নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ
হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
‘নূরে মুজাসসাম’ অর্থাৎ নূর মুবারক দ্বারা সৃষ্টি
পিডিএফ লিংক- https://drive.google.com/open?id=1q9gNqjN_uW_uHOOu3Vi3gYzYhyOKMCwL
সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘নূর’ তা পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত
একাধিক আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে “নূর” তা পবিত্র কুরআন শরীফ
উনার একাধিক স্থানে বর্ণিত হয়েছে। যেমন- প্রথম আয়াত শরীফ: “নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট মহান
আল্লাহ্ পাক উনার পক্ষ হতে এক মহান নূর মুবারক এবং একখানা সুস্পষ্ট কিতাব মুবারক এসেছেন।”
(পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ
১৫) উল্লেখ্য, এ আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক “নূর”
শব্দ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়িন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝিয়েছেন, যেহেতু তিনি আপাদমস্তক “নূর মুবারক বা নূর মুবারক উনার তৈরী।”
যদিও কেউ কেউ “নূর” শব্দের ভিন্ন অর্থও করেছেন। বিশ্ববিখ্যাত ও অনুসরণীয় সকল মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম
রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের অভিমতও এটাই। নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরসমূহ
হতে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত “নূর” শব্দের সহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য তাফসীর বা
ব্যাখ্যা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হলো- ক্বাজিউল কুজাত ইমাম আবূ সাউদ মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ
ইমাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মশহুর তাফসীর “তাফসীরে আবী সাউদ” ৩য় জিঃ ১৮ পৃষ্ঠায়
লিখেন,
“বর্ণিত আয়াত শরীফ উনার প্রথম শব্দ অর্থাৎ নূর দ্বারা
উদ্দেশ্য হলো- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর দ্বিতীয় শব্দ অর্থাৎ কিতাবে মুবীন দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, পবিত্র কুরআন শরীফ।” ইমামুল মুফাস্সিরীন আল্লামা জালালুদ্দীন
সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ও মাদ্রাসাসমূহে পঠিত বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ
“তাফসীরে জালালাইন শরীফ” উনার ৯৭ পৃষ্ঠায় লিখেন, “এ আয়াত শরীফে “নূর”
অর্থ হলো- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর কিতাব অর্থ হলো-
পবিত্র কুরআন শরীফ। অনুরূপ তাফসীরে মায়ানিউত্
তানযীল,
মাদারিকুত্ তানযীল, মুয়ালিমুত্ তানযীল, কবীর, তাবারী, যাদুল মাসীর, কুরতুবী, রুহুল
মায়ানী, নিশাপূরী, নাযমুদ্ দুরার, মাওয়ারাদী, ক্বাদেরী, রুহুল বয়ান, বায়যাবী, শায়খ যাদাহ্, হাশিয়াতুশ্ শিহাব, শরহুশ্ শিফা, ফাত্হুল ক্বাদীর, খায়ায়েনুল ইরফান, মাওয়াহেবুর রহমান, জিয়াউল পবিত্র কুরআন, ক্বাসেমী, মুদীহুল পবিত্র কুরআন, কামালাইন, ওসমানী, মাজেদী, কাশফুর
রহমান, আলী হাসান, তাহেরী ও নুরুল পবিত্র কুরআন ইত্যাদি তাফসীরগ্রন্থেও “নূর” দ্বারা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে।
অতএব, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও অন্যান্য কিতাব সমূহের বর্ণনা দ্বারা যেহেতু সুস্পষ্টভাবেই
প্রমাণিত হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘নূর’; সেহেতু মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা যে, পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফে বর্ণিত ‘নূর’ শব্দ দ্বারা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝিয়েছেন, তাদের এ অভিমতটি অন্যান্য অভিমত থেকে অধিক সহীহ্, গ্রহণযোগ্য ও প্রাধ্যন্য প্রাপ্ত। এ মতের তুলনায় অন্যান্য মতগুলো
জঈফ (দুর্বল)।
দ্বিতীয় ও
তৃতীয় আয়াত শরীফ:
“কাফেরেরা মহান আল্লাহ্ পাক উনার “নূর” মুবারক উনাকে নিজেদের মুখের ফুৎকারে নিভিয়ে
দিতে চায়,
অথচ মহান আল্লাহ্ পাক উনার ‘নূর’ মুবারক উনাকে অবশ্যই পূর্ণ
করবেন। যদিও কাফেরেরা তা পছন্দ করেনা।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৩২) অনুরূপ
শাব্দিক কিছু পার্থক্যসহ “পবিত্র সূরা ছফ উনার ৮নং আয়াত শরীফ উনার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘নূর’ বলা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ্ পাক “পবিত্র সূরা তাওবা ও ছফের” উক্ত আয়াত শরীফে
মূলতঃ উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই মহান আল্লাহ্ পাক উনার “নূর”
বলে উল্লেখ করেছেন। মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের অভিমতও এটাই।
যদিও কেউ কেউ ‘নূর’ অর্থে দ্বীন ইসলাম, পবিত্র কুরআন শরীফ, নুবুওওয়াত ইত্যাদিকেও
বুঝিয়েছেন। নিম্নে পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ ও পবিত্র সূরা ছফ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
‘নূর’ শব্দের ব্যখ্যায় অনুসরণীয় মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের
নির্ভরযোগ্য অভিমত সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হলো- তাজুল মুফাস্সিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, আল্লামাতুশ শায়খ জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার
বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে দুররুল মানছুর” ৩য় জিঃ ২৩১ পৃষ্ঠায় উক্ত আয়াত শরীফ
উনার ব্যাখ্যায় লিখেন- “(কাফেরেরা মহান আল্লাহ্ পাক উনার “নূর” কে মিটিয়ে দিতে চায়)
............ হযরত ইবনে আবী হাতেম রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত জাহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি
থেকে বর্ণনা করে বলেন, কাফেররা সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হালাক বা নিশ্চিহ্ন করতে চায়।”
রঈসুল মানতেক্বীন, ফখরুল মুফাস্সিরীন, আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর
গ্রন্থ “তাফসীরে কবীর” ১৫নং জিঃ ৩৯ পৃষ্ঠায় পবিত্র সূরা তাওবার উক্ত আয়াত শরীফ উনার
ব্যাখ্যায় লিখেছেন, “........... নিশ্চয়ই মহান
আল্লাহ্ পাক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা উচ্চ
করনার্থে ও পূর্ণতা দানে সর্ব প্রকার সাহায্য সহযোগীতার ওয়াদা করেছেন। তাই আল্লাহ্
পাক বলেন,
আল্লাহ্ পাক অবশ্যই উনার “নূরকে” অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পূর্ণতা দান করবেন।” ইমামুল মুফাস্সিরীন, তাজুল মানতেক্বীন আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি
“পবিত্র সূরা ছফ উনার” ৮নং আয়াত শরীফে বর্ণিত ‘নূর’ শব্দের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত ও মশহুর
তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে কবীর” ২৯তম জিঃ ৩১৫ পৃষ্ঠায় লিখেন, “... এ আয়াত শরীফে ‘নূর’ শব্দ দ্বারা দ্বীন ইসলাম অথবা পবিত্র কুরআন
শরীফ অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে।”
চতুর্থ আয়াত
শরীফ
“মহান আল্লাহ্ পাক আসমান ও যমীনের আলো দানকারী উনার নূরের মেছাল হলো- যেমন তাকের
উপর একটি বাতি...।” (পবিত্র সূরা নূর, পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৫) রঈসুল মুফাস্সিরীন, বিশিষ্ট সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে ইবনে আব্বাস” ৪র্থ জিঃ ২৪ পৃষ্ঠায় পবিত্র সূরায়ে নূরে
বর্ণিত “নূর” শব্দের ব্যাখ্যায় লিখেন,
“.... এ আয়াত শরীফে উনার বর্ণিত ‘নূর’ হলো, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নূর মুবারক
উনার পূর্ব পুরুষগণের পৃষ্ঠ মুবারকে ছিল।”
আল্লামা আবুল
ফযল শিহাবুদ্দীন সাইয়্যিদ মাহ্মুদ আলূসী বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীর
গ্রন্থ “তাফসীরে রুহুল মায়ানী” ১০ জিঃ ১৬৬ পৃষ্ঠায় পবিত্র সূরায়ে নূরে উল্লিখিত ‘নূর’
শব্দের তাফসীরে লিখেন, “এ আয়াত শরীফে বর্ণিত “নূর’ দ্বারা মূলতঃ উনার রসূল সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বুঝানো হয়েছে। কারণ পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার অন্যত্রও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘নূর’ বলা হয়েছে।
অনুরূপ তাফসীরে
খাযেন,
দুররে মানছুর, তাবারী, আল জাওজাহির, যাদুল মাসীর, মাওয়ারাদী, রুহুল বয়ান, আত্ তাস্হীল, হক্কানী, জ্বিয়াউল পবিত্র কুরআন, কুরতুবী, দুররুল মাছুন, মাযহারী ইত্যাদি তাফসীরের কিতাবসমূহে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার
ব্যাখ্যায় হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে “নূর” বলা হয়েছে। স্মর্তব্য যে, অনুসরণীয় মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য
তাফসীর গ্রন্থ সমূহের সহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত
হলো যে,
পবিত্র সূরায়ে নূরে বর্ণিত ‘নূর’ শব্দ দ্বারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই বুঝানো হয়েছে। যেহেতু তিনি আপাদমস্তক
নূর। অর্থাৎ “নূরে মুজাস্সাম”। তাই মহান আল্লাহ্ পাকও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পবিত্র সূরায়ে নূরে “নূর” বলে উল্লেখ করেছেন।
সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ‘নূর’ তথা “নূরে মুজাস্সাম”
তা পবিত্র কালামুল্লাহ্ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত পবিত্র সূরা মায়েদা শরীফ উনার- ১৫, পবিত্র সূরা তাওবা শরীফ উনার-৩২, পবিত্র সূরা নূর উনার-৩৫, পবিত্র সূরা আহযাব উনার-৪৬ ও পবিত্র সূরা ছফ উনার-৮নং আয়াত শরীফ দ্বারাই অকাট্টভাবে
ছাবেত হয়। অর্থাৎ উল্লিখিত আয়াত শরীফ সমূহে মহান আল্লাহ্ পাক স্বয়ং নিজেই উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে “নূর” বলে উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কিত ৬৮টি দলীল বিশ্বখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য
তাফসীর গ্রন্থ সমূহ হতে ইতমধ্যেই পত্রস্থ করা হয়েছে। যার দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত
হয়েছে যে,
অনুসরনীয় মুফাস্সিরীন-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনাদের
মতে উল্লিখিত পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহে বর্ণিত ‘নূর’ হলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ‘নূর’ তা বহু হাদীছ শরীফ দ্বারাও
প্রমাণিত
সহীহ্ হাদীছ
শরীফসহ বহু হাদীছ শরীফ ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহের গ্রহণযোগ্য বর্ণনা দ্বারাও
ছাবেত হয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ‘নূর’ তথা “নূরে মুজাস্সাম। নিম্নে এ সম্পর্কিত জরুরী দলীল সমূহ উল্লেখ করা
হলো- ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি
উনার শাগরেদ, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার ওস্তাদ এবং ইমাম বোখারী ও মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি দ্বয়ের ওস্তাদ উনার
ওস্তাদ,
বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফিজুল হাদীছ, আল্লামা আব্দুর রাজ্জাক
রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন-
“হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহ পাক উনার রসূল হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনাকে বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হয়ে যাক, আপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে, মহান আল্লাহ্ পাক সর্ব প্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, হে জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক সব কিছুর পূর্বে
আপনার সম্মানিত নবী উনার নূর মুবারককে সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক উনার
প্রথম সৃষ্টিই হচ্ছে “নূরে মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর সেই নূর মুবারক আল্লাহ্ পাক উনার ইচ্ছানুযায়ী
কুদরতীভাবে ঘুুরছিল। আর সে সময় লাওহো, ক্বলম, বেহেশ্ত, দোযখ, ফেরেশ্তা, আসমান, যমীন, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ ও জিন কিছুই ছিলনা। অতঃপর যখন মহান আল্লাহ্ পাক “মাখলুকাত”
সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষন করলেন। তখন সেই নূর মুবারক (অর্থাৎ নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে একটা অংশ নিয়ে উনাকে) চার ভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দ্বারা
‘ক্বলম’,
দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘লাওহে মাহ্ফুজ’ তৃতীয় ভাগ দ্বারা ‘আরশে
মুয়াল্লাহ’ সৃষ্টি করলেন। চতুর্থ ভাগকে আবার চারভাগ করেন প্রথম ভাগ দ্বারা ‘আরশ বহনকারী
ফেরেশ্তা’ দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘কুরসী’ আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা অন্যান্য ফেরেস্তা আলাইহিমুস
সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর এ চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করেন। প্রথম ভাগ দ্বারা
‘আসমান’,
দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘যমীন’ আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা ‘বেহেশ্ত ও দোযখ’
সৃষ্টি করেন। নূরের অবশিষ্ট এ চতুর্থ ভাগকে আবার চার ভাগ করেন, প্রথম ভাগ দ্বারা মু’মিন বান্দাদের চোখের ‘জ্যোতি’, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা তাদের ক্বল্বের জ্যোতি (এটাই মূলতঃ মহান
আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত), আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা
মু’মিনদের উন্সের নূর অর্থাৎ তাওহীদ বা একত্ববাদের নূর তথা পবত্রি কলেম উনার নূর সৃষ্টি
করেন। (এমনিভাবে উক্ত ‘নূরে মুহম্মদী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেই পর্যায়ক্রমে
তামাম মাখলুকাত সৃষ্টি করেন)” (দলীল: মসনদে আব্দুর রাজ্জাক, দালায়েলুন নবুওওয়াত, আফজালুল ক্বোরা, মোতালেউল মাসাররাত, তারীখুল খামীছ, মাওয়াহেব, শরহে যুরকানী, মাদারেজুন নুবুওওয়াহ, নূরে মুহম্মদী, ফাতওয়ায়ে হাদীসিয়্যাহ, নশরুততীব) হযরত জাবের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণিত
হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মাওলানা ইউসুফ লুদইয়ানবী সাহেব উনার কিতাব- “আপকে মাসায়েল
আওর উনকা হল” নামক কিতাবের ৩য় জিঃ ৮৩ পৃষ্ঠায় মাওলানা থানবী সাহেবের “নাশরুত তীব” কিতাবের
বরাত দিয়ে লিখেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, হে জাবের! মহান আল্লাহ্ পাক সকল বস্তু সৃষ্টি করার পূর্বে তোমার
নবী উনার “নূর মুবারককে সৃষ্টি করেছেন। ... এ হাদীছ শরীফ দ্বারা হাক্বীক্বীভাবে প্রমাণিত
হলো যে,
“নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
হলো প্রথম সৃষ্টি। কেননা হাদীছ শরীফে যে বস্তু প্রথম সৃষ্টি বলে উল্লেখ করা হয়েছে উনার
সবগুলো যে, “নূরে মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার পরে সৃষ্টি হয়েছে, তাই এ হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে।” সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে নূরের সৃষ্টি বা “নূরে মোজাস্সাম”
তা নিম্নোক্ত বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে এরশাদ হয়েছে, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- হে আমার রব!
