কাফির মুশরিকদের প্রতি বদদোয়া করার দলিল


 পিডিএফ লিংক- https://drive.google.com/open?id=1V24TIUO3QROFiqsGzYoPVyX9j1yxIj1q
Image result for অভিশাপকাফির মুশরিকদের প্রতি বদদোয়া করার দলিল



تبت يدا ابى لهب وتب
“আবু লাহাব এবং তার দুইহাত ধ্বংস হোক। (সূরা লাহাব)

একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুরাইশ গোত্রের দলপতিদের ছাফা পাহাড়ে আহবান করলেন। তখন নেতৃস্থানীয় কিছু কুরাইশ সেখানে উপস্থিত হলো। অতঃপর যথাসময়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় উপস্থিত হয়ে বললেন: আমি যদি বলি এই পাহাড়ের পাদদেশে একদল শত্রু অবস্থান করছে, আপনারা কি আমার কথা মেনে নিবেন?” তারা বললো: অবশ্যই মেনে নিবো। কারণ আপনি হচ্ছেন আল আমীন।অর্থাৎ চরম সত্যবাদী। আপনি যা বলবেন, আমরা তা বিনা সন্দেহে মেনে নিবো। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে তাওহীদের আহবান জানাচ্ছি। মহান বারী তায়ালা উনার আহবান শুনে কিছু সংখ্যক কুরাইশ সেখান থেকে চলে গেলো। কেউ কেউ উত্তেজিত হলো। আর আবু লাহাব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি পাথর নিক্ষেপ করতে উদ্যত হয়ে কিছু অশ্লীল ও এলোমেলো কথা বললো। ফলে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম উনার পক্ষ হতে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি আবু লাহাবের প্রতি অভিসম্পাত করে উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাবা শরীফ-এর পাশে নামায আদায় করছিলেন। তখন আবু জেহেলসহ কিছু সংখ্যক কুরাইশ চক্রান্ত করে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাঁধ মুবারক-এ সিজদারত অবস্থায় বকরীর নাড়ি-ভুঁড়ি চাপিয়ে দিলো। সে সংবাদ পেয়ে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি এসে সেগুলো সরিয়ে দিলেন।
অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নামায শেষ করে বদদোয়া করলেন-
اللهم عليك بقريش
আয় আল্লাহ পাক! কুরাইশদের দায়িত্ব আপনার।অতঃপর তিনি আবু জেহেল, ওতবা ইবনে রবিয়া, শায়বা ইবনে রবিয়া, ওলীদ ইবনে ওতবা, উমাইয়া ইবনে খলফ, ওকবা ইবনে মুঈত, মুগিরা প্রমুখ কাফিরের নাম ধরে ধরে বদদোয়া করলেন। (বুখারী শরীফ)
ওহুদ যুদ্ধের পর বীরে মাউনাবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার জন্য সত্তর জন ক্বারী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রেরণ করলেন। কিন্তু রিল, যাকওয়ান ও আসিয়্যা গোত্রের লোকেরা উনাদেরকে শহীদ করে। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যধিক কষ্ট পেয়ে দীর্ঘ একমাস যাবৎ বদদোয়া করে বলেন-
اللهم العن رعلا وذكوان عصية
আয় আল্লাহ পাক! আপনি রিল, যাকওয়ান এবং আছিয়্যা গোত্রের উপর লানত বর্ষণ করুন।” (মুসলিম)
অন্য হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اللهم اشدد وطأتك على مضر واجعلها عليهم سنين كسنى يوسف عليه السلام
অর্থ: “আয় আল্লাহ পাক! আপনি মুদার গোত্রকে কঠোর শাস্তি দিন এবং তাদের উপর দুর্ভিক্ষ দিয়ে দিন। যেমনটি দুর্ভিক্ষ হযরত ইউসূফ আলাইহিস সালাম উনার সময়ে হয়েছিলো।” (তাফসীরে ইবনে কাছীর)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يدعو على رجال من المشركين يسميهم باسمائهم.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নাম ধরে ধরে মুশরিকদের বদদোয়া দিতেন। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, কাফির মুশরিকদের মধ্য হতে অত্যধিক সীমালঙ্ঘনকারীদের নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বদদোয়া দিতেন। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষ বদদোয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতেন। আর এ জন্যই প্রয়োজনের তাগিদে কাফিরদের প্রতি বদদোয়া করা সুন্নত; যা মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশও বটে। আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
قل موتوا بغيظكم
অর্থ: “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি কাফিরদেরকে বলুন, তোমরা তোমাদের গোসসা এবং চক্রান্ত নিয়ে মৃত্যুবরণ করো। তথা ধ্বংস হয়ে যাও।
মূলত ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী, জুলুমকারীদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করা সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ তা ফরয-ওয়াজিব। আর এজন্যই বর্তমান সময়ে মুসলমানদের উপর জুলুম-নির্যাতনের কঠিন সময়ে যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুসতাজাবুদ দাওয়াত রাজারবাগ শরীফ-এর মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী তিনি কাফিরদের প্রতি বদদোয়া করতে গিয়ে মুনাজাত ও জুমুয়ার খুতবায় বদদোয়া করেন এভাবে-
اللهم اهلك الكفرة والفسقة والمبتدعة والمشركين اللهم شتت شملهم اللهم مزق جمعهم اللهم دمر ديارهم واخذل من خذل المسلمين. واخذل من خذل دين حبيبنا صلى الله عليه وسلم
অর্থ: আয় আল্লাহ পাক! আপনি কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন এবং বিদয়াতীদের ধ্বংস করুন। আয় আল্লাহ পাক! তাদের চক্রান্তসমূহ নস্যাৎ করে দিন। ইসলাম বিরোধীদের ঐক্য বিনষ্ট করে দিন। তাদের বাসস্থানগুলো গুঁড়িয়ে দিন। মুসলমানদের লাঞ্ছিতকারীদেরকে আপনি লাঞ্ছিত করুন। হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দ্বীন তথা ইসলামকে হেয় প্রতিপন্নকারীদেরকে আপনি অপমানিত করুন।
অতএব, বর্তমানে যারা কাফিরদের প্রতি বদদোয়া করাকে অনুচিত মনে করে তাদেরকে তওবা করতে হবে। অন্যথায় সুন্নত অবজ্ঞার কারণে কাফির হিসেবে মৃত্যুবরণ করতে হবে। পাশাপাশি মুসলমানদের এই কঠিন সময় মুসলমানদের প্রতি যুলুমকারীদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করে উম্মাহর কল্যাণ সাধন এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত পালনে সচেষ্ট হতে হবে।
পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ পাক কাফির-মুশরিকদের সম্পর্কে যা বলেছেন-

