৩৭৬ নং- সুওয়াল - ছেলে-মেয়ের জন্ম দিবসের খানা, আক্বীকার খানা, মুসলমানীর খানা, বিবাহের খানা এবং মানুষ ইন্তেকালের পর ৩ দিন, ৭ দিন, চল্লিশা ইত্যাদির খানা কি জায়িয আছে? অনেকে বলে থাকে, এটা নাজায়িয ও হারাম। আবার কেহ কেহ বলেন, এটা তাকওয়ার খেলাফ। আবার কেহ বলেন যে, এটা সম্পূর্ণ জায়িয। সঠিক জবাবদানে ধন্য করবেন।

সুওয়াল - ছেলে-মেয়ের জন্ম দিবসের খানা, আক্বীকার খানা, মুসলমানীর খানা, বিবাহের খানা এবং মানুষ ইন্তেকালের পর ৩ দিন, ৭ দিন, চল্লিশা ইত্যাদির খানা কি জায়িয আছে? অনেকে বলে থাকে, এটা নাজায়িয ও হারাম। আবার কেহ কেহ বলেন, এটা তাকওয়ার খেলাফ। আবার কেহ বলেন যে, এটা সম্পূর্ণ জায়িয। সঠিক জবাবদানে ধন্য করবেন।

 জাওয়াব - উপরোক্ত সর্ব প্রকার খানাই শর্ত সাপেক্ষে জায়িয এবং শর্ত সাপেক্ষে নাজায়িয হয়ে থাকে। তন্মধ্যে আক্বীকা ও বিবাহের উদ্দেশ্যে যে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তা খাছ সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। যেমন হাদীছ শরীফে উল্লেখ রয়েছে, “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আক্বীকার উদ্দেশ্যে ছেলের জন্য দু’খাসি এবং মেয়ের জন্য একখাসি যবেহ্ করার নির্দেশ দিয়েছেন।” 

আরো ইরশাদ হয়েছে যে, “হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের প্রত্যেক বিবাহ মুবারকের ওলীমা বা খানাপিনার বন্দোবস্ত করেছিলেন এবং বিবাহ উপলক্ষে ওলীমা করার জন্য নির্দেশও দিয়েছেন। ওলীমা বলা হয়- বিবাহ উপলক্ষে ছেলের বাড়ীতে যে খানার ব্যবস্থা করা হয়। আর মেয়ের বাড়ীতে যে খানার ব্যবস্থা করা হয়, তাহচ্ছে শুকরানা স্বরূপ। কারণ মেয়ের যারা অভিভাবক তারা, মহান আল্লাহ্ পাক উনার এবং মহান আল্লাহ্ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ পালন করতঃ মেয়ের ইজ্জত-আবরু রক্ষা করতে পেরেছে, সেজন্য। এছাড়াও নির্দেশ রয়েছে যে, মেহমানকে মেহমানদারী করার, যা খাছ সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত।

খতনা বা মুসলমানী করা হলো শিয়ারুল ইসলাম (মুসলমানের মুসলমান হওয়ার চিহ্ন) ও খাস সুন্নাতের অন্তর্ভূক্ত। আর জন্মদিন, উভয় উপলক্ষে শোকরানা স্বরূপ খাওয়ার ব্যবস্থা করা জায়িয রয়েছে। কারণ যে খৎনা করালো, সে খাছ সুন্নত পালন করতে পেরেছে এবং সাথে সাথে ভবিষ্যতে যেন আরো সুন্নত পালন করতে পারে এবং সন্তানের দ্বারা পালন করাতে পারে, সেজন্য খাওয়া ও দোয়ার ব্যবস্থা করেছে। আর জন্মদিন উপলক্ষে খাওয়া ও দোয়ার ব্যবস্থা করার কারণ হচ্ছে যে, মহান আল্লাহ্ পাক তাকে এক বছর নেক হায়াত দিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে যেন নেক হায়াত দারাজ করেন, সেজন্য শোকরানা স্বরূপ খাওয়া ও দোয়ার ব্যবস্থা করা। তবে অবশ্যই ইহুদী-নাসারা ইত্যাদি বিধর্মীদের অনুসরণ করে জন্মদিন করা, আর এর মধ্যে মোমবাতি জ্বালানো, কেক্ কাটা, জন্মদিনের গান গাওয়া, সাথে বাজনার ব্যবস্থা করা এবং নৃত্য করা ইত্যাদি সমস্তই নাজায়িয ও হারাম ও কঠিন গুণাহ্রে কারণ। আর মৃত ব্যক্তির রূহের মাগ্ফিরাত কামনার্থে অর্থাৎ ইসালে সাওয়াব উপলক্ষে ৩ দিন, ৭ দিন, ১০ দিন, ২০ দিন, ৪০ দিন এবং বছরান্তে ইত্যাদি সময়ে খাওয়ার ব্যবস্থা করা জায়িয রয়েছে। কারণ হাদীছ শরীফে রয়েছে,
الميت كالغربق অর্থঃ- “মৃত ব্যক্তি ডুবন্ত ব্যক্তির ন্যায়।” 

অর্থাৎ যে ব্যক্তি সাঁতার না জানার দরুন পানিতে ডুবে যাচ্ছে, সে যেমন বাঁচার জন্য পানিতে খড়-কুটা পেলে তা ধরে বাঁচার চেষ্টা করে থাকে; তদ্রূপ মৃত ব্যক্তি সবসময় এই প্রত্যাশায় থাকে যে, তার কোন আত্মীয়-স্বজন নেকী পাঠায় কিনা, যার দ্বারা সে ফায়দা হাসিল করবে। জন্মদিন, খৎনা ও ইসালে সাওয়াব উপলক্ষে নির্দিষ্ট দিন এবং নির্দিষ্ট সময়েই খানা-পিনার বন্দোবস্ত করতে হবে, এরকম শর্ত করে পালন করা বিদ্য়াত ও বদ্ রছমের অন্তর্ভূক্ত। এছাড়া উপরোক্ত সর্ব প্রকার খানার সময় যদি কোন প্রকার শরীয়ত বিরোধী যেমন: বেপর্দা, গান-বাজনা, নৃত্য করা, উপহার বা উপঢৌকনের শর্ত করা এবং ধনী-গরীবের মধ্যে খাওয়ার প্রার্থক্য করা ইত্যাদি সংঘটিত হলে তা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম এবং কবীরা গুণাহের কারণ। আর যদি শর্ত ব্যতিত নির্দিষ্ট দিন বা সময়ে পালন করে, তাতে শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ সংঘটিত না হয়, তবে তা অবশ্যই জায়িয ও সাওয়াবের কারণ। 

মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বেহেস্তীদের শানে সূরা দাহর-এ ৮ ও ৯ নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেছেন, “তারা মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহব্বতে খাদ্য খাওয়ায়- মিসকীন, ইয়াতিম এবং বন্দীদেরকে, আর বলে নিশ্চয়ই আমরা মহান আল্লাহ্ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদেরকে খাদ্য খাওয়াই, আর এজন্য তোমাদের কাছে কোন প্রকার জাযা বা বদলা ও কৃতজ্ঞতা কামনা করিনা। আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে- হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হে লোক সকল! তোমরা সালামের প্রচলন কর, খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা কর এবং রাত্রে নামায পড়, যখন লোকেরা ঘুমিয়ে থাকে, তাহলে শান্তিতে বেহেস্তে প্রবেশ করবে।” আরো ইরশাদ হয়েছে- “দানশীল (ছাক্বী) মহান আল্লাহ্ পাক উনার বন্ধু, যদিও সে ফাসিক হয়, আর বখীল মহান আল্লাহ্ পাক উনার শত্রু, যদিও সে আবেদ হয়।” অতএব, মহান আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে অনেক স্থানে মানুষকে খাওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করেছেন। (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, দারেমী, তিবরানী, কুরতূবী, আহ্কামুল কুরআন, কান্যুল ইমান, মাজহারী ইত্যাদি) 
আবা-২৫

0 Comments: