জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া - ১০

জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া

প্রকাশিত ফতওয়াসমূহ
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের জন্যে এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, আখিরী রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে ফ টুপির ফতওয়া, ফ অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, ফ নিয়ত করে মাজার শরীফ যিয়ারত করা, ফ ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, ফ জুমুয়ার নামায ফরযে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, ফ মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, ফ কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ ফরয নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ দোয়াল্লীন-যোয়াল্লীন-এর শরয়ী ফায়সালা এবং তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ খাছ সুন্নতী টুপি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফ ইমামাহ্ বা পাগড়ী মুবারকের আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়া এবং ফ শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া পেশ করার পর - ২১তম ফতওয়া হিসেবে  জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া  পেশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।] জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয়  সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ           সুন্নতের পথিকৃত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, দ্বীন ইসলামের নির্ভীক সৈনিক, সারা জাহান থেকে কুফরী, শিরিকী ও বিদ্য়াতের মূলোৎপাটনকারী, বাতিলের আতঙ্ক এবং আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক মুখপত্র- মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়াই প্রকাশ বা পত্রস্থ হয়েছে এবং ইনশাআল্লাহ হবে তার প্রতিটিরই উদ্দেশ্য বা মাকছূদ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ মাসিক আল বাইয়্যিনাতেএমন সব লিখাই পত্রস্থ  হয়, যা মানুষের আক্বীদা ও আমলসমূহ পরিশুদ্ধ করণে বিশেষ সহায়ক।      তদ্রুপ মাসিক আল বাইয়্যিনাতে” “জানাযা নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করার শরয়ী ফায়সালা ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার উদ্দেশ্য বা মাকছূদও ঠিক তাই। কেননা কিছু লোক ক্বিল্লতে ইল্ম ও ক্বিল্লতে ফাহ্ম”- অর্থাৎ কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে বলে থাকে যে, “জানাযার পর দোয়া করা বিদ্য়াত ও নাজায়িয।    তাদের উক্ত বক্তব্য একদিক থেকে যেরূপ ঈমান বা আক্বীদার ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ, অপর দিক থেকে আমলের ক্ষেত্রেও তদ্রুপ ক্ষতির কারণ।   প্রথমতঃ ঈমানের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ এ জন্য যে, আমাদের আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ফতওয়া হলো কোন জায়িয আমলকে নাজায়িয বলা কুফরী। অর্থাৎ ঈমান বিনষ্ট হওয়ার কারণ। অথচ বান্দার ইবাদত-বন্দিগী বা নেক আমল কবূল হওয়ার জন্যে প্রধানতম শর্ত হচ্ছে- আক্বীদা শুদ্ধ থাকা অর্থাৎ আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা। কারণ বিশুদ্ধ আক্বীদা আমল কবূল হওয়ার পূর্ব শর্ত।          দ্বিতীয়তঃ আমলের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ এ জন্য যে, তাদের উক্ত অশুদ্ধ বক্তব্যের কারণে যেরূপ মাইয়্যিতজীবিতদের দোয়া থেকে বঞ্চিত হবে তদ্রুপ জীবিতরা বঞ্চিত হবে হাদীস শরীফের উপর আমল করা থেকে। কারণ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ্, আশিকে উম্মত, নূরে মুজাস্সাম, ফখরে দুআলম, রহমতুল্লিল আলামীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাইয়্যিতেরজন্য অধিক মাত্রায় এবং ইখলাছের সাথে দোয়া করতে বলেছেন বলে ছহীহ্ হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে। শুধু তাই নয় স্বয়ং আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেরূপ জানাযার নামাযে মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করেছেন অনুরূপ জানাযার বাইরেও মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করেছেন। সুতরাং মাইয়্যিতের জন্য জানাযার নামাযে দোয়া করা যেরূপ সুন্নত, তদ্রুপ জানাযার বাইরেও সুন্নত। তা জানাযার আগেই হোক বা পরে হোক। সুতরাং বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, তাদের বক্তব্যের কারণে সাধারণ মানুষ একটি সুন্নত পালনের ফযীলত থেকে মাহরূম হবে নিঃসন্দেহে।        মূলকথা হলো, সকল মুসলমান যেন জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা রাখতে পারে এবং সুন্নত মুতাবিক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারে এ মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই বহুল প্রচারিত মাসিক আল বাইয়্যিনাতে জানাযার পর দোয়া ও তাঁর প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়া হলো।            মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর পূর্ববর্তী সংখ্যাগুলোতে প্রদত্ত জানাযাসম্পর্কিত আলোচনা দ্বারা যা ছাবিত হয়েছে তার সার সংক্ষেপ হলো- মানুষ মাত্রই মৃত্যু বরণ করবে, মানুষের মৃত্যুর পর শরীয়তের নির্দেশ হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা এবং মৃত ব্যক্তির রূহের মাগফিরাতের জন্যে মৃত ব্যক্তির উপর ছলাতুল জানাযাবা জানাযা নামায আদায় করা। শুধু তাই নয় জীবিত ব্যক্তিদের উপর দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের জন্যে অধিক পরিমাণে দোয়া বা মুনাজাত করা। তাই হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
اكثرواالدعاءفاخلصوا له الدعا ء
অর্থঃ- ইখলাছের সাথে ও অধিক পরিমাণে মৃত ব্যক্তির মাগফিরাতের উদ্দেশ্যে দোয়া-মুনাজাত কর।         এখন প্রশ্ন হলো- মৃত ব্যক্তির জন্যে কখন দোয়া বা মুনাজাত করবে? অর্থাৎ শরীয়তে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করার নির্দিষ্ট কোন সময় বর্ণিত আছে কি?          মূলতঃ শরীয়ত মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করার ব্যাপারে কোন সময় নির্দিষ্ট করে দেয়নি যে, অমুক সময় দোয়া করতে হবে, আর অমুক সময় দোয়া করা যাবেনা। বরং শরীয়তে মৃত ব্যক্তির জন্য যে কোন সময় দোয়া করার বিধান রয়েছে। যেমন ইন্তিকালের পর জানাযার পূর্বে, জানাযার নামাযের মধ্যে, জানাযার পর দাফনের পূর্বে এবং দাফনের পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে কোন সময় মৃত ব্যক্তির জন্যে হাত তুলে ও সম্মিলিতভাবে দোয়া করা জায়িয ও সুন্নত। নাজায়িয বা বিদ্য়াত মোটেও নয়। এ সম্পর্কিত বহু দলীল-আদিল্লাহ কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, শরাহ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহ থেকে পূর্ববর্তী সংখ্যাগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে। জানাযা নামাযের পর হাত তুলে, সম্মিলিতভাবে দোয়া-মুনাজাত করাকে বিদ্য়াত ও মাকরূহ্ বলে প্রচারকারীদের জিহালতপূর্ণ বক্তব্যসমূহের  খন্ডনমূলক জাওয়াব-      বাতিলের আতঙ্ক, দ্বীনে হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী একমাত্র দলীলভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতেপ্রদত্ত জানাযার পর দোয়া ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উল্লিখিত দলীল-আদিল্লাহ্র দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, শুধু জানাযার পূর্বে ও দাফনের পরেই নয় বরং জানাযার পর দাফনের পূর্বেও মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা জায়িয ও সুন্নত।যার স্বপক্ষে প্রায় ২১১টি দলীল মওজুদ রয়েছে যা আল বাইয়্যিনাতের ১০৭ ও ১০৮তম সংখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসরণীয় ইমাম-মুজতাহিদ ও ফক্বীহ্গণের অভিমতও এটাই। অথচ কিছু সংখ্যক দেওবন্দী ও ওহাবী মৌলভী কিল্লতে ইল্ম ও কিল্লতে ফাহম অর্থাৎ স্বল্প বিদ্যা ও অল্প বুঝের কারণে এবং ফিক্বাহ্র কিতাবের কোন কোন ইবারতের সঠিক মর্ম অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে প্রচার করে থাকে যে, জানাযার পর দাফনের পূর্বে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া-মুনাজাত করা বিদ্য়াত ও মাকরূহ্। আর এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন দলীল-প্রমাণ না পেয়ে মনগড়া কিছু যুক্তি ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য পেশ করে থাকে।           জানাযার পর দাফনের পূর্বে দোয়া-মুনাজাত করাকে বিদ্য়াত ও মাকরূহ্ প্রমাণ করার জন্যে তারা যে সকল মনগড়া যুক্তি ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করে থাকে, নিম্নে পর্যায়ক্রমে নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে তা খন্ডন করা হলো- (পূর্ব প্রকাশিতের পর) জানাযার পর মুনাজাত বিরোধীদের মনগড়া যুক্তি ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য  এবং তার খন্ডনমূলক জাওয়াব-৪           জানাযার পর মুনাজাতকে বিদ্য়াত বলে প্রচারকারীরা আরো বলে থাকে যে, “নির্ভরযোগ্য কোন ফিক্বাহের কিতাবে জানাযার পর দোয়াকে জায়িয বলা হয় নাই, বরং মাকরূহ বলা হয়েছে। তাই জানাযার নামাযের পর থেকে দাফনের পূর্ব পর্যন্ত দোয়া করা জায়িয নেই।         মুনাজাত বিরোধীদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, “নির্ভরযোগ্য কোন ফিক্বাহের কিতাবে জানাযার পর দোয়াকে জায়িয বলা হয় নাই.......মুনাজাত বিরোধীদের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও চরম জিহালতপূর্ণ। কেননা আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর পূর্ববর্তী সংখ্যায় ফিক্বাহের কিতাবের অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণ করেছি যে, জানাযার পর দোয়া করা জায়িয। পাঠকগণের সুবিধার্থে এবং মুনাজাত বিরোধীদের বক্তব্য যে ডাহা মিথ্যা তা প্রমাণ করার লক্ষ্যে নিম্নে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব থেকে কিছু ইবারত উল্লেখ করা হলো-  
ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব ফতহুল ক্বদীর ২য় জিঃ ৮১ পৃষ্ঠা ও নূরুল হিদায়াহ্ ১ম জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
عن عبد الله بن ابى بكر قال: لما التقى الناس بمئونة، جلس رسول الله صلى الله عليه وسلم على المنبر، وكشف له ما بينه وبين الشام، فهو ينظر الى معركتهم، فقال عليه السلام: اخذ الراية زيد ين حارثة، فمضى حتى استشهد، وصلى عليه ودعاله، وقال استغفرواله، وقد دخل الجنة، وهو يسعى، ثم اخذ الراية جعفر بن ابى طالب، فمضى حتى استشهد، فصلى عليه رسول الله صلى الله عليه وسلم ودعاله، وقال: استغفروا له، وقد دخل الجنة، فهو يطير فيها بجناحين حيث شاء،
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবু বকর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ মাঊনানামক স্থানে মিলিত হলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে উঠে বসলেন। তখন তার কাছে শাম দেশের (মুতার যুদ্ধের) অবস্থা স্পষ্ট প্রকাশিত হচ্ছিল। তিনি হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের যুদ্ধের অবস্থা দেখতে ছিলেন। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, (যুদ্ধে) হযরত যায়িদ ইবনে হারিসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পতাকা ধরলেন, অতঃপর তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। তাই তিনি তাঁর উপর জানাযা নামায পড়লেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করলেন এবং বললেন, তোমরাও তাঁর জন্য ইস্তিগফার কর। তিনি জান্নাতে চলে গেছেন,আর তা খুবই দ্রুত। হযরত জাফর ইবনে আবু তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পতাকা ধরলেন অতঃপর তিনিও শহীদ হয়ে গেলেন। তাই, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উপর জানাযা নামায পড়লেন এবং তাঁর জন্য দোয়া করলেন এবং বললেন, তোমরাও তাঁর জন্য ইস্তিগফারের দোয়া কর। তিনি তাড়াতাড়ি জান্নাতে চলে গেছেন এবং সেখানে দুটি ডানা নিয়ে যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়বেন।       
আল্ মাবসূত লিস্ সারাখসী ২য় জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
روى عن ابن عباس رضى الله عنهما وابن عمر رضى الله عنه انهما فاتهما الصلاة على الجنازة فلما حضرا مازادا على الاستغفار له.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুা থেকে বর্ণিত। তাঁদের দুজনের একদা জানাযা নামায ফউত হলো। যখন তাঁরা (নামাযের পর মাইয়্যিতের কাছে) উপস্থিত হলেন, তখন মাইয়্যিতের জন্য অতিরিক্ত ইস্তিগফার করলেন।      
আল মাবসূত লিস সারাখসী ২য় জিঃ ৬৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
وعبد الله بن سلام رضى الله عنه فاتته الصلاة على جنازة عمر فلما حضر قال ان سبقتمونى بالصلاة عليه فلاتسبقونى بالد عاء له. (المبسوط للسرخسى ج 2 ص 67)
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জানাযা পাননি। (জানাযার পর) তিনি যখন (সেখানে) উপস্থিত হলেন তখন বললেন, “তোমরা জানাযা নামায যদিও আমার পূর্বে পড়ে ফেলেছ, তবে দোয়ার ক্ষেত্রে আমার থেকে অগ্রগামী হয়োনা। 
মীযানুল্ কুবরা লিশ্ শারানী কিতাবে উল্লেখ আছে,
قال ابوحنيفة الثورى ان التعزية سنة قبل الدفن لا بعده لان شدة الحزن تكون قبل الد فن فيعزى ويدعوله. (ميزان الكبرى للشعر انى ، جاء الحق حصه اص264)
অর্থঃ- হযরত ইমাম আবূ হানীফাতাছ্ ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন যে, দাফনের পরে নয় বরং দাফনের আগে সমবেদনা জ্ঞাপন করা সুন্নত। কেননা, দাফনের আগে বিরহ-বেদনা অনেক বেশী থাকে। তাই, (দাফনের পূর্বে) শোক প্রকাশ করবে এবং মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করবে।           
আল বাহরুর রাইক্ব শরহে কানযুদ্ দাক্বাইক্ব ২য় জিঃ ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لايدعو بعد التسليم كما فى الخلاصة وعن الفضلى لابأس به. (البحر الرائق شرح كنز الدقائق ج2ص 183، رضوية)
অর্থঃ- সালামের পর দোয়া করবেনা যেমনটি খুলাছায় আছে। ফযলী থেকে বর্ণিত আছে যে, জানাযা নামাযের সালামের পর দোয়া করতে কোন অসুবিধা নেই- অর্থাৎ জায়িয।         
ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব ত্বহত্বাবীতে উল্লেখ আছে,
وان ابا حنيفة لما مات فختم عليه سبعون الفا قبل الدفن.
অর্থঃ- যখন  হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকাল করেন, তখন দাফনের আগে তাঁর জন্য সত্তর হাজার বার কুরআন শরীফ খতম করা হয়।     
নাহরুল ফাইক্ব শরহে কান্যুদ্ দাকাইক্ব কিতাবে উল্লেখ আছে,
ويقول بعد صلوة الجنازة اللهم لاتحر منا اجره الخ.
অর্থঃ- জানাযা নামাযের পর পড়বে,
اللهم لا تحر منا اجره ولا تفتنا بعده واغفرلنا وله.
অর্থাৎ- আয় আল্লাহ্ পাক! ইন্তিকাল জনিত কারণে ধৈর্য্য ধারণের ছওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না। আর ইন্তিকালের পর  আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবেন না। আর আমাদের ও তার (মৃত ব্যক্তির) গুণাহ্খতা ক্ষমা করুন।    
কাশফুল্ হাক্বাইক্ব শরহে কানযুদ্ দাক্বাইক ১ম জিঃ ৩৩৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
بعضے حضرات نے سلام کے بعد یہ دعاء بھی لکھی ھے. کہ یہ پڑھے. اللھم ربنا اتنا فی الد نیا حسنۃ وفی الاخرۃ حسنۃ وقنا برحمتک عذاب القبر وعذاب النار.
অর্থঃ- কোন কোন হযরত উলামা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি জানাযা নামাযের সালামের পর এ দোয়া পড়ার কথা লিখেছেন,
اللهم ربنا اتنا فى الدنيا حسنة وفى الاخرة حسنة وقنا بر حمتك عذاب القبر وعذاب النار.
অর্থাৎ আয় আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়ার মধ্যে এবং আখিরাতের মধ্যে মঙ্গল (ভালাই) দান করুন। আর আপনার রহমতের দ্বারা আমাদেরকে কবরের আযাব এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন।   
যাদুল্ আখিরাহ ৯ম বাব ১১২ পৃষ্ঠা এবং হাদিয়াতুল মুছাল্লীন ১১২ ও ১১৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
 ودر روايتے ست لہ رسول علیہ السلام بر مردہ نماز گزا ردپس بگقت اللھم ان فلان بن فلان فی ذمتک دخل فی جوارک فقہ من فتنۃ القبر وعذاب النار وانت اهل االو فاء والحق اللهم اغفرله وارحمه انک انت الغفور الرحیم.
অর্থঃ- কোন কোন রিওয়ায়েতে রয়েছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযা নামায পড়ে এ দোয়া করেছেন,
اللهم ان فلان بن فلان فى ذمتك دخل فى جوارك فقه من فتنة القبر وعذاب النار وانت اهل الوفاء والحق اللهم اغفر له وارحمه انك انت الغفور الرحيم.
অর্থাৎ আয় আল্লাহ্ পাক! অমুকের পুত্র অমুক আপনার জিম্মাদারী ও হিফাযতে রয়েছে। আপনি তাকে কবরের পরীক্ষা ও দোযখের আযাব হতে রক্ষা করুন। আপনি ওয়াদা ও হক্ব পূরণকারী। অতএব, আপনি তাকে মাফ করে দিন ও তার প্রতি রহম করুন। নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল ও মহা দয়াবান।         ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব শরহে বরযখে উল্লেখ আছে,
وخواندن قران مجيد بر ميت ودعادر حق او قبل بر داشتن جنازه وپیش ازدفن سبب نجات از احوال اخرت وعذاب قبراست.

অর্থঃ- জানাযা উঠিয়ে নেয়া ও দাফন করার পূর্বে অর্থাৎ জানাযা নামাযের পরে মাইয়্যিতের জন্যে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা ও মুনাজাত করা আখিরাতের কঠিন অবস্থা এবং কবর আযাব হতে পরিত্রাণ পাওয়ার বিশেষ কারণ।     
তুহফাতুল গাফিলীন ৩য় পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اچھا  طریقہ ثواب رسانی کا مردہ کے حق مین یہ ھیں کہ قبل دفن جس قدر ھو ستکے کلمہ یاقران شریف یا درود یا کوئی سورت اپرہ کر ثواب بخشے.
অর্থঃ- মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করার উত্তম পদ্ধতি হলো, দাফন করার পূর্বে যতটুকু সম্ভব হয় দোয়া, দরূদ, তাসবীহ, সূরা, ক্বিরয়াত পাঠ করে বখশিয়ে দেয়া।       জাওয়াহিরুন্ নাফীস শরহে দুররুল ক্বাইস ১৩২ পৃষ্ঠা ও নাফিউল মুসলিমীন কিতাবে উল্লেখ আছে,
وفى نافع المسلمين رجل رفع يد يه بدعاء الفاتحة
অর্থঃ-নাফিউল মুসলিমীন”, কিতাবে উল্লেখ আছে যে, মাইয়্যিতের জন্য দাফনের পূর্বে (অর্থাৎ জানাযা নামাযের পর) উভয় হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা জায়িয।       কাশফ্ল্ ুগিত্বা, খুলাছাতুল্ ফাত্হ কিতাবে উল্লেখ আছে,
فاتحه ودعابر ائے میت پیش ازدفن درست است وھمیں است بروایت معموله کذا فی خلاصۃ الفتح.
অর্থঃ- দাফন করার পূর্বে অর্থাৎ জানাযার পর মাইয়্যিতের জন্য ফাতিহা পাঠ ও দোয়া করা জায়িয। এ রিওয়ায়েত অনুযায়ী আমল করা হয়েছে। খুলাছাতুল্ ফাত্হনামক কিতাবে অনুরূপ আছে।       ফাতাওয়ায়ে নাঈমিয়াহ্ ১২৫-১২৬ পৃষ্ঠা কিতাবে উল্লেখ আছে,
سوال: ھمارے جلال پور جٹاں میں ایک مھاجر مولوی صاحب ھیں وہ حسب ذیل باتیں کرتے ھیں ... "بعد نماز جنازہ کے دعا کرنا حرام ھے."
الجواب: مولوی مذکورکے یہ تمام مسائل غلط اور بے بنیاد هیں. ختم، فاتحہ، دعا بعد نماز جنازہ وغیر کار خیر ھیں. ان کے کرنے والا  مستحق ثواب ھے.
অর্থঃ- প্রশ্নঃ আমাদের জালালপুরে এক মুহাজির মৌলভী ছাহেব বলেন যে, .... “জানাযা নামাযের পর দোয়া করা হারাম।”- এ ব্যাপারে ওলামায়ে দ্বীন কি বলেন? জবাবঃ উল্লিখিত মৌলভী ছাহেবের উক্ত বক্তব্য ভুল এবং ভিত্তিহীন। জানাযা নামাযের পর খত্ম, ফাতিহা ও দোয়া পাঠ ইত্যাদি করা উত্তম কাজ। এরূপ আমলকারী ছাওয়াবের উপযুক্ত।        
খাইরুল ফতওয়া ৩য় জিঃ ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
نماذ جناذہ کے بعد صفیں توڑ کر دعا مانگنا جائز ھے فرض واجب نھیں، حدیث شریف میں ھے اذا صلیتم علی المیت فاخلصوا لہ الد عاء. (خیر الفتاوی  ج 3 ص 270)
অর্থঃ- নামাযে জানাযা-এর কাঁতার ভঙ্গ করে দোয়া করা জায়িয আছে। তবে ফরয, ওয়াজিব নয়। হাদীস শরীফে আছে, অর্থাৎ যখন তোমরা মাইয়্যিতের উদ্দেশ্যে নামায পড় তখন তার জন্য ইখলাছের সাথে দোয়া কর। 
খাইরুল ফাতাওয়া ৩য় জিঃ ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
نماذ جناذہ کے بعد صفیں توڑکر دعا مانگنا جائزھے فرض واجب نھیں .... علامہ سرخسی رحمۃ الله علیہ مبسوط میں فر ماتے ھیں کہ حضرت عبد اللہ بن سلام رضی اللہ تعالی عنہ حضرت عمر رضی اللہ تعالی عنہ کے جنا ذے پر ائے تو جناذہ ھو چکا تھا اپنے فر مایا ان سبقتمونی بالصلوۃ علیہ فلا تسبقونی بالدعاء لہ.
البتہ تارک کو ملامت نھیں کرنی چاھئے البتہ جو شخص اس کو بدعت یا خلاف شر ع کھتاھے وہ قابل ملامت ھے.
অর্থঃ- নামাযে জানাযা-এর কাঁতার ভঙ্গ করে দোয়া করা জায়িয।  তবে ফরয, ওয়াজিব নয়। ...... আল্লামা সারাখসী রহমতুল্লাহি আলাইহি মাবসূতনামক তাঁর লিখিত কিতাবে উল্লেখ করেন, হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জানাযা পাননি। (জানাযার পর) তিনি যখন (সেখানে) উপস্থিত হলেন তখন বললেন, “তোমরা জানাযা নামায যদিও আমার পূর্বে পড়ে ফেলেছ, তবে দোয়ার ক্ষেত্রে আমার থেকে অগ্রগামী হয়োনা।      নিশ্চয়ই জানাযার পর দোয়া তরক্বকারীকে তিরস্কার বা নিন্দনীয় মনে করা যাবেনা। কিন্তু যে ব্যক্তি উক্ত দোয়াকে বিদ্য়াত কিংবা খিলাফে শরাবলবে সে ব্যক্তি তিরস্কার বা নিন্দার পাত্র হবে।          ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ৫ম জিঃ ৪১৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
بعد نماز جنازہ ایصال ثواب: سوال (3103): بعد نماز جنازہ قبل دفن اولیاء میت مصلیوں سے کھتے ھیں کہ اپ لوگ تین تین مرتبہ سورہ اخلاص پڑہ کرمیت کو اس کاثواب بخش دیں.
الجواب: اس میں کچہ حرج نھیں ھے پس اگر بعد نماز جنازہ کے تمام لوگ یا بعض سورہ اخلاص  کو تین بار پڑہ کر میت کوثواب پھنچا دیں تو اس میں کچہ حرج نھیں ھے.
অর্থঃ- জানাযা নামাযের পর ঈছালে ছওয়াব প্রসঙ্গেঃ সুওয়াল ৩১০৩)ঃ জানাযা নামাযের পর মৃতের ওলী উপস্থিত মুছল্লীগণকে লক্ষ্য করে বলেন যে, আপনারা তিন বার সূরা ইখলাছ পড়ে মাইয়্যিতের উপর ছওয়াব বখ্শিয়ে দিন। (এটা কিরূপ?) জাওয়াবঃ এরূপ করাতে কোন দোষ বা ক্ষতি নেই। সুতরাং জানাযা নামাযের পর যদি সকল লোক অথবা কিছু লোক সূরা ইখলাছ তিনবার পড়ে মাইয়্যিতের জন্য ছওয়াব রিসানী করে তাতে কোনই ক্ষতি নেই। (অর্থাৎ জায়িয)।     ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ৫ম জিঃ ৪৩৪, ৪৩৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে.
بعد نماز جنازہ ایصال: سوال (3134): بعد نمازجنازہ قبل دفن چند مصلیوں کا ایصال ثواب کے لئے سورہ فاتحہ ایک بار اور سورہ اخلاص تین بار اھستہ اواز سے پڑ ھنا اور امام جنازہ یاکسے نیک أدمی کا دونوں ھاتہ اٹھا کر مختصر دعا کرنا شرعا درست ھے یا نھیں؟
الجواب: اس میں کچہ حر ج نھیں ھے .........
 অর্থঃ- জানাযা নামাযের পর ঈছালে ছওয়াব প্রসঙ্গেঃ সুওয়াল (৩১৩৪)ঃ জানাযা নামাযের পর দাফনের পূর্বে কতক মুছল্লী (মৃতের প্রতি) ছওয়াব রেসানী করার জন্য অল্প আওয়াজে একবার সূরা ফাতিহা, তিনবার সূরা ইখলাছ পড়া এবং জানাযা নামাযের ইমাম অথবা কোন নেক লোকের জন্যে (জানাযা নামাযের পরে) উভয় হাত উঠিয়ে সংক্ষিপ্ত  মুনাজাত করা শরীয়তে জায়িয কিনা?  জাওয়াবঃ এরূপ পদ্ধতিতে মুনাজাত করাতে কোন ক্ষতি নেই।...।  নাফউল মুফতী ওয়াস্ সাইল ৪১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
پھر کھا ھے کہ محمد بن الفضل نے یہ کھا ھے کہ اگر جنازہ کی نماز کے بعد دعا کر لی جائے تو کوئی مضا ئقہ نھیں.
অর্থঃ- হযরত মুহম্মদ ইবনে ফযল রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যদি জানাযা নামাযের পর দোয়া করে তাতে কোন অসুবিধা নেই। কিফায়াতুল মুফতী ৪র্থ জিঃ ৯২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
تاھم نماذ جنازہ سے فارغ ھونے کے بعد فردا فر دا  اگر اوگ دعا مانگ لیں تو کچہ مضا ئقہ بھی نھیں.
অর্থঃ- জানাযা নামায পড়ার পর যদি লোকেরা পৃথক পৃথকভাবে মুনাজাত করে তবে কোন ক্ষতি নেই।      কিফায়াতুল মুফতী ৪র্থ জিঃ ৭৪, ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
ھاں لوگ اپنے اپنے دل میں بغیر ھا تہ اٹھا ئے دعائے مغفرت کر تے رھیں تویہ جائز ھے.
অর্থঃ- হ্যাঁ (জানাযার পরে)  যদি লোকেরা আলাদা আলাদাভাবে মনে মনে হাত উঠানো ছাড়া দোয়া, মাগফিরাত করে তবে তা জায়িয হবে।         উল্লেখ্য, মুফতী কিফায়াতুল্লাহ ছাহেব যদিও অজ্ঞতার কারণে ইজ্তিমায়ী দোয়াকে ও হাত উঠানোকে অস্বীকার করেছেন, কিন্তু জানাযার পর দোয়া করাকে ঠিকই জায়িয বলেছেন।          ইখতিলাফে উম্মত আওর ছিরাতে মুস্তাকীম ১ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جنازے کے بعد دعا گر نے ھوتو صفوں کے تر تیب کو توڑ جیا جائے. اور ھر شخص اپنے طور پر بغیر ھاتہ اٹھائے دعاکرے تو مضائقہ نھیں.
অর্থঃ- জানাযার পর দোয়া করতে হলে কাঁতার ভেঙ্গে দিবে এবং প্রত্যেকেই হাত উঠানো ব্যতীত দোয়া করবে। এরূপ করাতে কোন অসুবিধা নেই।             উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, নির্ভরযোগ্য বহু ফিক্বাহের কিতাবেই জানাযার পর দোয়া করাকে জায়িয বলা হয়েছে।শুধু তাই নয় মুনাজাত বিরোধীদের মুরুব্বী দেওবন্দীদের কিতাবেও জানাযার পর দোয়াকে জায়িযবলা হয়েছে। অতএব, প্রমাণিত হলো যে, মুনাজাত বিরোধীদের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও চরম জিহালতপূর্ণ।   দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, হ্যাঁ কোন কোন ফিক্বাহের কিতাবে জানাযার সালামের পর দোয়া করাকে মাকরূহ লিখা হয়েছে এটা সত্য কথাই, তবে তা অবশ্যই ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। কেননা যেখানে হাদীস শরীফ দ্বারাই প্রমাণিত যে, স্বয়ং আখিরি রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ জানাযার পর দোয়া করেছেনসেখানে ইমামগণ সরাসরী এটাকে মাকরূহ বলতে পারেননা, যদি বলেও থাকেন তবে অবশ্যই তা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ, নচেৎ প্রমাণিত হবে যে, ইমামগণ হাদীস শরীফের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিয়েছেন। অথচ তা চিন্তাই করা যায়না। অতএব ফিক্বাহের যেসকল কিতাবে জানাযার পর দোয়াকে মাকরূহ বলা হয়েছে তার ব্যাখ্যা মূলক জাওয়াব হলো- সালামের পর নামাযের কাতারে থেকে দাঁড়ানো অবস্থায় দোয়া করা মাকরূহ। কেননা যদি কাতারে থেকে দোয়া করা হয়, তবে সাধারণ লোক হয়তো মনে করতে পারে যে, দোয়াটি নামাযেরই একটি অংশ। সাধারণ লোক যেন বিভ্রান্তিতে না পরে তাই ফক্বীহগণ সালামের পর পরই অর্থাৎ কাঁতারে থেকে দোয়া করাকে মাকরূহ বলেছেন। যা মূলতঃ ফিক্বাহের কিতাবের ইবারত দ্বারাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। নিম্নে উদাহরণ স্বরূপ কতিপয় ইবারত উল্লেখ করা হলো-           ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব বাহরুর রায়িক”-এর ২য় জিঃ ১৮৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
لايدعو بعد التسليم كما فى الخلاصة
অর্থাৎ জানাযার নামাযের সালাম ফিরানোর পর দোয়া করবে না। অনুরূপ খোলাছায় উল্লেখ আছে।   ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব কিনইয়াহ”-এর ১ম জিঃ ৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لايقوم الرجل بالد عاء بعد صلاة الجنازة
অর্থাৎ- জানাযা নামাযের পর কোন লোক (কাঁতারে) দাঁড়িয়ে থেকে দোয়া করবেনা। মিশকাত শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাত শরীফ”-এর ২য় জিঃ ৩১৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
لا يدعو للميت بعد الجنازة لانه يشبه الزياة فى صلاة الجنازة.
অর্থাৎ জানাযা নামায শেষ করার (পর পরই) মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করবেনা। কেননা এতে (সাধারণ লোক মনে করতে পারে যে) জানাযার নামাযে অতিরিক্ত করা হয়েছে।       উল্লেখ্য, উল্লিখিত তিনখানা ইবারতে বর্ণিত তিন খানা শব্দ যেমন, يقوم. تسليم এবং زيادة দ্বারা এটাই প্রমাণ করে যে, সালামের পর পর কাঁতারে থেকে দোয়া করলে সাধারণ লোক এটাকে জানাযার অতিরিক্ত একটি অংশ মনে করতে পারে বিধায় ফক্বীহগণ এটাকে মাকরূহ বলেছেন। সুতরাং সালামের পর কাতার ভঙ্গ করে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা ফক্বীহগণের মতে মাকরূহ নয়। কেননা এতে সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পরার কোন অবকাশ নেই।   এর প্রমাণ বা দৃষ্টান্ত আমরা ফিক্বাহের কিতাবসমূহে অন্যান্য মাসয়ালার ক্ষেত্রেও দেখতে পাই। যেমন ফিক্বাহর কিতাবে উল্লেখ আছে, “জামায়াতে নামায আদায় করার পর যে স্থানে দাঁড়িয়ে ফরয পড়েছে, সে স্থানে দাঁড়িয়ে সুন্নত আদায় করা মাকরূহ। কেননা এতে সাধারণ লোক মনে করতে পারে যে, জামায়াত তখনও চলছে বা শেষ হয় নাই। তাই কাঁতার ভঙ্গ করে একটু ডানে বামে বা উপরে নিচে সরে সুন্নত আদায় করবে। তবে সাধারণ লোক বিভ্রান্তিতে পড়ার অবকাশ থাকবে না।            ফক্বীহগণ এর উপর ক্বিয়াস করেই ফতওয়া দিয়েছেন যে, জানাযার পর কাঁতার ভঙ্গ করে এবং মাইয়্যিত থেকে একটু সরে গিয়ে দোয়া করা জায়িয, মাকরূহ নয়। কেননা এতে বিভ্রান্তিতে পরার কোনই অবকাশ নেই।      ফক্বীহগণ যে, জানাযার পর কাঁতার ভঙ্গ করে দোয়া করাকে জায়িয বলেছেন নিম্নে তার কতিপয় প্রমাণ পেশ করা হলো-        চৌদ্দশত হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, ইমামুল হুদা, কুতুবুল আলম, ফক্বীহুল উম্মত, মুজাহিদে আযম হযরত আবু বকর ছিদ্দীকী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বয়ং নিজেই জানাযার পর কাতার ভঙ্গ করে হাত তুলে ও সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করতেন এবং তাঁর বিখ্যাত মত-পথনামক কিতাবে তা জায়িয বলে ফতওয়া দিয়েছেন। যেমন, উক্ত কিতাবে উল্লেখ আছে, “আরো কতগুলো মাসয়ালা যেগুলোকে ফুরফুরার পীর ছাহেব ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি জায়িয বলতেন ও নিজেও আমল করতেন। যথা কবরে তালকীন করা, জানাযা নামাযের পর কাঁতার ভঙ্গ করে মুর্দার জন্য মাগফিরাতের দোয়া চাওয়া ও ছওয়াব রেসানী করা ........           খাইরুল ফাতাওয়া ৩য় জিঃ ২৭০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
نماز جنازہ کے بعد صفیں توڑگر دعا مانگنا جائز ھے.
অর্থঃ- নামাযে জানাযা-এর কাঁতার ভঙ্গ করে দোয়া করা জায়িয আছে।      ইখতিলাফে উম্মত আওর ছিরাতে মুস্তাকীম ১ম জিঃ ১২২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
جنازے کے بعد دعا کرنے ھو تو صفوں کے ترتیب کو توڑ دیا جائے.
অর্থঃ- জানাযার পর দোয়া করতে হলে কাঁতার ভেঙ্গে দিবে।     ফক্বীহগণের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা অকাট্য ভাবেই প্রমাণিত হলো যে, কাঁতার ভঙ্গ করে জানাযার পর মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা জায়িয। ফিক্বাহের যে সকল কিতাবে জানাযার পর দোয়া করাকে মাকরূহ বলা হয়েছে তা ব্যাখ্যা সাপেক্ষ অর্থাৎ উক্ত ইবারত সমূহের সঠিক ও ব্যাখ্যা মূলক অর্থ হলো- জানাযার নামাযের সালামের পর পর কাঁতারে দাঁড়িয়ে থেকে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা মাকরূহ।   তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে, মুনাজাত বিরোধীরা যে বলে, “জানাযার পর থেকে দাফনের পূর্ব পর্যন্ত দোয়া করা জায়িয নেই।তাদের এ বক্তব্য চরম জিহালত পূর্ণ ডাহা মিথ্যা দলীল বিহীন ও হাদীস শরীফ বিরোধী। কেননা হাদীস শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে যে, আখিরী রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাফনের পূর্বেও মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করেছেন।ঃ     মুনাজাত বিরোধীদের প্রতি চ্যালেঞ্জ তারা কুরআন, হাদীস ও ফিক্বাহের কিতাব থেকে এরূপ একখানা দলীল পেশ করুক যেখানে লেখা আছে যে, “জানাযার পর থেকে দাফনের পূর্ব পর্যন্ত দোয়া করা জায়িয নেই।পক্ষান্তরে দাফনের পূর্বে যে, দোয়া করা জায়িয তার বহু প্রমাণ আমাদের নিকট বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নে তার কিছু প্রমাণ উল্লেখ করা হলো-   ত্বহত্বাবী শরীফ-এ উল্লেখ আছে,
ان ابا حنيفة لما مات فختم عليه سبعون الفا قبل الدفن.
অর্থঃ- যখন  হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ইন্তিকাল করেন, তখন দাফনের আগে তাঁর জন্য সত্তর হাজার বার কুরআন শরীফ খতম করা হয়।      নাহরুল ফাইক্ব শরহে কান্যুদ্ দাকাইক্ব-এ উল্লেখ আছে,
ويقول بعد صلوة الجنازة اللهم لاتحرمنا اجره الخ.
অর্থঃ- জানাযা নামাযের পর পড়বে,
اللهم لا تحر منا اجره ولاتفتنا بعد هوا غفرلنا وله.
অর্থাৎ- আয় আল্লাহ্ পাক! ইন্তিকাল জনিত কারণে ধৈর্য্য ধারণের ছওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না। আর ইন্তিকালের পর  আমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলবেন না। আর আমাদের ও তার (মৃত ব্যক্তির) গুণাহ্খতা ক্ষমা করুন।     শরহে বরযখ-এ উল্লেখ আছে,
وخواندن قران مجيد بر ميت ودعا در حق او قبل بر داشتن جنازه وپيش ازدفن سبب نجات از احوال اخرت وعذاب قبراست.
অর্থঃ- জানাযা উঠিয়ে নেয়া ও দাফন করার পূর্বে অর্থাৎ জানাযা নামাযের পরে মাইয়্যিতের জন্যে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা ও মুনাজাত করা আখিরাতের কঠিন অবস্থা এবং কবর আযাব হতে পরিত্রাণ পাওয়ার বিশেষ কারণ।      তুহফাতুল গাফিলীন ৩য় পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে,
اچھا طریقہ ثواب رسانی کا مردہ کے حق مین یہ ھیں کہ قبل دفن جس قدر ھو سکے کلمہ یاقران شریف یا درود یا کوئی سورت اپرھ کر ثواب بخشے.
অর্থঃ- মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করার উত্তম পদ্ধতি হলো, দাফন করার পূর্বে যতটুকু সম্ভব হয় দোয়া, দরূদ, তাসবীহ, সূরা, ক্বিরয়াত পাঠ করে বখশিয়ে দেয়া।       জাওয়াহিরুন্ নাফীস শরহে দুররুল ক্বাইস ১৩২ পৃষ্ঠা ও নাফিউল মুসলিমীন-এ উল্লেখ আছে,
وفى نافع المسلمين رجل رفع يديه بدعاء الفاتحة للميت قبل الدفن جاز.
অর্থঃ-নাফিউল মুসলিমীন”, কিতাবে উল্লেখ আছে যে, মাইয়্যিতের জন্য দাফনের পূর্বে (অর্থাৎ জানাযা নামাযের পর) উভয় হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা জায়িয।        কাশফ্ল্ ুগিত্বা, খুলাছাতুল্ ফাত্হ-এ উল্লেখ আছে,
فاتحہ ودعا برائے میت پیش ازدفن درست است وھمیں است بروایت معمولہ کذا فی خلاصۃ الفتح.
অর্থঃ- দাফন করার পূর্বে অর্থাৎ জানাযার পর মাইয়্যিতের জন্য ফাতিহা পাঠ ও দোয়া করা জায়িয। এ রিওয়ায়েত অনুযায়ী আমল করা হয়েছে। খুলাছাতুল্ ফাত্হনামক কিতাবে অনুরূপ আছে।        অতএব, উপরোক্ত, দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, জানাযার পর দাফনের পূর্বে মৃত ব্যক্তির জন্যে দোয়া করা জায়িয। তবে জানাযার পর পরই কাঁতারে থেকে দোয়া করা মাকরূহ। এটাই আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসরণীয় ফক্বীহ ও ইমামগণের সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ফতওযা। জানাযার পর মুনাজাত বিরোধীদের মনগড়া যুক্তি ও জিহালতপূর্ণ বক্তব্য  এবং তার খন্ডনমূলক জাওয়াব-৫       মুনাজাত বিরোধীরা আরো অপপ্রচার করে থাকে যে, “জানাযার পর কাঁতার ভঙ্গ করে দোয়া করা জায়িয এটা কোন মুজতাহিদ আলিমের ফতওয়া নয়, বরং ছূফীগণের ফতওয়া। আর ফতওয়ার ক্ষেত্রে ছূফীগণের ফতওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।    মুনাজাত বিরোধীদের উক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, মুনাজাত বিরোধীরা আলিমের সংজ্ঞা বা পরিচয় সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ, যদি আলিম সম্পর্কে তাদের বিন্দুতমও জ্ঞান থাকতো, তবে তারা এরূপ কথা বলতে পারতো না। মূলতঃ ছূফীগণই হচ্ছেন প্রকৃত আলিম। ছূফী হওয়া ব্যতীত প্রকৃত আলিম হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা। কুরআন-সুন্নাহ পর্যালোচনা করলে এটাই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। নিম্নে কুরআন-সুন্নাহর দৃষ্টিতে প্রকৃত আলিমের সংজ্ঞা ও পরিচয় তুলে ধরা হলো-      আলিমের  সংজ্ঞা          উল্লেখ্য,  عالم (আলিমুন) শব্দটি বারে,  سمع-يسمع থেকে উদ্ভূত। উক্ত শব্দটি اسم فاعل বা কর্তৃবাচক। তার লোগাতী বা আভিধানিক অর্থ হলো- একজন জ্ঞানী পুুরুষ। আর ইস্তিলাহী  বা পারিভাষিক অর্থে - আলিম তাকেই বলে, যিনি দ্বীনি ইল্ম তথা ইল্মে ফিক্বাহ ও ইল্মে তাছাউফের অধিকারী। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি আলিম হতে হলে প্রথমতঃ তাকে ইল্মে ফিক্বাহ্  ও ইল্মে তাসাউফ উভয়টাই অর্জন করতে হবে।       কেননা. হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
العلماء ورثة الانبيا ء وان الانبياء لم يورثوا دينارا ولادرهما وانما ورثوا العلم.
অর্থঃ নিশ্চয় আলিমগণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছ। আর নিশ্চয় নবী আলাইহিমুস্ সালামগণ কোন দীনার-দিরহাম রেখে যাননি। বরং ইল্ম রেখে গেছেন।” (তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনে মাযাহ্, আহ্মদ, মিশকাত, মায়ারিফুস্ সুনান, উরফুশ শাযী, বযলুল মাজহুদ, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব) উল্লেখ্য যে, নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে দুপ্রকার ইল্ম রেখে গেছেন। অর্থাৎ ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফ।            যে প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
العلم علمان فعلم فى القلب فذاك العلم النا فع وعلم على اللسان فذالك حجة الله عزوجل على ابن ادم.
অর্থঃ-ইল্ম দুপ্রকার। (১) ক্বাল্বী ইল্ম (ইল্মে তাসাউফ) যা উপকারী ইল্ম, (২) জবানী ইল্ম (ইল্মে ফিক্বাহ্) যা আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল স্বরূপ।” (দারিমী, বাইহাক্বী, দাইলামী, তারগীব ওয়াত তারহীব, তারীখ, আব্দুল বার, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত আশয়াতুল, লুময়াত, শরহুত্ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব)    উপরোক্ত হাদীস শরীফ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়ারিছ স্বত্ব হিসেবে ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফ উভয়টিই রেখে গেছেন। কাজেই যে ব্যক্তি উভয়টিই শিক্ষা করলো, সে ব্যক্তিই নায়িবে রসূল বা হাক্বীক্বী আলিম।          উপরোল্লিখিত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় ইমামে রব্বানী, মাহ্বুবে সুবহানী, কাইয়ুমে আউয়াল, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিখ্যাত কিতাব মাকতুবাত শরীফেউল্লেখ করেন,
العلماء ورثۃ الانبیاء- علمیکہ از انبیاء علیہم الصلوات والتسلیمات باقی مانده است دونوع است علم احکام وعلم اسرار وورث کسی ہست کہاورا ہردو نوع علم سہم بود نہانکہ اورا ازیک نوع نصیب بود نہ از نوع دیگر کہان منافیوراثت است- چہ وراٹت را از جمیع انواع ترک مورث نصیب است نہ اذبعض وأنکہاورا ازمعین نصیب است د ا خل غرما است کہ نصیب اویجنس حق او تعلق گر فتہ است.
 অর্থঃ- আলিমগণ নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের ওয়ারিছএ হাদীস শরীফে বর্ণিত আলিম তারাই, যাঁরা নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের রেখে যাওয়া ইল্মে আহ্কাম (ইল্মে ফিক্বাহ্) ও ইল্মে আসরার (ইল্মে তাসাউফ) উভয় প্রকার ইল্মের অধিকারী। অর্থাৎ তিনিই প্রকৃত ওয়ারিছ বা স্বত্বাধিকারী। আর যে ব্যক্তি শুধুমাত্র এক প্রকার ইল্মের অধিকারী, সে ব্যক্তি নবী আলাইহিমুস্ সালামগণের প্রকৃত ওয়ারিছ নন। কেননা পরিত্যক্ত সম্পত্তির সকল ক্ষেত্রে অংশীদারী হওয়াকেই ওয়ারিছ বলে। আর যে ব্যক্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন নির্দিষ্ট অংশের অধিকারী হয় তাকে গরীম বলে। অর্থাৎ সে ওয়ারিছ নয় গরীমের অন্তর্ভুক্ত।  হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর মিশকাত শরীফের বিখ্যাত শরাহ্ মিরকাত শরীফেউল্লেখ করেন যে, মালিকী মায্হাবের ইমাম হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,



من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بينهما فقد تحقق.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করলো না, সে ফাসিক। আর যে ব্যক্তি ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করলো কিন্তু ইল্মে ফিক্বাহ্ শিক্ষা করলো না, সে যিন্দিক (কাফির)। আর যে ব্যক্তি উভয়টি শিক্ষা করলো, সে মুহাক্কিক তথা হক্কানী আলিম।   অর্থাৎ যে ইল্মে ফিক্বাহ্ শিখলো, কিন্তু ইল্মে তাসাউফ শিখলোনা, সে হচ্ছে ফাসিক। আর যে বলে আমি মারিফাত করি বা ইল্মে তাসাউফ করি কিন্তু শরীয়ত বা ফিক্বাহ্ স্বীকার করেনা, সে হচ্ছে যিন্দিক। আর যিনি উভয়টাই শিক্ষা করলেন, তিনি হচ্ছেন মুহাক্কিক অর্থাৎ হাক্বীক্বী আলিম।       আলিম কাকে বলে ?     দ্বিতীয়তঃ আলিম ঐ ব্যক্তিই যার অন্তরে তাক্বওয়া বা খোদাভীতি রয়েছে। অর্থাৎ যিনি আল্লাহ্ পাক-এর ভয়ে হারাম, নাজায়িয কাজ থেকে বিরত থাকেন। কেননা মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
انما يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থঃ- নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক-এর বান্দাদের মধ্য হতে শুধুমাত্র আলিমগণই আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির/২৮)           এ আয়াত শরীফের তাফসীর জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, হাম্বলী মায্হাবের প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম, ইমামুল আইম্মা, শায়খুল মুহাদ্দিসীন, হযরত আহ্মদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে। তিনি এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন, “যাঁর ভিতর যত বেশী খোদাভীতি রয়েছে তিনি ততবড় আলিম।উক্ত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ তাফসীরে খোলাছায়উল্লেখ আছে যে,
"العلماء" سے اصطلاحی عالم یعنی کتابین پرہ لینے والے مراد نھین. بلکہ کبریائے ذات وعظمت صفات کونور ایمان شمع عرفان سے دیکھنے  والے اسلئے کہ اصحاب رسول صلی اللہ علیہ وسلم و ارباب ولا یت وقبول سبکے سب علماء کتابی نہ تھی گو اونکا علم نا فع اعلی در جے کا تھا.
অর্থঃ- উক্ত আয়াত শরীফে "العلماء শব্দ দ্বারা কিতাব সমূহ পাঠকারী তথা (দাওরা বা টাইটেল পাশকারীদেরকে) বুঝানো হয়নি। বরং কুরআন শরীফে বর্ণিত আলিমতারাই, যারা মহান আল্লাহ্ পাক-এর মহিমাময় জাত ও অসীম গৌরবময় ছিফাত সমূহকে ঈমান ও মারিফতের নূরের আলোকে অবলোকন করেছেন। কেননা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রিয়তম ছাহাবী আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ ও (পূর্ববর্তী) বিলায়েতপ্রাপ্ত ও মকবুল ওলীআল্লাহ্গণ কিতাবী তথা দাওরা বা টাইটেল পাশ আলিম ছিলেন না। তথাপিও তাঁরা সর্বোচ্চ স্তরের উপকারী ইল্মের অধিকারী ছিলেন। অর্থাৎ তারাই কুরআন শরীফে বর্ণিত প্রকৃত আলিম ছিলেন।       উল্লিখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত আলিম, ইমামুল মুফাস্সিরীন, হযরত ইবনে কাছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর প্রসিদ্ধ তাফসীরে ইবনে কাছীরেউল্লেখ করেন,
عن ابن مسعود رضى الله عنه انه قال ليس العلم عن كثرء الحن يث ولكن العلم عن كثرة الخ شية وقال احمد بن صالح المصرى عن ابن وهاب عن مالك قال ان العلم ليس لكثرء الروا ية وانما العلم نوريجعله الله تعالى فى القلب.
অর্থঃ- হযরত ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি অধিক হাদীস জানে সে ব্যক্তি আলিম নয়। বরং যাঁর মধ্যে আল্লাহ্ভীতি অধিক সে ব্যক্তিই আলিম। আর আহ্মদ বিন ছালেহ্ মিছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, অধিক রেওয়ায়েত শিক্ষা করলেই আলিম হওয়া যায়না। মূলতঃ ইল্ম হচ্ছে নূর বা জ্যোতি স্বরূপ। আল্লাহ্ পাক তা মানুষের অন্তকরণে দান করেন।উক্ত তাফসীরে ইবনে কাছীরেউল্লেখিত আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় আরো উল্লেখ আছে যে,
قال سفيان الثورى ... العلماء ثلاثة عالم بالله وعالم لبا مر الله وعالم بالله ليس بعالم بامرالله وعالم بامر الله ليس بعالم  بالله. فالعالم بالله وبامر الله الذى يخشى الله تعالى ويعلم الحدود والفرائض.

অর্থঃ হযরত ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আলিমগণ তিনভাগে বিভক্ত। (১) আলিম বিল্লাহ্ অর্থাৎ যারা শুধু আল্লাহ্ পাককেই জানে। কিন্তু তাঁর হুকুম-আহ্কাম সম্পর্কে অজ্ঞ। (২) আলিম বিআমরিল্লাহ্। অর্থাৎ যারা শুধু হুকুম-আহ্কাম সম্পর্কে জানে। কিন্তু আল্লাহ্ পাক সম্পর্কে অজ্ঞ বা আল্লাহ্ভীতি নেই। (৩) আলিম বিল্লাহ্ ওয়া বিআমরিল্লাহ্। অর্থাৎ যাঁরা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর শরীয়তের হুকুম-আহ্কাম ও ফারায়েজ সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত এবং আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন। (তাঁরাই হাক্বীক্বী বা প্রকৃত আলিম।)       তৃতীয়তঃ ঐ ব্যক্তিই হাক্বীক্বী আলিম যিনি অর্জিত ইল্ম অনুযায়ী পরিপূর্ণ আমল করেন। যেমন  এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من ارباب العلم؟ قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟ قال الطمع
অর্থঃ- “(আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত কাব ইবনুল আহ্বার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন) আলিম বা ইল্মের অধিকারী কে? তিনি উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করে। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পুনরায় জিজ্ঞেসা করলেন, কোন্ জিনিস আলিমদের অন্তর থেকে ইল্মকে বের করে দেয়? তিনি উত্তরে বললেন, লোভ অর্থাৎ দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল মানাজীহ্)       বিশিষ্ট তাবেয়ী, আমীরুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে জিজ্ঞাসা করা হলো- আলিম কে? তিনি জবাবে বলেন,
انما الفقيه الزاهد فى الد نيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداؤم على عبادة ربه والوارع الكف عن اعرض المسلمين والعفيف عن اموالهم والنا صح لجماعتهم.
 অর্থঃ- ফক্বীহ্ বা আলিম হলের ঐ ব্যক্তি, যিনি যে দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুণাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা মহান আল্লাহ্ পাক-এর ইবাদতে মশগুল, পরহিজগার বা সুন্নতের পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং তাঁর অধীনস্থদেরকে নছীহত করেন। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ছূফীগণই প্রকৃত আলিম বা ওরাছাতুল আম্বিয়া, কেননা একমাত্র ছূফীগণই ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফের অধিকারী। অতএব, প্রকৃত আলিমদেরই ফতওয়া হলো- জানাযার পর কাঁতার ভঙ্গ করে দোয়া করা জায়িয। সুতরাং মুনাজাত বিরোধীদের উক্ত বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও দলীলবিহীন এবং কুরআন সুন্নাহ বিরোধী বলেই প্রমাণিত হলো। মূলকথা           মূলকথা হলো, জানাযার পর দোয়া করা যে জায়িয এ ব্যাপারে কোন দলীলেরই প্রয়োজন নেই। কেননা শরীয়তের মশহুর উছূল রয়েছে যে, শরীয়তের যে বিষয়ে কুরআন সুন্নাহর আদেশও নেই নিষেধও নেই, সে বিষয়টি মোবাহ অর্থাৎ জায়িয। মুনাজাত বিরোধীদের নিকট প্রশ্ন-জানাযার নামাযের পর দোয়া করার ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর কোথাও নিষেধ করা হয়েছে কি? অর্থাৎ মুনাজাত বিরোধীরা প্রমাণ করতে পারবে কি? যে, কুরআন ও হাদীসের কোথাও জানাযার পর মুনাজাত করতে নিষেধ করা হয়েছে। যদি এরূপ কোন প্রমাণ না-ই থাকে তবে কি করে মুনাজাতকে নাজায়িয বলা যেতে পারে? মূলতঃ এটাকে নাজায়িয বলার অর্থই হলো শরীয়তের সর্বজন স্বীকৃত উছূলকে অস্বীকার করা।        সুতরাং মুনাজাত বিরোধীরা যদি এটাকে নাজায়িয বলতে চায় তবে তাদেরকে অবশ্যই এরূপ কোন আয়াত বা হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করতে হবে যেখানে জানাযার পর দোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছে। নচেৎ তাদের বক্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য হবেনা। বরং সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য। পরিশিষ্ট           মাসিক আল বাইয়্যিনাত-এর ১০১, ১০২, ১০৩, ১০৪, ১০৫, ১০৬, ১০৭, ১০৮, ১০৯, ১১০ এবং বর্তমান ১১১তম সংখ্যার বিস্তারিত দলীল-আদিল্লা ভিত্তিক আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, জানাযা নামাযের পূর্বে, পরে এবং দাফনের পরে দোয়া মুনাজাত করার অস্তিত্ব, হুকুম-আহকাম কুরআন শরীফ, তাফসীর, হাদীস শরীফ, শরাহ, ফতওয়া ও ফিক্বাহ তথা শরীয়তে বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নে এই বিশদ আলোচনার সার সংক্ষেপ উপস্থাপন করা হলো-   ১. শরীয়তের দলীল হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস।         ২. শরীয়তে জানাযার পর কাঁতার ভঙ্গ করে সম্মিলিতভাবে হাত উঠিয়ে নিজের ও মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করা সুন্নত ও জায়িয। মাকরূহ, বিদয়াত, নাজায়িয ও হারাম মোটেও নয়।      ৩. ইন্তিকালের পর জানাযার পূর্বে এবং দাফনের পর নিজের ও মাইয়্যিতের উদ্দেশ্যে দোয়া-ইস্তিগফার করাও সুন্নত ও জায়িয।      ৪. জানাযা নামাযের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফাযাইল-ফযীলত এমন যে, এটা মুমিন-মুসলমানগণের জন্য রহমত, বরকত ও শান্তি স্বরূপ।           ৫. ইন্তিকালকৃত ব্যক্তির জন্য জানাযা আদায়কারীগণের সুপারিশসমূহ কবূল করা হয়। ৬. কমপক্ষে তিন কাঁতারে মাইয়্যিতের জানাযা পড়লে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। বেজোড় কাঁতার সুন্নত।      ৭. যে ব্যক্তি শুধু জানাযা নামায পড়ল কিন্তু দাফন করা পর্যন্ত থাকল না সে এক ক্বীরাত সওয়াব পাবে। আর যে নামায পড়ার পর দাফনও সমাধা করল সে দুই ক্বীরাত ছওয়াব পাবে। আর ক্বীরাত হচ্ছে উহুদ পাহাড় পরিমাণ ছওয়াব।      ৮. জানাযা নামায পড়ার কারণেই মাইয়্যিতের প্রতি পূর্ণ কর্তব্য পালিত হয়ে থাকে।       ৯. জানাযা নামায ফরযে ক্বিফায়াহ। এ বিষয়ে উম্মতের ইজ্মাপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই এটার অস্বীকারকারী কাফির হবে। যদি একজন পুরুষ বা একজন মহিলাও জানাযা আদায় করে, তবে সকলের পক্ষ থেকেই ফরযিয়াত আদায় হবে। আর যদি কেউই আদায় না করে, তবে সকলেই গুণাহ্গার হবে। জানাযা নামাযের জন্য জামায়াত শর্ত নয়।       ১০. হানাফী মাযহাব মুতাবিক জানাযা নামায আদায় করার সুন্নত তরীক্বা (নিয়ম) হচ্ছে- প্রথমতঃ জানাযা নামাযের নিয়ত করতে হবে, দ্বিতীয়তঃ প্রথম তাকবীর বলে তাহরীমা বেঁধে ছানা পড়বে, তৃতীয়তঃ দ্বিতীয় তাকবীর বলে দরূদ শরীফ পড়বে, চতুর্থতঃ তৃতীয় তাকবীর বলে মাইয়্যিতের জন্য দোয়া পাঠ করবে, পঞ্চমতঃ চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরাবে, ষষ্ঠতঃ শুধু প্রথম তাকবীরেই হাত উঠাবে, আর শুধু ইমাম ছাহেব উচ্চ আওয়াযে তাকবীর দিবেন, প্রয়োজন হলে মুকাব্বিরও উচ্চ আওয়াযে তাকবীর বলতে পারেন।    ১১. জানাযা মূলতঃ ছলাত বা নামাযজানাযাকে দোয়া বলা অজ্ঞতা ও গোমরাহী। কারণ, কুরআন শরীফের আয়াত, হাদীস শরীফ, শরাহ, ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহে জানাযাকে ছলাত বা নামায বলেই অসংখ্য স্থানে উল্লেখ করা হয়েছে।         ১২. কাফির, মুশরিক, মুনাফিক ইত্যাদি লোকদের জানাযা পড়া জায়িয নেই, বরং হারাম ও নাজায়িয। কিন্তু মুমিন, মুসলমান ও ফাসিক ব্যক্তির জানাযা পড়তেই হবে। এ বিষয়ে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসে নির্দেশ এসেছে।   ১৩. কুরআন শরীফ ও হাদীস শরীফে দোয়ার অসংখ্য ফাযাইল-ফযীলত বর্ণিত আছে। তাই, নামাযের পূর্বে, পরে এবং দাফনের পর ক্বিয়ামত পর্যন্ত যেকোন সময় দোয়া করলেই আল্লাহ্ পাক নির্ঘাত কবূল করে নেয়ার ওয়াদা দিয়েছেন।         ১৪. নামাযের পর উভয় হাত তুলে ইজ্তিমায়ী বা সম্মিলিতভাবে দোয়া মুনাজাত করা জায়িয ও সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।          ১৫. মাইয়্যিতের জন্য ঈছালে ছওয়াব করা হলে তাতে মাইয়্যিত উপকৃত হয়। আর ঈছালে ছওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম, কলমা শরীফ, দোয়া-কালাম, মাহ্ফিল ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা জায়িয ও বরকতের কারণ।         ১৬. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানাযা নামাযের পর দাফনের পূর্বে মাইয়্যিতের জন্য দোয়া-করেছেন বলে হাদীস শরীফে বর্ণনা পাওয়া যায়, তাই তা সুন্নত। বিদয়াত মোটেও নয়। এই সুন্নত অস্বীকারকারীরাই বিদ্য়াতী।        ১৭. শরীয়তে আম দলীল দিয়ে খাছ বিষয় প্রমাণিত হয় এবং হয়েছে। যেমন, তারাবীহ, ুঈদের নামাযের পর মুনাজাত করার বিষয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল উল্লেখ নেই। তারপরে ইমাম-মুজতাহিদগণ আম দলীলের উপর ভিত্তি করে খাছ বিষয় তথা তারাবীহ ও দুঈদের নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাতকে জায়িয বলেছেন।        ১৮. জানাযা মূলতঃ নামায, দোয়া নয়। এর মূল উদ্দেশ্য দোয়া ধরে নিলেও এরপর দোয়া করা প্রমাণিত হয়। কারণ, শরীয়তের এমন কোথাও কি জানাযার পর দোয়াকে নিষেধ করা হয়েছে? অবশ্যই না। যদি নিষেধ না-ই থাকে, তবে দোয়া করতে বাধা কোথায়? অর্থাৎ জানাযার ভিতরে দোয়া করা হলেও এরপর দোয়া করাও জায়িয ও সুন্নত।    ১৯. নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ্র কিতাবে জানাযার পর দোয়া করাকে জায়িয বলা হয়েছে। অর্থাৎ সালামের পর কাঁতার ভঙ্গ করা জায়িয। তবে যদি কাঁতারে দাঁড়িয়ে দোয়া করে, তবে নামাযের মুশাবাহাতের কারণে তা মাকরূহ ফতওয়া দেয়া হয়েছে। যা আমাদেরও মত।    ২০. ফতওয়ার ক্ষেত্রে যারা ইল্মে শরীয়ত ও মারিফাতে পারদর্শী তথা আলিম ছূফী ও মুজতাহিদ তাদের কথাই গ্রহণযোগ্য। কারণ, যাঁরাই আলিম, মুজতাহিদ তাঁরাই ছূফী। আর যাঁরাই ছূফী তাঁরাই আলিম ও মুজতাহিদ। ছূফী ও আলিম আলাদা কেউ নন। যা কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ও তাছাউফের কিতাবের স্পষ্ট বর্ণনা সাপেক্ষে প্রমাণিত। মহান আল্লাহ্ পাক রব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে জানাযা নামাযের পূর্বে, পরে কাঁতার ভঙ্গ করে এবং দাফনের পরে দোয়া-মুনাজাত করা যে জায়িয ও সুন্নত এ বিষয়ে আক্বীদা শুদ্ধ করে তা আমলে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি, রেযামন্দী, মুহব্বত, মারিফত ও নাজাত হাছিল করার তাওফিক দিন। (আমীন) য (সমাপ্ত)