১। “নিশ্চয়ই সমস্ত প্রাণীর মাঝে আল্লাহ তায়ালা উনার নিকট কাফিরেরাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট, যারা ঈমান আনেনি।” (পবিত্র সূরা আনফাল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)
২। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫১)
৩। “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধু বা উপদেষ্টা হিসেবে গ্রহণ করো না, তারা (হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদী) তোমাদের অকল্যান সাধনে কোন ক্রটি করে না-তোমরা কষ্টে থাক, তাতেই তাদের আনন্দ। শত্রুতাপ্রসুত বিদ্বেষ তাদের মুখেই ফুটে বেরোয়। আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে রয়েছে, তা আরো অনেকগুণ বেশী জঘন্য।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৮)
৪। “নিশ্চয়ই কাফিররা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শত্রুতা করে।” (পবিত্র সূরা বাকারা, পবিত্র আয়াত শরীফ ৯৮)
৫। “দেখ! তোমরাই তাদের ভালোবাসো, কিন্তু তারা (অমুসলিমরা) তোমাদের প্রতি মোটেও সদভাব পোষণ করে না।” (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
৬। তোমাদের (মুসলমানদের) যদি কোন কল্যান হয়; তাহলে তাদের (অবিশ্বাসীদের) খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অকল্যান হয় তাহলে তারা আনন্দিত হয়। (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১২০) 
৭। ‘তোমরা (মুসলমানরা) তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে প্রথমতঃ ইহুদীদেরকে অতঃপর মুশরিকদেরকে।’ (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৮২)
৮। “নিশ্চয়ই মুশরিকরা (হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী) নাপাক।” (পবিত্র সূরা-তওবা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
৯। “তারা কাফির-মুশরিকরা এটাই কামনা করে যে, তারা যেরূপ কুফরী করেছে তোমরাও সেইরূপ কুফরী করো, যাতে তোমরা তাদের সমান হয়ে যাও। (পবিত্র সূরা নিসা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৯)
১০) “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যদি কাফিরদের (হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইহুদীদের) কথা শোনো, তাহলে ওরা তোমাদেরকে পেছনে ফিরিয়ে দেবে, তাতে তোমরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়বে।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৪৯)

মুসলমানদের শত্রু কাফির-মুশরিকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি সাতশপবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন। যেন মুসলমানগণ সাবধানতা ও সতর্কতা অবলম্বন করতে পারে এবং কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব বা তাদের অনুসরণ অনুকরণ না করে।
এখন অনেক মুসলমান বলে থাকে যে, ‘সব কাফির খারাপ নানাউযুবিল্লাহ। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্টভাবে বলে দেয়ার পরেও সমস্ত কাফিররা মুসলমানদের শত্রু’ -এ কথা বিশ্বাস করে না। এখন মানুষ মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী করে উনার শত্রু, মুসলমানদের শত্রু কাফিরদের ফরমান পালন করছে। নাউযুবিল্লাহ! তাহলে কি করে সে মুসলমান থাকতে পারে? কি করে তার দোয়া মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করবেন?
--




0 Comments: