|
(২) ইলিয়াছ সাহেবের মাল্ফুযাতসহ আরো কিছু কিতাবে
লেখা আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা, যা সকল দ্বীনী আন্দোলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত, যার থেকে ভাল তরীক্বা আর হতে পারেনা। (হযরতজীর মাল্ফুযাত-২৯ পৃষ্ঠা-২২, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৫, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও
কেন পৃষ্ঠা-৪৯, তাবলীগ জামায়াতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫৬)
(৩) প্রচলিত তাবলীগের কেউ কেউ বলে থাকে যে, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগে অংশগ্রহণ না করলে ও চিল্লা না
দিলে ঈমান ও এক্বীন সহীহ্ হয়না। তাই সাধারণ লোক ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন
চিল্লার দরকার।
(৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের কেউ কেউ অনেক সময় বলে
থাকে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা ছাড়া আর সকলেই
গোমরাহ্। অর্থাৎ একমাত্র তারাই হিদায়েতের উপর রয়েছে।
(৫) মুহম্মদ মুযাম্মিলুল হক লিখিত- “তাবলীগ
জামায়াত প্রসঙ্গে ১০ দফা” নামক কিতাবের ১৪নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, “প্রচলিত
তাবলীগ হচ্ছে নবীওয়ালা কাজ।”
(৬) প্রচলিত তাবলীগওয়ালারা বলে থাকে যে, পীর সাহেবগণের যেখানে শেষ, তাবলীগওয়ালাদের সেখানে শুরু। অতএব, পীর সাহেবদের
ইছলাহ্র জন্য দশ চিল্লার দরকার।
(৭) তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াছ সাহেবের
মাল্ফুযাতের ৫৩নং পৃষ্ঠার ৮০নং মাল্ফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগের বা অতরীক্বতপন’ীদের, তাসাউফের বা সূফীদের বই পড়া উচিত নয়।
(৮) মাল্ফুযাত নামক কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠার ৩নং
মালফূযে ও তাবলীগ জামায়াতের হাক্বীক্বত নামক কিতাবের ৭২ পৃষ্ঠায় একথা উল্লেখ আছে
যে, “তরীক্বত
পন্থায় কিছু কিছু বিদ্য়াত রয়েছে।”
(৯) দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন (মুহম্মদ ওবায়দুল হক রচিত) ১১৬ পৃষ্ঠা, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ ৯ পৃষ্ঠা, মূল- মাওঃ এহ্তেশামুল হাসান কান্দলভী, অনুবাদক- ছাখাওয়াত উল্লাহ।
তাবলীগী নেছাব ১১ পৃষ্ঠা, ফাজায়েলে তাবলীগ (মূল- মাও জাকারিয়া, অনুবাদক- আম্বর আলী) ৯ পৃষ্ঠা, তাবলীগে ইসলাম, লেখক- আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী ৯ পৃষ্ঠা ও মাওলানা শাহ্
মনিরুজ্জামান লিখিত- আমি কেন তাবলীগ করি ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “তাবলীগ তথা
দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কারণেই হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, অন্য কোন কারণে নয়।”
(১০) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বেশ কিছু লোককে বলতে
শুনেছি যে, তিন তাস্বীহ্ পাঠ করলেই বেহেশ্তে যাওয়া যাবে, অন্যথায় নয়।
(১১) মাল্ফুযাতের ৪৩ পৃষ্ঠার ৪২নং মাল্ফূযে এবং নুবুওওয়ত ও মাওঃ ইলিয়াছ নামক কিতাবের ৩০-৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “মুসলমান দু’প্রকার- একদল প্রচলিত তাবলীগের জন্য হিজরত করবে, দ্বিতীয় দল নুছরত বা সাহায্য করবে, এ দু’দলই মুসলমান। অর্থাৎ যারা প্রচলিত তাবলীগও করবেনা আর তাবলীগ কারীদেরকে সাহায্যও করবেনা, তারা মুসলমান নয়।” (অনুরূপ তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মোঃ ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী ১৭৪ পৃষ্ঠা, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন? (লেখক- ওবায়দুল হক) ২১ পৃষ্ঠা, হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান, ২য় খণ্ড ১১ পষ্ঠায় উল্লেখ আছে।)
(১২)ফাজায়েলে তাবলীগের ৪ নং পৃষ্ঠায়, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন (লেখক- ওবায়দুল হক) ১১৮ পৃষ্ঠা, তাবলীগে ইসলাম (লেখক- আব্দুস সাত্তার ত্রিশাল) নামক কিতাবের ৯ পৃষ্ঠার বক্তব্য দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, সুরা হা মীম সিজদার ৩৩ নং আয়াত শরীফ প্রচলিত তাবলীগের জন্য খাছ।অর্থাৎ একমাত্র প্রচলিত তাবলীগ কারীরাই এই আয়াত শরীফের পূর্ণ মিছদাক।
(১৩) টঙ্গীর ইজ্তেমা এলে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রায় লোক সাধারণ লোকদের মাঝে একথা প্রচার করে থাকে যে, “বিশ্ব ইজ্তেমাই হচ্ছে- গরিবের হজ্জ। কেননা টঙ্গীর বিশ্ব ইজ্তেমায় গেলে হজ্জের সওয়াব পাওয়া যায়।”
(১৪) ইলিয়াছ সাহেবের মলফূযাতের ১৮ পৃষ্ঠার ২৯নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, “নামাজ-রোজা উচ্চাঙ্গের ইবাদত কিন্তু দ্বীনের সাহায্যকারী নয়।”
(১৫) “দাওয়াতে তাবলীগ” (আম্বর আলী কর্তৃক প্রণীত) নামক কিতাবের প্রথম খণ্ড ৩৯ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, “প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকজন ইজ্তেমায়ী আমল করে, যার জন্য তারা আহ্লে তাসাউফগণ যারা ইনফেরাদী আমল করেন, তাদের থেকে অনেক বেশি সওয়াবের ভাগীদার হয়।”
(১৬) আমাদের এলাকার তাবলীগ জামায়াতের এক আমীর আমাদের বললো যে, “টঙ্গীতে যে কয়দিন ইজ্তেমা সংঘটিত হয়, সে কয়দিন স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপসি’ত থাকেন।”
(১৭) প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াছ সাহেবের “মলফূযাতের” ৪৯ পৃষ্ঠার, ৭৪নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, “শুধুমাত্র জিহ্বার দ্বারাই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, যা প্রচলিত তাবলীগওয়ালাদের মাঝেই বিদ্যমান।”
(১৮) তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে- “মূর্খ লোক চিল্লা দিলে আলেমের চেয়ে বেশি ফযীলতপ্রাপ্ত হয়, আর মূর্খ লোক ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন চিল্লা দরকার এবং তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে “তেরো দফা” নামক কিতাবে ৭ পৃষ্ঠায় যা মুযাম্মিলুল হক উল্লেখ করেছেন, “মূর্খ লোক আমীর হওয়ার জন্য তিন চিল্লাই যথেষ্ট, আর আলেমের জন্য প্রয়োজন সাত চিল্লার।”
(১৯) “মলফূযাতে ইলিয়াছ” নামক কিতাবের ৪৮ পৃষ্ঠার বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, “প্রচলিত তাবলীগওয়ালারাই যাকাত পাবার প্রকৃত হক্বদার।”
(২০) “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের (লেখক- মাওঃ ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী) ১০৯ পৃষ্ঠায় ও “তাবলীগে দাওয়াত কি এবং কেন?” নামক কিতাবের (লেখক- ওবায়দুল হক) ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে জিহাদ পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান বা ছয় উছূলী তাবলীগই হচ্ছে- জিহাদুল আকবর।” অনুরূপ তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা ও তার জবাব নামক কিতাবের যার মূল হযরত জাকারিয়া কর্তৃক লিখিত ৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
(২১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা গাশ্তের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলে থাকে যে, “গাশ্ত ক্বাজা করা, নামাজ ক্বাজা করার চেয়েও কঠিন গুনাহের কারণ।”
(২২) ‘মলফূযাত’ নামক কিতাবের ১২৮ পৃষ্ঠার ২০১নং মলফূয এবং (মাওলানা ইসমাইল হোসেন, দেওবন্দী লিখিত) “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ১০১ পৃষ্ঠায় একথা লেখা আছে যে, “ফাযায়েলের মর্যাদা মাসায়েলের চেয়ে বেশি।”
(২৩) ভোট গণতন্ত্রের একটি অংশ আর গণতন্ত্র ইসলামে হারাম। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত, “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৭৫ ও ১২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ভোট দান প্রচলিত তাবলীগের ৬নং উছূলের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ ভোট দেয়াও তাবলীগের অন্তর্ভুক্ত।
(২৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা সাধারণ লোকদের তাবলীগের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যে গাশ্তের ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, গাশ্তকারীরা যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, সে রাস্তায় যে ঘাস হয়, সে ঘাস যে গরু খায়, সে গরুর দুধ বা গোশত যারা পান করবে বা খাবে, তারাও বেহেশ্তে যাবে।
(২৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট প্রায় কিতাবেই একথা লেখা আছে যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন। যেমন- হযরত আদম আলাইহিস সালাম গন্দম খেয়ে ভুল করেছিলেন ও হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম দাওয়াত না দিয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি। (মলফূযাতে শায়খুল হাদীস পৃষ্ঠা ২৩১, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী পৃষ্ঠা ৬১)
(২৬) মৌলভী মুহম্মদ ইব্রাহীম কর্তৃক লিখিত- “তাবলীগ জামায়াতের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ” নামক কিতাবের ১ম খণ্ড ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, খ্রিস্টান মিশনারীদের ন্যায় প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত কৃতিত্বের দাবিদার।
(২৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, বিদায় হজ্জের (খুৎবা) ভাষণ শ্রবণকালে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম-এর, যাঁর ঘোড়ার মুখ যে দিকে ছিল, ভাষণ (খুৎবা) শেষ হওয়া মাত্র উনারা সেদিকেই প্রচলিত তাবলীগের কাজে ছুটেছেন।
(২৮) হযরত জাকারিয়া প্রণীত- তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা ও জবাব ৪৪ পৃষ্ঠায়, মলফূযাত ২২ পৃষ্ঠা, মলফূয ২৯ পৃষ্ঠা, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, (লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী) ১১৫ পৃষ্ঠার বক্তব্যসমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, “প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মাদ্রাসা কিতাবের প্রচার-প্রসার পছন্দ করে না, খানকা শরীফ সম্পর্কেও ভাল ধারণা রাখে না এবং মনে করে যে, সেগুলোর দ্বারা কমই ইসলামের খেদমত হয়ে থাকে।”
(২৯) মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, লক্ষাধিক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর মধ্যে অধিকাংশই মূর্খ ছিলেন। (অনুরূপ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব, যার মূল মাওলানা জাকারিয়া প্রণীত- ১৩ পৃষ্ঠা, তাবলীগী জামায়াতের প্রধানের তর্ক ও ইচ্ছা নামক কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)
(৩০) মলফূযাত, পৃষ্ঠা-৪৭, ৫০নং মলফূয, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব পৃষ্ঠা ১৫, হযরতজী ইনয়ামের তর্ক ও বাহাছ পৃষ্ঠা ১২, তাবলীগ পরিচয় পৃষ্ঠা ১৭, তাবলীগ দর্পণ পৃষ্ঠা ৬২ ইত্যাদি কিতাবসমূহের বর্ণনা অনুযায়ী ইলিয়াস সাহেব বিশেষ স্বপ্নের মাধ্যমে এ তাবলীগের নির্দেশ পেয়েছে। আবার কারো কারো মতে হিন্দু জমিদারদের কারণে মুসলমানগণ প্রায় হিন্দু হয়ে পড়লে ইলিয়াস সাহেব এ তাবলীগের উদ্যোগ নেন। তাবলীগের কাজ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর ইলিয়াস সাহেবই পুনরুজ্জীবিত করেন। নাঊযুবিল্লাহ!
(৩১) “দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন” (লেখক- ওবায়দুল হক) নামক কিতাবের ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, তাবলীগের কাজ করার কারণেই মাত্র দশ হাজার ছাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-এর মাজার মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফ-এ আছে। উল্লেখ্য প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেক লোকও এই কথা বলে থাকে।
(৩২) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে যে, তাদের প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের অনুসরণ করা উচিত, কেননা তারা বড় জামায়াত। কারণ হাদীছ শরীফ-এ রয়েছে যে, “তোমরা বড় জামায়াতের অনুসরণ কর।”
(৩৩) “হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান লেখক, মাওলানা নোমান আহমদ” নামক কিতাবের ১৩ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সারা বছর প্রতি মাসে তিন দিন করে সময় লাগালে পুরা বছর আল্লাহর রাস্তায় কাটানো হয়েছে বলে গণ্য হবে। কারণস্বরূপ বলা হয়েছে, প্রতিটি নেক কাজের দশ গুণ সওয়াব হিসেবে তিন দিনের কাজে ত্রিশ দিনের সওয়াব পাওয়া যাবে।
(৩৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের ফাযায়িল-ফযীলত সম্পর্কে নানা রকম কথা বলে থাকে। সে সমস্ত ফাযায়িল-ফযীলতের দলীল-আদিল্লা তলব করলে তারা তাদের মুরুব্বীদের দলীল দিয়ে থাকে। কোন অবস্থায়ই তারা কুরআন-সুন্নাহর দলীল পেশ করেনা। যা দাওয়াতে তাবলীগ, (আম্বর আলী লিখিত) ৮২ পৃষ্ঠা সুন্নী পরিচয় ও তাবলীগ পরিচয় কিতাব যা রেদওয়ানুল হক ইসলামাবাদী প্রণীত সে কিতাবের ৫৬ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারাও প্রতীয়মান হয়।
(৩৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের স্ত্রী লোকেরা মাহরাম পুরুষ ব্যতীত এক এলাকা বা শহর থেকে অন্য এলাকায় বা শহরে সফর করে থাকে, প্রচলিত তাবলীগের তা’লীম দেয়ার জন্য।
(৩৬) “আল্লাহর রাস্তায় বের হলে ঘর সংসার আল্লাহ পাকই দেখবেন।” একথা বলে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা অন্য লোকদেরকে প্ররোচিত করে। যার কারণে অনেক লোকই ঘর-সংসারের যথাযথ ব্যবস্থা না করে প্রচলিত তাবলীগে বের হয়ে যায়। অথচ এর ফলে তাদের বাড়ির লোকজন প্রায়ই বিভিন্ন বর্ণনাতীত অসুবিধায় ভোগে। উল্লেখ্য আত্ তুরাগ, সম্পাদক হামীদ রশীদ মে/১৯৯৩ পৃষ্ঠা, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন নামক কিতাব, (লেখক- ওবায়দুল হক) ১৭ থেকে ২৬ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারাও এই বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।
(৩৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, রসূলের চেয়ে দ্বীনের মর্যাদা বেশি এবং আল্লাহ পাক নবী-রসূলদের দ্বীনের জন্য কষ্ট দিয়েছেন, আর নবী-রসূলগণও দ্বীনের জন্য কষ্ট করেছেন। নাঊযুবিল্লাহ!
(৩৮) হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হলো যে, দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামকে বিপদে ফেলেছিলেন এবং তিনি সেখানে নিজের অপরাধ স্বীকার করে চল্লিশ দিন কাঁদা-কাটার পর আল্লাহ পাক উনার অপরাধ ক্ষমা করেন। এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, “দাওয়াত বন্ধ করার কারণে, আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামকে অবশ্য গযবে ফেলিলেন …….।”
“……. হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে ৪০ দিন আবদ্ধ থাকিয়া নিজ ত্রুটি স্বীকার করিয়া তওবা …. করার কারণে বিপদ হইতে উদ্ধার পাইলেন।” (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী, পৃষ্ঠা ৬২ ও ৮৯)
(৩৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা আরো বলে থাকে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গারে হেরায় চিল্লা দেয়ার উছীলাই কোরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে বিবৃত হয়েছে- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০ দিন পর্যন্ত গারে হেরা পর্বতে থাকিয়া আল্লাহর ধ্যান ও যেকেরে চিল্লা দিলেন, যাহার ফলে তিনিও কোরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হইলেন।” (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, পৃষ্ঠা-৮৯, লেখক ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী)
(৪০) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অধিকাংশ লোকের আক্বীদা হলো যে, দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন। যেমন তাদের কিতাবে লিখিত হয়েছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম…. দীর্ঘকাল পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে প্রথমে ঈমানকে পরিপোক্ত করিয়াছেন ……।” (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৭০, লেখক- ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী)
(৪১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, উম্মতে মুহম্মদীর কারামত আর পূর্ববর্তী নবীদের মো’যেযা সমান কথা। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে লিখিত রয়েছে যে, “পূর্বেকার নবীদের মো’যেযা আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতের কারামত একই সমান।” (মালফুযাতে শায়খুল হাদীস, পৃষ্ঠা-৩৬, মূল- মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী, অনুবাদক- আব্দুল জলিল)
(৪২) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে থাকে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম দীর্ঘকাল পর্যন্ত তাবলীগ করেই ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন। তাই ঈমান পরিপোক্ত ও ছাহাবায়ে কিরামদের মত কাজ করতে হলে প্রচলিত তাবলীগ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তদের বিশিষ্ট আমীর, মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ-এর ঈমান দীর্ঘকাল তাবলীগ করার কারণেই পরিপোক্ত বা মজবুত হয়েছে। তাই যার ঈমানের দাওয়াতের আমল নাই, তার ঈমান থাকিতে পারেনা।
(৪৩) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা ক্ষেত্র বিশেষে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ভুল ত্রুটি করেছেন, একথা প্রচার করে থাকে। যা তাদের আমীর, মুরুব্বী এমনকি হযরতজীদের বয়ানে শোনা যায় ও লেখনীতে পাওয়া যায়। যেমন- “হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান” নামক কিতাবের ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, “কিছু সাহাবী ওহুদ যুদ্ধে ভুলের স্বীকার হয়ে চীজ-আসবাব (গনীমতের মাল)-এর দিকে দৃষ্টি দিয়ে, গিরিপথ থেকে সরে এসে রসূলের নির্দেশ অমান্য করায় ওহুদ যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে…..।” অর্থাৎ কিছু সাহাবী অর্থলোভী ছিলেন, যার জন্যে ওহুদ যুদ্ধে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ অমান্য করেন।
(৪৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, হিদায়েতের ক্ষেত্রে মূর্খরাই সমধিক উপযুক্ত। যেক্ষেত্রে নবীগণ এবং আলিমরা ফেল করে, সেখানেও মূর্খরা কৃতিত্ব দেখায়। এ প্রসঙ্গে ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ১১৬ পৃষ্ঠায় একথা লেখা আছে যে, “….. অনেক স্থলে নবীগণ পর্যন্ত হিদায়েতে বিরাট সঙ্কটে ও বিপদে পড়িয়াছিলেন, তাই অনেক স্থলে বিরাট আলিমও ফেল পড়িতেছে। কিন্থ মূর্খগণ তথায় দ্বীন জয় করিতেছে।”
(৪৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রায়ই বলে থাকে যে, “ছয় উছূলভিত্তিক তাবলীগের তরতীব মোতাবেক সকল স্থানের সকল লোককে দাওয়াত দেয়া ফরজ বা জরুরী এবং এ দাওয়াত না দেয়ার কারণে যারা ঈমান হারা হয়ে মারা যাবে, তাদের জন্য যারা দাওয়াতের কাজ করবেনা অথবা জড়িত থাকবেনা, তাদেরকে আল্লাহ পাক-এর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এবং তারা পাকড়াও হবে।” উল্লেখ্য, আম্বর আলী প্রণীত- “দাওয়াতে তাবলীগ” কিতাবের ৪৯ পৃষ্ঠায় এরূপ সমার্থবোধক বর্ণনা রয়েছে।
(৪৬) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের অনেকের আক্বীদা হলো যে, ধূমপান করা মোবাহ্। যার কারণে তাদের অনেককেই ধূমপান করতে দেখা না গেলেও তাদের মধ্যে যারা ধূমপান করে, তাদের প্রতি বিশেষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেখা যায় না। তাদের সাপ্তাহিক বয়ান এবং বার্ষিক ইজতেমায়ও নয়। তদুপরি তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা- ইলিয়াস সাহেবের বক্তব্যে ধূমপান দ্বারা বা হুক্কা-পানি দ্বারা যাতে দাওয়াতীদিগকে আপ্যায়ন করা হয়, সে পরামর্শ রয়েছে। যা “ মাওঃ মুহম্মদ ইলিয়াছ” নামক কিতাবের ১৪৪ পৃষ্ঠায় (মূল- সৈয়দ আবুল হাসান নদভী, সঙ্কলক- মুহীউদ্দীন খান, সম্পাদক- মাসিক মদীনা) লিপিবদ্ধ রয়েছে।
(৪৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, দাওয়াতের কাজে আল্লাহ পাক ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। যদিও সে মূর্খ হয়ে থাকুক না কেন? আর শুধুমাত্র ইবাদতের কাজে আল্লাহ পাক ফেরেশতা দিয়ে সাহায্য করেন না, যদিও তিনি আল্লাহর রাসূল হয়ে থাকেন না কেন। এর উদাহারণ স্বরূপ তারা বলে থাকে যে, যেমন মক্কা শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামায পড়ছিলেন, তখন কাফিররা এসে তাঁর পিঠ মুবারকের উপর উটের নাড়ি-ভুঁড়ি চাপিয়ে দিয়েছিল। কিন্থ ফেরেশতারা এসে তাকে সাহায্য করেননি। তখন হযরত ফাতিমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এসে সেই নাড়ি-ভুঁড়ি সরিয়ে ছিলেন। অপরদিকে তিনি যখন তায়েফে গিয়েছিলেন দাওয়াতের কাজে, তখন ফেরেশতারা এসে তাকে সাহায্য করেছিল। অর্থাৎ প্রথম ক্ষেত্রে মক্কা শরীফ-এ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন শুধু নামায বা ইবাদতে রত ছিলেন, তখন ফেরেশতারা সাহায্য করতে আসেননি, কিন্থ দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তায়েফের ময়দানে দাওয়াতের কাজ হওয়ায় তখন আল্লাহ পাক-এর নির্দেশে ফেরেশতারা তাঁকে সাহায্য করেছিলেন।
(৪৮) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেরই আক্বীদা হলো যে, সূরা ফাতিহার মধ্যে দোয়াল্লীন-এর স্থলে যোয়াল্লীন পড়াই শুদ্ধ মত এবং এ বিষয়ে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট লোকদের লিখিত কিতাবের বর্ণনাও রয়ে গেছে। যেমন- আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী লিখিত “তাবলীগে ইসলাম বা দ্বীনের দাওয়াত” নামক কিতাবের ৩৫ পৃষ্ঠায় এরূপ বক্তব্য রয়েছে।
(৪৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, ক্বিয়ামতের দিন স্বয়ং আল্লাহ পাক দাঈকে (যে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করে) হিসাব দিবেন। আর যারা দাঈ নয় (যারা দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করেনা), তারা আল্লাহ পাক-এর কাছে হিসাব দিবেন।
(৫০) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, আলেম-জাহেল সকলেই দ্বীন প্রচার করবে এবং দ্বীনের তাবলীগের জন্য আলেম হওয়ার কোনই জরুরত নাই। কারণ তারা মনে করে যে, দ্বীন প্রচার শুধু আলেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে দ্বীন ধ্বংস হয়ে যেত এবং এখনো যাবে। অর্থাৎ জাহেল লোক তাবলীগ করার কারণে দ্বীন টিকে ছিল এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে। যা তাদেরই লেখা কিতাব “তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা ও উহার সদুত্তর” নামক কিতাবের ৯৫ পৃষ্ঠার (লেখক- মূল শায়খুল হাদীছ জাকারিয়া সাহেব, অনুবাদক- মাওলানা মুহিব্বুর রহ্মান আহমদ) এবং “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব নামক কিতাবের ৯৪ পৃষ্ঠার (লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী) বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয়।
(৫১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অধিকাংশ লোকদের আক্বীদা হলো যে, মাগরিব ও বিতরের উমরী ক্বাজা, ক্বাজায়ে আদা-এর ন্যায় আদায় করতে হবে। এ কথার প্রমাণ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা প্রকাশিত মাসিক আত্ তুরাগ পত্রিকা, সম্পাদক- হামীদ রশীদ, ১১তম খণ্ড ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।
(৫২) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই ধারণা করে থাকে যে, দ্বীন ইসলামের বাইরেও বিধর্মীদের মাঝে, এমন অনেক শিক্ষণীয়, নছীহতপূর্ণ ও অনুসরণীয় বিষয় রয়েছে, যদ্বারা ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায়। এ কথার প্রমাণ তাদের লেখা কিতাবেও রয়েছে। যেমন- “তাবলীগ-ই-উত্তম জিহাদ” নামক কিতাবের ৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “হিন্দু যোগীরা ইবাদতে আলস্য দূর করার জন্যে সারা রাত একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে, এসব দৃষ্টান্ত থেকে অন্তরের চিকিৎসার পদ্ধতি জানা যায়।” অর্থাৎ হিন্দু যোগীদের মধ্যেও শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয় অনেক কিছু রয়েছে। আর মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের “মলফূযাতের” ৯৫ পৃষ্ঠায় ১৩৬নং মলফূযে একথা লেখা আছে যে, আমাদের এই কাজ (প্রচলিত তাবলীগ) এক প্রকার যাদুমন্ত্রের মত।
(৫৩) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বেশ কিছু মুরুব্বী ও আমীর এবং তাদের অনুসারীরা মনে করে থাকে যে, তাদের প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বা তাবলীগ জামায়াতের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য কোরআন-হাদীস বহির্ভূত বিষয়ে এবং কোরআন-হাদীসে বর্ণিত পরিমাণের বাইরে বহু বহু ফযীলতের বর্ণনা করা জায়েয।
(৫৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, “মসজিদে নববী ছাড়া বিশ্বের যে তিনটি দেশে, তিনটি মসজিদে প্রচলিত তাবলীগের বিশেষ মারকায, সেখানেই চব্বিশ ঘণ্টা আমল জারি থাকে। যেমন- প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত “এক মুবাল্লিগের পয়লা নোট বই” নামক কিতাবের (সংকলক- ইঞ্জিনিয়ার মু.জু.আ. মজুমদার) ৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “সারা বিশ্বে মাত্র ৪টি মসজিদে ২৪ ঘণ্টা আমল চালু থাকে। যথা- (১) কাকরাইল, ঢাকা (২) নিজামুদ্দীন বস্তি, দিল্লি (৩) রায়বন্ড, লাহোর। (৪) মসজিদে নববী, মদীনা শরীফ।”
(৫৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, তাদের ৬ (ছয়) উছুলভিত্তিক দোয়া ও তাসবীহ পড়াই সুন্নত। যা করলেই যিকিরের হক্ব আদায় হয়ে যায়। এবং তার দ্বারাই অনেক অনেক ফযীলত, রহমত ও বরকত পাওয়া যায়। আর এর দ্বারাই দিল ইছলাহ হয়। অর্থাৎ তাছাউফভিত্তিক ক্বলবী যিকিরের আর দরকার হয় না। অপরদিকে তাদের কথানুযায়ী তাছাউফী বা ক্বলবী যিকির হলো- নফল এবং যার ফযীলত নগণ্য। আর এসব কথা নাকি তাদের “হযরতজীর মলফূযাত” এবং মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দীর “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
(৫৬) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, পীর সাহেবদের দ্বারা দ্বীনের ব্যাপক খিদমত কখনোই সম্ভব নয়। তাই তারা পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া বা ইলমে তাছাউফ চর্চা করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয় না। একথার সত্যতা তাদেরই লোক দ্বারা লিখিত “আয়নায়ে তাবলীগ” নামক কিতাবের (লেখক- মুহম্মদ দাউদ আলী) ৮৮ পৃষ্ঠায় নিম্নোক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয়। উক্ত কিতাবে লিখা হয়েছে- “তাবলীগের মধ্যে পীর-মুরীদীর প্রচলন সম্ভব নহে, কেননা পীর-মুরীদীর দ্বারা সাধারণত গণ্ডিবদ্ধ একটা দলের সৃষ্টি হইয়া থাকে। ….. এইরূপ একটা দলের দ্বারা ব্যাপক কোন কাজ করা সম্ভব নহে। …. তাই বাধ্য হইয়া তাবলীগ এই পথ এড়াইয়া চলিয়া থাকে।”
(৫৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী লিখিত- ‘তাবলীগে ইসলাম বা দ্বীনের দাওয়াত’ নামক কিতাবের ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “থানবী তরীকায়ে মীলাদ কিতাবে উল্লেখ করেছে, মীলাদ অনুষ্ঠান শরীয়তে একবারেই নাজায়িয ও পাপের কাজ।” আবার তাদের মধ্যে কারো কারো আক্বীদা হলো এই যে, “আল্লাহ পাক শিরকের গুনাহ মাফ করবেন কিন্তু মীলাদ-ক্বিয়াম করার গুনাহ কখনো মাফ করবেন না।” তাই দেখা যায়, তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মীলাদ শরীফ পাঠ করেনা বা মীলাদ মজলিসে বসে না।
(৫৮) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে বা প্রচার করে থাকে যে, মাওলানা ইলিয়াস সাহেব প্রবর্তিত “তাবলীগ জামায়াতই আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ।” যে প্রসঙ্গে মাওলানা ইলিয়াস সাহেব ও তার “মলফূযাতের” ২৪নং মলফূযে বলেছে, “আসল কাজের তরীক্বা তাবলীগ হতে শিখতে হবে।” তাই তারা সাধারণ লোকদেরকে তাবলীগ জামায়াতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য আরো বলে থাকে যে, “প্রচলিত তাবলীগের কাজ হযরত নূহ আলাইহিস সালাম-এর কিশতির ন্যায়, তাতে যারা আরোহণ করলো, তারাই নাযাত পেলো।” এ কথার প্রমাণ ‘তাবলীগ কা মুকামী কাম’ পৃষ্ঠা-৩৯ ও ‘ভ্রান্তির বেড়াজালে বর্তমান তাবলীগ জামায়াত’ পৃষ্ঠা-১২ কিতাবদ্বয়ে উল্লেখ আছে। আবার তারা এ কথাও প্রচার করে থাকে যে, “হাদীছ শরীফ-এ ৭৩টি দলের মধ্যে যে দলটিকে নাযী বা নাযাতপ্রাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতই উক্ত নাযাত প্রাপ্ত দল।”
