হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ৯২৫-১০৬৯) (ঢ)

সাফওয়ান অভিযান বা প্রথম বদর অভিযান:
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, গাযওয়ায়ে আশীরা থেকে প্রত্যাবর্তন করে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে মাত্র কয়েকদিন অবস্থান করেন, যা ১০ দিনও হয়নি।
এসময় কুরয ইবনে জাবির আল ফিহরী সে পবিত্র মদীনা শরীফ-এ হামলা চালায় (পরবর্তীতে তিনি মুসলমান হন)। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তার তার তালাশে বের হন এবং বদর-এর উপকণ্ঠে অবস্থিত সাফওয়ান নামক স্থানে তাশরীফ মুবারক রাখেন। আর এটাই হলো গাযওয়ায়ে বদরুল উলা বা প্রথম বদর জিহাহ।
কিন্তুনূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেখানে পৌঁছায় পূর্বে কুরয সে স্থান থেকে দ্রƒত পালিয়ে যায়। তাই তার ধরা পাওয়া যায়নি।
ঐতিহাসিকগণ হযরত ওয়াকীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাফিলার পতাকাবাহী ছিলেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ওয়াকীদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই অভিযানে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দেখা শুনার জন্য রাখেন হযরত যায়িদ ইবনে হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে।
হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে আগমণ করলে জুহায়না উনার নিকট আগমণ করে বলেন। আপনি তো আমাদের এলাকায় তাশরীফ মুবারক নিয়ে অবস্থান মুবারক নিচ্ছেন তাই আমাদেরকে এমনে প্রতিশ্রুতি দেন যে, আমরা এবং আমাদের সম্প্রদায়ের লোকেরা আপনার ছোহবত মুবারকে নির্ভয়ে যাতায়াত করতে পারবো। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সঙ্গে এ মর্মে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেন তাই তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন। রাবী বলেন, পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে প্রেরণ করেন। সংখ্যায় ছিলাম আমরা একশ’রও কম। জুহায়নার পড়শী গোত্র বনূ কিনানার সাথে জিহাদ করার জন্য নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদেরকে নির্দেশ মুবারক করলেন। আমরা তাদের উপর আক্রমণ চালালাম। সংখ্যায় তারা ছিলো অনেক বেশি। তাই আমরা জুহায়ানা গোত্রের নিকট আশ্রয় চাইলে তারা আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে।
তারা বলে, আপনারা কেন এই পবিত্র হারাম শরীফ-এ জিহাদ করছেন? তখন আমরা একে অপরকে বললাম এখন কি করা যায়? এ সময় আমাদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন, আমরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হাযির হয়ে বিষয়টি জানাই!
আবার অনেকে বললেন, না বরং আমরা এখানেই অবস্থান করি। আমার সাথের অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, না বরং আমরা অগ্রসর হয়ে কুরাইশ কাফিরদের উপর আক্রমণ চালাই। তখন গনীমতের বিধান ছিলো যে, ব্যক্তি জিহাদ করে যা অর্জন করতে পারবেন তিনি তার মালিক হবেন। একথা বলে আমরা চল কাফিলা অভিমুখে, আর আমাদের অন্যান্য সঙ্গীরা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গিয়ে উক্ত বিষয়টি বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গোসসা করেন এবং পুত-পবিত্র চেহারা মুবারক রক্তবর্ণ নূর মুবারক ধারণ করেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনারা আমার নিকট থেকে গেলেন দলবদ্ধভাবে আর ফিরে এলেন বিচ্ছিন্নভাবে। আপনারা জেনে রাখুন! এই বিচ্ছন্নতা আপনাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করেছে। এখন আমি আপনার মধ্যে থেকে এমন একজন সেনাপতি মনোনীতি করবো। যিনি আপনাদের মধ্যকার একজন বিশেষ ব্যক্তি যিনি ক্ষুধা-পিপাসার সময় আপনাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ধৈর্যশীল ব্যক্তি।
অতপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ আল আসাদী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সেনাপতি মনোনীত করেন। তিনি ছিলেন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রথম সেনাপতি। (আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া, মাদারিজুন নুবুওওয়াত, সীরাতুল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)


সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সুমহান নিকাহ বা শাদী মুবারক:
হযরত মাওলানা রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মসনবী শরীফ-এর শুরুতে  লিখেছেন-
 از خدا جویم توفیق ادب+ بے ادب محروم گشت از لطف رب
