মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ-পেঁয়াজ ,আদা ও মেথি
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ مُعَاوِيَةَ بْنِ قُـرَّةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ عَنْ اَبِيْهِ اَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَـهٰى عَنْ هَاتَـيْنِ الشَّجَرَتَـيْنِ وَقَالَ مَنْ اَكَلَهُمَا فَلَا يَـقْرَبَنَّ مَسْجِدَنَـا وَقَالَ اِنْ كُنْـتُمْ لَا بُدَّ اٰكِلِيْهِمَا فَاَمِيْـتُـوْهُـمَا طَبْخًا قَالَ يَعْنِي الْبَصَلَ وَالثُّـوْمَ.
অর্থ “হযরত মু’আবিয়াহ ইবনে কুররাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি
উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দু’টি গাছ (কাঁচা) খেতে বারণ করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি ওই গাছ দু’টো (কাঁচা)
খাবে সে যেনো অবশ্যই আমাদের মসজিদে না আসে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, তোমাদের যদি একান্তই এটা খেতে হয় তাহলে রান্না করে দূর্গন্ধ দূর করে খাও।
বর্ণনাকারী বলেন, গাছ দু’টি হলো পিঁয়াজ ও
রসুন।” (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ্: হাদীছ শরীফ নং ৩৮২৭)
২০. আদা (زَنْـجَبِيْلٌ) ঝানজাবীল
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَيُسْقَوْنَ
فِيْهَا كَأْسًا كَانَ مِزَاجُهَا زَنْـجَبِيْلًا.
অর্থ : “তাদেরকে সেখানে (সম্মানিত জান্নাত উনার মধ্যে) পান করানো হবে আদা মিশ্রিত
পানীয়।” (পবিত্র সূরা দাহর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে ভারতের এক রাজা
এক বয়াম আদার আচার হাদিয়া মুবারক দেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই আদার আচার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে ভাগ করে দেন।
আদার বন্টন বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ سَعِيْدِنِ
الْـخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ اَهْدٰى مَلِكُ الْـهِنْدِ
اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَرَّةً فِيْـهَا
زَنْـجَبِيْلٌ فَاَطْعَمَ اَصْحَابَهٗ
قِطْعَةً قِطْعَةً وَاَطْعَمَنِيْ مِنْـهَا قِطْعَةً
অর্থ : “হযরত আবূ সা‘য়ীদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে ‘মালিকুল হিন্দ’ তথা ‘ভারতীয় মহারাজ’ এক
বয়াম আচার হাদিয়া মুবারক করেন যার মধ্যে আদার টুকরা ছিল। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই টুকরাগুলো হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। আমিও খাবার জন্য একটি টুকরা ভাগে
পেয়েছিলাম।” (মুস্তাদরাক লিল হাকিম শরীফ ৪র্থ খণ্ড ১৫০ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং
৭১৯০, প্রকাশনা: দারুল কুতুবুল
ইলমিয়্যাহ, বৈরূত, লেবানন)
১. আদা পেটের অস্বস্তিদায়ক যন্ত্রণা, ক্ষুধামন্দা ভাব, বমিভাব, পেট ফাঁপা,
আমাশয় ও জন্ডিস এবং অন্যান্য
গ্যাস্ট্রিক সমস্যাতে কার্যকর। হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে পেট পরিষ্কার
রাখতে সহায়তা করে।
২. আদায় বিদ্যমান ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য
করে।
৩. ঠাণ্ডা এবং কফজনিত অসুখ নিরাময়ে উপকারী।
৪. কোলন ক্যান্সার এবং জরায়ুর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
৫. প্রাকৃতিক পেইন কিলার বা ব্যাথানাশকের কাজ করে। আদায় নিহিত অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি
এজেন্ট যে কোনো কাটাছেঁড়া বা ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। বাতজনিত গাঁটে ও
মাথাব্যাথায় বেশ কার্যকর।
৬. আদায় বিদ্যমান অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট শরীরের রোগজীবাণু ধ্বংস করে প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায়।
৭. শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়।
৮. কোষে নির্বিগ্নে ইনসুলিনের চলাচল ঠিক রাখার মাধ্যমে শরীরের কোষে গ্লুকোজের শোষণক্ষমতা
বৃদ্ধি করে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
৯. রক্তের অনুচক্রিকা এবং হৃদযন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখে।
১০. আদার রস দাঁতের মাড়িকে শক্ত করে ও
দাঁতের
ফাঁকে জমে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করে।
১১. আদা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত করে রক্ত পরিসঞ্চালন বৃদ্ধি করে
ও রক্তনালী প্রসারিত করে। ফলে
শীতকালেও শরীর গরম রাখে।
১২. আদার রস রক্তশূন্যতা দূর করে।
১৩. আদায় ভিটামিন-ই এবি ও সি থাকার কারণে চুল পড়া রোধ করে।
১৪. আদা ত্বকের জন্যও উপকারী। ত্বকের
ব্রণ ওঠা বন্ধ হয় এবং ত্বক পরিষ্কার ও মসৃণ রাখে।
১৫. আদা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
১৬. আদা লিভারের শক্তি, কৃমি নিঃসরণ করে, নাক, কান, গলাজনিত রোগের উপশম করে।
১৭. আদা খেলে
১৮. আদায় থাকা কিছু উপাদান মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে।
১৯. আদা মহিলাদের মাজুরতার সময় তল পেট ব্যথা ও শারীরিক অস্বস্তি দূর করে।
২০. আদার মধ্যে বিদ্যমান অ্যান্টিএইজিং উপাদান ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের টক্সিন
দূর করে এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে ত্বকে বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে।
২১. রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কার্যকরভাবে কমাতে সাহায্য করে।
আদার ব্যবহার: আদা মূলত গাছের শিকড়। মসলা হিসেবে আদার ব্যবহার সব
খাবারকেই সুস্বাদু করে।
২১. মেথি (الْـحُلْبَةُ) হুলবাহ্
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتِ الْقَاسِمِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْـمٰنِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّهٗ
(مُرْسَلًا) قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
اِسْتَشْفُوْا بِالْـحُلْبَةِ
অর্থ : “হযরত ক্বসিম ইবনে
আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা
মেথি দ্বারা আরোগ্য লাভ করো।” (তানযীহুশ শারীয়াহ্ ২য় খন্ড, ২৪৬ পৃষ্ঠা,
প্রকাশনা: দারুল কুতুবুল ইলমিয়্যাহ, বৈরূত,
লেবানন; যাদুল মা’য়াদ ৪র্থ
খণ্ড ২৬৯ পৃষ্ঠা; আদাবুশ শারী‘য়াহ ৩য় খণ্ড ১০৫ পৃষ্ঠা)
কিতাবে আরো বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ تَعْلَمُ اُمَّتِىْ مَا لَـهَا فِي
الْـحِلْبَةِ لَاسْتَرَدُّوْهَا وَلَوْ بِوَزْنِـهَا ذَهَبًا.
অর্থ : “হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি আমার উম্মত
জানত যে, মেথির মধ্যে কি উপকার রয়েছে! তাহলে তা স্বর্ণের
বিনিময়ে হলেও ওজন করে লুফে নিত।” সুবহানাল্লাহ! (মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারানী-১৫/৫)
উপকারিতা: সাধারণত ডায়াবেটিকের প্রতিষেধক হিসেবে মেথির পরিচিতি রয়েছে। কিন্তু
ডায়াবেটিক বিরোধী গুণ ছাড়াও মেথি অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন- • রক্তের কলেস্টেরল কমাতে
• আর্থ্রাইটিস রোগের চিকিৎসায়
• দুগ্ধদানকারীনি মায়ের বুকের দুধ
বাড়াতে
• প্রাকৃতিকভাবে বুকের জমাটবাধা কফ
নিঃসরণে সহায়ক
• এটি সাইনাস ও ফুসফুস সংকোচন সমস্যার
সমাধানে উপকারি
• অতিরিক্ত শ্লেষ্মা (কফ) হালকা করে
• ত্বকের ফোড়া, পুড়ে
যাওয়া অংশে মেথির ব্যবহার উপকারি
• আলসারের প্রতিষেধক হিসেবে সহায়ক।
0 Comments:
Post a Comment