মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ-চর্বি, মাছ ও ডিম

মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ-চর্বি, মাছ ও ডিম

৪. চর্বি (دَسـَمٌ) দাসাম

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شِفَاءُ عِرْقِ النَّسَا اَلْيَةُ شَاةٍ عَرَبِيَّةٍ تُذَابُ ثُـمَّ تُـجَزَّاُ ثَلَاثَةَ اَجْزَاءٍ فَـتُشْرَبُ فِي ثَلَاثَةِ اَيَّامٍ

অর্থ: “হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যাযাবর রাখালদের পালিত ভেড়ির লেজ থেকে প্রাপ্ত চর্বিতে নিতম্বের বেদনা রোগের নিরাময় রয়েছে। চর্বিকে জ্বাল দিয়ে (গলিয়ে দ্রবণ সৃষ্টি করে) ৩ ভাগে ভাগ করে পর পর ৩ দিন তা সেবন করতে হবে।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্বীব: হাদীছ শরীফ নং ৩৪৬৩; মুসতাদরিকে হাকিম ৪র্থ খণ্ড ২২৯ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ৭৪৫৯, প্রকাশনা: দারুল কিতাবিল ইলমিয়্যাহ, লেবানন)



৫. মাছ (سَـمَكٌ) সামাক/সামুদ্রিক মাছ (حُوْتٌ) হূত

মহান আল্লাহ পাক তিনি মাছ সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَمَا يَسْتَوِي الْبَحْرَانِ هٰذَا عَذْبٌ فُرَاتٌ سَائِغٌ شَرَابُهُ وَهٰذَا مِلْحٌ اُجَاجٌ ۖ وَمِنْ كُلٍّ تَاْكُلُوْنَ لَـحْمًا طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُوْنَ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَـهَا ۖ

অর্থ: “দু’টি সমুদ্র সমান হয় না, একটি মিঠা ও তৃষ্ণা নিবারক এবং অপরটি লোনা। উভয়টি থেকেই তোমরা তাজা গোশত (মাছ) আহার করো এবং পরিধানে ব্যবহার্য অলঙ্কার আহরণ করো।” (পবিত্র সূরা ফাতির শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১২)

মহান আল্লাহ পাক তিনি মাছ সম্পর্কে অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন-

وَهُوَ الَّذِيْ سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَاْكُلُوْا مِنْهُ لَـحْمًا طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُوْا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُوْنَـهَا

অর্থ: “তিনিই সমুদ্রকে প্রবাহিত করেছেন, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা গোশত (মাছ) খেতে পারো এবং তা থেকে বের করতে পারো পরিধেয় অলঙ্কার।” (পবিত্র সূরা নাহল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪)

উল্লেখিত পবিত্র আয়াতদ্বয় উনাদের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি সমুদ্রের মাছকে তাজা গোশত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাজা গোশতের উপকারিতার শেষ নেই। তাজা গোশত মূলত সামুদ্রিক মাছের বহুবিধ উপকারিতারই ইঙ্গিত করছে। সামুদ্রিক বড় বড় মাছের হাড় দিয়ে বিভিন্ন অলংকার ও আসবাব বানানো হয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াতদ্বয় উনাদের মধ্যে সেদিকেও ইঙ্গিত করেছেন।

আর সামুদ্রিক বিভিন্ন শৈবাল ও শামুকে মুক্তা পাওয়া যায়, যা মূল্যবান অলঙ্কারাদিতে শোভা বৃদ্ধি করে। তাছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি মানুষের উপকারার্থেই সাগর ও এর উদরস্থ যাবতীয় সামগ্রী প্রস্তুত করেছেন। তাই তিনি এর শিকার ও তার গোশত ভক্ষণ বৈধ আখ্যা দিয়েছেন।

এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِلسَّيَّارَةِ ۖ

অর্থ: “তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও সমুদ্রের খাদ্য হালাল করা হয়েছে তোমাদের উপকারার্থে।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৬)

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اُحِلَّتْ لَنَا مَيْـتَـتَانِ وَدَمَانِ فَاَمَّا الْمَيْـتَـتَانِ فَالْـحُوْتُ وَالْـجَرَادُ وَاَمَّا الدَّمَانِ فَالْكَبِدُ وَالطِّحَالُ‏.‏

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাদের জন্য দু প্রকারের মৃত জীব ও দু ধরণের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত জীব দুটি হলো মাছ ও (সামুদ্রিক) টিড্ডি এবং দু প্রকারের রক্ত হল কলিজা ও প্লীহা।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুত ত্ব‘য়ামাহ: হাদীছ শরীফ নং ৩৩১৪)

উল্লেখ্য, টিড্ডি দুই প্রকার। এক প্রকার টিড্ডি যা সমুদ্রে বসবাস করে, এই টিড্ডির হুকুম মাছের হুকুমের অনুরূপ। অর্থাৎ মৃত অবস্থায়ও খাওয়া যায়। আরেক প্রকার টিড্ডি স্থলজ। সম্মানিত হানাফী মাযহাব অনুযায়ী এই ধরণের টিড্ডি মৃত খাওয়া জায়িয নেই।

৫(১) আম্বর (اَلْعَنْبـَــرُ) বৃহদাকার সামুদ্রিক মাছ: এ সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ بَعَثَـنَا رَسُوْلُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَمَّرَ عَلَيْـنَا حَضْرَتْ اَبَا عُبَـيْدَةَ بْنَ الْـجَرَّاحِ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ نَـتَـلَقّٰى عِيْرًا لِقُرَيْشٍ وَزَوَّدَنَا جِرَابًا مِنْ تَـمْرٍ لَـمْ نَـجِدْ لَهٗ غَيْـرَهٗ فَكَانَ حَضْرَتْ اَبُـوْ عُبَـيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ يُـعْطِيْـنَا تَـمْرَةً تَـمْرَةً كُنَّا نَـمُصُّهَا كَمَا يَـمُصُّ الصَّبِيُّ ثُـمَّ نَشْرَبُ عَلَيْهَا مِنَ الْمَاءِ فَـتَكْفِيْـنَا يَـوْمَنَا اِلَى اللَّيْلِ وَكُنَّا نَضْرِبُ بِعِصِيِّنَا الْـخَبَطَ ثُـمَّ نَـبُـلُّهٗ بِالْمَاءِ فَـنَأْكُلُهٗ وَانْطَلَقْنَا عَلٰى سَاحِلِ الْبَحْرِ فَـرُفِعَ لَنَا كَهَيْـئَةِ الْكَثِيْبِ الضَّخْمِ فَاَتَـيْـنَاهُ فَاِذَا هُوَ دَابَّةٌ تُدْعَى الْعَنْـبَـرَ فَـقَالَ حَضْرَتْ اَبُـوْ عُبَـيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ مَيْـتَةٌ وَلَا تَـحِلُّ لَنَا ثُـمَّ قَالَ لَا بَلْ نَـحْنُ رُسُلُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي سَبِيْلِ اللهِ وَقَدِ اضْطُرِرْتُـمْ اِلَيْهِ فَكُلُوْا فَاَقَمْنَا عَلَيْهِ شَهْرًا وَنَـحْنُ ثَلَاثُـمِائَةٍ حَتّٰى سَـمِنَّا فَـلَمَّا قَدِمْنَا اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرْنَا ذٰلِكَ لَهٗ فَـقَالَ‏ هُوَ رِزْقٌ اَخْرَجَهُ اللهُ لَكُمْ فَـهَلْ مَعَكُمْ مِنْ لَـحْمِه شَىْءٌ فَـتُطْعِمُوْنَا مِنْهُ فَاَرْسَلْنَا مِنْهُ اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاَكَلَ‏.‏

অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা কুরাইশদের একটি কাফেলাকে পাকড়াও করতে আমাদেরকে এক অভিযানে পাঠালেন। তিনি আবূ ‘উবাইদাহ ইবনে জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আমাদের সেনাপতি বানালেন। তিনি আমাদের সাথে এক থলে খেজুরও দিলেন। এছাড়া আর কিছু আমাদের সাথে ছিলো না। আবূ উবাইদাহ ইবনে জাররাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি প্রতিদিন আমাদের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিতেন। আমরা বাচ্চাদের মত তা চুষে খেতাম। অতঃপর পানি পান করতাম। এভাবে আমরা রাত পর্যন্ত সারাদিন কাটিয়ে দিতাম। আমরা নিজেদের লাঠি দিয়ে গাছের পাতা ঝড়িয়ে তা পানিতে ভিজিয়ে খেয়েছি। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা সমুদ্রের কিনারা দিয়ে অগ্রসর হলাম। অতঃপর সমুদ্রের তীরে বালুর ঢিপির ন্যায় একটি বস্তু দেখা গেলো। আমরা গিয়ে দেখলাম, ওটা একটি সামুদ্রিক প্রাণী, যার নাম আম্বর মাছ। হযরত আবূ ‘উবাইদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এটা মৃত প্রাণী, আমাদের জন্য হালাল নয়। অতঃপর তিনি মত পাল্টিয়ে বললেন, না! বরং আমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতিনিধি এবং আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় বের হয়েছি। আপনারাও সঙ্কটাপন্ন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছেন, সুতরাং এটা খান। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমরা সেখানে একমাস ছিলাম, কেবলমাত্র আমরাই সেখানে অবস্থান করেছিলাম। আমরা সংখ্যায় ছিলাম ৩০০ জন। আমরা প্রতিদিন তা খেয়ে সু-স্বাস্থ্যবান হয়ে গেলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে ফিরে এসে উনাকে আমরা ঘটনাটি বললাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ওটা ছিলো রিযিক। যা মহান আল্লাহ তিনি আপনাদের জন্য পাঠিয়েছিলেন। আপনাদের সাথে এর গোশত অবশিষ্ট আছে কি? থাকলে আমাকে খাওয়ান। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে আমরা মাছের কিছু অংশ পেশ করলাম, তিনি তা খেলেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুত ত্বয়ামাহ্: হাদীছ শরীফ নং ৩৮৪০)

 সামুদ্রিক মাছের উপকারিতা:

১. সামুদ্রিক মাছের আমিষ সহজে পরিপাকযোগ্য। এ ছাড়া দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়রোধে সাহায্য করে।

২. সামুদ্রিক মাছের আমিষ ও তেল দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

৩. সামুদ্রিক মাছ রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

৪. সামুদ্রিক মাছের ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী। এই ফ্যাটি এসিড হৃদরোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে।

৫. কিছু কিছু সামুদ্রিক মাছে ভিটামিন-এ ও ডি পাওয়া যায়। যেমন- স্যামন, ম্যাকরেল মাছ।

৬. সামুদ্রিক মাছ ভিটামিন বি-এর উৎকৃষ্ট স। বিশেষ করে স্যামন মাছে প্রচুর ভিটামিন বি-১২ রয়েছে।

৭. জিংক ও আয়োডিন আছে। জিংক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং আয়োডিন গলগণ্ড রোগ প্রতিরোধ করে।

৮. এসব মাছে প্রচুর সিলেনিয়াম রয়েছে, যা দেহে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।

৯. ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপকারী।

সামুদ্রিক মাছের উপকারিতা নিয়ে কিছু গবেষণা:

মাছের মধ্যে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদযন্ত্রের ছন্দকে দ্রুততর করে, ধমনীতে চর্বি জমার মাত্রাকে কমিয়ে দেয়, ধমনীতে পুরনো প্রদাহকে ঠাণ্ডা রাখতে সহায়তা করে ও রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রকে সক্রিয় ও কার্যক্ষম রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হৃদযন্ত্র অচল ও অকার্যকর হয়ে যাওয়ার যে ঝুঁকি প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয় যেসব কারণে তার বিরুদ্ধে লড়াই করে মাছের এই উপাদান।

সারা বিশ্বে পরিচালিত ৩০টি বড় ধরণের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, যারা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার বা দুইবার মাছ খায় তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি গড়ে ৩৬ শতাংশ কমে যায়।

সামুদ্রিক মাছ কেবল হৃদযন্ত্রের জন্যই উপকারী নয়, বরং মস্তিষ্ককেও সুরক্ষা দিয়ে থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সামুদ্রিক মাছ বেশি খায় তাদের স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণা থেকে এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করে থাকে।

২০০৭ সালে প্রায় ১২ হাজার গর্ভবতী নারীর ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, যেসব নারী তাদের গর্ভকালীন সপ্তাহে অন্তত ৩৪০ গ্রাম সামুদ্রিক খাবার খেয়েছে তাদের সন্তানের বুদ্ধি যেসব নারী অন্য ধরনের খাবার খেয়েছে তাদের সন্তানের বুদ্ধির চেয়ে ৬ গুণ বেশি।

একটি সুইডিশ গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব যুবক সপ্তাহে একাধিকবার সামুদ্রিক মাছ খায় তাদের বুদ্ধি যারা সচরাচর সামুদ্রিক খাবার খায় না তাদের চেয়ে ১১ গুণ বেশি। এ ছাড়া যারা মাছ বেশি খায় তাদের শেষ বয়সে ডিমেনশিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেকাংশে কমে যায়।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যারা নিয়মিত সামুদ্রিক খাবার খায় (সরাসরি খাদ্য হিসেবে কিংবা পরিপূরক হিসেবে) তাদের শরীর সুস্থ থাকার পাশাপাশি বিষন্নতা বা মনমরা ভাব দূরীভূত হয়। এর কারণ, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের দু’টি প্রধান রাসায়নিক উপাদান সেরোটোনিন ও ডুপামাইনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এ দু’টি উপাদানের মাত্রা বা পরিমাণ কম থাকলেই মানসিক বিষাদগ্রস্ততা বা মনমরা ভাব সৃষ্টি হয়।



৬. ডিম (بَـيْضٌ) বাইদ্ব

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّ نَبِيًّا مِّنَ الْاَنْبِۢيَاءِ شَكَا اِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ الضَّعْفَ فَاَمَرَهٗ بِاَكْلِ الْبَـيْضِ

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে একজন নবী আলাইহিস সালাম তিনি শারীরিক দুর্বলতা বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে জানতে চাইলে মহান আল্লাহ পাক তিনি ডিম খাওয়ার জন্য ইরশাদ মুবারক করেন।” (শুয়াবুল ঈমান লি বায়হাক্বী ৮ম খণ্ড ৯৯ পৃষ্ঠা : বাবু আকলিল লাহম: হাদীছ শরীফ নং ৫৫৫০)

আল কানুন ফিত্ ত্বিব কিতাবের লেখক বিখ্যাত মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে সিনা বলেন, ডিমের কুসুম রক্তের জন্য উপকারী এবং এটি নরম অবস্থায় খেলে খুব দ্রুত হজম হয়। ইবনে সিনা ডিমকে হৃদপিন্ডের অসুখের প্রতিকার বা ওষুধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ডিমের কুসুমে হৃদপিণ্ডের শক্তিবর্ধনে কার্যকরী প্রভাব আছে বলেও মন্তব্য করেন।

এছাড়া অন্য গবেষকরা বলেছেন, ডিমের কুসুম শারীরিক ব্যাথা দূর করে, গলা ও শ্বাসনালী পরিস্কার করে, কাশির জন্য উপকারী। ফুসফুসের আলসার, লিভার ও প্রোস্টেটের অসুখের জন্য প্রতিষেধক। ডিম যখন তেল ও মিষ্টি কাজু বাদামের সাথে ব্লেন্ড করে খাওয়া হয় তখন এটি রুক্ষতা দূর করে। এটি বুকের যে কোন সমস্যার জন্য আরামদায়ক এবং গলার রুক্ষতাকে নমনীয় করে। ফুলে যাওয়া চোখের ড্রপ হিসেবে ডিমের সাদা অংশ উপকারী এবং ব্যাথা উপশমকারী। এটি আগুনে পোড়া ব্যাথাও থেকেও সুস্থতা দান করে। এই সাদা অংশ যদি মালিশ বা প্রলেপ হিসেবে মুখমন্ডলে ব্যবহারে সূর্যে পোড়া কালোদাগ দূর করে। এটি যদি কুন্দুর সাথে মিশ্রণ করে কপালে রাখা হয় তাহলে ইনফ্লুয়েন্জার (ঠান্ডা/ফ্লু) প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।



0 Comments: