মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্যসমূহ-যব,তালবীনা ও হাইসাহ
যব একটি দানাদার খাদ্যশস্য।
এটি গমের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। হাজার হাজার বছর ধরে যব মানুষের অন্যতম প্রধান
খাদ্যশস্য।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالَثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا
السَّلَامُ قَالَتْ لَقَدْ تُوُفِّـيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وَمَا فِي رَفِّي مِنْ شَيْءٍ يَأْكُلُهُ ذُوْ كَبِدٍ اِلَّا شَطْرُ شَعِيْرٍ فِيْ
رَفٍّ لِيْ فَاَكَلْتُ مِنْهُ حَتّٰى طَالَ عَلَيَّ فَكِلْتُهُ فَفَنِيَ.
অর্থ: “হযরত উম্মুল
মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিছালী শান
মুবারক প্রকাশ করলেন। তখন যৎ সামান্য যব ছাড়া কোন প্রাণী খেতে পারে এমন কিছু আমার তাকের
উপর ছিল না। তা থেকে দীর্ঘ দিন খেলাম। একবার মেপে নিলাম, অতঃপর
তা শেষ হয়ে গেল।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুর রিক্বাক্ব: হাদীছ
শরীফ নং ৬৪৫১)
যবের উপকারিতা:
১. যেকোন আবহাওয়াতে যব চাষ
করা যায়।
যব উৎপাদনের তথ্যাবলী:
বীজের নাম |
বীজ বোপনের সময় |
বীজ বোপনের পরিমাণ (একর
প্রতি) ১ একর = ১০০ শতক |
জমি প্রস্তুতকরণ ও বীজ
বোপন |
সার ও পানি প্রয়োগের নিয়ম |
মন্তব্য |
যব/পয়রা/ প্যারাগন |
১৭-৩১ সাদিস শামসী (১৫-৩০
নভেম্বর ঈ.) তারিখের মধ্যে |
২৪-২৬ কেজি |
প্রথমে জমিতে চাষ দিতে হবে। চাষ দেয়ার পর জমির পরিমাণ
অনুযায়ী যবের বীজ সম্পূর্ণ জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং পুনরায় জমি
চাষ দিতে হবে |
টি.এস.পি.- ২০ কেজি ও পটাশ- ২০ কেজি (একর প্রতি) |
উৎপাদন : ২২-২৪ মণ (একর প্রতি) |
বীজ বোপনের ২০-২৫ দিন পর হাল্কা পানি দিতে হবে। এরপর
১৫-২০ কেজি (একর প্রতি) ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছে যখন দানা আসবে তখন
দ্বিতীয় সেচ দিতে হবে। |
যদি ফসলে পোকা আক্রমণ করে, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে
হবে। |
* দিনাজপুর অঞ্চলে যবকে পয়রা এবং কুড়িগ্রাম অঞ্চলে প্যারাগন নামে চিনে থাকে।
২. যবের খাদ্যগুণ: যব
কার্বহাইড্রেড বা শর্করা হওয়া সত্বেও এর মাঝে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন আছে। যেমন:
ওটমিলের চেয়ে ৫০% বেশী প্রোটিন আছে।
৩. যবের ফ্যাট/চর্বি কম।
৪. যবের ফাইবার বেশী, ফলে
কোষ্ঠকাঠিন্য হয়না এবং সহজে হজম হয়, এজন্য এনার্জি ফুড হিসেবে
যব ব্যবহার করা হয়।
৫. হাড়ের ব্যাধি দূর করে। ৬. রক্তশূণ্যতার জন্য
উপকারি।
৭. রক্তে ও কোষে চর্বি
কমায়। ৮. হাঁপানী
দূর করে।
৯. শক্তিদায়ক। ১০. হজমে
সহায়তা করে।
১১. চুল সুস্থ্ রাখে। ১২.
ত্বকের সৌন্দর্য্য বাড়ায়।
১৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়ায়। ১৪. কিডনী পরিস্কার রাখে।
হাকিমী বা ইউনানী মতে যব
তৃষ্ণা শান্ত করে,
কাশি, মাথাব্যাথা, হার্টের
অসুখ, দাঁতের মাড়ি ফুলে যাওয়া, জ্বর রোগে যব ব্যবহার করা হয়।
তালবীনাহ এক প্রকার লঘুপাক খাদ্য। তালবীনা শব্দটি লাবানুন (لَبَنٌ) শব্দ থেকে এসেছে। অর্থাৎ তালবীনা
একটি দুগ্ধজাত খাদ্য। অসুখ বিসুখে রোগীকে সহজপাচ্য, পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও আকর্ষণীয় পথ্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন
নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসুখ-বিসুখ, দুঃখ-শোকে
তালবীনা খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। সুবহানাল্লাহ!
সাধারণত যবের আটার সাথে দুধ মিশিয়ে তালবীনাহ প্রস্তুত করা হয়। সাথে মিষ্টি
জাতীয় খাবার, যেমন: মধু বা গুড় বা চিনি মিশ্রিত করা হয়।
তালবীনাহ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছ শরীফসমূহ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
عَنْ حَضْرَتْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالَثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ
اَنَّـهَا كَانَتْ تَأْمُرُ بِالتَّـلْبِيْـنَةِ وَتَـقُوْلُ هُوَ الْبَغِيْضُ
النَّافِعُ
অর্থ: “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে
বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি তালবীনা খেতে আদেশ মুবারক করতেন এবং ইরশাদ মুবারক করতেন, এটি (রোগীদের কাছে) অপছন্দনীয় হলেও উপকারী।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুত
ত্বিব: হাদীছ শরীফ নং ৫৬৯০)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالَثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ
اَنَّـهَا كَانَتْ تَأْمُرُ بِالتَّـلْبِيْنِ لِلْمَرِيْضِ وَلِلْمَحْزُوْنِ عَلَى
الْـهَالِكِ وَكَانَتْ تَـقُوْلُ اِنّـِيْ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـقُوْلُ اِنَّ التَّـلْبِيْـنَةَ تُـجِمُّ فُـؤَادَ
الْمَرِيْضِ وَتَذْهَبُ بِبَـعْضِ الْـحُزْنِ.
অর্থ: “হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি কোন
রোগীকে এবং কারো মৃত্যুজনিত শোকাহত বা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ ব্যক্তিকে তালবীনা
খাওয়ানোর আদেশ করতেন। তিনি বলতেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি বলতে শুনেছি যে, ‘তালবীনাহ’ রোগীর হৃদপিন্ডকে শক্তিশালী করে এবং নানাবিধ দুশ্চিন্তা দূর
করে।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুত ত্বিব: হাদীছ শরীফ নং ৫৬৮৯)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالَثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا اَخَذَ اَهْلَهُ
الْوَعْكُ اَمَرَ بِالْـحَسَاءِ قَالَتْ وَكَانَ يَقُوْلُ اِنَّهُ لَيَرْتُوْ
فُؤَادَ الْـحَزِيْنِ وَيَسْرُوْ عَنْ فُؤَادِ السَّقِيْمِ كَمَا تَسْرُوْ اِحْدَاكُنَّ
الْوَسَخَ عَنْ وَجْهِهَا بِالْمَاءِ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম উনাদের কেহ মারিদ্বী শান মুবারক গ্রহণ করতেন তখন তিনি হাসা (তালবীনাহ্)
