সুমহান ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফ ১৪৪০ হিজরী



সুমহান ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফ!
সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মু উম্মিল উমাম, মাহজুবা, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, তাওশিয়া, তাজিমা, তাকরিমা, শাফিয়াহ, মুশাফ্ফায়া, হাবীবাতুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল,
সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার
বেমেছাল শান-মান, মর্যদা-মর্তবা ও মুবারক কারামত প্রসঙ্গে।

নিশ্চয়ই যে সকল মহান ব্যক্তিত্ব-ব্যক্তিত্বা উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু, উনাদের কোনো ভয়ভীতি নেই এবং উনারা চিন্তিতও হবেন না।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৬২)
আউলিয়া’ শব্দটি ‘ওলী’ শব্দের বহুবচন। আরবী ভাষায় ‘ওলী’ শব্দের অর্থ: নিকটবর্তী এবং দোস্ত, বন্ধু- উভয়ই বুঝায়।
হযরত আল্লামা আলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পার্থিব জীবনে ওলীআল্লাহগণ উনাদের ভয় ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা বলতে এই বুঝায় যে, পৃথিবীবাসী সাধারণতঃ যেসব ভয় ও দুশ্চিন্তার সম্মুখীন থাকে; আরাম-আয়েশ, মান-সম্ভ্রম, ধন-সম্পদ ইত্যাদির সামান্য ক্ষতিতেই তারা যেমন মুষড়ে পড়ে; ওলীআল্লাহগণ উনাদের ব্যাপার সেরকম নয়। উনাদের স্থান এ থেকে বহু ঊর্ধ্বে। পৃথিবীর সামান্য দুঃখ-কষ্ট উনাদের বিচলিত করতে পারে না এবং এগুলো উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে রহমত হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের মর্যাদা-মর্তবা বুলন্দ করার জন্য বিভিন্ন বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আলিমগণ উনারাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে পূর্ণভাবে ভয় করেন।”
এক কথায় আল্লাহওয়ালাগণ উনারা দুনিয়াবী লাভ-লোকসান, ক্ষয়-ক্ষতি, অভাব-অনটন ইত্যাদি হতে সম্পূর্ণ ভয়হীন ও চিন্তামুক্ত। আর উনারা সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে ভীত।
আর হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যিনি যতবেশি আল্লাহভীরু, তিনি ততবড় আল্লাহওয়ালা।”
উল্লেখ্য, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের প্রত্যেকেরই কম-বেশি কারামত থেকে থাকে।
আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “ওলীআল্লাহগণ উনাদের কারামত সত্য (অভ্রান্ত)।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব ওলীগণ উনারা হক্ব কারামতের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(হে উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম! আপনি) ওই খেজুর গাছের শাখা নিজের দিকে অবনমিত করুন, আপনার জন্য তা থেকে পড়বে সদ্যপক্ক খেজুর। অতএব, তা থেকে আপনি আহার করুন, পান করুন এবং নয়ন পরিতৃপ্ত করুন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫, ২৬)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার যোগসূত্রে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “যখনই হযরত যাকারিয়া আলাইহিস্ সালাম তিনি মেহরাবের মধ্যে (ইবাদতখানার কাছে) আসতেন, তখনই দেখতে পেতেন কিছু খাদ্যসম্ভার। জানতে চাইতেন: হে হযরত উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম! এসব কোথা থেকে পেলেন? উম্মু রুহিল্লাহ হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম তিনি জবাব দিতেন: এসব মহান আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে আসে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা উনাকে অপরিমেয় রিযিক দান করে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)
হযরত উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহমুস সালাম ছিলেন না। উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বিধৃত অলৌকিক পন্থায় উনার খাদ্যসম্ভার প্রাপ্তি এবং এর কারণ জানতে সাইয়্যিদুনা হযরত যাকারিয়া আলাইহিস্ সালাম উনার ঔৎসুক্য- হযরত উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম উনার কারামত (সম্মান) নির্দেশ করে।
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম উনার মুবারক আদেশের প্রেক্ষিতে উনার উযীরে আ’যম হযরত আসিফ বিন বরখিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্রাজ্ঞী হযরত বিলকিস রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার আশি হাত দীর্ঘ, চল্লিশ হাত প্রশস্ত এবং তিরিশ হাত উঁচু বিরাট এক সিংহাসন নিমিষেই অর্থাৎ এক পলক সময়ের পূর্বেই ইয়েমেনের রাজধানী সাবা থেকে তুলে এনে সাইয়্যিদুনা হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম উনার সমীপে হাজির করেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যিনি কিতাবের ইলমপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি বললেন, (হে হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম!) আপনার দিকে আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেবো। অতঃপর হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম তিনি যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন- এটি আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আন্ নমল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)
হযরত আসিফ বিন বরখিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্ন্তভুক্ত ছিলেন না। সুদূর ইয়েমেনের রাজধানী সাবা থেকে সম্রাজ্ঞী হযরত বিলকিস রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার বিশাল সিংহাসন নিমিষেই সাইয়্যিদুনা হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম উনার সমীপে হাজির করার পারঙ্গমতা নিঃসন্দেহে হযরত আসিফ বিন বরখিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কারামত নির্দেশ করে, যা মহান আল্লাহ পাক উনার দান। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, কারামত হচ্ছে ওলীআল্লাহ উনাদের সম্মান। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত এবং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মু’জিযা শরীফ উনাদের ন্যায় ওলীআল্লাহগণ উনাদের কারামত সত্য এবং তা বিশ্বাস করা ফরয। কারণ তা ঈমানী আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মু উম্মিল উমাম, মাহজুবা, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, তাওশিয়া, তাজিমা, তাকরিমা, শাফিয়াহ, মুশাফ্ফায়া, হাবীবাতুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন বেমেছাল কাশফ ও কারামতসম্পন্ন ওলীআল্লাহ। বেমেছাল কাশফ ও কারামত উনার অধিকারী হওয়ায় লোকেরা বিভিন্ন সময়  বিভিন্ন বিষয়ে উনার কাছে আরজু পেশ করতো। দেখা গেছে- উনি যেভাবে যা বলেছেন, হুবহু তাই মিলে যেত। সুবহানাল্লাহ!
উনার অসংখ্য-অগণিত কারামত মুবারক উনাদের মধ্যে হতে এখানে কতিপয় কারামত মুবারক উল্লেখ করা হলো।
(১) আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার কাছে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হওয়ার জন্য অনেকে দোয়ার আরজু করতো। তারা আরো পেশ করতো তাদের রেজাল্ট কি হবে। তখন আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি যাদের কথা বলতেন দেখা যেত শুধু তারাই পরীক্ষায় পাস করেছে। সুবহানাল্লাহ!
(২) একবার এক ছেলের বিয়ে হচ্ছিলো না। অনেক জায়গায় ঠিক করা হয় কিন্তু বিয়ের সময় হলে ছেলেটির বিয়ে ভেঙ্গে যেত। আত্মীয়-স্বজনরা বিষয়টি আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার কাছে পেশ করলেন। তখন আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি বলে দিলেন অমুক জায়গায় অমুক স্থানে যাও। সেখানে ওমুক পরিবারের একটি মেয়ে আছে। তার সাথেই ওই ছেলের বিয়ে হবে। অতঃপর উনার মুবারক ক্বওল শরীফ অনুযায়ী দেখা গেলো সেখানেই ছেলেটির বিয়ে হলো। সুবহানাল্লাহ!
(৩) আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনাদের গ্রামের বাড়ি কুমরাদী এলাকায় একটি বড় মাদরাসা ছিল। উক্ত মাদরাসায় একজন বুযুর্গ শিক্ষক ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে ঢাকার একটি মাদরাসায় চলে আসেন। আসার সময় উনাকে হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ক্বারীউল কুররা, উস্তাযুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, মমতাজুল মুহাদ্দিছীন ওয়াল মুফাস্সিরীন ওয়াল ফুক্বাহা, আওলাদে রসূল হযরতুল আল্লামা ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল আজিজ আলাইহিস সালাম তিনি নিজ বুযুর্গ মেয়ের জন্য বুযুর্গ পাত্রের সন্ধান দিতে বলেছিলেন। আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার বড়ভাই মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ বাহাউদ্দিন আলাইহিস সালাম তিনি ঢাকায় ঐ বুযুর্গ শিক্ষকের কাছে আসা যাওয়া করতেন। 
একদিন ঐ বুযুর্গ শিক্ষক ছাহেব তিনি ওলীয়ে কামিল, সুফিয়ে বাতিন, ইমামুছ ছরফ ওয়ান নাহু, ছহিবুল ইলম ওয়াল হিকাম, ছহিবুল কাশফ ওয়াল কারামত, ছহিবুত তাক্বওয়া, ফখরুল ওলামা, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা সম্মানিত নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তাক্বওয়া বুযুর্গী পরহেযগারী বর্ণনা করে বললেন- আমার জানা মতে, উনার চেয়ে তাক্বওয়াসম্পন্ন বুযুর্গ, পরহেযগার আল্লাহওয়ালা পাত্র আর হতে পারে না। তখন বড়ভাই মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ বাহাউদ্দিন আলাইহিস সালাম তিনি এবং পরিবারের অন্যান্য সবাই আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তাক্বওয়া বুযুর্গী পরহেযগারী দেখে উনার সাথেই আওলাদে রসূল সম্মানিতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীম মুবারক সম্পন্ন করেন।
ওলীয়ে কামিল, সুফিয়ে বাতিন, ইমামুছ ছরফ ওয়ান নাহু, ছহিবুল ইলম ওয়াল হিকাম, ছহিবুল কাশফ ওয়াল কারামত, ছহিবুত তাক্বওয়া, ফখরুল ওলামা, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মতো তাক্বওয়াধারী বুযুর্গ, পরহেযগার বেমেছাল ও চরম আল্লাহওয়ালা যাওজা পাওয়া সেটাও আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মহান কারামত। সুবহানাল্লাহ!
(৪) আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার জীবনের অসংখ্য অগণিত কারামত মুবারক উনার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কারামত হলো- সাইয়্যিদাতুন নিসা, যাওজাতু মুজাদ্দিদে আ’যম, আফদ্বালুন নিসা, যামানার উম্মুল মু’মিনীন, উম্মুল উমাম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা ওলীআল্লাহ উনার সম্মানিতা আম্মাজান হওয়া। সুবহানাল্লাহ!
(৫) তবে উনার আখাছছুল খাছ কারামত হচ্ছে যে, বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের আগেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এবং যতদিন পার হয়েছে তত গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন যে, উনার মহাসম্মানিতা আওলাদ উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি হবেন ক্বায়িম-মাক্বামে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তথা জাওযাতুল মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি একদম শুরুর পর্যায়ে আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার যবান মুবারকে হযরত সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে শুনেই উনার বুযুর্গী মুবারক সম্পর্কে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার পরে মহিলাদের মধ্যে জাহিরীভাবে উনিই হযরত সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার বুযুর্গী অনুধাবনে অগ্রণী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! এটা ছিল উনার অনন্য কারমত মুবারক।
উল্লেখ্য যে, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি সুমহান ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর আজই হচ্ছেন- সেই মহাপবিত্র সুমান ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফ। প্রত্যেকের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জেনে উনাকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করা।
**********************************

আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়্যিবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা মুবারক

আজ মহাসম্মানিত ৫ই মুহাররমুল হারাম শরীফ। সুবহানাল্লাহ! এই মহাসম্মানিত ৫ই মুহাররমুল হারাম শরীফ হচ্ছেন আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়িবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের তারিখ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! উনার সবচেয়ে বড় পরিচয় মুবারক হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মুল উমাম আমাদের মহাসম্মানিতা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
 আর সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মুল উমাম, উম্মুল মুরিদীন আমাদের মহাসম্মানিতা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক সরাসরি সমস্ত হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সাথে রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তবে বিশেষভাবে উনার নিসবত মুবারক হচ্ছে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে। সুবহানাল্লাহ!
এটা হচ্ছে উম্মুল উমাম, উম্মুল মুরিদীন, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, হাবীবাতুল্লাহ উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার একখানা একক আখাচ্ছুল খাছ খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক। এই আখাচ্ছুল খাছ খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক অন্য কোনো হযরত মুজাদ্দিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম ও হযরত আউলিয়াই কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আহলিয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহিন্না উনাদেরকে দেয়া হয়নি। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক খাছভাবে উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সাথে’Ñ এর লক্ষ-কোটি ব্যাখ্যা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে ত্বাহিরা, ত্বইয়িবাহ উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যম দিয়ে যেমন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নসবনামাহ মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন তথা ক্বিয়ামত পর্যন্ত হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিবেন তেমনিভাবে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মাধ্যম দিয়েও সুলত্বানুন নাছির মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার  সম্মানিতনসবনামা মুবারক ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবেন তথা ক্বিয়ামত পর্যন্ত আবুল খুলাফা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনারা, মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিবেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত হযরত আওলাদ আলাইহিমু সালাম তথা হযরত আওলাদে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যম দিয়ে যেমন জিন-ইনসান ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মানিত নিয়ামত লাভ করবে, নাজাত লাভ করবে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অথাৎ উনাদের হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক লাভ করবে, ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী লাভ করবে তেমনি উম্মুল মুরিদীন, উম্মুল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম তথা মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার মহাসম্মানিত হযরত আওলাদ আলাইহিমুস সালাম তথা পরবর্তী মুবারক বংশধর আলাইহিমুস সালাম উনাদের মাধ্যম দিয়েও জিন-ইনসান ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত প্রকার সম্মনিত নিয়ামত লাভ করবে, নাজাত লাভ করবে, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অথাৎ উনাদের হাক্বীক্বী সন্তুষ্টি-রেযামন্দি মুবারক লাভ করবে, ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবি লাভ করবে। সুবহানাল্লহ!
অন্যদিকে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার সমস্ত খুছূছিয়াত মুবারকই মহান আল্লাহ পাক তিনি হাবীবাতুল্লাহ, উম্মুল উমাম, উম্মুল মুরীদীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনাকে হাদিয়া মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তবে পার্থক্য হচ্ছে শুধু এতটুকু যে, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন মা আর উম্মুল উমাম, উম্মুল খুলাফা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন উনার মহাসম্মানিতা আওলাদ আলাইহাস সালাম। এছাড়া আর কোনো পার্থক্য নেই। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যেমন পরিপূর্ণরূপে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাক্বীক্বী ক্বায়িম-মাক্বাম তেমনিভাবে উম্মুল উমাম, উম্মুল খুলাফা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন পরিপূর্ণরূপে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীক্বী ক্বায়িম-মাক্বাম। সুবহানাল্লাহ!
মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম তিনি যেমন পৃথিবীর ইতিহাসে যত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এসেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত হযরত আউলিয়াই কিরাম রহমতুল্লহি আলাইহিম উনারা আসবেন উনাদের প্রত্যেকের সাইয়্যিদ তেমনি সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, উম্মু মুজাদ্দিদে আ’যমে ছানী, উম্মুল খুলাফা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন পৃথিবীর ইতিহাসে  যত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা এসেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লহি আলাইহিম উনারা আসবেন উনাদের প্রত্যেকের সাইয়্যিদাহ। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছলাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক উনার কারণে যেমন উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন, এছাড়া সমস্ত মর্যাদা-মর্তবা, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার অধিকারী; তেমনিভাবে সাইয়্যিদুল মুজাদ্দিদীন, ইমামুল মুজাদ্দিদীন, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ আলাইহিছ ছলাতু ওয়াস সালাম উনার সম্মানিত নিসবত মুবারক উনার কারণে হাবীবাতুল্লাহ, ত্বাহিরাহ, ত্বইয়িবাহ, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, উম্মুল উমাম, উম্মুল মুরীদীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন এবং মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি নন এছাড়া সমস্ত মর্যাদা-মর্তবা, শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনার অধিকারী। সুবহানাল্লহ!
 আর উনারই মহাসম্মানিতা আম্মাজান হচ্ছেন আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়িবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তাহলে আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়িবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কতো মাহবূবাহ, তিনি কতো সীমাহীন পবিত্রতা মুবারক উনার অধিকারী এবং উনার শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক কতো বেমেছাল, তা এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে আত ত্বাহিরাহ, আত ত্বইয়িবাহ, আয যাকিয়্যাহ, হাবীবাতুল্লাহ, উম্মু উম্মিল উমাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার হাক্বীক্বী শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উপলব্ধি করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!

***************************************************
 (৫ই মুহররমুল হারাম শরীফ- সাইয়্যিতাতুনা হযরত উম্মু উম্মিল উমাম আলাইহাস সালাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস

সুমহান ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফ!
সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মু উম্মিল উমাম, মাহজুবা, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, তাওশিয়া, তাজিমা, তাকরিমা, শাফিয়াহ, মুশাফ্ফায়া, হাবীবাতুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল শান-মান, মর্যদা-মর্তবা ও মুবারক কারামত প্রসঙ্গে।


নিশ্চয়ই যে সকল মহান ব্যক্তিত্ব-ব্যক্তিত্বা উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু, উনাদের কোনো ভয়ভীতি নেই এবং উনারা চিন্তিতও হবেন না।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-৬২)
আউলিয়া’ শব্দটি ‘ওলী’ শব্দের বহুবচন। আরবী ভাষায় ‘ওলী’ শব্দের অর্থ: নিকটবর্তী এবং দোস্ত, বন্ধু- উভয়ই বুঝায়।
হযরত আল্লামা আলুসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পার্থিব জীবনে ওলীআল্লাহগণ উনাদের ভয় ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকা বলতে এই বুঝায় যে, পৃথিবীবাসী সাধারণতঃ যেসব ভয় ও দুশ্চিন্তার সম্মুখীন থাকে; আরাম-আয়েশ, মান-সম্ভ্রম, ধন-সম্পদ ইত্যাদির সামান্য ক্ষতিতেই তারা যেমন মুষড়ে পড়ে; ওলীআল্লাহগণ উনাদের ব্যাপার সেরকম নয়। উনাদের স্থান এ থেকে বহু ঊর্ধ্বে। পৃথিবীর সামান্য দুঃখ-কষ্ট উনাদের বিচলিত করতে পারে না এবং এগুলো উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে রহমত হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। আর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের মর্যাদা-মর্তবা বুলন্দ করার জন্য বিভিন্ন বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আলিম উনারাই মহান আল্লাহ পাক উনাকে পূর্ণভাবে ভয় করেন।” সুবহানাল্লাহ!
এক কথায় আল্লাহওয়ালা উনারা দুনিয়াবী লাভ-লোকসান, ক্ষয়-ক্ষতি, অভাব-অনটন ইত্যাদি হতে সম্পূর্ণ ভয়হীন ও চিন্তামুক্ত। আর উনারা সবসময় মহান আল্লাহ পাক উনার ভয়ে ভীত। সুবহানাল্লাহ!
আর হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, “যিনি যতবেশি আল্লাহভীরু, তিনি ততবড় আল্লাহওয়ালা।” সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের প্রত্যেকেরই কম-বেশি কারামত থেকে থাকে।
আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে, “ওলীআল্লাহ উনাদের কারামত সত্য (অভ্রান্ত)।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবুব ওলী উনারা হক্ব কারামতের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(হে উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম! আপনি) ওই খেজুর গাছের শাখা নিজের দিকে অবনমিত করুন, আপনার জন্য তা থেকে পড়বে সদ্যপক্ক খেজুর। অতএব, তা থেকে আপনি আহার করুন, পান করুন এবং নয়ন পরিতৃপ্ত করুন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা মারইয়াম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫, ২৬)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার যোগসূত্রে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “যখনই হযরত যাকারিয়া আলাইহিস্ সালাম তিনি মেহরাবের মধ্যে (ইবাদতখানার কাছে) আসতেন, তখনই দেখতে পেতেন কিছু খাদ্যসম্ভার। জানতে চাইতেন: হে হযরত উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম! এসব কোথা থেকে পেলেন? উম্মু রুহিল্লাহ হযরত মারইয়াম আলাইহাস্ সালাম তিনি জবাব দিতেন: এসব মহান আল্লাহ পাক উনার কাছ থেকে আসে। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি যাঁকে ইচ্ছা উনাকে অপরিমেয় রিযিক দান করে থাকেন।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৭)
হযরত উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহমুস সালাম ছিলেন না। উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনাদের মধ্যে বিধৃত অলৌকিক পন্থায় উনার খাদ্যসম্ভার প্রাপ্তি এবং এর কারণ জানতে সাইয়্যিদুনা হযরত যাকারিয়া আলাইহিস্ সালাম উনার ঔৎসুক্য- হযরত উম্মু রুহিল্লাহ আলাইহাস্ সালাম উনার কারামত (সম্মান) নির্দেশ করে।
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম উনার মুবারক আদেশের প্রেক্ষিতে উনার উযীরে আ’যম হযরত আসিফ বিন বরখিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্রাজ্ঞী হযরত বিলকিস রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার আশি হাত দীর্ঘ, চল্লিশ হাত প্রশস্ত এবং তিরিশ হাত উঁচু বিরাট এক সিংহাসন নিমিষেই অর্থাৎ এক পলক সময়ের পূর্বেই ইয়েমেনের রাজধানী সাবা থেকে তুলে এনে সাইয়্যিদুনা হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম উনার সমীপে হাজির করেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যিনি কিতাবের ইলমপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি বললেন, (হে হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম!) আপনার চোখের পলক ফেলার পূর্বেই আমি তা আপনাকে এনে দেবো। অতঃপর হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম তিনি যখন তা সামনে রক্ষিত দেখলেন, তখন বললেন- এটি আমার পালনকর্তার অনুগ্রহ।” সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আন্ নমল শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪০)
হযরত আসিফ বিন বরখিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্ন্তভুক্ত ছিলেন না। সুদূর ইয়েমেনের রাজধানী সাবা থেকে সম্রাজ্ঞী হযরত বিলকিস রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার বিশাল সিংহাসন নিমিষেই সাইয়্যিদুনা হযরত সুলাইমান আলাইহিস্ সালাম উনার সমীপে হাজির করার পারঙ্গমতা নিঃসন্দেহে হযরত আসিফ বিন বরখিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কারামত নির্দেশ করে, যা মহান আল্লাহ পাক উনার দান। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, কারামত হচ্ছে ওলীআল্লাহ উনাদের সম্মান। মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত এবং হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত মু’জিযা শরীফ উনাদের ন্যায় ওলীআল্লাহগণ উনাদের কারামত সত্য এবং তা বিশ্বাস করা ফরয। কারণ তা ঈমানী আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মু উম্মিল উমাম, মাহজুবা, ত্বাহিরা, ত্বইয়িবা, তাওশিয়া, তাজিমা, তাকরিমা, শাফিয়াহ, মুশাফ্ফায়া, হাবীবাতুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন বেমেছাল কাশফ ও কারামতসম্পন্ন ওলীআল্লাহ। বেমেছাল কাশফ ও কারামত উনার অধিকারী হওয়ায় লোকেরা বিভিন্ন সময়  বিভিন্ন বিষয়ে উনার কাছে আরজু পেশ করতো। দেখা গেছে- উনি যেভাবে যা বলেছেন, হুবহু তাই মিলে যেত। সুবহানাল্লাহ!
