টে পাল্টে দিতে হবে। তৈরির ২/৩ দিন পর পরিবেশন করা যায়।

পনিরের উপকারিতা:

১. পনিরে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং রাইবোফ্লেবিন মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া পনির ফলিক এসিডের ঘাটতি দূর করে। গবেষণায় দেখা গেছে ফলিক এসিড গর্ভের শিশুর কিছু জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে, যেমন- ঠোঁট কাটা, তালু কাটা এবং হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত জটিলতা।

ফলিক এসিড গর্ভাবস্থায় মায়েদের প্রি-এক্লাম্পশিয়ার ঝুঁকি কমায়। গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা এবং বেড়ে ওঠা শিশুর কোষের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ফলিক এসিড গ্রহন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পনিরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফলেট, যা শরীরের চাহিদা মেটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

২. পনিরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ক্যালসিয়াম, যা হাঁড়কে শক্ত করে এবং দাঁতের স্বাস্থ্যের উন্নতিতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই দাঁত এবং হাড়ের গঠন মজবুত করতে নিয়মিত পনির খাওয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে দৈনন্দিন চাহিদার ৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম পনির থেকেই পূরণ হতে পারে।

শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিলে একদিকে যেমন হাড় দুর্বল হতে শুরু করে, সেই সঙ্গে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বৃদ্ধি পায়। তাই পনির গ্রহণের ফলে ক্যালসিয়াম ঘাটতি মেটাতে দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে।

পনিরে উপস্থিত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি ব্রেস্টে ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণায় জানা যায়, বিভিন্ন ধরনের পনিরের মধ্যে হলুদ রঙের পনির বেশি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এতে উচ্চমানের প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩. পনিরে রয়েছে পটাশিয়াম শরীরে রক্তরসের ভারসাম্য বজায় রাখে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের আশঙ্কা অনেকাংশে হ্রাস পায়। বিশেষত হলুদ পনির শরীরের রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বিশেষজ্ঞদের মতে, পনিরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে যা হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়।

৪. পনির খেলে বহুক্ষণ পেট ভরা থাকে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। পনিরে লাইনোলেইক অ্যাসিড নামে একটি উপাদানও রয়েছে, যা শরীরে জমে থাকা মেদকে দ্রুত গলিয়ে ফেলতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।

ডেনমার্কের একদল গবেষক পরীক্ষা করে দেখেছে যে, টানা দুই সপ্তাহ শুধু পনির এবং মাখন খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে খাদ্য হজম হওয়ার জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যায়। এর ফলে একধরনের অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ফ্যাটি অ্যাসিডও বেশি উৎপন্ন হয়েছে, যা অধিক শক্তির উৎপাদন করেছে এবং ফলাফল হিসেবে কয়েক পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমেছে। এই পদ্ধতিতে ওজন কমানোকে বলে চিজ মেটাবলিজম।

৫. পনিরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস, যা হজমে সহায়ক এবং কোষের কর্মক্ষমতা বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। আর এর ম্যাগনেসিয়ামজাত উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৬. পনিরে রয়েছে প্রোটিন যা পেশীর উন্নতিতে কাজে লাগে। ১০০ গ্রাম পনিরের মধ্যে থাকে ১১ গ্রাম প্রোটিন।

৭. পনিরে লাইনোলিক এসিড ও স্পাইনগোলিপিডস নামে এক ধরনের উপাদান রয়েছে যা ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকর।

৮. পনিরের মধ্যে প্রোটিন জাতীয় উপাদান রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। আমেরিকান জার্নাল অব নিউট্রিশন নামের সাময়িকীতে বলা হয়েছে, যারা দিনে ৫৫ গ্রাম অর্থাৎ প্রায় দুই টুকরা পনির খায়, তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা ১২ শতাংশ হ্রাস পায়। ইন্সুলিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে, ফলে ডায়বেটিস হলেও নিয়ন্ত্রনে থাকে।

৯. পরিমাণ মত পনির খেলে শরীরের খারাপ কোলেস্টরেলকে দূর করে। পনিরে প্রোবাইওটিক ব্যাকটেরিয়া আছে যা দেহে কোলেস্টরেল বাড়তে দেয় না।

পনির সংরক্ষণ: পনির বাইরে রাখলে বেশ কয়েক সপ্তাহ ভালো থাকে। তবে ফ্রিজে রাখলে তা বাইরের তুলনায় বেশিদিন ভালো থাকবে। পনির কেনার সময় তা প্লাস্টিক র‌্যাপ দিয়ে মোড়া থাকলেও এভাবে রাখা উচিত নয়। অমসৃণ কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে সংরক্ষণ করাই উত্তম। কারণ আবদ্ধ করে রাখলে পনিরে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে।

