হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১-১৭)
হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১-১৭)



মুকাদ্দিমাহ

(১-১৭)
যিনি খালিক, যিনি মালিক, যিনি রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُوْلِ اللهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
অর্থ : “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝেই রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২১)
প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য তথা গোটা উম্মাহর জন্য ফরয-ওয়াজিব হলো যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনী মুবারক সম্পর্কে জানা। অর্থাৎ যে জীবনী গ্রন্থ মুবারক ছহীহ আক্বীদাভিত্তিক রচিত তা পাঠ করা। বর্তমানে দেশে-বিদেশে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক সংক্রান্ত বিশুদ্ধ ও ছহীহ আক্বীদাভিত্তিক কিতাবাদি পাওয়া খুবই দুরূহ। বিশেষ করে বাংলা ভাষায় মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশুদ্ধ জীবনী মুবারক নেই বললেই চলে। বাজারে যদিও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জীবনী মুবারক সংক্রান্ত কতক কিতাবাদি পাওয়া যায়, কিন্তু দেখা যায় তার মধ্যে কোনটি বদ আক্বীদাযুক্ত, আবার কোনটিতে আদব-তমীজ নেই, আবার কোনটিতে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে এলোমেলো বক্তব্য ও বিভিন্ন রকম চু-চেরায় ভরপুর। নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!
তাই যামানার লক্ষ্যস্থল ওলীআল্লাহ, যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, যামানার মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ, কুতুবুল আলম, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খালিছ সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক প্রকাশ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা কবুল করুন। আমীন!



আউয়ালুল খল্ক্ব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক


ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই কুল কায়িনাতের


মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্টি, সৃষ্টির সূচনা ও সৃষ্টির মূল

পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক মুবারক করেন-

كُنْتُ كَنْزَا مُـخْفِيًّا فَاَحْبَبْتُ اَنْ اُعْرَفَ فَخَلَقْتُ الْـخَلْقَ لْاُعْرَفَ.

অর্থ : “আমি গুপ্ত ছিলাম। যখন আমার মুহব্বত হলো যে, আমি প্রকাশিত হই, তখনই আমি সৃষ্টি করলাম সৃষ্টির মূল (আমার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনাকে।” (সিররুল আসরার, আল মাকাসিদুল হাসানা ৮৩৮, কাশফূল খিফা/২০১৩, আসনাল মুত্বালিব/১১১০, তমীযুত তীব/১০৪৫, আসরারুল মারফুআ/৩৩৫, তানযিয়াতুশ শরীয়াহ ১/১৪৮, আদ দুরারুল মুন্তাছিরা/৩৩০, আত্ তায্কিরা ফি আহাদীসিল মুশতাহিরা/১৩৬)
মহান আল্লাহ পাক তিনি একক। উনার কোন শরীক নেই। তিনি খালিক বা ¯্রষ্টা হিসেবে একক। মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম উনার যিনি হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি করেছেন, যখন সৃষ্টির কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। তখন আরশ-কুরসী, লওহ-ক্বলম, বেহেশত-দোযখ, আসমান-যমীন, জিন-ইনসান এক কথায় কোন কিছুই সৃষ্টি হয়নি। মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত হলো মাখলুক্বাত সৃষ্টি করার। তখন তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন। অতঃপর উনার সেই পবিত্রতম নূর মুবারক থেকেই সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالىٰ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسْوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوَّلُ شَىءٍ خَلَقَ اللهُ الْقَلَمَ مِنْ نُوْرِ وَّاَحِدٍ.

অর্থ : “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রথমে ক্বলম সৃষ্টি করেছেন একখ- নূর মুবারক হতে।” (ইবনে আবূ হাতীম ১/৪৯, মুসনাদে আহমদ শরীফ ৫/৩১৭১, আত্ তিয়ালিসি/৫৭৭, দায়লামী শরীফ ২)
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে نُوْرِ وَّاَحِدٍ ‘একখানা নূর’ মুবারকই হচ্ছেন স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, আরশ-কুরসী, লওহ-ক্বলম, ফেরেশতা, জান্নাত-জাহান্নাম, এক কথায় সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টির পূর্বেই সৃষ্টি করেছেন। আর তাই তিনিই হচ্ছেন সকল সৃষ্টির মূল বা উৎস।
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضَرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالىٰ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنْتُ اَوَّلُ النَّبِيْنَ فِى الْـخَلْقِ وَاٰخِرُهِمْ فِىْ الْبَعْثِ.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম নবী হিসেবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি (যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছি) সব নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শেষে।” (তাফসীরে বাগবী ৫/২০২, দূররে মানছূর ৫/১৮৪, শেফা ১/৪৬৬, মানাহিলুচ্ছফা ৫/৩৬, কানযুল উম্মাল/৩১৯১৬, দায়লামী/৪৮৫০)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِىْ وَخَلَقَ كُلَّ شَىءٍ مِنْ نُوْرِىْ.

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম আমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন এবং উনার থেকেই সমস্ত কায়িনাত সৃষ্টি করেন।” (মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, তাফসীরে নিশাপুরী, মাকতূবাত শরীফ, নূরে মুহম্মদী, আল ইনসানুল কামিল, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ عُمَرَ بْنِ الْـخَطَّابِ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لـمَاَّ اِقْتَرَفَ حَضْرَتْ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ الْـخَطِئَةَ قَال يَا رب اغفرلى بـحق مـحمد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اللهُ تَعَالٰى يَا حَضْرَتْ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ كيف عرفت مُـحَمَّدا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لانك لـما خلقتنى بيدك ونفخت فى من روحك فرفعت رأسى فرأيت على قوام العرش مكتوبا لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فعلمت انك لـم تضف الى اسـمك الا احب الـخلق اليك فَقَالَ اللهُ تَعَالٰى صدقت يَا حَضْرَتْ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ لولا مُـحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ما خلقتك.

অর্থ : “সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি কামাই করলেন বা দুয়ার অনুমতি মুবারক লাভ করলেন তখন (মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন প্রথম মানব, প্রথম নবী ও প্রথম রসূল হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে যমীনে প্রেরণ করেন, তখন তিনি দুইশ থেকে তিনশ বছর যাবৎ কান্নাকাটি করার পরে) বলেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আপনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উছীলায় আমার দুয়া কবুল করুন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি কিভাবে আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চিনেছেন? উত্তরে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আপনি যখন আমাকে কুদরতী হাত মুবারক-এ তৈরি করে আমার মধ্যে রূহ মুবারক ফুঁকে দিলেন, তখন আমি মাথা মুবারক উত্তোলন করে দেখলাম আপনার আরশে মুয়াল্লা উনার খুঁটির মধ্যে লিখা রয়েছে, لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ, তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, আপনার নাম মুবারক উনার সাথে যাঁর নাম মুবারক লিখা রয়েছে, তিনিই আপনার সবচেয়ে বেশি খাছ ও প্রিয় বান্দা হবেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে লক্ষ্য করে বলেন, আপনি সত্যই বলেছেন। যদি আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য না থাকতো, তবে আমি আপনাকেও সৃষ্টি করতাম না।” (মুস্তাদরাকে হাকিম, খাছায়িছুন্নবী, বায়হাক্বী, দালায়িলুন্ নবুওয়াত, মাওয়াহিবুল্লাদুন্নিয়া, শিফাউসসিকাম, ত্ববরানী, মাযমাউয যাওয়ায়িদ, দুররে মানছুর, রিয়াদুুল আনকিয়া)
অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারকই প্রথম খলীফা, প্রথম নবী ও প্রথম রসূল হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত আরশে আযীম উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উনার সাথে লিখা দেখেছিলেন।
আর সেই মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত নাম মুবারক উনার উছীলা দিয়েই হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট দুয়া মুবারক করেছিলেন। অর্থাৎ হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টিরও কোটি কোটি বছর পূর্বে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اوحى الله تَعَالٰى اِلى حَضْرَتْ عِيْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ يَا حَضْرَتْ عِيْسٰى عَلَيْهِ السَّلَامُ امن بـمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وامر بـمن ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلولا مُـحَمَّد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ماخلقت حَضْرَتْ اٰدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ ولولا مُـحَمَّد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ماخلقت الـجنة والنار. ولقد خلقت العرش على الـماء فاضطرب فكتبت عليه لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فسكن.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি ওহী করলেন, হে হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনি আমার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে যারা উনাকে পাবে তাদেরকেও উনার প্রতি ঈমান আনার জন্য নির্দেশ মুবারক দিন। কেননা আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যদি আমি সৃষ্টি না করতাম, তবে আমি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকেও সৃষ্টি করতাম না, এমনকি জান্নাত-জাহান্নামও সৃষ্টি করতাম না। আমি যখন সম্মানিত আরশে মুয়াল্লা উনাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করে পানির উপরে স্থাপন করি তখন সম্মানিত আরশে মুয়াল্লা থরথর করে কাঁপছিলেন, তখন আমি উনার উপরে লিখে দিলাম-

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُـحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
তখনই আরশে মুয়াল্লা উনার কাঁপুনি বন্ধ হলো।” (মুস্তাদরাক)
অন্যত্র ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اتانى جبريل عَلَيْهِ السَّلَامُ فقال يَا مُـحَمَّد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لولاك ما خلقت الـجنة ولولاك ما خلقت النار.

অর্থ : “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার নিকট হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে বললেন, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে বলে পাঠিয়েছেন যে, যদি আপনি না হতেন, তবে জান্নাত ও জাহান্নাম কিছুই তৈরি করা হতো না।” (দায়লামী শরীফ, কানযুল উম্মাল /৩২০২২)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও বর্ণিত হয়েছে-

عن حضرت ميسرة الفجر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت نبيا وادم بين الروح والـجسد.

অর্থ : “হযরত মাইসারাতুল ফাজর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি তখনও নবীই ছিলাম, যখন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি রূহ ও জিসিম মুবারক-এ ছিলেন।” (তারীখে বুখারী, আহমদ, আলহাবী, ইত্তিহাফুচ্ছাদাত, তাযকিরাতুল মাউদুুয়াত, কানযুল উম্মাল/৩১৯১৪, দায়লামী/৪৮৫৫, ত্ববরানী, আবূ নঈম, মিশকাত)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

كنت نبيا وادم بين الـماء والطين.

অর্থ : “আমি তখনও নবীই ছিলাম, যখন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পানি ও মাটিতে ছিলেন।” (মিরকাত শরীফ ১১/৫৮, ইবনে সা’দ)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক করেন-

كنت نبيا ولا ماء ولاطين.

অর্থ : “আমি তখনও নবী ছিলাম, যখন পানিও ছিল না, মাটিও ছিল না।” (মিরকাত শরীফ ১১/৫৮)

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم متى وجبت لك النبوة قال وادم بين الروح والـجسد.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, (একদা) হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কখন থেকে নবী? উত্তরে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যখন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি রূহ ও জিসিম মুবারক-এ ছিলেন, তখনও আমিই নবী ছিলাম”। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ/৫১১)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال قلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم بابـى انت و امى اخبرنـى عن اول شىء خلق الله تعالى قبل الاشياء قال يا جابر رضى الله تعالى عنه ان الله تعالى قد خلق قبل الاشياء نور نبيك من نوره فجعل ذالك النور يدور بالقدرة حيث شاء الله تعالى ولـم يكن فى ذالك الوقت لوح ولا قلم ولا جنة ولا نار ولا ملك ولاسـماء ولا ارض ولاشـمس ولا قمر ولاجنى ولا انسى فلما اراد الله تعالى ان يـخلق الـخلق قسم ذالك النور اربعة فخلق من الـجزء الاول القلم ومن الثانـى اللوح ومن الثالث العرش ثـم قسم الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول حـملت العرش ومن الثانى الكرسى ومن الثالث باقى الـملئكة ثـم قسم الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول السماوات ومن الثانـى الارضين ومن الثالث الـجنة والنار ثـم قسم الرابع اربعة اجزاء فخلق من الاول نور ابصار الـمؤمنين ومن الثانـى نور قلوبـهم وهى الـمعرفة بالله تعالى ومن الثالث نور انسهم وهو التوحيد لااله الا الله مـحمد رسول الله صلى الله عليه وسلم ....

অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হয়ে যাক, আপনি আমাকে জানিয়ে দিন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রথম কোন জিনিস সৃষ্টি মুবারক করেছেন? মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সব কিছুর পূর্বে আপনার নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারকই সৃষ্টি করেছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম সৃষ্টি হচ্ছেন ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর সেই নূর মুবারক মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছানুযায়ী কুদরতীভাবে ঘুরছিলেন। আর সে সময় লওহ-ক্বলম, বেহেশত-দোযখ, ফেরেশতা, আসমান, যমীন, চন্দ্র, সূর্য, মানুষ ও জিন কিছুই ছিল না। অতঃপর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি মাখলূক্ব সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করলেন; তখন সেই ‘নূর মুবারক’ (অর্থাৎ নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে একটি অংশ মুবারক নিয়ে উনাকে) চার ভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ‘ক্বলম’, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘লওহে মাহফূয’, তৃতীয় ভাগ দ্বারা ‘আরশে মুয়াল্লা’ সৃষ্টি করলেন। চতুর্থ ভাগ উনাকে আবার চার ভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ‘আরশ বহনকারী ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম’, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘কুরসী’, আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা অন্যান্য ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে সৃষ্টি করেন। অতঃপর চতুর্থ ভাগ উনাকে আবার চার ভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ‘আসমান’, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘যমীন’, আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা ‘বেহেশত ও দোযখ’ সৃষ্টি করলেন। নূর মুবারক উনার অবশিষ্ট চতুর্থ ভাগ উনাকে আবার চার ভাগ করলেন। প্রথম ভাগ দ্বারা ‘মু’মিন বান্দা উনাদের চোখের জ্যোতি’, দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা ‘উনাদের ক্বলবের জ্যোতি’, আর এটাই মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনার মা’রিফাত। আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা ‘মু’মিন বান্দা উনাদের উনসের নূর অর্থাৎ তাওহীদ বা একত্বতা উনার নূর তথা পবিত্র কালিমা শরীফ উনার নূর সৃষ্টি করলেন। (এমনিভাবে উক্ত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকেই পর্যায়ক্রমে তামাম মাখলুক্বাত সৃষ্টি করেন।” (মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, দালায়িলূন নুবুওওয়াত, তারীখুল খমীস, মাওয়াহিব, শরহে যুরকানী, মাদারিজুন নুবুওওয়াহ, নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টির সূচনা করলেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সৃষ্টির মাধ্যমে। এ প্রসঙ্গে আল্লামা হযরত আবুল হাসান বিন আবদিল্লাহ আল বিকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘আল আনওয়ার ফী মাওলিদিন্ নাবিইয়ীল মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ নামক কিতাবের ৫ম পৃষ্ঠায় লিখেনÑ
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক তিনিই ছিলেন, তখন অন্য কোন অস্তিত্বই উনার সাথে ছিল না। অতঃপর তিনি পানি, আরশ-কুরসী, লওহ-ক্বলম, জান্নাত-জাহান্নাম ও পর্দাসমূহ ইত্যাদি সৃষ্টি করার পূর্বে উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক অর্থাৎ উনাকে সৃষ্টি করেন।”
এ প্রসঙ্গে ইমামুল মুহাদ্দিছীন আল্লামা হযরত শায়েখ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মাদারিজুন নুবুওওয়াত’ ২য় খ- ২য় পৃষ্ঠায় এবং বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে রুহুল মায়ানী”তেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলেন ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অর্থাৎ কুল কায়িনাতের মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন।
উপরোক্ত দলীলভিত্তিক বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হলো যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিই গোটা কায়িনাতের মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্টি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক নূর থেকে আরশ-কুরসী, লওহ-ক্বলম, জান্নাত-জাহান্নাম, জিন-ইনসান, মাটি-পানি, আসমান-যমীন তথা গোটা কায়িনাতকে সৃষ্টি করা হয়। আর তিনি হচ্ছেন সৃষ্টির মূল। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বপ্রথম ‘নূর’ হিসেবে সৃষ্টি করে নিজেকে প্রকাশ করেন। সেটাই পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফ উনার মধ্যে এসেছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

لولاك لـما اظهرت الربوبية
অর্থ : “হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি আমি আপনাকে সৃষ্টি না করতাম তবে আমি আমার রুবুবিয়তই প্রকাশ করতাম না।” (কানযুল উম্মাল)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারকই সর্বপ্রথম মহান আল্লাহ পাক তিনি তৈরি করে স্বীয় কুদরত মুবারক উনার মধ্যে রাখেন। অতঃপর স্বীয় আরশে আযীম সৃষ্টি করে আরশে আযীম উনার মধ্যে ময়ূর বানিয়ে রেখেছিলেন কোটি কোটি বছর।
সেই নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হিজাবে আযমত মুবারক উনার চতুর্থ হিজাব মুবারক উনার মধ্যে তারকারূপে দেখেছিলেন; ৭০,০০০ বছর পর উদিত হতে এবং ৭০,০০০ বছর অস্তমিত থাকতে। এভাবে তিনি ৭২,০০০ বার দেখেছেন।
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

عن حضرت ابـى هريرة رضى الله تعالى عنه قال سال رسول الله صلى الله عليه وسلم حضرت جبريل عليه السلام كم عمرك من السنين. قال حضرت جبريل عليه السلام يا رسول الله صلى الله عليه وسلم لست اعلم غير ان فى الحجاب الرابع نـجما يطلع فى كل سبعين الف سنة مرة فرايته اثنين و سبعين الف مرة. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم وعزة رب ياجبريل عليه السلام انا ذالك الكوكب.

অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন- হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনার বয়স মুবারক কত? উত্তরে তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমার বয়স মুবারক কত তা আমি বলতে পারিনা, তবে (আমি দেখেছি) মহান আল্লাহ পাক উনার হিজাবে আযমত মুবারক উনার চতুর্থ হিজাব মুবারক-এ একটি তারকা ৭০,০০০ বছর পর পর দেখা যেতো। উক্ত তারকা মুবারক আমাকে সৃষ্টির পর থেকে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টির পূর্ব পর্যন্ত আমি ৭২,০০০ বার উদিত হতে দেখেছি। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম; আমিই সেই মুবারক তারকা।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরে হাক্কী)
অর্থাৎ মানবীয় আকৃতিতে সৃষ্টি হিসেবে প্রথম মানব, প্রথম নবী ও প্রথম রসূল হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার যখন অজুদ মুবারক ছিল না, তখনও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নবীই ছিলেন।
এক কথায় সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখনও নবী ছিলেন, যখন পানি-মাটি, আসমান-যমীন, জান্নাত-জাহান্নাম, গ্রহ-নক্ষত্র, আরশ-কুরসী, লওহ-ক্বলম, জামাদাত, শাজারাত, হাজারাত ইত্যাদি কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। সে জন্যই তিনি সমস্ত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, সমস্ত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল।
এমনকি জিন-ইনসান, তরুলতা, গাছপালা, পশু-পাখি, জামাদাত, শাজারাত, হাজারাত তথা সমস্ত কায়িনাতেরও নবী ও রসূল। তাই অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-

ارسلت الى الـخلق كافة.

অর্থ : “আমি সমস্ত কায়িনাতের জন্যই রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” (মুসলিম, তিরমিযী, আহমদ, বায়হাক্বী, দায়লামী, কানযুল উম্মাল, আবূ ইয়া’লা, মিশকাত, শরহুস সুন্নাহ)

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার যমীনে আগমনের পূর্ব পর্যন্ত অবস্থান মুবারক

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করে কোটি কোটি বছর স্বীয় কুদরত মুবারক-এর মধ্যে রেখে দেন। শুধু তাই নয় বরং মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে আবাদুল-আবাদ পর্যন্ত দায়িমীভাবে অবস্থান মুবারক করেছেন, করছেন এবং অনন্তকালের জন্য করতে থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নূর মুবারক হতে পর্যায়ক্রমে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরশ-কুরসী, লওহ-ক্বলম, আসমান-যমীন ইত্যাদি সৃষ্টি করার পর সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে স্বীয় আরশে আ’যীমে কোটি কোটি বছর ধরে ময়ূররূপে রাখেন। সেই নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি উনাকে সৃষ্টির পর থেকে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে উনার কপাল মুবারক-এ ‘নূরে হাবীব’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্থাপন করার পূর্ব পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার হিজাবে আযমত মুবারক উনার চতুর্থ হিজাব মুবারক-এ তারকারূপে দেখেছিলেন। ৭০,০০০ বছর পর উদিত হতেন এবং ৭০,০০০ বছর অস্তমিত থাকতেন- এভাবে ৭২,০০০ বার দেখেছেন। এরপর যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি মানবীয় আকৃতিতে সৃষ্টি হিসেবে প্রথম মানব, নবী ও রসূল হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করলেন তখন উনার ভিতরে রূহ মুবারক ফুঁকে দেন। রূহ মুবারক ভিতরে প্রবেশ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হয়ে আসেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, কেন বের হয়ে আসলেন? রূহ মুবারক জাওয়াব দিলেন, ভিতরে অন্ধকার।
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘নূর মুবারক’ হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভিতরে তথা কপাল মুবারক-এ রেখে দেন, যার কারণে উনার ভিতরে আলোকিত হয়ে যায়; তখন রূহ মুবারক প্রবেশ করে ভিতরে অবস্থান নেন।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, হাফিযুল হাদীছ আল্লামা হযরত ইমাম কুস্তলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত কিতাব “মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া” ১ম খণ্ডে লিখেছেন-

لـما خلق حضرت ادم عليه السلام الـهمه ان قال يارب لـم كنيتنى ابا مـحمد صلى الله عليه وسلم. قال الله تعالى يادم عليه السلام ارفع راسك فرفع راسه فراى نور مـحمد صلى الله عليه وسلم فى سرادق العرش الـمعلى. فقال يا رب ما هذا النور قال هذا نور نبى من ذريتك اسـمه فى السماء احـمد صلى الله عليه وسلم وفى الارض مـحمد صلى الله عليه وسلم. لولاه ما خلقتك ولا خلقت سـماء ولا ارضا
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার পর যখন উনাকে সম্মানিত ইল্ম্ মুবারক হাদিয়া মুবারক করলেন, তখন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! আমার কুনিয়াত বা উপনাম কেন ‘আবূ মুহম্মদ’ রাখা হলো? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম! আপনার মাথা মুবারক উত্তোলন করুন এবং উপরের দিকে দৃষ্টি করুন। হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি তখন উনার মাথা মুবারক উত্তোলন করে ‘আরশে মুয়াল্লা’ উনার পর্দা মুবারক-এ ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পেলেন। অতঃপর হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে বারে ইলাহী! এটি কার ‘নূর মুবারক’? মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম! এটি আমার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আপনার মাধ্যমে যাঁকে আমি যমীনে প্রেরণ করবো, সে হিসেবে তিনি আপনার আওলাদগণের মধ্য হতে একজন নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আকাশে উনার নাম মুবারক ‘আহমদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং যমীনে উনার নাম মুবারক ‘মুহম্মদ’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যদি তিনি না হতেন তবে আমি আপনাকে এবং আসমান ও যমীনকে পয়দা করতাম না।”
মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া’ কিতাবে আরও উল্লেখ আছে যে-

لـما خلق الله حضرت ادم عليه السلام جعل ذالك النور فى ظهره فكان يلمع فى جبينه فيغلب على سائر نوره ثـم رفعه الله على سرير مـملكته وحمله على اكناف ملائكته فامرهم فطفوا به فى السموت ليرى عجائب ملكوته
অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কপাল মুবারক-এ রেখে দিলেন। যার ফলে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার কপাল মুবারক-এ উক্ত ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুল কায়িনাতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম নূর হিসেবে চমকাতে শুরু করলেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শাহী আসনে উঠালেন এবং উক্ত মুবারক আসন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাঁধে রেখে উনাদের প্রতি আদেশ জারি করলেন। যার ফলে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিয়ে আসমানের মধ্যে ঘুরে বেড়ালেন। এতে করে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজের আশ্চর্য-আশ্চর্য কুদরত ও নিদর্শনসমূহ দেখিয়ে দিলেন।” সুবহানাল্লাহ!
বিখ্যাত তাফসীরকারক, তাজুল মুফাসসিরীন, আল্লামা হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে রুহুল বয়ান’ ৪র্থ খ- ৬৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেন-

ثـم اسكن نور مـحمد صلى الله عليه وسلم فى ظهر حضرت ادم عليه السلام فصارت الـملائكة تقف خلفه صفوفا ينظرون الى النور. فقال حضرت ادم عليه السلام يا رب مالـهؤلاء الـملائكة يقفون خلفى قال ينظرون الى نور محمد صلى الله عليه وسلم . قال يا رب اجعله فى مكان فى جبهتى فنقل الله تعالى ذالك النور الى جبهته فصارت الـملائكة تقف امامه ثـم قال حضرت ادم عليه السلام يا رب اجعله فى موضع اراه فجعله فى اصبعه الـمسبحة فرفعها حضرت ادم عليه السلام وقال اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدا رسول الله صلى الله عليه وسلم. ثـم قال حضرت ادم عليه السلام يا رب هل بقى من هذا النور شىء. قال نور اصحابه قال يا رب اجعله فى بقية اصابعى فجعل الله تعالى نور حضرت ابى بكر عليه السلام فى الوسطى ونور حضرت عمر عليه السلام فى البنصر ونور حضرت عثمان عليه السلام فى الـخنصر ونور حضرت على عليه السلام فى الابـهام.

অর্থ : “অতঃপর কিছুক্ষণের জন্য ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিঠ মুবারক-এ রেখে দিলেন। সাথে সাথে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিছনে কাতার বেঁধে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং নয়ন ভরে ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে লাগলেন। এ অবস্থা দেখে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, হে মহান আল্লাহ পাক! হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কী হলো যে, উনারা আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন? জবাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম! হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘নূর মুবারক’ তথা ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখছেন। তখন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আরজ করলেন, হে বারে ইলাহী! মেহেরবানী করে উক্ত ‘নূর মুবারক’ উনাকে আমার সামনে এনে দিন (যাতে তা দেখে আমিও ধন্য হতে পারি)। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পৃষ্ঠ মুবারক থেকে উনার কপাল মুবারক-এ এনে রাখলেন। এবার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মুখে এসে কাতার ধরে দাঁড়িয়ে গেলেন (এবং পবিত্রতম নূর মুবারক দেখতে লাগলেন)। হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ‘নূর মুবারক’-এর আশিক্ব হয়ে আরজ করলেন, হে আমার রব! দয়া করে এ ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এরূপ স্থানে রাখুন যেন আমি নিজেও তা দেখতে পাই। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দুয়া কবুল করে উক্ত ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার মুসাব্বাহা বা তর্জনী নামক আঙ্গুল মুবারক-এ রেখে দিলেন। তিনি সে আঙ্গুল মুবারকটি উপরের দিকে উত্তোলন করে স্বচক্ষে উক্ত ‘নূর মুবারক’ অবলোকন করে বললেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং এটাও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আবার বিনয়ের সাথে আরজ করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক! উনার ‘নূর মুবারক’ হতে কিছু অবশিষ্ট আছেন কি? মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ, উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ‘নূর মুবারক’ অবশিষ্ট রয়েছেন। হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আরজ করলেন, হে বারে ইলাহী! অনুগ্রহ করে অবশিষ্ট ‘নূর মুবারক’ সমূহকে আমার অন্যান্য আঙ্গুলসমূহে রাখুন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ‘নূর মুবারক’ মধ্যমা আঙ্গুল মুবারক-এ, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার ‘নূর মুবারক’ অনামিকা আঙ্গুল মুবারক-এ, হযরত যুন্ নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ‘নূর মুবারক’ কনিষ্ঠা আঙ্গুল মুবারক-এ এবং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার ‘নূর মুবারক’ বৃদ্ধাঙ্গুল মুবারক-এ সংস্থাপন করলেন।” সুবহানাল্লাহ! (নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের তা’যীম-তাকরীম মুবারক

মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাধ্যমে সৃষ্টির সূচনা করেছেন। তিনিই হচ্ছেন সমস্ত সৃষ্টির মূল। তিনি সমস্ত হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল তথা কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল হিসেবে সৃষ্টি হয়েছেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারক থেকে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিও সৃষ্টি হয়েছেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন,

كنت نبيا و ادم بين الـماء والطين.

অর্থ : “আমি তখনও নবী ছিলাম যখন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি পানি ও মাটিতে অবস্থান করছিলেন।” (মিশকাত শরীফ)
মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার ইচ্ছা মুবারক পোষণ করলেন তখন তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে পরামর্শ করলেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ اِنِّـيْ جَاعِلٌ فِي الْاَرْضِ خَلِيفَةً قَالُواْ اَتَـجْعَلُ فِيْهَا مَن يُفْسِدُ فِيْهَا وَيَسْفِكُ الدِّمَاء وَنَـحْنُ نُسَبِّحُ بِـحَمْدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَ قَالَ اِنِّـي اَعْلَمُ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ.

অর্থ : “স্মরণ করুন সে সময়ের কথা, যখন আপনার রব মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বললেন, আমি যমীনে খলীফা বা প্রতিনিধি প্রেরণ করবো। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, আপনি কী যমীনে এমন সম্প্রদায়কে প্রেরণ করতে চান, যারা ফিৎনা-ফাসাদ ও রক্তপাত করবে? আর আমরাই তো আপনার প্রশংসা বা তাসবীহ পাঠ করি এবং আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করি। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আমি যা জানি আপনারা তা জানেন না।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে যমীনে প্রেরণ করবেন কী জন্য? এর জাওয়াবে মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই বললেন, “নিশ্চয়ই আমি যা (প্রকৃত কারণ) জানি; আপনারা তা জানেন না।”
স্মরণীয় যে, হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টির পূর্বে মহান আল্লাহ পাক তিনি অনেক জাতিকে প্রেরণ করেছেন যারা যমীনে এসে হিংসা-বিদ্বেষ, মারামারি, কাটাকাটি, খুন-খারাবি অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানি করেছে। যার কারণে তিনি সে সমস্ত জাতিকে ধ্বংস করে দেন।
বিশ্ববিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে মাযহারীতে’ অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি জিন জাতিকে এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। তারা দীর্ঘকাল ধরে যমীনে বসবাস করে। পরিশেষে তারা হিংসা-বিদ্বেষ, খুনা-খুনি, রক্তপাত ও নাফরমানিতে লিপ্ত হয়। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ধরা বক্ষে প্রেরণ করেন এক বিশাল ফেরেশতা বাহিনী। ওই সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা এসে জিনদের যাকে যেখানে পেলেন তাদেরকে হত্যা করে ফেললেন। কিছু জিন তারা দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে ও পানিতে পালিয়ে গেলো। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা চলে আসুন। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আসার পথে দেখতে পেলেন একটা বাচ্চা জিন মাটিতে পড়ে কান্নাকাটি করছে।
হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা বললেন, হে বারে ইলাহী! এই জিনের বাচ্চাটাকে আমাদের সাথে নিয়ে আসতে চাই, আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আমাদের সঙ্গে রাখবো। মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, ঠিক আছে আপনারা তাকেসহ চলে আসুন। পরবর্তীতে দেখা গেলো, সে বাচ্চা জিনটা হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুয়াল্লিম তথা মুয়াল্লিমুল মালায়িকা, অর্থাৎ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের উস্তাদ হয়ে গেলো।
মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন মানব আকৃতিতে সৃষ্টি হিসেবে প্রথম খলীফা, প্রথম নবী-রসূল হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মূল অজুদ মুবারক তথা পুতঃপবিত্রতম নূর মুবারক হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে রাখলেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের উদ্দেশ্যে বললেন, যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-

وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُواْ لاٰدَمَ فَسَجَدُواْ اِلَّا اِبْلِيسَ اَبَـى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ.

অর্থ : “আমি (আল্লাহ পাক) হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে বললাম, আপনারা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করুন। তখন সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সিজদা করলেন, ইবলীস ব্যতীত। সে অমান্য করলো, অহঙ্কার করলো, অস্বীকার করলো। মূলতঃ সে পূর্ব থেকেই কাফির ছিল।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বলেছিলেন যে, আপনারা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করুন, অর্থাৎ হাক্বীক্বতান হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনারও যিনি নবী, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আপনারা সিজদা করুন। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই উনাকে সিজদা করলেন, কিন্তু ইবলীস সে অহঙ্কার করলো। সে সিজদা করলো না, সে অস্বীকার করলো। নাঊযুবিল্লাহ!
স্মরণীয় যে, হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ভিতরে যিনি অবস্থান করেছিলেন তিনি হলেন সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ, প্রখ্যাত আলিমে দ্বীন, আল্লামা আবূ শীরওয়া আদ দাইলামী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসিদ্ধ কিতাব ‘ফিরদাউস লিদদাইলামী’ ২য় খ- ১৯১ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন-

عن حضرت سلمان الفارسى رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم خلقت انا و حضرت على عليه السلام من نور واحد قبل ان يـخلق الله حضرت ادم عليه السلام باربعة الف عام فلما خلق الله حضرت ادم عليه السلام ركب ذالك النور فى صلبه فلم يزل فى شىء واحد حتى افترقا فى صلب حضرت عبد الـمطلب عليه السلام  ففى النبوة وفى حضرت على عليه السلام الـخلافة وكذالك فى تنزية الشريعة.

অর্থ : “হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি ও হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম আমরা একই নূর মুবারক দ্বারা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি হওয়ার চার হাজার বছর পূর্বে তৈরি হয়েছি। যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেন এবং উক্ত নূর মুবারক উনার মধ্যে রেখে দেন। সেখানে উক্ত নূর মুবারক একত্রেই ছিলেন। হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে গিয়ে উক্ত নূর মুবারক আলাদা বা পৃথক হয়ে যান। অর্থাৎ আমাকে নুবুওওয়াতসহ ও হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে খিলাফতসহ (বিলায়েতসহ) পৃথক করা হয়।” অনুরূপ বর্ণনা ‘তানযিয়াতুশ শরীয়াহ’ নামক কিতাবেও উল্লেখ আছে।
উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ রয়েছে, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت سلمان الفارسى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كنت انا و حضرت على عليه السلام نورا بين يدى الله معلقا يسبح الله ذالك النور ويقدسه قبل ان يـخلق حضرت ادم عليه السلام باربعة الف عام فلما خلق الله حضرت ادم عليه السلام ركب ذالك النور فى صلبه.

অর্থ : “হযরত সালমান ফারসী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
আমি এবং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নূর হিসেবেই অবস্থান মুবারক করছিলাম। উক্ত নূর মুবারক হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টির চার হাজার বছর পূর্ব থেকেই মহান আল্লাহ পাক উনার তাসবীহ ও পবিত্রতা বর্ণনায় মশগুল ছিলেন। যখন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হলো তখন উক্ত নূর মুবারকই উনার ভিতরে রেখে দেয়া হলো।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দু’খানা থেকে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠলো যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনারও বহু পূর্বে নূর মুবারক হিসেবেই সৃষ্টি হয়েছেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূর মুবারকই হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে রেখে দেয়া হয়।
যখন উক্ত নূর মুবারক হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মধ্যে রেখে দেয়া হলো তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে তা’যীম-তাকরীম ও সিজদার নির্দেশ মুবারক দেন। তখন সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা কাতারবন্দি হয়ে যান এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সিজদা করার লক্ষ্যেই হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে তা’যীম-তাকরীম ও সিজদা করেন। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত তাফসীরকারক তাজুল মুফাসসিরীন, আল্লামা হযরত ইসমাঈল হাক্কী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ “তাফসীরে রুহুল বায়ান” ৪র্থ খ- ৬৪৯ পৃষ্ঠায় লিখেন, “অতঃপর নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিঠ মুবারক-এ রেখে দিলেন। সাথে সাথে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিছনে কাতার বেঁধে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং নয়ন ভরে ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে লাগলেন। এ অবস্থা দেখে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ পাক! হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের কী হলো যে, উনারা আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছেন? জবাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম! হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ‘নূর মুবারক’ তথা ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখছেন। তখন হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আরজু করলেন, হে বারে ইলাহী! মেহেরবানী করে উক্ত ‘নূর মুবারক’ উনাকে আমার সামনে এনে দিন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার পিঠ মুবারক থেকে উনার কপাল মুবারক-এ এনে রাখলেন।
এবার হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মুখে এসে কাতার ধরে দাঁড়িয়ে গেলেন। হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত ‘নূর মুবারক’ উনার আশিক্ব হয়ে আরজ করলেন, হে আমার রব! দয়া করে ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এরূপ স্থানে রাখুন যেন আমি নিজেও দেখতে পাই। মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার দুয়া মুবারক কবুল করে উক্ত ‘নূরে হাবীবী’ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উনার শাহাদাত আঙ্গুল মুবারক-এ রেখে দিলেন। তিনি সে অঙ্গুলি মুবারকটি উপরের দিকে উত্তোলন করে স্বচক্ষে উক্ত ‘নূর মুবারক’ অবলোকন করতঃ ঈমানের স্বীকৃতি দিয়ে উক্ত ‘নূর মুবারক’ উনাকে বুছা মুবারক দেয়ার উদ্দেশ্যে উনার দু’হাত মুবারক উনাদের বৃদ্ধাঙ্গুল মুবারকদ্বয় একত্রিত করে বুছা মুবারক দিয়ে চোখ মুবারকে লাগালেন এবং বললেন আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল। হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আবার বিনয়ের সাথে আরজ করলেন, হে মহান আল্লাহ পাক! উক্ত ‘নূর মুবারক’ হতে কিছু অবশিষ্ট আছেন কী? মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হ্যাঁ, উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নূর মুবারক অবশিষ্ট রয়েছেন। হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি আরজ করলেন, হে বারে ইলাহী! অনুগ্রহ করে অবশিষ্ট নূর মুবারক আমার বাকী আঙ্গুল মুবারকগুলোতে রাখুন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নূর মুবারক মধ্যমা আঙ্গুল মুবারক-এ, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার নূর মুবারক অনামিকা আঙ্গুল মুবারক-এ, কামিলুল হায়ায়ি ওয়াল ঈক্বান, হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নূর মুবারক কনিষ্ঠা আঙ্গুল মুবারক-এ এবং আসাদুল্লাহিল গ¦লিব, হযরত কারররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নূর মুবারক বৃদ্ধাঙ্গুল মুবারক-এ সংস্থাপন করলেন।” অনুরূপ বর্ণনা “নূরে মুহম্মদী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” কিতাবেও উল্লেখ আছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা গেলো যে, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তা’যীমার্থে দাঁড়িয়ে ছিলেন বা ক্বিয়াম করেছিলেন। কাজেই ক্বিয়ামে তা’যীমি সম্মানিত সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক নির্দেশে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উদ্দেশ্যে সিজদাও করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!

নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের ঈমান আনা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক ও খিদমত মুবারক করার ওয়াদা মুবারক

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-

وَاِذْ اَخَذَ اللهُ مِيْثَاقَ النَّبِيِّيْنَ لَمَا اٰتَيْتُكُمْ مِّنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُـمَّ جَاءَكُمْ رَسُوْلٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِه وَلَتَنصُرُنَّه قَالَ اَاَقْرَرْتُـمْ وَاَخَذْتُـمْ عَلى ذَلِكُمْ اِصْرِيْ قَالُوْا اَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوْا وَاَنَاْ مَعَكُمْ مِّنَ الشَّاهِدِيْنَ .

অর্থ : “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে এ মর্মে ওয়াদা মুবারক নিলেন যে, আমি আপনাদের কিতাব ও হিকমত হাদিয়া মুবারক করবো। অতঃপর আপনাদেরকে প্রদত্ত কিতাবের সত্য প্রতিপাদনকারী হিসেবে একজন রসূল অর্থাৎ যিনি আখিরী রসূল, যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আগমন করবেন। আপনারা অবশ্যই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে পেলে খিদমত মুবারক করবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘আপনারা কি আমার এ ওয়াদা স্বীকার ও গ্রহণ করলেন? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম।’ তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম ।” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮১)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট তাফসীরকারক ইবনে আবী হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত সুদ্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার পরে এবং পূর্বে যত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রেরণ করেছেন উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা বা অঙ্গীকার মুবারক নিয়েছেন, উনারা যেন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনেন এবং উনাকে পেলে অবশ্যই খিদমত মুবারক করেন।
অর্থাৎ তা’যীম-তাকরীম মুবারক ও খিদমত মুবারক করেন যদি তিনি উনাদের যুগে আসেন। এজন্যই সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা উনাদের উম্মত বা সম্প্রদায়ের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন, যিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনার এবং উনাকে তা’যীম-তাকরীম মুবারক ও উনার খিদমত মুবারক করার।” (খাছায়িছুল কুবরা)
মহান আল্লাহ পাক তিনি একলক্ষ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার হযরত নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্য থেকে উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত অন্যান্য সকলের নিকট হতে উক্ত ওয়াদা মুবারক নিয়েছেন। কিন্তু কেউই ওয়াদা মুবারক থেকে ফিরে যাননি বরং সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সারাজীবনই উক্ত ওয়াদা মুবারক পালনার্থে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক, প্রশংসা মুবারক ও তা’যীম-তাকরীম মুবারক করেছেন।
এ প্রসঙ্গে “খাছায়িছুল কুবরা” কিতাবে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী শাইখুল ইমাম, মুজাদ্দিদে যামান, আল্লামা হযরত আবুল ফযল জালালুদ্দীন আব্দুর রহমান সুয়ূতী শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি লিখেন, হযরত ইবনে আসাকির রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রশংসা মুবারক বা মর্যাদা-সম্মান মুবারক জারি রেখেছেন সৃষ্টির শুরু থেকে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত এবং হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার থেকে পরবর্তীতেও উনার ছানা-ছিফত মুবারক অব্যাহত রেখেছেন।” অর্থাৎ নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক সৃষ্টির সূচনা থেকে শুরু হয়েছে আবাদুল আবাদ পর্যন্ত চলতেই থাকবে। সুবহানাল্লাহ! আর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনয়ন ও তা’যীমের কারণে সমস্ত উম্মত সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং সর্বদাই বিজয়প্রাপ্ত হয়েছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রেরণ করলেন উনার কারণে শ্রেষ্ঠত্বপ্রাপ্ত সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মতের মধ্যে, সর্বশ্রেষ্ঠ যুগে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে এবং সর্বোত্তম শহর (পবিত্র মক্কা শরীফ)-এ। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি যতদিন চেয়েছেন ততদিন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ঘোষণাকৃত হেরেম শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করেছেন।
এরপর তিনি “হেরেমে নববী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” অর্থাৎ পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ নিয়ে এলেন। এভাবে তিনি এক হেরেম শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ নিয়েছেন এবং অন্য হেরেম শরীফ উনার দিকে হিজরত করেছেন।”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গোটা সৃষ্টির মূল, তিনি সমস্ত কিছুর মূল, উনার প্রতি মাখলুক্বাত যে যত বেশি বিশুদ্ধ ঈমান রেখেছেন, উনাকে তা’যীম-তাকরীম মুবারক করেছেন, উনার সঙ্গে তায়াল্লুক ও নিছবত মুবারক রাখতে পেরেছেন তিনি তত বেশি সম্মানিত-ফযীলতপ্রাপ্ত। যে সমস্ত উম্মত উনাকে প্রতিক্ষেত্রে উছীলা বানিয়েছেন, উনার প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা রেখেছেন উনারা সর্বক্ষেত্রেই সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছেন, জান্নাত লাভ করেছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজয়লাভ করেছেন, কামিয়াবী অর্জন করেছেন।
খাছায়িছুল কুবরা’ ১ম খ- ১০, ১১ পৃষ্ঠায় আরও উল্লেখ রয়েছে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনার ও উনাকে খিদমত মুবারক করার অঙ্গীকার মুবারক নেন, যেভাবে খলীফা তথা ওলীআল্লাহ উনারা মুরীদদের থেকে বাইয়াত নিয়ে থাকেন। নিশ্চয়ই ওলীআল্লাহ উনাদের বাইয়াত নেয়ার পদ্ধতি মহান আল্লাহ পাক উনার ওই অঙ্গীকার বা বাইয়াত থেকেই নেয়া হয়েছে। (হে মানুষেরা) তোমরা উনার যিকির করো! মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট নূরে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা-মর্তবা মুবারক সর্বোচ্চে। তিনি হচ্ছেন সকল নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী, সমস্ত রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ক্বিয়ামতের দিন উনার পতাকাতলে সমবেত হবেন। পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রাতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইমামতিতে সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ইক্তিদা মুবারক করে নামায আদায় করেছেন।”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম, হযরত নূহ নাজিউল্লাহ আলাইহিস সালাম, হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম ও হযরত রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাদের সময়ে আসতেন তাহলে উনাদের সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব হয়ে যেতো স্ব-স্ব শরীয়ত ও কিতাব রেখে দিয়ে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইত্বায়াত করা এবং তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা ও খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া।
তেমনিভাবে উনাদের উম্মতের উপরও ফরয হতো। এ কারণেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা বা অঙ্গীকার মুবারক নিয়েছেন।
অতএব, সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নুবুওওয়াত-রিসালতকে মেনে নেয়া ফরয।
কাজেই, একলক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুইলক্ষ চব্বিশ হাজার হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনেছেন, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করেছেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি উনাদের উম্মতও ঈমান এনেছেন এবং উনাকে তা’যীম মুবারক করেছেন এবং উনার ছানা-ছিফত মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
اِنِّـي رَسُوْلُ اللهِ اِلَيْكُمْ جَـمِيْعًا
অর্থ : “নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল রূপে মনোনীত।” (পবিত্র সূরা আরাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৫৮)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-
ارسلت الى الـخلق كافة.
অর্থ : “আমি সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।” (মুসলিম শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, বায়হাক্বী শরীফ, দায়লামী শরীফ, কানযুল উম্মাল শরীফ, আবূ ইয়ালা শরীফ, মিশকাত শরীফ, শরহুস সুন্নাহ শরীফ)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম, হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম, জিন-ইনসানসহ সমস্ত কায়িনাতের নবী ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই, মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টির শুরুতেই সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে ওয়াদা মুবারক নিয়েছেন যে, আপনারা আমার যিনি হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনবেন, উনার ছানা-ছিফত মুবারক করবেন ও উনার খিদমত মুবারক করবেন। কারণ তিনি হচ্ছেন মাখলুক্বাতের মূল এবং আমার পরেই উনার মাক্বাম বা অবস্থান এবং উনার সম্মান বা মর্যাদা।
এজন্য মুজাদ্দিদে আ’যম, গাউছুল আ’যম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হুজ্জাতুল ইসলাম, আহলু বাইতি রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক করতে গিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু মহান আল্লাহ পাক তিনি নন। এছাড়া যতো মর্যাদা-মর্তবা মুবারক, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক, মাক্বামত মুবারক রয়েছেন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে তা হাদিয়া মুবারক করেছেন।” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে আরও ইরশাদ মুবারক করেন-

إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرً لِتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلا .

অর্থ : (হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা (হাযির-নাযির), সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী স্বরূপ প্রেরণ করেছি; যেন (হে মানুষ!) তোমরা মহান আল্লাহ তায়ালা উনার উপর এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ঈমান আনো এবং তোমরা উনার খিদমত মুবারক করো ও উনার তা’যীম-তাকরীম মুবারক করো এবং উনার ছানা-ছিফত মুবারক করো সকাল-সন্ধ্যা অর্থাৎ দায়িমীভাবে সদা সর্বদা।” (পবিত্র সূরা ফাত্্হ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮, ৯)
মহান আল্লাহ পাক উনার যিনি হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন সমস্ত কায়িনাতবাসীর জন্য। উনার মুবারক উছীলায় সকল সৃষ্টি রহমত, বরকত পেয়েছে, জীবন পেয়েছে, অস্তিত্ব পেয়েছে, ইজ্জত-সম্মান পেয়েছে। সারা আলমের প্রকাশ ঘটেছে। উনার মুবারক উছীলায় সকলেই ফায়দা হাছিল করেছে। কোন নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাউকে নুবুওওয়াত দেয়া হয়নি বা উনাদের নুবুওওয়াত প্রকাশ করা হয়নি; কোন রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাউকে রিসালত দেয়া হয়নি বা রিসালত প্রকাশ করা হয়নি যতক্ষণ না নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনেছেন। উনার খিদমত মুবারক ও তা’যীম-তাকরীম মুবারক করার প্রতিশ্রুতি না দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি যখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূর মুবারক থেকে সমস্ত ‘রূহ’ সৃষ্টি করলেন, অতঃপর রূহ সম্প্রদায়ের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوْا بَلٰى ۛ
অর্থ : “আমি কি আপনাদের রব নই? উনারা বললেন, হ্যাঁ।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭২)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়, মহান আল্লাহ পাক তিনি রোযে আযলে (সৃষ্টির শুরুতে) সমস্ত মানুষের রূহকে একসাথে সৃষ্টি করে তাদের নিকট হতে রুবূবিয়াত এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনার ও খিদমত মুবারক করার স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন।
সেদিন রূহ সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে আরও বলা হয়, “হে রূহ সম্প্রদায়! আজ থেকে লক্ষ কোটি বছর পরে তোমরা যমীনে যাবে, সেখানে গিয়ে তোমাদের এ ওয়াদার কথা ভুলে যেয়োনা। বরং তোমরা যথাযথভাবে আমার রুবূবিয়াতের কথা ও আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনার ও খিদমত মুবারক করার কথা স্মরণ রাখবে।”
তখন রূহ সম্প্রদায় বলেছিল, “হে মহান আল্লাহ পাক! আজ থেকে লক্ষ-কোটি বছর পর আমরা যমীনে গিয়ে এ ওয়াদার কথা ভুলেও যেতে পারি।” তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “তোমাদের একথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য আমি যুগে যুগে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে প্রেরণ করবো। উনারা আগমন করে তোমাদেরকে হিদায়েতের পথ দেখাবেন। আমার এ ওয়াদার কথা তথা আমার রুবূবিয়াত এবং আমার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান ও উনার খিদমতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন।”
সর্বশেষে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক আনবেন। মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে মহান আল্লাহ পাক উনার সে ওয়াদা মুবারক তথা উনার রুবূবিয়াত ও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনার ও উনার খিদমত মুবারক করার ওয়াদা মুবারক স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া বা হক্কানী-রব্বানী আলিম হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদেরকে প্রেরণ করেন। উনাদের মধ্যে যাঁরা শতাব্দীর খাছ লক্ষ্যস্থল হয়ে থাকেন উনাদেরকে বলা হয় মুজাদ্দিদ।
এ সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله عز وجل يبعث لـهذه الامة على رأس كل مأة سنة من يـجدد لـها دينها
অর্থ : “ছাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রতি হিজরী শতকের শুরুভাগে এ উম্মতের হিদায়েতের জন্য একজন করে মুজাদ্দিদ প্রেরণ করবেন, যিনি দ্বীনের তাজদীদ (সংস্কার) করবেন।” (আবূ দাঊদ শরীফ, মিশকাত শরীফ, দাইলামী শরীফ)
অর্থাৎ মানুষ যখন মহান আল্লাহ পাক উনার রুবূবিয়াত এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রিসালত মুবারক ও উনার খিদমত মুবারক করার কথা ভুলে যাবে তখন মুজাদ্দিদ উনারা তা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে যে সকল কুসংস্কার প্রবেশ করবে, যামানার মুজাদ্দিদ উনারা তা দূরীভূত করে হাক্বীক্বী ঈমান ও ইসলামী আদর্শ ক্বায়িম করবেন, লুপ্তপ্রায় সুন্নতকে জিন্দা করবেন, মানুষের ঈমান, আমল ও আক্বীদা পরিশুদ্ধ করবেন।
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ অনুযায়ী প্রত্যেক হিজরী শতকে একজন করে মুজাদ্দিদ আগমন করেন। সে ধারাবাহিকতায় উনারা প্রত্যেকেই মহান আল্লাহ পাক উনার ‘রোযে আযল’-এর সেই ওয়াদা মহান আল্লাহ পাক উনার রুবূবিয়াত এবং উনার প্রতি ঈমান আনা ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রিসালত মুবারক এবং উনার প্রতি ঈমান আনা ও উনার খিদমত মুবারক করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন; দিচ্ছেন এবং দিবেন। সুবহানাল্লাহ!