উনার অসংখ্য-অগণিত কারামত মুবারক উনাদের মধ্য হতে এখানে কতিপয় কারামত মুবারক উল্লেখ করা হলো।
(১) আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার কাছে পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট হওয়ার জন্য অনেকে দোয়ার আরজু করতো। তারা আরো পেশ করতো তাদের রেজাল্ট কি হবে। তখন আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি যাদের কথা বলতেন দেখা যেত শুধু তারাই পরীক্ষায় পাস করেছে। সুবহানাল্লাহ!
(২) একবার এক ছেলের বিয়ে হচ্ছিলো না। অনেক জায়গায় ঠিক করা হয় কিন্তু বিয়ের সময় হলে ছেলেটির বিয়ে ভেঙ্গে যেত। আত্মীয়-স্বজনরা বিষয়টি আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার কাছে পেশ করলেন। তখন আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি বলে দিলেন অমুক জায়গায় অমুক স্থানে যাও। সেখানে ওমুক পরিবারের একটি মেয়ে আছে। তার সাথেই ওই ছেলের বিয়ে হবে। অতঃপর উনার মুবারক ক্বওল শরীফ অনুযায়ী দেখা গেলো সেখানেই ছেলেটির বিয়ে হলো। সুবহানাল্লাহ!
(৩) আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনাদের গ্রামের বাড়ি কুমরাদী এলাকায় একটি বড় মাদরাসা ছিল। উক্ত মাদরাসায় একজন বুযুর্গ শিক্ষক ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে ঢাকার একটি মাদরাসায় চলে আসেন। আসার সময় উনাকে হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পিতা ক্বারীউল কুররা, উস্তাযুল উলামা ওয়াল মাশায়িখ, মমতাজুল মুহাদ্দিছীন ওয়াল মুফাস্সিরীন ওয়াল ফুক্বাহা, আওলাদে রসূল হযরতুল আল্লামা ক্বারী মুহম্মদ আব্দুল আজিজ আলাইহিস সালাম তিনি নিজ বুযুর্গ মেয়ের জন্য বুযুর্গ পাত্রের সন্ধান দিতে বলেছিলেন। আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার বড়ভাই মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ বাহাউদ্দিন আলাইহিস সালাম তিনি ঢাকায় ঐ বুযুর্গ শিক্ষকের কাছে আসা যাওয়া করতেন। 
একদিন ঐ বুযুর্গ শিক্ষক ছাহেব তিনি ওলীয়ে কামিল, সুফিয়ে বাতিন, ইমামুছ ছরফ ওয়ান নাহু, ছহিবুল ইলম ওয়াল হিকাম, ছহিবুল কাশফ ওয়াল কারামত, ছহিবুত তাক্বওয়া, ফখরুল ওলামা, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা সম্মানিত নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তাক্বওয়া বুযুর্গী পরহেযগারী বর্ণনা করে বললেন- আমার জানা মতে, উনার চেয়ে তাক্বওয়াসম্পন্ন বুযুর্গ, পরহেযগার আল্লাহওয়ালা পাত্র আর হতে পারে না। তখন বড়ভাই মাওলানা সাইয়্যিদ মুহম্মদ বাহাউদ্দিন আলাইহিস সালাম তিনি এবং পরিবারের অন্যান্য সবাই আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার তাক্বওয়া বুযুর্গী পরহেযগারী দেখে উনার সাথেই আওলাদে রসূল সম্মানিতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে আযীম মুবারক সম্পন্ন করেন।
ওলীয়ে কামিল, সুফিয়ে বাতিন, ইমামুছ ছরফ ওয়ান নাহু, ছহিবুল ইলম ওয়াল হিকাম, ছহিবুল কাশফ ওয়াল কারামত, ছহিবুত তাক্বওয়া, ফখরুল উলামা, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মতো তাক্বওয়াধারী বুযুর্গ, পরহেযগার বেমেছাল ও চরম আল্লাহওয়ালা যাওজা পাওয়া সেটাও আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মহান কারামত। সুবহানাল্লাহ!
(৪) আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার জীবনের অসংখ্য অগণিত কারামত মুবারক উনার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কারামত হলো- সাইয়্যিদাতুন নিসা, যাওজাতু মুজাদ্দিদে আ’যম, আফদ্বালুন নিসা, যামানার উম্মুল মু’মিনীন, উম্মুল উমাম, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার মতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহিলা ওলীআল্লাহ উনার সম্মানিতা আম্মাজান হওয়া। সুবহানাল্লাহ!
(৫) তবে উনার আখাছছুল খাছ কারামত হচ্ছে যে, বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের আগেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এবং যতদিন পার হয়েছে তত গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন যে, উনার মহাসম্মানিতা আওলাদ উম্মুল উমাম হযরত আম্মা হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি হবেন ক্বায়িম-মাক্বামে সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম ও সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তথা জাওযাতুল মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি একদম শুরুর পর্যায়ে আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত নানা হুযূর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার যবান মুবারকে হযরত সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে শুনেই উনার বুযুর্গী মুবারক সম্পর্কে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত দাদী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম উনার পরে মহিলাদের মধ্যে জাহিরীভাবে উনিই হযরত সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার বুযুর্গী অনুধাবনে অগ্রণী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! এটা ছিল উনার অনন্য কারমত মুবারক।
উল্লেখ্য যে, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদাতুনা হযরত নানী হুযূর ক্বিবলা আলাইহাস সালাম তিনি সুমহান ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফে পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর আজই হচ্ছেন- সেই মহাপবিত্র সুমান ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফ। প্রত্যেকের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জেনে উনাকে মুহব্বত ও অনুসরণ-অনুকরণ করা।

*********************************

উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নসবনামাহ মুবারক

উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পিতা হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ আলাইহিস সালাম। তিনি ছিলেন জলীলুল ক্বদর নবী ও রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বংশধর। সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন বনূ নাযীর গোত্রের। সুবহানাল্লাহ! উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত পিতা উনার দিক থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন-
اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ رَيْـحَانَةُ بِنْتُ زَيْدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ خَنَافَةَ بْنِ شَـمْعُوْنَ بْنِ زَيْدِ )عَدَدُ الْاٰبَاءِ غَيْرُ مَرْوِىٍّ( بْنِ النَّضِيْرِ بْنِ النَّحَّامِ بْنِ نَاخُوْمِ بْنِ الْـخَزْرَجِ بْنِ الصَّرِيْحِ بْنِ التَّوْمَانِ بْنِ السِّبْطِ بْنِ الْيَسَع بْنِ سَعْدِ بْنِ لَاوِىِّ بْنِ خَيْرِ بْنِ النَّجَّامِ بْنِ تَنْحُوْمَ بْنِ عَازِرِ بْنِ عَيْزَر بْنِ هَارُوْنَ بْنِ عِمْرَانَ بْنِ قَاهَاتِ بْنِ لَاوِىِّ بْنِ يَعْقُوْبَ بْنِ اِسْحَاقَ بْنِ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ
১. اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ رَيْـحَانَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ  উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত রায়হানাহ্ আলাইহাস সালাম।
২. زَيْدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ আলাইহিস সালাম।
৩. عَمْرٌو عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আমর আলাইহিস সালাম।
৪. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ خَنَافَةُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত খনাফাহ্ আলাইহিস সালাম।
৫. شَـمْعُوْنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত শাম‘ঊন আলাইহিস সালাম।
৬. زَيْدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ আলাইহিস সালাম।
৭.  عَدَدُ الْاٰبَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ غَيْرُ مَرْوِىٍّ কয়েকজন মহাসম্মানিত পূর্বপুরুষ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ইসম বা নাম মুবারক (কিতাবে) বর্ণিত নেই।
৮. النَّضِيْرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাযীর আলাইহিস সালাম।
৯. النَّحَّامُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাহ্হাম আলাইহিস সালাম।
১০. نَاخُوْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাখূম আলাইহিস সালাম।
১১. اَلْـخَزْرَجُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত খয্রায আলাইহিস সালাম।
১২. الصَّرِيْحُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ছরীহ্ আলাইহিস সালাম।
১৩. التَّوْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত তাওমান আলাইহিস সালাম।
১৪. عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ السِّبْطُ সাইয়্যিদুনা হযরত সিব্ত্ব আলাইহিস সালাম।
১৫. الْيَسَعُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত আল ইয়াসা’ আলাইহিস সালাম।
১৬. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ سَعْدٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত সা’দ আলাইহিস সালাম।
১৭. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ لَاوِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত লাওই আলাইহিস সালাম।
১৮. خَيْرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত খইর আলাইহিস সালাম।
১৯. النَّجَّامُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত নাজ্জাম আলাইহিস সালাম।
২০. تَنْحُوْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত তানহূম আলাইহিস সালাম।
২১. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَازِرٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আযির আলাইহিস সালাম।
২২. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَيْزَر عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আইযার আলাইহিস সালাম।
২৩. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ هَارُوْنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত হারূন আলাইহিস সালাম।
২৪. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عِمْرَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘ইমরান আলাইহিস সালাম।
২৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ قَاهَاتٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বহাত আলাইহিস সালাম।
২৬. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ لَاوِىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত লাওই আলাইহিস সালাম।
২৭. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ يَعْقُوْبُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইয়া’কূব আলাইহিস সালাম।
২৮. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اِسْحَاقُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইসহাক্ব আলাইহিস সালাম।
২৯. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اِبْرَاهِيْمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম।
(ইবনে সা’দ ৮/১২৯, ‘উয়ূনুল আছার ২/৩৮৮, আল মুখতাছারুল কাবীর ১/১০০, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ৫/১৫)
উল্লেখ্য যে, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ইসম বা নাম মুবারক কিতাবাদিতে পাওয়া যায় না।

********************************************


এক নজরে
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পরিচিতি মুবারক

উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ!
নিম্নে এক নজরে উনার সম্মানিত পরিচিতি মুবারক তুলে ধরা হলো-
সম্মানিত ও পবিত্র ইসম বা নাম মুবারক: সাইয়্যিদাতুনা হযরত রায়হানাহ্ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত লক্বব মুবারক: উম্মুল মু’মিনীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আত্ব ত্বাহিরাহ, আত্ব ত্বইয়্যিবাহ্, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, মালিকাতুল জান্নাহ, মালিকাতুল কায়িনাত এছাড়াও আরো অসংখ্য-অগণিত। সুবহানাল্লাহ!
যেই সম্মানিত লক্বব মুবারক-এ সম্মানিত পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম: সাইয়্যিদুনা হযরত যায়েদ আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ! উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা আত তাসি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পূর্বপুরুষ সাইয়্যিদুনা হযরত শাম‘ঊন আলাইহিস সালাম উনার দিকে নিসবত করে উনাকে ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত রায়হানাহ্ বিনতে শাম‘ঊন আলাইহাস সালাম’ বলা হয়। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: আনুষ্ঠানিকভাবে  মহাসম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশের ১৯ বছর পূর্বে ২৮শে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম শরীফ (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবী‘উল আউয়াল শরীফ) ইয়াওমুছ ছুলাছা’ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বংশ মুবারক: বনূ নাযীর। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার বনূ নাযীর গোত্রে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত অবস্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ: ৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার মুহররমুল হারাম শরীফ মাসে। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে ‘আযীম শরীফ: ৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ উনার ২৩শে মুহররমুল হারাম শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (লাইলাতু ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ)। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উনার সম্মানিত বয়স মুবারক: ৩৬ বছর ৯ মাস ২৫ দিন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক প্রদান: ৪ বছর ১১ মাস ১২ দিন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ১১ হিজরী  শরীফ উনার ৫ই মুহররমুল হারাম শরীফ ইয়াওমুল খমীস শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ছলাতুল জানাযা মুবারক পড়ান: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦াতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক: ৪১ বছর ৯ মাস ৭ দিন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ : সম্মানিত জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
 ******************************************************


সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

পরিচিতি মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারক হযরত রায়হানা বিনতে শামউন বিন যায়িদ আলাইহাস সালাম। তিনি ইয়াহুদী সম্প্রদায়ভূক্ত ছিলেন। তিনি পিতার দিক থেকে বনু নাদ্বীর গোত্রের এবং আহালের দিক থেকে বনু কুরায়জা গোত্রের মহিলা ছিলেন। বনু কুরায়জা গোত্রের আল-হাকাম ছিল উনার আহাল (ইছাবা, যারক্বানী)।
ইবনে সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বর্ণনা মতে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার পিতৃকূলের নসব মুবারক হলো: হযরত রায়হানা আলাইহাস সালাম বিনতে যায়দ ইবনে ’আমর ইবনে খুনাফা: ইবনে শামউন ইবনে যায়দ। তবে অধিকাংশ লোক আহালের দিকটাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। সেজন্য উনাকে বনু কুরাইজা গোত্রের মহিলা বলেছেন (তাবাকাত)। সুবহানাল্লাহ!

বিলাদত শরীফ:
সম্মানিত নবুওয়ত মুবারক প্রকাশের ১৯ বছর পূর্বে পবিত্র মাহে রবিউল আউয়াল শরীফ উনার ২৮ তারিখ, ইয়াওমুছ ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার) সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি বিলাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)

