আজ ১১ ই রবিউছ ছানী শরীফ ইয়ামুল আহাদ পবিত্র ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম
আজ ১১ ই রবিউছ ছানী শরীফ ইয়ামুল আহাদ পবিত্র ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম

রবীউছ ছানী মাস অত্যন্ত বরকত ও ফযীলতপূর্ণ মাস। এই মাসেই মাহবুবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত শায়খ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন।
হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, “প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে আল্লাহ পাক তিনি এই উম্মতের ইছলাহর জন্য এমন লোক প্রেরণ করবেন, যিনি দ্বীনের সংস্কার করবেন।” অর্থাৎ বিদয়াত, বেশরা এবং শরীয়ত বিগর্হীত কাজগুলোর সংশোধন করবেন।
সেই রকম একজন খাছ ও বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ হলেন- গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ৪৭১ হিজরীতে পহেলা রমাদ্বান শরীফ, সোমবার শরীফ-এ পবিত্র জিলান নগরে বিলাদত শরীফ লাভ করেন। জিলান নগরীটি তৎকালে ইরানে অবস্থিত ছিলো। বিখ্যাত ওলীআল্লাহ, সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্বন্ধে জানা যায় যে, তিনি একদিন মুরাকাবার হালতে ছিলেন, হঠাৎ বলে উঠলেন, “উনার ক্বদম মুবারক আমার গর্দানের উপর।” এই বলে তিনি ঘাড় নত করলেন। লোকেরা কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ৫০০ হিজরীতে হযরত আব্দুল কাদির রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে একজন বিখ্যাত ওলীআল্লাহ বিলাদত শরীফ লাভ করবেন। উনার উপাধি হবে মুহিউদ্দীন। আল্লাহ পাক উনার হুকুমে তিনি বলবেন, “সকল ওলীগণ উনাদের গর্দানের উপর আমার ক্বদম।”
গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি পিতার দিক থেকে হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম এবং মাতার দিক থেকে হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের বংশধর অর্থাৎ আওলাদে রসূল। গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতার নাম মুবারক হযরত সাইয়্যিদ আবু ছালেহ মুসা জঙ্গী দোসত রহমতুল্লাহি আলাইহি। যেহেতু তিনি যুদ্ধ প্রিয় ছিলেন সেহেতু উনাকে জঙ্গী দোসত বলা হয়। আর উনার মাতার নাম মুবারক হযরত উম্মুল খায়ের আমাতুল জাব্বার ফাতিমা রহমতুল্লাহি আলাইহা।
‘বাহজাতুল আসরার’ নামক কিতাবে হযরত শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৫৬০ হিজরীর রবীউল আউয়াল শরীফ মাস হতে অসুস্থ হয়ে পড়লেন।
‘তাওয়ারিখে আউলিয়া’ নামক কিতাবে হযরত শায়খ আব্দুল ফতেহ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, রোববার দিবাগত রাত্রে অর্থাৎ সোমবার রাত্রে গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গোসল করেন। গোসলান্তে ইশার নামায আদায় করে তিনি উম্মতে হাবীবীগণের গুনাহখাতা মাফের জন্য ও তাদের উপর খাছ রহমতের জন্য দোয়া করলেন। এরপর গায়েব হতে আওয়াজ আসলো, “হে প্রশান্ত নফস, আপনি সন্তুষ্টচিত্তে, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হয়ে নিজ প্রতিপালক উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করুন। আপনি আমার নেককার বান্দার মধ্যে শামিল হয়ে যান এবং বেহেশতে প্রবেশ করুন।” এরপর তিনি কালিমা শরীফ পাঠ করে তাআজ্জাজা (অর্থ বিজয়ী হওয়া) উচ্চারণ করতে লাগলেন এবং তিনি আল্লাহ, আল্লাহ, আল্লাহ বললেন। এরপর জিহ্বা মুবারক তালু মুবারক-এর সাথে লেগে গেলো। এভাবে ৫৬১ হিজরীর ১১ই রবীউছ ছানী মাসের সোমবার শরীফ-এ গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ পাক উনার মহান দরবারে প্রত্যাবর্তন করলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) আর এ দিনটিই সারাবিশ্বে ‘পবিত্র ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম’ নামে মশহুর। ১৪৩৬ হিজরীর জন্য আগামী ইওয়ামিল আহাদ (রবিবার) পবিত্র ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম।
তাই প্রত্যেকের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে- গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জেনে উনাকে মুহব্বত ও অনুসরণ করে আল্লাহওয়ালা হওয়ার কোশেশ করা এবং পবিত্র ফাতিহায়ে ইয়াজদাহম উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকারসহ পৃথিবীর সকল দেশের সরকারের উচিত- যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যতার সাথে এ দিনটি পালন করা এবং এ দিনের সম্মানার্থে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা।
জরুরত (ইস্তিঞ্জা) সম্পাদন করার নিয়ম
জরুরত (ইস্তিঞ্জা) সম্পাদন করার নিয়ম


১. বাইতুল খলা বা টয়লেটে প্রবেশের আগে দোয়া পাঠ করা-
আল্লাহুম্মা ইন্নী আউযুবিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খবায়িছ।
অর্থাৎ- “আয় মহান আল্লাহ পাক! শয়তানের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
২. বাইতুল খলা বা টয়লেটে প্রবেশের সময় বাম পা দেয়া ও বের হওয়ার সময় ডান পা আগে দেয়া।
৩. জরুরত সারার সময় বাম পায়ের উপর ভর দিয়ে বসা।
৪. জরুরত সারার সময় মহিলাদের মাথা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা ও পুরুষদের মাথায় টুপি পরিধান করা।
৫. কোন গর্তে ছোট ইস্তিঞ্জা না করা।
৬. রাস্তা বা কবরস্থানে ছোট ইস্তিঞ্জা ও বড় ইস্তিঞ্জা না করা।
৭. ফলদার গাছের নীচে এবং যে গাছের ছায়ায় মানুষ বসে সেখানে ছোট ইস্তিঞ্জা ও বড় ইস্তিঞ্জা না করা।
৮. বাইতুল খলা বা টয়লেটে বসা বা ইস্তিঞ্জা করার সময় মুখ বা পিঠ ক্বিবলা উনার দিকে না করা।
৯. প্রবাহিত পানি বা অল্প আবদ্ধ পানিতে ছোট ইস্তিঞ্জা ও বড় ইস্তিঞ্জা না করা।
১০. শৌচাদির জন্য ডান হাত ব্যবহার না করা।
১১. দাঁড়িয়ে ছোট ইস্তিঞ্জা না করা।
১২. জরুরত সারার পর কুলুখ ব্যবহার করা।
১৩. বাইতুল খলা বা টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় এই দোয়া পাঠ করা-
আলহামদু লিল্লাহিল্ লাযী আযহাবা আনিল আযা ওয়া আফানী।
অর্থাৎ- “সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করে দিয়েছেন এবং আমাকে সুস্থতা দান করেছেন।”



“মুহম্মদ” ও “আহমদ” নাম মুবারক লিখা প্রসঙ্গে
“মুহম্মদ” ও “আহমদ” নাম মুবারক লিখা প্রসঙ্গে

পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, দুনিয়াতে কেউ যদি ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ নাম রাখে তা হলে ওই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন পোড়াবে না। অর্থাৎ সে জান্নাতী হবে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আবু উমামা আল বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি কোনো ব্যক্তির ছেলে সন্তান হয় অতঃপর সে ব্যক্তি যদি আমার মুহব্বতে এবং আমার নামের বরকতের জন্য তার ছেলে সন্তানের নাম ‘মুহম্মদ’ রাখে তাহলে সে ব্যক্তি এবং তার ছেলে উভয়েই জান্নাতী হবে।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত হাদীছ শরীফগুলো দ্বারা সহজেই বুঝা যায় যে, যদি কোনো মুসলমান উনার নাম মুহম্মদ বা আহমদ রাখে তবে তিনি অবশ্যই জান্নাতী হবেন। আমাদের মুসলমান সমাজে এই হাদীছ শরীফ গুলো জেনেই হোক বা না জেনেই হোক সন্তান-সন্ততির নাম মুহম্মদ বা আহমদ রাখেন । কিন্তু নাম গুলো লিখার সময় শুদ্ধ উচ্চারণ লিখা হয় না বা সংক্ষেপে লিখা হয়। (নাউযুবিল্লাহ)।
যেমনঃ মুহম্মদ (MUHAMMAD) নাম মুবারককে মোঃ, মো., মুঃ ,মোহঃ,মুহঃ , মোহাং, এম, ম, মোহাম্মদ, মোহাম্মাদ, মুহম্মাদ, md, m, mohd, mohammad ইত্যাদি লিখা হয়।
অন্যদিকে আহমদ (AHMAD) নাম মুবাররকে আহাং, আহম্মদ, আহাম্মদ, আহমেদ ,আহেম্মদ আহেম্মেদ, ahmed, Ahammad Ahammed, ahmod ইত্যাদি লিখা হয়।
একটি কথা এখানে উল্লেখ্য যে, সম্মানিত বিষয়কে সম্মান করলে যেমন ফযীলত পাওয়া যায় তেমনি ইহানত করলে বিপরীতটাও রয়েছে। তাই নাম মুবারক দুটি লিখার সময় সংক্ষিপ্ত করে বা ভুল উচ্চারণ পরিহার করে মুহম্মদ (MUHAMMAD) বা আহমদ (AHMAD) লিখতে হবে।
আলাইহিস সালাম বাক্যটির অর্থ কি? এ বাক্যটি নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম ব্যতীত অন্য কারো নামের সাথে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে শরীয়তে কোন বিধি-নিষেধ আছে কি?
আলাইহিস সালাম বাক্যটির অর্থ কি? এ বাক্যটি নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম ব্যতীত অন্য কারো নামের সাথে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে শরীয়তে কোন বিধি-নিষেধ আছে কি?

আলাইহিস সালাম’ বাক্যটির অর্থ হলো উনার উপর সালাম অর্থাৎ খাছ শান্তি বর্ষিত হোক।
উল্লেখ্য, এক মুসলমান অপর মুসলমানের সাথে সাক্ষাত হলে সালাম দেয়া ও নেয়া কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এরই নির্দেশ।
কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
اذا حييتم بتحية فحيوا باحسن منها او ردوها ان الله كان على كلى شىء حسيبا
অর্থ: যখন তোমাদেরকে কেউ সালাম দেয় তখন তোমরাও তদপেক্ষা উত্তম বাক্যে সালামের জবাব প্রদান করো অথবা তদানুরূপই জবাব প্রদান করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি সর্ববিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী। (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ ৮৬)
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه ان رجلا سال رسول الله صلى الله عليه وسلم اى الاسلام خير قال تطعم الطعام وتقرئ السلام على من عرفت ومن لم تعرف
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জিজ্ঞেস করলেন, ইসলামের কোন বিষয়টি উত্তম? তিনি বললেন, (ক্ষুধার্তকে) খাদ্য খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সকল মুসলমানকে সালাম দেয়া। (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, নুরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের সদ্ব্যবহারের ছয়টি হক্ব রয়েছে। তারমধ্যে প্রথমটিই হচ্ছে
يسلم عليه اذا لقيه
অর্থাৎ যখন কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে তাকে সালাম দিবে। (তিরমিযী, মিশকাত)
মূল কথা হলো, একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সাথে সালাম বিনিময়ের যে উদ্দেশ্য কোন মুসলমানের নামের সাথে আলাইহিস সালাম ব্যবহারের সে একই উদ্দেশ্য।
এছাড়া হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, কেউ কারো সালাম কোন ব্যক্তির নিকট পৌঁছার মাসয়ালা হলো: সে বলবে যে, অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছেন এর উত্তরে সালামের উত্তরদাতা বলবেন-
وعليك وعليه السلام
অর্থাৎ: “আপনার প্রতি এবং যিনি সালাম পাঠিয়েছেন উনার প্রতিও সালাম অর্থাৎ শান্তি বর্ষিত হোক।”
দেখা যাচ্ছে, সালাম প্রেরণকারী ব্যক্তির সালামের জাওয়াব দানকালে উনার ক্ষেত্রে
‘আলাইহিস সালাম’ عليه السلام
ব্যবহৃত হচ্ছে। কাজেই, বলার অবকাশ রাখে না যে, ‘আলাইহিস সালাম’ বাক্যটি হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যতীত অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা শরীয়তের বিধানে কোন নিষেধ তো নেই বরং আদেশ রয়েছে।
স্মরণীয় যে, শরীয়তের অনেক বিষয়ে দু’ ধরণের ফতওয়া বা মাসয়ালা বর্ণনা করা হয়। -
এক. আম বা সাধারণ মাসয়ালা।
দুই. খাছ বা বিশেষ মাসয়ালা।
প্রথমত: সাধারণ মাসয়ালা হলো, কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এর সাথে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। এবং এটা উম্মতের জন্য ফরযের অন্তর্ভুক্ত। যেমন এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ করেছেন-
يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما
অর্থ: হে ঈমানদাররা! তোমরা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ছলাত পাঠ করো এবং সালামের মতো সালাম পেশ করো। অর্থাৎ আদব রক্ষা করে তথা দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করো।
দ্বিতীয়ত: অন্যান্য নবী-রসূল আলইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এর সাথে ‘আলাইহিস সালাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। এটাও ফরযের অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফ-এর অনেক আয়াত শরীফ-এ উনাদের প্রতি সালাম বর্ষিত হওয়ার বিষয়টি ইরশাদ হয়েছে।
যেমন কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
سلم على نوح فى العالـمين
অর্থ: বিশ্ববাসীর মধ্যে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ৭৯)
سلم على ابراهيم
অর্থ: হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ১০৯)
سلم على موسى وهرون
অর্থ: হযরত মূসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ১২০)
سلم على ال ياسين
অর্থ: হযরত ইল্ইয়াসীন আলাইহিস সালাম উনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা ছফফাত: আয়াত ১৩০)
سلم على المرسلين
হযরত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। (সূরা ছফফাত: আয়াত শরীফ ১৮১)
একইভাবে আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে-
سلم عليه يوم ولدت ويوم اموت ويوم ابعث حيا
অর্থ: উনার প্রতি সালাম (শান্তি বা অবিভাদন) যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেন এবং যেদিন তিনি জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবেন। (সূরা মারইয়াম আয়াত শরীফ ১৫)
উল্লেখ্য, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং সর্বোপরি সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের যারা পিতা-মাতা, আহলে বাইত, আযওয়াজ-আহলিয়া, আল-আওলাদ বা সন্তান-সন্ততি আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের পবিত্র যাত-এর সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে উনারা উনাদের অর্থাৎ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানে সম্মানিত। সুতরাং উনাদের নামের সাথেও আলাইহিস সালাম ও আলাইহাস সালাম যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।
এ বিষয়ে নক্বলী তথা কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর যথেষ্ট দলীল প্রমাণ থাকা সত্বেও সাধারণ আক্বলই যথেষ্ট যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের খাদিম হলেন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালামসহ সমস্ত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম।
উনাদের যারা খাদিম হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের নামে যদি আলাইহিস সালাম যুক্ত হতে পারে তাহলে উনাদের যারা সম্মানিত পিতা-মাতা উনাদের নামে আলাইহিস সালাম যুক্ত হবে না কেন? মূলত: উনাদের নামে আলাইহিস সালাম যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সর্বাধিক হক্বদার উনারাই । আর আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের ঐকমত্য হলো, কোন নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পিতা-মাতা কেউই কাফির কিংবা মুশরিক ছিলেন না। উনারা প্রত্যেকেই ঈমানদার ছিলেন এবং আল্লাহ পাক উনার মনোনীত ও মক্ববুল বান্দা ও বান্দীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
এরপর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা পবিত্রা আহলিয়া-আযওয়াজ আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানে সম্মানিত। উনারা হলেন উম্মতের মা। উম্মতের রূহানী ও ঈমানী পিতা হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ যদি আলাইহিস সালাম-এর ব্যবহার অপরিহার্য হয় তাহলে যারা উম্মতের রূহানী ও ঈমানী মা উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহাস সালাম-এর ব্যবহার অপরিহার্য হবে না কেন?
অতঃপর হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা আল-আওলাদ, সন্তান-সন্ততি উনারা তো নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র যাত-এর অংশ, পবিত্র দেহের অংশ। কাজেই, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানের মতোই উনাদের আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মান করা ফরয-ওয়াজিব।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যারা আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহিস সালাম ব্যবহার করাটাই হচ্ছে উনাদের হক্ব।
তৃতীয়ত: হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নাম মুবারক-এর সাথে ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ একাধিক আয়াত শরীফ-এ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে-
رضى الله عنهم ورضوا عنه
অর্থাৎ- আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং উনারাও আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট। (সূরা বাইয়্যিনাহ)
চতুর্থত: হযরত তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম যাঁরা অতীত হয়ে গেছেন উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ যুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে-
ان رحمة الله قريب من المحسنين
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিনীন বা আল্লাহওয়ালা উনাদের নিকটে।
উপরে বর্ণিত দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, আম বা সাধারণ মাসয়ালা বা ফতওয়া হলো, কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে। আর উনার পিতা-মাতা এবং উনার আহলে বাইত- হযরত উম্মুল মু’মিনীন ও আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহিস সালাম কিংবা আলাইহাস সালাম যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।
অনুরূপভাবে অন্যান্য নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম এবং উনাদের পিতা-মাতা ও আল-আওলাদ উনাদের নাম মুবারক-এর সাথে ‘আলাইহিস সালাম’ কিংবা ‘আলাইহাস সালাম’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ যুক্ত করে বলতে হবে বা লিখতে হবে।
আর হযরত তাবিয়ীন, তাবি-তাবিয়ীন, ইমাম, মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম যাঁরা অতীত হয়ে গেছেন উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ বলতে হবে বা লিখতে হবে। এটা হলো আম বা সাধারণ মাসয়ালা বা ফতওয়া।
আর খাছ বা বিশেষ ফতওয়া মতে, ব্যক্তি বিশেষে আলাইহিস সালাম, রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মধ্যে ব্যতিক্রম বলা বা লিখা জায়িয রয়েছে। তবে ‘ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ এ বাক্যটি অন্যদের জন্য ব্যবহার জায়িয থাকলেও তা শুধুমাত্র নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক-এ বলা বা লেখার ক্ষেত্রে খাছ করে নেয়া উচিত এবং এটা আদবেরও অন্তর্ভুক্ত।
এছাড়া অন্যান্য বাক্যগুলি ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। ফলে, উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হওয়ার কারণে হযরত খিযির আলাইহিস সালাম, হযরত লুক্বমান আলাইহিস সালাম, হযরত ইমাম মাহদী আলাইহিস সালাম উনাদের নাম মুবারক উচ্চারণকালে আলাইহিস সালাম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। একইভাবে হযরত আছিয়া আলাইহাস সালাম, হযরত উম্মু কুলছূম আলাইহাস সালাম উনাদের নাম মুবারক-এ আলাইহাস সালাম ব্যবহার করা হয়।
আবার উঁচু স্তরের ওলীআল্লাহ হওয়ার কারণে হযরত বড় পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের নাম মুবারক-এ ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, পুরুষের জন্য একজনের ক্ষেত্রে আলাইহিস সালাম, দুইজনের ক্ষেত্রে আলাইহিমাস সালাম, তিন বা ততোধিক হলে আলাইহিমুস সালাম ব্যবহার করার নিয়ম। আর মহিলার জন্য একজনের ক্ষেত্রে আলাইহাস সালাম, দুইজনের ক্ষেত্রে আলাইহিমাস সালাম এবং তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে আলাইহিন্নাস সালাম ব্যবহার করার নিয়ম।
অনুরূপভাবে ‘রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’ ব্যবহারের নিয়ম হলো- একজন পুরুষের ক্ষেত্রে রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা-এর পর ‘আনহু’ দুইজনের ক্ষেত্রে ‘আনহুমা’ এবং তিন বা ততোধিকের জন্য ‘আনহুম’। আর একজন মহিলার ক্ষেত্রে ‘আনহা’, দুইজনের ক্ষেত্রে ‘আনহুমা’ এবং তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে ‘আনহুন্না’ ব্যবহার করা।
একইভাবে ‘রহমতুল্লাহি আলাইহি’ ব্যবহারের নিয়ম হলো: একজন পুরুষের ক্ষেত্রে ‘রহমতুল্লাহি’ শব্দের পর ‘আলাইহি’ দু’জনের ক্ষেত্রে ‘আলাইহিমা’, তিন বা ততোধিকের ক্ষেত্রে ‘আলাইহিম’। আর মহিলার ক্ষেত্রে একজন হলে ‘আলাইহা’, দু’জন হলে ‘আলাইহিমা’ এবং তিন বা অধিকজন হলে ‘আলাইহিন্না’।
পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অনুসারে সুন্নতী কোর্তার বর্ননা
Image may contain: people standingপবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অনুসারে সুন্নতী কোর্তার বর্ননা


‘ক্বমীছ’ শব্দের তাহক্বীক্বী অর্থ ও ‘ক্বমীছ’-এ সঠিক পরিচয়
قميص ক্বমীছ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হলো- কোর্তা, জামা, ক্বমীছ ইত্যাদি। আর ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় ক্বমীছ বা কোর্তা হলো, যার গেরেবান আছে যা বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী লাগানো হয় যা নিছফুস্ সাক্ব। অর্থাৎ হাটু ও পায়ের গিরার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত বিলম্বিত। গোল যা কোনা ফাঁড়া নয়, যার আস্তিন আছে, যা অতি সহজেই মানুষের সতর ও ইজ্জত আবরু ঢাকে।
যেমন, ‘আবূ দাউদ শরীফের’ বিশ্ববিখ্যাত শরাহ ‘আউনুল মা’বূদ’-এর ‘কিতাবুল লিবাসের’ ‘ক্বমীছ বা কোর্তার আলোচনা’ পর্বে উল্লেখ রয়েছে,
وجه احبية القميص اليه صلى الله عليه وسلم انه استر للاعضاء عن الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن ولابسه اكثر تواضعا.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্বমীছ বা কোর্তা সবচেয়ে পছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলোঃ কেননা, ক্বমীছ ইযার বা লুঙ্গি ও রিদা বা চাদর অপেক্ষা সতরকে পরিপূর্ণভাবে ঢাকে। অথচ ক্বমীছ অল্প খরচে হয়, শরীরের জন্য হালকা এবং এটা পরিধানে অধিক বিনয়-নম্রতা প্রকাশ পায়।” (অনুরূপ ‘জামউল ওয়াসায়িল’-এ উল্লেখ আছে।)
‘আবূ দাউদ শরীফের’ শরাহ “বযলুল মাজহুদ”-এর ‘কিতাবুল লিবাসের’ ‘ক্বমীছ বা কোর্তার’ আলোচনা পর্বে উল্লেখ রয়েছে,
وانما كان القميص احب من غير من الثياب لانه امكن فى الستر من الرداء والازار الذين يحتاجان كثيرا الى الربط والامساك وغير ذلك.
অর্থ: “ক্বমীছ বা কোর্তা অন্যান্য পোশাকের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় কারণ হলো, তা চাদর ও লুঙ্গী থেকেও সতর ঢাকতে অধিক উপযোগী। আর চাদর ও লুঙ্গি শরীর ঢাকতে, ছতর বাঁধতে ইত্যাদি কাজে খুবই উপযোগী।”
والظاهر انه سمى قميص لان الادمى ينقمص اى يدخل فيه وينغمس ليسشربه.
অর্থ: “প্রকাশ্য কথা এই যে, ক্বমীছকে এজন্য ক্বমীছ বলা হয় যেহেতু তা মানুষকে ঢেকে নেয় অর্থাৎ মানুষ তার ভিতর ঢুকে পড়ে এবং তার দ্বারা নিজ সতরকে হিফাযত করে।”
মুহাদ্দিছুশ্ শাহীর, ফক্বীহুন্ নাবীল, আল্লামা আলী বিন সুলতান মুহম্মদ ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ” কিতাবে, হযরত আল উস্তাযুল আল্লাম, ফাযীলাতুশ্ শাইখ, মাওলানা মুহম্মদ ইদ্রীস কান্দুলুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ আলা মিশকাতিল মাছাবীহ’-এর ‘লিবাস’ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
القميص اسم لما يلبس من المخيط الذى له كمان وجيب، وقيل وجه احبية القميص اليه صلى الله عليه وسلم انه استر للاعضاء من الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن او لابسه اكثر تواضعا.
অর্থ: “ক্বমীছ বা কোর্তা হলোঃ যা সিলাই করে পরিধান করা হয়, যার দু’টি আস্তিন ও একটি গেরেবান আছে। বলা হয়, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ক্বমীছ সর্বাধিক পছন্দনীয় কারণ হলো, তা লুঙ্গি ও চাদর অপেক্ষা শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আবৃতকারী। তাছাড়া তা অল্প খরচে তৈরি হয়। শরীরের পক্ষে হালকা ও আরামদায়ক এবং এর পরিধানকারীর মধ্যে অনেক বিনয় নম্রতার প্রকাশ ঘটে।”
উপরোক্ত সংজ্ঞা, তাহক্বীক্ব, অর্থ ও পরিচিতি থেকে স্পষ্ট হলো যে, ক্বমীছ বা কোর্তা বলা হয় যার একটি গেরেবান, দু’টি আস্তিন থাকবে। গেরেবান বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী থাকবে, নিছফুস্ সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত হবে ও কোনা বন্ধ থাকবে তথা কোনা ফাঁড়া হবে না এবং সূতী কাপড় দ্বারা তৈরী হবে।
আবূ দাঊদ শরীফ”-এর ‘ছলাত’ অধ্যায়ে, নাসাঈ শরীফ-এর ‘ক্বিবলা’ অধ্যায়ে, মিশকাত শরীফ-এর ‘সতর’ অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে, [২৩-২৫]
حدثنا القعنبى حدثنا عبد العزيز يعنى ابن محمد عن موسى بن ابراهيم عن سلمة بن الاكوع قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى رجل اصيد افاصلى فى القميص الواحد قال نعم وازرره ولو بشوكة.
অর্থ: “(হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমাদের কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত কা’নাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ হযরত ইবনু মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুসা বিন ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত সালামা বিন আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। তিনি হযরত সালামা বিন আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি একজন শিকারী ব্যক্তি। তাই আমি এক ক্বমীছ বা কোর্তায় নামায পড়তে পারি কিনা? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, পড়তে পারো। তবে গুটলী (দিয়ে গেরেবান) বন্ধ করে নাও, যদিও কাঁটা দ্বারা হয়।”
وفى الجامع الصغير برواية الحاكم عن ابن عباس رضى الله عنهما كان قميصه فوق الكعبين وكان كمه مع الاصابع.
অর্থ: “আল জামিউছ ছগীর’ কিতাবে মুস্তাদারিকে হাকিমের রিওয়ায়েতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বমীছ মুবারক দু’পা মুবারকের গিরার উপর পর্যন্ত ও আস্তিন হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিলো।” (অনুরূপ শরহুল মানাবী, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, মুসতাদারিকে হাকিম, মিরকাত ইত্যাদি)
ক্বমীছ বা কোর্তা অধিকাংশ সময় সাদা রংয়ের হওয়াই খাছ সুন্নত
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদা রংয়ের পোশাক পরিধান করতেন এবং উম্মতগণকে পরিধান করতে নির্দেশ মুবারক দিতেন। যেমন “বুখারী শরীফ” ২য় জিঃ ৮৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال ابوذر اتيت النبى صلى الله عليه وسلم وعليه ثوب ابيض.
অর্থ: “হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন। আমি একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলাম, তখন উনার (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার শরীর মুবারকে সাদা পোশাক ছিল।”
“মাজমাউয্ যাওয়াইদ” ৫ম জিঃ ১২৮ পৃষ্ঠা ও “আল্ লিবাসু ওয়ায যীনাহ্” ৫৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابن عباس رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله خلق الجنة بيضاء واحب شئ الى الله البياض.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত উনাকে সৃষ্টি করেছেন সাদা রংয়ের করে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে অধিক পছন্দনীয় হচ্ছে সাদা রংয়ের বস্তু।”
“মিরকাত শরীফের” ৪র্থ জিঃ ৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال ابن حجرلان اللون الابيض افضل الالوان ..... وقد لبس عليه الصلاة والسلام غير الابيض كثيرا لبيان جوازه.
অর্থ: “হযরত ইবনে হাজার আসকালীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাদা রং-ই রংসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম রং। আর সাদা রংয়ের পোশাক ছাড়াও অন্য রংয়ের পোশাক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিধান করতেন, জায়িয বা বৈধ প্রমাণ করার জন্য।
ক্বমীছ বা কোর্তা ডান দিক দিয়ে পরিধান করা সুন্নত
“তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ”-এর ‘কিতাবুল্ লিবাস’ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا لبس قميصا بدأ بميامنه.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখনই ক্বমীছ বা কোর্তা পড়তেন তখনই ডান দিক হতে শুরু করতেন।



নেতা/ইমাম, নিয়ামতওয়ালা ও কাফির – কিছু প্রশ্ন ও করণীয় !
নেতা/ইমাম, নিয়ামতওয়ালা ও কাফির – কিছু প্রশ্ন ও করণীয় !



মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ মুবারক করেন,‌ “যেদিন আমি প্রত্যেক দলকে তাদের নেতাসহ আহবান করব” (সূরা বনী ইসরাঈল-৭১)
“যে ব্যক্তি আমার দিকে রুজু হয়েছেন উনাকে অনুসরণ করো।” [পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফঃ পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫]
“হে ঈমানদারগণ তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে পাওয়ার জন্য উসীলা তলব করো তথা মধ্যস্থতা অবলম্বন করো।”
“আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।” ( পবিত্র সূরা ফাতিহা, ৬-৭)
“আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রসূলের হুকুম মান্য করবে, তাহলে যাঁদের প্রতি আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ। আর তাদের সান্নিধ্যই হল উত্তম।” [সূরা আন-নিসা শরীফের ৬৯ নম্বর আয়াত]
“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসিনীন বা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের নিকটবর্তী।” (পবিত্র সূরা আরাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
“জেনে রাখ! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার যাঁরা ওলী উনাদের কোনো ভয় নেই এবং কোনো চিন্তা বা পেরেশানীও নেই। উনারাই হচ্ছেন প্রকৃত ঈমানদার এবং প্রকৃত মুত্তাক্বী। উনাদের জন্যেই রয়েছে সুসংবাদ পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও। মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম বা কথা মুবারকসমূহের কোনো পরিবর্তন হয় না। ইহা হচ্ছে ওয়ালিয়্যুল্লাহ উনাদের জন্য বিরাট সফলতা।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬২, ৬৩, ৬৪)
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,“আমার উম্মত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে, একটি দল ব্যতীত ৭২টি দলই জাহান্নামে যাবে। তখন হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! যে একটি দল নাযাত প্রাপ্ত, সে দলটি কোন দল? হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি এবং আমার সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের মত ও পথের উপর যারা কায়েম থাকবে, (তারাই নাযাত প্রাপ্ত দল)।” (তিরমিযী শরীফ)
হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, ৭২টি দল জাহান্নামে যাবে, আর ১টি দল জান্নাতে যাবে। (আবূ দাউদ, মসনদে আহমদ,মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ)
** নেতা/ইমাম কি :
———————————–
=> পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ অনুযায়ী চলেন ?
=> সুন্নত মুবারক উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করেন ?
=> সেই মোতাবেক/অনুযায়ী আমাদের কে গাইড করেন ?
=> আল্লাহ পাক উনার রহমতের নিকটবর্তী ?
** নেতা/ইমাম কোন দলের অন্তর্ভূক্ত ? তিনি কোন আক্বিদায় বিশ্বাসী ?
** উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফ গুলো খেকে কি খুজে পাই ?
আমরা কি নেতার নিকট পরিপূর্ণভাবে ঈমান-আক্বীদা-ইখলাছ, আমল ও আখলাক সম্পর্কে জানতে পারবো, অর্জন করতে পারবো, গ্রহণ করতে পারবো, বাস্তবে প্রতিপালন করতে পারবো,পরিশুদ্ধ করতে পারবো ?
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও উলিল আমর উনাদেরকে ইতায়াত :
———————————————————————–
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ-এ ইরশাদ করেন, “যদি তোমরা মু’মিন-মুসলমান হয়ে থাকো তাহলে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে অনুসরণ করো।” (সূরা আনফাল : আয়াত শরীফ-১)
“হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমাদের কাছে যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো বা পালন করো এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর : আয়াত শরীফ ৭)
“যে ব্যক্তি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করলো প্রকৃতপক্ষে সে মহান আল্লাহ পাক উনারই অনুসরণ করলো।” (সূরা নিসা: আয়াত শরীফ-৮০)
“যদি তোমরা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করো তবেই তোমরা হিদায়েত লাভ করবে।” (সূরা আন নূর : আয়াত শরীফ-৫৪)
“হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ করো: অবশ্যই তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে।” (সূরা আন নূর : আয়াত শরীফ-৫৬)
