ছয় তাকবীরের সহিত ঈদের যে নামায পড়া হয় তা কোন হাদীসে নেই।
৬ তাকবীরের ঈদের নামাজ - সত্যের সন্ধানে






সুওয়ালঃ   ছয় তাকবীরের সহিত ঈদের যে নামায পড়া হয় তা কোন হাদীসে নেই।জনৈক মাওলানা ছাহেবের এ বক্তব্য কতটুকু সঠিক? দয়া করে জানিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন করবেন। 


জাওয়াবঃ  উল্লিখিত মাওলানা ছাহেবের বক্তব্য মোটেও সঠিক নয় বরং সম্পূর্ণ উদ্ভট, মিথ্যা, দলীল বিহীন, জিহালতপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর। সঠিক বক্তব্য হচ্ছে, ছহীহ্ হাদীস শরীফের কিতাবসহ অনেক হাদীস শরীফের কিতাবে ছয় তাকবীরের সহিত ঈদের নামায পড়ার কথা বর্ণিত রয়েছে।          যেমন, এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফের ছহীহ্ কিতাব আবূ দাউদ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

ان سعيد بن العاص رضى الله تعالى عنه سال ابا موسى الاشعرى وحذيفة بن اليمان كيف كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يكبر فى الاضحى والفطر فقال ابو موسى كان يكبر اربعا تكبيره على الجنائز فقال حذيفة صدق فقال ابو مؤسى كذلك اكبر فى البصرة حيث كنت عليهم قال ابو عائشة الاموى وانا حاضر سعيد بن العاص

অর্থঃ হযরত সায়ীদ ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু হযরত আবু মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হুযায়ফা বিন ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম ঈদুল আদ্বহা ও ঈদুল ফিত্রের নামাযে কিভাবে বা কত তাকবীর বলতেন? হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তিনি জানাযার নামাযের তাকবীরের মত প্রতি রাকয়াতে চার তাকবীর বলতেন। এটা শুনে হযরত হুযায়ফা বিন ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তিনি (হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) সত্য বলেছেন। অতঃপর হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি অনুরূপ তাকবীর বলে ঈদের নামায আদায় করতাম যখন বসরা শহরের শাসক ছিলাম।         হযরত আবূ আয়েশা উমবী বলেন, (এ হাদীস শরীফ বর্ণনাকালে) আমি সায়ীদ ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম।হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

 

عن تعض اصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم قال صلى بنا النبى صلى الله عليه وسلم يوم عيد فكبر اربعا واربعا ثم اقبل علينا بوجهه حين انصرف فقال لاتنسوا كتكبير الجنائز واشار باصابعه وقبض ابهامه.

অর্থ : হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনেকে বলেন যে, হযরত নবী পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ঈদের নামায পড়লেন। তিনি (উক্ত নামাযে) চার চার বার তাকবীর পাঠ করলেন অতঃপর নামায শেষে আমাদের দিকে ফিরে বললেন, তোমরা ভুলে যেওনা যে, ঈদের তাকবীর হচ্ছে জানাযার তাকবীরের অনুরূপ এবং তিনি স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলী গুটিয়ে বাকী অঙ্গুলীসমূহ দ্বারা ইশারা করে জানিয়ে দিলেন।” (ইলাউস্ সুনান, ত্বহাবী শরীফ, কিতাবুয্ যিয়াদাত) হাদীস শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে

عن علقمة والاسود قالا كان ابن مسعود رضى الله تعالى عنه جالسا وعنده حذيفة وابو موسى الاشعرى فسالهم سعيدبن العاص عن التكبير فى صلاة العيد فقال حذيفة سل الاشعرى فقال الاشعرى سل عنذ الله فانه اقدمنا واعلمنا فساله فقال ابن مسعود يكبر اربعا ثم يقرء ثم يكبر فير كع فيقوم الثنية فيقرء ثم يكبر اربعا بعذ القراءة.