বানানোর নির্দেশ মুবারক দিতেন। উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি
বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন, এটি অসুস্থ ব্যক্তির হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী করে এবং হৃদপিন্ডের অসুস্থতাকে
এমনভাবে সুস্থ করে, যেমনিভাবে পানি দ্বারা মুখ
ধোয়ার পর ময়লা দূর হয়ে যায়।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৩৪৪৫; তিরমিযী শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ২০৩৯)
৭(১) তালবীনাহ ও ছারীদ: তালবীনা ও ছারীদ একত্রে মিশিয়ে খাওয়া সম্মানিত সুন্নত। এ প্রসঙ্গে পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالَثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ زَوْجِ
النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنَّـهَا كَانَتْ اِذَا مَاتَ
الْمَيِّتُ مِنْ اَهْلِهَا فَاجْتَمَعَ لِذٰلِكَ النِّسَاءُ ثُـمَّ تَـفَرَّقْنَ
اِلَّا اَهْلَهَا وَخَاصَّتَهَا اَمَرَتْ بِبُـرْمَةٍ مِّنْ تَـلْبِيْـنَةٍ
فَطُبِخَتْ ثُـمَّ صُنِعَ ثَرِيْدٌ فَصُبَّتِ التَّـلْبِيْـنَةُ عَلَيْهَا
ثُـمَّ قَالَتْ كُلْنَ مِنْـهَا فَاِنِّـيْ سَـمِعْتُ رَسُوْلَ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـقُوْلُ اَلتَّـلْبِيْـنَةُ مَـجَمَّةٌ
لِفُؤَادِ الْمَرِيْضِ تُذْهِبُ بَعْضَ الْـحُزْنِ
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ
মুবারক করেন, মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত
শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে কেউ যখন দীদারে ইলাহীতে প্রত্যাবর্তন করতেন
(বিছাল শরীফ গ্রহণ করতেন) তখন মহিলাগণ এসে সমবেত হতেন। অতঃপর নিকট আত্মীয়গণ ও
বিশেষ ঘনিষ্ঠ মহিলাগণ ব্যতীত বাকী সবাই চলে গেলেন। এমন সময় তিনি ডেগে ‘তালবীনাহ’
পাকাতে নির্দেশ দিলেন। তা পাকানো হলো। এরপর ‘ছারীদ’ (গোশতের মধ্যে রুটি টুকরো করে
দিয়ে তৈরী খাবার) প্রস্তুত করা হলো এবং তাতে তালবীনা ঢালা হলো। তিনি বললেন, তোমরা এ থেকে খাও। কেননা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি বলতে শুনেছি যে, ‘তালবীনাহ’ রুগ্ন ব্যক্তির অন্তরে প্রশান্তি এনে দেয় এবং শোক দুঃখ লাঘব করে। (বুখারী শরীফ: কিতাবুত
ত্বয়ামাহ্: হাদীছ শরীফ নং ৫৪১৭; মুসলিম শরীফ: কিতাবুস
সালাম: হাদীছ শরীফ নং ২২১৬)
অন্য বর্ণনায় বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالَثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَيْكُمْ بِالْبَغِيْضِ
النَّافِعِ التَّـلْبِيْـنَةِ يَعْنِي الْـحَسَاءَ قَالَتْ وَكَانَ رَسُوْلُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا اشْتَكٰى اَحَدٌ
مِنْ اَهْلِه لَـمْ تَـزَلِ الْبُـرْمَةُ عَلَى النَّارِ حَتّٰى يَـنْـتَهِيْ
اَحَدٌ طَرَفَـيْهِيَعْنِيْ يَـبْـرَاُ اَوْ
يَـمُوْتُ
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে
বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, (রোগীদের কাছে) অপ্রিয়
কিন্তু উপকারী বস্তুটি তোমরা অবশ্যই গ্রহণ করবে। তা হলো তালবীনাহ অর্থাৎ হাসা (দুধ
ও যবের আটা সহযোগে প্রস্তুতকৃত তরল পথ্য)। উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আহলে বাইত শরীফ
আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে কেউ মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করলে হাসা-এর
পাতিল চুলার উপর থাকতো, যতক্ষণ না রোগী ছিহ্হাতী
শান মুবারক অথবা বিছালী শান মুবারক প্রকাশ না করতেন।” (ইবনে মাজাহ শরীফ:
কিতাবুত ত্বিব: হাদীছ শরীফ নং ৩৪৪৬)
এছাড়া
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ
اُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الثَّالَثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِذَا قِيْلَ لَهٗ
اِنَّ فُلَانًا وَجِعٌ لَا يَطْعَمُ الطَّعَامَ قَالَ
عَلَيْكُمْ بِالتَّلْبِيْنَةِ فَحَسُّوْهُ اِيَّاهَا فَوَالَّذِي نَفْسِيْ بِيَدِهٖ
اِنَّـهَا لَتَغْسِلُ بَطْنَ اَحَدِكُمْ كَمَا يَغْسِلُ اَحَدُكُمْ وَجْهَهُ
بِالْمَاءِ مِنَ الْوَسَخِ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে কেউ যদি সংবাদ নিয়ে আসতো যে, অমুক ব্যক্তির পেটে অসুখ, খাদ্য গ্রহণ করছেন না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন, আপনাদের উচিত তালবীনাহ্ তৈরী করা এবং উনাকে খাওয়ানো। অতঃপর তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন, যে মহান সত্ত্বা মুবারক উনার কুদরতী হাত মুবারক-এ আমার নূরুল আমর (মহাসম্মানিত প্রাণ মুবারক) উনার কসম! নিশ্চয়ই এটা আপনাদের পেটকে এমনভাবে পরিষ্কার করে যেমনভাবে কোন ব্যক্তি স্বীয় চেহারার ময়লা পানি দ্বারা পরিষ্কার করে থাকে।” (মুসনাদে আহমাদ শরীফ ৬ষ্ঠ খণ্ড ৭৯ পৃষ্ঠা: হাদীছ শরীফ নং ২৫০০৫)
তালবীনার উপকারিতা: তালবীনাহ একটি পরীক্ষিত পথ্য। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা
নিম্নোক্ত রোগ-ব্যাধিসমূহের শেফায় (রোগমুক্তিতে) তালবীনার আশ্চর্যজনক উপকারিতা
প্রমাণিত হয়েছে। যেমন-
১. হৃদরোগের প্রতিষেধক
২. হৃদপিণ্ডের শক্তি বাড়ায়
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে বিশেষ করে কোলন ক্যান্সার রোধ করে
৪. অ্যালজেইমার প্রতিরোধ করে
৫. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডায়াবেটিকের ঝুঁকি কমায়
৬. বিষন্নতা দূর করে
৭. কোলেস্টেরল কমায়
৮. পাকস্থলীর জন্য স্বস্তিদায়ক
৯. কোষ্ঠকাঠিণ্যতা দূর করে ফলে নিয়মিত স্বাভাবিক ইস্তিঞ্জা হয়।
১০. অসুস্থ অবস্থায় দুর্বলতা কাটাতে।
১১. অন্তরের কষ্ট, ব্যাথা বেদনা, শোক-দুঃখ দূর করে ইত্যাদি আরো অনেক উপকারিতা
রয়েছে।
তালবীনা হালুয়া প্রস্তুত প্রণালী:
উপাদান: ১. দুধ, ২. যবের গুড়া/আটা, ৩. মধু, ৪. খেজুর কুচি
প্রস্তুত প্রণালী (এক):
১. একটি পাত্রে চার টেবিল চামচ পরিমাণ যবের গুড়া/আটা নিতে হবে।
২. এরমধ্যে এক কাপ দুধ ঢেলে দিতে হবে এবং ভালভাবে নাড়তে হবে যেন ভালোভাবে
মিশে যায়।
৩. ৩ মিনিট ওভেনে গরম করতে হবে অথবা চুলায় দিয়ে নাড়তে হবে যেন জমাট না হয়ে
যায়।
৪. মিশ্রণটি কিছুটা ঘন হওয়ার পর মিষ্টি স্বাদের জন্য হালকা মধু দেয়া যেতে
পারে।
৫. সবশেষে খেজুর কুচি করে কেটে উপরে ছিটিয়ে দিলেই তালবীনাহ্ প্রস্তুত হয়ে
যাবে।
প্রস্তুত প্রণালী (দুই):
ধাপ ১. ১-২ টেবিল চামচ যবের আটা ২ কাপ দুধের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে
ধাপ ২. চুলায় অল্প তাপে নাড়তে হবে ১০-১৫মিনিট অথবা ঘনত্ব না আসা পর্যন্ত নাড়তে
হবে
ধাপ ৩. মিষ্টি স্বাদের জন্য পরিমাণ মতো মধু দিতে হবে।
প্রস্তুত প্রণালী (তিন):
উপকরণ : ১. যব, ২. দুধ ও ৩. খেজুরের গুড়।
তৈরীর পদ্ধতি: কুসুম গরম পানিতে দুধ ঢেলে যবের আটা ও গুড় মিশ্রণ করতে হবে। যব দুধের সাথে
মিশে যাওয়া পর্যন্ত জাল দিতে হবে। মিশ্রণটি হালুয়া হয়ে গেলে নামিয়ে গরম অথবা
ফ্রীজের ঠান্ডা উভয় অবস্থায় পরিবেশনযোগ্য।
তালবীনা শরবত প্রস্তুত প্রণালী:
উপকরণ: ১. যব (২০ গ্রাম), ২. চিনি (পরিমাণমত), ৩. গুড়া দুধ (পরিমাণমত)
তৈরীর পদ্ধতি: উপরোক্ত উপকরণসমুহ মিশ্রণ করে তালবীনা শরবত তৈরী করা যায়। এটি ২৫০ মিলি
কুসুম গরম পানি অথবা সাধারণ খাবার পানিতে ভালোভাবে নেড়ে মিশ্রণ করলে তালবীনা শরবত
তৈরী হয়।
৯. হাইসাহ্ (حَيْسَةٌ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার
মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ يَـقُوْلُ قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَـبْنِيْ بِاُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ الْعَاشِرَةِ
صَفِيَّةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ فَدَعَوْتُ الْمُسْلِمِيْنَ اِلٰى وَلِيْمَتِه
اَمَرَ بِالْاَنْطَاعِ فَـبُسِطَتْ فَأُلْقِيَ عَلَيْهَا التَّمْرُ وَالْاَقِطُ
وَالسَّمْنُ. وَقَالَ حَضْرَتْ عَمْرُو رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ عَنْ
حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ بَنٰى بِـهَا النَّبِيُّ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُـمَّ صَنَعَ حَيْسًا فِيْ نِطَعٍ.
অর্থ : “হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল
‘আশিরাহ্ আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে পবিত্র নিসবাতুল আ’যীম শরীফ সম্পন্ন করলেন। আমি
উনার সম্মানিত ওলীমা মুবারক উনার জন্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহুম উনাদের দাওয়াত করলাম। উনার মুবারক নির্দেশ মোতাবেক পবিত্র দস্তরখান
বিছানো হলো। তারপর খেজুর, মাখন ও ঘি দেয়া হলো। হযরত ‘আমর
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত
আল ‘আশিরাহ্ আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে পবিত্র নিসবাতুল আ’যীম শরীফ গ্রহণ করলেন এবং
চামড়ার দস্তরখানে ‘হাইস’ তৈরী করলেন।” (বুখারী শরীফ: কিতাবুত ত্ব‘য়ামাহ্:
হাদীছ শরীফ নং ৫৩৮৭)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ
حَضْرَتْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَرَوْسًا بِاُمِّ الْمُؤْمِنِيْنَ اَلـسَّابِعَةِ زَيْـنَبَ
عَلَيْهَا السَّلَامُ فَـعَمَّدَتْ حَضْرَتْ اُمُّ سُلَيْمٍ رَضِىَ اللهُ
تَـعَالٰى عَنْهَا اِلٰى تَـمْرٍ وَسَـمْنٍ وَاَقِطٍ فَصَنَـعَتْ حَيْسًا
فَجَعَلَتْهُ فِىْ تَـوْرٍ فَـقَاَلَتْ يَا حَضْرَتْ اَنَسُ رَضِىَ اللهُ
تَـعَالٰى عَنْهُ اِذْهَبْ بِـهٰذَا اِلٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ فَـقُلْ بَـعَـثَتْ بِـهٰذَا اِلَيْكَ اُمِّيْ وَهِيَ تَـقْرَئُكَ
السَّلَامَ فَـقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اُدْعُ لِيْ فُلَانًا
وَفُلَانًا رِجَالًا سَـمَّاهُمْ وَادْعُ لِيْ مَنْ لَقِيْتَ فَدَعَوْتُ مَنْ
سَـمَّى وَمَنْ لَقِيْتُ فَـرَجَعْتُ فَاِذَا الْبَـيْتُ غَاصٌّ
بِاَهْلِه قِيْلَ لِاَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى عَنْهُ مَا عَدَدُهُمْ؟ قَالَ
كَانُـوْا ثَلَاثَ مِائَةٍ فَـرَاَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ وَضَعَ يَدَهُ الشَّرِيْـفَةَ عَلٰى تِلْكَ الْـحَيْسَةِ وَتَكَلَّمَ
بِـمَا شَاءَ اللهُ ثُـمَّ جَعَلَ يَدْعُوْ عِنْدَه عَشَرَةً عَشَرَةً
يَاْكُلُوْنَ مِنْهُ وَيَقُوْلُ لَـهُمْ اُذْكُرُوْا اللهَ وَلِيَاْكُلْ كُلُّ
رَجُلٍ مِـمَّا يَلِيْهِ فَاَكَلُوْا حَتّٰى شَبِعُوْا كُلَّهُمْ ثُـمَّ قَالَ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيْ يَا حَضْرَتْ اَنَسُ رَضِىَ اللهُ تَـعَالٰى
عَنْهُ اِرْفَعْ فَـرَفَـعْتُ فَمَا اَدْرِيْ حِيْنَ وَضَعَتْ كَانَتْ اَكْثَـرُ
اَوْ حِيْنَ رَفَـعْتُ
অর্থ: “হযরত আনাস
রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যখন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘য়াহ
)হযরত যাইনাব বিনতে জাহ্শ) আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মনিত
ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়, তখন
(আমার সম্মানিতা আম্মাজান) হযরত উম্মু সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি
গিয়ে খেজুর,
মাখন/ঘি এবং পনির মিশ্রিত করে ‘হাইস্’ নামক এক প্রকার খাবার
তৈরী করে একটি পিতলের পাত্রের মধ্যে (গামলার মতো মোটামুটি একটি বড় পাত্রের মধ্যে)
রাখেন। তারপর বলেন,
হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আপনি এই
সম্মানিত খাবার মুবারক নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ গিয়ে বলুন, এই
সম্মানিত খাবার মুবারক আপনার জন্য আমার সম্মানিতা আম্মাজান তিনি পাঠিয়েছেন এবং
তিনি আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সম্মানিত সালাম মুবারক পেশ করেছেন। তখন নূরে
মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেকের নাম
মুবারক উল্লেখ করে ইরশাদ মুবারক করেন, আমার নিকট আপনি অমুক, অমুক
এবং যাঁদের সাথে আপনার সাক্ষাৎ হয় উনাদেরকে ডেকে আনুন। তারপর নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যাঁদের নাম মুবারক
উল্লেখ করেছেন এবং আমার সাথে যাঁদের সাক্ষাৎ হয়েছে উনাদেরকে ডেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ ফিরে
আসলাম। হঠাৎ দেখলাম যে,
সম্মানিত হুজরা শরীফ লোক দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেলেন। হযরত
আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, উনাদের
সংখ্যা কত ছিলেন। তিনি বলেন, উনারা ৩০০ জন ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
(হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু
তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন,)
অতঃপর আমি দেখলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র
নূরুল মাগফিরাহ্ মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক) সেই খাবারের পাত্রের
মধ্যে রেখে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত ইরাদা বা ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী কিছু
বাক্য মুবারক উচ্চারণ করলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাবার খাওয়ার জন্য উনার নিকট ১০ জন ১০
জন করে লোক ডাকলেন এবং উনাদেরকে বললেন, আপনারা ‘বিসমিল্লাহ শরীফ’
বলে প্রত্যেকেই পাত্রের নিজ নিজ দিক থেকে খাবার মুবারক গ্রহণ করুন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর
উনারা প্রত্যেকেই তৃপ্তি সহকারে খেলেন। সুবহানাল্লাহ! তারপর নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে বললেন, হে
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু! আপনি ঢাকনা মুবারক তুলুন। অতঃপর আমি
ঢাকনা মুবারক তুললাম। আমি জানি না যে, যখন পাত্র মুবারক-এ খাবার
রাখা হয়েছে তখন বেশি খাবার মুবারক ছিলো, না কি যখন ঢাকনা মুবারক
তুললাম তখন বেশি (খাবার মুবারক ছিলো। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ পাত্র মুবারক-এ যখন
খাবার মুবারক রাখা হয়েছে তখন যে পরিমাণ খাবার মুবারক ছিলো এবং যখন ঢাকনা মুবারক
তুললাম তখনও ঠিক সেই পরিমাণই খাবার মুবারক ছিলো।)” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ শরীফ ৩/৪০৯)
পবিত্র মদীনা শরীফে এখনও
অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টান্ন হিসেবে হাইস পরিবশেন করা হয়।
বর্তমানে পবিত্র মদীনা
শরীফে প্রচলিত হাইস তৈরীর পদ্ধতি:
উপকরণ: ১. খেজুর, ২. পনির, ৩. মাখন/ঘি
তৈরীর পদ্ধতি-১: খেজুর,
পনির ও মাখন/ঘি একসাথে মিশ্রিত করে কাঁইয়ের মতো করা হয়।
আধা কাপ পানি দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় জাল দেয়া হয়। মিশ্রণটি হালুয়ার মতো হলে
নামিয়ে ফেলা হয়। কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার পর নাড়ুর মতো গোল গোল করে পরিবেশন করা
যায় অথবা ছুড়ি দিয়ে কেটে চৌকোণাকৃতির করা যায়।
তৈরীর পদ্ধতি-২: মাখন/ঘি একটি কড়াইতে গলানো হয়। তাতে আধা কাপ যবের গুড়া বা ময়দা দিয়ে
লালচে রং আসা পর্যন্ত ভালোভাবে নাড়া হয়। এ সময় খেজুরগুলোর বিচি বের করে মণ্ড তৈরী
করা হয়। মণ্ডটি মাখন ও ময়দার মিশ্রণের সাথে দিয়ে ভালোভাবে মিশ্রিত করে ফেলা
হয়। চুলা থেকে নামিয়ে হাইস ঠান্ডা করা হয়। অতঃপর কেটে অথবা গোল করে পরিবেশন করা
হয়।
তৈরীর পদ্ধতি-৩:
উপকরণ: ১. খেজুর (১ কেজি), ২. মাখন অথবা ঘি (২০০ গ্রাম), ৩. পানি (৫০০ মিলি), ৪.
যবের আটা (৫০০ গ্রাম)।
প্রথমে মাখন বা ঘি দিয়ে
আটা/যবের গুড়া হালকা ভাজতে হবে। বিচি ছাড়ানো খেজুর পানিতে সিদ্ধ করে সেই পাত্রেই
ধীরে ধীরে আটা দিতে হবে এবং সাথে সাথে হাতে ব্লেন্ড করতে হবে অথবা দ্রুত নাড়তে
হবে। সবগুলোর মিশ্রণ ভালোভাবে হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলতে হবে। হাইস হালকা অবস্থায়
অথবা পুরোপুরি ঠাণ্ডা করেও পরিবেশন করা যায়।
0 Comments:
Post a Comment