“মুহম্মদ” ও “আহমদ” নাম মুবারক লিখা প্রসঙ্গে
Related image“মুহম্মদ” ও “আহমদ” নাম মুবারক লিখা প্রসঙ্গে


পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, দুনিয়াতে কেউ যদি ‘মুহম্মদ’ ও ‘আহমদ’ নাম রাখে তা হলে ওই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন পোড়াবে না। অর্থাৎ সে জান্নাতী হবে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত আবু উমামা আল বাহিলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি কোনো ব্যক্তির ছেলে সন্তান হয় অতঃপর সে ব্যক্তি যদি আমার মুহব্বতে এবং আমার নামের বরকতের জন্য তার ছেলে সন্তানের নাম ‘মুহম্মদ’ রাখে তাহলে সে ব্যক্তি এবং তার ছেলে উভয়েই জান্নাতী হবে।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত হাদীছ শরীফগুলো দ্বারা সহজেই বুঝা যায় যে, যদি কোনো মুসলমান উনার নাম মুহম্মদ বা আহমদ রাখে তবে তিনি অবশ্যই জান্নাতী হবেন। আমাদের মুসলমান সমাজে এই হাদীছ শরীফ গুলো জেনেই হোক বা না জেনেই হোক সন্তান-সন্ততির নাম মুহম্মদ বা আহমদ রাখেন । কিন্তু নাম গুলো লিখার সময় শুদ্ধ উচ্চারণ লিখা হয় না বা সংক্ষেপে লিখা হয়। (নাউযুবিল্লাহ)।
যেমনঃ মুহম্মদ (MUHAMMAD) নাম মুবারককে মোঃ, মো., মুঃ ,মোহঃ,মুহঃ , মোহাং, এম, ম, মোহাম্মদ, মোহাম্মাদ, মুহম্মাদ, md, m, mohd, mohammad ইত্যাদি লিখা হয়।
অন্যদিকে আহমদ (AHMAD) নাম মুবাররকে আহাং, আহম্মদ, আহাম্মদ, আহমেদ ,আহেম্মদ আহেম্মেদ, ahmed, Ahammad Ahammed, ahmod ইত্যাদি লিখা হয়।
একটি কথা এখানে উল্লেখ্য যে, সম্মানিত বিষয়কে সম্মান করলে যেমন ফযীলত পাওয়া যায় তেমনি ইহানত করলে বিপরীতটাও রয়েছে। তাই নাম মুবারক দুটি লিখার সময় সংক্ষিপ্ত করে বা ভুল উচ্চারণ পরিহার করে মুহম্মদ (MUHAMMAD) বা আহমদ (AHMAD) লিখতে হবে।


পবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অনুসারে সুন্নতী কোর্তার বর্ননা
Image result for সুন্নতি পোশাকপবিত্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অনুসারে সুন্নতী কোর্তার বর্ননা


‘ক্বমীছ’ শব্দের তাহক্বীক্বী অর্থ ও ‘ক্বমীছ’-এ সঠিক পরিচয়
قميص ক্বমীছ শব্দটির শাব্দিক অর্থ হলো- কোর্তা, জামা, ক্বমীছ ইত্যাদি। আর ইসলামী শরীয়ত উনার পরিভাষায় ক্বমীছ বা কোর্তা হলো, যার গেরেবান আছে যা বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী লাগানো হয় যা নিছফুস্ সাক্ব। অর্থাৎ হাটু ও পায়ের গিরার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত বিলম্বিত। গোল যা কোনা ফাঁড়া নয়, যার আস্তিন আছে, যা অতি সহজেই মানুষের সতর ও ইজ্জত আবরু ঢাকে।
যেমন, ‘আবূ দাউদ শরীফের’ বিশ্ববিখ্যাত শরাহ ‘আউনুল মা’বূদ’-এর ‘কিতাবুল লিবাসের’ ‘ক্বমীছ বা কোর্তার আলোচনা’ পর্বে উল্লেখ রয়েছে,
وجه احبية القميص اليه صلى الله عليه وسلم انه استر للاعضاء عن الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن ولابسه اكثر تواضعا.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ক্বমীছ বা কোর্তা সবচেয়ে পছন্দনীয় হওয়ার কারণ হলোঃ কেননা, ক্বমীছ ইযার বা লুঙ্গি ও রিদা বা চাদর অপেক্ষা সতরকে পরিপূর্ণভাবে ঢাকে। অথচ ক্বমীছ অল্প খরচে হয়, শরীরের জন্য হালকা এবং এটা পরিধানে অধিক বিনয়-নম্রতা প্রকাশ পায়।” (অনুরূপ ‘জামউল ওয়াসায়িল’-এ উল্লেখ আছে।)
‘আবূ দাউদ শরীফের’ শরাহ “বযলুল মাজহুদ”-এর ‘কিতাবুল লিবাসের’ ‘ক্বমীছ বা কোর্তার’ আলোচনা পর্বে উল্লেখ রয়েছে,
وانما كان القميص احب من غير من الثياب لانه امكن فى الستر من الرداء والازار الذين يحتاجان كثيرا الى الربط والامساك وغير ذلك.
অর্থ: “ক্বমীছ বা কোর্তা অন্যান্য পোশাকের চেয়ে অধিক পছন্দনীয় কারণ হলো, তা চাদর ও লুঙ্গী থেকেও সতর ঢাকতে অধিক উপযোগী। আর চাদর ও লুঙ্গি শরীর ঢাকতে, ছতর বাঁধতে ইত্যাদি কাজে খুবই উপযোগী।”
والظاهر انه سمى قميص لان الادمى ينقمص اى يدخل فيه وينغمس ليسشربه.
অর্থ: “প্রকাশ্য কথা এই যে, ক্বমীছকে এজন্য ক্বমীছ বলা হয় যেহেতু তা মানুষকে ঢেকে নেয় অর্থাৎ মানুষ তার ভিতর ঢুকে পড়ে এবং তার দ্বারা নিজ সতরকে হিফাযত করে।”
মুহাদ্দিছুশ্ শাহীর, ফক্বীহুন্ নাবীল, আল্লামা আলী বিন সুলতান মুহম্মদ ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ” কিতাবে, হযরত আল উস্তাযুল আল্লাম, ফাযীলাতুশ্ শাইখ, মাওলানা মুহম্মদ ইদ্রীস কান্দুলুবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আত্ তা’লীকুছ ছবীহ আলা মিশকাতিল মাছাবীহ’-এর ‘লিবাস’ অধ্যায়ে উল্লেখ আছে,
القميص اسم لما يلبس من المخيط الذى له كمان وجيب، وقيل وجه احبية القميص اليه صلى الله عليه وسلم انه استر للاعضاء من الازار والرداء ولانه اقل مؤنة واخف على البدن او لابسه اكثر تواضعا.
অর্থ: “ক্বমীছ বা কোর্তা হলোঃ যা সিলাই করে পরিধান করা হয়, যার দু’টি আস্তিন ও একটি গেরেবান আছে। বলা হয়, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ক্বমীছ সর্বাধিক পছন্দনীয় কারণ হলো, তা লুঙ্গি ও চাদর অপেক্ষা শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গকে আবৃতকারী। তাছাড়া তা অল্প খরচে তৈরি হয়। শরীরের পক্ষে হালকা ও আরামদায়ক এবং এর পরিধানকারীর মধ্যে অনেক বিনয় নম্রতার প্রকাশ ঘটে।”
উপরোক্ত সংজ্ঞা, তাহক্বীক্ব, অর্থ ও পরিচিতি থেকে স্পষ্ট হলো যে, ক্বমীছ বা কোর্তা বলা হয় যার একটি গেরেবান, দু’টি আস্তিন থাকবে। গেরেবান বন্ধ করার জন্য কাপড়ের গুটলী থাকবে, নিছফুস্ সাক্ব পর্যন্ত প্রলম্বিত হবে ও কোনা বন্ধ থাকবে তথা কোনা ফাঁড়া হবে না এবং সূতী কাপড় দ্বারা তৈরী হবে।
আবূ দাঊদ শরীফ”-এর ‘ছলাত’ অধ্যায়ে, নাসাঈ শরীফ-এর ‘ক্বিবলা’ অধ্যায়ে, মিশকাত শরীফ-এর ‘সতর’ অধ্যায়ে বর্ণিত রয়েছে, [২৩-২৫]
حدثنا القعنبى حدثنا عبد العزيز يعنى ابن محمد عن موسى بن ابراهيم عن سلمة بن الاكوع قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم انى رجل اصيد افاصلى فى القميص الواحد قال نعم وازرره ولو بشوكة.
অর্থ: “(হযরত আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,) আমাদের কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত কা’নাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ হযরত ইবনু মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত মুসা বিন ইব্রাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত সালামা বিন আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে। তিনি হযরত সালামা বিন আকওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি একজন শিকারী ব্যক্তি। তাই আমি এক ক্বমীছ বা কোর্তায় নামায পড়তে পারি কিনা? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, পড়তে পারো। তবে গুটলী (দিয়ে গেরেবান) বন্ধ করে নাও, যদিও কাঁটা দ্বারা হয়।”
وفى الجامع الصغير برواية الحاكم عن ابن عباس رضى الله عنهما كان قميصه فوق الكعبين وكان كمه مع الاصابع.
অর্থ: “আল জামিউছ ছগীর’ কিতাবে মুস্তাদারিকে হাকিমের রিওয়ায়েতে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্বমীছ মুবারক দু’পা মুবারকের গিরার উপর পর্যন্ত ও আস্তিন হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিলো।” (অনুরূপ শরহুল মানাবী, আল মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, মুসতাদারিকে হাকিম, মিরকাত ইত্যাদি)
ক্বমীছ বা কোর্তা অধিকাংশ সময় সাদা রংয়ের হওয়াই খাছ সুন্নত
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাদা রংয়ের পোশাক পরিধান করতেন এবং উম্মতগণকে পরিধান করতে নির্দেশ মুবারক দিতেন। যেমন “বুখারী শরীফ” ২য় জিঃ ৮৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال ابوذر اتيت النبى صلى الله عليه وسلم وعليه ثوب ابيض.
অর্থ: “হযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন। আমি একদা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে আসলাম, তখন উনার (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার শরীর মুবারকে সাদা পোশাক ছিল।”
“মাজমাউয্ যাওয়াইদ” ৫ম জিঃ ১২৮ পৃষ্ঠা ও “আল্ লিবাসু ওয়ায যীনাহ্” ৫৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن ابن عباس رضى الله عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله خلق الجنة بيضاء واحب شئ الى الله البياض.
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা উনার হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ্ পাক তিনি সম্মানিত জান্নাত উনাকে সৃষ্টি করেছেন সাদা রংয়ের করে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে অধিক পছন্দনীয় হচ্ছে সাদা রংয়ের বস্তু।”
“মিরকাত শরীফের” ৪র্থ জিঃ ৩৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
قال ابن حجرلان اللون الابيض افضل الالوان ..... وقد لبس عليه الصلاة والسلام غير الابيض كثيرا لبيان جوازه.
অর্থ: “হযরত ইবনে হাজার আসকালীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নিশ্চয়ই সাদা রং-ই রংসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম রং। আর সাদা রংয়ের পোশাক ছাড়াও অন্য রংয়ের পোশাক নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পরিধান করতেন, জায়িয বা বৈধ প্রমাণ করার জন্য।
ক্বমীছ বা কোর্তা ডান দিক দিয়ে পরিধান করা সুন্নত
“তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ”-এর ‘কিতাবুল্ লিবাস’ অধ্যায়ে বর্ণিত আছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا لبس قميصا بدأ بميامنه.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখনই ক্বমীছ বা কোর্তা পড়তেন তখনই ডান দিক হতে শুরু করতেন।



মাজহাব কি ?

Image result for মাযহাব














মাজহাব কি ?
মুজতাহিদ হল কুরআন সুন্নাহ, সাহাবাদের ফাতওয়া, কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের ঐক্যমত্বে এবং যুক্তির নিরিখে কুরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলা বেরকারী গবেষক দলের নাম। যারা নিষ্ঠার সাথে বিভিন্ন মূলনীতি নির্ধারণ করে কুরআন সুন্নাহর বাহ্যিক বিপরীতমুখী মাসআলার মাঝে সামাঞ্জস্যতা এনেছেন। কুরআন সুন্নাহর একাধিক অর্থবোধক শব্দের নির্ধারিত পালনীয় অর্থকে নির্ধারিত করে দিয়েছেন। নতুন উদ্ভূত মাসআলার শরয়ী মূলনীতির আলোকে সমাধান বরে করেছেন। সেই সাথে নতুন নতুন মাসআলার কোন মূলনীতির আলোকে হুকুম আরোপিত হবে যার বিধান সরাসরি কুরআন সুন্নাহে বর্ণিত নেই, সেই মূলনীতিও নির্ধারিত করেছেন। মূলত সেই গবেষক দলের নাম হল মুজতাহিদ। আর তাদের উদ্ভাবিত মূলনীতির আলোকে বের হওয়া মাসআলার নাম মাযহাব।
মাযহাব কেন ?

মাযহাব পালনের কথা এই জন্য বলা হয় যে, যেহেতু কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে আলেম খুবই নগণ্য। যারাও আছে তারা কুরআনে কারীমের কোন আয়াতের হুকুম রহিত হয়ে গেছে, কোন আয়াতের হুকুম বহাল আছে, কোন আয়াত কোন প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে, কোন আয়াত কাদের উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছে। কোন আয়াতাংশের প্রকৃত অর্থ কি? আরবী ব্যাকরণের কোন নীতিতে পড়েছে এই বাক্যটি? এই আয়াত বা হাদীসে কী কী অলংকারশাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে? ইত্যাদী সম্পর্কে বিজ্ঞ হন না। সেই সাথে কোনটি সহীহ হাদীস কোনটি দুর্বল হাদীস? কোন হাদীস কি কারণে দুর্বল? কোন হাদীস কী কারণে শক্তিশালী? হাদীসের বর্ণনাকারীদের জীবনী একদম নখদর্পনে থাকা আলেম এখন নাই। অথচ হাদীসের বর্ণনাকারী শক্তিশালী না হলে তার দ্বারা শরয়ী হুকুম প্রমাণিত হয়না। এই সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি পাওয়া যাওয়া দুস্কর। একেতু অধিকাংশ মানুষই আলেম না। আর মুষ্টিমেয় যারা আলেম তারাও উল্লেখিত সকল বিষয় সম্পর্কে প্রাজ্ঞ নয়। তাই আমাদের পক্ষে কুরআন সুন্নাহ থেকে সঠিক মাসআলা বের করা অসম্ভব।

একটি উদাহরণ:

এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন- ﺍﻗﻴﻤﻮﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓ

তথা সালাত কায়েম কর। আরেক আয়াতে বলেছেন-

ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﻣَﻼﺋِﻜَﺘَﻪُ ﻳُﺼَﻠُّﻮﻥَ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ

তথা নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এবং ফেরেস্তারা নবীজীর উপর সালাত পড়ে। এই আয়াতের শেষাংশে এসেছে-

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺻَﻠُّﻮﺍ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠِّﻤُﻮﺍ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ

তথা হে মুমিনরা তোমরাও উনার উপর সালাত পড় এবং উনাকেও সালাম জানাও। {সূরা আহযাব-৫৬}

এই সকল স্থানে লক্ষ্য করুন-“সালাত” শব্দটির দিকে। তিনটি স্থানে সালাত এসেছে। এই তিন স্থানের সালাত শব্দের ৪টি অর্থ। প্রথম অংশে সালাত দ্বারা উদ্দেশ্য হল “নামায” অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আমাদের নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা নামায কায়েম কর। {সূরা বাকারা-৪৩}

আর দ্বিতীয় আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ও তার ফেরেস্তারা নবীজী সাঃ এর উপর সালাত পড়েন মানে হল-আল্লাহ তায়ালা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর রহমত পাঠান, আর ফেরেস্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা উপর সালাত পড়েন, মানে হল হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাগফিরাতের দুয়া করেন।

আর তৃতীয় আয়াতাংশে “সালাত” দ্বারা উদ্দেশ্য হল উম্মতরা যেন নবীজী সাঃ এর উপর দরূদ পাঠ করেন।
( ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﻜﻠﻴﺎﺕ ـ ﻷﺑﻰ ﺍﻟﺒﻘﺎﺀ ﺍﻟﻜﻔﻮﻣﻰ )

একজন সাধারণ পাঠক বা সাধারণ আলেম এই পার্থক্যের কথা কিভাবে জানবে?

সেতো নামাযের স্থানে বলবে রহমাতের কথা, রহমতের স্থানে বলবে দরূদের কথা, দরূদের স্থানে বলবে নামাযের কথা। এরকম করলে দ্বীন আর দ্বীন থাকবে না, হবে জগাখিচুরী।

এরকম অসংখ্য স্থান আছে, যার অর্থ উদ্ধার করা কঠিন। তাই একজন বিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ ব্যক্তির শরাপন্ন হয়ে তার গবেষনা অনুযায়ী উক্ত বিষয়ের সমাধান নেয়াটাই হল যৌক্তিক। এই নির্দেশনাই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন-

{ ﻓَﺎﺳْﺄَﻟﻮﺍ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮِ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻻ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ{ ]ﺍﻟﻨﺤﻞ 43: ]

তথা তোমরা না জানলে বিজ্ঞদের কাছে জিজ্ঞেস করে নাও। {সূরা নাহল-৪৩}

বিজ্ঞ ফুক্বাহায়ে কিরাম কুরআন সুন্নাহ, ইজমায়ে উম্মাত, এবং যুক্তির নিরিখে সকল সমস্যার সমাধান বের করেছেন। সেই সকল বিজ্ঞদের অনুসরণ করার নামই হল মাযহাব অনুসরণ। যেই অনুসরণের নির্দেশ সরাসরি আল্লাহ তায়ালা দিলেন পবিত্র কুরআনে।

হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাযহাব কি?

মাযহাব কি এটা নিশ্চয় আগের বক্তব্য দ্বারা স্পষ্ট হয়েছে। সেই হিসেবে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়াতে কারো মাযহাব অনুসরণের দরকার নাই। কারণ তিনি নিজেইতো শরীয়ত প্রণেতাদের একজন। তিনি কার ব্যাখ্যা গ্রহণ করে অনুসরণ করবেন? তিনি কেবল আল্লাহ তায়ালার থেকেই সমাধান জেনে আমল করেছেন, এবং আমল করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সাহাবীদের মাযহাব কি?

সাহাবায়ে কিরাম যারা সরাসরি হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ছিলেন তাদের জন্য হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ব্যাখ্যা অনুসরণ করা ছিল আবশ্যক। এছাড়া কারো ব্যাখ্যা নয়। কিন্তু যেই সকল সাহাবারা ছিলেন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দূরে তারা সেই স্থানের বিজ্ঞ সাহাবীর মাযহাব তথা মত অনুসরণ করতেন। যেমন ইয়ামেনে হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ এর মত তথা মাযহাবের অনুসরণ হত। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে অনুসরণ করতেন ইরাকের মানুষ।


হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মুয়াজ বিন জাবাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে ইয়ামানে পাঠাতে মনস্ত করলেন তখন মুয়াজ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনাকে জিজ্ঞেস করলেন-“যখন আপনার কাছে বিচারের ভার ন্যস্ত হবে তখন আপনি কিভাবে ফায়সাল করবেন?” তখন তিনি বললেন-“আমি ফায়সালা করব কিতাবুল্লাহ দ্বারা”। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-“যদি কিতাবুল্লাহ এ না পাও?”

তিনি বললেন-“তাহলে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নাত দ্বারা ফায়সালা করব”। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-“যদি রাসূলুল্লাহ এর সুন্নাতে না পাও?” তখন তিনি বললেন-“তাহলে আমি ইজতিহাদ তথা উদ্ভাবন করার চেষ্টা করব”।


তখন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বুকে চাপড় মেরে বললেন-“যাবতীয় প্রশংসা ঐ আল্লাহর যিনি উনার রাসূলের প্রতিনিধিকে সেই তৌফিক দিয়েছেন যে ব্যাপারে উনার রাসূল সন্তুষ্ট”। {সূনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৯৪, সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-১৩২৭, সুনানে দারেমী, হাদিস নং-১৬৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২০৬১}


এই হাদীসে লক্ষ্য করুন-হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবদ্দশায় হযরত মুয়াজ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলছেন যে, আমি কুরআন সুন্নাহে না পেলে নিজ থেকে ইজতিহাদ করব, আল্লাহর নবী বললেন-“আল হামদুলিল্লাহ”। আর ইয়ামেনের লোকদের উপর হযরত মুয়াজের মত তথা মাযহাব অনুসরণ যে আবশ্যক এটাও কিন্তু হাদীস দ্বারা স্পষ্ট। এছাড়া সাহাবাদের যুগে যে সকল সাহাবাদের মাযহাব তথা মত অনুসরণীয় ছিল। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল-


হযরত ওমর বিন খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আলী বিন আবু তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আয়েশা আলাইহসি সালাম, হযরত জায়েদ বিন সাবেত রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রমূখ সাহাবাগণ।

তাবেয়ীদের মাযহাব:

তাবেয়ীরা যেই সকল এলাকায় থাকতেন, সেই সকল এলাকার বিজ্ঞ সাহাবীদের বা বিজ্ঞ মুজতাহিদের মত তথা মাযহাবের অনুসরণ করতেন। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য ছিলেন- হযরত সাঈদ বিন মুসায়্যিব রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু সালমা বিন আব্দির রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ওরওয়া বিন জুবাইর রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত কাসেম বিন মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সুলাইমান বিন ইয়াসার রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত খারেজা বিন জায়েদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখবৃন্দ। তারপর মদীনায় যাদের মত তথা মাযহাবের অনুসরণ করা হত তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল-হযরত ইমাম জুহরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত রাবিয়া বিন আব্দির রহমান রহমাতুল্লাহি আলাইহি

আর মক্কা মুকার্রমায় ছিলেন আতা বিন আবি রাবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আলী বিন আবি তালহা রহমাতুল্লাহি আলাইহি, আব্দুল মালিক বিন জুরাইজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ। আর কুফায় ছিলেন হযরত ইবরাহীম নাখয়ী, আমের বিন শুরাহবীল, শা’বী, আলকামা, আল আসওয়াদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি

আর বসরায় ছিলেন-হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। ইয়ামানে হযরত তাওস বিন কায়সান রহমাতুল্লাহি আলাইহি। শামে হযরত মাকহুল রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রমূখ। যাদের ফাতওয়া বিধৃত হয়েছে- মুয়াত্তাগুলোতে।, মুসনাদগুলোতে, আর সুনানগুলোতে, যেমন মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, কিতাবুল আসার, শরহু মায়ানিল আসার ইত্যাদী গ্রন্থে। {উসুলুল ইফতা লিত তাক্বী উসমানী দাঃবাঃ}


কুরআন ও হাদীস দেখে আমল করলে অসুবিধা কোথায়?

কি কি অসুবিধা তা আশা করি মাযহাব কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে পেয়ে গেছেন। সেই উত্তরটি আবার দেখে নিন।

মুহাদ্দিসগন কি মাযহাব মেনেছেন?

এই কথাটি বুঝার আগে একটি কথা আগে বুঝে নিন। সেটা হল-হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যুগ থেকেই দু’টি দল চলে আসছে, একটি দল হল যারা ইজতিহাদ তথা উদ্ভাবনী ক্ষমতার অধিকারী। তারা ইজতিহাদ করতেন তথা মত দিতেন বিভিন্ন বিষয়ে। আর একদল ছিলেন যাদের এই ক্ষমতা ছিলনা, তারা সেই মুজতাহিদদের মতের তথা মাযহাবের অনুসরণ করতেন। ঠিক একই অবস্থা ছিল সাহাবাদের যুগে। একদল ছিল মুজতাহিদ, যাদের একটি তালিকা ইতোপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে। আর বিশাল এক জামাত ছিল যারা ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখতেন না। তারা সেই সকল মুজতাহিদদের মাযহাব তথা মতের অনুসরণ করতেন। তেমনি তাবেয়ীদের একই অবস্থা ছিল, একদল মুজতাহিদ, আরেকদল মুকাল্লিদ তথা অনুসারী। এমনি মুহাদ্দিসীনদের মাঝেও দুই দল ছিল, একদল ছিল যারা ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখতেন, আরেকদল ছিল যারা ইজতিহাদের ক্ষমতা রাখতেন না। তাই তাদের মাঝে কারো কারো মাযহাব রয়েছে কারো কারো নেই। কেউ কেউ নিজেই মাসআলা বের করেছেন, কেউ কেউ অন্য কোন ইমামের অনুসরণ করেছেন।


যেমন ইমাম বুখারী মুজতাহিদ ছিলেন, তাই তার কারো অনুসরণের দরকার নাই। তবে কেউ কেই তাকে শাফেয়ী মাযহাবী বলে মত ব্যক্ত করেছেন। {আল ইনসাফ=৬৭, তাবাকাতুশ শাফেয়িয়্যাহ-২/২, আবজাদুল উলুম—৮১০}


এমনিভাবে ইমাম মুসলিম রহঃ ছিলেন শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারী। {আল হিত্তাহ-১৮৬}


নাসায়ী শরীফের সংকলক ইমাম নাসায়ী রহঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর মাযাহাবের অনুসারী ছিলেন।, ইমাম আবু দাউদ রহঃ, ও ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। {ফয়জুল বারী-১/৫৮, আবজাদুল উলুম-৮১০, ইলাউল মুয়াক্কিয়ীন-১/­২৩৬} ইমাম তাহাবী রহঃ ছিলেন হানাফী মাযহাবের অনুসারী। যা তার সংকলিত তাহাবী শরীফ পড়লেই যে কেউ বুঝতে পারবে। এছাড়াও বাকি সকল মুহাদ্দিস হয়ত মুজতাহিদ ছিলেন, নতুবা ছিলেন মুকাল্লিদ কোননা কোন ইমামের।


কেন একটি মাযহাবই মানতে হবে?


কুরআনে কারীম ৭টি কিরাতে নাজীল হয়েছে। কিন্তু একটি কিরাতে প্রচলন করেছেন হযরত উসমান রাঃ। যেটা ছিল আবু আসেম কুফী রহঃ এর কিরাত। এর কারণ ছিল বিশৃংখলা রোধ করা। যেন দ্বীনকে কেউ ছেলেখেলা বানিয়ে না ফেলে। আর সবার জন্য এটা সহজলভ্য হয়। তেমনি একটি মাযহাবকে আবশ্যক বলা হয় এই জন্য যে, একাধিক মাযহাব অনুসরণের অনুমোদন থাকলে সবাই নিজের রিপু পূজারী হয়ে যেত। যেই বিধান যখন ইচ্ছে পালন করত, যেই বিধান যখন ইচেছ ছেড়ে দিত। এর মাধ্যমে মূলত দ্বীন পালন হতনা, বরং নিজের প্রবৃত্তির পূজা হত। তাই ৪র্থ শতাব্দীর উলামায়ে কিরাম একটি মাযহাবের অনুসরণকে বাধ্যতামূলক বলে এই প্রবৃত্তি পূজার পথকে বন্ধ করে দিয়েছেন। যা সেই কালের ওলামায়ে কিরামের সর্বসম্মত সীদ্ধান্ত ছিল। আর একবার উম্মতের মাঝে ইজমা হয়ে গেলে তা পরবর্তীদের মানা আবশ্যক হয়ে যায়। ইমাম ইবনে তাইমিয়াও লাগামহীনভাবে যে মাযহাব মনে চায় সেটাকে মানা সুষ্পষ্ট হারাম ও অবৈধ ঘোষণা করেন। {ফাতওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া-২/২৪১}


বিস্তারিত জানতে দেখুন-


১-তাযাল্লিয়াতে সফদর, মাওলানা মুহাম্মদ আমীন সফদর প্রণীত।


২-মাযহাব মানি কেন? মুফতী রফিকুল ইসলাম আল মাদানী প্রণীত ।


৩-মাযহাব ও তাকলীদ কী ও কেন? শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী প্রণীত।


---------------------------------------------------------


(শেয়ার করে অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন) —

যে সকল কারণে একজন মুসলমান ইসলামচ্যুত হয়ে যায় তথা কাফির হয়ে যায় ।
Image result for আমলযে সকল কারণে একজন মুসলমান ইসলামচ্যুত হয়ে যায় তথা কাফির হয়ে যায় ।
মানুষ বলে থাকে যে মুসলমানকে কাফির কেন বলা হয়?কাফির বলার কে ?আল্লাহ পাক -ই ভালো জানেন। আমাদের বলা ঠিকনা ।
এই ধারণা মানুষের ভুল। মুসলমান নাম নিলেই সে কাফির হবেনা তা অযোক্তিক। হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর সন্তান কাবিল আর নুহ আলাইহিস সালাম এর সন্তান বাহ্যত মুসলমান ছিল কিন্তু কাফির ।
১) যাদের ঈমান আক্বিদা শুদ্ধ নয়
“নিশ্চয়ই যারা ঈমান এনেছে, আমলে ছলেহ করেছে, নামায কায়িম করেছে এবং যাকাত আদায় করেছে, তাদের জন্য তাদের রব মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট প্রতিদান রয়েছে।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৭৭)
“সময়ের কসম। মানুষ আসলে খুবই ক্ষতিগ্রস্থের মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং পরস্পরকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে।– সুরা আছর
“পবিত্র ইসলাম উনার ভিত্তি পাঁচটি যথা- (১) সাক্ষ্য দেয়া যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যাতীত কোনো ইলাহ নেই এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল (২) নামায কায়িম করা (৩) যাকাত দেয়া (৪) হজ্জ করা (৫) এবং রমাদ্বান শরীফ উনার রোযা রাখা।” (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ ঈমান হল মুল । আলেম-উলামাগণ হাদীসের ইঙ্গিতের মাধ্যমে গবেষণা করে কুরআন হাদীস থেকে ঈমানের ৭৭টি শাখা নির্ণয় করেছেন। ঈমানের শাখা -প্রশাখার যেকোন একটিতে যদি কারো ত্রুটি থাকে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যাবে। বাতিল ৭২ ফিরকার যেমন কাদিয়ানি,বাহাই,রাফেযি,খারেজি,শিয়া,ওহাবী,মুতাজালিয়া ইত্যাদি ।

২) শিরক তথা আল্লাহ পাক সাথে উনার ইবাদাতে অন্য কাউকে অংশীদার বানানো।
“নিশ্চয় আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহ পাকের সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়”। (আন-নিসা’ ৪:১১৬)
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহ পাকের সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই”। (মা’য়িদাহ ৫: ৭২)
৩) যারা অংশীদার স্থাপনকারীদের(মুশরিকুন) অস্বীকারকারী(কাফির) মনে করে না, অথবা তাদের কুফরী সন্মন্ধে সন্দেহ পোষন করে অথবা তাদের পদ্ধতিকেও সঠিক মনে করে তারা কাফির।
৪) এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদর্শের চেয়ে অন্য কোন ব্যক্তির মতাদর্শ উত্তম বা রাসূল হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনীত জীবন ব্যবস্থার চেয়ে অন্য কোন ধর্ম বা মতবাদ ভাল। যেমন-কেউ যদি বিশ্বাস করে যে সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, ডারউইনের মতবাদ ইত্যাদি ইসলামের চেয়ে ভাল তবে সে মুরতাদ হয়ে যাবে।
“বল! তোমরা কি আল্লাহ পাক, উনার নিদর্শন ও উনার হাবীব হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা আর অজুহাত দাড় করো না, তোমরা তো ঈমান আনার পর কুফরী করেছ।” (সূরা আত-তাওবা: ৬৫-৬৬)
তোমরা আল্লাহ পাক ও হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আনুগত্য কর। তারপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে ভালবাসেন না’ (সূরা আলে-ইমরান: ৩২)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন ‘যে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে বিমুখ হল, তবে আমি তোমাকে তাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি’ (সূরা নিসা: ৮০)
যখন আল্লাহ পাক ও হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিয়ে দেন তখ কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর সেই ব্যাপারে নিজে ফায়সালা করার কোনো অধিকার নেই৷ আর যে কেউ আল্লাহ পাক ও হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাফরমানী করে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে লিপ্ত হয়৷(আহযাব ৩৬)
৫) হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশিত কোন বিষয়কে মনে মনে ঘৃণা করা যদিও সে তা পালন করে। যেমন, কেউ যদি দাঁড়ি, পর্দা,সুন্নতি পোষাক, সুন্নতি জীবনযাপন ইত্যাদিকে মনে মনে অপছন্দ করে তবে সে মুসলমান থাকবেনা। কারণ, এগুলো ইসলামের আবশ্য পালণীয় নির্দেশ
কেননা আল্লাহ পাক বলেন:
“এটা এজন্যে যে, আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব, আল্লাহ পাক তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন” (মুহাম্মাদ ৪৭: ৯)
আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, আমার প্রতিটি উম্মত জান্নাতে যাবে। তবে যে অস্বীকার করে সে নয়। সাহাবায়ে কেরাম বললেন,অস্বীকারকারী কে? হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে আমার অনুকরণ করল সে জান্নাতে যাবে। আর যে আমার নাফরমানী করল, সে-ই অস্বীকারকারী’ (বুখারী)।
আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আপনার জন্য আল্লাহ পাকই যথেষ্ট এবং মু’মিনদের মধ্য থেকে যারা আপানাকে অনুসরণ করে তাদের জন্য।” [সূরা আনফালঃ ৬৪]
৬) হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রচারিত ধর্মের যে কোন বিষয় নিয়ে কেউ যদি মজা করে, অথবা পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কিত যে কোন বক্তব্য নিয়ে টিটকারী দেয় বা দুষ্টুমি করে, সে কাফির। এর প্রমাণ হল নিচের আয়াতটি:
“আর যদি আপনি তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহ পাকের সাথে, উনার হুকুম আহকামের সাথে এবং উনার হাবীব হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার” (আত তাওবাহ ৯:৬৫-৬৬) । যেমন – ছবি তোলা,টিভি দেখাকে কেউ যদি হারাম মনে না করে জায়েয মনে করে, সুন্নতকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে, এত করা লাগবেনা, যামানার দোহাই দিয়ে আদেশ খিলাপ কাজ করে যেমন বেপর্দা,ছবি,টিভি,খেলা,গানবাজনা ইত্যাদি বলে তাহলে সে কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।
৭) যাদুবিদ্যা – একজন ব্যক্তিকে আরেকজনের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়ার জন্য বা একজন ব্যক্তির সাথে অন্য ব্যক্তির ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য যাদু করা এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। যে ব্যক্তি এগুলো করবে বা এগুলোর সমর্থন করবে সে কাফির। কেননা:
“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না”। (বাকারাহ ২: ১০২)
৮) মুশরিকদের সমর্থন দেয়া এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সহযোগিতা করা। এর প্রমাণ হল এ আয়াতটি যেখানে আল্লাহ বলেন:
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না” (মা’য়িদাহ ৫:৫১) ।
কোন মুসলমান দেশ ,জনগন কিম্বা শাসক যদি কাফিরদের সাহায্য করে কিম্বা সমর্থন করে তারাও কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হবে। যেমন সউদি ওহাবী সরকার, মধ্যপ্রাচ্যের শাসক, মিশরের শাসক ।
৯) যারা বিশ্বাস করে যে কিছু ব্যক্তিদের হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আইনের বাইরে কাজ করার অনুমতি আছে যেমন অনুমতি ছিল মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালাম এর আইনের বাইরে খিযির আল্লাইহিস সালাম এর কাজ করার, তারা কাফির। কেননা আল্লাহ পাক বলেন:
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত” । (ইমরান ৩: ৮৫) ।
যেমন গনতন্ত্র ,হরতাল ,লংমার্চ, অবরোধ,কুশপোত্তলিকা দাহ,কোর্ট টাই পরাকে যারা হারাম মনে করবেনা তারা কাফিরের অন্তর্ভুক্ত
১০) আল্লাহ পাকের মনোনীত ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়া বা মুখ ফিরিয়ে নেয়া, এটাকে না শেখা এবং এর অনুসারে জীবন যাপন না করা। এর প্রমান হল:
“যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব” (সেজদাহ ৩২:২২)