ইসলাম গ্রহণ ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নিসবতে আযীম শরীফ:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানের কয়েকটি বর্ণনা সীরত গ্রন্থগুলিতে উল্লেখ আছে।
বনু কুরায়জা গোত্র বিশ্বাসঘাতকতা করলে, অন্যান্যদের ন্যায় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার আহাল, আল-হাকামও অভিযুক্ত হয়ে নিহত হয় এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা উম্মুল মু’মিনীন হযরত আত-তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম যুদ্ধ বন্দিনী হয়ে পড়েন। পরে তিনি স্বেচ্ছায় দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। সুবহানাল্লাহ! ইহা হচ্ছে জমহুর সীরত গ্রন্থকারদের বর্ণনা।
বনু কুরায়জা ইহুদি গোত্রের বিশ^াসঘাতকতার কারণে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনার আহাল ও অন্যান্য যারা নিহত হয়েছিল তার প্রেক্ষাপট এই যে, পবিত্র মদীনা শরীফে তিনটি ইহুদি গোত্র বাস করত। তন্মধ্যে তাদের বৃহত্তম গোত্র ছিল বনু কুরাইজা। এই গোত্র ছিল চরম বদ ও দুর্মুখো। আর এ কারণে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকে শায়েস্তাও করেন কঠোরভাবে। ঐ সময় ইহুদিরা মুসলমানদেরকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। প্রাথমিক পর্যায়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহুদীদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। তাতে তাদের জান-মাল ও ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ক্রমে তারা বিদ্রোহী হয়ে উঠে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে নতুন চুক্তি সম্পাদনে আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু বনু নাদ্বীর তাতে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়। পক্ষান্তরে বনু কুরাইজা নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় তাদেরকে দেশে থাকার নিরাপত্তা দেয়া হয়, মুসলিম শরীফে তাদের ঘটনা সংক্ষিপ্তাকারে বর্ণিত আছে।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলতেন, বনু নাদ্বীর ও বনু কুরাইজার ইহুদীগণ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে যুদ্ধ করে। তিনি বনু নাদ্বীরকে দেশ থেকে বের করে দেন। আর বনু কুরাইজাকে দেশে থাকার অনুমতি বহাল রাখেন। এক্ষেত্রে বনু কুরাইজার চুক্তি নবায়নে একটি কূট উদ্দেশ্যও ছিল। তা হলো- পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে সুযোগ বুঝে মুসলমানদেরকে আক্রমণ করা। খন্দকের জিহাদে তারা এই সুযোগ প্রয়োগ করেছিল।
মোট কথা বনু নাদ্বীর দেশ থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর তাদের প্রধান নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব, আবু রাফে’, সালাম ইবনে আবিল হুকায়ক প্রমূখ খায়বারে গিয়ে বসতি স্থাপন করে এবং তথাকার নেতৃত্ব লাভ করে। খন্দকের জিহাদ ছিল তাদের চেষ্টার ফল। তারা কুরায়শ, বনু সুলায়ম, গাতফান, বনু আসাদ, আশজা’, ফাযারা, বনু মুররা প্রভৃতি আরবের সকল গোত্রগুলিতে যাতায়াত করে তাদেরকে ক্ষিপ্ত করে তোলে এবং একযোগে পবিত্র মদীনা শরীফ আক্রমণে উদ্ধুদ্ধ করে। ফলে বিভিন্ন গোত্রের ১০ হাজার আরব মুসলমানদের উপর একযোগে আক্রমণ পরিচালনা করে।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, পবিত্র মদীনা শরীফে বসে আত্মরক্ষা করা সম্ভব হবে না। সুতরাং পবিত্র মদীনা শরীফে নারী ও শিশুদেরকে রেখে সকল পুরুষ সামনে অগ্রসর হয়ে সালা’ পর্বতের নিকট সমবেত হন। সালা’ পর্বত পশ্চাতে রেখে সম্মুখ দিকে খন্দক/পরীখা খনন করা হয় এবং এই পরীখার ঘেরাওয়ের মধ্যে সকলে অবস্থান গ্রহণ করেন। কাফির বাহিনী এসে খন্দক/পরীখা ঘেরাও করে।
বনু কুরাইজা তখন পর্যন্ত মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। ঠিক সে সময় সংবাদ পাওয়া গেল যে, বনু কুরাইজা প্রকাশ্যে চুক্তি ভঙ্গ করেছে। হুয়াই বিন আখত্বাবের প্ররোচনায় তারা বিদ্রোহ করেছে। সে তাদেরকে আশ^াস দিয়েছে যে, যদি কুরাইশরা পিছু হটে যায়, তাহলে আমি তোমাদের সাথে বসতি স্থাপন করব। এ সংবাদে মুসলমানগণ পবিত্র মদিনা শরীফ হিফাজতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের চিন্তা করেন। কারণ পবিত্র মদীনা শরীফে নারীকূল, শিশু ও সব মালামাল ছিল এবং হযরত ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেখানে খলীফা করে সেখানে রেখে আসা হয়েছে। তাদেরকে রক্ষা করার কোন উপায় ছিল না। পুরুষগণ খন্দক/পরীখার মধ্যে আবদ্ধ, আর বনু কুরাইজার আবাসভূমি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার অদূরেই ছিল। যে কোন মূহূর্তে তাদের পক্ষ থেকে আক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বপ্রথম সংবাদ যাচাইয়ের জন্য হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হাওয়াত বিন যুবায়র রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমূখ কতিপয় ছাহাবীকে প্রেরণ করেন। উনারা এসে সংবাদ সত্য বলে অবহিত করেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু হারিছার কতিপয় সাহসী নওজোয়ানকে পবিত্র মদীনা শরীফে প্রেরণ করেন, এরপরেও মুসলমানগণ আরো বিশেষ ব্যবস্থার গ্রহণ করেন। দীর্ঘ এক মাস পর্যন্ত কাফিররা মুসলমানদের অবরোধ করে রাখে। অবশেষে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে গায়েবী মদদ এসে যায়। এক শীতের রাত্রে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া এসে কাফিরদের তাঁবু উড়িয়ে নেয়। তাদের হাড়ি, পাতিল, আগুন আর কিছুই স্থির থাকল না, সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়। অতঃপর হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখন পর্যন্ত তিনি মুসলমান হননি) উনার নির্দেশে কাফিরগণ তৎক্ষণাৎ খন্দকের জিহাদের স্থান পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। সকাল বেলা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল মুসলমানদেরকে নিয়ে খন্দক প্রান্তর ত্যাগ করেন এবং পবিত্র মদীনা শরীফে এসে পৌঁছেন (সীরতে ইবনে হিশাম)।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খন্দকের জিহাদ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফে ফিরে গিয়ে তখনও যুদ্ধের অস্ত্রসস্ত্র খোলেননি, এমতাবস্থায় হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে উপস্থিত হন। উনার মাথায় ছিল রেশমী পাগড়ী। তিনি বললেন: ইয়া রসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনি কি হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: হাঁ। হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন: কিন্তু ফেরেশতাগণ এখনও অস্ত্র রাখেননি। আমি এই মাত্র শত্রুদের ধাওয়া করে আসলাম। খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে বনু কুরাইজার উপর হামলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি তাদের কাপিয়ে দিতে যাচ্ছি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে ঘোষক এইরূপ ঘোষণা করল: তোমরা যারা বাধ্য, অনুগত, তারা বনু কুরাইজার বসতিতে গিয়েই আছরের নামায আদায় করবে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে পতাকা নিয়ে সবার আগেই পাঠিয়ে দেন। অতঃপর মুসলিম বাহিনীর অগ্রগামী সৈন্যগণ যখন বনু কুরাইজার দুর্গের নিকটে উপস্থিত হন, তখন তারা প্রকাশ্যেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালমন্দ করতে শুরু করে। অতঃপর তাদেরকে অবরোধ করা হয়। (সীরাতুন্নবী, ইবনে হিশাম)।
দীর্ঘ ২৫ দিন অবরোধের পর তারা আবেদন জানায় যে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যে ফয়ছালা করবেন, তাই তারা মেনে নিবে (সীরাতুন্নবী, ইবনে হিশাম)। হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনার বংশ বনু কুরাইজার মিত্র ছিলেন। তাদের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত ছিল। আরবদের মধ্যে এই সম্পর্ক বংশসূত্রের সম্পর্ক থেকেও বড় বিবেচিত হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের আবেদন মঞ্জুর করলেন। হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এ ব্যাপারে রায় দেন যে, বনু কুরাইজার যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদেরকে হত্যা করা হোক। মহিলা ও শিশুদেরকে বন্দী করে রাখা হোক এবং তাদের মাল-সামানা গণিমত হিসাবে নিয়ে নেয়া হোক। এ রায় ছিল তাওরাত শরীফ উনার নির্দেশ অনুযায়ী। সুবহানাল্লাহ!
বহু হাদীছ শরীফে উল্লেখ হয়েছে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন এ রায় দেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আপনি তো আসমানী ফায়সালাই করেছেন। ইহুদীদেরকে এ রায় শুনানোর পর তাদের মুখ থেকে যেসব কথা বেরিয়েছিল, তা থেকে স্পষ্টত বোঝা যায় যে, তারা এ রায়কে মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের অনুরূপই মনে করেছিল। সুবহানাল্লাহ!
ইহুদী বনু কুরাইজা গোত্রের প্রতি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক ইহসান করেন। তাদেরকে ধর্মীয় স্বাধীনতা দেন। তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। তাদের জান-মালের নিরাপত্তার অঙ্গীকার প্রদান করেন। বনু কুরাইজা সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে বনু নাদ্বীর অপেক্ষা নীচে ছিল। যেমন, বনু নাদ্বীর গোত্রের কোন লোক যদি বনু কুরাইজার কোন লোককে হত্যা করত, তবে তাকে অর্ধেক রক্তপণ দিতে হতো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উপর এ ইহসান করেন যে, রক্তপণ আদায়ের ক্ষেত্রে বনু কুরাইজাকে সমমর্যাদা প্রদান করা হয়। ফলে বনু নাদ্বীরকে পরিপূর্ণ রক্তপণ আদায়ে বাধ্য করেন। এ সবের পরেও বনু কুরাইজা চুক্তি ভঙ্গ করে খন্দকের জিহাদে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। খন্দকের জিহাদের সময় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম ও অন্যান্য মুসলিম মহিলাকে যে দুর্গে রাখা হয়েছিল, দুর্বৃত্ত বনু কুরাইজা সে দুর্গ আক্রমনে উদ্যত হয়েছিল। নাউযুবিল্লাহ!
হুয়াই বিন আখত্বাবকে বিদ্রোহ করার দরুণ দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সে সব আরব গোত্রকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল এবং তারই প্রত্যক্ষ কারসাজিতে খন্দকের জিহাদ সংগঠিত হয়েছিল। বনু কুরাইজা তাকে সাথে নিয়ে এসেছিল। সুতরাং এসব অবস্থার প্রেক্ষিতে বনু কুরাইজার সাথে কঠোর ফায়সালা ছাড়া আর অন্য কিছুই সম্ভব ছিল না।
অনেক মুনাফিকরা অপপ্রচার করে যে, হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জিহাদে আহত হয়েছিলেন, সেজন্য তিনি বনু কুরাইজার উপর ক্ষুব্ধ হয়ে এরূপ কঠোর ফয়ছালা দিয়েছিলেন। ইহা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কারণ তিনি খন্দকের জিহাদে আহত হয়েছিলেন, বনু কুরাইজার কেউ উনাকে আহত করেনি। বনু কুরাইজা ছিল উনার মিত্র গোত্র। কাজেই তিনি পবিত্র তাওরাত শরীফ অনুযায়ী চুক্তিভঙ্গের শাস্তির রায় ন্যায়-সঙ্গতভাবেই দিয়েছিলেন, কোনরূপ শত্রুতার বশবর্তী হয়ে রায় দেননি।
নিহতদের সংখ্যা ঐতিহাসিকগণ ৬ শত বলে উল্লেখ করেছেন। তবে বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের বর্ণনায় জানা যায় যে, এরা ছিল ৪ শত জন। এদের মধ্যে একজন ছিল মহিলা। তাকে কেছাছের জন্য হত্যা করা হয়েছিল। সে দুর্গের উপর থেকে পাথর নিক্ষেপে একজন মুসলমানকে হত্যা করেছিল। এই ছিল বনু কুরাইজা গোত্রের যুদ্ধক্ষম ব্যক্তিদের নিহত হওয়া, তাদের নারী ও শিশুদের বন্দী হওয়া এবং তাদের পরিত্যক্ত সম্পদ গণিমত হিসাবে মুসলমানদের অধিকারে আসার প্রেক্ষাপট। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুন নবী, শিবলী নুমানী)।
এক বর্ণনায় উল্লেখ আছে যে, একবার নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় পেছন থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ছালাবা ইবনে শুবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উম্মুল মু’মিনীন, হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ নিয়ে আসছেন। একটু পরে ঠিকই উক্ত ছাহাবী পবিত্র দরবার শরীফে এসে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার ইসলাম গ্রহণের সুসংবাদ দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (উসুদুল গাবা, ইছাবা)।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশী হন এবং উনাকে আযাদ করে উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব দেন। অতঃপর উনার সাথে উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় ৬ষ্ঠ হিজরী সনের পবিত্র মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ উনার ২৩ তারিখ, পবিত্র ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ। সুবহানাল্লাহ! ( দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
সীরাত গ্রন্থসমূহে এ বিষয়ে অনেক এলোমেলো বর্ণনাও রয়েছে। বলা হয়েছে যে, উনাকে আযাদ হওয়ার স্বাধীনতা প্রদান করলে তিনি উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বন্দীদশাকেই স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেন, যা সম্পূর্ণ অসম্ভব এবং উনার শানের সম্পূর্ণ খেলাফ। সীরত গ্রন্থসমূহের মধ্যে তাবাকাতে ইবনে সা’দ, মুসা ইবনে উকবার মাগাযী প্রথম দিকের মৌলিক সীরতের কিতাব। পরবর্তী সীরত লেখকগণ এসব কিতাব অনেক ক্ষেত্রে অনুসরণ করেছেন। মুসলমানদের বাগদাদ ও স্পেনের গ্রন্থাগারগুলি কাফিরগণ ধ্বংস করে দেয়ার পর এই কিতাবসমূহ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যায়। তাবাকাতে ইবনে সা’দ ইউরোপে পাওয়া যায়। এসব কিতাবের তথ্যবলী ইউরোপীয় কাফিরগণ যে সংযোজন বা বিয়োজন করেনি তা কে বলবে? সেজন্য কোন সীরত গ্রন্থের বর্ণনা যদি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের খেলাফ কিছু বর্ণিত পাওয়া যায় তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। (আছাহহুস সিয়ার)।
একটি বর্ণনায় এরূপ উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন যে, বন্দীদের বিচার শেষে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট তাশরীফ এনে বললেন: আপনি যদি মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গ্রহণ করেন, তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের জন্য আপনাকে গ্রহণ করবেন। আমি বললাম: আমি মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গ্রহণ করলাম। আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে আযাদ করে দেন এবং অন্যান্য উম্মুল মুমিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ন্যায় ১২ উকিয়া স্বর্ণ মোহর ধার্য করে আমার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার ব্যবস্থা করেন এবং আমার উপর পর্দা পালনের আহকাম জারি করেন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, ইছাবা)।
কাজেই এসব বর্ণনার পরিপন্থী ভিন্ন ধরণের বর্ণনা সমূহ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানের সময় উনার বয়স মুবারক ছিলেন ৩৬ বছর ৯ মাস ২৫ দিন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়া আলাইহাস সালাম উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, বনু কুরাইজার জিহাদের পর ইহুদিদের মনোনিত বিচারক হযরত সা’দ বিন মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রায় অনুযায়ী প্রায় ৪০০ বা ৬০০ যুদ্ধক্ষম ইহুদী নিহত হয়। এতে বহু সংখ্যক ইহুদী নারী বিধবা হয়ে পড়ে। উনারা মুসলমানদের মধ্যে সামাজিকভাবে আত্মসম্মান নিয়ে মর্যাদা সহকারে যাতে বসবাস করতে পারেন, এর প্রয়োজন দেখা দেয়। সাধারণত বিধবা বিবাহে লোক আগ্রহী হয়না, একটি সংসারে নতুন করে ফিৎনা সৃষ্টি করতে কেউ চায় না। তাছাড়া উনারা ছিলেন একটি ভিন্ন কওমের নারী। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে উনার পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফে আনয়ন করে উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে মর্যাদা দান করেন। সাথে সাথে পবিত্র সুন্নতের অনুসরণে অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণও আশ্রয়হীনা বিধবা নারীগণকে বিনা দ্বিধায় শাদী মুবারক করে আশ্রয় দান করেন। সুবহানাল্লাহ!

বিছাল শরীফ:
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জ হতে প্রত্যাবর্তন করার পর হিজরী ১১ সনে পবিত্র মাহে মুহররমুল হারাম শরীফ উনার ৫ তারিখ, পবিত্র ইয়াওমুল খামীস তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ! জান্নাতুল বাকীতে উনার দাফন মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৪১ বছর ৯ মাস ৭ দিন। সুবহানাল্লাহ! (দৈনিক আল-ইহসান শরীফ, ইছাবা)।

ফযীলত ও মর্যাদা:
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আত-তাসিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াবী হায়াত মুবারকে উনার উপস্থিতিতে তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তিনি নিজে উনার জানাযা মুবারক পড়েন এবং দাফন মুবারক সম্পন্ন করেন। সুবহানাল্লাহ! (সূত্র: সীরত গ্রন্থাবলী)
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত আজওয়াজুম মুতাহারাত পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অর্ন্তভুক্ত। আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন-

إنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أهْلَ الْبَيْتِ وَ يُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا -

(হে নবী পরিবার! খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করতে) অর্থাৎ আপনাদেরকে পরিপূর্ণরূপে পবিত্র করেই তিনি সৃষ্টি করেছেন। উনারা নিজেরা শুধু পবিত্রই নন, বরং উনারা পবিত্রতা দানকারী। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবার দিক থেকে সর্বপ্রথম হচ্ছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত আব্বা আলাইহিস সালাম এবং মহাসম্মানিতা আম্মা আলাইহাস সালাম, উনারা হচ্ছেন সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ উনাদের মূল। অতঃপর হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা, অতঃপর হযরত আবনাউ রসুলিল্লাহ এবং বানাতে রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মর্যাদা এবং অতঃপর অন্যান্য আওলাদে রসুল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্তবা মর্যাদা। সুবহানাল্লাহ!
উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অপরিসীম মর্যাদা মর্তবার বিষয়ে খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম মজীদে ইরশাদ মুবারকে করেছেন:
لستن كاحد من النساء -
অর্থ: উনারা অন্য কোন নারীর মত নন। অর্থ্যাৎ উনাদের কোন মেছাল নেই, উনারা বেমেছাল। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন:
اَلنَّبِـىُّ اَوْلـٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ وَاَزْوَاجُه اُمَّهٰتُهُمْ.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন মু’মিনদের নিকট তাদের জানের চেয়েও অধিক প্রিয়, আর উনার মহা-সম্মানিতা আযওয়াজুম মুত্বাহহারাত (হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম) উনারা হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহিন্নাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! (সুরা আহযাব শরীফ, আয়াত শরীফ ৬)।
তাহলে উম্মাহাতুল মু’মিনীন উনার অর্থ হচ্ছেন সমস্ত মু’মিন উনাদের মহাসম্মানিতা মাতাগণ। সুবহানাল্লাহ! এই সম্মানিত লক্বব মুবারক উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনিই দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ হযরত নবী-রসুল আলাইহিমুস সালাম উনারাসহ সৃষ্টির শুরু থেকে এ পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়ার যমিনে আসবেন, (শুধু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ব্যতীত) উনাদের প্রত্যেকেরই মহা-সম্মানিতা মাতা হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা। সুবহানাল্লাহ!
সকল হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে তা’যীম, তাকরীম করা ও মুহব্বত করা উম্মতের জন্য ফরয-ওয়াজিব। যেমন খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন:
قُل لا أسْألُكُمْ عَلَيْهِ أجْرًا إلَّا الْمَوَدَّةَ فِى الْقُرْبَى -
অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মতদেরকে বলুন, আমি তোমাদের নিকট কোন বিনিময় চাই না, আর তোমাদের পক্ষে বিনিময় দেয়া সম্ভবপরও নয়। বরং এইরূপ কল্পনা করাও কুফরী হবে। তবে যেহেতু তোমাদেরকে ফায়দা হাসিল করতে হবে, সেজন্য তোমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, যাঁরা আমার আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম করা (পবিত্র সূরা শু’রা শরীফ, আয়াত শরীফ ২৩)।
পবিত্র আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা মর্তবা সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন:
ألاَ إنَّ مَثَلَ أهْلِ بَيْتِىْ فِيْكُمْ مَثَلُ سَفِيْنَةِ نُوْحٍ عليه السلام مَنْ رَكِبَهَا نَجَا وَ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا هَلَكَ -
অর্থ: সাবধান! নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আমার হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হলেন হযরত নুহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতীর ন্যায়। যে তাতে আরোহণ করেছে, সে রক্ষা পেয়েছে। আর যে তা হতে পশ্চাতে থেকেছে, সে ধ্বংস হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে:
الجَنّةُ تَحْتَ أقْدَامِ الْأُمُّهَاتِ -
অর্থাৎ সম্মানিত জান্নাত সম্মানিতা মাতা উনাদের পায়ের নিচে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একই সম্মানিত জান্নাত মুবারকে একই সাথে অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! এ থেকে বুঝা যায়, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়েল ফযীলত, বুযুর্গী সম্মান কত বে-মেছাল, যা তামাম কায়েনাতবাসীর চিন্তা ও ফিকিরের উর্ধ্বে।
বর্তমানে কোন কোন নামধারী মুসলমান যেমন কোন কোন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সমালোচনা করে থাকে, তেমন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরও শান মান নিয়েও ক্বীল-ক্বাল করে থাকে। তাদের পরিণতি অত্যন্ত খারাপ, যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে:
عن حضرت عويـمر بن ساعدة رضى الله تعالى عنه انه صلى الله عليه و سلم قال ان الله اختارنى واختار لى اصحابا فجعل لى منهم وزراء وانصارا واصهارا فمن سبهم فعليه لعنة الله والـملئكة والناس اجـمعين ولايقبل الله منهم صرفا وعدلا
অর্থ: হযরত উয়াইমির ইবনে সায়িদাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক আমাকে এবং আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে মনোনীত করেছেন এবং উনাদের মধ্য থেকে আমার কার্য সম্পাদনকারী, খেদমতকারী এবং বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়বর্গ নিযুক্ত করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি উনাদেরকে গালি দিবে বা দোষারোপ করবে, তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত এবং সমস্ত ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও সমস্ত মানুষ সকলেরই লা’নত। আর মহান আল্লাহ পাক তার কোন ফরয ও নফল ইবাদত কবুল করবেন না (তাবারানী শরীফ, হাকিম শরীফ)।
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনায় হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা বিশেষভাবে শামিল রয়েছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসুল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মনোনীত করেছেন এবং সেই সাথে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাহিন্নাস সালাম উনাদেরকেও বিশেষভাবে মনোনীত করেছেন উনার মুবারক খেদমতের আঞ্জাম দেয়ার জন্য।
কাজেই উনাদের শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা উপলব্ধি করা সমস্ত জিন-ইনসানের জন্য ফরয-ওয়াজিব। উনাদের প্রতি মুহব্বত ও সু-ধারণা পোষণ করাই হচ্ছে ঈমান। আর উনাদের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করা, উনাদের সমালোচনা করা সুস্পষ্ট কুফরী, কাফির ও চির-জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
সূত্র: তাবাকাত, উসুদুল গাবা, ইছাবা, যারক্বানী, সীরতে ইবনে হিশাম, সীরতুন নবী (শিবলী নুমানী), দৈনিক আল-ইহসান শরীফ।