পনিরের ব্যবহার: বিভিন্ন ধরণের খাবার তৈরীতে পনির ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও পনির কেটে কেটে খাওয়া যায়।

২৬. মাখন (زُبْدَةٌ) যুব্দাহ্

মাখন দুধ থেকে তৈরী চর্বি জাতীয় খাবার। মাখন দেখতে হলুদ রঙের তবে এটির রঙ গাঢ় হলুদ থেকে সাদা রঙের হতে পারে। এর রঙ নির্ভর করে দুধের উপর এবং যে প্রাণীর দুধ থেকে মাখন তৈরী করা হয়েছে ঐ প্রাণীর খাদ্যাভ্যাসের উপর।

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنَىْ بُسْرِنِ السُّلَمِيَّـيْنِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُمَا قَالَا دَخَلَ عَلَيْـنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـقَدَّمْنَا زُبْدًا وَتَـمْرًا وَكَانَ يُـحِبُّ الزُّبْدَ وَالتَّمْرَ‏.

অর্থ: “হযরত বুসর আস-সুলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দুই পুত্র উনাদের সূত্র থেকে বর্ণিত। উনারা উভয়ে বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা আমাদের বাড়িতে তাশরীফ মুবারক আনলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে আমরা মাখন ও খেজুর পেশ করলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাখন ও খেজুর খুব পছন্দ করতেন।” সুবহানাল্লাহ! (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ্: হাদীছ শরীফ নং ৩৮৩৭)

মাখন প্রস্তুত প্রণালী:

উপকরণ: দুধের সর অথবা মালাই, পানি।

প্রণালী:

১. প্রতিদিনের দুধ থেকে মালাই বা দুধের সর আলাদা করে জমিয়ে রাখতে হবে। নরমাল ফ্রিজে এই মালাই ২-৩ দিন রাখা যায়, তবে ডীপ ফ্রিজে এটি ১০-১৫ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।

একটি ফুড প্রসেসর (এগ বিটার বা হ্যান্ড বিটার)-এর সাহায্যে মালাইগুলোর সাথে আধা কাপ পানি দিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। সাধারণভাবে একটি বড় বোলের এক বোল দুধের সর বা মালাইয়ের জন্য আধকাপ পানি।

২. বিট/ব্লেন্ড করার সময় দেখা যাবে ক্রিম ঘন হচ্ছে, ঘন হতে হতে ক্রমশ জমাট বাধতে শুরু করছে।

৩. যখন অনেক জমাট বেঁধে ঘন হয়ে যাবে তখন ২-৩ চামচ বরফ শীতল পানি যোগ করতে হবে। এতে সহজে জমাট বাঁধবে।

৪. এরপর আবার বিট/ব্লেন্ড করতে হবে। এক সময় দেখা যাবে আর ব্লেন্ড/বিট করা যাচ্ছে না এবং সকল ক্রিম জমাট বেঁধে গেছে এবং এক ধরনের সাদা পানি বের হচ্ছে। এটাই বাটার মিল্ক বা মাখন।

৫. এবার একটি পাত্রে মাখন ঢেলে নিয়ে হাত দিয়ে বল বানিয়ে বাড়তি পানি বের করে ফেলতে হবে।

৬. এবার ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে।

মাখনের উপকারিতা:

১. খনিজ উপাদানে সমৃদ্ধ: বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্থূলতার সমস্যাটির সাথে দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহণের কোন সম্পর্ক নেই। মাখনে অ্যাক্টিভেটর এক্স নামক যৌগ থাকে যা দেহকে অত্যাবশ্যকীয় খনিজ উপাদান শোষণে সাহায্য করে। যখন শরীর খনিজ উপাদান গ্রহণ করে তখন তা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। মাখনে আয়োডিন, সেলেনিয়াম, লেসিথিন এবং লরিক এসিডের মত কার্যকরী খনিজ উপাদান থাকে।

২. ভিটামিন সমৃদ্ধ: মাখনে প্রয়োজনীয় ভিটামিন থাকে মাখন ভিটামিন সমৃদ্ধ। এতে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি ও ভিটামিন ই থাকে যা ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে। আশ্চর্যজনকভাবে মাখনে অনন্য ভিটামিন কে২ থাকে যা চর্বিকে দ্রবণীয় করতে পারে। কে২ ভিটামিন প্রোস্টেট ক্যান্সার, হাড় ভাঙ্গা এবং করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি কমায়। মাখন খেলে নারীর উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।

