মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ-মধু , পানি-যমযম পানি ও লবণ
২৮. মধু (عَسَلٌ) ‘আসাল
মহান আল্লাহ পাক তিনি মধুর ব্যাপারে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاَوْحٰى رَبُّكَ
اِلَى النَّحْلِ اَنِ اتَّـخِذِيْ مِنَ الْـجِبَالِ بُـيُـوْتًا وَّمِنَ الشَّجَرِ
وَمِـمَّا يَعْرِشُوْنَ. ثُـمَّ كُلِيْ مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِيْ
سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا ۚ يَـخْرُجُ مِنْ بُۢطُوْنِـهَا شَرَابٌ
مُّـخْتَلِفٌ اَلْوَانُهٗ
فِيْهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ۗ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ
لَاٰيَةً لِّقَوْمٍ يَّـتَـفَكَّرُوْنَ.
অর্থ: “আপনার মহান রব তায়ালা তিনি মৌমাছিকে আদেশ দিলেন পর্বতগাত্রে, বৃক্ষ ও উঁচু চালে মৌচাক নির্মাণ করো। এরপর সর্বপ্রকার ফল হতে ভক্ষণ কর এবং
আপন মহান রব তা‘য়ালা উনার উন্মুক্ত পথ সমূহে চলমান হও। তিনি মহান আল্লাহ পাক
তাদের পেট হতে বিভিন্ন রঙের পানীয় নির্গত করেন। তাতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের
শিফা। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (পবিত্র সূরা নাহল
শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৮-৬৯)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْكُمْ بِالشِّفَاءَيْنِ الْعَسَلِ وَالْقُرْاٰنِ.
অর্থ : “হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
তোমাদের দু’টি
প্রতিষেধক গ্রহণ করা উচিত- মধু এবং পবিত্র কুরআন শরীফ।” (ইবনে মাজাহ শরীফ:
কিতাবুত ত্বিব: হাদীছ শরীফ নং ৩৪৫২)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُـحِبُّ الْـحَلْوَاءَ
وَالْعَسَلَ.
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাল্ওয়া (মিষ্টান্ন) ও মধু পছন্দ করতেন।” (ইবনে
মাজাহ শরীফ: কিতাবুল ত্ব‘য়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৩২৩)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পেটের অসুখে মধুর ব্যবহার বিষয়ে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
اَبِـيْ سَعِيْدٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَجُلًا اَتَى النَّبِيَّ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَـقَالَ اَخِيْ يَشْتَكِيْ بَطْنَهُ فَـقَالَ
اسْقِه عَسَلًا ثُـمَّ اَتَى الثَّانِيَةَ فَـقَالَ اسْقِه عَسَلًا ثُـمَّ
اَتَاهُ فَـقَالَ فَـعَلْتُ فَـقَالَ صَدَقَ اللهُ وَكَذَبَ بَطْنُ اَخِيْكَ
اسْقِه عَسَلًا فَسَقَاهُ فَـبَـرَأَ.
অর্থ: “হযরত আবূ সা‘য়ীদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে এসে একজন
ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরজ করলেন, আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, উনাকে মধু পান করান। এরপর
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে উক্ত ছাহাবী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দ্বিতীয়বার আসলে উনাকে ইরশাদ মুবারক করলেন, উনাকে মধু পান করান। এরপর উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
পুনরায় মুবারক খিদমতে এসে বললেন, আমি অনুরূপই করেছি। তখন
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি সত্য বলেছেন, কিন্তু আপনার ভাইয়ের পেট
অসত্য বলছে। উনাকে মধু পান করান। উক্ত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
উনার ভাইকে মধু পান করালেন। এবার তিনি আরোগ্য লাভ করলেন।” (বুখারী শরীফ:
কিতাবুত ত্বিব: হাদীছ শরীফ নং ৫৬৮৪)
পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ
اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مَنْ لَعِقَ الْعَسَلَ ثَلَاثَ غَدَوَاتٍ كُلَّ شَهْرٍ لَـمْ يُصِبْهُ
عَظِيْمٌ مِنَ الْبَلَاءِ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন
ব্যক্তি প্রতি মাসে তিন দিন সকাল বেলা মধু চেটে চেটে খেলে সে মারাত্মক কোন বিপদে
আক্রান্ত হবে না।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্বিব: হাদীছ শরীফ নং ৩৪৫০)
উপকারিতা: বহু রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মধু ব্যবহার করা হয়। যেমন-
১. মধু সর্দি, কাশি, জ্বর, হাপানি, হৃদরোগ, পুরনো আমাশয় এবং পেটের
অসুখ নিরাময়সহ নানাবিধ জটিল রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
২. মধু পরিপাকে সহায়তা করে, ক্ষুধা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।
৩. মধু প্রিজারভেটিভ হিসেবেও কাজ করে।
৪. ক্ষত সারাতে মধু ব্যবহার করা যায়।
৫. ব্রণ সারাতে, মুখের আর্দ্রতা বৃদ্ধিতে, মসৃণ করতে ইত্যাদি রূপচর্চায় বিভিন্নভাবে মধু ব্যবহৃত হয়।
৬. ডায়াবেটিকের রোগীরাও নির্ভয়ে চিনির বিকল্প হিসেবে মধু খেতে পারে। মধু
মিষ্টি হলেও এতে রক্তের সুগার বাড়ে না।
৭. মধু ও লেবুর শরবত শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে সাহায্য করে।
৮. শিশুদের শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ওষুধের চেয়ে মধু অনেক বেশি কর্যকর।
৯. মুখের জড়তা দূরীকরণে মধুর ভূমিকা অপরিসীম।
১০. মধু দিয়ে তাহনিক করা সুন্নত।
২৯. পানি (مَاءٌ)
মা’
আমাদের শরীরে প্রায় তিন
ভাগের দুই ভাগই পানি। সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে তাই পানি পানের বিকল্প নেই।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন-
كُلُوْا وَاشْرَبُوْا مِنْ رِّزْقِ اللهِ
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক
উনার দেয়া রিযিক থেকে খাও ও পান করো।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ: পবিত্র আয়াত
শরীফ ৬০)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالَثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا
السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ اَحَبُّ الشَّرَابِ اِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْـحُلْوُ الْبَارِدُ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ
ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট খাবার
পানির মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় ছিল ঠান্ডা ও মিষ্টি বা সুস্বাদু পানি।” (তিরমিযী
শরীফ: কিতাবুশ শারাবাহ: হাদীছ শরীফ নং ১৮৯৫; আবূ
ইয়ালা শরীফ ৪র্থ খণ্ড ২৯৯ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ৪৫১৬)
পানি পানের মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক:
১. ডান হাতে পানি পান করা।
২. বসে পানি পান করা।
৩. ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পানি পান শুরু করা।
৪. পানি পানের পূর্বে পানির পাত্রে
ক্ষতিকারক কিছু আছে কিনা দেখে পান করা।
৫. তিন ঢোকে বা শ্বাসে পানি পান করা।
৬. পানি পান শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাঠ করা।
৭. কাঠের পেয়ালাতে পানি পান করা।
পানি অপচয় করা যাবে না:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِسَعْدٍ وَهُوَ يَتَوَضَّاُ فَقَالَ
مَا هَذَا السَّرَفُ فَقَالَ اَفِي الْوُضُوءِ اِسْرَافٌ
قَالَ نَعَمْ وَاِنْ كُنْتَ عَلَى نَـهَرٍ جَارٍ.
অর্থ: “হযরত ‘আবদুল্লাহ্ ইবনে ‘আম্র রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে অতিক্রম করে
যাচ্ছিলেন, তখন তিনি উযূ করছিলেন। নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
এই অপচয় কেন? হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি বলেন, উযূতেও কি অপচয় আছে? নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, হ্যাঁ, যদিও আপনি প্রবাহমান নদীতে থাকেন।” (ইবনে
মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্বহারাত ওয়া সুন্নাতিহ্: হাদীছ শরীফ নং ৪২৫)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে-
اَنَّهُ
اَقْمَعُ لِلْعَطَشِ وَاَقْوٰى عَلَى الْـهَضْمِ وَاَقَلُّ اَثَرًا فِي ضَعْفِ الْاَعْضَاءِ
وَبَرْدِ الْمَعِدَةِ.
২৯(১) যমযমের পানি..
যমযমের পানি ক্ষুধার্তের খাদ্য
ও রোগের শেফা:
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ
ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ ذَكَرَ زَمْزَمَ فَقَالَ اِنَّـهَا مُبَارَكَةٌ اِنَّـهَا
طَعَامُ طُعْمٍ وَشِفَاءُ سُقْمٍ.