(৫৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের প্রবর্তিত গাশতের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, “কিছু সময় গাশতে বের হওয়া শবে বরাত ও শবে ক্বদরের রাত্রে হাজরে আসওয়াদকে সামনে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়েও বেশি ফযীলত।”
(৬০) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা ইলমে তাছাউফ শিক্ষা বা ইখলাছ অর্জন করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয় না। যে কারণে তাদের বয়ানে ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করা বা ইখলাছ হাছিল সম্পর্কে কোন আলোচনাই করতে দেখা যায়না। পক্ষান্তরে ইলমে তাসাউফ শিক্ষার মাধ্যমে ইখলাছ হাছিল করত “তাযকিয়ায়ে ক্বালব” বা অন্তর পরিশুদ্ধ করার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো- “ইলমে তাছাউফ শিক্ষা ব্যতীত কেবল চিন্তা দ্বারা ও প্রচলিত তাবলীগ করার মাধ্যমেই ইখলাছ হাছিল করা, অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুজুরী ক্বলব-এর সাথে নামায আদায় করা সম্ভব। এর জন্যে ক্বলবী যিকিরের কোনই প্রয়োজন নেই, বরং বিভিন্ন প্রকার দোয়া-দুরূদ ও তাসবীহ-তাহলীলের মাধ্যমেই তা অর্জিত হয়।”
(৬১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা কুরআন শরীফ-এর সূরা ইয়াসীনের ২১ নম্বর আয়াত শরীফ অর্থাৎ “তোমরা এরূপ ব্যক্তিকে অনুসরণ কর, যারা তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাননা, অথচ তারা হিদায়েতপ্রাপ্ত”- এ আয়াত শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করে বলে থাকে যে, মক্তব, মাদরাসা ও মসজিদে দীন প্রচার বা তাবলীগের কাজে যারা নিয়োজিত আর যে সকল আলিম-উলামাগণ ওয়াজ-নছীহতে ব্যস্ত, তারা সকলেই বেতন বা বিনিময় গ্রহণ করেন। আবার দীন প্রচারের কাজে নিয়োজিত পীর সাহেবগণও হাদিয়া (তাবলীগ জামায়াতের মতে বিনিময়) গ্রহণ করেন। কিন্তু একমাত্র প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতই উক্ত আয়াত শরীফ-এর পূর্ণ অনুসারী, যারা দ্বীন প্রচার করে যাচ্ছে অথচ কোন বিনিময় গ্রহণ করে না। কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতই একমাত্র অনুসরণীয় দল।
(৬২) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা পরিচালিত ও প্রকাশিত পাক্ষিক “আত তুরাগ” পত্রিকার ১লা জুন ১৯৯৩ সংকেতঃ ৯০-এর ৬নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট আমীর মুফতী জয়নুল আবেদীন ১৯৯৩ সনের বিশ্ব ইজতিমার এক বয়ানে বলেন, “টঙ্গীর এই মাঠে যারা এখন আছেন, তারা যদি সবাই জোনায়েদ বাগদাদী হয়ে যান, আব্দুল কাদির জ্বিলানী আর হাসান বছরী হয়ে যান, তবুও আপনারা কখনো দীনের উপরে টিকে থাকতে পারবেন না যদি আপনাদের ঘরের মহিলারা বা স্ত্রী দ্বীনের উপর না আসে। যদি আপনিও হাসান বছরী হয়ে গেলেন আর আপনার স্ত্রীও রাবেয়া বছরী হয়ে গেলেন তবুও আপনি নিজের বাড়িতে থাকতে পারবেন না, দূর গ্রামে গিয়ে বা জঙ্গলে গিয়ে ঝুপড়ির ভিতর থাকতে হবে; যদি না আপনি নিজের ছেলেকে হিদায়েতের মেহনত না করান।”
(৬৩) টঙ্গী বাড়ীস্থ মটুকপুর গ্রামে ব্যাপারী বাড়ির সম্মুখস্থ মাদ্রাসায় গত ৬/৫/৯৭ইং তারিখে, একটি সামাজিক মিটিং বসেছিল। উক্ত মিটিং-এ প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূলভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের কথা উঠায়, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো- তাবলীগ বড়, না কুরআন শরীফ বড়? তখন সেখানে উপসি’ত চট্টগ্রামস্থ হাটহাজারী মাদ্রাসা হতে ফারেগ, মাওলানা আব্দুস সালাম বলে উঠলো- “কুরআন থেকে তাবলীগ বড়” অর্থাৎ কুরআন শরীফ থেকে বর্তমান প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূলী তাবলীগ বড় বা মর্যাদাসম্পন্ন।
0 Comments:
Post a Comment