মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই সর্বপ্রথম মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করেন

 

মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং নিজেই সর্বপ্রথম মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উদযাপন করেন


সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্  নাবিয়্যীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম উনার মুহব্বত, ছানা-ছিফত, প্রশংসা তথা  মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামদ  সর্বপ্রথম পালন করেছেন মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন  তিনি। 
এ সম্পর্কে হাদীছে কুদসী শরীফ-এ উল্লেখ  করা হয়েছে-  ﻛﻨﺖ ﻛﻨﺰﺍ ﻣﺨﻔﻴﺎ ﻓﺎﺣﺒﺒﺖ ﺍﻥ ﺍﻋﺮﻑ ﻓﺨﻠﻘﺖ ﺍﻟﺨﻠﻖ  ﻻﻋﺮﻑ .  

  • অর্থ: আমি গুপ্ত ছিলাম। আমার মুহব্বত হলো যে, আমি  জাহির হই। তখন আমি আমার (রুবুবিয়্যত) জাহির করার  জন্যই সৃষ্টি করলাম মাখলূকাত (আমার হাবীব হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে) 
  • (আল  মাকাসিদুল হাসানা/ ৮৩৮, 
  • কাশফূল খিফা/২০১৩,  
  • আসনাল মুত্বালিব/১১১০, 
  • তমীযুত তীব/১০৪৫, 
  • আসরারুল  মারফুআ/৩৩৫, 
  • তানযিয়াতুশ শরীয়াহ ১/১৪৮, 
  • আদ্দুরারুল  মুন্তাছিরা/৩৩০, 
  • আত্ তায্কিরা ফি আহাদীসিল  মুশতাহিরা/১৩৬, 
  • সিররুল আসরার, কানযুল উম্মাল)  
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি  ইরশাদ করেন,  ﻟﻮﻻﻙ ﻟﻤﺎ ﺍﻇﻬﺮﺕ ﺍﻟﺮﺑﻮﺑﻴﺔ .  

অর্থ: হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম আপনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকলে আমি  আমার রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করতাম না (কানযুল উম্মাল) 

 ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﺍﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ  ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﺗﺎﻧﻰ ﺟﺒﺮﻳﻞ ﻋﻠﻴﻪ  ﺍﻟﺴﻼﻡ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻟﻮﻻﻙ  ﻣﺎﺧﻠﻘﺖ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﻟﻮﻻﻙ ﻣﺎﺧﻠﻘﺖ ﺍﻟﻨﺎﺭ –  
  • অর্থঃ- হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা   আনহুমা হতে বর্ণিত, নিশ্চয় নূরে মুজাসসাম,  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, হযরত জিবরীল আমীন  আলাইহিস সালাম আমার নিকট আগমণ করে বলেন- ইয়া  রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি  আপনি না হতেন তবে জান্নাত জাহান্নাম কিছুই  তৈরী করা হতনা। 
(দায়লামী, কানযুল উম্মাল/৩২০২২)  


অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত মাখলূকাত  সৃষ্টি করেছেন তথা মহান আল্লাহ পাক উনার  রুবুবিয়্যতই প্রকাশ করেছেন মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উদ্দেশ্যে।  মহান আল্লাহ পাক তিনি আলমে আরওয়াহতেও সমস্ত  নবী রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ উনাদের সাথে  মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  করেছেন ও উনাদের থেকে মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম করার ওয়াদা নিয়েছেন।  
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি কালামুল্লাহ  শরীফ-এ ইরশাদ,
  ﻭﺍﺫ ﺍﺧﺬ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻴﺜﺎﻕ ﺍﻟﻨﺒﻴﻦ ﻟﻤﺎ ﺍﺗﻴﺘﻜﻢ ﻣﻦ ﻛﺘﺎﺏ  ﻭﺣﻜﻤﺔ ﺛﻢ ﺟﺎﺋﻜﻢ ﺭﺳﻮﻝ ﻣﺼﺪﻕ ﻟﻤﺎ ﻣﻌﻜﻢ ﻟﺘﺆﻣﻨﻦ  ﺑﻪ ﻭﻟﺘﻨﺼﺮﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﺃﻗﺮﺭﺗﻢ ﻭﺍﺧﺬﺗﻢ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻜﻢ ﺍﺻﺮﻯ  ﻗﺎﻟﻮﺍ ﺍﻗﺮﺭﻧﺎ ﻗﺎﻝ ﻓﺎﺷﻬﺪﻭﺍ ﻭﺍﻧﺎ ﻣﻌﻜﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﺸﺎﻫﺪﻳﻦ.  ﻓﻤﻦ ﺗﻮﻟﻰ ﺑﻌﺪ ﺫﻟﻚ ﻓﺎﻭﻟﺌﻚ ﻫﻢ ﺍﻟﻔﺎﺳﻘﻮﻥ .  
  • অর্থ: (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম   আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা) যখন মহান আল্লাহ  পাক তিনি আলমে আরওয়াহতে সমস্ত নবী-রসূল  আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা  নিয়েছিলেন যে আপনাদেরকে আমি কিতাব ও হিকমত  দান করবো। অতঃপর আপনাদেরকে সত্য প্রতিপাদনের  জন্য (নবুওওয়াত ও রিসালতের হাক্বীক্বী ফায়েজ  দেয়ার জন্য) আখিরী নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করবো। আপনারা উনাকে নবী  ও রসূল হিসেবে মেনে নিবেন এবং সর্ব বিষয়ে উনার  খিদমত করবেন (উনার মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম করবেন)। আপনারা কি এই  ওয়াদার কথা মেনে নিলেন? উত্তরে সকলে বললেন,  হ্যাঁ আমরা এই ওয়াদা স্বীকার করলাম (অর্থাৎ আমরা  যমিনে গিয়ে আখিরী নবী হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মীলাদুন্ নবী  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করব)। তখন মহান  আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা সাক্ষী থাকুন,  আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী হয়ে গেলাম। তবে  জেনে রাখুন যারা এই ওয়াদাকৃত বিষয় থেকে মুখ  ফিরিয়ে নিবে (যারা মীলাদুন্ নবী ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম করবে না বা এর বিরোধীতা  করবে) তারা চরম পর্যায়ের ফাসিক (কাফির) হয়ে  যাবে। (সূরা আলে ইমরান ৮১-৮২) 
 এ আয়াত শরীফ-এ স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক রব্বুল  আলামীন তিনি নিজেই হযরত আম্বিয়া  আলাইহিমুচ্ছালাম উনাদের সাথে মীলাদুন নবী  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেছেন।  আবার আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে  যমিনে এসে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম পালন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং যারা  যমীনে এসে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম পালন করবে না বরং এর বিরোধীতা করবে  তারাই চরম ফাসিক ও কাফির হবে সে সম্পর্কে  ঘোষনা দিয়েছেন।  

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ ফরমান-
  ﺍﻧﺎ ﺍﺭﺳﻠﻨﺎﻙ ﺷﺎﻫﺪﺍ ﻭﻣﺒﺸﺮﺍ ﻭﻧﺬﻳﺮﺍ . ﻟﺘﺆﻣﻨﻮﺍ ﺑﺎﻟﻠﻪ  ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻭﺗﻌﺰﺭﻭﻩ ﻭﺗﻮﻗﺮﻭﻩ ﻭﺗﺴﺒﺤﻮﻩ ﺑﻜﺮﺓ ﻭﺍﺻﻴﻼ .  
  • অর্থ: হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,   নিশ্চয়ই আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি সাক্ষ্যদাতা,  সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শণকারীরূপে। অতএব,  তোমরা (উম্মতরা) মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের প্রতি  ঈমান আন এবং তোমরা উনার খিদমত করো, সম্মান  করো ও সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ সদা-সর্বদা উনার ছানা-  ছিফত বর্ণনা করো। (সূরা ফাতহ-৮,৯)  

মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ করেন- 
 ﻳﺎﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻗﺪ ﺟﺎﺀﺗﻜﻢ ﻣﻮﻋﻈﺔ ﻣﻦ ﺭﺑﻜﻢ ﻭﺷﻔﺎﺀ  ﻟﻤﺎ ﻓﻰ ﺍﻟﺼﺪﻭﺭ ﻭﻫﺪﻯ ﻭﺭﺣﻤﺔ ﻟﻠﻤﺆﻣﻨﻴﻦ . ﻗﻞ ﺑﻔﻀﻞ  ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺑﺮﺣﻤﺘﻪ ﻓﺒﺬﺍﻟﻚ ﻓﻠﻴﻔﺮﺣﻮﺍ ﻫﻮ ﺧﻴﺮ ﻣﻤﺎ  ﻳﺠﻤﻌﻮﻥ .  
  • অর্থ: হে মানবজাতী, অবশ্যই তোমাদের মধ্যে মহান   আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে এসেছেন মহান নছীহত  স্বরূপ, তোমাদের অন্তরের সকল ব্যধিসমূহ দূরকারী,  মহান হিদায়েত ও ঈমানদারদের জন্য মহান রহমত (হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।  হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম আপনি  বলে দিন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার দয়া,  ইহসান ও রহমত (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম উনাকে পেয়ে) উনার জন্য ঈদ উদযাপন বা  খুশি প্রকাশ কর। তোমরা যত কিছুই করনা কেন তিনিই  হচ্ছেন সমগ্র কায়িনাতের জন্য সবচেয়ে বড় ও  সর্বোত্তম নিয়ামত। (সূরা ইউনুস-৫৭, ৫৮)  

এ আয়াত শরীফ দ্বারা মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত  মাখলুকাতের জন্য মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম পালন করাকে ফরয করে দিয়েছেন।  উল্লেখ্য যে, এ সম্পর্কে তিনটি শব্দ রয়েছে, যথা:  ﻣﻴﻼﺩ অর্থ: জন্মের সময়, ﻣﻮﻟﺪ অর্থ: জন্মের স্থান,  ﻣﻮﻟﻮﺩ অর্থ: সদ্য প্রসূত সন্তান।  আর ইছতিলাহী বা ব্যবহারিক অর্থ হলো সাইয়্যিদুল  মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহ্মাতুল্লিল আ’লামীন,  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম উনার  বিলাদত শরীফ উপলক্ষে ছানা-ছিফত করা ও উনার  প্রতি ছলাত-সালাম পাঠ করা যা মহান আল্লাহ পাক  ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনাদের নির্দেশের অন্তর্ভূক্ত।  
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন,  
ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻣﻠﺌﻜﺘﻪ ﻳﺼﻠﻮﻥ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﻳﺎﻳﻬﺎ ﺍﻟﺬﻳﻦ  ﺍﻣﻨﻮﺍ ﺻﻠﻮﺍ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻤﻮﺍ ﺗﺴﻠﻴﻤﺎ .  
  • অর্থ: “নিশ্চয় মহান আল্লাহ পাক তিনি ও উনার   ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম (সৃষ্টির শুরু থেকে  আবাদুল আবাদ পর্যন্ত) সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল  মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম  উনার প্রতি ছলাত পাঠ করতেছেন ও করবেন। হে  ঈমানদারগণ! তোমরাও উনার প্রতি ছলাত পাঠ কর এবং  সালাম দেয়ার যথাযথ নিয়মে ক্বিয়াম করে সালাম  পেশ করো।” (সূরা আহযাব-৫৬)

0 Comments: