১০০টি চমৎকার ঘটনা - পর্ব-৩১ ( আওলাদে রসূল ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামগণের খিদমত করার প্রতিদান )



আওলাদে রসূল ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামগণের খিদমত করার প্রতিদান-পর্ব-৩১

"আনোয়ারুল আরেফীন” নামক কিতাবে হযরত রবী বিন সুলায়মান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন যে, আমি একদিন হজ্জ যাত্রীদের সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। আমরা কুফা নামক স্থানে পৌঁছে প্রত্যেকেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করার জন্য বাজারে গেলাম। হঠাৎ বাজারের

পাশে একটি জঙ্গল আমার দৃষ্টিগোচরে আসলো। সেখানে মৃত একটি খচ্চর বা গাধা পড়ে আছে, আর জীর্ণ-শীর্ণ কাপড় পরিহিতা এক মহিলা (যাকে দেখে মনে হলো অত্যন্ত শরীফ) তিনি চাকু দিয়ে খচ্চর বা গাধার গোশত কেটে কেটে উনার থলিতে ভরছেন।

তখন আমার সন্দেহ হলো যে, মহিলাটি মৃত জন্তুর গোশত নিয়ে বাজারে বিক্রি করে কিনা? তা দেখার জন্য আমি অতি সংগোপনে উনার পিছে পিছে যেতে লাগলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর মহিলাটি একটি বাড়ির দরজার কড়া নাড়লেন, তখন জীর্ণ-শীর্ণ কাপড় পরিহিতা চারটি মেয়ে দরজা খুলে দিলেন। উনাদেরকে দেখেও মনে হলো, অত্যন্ত শরীফ বংশের লোক। মহিলাটি ঘরে প্রবেশ করে ক্রন্দনরত অবস্থায় উনাদেরকে বললেন, এ গোশতগুলো রান্না করো এবং মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করো।

আমি এ হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে সেই মহিলাকে ডাক দিয়ে বললাম, "হে মহান আল্লাহ পাক উনার বান্দীগণ! আপনাদের এ হারাম গোশত খাওয়ার পিছনে কি কারণ রয়েছে? আপনারা কি মজুসী? আমার জানা মতে মজুসীদের মধ্যে একদল আছে, যারা মৃত গাধার গোশত খাওয়া জায়িয মনে করে।" এর জবাবে মহিলাটি পর্দার আড়াল থেকে বললেন, "হে অপরিচিত ব্যক্তি! আপনার হয়তো জানা নেই, আমরা হলাম নবুওওয়াতী খান্দানের লোক অর্থাৎ আওলাদে রসূল।

আমাদেরকে যিনি রক্ষণাবেক্ষণ করতেন অর্থাৎ এই মেয়েদের পিতা, তিনি গত তিন বৎসর পূর্বে ইন্তিকাল করেছেন। পরিত্যক্ত সম্পদ যা ছিল, তা শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের জানা আছে যে, মৃত জন্তুর গোশত খাওয়া জায়িয নেই। কিন্তু আমরা আজ তিন দিন যাবত না খেয়ে রয়েছি, এখন আমাদের জন্য মৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া মুবাহ।"

হযরত রবী বিন সুলায়মান রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, "আমি সম্মানিতা আওলাদে রসূল উনার এই হৃদয় বিদারক ঘটনা শুনে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। অতঃপর বললাম, "আপনারা এ সমস্ত খাদ্য দয়া করে খাবেন না। আমি খাদ্যের ব্যবস্থা করছি।" একথা বলে বাজারে গিয়ে উনাদের জন্য কাপড়-চোপড় এবং খাবার কিনে আনলাম এবং ছয়শত দিরহাম উনাদেরকে হাদিয়া স্বরূপ দিলাম। যদিও এর কারণে আমার হজ্জে যাওয়ার টাকা-পয়সা শেষ হয়ে গিয়েছে।

এগুলো পেয়ে উনারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। মহিলাটি দোয়া করলেন,

"আয় আল্লাহ পাক, হযরত রবী বিন সুলায়মান রহমাতুল্লাহি আলাইহি উনার আগের এবং পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করুন এবং উনাকে জান্নাত নছীব করুন।"

বড় মেয়েটি দোয়া করলেন, "আয় আল্লাহ পাক। উনার গুনাহ মাফ করে দ্বিগুণ ছাওয়াব দান করুন।"

দ্বিতীয় মেয়েটি দোয়া করলেন, "আয় আল্লাহ পাক। তিনি যা দান করেছেন, উনাকে তার চেয়ে বেশি দান করুন।"

তৃতীয় মেয়েটি দোয়া করলেন, "আয় আল্লাহ্ পাক! উনাকে আমাদের নানা রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একত্রিত হওয়ার তাওফীক দান করুন।"

এবং সবশেষে ছোট মেয়েটি বললেন, "আয় আল্লাহ পাক! তিনি আমাদের প্রতি যে ইহসান করেছেন, এজন্য উনাকে অচিরেই উত্তম জাযা দান করুন।"

অতঃপর আমি কুফায় এসে দেখলাম হাজীদের কাফেলা হজ্জের উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছে। তখন আমি সেখানেই অবস্থান করতে থাকলাম। যথাসময়ে হাজীদের প্রত্যাবর্তনের সময় হয়ে আসলো। উনাদের অভ্যর্থনা জানিয়ে দোয়া নেয়ার জন্য আমি রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম।

হাজীদের কাফেলা পর্যায়ক্রমে আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি উনাদেরকে মুবারকবাদ দিচ্ছিলাম। আর উনারা প্রত্যেকেই আমাকে দেখে অবাক হয়ে বলছিলেন, আপনি কিভাবে আমাদের পূর্বেই চলে এলেন? আমরা আপনাকে তো আরাফার ময়দানে, মুযদালিফায়, মিনাতে, মদীনা শরীফে, হজ্জের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেখেছি। এমনকি একজন হাজী বললেন, "আপনি রওযা শরীফ যিয়ারত করার পর বাবে জিব্রাঈল থেকে বের হওয়ার সময় হাজীদের ভীড়ের কারণে আমার কাছে আমানতস্বরূপ এ থলেটি রেখেছিলেন। এখন আপনার থলেটি আপনি গ্রহণ করুন।" উক্ত হাজী সাহেব এমনভাবে বললেন যে, থলেটি আমাকে গ্রহণ করতেই হলো। কিন্তু ইতোপূর্বে এ থলেটি আর কখনো দেখিনি।

অতঃপর আমি বাড়িতে এসে ঘটনাগুলো ফিকির করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দীদার মুবারক লাভ হলো। আমি সালাম দিয়ে উনার হস্ত মুবারক চুম্বন করলাম। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি হেসে বললেন, "হে রবী বিন

সুলাইমান! তুমি যে হজ্জ করেছো, তা প্রমাণ করার জন্য আমি আর কতজন সাক্ষী পেশ করবো?" জবাবে আমি বললাম, "ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দুনিয়ার আর কেউ না জানুক আপনি তো জানেন যে, আমি এ বৎসর হজ্জ করিনি।"

হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "হ্যাঁ তুমি হজ্জে যাওনি ঠিকই; কিন্তু যখন তুমি আমার সম্মানিতা আওলাদ উনাদের খিদমত মুবারকের আনজাম দিলে, আর উনারা তোমার জন্য দোয়া করলেন, তখন আমিও উনাদের সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দোয়া করলাম যেন মহান আল্লাহ পাক তোমাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করেন। এই দোয়ার কারণে মহান আল্লাহ পাক তোমার আকৃতিতে একজন ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন। সেই ফেরেশতা তোমার পক্ষ হয়ে, তোমার আকৃতিতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত প্রতি বছর হজ্জ করবেন, আর তার ছওয়াব তোমার আমলনামায় পৌঁছতে থাকবে। আর উক্ত থলিতে তোমাকে তোমার ছয়শত রৌপ্যমুদ্রার পরিবর্তে ছয়শত স্বর্ণমুদ্রা দেয়া হয়েছে।"

অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বাক্যটি উচ্চারণ করলেন, "আমাদের সাথে যে ব্যবসা করে, সে লাভবান হয়।” সুবহানাল্লাহ!

0 Comments: