আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক


ঈদ মুবারক ! ঈদ মুবারক !! ঈদ মুবারক !!!
সুমহান পুত ও পবিত্র ২৮শে জুমাদাল উলা শরীফ
ঈদে বিলাদতে ,
আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নুরুদ দরাজাত মুবারকে জানাই লক্ষ কোটি বেশুমার ছলাত ও সালাম ।

গোলামীর আরজুতে ,
মুহম্মদ ইউসুফ রাজী খাজা

তারিখ – ২৮/০৫/১৪৪১ হিজরী

আফদ্বালুন নাস বা’দাল আম্বিয়া সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার আখাছছুল খাছ মনোনীত ব্যক্তিত্বগণ উনাদের মধ্যে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতমবলার অপেক্ষা রাখে না যে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সারা কায়িনাতবাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শ মুবারকনূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিদমতে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা উনাকে উম্মতের মাঝে একক ও অদ্বিতীয় বানিয়েছেজুমাদাল উখরা শরীফ মাস উনার বিছাল শরীফ গ্রহণের মাসসঙ্গতকারণেই এ মাসে উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক আলোচনা-পর্যালোচনা করা অতীব প্রয়োজনআর এ কারণেই সংক্ষিপ্তাকারে উনার সাওয়ানেহে উমরী মুবারক আলোচনা করা হলো
 পবিত্র বিলাদত শরীফ:
 আইয়ামে জাহিলিয়াতের সময় আরববাসীগণ নাসী বা তারিখ আগ-পিছ করেনতোযার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক তারিখ পাওয়া সম্ভব হয় নাতেমনিভাবে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বিলাদত শরীফের সঠিক তারিখ নির্ধারণে ঐতিহাসিকগণ সক্ষম হননিতবে সকল ঐতিহাসিকগণ একমত যে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ৬৩ বছর বয়স মুবারকে পবিত্র বিছাল শরীফ গ্রহণ করেনসে অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উনার প্রায় দুই বছর পর মুবারক হিজরতপূর্ব ৫১ সন মুতাবিক শামসীপূর্ব ৬১ সন আর ঈসায়ী ৫৭২ সনে পবিত্র মক্কা শরীফে বনী তামীম গোত্রে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন
কিন্তু এরপরে , একমাত্র কুল কায়িনাতের সর্ব শ্রেষ্ঠ মুজাদ্দীদ , মুজাদ্দিদে আযম আলাইহিস সালাম , সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম ছ্ল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনবদ্য তাজদীদ মুবারক হচ্ছে হযরত আহলু বাইত আলাইহিমুস সালাম সাহাবী কেরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম হযরত আউলিয়া কেরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহি আলাইহিম উনাদের বিলাদত শরীফ বিছাল শরীফ উনার সঠিক তারিখ মুবারক বের করা
সে অনুযায়ী , হযরত সিদ্দিকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার বিলাদত শরীফ উনার তারিখ হচ্ছে২৮ শে জুমাদাল উলা শরীফ  সুবহানা মামদূহ হযরত মুরশিদ ক্বিবলা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
 পবিত্র নসব মুবারক:
 হযরত আবূ বকরেন ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম ইবনে আবী কুহাফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইবনে উসমান ইবনে আমির ইবনে আমর ইবনে কাব ইবনে সাদ ইবনে তায়ীম ইবনে মুররাহ আলাইহিস সালামউনার অষ্টম পুরুষ হযরত মুররাহ আলাইহিস সালাম উনাতে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারকের সাথে মিলিত হয়েছেন (তারীখুল খুলাফা)
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা আম্মাজান হযরত উম্মুল খইর সালমা বিনতে ছখর বিন আমের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাউনার নসব মুবারকও কয়েক ধাপ পেরিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নসব মুবারক উনার সাথে মিলিত হয়েছেনউনার পিতা-মাতা উভয়ই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছেন

পবিত্র হুলিয়া মুবারক:
 হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম বেমেছাল বুযূর্গী-সম্মানের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিলো উনার হুলিয়া মুবারকেউনার জিসম মুবারক ছিল উজ্জ্বল বর্ণেরস্বাভাবিক গড়ন আর প্রশস্ত কপাল মুবারকে তিনি ছিলেন সুশোভিতচেহারা মুবারক, চাল-চলন মুবারক, কথা-বার্তা মুবারক, চলাচল মুবারক সর্বক্ষেত্রেই উনার বেনযীর বিনয় আর অপরিসীম জামালিয়াতের উন্মেষ ঘটতোউনার বরকতময় হুলিয়া মুবারক সকলকে আকর্ষণ করেনতো, প্রভাবান্বিত করেনতো
 মুবারক শৈশবকাল:
 খুবই অল্প বয়স মুবারকে যাঁরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক গ্রহণ করেনতেন, উনাদের মধ্যে হযরত আবূ বকরেন ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতমঅন্যান্য ছেলেরা যখন দৌড়-ঝাঁপ আর খেলাধুলায় লিপ্ত থাকতো, তখন তিনি নীরবতা অবলম্বন করেনতেনসকলেই যখন হৈহুল্লোড়ে লিপ্ত থাকতো, তখন তিনি একাকিত্ব গ্রহণ করেনতেনআর সময়-সুযোগ পেলেই তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারকে নিজেকে সপে দিতেনউনার মুবারক শৈশবকালীন অবস্থা দেখেই কুরাঈশগণ উনাকে তাযীম-তাকরীম করেনতে থাকে
 ইলম অর্জনের আনুষ্ঠানিকতা:
আফদ্বালুন নাস বাদাল আম্বিয়া হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার আখাচ্ছুল খাছ লক্ষ্যস্থলসর্বপ্রকার ইলম, হিকমত এবং নিয়ামতে পরিপূর্ণ করেই উনাকে প্রেরণ করা হয়তথাপি তিনি ইলম অর্জনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন
কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, আইয়ামে জাহিলিয়াতে হাতেগোণা যে সমস্ত লোক ইলম ও হিকমতে পারদর্শী ছিলেন, উনাদের মধ্যে তিনি অন্যতমআরবদের নসবনামা ও গোত্র পরিচিত উনার নখদর্পণে ছিলোসুবহানাল্লাহ!
 কিসাস ও দিয়াতের জিম্মাদার:
 পবিত্র মক্কা শরীফ উনার বিভিন্ন কার্যক্রম কুরাঈশগণ নিজেদের গোত্রের মধ্যে বণ্টন করে নেয়আবদে মানাফ গোত্রের দায়িত্ব ছিলো হাজীগণ উনাদেরকে পানি পান করানো এবং অন্যান্য খিদমতের আঞ্জাম দেয়াআব্দুদ দার গোত্রের দায়িত্ব ছিলো পবিত্র মক্কা শরীফ উনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দারুন নদওয়া বৈঠক ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং যুদ্ধের ময়দানে পতাকা বহন করামাখযুম গোত্রের দায়িত্ব ছিলো সেনাপতিত্ব করাহযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার তাইম গোত্রের দায়িত্ব ছিল কিসাস ও দিয়াতের ফায়সালা করা ও তা বাস্তবায়ন করা (তারীখুল খুলাফা)
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম যৌবনে পদার্পণ করলেন গোত্রের সকলের দৃষ্টিতে পড়ে যানউনার অনন্য বেশিষ্ট্যাবলী সকলকে আকর্ষিত করেসঙ্গতকারণেই গোত্রের লোকেরা উনাকে দিয়াত ও কিসাসের ব্যাপারে দায়িত্বশীল মনোনীত করেকিসাসের ব্যাপারে তিনি যে ফায়সালা দিতেন, তা পবিত্র মক্কা শরীফ উনার সকলেই মেনে নিতোদিয়াত বা ক্ষতিপূরণের সমুদয় অর্থ উনার নিকট জমা দিতে হতোসর্বক্ষেত্রেই তিনি সূক্ষ্মদর্শিতা এবং আমানতদারীর পরিচয় দেনসুবহানাল্লাহ!

জাহিলিয়াতের প্রভাবমুক্ত:
 আইয়ামে জাহিলিয়াতের সেই কঠিন সময়ে যাঁরা দ্বীনে হানিফ উনার উপর ইস্তিকামত থেকে যাবতীয় অনাচার হতে নিজেদেরকে পূত-পবিত্র রেখেছেন, উনাদের মধ্যে হযরত আবূ বকরেন ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতমপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে
عن ام المومنين حضرت الصديقة عليها السلام قالت لقد حرم حضرت ابو بكر عليه السلام الخمر على نفسه فى الجاهلية
অর্থ: “উম্মুল মুমিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি জাহিলিয়াতের সময় নিজের জন্য মদকে হারাম করেছিলেনসুবহানাল্লাহ! (আবু নুআইম)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت أبي العالية الرياحي قال : قيل لأبي بكر الصديق عليه السلام في مجمع من أصحاب رسول الله صلى الله عليه و سلم : هل شربت الخمر في الجاهلية ؟ فقال : أعوذ بالله فقيل : و لم قال : كنت أصون عرضي و أحفظ مروءتي فإن من شرب الخمر كان مضيعا في عرضه و مروءته قال : فبلغ ذلك رسول الله صلى الله عليه و سلم فقال : صدق أبو بكر عليه السلام صدق  أبو بكر عليه السلام مرتين
অর্থ: “হযরত আবু আলিয়াহ আর রিয়াহী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিততিনি বলেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এক বিশেষ মজলিসে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, আপনি কি জাহিলিয়াতের যুগে শরাব পান করেছিলেন? তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট আমি পানাহ চাইতখন উনাকে বলা হলো, আপনি কেন শরাব হতে বিরত ছিলেন? তিনি বললেন, আমি আমার ইজ্জত-হুরমত সংরক্ষণ করেছিহিফাযত করেছি আমার মুরওওয়াত অর্থাৎ মনুষত্বকেননা যে ব্যক্তি শরাব পান করে সে তার ইজ্জত সম্মান ও মুরুওয়াত বিনষ্ট করে ফেলেরাবী বলেন, এ বিষয়টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পৌঁছলে তিনি ইরশাদ মুবারক করলেনন, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সত্যই বলেছেনতিনি এই বাক্যখানা পরপর দুবার বলেছেন” (ইবনে আসাকীর)
 ব্যবসা-বাণিজ্য:
 ব্যবসা-বাণিজ্য ছিলো আরবী সম্ভ্রান্তদের প্রতীক; যা ছিলো সর্বোচ্চ মানের পেশাহযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি পারিবারিকভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্য লাভ করেনপ্রাপ্ত বয়সে পদার্পণ করে তিনি পরিবারের ব্যবসা-বাণিজ্যের তত্ত্বাবধান গ্রহণ করেনব্যবসায়িক কাজে তিনি কয়েকবার সিরিয়া ও ইয়ামেন গমন করেনকালক্রমে তিনি আরবের বড় ব্যবসায়ীতে পরিণত হনসম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নকালে তিনি চল্লিশ হাজার দিনারের মালিক ছিলেনযা বর্তমান সময়ে কয়েকশত কোটি টাকার সমপরিমাণ
 সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা:
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে নবুওওয়াত মুবারক ও রিসালত মুবারক উনাদের বিষয়টি প্রকাশ করেন, তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ব্যবসায়িক কাজে সিরিয়া বা ইয়ামেনে অবস্থান করেনছিলেনপবিত্র মক্কা শরীফে ফেরত এসে আত্মীয়-স্বজনকে নতুন সংবাদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেননতারা বললো, একটি নতুন ও আশ্চর্যজনক সংবাদ রয়েছেখাজা আবু তালিব উনার ভাতিজা তিনি নবুওওয়ত মুবারক প্রকাশ করেছেনতা শুনে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাৎ মুবারক লাভ করার জন্য অস্থির হয়ে পড়েনদ্রুত নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাৎ মুবারক গ্রহণ করেন এবং তৎক্ষণাত সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন (সমুদয় সীরাত গ্রন্থ)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
ما دعوت احدا الى الاسلام الا كانت له عنه كبوة و تردد نظر الا ابا بكر عليه السلام ما عتم عنه حين ذكربه وما تردد فيه.
অর্থ: “আমি যাকেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত মুবারক দিয়েছি তিনিই চু-চেরা করেছেন, সময়ক্ষেপণ করেছেনতবে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতিক্রমউনাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দেয়া মাত্রই কোনো প্রকার চু-চেরা না করে, কালবিলম্ব না করে তৎক্ষণাত তিনি দাওয়াত মুবারক গ্রহণ করেনপবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন” (ইবনে ইসহাক্ব)
 সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম পুরুষ:
হযরত মুজাদ্দিদে আযম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সর্বপ্রথম সম্পন্ন করেন হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাসেই সময়ে আহলু বাইত শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন- উম্মুল মুমিনীন আল ঊলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম, বিনতু রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আন নুরুছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আন নুরুল ঊলা আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন হযরত আন নূরুছ ছালিছাহ আলাইহাস সালাম এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন আন নূরুর রবিয়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম
আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের সেই মুবারক সময়ে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে হতে যাঁরা যমীনে অবস্থান মুবারক করেনছিলেন, উনারা সকলেই ছিলেন মহিলাসে অনুযায়ী সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম পুরুষ হলেন- ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালামউনার পূর্বে প্রাপ্ত বয়স্ক কোনো পুরুষ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেননিএ মতের উপর রায় দিয়েছেন ইমামে আযম হযরত ইমাম আবু হানীফাহ রহমতুল্লাহি আলাইহিসুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রচার-প্রসার:
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর হতে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে একনিষ্ঠভাবে আঞ্জাম দেনশারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক সর্ব দিকেই উনার খিদমতের আঞ্জাম বিস্তৃতি ছিলোপবিত্র হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত হয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি যখন ঘোষণা করেনতাম যে আমি তোমাদের সকলের জন্য রসূল স্বরূপ প্রেরিত হয়েছি, তখন সকলেই আমাকে অস্বীকার করেনতোতবে শুধুমাত্র হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি ব্যতীততিনি বলতেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি সত্যই বলেছেন (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যে খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দিয়েছেন, তা অন্য কারো পক্ষেই সম্ভব হয়নি
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কারণে কাফিররা যে সমস্ত ব্যক্তিত্ব উনাদের উপর যুলুম-নির্যাতন করেনতো উনাদের মধ্যে যারা আযাদ ছিলেন না উনাদেরকে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম চড়া মূল্যে ক্রয় করে আযাদ করে দিতেনপ্রথম মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আমের ইবনে ফুহাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারাসহ আরো অনেকে উনাদের অন্তর্ভুক্ত
শত যুলুমেও অবিচল:
 সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কারণে কাফিররা নির্মম যুলুম-নির্যাতন করেনতোঅর্থনৈতিক মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতন ছিলো নিত্যদিনের ব্যাপারকাফিররা সুযোগ পেলেই মুসলমান উনাদেরকে নির্যাতনের কোশেশ করেনতোকিন্তু উনাদের শত যুলুম সত্ত্বেও হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে সুদৃঢ় ও অবিচল ছিলেন
কাফিরদের দীর্ঘ তিন বছরের অবরোধ ক্ষেত্র শিয়াবে আবু তালিবে অবস্থানকারীগণ উনাদের মধ্যে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতমকাফিরদের অসহ্য যুলুমের দরুন অনেকেই হিজরত মুবারক করেছেনকিন্তু তিনি কখনোই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক ত্যাগ করেননি
 সিদ্দিকে আকবর লক্বব মুবারক:
 আমুল হুযন তথা আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের দশম বছর এবং হিযরত মুবারক উনার তিন বছর পূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২৭শে রজবুল হারাম শরীফ লাইলাতু ইছনাইনিল আযীম পবিত্র মিরাজ শরীফে গমন করেনসকালে তিনি পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার ঘটনাবলী বর্ণনা করেনতে থাকেনতা শুনে কাফিররা বিভিন্ন ধরনের কুৎসা রটনা করেনতে থাকেআর এ সময়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনার হুজরা শরীফে অবস্থান করেনছিলেনছোহবত মুবারকে যাওয়ার জন্য তিনি যখন বের হলেন, পথিমধ্যে এক কাফির উনার নিকট পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার বিষয়টি বললোতিনি বললেন, আপনি কি সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যবান মুবারক হতে শুনেছ? সে বললো- হ্যাঁ, উনার যবান মুবারক হতেই আমি শুনেছিতখন তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মিরাজ শরীফ উনার বিষয়টি যতই আশ্চর্যজনক হোক না কেন, আমি তা বিনা বাক্যে নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করিউনার এই চরম সত্যবাদিতার দরুন উনাকেছিদ্দীক্বলক্বব মুবারকে ভূষিত করা হয়সুবহানাল্লাহ! (মুস্তাদেরেকে হাকীম)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان الله سمى ابا بكر عليه السلام على لسان نبيه صلى الله عليه وسلم صديقا-
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যবান মুবারকে হযরত আবূ বকরেন আলাইহিস সালাম উনাকেছিদ্দীক্বলক্বব মুবারকে ভূষিত করেছেন (দারুকুতনী)
 উম্মুল মুমিনীন হাদিয়া করেন:
 আমুল হুযন তথা আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের দশম বছরে উম্মুল মুমিনীন আল ঊলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেনসেই সময়ে উম্মুল মুমিনীন হিসেবে তিনি এককভাবে ছিলেনবিধায়, উনার বিদায়ের দরুণ পবিত্র হুজরা শরীফ অভ্যন্তরীণ খিদমতের আঞ্জাম দেয়ার জন্য একজন উম্মুল মুমিনীন উনার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে দেখা দেয়হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বাহিরের যাবতীয় খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতেনএখন পবিত্র হুজরা শরীফের খিদমতের আঞ্জাম দেয়ার জন্য তিনি হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে নিসবাতুল আযীম মুবারক দেয়ার ব্যাপারে মুবারক খিদমতে আরজি পেশ করেননূরে মুজসাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার আরজি কবুল করেনতঃ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে নিসবাতুল আযীম মুবারক করেনহযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনি আপন আওলাদ উনাকে মুবারক খিদমতে দিয়েছেনআবার তিনি নিজেই মোহর মুবারক পরিশোধ করেছেনযা দ্বারা উনার খিদমত মুবারকের ব্যাপকতা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট হয়
 পবিত্র হিজরত মুবারক:
কাফিরদের চরম যুলুম-নির্যাতনের দরুণ হযরত সাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অনেকেই হিজরত করেনএহেন পরিস্থিতিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর  পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেনন, হে ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম! মহান আল্লাহ পাক তিনি যে কোনো সময় হিজরত মুবারক উনার অনুমতি প্রদান করেনবেননতখন আপনি হবেন আমার সাথীআপনি হিজরত মুবারকের প্রস্তুতি নিনঅতঃপর, সুদীর্ঘ ছয় মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে
আনুষ্ঠানিক নবুওওয়াত প্রকাশের এয়োদশ বছর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাসে মহান আল্লাহ পাক তিনি হিজরত মুবারকের নির্দেশ করলেননআদেশ মুবারক পেয়ে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে স্বীয় বিছানা মুবারকে রেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হুজরা শরীফ হতে বের হয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার হুজরা শরীফ উনার দরজায় করাঘাত করেনসাথে সাথে তিনি বের হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি উপস্থিতউনার দ্রুতগামীতার দরুণ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আশ্চর্যবোধ করে ইরশাদ মুবারক করলেনন, এতো গভীর রাতে আপনি কি ঘুমাননি? এত দ্রুত বের হয়ে আসলেন কিভাবে? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যেদিন হিজরত মুবারকের কথা বলেছেন, সেদিন হতে আমি কখনোই বিছানায় পিঠ লাগাইনিসেদিনই  হিজরতের জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহন, অর্থকড়ি, খাবার, পোশাক এমনকি মদীনা শরীফ উনার পথ  দেখানোর জন্য অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত লোক সংগ্রহ করে রেখেছিআপনার ছোহবত মুবারক হতে হুজরা শরীফে এসে হিজরতের প্রস্তুতি নিয়ে বিগত ছয় মাস যাবৎ আমি দরজায় দাঁড়িয়ে থাকিআপনি নির্দেশ মুবারক করার সাথে সাথেই  যেন আপনার নির্দেশ মুবারক পালন করেনতে পারি সে জন্য সর্বদা সতর্কভাবে আমি অবস্থান করিসুবহানাল্লাহ!
বলার অপেক্ষাই রাখেনা যে, হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি হিজরত মুবারক উনার জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তা সাধারণ মানুষের পক্ষে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়আর এজন্যই পুরো উম্মতের মাঝে উনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছেপবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনার তারীফ মুবারক করেছেনহাদীছ শরীফেও রয়েছে উনার ফযীলত মুবারকের বর্ণনা
হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তারকারাজির সমপরিমাণ নেকী রয়েছে হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম উনারআর হিজরত মুবারক উনার সময় ছাওর গুহায় অবস্থানকালীন সময়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি যে নেকী হাছিল করেছেন, তা হযরত ফারূক্বে আযম আলাইহিস সালাম উনার সমস্ত নেকী হতেও বেশিসুবহানাল্লাহ!
মসজিদে নববী শরীফ স্থাপন:
হিজরত মুবারক এবং তার পরবর্তী প্রতিটি ক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাদিম হিসেবে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেনশারীরিক, মানুষিক এবং অর্থনৈতিক কোনো ধরনের খিদমত মুবারক হতে তিনি পিছপা হননি
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মদীনা শরীফে হিজরত মুবারক করার পর মসজিদ নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়সে সময় তিনি হযরত আবু আইউব আনসারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হুজরা শরীফে অবস্থান করেনছিলেনহুজরা শরীফ উনার সন্নিকটে অবস্থিত খোলা জায়গায়টি মসজিদে নববী শরীফ উনার জন্য নির্ধারিত করা হলোবনী নাজ্জার গোত্রের হযরত সাহল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত সুহাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা দুই সহোদর ভাই মসজিদে নববী শরীফ উনার জন্য নির্ধারিত জমির মালিক ছিলেনহযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সেই জমিখানা ক্রয় করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে হাদিয়া করেনআর এজন্য বলা হয়েছে, ক্বিয়ামত পর্যন্ত মসজিদে নববী শরীফে যত নেক আমল হবে, তার একটা হিস্যা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম লাভ করেনবেননসুবহানাল্লাহ!
জিহাদ:
হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে প্রতিটি জিহাদে শরীফ হয়েছেনসর্বক্ষেত্রেই তিনি ছায়ার মতো লেগে ছিলেনএমন কোনো জিহাদ অতিবাহিত হয়নি যে জিহাদে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উপস্থিত ছিলেন কিন্তু হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উপস্থিত ছিলেন না
দ্বিতীয় হিজরীতে অনুষ্ঠিত বদর জিহাদে অত্যধিক বীরদর্পে তিনি কাফিরদের মুন্ডুুপাত করেনহযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ করেন, বদর জিহাদে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য একখানা তাবু মুবারক খাটালামযেখানে অবস্থান মুবারক করে তিনি যুদ্ধ পর্যবেক্ষন করেনবেননজিজ্ঞেস করা হলো, এই তাবুতে পাহারার দায়িত্বে কে থাকবে? কেউ এগিয়ে আসলেন নাআল্লাহ পাক উনার কসম! শুধুমাত্র হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি এগিয়ে আসেনসে দিন তিনি নাঙ্গা তরবারী নিয়ে এমনভাবে খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দেন যে, কোনো শত্রুকেই তিনি তাবু মুবারক উনার নিকটবর্তী হতে দেননিযে আসতো তাকেই তিনি আঘাত করে প্রতিরোধ করেনতেন (আল মুসনাদ)
তৃতীয় হিজরীতে অনুষ্ঠিত উহুদে অত্যন্ত কঠিন যুদ্ধ হয়এ যুদ্ধে নূরে মুজসাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আহত হনঘোরতর যুদ্ধের সেই কঠিন সময়ে হাতে গণা যে কয়জন উনার পুরো খিদমত মুবারক উনার আঞ্জাম দেন, উনাদের মধ্যে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতমযুদ্ধ শেষে কাফিরদেরকে তাড়াতে যে সত্তর জন নিবেদিত প্রাণ অগ্রসর হয়েছিলেন, উনাদের প্রথম ব্যক্তিত্ব হলেন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম
পঞ্চম হিজরীতে অনুষ্ঠিত বনু মুস্তালিকের যুদ্ধে তিনি অপরিসীম বীরত্বে কাফিরদের প্রতিহত করেনএ যুদ্ধে তিনি মুহাজিরগণ উনাদের পতাকাবাহী হনখন্দকের যুদ্ধে পরিখা খননে তিনি অবিরাম শ্রম মুবারক দিয়েছেনতিনি নির্দিষ্ট দিকের মুহাফিয হিসেবে দায়িত্বশীল ছিলেনসে যুদ্ধে দলপতিগণ উনাদের মধ্যে তিনি অন্যতমতিনি উনার অধীনস্থগণ উনাদেরকে নিয়ে তিনি যেখানে অবস্থান মুবারক করেছিলেন, সেখানে মসজিদে আছ ছিদ্দীক্ব প্রতিষ্ঠা করেনযা অদ্যবধি রয়েছে (সাখাবী)