অর্থ: “হযরত আবূ যর্ গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই
যমযমের পানি বরকতপূর্ণ। তা তৃপ্তিকর খাদ্য এবং রোগ নিরাময়ের ঔষধ।” (মু’জামুছ ছগীর লিত ত্ববারানী
১ম খণ্ড ১৮৬ পৃষ্ঠা :
হাদীছ শরীফ নং ২৯৫)
শরীর সুস্থ রাখার জন্য পানি
খাওয়া খুবই জরুরী। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য এবং শরীর সুস্থ রাখার
জন্য প্রতিদিন পরিমাণ মতো পানি খাওয়া প্রয়োজন। ঋতু/মৌসুম, বয়স, ওজন,
লিঙ্গভেদে এবং শারীরিক শ্রমের ওপর একেকজন একেক পরিমাণ পানি পান করার প্রয়োজন পড়ে।
তাই শীতকালের চেয়ে গরমকালে
শরীরে পানির চাহিদা বেড়ে যায় আবহাওয়ার কারণেই। আর যারা কায়িক পরিশ্রম বেশি করে, তাদের
বেশি পানি পান করতে হয়। যারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘামে, তাদের
জন্য একটু বেশি পানি পান করা জরুরী। তবে মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা পরিমাণে বেশি পানি
পান করে থাকে।
প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের দিনে
৮-১০ গ্লাস বা ২-৩ লিটার পানি পান করা দরকার। অন্যদিকে পুরুষদের প্রায় ১২ গ্লাস
পানি পান করতে হবে।
অনেকে মনে করে থাকে, শিশুদের
কম পানি পান করলেও চলবে। এটি ঠিক নয়। ১-১০ কেজি ওজনের শিশুকে প্রতি কেজি ওজন
হিসাবে ১০০ সিসি তরল পান করাতে হবে। ১১-২০ কেজি ওজনের জন্য প্রতি কেজি ওজন হিসাবে
১ লিটার ও ২০ কেজির বেশি ওজনের শিশুর জন্য প্রতি কেজি ওজন হিসাবে ১.৫ লিটার তরল
পান করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে পানি পান করানোই ভালো।
সাধারণভাবে যখনই পানির
তৃষ্ণা তৈরি হবে, তখনই পানি পান করে শরীরের ঘাটতি মেটানো
উচিত। পানি পান নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশে রয়েছে
থার্স্ট সেন্টার বা পিপাসাকেন্দ্র। এই কেন্দ্র জানিয়ে দেয় যে কখন পানি পান করা
দরকার। একজন মানুষের এই অংশটি কার্যকরী থাকলে পানির অভাব বা বাড়তি কখনোই হবে না।
পর্যাপ্ত পানি পানের সুফল: পানি সমস্ত রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে
ভালো ওষুধ। তবে সে পানি হতে হবে বিশুদ্ধ। কেননা পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার
পরও সে পানি যদি দূষিত হয় তাহলে নানা ধরণের পানিবাহিত রোগে (ডায়রিয়া, কলেরা ও টাইফয়েডে)
আক্রান্ত হতে হয়।
পর্যাপ্ত পানি পানের উপকারিতা নিম্নরূপ-
১. শরীরের কোষগুলোকে সবল ও স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
২. শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
৩. কিডনি, যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্ক ভালো থাকে।
৪. মাথার যন্ত্রণা, অম্বল, শরীরের ব্যথা এবং ক্লান্তি
দূর হয়ে যায়।
৫. খাবার হজমে সহজ হয়।
৬. সবচেয়ে সহজে শরীরের ওজন কমানো যায়।
৭. শরীর থেকে সমস্ত বিষাক্ত পদার্থ বা টক্সিন দূর করে শরীরের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৮. পেশী ও হাড় সুস্থ থাকে।
৯. ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে সহায়ক ও ত্বকের শুষ্কতা রোধে
উপকারী।
১০. শরীরে শক্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
অপর্যাপ্ত পানি পানের সমস্যা:
১. শরীরের কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২. শরীরে রক্ত চলাচল কমে যায় ফলে
রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
৩. ইউরিন ইনফেকশন এবং কিডনির জটিলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি কিডনি
অকেজো হয়ে পড়ারও আশঙ্কা থাকে।
তাই শরীরে পানির ঘাটতি মেটাতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি
পান করা উচিত।
৩০. লবণ (مِلْحٌ)
মিল্‘হ
লবণ সম্পর্কে বর্ণিত
রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيِّدُ اِدَامِكُمُ الْمِلْحُ.
অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে
মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন,
তোমাদের তরকারীর রাজা (প্রধান উপকরণ) হলো লবণ।” (ইবনে
মাজাহ: কিতাবুত ত্ব‘য়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৩১৫)
সাইয়্যিদুনা হযরত
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার থেকে লবণের উপকারিতা বিষয়ে একখানা
দীর্ঘ হাদীছ শরীফ বর্ণিত রয়েছে। উক্ত হাদীছ শরীফ খানা উনার আরো কিছু অংশ নিম্নরূপ-
عَنْ
حَضْرَتْ على كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عليه السلام
انه قال قال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم يا حَضْرَتْ على عليه السلام واذا
اكلت فابدأ بالـملح واختم بالـملح فان الـملح شفاء من سبعين داء اولـها الـجذام
والـجنون والبرص ووجع الاضراس ووجع الـحلق ووجع البصر وفى رواية وجع البطن.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা
হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে
নির্দেশ মুবারক দিলেন,
“হে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম! আপনি যখন খাদ্য
খাবেন তখন শুরুতে লবণ খাবেন এবং খাওয়া শেষ করে লবণ খাবেন। কেননা লবণের মধ্যে সত্তর
প্রকার রোগের শিফা (রোগমুক্তি) রয়েছে। তার প্রথমটি হচ্ছে- কুষ্ঠ রোগ, মস্তিস্ক
বিকৃত বা পাগলামী,
শ্বেতকুষ্ঠ, দাঁতের ব্যাথা, গলার
ব্যাথা, চোখ ব্যাথা। অন্য বর্ণনায় এসেছে পেট ব্যাথা।” (বুগইয়াতুল বাহিছ আন যাওয়ায়িদিল হারিস-১/৫২৬, আল মাতালিবুল আলীয়া বি যাওয়ায়িদিল
মাসানীদিছ ছামানীয়া-১/১৭০, ইত্তিহাফুল
খিয়ারাতিল মাহরবাহ বি যাওয়ায়িদিল মাসানীদ-৪/৯৬)
অন্য বর্ণনায়
বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرة
على بـن ابـى طالب عليه السلام عن النبى صلى الله عليه وسلم. اذا اكلت فابدأ بالـملح
و اختم بالـملح فان الـملح شفاء من سبعين داء اولـها الـجذام والبرص و وضع الـحلق
و الاضراس والبطن.
অর্থ: ইমামুল আউয়াল মিন
আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা
করেন। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- যখন আপনি খাদ্য খাবেন তখন শুরুতে লবণ খাবেন এবং
খাওয়া শেষ করে লবণ খাবেন। কেননা লবনের মধ্যে ৭০ প্রকার রোগের শিফা (রোগ মুক্তি)
রয়েছে। তার প্রথমটি হচ্ছে কুষ্ঠ রোগ, শ্বেতকুষ্ঠ,
গলার ব্যাথা, দাঁতের ব্যাথা, পেটের ব্যাথা।” (নুজহাতুল মাজালিস)
কিতাবে আরো বর্ণিত আছে-
عن حضرت سعد بن معاذ رضى الله تعالى عنه استفتحوا طعامكم
بالـملح فوالذى نفسى بيده انه ليرد ثلاثا و سبعين من البلاء.
অর্থ: “হযরত সা’দ ইবনে মায়াজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি বর্ণনা করেন, তোমরা লবণ দ্বারা খাওয়া শুরু করবে। কেননা, ওই পবিত্র সত্তা মহান আল্লাহ পাক উনার কসম, যাঁর
কুদরতী হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক! নিশ্চয়ই লবণ দ্বারা খাবার শুরু করা ৭৩
প্রকার রোগ দূর করে দেয়।” সুবহানাল্লাহ! (তানযিয়াতুশ্ শরীয়াতিল মারফুয়াহ)
কিতাবে আরো বর্ণিত আছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا
السَّلَامُ قَالَتْ من اكل الـملح قبل كل شى وبعد كل شى دفع الله عنه ثلثمائة وثـمانين
نوعا من البلاء اهونـها الـجذام.
অর্থ: “উম্মুল
মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে
ব্যক্তি সব ধরনের খাবারের শুরুতে এবং শেষে লবণ খাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ৩৮০
প্রকার রোগ থেকে শিফা বা মুক্তি দান করবেন। তার ছোটটি হচ্ছে-কুষ্ঠ রোগ।” সুবহানাল্লাহ! (নুজহাতুল মাজালিস)
0 Comments:
Post a Comment