পবিত্র ইল্মে গইব বিষয়ে
বাতিল ফিরক্বাদের
মিথ্যাচারিতার জবাব
পি.ডি.এফ- https://drive.google.com/open?id=16Lpr3u2QaJ8P3uUz6u4VXOgQ42ZQYgsr
আওয়ালুল মুশাফ্ফা, আওয়ালিল মুসলিমীন, আওয়ালু মা ইয়ানশাক্কুল আরদ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি (মহান
আল্লাহ পাক প্রদত্ত্ব) ইল্মে গয়িব উনার অধিকারী ছিলেন।
মহান আল্লাহ্
পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গায়েবের সংবাদ
প্রচারে কৃপণতা করেননি।” (পবিত্র সূরা তাকভীর, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)
“অদৃশ্য সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করা আল্লাহ্ পাক উনার কাজ নয়, তবে আল্লাহ্ পাক উনার রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণের মধ্যে যাঁকে
ইচ্ছা মনোনীত করেন।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৯)
মহান আল্লাহ্
পাক আরো বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক গায়েবের মালিক। তিনি
গায়েবের বিষয় কারো কাছেই প্রকাশ করেননা। তবে তিনি যাঁকে রসূল হিসেবে মনোনীত করেছেন
তিনি ব্যতীত।”
(পবিত্র সূরা জ্বিন, পবিত্র আয়াত শরীফ
২৭)
হাদীস শরীফে
ইরশাদ মুবারক করা হয়েছে, “হযরত আবূ মুসা আশয়ারী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়ের সমস্ত ইল্ম দান করা হয়েছে।”(ত্ববরানী, কানযুল উম্মাল ৩১৯২৬)
উপরোক্ত হাদীস
শরীফ দ্বারা একথা স্পষ্টভাবেই প্রতীয়মান হয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক উনার প্রদত্ত্ব ইল্মে গয়িব উনার অধিকারী।”
পবিত্র হাদীস
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমি সমস্ত ইল্মসহ প্রেরীত হয়েছি।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত/৫১২)
পবিত্র হাদীস
শরীফ উনার মধ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক আমার জন্য পৃথিবীকে এমন করে দিয়েছেন
যে,
আমি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত সমস্ত
কিছুই দেখি।” (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমীযী, আহমদ)
অন্য হাদীস
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন
যে,
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক
করেছেন,
আমি আল্লাহ্ পাককে উত্তম ছূরতে দেখেছি। তখন আল্লাহ্ পাক আমাকে
জিজ্ঞাসা করলেন, মালায়ে আলা ফেরেশ্তাগণ কি নিয়ে তর্ক
করছেন। আমি বললাম, আপনি ভাল জানেন।
তখন আল্লাহ্ পাক উনার কুদরতি হাত আমার দুই কাঁধের মাঝে রাখলেন। তখন আমি উনার শীতলতা
অনুভব করলাম। আর আমাকে আসমান এবং জমিনের সবকিছুই অবগত করানো হলো।”(সুবহানাল্লাহ) (দারেমী, তিরমিযী, মিশকাত শরীফ/৭০)
“ফুতুহাতে আহমদীয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইল্ম সমগ্র জগত
তথা জ্বীন-ইনসান এবং ফেরেশ্তাগণের ব্যাপক ইল্মকেও পরিবেষ্টন করে রয়েছে। কেননা মহান
আল্লাহ্ পাক উনাকে সমগ্র জগত সম্পর্কে অবহিত করেছেন। পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল আলিমদের
ইল্ম উনাকে দান করেছেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত
যা ছিল ও যা হচ্ছে বা হবে সমস্ত বিষয় জানিয়ে দিয়েছেন। উনার এ ব্যাপক ইল্মের জন্য কুরআন
শরীফের ইল্মই যথেষ্ট।”
মহান আল্লাহ্ পাক উনার কালাম পাকে ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি এ কিতাবে (কুরআন শরীফে) কোন কিছুই বাদ দেইনি।”
“আফদ্বলুল ক্বোরা” কিতাবে উল্লেখ আছে, “মহান আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস্ সালামকে সমস্ত
দুনিয়া সম্পর্কে অবহিত করেছেন। সুতরাং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে
পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল আলিমদের ইল্মকে, এবং যা কিছু হয়েছে ও যা কিছু হবে, সবকিছুই জানিয়ে দেয়া হয়েছে।”
“কাসিদায়ে বুরদাতে” উল্লেখ করা হয়েছে, “সবাই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে ইল্ম আহরণ করে থাকেন।
যেমন,
কেউ সমুদ্র থেকে কলসি ভরে বা প্রবল বৃষ্টি ধারার ছিটে ফোটা থেকে
পানি সংগ্রহ করে।”
এর ব্যাখ্যায়
উল্লেখ করা হয়েছে, “সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্
সালাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিস্তৃতি ও ব্যাপক ইল্ম ভান্ডার
থেকে ইল্ম আহরন করেছেন এবং সকলেই উনার সে অঝোর বারি ধারার মত করুনা থেকে করুণাপ্রাপ্ত
হয়েছেন। কেননা, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি হলেন ফয়েযদাতা আর অন্যান্য নবীগণ হলেন ফয়েয গ্রহণকারী। মহান আল্লাহ্ পাক
সর্বপ্রথম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রূহ্ মুবারক সৃষ্টি করে তাতে
সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও পূর্বাপর প্রত্যেক বিষয়ের ইল্ম সঞ্চিত রাখেন।
অতঃপর অন্যান্য রসূলগণ উনাদেরকে সৃষ্টি করেন। সুতরাং উনারা সবাই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে ইল্ম সংগ্রহ করেছেন।” (কাছীদায়ে বুরদা)
ইমাম কুসতালানি রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “মহান আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়াদি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। (মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া)
“মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া” কিতাবে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, “এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মহান আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এর থেকেও অনেক
বেশী বিষয়সমূহ সম্পর্কে অবহিত করেছেন। তাঁকে আওয়াল আখির তথা পূর্বাপর সমস্ত ইল্ম দান
করেছেন।”
ক্বাইউমে
আউয়াল,
হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি “মকতুবাত শরীফ”
উনার ১ম খন্ড ৩১০ নং মাকতুবে বলেছেন, “যে ইল্ম একমাত্র আল্লাহ্ পাক উনার জন্য বিশেষরূপে নির্ধারিত সে ইল্ম কেবলমাত্র
বিশেষ রসূলগণ উনাদেরকে জানানো হয়।”
“জামউন্নেহায়া” কিতাবে উল্লেখ আছে, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে সর্ব বিষয়ে অবহিত না করে তার নবুওয়াতের প্রকাশ ঘটাননি।”
“শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া” কিতাবে উল্লেখ আছে, “ইলমে গায়েব সম্পর্কীয় হাদীস শরীফ সমূহের ভাবার্থে বর্ণনাকারীগণ ঐক্যমত হয়েছেন এ
অর্থে যে,
গায়েব সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
অবগত। আর এ মাসয়ালাটি ওই সব আয়াত শরীফের পরিপন্থী নয় যা দ্বারা ইহা বুঝা যায় যে, মহান আল্লাহ্ পাক ছাড়া আর কেউ গায়েব জানেন না। কেননা উক্ত আয়াতসমূহে
যে বিষয়টির অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে, তাহলো, মাধ্যম ছাড়া অর্জিত ইল্ম (স্বত্ত্বাগত
ইল্ম) আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ্ পাক প্রদত্ত
ইল্মের বলে গায়ব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ব্যাপারটি মহান আল্লাহ্ পাক উনার কালামের সে
আয়াত শরীফ থেকে প্রমাণিত হয়। যেখানে বলা হয়েছে, “উনার পছন্দনীয় রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদেরকে অদৃশ্য বিষয়াদীর ইল্ম দান করা হয়।”
(পবিত্র সূরা জ্বিন, পবিত্র আয়াত শরীফ
২৭)
উল্লেখ্য
যে,
নবী-রসুল আলাইহিমুস্ সালামগণতো অনেক দূরের কথা হক্কানী ওলীআল্লাহ্গণকেও
আল্লাহ্ পাক ইল্মে গায়েব দান করেন। যেমন, হযরত খিযির আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি উনাকে ইল্মে লাদুন্নী দান করেছি।” (পবিত্র সূরা কাহাফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৫)
“কিতাবুল এলাম” ও “সুল্লুল হুস্সাম” কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ তথা আউলিয়া-ই-কিরাম রহ্মতুল্লাহি আলাইহিমগণ
কোন ঘটনা বা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গায়েবী ইল্ম জানেন বা অর্জন করেন, ইহা গ্রহণযোগ্য। যেমন, অনেক আউলিয়া-ই-কিরাম রহ্মতুল্লাহি আলাইহিমগণ কর্তৃক এমন ঘটনা সংগঠিত হয়েছে এবং
তা প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।”
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক
আলোচনায় এটাই ছাবেত হলো যে, আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহ্মতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ্ পাকই সর্ববিষয়ের ইল্ম দান করেছেন।
কাজেই তিনি অবশ্যই ইল্মে গায়েবের অধিকারী ছিলেন। এমনকি পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্
সালামগণ এবং হক্কানী ওলীআল্লাহ্গণ উনাদেরকেও মহান আল্লাহ্ পাক ইল্মে গায়েব দান করেন।
আয় আল্লাহ্
পাক ইলমে লাদুন্নী দ্বারা আমাদের সকলের ক্বলবকে কোষাদা করুন। (আমিন)
0 Comments:
Post a Comment