হস্তি বাহিনীর ধ্বংস এবং সংশ্লিষ্ট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘটনা মুবারকসমূহ -২২ শে মুহরমুল হারাম শরীফ


 হস্তি বাহিনীর ধ্বংস এবং সংশ্লিষ্ট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘটনা মুবারকসমূহ (১ম পর্ব) 

 কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার পরিচিতি:

ইয়ামানের নাজরান প্রদেশে হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রকৃত অনুসারীদের অবশিষ্ট কিছু লোক তখনও বেঁচে ছিলেন। উনারা ছিলেন জ্ঞানী-গুণী ও সুদৃঢ় মনোবলের অধিকারী। উনাদের সাইয়্যিদ ছিলেন আবুদল্লাহ ইবনে ছামির। ইয়াহূদী বংশদ্ভুত যূ-নাওয়াস নামক এক জালিম শাসক উনাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে ইহুদী ধর্ম গ্রহণের দাওয়াত দেয় এবং পরিষ্কার বলে দেয়, “হয় ইহুদী হও, অন্যথায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।” উনারা ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। যার ফলে উনাদের জন্য সে পরিখা খনন করে। শেষ পর্যন্ত উনাদেরকে সেখানে ফেলে নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে মারে এবং অনেককে তরবারি দিয়ে হত্যা করে উনাদের লাশ বিকৃত করে। এভাবে যালিম যূ-নাওয়াস প্রায় ২০ হাজার লোককে হত্যা করে। 

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, 

 قُتِلَ أَصْحَابُ الْأُخْدُودِ. النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ. إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ. وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ. وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلَّا أَنْ يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ

অর্থ: “ধ্বংস হয়েছে গর্তওয়ালারা বা গর্তের অধিকারীরা। (যে গর্ত) ইন্দনবিশিষ্ট অগ্নিকু-ে পরিপূর্ণ। স্মরণ করুন, ঐ সময়ের কথা যখন তারা তার কিনারে বসা ছিলো এবং মু’মিনদের (হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার দীনের অনুসারীদের) প্রতি তারা যে হত্যাকা- চালাচ্ছিলো তারা সেই দৃশ্য উপভোগ করছিলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! মু’মিনদের প্রতি তাদের শুধু এই কারণেই আক্রোশ ছিলো যে, উনারা প্রশংসিত মহাপরাক্রমশীল মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান এনেছিলেন।” (সম্মাানিত ও পবিত্র সূরা বুরূজ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪-৮)

এই নির্মম হত্যাকা- থেকে সাবা গোত্রের দাউস যূ-সুলুবান নামক এক ব্যক্তি সুকৌশলে বেঁচে গিয়ে রোম শাসক কাইছারের নিকট এই নির্মম হত্যাকা-ের প্রতিশোধ নেয়ার ব্যাপারে সাহায্য প্রার্থনা করে। তখন কাইছার বলে, ‘তোমার দেশ আমার এখান থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। তাই আমি হাবশা তথা আবিসিনিয়ার রাজাকে চিঠি প্রেরণ করবো। সেও আমার ধর্মাবলম্বী। তাছাড়া তার দেশও তোমার দেশের কাছাকাছি।’ তারপর দাউস যূ সুলুবান রোম শাসক কাইছারের চিঠি নিয়ে হাবশার শাসকের কাছে হাজির হলো। তখন হাবশার শাসক সত্তর হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী দাউসের সাথে পাঠিয়ে দিলো। আর সেই বাহিনীর সেনাপতি করা হলো ‘আরিয়াত’ নামক এক ব্যক্তিকে। তার সহযোগী হিসেবে ঐ বাহিনীতে আবরাহা আল আশরাম তথা নাক কাটা আবরাহা সেও ছিলো। 

আরিয়াতের রওনার খবর পেয়ে যূ-নাওয়াস এবং তার অনুগামী অন্যান্য ইয়ামানী গোত্র আরিয়াতের সৈন্যদের বাধা দিতে এগিয়ে গেলো। উভয় পক্ষে তুমুল লড়াই হলো। অবশেষে যূ-নাওয়াসের দলবল পরাজিত হলো। এ অবস্থায় যূ-নাওয়াস তার ঘোড়া নিয়ে সমুদ্রের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং সেখানেই সে মারা গেলো। আর এখানেই যালিম যূ-নাওয়াস ও তার ইহুদীবাদী শাসনের অবসান ঘটলো এবং আরিয়াত ইয়ামানে প্রবেশ করে সিংহাসনে আরোহণ করলো। (ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উন্ফ)

 সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, 

قُتِلَ أَصْحَابُ الْأُخْدُودِ.

অর্থ: “ধ্বংস হয়েছে গর্তওয়ালারা বা গর্তের অধিকারীরা।” (সম্মাানিত ও পবিত্র সূরা বুরূজ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪-৮)

অতঃপর আরিয়াত দীর্ঘদিন ইয়ামানের শাসন পরিচালনা করে। তারপর কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা আরিয়াতের সাথে দ্বন্দে লিপ্ত হয়। সে মিথ্যা দাবী করে বলে যে, রাজার প্রতিনিধি হিসেবে ইয়ামান শাসন করার অধিকার তারই বেশী। এই প্রশ্নে হাবশী সৈন্যরা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে যুদ্ধের উপক্রম হলে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা আরিয়াতকে এই বলে বার্তা পাঠায় যে, “হাবশীরা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হলে নিজেরাই ধবংস হযে যাবে, পরিণামে কোন লাভ হবে না। সুতরাং আসো আমরা দু’জন সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হই। আমাদের দু’জনের মধ্যে যে বিজয়ী হবে, সমস্ত সৈন্যবাহিনী তার আনুগত্য করবে।” সরলমনা আরিয়াত কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার চক্রান্ত বুঝতে না পেরে এই প্রস্তাবে রাজী হয়ে বললো, “হ্যাঁ, তুই  ঠিকই বলেছিস।” তারপর আরিয়াত ও আবরাহার মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হলো। কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা নিজের আত্মরক্ষার জন্য তার অনুগত এক ক্রীতদাসকে পিছনের দিকে রাখে। আরিয়াত তার তরবারি দ্বারা কাট্টা যালিম আবরাহার মাথায় আঘাত করলো, কিন্তু তা তার মুখম-লের উপর লাগলো। এতে কাট্টা যালিম আবরাহার নাক ও কপালের ভ্রু কেটে গেল এবং ঠোঁট ও চোখ আঘাতপ্রাপ্ত হলো। এ কারণেই তাকে আবরাহা আল-আশরাম বা নাক কাটা আবরাহা বলা হয়। তখন কাট্টা যালিম আবরাহার ক্রীতদাস পিছন থেকে এসে আরিয়াতকে আক্রমণ করে হত্যা করলো। এরপর আরিয়াতের অনুগত হাবশী সৈন্যরা আবরাহার দলে চলে যায় এবং নাক কাটা আবরাহা আবিসিনিয়ার প্রতিনিধিরূপে ইয়ামান শাসন করতে থাকে। 

হস্তি বাহিনী ধ্বংসের ঘটনা:

 কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা জানতে পারলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে এমন একখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক রয়েছেন, যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ বলা হয়। উনাকে সমস্ত মানুষ অত্যন্ত সম্মান, তা’যীম-তাকরীম করেন, উনাকে তাওয়াফ করেন এবং উনাকে কেন্দ্র করে হজ্জ সম্পাদন করেন। সুবহানাল্লাহ! তখন সে হিংসাবশত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র  কা’বা শরীফ উনার বিকল্প হিসেবে, উনাকে ইহানত করার জন্য এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ কেন্দ্রীক হজ্জ ও তাওয়াফ বন্ধ করার জন্য ইয়ামানের সানা শহরে একটি গির্জা তৈরী করে। যাকে ‘খলীছা’ নামে নামকরণ করা হয়। এই সংবাদ যখন আরবগণ শুনলেন, তখন কিছু আরব ব্যবসায়ী ইয়ামানে ব্যবসার উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন এবং এই গির্জায় রাতে অবস্থান করেছিলেন। উনারা সেখান থেকে রওনা দেয়ার পূর্বে উনাদের মধ্য থেকে একজন গোস্বা করে নাক কাটা আবরাহার নিকৃষ্ট কাজের প্রতিবাদে এই গির্জার এককোণে ইস্তেন্জা করে চলে আসেন। এটা দ্বারা তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন যে, “এই গীর্জা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার বিকল্প হতে পারে না এবং এটা কখনোই হজ্জের কেন্দ্র হওয়ার যোগ্য নয়।” তখন কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা এই খবর শুনতে পেয়ে ভীষণভাবে রেগে যায় এবং সে অঙ্গীকার করে অবশ্যই সে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে ধ্বংস করে ফেলবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!

হাবশীদেরকে সে তার নিকৃষ্ট মনোবাসনা জানালে হাবশীরা সব রকমের উপকরণ ও সরঞ্জাম দিয়ে তাকে প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। যথাসময়ে সে একদল হস্তী নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ অভিযানে বেরিয়ে পড়ে। আরবরা ব্যাপারটা জানতে পেরে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা ধ্বংস করতে চায় শুনে আরবগণ উপলব্ধি করলেন যে, তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা উনাদের একান্ত কর্তব্য।

কাট্টা যালিম আবরাহার নিকৃষ্ট কাজের প্রতিবাদ এবং তাকে প্রতিহত করার চেষ্টা:

ইয়ামানের জনৈক সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ‘যূ-নফর’ সমগ্র ইয়মানবাসী এবং অন্যান্য আরবদেরকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে রক্ষা করার জন্য কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার বিরূদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হতে আহ্বান জানান। যারা উনার আহ্বানে সাড়া দেয়, তিনি তাদের নিয়ে আবারাহার বিরুদ্ধে জিহাদ করলেন। কিন্তু যূ-নফর উনার বাহিনী সুবিধা করতে পারেননি। ফলে তিনি বন্দী হন। এরপর কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা তার হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার জন্য সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। 

‘খাস’য়াম’ নামক গোত্রের এলাকায় পৌঁছলে নুফাইল ইবনে হাবীব আল্ খাসয়ামী দু’টি খাসয়ামী গোত্র শাহরান ও নাহিস এবং আরো কয়েকটি সমমনা আরব গোত্রকে সাথে নিয়ে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। যুদ্ধে নুফাইলও সদলবলে পরাজিত ও বন্দী হয়। 

কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা নুফাইলকে মুক্তি দিলে নুফাইল তার পথ প্রদর্শক হিসেবে সহযাত্রী হয়। 

কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা যখন তায়েফের উপর দিয়ে এগিয়ে চলে, তখন সাকীফ গোত্রের কিছু লোকজন নিয়ে মাস‘ঊদ ইবনে মু’আততিব তার সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তাকে বলে, “হে রাজা, আমরা একান্ত অনুগত গোলামতুল্য। তোমার বিরোধী নই আমরা। তুমি যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে লক্ষ্য করে চলেছো, ওটা আমাদের উপাসনার ঘর নয়। তুমি তো চাইছো মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার মহসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক-এ হামলা চালাতে। বেশ; আমরা তোমার পথপ্রদর্শক হিসেবে একজন লোক সঙ্গে দিচ্ছি। সে তোমাকে দেখিয়ে দেবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ।”

কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা তাদের প্রতি প্রীত ও সদয় হয়। তায়েফবাসী তার সাথে ‘আবূ রিগাল’ নামক এক নিকৃষ্ট ব্যক্তিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার পথ দেখিয়ে দেয়ার জন্য পাঠায়। আবরাহা ও তার দলবলকে সাথে নিয়ে ‘মুগাম্মাস’ নামক স্থানে উপনীত হলে আবু রিগাল মারা যায়। (‘মুগাম্মাস’ হচ্ছে তায়েফগামী পথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার নিকটবর্তী একটি স্থানের নাম।) পরবর্তীকালে আরববাসী আবূ রিগালের কবরে পাথর নিক্ষেপ করতো এবং আজও ‘মুগাম্মাস’ নামক স্থানে তার কবরে মানুষ পাথর নিক্ষেপ করে থাকে।

কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা ‘মুগাম্মাস’ নামক স্থানে যাত্রাবিরতি করা অবস্থায় ‘আসওয়াদ বিন মাকসূদ’ নামক এক হাবশী ব্যক্তিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ পরিদর্শনে পাঠায়। আসওয়াদ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ পর্যন্ত যায় এবং ফিরে আসার সময় উপত্যকায় চারণভূমিতে বিচরণশীল কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্রের লোকদের গবাদি পশু লুট করে নিয়ে আসে। এইসব গবাদি পশুর মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুইশত উটও ছিল। তিনি ঐ সময় কুরাইশ উনাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি এবং উনাদের সাইয়্যিদ তথা প্রধান ছিলেন। গবাদি পশু লুট করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ ঐ এলাকার কুরাইশ, কিনানা এবং হুযাইল গোত্র আবরাহার বিরূদ্ধে জিহাদ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু উনাদের অপ্রস্তুতির কারণে উনারা সেই ইচ্ছা ত্যাগ করেন। (ইবনে হিশাম, আর রওদ্বুল উন্ফ)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার বার্তা বাহক:

এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

وَبَعَثَ أَبْرَهَةُ حُنَاطَةَ الْحِمْيَرِيّ إلَى مَكّةَ وَقَالَ لَهُ سَلْ عَنْ سَيّدِ أَهْلِ هَذَا الْبَلَدِ وَشَرِيفِهَا، ثُمّ قُلْ لَهُ إنّ الْمَلِكَ يَقُولُ لَك : إنّي لَمْ آتِ لِحَرْبِكُمْ إنّمَا جِئْت لِهَدْمِ هَذَا الْبَيْتِ فَإِنْ لَمْ تَعْرِضُوا دُونَهُ بِحَرْبِ فَلَا حَاجَةَ لِي بِدِمَائِكُمْ فَإِنْ هُوَ لَمْ يُرِدْ حَرْبِي ، فَأْتِنِي بِهِ فَلَمّا دَخَلَ حُنَاطَةُ مَكّةَ ، سَأَلَ عَنْ سَيّدِ قُرَيْشٍ وَشَرِيفِهَا ، فَقِيلَ لَهُ عَبْدُ الْمُطّلِبِ بْنُ هَاشِمٍ فَجَاءَهُ فَقَالَ لَهُ مَا أَمَرَهُ بِهِ أَبْرَهَةُ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الْمُطّلِبِ : وَاَللّهِ مَا نُرِيدُ حَرْبَهُ وَمَا لَنَا بِذَلِكَ مِنْ طَاقَةٍ هَذَا بَيْتُ اللّهِ الْحَرَامِ وَبَيْتُ خَلِيلِهِ إبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السّلَامُ - أَوْ كَمَا قَالَ - فَإِنْ يَمْنَعْهُ مِنْهُ فَهُوَ بَيْتُهُ وَحَرَمُهُ وَإِنْ يُخَلّ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ فَوَاَللّهِ مَا عِنْدَنَا دَفْعٌ عَنْهُ فَقَالَ لَهُ حُنَاطَةُ فَانْطَلِقْ مَعِي إلَيْهِ فَإِنّهُ قَدْ أَمَرَنِي أَنْ آتِيَهُ بِك . 

অর্থ: “কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা ‘হুনাতাহ আল হিমইয়ারী’ নামক এক ব্যক্তিকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ পাঠায় এবং বলে দেয় যে, ‘মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং যিনি সাইয়্যিদ তথা প্রধান, উনাকে চিনে নিবে। অতঃপর উনাকে বলবে যে, আমি (কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা) আপনাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসেনি। আমি এসেছি শুধু মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে ধ্বংস করতে। (না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!) আপনারা যদি এই কাজে বাধা দিতে কোনো যুদ্ধ-জিহাদে লিপ্ত না হন, তাহলে আপনাদের রক্তপাতের কোনো প্রয়োজন আমার নেই। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং যিনি সাইয়্যিদ তথা প্রধান তিনি যদি যুদ্ধ-জিহাদ না করতে চান, তাহলে উনাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে।’ অতঃপর হুনাত্বাহ নামক ঐ ব্যক্তি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ প্রবেশ করে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলো যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তিত্ব মুবারক এবং সাইয়্যিদ হচ্ছেন- সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সে উপস্থিত হয়ে হয়ে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা তাকে যা বলতে বলেছিলো তা বললো। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে বললেন,

وَاَللّهِ مَا نُرِيدُ حَرْبَهُ وَمَا لَنَا بِذَلِكَ مِنْ طَاقَةٍ هَذَا بَيْتُ اللّهِ الْحَرَامِ وَبَيْتُ خَلِيلِهِ إبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السّلَامُ أَوْ كَمَا قَالَ فَإِنْ يَمْنَعْهُ مِنْهُ فَهُوَ بَيْتُهُ وَحَرَمُهُ وَإِنْ يُخَلّ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ فَوَاَللّهِ مَا عِنْدَنَا دَفْعٌ عَنْهُ 

‘মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা তার সাথে যুদ্ধ-জিহাদ করতে চাইনা এবং সেই প্রস্তুতিও আমাদের নেই। এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র খলীল সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। অথবা তিনি যেমনটি বলেছেন। কাজেই নিশ্চয়ই তিনিই কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার ব্যাপারে বাধা দিবেন। এটা উনার নিজস্ব মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক এবং উনার নিজস্ব ইয্যত-সম্মান মুবারক উনার ব্যাপার। আর যদি তিনি বাধা না দেন, তাহলে সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার বিষয়। মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে প্রতিহত করার কোনো প্রস্তুতি আমাদের নেই।’

তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে হুনাত্বাহ নামক ঐ ব্যক্তি বললো, 

فَانْطَلِقْ مَعِي إلَيْهِ فَإِنّهُ قَدْ أَمَرَنِي أَنْ آتِيَهُ بِك 

অর্থ: “(দয়া করে) আপনি আমার সাথে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার কাছে চলুন। কারণ অবশ্যই সে আমাকে আদেশ করেছে যে, আমি যেনো আপনাকে তার কছে নিয়ে যাই।”

কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,

أَنَّ عَبْدَ الْـمُطَّلِبِ لَـمَّا دَخَلَ عَلٰى اَبْرَهَةَ سَجَدَ لَه فِيْل من الفيلة، 

 অর্থ: “যখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবরাহার নিকট গেলেন, তখন হাতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাতিটি উনাকে সিজদা করলো।” সুবহানাল্লাহ! (সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ) 

কিতাবে বর্ণিত আরো রয়েছেন,

فَلَمَّا نظر الْفِيل إِلَى وَجه حضرت عبد الْمطلب عليه السلام بَرَكَ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيْرُ وَخَرَّ سَاجِدًا 

অর্থ: “যখন হাতিটি সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখলো, তখন সে উটের ন্যায় হাঁটু গেড়ে বসলো এবং উনার সম্মানার্থে সেজাদয় লুটিয়ে পড়লো।” সুবহানাল্লাহ! (সিমতুন নুজূম)

হস্তি বাহিনীর ধ্বংস এবং সংশ্লিষ্ট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘটনা মুবারকসমূহ (২য় পর্ব)

 সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গোপন সূত্রে সংবাদ প্রেরণ এবং সংবাদ শুনার পর মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করা

কাট্টা যালিম আবরাহা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার কাছাকাছি পৌঁছলে এক ব্যক্তি গোপন সূত্রে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট চিরকুটের মাধ্যমে কাট্টা যালিম আবরাহা এবং তার সৈন্য-সামন্ত সম্পর্কিত তথ্য পেশ করে। চিরকুটখানা নি¤œরূপ-

الى عبد المطلب بن هاشم سيد قريش ان ابرهة قادم اليكم بجيش جراد ومعه الفيل لهدم الكعبة

অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সাইয়্যিদ উনার প্রতি- ‘নিশ্চয়ই কাট্টা যালিম আবরাহা পঙ্গপালের ন্যায় অসংখ্য সৈন্য-সামন্ত নিয়ে আপনাদের দিকে অগ্রসর হয়ে আসছে। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ ধ্বংস করার জন্য তার সাথে হাতি রয়েছে’।”

চিরকুটের মাধ্যমে এই গোপন সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথেই সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র দরবার শরীফ-এ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করেন- 

يا رب الكعبة احفظ بيتك

অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে হিফাযত করুন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের বহিঃপ্রকাশ:

কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

وَكَانَ عَبْدُ الْمُطّلِبِ أَوْسَمَ النّاسِ وَأَجْمَلَهُمْ وَأَعْظَمَهُمْ فَلَمّا رَآهُ أَبْرَهَةُ أَجَلّهُ وَأَعْظَمَهُ وَأَكْرَمَهُ عَنْ أَنْ يُجْلِسَهُ تَحْتَهُ وَكَرِهَ أَنْ تَرَاهُ الْحَبَشَةُ يَجْلِسُ مَعَهُ عَلَى سَرِيرِ مُلْكِهِ فَنَزَلَ أَبْرَهَةُ عَنْ سَرِيرِهِ فَجَلَسَ عَلَى بِسَاطِهِ وَأَجْلَسَهُ مَعَهُ عَلَيْهِ إلَى جَنْبِهِ ثُمّ قَالَ لِتُرْجُمَانِهِ قُلْ لَهُ حَاجَتُك ؟ فَقَالَ لَهُ ذَلِكَ التّرْجُمَانُ فَقَالَ حَاجَتِي أَنْ يَرُدّ عَلَيّ الْمَلِكُ مِئَتَيْ بَعِيرٍ أَصَابَهَا لِي ، فَلَمّا قَالَ لَهُ ذَلِكَ قَالَ أَبْرَهَةُ لِتُرْجُمَانِهِ قُلْ لَهُ قَدْ كُنْت أَعْجَبْتنِي حين رأيتك ثم زهدت فيك حين كلمتني أتكلمني في مائتي بعير أصبتها لك وتترك بيتا هو دينك وَدِينُ آبَائِك قَدْ جِئْت لِهَدْمِهِ لَا تُكَلّمُنِي فِيهِ ؟ قَالَ لَهُ عَبْدُ الْمُطّلِبِ : إنّي أَنَا رَبّ الْإِبِلِ وَإِنّ لِلْبَيْتِ رَبّا سَيَمْنَعُهُ قَالَ مَا كَانَ لِيَمْتَنِعَ مِنّي ، قَالَ أَنْتَ وَذَاكَ . وَكَانَ - فِيمَا يَزْعُمُ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ - قَدْ ذَهَبَ مَعَ عَبْدِ الْمُطّلِبِ إلَى أَبْرَهَةَ حِينَ بَعَثَ إلَيْهِ حُنَاطَةَ يَعْمُرُ بْنُ نُفَاثَةَ بْنِ عَدِيّ بْنِ الدّئْلِ بْنِ بَكْرِ بْنِ مَنَاةَ بْنِ كِنَانَةَ - وَهُوَ يَوْمَئِذٍ سَيّدُ بَنِي بَكْرٍ - وَخُوَيْلِدُ بْنُ وَاثِلَةَ الْهُذَلِيّ - وَهُوَ يَوْمَئِذٍ سَيّدُ هُذَيْلٍ - فَعَرَضُوا عَلَى أَبْرَهَةَ ثُلُثَ أَمْوَالِ تِهَامَةَ ، عَلَى أَنْ يَرْجِعَ عَنْهُمْ وَلَا يَهْدِمَ الْبَيْتَ فَأَبَى عَلَيْهِمْ . وَاَللّهُ أَعْلَمُ أَكَانَ ذَلِكَ أَمْ لَا ، فَرَدّ أَبْرَهَةُ عَلَى عَبْدِ الْمُطّلِبِ الْإِبِلَ الّتِي أَصَابَ لَهُ 

অর্থ: “আর সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন এবং অনেক সুন্দর ও বেমেছাল মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব মুবারক। সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেই নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহা মুগ্ধ ও অভিভূত হলো। সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সে এতখানি সম্মানিত মনে করলো যে, নিজে উচ্চ আসনে বসে উনাকে নীচে বসতে দিতে পারলো না। পক্ষান্তরে সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হাবশীরা নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহার সাথে একই রাজকীয় আসনে উপবিষ্ট দেখুক, সেটাও সে পছন্দ করলো না। তাই নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহা নিজের রাজকীয় আসন থেকে নেমে নীচের বিছানায় বসলো এবং সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সেখানে নিজের পাশে বসালো। অতঃপর দোভাষীকে বললো, “উনাকে প্রয়োজনীয় বিষয় বলতে বলো।” দোভাষী সেটা উনাকে বললো। তখন সাইয়্যদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আমার প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে- আমার যে দুই শত উট নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহার হাতে এসেছে, তা ফেরত দেয়া হোক।” দোভাষী যখন একথা নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহাকে বললো, তখন নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহা দোভাষীকে বললো, উনাকে বলো- 

قَدْ كُنْت أَعْجَبْتنِي حين رأيتك ثم زهدت فيك حين كلمتني أتكلمني في مائتي بعير أصبتها لك وتترك بيتا هو دينك وَدِينُ آبَائِك قَدْ جِئْت لِهَدْمِهِ لَا تُكَلّمُنِي فِيهِ قَالَ لَهُ عَبْدُ الْمُطّلِبِ إنّي أَنَا رَبّ الْإِبِلِ وَإِنّ لِلْبَيْتِ رَبّا سَيَمْنَعُهُ قَالَ مَا كَانَ لِيَمْتَنِعَ مِنّي قَالَ أَنْتَ وَذَاكَ

অর্থ: “অবশ্যই আপনি আমাকে অবিভূত করেছিলেন যখন আমি আপনাকে দেখেছিলাম। আপনি যখন আমার সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক বললেন, তখন (আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক শুনে) আপনার প্রতি আমার ভীষণ বীতশ্রদ্ধা জন্মে গেছে। আপনিক কি আমার সাথে দু’শত উটের বিষয় নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক বলছেন, যা আমি আপনার থেকে লুট করেছি? অথচ আপনার এবং আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীনের কেন্দ্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ- যা ধ্বংস করার জন্য আমি এসেছি, সেই বিষয়ে আপনি কিছুই বলছেন না?” সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আমি শুধু উটেরই মলিক। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার একজন মালিক রয়েছেন। অবশ্যই তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে রক্ষা করবেন।” নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহা বললো, “আমার আক্রমণ থেকে কেউই (এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে) রক্ষা করতে পারবেন না।” সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “সেটা তোমার আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মালিক উনার ব্যাপার।” সুবহানাল্লাহ! (আর রওদ্বুল উন্ফ ১/১২০)

فَرَدّ أَبْرَهَةُ عَلَى عَبْدِ الْمُطّلِبِ الْإِبِلَ الّتِي أَصَابَ لَهُ

অর্থ: “অতঃপর নাক কাটা কাট্টা যালিম আবরাহা যেই উটগুলি লুট করেছিলে সেগুলো সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ফিরিয়ে দিলো।”


সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক এবং বেমেছাল মহাসম্মানিত ও সমহাপবিত্র তাওয়াক্কুল মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক:

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফিরে এসে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে কাট্টা যালিম যালিম আবরাহা এবং তার সৈন্য-সামন্ত সম্পর্কে অবহিত করেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক সংরক্ষণ করার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করেন। এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

انْصَرَفَ عَبْدُ الْمُطّلِبِ إلَى قُرَيْشٍ فَأَخْبَرَهُمْ الْخَبَرَ وَأَمَرَهُمْ بِالْخُرُوجِ مِنْ مَكّةَ وَالتّحَرّزِ فِي شَعَفِ الْجِبَالِ وَالشّعَابِ تَخَوّفًا عَلَيْهِمْ مِنْ مَعَرّةِ الْجَيْشِ ثُمَّ قَامَ عَبْدُ الْمُطّلِبِ فَأَخَذَ بِحَلْقَةِ بَابِ الْكَعْبَةِ وَقَامَ مَعَهُ نَفَرٌ مِنْ قُرَيْشٍ يَدْعُونَ اللّهَ ويستنصرونه عَلَى أَبْرَهَةَ وَجُنْدِهِ فَقَالَ عَبْدُ الْمُطّلِبِ وَهُوَ آخِذٌ بِحَلْقَةِ بَابِ الْكَعْبَةِ

لَا هُمّ إنّ الْعَبْدَ يَمْ ... نَعُ رَحْلَهُ فَامْنَعْ حَلَالَك

لَا يَغْلِبَن صَلِيبَهُمْ ... وَمِحَالُهُمْ غَدْوًا مَحَالُك

إنْ كنت تاركهم و ... قبلتنا فَأَمْرٌ مَا بَدَا لَكْ

অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরাইশদের নিকট ফিরে এসে তাদেরকে সমস্ত সংবাদ জানালেন এবং তাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিলেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ থেকে বেরিয়ে পার্শ্ববর্তী পাহাড় পর্বতের গোপন গুহাগুলোতে আশ্রয় নিয়ে আবরাহার সৈন্যদের সম্ভাব্য নির্যাতন থেকে আতœরক্ষা করার জন্য। এরপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে কুরাইশদের একদল লোককে সাথে নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দরজা মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চৌকাঠ মুবারক আঁকড়ে ধরে দাঁড়ালেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আবরাহা ও তার সৈন্য সামন্তের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে উনার সাহায্য কামনা করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করতে লাগলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চৌকাঠ মুবারক ধরে বলতে লাগলেন,

لَا هُمّ إنّ الْعَبْدَ يَمْ ... نَعُ رَحْلَهُ فَامْنَعْ حَلَالَك

لَا يَغْلِبَن صَلِيبَهُمْ ... وَمِحَالُهُمْ غَدْوًا مَحَالُك

إنْ كنت تاركهم و ... قبلتنا فَأَمْرٌ مَا بَدَا لَكْ

“আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! একজন বান্দাও তার দলবলকে রক্ষা করে থাকে। অতএব আপনি আপনার অনুগত লোকদেরকে রক্ষা করুন। ওদের নিকৃষ্ট ক্রুশ এবং শক্তি যেন আপনার শক্তির উপর বিজয়ী না হয়। আমাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বিবলা মুবারক উনাকে আপনি যদি ওদের উপর ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার যা খুশি করুন!” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে হিশাম)

অন্য বর্ণনায় রয়েছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার গিলাফ মুবারক ধরে বলতে লাগলেন, 

اللهم ان المرء يمنع + رحله فامنع رحالك

وانصر على ال الصليب + وعابديه اليوم لك

لا يغلبن صليبهم + ومحالهم ابدا محالك

جروا جميع بلادهم + والفيل كى يسبوا عيالك

عمدوا حمال بليدهم + جهلا وما رقبوا جلالك

অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! নিশ্চয়ই বান্দা তার জায়গার হিফাযত করে। কাজেই আপনি আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক হিফাযত করুন। ক্রুশের অধিকারী এবং ক্রুশের উপসনাকারীদের মুকাবিলায় আপনার অনুসারীদের সাহায্য করুন। ওদের ক্রুশ এবং ওদের প্রচেষ্টা আপনার ইচ্ছার উপর কখনো বিজয়ী হতে পারে না। সুবহানাল্লাহ! সৈন্য-সামন্ত ও হাতি নিয়ে আবরাহা এসেছে আপনার প্রতিবেশীদের গ্রেফতার করতে। না‘ঊযুবিল্লাহ! আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়ে জিহালতীর কারণে তারা এ সংকল্প করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! তারা আপনার বড়ত্ব ও শক্তির প্রতি কোনো ভ্রƒক্ষেপ করছে না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (দালাইলিনু নুুবুওওয়াহ, মাদারিযুন নবুওওয়াত, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

তিনি আরো বললেন, ‘আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার মালিক এবং হিফাযতকারী। আমি এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার দেখাশুনার দায়িত্বে ছিলাম তা যথাযথ পালন করার চেষ্টা করেছি। এখন আবরাহা এসেছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার ক্ষতি করার জন্য। সে যে পরিমাণ সৈন্য-সামন্ত ও অস্ত্রপাতি নিয়ে এসেছে, তাকে বাধা দেয়ার মত আমাদের প্রস্তুতি নেই। কাজেই, আপনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক আপনার হিফাযতে দিয়ে আমরা নিরাপদ দূরত্বে চলে যাচ্ছি।’

আরো বর্ণিত রয়েছেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকেও মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু‘আ করার জন্য উৎসাহ মুবারক দেন। তিনি বলেন,

فلندع رب البيت ان يحمى بيته

অর্থ: “সুতরাং আমাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রব তা‘য়ালা উনার নিকট দু‘আ করা, যেন তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক রক্ষা করেন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন,

طُوْفُوْا بِالْبَيْتِ وَادْعُوْا رَبَّه اَن يَّقْسِمَ ابرهةَ كَمَا قَسَمَ الْـجَبَابِرَةَ

অর্থ: “আপনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ মুবারক করুন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু‘আ করুন যেনো মহান আল্লাহ পাক তিনি আবরাহাকে তদ্রুপ ধ্বংস করে দেন, যেমন তিনি পূর্বে চরম যালিম জাতিদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন, “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ হচ্ছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক। সুবহানাল্লাহ! 

ومن يَّتَجَرَّم اليه يَقْسِمه الله

আর যারা (মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার ইহানত করার মাধ্যমে) মহান আল্লাহ পাক উনাকে অভিযুক্ত করতে চায়, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে ধ্বংস করে দেন।” সুবহানাল্লাহ!


সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বেমেছাল তাওয়াক্কুল মুবারক উনার বহিঃপ্রকাশ মুবারক এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে রক্ষা করার বিষয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদের দৃঢ়তা প্রকাশ:

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার যুলুম থেকে আতœরক্ষার জন্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিলেন, তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনারা বলেছিলেন,

انترك مكة

অর্থ: “আমরা কি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ ফেলে রেখে চলে যাবো?”

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে সান্তনা মুবারক দিয়ে বলেন, 

وكيف نترك بيت الحرام تالله لنبكين الى اخر الدهر فعسى رب هذا البيت يجد لنا مهجة 

অর্থ: “কিভাবে আমরা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে ফেলে রাখতে পারি, ফেলে রেখে চলে যেতে পারি? মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই আমরা শেষ মূহর্ত পর্যন্ত কান্নাকাটি, রোনাযারী (করে মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু‘আ করবো এবং কুদরতী ফায়সালা মুবারক উনার জন্য অপেক্ষা) করবো। আর অবশ্যই এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের অন্তর লক্ষ্য করবেন।”

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন,

يا معشر قريش ما اظن رب الكعبة يدمر ابرهة يدبر بيته العظيم طوفوا واطلبوا من رب الكعبة ان يحمى مكة واهلها والبيت الحرام 

অর্থ: “হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ সম্প্রদায়! আমি মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র কা’বা শরীফ উনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি যা ধারণা করি তা হচ্ছেন- অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে ধ্বংস করে দিবেন এবং উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনার বিষয়ে পরিকল্পনা মুবারক করবেন অর্থাৎ হিফাযত করবেন। সুবহানাল্লাহ! আপনারা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ মুবারক করুন এবং মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র কা’বা শরীফ উনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দু‘আ করুন যেনো তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনাকে, উনার অধিবাসী উনাদেরকে এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে রক্ষা করেন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক:

আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “কাট্টা যালিম আবরাহা যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ আসলো, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট সোপর্দ করে দিয়ে কাট্টা যালিম আবরাহার ধ্বংসের জন্য বদদোয়া মুবারক করেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার সম্মানিত অধিবাসী উনাদেরকে পাহাড়ে আরহণ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেও পাহাড়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পাহাড়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিতে অসম্মতি মুবারক প্রকাশ করেন এবং তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ উনার মধ্যেই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অবস্থান মুবারক করেন। তিনি সেখানে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র অবস্থান মুবারক করেই কাট্টা যালিম আবরাহার ধ্বংসের জন্য বদদোয়া মুবারক করেন। আর তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ইরশাদ মুবারক করেন যে, কাট্টা যালিম আবরাহা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না, বরং সে নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে।” সুবহানাল্লাহ! 

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাহাড়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক নিয়ে সেখান থেকে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে পর্যবেক্ষণ করা এবং তার ধ্বংসের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করা:

এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

ثم أرسل عبد المطلب حلقة باب الكعبة وانطلق هو ومن معه من قريش الى شعف الجبال فتحرزوا فيها ينتظرون ما أبرهة فاعل بمكة إذا دخلها

অর্থ: “তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার মহাসম্মানিত ও মহপবিত্র দরজা মুবারক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চৌকাঠ মুবারক ছেড়ে দিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে নিয়ে পহাড়ের চূড়ায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। অতঃপর উনারা সেখানে অবস্থান মুবারক করে দূর থেকে দেখতেছিলেন যে, কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ প্রবেশের পর কি করে।” (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম ১/১৭১)

কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

فَلَمَّا أَصْبَحَ أَبْرَهَةُ تَهَيَّأَ لِدُخُولِ مَكَّةَ، وَهَيَّأَ فِيلَهُ وَعَبَّى جَيْشَهُ، وَكَانَ اسْمُ الْفِيلِ مَحْمُودًا، وَأَبْرَهَةُ مُجْمِعٌ لِهَدْمِ الْبَيْتِ، ثُمَّ الِانْصِرَافِ إلَى الْيَمَنِ. فَلَمَّا وَجَّهُوا الْفِيلَ إلَى مَكَّةَ، أَقْبَلَ نُفَيْلُ بْنُ حَبِيبٍ (الْخَثْعَمِيُّ حَتَّى قَامَ إلَى جَنْبِ الْفِيلِ، ثُمَّ أَخَذَ بِأُذُنِهِ، فَقَالَ: اُبْرُكْ مَحْمُودُ، أَوْ ارْجِعْ رَاشِدًا مِنْ حَيْثُ جِئْتَ، فَإِنَّكَ فِي بَلَدِ اللَّهِ الْحَرَامِ، ثُمَّ أَرْسَلَ أُذُنَهُ. فَبَرَكَ الْفِيلُ، وَخَرَجَ نُفَيْلُ بْنُ حَبِيبٍ يَشْتَدُّ حَتَّى أَصْعَدَ فِي الْجَبَلِ، وَضَرَبُوا الْفِيلَ لِيَقُومَ فَأَبَى، فَضَرَبُوا (فِي) رَأْسِهِ بالطَّبَرْزِينَ لِيَقُومَ فَأَبَى، فَأَدْخَلُوا مَحَاجِنَ لَهُمْ فِي مَرَاقِّهِ فَبَزَغُوهُ بِهَا لِيَقُومَ فَأَبَى، فَوَجَّهُوهُ رَاجِعًا إلَى الْيَمَنِ، فَقَامَ يُهَرْوِلُ، وَوَجَّهُوهُ إلَى الشَّامِ فَفَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ، وَوَجَّهُوهُ إلَى الْمَشْرِقِ فَفَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ، وَوَجَّهُوهُ إلَى مَكَّةَ فَبَرَكَ 

অর্থ: “পরের দিন সকালে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার ভিতরে প্রবেশ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। তার হস্তী বাহিনী এবং সৈন্য বাহিনীকে সুসংহত করলো। তার (হাতীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়) হাতীটির নাম ছিল মাহমূদ। কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনাকে ধ্বংস করে তারপর সে ইয়ামান ফিরে যাবে। হস্তী বাহিনীকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার দিকে পরিচালিত করলে নুফাইল ইবনে হাবীব তিনি এগিয়ে এসে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার হাতীর পাশে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি হাতীর কান ধরে বললেন, 

اُبْرُكْ مَحْمُودُ، أَوْ ارْجِعْ رَاشِدًا مِنْ حَيْثُ جِئْتَ،

‘মাহমূদ! তুমি হাঁটু গেড়ে বসে পড়ো। অথবা যেখান থেকে এসেছো নিরাপদে সেখানেই ফিরে যাও। কেননা, এখন তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নগরী উনার মধ্যে রয়েছো।’

অতঃপর নুফাইল ইবনে হাবীব তিনি হাতির কান ছেড়ে দিলেন। হাতি এ কথা শুনেই বসে পড়লো। অতঃপর  নুফাইল খুব দ্রুত পাহাড়ের উপর যেয়ে আরোহন করলেন। চালকরা হাতীকে অনেক প্রহার করলো, কিন্তু হাতীটি দাঁড়ালো না। তারপর তারা হাতীকে দাঁড় করানোর জন্য তার মাথায় কুঠার দিয়ে প্রহার করলো, তারপরেও সে দাঁড়ালো না। অতঃপর তারা হাতীকে দাঁড় করানোর জন্য তার শুঁড়ের ভেতর আঁকাবাঁকা লাঠি ঢুকিয়ে রক্তাক্ত করে দিলো, তবুও সে দাঁড়ালোনা। তখন তারা তাকে ইয়ামেনের দিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলো, সে সাথে সাথে উঠে দ্রুত চলতে থাকলো। সিরিয়ার দিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলো, তখনও সাথে সাথে দ্রুত চলতে লাগলো। পূর্ব দিকে ফিরিয়ে দিতে চাইলো, তখনও সাথে সাথে দ্রুত চলতে লাগলো। আবার যখন তাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার দিকে চালিত করলো, সাথে সাথেই সে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম ১/১৭১-১৭২)

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে পাহাড়ের চূড়ায় আরহণ করার জন্য সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়ে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার ধ্বংসের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট বিশেষভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করেন এবং কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার ধ্বংসযজ্ঞ দেখার জন্য অপক্ষা মুবারক করতে থাকেন। এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছেন যে, সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়ে বলেন,

يا اهل مكة تحصنوا فى الجبال وفى الشعاف واحتموا بها حتى نرى ما يكون من امر ابرهة الاشرم ولا اظن رب البيت يترك بيته

অর্থ: “হে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার অধিবসীগণ! আপনারা পাহাড়সমূহে এবং পাহাড়ের চূড়াসমূহে অবস্থান করে নিজেদেরকে সুরক্ষিত করুন এবং সেখানে আতœরক্ষা করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা নাক কাটা আবরাহার কি হয়, তা না দেখছি। আর আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ উনার রব তা‘য়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এমন ধারণা পোষণ করি যে, অবশ্যই তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ঘর মুবারক উনাকে রক্ষা করবেন।” সুবহানাল্লাহ!

তারপর তিনি বার বার এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক করতে থাকেন-

اَللّٰهُمَّ اقْسِمْ اَبْرَهَةَ كَمَا قَسَمْتَ الْـجَبَابِرَةَ قَبْلَه، اَللّٰهُمَّ اقْسِمْ اَبْرَهَةَ كَمَا قَسَمْتَ الْـجَبَابِرَةَ قَبْلَه، اَللّٰهُمَّ اقْسِمْ اَبْرَهَةَ كَمَا قَسَمْتَ الْـجَبَابِرَةَ قَبْلَه

অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি ধ্বংস করে দিন কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে, যেমন তার পূর্বে অনেক যালিম জাতিদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি ধ্বংস করে দিন কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে, যেমন তার পূর্বে অনেক যালিম জাতিদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আপনি ধ্বংস করে দিন কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে, যেমন তার পূর্বে অনেক যালিম জাতিদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন।” সুবহানাল্লাহ!

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ মুবারক উনার বরকতে মহান আল্লাহ পাক তিনি কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা এবং তার সৈন্য বাহিনীকে ধ্বংস করার জন্য ঝাঁকেঝাঁকে পাখি প্রেরণ করেন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছেন,

فأرسل الله تعالى عليهم طيرا من البحر

 অর্থ: “অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি সমুদ্রের দিক থেকে ঝাঁকেঝাঁকে পাখী পাঠালেন।” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম ১/১৭২)

তাদের মাথা ছিলো হিংস্র জন্তুর মত, ঠোট ছিলো হাতির শুঁড়ের মত আর নখগুলি ছিলো কুকুরের মত। প্রত্যেকটি পাখি তিনটি কঙ্করময় প্রস্তর বহন করে এনেছিলো। একটি ঠোঁটে, দু’টি দুই পায়ে। পাখিগুলো এসে আবরাহা ও তার বাহিনীর উপরে সেই কঙ্করগুলি নিক্ষেপ করতে লাগলো। এর ফলে তৎক্ষনাত কিছু ধ্বংস হয়ে গেলো। কিছু আহত অবস্থায় পলায়ন করার পথে ধ্বংস হলো। কঙ্করগুলি উপর দিক থেকে পড়ে নিচ দিয়ে বের হয়ে মাটিতে অদৃশ্য হয়ে যেত। যার কারণে আবরাহার সৈন্য বাহিনী, হস্তিবাহিনী ভক্ষিত তৃণের ন্যায় হয়ে গেলো। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাঈশগণ উনারা দূর থেকে এই ঘটনা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করলেন। আর কঙ্করগুলি ছিলো ডাল অপেক্ষা বড় ও ছোলা বুট থেকে ছোট। আবরাহা ইয়েমেন পর্যন্ত পৌঁছলো। তার উপর দিয়ে পাখিগুলি উড়তে থাকলো। সেখানে পৌঁছার পরে পাখির কঙ্কর নিক্ষেপের কারণে সেও ভক্ষিত তৃণের ন্যায় হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! আর নাক কাটা যালিম আবরাহার মন্ত্রী ইয়াকছুম পালিয়ে আবিসিনিয়ায় রাজার কাছে এই সংবাদ পৌঁছায়। তার উপর দিয়েও একটি পাখি উড়ছিলো। সে সংবাদ পৌঁছানোর পর পাখিটি কঙ্কর নিক্ষেপ করায় সেও ভক্ষিত তৃণের ন্যায় হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!

কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহার ধ্বংস হওয়া দেখে ক্রশধারীদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে নুফাইল ইবনে হাবীব একটি কবিতা আবৃত্তি করেছিলেন,

أَيْنَ الْمَفَرُّ وَالْإِلَهُ الطَّالِبُ ...

وَالْأَشْرَمُ الْمَغْلُوبُ لَيْسَ الْغَالِبُ

‘পালাবে কোথায়? মহান আল্লাহ পাক তিনি অনুসন্ধান করতেছেন। আর ক্রুশের অধিকারী নাক কাটা আবরাহা অবশ্যই পারিজিত; কখনোই সে বিজয়ী হতে পারে না’।” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুন নাবাবিয়্যাহ লি ইবনে হিশাম ১/১৭২)

মহান আল্লাহ পাক তিনি কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহা এবং তার সৈন্য বাহিনীর ধ্বংস করে দেয়ার কারণে সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খুশি প্রকাশ:

সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন দেখলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ঝাঁকেঝাঁকে পাখি প্রেরণ করে কাট্টা যালিম নাক কাটা আবরাহাকে ভক্ষিত তৃণের ন্যায় করে দিয়েছেন, তখন তিনি অত্যন্ত খুশি প্রকাশ করেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরাইশ উনাদেরকে নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তালবিয়াহ্ মুবারক পাঠ করতে করতে পাহাড়ের চূড়া থেকে নীচে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তালবিয়াহ্ মুবারকখানা ছিলেন নি¤œরূপ:

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ، لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ، إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ، لاَ شَرِيكَ لَكَ

(উচ্চরণ: লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্কা, লা শারীকা লাকা।)

অর্থ: “আয় বারে এলাহী, মহান আল্লাহ পাক! আমি আপনার জন্য বার বার হাযির (উপস্থিত), বার বার হাযির (উপস্থিত)। আপনার কোনো শরীক (অংশিদার) নেই, আমি আপনার জন্য বার বার হাযির (উপস্থিত)। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, বিলাসিতা তথা শান-শওকাত এবং রাজত্ব-কর্তৃত্ব মুবারক একমাত্র আপনারই জন্য। আপনার কোনো শরীক (অংশিদার) নেই, আমি আপনার জন্য বার বার হাযির (উপস্থিত)।” সুবহানাল্লাহ!

অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সবাইকে নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তালবিয়াহ্ মুবারক পাঠ করতে করতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করেন এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কা’বা শরীফ তাওয়াফ করেন। সুবহানাল্লাহ!


0 Comments: