সাইয়্যিদে
ঈদে আ’যম,
পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
পালন করা
ফরয
পবিত্র কুরআন
শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা-ক্বিয়াস থেকে
অকাট্য দলিল
সাইয়্যিদুল
আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম পালন করা কুল কায়িনাতের সকলের জন্য ফরয ও নাযাতের কারণ
“হে হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় অনুগ্রহ ও রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন, সে কারণে তারা যেনো
খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সে সবকিছু থেকে উত্তম, যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে।” (পবিত্র সূরা ইউনুস:
পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৮)
“যে ব্যক্তি আমাকে
মুহব্বত করবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার মধ্যে
পবিত্র সাইয়্যিদুল
আ’ইয়াদ শরীফ উনার ঘোষণা:
“(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি (আলমে আরওয়াহতে)
সমস্ত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছিলেন যে, আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য
প্রতিপাদনের জন্য (নুবুওওয়াত ও রিসালতের হাক্বীক্বী ফায়িয দেয়ার জন্য) আখিরী নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনার উপর অবশ্যই অবশ্যই ঈমান আনবেন তথা
উনাকে অবশ্যই অবশ্যই নবী ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সার্বিক বিষয়ে উনার যথাযথ খিদমত
করবেন (উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করবেন)। আপনারা কি এই
ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন, হ্যাঁ আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম (অর্থাৎ আমরা যমীনে গিয়ে
আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করব)। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন, আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে থাকলাম। তবে জেনে রাখুন যারা এই ওয়াদাকৃত বিষয় থেকে
মুখ ফিরিয়ে নিবে (যারা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করবে না
বা এর বিরোধিতা করবে) তারা চরম পর্যায়ের ফাসিক (কাফির) হয়ে যাবে।” (সূরা আলে ইমরান:
আয়াত শরীফ ৮১, ৮২)
পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার মধ্যে
পবিত্র সাইয়্যিদুল
আ’ইয়াদ শরীফ পালনের নির্দেশ মুবারক:
“হে হাবীব ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া, ইহসান ও রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য
যথার্থভাবে ঈদ উদযাপন বা খুশি প্রকাশ করো। তোমরা যতো কিছুই করোনা কেনো তিনিই হচ্ছেন
সমগ্র কায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম নিয়ামত।” (সূরা ইউনুস: আয়াত শরীফ: ৫৭, ৫৮)
“(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীস্বরূপ পাঠিয়েছি যেন (হে মানুষ!) তোমরা
আল্লাহ তায়ালার উপর এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনো
এবং তোমরা উনার খিদমত করো ও উনার তা’যীম-তাকরীম করো এবং উনার ছানা-ছিফত করো সকাল-সন্ধ্যা
অর্থাৎ দায়িমীভাবে সদা সর্বদা।”
(সূরা ফাতহ : আয়াত শরীফ ৮-৯)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক
তিনি এবং উনার ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত তথা দুরূদ শরীফ পাঠ করেন। হে মু’মিনগণ! তোমরাও হযরত নবী পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত তথা ছানা-ছিফত, তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করো এবং সালাম প্রেরণ করো প্রেরণ করার মত
অর্থাৎ যথাযথ তা’যীম-তাকরীমের সাথে।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ৫৬)
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ফযীলত ও নাজাতের সুসংবাদ:
হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ
পালন করার ফযীলত ও নাজাতের সুসংবাদ প্রদান করেন-
হযরত আবু
দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে
হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার সন্তানাদি এবং
আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ
এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ এনেছেন এবং
ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)।
বিলাদত শরীফ উনার ঘটনাবলী শ্রবণ করে হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশি হয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার রহমতের দরজা আপনার জন্য উন্মুক্ত
করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতাগণ উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার
মতো এরূপ কাজ করবে, সেও আপনার মতো নাজাত
(ফযীলত) লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
(আত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- হযরত ইমাম জালালুদ্দীন
সুয়ূতী,
হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী-৩৫৫ পৃষ্ঠা)
এ সম্পর্কে
হাদীছ শরীফ-এ আরো ইরশাদ হয়েছে, হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে উনার নিজগৃহে
ছাহাবীগণকে সমবেত করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারীগণ আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন
এবং আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা তথা তাসবীহ-তাহলীল পাঠ করছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার হাবীব
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর (ছলাত-সালাম) দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন।
এমন সময় রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হয়ে বিলাদত শরীফ উপলক্ষে
খুশি প্রকাশ করতে দেখে বললেন: “আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে গেলো।” সুবহানাল্লাহ!
(সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- হযরত ইমাম জালালুদ্দীন
সুয়ূতী)
খুলাফায়ে
রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উপলক্ষে খরচ করার ফযীলত
বর্ণনা করেছেন:
নবী ও রসূল
আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে শ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহু তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি
প্রকাশ করে এক দিরহাম ব্যয় করবে, সে জান্নাতে আমার
বন্ধু হয়ে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা)
হযরত উমর
ফারূক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথা বিলাদত শরীফকে বিশেষ মর্যাদা দিলো অর্থাৎ এ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ
করলো,
সে মূলত ইসলামকেই পুনরুজ্জীবিত করলো।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল
কুবরা)
হযরত উছমান
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি হয়ে এক দিরহাম খরচ করলো, সে যেনো বদর ও হুনাইন যুদ্ধে শরীক থাকলো।” সুবহানাল্লাহ! (আন
নি’য়ামাতুল কুবরা)
হযরত আলী
কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন
নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করলো অর্থাৎ সে উপলক্ষে
খুশি প্রকাশ করলো, সে ব্যক্তি অবশ্যই
ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিবে এবং বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
(আন নি’য়ামাতুল কুবরা)
বিশিষ্ট তাবিয়ী
উনার বর্ণনায়:
বিশিষ্ট তাবিয়ী
হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (যিনি শতাধিক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
আনহুম উনাদের সাক্ষাৎ লাভসহ ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার খলীফা ও ছাত্র ছিলেন) তিনি বলেন-
“আমার একান্ত ইচ্ছা
হয় যে,
আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে আল্লাহ পাক উনার
হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম পালন উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে ব্যয় করতাম।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল
কুবরা)
শাফিয়ী মাযহাবের
ইমাম:
শাফিয়ী মাযহাবের
ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
“যে ব্যক্তি আল্লাহ
পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করার জন্য লোকজন একত্রিত করলো এবং খাদ্য তৈরি
করলো ও জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং উত্তমভাবে (তথা সুন্নাহভিত্তিক) আমল করলো তাহলে উক্ত
ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক তিনি হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ,
ছালিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতুল নায়ীমে।”
সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা)
তরিকতের ইমাম:
হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন- “যে ব্যক্তি
মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আয়োজনে খুশি প্রকাশ করার জন্য উপস্থিত
হলো এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করলো। সে তার ঈমানের দ্বারা সাফল্য লাভ করবে অর্থাৎ
সে বেহেশতী হবে।” সুবহানাল্লাহ! (আন নি’য়ামাতুল কুবরা)
-০-
0 Comments:
Post a Comment