পালোয়ানদের সর্দার হয়ে গেলেন আল্লাহওয়ালাদের সর্দার-পর্ব-২৮
এক বাদশাহের অধীনে একজন কুস্তিগীর ছিল, তার নাম ছিল জুনায়েদ। তাকে কেউ কখনো পরাজিত করতে পারেনি। বাদশাহ নানা দেশ থেকে কুস্তিগীরদেরকে তার সাথে লড়াই করার জন্য আমন্ত্রণ জানাতো। কিন্তু পৃথিবীর সব কুস্তিগীরকেই সে একে একে পরাজিত করলো। তখন বাদশাহ খুশি হয়ে ঘোষণা দিলো যদি কেউ তার কুস্তিগীরকে হারাতে পারে তাহলে তাকে এক লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হবে। অনেকে আসলো কুস্তি করতে, কিন্তু সবাই হেরে গেলো। বাদশাহ এতমিনান হলো যে, তার কুস্তিগীরই সেরা কুস্তিগীর।
একদিন একজন লোক আসলেন। উনার চেহারা সুরত দেখে উনাকে কুস্তিগীর বলে মনে হচ্ছিলো না। উনাকে সবাই কুস্তি লড়তে নিরুৎসাহিত করলো; কিন্তু তিনি বললেন, যেহেতু স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হবে, আর কুস্তির সুযোগও দেয়া হয়েছে তাই তিনি এসেছেন। কুস্তির দিন তারিখ, স্থান ঠিক হলো। অনেক দিন পর কুস্তি হবে এ জন্য বহু লোক জমা হলো। সেই ব্যক্তি এবং বাদশাহর পালোয়ান মুখোমুখি হলেন। দেখা গেলো, কুস্তি শুরু করার পূর্বে সেই ব্যক্তি পালোয়ানের কানে কানে কিছু কথা বললেন। পালোয়ান উনার কথা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন। উনার প্রদর্শনী থেমে গেলো। এতে সবাই খুব আশ্চর্য হলো। তারপর কুস্তি শুরু হলে দেখা গেলো, সেই ব্যক্তি চোখের পলকে পালোয়ানকে মাটিতে শুইয়ে তার সিনার উপর চড়ে বসলেন, পরপর তিনবার। দেখে মনে হচ্ছিলো পালোয়ানের নড়ারও কোন ক্ষমতা নেই। সেই ব্যক্তিকে জয়ী ঘোষণা করা হলো। তিনি পুরষ্কার নিয়ে চলে গেলেন।
বাদশাহ তাজ্জব হয়ে গেলো। পালোয়ান এসে বাদশাহকে বললেন যে, তিনি আর কখনও কুস্তি করবেন না। বাদশাহ পালোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো, সে পরাস্ত হলো কিভাবে? পালোয়ান বললেন, "আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন কুস্তি শুরু করার পূর্বে সেই ব্যক্তি আমাকে কানে কানে কিছু কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি একজন আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, অমুক স্থান থেকে এসেছেন। উনার এলাকায় তিনি প্রধান। সেখানে উনার অনেক বংশধর আছেন। উনারা অনেক সচ্ছল ছিলেন, কিন্তু ব্যবসা মন্দার কারণে অনেক ঋণ হয়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় উনার পরিবারের সম্মান ইজ্জত রক্ষা করা কঠিন হয়ে গিয়েছে। তিনি বাদশাহের ঘোষণা শুনে ভেবেছেন, পুরষ্কার যদি পাওয়া যায় তাহলে ঋণ পরিশোধ করে দেয়া যাবে। তিনি কোনো কুস্তিগীর নন, কখনও কুস্তি করেননি, কুস্তির নিয়মকানুনও জানেন না। তিনি বলেছেন 'হে পালোয়ান! তুমি অনেক বড় পালোয়ান এবং যুবক, আর আমার বয়স হয়েছে। তোমার এই শক্তি কিন্তু সবসময় থাকবে না। কিন্তু আমি যেহেতু আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাই তুমি যদি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানার্থে আমার কাছে পরাজিত হও, তাহলে আমি পুরস্কার পাবো আর আমাদের শত শত লোকের সম্মান রক্ষা হবে। আমরা তোমার জন্য দোয়া করবো। আর মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা তোমাকে ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী দিবেন; সেটাই তোমার জন্য স্থায়ী হবে।' আমি ভাবলাম, আমি কি করবো? আমার এত নাম যশ খ্যাতি! কিন্তু আসলেই এগুলো চিরস্থায়ী না। কিন্তু আমি এই ব্যক্তির সম্মানার্থে যদি পরাজিত হই, তাহলে আমার নাম যশ খ্যাতি নষ্ট হলেও মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি রেযামন্দি হাছিল করতে পারবো। তাই আমি ইচ্ছা করেই পরাজিত হয়েছি এবং আর কখনও কুস্তি করবো না।" বাদশা বললো, 'সেই ব্যক্তি যে আসলেই আওলাদে রসূল তার কোনো প্রমাণ তো তোমার কাছে ছিল না।' পালোয়ান বলল, 'না, কিন্তু আমি উনাকে বিশ্বাস করেছিলাম।'
সেই রাতে পালোয়ান স্বপ্নে দেখলো হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ মুবারক এনেছেন। তিনি পালোয়ানকে বললেন, 'হে জুনায়েদ! তুমি আজকে যে কাজটা করেছো; আমার সম্মানার্থে তোমার সব মান-সম্মান
বিসর্জন দিয়েছো, তাতে আমি তোমার উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেছি। সেই ব্যক্তি আসলেও আমার আওলাদ এবং ঋণগ্রস্ত। তুমি তো পালোয়ানদের সর্দার ছিলে তাই আমিও তোমাকে "সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা" অর্থাৎ আল্লাহওয়ালাদের সর্দার করে দিলাম।' সুবহানাল্লাহ! পালোয়ান ঘুম থেকে উঠে তওবা ইস্তেগফার করলেন, শুকরিয়া আদায় করলেন। বাদশাহকে জানালেন যে, তিনি ঠিক কাজই করেছিলেন। এই পালোয়ান সত্যিই পরে রিয়াজত-মাশাক্কাত করে মহান আল্লাহ পাক উনার অনেক বড় ওলী হয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
0 Comments:
Post a Comment