অর্থ : হযরত আলকামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আসওয়াদ আমিরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, কোন এক স্থানে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বসা ছিলেন এবং তাঁর নিকট অবস্থান করছিলেন হযরত হুযায়ফা বিন ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। অতঃপর তাঁদেরকে হযরত সায়ীদ ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈদের নামাযের তাকবীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত হুযায়ফা বিন ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আপনি (এ ব্যাপারে) হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করুন। তখন হযরত আবূ মুসা আশয়ারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন যে, আপনি হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করুন। কারণ তিনি আমাদের চেয়ে (দ্বীন গ্রহণের ক্ষেত্রে) অগ্রগামী এবং (দ্বীন সম্পর্কে) বেশী জানেন। অতঃপর সায়ীদ ইবনুল আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তিনি (অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের নামাযের শুরুতে) চার বার তাকবীর বলতেন অতঃপর ক্বিরয়াত পাঠ করতেন অতঃপর তাকবীর বলে রুকুতে চলে যেতেন অতঃপর দ্বিতীয় রাকয়াতে দাড়িয়ে শুরুতে ক্বিরয়াত পাঠ করতেন অতঃপর ক্বিরয়াত পাঠের পর চারবার তাকবীর পাঠ করতেন।” (মুসনদে আব্দুর রাজ্জাক, ফিকহুস্ সুনান ওয়াল আছারুস্ সুনান)   ব্যাখ্যাঃ- আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত হাদীস শরীফে كان يكبر اربعا অর্থাৎ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহার নামাযে চার তাকবীর বলতেন, এর ব্যাখ্যায় ছহীহ্ আবূ দাউদ শরীফের নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থ বজলুল মাজহুদ সহ সকল ব্যাখ্যাগ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে,

كان يكبر فى كل ركعة اربعا اى مع تكبيرة الاحرام فى الاولى وتكبيرة الركوع فى الثانية.

  অর্থ : হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক রাকয়াতে চার বার তাকবীর পাঠ করতেন। অর্থাৎ প্রথম রাকয়াতে তাকবীরে তাহরীমাসহ চার তাকবীর, দ্বিতীয় রাকায়াতে রুকুর তাকবীরসহ চার তাকবীর।”       উল্লেখ্য, উপরোক্ত প্রতিটি হাদীসই ছহীহ্ ও হাসান এবং রাবী বা বর্ণনাকারীগণ সকলেই ছেক্বাহ-এর অর্ন্তভূক্ত। কাজেই গ্রহণযোগ্যতার দিক থেকে সে সকল হাদীস শরীফ যেমন সন্দেহের অবকাশ রাখেনা তেমনি দলীল পেশ করার ক্ষেত্রেও কোনরূপ বাধা নেই। আর এ সকল ছহীহ্ ও হাসান হাদীস শরীফের ভিত্তিতে     হানাফী মাযহাবের মাসয়ালা ও আমল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, ঈদের নামায ছয় তাকবীরের সাথে আদায় করা ওয়াজিব।      মোটকথা প্রথম রাকয়াতে তাকবীরে তাহরীমা এবং দ্বিতীয় রাকয়াতে রুকুর তাকবীর এ দুটি তাকবীর হচ্ছে নামাযের মধ্যকার তাকবীর। আর উভয় রাকয়াতে তিন+তিন=ছয় তাকবীর হচ্ছে ঈদের নামাযের জন্য অতিরিক্ত তাকবীর।     অতএব, ছয় তাকবীর সম্পর্কে উক্ত মাওলানার বক্তব্য হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফ ও আমলের প্রতি মিথ্যা তোহ্মতের কারণে সম্পূর্ণ কুফরী হয়েছে যার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে ইরশাদ করেন,

من كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار

অর্থ : যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন যমীনে থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (বুখারী শরীফ)           {দলীলসমূহঃ (১) বুুখারী, (২) মুসলিম, (৩) আবূ দাউদ, (৪) মুসনদে আব্দুর রাজ্জাক, (৫) ত্ববারানী, আছারুস্ সুনান, (৬) মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ, (৭) তাক্বরীবুত্ তাহযীব, (৮) নেহায়া, (৯) দেরায়া, (১০) ফিক্হুস্ সুনান ওয়াল আছার, (১১) ইলাউস্ সুনান, (১২) ত্বহাবী শরীফ, (১৩) কিতাবুয্ যিয়াদাত, (১৪) বজলুল মাযহুদ, (১৫) আউনুল মাবুদ, (১৬) মিশকাত, (১৭) মিরকাত, (১৮) আশয়াতুল লুময়াত, (১৯) লুময়াত, (২০) শরহুত ত্বীবী, (২১) তালীকুছ ছবীহ, (২২) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি)  মুহম্মদ আব্দুল্লাহ্, কাশিমগঞ্জ, তেতুলিয়া।