৪০৫ নং- সুওয়াল - ভূগোলে পড়েছি, পৃথিবীর ছায়া যখন চাঁদের উপর পড়ে, তখন একে চন্দ্রগ্রহণ বলে। আমরা জানি, চন্দ্রগ্রহণের সময় আযান দিতে হয় এবং নামায পড়তে হয়। প্রশ্ন হলো- পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়লে আযান কেন দিতে হবে? নামায কেন পড়তে হবে? কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে খুশি হবো।
সুওয়াল - ভূগোলে পড়েছি, পৃথিবীর ছায়া যখন চাঁদের উপর পড়ে, তখন একে চন্দ্রগ্রহণ বলে। আমরা জানি, চন্দ্রগ্রহণের সময় আযান দিতে হয় এবং নামায পড়তে হয়। প্রশ্ন হলো- পৃথিবীর ছায়া চাঁদের উপর পড়লে আযান কেন দিতে হবে? নামায কেন পড়তে হবে? কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানালে খুশি হবো। 

জাওয়াব - চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ মহান আল্লাহ্ পাক উনার কুদরতের অন্তর্ভূক্ত। মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন,  খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াতে তাইয়্যেবায় একবার সূর্যগ্রহণ ও একবার চন্দ্রগ্রহণ সংঘঠিত হয়েছিল, যা হাদীছ শরীফ ও তারীখের কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র উনার ইবাদত-বন্দিগী করার জন্য। যেমন- কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون.   অর্থঃ- “আমি মানুষ ও জ্বিন জাতিকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।” কাজেই মুসলমানদের প্রতি মুহূর্তে মহান আল্লাহ্ পাক উনার মতে মত এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার রাসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ থাকতে হবে। সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণের সময়টিও এর থেকে খালি নয়। স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য গ্রহণের সময় দু’রাকায়াত নামায জামায়াতের সাথে পড়েছেন এবং চন্দ্রগ্রহণের সময়ও দু’রাকায়াত নামায একাকী আদায় করেছেন এবং বাকী সময় তাস্বীহ্-তাহ্লীল ও যিকির-ফিকির করে কাটিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আমাদেরকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধকে আঁকড়িয়ে ধরার জন্য বলেছেন, কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
وما اتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا.  অর্থঃ- “তোমাদের জন্য রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা নিয়ে এসেছেন, তা তোমরা আঁকড়িয়ে ধর এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা পরিত্যাগ কর।” অতএব, মহান আল্লাহ্ পাক উনার আদেশ পালনার্থে এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণার্থে (সুন্নত হিসেবে) সূর্য গ্রহণ ও চন্দ্র গ্রহণের সময় নামায আদায় করতে হবে। আর যেহেতু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজান ব্যতীতই  গ্রহণের নামায পড়েছিলেন, তাই চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় আজান দেয়া বিদ্য়াত ও নাজায়িয। হ্যাঁ, তবে যদি কেউ চন্দ্র গ্রহণ ও সূর্য গ্রহণের সময় পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখে ভীত হয়ে আজান দেয়, তবে সেটা জায়িয আছে। যা ফিক্বাহ্র কিতাব শামী ও বাহ্রুর রায়েকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঝড়, বৃষ্টি তুফানের সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন ও ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় ইত্যাদি কারণে আজান দেয়া মুস্তাহাব। শরয়ী কোন মাসয়ালার ব্যাপারে কারণ তালাশ করা বা তলব করা জায়িয নেই। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয় যে,
عن معاذة العدوية انها قالت لعائشة ما بال الحائض نقص الصوم ولا نفض الصلوة قالت عائشة كان يصيبنا ذالك فنؤمر بقضاء الصوم ولا نؤمر بقضاء الصلوة. (رواه مسلم)   অর্থঃ- “হযরত মুয়াজাহ্ আদভিয়া তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হায়েজওয়ালী স্ত্রীলোক রোজা কাজ্বা করে কিন্তু নামায কাজ্বা করেনা, তার কি কারণ? তখন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, যখন আমরা এ অবস্থায় পৌঁছতাম, তখন আমাদেরকে রোজা কাজ্বা করার আদেশ দেয়া হতো কিন্তু নামায কাজ্বা করার আদেশ দেয়া হতোনা।” (অথচ আমরা কখনো কোন কারণ তালাশ করিনি) (মুসলিম শরীফ) তবে অবশ্য মহান আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা যে সমস্ত বিষয়ে কারণ উল্লেখ করেছেন, শুধু সে সমস্ত বিষয়ে কারণ বর্ণনা/উল্লেখ করা যেতে পারে। কারণ কুরআন শরীফে বলা হয়েছে,
وما اوتيتم من العلم الا قليلا. অর্থঃ- “তোমাদেরকে অল্প জ্ঞান ব্যতীত প্রদান করা হয়নি।” আরো বলা হয়েছে, عسى ان تكرهوا شيئا وهو خير لكم وعسى ان تحبوا شيئا وهو شرلكم والله يعلم وانتم لا تعلمون.
অর্থঃ- “সম্ভবতঃ তোমরা যেটা খারাপ মনে করো সেটাই ভাল, আর সম্ভবতঃ যা তোমরা ভাল মনে কর, তাই খারাপ, মহান আল্লাহ্ পাক তিনিই জানেন কোন্টি ভাল এবং কোন্টি মন্দ, তোমরা তা জাননা।” অতএব, আমাদের প্রত্যেক কাজেই মহান আল্লাহ্ পাক উনার মতে মত এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পথে পথ হতে হবে।  আবা২৫
৪০৪ নং- সুওয়াল - প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া কি?
সুওয়াল - প্রাণীর ছবিযুক্ত কাপড় পরিধান করে নামায পড়া কি?

 জাওয়াব - মাকরূহে তাহ্রীমী।
আবা-২৫
৪০৩ নং- সুওয়াল - মসজিদে যদি ফজর নামাজের জামায়াত আরম্ভ হওয়ার পর কোন মুক্তাদি আসে, তাহলে সে সুন্নত নামায কোথায় পড়বে?
সুওয়াল - মসজিদে যদি ফজর নামাজের জামায়াত আরম্ভ হওয়ার পর কোন মুক্তাদি আসে, তাহলে সে সুন্নত নামায কোথায় পড়বে?

 জাওয়াব - জামায়াত চলাকালীন মসজিদে অন্য কোন নামায পড়া মাকরূহে তাহ্রীমী। অগত্যা সুন্নত নামায পড়তে চাইলে মসজিদের বারান্দায় বা বাইরে আদায় করবে, যদি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও নামায পড়ার জায়গা না থাকে, তবে মসজিদের এক কোনে, যা কাতারের বাইরে, এমন জায়গায় আদায় করে নিবে। আবা-২৫
৪০২ নং- সুওয়াল - ইমাম সাহেবের আখিরী বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে মাসবুক (যে মুক্তাদির প্রথম দিকে এক বা একাধিক রাকায়াত নামায ফউত হয়ে গিয়েছে)-এর দাঁড়ানো জায়িয আছে কিনা?
সুওয়াল - ইমাম সাহেবের আখিরী বৈঠকে সালাম ফিরানোর পূর্বে মাসবুক (যে মুক্তাদির প্রথম দিকে এক বা একাধিক রাকায়াত নামায ফউত হয়ে গিয়েছে)-এর দাঁড়ানো জায়িয আছে কিনা?

 জাওয়াব - মাসয়ালা হলো, ইমাম সাহেব ডান দিকে সালাম ফিরায়ে যখন বাম দিকে সালাম ফিরানো শুরু করবেন, তখন মাসবুক দাঁড়িয়ে তার বাকী নামায যথারীতি শেষ করবে। তবে যদি এমন অবস্থা হয় যে, মোজা মসেহ্কারীর মুদ্দত শেষ হয়ে যাওয়ার, মাজুর ব্যক্তির ওয়াক্ত ফউত হওয়ার, জুময়ার নামাযে আসরের ওয়াক্ত হওয়ার, ঈদের নামাজের সময় শেষ হয়ে যাওয়ার, ফজর নামাযের সূর্য উদিত হওয়ার এবং ওযু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে ইমাম সাহেব সালাম ফিরানোর পূর্বে এবং তাশাহুদ পাঠ করার পর মাসবুক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে অবশিষ্ট নামায যথারীতি শেষ করতে পারবে। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী) 
আবা-২৫
৪০১ নং- সুওয়াল - শরীয়তের দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে পেশাব করা কি?
সুওয়াল - শরীয়তের দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে পেশাব করা কি?

 জাওয়াব - হারাম ও নাজায়িয। (হাদীছ শরীফ ও সমূহ ফিক্বাহ্র কিতাব দ্রষ্টব্য) 
আবা-২৫
৪০০ নং- সুওয়াল - ক্বিবলামুখী হয়ে অথবা ক্বিবলাকে পিছনে রেখে পেশাব-পায়খানা করা কি?
সুওয়াল - ক্বিবলামুখী হয়ে অথবা ক্বিবলাকে পিছনে রেখে পেশাব-পায়খানা করা কি?  

জাওয়াব - নাজায়িয, কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, اذا اتيتم القغائط فلا تستقبا واالقبلة ولا تستدبروها.
অর্থঃ- “যখন তোমরা পেশাব-পায়খানায় আসবে অর্থাৎ পেশাব-পায়খানা করবে, তখন তোমরা ক্বিবলাকে সম্মুখেও রাখবে না এবং পিছনেও রাখবেনা।” আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক ক্বিবলাকে সামনে অথবা পিছনে রেখে তা খোলা জায়গায় হোক কিম্বা আবদ্ধ জায়গায় হোক পেশাব-পায়খানা করা হারাম ও নাজায়িয। এটা ক্বিবলার তা’যীম বা সম্মানার্থে। (বুখারী, মুসলিম, ইমদাতুল ক্বারী, ফতহুল বারী) 
আবা-২৫
৩৯৯ নং- সুওয়াল - বেতের, সুন্নত ও নফল নামাযে প্রতি রাকায়াতে সূরা মিলানো ওয়াজিব কিনা? জানায়ে বাধিত করবেন।
সুওয়াল - বেতের, সুন্নত ও নফল নামাযে প্রতি রাকায়াতে সূরা মিলানো ওয়াজিব কিনা? জানায়ে বাধিত করবেন।

 জাওয়াব - হ্যাঁ, বেতের, সুন্নত ও নফল নামাযে প্রত্যেক রাকায়াতেই সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা মিলানো ওয়াজিব। অর্থাৎ বড় এক আয়াত অথবা ছোট তিন আয়াত মিলানো ওয়াজিব।
আবা-২৫
৩৯৮ নং- সুওয়াল - যদি কেউ ভুলে বেতের নামাযের প্রথম কিম্বা দ্বিতীয় রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়ে ফেলে, তাহলে তাকে তৃতীয় রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়তে হবে কিনা?
সুওয়াল - যদি কেউ ভুলে বেতের নামাযের প্রথম কিম্বা দ্বিতীয় রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়ে ফেলে, তাহলে তাকে তৃতীয় রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়তে হবে কিনা? 

জাওয়াব - হ্যাঁ, তাকে তৃতীয় রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়তে হবে। কারণ তৃতীয় রাকায়াতে দোয়া কুনুত পড়া ওয়াজিব, আর প্রথম কিম্বা দ্বিতীয় রাকায়াতে ভুলে দোয়া কুনুত পড়ার কারণে সিজ্দায়ে সাহু দিয়ে তাকে নামায শেষ করতে হবে।
আবা-২৫
৩৮৮ নং- সুওয়াল - কোন ব্যক্তি ইশার নামায পড়ে, বেতের নামায না পড়ে ঘুমাল, শেষ রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামায বেতেরসহ পড়ার পর স্বরণ হলো, ইশার নামায ওযু ব্যতীত পড়া হয়েছিল। এখন  তাকে কি ইশা ও বেতের উভয় নামাযই আদায় করতে হবে?
সুওয়াল - কোন ব্যক্তি ইশার নামায পড়ে, বেতের নামায না পড়ে ঘুমাল, শেষ রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ নামায বেতেরসহ পড়ার পর স্বরণ হলো, ইশার নামায ওযু ব্যতীত পড়া হয়েছিল। এখন  তাকে কি ইশা ও বেতের উভয় নামাযই আদায় করতে হবে?

 জাওয়াব - না, তাকে শুধু এশার নামাযই আদায় করতে হবে। বেতের নামায আদায় করতে হবেনা, যদিও বেতের নামায ইশার পরে পড়ার নিয়ম। কারণ ইশার নামাযের পরেই সে বেতের পড়েছে। ভুলে ইশার নামায ওযু ছাড়া পড়েছে, আর বেতের নামায ওযুসহ পড়েছে। অতএব তাকে শুধু ইশার নামাযই আদায় করতে হবে। (আলমগীরী) আবা-২৫
৩৮৭ নং- সুওয়াল - সম্প্রতি মাইকযোগে জামায়াতে নামায পড়া অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে মুসল্লীগণ ইমামের তাক্বীর শুনতে পায়না, ফলে নামায আদায়ে আমরা অসুবিধায় পড়ি। এমতাবস্থায় নামায পড়ার হুকুম কি?
সুওয়াল - সম্প্রতি মাইকযোগে জামায়াতে নামায পড়া অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে মুসল্লীগণ ইমামের তাক্বীর শুনতে পায়না, ফলে নামায আদায়ে আমরা অসুবিধায় পড়ি। এমতাবস্থায় নামায পড়ার হুকুম কি?

জাওয়াব - যে সমস্ত মসজিদে জামায়াতে লোক বেশী হওয়ার কারণে মাইকের মাধ্যমে নামায আদায় করা হয়, সে সমস্ত মসজিদে মুকাব্বিরেরও ব্যবস্থা রাখা উচিত। কারণ বিদ্যুৎ যেকোন সময় চলে যেতে পারে। আর বিদ্যুৎ চলে গেলে মুকাব্বিরগণ তাদের দায়িত্ব পালন করে নামায সুষ্ঠভাবে সমাধা করার কাজে সহযোগিতা করবেন। নামায চলাকালীন অবস্থায় যদি বিদ্যুৎ চলে যায়, আর মুসল্লীগণ ইমাম সাহেবের তাক্বীর না শোনার কারণে নামায সঠিকভাবে আদায় করতে না পারে, তবে যে সকল মুক্তাদী নামায আদায় করতে পারেনি, তারা নামায দোহ্রায়ে নিবে। যদি কোন মসজিদে মুকাব্বির নির্দিষ্ট না করে নামায শুরু করা হয় এবং নামায পড়া অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে ইমাম সাহেবের তাক্বীর মুক্তাদীগণ শুণতে না পায়, সে সমস্ত মসজিদে মুক্তাদীগণের দায়িত্ব হলো- তাদের নিজেদের মধ্য থেকে জরুরত আন্দাজ (প্রয়োজন অনুপাতে) এক বা একাধিক মুকাব্বির হয়ে নামায সুষ্ঠভাবে সমাধা করার জন্য ইমাম সাহেবকে সহযোগিতা করা।
 আবা-২৫
৩৮৬ নং- সুওয়াল - যে সকল নামাযে চুপে চুপে ক্বিরাত পড়তে হয়, (যেমন- জোহর, আছর ও দিনের সুন্নত ও নফল নামায) সে সকল নামাযে ক্বিরাত কিভাবে পাঠ করতে হবে?
সুওয়াল - যে সকল নামাযে চুপে চুপে ক্বিরাত পড়তে হয়, (যেমন- জোহর, আছর ও দিনের সুন্নত ও নফল নামায) সে সকল নামাযে ক্বিরাত কিভাবে পাঠ করতে হবে?

 জাওয়াব - আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক যে সকল নামাযে চুপে চুপে ক্বিরাত পড়তে হয়, যেমন- জোহর ও আসর এবং দিনের সুন্নত ও নফল নামাযসমূহে ক্বিরাত এমনভাবে পাঠ করতে হবে, যেন নামাযী ব্যক্তি নিজের ক্বিরাত নিজের কানে শুনতে পায়। যদি না শুনে, তাহলে নামায শুদ্ধ হবেনা। কেউ যদি খেয়ালের সাথে অথবা মনে মনে ক্বিরাত পাঠ করে, যা মুখে উচ্চারিত হয়না এবং কানেও শুনা যায়না, এরূপভাবে ক্বিরাত পাঠ করলে নামায শুদ্ধ হবেনা। আর যদি ক্বিরাত পাঠের সময় মুখ ও জিহ¡াই নড়ে এবং উচ্চারিতও হয় কিন্তু নামাযী ব্যক্তি নিজ কানে না শুনে, এমতাবস্থায় নামাযী ব্যক্তি যদি বধির (যে কানে কমশুনে বা একেবারে শুনে না) না হয়, তবুও নামায হবেনা।  উল্লেখ্য যে, চুপে চুপে নামাযে এমনভাবে ক্বিরাত পাঠ করা যাবেনা, যা তার পাশ্ববর্তী লোক শুনতে পায়। (আলমগীরী, বাহ্রুর রায়েক, হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, মারাকিউল ফালাহ্, জাওহারাতুন্নাইয়ারাহ্ ইত্যাদি) 
আবা-২৫
৩৮৫ নং- সুওয়াল - ক্বিরাত পাঠের সুন্নত তরীক্বা কি? অনেক মসজিদে দেখা যায়, ফজর নামাযে লম্বা ক্বিরাত পড়ে থাকে, এটার কারণ কি?
সুওয়াল - ক্বিরাত পাঠের সুন্নত তরীক্বা কি? অনেক মসজিদে দেখা যায়, ফজর নামাযে লম্বা ক্বিরাত পড়ে থাকে, এটার কারণ কি?

 জাওয়াব -  ক্বিরাত পাঠের সুন্নত তরীক্বা হচ্ছে- ফজর ও জোহর নামাযে তেওয়ালে মুফাচ্ছল অর্থাৎ সূরা হুজরাত হতে বুরুজ পর্যন্ত যে কোন একটি সূরা এক রাকায়াতে পাঠ করা। আসর ও এশার নামাজে আওছাতে মুফাচ্ছাল অর্থাৎ সূরা বুরুজ হতে লামইয়া কুনিল্লাজিনা পর্যন্ত যে কোন একটি সূরা এক রাকায়াতে পাঠ করা। আর মাগরীবে কেছারে মুফাচ্ছাল অর্থাৎ সূরা ইজা জুলজিলাত হতে সূরা নাস পর্যন্ত যে কোন একটি সূরা এক রাকায়াতে পাঠ করা।  উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত সূরাসমূহ যদি উল্লেখিত নামাযে পাঠ না করে তার সমপরিমাণ যে কোন সূরা বা আয়াত শরীফ পাঠ করে, তাতেও সুন্নত আদায় হবে।  ফজর নামাযে যেহেতু তেওয়ালে মুফাচ্ছাল অর্থাৎ সূরা হুজরাত থেকে সূরা বুরুজ পর্যন্ত পাঠ করা সুন্নত। যা সাধারণতঃ অন্যান্য নামাযে বর্ণিত সূরাগুলির থেকে দীর্ঘ, সেহেতু উক্ত সূরা বা তার সমপরিমাণ আয়াত শরীফ পড়ার দরুন ক্বিরাত লম্বা হয়ে থাকে। (জাওহারাতুন্নাইয়ারাহ্ ও ইত্যাদি ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহ)
আবা-২৫
৩৮৪ নং- সুওয়াল - নামাযে আউযুবিল্লাহ্ ও বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করার হুকুম কি?
সুওয়াল - নামাযে আউযুবিল্লাহ্ ও বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করার হুকুম কি?

 জাওয়াব -  প্রত্যেক নামাযের প্রথম রাকায়াতে ছানা পড়ার পর, ক্বিরাত পাঠ করার পূর্বে আউযুবিল্লাহ্ ও বিস্মিল্লাহ্ উভয় পাঠ করা সুন্নত। যদি জামায়াতে হয়, তবে শুধুমাত্র ইমাম সাহেবের পাঠ করা সুন্নত। মুক্তাদির পাঠ করা সুন্নত নয়। কারণ আউযুবিল্লাহ্ ও বিস্মিল্লাহ্ হলো- ক্বিরাতের সাথে সংশ্লিষ্ট। একা নামাযীর জন্যও পাঠ করা সুন্নাত। বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করা পরবর্তী প্রতি রাকায়াতের শুরুতে সুন্নত। আর প্রকাশ্য নামাযে সূরা মিলানোর পূর্বে বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করা সুন্নত নয়, সূরার শুরু থেকে শুরু করুক অথবা মধ্য থেকে শুরু করুক। চুপে চুপে নামাযে সূরা ফাতিহার পর যে সূরা পাঠ করবে, তা যদি সূরার শুরু থেকে শুরু করে, তবেই শুধু বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করা সুন্নত। আর যদি সূরার মধ্য থেকে শুরু করে, তাহলে বিস্মিল্লাহ্ পাঠ করা সুন্নত নয়। (আলমগীরী, শামী, গায়াতুল আওতার, হাশিয়ায়ে তাহ্তাবী, কবিরী, দুররুল মোখতার ইত্যাদি) 
আবা-২৫
৩৮৩  নং- সুওয়াল - আমি কোন এক মসজিদে স্থায়ীভাবে কয়েক বছর থেকে চাকুরি করে আসছি এবং হয়ত আরো করবো। আমি বাড়ী থেকে ১৫ দিনের কম নিয়তে এবং ৪৮ মাইল দূরে আমার কর্মস্থলে আসি এবং আমার মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিজ বাড়ীতে রয়েছে, যার জন্য আমাকে কয়েক দিন পর পর নিজ বাড়ীতে যেতে হয়। এমতাবস্থায় আমি কিভাবে নামায পড়াব?
সুওয়াল - আমি কোন এক মসজিদে স্থায়ীভাবে কয়েক বছর থেকে চাকুরি করে আসছি এবং হয়ত আরো করবো। আমি বাড়ী থেকে ১৫ দিনের কম নিয়তে এবং ৪৮ মাইল দূরে আমার কর্মস্থলে আসি এবং আমার মা-বাবা, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিজ বাড়ীতে রয়েছে, যার জন্য আমাকে কয়েক দিন পর পর নিজ বাড়ীতে যেতে হয়। এমতাবস্থায় আমি কিভাবে নামায পড়াব?

 জাওয়াব - আপনাকে কসর নামায পড়তে হবে। কারণ মুকীম হওয়ার জন্য যে শর্ত রয়েছে, তা আপনার মধ্যে পাওয়া যায়না। গায়াতুল আওতার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, নিয়ত ব্যতীত মানুষ তিন স্থানে মুকীম হয়ে যাবে। যথা- ১। জন্মভূমি, যে স্থানে হিজরত করা হয়নি। (২) নতুন বাড়ী, যেখানে আহ্ল বা পরিবার নিয়ে বসবাস করে এবং (৩) যে স্থানে বিবাহ্ করে বসবাস করে। অন্যান্য ফিক্বাহের কিতাবে মুকীম হওয়ার জন্য আরো দু’টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। তাহলো- (১) ৪৮ মাইল পথ অতিক্রম না করলে। (২) ১৫ দিনের বেশী থাকার নিয়ত করলে। আরো উল্লেখ্য যে, নিয়ত ব্যতীত কোন ব্যক্তি মুসাফির হবে না। অতএব, আপনার চাকুরী যদিও স্থায়ী, তথাপিও উপরোক্ত শর্তের কোনটিই আপনার মধ্যে পাওয়া যায়না। কাজেই আপনি নিয়ত ব্যতীত মুকিম হবেন না। সুতরাং আপনার উচিত হবে, ১৫ দিনের কমে বাড়ীতে যাওয়ার নিয়ত না করে ১৫ দিনের বেশী থাকার নিয়ত করা। 
আবা-২৫
৩৮২ নং- সুওয়াল - নামাযে দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায় পায়ের অঙ্গুলি কোনদিকে থাকবে এবং বসা ও সিজ্দা অবস্থায়হাত ও পা উভয়ের অঙ্গুলীসমূহ কোন দিকে থাকা সুন্নত?
সুওয়াল - নামাযে দাঁড়ানো ও রুকু অবস্থায় পায়ের অঙ্গুলি কোনদিকে থাকবে এবং বসা ও সিজ্দা অবস্থায়হাত ও পা উভয়ের অঙ্গুলীসমূহ কোন দিকে থাকা সুন্নত? 

জাওয়াব - দাঁড়ানো, রুকু, বসা ও সিজ্দা অবস্থায় পায়ের অঙ্গুলীসমূহ ক্বিবলামুখী রাখা সুন্নত। আর তাক্বীরে তাহ্রীমা, বসা ও সিজ্দা অবস্থায় হাতের অঙ্গুলিসমূহ ক্বিবলামুখী রাখা সুন্নত। যা হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে। এর খেলাফ করা মাকরূহে তান্যীহী। (মারাকিউল ফালাহ্, কবিরী ইত্যাদি ফিক্বাহ্র কিতাব দ্রষ্টব্য)  
আবা-২৫
৩৮১ নং- সুওয়াল - ইমাম সাহেবের পিছনে ক্বিরাত পাঠ করা কি?
সুওয়াল - ইমাম সাহেবের পিছনে ক্বিরাত পাঠ করা কি?
 জাওয়াব - আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক ইমাম সাহেবের পিছনে ক্বিরাত পাঠ করা মাকরূহে তাহ্রীমী। (আলমগীরী ও শামী) 
আবা-২৫
৩৮০ নং- সুওয়াল - নামাযে তাক্বীরে তাহ্রীমা বলার সময় হাতদ্বয় কোন পর্যন্ত উপরে উত্তোলন করতে হয়?

সুওয়াল - নামাযে তাক্বীরে তাহ্রীমা বলার সময় হাতদ্বয় কোন পর্যন্ত উপরে উত্তোলন করতে হয়? 


জাওয়াব - আমাদের হানাফী মায্হাবে কানের লতি পর্যন্ত হাত উঠা এবং লতি স্পর্শ করা সুন্নত। তাক্বীরে তাহ্রীমা বলার সময় কাঁধের নীচে অথবা কানের উপরে হাত উত্তোলন করা মাকরূহে  তান্যীহী। (সগিরী) আবা-২৫
৩৭৯ নং- সুওয়াল - কোন মসজিদের ইমাম সাহেব স্বীয় কক্ষে মসজিদ থেকে বিদ্যুৎ লাইন এনে ব্যবহার করতে পারবেন কি?
সুওয়াল - কোন মসজিদের ইমাম সাহেব স্বীয় কক্ষে মসজিদ থেকে বিদ্যুৎ লাইন এনে ব্যবহার করতে পারবেন কি?

  জাওয়াব - হ্যাঁ পারবেন, যদি সেই কক্ষ মসজিদের অধীন হয়ে থাকে। আর কক্ষ বলতে যদি ইমাম সাহেবের বাড়ী বুঝানো হয়, যা তিনি নিজের পয়সা দিয়ে খরিদ করে তৈরি করেছেন, তাতে মসজিদ থেকে বিদ্যুতের লাইন নিয়ে ব্যবহার করা জায়িয নেই। 
আবা-২৫
৩৭৮ নং- সুওয়াল - যদি কোন কোম্পানীর মালিক বিধর্মী হয়, (যেমন- কাদিয়ানী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইহুদী, বাহাই ইত্যাদি) তবে তার সাথে ব্যবসা করা জায়িয কিনা? তাদের উৎপাদিত খাদ্য-সামগ্রী খাওয়া জায়িয হবে কি?
সুওয়াল - যদি কোন কোম্পানীর মালিক বিধর্মী হয়, (যেমন- কাদিয়ানী, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইহুদী, বাহাই ইত্যাদি) তবে তার সাথে ব্যবসা করা জায়িয কিনা? তাদের উৎপাদিত খাদ্য-সামগ্রী খাওয়া জায়িয হবে কি?  

জাওয়াব ঃ- মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সূরা মুম্তাহেনাহ্-এর শুরুতে বলেন,
ياايها الذين امنول لا تتخذوا عدوى وعدو كم اولياء.    অর্থঃ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রূ এবং তোমাদের শত্রূ অর্থাৎ কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করোনা।” অর্থাৎ বিধর্মী বা কাফিরদের সাথে বাহ্যিকভাবে দুনিয়াবী ক্ষেত্রে সম্পর্ক রক্ষা করা যেতে পারে কিন্তু আন্তরিকভাবে তাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা জায়িয নেই। কাজেই কাফির বা বিধর্মীদের সাথে শরীয়তের দৃষ্টিতে ব্যবসা করা জায়িয রয়েছে, তবে অন্তর থেকে মহব্বত করা যাবেনা। হ্যাঁ, যদি কোন মুসলমানের সাথে ব্যবসা করা সম্ভব হয়, তাহলে কাফিরদের সাথে ব্যবসা করা ঠিক হবেনা, অন্যথায় জায়িয আছে। কাফিরদের উৎপাদিত দ্রব্য ও খাদ্য সামগ্রী ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে। যদি কোন মুসলমানের মাধ্যমে উৎপাদিত দ্রব্য ও খাদ্য সামগ্রী পাওয়া যায়, তাহলে সেটাই ব্যবহার করতে হবে। আর মুসলমানের উৎপাদিত দ্রব্য ও খাদ্য সামগ্রী না পাওয়া গেলে তখনই বিধর্মীদের উৎপাদিত খাদ্য ও দ্রব্য সামগ্রী ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে। জানা আবশ্যক যে, মুসলমানগণ কাফিরদের মাধ্যমে তৈরি ঐ সমস্ত খাদ্য ও দ্রব্য সামগ্রী ব্যবহার করতে পারবেন, যেগুলি শরীয়তে খাওয়া ও ব্যবহার করা জায়িয রয়েছে। আরো লক্ষনীয় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে মুসলমানদের জন্য যে সকল খাদ্য সামগ্রী খাওয়া জায়িয রয়েছে, সে সমস্ত খাদ্য সামগ্রী যদি বিধর্মীদের মাধ্যমে তৈরি হয়, আর তার মধ্যে যদি নাপাকী (যা মুসলমাদের জন্য খাওয়া জায়িয নেই, যেমন- গবর, চনা, শুকরের চর্বি ইত্যাদি) থাকার সম্ভাবনা থাকে, তবে তা খাওয়া জায়িয নেই। আর যদি নাও থাকে, তথাপিও তা খাওয়া তাক্ওয়ার খেলাফ। মহান আল্লাহ্ পাক অনেক জায়গায় কাফিরদের সাথে মহব্বত করতে নিষেধ করেছেন। যেমন সূরা মায়েদার ৫১নং আয়াত শরীফে এরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী-নাসারাদেরকে (বিধর্মীদের) বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্য থেকে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত হবে।” অতএব প্রত্যেক মুসলমানের উচিৎ সে যেন তাহ্ক্বীক করে চলে।
আবা-২৫
৩৭৭ নং- সুওয়াল - সূরা কাওসার-এর অর্থসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ জানতে চাই?
সুওয়াল - সূরা কাওসার-এর অর্থসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ জানতে চাই?