অর্থঃ ‘যিনি খালিক্ব, যিনি মালিক, যিনি রব মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে আমি আদব প্রার্থনা করছি, আদব চাচ্ছি। যে বেয়াদব সে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে  বঞ্চিত।’
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن حضرت زيد ابن ارقم رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انى تارك فيكم ما ان تـمسكتم به لن تضلوا بعدى احدهما اعظم من الاخر كتاب الله وعترتى اهل بيتى
অর্থঃ “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের জন্য রেখে যাচ্ছি কিছু বিষয়। তোমরা যদি সে বিষয়গুলিকে আকড়িয়ে থাকতে পারো, দৃঢ়তার সহিত ধরে রাখতে পারো, কস্মিনকালেও আমার পরে তোমরা গোমরাহ হবে না। একটা থেকে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ও মহান। প্রথম হচ্ছে কিতাবুল্লাহ তথা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফ। আর দ্বিতীয় হচ্ছে, আমার আহলে বাইত শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা আহাল-ইয়াল আলাইহিমুস সালাম উনারাই আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম। বিশেষ করে উনাদের মধ্যে যিনি মূল তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। সুবহানআল্লাহ! নিম্নে উনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও উনার নিকাহ মুবারক সম্পর্কে আলোচনা তুলে ধরা হলো।

  উনার পবিত্র নাম মুবারক হচ্ছে হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম। উনার লক্বব মুবারক হযরত যাহরা আলাইাহস সালাম, আরো অসংখ্য লক্বব মুবারক উনার রয়েছে। উনার সম্মানিত পিতা হচ্ছেন যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। উনার সম্মানিত মাতা সাইয়্যিদাতুনা হযরত খাদিজাতুল কুবরা আলাইহাস সালাম। সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন ২০ শে জুমাদাল উখরা পবিত্র জুমুয়ার দিন ছুবহে ছাদিক্বের সময় পবিত্র মক্কা শরীফে। তিনি পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন ১১ হিজরী ৩রা রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি (সোমবার শরীফ) বাদ আছর । তিনি যমীনে অবস্থান করেন ছাব্বিশ বছর পার হয়ে সাতাইশ পড়েছিলো। তবে সাতাইশ বৎসর পুরা হয়নি। উনার সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
عَنِ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ  فَاطِمَةُ بَضْعَةٌ مِنِّي
অর্থ: “হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন- সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি আমার গোশত মুবারক উনার একখানা টুকরা মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।”(বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ ইত্যাদি)
দ্বিতীয় হিজরী পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নিকাহ বা শাদি মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। তখন উনার বসয় মুবারক ছিলো ১৮ বৎসর। আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিলো ২৪ বৎসর।
রওজাতুল আহবাব’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, আপনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহাল বা পরিবারভুক্ত এবং বিশিষ্ট ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে গন্য। আপনি সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক করার প্রস্তাব পেশ করুন। খলীফাতুল আউওয়াল মিন আহলে বাইত শরীফ হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন- আমি প্রস্তাব পেশ করতে লজ্জা বোধ করি। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরো বললেন, আপনিতো নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নৈকট্যভাজন এবং উনার পিতৃব্যপুত্র বা চাচাতো ভাই।
হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার অধঃস্তন পুরুষ। সুতরাং তিনি প্রস্তাব গ্রহণ করলেন এবং একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত শরীফ -এ হাজির হয়ে সালাম পেশ করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, হে আবু ত্বালিব তনয় (পুত্র)! কিছু বলবেন কি? তিনি বললেন, আমি আমার নিজের জন্য সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে গ্রহণ বা নিকাহ মুবারক করার প্রস্তাব পেশ করার জন্যই খিদমতে হাযির হয়েছি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ‘মারহাবান ওয়া আহলান’ অর্থাৎ তিনি এই প্রস্তাব মুবারকে স্বাগতম জানালেন। তিনি আর কিছুই বললেন না, অহী মুবারক উনার অপেক্ষা করতে লাগলেন।
