ছবি তুলে হজ্জ করার ক্ষেত্রে শরীয়তের কি হুকুম?
মহান আল্লাহ পাক
রব্বুল আলামীন তিনি উনার কালাম পাক-এ এবং স্বয়ং
আল্লাহ পাক-উনার হাবীব রহমাতুল্লিল
আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার হাদীছ পাকে হজ্জের
বিধি-বিধান সবিস্তারে বর্ণনা
করেছেন। সেই সমষ্টিগত বর্ণনা থেকে আখিরী উম্মতগণের প্রতি জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয
সাব্যস্ত হয়েছে। এবং এ ক্ষেত্রে শর্ত করা হয়েছে পথের সামর্থ্য ও নিরাপত্তার।
পথের সামর্থ্য বলতে “সাংসারিক
প্রয়োজনীয় ব্যয়ের পর হজ্জে যাওয়া ও ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারবর্গের ভরণ-পোষণের অতিরিক্ত সম্বল ও পাথেয় থাকা এবং যানবাহনের সুষ্ঠু
ব্যবস্থা থাকা।”
আর পথের নিরাপত্তা বলতে
সুস্থ থাকা এবং জান-মাল, ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা থাকা। এ প্রসঙ্গে
আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন-
.ولله
على
الناس
حج
البيت
من
استطاع اليه سبيلا
অর্থ: “আল্লাহ পাক-উনার জন্যেই মানুষের প্রতি হজ্জ করা ফরয যার পথের সামর্থ্য ও নিরাপত্তা রয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান-৯৭)
আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ
করেন-
.فمن
فرض
فيهن
الحج
فلا
رفث
ولا
فسوق
ولا
جدال
فى
الحج
অর্থঃ “যে ব্যক্তির প্রতি
হজ্জ ফরয সে যেন হজ্জ পালন করতে গিয়ে নির্জনবাস ও তার সংশ্লিষ্ট কোন কাজ না করে
এবং কোন প্রকার ফাসিকী বা নাফরমানীমূলক কাজ না করে এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে।”
(সূরা বাক্বারা-১৯৭)
উক্ত আয়াত শরীফ-এ স্পষ্টরূপে বলা হয়েছে যে, হজ্জ করতে গিয়ে যদি ঈমান ও আমলের নিরাপত্তা না থাকে তথা
হজ্জ করতে গিয়ে যদি কাউকে হারাম ও কুফরী কাজ করতে হয় তাহলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে
না। যেমন ছবি তোলা, পর্দা লঙ্ঘন করা
উভয়টি শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ এবং চরম ফাসিকী ও নাফরমানীমূলক কাজ। সুতরাং হজ্জের
অজুহাতে এই হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ করা কখনই শরীয়তসিদ্ধ নয়। বরং সর্বক্ষেত্রে এ
হারাম কাজে বাধা প্রদান করা প্রত্যেক মু’মিন-মুসলমানের ঈমানী
দায়িত্ব।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ
শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ
সংঘটিত হতে দেখে সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা দেয়। যদি সে তা হাত দ্বারা বাধা দিতে
না পারে তাহলে সে যেন যবান দ্বারা বাধা দেয়। যদি যবানের দ্বারাও বাধা দিতে না পারে
তাহলে যেন অন্তরে তা ঘৃণা করে দূরে সরে থাকে। আর এটাই সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়।
এরপর ঈমানের আর সরিষা পরিমাণও অবশিষ্ট নেই।”
(মুসলিম শরীফ)
অর্থাৎ ক্ষমতা থাকলে প্রথমত: শক্তি বা বল প্রয়োগ করে ছবি ও বেপর্দা বন্ধ করতে
হবে।
দ্বিতীয়ত: সেই ক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে যবানে বা মুখে
বলতে হবে বা জানিয়ে দিতে হবে যে, ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া হারাম। হজ্জসহ সর্বক্ষেত্রে ছবি
তোলা ও বেপর্দা হওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ। জায়িয মনে করা কুফরী। কাজেই মক্কা শরীফ, মদীনা শরীফ এবং হজ্জের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল
স্থান থেকে সিসিটিভি ও ক্যামেরা সরিয়ে নেয়া হোক।
তৃতীয়ত: যদি যবানে বলার ক্ষমতাও না থাকে তাহলে ছবি
তোলা ও বেপর্দা হওয়াকে অন্তর থেকে হারাম ও গুনাহর কাজ স্বীকার করে তা থেকে দূরে
সরে থাকতে হবে। আর এটা হচ্ছে একেবারে দুর্বল ঈমানদারের পরিচয়। এরপরে ঈমানের আর কোন
স্তর নেই। অর্থাৎ যারা হাতেও বাধা দিবে না,
যবানেও
প্রতিবাদ করবে না এবং সেই হারাম কাজকে অন্তরে খারাপ জেনে বিরত বা দূরেও সরে থাকবে
না বরং সেটাকে সমর্থন করবে এবং তাতে জড়িত হবে হাদীছ শরীফ মোতাবেক তাদের ঈমান নেই।
তাহলে ছবি তুলে ও বেপর্দা হয়ে হজ্জ করা কি করে জায়িয হতে পারে?
অতএব, কেউ যদি সত্যিই শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী হজ্জ
কতে চায় তাহলে তাকে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ঘোষণাকৃত ছবি তোলা ও বেপর্দাসহ সর্বপ্রকার হারাম কাজ
থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি হজ্জ করতে গিয়ে ছবি তোলা, বেপর্দা হওয়া অথবা অন্য কোন হারাম কাজে জড়িত হতে হয় তাহলে
হজ্জ ফরয হবে না। যেমন কোন মহিলা যদি সারা পৃথিবীর মালিকও হয়, আর তার যদি কোন মাহরাম পুরুষ না থাকে তাহলে
তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। কারণ মাহরাম পুরুষ ব্যতীত হজ্জে গেলে তার দ্বারা হারাম
কাজ হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান।
কেউ কেউ কিতাবের
উদ্ধৃতি দিয়ে বলে, “জরুরত বা মা’জুরতার কারণে
হারামটা মুবাহ হয়ে যায়। তাই হজ্জের জন্য ছবি তুললে কোন গুনাহ হবে না। কারণ তা
জরুরতবশত: তোলা হয়। এর জবাবে বলতে হয়
যে, হজ্জের ক্ষেত্রে তাদের
উক্ত বক্তব্য আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ হজ্জের জন্য ছবি তোলাটা কখনই মা’জুরের পর্যায়ে পড়ে
না। কেননা হজ্জ করার জন্য সরকার বা অন্য কারো পক্ষ থেকে বাধ্য করা হয়নি এবং ঈমান ও
আমলের নিরাপত্তা না থাকায় যেখানে হজ্জই ফরয নয় সেখানে কি করে সে মা’জুর হলো? এখন কোন মহিলা যদি বলে, আমার সম্পদ রয়েছে কিন্তু মাহরাম নেই এক্ষেত্রে
আমি মা’জুর, সুতরাং মাহরাম ছাড়াই হজ্জ
করবো। তার এ কথা কি শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হবে?
কস্মিনকালেও
নয়। কারণ মাহরাম ছাড়া তার উপর হজ্জ ফরয নয়। আর যদি হজ্জ ফরয না হয় তাহলে সে মা’জুর হলো কি করে? বরং কোন সরকারের পক্ষ থেকে হজ্জের ক্ষেত্রে
ছবি তোলাকে আবশ্যক করাটা হজ্জের ফরয সাকিত বা রহিত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি
কারণ বা বাধা। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن
ابى
امامة
رضى
الله
تعالى
عنه
قال
قال
رسول
الله
صلى
الله
عليه
وسلم
من
لم
يمنعه
من
الحج
حاجة
ظاهرة
او
سلطان
جائر
او
مرض
حابس.
অর্থ: “হযরত আবূ উমামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
করেন, কোন ব্যক্তির হজ্জ ফরয
হওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধকারী বিষয় হচ্ছে-
প্রকাশ্য
বাধা অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর অসুখ।” (মাছাবীহুস সুন্নাহ,
দারিমী, মিশকাত,
মিরকাত)অর্থাৎ, কোন ব্যক্তির হজ্জ
করার সামর্থ্য না থাকলে অথবা অত্যাচারী শাসকের কারণে জান-মাল, ঈমান ও আমলের
নিরাপত্তা না থাকলে অথবা কঠিন অসুস্থতা থাকলে তার উপর হজ্জ ফরয হবে না। অর্থাৎ
হজ্জের ফরয সাকিত হয়ে যাবে।
ছবি তোলা হারাম
তার দলিলসমূহ:
.عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله
عليه وسلم كل مصور فى النار
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক ছবি তুলনে ওয়ালা জাহান্নামী।” নাঊযুবিল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)
.عن ابى معاوية رضى الله تعالى عنه ان من اشد اهل النار يوم القيمة
عذابا المصورون
অর্থ: হযরত আবূ মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে
বর্ণিত, “নিশ্চয়
ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন আজাব হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ পৃঃ ২০১)
عن عبد الله بن مسعود رضى الله
تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول اشد .الناس
عذابا عند الله المصورون
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি
বলেন, আমি
সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ঐ ব্যক্তিকে কঠিন শাস্তি
দেবেন, যে ব্যক্তি
প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে। (মিশকাত শরীফ- ৩৮৫)
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه اخبره ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان .الذين يصنعون هذه الصور يعذبون يوم القيمة يقال لهم احيوا ما خلقتم
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার
হতে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
ইরশাদ করেন, “যারা প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে।
এবং তাদেরকে বলা হবে, যে ছবিগুলো তোমরা তৈরী করেছ, সেগুলোর মধ্যে প্রাণ দান কর।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ২০১)
قال حدثنا الاعمش عن مسلم قال
كنا مع مسروق فى دار يسار بن نمير فراى فى صفته تماثيل فقال .سمعت
عبد الله قال سمعت النبى صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس .عذابا
عند الله المصورون
অর্থ: হযরত আ’মাশ
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত মুসলিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে
বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি মাসরুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে ইয়াসার
ইবনে নুমাইরের ঘরে ছিলাম, তিনি উনার ঘরের মধ্যে প্রাণীর ছবি দেখতে পেলেন, অতঃপর বললেন, আমি হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা
উনহু উনার নিকট শুনেছি, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
তিনি বলেছেন, “নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ্
পাক তিনি কঠিন শাস্তি দেবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ ২য় জিঃ, পৃঃ৮৮০)
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه
وسلم يقول قال الله .تعالى ومن اظلم ممن ذهب يخلق كخلقى فليخلقوا ذرة اوليخلقوا حبة او شعيرة
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
তিনি বলেন, আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে বলতে শুনেছি- তিনি বলেছেন, “মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অধিক অত্যাচারী, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্টির
সাদৃশ্য কোন প্রাণীর ছুরত তৈরী করে। তাদেরকে বলা হবে- তাহলে তোমরা একটি পিপিলিকা অথবা একটি শস্য অথবা
একটি গম তৈরী করে দাও।” (মিশকাত শরীফ পৃঃ ৩৮৫)
0 Comments:
Post a Comment