খাছ সুন্নতি বাল্যবিবাহ নিয়ে বিরোধীদের দাঁত ভাঙা জবাব
ভুমিকা
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “তিনি (আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওহী মুবারক
ব্যতীত কোনো কথাও বলেন না এবং কোনো কাজও করেন না।”
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
স্বয়ং নিজেই বাল্যবিবাহ করেছেন। যা মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক উনার
অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে বলা মানে
স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরই বিরুদ্ধে বলা; যা কাট্টা কুফরী। কারণ, বাল্যবিবাহ খাছ সুন্নত মুবারক। তাই ‘বাল্যবিবাহ-এর বিরুদ্ধে শ্লোগান বা বক্তব্য
দেয়া এবং বাল্যবিবাহ বিরোধী আক্বীদা পোষণ করা, বিশ্বাস করা, সমর্থন করা ও বাল্যবিবাহের
বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা কাট্টা কুফরী।
বাল্যবিবাহ সম্মানিত কুরআনী বিধান
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্বয়ং
মহান আল্লাহ পাক তিনিই বাল্যবিবাহের বিষয়টি বান্দা-বান্দী-উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَإِنْ خِفْتُمْ أَلَّا تُقْسِطُوا فِي
الْيَتَامٰى فَانْكِحُوْا مَا طَابَ لَكُم مِّنَ النِّسَاءِ مَثْنٰى وَثُلَاثَ
وَرُبَاعَ ۖ
অর্থ: “আর যদি তোমরা ভয় কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের হক্ব যথাযথভাবে আদায় করতে পারবে না, তবে সেসব ইয়াতীম মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে
করো দুই,
তিন কিংবা চার জন পর্যন্ত।” (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ : পবিত্র
আয়াত শরীফ ৩)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে
বর্ণিত يَتَامٰى ‘ইয়াতিমা’ শব্দ মুবারক দ্বারা নাবালেগা বা অপ্রাপ্তবয়স্কা মেয়েদেরকেই
বুঝানো হয়েছে। কেননা, কোন ইয়াতিম প্রাপ্তবয়স্ক
হয়ে গেলে আর ইয়াতিম থাকেনা।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে
ইয়াতীমের বয়সসীমা সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে-
قَالَ حَضْرَتْ عَلِىُّ بْنُ أَبِى طَالِبٍ
عَلَيْهِ السَّلَامُ حَفِظْتُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ لَا يُتْمَ بَعْدَ احْتِلَامٍ.
অর্থ: “হযরত আলী ইবনে আবী ত্বালিব
আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে
আমি হাদীছ শরীফ মুখস্থ করে রেখেছি যে, বালেগ হওয়ার পর ইয়াতীম থাকে না।” (আবূ দাঊদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহুস সুন্নাহ শরীফ)
সূতরাং, উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফে উল্লেখিত, “সেসব ইয়াতীম মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভালো লাগে তাদের বিয়ে
করো” বলতে স্পষ্টভাবেই বাল্যবয়সের মেয়েদের বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এর দ্বারা প্রমাণিত
হলো বাল্য বিবাহে আবদ্ধ হওয়া স্বয়ং খালিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইদ্দত
বিষয়ে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِن
نِّسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي
لَـمْ يَـحِضْنَ ۚ
অর্থ: “তোমাদের আহলিয়াদের মধ্যে যাদের
মাজুরতার আশা নেই, তাদের ব্যাপারে সন্দেহ
হলে তাদের ইদ্দত হবে তিন মাস। আর যারা এখনো মাজুরতার বয়সে পৌঁছেনি, তাদেরও অনুরূপ ইদ্দতকাল হবে।” (পবিত্র সূরা তালাক্ব শরীফ : পবিত্র
আয়াত শরীফ ৪)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান
আল্লাহ পাক তিনি আরো স্পষ্টভাবেই বাল্যবিবাহের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। কেননা এ পবিত্র
আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি “যাদের মাজুরতার আশা নেই” ও “মাজুরতার বয়সেই
যারা পৌঁছেনি” (অর্থাৎ বাল্যবয়সী) তাদের উভয়ের ইদ্দতকাল বর্ণনা করে দিয়ে বাল্যবিবাহ
বিরোধী সামাজিক বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি
যদি পবিত্র আয়াত শরীফ উনার প্রথমাংশে “যাদের মাজুরতার আশা নেই” তাদের বর্ণনা না দিতেন
তাহলে সামাজিক বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরা বাল্যবিবাহ বিষয়ে অপব্যাখ্যার সুযোগ খুঁজতো। কিন্তু
এখন সে সুযোগ চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।
বাল্যবিবাহ পবিত্র সুন্নত হওয়ার দলিল
যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি
স্বয়ং নিজেই উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে ৬ বছর বয়স মুবারকে
আক্বদ মুবারক করেছিলেন ও ৯ বছর বয়স মুবারকে ঘরে তুলে নিয়েছিলেন। উনার নিকাহ মুবারকে
৫০০ দিরহাম দেনমোহর ধার্য করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
সুতরাং এই ছয় বৎসর বয়স মুবারকে উম্মুল মু’মিনিন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম উনার নিকাহ মুবারক সম্পন্ন হওয়ার ঘটনাতেই বাল্যবিবাহ খাছ সুন্নত হিসেবে
সাব্যস্ত হয়ে যায়।
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার বাল্যাবস্থায় আক্বদ বা নিকাহ মুবারক সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে
যারা চু-চেরা করেছে; তারা চরম মিথ্যাবাদী, মুনাফিক ও আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিলও বটে।
সম্প্রতি কিছু মুনাফিক শ্রেণীর লোক
তারা পেপার-পত্রিকায়, বই-পত্রে, ইন্টারনেটে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা
আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তারা একথা ছড়াচ্ছে যে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার
আক্বদ্ মুবারক সম্পন্ন হওয়ার সময় উনার বয়স মুবারক ৬ বৎসর ছিলো না; বরং তখন উনার বয়স মুবারক ১৯ বৎসর ছিলো।” নাউযুবিল্লাহ!
যারা বলছে বা প্রচার করছে যে, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম
উনার আক্বদ মুবারক উনার সময় উনার বয়স মুবরক ১৯ বৎসর ছিলো, তারা চরম জাহিল, মিথ্যাবাদী, প্রতারক ও মুনাফিক।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ
মুবারক হয়েছে, “তিন শ্রেণীর লোক পবিত্র দ্বীন ইসলাম
ক্ষতিকারী। ১. উলামায়ে ‘সূ’ ২. কিতাবের বর্ণনা নিয়ে বিতর্ককারী মুনাফিক ৩. পথভ্রষ্ট
শাসক।
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত
ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বদ মুবারকের বয়স সম্পর্কে যারা মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে
তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম ধ্বংসকারী মুনাফিকের অন্তর্ভুক্ত।
মুনাফিকদের কাজই হচ্ছে- নূরে মুজাসসাম
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার সম্মানিত হযরত
আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের নামে মিথ্যা প্রপাগান্ডা করা, সমালোচনা ও বিরোধিতা করা। নাউযুবিল্লাহ!
এরপর তারা উল্লেখ করেছে, “পবিত্র সূরা নিসা শরীফ উনার ৬ ও ২১ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ, পবিত্র সূরা ফুরক্বান শরীফ উনার ২১ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ এবং
পবিত্র রূম শরীফ উনার ৭৪ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে শিশু বা বাল্যবিবাহকে
নিষেধ করা হয়েছে।”
অথচ এসব পবিত্র আয়াত শরীফসমূহের মধ্যে
‘বাল্যবিবাহ’ সম্পর্কে মোটেও উল্লেখ নেই। এটা তাদের চরম মিথ্যাচার ও জালিয়াতি। পবিত্র
কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের মধ্যে বিবাহ করা বা বিবাহ দেয়ার জন্য কোনো
বয়স নির্দিষ্ট করা হয়নি। বরং ছেলে ও মেয়ের যেকোনো বয়সের তারতম্যে বিবাহ করা বা বিবাহ
দেয়া জায়িয তথা শরীয়তসম্মত।
এরপর তারা বলেছে যে, “পবিত্র আয়াত শরীফসমূহের ব্যাখ্যায় তারা যায়নি।”
এ বক্তব্যও তাদের প্রতারণা ও উদ্ভটপূর্ণ।
কেননা,
যখন পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেই বাল্যবিবাহ সম্পর্কে কোনোকিছুই
বর্ণিত নেই, সেখানে পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যার
মধ্যে কোনোকিছু না পেয়ে অগত্য বলতে বাধ্য হয়ে বলেছে যে, বিস্তারিত ব্যাখ্যায় তারা যায়নি।
এরপর এই মুনাফিকরা প্রতারণার আশ্রয়
নিয়ে আরো বলতে চেয়েছে যে, “ছহীহ বুখারী শরীফ
উনার কিতাবুত তাফসীরে একটি হাদীছ শরীফ পাওয়া যায়। সেখানে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা
হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি নিজেকে ‘পবিত্র সূরা ক্বমার শরীফ’ উনার ৫৪ নম্বর
আয়াত শরীফ নাযিলের সময় জারিয়াহ বা কিশোরী মেয়ে হিসেবে দাবি করেছেন।”
এ বক্তব্যও তাদের ধোঁকাপূর্ণ ও মিথ্যা।
কেননা ‘জারিয়াহ’ শব্দের অর্থ- ‘কিশোরী’ নয়, বরং তার অর্থ- হচ্ছে ‘বালিকা’ বা ‘মেয়ে’।
মোটকথা, এই মুনাফিকরা খোঁড়া যুক্তি ও তথ্য উপস্থাপন করে উম্মুল মু’মিনীন
সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার আক্বদ্ মুবারকের সময়কে ন্যূনতম ১৬
বৎসর আর ঊর্ধ্বতম ১৯ বছর বয়স বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছে, যা অসংখ্যা পবিত্র হাদীছ শরীফ ও সীরাতগ্রন্থসমূহের বিশুদ্ধ বর্ণনার
খিলাফ বা বিরোধী।
এই মুনাফিকদের মনে রাখা উচিত যে, ইতিহাসের বিশ্লেষণে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার বর্ণনাকে বিসর্জন দেয়া চলবে না। সমস্ত ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ
শরীফ হবে সমাধানের মানদন্ড, ইতিহাস নয়।
অতএব, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম
উনার আক্বদ মুবারক সম্পন্ন হয়েছে উনার বাল্যকালে অর্থাৎ বিশুদ্ধ বর্ণনানুযায়ী তখন উনার
বয়স মুবারক ছিলো ৬ বৎসর আর উনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে যখন গমন করেন তখন উনার বয়স মুবারক ছিলো ৯ বৎসর এবং
তিনি তখন ছিলেন ‘বাকেরা’। আর উক্ত ‘বাকেরা’ শব্দ মুবারক থেকেই উনার সম্মানিত পিতা সাইয়্যিদুনা
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কুনিয়ানত মুবারক হয় ‘আবু বকর’ আলাইহিস সালাম।
সুবহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি সকলের জন্য সর্বক্ষেত্রে সর্বোত্তম আদর্শ। অপ্রাপ্ত বয়সে, প্রাপ্ত বয়সে বিধবাকালে সব সময়ে বিবাহ করা বা দেয়া উনার সম্মানিত
সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
কাজেই কোনো সুন্নত মুবারক উনার বিরোধিতা
করার অর্থই হচ্ছে উনার বিরোধিতা করা। পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের
মধ্যে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, “সুন্নত মুবারক উনার
বিরোধিতাকারীরা কাফির, পথভ্রষ্ট ও জাহান্নামী।”
আরো উল্লেখ্য, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাস উনার
বাল্যকালে আক্বদ্ মুবারকের এই সুন্নত মুবারকের বিরোধী শুধু তথাকথিত মুনাফিকরাই নয়, বরং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার বিরোধিতা করার জন্যই কাফিরেরা বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন পর্যন্ত প্রণয়ন
করেছে। নাউযুবিল্লাহ!
বাল্যবিবাহ নিয়ে কাফির-মুশরিকরা অপপ্রচার
করে সাধারণ মানুষের মনে মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, বাল্যবিবাহ একটি অভিশাপ। নাউযুবিল্লাহ! ইহুদী-নাছারাদের নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন মিডিয়া
সংবাদ প্রচার করে এভাবে যে, ‘বাল্যবিবাহের অভিশাপ
থেকে রক্ষা পেল ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী’। নাঊযুবিল্লাহ! অপপ্রচার করা হয় যে, বাল্যবিবাহের কারণে একটি মেয়ের অপুষ্টিতে ভোগা ও অল্প বয়সে সন্তান
ধারণ করায় মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে, নানা রোগ-ব্যাধি
হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। নাউযুবিল্লাহ!
কিন্তু বাস্তবতায় কি দেখা যায়? আমরা দেখে থাকি- বর্তমান প্রজন্মে দাদা-দাদি, নানা-নানি বা উনাদের আগের যামানায় যারা ছিলেন তাদেরও বিয়ে হয়েছে
খুব কম বয়সে; যেমন- অনেকের ৭ বছর বয়সে, অনেকের ৯/১০ বছর বয়সে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত আমাদের মা-বাবা, দাদা-দাদি, নানা-নানি কারো থেকে
শুনিনি যে, অমুকের অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে
মৃত্যুবরণ করেছে। বরং যথেষ্ট হায়াত পেয়ে তারা মৃত্যুবরণ করেছে, অথচ তখন তেমন কোনো উন্নত চিকিৎসাও ছিলো না। বাংলাদেশের স্বাধীনতার
স্থপতি জনাব শেখ সাহেবও বাল্যবিবাহ করেছিলেন। যার তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইতে উল্লেখ
রয়েছে।
শরীয়তে কি বিয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোন
বয়স বেধে দেয়া হয়েছে?
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ
অনুযায়ী ছেলে ও মেয়েকে বিয়ে করার ও বিয়ে দেয়ার জন্য কোনো বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি।
অর্থাৎ ৫,
১০, ১৫ ইত্যাদি বছরের
কমে অথবা ৪০, ৬০, ৮০ ইত্যাদি বছরের চেয়ে বেশি বয়সে বিয়ে করা যাবে বা যাবে না- এমন কোনো শর্ত-শারায়িত
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে বর্ণনা করা হয়নি। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ
শরীফ উনাদের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে ব্রিটিশ সরকার কোনো মেয়ের বিয়ে বসা বা বিয়ে
দেয়ার জন্য কমপক্ষে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আইন বা শর্ত করে দেয় এবং ১৮ বছর বয়সের নিচে কোনো
মেয়েকে বিয়ে দেয়া, বিয়ে করা বা কোনো
মেয়ের জন্য বিয়ে বসা দ-নীয় অপরাধ বলে সাব্যস্ত করে। নাঊযুবিল্লাহ!
ব্রিটিশদের এই আইনও সম্মানিত ইসলামী
শরীয়ত উনার সম্পূর্ণ খিলাফ ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য যে, সম্মানিত হানাফী মাযহাব মুতাবিক ১৫ বছর বয়স হলেই ছেলে বা মেয়ে
বালিগ বা বালিগা বলে গণ্য হবে, যদিও জাহিরীভাবে
তার কোনো লক্ষণ প্রকাশ না পায়। আর এর আগে যদি কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায়, তবে তখন থেকেই সে বালেগ বা বালিগা বলে গণ্য হবে।
১৯২৯ সালে ব্রিটিশরা যখন বাল্যবিবাহ
বন্ধ করে তখন তার কারণ হিসেবে ১৪ বছরের এক বালিকা বধূর অসুস্থ হওয়ার কারণ উল্লেখ করে।
কিন্তু এ কারণ সার্বজনীন নয়। এ অসুস্থতা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। এ অসুস্থতার উদাহরণ
১৮ বছরের বেশি বয়সের মেয়ের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে অনেক। আবার তার চেয়ে কম বয়সের মেয়ের
ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের পিছনে কথিত যে যুক্তি দেয়া
হয়েছে তা সম্পূর্ণ ধোঁকা ও মিথ্যা।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও কি বাল্যবিবাহ
নিষিদ্ধ?
খোদ আমেরিকাতেই বাল্যবিবাহ অনুমোদিত:
গত ২৯ মার্চ ২০১৭ ঈসায়ী তারিখ শারমিন
আক্তার নামে বাংলাদেশী এক তরুনীকে যুক্তরাষ্ট্রে ডেকে নিয়ে ‘সেক্রেটারি অব স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল
উইমেন অব কারেজ (আইডব্লিউসি) ২০১৭’ পুরষ্কার দিয়েছে বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট কট্টর মুসলিম
বিদ্বেষী ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প। ওই তরুণীর কৃতৃত্ব বলতে এতটুকুই যে, সে তার জন্মদাতা পিতা ও গর্ভধারিণী মায়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে
গিয়ে তার শরীয়তসম্মত ‘বিবাহ’ মেনে নেয়নি। আর বিরোধীতার এই জঘণ্য কাজটিকে সাহসিকতা(!)
বলে প্রচার করে তাকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছে বহুবাল্য বিবাহের দেশ আমেরিকা। যাতে
করে এই শারমিনকে দেখে বাংলাদেশের আরো অনেক কিশোরী তাদের বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে সাহস পায়।
নাউযুবিল্লাহ!
এখন যেই আমেরিকা এই দেশে বাল্যবিবাহ
বন্ধ করার জন্য এত মরিয়া হয়ে গেছে তাদের দেশে বাল্যবিবাহের অবস্থা কেমন? চলুন দেখে নিই।
খোদ আমেরিকায় ১২ বছর বয়সে বিবাহ বন্ধনে
আবদ্ধ হওয়া যায়।
সুত্র: যঃঃঢ়ং://মড়ড়.মষ/ওগবড়ঊঅ
পৃথিবীর কোনো দেশেই বাল্যবিবাহকে অপরাধ
হিসেবে দেখা হয় না। বরং অমুসলিম দেশগুলো সরাসরি সুন্নত হিসেবে পালন না করলেও এর উপকারিতা
ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে বাল্যবিবাহে উৎসাহ প্রদান করে থাকে। কারণ আমাদের দেশে শিশু
স্বাস্থ্যের ক্ষতির যে অজুহাত দিয়ে বাল্যবিবাহে নিরুৎসাহী করা হয়, প্রকৃতপক্ষে তা সত্য নয়। উদাহরণস্বরূপ নিচে কয়েকটি বিস্ময়কর
ঘটনা উল্লেখ করা হলো-
এক. ১৯৩৩ সালে পেরুর টিকারপো শহরের
লিনা মেডিনা নামের একটি শিশু মাত্র ৫ বছর ৭ মাস ১৭ দিন বয়সে জেরারডো নামে একটি পুত্র
সন্তান জন্ম দিয়েছিলো। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসের এই অবিশ্বাস্য ঘটনা চমকে দিয়েছিল
সবাইকে। কাগজে-কলমে বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী ‘মা’ পেরুর লিনা মেডিনা জন্ম দিয়েছিল একদম
সুস্থ একটি ছেলে সন্তান। ‘ডেইলি মিরর’ নামক একটি পত্রিকায় খবরটি প্রথম প্রকাশ করে পরে
আমাদের দেশী অনেক পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়।
দুই. ১২ বছরে মা আর ১৩ বছরে বাবা হয়ে
ব্রিটেনের সব থেকে কমবয়সী পিতা-মাতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে এক শিশু দম্পতি। মাত্র
১২ বছর ৪ মাস বয়সে মেয়েটি ৭ পাউন্ড ওজনের সুস্থ কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে। সন্তানের
বাবা ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। মেয়েটির বাবা জানায়, আজকালকার বাচ্চারা বড় হতে হতে বয়ফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেলে। আর তারা যদি পিতা-মাতার অগোচরে
শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে সেটা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। বরং তার আগেই বিয়ে করিয়ে দেয়া
ভালো। সে নিজেকে এখন গর্বিত নানা হিসেবে ভাবছে। এলবিসি রেডিও চ্যানেলে সে এসব কথা জানায়।
(তথ্যসূত্র: জনকন্ঠ ১৮ এপ্রিল ২০১৪)
তিন. কলম্বিয়ায় ১০ বছর বয়সী এক বালিকা
জন্ম দিয়েছে সুস্থ সবল একটি মেয়ে শিশু। যুক্তরাজ্যের ‘দ্য ডেইলি মেইল’ পত্রিকা জানিয়েছে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ৩৯ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটি সন্তানের
জন্ম দিয়েছে। এ রকম ঘটনার উদাহরণ দিয়ে শেষ করা যাবে না।
অধিক বয়সে বিয়ে করলে ডাউন সিনড্রোম
বা প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
সুন্নতী বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ফলে
দেশে প্রতিবন্ধী, অক্ষম জনসংখ্যা বৃদ্ধি
পাচ্ছে;
পক্ষান্তরে দেশ বুদ্ধিমান ও কর্মক্ষম প্রজন্ম হারাচ্ছে। ডাওন
সিনড্রোম সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে অদৃতা নামের একটি মেয়ের দৃষ্টান্ত এসেছে এভাবে-
“দিন যাচ্ছে অদৃতার বয়স বাড়ছে। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে অদৃতার
বড় হওয়াটা চোখে পড়ছে না। কারণ ওর বেড়ে উঠা, আর পাঁচটি শিশুর মতো নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অদৃতার এই সমস্যাকে বলে ডাউন সিনড্রোম।
অর্থাৎ কাঙ্খিত মাত্রায় বেড়ে না উঠা। ডাউন সিনড্রোম শিশুরা সাধারণত প্রতিবন্ধী শিশু
হিসেবে বেঁচে থাকে। তারা অন্য শিশুদের তুলনায়, শারীরিক ও মানসিকভাবে দেরিতে বেড়ে উঠে। বসতে, দাঁড়াতে, হাঁটতে বা কথা বলতে শেখে দেরিতে। আবার
কেউ কেউ এরকম এক বা একাধিক ক্ষমতা কখনোই রপ্ত করতে পারে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার
রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর পাঁচ
হাজার ডাউন সিনড্রোম শিশুর জন্ম হয়।”
কিন্তু এই ডাউন সিনড্রোম হওয়ার নেপথ্যে
কি কারণ থাকতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীর যত বেশি বয়সে বিয়ে হয় বা যত বেশি বয়সে মা হবেন, তার সন্তানেরও ডাউন সিনড্রোম নিয়ে জন্মের আশঙ্কা তত বেশি। বিশেষজ্ঞরা
বলছেন,
অল্পবয়সে গর্ভধারণ করলে ও প্রাকৃতিক উপায়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে, সে সন্তান অন্যান্য সন্তানের তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টি ও শারীরিক
পূর্ণতা নিয়ে জন্মে, অনেক বেশি বুদ্ধি
ও সক্ষমতা নিয়ে জন্মে। অপরপক্ষে অধিক বয়সে বিবাহিত নারীর গর্ভজাত সন্তানের মধ্যে শারীরিক
অক্ষমতা,
দৃষ্টি শক্তি, বাক শক্তি, শারীরিক দুর্বলতাসহ বিভিন্ন প্রকার
এবনরমালিটি বা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। অনেক শিশু অটিস্টিক কিংবা ডাউন সিনড্রোম
নিয়ে জন্মে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কথিত প্রগতিবাদী, নারীবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী কিছু মহল পবিত্র সুন্নতী বাল্যবিবাহের বিরোধিতা করতে
গিয়ে অধিক বয়সে বিয়ে করার পক্ষে যে সভা-সেমিনার, আন্দোলন ও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে দেশে প্রতিবন্ধী, অক্ষম, এ্যাবনরমাল শিশুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
অতএব, বুদ্ধিমান, বিচক্ষণ জনশক্তি
গড়ে তুলতে হলে, দেশে প্রতিবন্ধী ও অক্ষম জনসংখ্যা
বৃদ্ধি রোধ করতে হলে সরকারকে অবশ্যই ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন’ বাতিল করে সরকারিভাবে বাল্যবিবাহের
গুরুত্ব,
উপকারিতা, প্রয়োজনীয়তার প্রচার-প্রসার
করতে হবে।
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে
ব্রিটিশ প্রণীত বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-১৯২৯ মানা ও পালন করাও মুসলমানের জন্য কাট্টা
হারাম ও শক্ত কুফরী; যা মুরতাদ হওয়ার
কারণও বটে।
অতএব, মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের বিরোধী- এ কুফরী
আইন তুলে দেয়া বাংলাদেশ সরকারের জন্য যেরূপ ফরয-ওয়াজিব; তদ্রুপ উক্ত আইন তুলে দিতে সরকারকে বাধ্য করাও দেশের ১৬ কোটি
মুসলমানের জন্য ফরয-ওয়াজিব।
-০-
0 Comments:
Post a Comment