ষষ্ঠ হিজরীতে অনুষ্ঠিত হুদায়বিয়ার সন্ধির সেই সুদীর্ঘ সফরে তিনিও উপস্থিত ছিলেনসন্ধির আলোচনা করেনতে এসে কুরাইশ প্রতিনিধি উরওয়াহ ইবনে মাসউদ যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকের খিলাফ কথা বলেছিল, তখন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনিই তার জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন (বুখারী শরীফ)
সপ্তম হিজরীতে অনুষ্ঠিত খাইবার যুদ্ধে তিনি শারীরিক-মানসিক সর্বপ্রকার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেনউনার দূরদর্শিতার দরুণ খাইবারের বিশাল খেজুর বাগান ও অঢেল সম্পদ সুরক্ষিত থাকেখাইবারের কামুস দুর্গ বিজয়ে নিয়োজিত সেনাপতি উনাদের মধ্যে তিনি অন্যতম
অষ্টম হিজরীর মক্কা শরীফ বিজয় অভিযানে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সাল্লাম তিনি বিশেষ শান মুবারক জাহির করেনহিজরত মুবারকের দিন তিনি নূরে মুজাসসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাশাপাশি বাহনে যেভাবে মক্কা শরীফ হতে বের হয়েছিলেন, পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের দিন সেভাবেই মক্কা শরীফ প্রবেশ করেন (মারিফুস সাহাবা)
ইসলাম উনার ইতিহাসে হুনাইন ঘোরতর যুদ্ধের উপমাহাওয়াজিন ও ছাকীফ গোত্র পূর্ব হতে ওৎপেতে থেকে যুদ্ধের নিয়ম ভঙ্গ করে আকস্মিক আক্রমণ চালায়এতে কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়প্রতিরোধের স্থলে আত্মরক্ষা করাই কঠিন হয়ে পড়েসেই কঠিন সময় সাতজন বিশিষ্ট ছাহাবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ঘিরে রেখে বীরত্বপূর্ণ খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেনউনাদের মধ্যে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি অন্যতমএমনকি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার পতাকা তিনিই উঁচু করে রেখেছিলেন (ইবনু  হিশাম)
নবম হিজরীতে তাবুক যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়তাবুক যুদ্ধে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনার সমস্ত সম্পদ হাদিয়া করে যে নজির সৃষ্টি করেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এরূপ নজির সৃষ্টিকারী দ্বিতীয় কেউ নেইএ যুদ্ধে পুরো বাহিনীকে বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করা হয়উনাকে দেয়া হয় বৃহত্তম ভাগের বৃহত্তম পতাকা এবং সেনাপতিত্ব (ওয়াকিদী, আছ ছহীহ)
আমীরে হজ্জ:
নবম হিজরীতে পবিত্র হজ্জ ফরয করা হয়এ বছর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনাকে তিনশত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরসহ পবিত্র হজ্জ উনার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফে প্রেরণ করেনপাশাপাশি উনাকে আমীরে হজ্জ লক্বব মুবারকে ভূষিত করা হয়মুশরিকদের বিরুদ্ধে পবিত্র মক্কা শরীফে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা সে বছর উনার মাধ্যমেই ঘোষণা করা হয়পবিত্র হজ্জ উনার ইসলামী পদ্ধতি সর্বপ্রথম তিনিই পালন করেন (ইবনু হিশাম, যাদুল মাআদ)
বিদায় হজ্জ উনাতে একনিষ্ঠ সাথী:
 দশম হিজরীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হজ্জ মুবারক সম্পন্ন করেনএই ছফর মুবারকে উনার মালামাল মুবারক এবং হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার মালামাল মুবারক একই উটে বহন করা হয়সুবহানাল্লাহ! (আবু দাউদ)
এই ছফর মুবারকে উনার আওলাদ হযরত মুহম্মদ ইবনে আবি বকরেন রহমতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন (ইবনু সা)
বিদায় হজ্জের সময় সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার পরিপূর্ণতা ঘোষণা করা হয়আর ইসলাম উনার পূর্ণাঙ্গতার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিদায় মুবারক উনার মুবারক সময় নিকটবর্তী হওয়ার বিষয়টি তিনিই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেনতার কারণে তিনি অনেক কান্নাকাটি করেন