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, “সে সময় আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খিদমত শরীফ-এ উপস্থিত ছিলাম। আমি দেখলাম উনার পুত-পবিত্র চেহারা মুবারকে প্রকাশ পেতে লাগলো ওহী নাযিলের অবস্থা। অতপর যখন অহী মুবারক নাযিল হলো তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্মানিত আরশের মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি আমার খিদমতে এসেছিলেন। তিনি আমাকে বলে গেলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন যে, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার নিকাহ মুবারক দিয়ে দিন।
হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি যান হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম, হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে ডেকে আনুন। তারপর যখন উনারা সকলেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে এসে হাযির হলেন তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক মর্মস্পর্শী খুতবা মুবারক দিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার ছানা-ছিফত ও প্রশংসা, পবিত্রতা ও সুমহান মহিমা প্রকাশ করলেন। তারপর সুমহান নিকাহ মুবারক উনার প্রতি সকলকে উৎসাহিত(অনেক নছীহত মুবারক) করলেন। তারপর ৫০০দিরহাম তথা ১৩১:২৫ তোলা রৌপ্য মহর ধার্য্য করে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিকাহ মুবারক দিয়ে দিলেন এবং বললেন হে কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম আপনি কবুল করুন, রাজী হউন। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি কবুল করলাম এবং রাজী হলাম।

 অতপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একপাত্র ভরতি খেজুর নিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মধ্যে ছিটিয়ে দিলেন। (এজন্য নিকাহ বা বিবাহ মুবারক উনার অনুষ্ঠানে খুড়মা খেজুর ছিটানো ইহা খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। এই লুপ্তপ্রায় সুন্নত মুবারক উনাকে পুনজীবিত করলেন মুজাদ্দিদে আ’যম, মুহইস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াত, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা  রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম। এছাড়াও তিনি এরকম অসংখ্য অগণিত সুন্নত মুবারক উনাদেরকে জিন্দা করছেন যা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। সুবহানাল্লাহ!)
মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া’ গ্রন্থে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাদের মুবারক শাদী উনার সময় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে, খুৎবা মুবারক দিয়েছেন তা সংকলিত হয়েছে এভাবে,
 الحمد لله المحمود بنعمته المعبود بقدرته
 المطاع بسلطانه المرهوب من عذابه وسطوته النافذ أمره في سمائه وأرضه الذي خلق الخلق بقدرته وميزهم بأحكامه وأعزهم بدينه وأكرمهم بنبيه محمد إن الله تبارك اسمه وتعالت عظمته جعل المصاهرة سببا لاحقا وأمرا مفترضا أوشج به الأرحام أي ألف بينها وجعلها مختلطة مشتبكة وألزمها الأنام فقال عز من قائل وهو الذي خلق من الماء بشرا فجعله نسبا وصهرا وكان ربك قديرا الفرقان  فأمر الله تعالى يجري إلى قضائه وقضاؤه يجري إلى قدره ولكل قضاء قدر ولكل قدر أجل ولكل أجل كتاب يمحو الله ما يشاء ويثبت وعنده أم الكتاب الرعد  ثم إن الله تعالى أمرني أن أزوج فاطمة من علي بن أبي طالب فاشهدوا أني قد زوجته على أربعمائة مثقال فضة إن رضي بذلك علي ثم دع
হযরত আল্লামা জুরযী রহমতুল্লাহি আলাইহি ‘হিসনে হাসীন’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাদের মাঝে শাদী মুবারক পড়িয়ে দেয়ার পর নিজ হুজরা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করলেন। সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে পানি আনতে বললেন। সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি কাঠের পেয়ালায় পানি নিয়ে এলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই পানিতে মিশিয়ে দিলেন উনার পুত-পবিত্র মুখের লালা মুবারক। সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন কাছে আসুন। তিনি কাছে এলে ওই পানি মুবারক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার ছদর বা বুক মুবারক ও মাথা মুবারকে ছিটিয়ে দিয়ে বললেন, হে বারী ইলাহী! আমি সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে এবং উনার আল আওলাদ সন্তান-সন্ততি উনাদেরকে বিতারিত শয়তানের আক্রমণ থেকে আপনার আশ্রয়ে সোপর্দ করলাম। তারপর তিনি হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, আপনি আমার দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়ান। তারপর তিনি উনার পিছন মুবারক দিয়ে দাঁড়ালেন। অতপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পুনরায় সেই পানি মুবারক ছিটিয়ে দিলেন উনার দু’ কাঁধ মুবারক উনার মধ্যে। এবং বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আমি উনাকে এবং উনার আল আওলাদ সন্তান-সন্ততি উনাদেরকে বিতাড়িত শয়তানের আক্রমণ থেকে আপনার আশ্রয়ে সোপর্দ করলাম। অতপর আবার পানি আনতে বললেন। হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি বুঝলাম যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি করবেন। আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং পানি নিয়ে এলাম। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই পানিতে উনার পবিত্র মুখ মুবারক উনার লালা মুবারক দিলেন। তারপর বললেন সামনে আসুন। আমি উনার সামনে দাঁড়ালাম। তিনি আমার মাথায় ও মুখে পানি ছিটিয়ে দিলেন।

দোয়া করলেন
اللهم انى اعوذبك  و ذريته من الشيطان الرجيم
অতপর বললেন-
بسم الله و على بركته
কোনো কোনো বর্ণনায় আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শাদী মুবারক উনার দিন পবিত্র ইশার নামাযের পর সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার হুজরা শরীফে তাশরীফ নিলেন। তারপর পানির পাত্র হাতে নিয়ে উহাতে উনার পবিত্র মুখের লালা মুবারক মিশাইয়া পবিত্র সূরা নাস ও পবিত্র সূরা ফালাক্ব শরীফ এবং অন্যান্য দোয়া পাঠ করলেন। তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজাহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন এই পানি পান করুন। অতপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওযূ মুবারক করলেন এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে বললেন, এই পানি পান করুন। তারপর আবার তিনি ওযূ করলেন এবং বললেন, হে বারে তা’লা মহান আল্লাহ পাক! উনারা দুজনই আমার আর আমি উনাদের। হে বারী ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! আমি যেমন পুত-পবিত্র থেকে পুত-পবিত্রতম অনুরূপভাবে উনাদেরকে পুত:পবিত্র থেকে পুত:পবিত্রতম হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করুন।  তারপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের দু’জনকে বললেন, আপনারা আপনাদের শয়নকক্ষে চলে যান। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন হে বারে ইলাহী মহান আল্লাহ পাক! উনাদের উভয়ের মধ্যে মুহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিন। উনাদের মধ্যে এবং উনাদের আওলাদ (সন্তানদের) মধ্যে খায়ের বরকত দান করুন। উনাদের সকল প্রকার অভাব অনটন ও অস্থিরতা দূর করে দিন। উনাদের সকলকে হাক্বীক্বী কামিয়াবী দান করুন। উনাদের উপর রহমত বরকত দান করুন। উনাদের থেকে পুত-পবিত্র আল আওলাদ, সন্তান-সন্ততি পয়দা করুন। সুবহানআল্লাহ!
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গে নিকাহ মুবারক দিলেন তখন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি কেঁদে ফেললেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি কি ইহাতে সন্তুষ্ট নন যে (অর্থাৎ অবশ্যই তিনি সন্তুষ্ট) মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা পৃথিবীর মধ্যে দু’জনকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছেন। তাদের মধ্যে একজন আপনার পিতা, আর অপরজন আপনার ছাহীব বা স্বামী খলীফাতুল আউওয়াল মিন আহলি বাইত হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি।
হযরত হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, আপনি কি এতে সন্তুষ্ট নন যে,(অর্থাৎ অবশ্যই তিনি সন্তুষ্ট) আমি আপনাকে এমন এক ব্যক্তি উনার সঙ্গে শাদী মুবারক দিয়েছি যিনি বালকদের মধ্যে সর্ব প্রথম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারী উনাদের অন্যতম। যিনি ইলম-আমলে অদ্বিতীয়। আর আপনি আমার উম্মতের মধ্যে নারীদের মধ্যে সাইয়্যিদা বা সর্বশ্রেষ্ঠা। যেমন হযরত মারইয়াম আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন উনার বংশে সাইয়্যিদা বা সর্বশ্রেষ্ঠা।
আরো বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন আরো ইরশাদ মুবারক করেন- আমি এমন একজন ব্যক্তি উনার সাথে আপনাকে শাদী মুবারক দিয়েছি, যিনি পৃথিবীতে সর্বাধিক ছলিহীন বা সৎকর্মশীল এবং পরকালেও সর্বাধিক নেককার বা সৎকর্ম পরায়নকারী উনাদের অন্তর্ভুক্ত।

হযরত হাকীম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত রয়েছে- নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে আপনার নিকট কি সম্পদ রয়েছে? হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমার নিকট একটি ঘোড়া এবং একটি বর্ম ব্যতীত কিছু নেই। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ঘোড়া আপনার প্রয়োজন। সুতরাং বর্মটি চারশ’ আশি দিরহামে বিক্রি করলেন এবং সেই অর্থ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারকে দিলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা থেকে কয়েকটি মুদ্রা হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দিলেন আতর ও খুশবু কিনে আনতে বললেন। অবশিষ্ট মুদ্রাগুলো হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দিয়ে উনাকে নিয়ে আসতে বললেন (নিকাহ) বিবাহের সাজসজ্জা, সংসারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী। হযরত উম্মে সুলাইম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি কিনে আনলেন দু’টি চাদর, দু’টি কাতানের রেযাই (নেহালী)। চার বিঘত কাপড়, পরিধেয় বস্ত্র, রৌপ্যের দু’টি বাযবন্দ, গদী, তোশক, বালিশ, একটি পেয়ালা, একটি চৌকি, একটি মশক, আর কিছু পানীয় দ্রব্য ক্রয় করে এনে গোছাইয়া রাখলেন প্রত্যেকটি স্তরে স্তরে সাজিয়ে।
বর্ণিত রয়েছে; নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘর-সংসারের সকল কাজ-কর্মের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছিলেন এভাবে যে, রুটি তৈরি, ঘর ঝাড় দেয়া, আটা পিষা ইত্যাদি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি করবেন আর বাহিরের কাজ যেমন উটের খাবার পানির ব্যবস্থা জিনিসপত্র কেনা-কাটা ইত্যাদি কাজ করবেন হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।
অথবা উক্ত কাজগুলো করবেন উনার মাতা হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।
বর্ণিত রয়েছে, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি স্বয়ং আগুনের কাছে বসে রুটি সেঁকতেন, ঘর মুবারক ঝাড়– দিতেন এবং যাঁতা মুবারক চালাতেন। সুবহানাল্লাহ!
অথচ তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ তথা জান্নাতী সমস্ত রমনী উনাদের সাইয়্যিদাহ! সুবহানাল্লাহ! অন্যদিকে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নিজ হাত মুবারকে সংসারের সমস্ত কাজ করতেন অথচ উনার ফযীলত বেমেছাল। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-
عن  حضرت  جميع بن عمير التيمي رضى الله تعالى عنه  قال  دخلت مع عمتي على ام المؤمنين حضرت عائشة  الصديقة عليها السلام فسئلت أي الناس كان أحب إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم  قالت سيدة نساء اهل الجنة حضرت  فاطمة عليها السلام  فقيل من الرجال  قالت زوجها
অর্থ: “হযরত জুমাইর ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি আমার ফুফু উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র খিদমত মুবারকে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সবচাইতে প্রিয় ব্যক্তিত্ব কে ছিলেন? উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে সবচাইতে প্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। পুরুষদের মধ্যে কে ছিলেন? তিনি বলেন, পুরুষদের মধ্যে ছিলেন উনার ছহিব বা স্বামী হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহি সালাম! ”সুবহানাল্লাহ!
অর্থাৎ সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম ও হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনারা উভয়ে ছিলেন অত্যন্ত মর্যাদাশীল। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ যে, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনাকে শাদী মুবারক করার সময় অলীমার অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি উনার যুদ্ধ বর্ম এক ইহুদীর কাছে বিক্রি করে অলীমার ব্যবস্থা করেছিলেন। হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সেই বর্ম মুবারক ইহুদীর কাছ থেকে পূর্ণ অর্থ দিয়ে ক্রয় করে নেন এবং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে ফিরিয়ে দেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার অলীমা অনুষ্ঠানে যব, খেজুর এবং মিষ্টান্য খাবারের ব্যবস্থা ছিলো। সুবহানআল্লাহ! (মাদারেজুন নুবুওয়াত)