আমাকে কি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন? জবাবে মহান আল্লাহ্
পাক তিনি বলেন, হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম, আমি আমার (সৃষ্টিকৃত) সাদা নূর মুবারক
(যা নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার স্বচ্ছতা ও নির্মলতার প্রতি
লক্ষ্য করলাম, যে নূরকে আমি কুদরতের দ্বারা আমার
হুকুমে প্রথমেই সৃষ্টি করে রেখেছিলাম। আমি সম্মান প্রকাশার্থে উক্ত নূর মুবারক উনাকে
‘আমার নূর বলে সম্বোধন করি। অতঃপর উক্ত নূর থেকে একটি অংশ বের করে নিলাম অর্থাৎ “নূরে
মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তিন ভাগে ভাগ করলাম। প্রথম ভাগ দ্বারা
আপনাকে অর্থাৎ আপনার আকৃতি মুবারককে ও আপনার আহলে বাইতকে সৃষ্টি করি, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা আপনার স্ত্রী ও সাহাবীগণকে সৃষ্টি করি, আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা যারা আপনার প্রতি মহব্বত রাখেন তাঁদেরকে
সৃষ্টি করেছি”.....(নূরে মুহম্মদী পৃষ্ঠা- ৪৭)” আল্লামা আবুল হাসান বিন আবদিল্লাহ্
আল বিকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার “আল আনওয়ার ফী মাওলিদিন্ নাবিয়্যিল মুহম্মদ” কিতাবের
৫ম পৃষ্ঠায় লিখেন, “হযরত আলী কাররামাল্লাহু
ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, শুধুমাত্র মহান আল্লাহ্ পাক তিনিই ছিলেন, তখন অন্য কোন অস্তিত্বই উনার সাথে ছিলনা। অতঃপর তিনি পানি, আরশ, কুরসী, লাওহো, ক্বলম, জান্নাত, জাহান্নাম ও পর্দা
সমূহ ইত্যাদি সৃষ্টি করার পূর্বে, উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন।” ‘নূরে মুহম্মদী সর্বপ্রথম সৃষ্টি হওয়া প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
আরো বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ মুবারক করেন- “মহান আল্লাহ্ পাক সর্ব প্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি
করেন এবং আমার নূর মুবারক থেকে সবকিছু সৃষ্টি করেন।” (মাতালেউল মাসাররাত, পৃ: ২৬৫) এ প্রসঙ্গে
অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- “মহান আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম আমার
“নূর মুবারক” সৃষ্টি করেন এবং আমার নূর মুবারক
থেকে সবকিছু সৃষ্টি করেন।” ইমামুল মুহাদ্দেসীন, আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিখ্যাত কিতাব “আল মাওযুআতুল কবীর”
৮৩ পৃষ্ঠায় লিখেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার “নূর মুবারক” পূর্ব ও পশ্চিমে পূর্নরূপেই
প্রকাশ পেয়েছে। আর মহান আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম উনার (হাবীবের) “নূর মোবাররক” তৈরী করেন।
তাই নিজ কিতাবে কালামুল্লাহ্ শরীফে উনার (হাবীব উনার) নাম মুবারক রাখেন “নূর।” ইমামুল মুহাদ্দিসীন আল্লামা শায়খ আব্দুল হক্ব মোহাদ্দিস
দেহলভী (রহঃ) উনার মশহুর কিতাব “মাদারেজুন নুবুওওয়াত”-২য় জিঃ ২ পৃষ্ঠায় লিখেন, সহীহ্ হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ্ পাক
সর্ব প্রথম আমার “নূর মুবারক” সৃষ্টি করেন।” নওয়াব
ওয়াহীদুয্ যামান তার “হাদিয়াতুল মাহদী” কিতাবের ৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছে, “মহান আল্লাহ্ পাক “নূরে মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
দ্বারাই সৃষ্টির সুচনা করেন। অর্থাৎ নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে সর্ব প্রথম সৃষ্টি করেন।”
“নূরে মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে- অর্থঃ-
“হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, মহান আল্লাহ্ পাক যখন সমস্ত মাখলুকাত সৃষ্টি, পৃথিবীকে নীচু ও আকাশকে উচুঁ করার ইচ্ছা করলেন তখন সেই নূর অর্থাৎ “নূরে মুহম্মদী”
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে বললেন, আপনি আমার হাবীব মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হয়ে যান। অর্থাৎ হে “নূরে
মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি আমার হাবীব বা প্রিয় হয়ে যান। তখনই “নূরে মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব হয়ে আরশে মুয়াল্লাহ্ তাওয়াফ করলেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির পাঁচ শত বছর পূর্বে এবং ... বলে
মহান আল্লাহ্ পাক উনার প্রশংসা করলেন, তখন মহান আল্লাহ্ পাক বলেন- এজন্যই আমি আপনার নাম মুবারক রেখেছি ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যার অর্থ হচ্ছে- চরম প্রশংসিত। (নুযহাতুল মাজালিস, নূরে মুহম্মদী) বিখ্যাত
মুহাদ্দিস, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা আবূ
সুজা শীরাওয়া আদ্দাইলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ কিতাব “ফেরদাউস” উনার ২য়
জিঃ ২৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, “হযরত সালমান ফার্সী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম একই “নূর
মুবারক” দ্বারা তৈরী হয়েছি। হযরত আদম আলাইহিস সালাম সৃষ্টি হওয়ারও চার হাজার বৎসর পূর্বে।
যখন মহান আল্লাহ্ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেন উক্ত “নূর মুবারক”
একত্রেই ছিল, হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম
উনার পিঠ মুবারকে গিয়ে উক্ত “নূর মুবারক” পৃথক হয়ে যায়, অর্থাৎ আমাকে নুবুওওয়াত ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস
সালাম উনাকে সম্মানিত খিলাফত উনার যোগ্যতা দেয়া হয়। অনুরূপ “তানযিয়াতুশ্ শরীয়াহ্” নামক
কিতাবে উল্লেখ আছে। বিখ্যাত মুহাদ্দিস, প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, আল্লামা সূজা শীরওয়াহ্ আল দাইলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত হাদীছগ্রন্থ
“ফেরদাউস” উনার ৩য় জিঃ ২৮৩ পৃষ্ঠায় শাব্দিক কিছু পার্থক্যসহ অনুরূপ আরেকখানা হাদীছ
শরীফ উল্লেখ করেন, “হযরত সালমান ফার্সী
রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ্ পাক
উনার নিকট “নূর” হিসেবেই অবস্থান করছিলাম। উক্ত “নূর মুবারক” হযরত আদম আলাইহিস সালাম
সৃষ্টি হওয়ার চার হাজার বৎসর পূর্বে মহান আল্লাহ্ পাক উনার তাসবীহ্ ও পবিত্রতা বর্ণনায়
মশগুল ছিল। যখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হলো তখন উক্ত “নূর মুবারক”
উনার পিঠ মুবারকে রেখে দেয়া হলো।”
মিশরের বিখ্যাত
মুহাদ্দিস ও প্রখ্যাত আলিম আল্লামা ইউছুফ নাবেহানী উনার প্রসিদ্ধ কিতাব “আনওয়ারে মুহম্মদীয়ায়”
উল্লেখ করেন এবং বিখ্যাত কিতাব “বেদায়া ওয়ান নেহায়াতে” বর্ণিত আছে- “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়িন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি হযরত আদম আলাইহিস
সালাম উনার সৃষ্টির চৌদ্দ হাজার বৎসর পূর্বে আমার রব তায়ালা উনার নিকট ‘নূর’ হিসেবে
বিদ্যমান ছিলাম।”
অনুরূপ “আল
ইনসানুল কামিল” গ্রন্থেও উল্লেখ আছে।
বিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফিজুল হাদীছ, আলিমুল কাবীর, আল্লামা আবূ বকর
আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত হাদীছ গ্রন্থ “মুছান্নেফে
আব্দুর রাজ্জাকের” ৫ম জিঃ, ৩১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ
করেন,
“হযরত আব্দুর রাজ্জাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা
করেন,
... হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি অত্যধিক
সুদর্শন পুরুষ ছিলেন, এরূপ সুদর্শন পুরুষ
কোরাইশদের মধ্যে কমই দেখা যেত। সুতরাং হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস সালাম তিনি একদিন
মহিলাদের জামায়াতের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন মহিলাদের মধ্য হতে একজন বললো, হে কোরাঈশ মহিলাগণ! তোমরা কি চাও যে, এই পুরুষ তোমাদের কাউকে বিয়ে করুক! অতঃপর উনার কপাল মুবারকে
যে “নূর মুবারক” রয়েছে তা তোমাদের নিকট ফিরে আসুক! রাবী বলেন, হযরত খাজা আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কপাল
মুবারকে “নূরে মুহম্মদী” ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিল। দেশের
সকল মাদ্রাসাসমূহে পঠিত হাদীছ শরীফ উনার বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য কিতাব “মেশকাতুল মাছাবীহ্-”
এর ৫১৩ পৃষ্ঠায় “ফাযায়েলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন” নামক অধ্যায়ে উল্লেখ আছে, “হযরত ইরবাজ ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার খামীর যখন প্রস্তুত হচ্ছিল তখনও আমি মহান আল্লাহ্
পাক উনার নিকট “খতামুন নাবিইয়িন” (শেষ নবী) হিসেবে লিখিত ছিলাম। এখন আমি তোমাদেরকে
আমার পূর্বের কিছু কথা জানাব। তা হলো, আমি হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দোয়া, আমি হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার সুসংবাদ ও আমি আমার মাতার সুস্বপ¦ মুবারক। আমার পবিত্র
বিলাদত শরীফ উনার সময় আমার সম্মানিত মাতা দেখতে পান যে, একখানা “নূর মুবারক” বের হয়ে শাম দেশের রাজপ্রাসাদ বা দালান-কোঠা
সমূহ আলোকিত করে ফেলেছে।” এ পবিত্র হাদীছ শরীফ খানা “শরহুস্সুন্নাহ্ ও মসনদে আহ্মাদে”
বর্ণিত আছে। অনুরূপ মেরকাত, শরহুত ত্বীবী, তা’লীকুছ্ছবীহ্, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি কিতাব সমূহেও উল্লেখ আছে।
স্মর্তব্য
যে,
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, “নূরে মুজাস্সাম” তার বাস্তব নমুনা ও উৎকৃষ্ট দলীল হচ্ছে, নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফসমূহ। যেমন এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ফক্বীহ ও
মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে হাজর হাইছামী রহমতুল্লাহি
আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “আন নি’মাতুল কুবরা” উনার ৪১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন, “হযরত আয়েশা সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাত্রে প্রদীপের আলোতে বসে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাপড় মুবারক সেলাই করছিলাম। এমতাবস্থায় বাতিটি নিভে গেল এবং
আমি সূঁচটি হারিয়ে ফেললাম, এর পরক্ষনেই সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়িন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার (অন্ধকার) ঘর মুবারকে প্রবেশ করেন। উনার চেহারা মুবারক
উনার ‘নূরের’ আলোতে আমার অন্ধকার ঘর আলোকিত হয়ে গেল এবং আমি সেই আলোতেই আমার হারানো
সূঁচটি খুঁজে পেলাম।” (সুবহানাল্লাহ্)
উল্লেখ্য
যে,
যিনি আফজালুল আউলিয়া, কাইউমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে
আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যাঁর সম্পর্কে হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ বর্ণিত রয়েছে- ‘জামউল জাওয়াম ও জামিউদ্
দোরার’ কিতাবে। তিনি উনার বিশ্ববিখ্যাত ও বিশ্বসমাদৃত ‘মাকতুবাত শরীফ’, যার সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেছেন যে, আমি যখন এই সমস্ত মাকতুব লিপিবদ্ধ করি তখন আমি নিজেই দেখেছি, মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা
আমার ঘর পাহারা দিচ্ছেন। এর কারণ হচ্ছে, যাতে আমার মাকতুবে শয়তান কোন প্রকার ওয়াস্ ওয়াসা দিতে না পারে। তিনি আরো উল্লেখ
করেন- আমার পরবর্তীতে যখন হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম যমীনে আগমন করবেন, তখন উনার কাছে আমার এ মাকতুবাত পেশ করা হবে। তিনি মাকতুবাতে
লিখিত বিষয় সমূহকে সত্য বলে প্রতিপাদন করবেন। সুবহানাল্লাহ! স্মরণীয়
যে,
এই মাকতুবাত শরীফ উনার মধ্যেই আফজালুল আউলিয়া, কাইউমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফেছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার “ছায়া মুবারক”
ছিলোনা। এছাড়াও আরো বহু ওলামা-ই-কিরাম উক্ত
হাদীছ শরীফ উনার উপর ভিত্তি করে নিজ নিজ কিতাবে লিখেছেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়িন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছায়া মুবারক
ছিলোনা। এর দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, অনুসরণীয় ওলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি গণ উক্ত হাদীছ শরীফ উনার উপর আস্থা
স্থাপন করেছেন বা উক্ত হাদীছ শরীফকে নিঃসংকোচে কবুল করে নিয়েছেন।
মূলকথা হলো-
বিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা হাকীম তিরযিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণিত হাদীছ শরীফসহ অসংখ্য হাদীছ শরীফ, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, সুফীয়ানে ইজাম, আউলিয়া-ই-কিরাম ও হক্বানী-রব্বানী আলেম-ওলামাগণের বক্তব্য দ্বারা
এটাই সুস্পষ্ট ও অকাট্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক উনার “ছায়া” ছিলোনা। কারণ তিনি হলেন পবিত্র নূর
মুবারক উনার দ্বারা তৈরী অর্থাৎ “নূরে মুজাস্সাাম” এটাই আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের
আক্বীদা আর এটাই সহীহ্ মত। উপরোক্ত দলীলভিত্তিক
আলোচনা দ্বারা যে বিষয়বস্তুসমূহ ফুটে উঠে তাহলো- (১) মহান আল্লাহ্ পাক স্বয়ং নিজেই
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পাঁচটিস্থানে উনার হাবীবকে “নূর” বলে উল্লেখ করেছেন। (২) সহীহ্
হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সৃষ্টিই হচ্ছে- “নূর” হিসেবে।
(৩) মাটিসহ সকল মাখলুক সৃষ্টি হওয়ার পূর্বেই “নূরে মুহম্মদী” সৃষ্টি হয়েছে।” (৪) মাটিসহ
সকল সৃষ্টিরই মূল উপাদন হচ্ছে- “নূর।” (৫) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “নূর” হিসেবেই হযরত আদম আলাইহিস সালাম
হয়ে খাজা আব্দুল্লাহ্ আলাইহিস্ সালাম উনার কপাল মুবারকে তাশরীফ আনেন এবং সেখান থেকে
“নূর” হিসেবেই হযরত আমিনা আলাইহসান সালাম উনার রেহেম শরীফে স্থানান্তরিত হন এবং “নূর”
হিসেবেই বাশারী ছূরতে পৃথিবীতে তাশরীফ আনেন।
(৬) তিনি “নূরে মুজাস্সম” বলেই উনার দেহ মুবারকের ছায়া ছিলনা। যা সকল অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদগণ
স্বীকার করেছেন বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সূতরাং পবিত্র
হাদীছ শরীফ উনার উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, “নূরে মুহম্মদীই” সর্বপ্রথম সৃষ্টি মাটিসহ সকল মাখলূক “নূর মুহম্মদীর”
পরে সৃষ্টি হয়েছে। তাও আবার উক্ত “নূরে মুহম্মদী” থেকেই। তাই মাটিসহ সকল সৃষ্টিই “নূরে
মুহম্মদীর” এক একটি ছূরত ও অংশ। কেননা মাটিসহ সকল সৃষ্টির মূল উপাদন হচ্ছে- পবিত্র
“নূর” মুবারক।
0 Comments:
Post a Comment