“(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহ পাক উনাকে ভালবেসে বা মুহব্বত করে থাক, তবে আমাকে (সুন্নতকে) অনুসরণ করো। তবেই আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে মুহব্বত করবেন ও তোমাদের গুনাহখাতাসমূহ ক্ষমা করবেন। আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমাশীল এবং দয়ালু।”
(সূরা ইমরান-৩১)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- ” যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে মুহব্বত (অনুসরণ) করলো, সে ব্যক্তি আমাকেই মুহব্বত (অনুসরণ) করলো।” (মিশকাত, মেরকাত)
“তোমরা ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিকদের সাথে কখনও সদৃশ্য রেখো না। যে ব্যক্তি তাদের সাথে সম্পর্ক রাখবে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (পবিত্র মিশকাত শরীফ)
“কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, আমি যা এনেছি তার আনুগত্য বা অনুসরণ না করবে।” (শরহুস সুন্নাহ, মিশকাত)
“আল্লাহ পাক- উনার ইতায়াত কর এবং রসূল পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- উনার ইতায়াত কর এবং তোমাদের মধ্যে যারা উলিল আমর তাঁদের ইতায়াত কর।” (সূরা আন নিসা : আয়াত শরীফ ৫৯)
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণের সঙ্গী হও।” (সূরা তওবাঃ আয়াত শরীফ-১১৯)
“যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও”। (সূরা নহলঃ আয়াত শরীফ- ৪৩ ও সূরা আম্বিয়াঃ আয়াত শরীফ-৭)
আল্লাহওয়ালাদের সাহচার্য লাভের ফযীলত সম্পর্কে মাওলানা হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন- “কিছু সময় আল্লাহওয়ালা উনাদের সাহচার্যে (ছোহবতে) থাকা, একশত বৎসরের রিয়াহীন নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।” তিনি আরো বলেন- “যদি তুমি মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে বসতে চাও, তবে আল্লাহওয়ালা উনাদের সাথে বস।”
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ননা করেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক বলেন, যে ব্যাক্তি আমার ওলীর বিরোধিতা করে আমি তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করি।” [বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ]
“নিশ্চয়ই আমার ওলীগণ উনারা আমার কুদরতী জুব্বা মুবারক উনার নিচে অবস্থান করে থাকেন। আমি ব্যতীত এবং আমার ওলীগণ ব্যতীত উনাদেরকে কেউই চিনে না।” (রাহাতুল মুহিব্বীন)
“মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদেরকে তোমরা মুহব্বত করো; কেননা উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে কবুলকৃত, আর উনাদের বিদ্বেষ বা শত্রুতা পোষণ করো না; কেননা উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত।” (কানযুল উম্মাল শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “আপনি নিজেকে উনাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যাঁরা সকাল-সন্ধ্যায় উনাদের রবকে ডাকে উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক, উনার সন্তুষ্টি হাছিলের জন্য ক্বলবী যিকির করেন, উনার অনুসরণ ও ছোহ্বত (সাক্ষাত) এখতিয়ার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (সূরা কাহাফঃ আয়াত শরীফ- ২৮)
“যার ক্বলবে আমার যিকির জারি নেই সে নফসের অনুসরণ করে এবং তার আমলগুলো হয় শরীয়তের খিলাফ”।
“সাবধান! মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির দ্বারা দিল ইতমিনান হয়”. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবের উপর বসে, যখন আল্লাহ পাক উনার যিকির করে তখন পালিয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল হয় তখন শয়তান ওসওয়াসা দেয়”।
সুলতানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত্ ত্বায়িফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেকেই বলেন যে, “যার কোন পীর বা মুর্শিদ নেই তার মুর্শিদ বা পথ প্রদর্শক হলো শয়তান”। (ক্বওলুল জামীল, নুরুন আলা নূর, তাছাউফ তত্ত্ব)
“তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছ, তাকে দেখে নাও”। (মুসলিম শরীফ)
=> ইলম অর্জন করা ফরজ।
হযরত হাসান বছরী রহমাতুল্লাহি আলাইহী তিনি বর্ননা করেন, “ইলম দু’প্রকার।
-একটি হচ্ছে ক্বলবী ইলম অর্থাৎ ইলমে তাছাউফ (যা দ্বারা আত্নিক শুদ্ধি অর্জন করা যায়).
-অপরটি হচ্ছে যবানী ইলম বা ইলমে ফিক্বাহ (যা দালীলীক জ্ঞান)।
[দারিমী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লুময়াত শরীফ, লুময়াত শরীফ]
মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার রঈছুল মুহাদ্দিছীন হযরত মুল্লা আলী ক্বারী রহমাতুল্লাহি আলাইহী তিনি তিনি “মিরকাত শরীফ” এ উল্লেখ করেন,”মালিকী মাজহাবের ইমাম, ইমামুল আইম্মাহ হযরত ইমাম মালিক রহমাতুল্লাহি আলাইহী বলেন, যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো অথচ ইলমে ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইলমে ইলমে তাছাউফ শিক্ষা করলো অথচ ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো না, সে কাফির। আর যে উভয়টাই অর্জন করলো, সে মুহাক্কিক।”
——————————-
** নেতা/ইমাম কি আল্লাহওয়ালা ও তিনি কি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অনুসরণ ও অনুকরন করেন সদা-সর্বদা ? তিনি কি ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিকদের সাথে সদৃশ্য রাখেন ?
** নেতা/ইমাম কি ইলমে তাছাউফ ও ইলমে ফিক্বাহ সম্বন্ধে ভালো জানেন ?
——————————————–
কাফির :
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একাধিক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, কাফির-মুশরিকরা হচ্ছে মুসলমান উনাদের শত্রু।
যেমন, ‘পবিত্র সূরা কাফিরূন শরীফ’ উনার শেষ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তাবৎ কাফির-মুশরিকগোষ্ঠীকে বলে দিন যে, তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য আর আমাদের দ্বীন আমাদের জন্য।”
‘পবিত্র সূরা মুমতাহিনা শরীফ’ উনার প্রথম আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু এবং তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না।”
‘পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ’ উনার ৮২ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “তোমরা তোমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে পাবে ইহুদীদেরকে অতঃপর মুশরিকদেরকে।”
“মুমিনরা মু’মিন ব্যতীত কাফিরদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না। যে এরূপ করবে তার সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার কোনো সম্পর্ক নেই।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রাণীকুলের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট জীব হচ্ছে তারাই, যারা কাফির-মুশরিক। অতএব, তারা এমন যে, যারা ঈমানদার নয়। (পবিত্র সূরা আনফাল : পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৫)
“হে মু’মিনগণ! আপনারা আপনাদের আপনজন ব্যতীত কাউকেও (অন্য ধর্মাবলম্বী) অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করবেন না। (কেননা) এই কাফির-মুশরিকরা আপনাদের অনিষ্ট করতে (মোটেও) ত্রুটি করে না। তারা (মনে-প্রাণে) এটাই কামনা করে যে, আপনারা (পার্থিব ও ধর্মীয় ব্যাপারে) বিপন্ন হন। (আপনাদের প্রতি শত্রুতায় তাদের মন এতই ভরপুর যে) শত্রুতা প্রসূত বিদ্বেষ (মাঝে মাঝে অনিচ্ছাকৃত ভাবে) তাদের মুখেই প্রকাশ পায়। আর তাদের হৃদয়ে যা গোপন রাখে তা আরো গুরুতর। আমি আপনাদের জন্য নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করছি, যদি আপনারা অনুধাবন করে থাকেন। (তবে এসব নিদর্শন দ্বারা বুঝে নিন কাফিররা তোমাদের কত বড় শত্রু)।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : আয়াত শরীফ ১১৮)
“নিশ্চয় মু’মিনগণ উনারা সকলেই ভাই ভাই।” (পবিত্র সূরা হুজুরাত : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-“এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই।” (বুখারী, মুসলিম, আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি “পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ” উনার ১০৯ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “ইহুদী-নাছারা তথা আহলে কিতাবদের মধ্যে অনেকেই প্রতিহিংসাবশত চায় যে, মুসলমান হওয়ার পর তোমাদেরকে কোন রকমে কাফির বানিয়ে দিতে।”
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আর যা নিকৃষ্ট বা হারাম তা থেকে শুধু নিকৃষ্ট বা হারামই বের হয়ে থাকে।”
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আখিরী যামানায় অনেক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকো এবং তাদেরকে তোমাদের থেকে দূরে রাখো। তাহলে তারা তোমাদেরকে গুমরাহ করতে পারবে না এবং ফিতনায় ফেলতে পারবে না।’
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, “মুসলমান উনাদের মধ্যে যারা কাফিরদের সাথে মুহব্বত রাখবে তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।” নাউযুবিল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন,
“যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তাদের হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” “যে ব্যক্তি (মুসলমান) যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।” (মিশকাত শরীফ, মসনদে আহমদ, আবূ দাউদ শরীফ)
করণীয় :
———
=> তাই, আমরা কি পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ গুলো সেল্ফ এ সাজিয়ে রেখে দিব ? সুন্নত মুবারক উনার পরিপূর্ণ অনুসরণ করব না ?
=> আমরা কি এমন একজন নেতা/ইমাম তালাশ করব না যিনি নিজে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস শরীফ উনাদের আলোকে চলেন, অনুসরন, অনুকরন করেন এবং সকল মুসলিম কেও সঠিক ভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস উনাদের আলোকে পরিচালিত করে থাকেন এবং সঠিকভাবে আল্লাহওয়ালা হওয়ার পথের সন্ধান দান করেন।
“একজনের পাপের বোঝা অপরজন বহন করবে না।” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৬৪)
=> তাই, সময় ফুরাবার আগে কি একটুও সুযোগ নিব না ! না কি…পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিক, রাজনৈতিক, উন্মুক্তমনা, রীতিনিতি ও যুগের চাহিদা মত যোগান দিতে থাকব, গা-ভাসিয়ে দিতে থাকব ?
————
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট একমাত্র মনোনীত সম্মানিত দ্বীন হচ্ছেন পবিত্র ইসলাম।” আর ‘ইসলাম’ অর্থ শান্তি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “তোমাদের জন্য আমার সম্মানিত সুন্নত মুবারক ও হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুন্নত মুবারক পালন করা আবশ্যক।”
যারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রকৃত অনুসারী হবেন, উনারা দুনিয়া ও আখিরাতে প্রকৃত শান্তিতে থাকবেন- এটাই চিরন্তন সত্য কথা। যেটা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের ও হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পবিত্র জীবনী মুবারকে পরিপূর্ণরূপে লক্ষ্য করা যায়।
আমাদের দেশে শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ লোক মুসলমান। তারপরেও কেন এই দেশবাসী শান্তিতে নেই? কেন বর্তমানে সারা দেশে চরম অশান্তি বিরাজ করছে? তার একটাই কারণ আমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার থেকে দূরে সরে গিয়েছি।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন যিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সত্য দ্বীন ও পবিত্র হিদায়েতসহ পাঠিয়েছেন অতীতের পবিত্র ওহী মুবারক উনার দ্বারা নাযিলকৃত সমস্ত দ্বীন এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানবরচিত সমস্ত তন্ত্র-মন্ত্র ও মতবাদকে বাতিল ঘোষণা করে দিয়ে। আর সাক্ষী হিসেবে মহান আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট।” সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যদি কেউ অনুসরণ না করে তাহলে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় সে বিদয়াতী-বেশরা, বিধর্মীদের অনুসরণ করতে বাধ্য। ফলে সে কুফরী ও গুমরাহীতে মশগুল হবে এবং পরিণামে জাহান্নামের কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে। যেমন, ‘সূরা আহযাব’-এর ৬৬নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন জাহান্নামের আগুনে তার চেহারা ঝলসিয়ে দেয়া হবে সেদিন তারা বলবে, হায়! আমরা যদি মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আনুগত্য করতাম।”
মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিল করার বা আল্লাহওয়ালা হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে- পরিপূর্ণভাবে সুন্নতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।
তাই, সুলত্বানুল আরিফীন হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, সাইয়্যিদুত ত্বাইফা হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহিসহ আরো অনেক কামিল ওলীগণ উনারা বলেছেন, কাউকে পানি দিয়ে হাঁটতে, বাতাস দিয়ে উড়তে ও আগুনের মধ্যে বসে থাকতে দেখেই তাকে ওলীআল্লাহ মনে করবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে সুন্নতের পূর্ণ অনুসরণ করতে না দেখবে।”
কেননা তাছাউফের কিতাবসমূহে উল্লেখ আছে, যিনি হক্কানী ও কামিল মুর্শিদ বা ওলী আল্লাহ হবেন; তিনি ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ তরক করা বা ছেড়ে দেয়া তো দূরের কথা বরং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন সুন্নতে যায়েদাহ বা মুস্তাহাবও তরক করবেন না। অনুরূপ হারাম ও নাজায়িয কাজ করা তো দূরের কথা বরং তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মাকরূহ কাজও করবেন না। সুবহনাল্লাহ!