৩. লিনোলেইক এসিড থাকে: মাখনে লিনোলেইক এসিড নামক যৌগ থাকে। এটি শরীরের বিপাকের উপর প্রভাব বিস্তার করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও মাখনে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

৪. স্বাস্থ্যকর স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে: বেশিরভাগ মানুষ মনে করে যে সব ধরণের সম্পৃক্ত চর্বি (স্যাচুরেটেড ফ্যাট) ক্ষতিকর।

কিন্তু অনেক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, এদের মধ্যে কিছু আছে শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয়ই না বরং অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। এই স্বাস্থ্যকর সম্পৃক্ত চর্বিগুলো ভালো কোলেস্টেরল (HDL)-এর  বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই HDL কোলেস্টেরল ব্রেইন ও নার্ভাস সিস্টেমের ডেভেলপমেন্টে সহায়তা করে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে।

৫. জয়েন্টের সমস্যা দূর করে: মাখন জয়েন্টের শক্ত হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে, সেই সাথে আরথ্রাইটিস ও প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এই উপাদানটি ক্যালসিয়ামকে জয়েন্টের চেয়ে হাড়ে জমা হতে সাহায্য করে।

৬. বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ: মাখনে উচ্চমাত্রার বিটা ক্যারোটিন থাকে যা চোখের জন্য ভালো। এটি চোখের সুরক্ষায় অবদান রাখে। এছাড়াও কোষের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করে, ছানির গতিরোধ করে, চোখের রেটিনার কোষ নষ্ট হয়ে যাওয়া বা মেকুলার ডিজেনারেশন হওয়ার সুযোগ কমায় এবং চোখের অন্যান্য সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

মাখন সংরক্ষণ: মাখন বছরের প্রায় সব সময়েই ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয়।

মাখনের ব্যবহার: মাখন সাধারণত কোন খাবারে মেখে খাওয়া হয়। এছাড়া রান্না করতে যেমন, কিছু ভাঁজতে, সস তৈরিতে অথবা খাবারে বিশেষ সুঘ্রান আনতে মাখন ব্যবহৃত হয়।

২৭. ঘিয়ের পাত্রে সংরক্ষিত মধু (اَلسَّنُّوْتُ) সানূত

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اُبَـىِّ بْنِ اُمِّ حَرَامٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ قَدْ صَلَّى مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقِبْـلَتَيْنِ يَـقُوْلُ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـقُوْلُ ‏عَلَيْكُمْ بِالسَّنٰى وَالسَّنُّـوْتِ فَإِنَّ فِيْهِمَا شِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ اِلَّا السَّامَ ‏قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا السَّامُ قَالَ ‏الْمَوْتُ قَالَ عَمْرٌو رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ ابْنُ اَبِيْ عَبْـلَةَ السَّنُّـوْتُ الشِّبِتُّ ‏وَقَالَ اٰخَرُوْنَ بَلْ هُوَ الْعَسَلُ الَّذِي يَكُوْنُ فِيْ زِقَاقِ السَّمْنِ وَهُوَ قَـوْلُ الشَّاعِرِ هُمُ السَّمْنُ بِالسَّنُّـوْتِ لَا اَلْسَ فِيْهِمْ وَهُمْ يَـمْنَعُوْنَ جَارَهُمْ أَنْ يُقَرَّدَا

অর্থ : “হযরত আবূ উবাই ইবনে উম্মে হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইমামতিতে তিনি উভয় কিবলার (বাইতুল মুকাদ্দাস ও কা’বা) দিকে নামায পড়েছেন। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, অবশ্যই তোমাদের সানা ও সানূত ব্যবহার করা উচিত। কারণ তাতে সাম ছাড়া সব রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। জিজ্ঞাসা করা হলো, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ‘সাম’ কি? তিনি বলেনঃ ‘মৃত্যু’। রাবী আমর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বিন আবূ আবলা বলেছেন, সানূত হলো এক ধরণের উদ্ভিজ্জ, অন্যরা বলেন, বরং তা ঘি রাখার পাত্রে রক্ষিত মধু। যেমন কবি বলেন, ‘তারা পরস্পর মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ থাকে ঘি ও সানূতের মত, তাই তাদের মধ্যে নাই কোন বিবাদ। তারা প্রতিবেশীকে ধোঁকার আশ্রয় নিতে বারণ করে।” (ইবনে মাজাহ: কিতাবুত ত্বিব: হাদীছ শরীফ নং ৩৪৫৭)



0 Comments: