সুওয়াল- উপবিষ্ট বা বসা ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির ইমাম হতে পারবে কিনা?
Published from Blogger Prime Android App

সুওয়ালঃ উপবিষ্ট বা বসা ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির ইমাম হইতে পারবেন কিনা?

জাওয়াবঃ উপবিষ্ট বা বসা ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির ইমাম হইতে পারবেন । এ ব্যাপারে সকল ইমাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম উনারা একমত পোষণ করেছেন ।
দলীলঃ হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব মুখতাছিরুল কুদুরী এর  ৮০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে-

ويجوز أن يؤم المتيمم المتوضئين، والماسح على الخفين الغاسلين، ويصلي القائم خلف القاعد، 

- তায়াম্মুমকারী অযূকারীর ইমামতি করা জায়েয। মোজা পরিহিত ব্যক্তি পা ধৌতকারীর ইমাম হইতে পারে। উপবিষ্ট/বসা ব্যক্তি দাড়ানো ব্যক্তির ইমাম হইতে পারে। (মুখরাছিরুল কুদুরী, পৃষ্ঠা নং- ৮০)     

 عَنْ حضرت أَنَسٍ رضي الله تعالى  أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَكِبَ فَرَسًا فَصُرِعَ عَنْهُ فَجُحِشَ شِقُّهُ الْأَيْمَنُ فَصَلَّى صَلَاةً مِنَ الصَّلَوَاتِ وَهُوَ قَاعِدٌ فَصَلَّيْننَا وَرَاءَهُ قُعُودًا فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ: «إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ فَإِذَا صَلَّى قَائِما فصلوا قيَاما فَإِذا رَكَعَ فَارْكَعُوا وَإِذَا رَفَعَ فَارْفَعُوا وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا رَبنَا و وَلَك الْحَمد وَإِذا صلى قَائِما فصلوا قيَاما وَإِذَا صَلَّى جَالِسًا فَصَلُّوا جُلُوسًا أَجْمَعُونَ»
قَالَ الْحُمَيْدِيُّ: قَوْلُهُ: «إِذَا صَلَّى جَالِسًا فَصَلُّوا جُلُوسًا» هُوَ فِي مَرَضِهِ الْقَدِيمِ ثُمَّ صَلَّى بَعْدَ ذَلِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا وَالنَّاسُ خَلْفَهُ قِيَامٌ لَمْ يَأْمُررْهُمْ بِالْقُعُودِ وَإِنَّمَا يُؤْخَذُ بِالْآخِرِ فَالْآخِرِ مِنْ فِعْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. هَذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ. وَاتَّفَقَ مُسْلِمٌ إِلَى أَجْمَعُونَ. وَزَادَ فِي رِوَايَةٍ: «فَلَا تختلفوا عَلَيْهِ وَإِذا سجد فاسجدوا»

হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোন এক ছফরের সময় ঘোড়ার উপর আরোহী ছিলেন। ঘটনাক্রমে তিনি নীচে পড়ে গেলেন। ফলে উনার ডান পাঁজরের চামড়া উঠে গিয়ে চরম ব্যথা পেলেন (দাঁড়িয়ে ছলাত মুবারক আদায় করতে পারছিলেন না)। 

তাই মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসে বসে আমাদেরকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের কোন এক ওয়াক্ত নামায আদায় করালেন। আমরাও উনার পেছনে বসে বসেই নামায আদায় করলাম। নামায শেষ করে তিনি আমাদেরকে লক্ষ্য করে ইরশাদ মুবারক করলেন, ইমাম এ জন্যেই নির্ধারিত করা হয়েছে যেন তোমরা উনার অনুকরণ করো। তাই সম্মানিত ইমাম দাঁড়িয়ে পবিত্র নামায আদায় করালে আপনারাও দাঁড়িয়ে পবিত্র নামায আদায় করবেন। সম্মানিত ইমাম যখন রুকূ’ করবেন, আপনারাও রুকূ’ করবেন। সম্মানিত ইমাম রুকূ’ হতে উঠলে আপনারাও রুকূ’ হতে উঠবেন। সম্মানিত ইমাম ’সামি’আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বললে, আপনারাও ’রব্বানা- লাকাল হামদু’ বলবেন। আর যখন সম্মানিত ইমাম বসে পবিত্র নামায আদায় করাবেন, আপনারা সব মুক্তাদী বসে পবিত্র নামায আদায় করবেন।

قَالَ الْحُمَيْدِيُّ: قَوْلُهُ: «إِذَا صَلَّى جَالِسًا فَصَلُّوا جُلُوسًا» هُوَ فِي مَرَضِهِ الْقَدِيمِ ثُمَّ صَلَّى بَعْدَ ذَلِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا وَالنَّاسُ خَلْفَهُ قِيَامٌ لَمْ يَأْمُرْهُمْ بِالْقُعُودِ وَإِنَّمَا يُؤْخَذُ بِالْآخِرِ فَالْآخِرِ مِنْ فِعْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. هَذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ. وَاتَّفَقَ مُسْلِمٌ إِلَى أَجْمَعُونَ 

হযরত ইমাম হুমায়দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইমাম বসে পবিত্র নামায আদায় করালে আপনারাও বসে পবিত্র নামায আদায় করবেন মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ নির্দেশ মুবারক উনার প্রথম মারিদ্বী শান মুবারক অর্থাৎ (অসুস্থের) সময়ের নির্দেশ ছিল। 

পরে বিছালী শান মুবারক উনার একদিন আগে মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসে বসে পবিত্র নামায আদায় মুবারক করিয়েছেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম অর্থাৎ (মুক্তাদীগণ) উনার পেছনে দাঁড়িয়ে পবিত্র নামায আদায় করেছেন। তিনি উনাদেরকে বসে পবিত্র নামায আদায়ের জন্য নির্দেশ দেননি। মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এ শেষ ’আমলের উপরই ’আমল করা হয়। এগুলো হলো বুখারী শরীফ উনার ভাষা। এই বিষয়ের উপর হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনি একমত পোষণ করেছেন। 
(বুখারী শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ৬৮৯, ৭৩৩, মুসলিম শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ৪১৪)

عَن حضرت عَائِشَة عليها السلام قَالَتْ: لَمَّا ثَقُلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَاءاءَ بِلَال يوذنه لصَلَاة فَقَالَ: «مُرُوا أَبَا بَكْرٍ أَنْ يُصَلِّيَ بِالنَّاسِ» فَصَلَّى أَبُو بَكْرٍ تِلْكَ الْأَيَّامَ ثُمَّ إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَدَ فِي نَفْسِهِ خِفَّةً فَقَامَ يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ وَرِجْلَاهُ يخطان فِي الْأَرْضِ حَتَّى دَخَلَ الْمَسْجِدَ فَلَمَّا سَمِعَ أَبُو بكر حسه ذهب أخر فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَن لَا يتَأَخَّر فجَاء حَتَّى يجلس عَن يسَار أبي بكر فَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يُصَلِّي قَائِمًا وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي قَاعِدًا يَقْتَدِيي أَبُو بَكْرٍ بِصَلَاةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالنَّاسُ مقتدون بِصَلَاة أبي بكر
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا: يُسْمِعُ أَبُو بَكْرٍ النَّاسَ التَّكْبِير

উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুব মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করলেন অর্থাৎ (অসুস্থ) হয়ে পড়লেন।

 এমন সময় একদিন হযরত বিলাল রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি পবিত্র নামায আদায়ের জন্যে মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ডাকতে আসলেন। মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন- সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে লোকদের প্রতি পবিত্র নামায আদায় করতে বললেন, ফলে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সে কয়দিনে পবিত্র নামায আদায় করালেন। অতঃপর মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন একটু (সুস্থতা) মনে করলেন। তিনি দু’জন হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনাদের কাঁধের উপর ভর দিয়ে উনার নুরুদ দারাজাহ মুবারক অর্থাৎ (দু’পা)  মুবারক মাটির সাথে হেঁচড়িয়ে পবিত্র নামাযের জন্যে পবিত্র মসজিদে আসলেন।

 পবিত্র মসজিদে প্রবেশ করলেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকরব আলাইহিস সালাম তিনি  মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাশরীফ মুবারক নেয়ার টের পেলেন এবং উনি পিছু হটতে শুরু করলেন। মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা দেখে সেখান থেকে সরে না আসার জন্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে ইঙ্গিত মুবারক করলেন। এরপর মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসলেন এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বাম পাশে বসে গেলেন। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি দাঁড়িয়ে পবিত্র নামায মুবারক আদায় করছিলেন।

 মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসে বসে পবিত্র নামায মুবারক আদায় করলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নামাযের ইক্বতিদা করছেন। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহি সালাম উনার পবিত্র নামাযের ইকতেদা করে চলছেন। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ; উভয়ের আর এক বর্ণনা আছে, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা মহাসম্মানিত হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার তাকবীর স্বজোড়ে শুনাতে লাগলেন।

বুখারী শরীফ, হাদীছ শরীফ নং- ৬৮৭-৭১৩, মুসলিম শরীফ, হাদীছ শরীফ নং- ৪১৮
উপরোক্ত দলীল দ্বারা প্রমাণ হলো যে উপবিষ্ট বা বসা ব্যক্তি দাড়ানো ব্যক্তির ইমাম হইতে পারবেন।