 জাওয়াব - অনুবাদ- “নিশ্চয় আমি (মহান আল্লাহ্ পাক) আপনাকে (হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাওসার দিয়েছি। অতএব, আপনার রবের উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। নিশ্চয় আপনার শত্রুই নির্বংশ।” অবতীর্ণের কারণ ঃ- মহান আল্লাহ্ পাক উনার রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পুত্র সন্তান (হযরত কাসেম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত তাহের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত তাইয়্যেব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) জন্মগ্রহণ করে বেশীদিন জীবিত ছিলেন না। উনারা শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। তখন ইসলামের চিরশত্রু কাফিরদের, বিশেষ করে আস ইবনে ওয়ায়েলের সামনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক বা আলোচনা উচ্চারিত হলে, সে বলতো- আরে উনার কথা বাদ দাও। তিনি কোন চিন্তারই বিষয় নন, কারণ তিনি নির্বংশ অর্থাৎ উনার কোন পুত্র সন্তান জীবিত নেই। অতএব উনার ইন্তেকাল হলে কে বা কারা করবেন উনার নাম উচ্চারণ? নাউযুবিল্লাহ! তার এ ধরণের কটুক্তি শুনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুটা ব্যথিত হলে মহান  আল্লাহ্ পাক তিনি উক্ত সূরাটি অবতীর্ণ করে শান্তনা প্রদান করেন। কোন কোন বর্ণনা মতে, ইহুদী কা’ব ইবনে আশরাফ একদা মক্কায় আগমন করলে কোরাইশরা তার কাছে এসে বললো, আপনি কি সেই যুবুককে দেখেননি, যিনি নিজকে ধর্মের দিক দিয়ে সর্বোত্তম বলে দাবী করেন? অথচ আমরা হাজীদের সেবা করি, বায়তুল্লাহ্র হিফাজত করি এবং মানুষকে পানি পান করাই। কা’ব একথা শুনে বললো- আপনারাই উনার চেয়ে উত্তম। নাউযুবিল্লাহ! এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কাওসার অবতীর্ণ হয়।
সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ- সূরা কাওসার কুরআন শরীফে বর্ণিত সূরাগুলির মধ্যে সবচেয়ে ছোট সূরা এবং তিন আয়াত শরীফ বিশিষ্ট। সূরাটির প্রথম আয়াত শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে, মহান আল্লাহ্ পাক হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘কাওসার’ দান করেছেন। ‘কাওসার’ কি? এর ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, একদা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে আমাদের সামনে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ তাঁর মধ্যে এক প্রকার নিদ্রা কিম্বা তন্দ্রার ভাব দেখা দিল। অতঃপর তিনি হাসিমুখে মাথা মুবারক উঠালেন। আমরা আরজ করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার হাসার কারণ কি? তিনি বললেন, “এই মুহূর্তে আমার নিকট একখানা সূরা অবতীর্ণ হয়েছে।” অতঃপর তিনি বিস্মিল্লাহ্সহ সূরা কাওসার পাঠ করলেন এবং বললেন, “তোমরা জান কাওসার কি?” আমরা বললাম মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ভাল জানেন। তিনি বললেন, “এটা জান্নাতের একটি নহর। আমার পালনকর্তা আমাকে এটা দিবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অজস্র কল্যাণ নিহীত রয়েছে এবং এ হাউজে ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পানি পান করার পাত্রের সংখ্যা আকাশের তারকার সমান হবে। কতক লোককে ফেরেশ্তাগণ হাউজ থেকে তাড়িয়ে দিবেন। তখন আমি বলবো, হে আমার রব! সে তো আমার উম্মত।” মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “আপনি জানেন না, আপনার পরে সে নতুন মত-পথ অবলম্বন করেছিল।” (বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ) উপরোক্ত বর্ণনা ছাড়াও হাদীছ শরীফের একাধিক বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, অজস্র কল্যান, অফুরন্ত কল্যাণ এবং জান্নাতে অবস্থিত এক বিশেষ নহর বা প্রস্রবনের নাম কাওসার। যার পানির সচ্ছতা, মিষ্টতা এবং কিনারাসমূহ মনি-মানিক্য দ্বারা কারুকার্যখচিত হওয়া সম্পর্কে সহীহ্ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে। এটা এমন এক নিয়ামত, যা মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বীয় হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য খাছ করে প্রদান করেছেন এহেতু পরবর্তী অর্থাৎ দ্বিতীয় আয়াত শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপনের নিমিত্তে নামায এবং কুরবানী করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তৃতীয় আয়াত শরীফে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মহান আল্লাহ্ পাক সান্তনা দানপূর্বক দৃঢ়তার সাথে জানিয়ে দিলেন যে, মূলতঃ আপনার শত্রুরাই (কাফিররাই) নির্বংশ, পৃথিবীতে তাদেরই নাম নেয়ার মত কেউ থাকবেনা। দুনিয়া ও আখিরাতে তারা লাঞ্ছিত, অপমানিত এবং ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভূক্ত হবে। অপর দিকে
ورفعنا لك ذكرك
অর্থ- “আমি আপনার আলোচনাকে বুলন্দ করেছি।” অর্থাৎ আপনার বংশধরই ক্বিয়ামত অবধি থাকবে।” যেটা আমরা দেখতে পাই, খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম উনার থেকে হযরত হাসান আলাইহাস সালাম ও হযরত হুসাইন আলাইহিস সালাম উনাদের মাধ্যমে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিলসিলাহ্ জারী রয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।  
আবা-২৫
৩৭৬ নং- সুওয়াল - ছেলে-মেয়ের জন্ম দিবসের খানা, আক্বীকার খানা, মুসলমানীর খানা, বিবাহের খানা এবং মানুষ ইন্তেকালের পর ৩ দিন, ৭ দিন, চল্লিশা ইত্যাদির খানা কি জায়িয আছে? অনেকে বলে থাকে, এটা নাজায়িয ও হারাম। আবার কেহ কেহ বলেন, এটা তাকওয়ার খেলাফ। আবার কেহ বলেন যে, এটা সম্পূর্ণ জায়িয। সঠিক জবাবদানে ধন্য করবেন।
সুওয়াল - ছেলে-মেয়ের জন্ম দিবসের খানা, আক্বীকার খানা, মুসলমানীর খানা, বিবাহের খানা এবং মানুষ ইন্তেকালের পর ৩ দিন, ৭ দিন, চল্লিশা ইত্যাদির খানা কি জায়িয আছে? অনেকে বলে থাকে, এটা নাজায়িয ও হারাম। আবার কেহ কেহ বলেন, এটা তাকওয়ার খেলাফ। আবার কেহ বলেন যে, এটা সম্পূর্ণ জায়িয। সঠিক জবাবদানে ধন্য করবেন।

 জাওয়াব - উপরোক্ত সর্ব প্রকার খানাই শর্ত সাপেক্ষে জায়িয এবং শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয হয়ে থাকে। তন্মধ্যে আক্বীকা ও বিবাহের উদ্দেশ্যে যে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তা খাছ সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে, “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আক্বীকার উদ্দেশ্যে ছেলের জন্য দু’খাসি এবং মেয়ের জন্য একখাসি যবেহ্ করার নির্দেশ দিয়েছেন।” 

আরো ইরশাদ হয়েছে যে, “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের প্রত্যেক বিবাহ মুবারকের ওলীমা বা খানাপিনার বন্দোবস্ত করেছিলেন এবং বিবাহ উপলক্ষে ওলীমা করার জন্য নির্দেশও দিয়েছেন। ওলীমা বলা হয়- বিবাহ উপলক্ষে ছেলের বাড়ীতে যে খানার ব্যবস্থা করা হয়। আর মেয়ের বাড়ীতে যে খানার ব্যবস্থা করা হয়, তাহচ্ছে শুকরানা স্বরূপ। কারণ মেয়ের যারা অভিভাবক তারা, মহান আল্লাহ্ পাক উনার এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ পালন করতঃ মেয়ের ইজ্জত-আবরু রক্ষা করতে পেরেছে, সেজন্য। এছাড়াও নির্দেশ রয়েছে যে, মেহমানকে মেহমানদারী করার, যা খাছ সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত।

খতনা বা মুসলমানী করা হলো শিয়ারুল ইসলাম (মুসলমানের মুসলমান হওয়ার চিহ্ন) ও খাস সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। আর জন্মদিন, উভয় উপলক্ষে শোকরানা স্বরূপ খাওয়ার ব্যবস্থা করা জায়িয রয়েছে। কারণ যে খৎনা করালো, সে খাছ সুন্নত পালন করতে পেরেছে এবং সাথে সাথে ভবিষ্যতে যেন আরো সুন্নত পালন করতে পারে এবং সন্তানের দ্বারা পালন করাতে পারে, সেজন্য খাওয়া ও দোয়ার ব্যবস্থা করেছে। আর জন্মদিন উপলক্ষে খাওয়া ও দোয়ার ব্যবস্থা করার কারণ হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ্ পাক তাকে এক বছর নেক হায়াত দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে যেন নেক হায়াত দারাজ করেন, সেজন্য শোকরানা স্বরূপ খাওয়া ও দোয়ার ব্যবস্থা করা। তবে অবশ্যই ইহুদী-নাসারা ইত্যাদি বিধর্মীদের অনুসরণ করে জন্মদিন করা, আর এর মধ্যে মোমবাতি জ্বালানো, কেক্ কাটা, জন্মদিনের গান গাওয়া, সাথে বাজনার ব্যবস্থা করা এবং নৃত্য করা ইত্যাদি সমস্তই নাজায়িয ও হারাম ও কঠিন গুণাহ্রে কারণ। আর মৃত ব্যক্তির রূহের মাগ্ফিরাত কামনার্থে অর্থাৎ ইসালে সাওয়াব উপলক্ষে ৩ দিন, ৭ দিন, ১০ দিন, ২০ দিন, ৪০ দিন এবং বছরান্তে ইত্যাদি সময়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করা জায়িয রয়েছে। কারণ হাদীছ শরীফে রয়েছে,
الميت كالغربق অর্থঃ- “মৃত ব্যক্তি ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায়।” 

অর্থাৎ যে ব্যক্তি সাঁতার না জানার দরুন পানিতে ডুবে যাচ্ছে, সে যেমন বাঁচার জন্য পানিতে খড়-কুটা পেলে তা ধরে বাঁচার চেষ্টা করে থাকে; তদ্রূপ মৃত ব্যক্তি সবসময় এই প্রত্যাশায় থাকে যে, তার কোন আত্মীয়-স্বজন নেকী পাঠায় কিনা, যার দ্বারা সে ফায়দা হাসিল করবে। জন্মদিন, খৎনা ও ইসালে সাওয়াব উপলক্ষে নির্দিষ্ট দিন এবং নির্দিষ্ট সময়েই খানা-পিনার বন্দোবস্ত করতে হবে, এরকম শর্ত করে পালন করা বিদ্য়াত ও বদ্ রছমের অন্তর্ভূক্ত। এছাড়া উপরোক্ত সর্ব প্রকার খানার সময় যদি কোন প্রকার শরীয়ত বিরোধী যেমন: বেপর্দা, গান-বাজনা, নৃত্য করা, উপহার বা উপঢৌকনের শর্ত করা এবং ধনী-গরীবের মধ্যে খাওয়ার প্রার্থক্য করা ইত্যাদি সংঘটিত হলে তা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম এবং কবীরা গুণাহের কারণ। আর যদি শর্ত ব্যতিত নির্দিষ্ট দিন বা সময়ে পালন করে, তাতে শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ সংঘটিত না হয়, তবে তা অবশ্যই জায়িয ও সাওয়াবের কারণ। 

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বেহেস্তীদের শানে সূরা দাহর-এ ৮ ও ৯ নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেছেন, “তারা মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহব্বতে খাদ্য খাওয়ায়- মিসকীন, ইয়াতিম এবং বন্দীদেরকে, আর বলে নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদেরকে খাদ্য খাওয়াই, আর এজন্য তোমাদের কাছে কোন প্রকার জাযা বা বদলা ও কৃতজ্ঞতা কামনা করিনা। আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা কর এবং রাত্রে নামায পড়, যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে শান্তিতে বেহেস্তে প্রবেশ করবে।” আরো ইরশাদ হয়েছে- “দানশীল (ছাক্বী) মহান আল্লাহ্ পাক উনার বন্ধু, যদিও সে ফাসিক হয়, আর বখীল মহান আল্লাহ্ পাক উনার শত্রু, যদিও সে আবেদ হয়।” অতএব, মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে অনেক স্থানে মানুষকে খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেছেন। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, দারেমী, তিবরানী, কুরতূবী, আহ্কামুল কুরআন, কান্যুল ইমান, মাজহারী ইত্যাদি) 
আবা-২৫
৩৭৫ নং- সুওয়াল - কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের শুরুতে আউযুবিল্লাহ্ পাঠ করা কি?
সুওয়াল - কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের শুরুতে আউযুবিল্লাহ্ পাঠ করা কি? 

জাওয়াব - কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের শুরুতে আউযুবিল্লাহি মিনাশ্শাইত্বনীর রজিম পাঠ করা সুন্নাত।
কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
اذا قرات القران فا ستعذ با لله من الشيطان الرجيم.  অর্থঃ- “যখন কুরআন শরীফ পড়বেন, তখন বিতাড়ীত শয়তান থেকে মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করুন।” 
আবা-২৫
৩৭৪ নং- সুওয়াল -বর্তমানে অনেক ইসলামী ব্যক্তিত্বের বাসায়ও টেলিভিশন দেখা যায়। তারা খবর ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখার কথা বলে বিষয়টি জায়িয করে নিতে চান। কিন্তু টেলিভিশনে যেই সব অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় এবং বেপর্দা মহিলারা যেই ভাবে দেখা দেয় সেই নিরিখে বর্তমান অবস্থায় টেলিভিশন দেখা জায়িয কি?
সুওয়াল - মাসিক পৃথিবী, জূলাই/৯৫ সংখ্যায় নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়। তা কতটুকু সঠিক হয়েছে, দলীলসহ জানায়ে বাধিত করবেন। প্রশ্নঃ- বর্তমানে অনেক ইসলামী ব্যক্তিত্বের বাসায়ও টেলিভিশন দেখা যায়। তারা খবর ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখার কথা বলে বিষয়টি জায়িয করে নিতে চান। কিন্তু টেলিভিশনে যেই সব অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় এবং বেপর্দা মহিলারা যেই ভাবে দেখা দেয় সেই নিরিখে বর্তমান অবস্থায় টেলিভিশন দেখা জায়িয কি?
উত্তরঃ- উত্তরের আপত্তিকর অংশটুকু হুবহু তুলে ধরা হলো- “........... (টিভি)-এর পরিচালনার দায়িত্ব সৎ ও যোগ্য লোকদের হাতে পড়লে এর মাধ্যমে দেশ ও জাতীর বড় কল্যাণ সাধিত হতে পারে ...........।” “........ কাজেই প্রচার যন্ত্র হিসেবে টেলিভিশন খারাপ জিনিস নয় .......।” “.......অতএব বেপর্দা অবস্থায়, সৌন্দর্য প্রদর্শন করে টেলিভিশনের পর্দায় মহিলাদের আসা ও গায়রে মুহাররাম পুরুষের পক্ষে তাদেরকে দেখা সম্পূর্ণ নাজায়িয। কারণ বাস্তবে মহিলাদেরকে দেখা ও তাদের ছবি দেখার হুকুম নেই। “....... অর্থাৎ মহিলার ছবি আসার সাথে সাথেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে মহিলার দিকে না তাকিয়ে টেলিভিশনের ভাল শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো দেখতে চায় এবং এভাবে দেখতে পারে, তাহলে তার জন্য টেলিভিশনের ভাল শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো দেখা নাজায়িয নয়। “....... এটা তাক্ওয়াবান লোকদের পক্ষেই সম্ভব হতে পারে।
এখন আমার প্রশ্ন- শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রচার যন্ত্র হিসেবে টিভি জায়িয কি? এর দ্বারা হাক্বীক্বীভাবে দেশ ও জাতীর কোন কল্যাণ কামনা করা যায় কি? শরীয়তে পুরুষের ছবি ও মহিলার ছবির মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি? টিভির ভাল ও শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলি দেখা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু জায়িয? টিভির ছবি যে সমস্ত লোক দেখে, তাদের কি তাক্ওয়া থাকতে পারে বা তারা কি তাক্ওয়াবান হতে পারে?

জাওয়াব - মাসিক পৃথিবীতে উত্তর দেয়া হয়েছে যে, ‘প্রচার যন্ত্র হিসেবে টেলিভিশন খারাপ জিনিস নয়। মূলতঃ কোন প্রচার যন্ত্র ভাল কিম্বা মন্দ, সেটা ব্যক্তিগত অভিমতের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। বরং ভাল-মন্দ ফায়সালা হবে শরীয়তের দৃষ্টিতে। টেলিভিশনের মূলেই হচ্ছে ছবি, যা দেখা এবং দেখানো শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কাজেই প্রচার যন্ত্র হিসেবে টেলিভিশন যতই ভাল হোক না কেন, আর তার দ্বারা প্রকাশ্যে দেশ ও জাতীর যতবড় কল্যাণই সাধিত হোক না কেন, তা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, হাক্বীক্বীভাবে টেলিভিশনের মাধ্যমে মানুষের ঈমান, আমল, আখলাক সমস্ত কিছুই বরবাদ হয়ে যায়। কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
يسئلونك عن الخمر والميسر قل فيهما اثم كبير ومنافغ للناس.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে প্রশ্ন করা হয় মদ ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন, মদ ও জুয়ার মধ্যে মানুষের জন্য ফায়দা রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ই বড়।” এখানে লক্ষণীয় যে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মদ ও জুয়ার মধ্যে ফায়দা রয়েছে। মদ পান করলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, জুয়া খেললে রাতারাতি অনেক টাকা পাওয়া যায়। তথাপি এগুলোর মধ্যে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ বেশী বলে, এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। সুতরাং মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারীতা থাকা সত্বেও এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়, এগুলো হারাম। মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারীতার জন্য কেউ যদি এটাকে জায়িয মনে করে, তবে সে কুফরী করলো। তদ্রুপ ছবির মাধ্যমে প্রচারিত শিক্ষণীয় বিষয়কে কেউ যদি জায়িয মনে করে, তবে সেও কুফরী করলো। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন, والذى خبث لا يخرج الا نكدا.
অর্থঃ- “যা নাপাক, তা থেকে নাপাক ব্যতীত কিছু বের হয়না।” (সূরা আ’রাফ/৫৮) যেমন পেশাবের মধ্যে এসিড রয়েছে যার কারণে তা দিয়ে ময়লা কাপড় ধৌত করলে পরিস্কার হবে, কিন্তু পাক হবেনা। যদিও বাহ্যিকভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখা যায়, তথাপিও আভ্যন্তরীন নাপাকীর কারণে তা পরিধান করে নামায পড়লে জায়িয হবেনা। সুতরাং টেলিভিশন, ভিসিআর ইত্যাদির মধ্যে যদিও কোন প্রকার শিক্ষণীয় বিষয় প্রচার অথবা ইসলামী প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু যেহেতু তার মূলই হলো- ছবি, যা স্পষ্টত হারাম ও নাজায়িয। এছাড়াও বর্তমানে টেলিভিশনের অন্যান্য অশ্লীলতার কারণেও এগুলো হারামের পর্যায়ে পড়ে। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ولا تلبس الحق بالباطل
অর্থঃ- “সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না।” অন্যত্র মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, افتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض.
অর্থঃ- “তোমরা কিতাবের কিছু অংশ মানবে, আর কিছু অংশ মানবে না, তা হবেনা।” সুতরাং টিভিতে বা ভিসিআর-এ জ্ঞানমূলক, শিক্ষামূলক কিম্বা ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার বা দেখার মধ্যে বাহ্যিকভাবে কিছু উপকারীতা থাকা সত্বেও, যেহেতু এসবের মূল হচ্ছে ছবি, যার ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ই বড়। তাই টিভি, ভিডিওতে কোন অনুষ্ঠান করা বা দেখা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। যেহেতু টিভি দেখা হারাম, সেহেতু যারা টিভি দেখে, তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে কখনো তাক্ওয়াবান হতে পারেনা। বরং তারা চরম ফাসেকের অন্তর্ভূক্ত। উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তরে তারা আরো বলেছে যে, টিভিতে প্রচারিত শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলি দেখা নাজায়িয নয়, অর্থাৎ জায়িয। শরীয়তের উসূল হলো- হারামকে হালাল জানা কুফরী। কাজেই টেলিভিশনের ছবি দেখা ও দেখানো, যে ব্যক্তি জায়িয মনে করে, সে কুফরী করলো। তাদের বক্তব্যে আরো বুঝা যাচ্ছে যে, টেলিভিশনের প্রোগ্রামগুলি শুধু পুরুষের দ্বারাই করলে এবং শুধু পুরুষেরাই দেখলে তা জায়িয হয়ে যাবে; যা বাস্তবে কখনোই সম্ভব নয়। কারণ প্রত্যেক বাড়ীতে পুরুষ-মহিলা, ছেলে-মেয়ে উভয়ই আছে। আর যদিও সম্ভব হয়, তথাপিও তা দেখা জায়িয হবেনা। কারণ ছবি মাত্রই হারাম। শরীয়তে পুরুষের ছবি ও মহিলার ছবির মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি, উভয়টাকেই হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব টিভি বা যে কোন প্রচার মাধ্যমে ছবির সাহায্যে কোন কিছু প্রসার-প্রচার করা হলে, তা যতই শিক্ষণীয় হোক বা যে কোন ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হোক না কেন, সেটা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان اذد الناس عذابا عند الله المصورون. (بخارى)  অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, لا تد خل الملائكة بيتا فيه كلت وبصاوبر.
অর্থঃ- “ঐ ঘরে ফেরেস্তা প্রবেশ করেনা, যে ঘরে প্রাণীর ছবি ও কুকুর থাকে।” (বুখারী শরীফ) ইত্যাদি আরো অনেক দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে, যা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যায় ৩৫৩টি দলীলের মাধ্যমে প্রাণীর ছবি আঁকা, তৈরী করা, দেখা, রাখা, তোলা, ছাপানো ইত্যাদি হারাম বলে প্রমাণ করা হয়েছে।
আবা-২৫

ছবি ফতোয়া - লিংক
৩৭৩ নং- সুওয়াল -জনৈক আলেমের কাছে শুনলাম, ছিদ্রওয়ালা টুপি অর্থাৎ নেট টুপি মাথায় দেওয়া মাকরূহ্। এই কথা কতটুকু সত্য?
সুওয়াল - মাসিক মদীনা, জুন/৯৫ইং সংখ্যায় নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপানো হয়-
প্রশ্নঃ- জনৈক আলেমের কাছে শুনলাম, ছিদ্রওয়ালা টুপি অর্থাৎ নেট টুপি মাথায় দেওয়া মাকরূহ্। এই কথা কতটুকু সত্য?
উত্তরঃ- ছিদ্রওয়ালা (নেট-এর) টুপি ব্যবহার কেন মাকরূহ্ হবে, তার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছিনা। মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যায় টুপির ফতওয়ায় উল্লেখ করেছিলেন যে, চার টুকরা বিশিষ্ট সুতি কাপড়ের গোল টুপি খাস সুন্নাত এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে টুপি পরিধান করেননি, তা সুন্নাতের খেলাফ। মাসিক মদীনার সম্পাদক প্রশ্নের উত্তরে ছিদ্রওয়ালা (নেটের) টুপি পরিধান মাকরূহ্ নয় বলে যে উত্তর দিয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিদ্রওয়ালা নেটের টুপিও পরিধান করেছেন। তাহলে কি সত্যিই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ধরণের টুপি পরিধান করেছেন, যা পরিধান করলে সুন্নাতের খেলাফ হবেনা?

জাওয়াব - মাসিক মদীনার সম্পাদকের উত্তর অশুদ্ধ হওয়ার সাথে সাথে তার অজ্ঞতা ও জিহালত চরমভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে। মূলতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় যে উল্লেখ করা হয়েছে, চার টুকরা বিশিষ্ট সুতি কাপড়ের সাদা গোল টুপি খাস সুন্নাত, এটাই সহীহ্। ছিদ্রওয়ালা (নেটের) টুপি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে কখনো পরিধান করেননি। অতএব তা সুন্নাতের খেলাফের সাথে সাথে মাকরূহে তানযিহীরও অন্তর্ভূক্ত। এছাড়াও আজকাল অনেক নামধারী মাওলানা, ওয়ায়েজ, মুফ্তী, মুহাদ্দিছ ও মুফাস্সির বলে থাকে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব ধরণের টুপি পরিধান করেছেন। একথাটা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়ার শামীল, যা মানুষকে জাহান্নামী করে দেয়। কেননা হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
من كذب على متعمدا فليتبوا مقعده من النار.  অর্থঃ- “যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে, সে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার বাসস্থান জাহান্নামে বানিয়ে নেয়।” কাজেই শরীয়তের কোন বিষয়ে বিনা তাহ্ক্বীকে অর্থাৎ মনগড়া বলা, ফতওয়া দেয়া, প্রশ্নের উত্তর দেয়া নাজায়িয, হারাম ও শক্ত গুণাহের কাজ।
আবা-২৫

টুপি ফতোয়া - 
৩৭২ নং- সুওয়াল -রমযান মাসে হাফেয ছাহেবগণ খতমে তারাবীহ পড়িয়ে শর্ত সাপেক্ষ কিংবা বিনা শর্তে কোন প্রকার টাকা-পয়সা ইত্যাদি হাদিয়া ও উপঢৌকন নামে গ্রহণ করতে পারবেন কি?
সুওয়াল - মাসিক মঈনুল ইসলাম, সফর সংখ্যা/১৪১৬ হিজরী নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসা ও তার সমাধান ছাপানো হয়- জিজ্ঞাসা - রমযান মাসে হাফেয ছাহেবগণ খতমে তারাবীহ পড়িয়ে শর্ত সাপেক্ষ কিংবা বিনা শর্তে কোন প্রকার টাকা-পয়সা ইত্যাদি হাদিয়া ও উপঢৌকন নামে গ্রহণ করতে পারবেন কি? বিস্তারিত জানিয়ে সুখী করবেন। সমাধান - পবিত্র রমযান মাসে শর্ত সাপেক্ষ টাকার বিণিময়ে কুরআন শরীফ খতম সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়িয। দাতা ও গ্রহীতা উভয়ই গোনাহ্গার হবে। ইমাম, মুক্তাদী কেউ সাওয়াব পাবেনা। পক্ষান্তরে হাদীয়ার নামে শর্ত ব্যতীত যা আদান-প্রদান করা হয়, তাও আল মা’রুফ কাল মাশরুত (প্রচলিত রেওয়াজ শর্তেরই নামান্তর) নীতিবাক্য অনুযায়ী নিষিদ্ধ। টাকা ব্যতীত কোন হাফেয পাওয়া না গেলে খতমে তারাবীহ্ না পড়ে সুরা তারাবীহ্ পড়তে হবে। (শামী-৫/৪৬, যাওয়ালুস্ সুন্নাহ্-১৩, মাসায়েলে রমাযান-২৭) উপরোক্ত সংখ্যা ছাড়াও ইতিপূর্বে উক্ত পত্রিকার একাধিক সংখ্যায় খতমে তারাবীহ্ পড়ে এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা নাজায়িয ও হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে। অথচ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ২৩ ও ২৪তম সংখ্যায় অগণিত দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে উজরত গ্রহণ জায়িয বলা হয়েছে। আমরা এখন কোন পত্রিকার উত্তরটি সঠিক বলে জানবো?

জাওয়াব - মাসিক মঈনুল ইসলাম পত্রিকার সমাধান অশুদ্ধ ও ভুল হয়েছে এবং সেটা আমলের অযোগ্য। কারণ আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ২৩তম সংখ্যায় উল্লেখ করেছি ওলামায়ে দেওবন্দের প্রায় সকলেই তাদের কিতাবসমূহে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করাকে হারাম ও নাজায়িয বলেছে। আর এ ব্যাপারে তারা দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন- আল্লামা শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত রমলী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে। অথচ আমরা আমাদের উক্ত পত্রিকায় অকাট্য দলীল দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণ করেছি যে, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত গ্রহণ করার ব্যাপারে আল্লামা শামী ও আল্লামা রমলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল। অতএব আমাদের আল বাইয়্যিনাত ২৩ ও ২৪তম সংখ্যা সংগ্রহ করে সঠিক জাওয়াবটি জেনে নিন। যাতে উজরত গ্রহণ করা জায়িয হওয়ার ব্যাপারে ৫৩টি দলীল দেয়া হয়েছে।  সুতরাং ৫৩টি দলীলের মোকাবিলায় মাত্র দু’তিনটি দলীল, তাও আবার নির্ভরযোগ্য নয়, তা কিভাবে গ্রহণীয় হতে পারে? মূলতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ফতওয়াই গ্রহণযোগ্য এবং এ ফতওয়া অনুযায়ীই আমল করতে হবে।
আবা-২৫

উজরত ফতোয়া - লিংক
৩৭১ নং- সুওয়ালঃ- ওযু সমাপ্ত করার পর কারো মনে হলো যে, কোন অঙ্গ ধৌত করা বাকী আছে, এখন তাকে পুণরায় ওযু করতে হবে কি?

সুওয়ালঃ- ওযু সমাপ্ত করার পর কারো মনে হলো যে, কোন অঙ্গ ধৌত করা বাকী আছে, এখন তাকে পুণরায় ওযু করতে হবে কি?

জাওয়াবঃ- যে অঙ্গ বাকী আছে, ওটা ধৌত করলেই চলবে। পুণরায় ওযু করার জরুরত নেই।

আবা-২৪
৩৭০ নং- সুওয়াল - ‘যার পীর নেই, তার পীর শয়তান’- এ উক্তিটি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথায়ও আছে কি? জানতে ইচ্ছুক।
সুওয়াল - ‘যার পীর নেই, তার পীর শয়তান’- এ উক্তিটি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর কোথায়ও আছে কি? জানতে ইচ্ছুক। 

জাওয়াব - হ্যাঁ, কথাটা সরাসরি কুরআন শরীফের আয়াত বা হাদীছ শরীফ নয়, তবে অবশ্যই এটা অনুসরণীয় বুযুর্গানে দ্বীনের কথা। মূল আরবীতে হলো-
من ليس له شيخ فشيخه شيطان.
অর্থঃ- যার শায়খ (পীর) নেই, তার শায়খ (পীর) শয়তান। হযরত বায়েজীদ বোস্তামী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত জোনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ বুযুর্গানে দ্বীন একথা বলেছেন, যা ওনাদের সীরত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
উপরোক্ত কাওলের ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়, যদি কোন ব্যক্তি, কোন হাক্কানী আল্লাহ্ ওয়ালা পীর ছাহেব (শায়খ) উনার (তথাকথিত নয়) মুরীদ হয়, তাহলে তার পক্ষে মহান আল্লাহ পাক উনার মতে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  পথে কায়েম থাকা সম্ভব। কারণ মহান আল্লাহ্ পাক  কুরআন শরীফে বলেন,
وما ينطق عن الهواء ان هوالا وحى يوحي.
অর্থঃ- “তিনি (হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনি ওহী ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না।”
এ আয়াত শরীফের তফসীরে হাদীছে কুদসীতে উল্লেখ করা হয়,
لايزال العبد يشقرب الى بالنوافل حتى احبه فاذا احببت كنت كنت سمعه الذى يسمع به كنت بصره الذى يبصربه- كنتلسائه الذى ينطق به- كنت يده الذى يبطش بها كنت رجله الذى يمشى بها- فاذا سئلنى اعطيته.
অর্থঃ- “বান্দা অতিরিক্ত আমল (সুন্নতে যায়েদা, মোস্তাহাব, নফল, মোবাহ্ ইত্যাদি) করতে করতে আমার এতটুকু নৈকট্য লাভ করে যে, আমি তাকে মহব্বত করি। আমি যখন তাকে মহব্বত করি, তখন আমি তার কান হই, সে আমার কানে শুনে। আমি তার চক্ষু হই, সে আমার চোখে দেখে। আমি তার জবান হই, সে আমার জবানে কথা বলে। আমি তার হাত হই, সে আমার হাতে ধরে। আমি তার পা হই, সে আমার পায়ে চলে। যখন সে আমার কাছে কিছু চায়, তা অবশ্যই আমি তাকে দান করি এবং তখন অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দান করি।”
অর্থাৎ বান্দা কখনও মহান আল্লাহ্ পাক হয় না, আবার মহান আল্লাহ্ পাকও কখনও বান্দা হন না। মূল কথা হলো- বান্দা মহান আল্লাহ্ পাক উনার আনুগত্যতা করতে করতে এতটুকু অনুগত হয় যে, তখন তার কান, চোখ, যবান, হাত, পা ইত্যাদি সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং সে নিজেও মহান আল্লাহ্ পাক উনার হুকুমের খেলাফ কোন কাজ করে না। কাজেই কোন ব্যক্তি যদি কোন হক্কানী পীর সাহেব (শায়খ) উনার নিকট বাইয়াত (মুরীদ) হয়, তাহলে সে তার পীর ছাহেবের কথামত চলবে এবং এর কারণেই আল্লাহ্ পাক উনার মত এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  পথের উপর কায়েম থাকবে। আর যদি কোন পীর সাহেবের কাছে বাইয়াত না হয়, তাহলে সে অবশ্যই নফসের তথা শয়তানের পায়রবী করবে এবং শয়তানই তার একমাত্র উপদেষ্টা হবে। কারণ, তার নফস এছলাহ্ বা সংশোধন হয়নি। কাজেই “যার পীর নেই, তার পীর হচ্ছে শয়তান” কথাটা শুদ্ধ এবং যারা এটাকে অসুদ্ধ বলে তাদের কথাই মুলতঃ অশুদ্ধ।
আবা-২৪
৩৬৯ নং- সুওয়াল - আমরা কেন শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি? অনেকে বলে থাকে যে, “একমাত্র হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  উম্মতগণই দাওয়াতী কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এই দাওয়াতী কাজ করার দরুনই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, অন্য কোন কারণে নয়।” এটা সঠিক কিনা তা জানালে বাধিত হবো।
সুওয়াল - আমরা কেন শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি? অনেকে বলে থাকে যে, “একমাত্র হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  উম্মতগণই দাওয়াতী কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এই দাওয়াতী কাজ করার দরুনই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, অন্য কোন কারণে নয়।” এটা সঠিক কিনা তা জানালে বাধিত হবো।
জাওয়াব - একমাত্র সাইয়্যিদুল মুরছালীন, ইমামুল মুরছালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়ার কারণেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি। অনেকে বলে থাকেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  উম্মতই শুধুমাত্র দাওয়াতী কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন এবং এ কারণেই আমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত হয়েছি, এ কথাটা শুদ্ধ নয়।  হাদীছ  শরীফে উল্লেখ আছে যে, “সমস্ত হযরত নবী আলাহিস সালামগণ উনারা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  উম্মত হবার জন্য মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট আরজু করেছেন। সমস্ত নবী আলাহিস সালাম উনার দোয়াই মহান মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করেছেন, তবে সরাসরি কবুল করেছেন হযরত ঈসা আলাহিস সালাম উনার দোয়া। অনেকে মনে করে থাকে বা বলে থাকে, একমাত্র হযরত ঈসা আলাহিস সালাম  ব্যতীত আর কোন নবী আলাহিস সালাম উনার দোয়াই কবুল হয়নি, এটা সঠিক নয়। কেননা দোয়া কবুল হয় তিন প্রকারে। প্রথম প্রকার- বান্দা যা চায়, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সরাসরি তা দিয়ে দেন। দ্বিতীয় প্রকার- বান্দা যা চায়, তার চেয়ে যা বেশী জরুরী, সেটাই মহান আল্লাহ্ পাক দিয়ে থাকেন, যে জরুরত সম্বন্ধে বান্দা নিজেই জানে না। তৃতীয় প্রকার- বান্দা যা চায়, মহান আল্লাহ্ পাক সেটা তাকে না দিয়ে তা কবুল করে তার সওয়াবটুকু পরকালের জন্য জমা করে রাখেন। বান্দা যখন হাশরের ময়দানে উপস্থিত হয়ে তার নেকী কম দেখবে, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “হে বান্দা! তোমার জন্য অমুক স্থানে নেকী রাখা হয়েছে,” তখন সেই বান্দা গিয়ে দেখবে যে, তার জন্য পাহাড় পাহাড় নেকী রাখা হয়েছে। সে বলবে, আয় আল্লাহ পাক! আমি তো এত নেক কাজ করিনি, আমার এত নেকী আসলো কোথা থেকে? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলবেন, “তুমি যে সকল দোয়া দুনিয়াতে করেছিলে, যার বদলা দুনিয়াতে দেয়া হয়নি, সে কারণে তুমি মনে করেছিলে যে, তোমার দোয়া কবুল করা হয়নি, অথচ আমি তা কবুল করেছিলাম এবং তাই পাহাড় পাহাড় নেকী আকারে জমা হয়েছে।” তখন বান্দা বলবে, মহান আল্লাহ্ পাক! দুনিয়াতে আমার সমস্ত দোয়াগুলিরই বদলা না দিয়ে যদি পরকালের জন্য জমা রাখা হতো, তাহলে তা আমার জন্য ফায়দার কারণ হতো।
উপরোক্ত হাদীছ  শরীফ-এর মাধ্যমে এটাই সাবেত হয়, শুধুমাত্র দাওয়াতের কারণেই যদি উম্মতে মুহম্মদীর শ্রেষ্ঠত্ব হতো, তাহলে অন্যান্য নবী আলাহিস সালাম তিনি দাওয়াতের দায়িত্ব পাওয়া সত্ত্বেও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  উম্মত হবার জন্য দোয়া করতেন না। বরং উম্মতে হাবীবী উনার শ্রেষ্ঠত্ব দাওয়াতের কারণে নয় বরং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার কারণে। আরও  কুরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
وكذالك جعلناكم امة وسطا لتكونوا شهداء على الناس ويكون الرسول عليكم شهيدا.
অর্থঃ- “এরূপেই আমি তোমাদেরকে উম্মতে ওয়াসাত (শ্রেষ্ঠ উম্মত) করেছি। যেন তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও, সমস্ত মানুষের জন্য এবং যাতে রসূল আলাহিস সালামগণ উনারা সাক্ষ্যদাতা হন, তোমাদের জন্য।” (সূরা বাক্বারা-১৪৩)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়, হাশরের ময়দানে যখন সমস্ত নবী আলাহিস সালামগণ উনাদের গুণাহ্গার উম্মতগণকে জিজ্ঞেস করা হবে, “তোমরা কেন নেক কাজ করনি?” তখন তারা বলবে, দুনিয়াতে আমাদের কাছে কোন আসমানী কিতাবও আসেনি এবং কোন হযরত নবী আলাহিস সালাম উনারা আগমন করেনি। তখন আল্লাহ্ পাক তিনি নবী আলাহিমুস সালামগণ উনাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন, “আপনারা কি তাদের কাছে দাওয়াত পৌঁছাননি?” তাঁরা বলবেন, “হ্যাঁ, পৌঁছিয়েছি।” তখনও অন্য নবী আলাহিমুস সালাম উনার উম্মতগণ তা অস্বীকার করবে। তখন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলবেন, “হে নবী আলাহিমুস সালামগণ! আপনাদের সাক্ষী কোথায়?” তখন উনারা বলবেন, উম্মতে হাবীবীগণই আমাদের সাক্ষী। তখন উম্মতে হাবীবীগণকে ডেকে জিজ্ঞেস করা হলে উনারা বলবেন, “হ্যাঁ, সমস্ত নবী আলাহিমুস সালামগণ উনারা দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং দায়িত্ব পালন করেছেন।” একথা শুনে অন্যান্য নবী আলাহিমুস সালামগণ উনাদের উম্মতগণ বলবেন, উম্মতে হাবীবীগণ উনারা তো আমাদের থেকে অনেক পরে এসেছে, তারা কিভাবে আমাদের সাক্ষী হয়? তখন মহান আল্লাহ্ পাক উম্মতে হাবীবীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা বলবেন, “হ্যাঁ, আমরা তাদের থেকে অনেক পরে এসেছি, তবে আমাদের নিকট এসেছিলেন সাইয়্যিদুল মুরছালীন, ইমামুল মুরছালীন  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তিনি আমাদেরকে এ বিষয়ে জানিয়েছেন। আমরা উনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং উনাকে সত্য বলে জেনেছি, তাই আমাদের সাক্ষ্য সত্য। অতঃপর মহান আল্লাহ্ পাক  তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করবেন এবং তখন উম্মতে হাবীবীকে সমর্থন করে সাক্ষী দেবেন, হ্যাঁ, তারা যা বলেছে সবই সত্য এবং আমিই তাদেরকে এ তথ্য জানিয়েছি, যা আমি মহান আল্লাহ্ পাক উনার তরফ থেকে জেনেছি। (সিহাহ সিত্তাহ্ দ্রষ্টব্য)
সুতরাং উপরোক্ত আয়াত শরীফে আমাদেরকে যে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, তা দাওয়াতী কাজ করার জন্য নয় বরং তা  হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  প্রকৃত উম্মত হবার কারণে।
কুরআন শরীফের আয়াত এবং সহীহ্  হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আছে যে, আগেকার উম্মতগণের উপরও দাওয়াতের দায়িত্ব ছিল। যেমন ‘সূরা ইয়াসীন’ উল্লেখ করা হয়েছে, “কোন এক জনপদে রসূল আলাহিস সালামগণ আগমন করলে সেখানকার অধিবাসীগণ উনাদের রিসালতকে অস্বীকার করে হত্যা করার জন্য উদ্যত হলো। তখন শহরের প্রান্তভাগ থেকে এক ব্যক্তি, যিনি ঈমান গ্রহণ করেছিলেন, তিনি দৌড়ে এলেন এবং তার সম্প্রদায়কে রসূল আলাহিস সালামগণকে হত্যা করতে নিষেধ করলেন এবং তাঁদের অনুসরণ করার উপদেশ দিলেন।”
এটা ছাড়া হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “মহান আল্লাহ্ পাক হযরত জিবরাঈল আলাহিস সালাম উনার নিকট ওহী পাঠালেন, অমুক অমুক শহরের সমগ্র বাসিন্দাসহ উল্টাইয়া দাও।” তখন হযরত জিবরাঈল আলাহিস সালাম আরজ করলেন, “হে পরওয়ারদেগার! এ শহরে আপনার অমুক বান্দা রয়েছে, যে মুহূর্তকালও আপনার নাফরমানীতে লিপ্ত হয়নি।” তখন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করলেন, “শহরটিকে ঐ ব্যক্তি এবং সমগ্র বাসিন্দাসহ তাদের উপর উল্টাইয়া দাও, কারণ আমার জন্য ঐ ব্যক্তির চেহারায় এক মুহূর্তের জন্য পরিবর্তন আসেনি, অর্থাৎ সে আফসোস করেনি।”
বণী ইসরাঈল আমলের অনুরূপ আরো একটি ওয়াকেয়া তাফসীরে উল্লেখ করা হয়, আল্লাহ পাক হযরত ইউশা বিন নুন আলাহিস সালাম উনার উপর ওহী নাযিল করলেন, “হে আমার নবী! আপনার উম্মতের মধ্যে এক লক্ষ লোককে ধ্বংস করে দেয়া হবে, যার মধ্যে ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত (গুমরাহ)।” তখন হযরত ইউশা বিন নুন আলাহিস সালাম তিনি বললেন, “আয় আল্লাহ পাক! ৬০ হাজার লোক সরাসরি গুণাহে লিপ্ত, তাই তাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে। কিন্তু বাকী ৪০ হাজার লোককে ধ্বংস করা হবে কেন?” তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “যেহেতু তারা তাদের সাথে মিলা-মিশা, ওঠা-বসা করে এবং সম্পর্ক রাখে। আর গুণাহের কাজে বাধা প্রদান করেনা, তাই তাদেরকেসহ ধ্বংস করে দেয়া হবে।”
পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপরও দাওয়াতের দায়িত্ব ছিল, কেননা দায়িত্ব থাকার কারণেই তা পালন না করার জন্য ‘বনী ঈসরাইলের’ উল্লেখিত ব্যক্তি ও সম্প্রদায়কে শাস্তি পেতে হয়েছে।
সুতরাং উপরোক্ত আয়াত শরীফ,  হাদীছ  শরীফ এবং তার আনুষাঙ্গিক ঘটনা ব্যতীত আরও অনেক আয়াত শরীফ,  হাদীছ  শরীফ এবং ঘটনার মাধ্যমে জানা যায় যে, পূর্ববর্তী উম্মতগণ যে দাওয়াতের কাজ করেছেন, তা তাফসীরে রূহুল মায়ানী, তাফসীরে মাযহারী, তাফসীরে আমিনিয়া, তাফসীরে খাযেন, তাফসীরে মা’আরেফুল  কুরআনইত্যাদি এবং এটা ব্যতীত বিশুদ্ধ  হাদীছ  শরীফের কিতাব দ্বারাও প্রমাণিত।
মহান আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ-এ বলেন,
كنتم خيرامة اخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.
অর্থঃ- “তোমরা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছ। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে ও বদ কাজের নিষেধ করবে এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি ঈমান আনবে।”
অনেকে ‘সূরা ইমরান’-এর উপরোল্লিখিত আয়াত শরীফ উল্লেখ করে বলে থাকে যে, আমাদেরকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বলা হয়েছে, কারণ আমরা সৎ কাজের আদেশ করি এবং অসৎ কাজের নিষেধ করি। মূলতঃ তাদের এ ব্যাখ্যা ঠিক নয়, কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়াটাই হলো আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ। আর এ ছাড়া আমাদের যতগুলো গুণ দেয়া হয়েছে, তাও একমাত্র  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার  কারণে। 
অন্যান্য নবী আলাহিমুস সালামগণ, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য আরজু করেছেন, তাই বলে কেউ যেন এটা মনে না করে যে, উম্মতে হাবীবীর শ্রেষ্ঠত্ব অন্যান্য নবী আলাহিমুস সালামগণ হতে বেশী। বরং শুধুমাত্র হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারণে যে উম্মতে হাবীবীর শ্রেষ্ঠত্ব, তা বুঝানোর জন্যই সমস্ত নবী আলাহিমুস সালামগণ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হবার জন্য আরজু করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
আবা-২৪

৩৬৮ নং- সুওয়াল - আমাদের এলাকায় এক মৃত বৃক্তির জানাযার নামাজ দু’বার পড়ানো হয়েছে। দু’বারই ওলি নিজে নামায পড়েছে এবং পড়ার এযাযতও দিয়েছে। প্রথমবার ওলির এযাযতে এক মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল নামায পড়ায়েছেন এবং তার সাথে ওলি নিজেও নামায পড়েছে। দ্বিতীয়বার ওলির এযাযতে অন্যত্র জানাযার নামায পড়ানো হয়েছে। সেখানেও ওলি নিজে নামায পড়েছে। এ ঘটনা ঘটার পর ঐ ভাইস প্রিন্সিপালকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ওলির এযাযতে মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায একবার পড়ানোর পর আবার ঐ মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পাড়ানো জায়েয হয়েছে কি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, জায়েয হয়েছে। এ জবাব কি সঠিক হয়েছে? তা জানায়ে বাধিত করবেন।

৩৬৮ নং- সুওয়াল - আমাদের এলাকায় এক মৃত বৃক্তির জানাযার নামাজ দু’বার পড়ানো হয়েছে। দু’বারই ওলি নিজে নামায পড়েছে এবং পড়ার এযাযতও দিয়েছে। প্রথমবার ওলির এযাযতে এক মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল নামায পড়ায়েছেন এবং তার সাথে ওলি নিজেও নামায পড়েছে। দ্বিতীয়বার ওলির এযাযতে অন্যত্র জানাযার নামায পড়ানো হয়েছে। সেখানেও ওলি নিজে নামায পড়েছে। এ ঘটনা ঘটার পর ঐ ভাইস প্রিন্সিপালকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ওলির এযাযতে মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায একবার পড়ানোর পর আবার ঐ মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পাড়ানো জায়েয হয়েছে কি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, জায়েয হয়েছে। এ জবাব কি সঠিক হয়েছে? তা জানায়ে বাধিত করবেন।

সুওয়াল - আমাদের এলাকায় এক মৃত বৃক্তির জানাযার নামাজ দু’বার পড়ানো হয়েছে। দু’বারই ওলি নিজে নামায পড়েছে এবং পড়ার এযাযতও দিয়েছে। প্রথমবার ওলির এযাযতে এক মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল নামায পড়ায়েছেন এবং তার সাথে ওলি নিজেও নামায পড়েছে। দ্বিতীয়বার ওলির এযাযতে অন্যত্র জানাযার নামায পড়ানো হয়েছে। সেখানেও ওলি নিজে নামায পড়েছে। এ ঘটনা ঘটার পর ঐ ভাইস প্রিন্সিপালকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, ওলির এযাযতে মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায একবার পড়ানোর পর আবার ঐ মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায পাড়ানো জায়েয হয়েছে কি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, জায়েয হয়েছে। এ জবাব কি সঠিক হয়েছে? তা জানায়ে বাধিত করবেন।

জাওয়াব - উক্ত ভাইস প্রিন্সিপাল ছাহেবের জবাব অশুদ্ধ ও ভুল হয়েছে। কেননা আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক ওলির এযাযতে কোন মৃত ব্যক্তির জানাযার নামায একবার পড়ানোর পর দ্বিতীয়বার পড়ানো জায়েয নেই। হ্যাঁ তবে যদি ওলির এযাযত ব্যতীত অথবা ওলির নামায পড়ার পূর্বে ঐ মৃত ব্যক্তির যদি একাধিকবারও জানাযার নামায পড়ানো হয়, তবে তা জায়েয রয়েছে। (দুররুল মুখতার, শামী, কাঞ্জ, ফতওয়ায়ে দেওবন্দ)
আবা-২৪ 
৩৬৭ নং- সুওয়াল - টাখনুর নীচে কাপড় পরা জায়েয আছে কিনা, জানায়ে বাধিত করবেন?
সুওয়াল - টাখনুর নীচে কাপড় পরা জায়েয আছে কিনা, জানায়ে বাধিত করবেন?


জাওয়াব - টাখনুর নীচে কাপড় পরা হারাম। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “লুঙ্গি, সেলওয়ার, পায়জামা ইত্যাদি জাতীয় কাপড় দ্বারা টাখনুর নীচের অংশ আবৃত থাকলে, তা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে অর্থাৎ ঐ ব্যক্তিই জাহান্নামে যাবে। কারণ শরীরের এক অংশ জাহান্নামে যাবে, আরেক অংশ জান্নাতে যাবে, তা সম্ভব নয়। কাজেই পুরুষের জন্য টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান করা হারাম এবং কবীরা গুণাহ্। (বুখারী শরীফ, আবূ দাউদ শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী মিরকাত শরীফ  ইত্যাদি)
আবা-২৪
৩৬৬ নং- সুওয়াল - সফর মাস নাকি অশুভ, এটা বলা শরীয়তে ঠিক হবে কি?

সুওয়াল - সফর মাস নাকি অশুভ, এটা বলা শরীয়তে ঠিক হবে কি?

জাওয়াব - বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ইত্যাদি আরো হাদীছ শরীফের কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে-  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “ছোঁয়াচে, অশুভ বা কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই। আর পেঁচার মধ্যে কুলক্ষণ নেই এবং সফর মাসে অশুভ বলতে কিছু নেই।”
অতএব সফর মাসকে অশুভ বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয ও গুণাহের কাজ।

আবা-২৪
৩৬৫ নং- সুওয়াল - পুকুরের মাছ পানির নীচে থাকা অবস্থায় বেচা-কেনা করা জায়েয কি?
সুওয়াল - পুকুরের মাছ পানির নীচে থাকা অবস্থায় বেচা-কেনা করা জায়েয কি?

জাওয়াব - পানির নীচের মাছ বেচা-কেনা করা জায়েয নেই। কারণ শরীয়তে অনির্দিষ্ট অর্থাৎ যার পরিমাণ নির্ধারিত করা হয়নি আর অদৃশ্য যা দেখানো বা দেখা হয়নি, এরূপ মাল বেচা-কেনা জায়েয নেই। (আলমগীরী, আইনুল হেদায়া, শামী ইত্যাদি ফিক্বাহ্র কিতাবসমূহ)
আবা-২৪