৩৭৪ নং- সুওয়াল -বর্তমানে অনেক ইসলামী ব্যক্তিত্বের বাসায়ও টেলিভিশন দেখা যায়। তারা খবর ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখার কথা বলে বিষয়টি জায়িয করে নিতে চান। কিন্তু টেলিভিশনে যেই সব অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় এবং বেপর্দা মহিলারা যেই ভাবে দেখা দেয় সেই নিরিখে বর্তমান অবস্থায় টেলিভিশন দেখা জায়িয কি?

সুওয়াল - মাসিক পৃথিবী, জূলাই/৯৫ সংখ্যায় নিম্নোক্ত প্রশ্নোত্তর ছাপা হয়। তা কতটুকু সঠিক হয়েছে, দলীলসহ জানায়ে বাধিত করবেন। প্রশ্নঃ- বর্তমানে অনেক ইসলামী ব্যক্তিত্বের বাসায়ও টেলিভিশন দেখা যায়। তারা খবর ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখার কথা বলে বিষয়টি জায়িয করে নিতে চান। কিন্তু টেলিভিশনে যেই সব অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় এবং বেপর্দা মহিলারা যেই ভাবে দেখা দেয় সেই নিরিখে বর্তমান অবস্থায় টেলিভিশন দেখা জায়িয কি?
উত্তরঃ- উত্তরের আপত্তিকর অংশটুকু হুবহু তুলে ধরা হলো- “........... (টিভি)-এর পরিচালনার দায়িত্ব সৎ ও যোগ্য লোকদের হাতে পড়লে এর মাধ্যমে দেশ ও জাতীর বড় কল্যাণ সাধিত হতে পারে ...........।” “........ কাজেই প্রচার যন্ত্র হিসেবে টেলিভিশন খারাপ জিনিস নয় .......।” “.......অতএব বেপর্দা অবস্থায়, সৌন্দর্য প্রদর্শন করে টেলিভিশনের পর্দায় মহিলাদের আসা ও গায়রে মুহাররাম পুরুষের পক্ষে তাদেরকে দেখা সম্পূর্ণ নাজায়িয। কারণ বাস্তবে মহিলাদেরকে দেখা ও তাদের ছবি দেখার হুকুম নেই। “....... অর্থাৎ মহিলার ছবি আসার সাথে সাথেই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে মহিলার দিকে না তাকিয়ে টেলিভিশনের ভাল শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো দেখতে চায় এবং এভাবে দেখতে পারে, তাহলে তার জন্য টেলিভিশনের ভাল শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলো দেখা নাজায়িয নয়। “....... এটা তাক্ওয়াবান লোকদের পক্ষেই সম্ভব হতে পারে।
এখন আমার প্রশ্ন- শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রচার যন্ত্র হিসেবে টিভি জায়িয কি? এর দ্বারা হাক্বীক্বীভাবে দেশ ও জাতীর কোন কল্যাণ কামনা করা যায় কি? শরীয়তে পুরুষের ছবি ও মহিলার ছবির মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি? টিভির ভাল ও শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলি দেখা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু জায়িয? টিভির ছবি যে সমস্ত লোক দেখে, তাদের কি তাক্ওয়া থাকতে পারে বা তারা কি তাক্ওয়াবান হতে পারে?

জাওয়াব - মাসিক পৃথিবীতে উত্তর দেয়া হয়েছে যে, ‘প্রচার যন্ত্র হিসেবে টেলিভিশন খারাপ জিনিস নয়। মূলতঃ কোন প্রচার যন্ত্র ভাল কিম্বা মন্দ, সেটা ব্যক্তিগত অভিমতের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। বরং ভাল-মন্দ ফায়সালা হবে শরীয়তের দৃষ্টিতে। টেলিভিশনের মূলেই হচ্ছে ছবি, যা দেখা এবং দেখানো শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কাজেই প্রচার যন্ত্র হিসেবে টেলিভিশন যতই ভাল হোক না কেন, আর তার দ্বারা প্রকাশ্যে দেশ ও জাতীর যতবড় কল্যাণই সাধিত হোক না কেন, তা শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, হাক্বীক্বীভাবে টেলিভিশনের মাধ্যমে মানুষের ঈমান, আমল, আখলাক সমস্ত কিছুই বরবাদ হয়ে যায়। কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
يسئلونك عن الخمر والميسر قل فيهما اثم كبير ومنافغ للناس.
অর্থঃ- “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনাকে প্রশ্ন করা হয় মদ ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন, মদ ও জুয়ার মধ্যে মানুষের জন্য ফায়দা রয়েছে। তবে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ই বড়।” এখানে লক্ষণীয় যে, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মদ ও জুয়ার মধ্যে ফায়দা রয়েছে। মদ পান করলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, জুয়া খেললে রাতারাতি অনেক টাকা পাওয়া যায়। তথাপি এগুলোর মধ্যে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ বেশী বলে, এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। সুতরাং মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারীতা থাকা সত্বেও এগুলো গ্রহণযোগ্য নয়, এগুলো হারাম। মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারীতার জন্য কেউ যদি এটাকে জায়িয মনে করে, তবে সে কুফরী করলো। তদ্রুপ ছবির মাধ্যমে প্রচারিত শিক্ষণীয় বিষয়কে কেউ যদি জায়িয মনে করে, তবে সেও কুফরী করলো। মহান আল্লাহ্ পাক তিনি আরো বলেন, والذى خبث لا يخرج الا نكدا.
অর্থঃ- “যা নাপাক, তা থেকে নাপাক ব্যতীত কিছু বের হয়না।” (সূরা আ’রাফ/৫৮) যেমন পেশাবের মধ্যে এসিড রয়েছে যার কারণে তা দিয়ে ময়লা কাপড় ধৌত করলে পরিস্কার হবে, কিন্তু পাক হবেনা। যদিও বাহ্যিকভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন দেখা যায়, তথাপিও আভ্যন্তরীন নাপাকীর কারণে তা পরিধান করে নামায পড়লে জায়িয হবেনা। সুতরাং টেলিভিশন, ভিসিআর ইত্যাদির মধ্যে যদিও কোন প্রকার শিক্ষণীয় বিষয় প্রচার অথবা ইসলামী প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু যেহেতু তার মূলই হলো- ছবি, যা স্পষ্টত হারাম ও নাজায়িয। এছাড়াও বর্তমানে টেলিভিশনের অন্যান্য অশ্লীলতার কারণেও এগুলো হারামের পর্যায়ে পড়ে। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক তিনি ইরশাদ করেন,
ولا تلبس الحق بالباطل
অর্থঃ- “সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না।” অন্যত্র মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন, افتؤمنون ببعض الكتاب وتكفرون ببعض.
অর্থঃ- “তোমরা কিতাবের কিছু অংশ মানবে, আর কিছু অংশ মানবে না, তা হবেনা।” সুতরাং টিভিতে বা ভিসিআর-এ জ্ঞানমূলক, শিক্ষামূলক কিম্বা ইসলামী অনুষ্ঠান প্রচার বা দেখার মধ্যে বাহ্যিকভাবে কিছু উপকারীতা থাকা সত্বেও, যেহেতু এসবের মূল হচ্ছে ছবি, যার ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ই বড়। তাই টিভি, ভিডিওতে কোন অনুষ্ঠান করা বা দেখা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। যেহেতু টিভি দেখা হারাম, সেহেতু যারা টিভি দেখে, তারা শরীয়তের দৃষ্টিতে কখনো তাক্ওয়াবান হতে পারেনা। বরং তারা চরম ফাসেকের অন্তর্ভূক্ত। উল্লিখিত প্রশ্নের উত্তরে তারা আরো বলেছে যে, টিভিতে প্রচারিত শিক্ষণীয় অনুষ্ঠানগুলি দেখা নাজায়িয নয়, অর্থাৎ জায়িয। শরীয়তের উসূল হলো- হারামকে হালাল জানা কুফরী। কাজেই টেলিভিশনের ছবি দেখা ও দেখানো, যে ব্যক্তি জায়িয মনে করে, সে কুফরী করলো। তাদের বক্তব্যে আরো বুঝা যাচ্ছে যে, টেলিভিশনের প্রোগ্রামগুলি শুধু পুরুষের দ্বারাই করলে এবং শুধু পুরুষেরাই দেখলে তা জায়িয হয়ে যাবে; যা বাস্তবে কখনোই সম্ভব নয়। কারণ প্রত্যেক বাড়ীতে পুরুষ-মহিলা, ছেলে-মেয়ে উভয়ই আছে। আর যদিও সম্ভব হয়, তথাপিও তা দেখা জায়িয হবেনা। কারণ ছবি মাত্রই হারাম। শরীয়তে পুরুষের ছবি ও মহিলার ছবির মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি, উভয়টাকেই হারাম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব টিভি বা যে কোন প্রচার মাধ্যমে ছবির সাহায্যে কোন কিছু প্রসার-প্রচার করা হলে, তা যতই শিক্ষণীয় হোক বা যে কোন ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হোক না কেন, সেটা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ان اذد الناس عذابا عند الله المصورون. (بخارى)  অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ্ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ) হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, لا تد خل الملائكة بيتا فيه كلت وبصاوبر.
অর্থঃ- “ঐ ঘরে ফেরেস্তা প্রবেশ করেনা, যে ঘরে প্রাণীর ছবি ও কুকুর থাকে।” (বুখারী শরীফ) ইত্যাদি আরো অনেক দলীল-আদিল্লাহ রয়েছে, যা আমাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম সংখ্যায় ৩৫৩টি দলীলের মাধ্যমে প্রাণীর ছবি আঁকা, তৈরী করা, দেখা, রাখা, তোলা, ছাপানো ইত্যাদি হারাম বলে প্রমাণ করা হয়েছে।
আবা-২৫

ছবি ফতোয়া - লিংক

0 Comments: