শরীয়তের দৃষ্টিতে আখিরী যোহর বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহরের আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ৪ নং )
আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রের নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য দলীল-আদিল্লাসমূহ
(ধারাবাহিক)
            কোন স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতভেদের কারণে অথবা কোন স্থান নিঃসন্দেহে শরয়ী শহর, কিন্তু তাতে একাধিক মসজিদে জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতভেদের কারণেই ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ ইজতিহাদ করতঃ জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত আখিরী যোহর বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রআদায় করার ফতওয়া দেন।
            মূলতঃ আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহরসম্পর্কে কিতাবে ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের দুপ্রকার মত পরিলক্ষিত হয় যথাঃ (১) ওয়াজিব, (২) মুস্তাহাব বা মুস্তাহ্সান।
             (১) যে স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট সন্দেহ রয়েছে, সেখানে জুমুয়া আদায় করা হলে, জুমুয়ার পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহর নামায পড়া ওয়াজিব।
            (২) যে স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ নেই, সেখানে এক শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ বা মতভেদ থাকার কারণে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্য চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রনামায পড়া মুস্তাহাব বা মুস্তাহসান।
যেমন, এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
وذكر فى النهر انه لاينبغى التردد فى ندبها على القول يجوز التعدد خروجا عن الخلاف اه وفى شرح الباقانى هو الصحيح وبالجملة فقد ثبت انه ينبغى الاتيان بهذه الاربع بعد الجمعة، لكن بقى الكلام فى تحقيق انه واجب او مندوب؟ قال المقدسى. ذكر ابن الشحنة عن جده التصريح بالندب، وبحث فيه بانه ينبغى ان يكون عند مجرد التوهم، اما عند قيام الشك والاشتباه فى صحة الجمعة فالظاهر الوجوب، ونقل عن شيخه ابن الهمام مايفيده. (رد المختار- شامى جص১৪৬- النهر- شرح الباقانى، منحة الخالق جص ১৪৩)
অর্থঃ- “‘আন্ নহরুল্ ফায়িক”-এ উল্লেখ আছে, একই শহরে একাধিক জুমুয়া জায়েয একথা স্বীকার করলেও ইখতিলাফী মাসয়ালায় সন্দেহ দূর করার জন্য আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া যে মুস্তাহাব হবে, এতে সন্দেহ করা উচিৎ নয়। শরহুল্ বাক্বানীতে লিখিত আছে, এটাই ছহীহ্ মত। মূলকথা এই যে, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়াই উচিত। কিন্তু এখন বিবেচনার বিষয় হচ্ছে যে, আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র ওয়াজিব না মুস্তাহাব?
 (সমস্যার সমাধানে) মুকাদ্দাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, ইবনে শিহনা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দাদা হতে তা (আখিরী যোহ্র) মুস্তাহাব হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন যে, মনের সংশয়-দুশ্চিন্তা নিবারণের জন্য (আখিরী যোহ্র) পড়া মুস্তাহাব হবে। তবে জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে অধিক সন্দেহ হলে (অর্থাৎ শহর বা অন্যান্য শর্তের প্রতি সন্দেহ হলে) ফতওয়াগ্রাহ্যমতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া ওয়াজিব হবে। অতঃপর তিনি তাঁর শাইখ আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে আখিরী যোহ্র ওয়াজিব হওয়ার মত প্রকাশ করেছেন।
            (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, আন্ নহরুল্ ফায়িক, শরহুল্ বাক্বানী, মিনহাতুল খালিক্ব ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহ্র তত্ত্ব ২২ পৃষ্ঠা)
            উল্লিখিত ইবারত থেকে প্রমাণিত হলো যে, ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতে ক্ষেত্র বিশেষে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহর পড়া ওয়াজিব। অর্থাৎ যে স্থানে জুমুয়া জায়েয বা ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে প্রবল সন্দেহ রয়েছে, সেখানে আখিরী যোহ্রপড়া ওয়াজিব। আর যেস্থানে সন্দেহ নেই, (তবে মতভেদ থাকায়) সেখানে আখিরী যোহ্রপড়া মুস্তাহাব, মুস্তাহসান, আওলা ও আফযল, জায়েয তো অবশ্যই।
            নিম্নে বিশ্ববিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর, হাদীস শরীফের শরাহ্, ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাবসমূহ থেকে পর্যায়ক্রমে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রসম্পর্কিত দলীল-আদিল্লা সমূহ উল্লেখ করা হলো-
আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র
সম্পর্কে বিশ্ব বিখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাব সমূহের বর্ণনা
[৯৮-১০৩]
وذكر فى النهر انه لاينبغى التردد فى ندبها على القول يجوز التعدد خروجا عن الخلاف اه وفى شرح الباقانى هو الصجيح وبالجمعة فقد ثبت انه ينبغى الاتيان بهذه الاربع بعد الجمعة، لكن بقى الكلام فى تحقيق انه واجب اومندوب؟ قال المقدسى. ذكر ابن الشحنه عن جده النصريح بالندب، وبجث فيه بانه ينبغى ان يكون عندمجرد التوهم، اما عند قيام الشك والاشتباه فى صحة الجمعة فالظاهر الوجوب، ونقل عن شيخه ابن الهمام مايفيده. (رد المحتارشامى جص১৪৬- النهر- شرح الباقانىمنحة الخالق جص ১৪৩)
অর্থঃ- আন্ নহরুল ফায়িকএ উল্লেখ আছে, একই শহরে একাধিক জুমুয়া জায়েয একথা স্বীকার করলেও ইখতিলাফী মাসয়ালায় সন্দেহ দূর করার জন্য আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া যে মুস্তাহাব হবে, এতে সন্দেহ করা উচিৎ নয়। শরহুল বাক্বানীতে লিখিত আছে, ইহাই ছহীহ্ মত। মূলকথা এই যে, উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়াই উচিৎ। কিন্তু এখন বিবেচনার বিষয় হচ্ছে যে, আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র ওয়াজিব না মুস্তাহাব? (সমস্যার সমাধানে) মুকাদ্দাসী বলেছেন, ইবনে শিহনা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দাদা হতে উহা(আখিরী যোহ্র) মুস্তাহাব হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন যে, মনের সংশয়-দুশ্চিন্তা নিবারণের জন্য (আখিরী যেহ্র) পড়া মুস্তাহাব হবে। তবে জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে অধিক সন্দেহ হলে (অর্থাৎ শহর বা অন্যান্য শর্তের প্রতি সন্দেহ হলে) ফতওয়া গ্রাহ্য মতে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া ওয়াজিব হবে। অতঃপর তিনি তাঁর শাইখ আল্লামা ইবনে হুমাম রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে আখিরী যোহ্র ওয়াজিব হওয়ার মত প্রকাশ করেনে।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, আন্ নহরুল ফায়িক, শরহুল বাকানী, মিনহাতুল্ খালিক ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২২ পৃষ্ঠা)
            উল্লিখিত ইবারত থেকে প্রমাণিত হয় যে, একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ থাকার কারণে ইহ্তিয়াতান চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রপড়া মুস্তাহাব, মুস্তাহসান, আওলা বা উত্তম।
[১০৪-১০৬]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়তে হবে কি না? ‘শামীকিতাবে পড়া জায়েয হওয়া কেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। বলা হয়, ঘরের মধ্যে চুপে চুপে পড়ে নিবে। (এটা এজন্য যে, তাহলে মুর্খ লোকদের জুমুয়া ছেড়ে দেয়ার সুযোগ থাকবে না)। হযরত ওস্তাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, জুমুয়ার পরে জামায়াত ছাড়াই চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া মুস্তাহসান।” (শরহু বিক্বায়া উর্দূ ১ম জিঃ ১৭২ পৃষ্ঠা, রদ্দুল মুহতার, শামী)
[১০৭]
(قوله بنية اخرظهر عليه) هو الاحسن لانه ان لم تجز الجمعة فعليه الظهر وان اجزت كانت الاربع عن ظهر عليه فيسقط وان لم يكن عليه ظهر فنفل اه. (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح جص৩২৭)
অর্থঃ- “(মারাকিউল ফালাহ্ গ্রন্থকারের উক্তিঃ আখিরী যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়া) উহা সর্বোত্তম বা মুস্তাহসান। যদি জুমুয়া জায়েয না হয়, তবে যুহর আদায় হয়ে যাবে। আর যদি জুমুয়া জায়েয হয়, তাহলে তার পূর্বেকার যোহ্রের কাযা হবে। যদি যোহ্র কাযা না থাকে, তবে উক্ত চার রাকায়াত নফলে পরিণত হবে।” (হাশিয়াতুত্ ত্বহতাবী আলা মারাকিইল্ ফালাহ্ ১ম জিঃ ৩২৭ পৃষ্ঠা)
[১০৮-১০৯]
وكذا اذا تعددت الحمعة وشك فى ان جمعته سايقة اولا ينبغى ان يصلى ماقلنا. (فتح القدير جص২৫)
অর্থঃ- একই শহরে একাধিক মসজিদ থাকার কারণে যদি কেহ সন্দেহ করে যে, তার মসজিদে সর্বপ্রথম নামায হল (অথবা পরে হল)। এরূপ অবস্থায় চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র নামায পড়া উচিত হবে।” (ফতহুল ক্বদীর ২য় জিঃ ২৫ পৃষ্ঠা, জুমার অকাট্য দলীল ২৫ পৃষ্ঠা)
[১১০-১১১]
قال البرهان الحلبى الفعل هو الاحتياط لان الخلاف فيه فوى لانها لم تكن تصلى فى زمن السلف الا فى موضع واحد من المصر وكون الصحيح جواز التعدد للضرورة لايمنع شرعية الاحتياط. (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح جص৩২৭)
অর্থঃ- হযরত বুরহান হালাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আখিরী যোহ্র পড়াই ইহ্তিয়াত। কেননা (জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে) অনেক মতানৈক্য বিদ্যমান আছে। কেননা সলফে ছালিহীন গণের যুগে এক শহরে একাধিক স্থানে (জুমুয়ার) নামায পড়া হত না, বরং এক স্থানেই নামায পড়া হত। যদিও একাধিক স্থানে জুমুয়া কায়িম হওয়ার মত ছহীহ্ বলা হয়েছে। কেননা শরীয়তে ইহ্তিয়াত করতে নিষেধ করা হয় নাই। অর্থাৎ শরীয়তে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য আখিরী যোহ্র পড়া উত্তম-আওলা।” (হাশিয়াতুত ত্বহতাবী আলা মারাকিইল ফালাহ্ ১ম জিঃ ৩২৭ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহ্র তত্ত্ব ২৭ পৃষ্ঠা)
[১১২-১১৬]
فى شرح المنية الاولى هوالاحتياط الان الخلاف فى جواز التعدد وعدمه قوى قوى وكون الصحيح الجواز للضرورة للفتوى لايمنع شرعية الاحتياط للتقوى. (رد المحتار، شامى جص১৪৫- شرح المنية)
অর্থঃ- শরহুল মুনিয়াহ্এর মধ্যে লিখিত আছে যে, ইহ্তিয়াতের জন্য চার রাকায়াত আখিরী যোহ্রপড়া আওলা বা উত্তম। কেননা, একই শহরে একাধিক স্থানে জুমুয়ার নামায জায়েয হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। যদিও দরকার বিশেষে একাধিক জুমুয়া জায়েয বলা হয়েছে। তারপরেও তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত্ করা অর্থাৎ আখিরী যোহ্র পড়ায় শরীয়তে কোন প্রকার নিষেধ নাই।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৫ পৃষ্ঠা, শরহুল্ মুনিয়াহ্, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২২ পৃষ্ঠা, জুমার অকাট্য দলীল ২৭ পৃষ্ঠা)
[১১৭-১৩৬]
قلت على انه لوسلم ضعفه فالخروج عن خلافيه اولى فكيف مع خلاف هؤلاء الائمة، وفى الحديث المتفق عليه (فمن اتقى الشبهات استبرأ لدينه وعرضه) ولذا قال بعضهم فيمن يقضى صلاة عمره مع انه لم يفته منها شئ لايكره لانه اخذ بالاحتياط، وذكر فى القنية انه احسن ان كان فى صلاته خلاف المجتهدين. (رد المحتار- شامى جص১৪৫، بخارى شريف- فتح البارىعمدة القارى- ارشاد السارى- مسلم شريف- مسلم بشرح النووى- شرح الابى والسنوسى- مشكوة شريف- مرقاة- شرح الطيبى- التعليق الصبيح- اللمعات- اشعة اللمعات- مظاهرحق- القنية منحة الخالق جص১৪৩)
অর্থঃ- “(শামী প্রনেতা বলেন) আমি বলি, একাধিক স্থানে জুমুয়া না জায়েয হওয়ার মত যঈফ (দূর্বল) হলেও যখন ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ বিষয়ে মতভেদ করেছেন, তখন এই মতভেদের কারণে আখিরী যোহ্র পড়া আওলা বা উত্তম। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ এই হাদীস শরীফের কিতাব গুলোতে আছে, “যে ব্যক্তি সন্দেহ থেকে বাঁচল, সে তার দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করল।এজন্য কতক ফক্বীহ্ আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেছেন, যে ব্যক্তির কোন নামায কাযা হয় নাই, এমন ব্যক্তি উমরী কাযাপড়লে তাতে মাকরূহ্ হবে না। কেননা, সে ইহা ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতার জন্য পড়েছে। কিনইয়াকিতাবে লিখা আছে, যদি কেউ এরূপভাবে নামায পড়ে যে, যাতে মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতভেদ রয়েছে, তবে উহাতে ইহ্তিয়াত করা আহসান বা উত্তম।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৫ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল বারী, উমদাতুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, মুসলিম শরীফ, মুসলিম বি শরহিন নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, মিশকাত শরীফ, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ, আল্ লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, কিনইয়াহ্, মিনহাতুল্ খালিক ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর ২২ তত্ত্ব ২২ পৃষ্ঠা, জুমার অকাট্য দলীল ২৮ পৃষ্ঠা)
[১৩৭-১৪২]
وذكر فى النهر انه لاينبغى التردد فى ندبها على القول بجواز التعدد خرجا عن الخلاف اه وفى شرح الباقانى هو الصحيح. (رد المحتار- شامى جص১৪৬- النهر شرح الباقانى- منخة الخالق جص ১৪৩)
অর্থঃ- নহরুল ফায়িক নামক কিতাবে উল্লেখ আছে, একাধিক জুমুয়া জায়েয একথাটা স্বীকার করলেও ইখতিলাফ যুক্ত মাসয়ালায় সন্দেহ দূর করার জন্য আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া যে মুস্তাহাব, এবিষয়ে সন্দেহ করা উচিৎ নয়। শরহুল বাক্বানীকিতাব ইহাই ছহীহ্ মত বলা হয়েছে।” (রদ্দূর মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, আন্ নহরুল ফায়িক, শরহুল বাক্বানী, মিনহাতুল খালিক ২য় জিঃ১৪৩ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২৩ পৃষ্ঠা)
[১৪৩-১৪৭]
قال المقدسى ذكر ابن الشحنة عن جده التصريح بالندب وبحث فيه بانه ينبغى ان يكون عند مجرد التوهمر. (رد المحتار شامى جص১৪৬- فتاوى فيض الرسول جص৪১৯نخة الخالق جص১৪৩)
অর্থঃ- মুক্বাদ্দাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেনঃ ইবনে শিহনা রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর দাদা হতে ইহা (আখিরী যোহ্র) মুস্তাহাব হওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন যে, মনের সংশয়-দুশ্চিন্তা নিবারনের জন্য আখিরী যোহ্র পড়া মুস্তাহাব হবে।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, ফাতাওয়ায়ে ফাইদুর রসূল ১ম জিঃ ৪১৯ পৃষ্ঠা, মিনহাতুল খালিক ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, আখেরে জোহার তত্ত্ব ২৩ পৃষ্ঠা)
[১৪৮-১৪৯]
لان الموضع وان كان مصرا بلاشبهة ولكن بقى الشبهة جواز التعدد وعدمه وان كان الصحيح والمعتمد جواز التعدد للضرورة للتوى هو لايمنع الشريعة الاحتياط للتقوى. (صغيرى)
অর্থঃ- ধরা যাক, কোন স্থান নিঃসন্দেহে শরয়ী শহর কিন্তু তিদাদে মসজিদ অর্থাৎ এক স্থানে একাধিক মসজিদে জুমুয়ার নামায জায়েয হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ অবশ্যই রয়ে যায়। ওজর বশতঃ ঐরূপ এক স্থানে একাধিক মসজিদে ফতওয়া মতে জুমুয়া জায়েয থাকলেও তাক্বওয়ার জন্য শরীয়তে ইহ্তিয়াত করতঃ চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়ে নিতে কোন নিষেধ (বাঁধা) নাই। (বরং পড়াই, আওলা, উত্তম বা মুস্তাহসান।) (ছগীরী, জুমার অকাট্য দলীল ২৯ পৃষ্ঠা)
[১৫০-১৫১]
وامامن حيث جواز التعدد وعدمه فلاولى هو الاحتياط لان الخلاف فوه قيى اذا الجمعة جامعه للجماعات ولم تكن فى زمان السلف تصلى الا فى موضع واحد من المصر وكون الصحيح جواز التعدد للضرورة للفتوى لايمنع شريعة الاحتياط للتقوى- (كبيرى)
অর্থঃ- এক শহরে একাধিক স্থানে জুমুয়া জায়েয হওয়ার বিষয়ে বিশেষ ইখতিলাফ থাকায় ইহ্তিয়াতের জন্য চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়াই আওলা বা উত্তম। একাধিক মসজিদের ব্যাপারে মতভেদের কারণ হলো, অনেক সংখ্যক লোক একস্থানে মিলিত হওয়া জুমুয়ার একটি প্রধান উদ্দেশ্য। যাতে বড় জামায়াতের ছাওয়াব থেকে মানুষ মাহরুম না হয়ে যায় এজন্যই সলফে ছালিহীন (উলামা-ই-মুতাকাদ্দিমীন) রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের জামানায় একই শহরে একাধিক স্থানে জুমুয়া পড়া হত না। একাধিক স্থানে জুমুয়া ছহীহ্ হওযার ব্যাপারে মতভেদ থাকায় শরীয়তে তাক্বওয়ার খাতিরে ইহ্তিয়াত বা সাবধানতার জন্য চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়তে নিষেধ নাই।” (বরং মুস্তহাব) (কবীরী, জুমার অকাট্য দলীল ২৭ পৃষ্ঠা)
[১৫২]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- যখন কোন স্থানে জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হওয়ার কোন শর্তে সন্দেহ দেখা দিবে যেমন, শহরের মধ্যে অথবা এক স্থানে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়েয না হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ থাকার কারণে। এমতাবস্থায় সেখানকার লোকদের জন্য জুমুয়ার ফরয ও সুন্নত আদায় করার পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়ে নেয়াই উত্তম। উহার নিয়াত এভাবে করবে যে,
نويت ان اصلى اخر ظهر اد ركت وقته ولم اصله بعد.
আমি আখিরী যোহ্র নামায পড়ার নিয়ত করছি, যার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এখনো তা আদায় করিনি।উক্ত নামাযের চার রাকায়াতেই সুরাতুল্ ফাতিহা-এর পর দ্বিতীয় আর একটি সূরা মিলানো জরুরী। আখিরী যোহ্র নামাযকে জরুরী মনে করে কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ করা যাবে না যে, জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হয় নাই। (ইলমুল্ ফিক্বহ ২য় জিঃ ২৮৮ পৃষ্ঠা)
[১৫৩]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- সুওয়ালঃ জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়া কিরূপ?
            জওয়াবঃ সর্বোত্তম বা মুস্তাহসান। তাহলে নিজের উপর থেকে নিশ্চিতভাবে ফরয আদায় হয়ে যাবে। মুহাক্ক্কি ফক্বীহ্ রহমতল্লাহি আলাইহিমগণ ইখতিলাফ হতে বাঁচার জন্য জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়ার আদেশ দেন। (রুকনুদ্দীন মুসাম্মা বিহী ইমাদুদ্দীন ১২৬ পৃষ্ঠা)
[১৫৪-১৫৫]
            কাইয়্যুমুয্ যামান, হযরত ইমামে রব্বানী, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি আখিরী যোহ্র নামায পড়তেন।” (মাকামাতে ইমাম রব্বানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ৯৫ পৃষ্টা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ১৮ পৃষ্ঠা)
[১৫৬]
(واخر ظهر) ندبامعذور- (الشرح الكبير جص৬০০)
অর্থঃ- “(আখিরী যোহ্র) পড়া মুস্তাহাব।” (আশ্ শরহুল্ কবীর ১ম জিঃ ৬০০ পৃষ্ঠা)
[১৫৭]
قوله واخر الظهر ندبا معزور. (حاشية الدسوقى جص৬০০)
অর্থঃ- আহমদ দারদী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উক্তিঃ আখিরী যোহ্র হচ্ছে মুস্তাহাব।” (হাশিয়াতুদ্ দুসূক্বী ১ম জিঃ ৬০০ পৃষ্ঠা)
[১৫৮]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “(একই শহরে একাধিক মসজিদে) জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ থাকার কারণে সে স্থানে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়া মুস্তাহাব। কিন্তু কোন স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে অধিক সন্দেহ হলে, সে অবস্থায় সেখানে আখিরী যোহ্র পড়া ওয়াজিব।” (ফাতাওয়ায়ে ফাইদুর রসূল ১ম জিঃ ৪১৯ পৃষ্ঠা)
[১৫৯]
وتستحب الظهر احتياطا ان تعددت الجمع لحاجة. (الفقه الاسلامى وادلته جص৩১১)
অর্থঃ- ইহ্তিয়াতের জন্য আখিরী যোহ্র পড়া মুস্তাহাব হবে। এই শর্তে যে, যদি একই স্থানে একাধিক জুমুয়ার প্রয়োজন হয়।” (বাস্তবিক একাধিক জুমুয়ায় নামাযও পড়া হয়।” (আল্ ফিকহুল্ ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ ২য় জিঃ ৩১১ পৃষ্ঠা)
[১৬০]
اما اذا شك فى ان غيره سبقه فايندب له ان يصلى اربع ركعات بنية اخرظهر فقط. (كتاب الفقه على المذاهب الاربعة جص৩৮৬)
অর্থঃ- একইস্থানে একাধিক জায়গায় জুমুয়ার নামায কোন মসজিদে আগে বা পরে হলো এ ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দিলে, তখন (জুমুয়ার নামাযের পর) আখিরী যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়া মুস্তাহাব।” (কিতাবুল্ ফিক্বহি আলাল্ মাযাহিবিল্ আরবায়াহ্ ১ম জিঃ ৩৮৬ পৃষ্ঠা)
[১৬১]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- “(দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে নয়, বরং) একাধিক মসজিদের দ্বিতীয় মসজিদে জুমুয়ার নামায আগে হওয়ার বিষয়ে সন্দেহ দেখা দিলে, আখিরী যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়া (ওয়াজিব নয় বরং ছেরেফ) মুস্তাহাব। (কিতাবুল্ ফিকহি আলাল্ মায়াহিবিল্ আরবায়াহ্ উর্দূ১ম জিঃ ৬১৮ পৃষ্ঠা)
            উপরোক্ত অসংখ্য দলীল-আদিল্লাহ্ ভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে, ১। যদি কোন শহরে (স্থানে) জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ক্ষেত্রে সন্দেহ হয় অথবা কোন স্থান শরয়ী শহর কিনা? এবিষয়ে প্রবল সন্দেহ হয়, আর এ অবস্থায় এমন স্থানে জুমুয়ার নামায পড়া হলে, জুমুয়ার ফরয আদায়ের পর ইহ্তিয়াতের জন্য চার রাকয়াত আখিরী যোহ্র পড়া ওয়াজিব। ২। আর কোন স্থান নিসন্দেহে শরয়ী শহর, কিন্তু তাতে একাধিক মসজিদে জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মধ্যে ইখতিলাফ থাকায় ইহ্তিয়াতের জন্য জুমুয়ার নামাযের পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়া মুস্তাহসান, মুস্তাহাব, আওলা বা উত্তম। যদিও একাধিক মসজিদে জুমার নামায জায়েয হওয়ার বিষয়টিই প্রাধান্যপ্রাপ্ত ও গ্রহণযোগ্য মত।
আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিযাতুয্ যোহ্র
এর ব্যাপারে বিরুদ্ধবাদীদের বিরূপ
মন্তব্যের দলীল ভিত্তিক জাওয়াব
            বিরুদ্ধবাদীরা তাদের কিতাবে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র নিয়ে বিরুপ মন্তব্য যেমন মাকরূহ, বিদ্য়াত ও না পড়াই ভাল ইত্যাদি বলে অনেক মত পেশ করেছে। এর কারণ হলোঃ আল্ বাহরুর রাইক, দুররুল্ মুখতার ও মারাকিউল ফালাহ্ ইত্যাদি কিতাবে ফাসাদ ও খারাবির আশঙ্কায় উহা না পড়াই উত্তম বলা হয়েছে।কিন্তু এ সমস্ত মুতাবার কিতাবের ব্যাখ্যায় অন্যান্য মুতাবার হানাফী কিতাবে তাদের উক্তির সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করে  উহা পড়াই আওলা বা উত্তম ফতওয়া দেয়া হয়েছে, সে বিষয়টি বিরুদ্ধেবাদীরা দ্বীনের মধ্যে ফিৎনা ছড়ানোর ঘৃনিত চেষ্টায় এড়িয়ে গিয়েছে। নিম্নে আল্ বাহর্রু রাইক, দুররুল মুখতার ও মারাকিউল ফালাহ্ কিতাব সমূহের ইবারত তার সঠিক ব্যাখ্যায় বিশ্ব বিখ্যাত নির্ভরযোগ্য কিতাব সমূহের ভাষ্য তুলে ধরা হলো-
আল্ বাহর্রু রাইককিতাবের লিখকের উক্তি
[১৬২]
انى افتيت مرارا بعدم صلاتها خوفا على اعتقاد الجهلة بانها فرض وان الجمعة ليست بفرض وسنوضحه من بعد ان شاء الله تعالى- (البحر الرائق شرح كنز الدقائق جص১৩৯)
অর্থঃ- আল্ বাহর্রু রাইকপ্রণেতা আল্লামা যইনুদ্দীন হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আমি আখিরী যোহ্র না পড়তে অনেক বার ফতওয়া দিয়েছি এই ভয়ে যে, যেহেতু জাহিল বা মুর্খ মানুষেরা উহাকে ফরয ইতিকাদ (বিশ্বাস) করে এবং একারণে একাধিক মসজিদে জুমুয়ার নামায ফরয নয় এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে।” (আল্ বাহর্রু রাইক শরহু কানযুদ্ দাক্বাইক ২য় জিঃ ১৩৯ পৃষ্ঠা)
আল্ বাহরুর রাইক লিখকের
উক্তির বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা
[১৬৩-১৯০]
وقال فى البحر : انه لا احتياط فى فعلها ....... اقول وفيه نظر بل هو الاحتياط بمعنى الخروج عن العهدة بيقين لان جواز التعدد وان كان ارجح واقوى دليلا، لكن فيه شبهة قوية لان خلافه مروى عن ابى حنيفة ايضا، واختار الطحاوى والتمرنا شى وصاحب المختار، وجعله العتابى الاظهر وهو مذهب الشافعى والمشهور عن مالك واحدى الروايتين عن احمد كما ذكره المقدسى فى رسالته (نور الشمعة فى ظهر الجمعة) بل قال السبكى من الشافعية انه قول اكثر العلماء ولا يحفظ عن صحابى ولا تابعى تجويز تعدد ها اه وقد علمت قول البد ائع انه ظاهر الرواية- وفى شرح المنية عن جوامع الفقه انه اظهر الروايتين عن الا مام قال فى النهر وفى الحاوى القدسى وعليه الفتوى- وفى التكملة للرازى وبه ناخذ اه فهو حينند قول معتمد فى المذهب لاقول ضعيف ولذا قال فى شرح المنية الاولى هو الاحتياط لان الخلاف فى جواز التعدد وعدمه قوى وكون الصحيح الجواز للضرورة للفتوى لايمنع شرعية الاحتياط للتقوى اه.
قلت: على انه لو سلم ضعفه فالخروج عن خلافه اولى فكيف مع خلاف هؤلاء الئمة، وفى الحديت المتفق عليه فمن اتقى الشبهات استبرا لدينه وعرضه ولذا قال بعضهم فيمن يقضى صلاة عمره مع انه لم يفته منها شئ لايكره لانه اخذ الاحتياط، وذكر فى القنية انه احسن ان كان فى صلاته خلاف المجتهدين- ويكفينا خلاف من مر- (رد المحتار- شامى جص১৪৫- البحر الرائق- در المختار- نور الشمعة- البدائع الصنائع- شرح المنية- جوامع الفقه- جوامع الفقه- النهر- الحاوى القدسى- التكملة للراوى- بخارى شريف جص১৩- فتح البارى عمدة القارى- ارشاد السارى- مسلم شريف جص২৮ مسلم بشرح النووى- شرح الابى والسنو سى- مشكوة شريف ص২৪১- مرقاة- شرح الطيبى- التعليق الصبيح- اللمعات- اشعة اللمعات- مظاهرحق- القنيةمنحة الخالق جص১৪৩)
অর্থঃ- শামীপ্রনেতা বলেছেন, ‘র্দুরুল মুখতারকিতাবে আল্ বাহর্রু রাইককিতাব থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয়ই আখিরী যোহ্র না পড়াই ইহ্তিয়াত্। ........
            (শামী প্রণেতা আল্লামা ইবনে আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) আমি বলি; দুররুল্ মুখতার প্রণেতার মত যুক্তি সম্মত নয়, বরং আখিরী যোহ্র পড়াই ইহ্তিয়াত্ অর্থাৎ আখিরী যোহ্র পড়লে নিঃসন্দেহে ওয়াক্তিয়া ফরয আদায় হবে। কেননা এক শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়েয হওয়া প্রাধান্য প্রাপ্ত ও শক্তিশালী দলীল দ্বারা প্রামাণিত হলেও উহাতে গুরুতর ইখতিলাফ থাকে, কারণ ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমুতল্লাহি আলাইহি-এর একব্যবস্থা মতে এক শহরে একধিক মসজিদে জুময়া জায়েয নয়। ইমাম তাহাবী, তামারতাশী ও মুখতার প্রনেতা এই মতকেই পছন্দ করেছেন। ইতাবী এই মতকে আযহার (বেশী যুক্তিযুক্ত) বলেছেন। ইহা ইমাম শাফিঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি -এর মত, ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মশহুর (প্রসিদ্ধ) মত এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল।রাহি আলাইহি-এর এক রিওয়ায়েত। ইহা আল্লামা মুকাদ্দাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর নূরুশ্ শাময়াহ্নামক কিতাবের জুমুয়ার বাবে (অধ্যায়ে) বর্ণনা করেছেন। বরং ইমাম সুবকী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি শাফিঈ মাযহাবের অন্তর্ভূক্ত তিনি বলেছেন, ইহাই আকছার বা অধিকাংশ উলামা রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মত। কোন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং তাবিঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে এক শহরে একাধিক জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে ছহীহ্ প্রমাণ পাওয়া যায় না। ইতি পূর্বে তুমি জানতে পেরেছ যে, ‘আল্ বাদাইউছ্ ছনাই কিতাবে এই মতকে যাহিরে রিওয়ায়েত অর্থাৎ হানাফী মাযহাবে ফতওয়া গ্রাহ্য মত বলা হয়েছে। শরহুল্ মুনিয়াকিতাবে জাওয়ামিউল্ ফিক্হকিতাব থেকে বর্ণিত আছে যে, ইহাই ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমুতল্লাহি আলাইহি-এর ফতওয়াগ্রাহ্য মত। আন্ নহরুল্ ফাইক-এর লিখক আন্ নহরুল ফাইক-এ লিখেন, ‘আল্ হাবীল্ কুদসীএবং আত্ তাকমালাতু লিররাযীকিতাবে ইহা ফতওয়া গ্রাহ্য মত বলা হয়েছে। এখন প্রমাণিত হলো যে, এক শহরে একাধিক জুমুয়া জায়েয না হওয়ার ব্যাপারটি যঈফ (দূর্বল) মত নয়, বরং হানাফী মাযহাবে ফতওয়া গ্রাহ্য মত। শরহুল্ মুনিয়াহএর মধ্যে লিখিত আছে যে, ইহ্তিয়াতের জন্য চার রাকায়াত আখিরী যোহ্রপড়া আওলা বা উত্তম। কেননা, একই শহরে একাধিক স্থানে জুমুয়ার নামায জায়েয হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। যদিও দরকার বিশেষে একাধিক জুমুয়া জায়েয বলা হয়েছে। তারপরেও তাক্বওয়ার জন্য ইহ্তিয়াত করা অর্থাৎ আখিরী যোহ্র পড়ায় শরীয়তে কোন প্রকার নিষেধ  নাই।
            (শামী প্রনেতা বলেন,) আমি বলিঃ একাধিক স্থানে জুমুয়া নাজায়েয হওয়ার মত যঈফ (দূর্ভল) হলেও যখন ইমাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ এ বিষয়ে মতভেদ করেছেন, তখন এই মতভেদের কারণে আখিরী যোহ্র পড়া আওলা বা উত্তম। বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ এই হাদীস শরীফের কিতাব গুলিতে আছে, “যে ব্যক্তি সন্দেহ থেকে বাঁচল, সে তার দ্বীন ও সম্মান রক্ষা করল।এজন্য কতক ফক্বীহ, আলিম বলেছেন, যে ব্যক্তির কোন নামায কাযা হয় নাই, এমন ব্যক্তি উমরী কাযাপড়লে তাতে মাকরূহ হবে না। কেননা, সে ইহা ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতার জন্য পড়েছে। কিনইয়াকিতাবে লিখিত আছে, যদি কেউ এরূপভাবে নামায পড়ে যে, যাতে মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের মতভেদ রয়েছে, তবে উহাতে ইহ্তিয়াত্ করা আহসান বা উত্তম। উপরোল্লিখিত ইমাম, মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণের ইখতিলাফ বা মতভেদের কারণেই আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র চার রাকায়াত নামায পড়া যথেষ্ট হবে।” (রদ্দুল্ মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৫ পৃষ্ঠা, আল্ বাহর্রু রাইক, দুররুল্ মুখতার, আল্ বাদাইউছ্ ছনাই, শরহুল্ মুনিয়াহ, জাওয়ামিউল ফিক্বহ, আন্ নাহরুল ফাইক, আল্ হাবীল্ কুদসী, আত্ তাকমালাতু লিররাযী, বুখারী শরীফ ১ম জিঃ ১৩ পৃষ্ঠা, ফতহুল বারী, উমদাতুল কারী, ইরশাদুস্ সারী, মুসলিম শরীফ ২য় জিঃ ২৮ পৃষ্টা, মুসলিম বিশরহিন নববী, শরহুল উবাই ওয়াস্ সিনূসী, মিশকাত শরীফ ২৪১ পৃষ্ঠা, মিরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তালীকুছ ছবীহ্, আল লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, আল্ কিনইয়া, মিনহাতুল খালিক ২য় জিঃ ১৪৩ পৃষ্ঠা, আখেরে জোহর তত্ত্ব ২১, ২২ পৃষ্ঠা, জুমার অকাট্য দলীল ২৭, ২৮ পৃষ্ঠা)
            উপরোক্ত ইবারতে আল বাহরুর রাইক ও দুররুল মুখতারকিতাবের প্রতিবাদে আল্লামা শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র নামায পড়াই ইহ্তিয়াত্ বলে যুক্তিযুক্ত মত দ্বারা সাবস্ত করেছেন।
[১৯১]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- সন্দেহের কারণে (অর্থাৎ এক শহরে একাধিক জায়গায় জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে মতবিরোধ হওয়ার কারণে) জুমুয়ার সুন্নত সমূহ পড়ার পর আখিরী যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়বে। ....... যদিও আল্ বাহরুর রাইকের লিখক মুর্খ লোকদের জুমুয়ার নামায ফরয না হওয়ার আক্বীদাহ্ পোষণ করার ভয়ে উক্ত চার রাকায়াত না পড়ার ফতওয়া দেন। কিন্তু উক্ত চার রাকায়াত অর্থাৎ আখিরী যোহ্র পড়ে নেয়াই ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা। তাহলে নিশ্চিতভাবে নিজের উপর থেকে ফরয আদায় হয়ে যাবে। কেননা, জুমুয়া যদিও মজবুত বর্ণনা মতে একের অধিক স্থানে জায়েয হওয়ার পক্ষে ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর মতও রয়েছে। (সুতরাং উক্ত মতবিরোধের সন্দেহ থেকে বাঁচার জন্য চার রাকায়াত ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র পড়ে নেয়াই উত্তম)। (গায়াতুল্ আউতার ১ম জিঃ ৩৭১ পৃষ্ঠা)
[১৯৩]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- যখন কোন স্থানে জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হওয়ার কোন শর্তে সন্দেহ দেখা দিবে যেমন, শহরের মধ্যে অথবা একস্থানে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়েয না হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ থাকার কারণে। এমতাবস্থায় সেখানকার লোকদের জন্য জুমুয়ার ফরয ও সুন্নত আদায় করার পর চার রাকায়াত নামায ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র এর নিয়তে পড়ে নেয়াই উত্তম। ......... তবে এই নামাযকে জরুরী মনে করে কোন প্রকার সন্দেহ পোষণ করা যাবেনা যে, জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হয় নাই। এজন্যই বাহরুর রাইকপ্রনেতা মুর্খ লোকদের জুমুয়ার নামায ফরয না হওয়ার আক্বীদাহ্ পোষণ করার ভয়ে উক্ত চার রাকায়াত না পড়ার ফতওয়া দেন। এজন্য যে, যাতে জাহিল বা মুর্খ লোকেরা এই খারাবী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকে। (অর্থাৎ মূলতঃ বাহরুর রাইকপ্রনেতা মুর্খ লোকদের আক্বীদাহ্ খারাপ হওয়ার দিকে দৃষ্টি রেখে উহা না পড়ার ফতওয়া দিয়েছেন, তাহলে বুঝা যাচ্ছে আক্বীদাহ্ শুদ্ধ রেখে পড়তে কোন বাঁধা নাই। ইহাই উনি বলেছেন।) (ইলমুল্ ফিক্বহ্ ২য় জিঃ ২৮৮ পৃষ্ঠা, আল্ বাহরুর রাইক)
[১৯৪-১৯৫]
فما فى البحر انهم افتوا باداء الاربع بعد الجمعة. (الى قوله) بعيد عن مثله- (نفع المفتى)
অর্থঃ- আল্ বাহরুর রাইকপ্রনেতা যে আখিরী যোহ্র পড়তে নিষেধ করেছেন, এরকম যুক্তি ও দলীল-প্রমাণ বিরুদ্ধমত পেশ করা তার মত একজন বিশিষ্ট আলিমের অনুচিত হয়েছে।” (নাফউল মুফতী, আখেরে জোহর তত্ত্ব ২৬ পৃষ্ঠা)
[১৯৬]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- দুরুল মুখতার ও বাহরুর রাইকপ্রনেতা বলেন, কেউ কেউ আখিরী যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়েন। আবার কেউ, জুমুয়ার পরে চার রাকায়াত নামায নাই বলে থাকেন। এই ভয়ে যে, যাতে সাধারণ মানুষ জুমুয়া ফরয না হওয়ার ব্যাপারে ইতিকাদ না করে।” (নাফ্উল মুফতী ঊর্দূ২৯২, ২৯৩ পৃষ্ঠা)
মারাকিউল ফালাহ্কিতাবের
লিখকের উক্তি
[১৮৫]
ليس الاحتياط فى فعلها لان الاحتياط هو العمل باقوى الدليلين واقواهما اطلاق جواز تعدد الجمعة وبفعل الاربع مفسدة اعتقاد الجهلة عدم فرض الجمعة او تعدد المفروض فى وقتها ولايفتى بالاربع الا للخواص. (مراقى الفلاح شرح نور الايضاح جص৩২৭)
অর্থঃ- ইহ্তিয়াত বা সাবধানতা ফেল (কাজ)-এর মধ্যে নয়। কেননা ইহ্তিয়াত হচ্ছে, আমলে (নিয়তে) যা দলীলাইন (একাধিক মসজিদের সম্পর্কে ইখতিলাফী দুটি মত)-এর উপর ভিত্তি করে। উক্ত দুমতের উত্তম হচ্ছে, একাধিক মসজিদে জুমুয়া পড়া জায়িয। ফেল হিসেবে আখিরী যোহ্র পড়া ফিতনা-ফাসাদের কারণ, জাহিল মুর্খ লোকদের জুমুয়ার ফরয আদায় শুদ্ধ না হওয়ার ব্যাপারে ইতিকাদ (বিশ্বাস) থাকায় অথবা একই সময় একই স্থানে একাধিক মসজিদে ফরয শুদ্ধ নয় এই ইতিকাদ (বিশ্বাস) থাকায়। তবে তিনি (নুরুল ইযাহএর লিখক) চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়ার হুকুম (ফতওয়া) খাছ (বিশেষ) লোক ছাড়া অন্য লোকদেরকে দেননা। (মারাকিউল্ ফালাহ্ শরহু নূরুল ঈযাহ্ ১ম জিঃ ৩২৭ পৃষ্ঠা)
মারাকিউল ফালাহ্কিতাবের
লিখকের উক্তির সঠিক ব্যাখ্যা
[১৯৮-২০০]
نعم ان أدى الى مفسده لاتفعل جهارا والكلام عند عدمها ولذا قال المقدسى نحن لانأمر بذلك امثال هذه العوام بل ندل عليه الخواص ولو بالنسية اليهم. (رد المحتار- شامى جص১৪৬)
অর্থঃ- যে সকল স্থানে আখিরী যোহ্র পড়ার দরুন সাধারণ লোক জুমুয়ার নামাযকে ফরয বলে না অথবা উহা পরিত্যাগ করে, সেখানে উহা প্রকাশ্য ভাবে (জামায়াত ও উচ্চ আওয়াজে) পড়বে না (বরং চুপে চুপে পড়বে)। আর আমরা যে আখেরী যোহ্র পড়তে বলেছি, উহা ঐসব স্থানের জন্য, যে স্থানের মানুষ জুমুয়া ফরয ইতিক্বাদ করে এবং জুমুয়া পড়েও থাকে। এজন্যই মুকাদ্দাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন, আমরা এরকম আম লোকদেরকে (যারা জুমুয়া ফরয বলে ইতিকাদ-বিশ্বাস করেনা) আখিরী যোহ্র পড়তে নির্দেশ করিনা বরং যাঁরা খাছ লোক (অর্থাৎ যাঁরা জুমুয়া ফরয জেনে আদায় করেন, কিন্তু নিসন্দেহে ফরয আদায় হওয়ার জন্যই আখিরী যোহ্র পড়েন) তাঁদেরকেই আমরা আখিরী যোহ্র পড়তে বলি। (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহ্র তত্ত্ব ২৯ পৃষ্ঠা)
[২০১-২০২]
(قوله وليس الاحتياط فى فعلها الخ) قال البرهان الحلبى الفعل هو الاحتياط لان الخلاف فيه قويى لانها لم تكن تصلى فى زمن السلف الا فى موضع واحد من المصر وكون الصحيح جواز القعدد للضرورة لايمنع شرعية الاحتياط. (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح جص৩২৭)
অর্থঃ- “(মারাকিউল ফালাহ্র উক্তিঃ ফেলের মধ্যে ইহ্তিয়াত নাই) হযরত বুরহান হালাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি  বলেন, আখিরী যোহ্র পড়াই ইহ্তিয়াত্। কেননা, (জুমুয়া জায়েয হওয়ার ব্যাপারে) অনেক মতানৈক্য বিদ্যমান আছে। কেননা, সলফে ছালিহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিমগনের যুগে এক শহরে একাধিক স্থানে (জুমুয়ার) নামায পড়া হতনা, বরং এক স্থানেই পড়াহত। যদিও একাধিক স্থানে জুমুয়া কায়িম হওয়ার মতকে ছহীহ্ বলা হয়েছে। কেননা, শরীয়তে ইহ্তিয়াত করতে নিষেধ করা হয় নাই। অর্থাৎ শরীয়তে ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য আখিরী যোহ্র পড়া উত্তম বা আওলা। (হাশিয়াতুত্ ত্বহত্বাবী আলা মারাকিইল ফালাহ্ ১ম জিঃ ৩২৭ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২৭ পৃষ্ঠা)
[২০৩-২০৪]
قال العلامة المقدسى بعد نقله مايفيد النهى عنها نقول انما نهى عنها اذا اديت بعد الجمعة بوصف الجماعة والاشتهار- (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح جص৩২৮)
অর্থঃ- আল্লামা মুকাদ্দাসী রহমুতল্লাহি আলাইহি বলেছেনঃ মারাকিউল ফালাহর লিখক আখিরী যোহ্র পড়তে নিষেধ করার কারণ এই যে, জামায়াত করে ও উচ্চ আওয়াজে তাকবীর পড়ে আখিরী যোহ্র আদায় করা অনুচিত (যেহেতু এতে করে সাধারণ মানুষের আক্বীদাহ্ খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে)।” (হাশিয়াতুত্ ত্বহত্বাবী আলা মারাকিইল ফালাহ্ ১ম জিঃ ৩২৮ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ২৭ পৃষ্ঠা)
[২০৫-২০৬]
ونحن لانقول به ولانفتى بفعلها اصلا بل ندل عليه الخواص الذين يحتاطون لامر دينهم ويتركون ما يريبهم الى تحصيل يقينهم. (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح جص৩২৮)
অর্থঃ- ঐসব খাছ-বিশেষ লোক দিগকে আমরা আখিরী যোহ্র পড়তে বলি, যারা দ্বীনের কাজে ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতা অবলম্বন করেন। আর নিশ্চিতভাবে (ইয়াক্বীনের সহিত) কার্য করার জন্য সন্দেহ-সংশয় ভঙ্গন করে কাজ করেন।” (হাশিয়াতুত্ ত্বহত্বাবী আলা মারাকিইল্ ফালাহ্ ১ম জিঃ ৩২৮ পৃষ্ঠা, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ৩০ পৃষ্ঠা)
            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আখিরী যোহ্র সম্পর্কিত বাহরুর রায়েক, মারাকিউল ফালাহ্, দুররুল মুখতারকিতাবের বক্তব্য সরাসরী গ্রহণযোগ্য নয় বরং ব্যাখ্যা সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য।
আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয্
যোহর এর নিয়ত
            প্রত্যেকটি ফরয, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ, সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ,,নফল, মুস্তাহাব সকল নামায বা ইবাদতেরই নিয়ত করাতে হয়, যা জরুরী।
            যেমনঃ হাদীস শরীফে রয়েছে,
انما الاعمال بالنيات. (بخارى شريف- مسلم شريف- مشكوة)
অর্থঃ প্রত্যেকটি আমল-(এর সওয়াব) নিয়তের উপর নির্ভরশীল। (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ) তাই আখিরী যোহর বা ইহতিয়াতুয্ যোহর ও সাবধানতার জন্য এক প্রকার নামায। যা ক্ষেত্র বিশেষে আদায় করা ওয়াজিব, আবার কখনো মুস্তাহাব, মুস্তাহসান। কিন্তু এর নিয়ত ফরয এর নিয়তে করতে হবে। যেহেতু ইহা অন্য একটি ফরয নামাযের উপর ইহতিয়াত করার জন্যই আদায় করা হয়। নিম্নে ইহার সঠিক নিয়তের আলোচনা করা হলো-
[২০৭-২১৪]
وينوى بها اخرفرض ادركت وقته ولم اؤد بعد. (التقسير المظهرى جص ২৯৩- تفسير ضياء. القران جص২৩৮- مرقاة جص২৭৪- البحر الرائق جص১৪২- منحة الخالق ةص১৪৩- فتح القدير جص২৫. رد المحتار- شامى جص১৪৬)
অর্থঃ  উহার (আখিরী যোহর) এর নিয়ত করবে اخر فرضআখিরু ফরযহিসেবে যে, আমি উহার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এরপর এখনো আদায় করি নাই। (আত তাফসীরুল মাযহারী ৯ম জিঃ ২৯৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে দ্বিয়াউল কুরআন ৫ম জিঃ ২৩৮ পৃষ্ঠা, আল বাহরুর রাইক ২য় জিঃ১৪২ পৃষ্ঠা, মিরকাত ৩য় জিঃ ২৭৪ পৃষ্ঠা, মিনহাতুল খালিক ২য় জিঃ ১৪৩ প্রষ্ঠা, ফতহুল ক্বদীর ২য় জিঃ ২৫ পৃষ্ঠা, রদ্দুল মুহ্তার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা)
            উপরোক্ত ইবারত থেকে বুঝা গেল, ফরযের নিয়ত করতে হবে। এখন প্রশ্ন থেকে যায় যে, কোন ফরয? এর উত্তর হচ্ছে ফরযটি হচ্ছে যোহ্র এর ফরয। যারই নিয়ত করতে হবে। কিতাবে এসেছে-
[২১৫-২১৬]
ينوى ظهر يومه او اخر ظهر عليه وهو الاحسن. (شرح النقاية جص২৯০- الفتاوى العالمكيرية جص১৪৫)
অর্থঃ নিয়ত করতে হবে সেই দিনের যোহ্র নামাযেরঅথবা اخرظهر عليهআখিরী যোহ্রএর। আর ইহাই উত্তম মত। (শরহুন্ নিকায়াহ ১ম জিঃ ২৯০ পৃষ্ঠা, আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়াহ্ ১ম জিঃ ১৪৫ পৃষ্ঠা)
[২১৭-২২০]
وينووا بها الظهر ....... كذا فى الكافى وهكذا فى المحيط (الفتاوى العالمكير ية جص১৪৫- مجمع الانهر جص১৬৭- الكافىالمحيط)
অর্থঃ (উক্ত চার রাকায়াত) যোহ্রের নামাযের নিয়তে করবে। অনুরুপ কাফী ও মুহীত কিতাবে আছে। (আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়াহ্ ১ম জিঃ ১৪৫ পৃষ্ঠা, মাজমাউল আনহুর ১ম জিঃ ১৬৭ পৃষ্ঠা, আল কাফী, আল মুহীত)
[২২১-২২৩]
ان يصلى اربع ركعات بنية اخر الظهر ادركت وقته ولم يسقط بعد عنى. (فتاوى عبد الحى (مجموعة) ص২২৩- رد المحتار- شامى جص১৪৬)
অর্থঃ আখিরী যোহ্রএর নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়বে। আমি যার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এর পর এখনো আদায় করিনি। (ফাতাওয়ায়ে আব্দুল হাই (মাজমূয়াহ্) ২২৩ পৃষ্ঠা, রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা ষ্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয় যে, যোহ্রের ফরযের নিয়তে চার রাকায়াত اخر ظهرআখিরী যোহ্র পড়তে হবে। কিন্তু পরিপূর্ণ নিয়তের বাক্যটি কি হবে, তা ষ্পষ্ট হয়ে উঠে নাই। নিম্নোক্ত দলীল আদিল্লার মাধ্যমে তা প্রমাণিত হবে যে, আখিরী যোহ্রের পরিপূর্ণ নিয়তের বাক্যটি কি আর যাকে এ নামাযের জন্য উত্তম নিয়ত বলা হয়েছে।
[২২৪-২২৮]
ثم اختلافوا فى نيتها قيل ينوى اخر ظهر عليه وهو الاحسن والاحوط ان يقول نويت اخر ظهر ادركت وقته ولم اصله بعد كذا فى القنية. (الفتاوى العالمكيرية جص১৪৫- شرح النقاية جص২৯০- رد المحتار- شامى جص১৪৬- القنية)
অর্থঃ উলামাই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম আখিরী যোহ্রের নিয়তে ইখতিলাফ করেছেন। কেউ বলেছেন তার উপর اخرظهرআখিরী যোহ্রএর নিয়ত করবে। আর উহাই উত্তম নিয়ত। ইহতিয়াতের নিয়ত করার জন্য বলবে যে, نويت اخرظهر ادركت وفته ولم اصله بعد
 অর্থাৎ আমি আখিরী যোহ্র,(চার রাকায়াত) নামাযের নিয়ত করছি, যার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এর পর এখনো তা আদায় করিনি।অনুরুপ আল্ কিন্ইয়ানামক কিতাবে আছে। (আল ফাতাওয়াল আলমগীরিয়াহ ১ম জিঃ ১৪৫ পৃষ্ঠা, শরহুন নিকায়াহ্ ১ম জিঃ ২৯০ পৃষ্ঠা, রদ্দুল ুমুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, আল্ কিন্ইয়া)
[২২৯-২৩০]
ثم اختلفوا فى نيتها فالاحسن والاحوط ان يقول اللهم انى اريد اخرظهر اردكت وقته ولم اصله بعد ..... كمافى المطلب. (مجمع الانهر جص১৬৮- المطلب)
অর্থঃ উলামাই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম আখিরী যোহ্রের নিয়তে ইখতিলাফ করেছেন। তবে উত্তম নিয়ত হল; ইহতিয়াতের নিয়ত করার জন্য বলবে যে,
اللهم انى اريد اخر ظهر ادركت وقته ولم اصله بعد.
অর্থাৎ আয় আল্লাহ পাক! আখিরী যোহ্র (চার রাকায়াত) নামাযের নিয়ত করছি, যার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এরপর এখনো তা আদায় করিনি। অনুরূপ আল মত্বলবনামক কিতাবে আছে। (মাজমাউল আনহুর ১ম জিঃ ১৬৮ পৃষ্ঠা, আল মত্বলব)
[২৩১]
اس كى نيت ........... نويت ان اصلى اخر ظهر ادركت وقته ولم اصله بعد. (علم الفقه جص২৮৮)
অর্থঃ আখিরী যোহ্রের নিয়ত এভাবে করবে,
نويت ان اصلى اخر ظهر ادركت وقته ولم اصله بعد
অর্থাৎ আমি আখিরী যোহ্র (চার রাকায়াত) নামায পড়ার নিয়ত করছি, যার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু এরপর এখনো তা আদায় করিনি। (ইলমুল ফিকহ ২য় জিঃ ২৮৮ পৃষ্ঠা)
মুল কথা হচ্ছে, উপরোক্ত নিয়তের তিনটি পদ্ধতির যে কোন একটি অনুযায়ী নিয়ত করলেই নিয়ত শুদ্ধ হবে এবং তাই উত্তম নিয়ত হিসেবে পরিগনিত হবে।
বাদাল জুমুয়ার পরে সুন্নাতুল্ ওয়াক্ত
এর পূর্বে চার রাকায়াত আখিরী
যোহ্র পড়াই ফতওয়াগ্রাহ্য মত
            ‘আখিরী যোহ্রনামায কখন পড়তে হবে এ বিষয়টি নিয়ে ইমাম-মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিমগন ইখতিলাফ করেছেন। কেউ জুমুয়ার নামাযের ফরয আদায়ের পূর্বে, কেউ জুমুয়ার নামাযের পরে বাদাল জুমুয়া আদায়ের পর, আবার কেউ সুন্নাতুল ওয়াক্ত আদায় করার পর পড়েছেন। তবে এর মধ্যে ফতওয়াগ্রাহ্য মুখতার মত হচ্ছে, জুমুয়ার ফরযের পর চার রাকায়াত সুন্নাতুল জুমুয়া (বাদাল জুমুয়া) এর পর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র নামায পড়া। যেমন তাফসীর ও ফিকাহ্র কিতাব সমূহে বর্ণিত আছে-
[২৩২-২৩৩]
ولهذا افترقوا فرقا مختلفا فقيل منهم من تركوا الجمعة اصلا وطائفة اكتفوا بها فقط- وبعضهم ادوا الظهر فى منز لهم ثم سعوا الى الجمعة واكثرهم راموا على ادائهما اولا علما منهم بانها من اكبر شعائر الاسلام والتزموا بعدها اداء الظهر لكثرة الشكوك فى شانها وغلبة الاوهام وان كان لايجوز الجمع بين الفرضين عند اهل الاسلام. (تفسير ات احمدية ص৪৮৮)
অর্থঃ (শরয়ী শহর অথবা কোন স্থানে জুমুয়ার নামায ছহীহ হওয়ার ব্যাপারে ইখতিলাফ) এ সমস্ত বিবিধ কারনে হানাফী আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগন কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে অল্প সংখ্যক জুমুয়া ত্যাগ করেছেন, কিছু লোক শুধু জুমুয়া পড়েন, কত লোক তাদের বাড়ীতে যোহ্র পড়ে এরপর জুমুয়া পড়তে যান। আর অধিকাংশ আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগন জুমুয়াকে শিয়ারুল ইসলাম বা ইসলামের বিশেষ শিয়ার ধারনায় সর্বদা প্রথমে জুমুয়া পড়েন। অতঃপর জুমুয়ার পর ইহতিয়াতুয্ যোহ্র পড়া লাযিম (ওয়াজিব) করে নেন। জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে অতিরিক্ত সন্দেহ-সংশয় থাকার কারনে। যদিও মুসলমানগনের নিকট দুই ফরয একত্রিত করে পড়া জায়েয নেই। (তাফসীরাতু আহমদিয়্যাহ্ ৪৭৭ পৃষ্ঠা, আখেরে- জোহর তত্ত্ব ২১,২২,২৩, পৃষ্ঠা)
আখিরী যোহ্র সুন্নাতুল ওয়াক্ত- এর পর পড়ার ব্যাপারে ফতওয়ায়ে তাতারখানিয়াহ্কিতাবে আছে যে,
[২৩৪]
وقال بعضهم فيصلى الجمعة اولا ثم يصلى السنة اربعا وركعتين ثم يصلى الظهر فان كانت الجمعة جائزة فهذا يكون نفلا، وان لم تكن الجمعة جائزة فهذا فرضه. (الفتاوى التاتار خانية جص৫৪)
অর্থঃ কোন কোন ফুকাহাই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম বলেন; প্রথমে দুরাকায়াত জুমুয়ার ফরয এরপর চার রাকায়াত সুন্নাতুল জুমুয়া (বাদাল জুমুয়া) তৎপর দুরাকায়াত সুন্নাতুল ওয়াক্ত পড়বে। অতঃপর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়বে। যদি জুমুয়া জায়েয হয়, তবে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র নফল হবে। আর যদি জুমুয়া জায়েয না হয় তবে আখিরী যোহ্র, তার জন্য ফরয আদায় হিসেবে পরিগনিত হবে। (আল ফাতাওয়াত্ তাতারখানিয়াহ্ ২য় জিঃ ৫৪ পৃষ্ঠা)
            উক্ত ইবারতে আখিরী যোহ্র সুন্নাতুল ওয়াক্তপড়ার পর পড়ার ব্যাপারে কিছু ফুকাহা-ই-কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম মতামত ব্যক্ত করছেন। ইহা শুধু আল ফাতাওয়াত্ তাতারখানিয়াহ্কিতাবেই একটি মত হিসেবে স্থান পেয়েছে। নির্ভরযোগ্য ও বিশ্ব বিখ্যাত অন্যান্য ফিকাহের কিতাবে এই মত কেউ গ্রহন করেন নাই। যদিও অন্যান্য দুএকটি কিতাবে ইহা উল্লেখ রয়েছে। তার পরেও এই মত গ্রহন যোগ্য হবেনা। কারণ এই মত যে,
আল ফাতাওয়াত্ তাতারখানিয়া কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কিতাবেরই আর একটু পরেই সুন্নাতুল ওয়াক্ত এর পূর্বে আখিরী যোহ্র পড়ার ব্যবস্থাকে ছহীহ্মুখতার বলে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে এবং অন্যান্য বিশ্ব সমাদৃত ফিকাহের কিতাবে একই ভাবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। সুন্নাতুল জুমুয়া তথা বাদাল জুমুয়া এরপর আখিরী যোহ্র তারপর সুন্নাতুল ওয়াক্ত পড়া যে ছহীহ্মুখতার মত এ বিষয়ে নিম্নে দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করা হলো-
[২৩৫-২৩৬]
وقال الحجة : ان يصلى السنة اربعا ثم الجمعة ثم ينوى اربعا سنة الجمعة ثم يصلى الظهر ثم ركعتين سنة الوقت، فهذا هو الصحيح المختار (الفتاوى التاتار خانية جص৫৪-৫৫- الحجة)
অর্থঃ আল্ হুজ্জাহ্কিতাবের মুছান্নিফ বলেন, (জুমুয়ার দিন) চার রাকায়াত সুন্নত (ক্ববলাল জুমুয়া) এরপর দুরাকায়াত জুমুয়ার ফরয নামায আদায় করবে। তৎপর চার রাকায়াত সুন্নাতুল জুমুয়া (বাদাল জুমুয়া) এর নিয়ত করে। অতঃপর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র এবং দুরাকায়াত সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায আদায় করবে। আর ইহাই ছহীহ্ (বিশুদ্ধ), নির্ভরযোগ্য মত। (আল্ ফাতাওয়াত্ তাতারখানিয়াহ্ ২য় জিঃ ৫৪, ৫৫ পৃষ্ঠা, আল হুজ্জাহ)
[২৩৭-২৩৯]
قال فى شرح المنية الصغير : والأولى ان يصلى بعد الجمعة سنتها ثم الاربع بهذه النية اى نية اخر الظهر ادركته ولم اصله ثم ركعتين سنة الوقت. (رد المحتار- شامى جص১৪৬- شرح المنية الصغير)
অর্থঃ শরহুল মুনিয়াতিছ ছগীরকিতাবের লিখক শরহুল মুনিয়াতিছ ছগীর কিতাবে বলেন, জুমুয়ার দিনের আওলা বা উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, জুমুয়ার ফরয আদায়ের পর উহার চার রাকায়াত সুন্নত (বাদাল জুমুয়া) অতঃপর আখিরী যোহ্রের নিয়ত, যার ওয়াক্ত পেয়েছি কিন্তু উহা এখনো আদায় করিনি। এই নিয়তে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র এরপর দুরাকায়াত সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায আদায় করা। (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৬ পৃষ্ঠা, শরহুল মুনিয়াতিছ ছগীর)
[২৪০]
وهل يصلى الركعات الاربع المذكورة قبل صلاة اربع ركعات سنة الجمعة او بعدها؟ الجواب : يصليها بعدها قاذا صلاها قبلها فقد خالف الأولى والامر فى ذلك سهل، وعلى هذا يطلب ممن يصلى الجمعة ان يصلى بعدها اربع ركعات سنة الجمعة ثم يصلى بعدها اربع ركعات بنية اخر ظهر، على الوجه المتقدم، ثم يصلى يعدها ركعتين سنة وقت الظهر. (كتاب الفقه على المذاهب الاربعة جص৩৮৭)
অর্থঃ সুওয়ালঃ উল্লিখিত চার রাকায়াত আখিরী যোহ্রনামায সুন্নাতুল জুমুয়া তথা বাদাল জুমুয়া এর পূর্বে পড়তে হবে না পরে পড়তে হবে? জওয়াবঃ উক্ত আখিরী যোহ্র নামায সুন্নাতুল জুমুয়া তথা বাদাল জুমুয়ার পরে পড়তে হবে। যদি উহা বাদাল জুমুয়ার পূর্বে পড়া হয়, তবে তা আওলা বা উত্তম মত ও নির্দেশের খিলাফ(বিপরীত) হবে। তাই যারা জুমুয়ার ফরয নামায পড়বে তারা যেন তারপর চার রাকায়াত সুন্নাতুল জুমুয়া (বাদাল জুমুয়া) অতঃপর আখিরী যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত নামায পড়ে। এরপর দুরাকায়াত যোহ্রের সুন্নাতুল ওয়াক্ত পড়ে নিবে। (কিতাবুল ফিকহ্ িআলাল মাযাহিবিল আরবায়াহ্ ১ম জিঃ ৩৮৭ পৃষ্ঠা)
[২৪১]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ সুওয়ালঃ উক্ত চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র চার রাকায়াত সুন্নাতুল জুমুয়া (বাদাল জুমুয়া)-এর পূর্বে না পরে পড়তে হবে? জাওয়াব হচ্ছেঃ চার রাকয়াত সুন্নাতুল জুমুয়ার পরে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়তে হবে। পূর্বে পড়া আওলা বা উত্তম (বেহতর) হবে না। আর  ইহাই নির্ভরযোগ্য কথা। তাই যারা জুমুয়ার ফরয নামায আদায় করবে তারা উহা আদায়ের পর প্রথমেই চার রাকায়াত সুন্নাতুল জুমুয়া বা বাদাল জুমুয়া আদায় করবে। তৎপর আখিরী যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত নামায অতপর দুরাকায়াত যোহ্রের সুন্নাতুল্ ওয়াক্ত পড়ে নিবে। (কিতাবুল ফিক্হি আলাল মাযাহিবিল আরবায়াহ (উর্দূ) ১ম জিঃ ৬১৮ পৃষ্ঠা)
[২৪২-২৪৫]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবের্
অর্থঃ ব্যাখ্যাকার এখানে তিনটি মত লিখেছেন, প্রথম মুহীত্বথেকে শুধূ চার রাকায়াত আখিরী যোহর নামায পড়ার জন্য ব্যবস্থা লিখেছেন। অতঃপর ফতওয়ায়ে হুজ্জাহ্থেকে নামায পড়ার ব্যবস্থা দশ রাকায়াত লিখেছেন। জুমুয়ার ফরয আদায়ের পর চার রাকায়াত সুন্নাতুল ওয়াক্ত (বাদাল জুমুয়া), অতঃপর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র, তৎপর দুরাকায়াত সুন্নাতুল ওয়াক্ত।
 মোট এই দশ রাকায়াত পড়াই ইহতিয়াত বা সাবধানতা। আর ইহাই ছহীহ ও মুখতার বা ফতওয়া গ্রাহ্যমত। (সিফরুস সায়াদাত ২১৩ পৃষ্ঠা, মুহীত্ব, ফাতাওয়াল হুজ্জাহ্, আখেরে-জোহর তত্ত্ব ৩৫ পৃষ্ঠা)
[২৪৬-২৪৭]
وحاصله انه يصلى بعد الجمعة عشر ركعات اربعا سنتها واربعا اخر ظهر وركعتين سنة الوقت، اى لاحتمال ان الفرض هو الظهر فتقع الركعتان سنته البعدية. (رد المحتار- شامى جص১৪৭)
অর্থঃ- আল্লামা ইবনু আবিদীন শামী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মূল বক্তব্য (উপসংহার) হচ্ছে এই যে, নিশ্চয়ই জুমুয়ার ফরয আদায়ের পর মোট দশ রাকায়াত নামায পড়বে। চার রাকায়াত উহার (অর্থাৎ জুমুযার) সুন্নত বা বাদাল জুমুয়া, এরপর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র অতপর দুরাকায়াত সুন্নাতুল্ ওয়াক্ত। অর্থাৎ এই কারণে যে, নিশ্চয়ই যোহ্রটিই ফরয আর তার পরেই উহার দুরাকায়াত সুন্নতের অবস্থান।” (রদ্দুল মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৭ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য, ফতওয়াগ্রাহ্য, বিশুদ্ধ, দলীল ভিত্তিক আলোচনা থেকে প্রমানীত হলো যে, জুমুয়ার ফরয আদায় করার পর চার রাকায়াত বাদাল জুমুয়া অতঃপর চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র অবশেষে দুরাকায়াত সুন্নাতুল ওয়াক্ত পড়াই ফতওয়াগ্রাহ্য মত। এর বিপরীত যেমন জুমুয়ার ফরয আদায়ের পূর্বে, সুন্নাতুল জুমুয়া (বাদাল জুমুয়া) আদায়ের পূর্বে অথবা সুন্নাতুল ওয়াক্ত আদায়ের পরে আখিরী যোহ্র পড়া ফতওয়াগ্রহ্য মতের খিলাফ হবে। মূল কথা হলো সুন্নাতুল জুমুয়া (বাদাল জুমুয়া) এর পরে এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত এর পূর্বে আখিরী যোহ্র পড়াই ইহতিয়াত বা সাবধানতা। আর ইহাই ছহীহ্, নির্ভরযোগ্য, গ্রহনযোগ্য, ফতওয়াগ্রাহ্য ও বিশুদ্ধ মত।
আখিরী যোহ্রনামাযের চার
রাকায়াতেই সূরা ফাতিহাএর
সহিত অন্য একটি সূরা মিলাতে হবে
            চার রাকায়াত বিশিষ্ট প্রত্যেক ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকায়াতে অন্য একটি সূরা মিলানো ওয়াজিব। কিন্তু সুন্নত নামাযের চার রাকায়াতেই সূরা মিলাতে হয়। এখন দেখা যাচ্ছে, ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র বা আখিরী যোহ্র ফরযের নিয়তে পড়তে হয়। কিন্তু চার রাকায়াতেই সূরা ফাতিহার সহিত অন্য একটি সূরা মিলানোর সার্থকতা কি? এর সমাধান হচ্ছেঃ যেহেতু স্থান বিশেষে আখিরী যোহ্র পড়া ওয়াজিব অথবা মুস্তাহাব হয়। যে স্থানে জুমুযা ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ দেখা দেয়, সে স্থানে জুমুয়ার পরে আখিরী যোহ্র পড়া ওয়াজিব। আর যে স্থান নিসন্দেহে শরয়ী শহর, কিন্তু একই শহরে একাধিক মসজিদে জুমুয়ার নামায ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থেকে যাওয়ায় সেখানে আখিরী যোহ্র নামায পড়া মুস্তাহাব, মুস্তাহাসান, আওলা বা উত্তম। উপরোক্ত সন্দেহের কারণে যদি জুমুয়া আদায় ছহীহ্ না হয় তাহলে চার রাকায়াত ফরয হিসেবে আদায় হবে। আর ফরয নামাযে তৃতীয় ও চতুর্থ রাকায়াতে সূরা মিলাতে অসুবিধা নাই। আর যদি জুমুয়া ছহীহ্ হয়, তা হলে উক্ত নামায নফল হবে। আর নফল নামাযের প্রত্যেক রাকায়াতেই সূরা মিলানো ওয়াজিব। এসমস্ত কারণে আখিরী যোহ্রের চার রাকায়াতেই সূরা মিলাতে হয়। নিম্নে এবিষয়ের উপর নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ্ পেশ করার হলো-
[২৪৮]
ثم اختلفوا فى القرائة فقيل يقرأ الفاتحة والسورة فى الاربع. (البحر الرائق شرح كنز الدقائق جص১৪২)
অর্থঃ- অতপর (আখিরী যোহ্র এর) কিরয়াত নিয়ে ইখতিলাফ হয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, ‘সূরাতুল্ ফাতিহাহ্এবং এরপর অন্য একটি সূরা চার রাকায়াতেই পড়তে হবে।” (আল্ বাহরুর রাইক শরহু কানযুদ্ দাক্বাইক ২য় জিঃ ১৪২ পৃষ্ঠা)
[২৪৯-২৫১]
وفى فتاوى (اهو) ينبغى ان يقوأ الفاتحة والسورة فى الاربع التى يصلى بعد الجمعة فى ديارنا كذا فى التاتار خانية. (الفتاوى العالمكيرية جص১৪৫- التاتار خانية- فتاوى اهو)
অর্থঃ- ফতওয়ায়ে আহুতে রয়েছেঃ আমাদের দেশ সমূহে বাদাল জুমায়া-এর পর যে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়া হয়, উহার চার রাকায়াতেই সূরাতুল ফাতিহাএর সাথে অন্য একটি সূরা পাঠ করা উচিৎ বা কর্তব্য। অনুরূপ, ‘আত্ তাতারখানিয়াহ্কিতাবে আছে। (আল্ ফাতাওয়াল্ আলমগীরিয়াহ্ ১ম জিঃ ১৪৫ পৃষ্ঠা, আত্ তাতারখানিয়াহ্, ফতওয়ায়ে আহু)
[২৫২]
উর্দূ কম্পোজ করতে হবে
অর্থঃ- উক্ত (আখিরী যোহ্র) নামাযের চার রাকায়াতেই সূরাতুল ফাতিহার পর অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়া জরুরী বা আবশ্যক (ওয়াজিব)।” (ইলমুল্ ফিক্বহ্ ২য় জিঃ ২৮৮ পৃষ্ঠা)
[২৫৩-২৫৪]
وينبغى ان يقرأ السورة مع الفاتحة فى هذه الاربع ان لم يكن عليه قضاء فان وقعت فرضا فالسورة لاتضر، وان وقعت نفلا فقرائة السورة واجبة اه اى واما اذا كان عليه قضاء فلايضم السورة لان هذه الاربع فرض على كل حال. (رد المحتار. شامى جص১৪৭)
অর্থঃ- এই চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র নামাযে সূরাতুল্ ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়া উচিৎ বা জরুরী। যদি তার উপর যোহ্রের কাযা না থাকে, আর যদি উহা (আখিরী যোহ্র) পড়া ফরয সাব্যস্ত হয়, তবে সূরা মিলাতে কোন ক্ষতি নাই। কিন্তু যদি উহা (আখিরী যোহ্র) পড়া নফল সাব্যস্ত হয়, তবে সূরা কিরয়াত ওয়াজিব হবে। অর্থাৎ যখন তার উপর যোহ্রের কাযা থাকবে, তবে সূরাতুল ফাতিহার সাথে সূরা মিলাবে না। কেননা, এই চার রাকায়াত প্রত্যেক অবস্থায় ফরয।” (রদ্দুল্ মুহতার, শামী ২য় জিঃ ১৪৭ পৃষ্ঠা)
[২৫৫]
قال الحلبى وينبغى ضمها فى الكل ان لم يكن عليه قضاء فان وقعت فرضا فالسورة لاتضر وان وقتعت نفلا فالضم واجب. (حاشية الطحطاوى على الدر المختار جص৩৪২)
অর্থঃ- ইমাম হালাবী রহমুতল্লাহি আলাইহি বলেনঃ আখিরী যোহ্রের সব রাকাযাতেই (চার রাকায়াতেই) সূরা মিলানো উচিৎ। যদি তার উপর যোহ্রের কাযা না থাকে, আর যদি উহা (আখিরী যোহ্র) পড়া ফরয সাব্যস্ত হয়, এতে সূরা মিলিয়ে পড়তে ক্ষতি নাই। কিন্তু যদি আখিরী যোহ্র পড়া নফল সাব্যস্ত হয়, তবে প্রত্যেক রাকায়াতেই (চার রাকায়াতেই) সূরাতুল ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা মিলানো ওয়াজিব।” (হাশিয়াতুত্ ত্বহত্বাবী আলাদ্ দুররিল্ মুখতার ১ম জিঃ ৩৪২ পৃষ্ঠা)
[২৫৬]
ثم قيل يقرأ الفاتحة والسورة فى كل ركعة فان وقعت فرضا فقرائه السورة لاتضره وان وقعت نفلا فقرائتها واجبة. (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح جص৩২৮)
অর্থঃ- কেউ কেউ বলেন, আখিরী যোহ্রের চার রাকায়াতের প্রত্যেক রাকায়াতেই সূরাতুল্ ফাতিহাএর পর একটি সূরা মিলিয়ে পড়বে। যদি আখিরী যোহ্র ফরয সাব্যস্ত হয়, তবে উহাতে সূরা মিলিয়ে পড়তে কোন অসুবিধা নাই। আর যদি নফল সাব্যস্ত হয়, তবে চার রাকায়াতেই সূরা মিলিয়ে পড়া ওয়াজিব।” (হাশিয়াতুত্ ত্বহত্বাবী আলা মারাকিইল ফালাহ্ ১ম জিঃ ৩২৮ পৃষ্ঠা)
[২৫৭-২৫৮]
وفى فتاوى اهو : ينبغى ان يقرأ الفاتحة والسورة فى الاربع التى يصلى بعد الجمعة بنية الظهر فى ديارنا، فلو وقع فرضا فقرائة السورة لاتضره، وان وقع سنة على تقدير صحة الجمعة فقرائة السورة واجبة. (الفتاوى التاتار خانية جص৫০، فتاوى اهو)
অর্থঃ- ফতওয়ায়ে আহুতে রয়েছেঃ আমাদের দেশ সমূহে বাদাল জুমুয়া-এর পর যে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়া হয় উহার চার রাকায়াতেই সূরাতুল্ ফাতিহাএর সাথে অন্য একটি সূরা পাঠ করা উচিৎ বা কর্তব্য। যদি আখিরী যোহ্র নামায পড়া ফরয হিসেবে সাব্যস্ত হয়, তবে সূরা মিলিয়ে পড়ায় ক্ষতি নাই। আর যদি জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার সম্ভাবনায় সুন্নত হিসেবে সাব্যস্ত হয়, তবে চার রাকায়াতেই  সূরা মিলিয়ে পড়া ওয়াজিব।” (আল্ ফাতাওয়াত্ তাতার খানিয়াহ্ ২য় জিঃ ৫০ পৃষ্ঠা, ফাতাওয়ায়ে আহু)
[২৫৯]
والاصح ان يقرأ بالفاتحة والسورة فى اربع احتياطا لاحتمال ان يكون نفلا. (شرح النقاية جص২৯০)
অর্থঃ-অধিক ছহীহ্, প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে; ইহ্তিয়াত্ বা সাবধানতার জন্যচার রাকায়াত নামাযেই সূরাতুল্ ফাতিহাএর সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে পড়া। এজন্য যে, উহা নফল নামায।” (শরহুন্ নিকায়াহ ১ম জিঃ ২৯০ পৃষ্ঠা)
[২৬০]
وعليه ان يقرأ فى كل ركعة سورة اوثلاث ايات قصار، لاحتمالا ان تكون هذه الصلاة نافلة، وقد تقدم ان قرائة السورة ونحوها واجبة فى جميع ركعات النفل. (كتاب الفته على المذاهب الاربعة جص৩৮৭- جاردو ص ৬১৮)
অর্থঃ- আখিরী যোহ্রের প্রত্যেক রাকায়াতেই সূরাতুল ফাতিহাএর সাথে অন্য একটি সূরা অথবা ছোট তিন আয়াত পড়া জরুরী। ইহা এজন্য যে, এই নামায নফল। যার আলোচনা পূর্বে করা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই নফল নামাযের প্রত্যেক রাকায়াতেই সূরা পড়া এবং অনুরূপ অন্য কিছু পড়া ওয়াজিব।” (কিতাবুল্ ফিকহি আলাল মাযাহিবিল আরবায়াহ্ ১ম জিঃ ৩৮৭ পৃষ্ঠা, ১ম জিঃ (উর্দূ) ৬১৮ পৃষ্ঠা)
[২৬১-২৬২]
ينبغى ان يقرأ السورة مع الفاتحة فى الاربع التى بنية اخر الظهر فان وقع فرضا فالسورة لاتضر وان كان نفلا فقرائة السورة واجبة انتهى ملخصا هكذا فى العالمكيرية. (فتاوى عبد الحى لكهنوى (مجموعة) ص২২৩- العالمكيرية)
অর্থঃ- আখিরী যোহ্রের নিয়তে চার রাকায়াত নামাযের চার রাকায়াতেই সূরাতুল্ ফাতিহাএর সহিত অন্য একটি সূরা মিলানো উচিৎ বা জরুরী। যদি উহা ফরয সাব্যস্ত হয়, তবে সূরা মিলাতে ক্ষতি নাই। আর যদি নফল সাব্যস্ত হয়, তবে সূরা মিলিয়ে পড়া ওয়াজিব হবে। সংক্ষেপে শেষ করা হল। অনুরূপ ভাবে আল আলমগীরিয়াহ্তে উল্লেখ আছে।” (ফাতাওয়ায়ে আব্দুল হাই লখ্নবী (মাজমূয়াহ) ২২৩ পৃষ্ঠা, আল্ আলমগীরিয়াহ্)
            উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, সুন্নাতুল্ জুমুয়া অর্থাৎ বাদাল জুমুয়া এর পরে এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত-এর পূর্বে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াত্ ুযোহ্রপড়াই ছহীহ্, মুখতার, নির্ভুলযোগ্য গ্রহণযোগ্য ও আওলা বা উত্তম মত। এর বিপরীত করা ছহীহ্ এবং মুখতার মতের খিলাফ হবে। তৎসঙ্গে আরো প্রমাণিত হলো যে, আখিরী যোহ্র নামাযের প্রত্যেক রাকায়াতেই সূরাতুল ফাতিহাএর সাথে অন্য একটি সূরা অথবা বড় এক আয়াত কিংবা ছোট তিন আয়াত পড়া ওয়াজিব।
পরিশিষ্ট
            বিগত ৯৭, ৯৮, ৯৯ সংখ্যা এবং বর্তমান ১০০তম সংখ্যার বিস্তারিত দলীল ভিত্তিক আলোচনার দ্বারা শরীয়তে আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিযাতুয্ যোহ্র”-এর অস্তিত্ব, হুকুম-আহকাম ও এটা আদায় করার নির্দেশ খুবই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়ে উঠেছে। উপরোক্ত তাফসীর শরীফ, হাদীস শরীফ, হাদীস শরীফের শরাহ, ফিক্বাহ্, তাছাউফ এবং সিয়ার গ্রন্থ থেকে বিশদ আলোচনার সারসংক্ষেপ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
            ১। শরীয়তের দলীল হচ্ছে কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজাম ও ক্বিয়াস।
            ২। আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহরের মাসয়ালাটি হচ্ছে ক্বিয়াসী মাসয়ালা। অর্থাৎ শরীয়তের অন্যতম দলীল ক্বিয়াস দ্বারা প্রমাণিত।
            ৩। আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্রএর নামায পড়া ওয়াজিব এবং মুস্তাহাব বা মুস্তাহ্সান।
            ৪। যে স্থান শহর হওয়ার ব্যাপারে প্রবল সন্দেহ রয়েছে অথবা যে স্থানে জুমুয়া ছহীহ্ হওয়ার ব্যাপারে অন্যান্য শর্ত অনুপস্থিত থাকে, এমন স্থানে জুমুয়া আদায় করা হলে, জুমুয়ার নামাযের পর বাদাল জুমুয়া পড়ে চার রাকায়াত আখিরী যোহ্র পড়া ওয়াজিব হবে।
            ৫। যে স্থান নিঃসন্দেহে শরয়ী শহর। কিন্তু একই শহরে বা একই স্থানে একাধিক মসজিদে জুমুয়া জায়েয হওয়ার বিষয়ে ইখতিলাফ থাকায় সেখানে আখিরী যোহ্র পড়া মুস্তাহাব, মুস্তাহাসান, আওলা বা উত্তম।
            ৬। বিরুদ্ধবাদীারা আল্ বাহরুর রাইক, দুররুল মুখতার ও মারাকিউল ফালাহ্কিতাবের শর্তে আখিরী যোহ্র নামাযকে বিদ্য়াত, মাকরুহ, না পড়াই উত্তম ইত্যাদী ফতওয়া দেয়। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কিতাবের উদ্ধৃতির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, আখিরী যোহ্র পড়াই উত্তম বা আওলা। যা ব্যাখ্যাগ্রন্থসমূহে ফুটে উঠেছে।
            ৭। আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র এর নামায ফরযের নিয়তে করতে হবে যেহেতু এ নামায যোহ্রের নামাযের স্থলাভিষিক্ত।
            ৮। এ নামায বাদাল জুমুয়ার পর সুন্নাতুল ওয়াক্ত-এর পূর্বে পড়তে হবে ইহাই মুখতার বা নির্ভর যোগ্য মত।
            ৯। আখিরী যোহ্র বা ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র নামাযের চার রাকায়াতেই সূরা ফাতিহা-এর সহিত অন্য একটি সূরা অথবা বড় এক আয়াত বা ছোট তিন আয়াত মিলানো ওয়াজিব।
            আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে ইহ্তিয়াতুয্ যোহ্র আখিরী যোহ্রনামায সম্পর্কে আক্বীদাহ্ শুদ্ধ করে উহা আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক এবং রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি রেজামন্দি, মুহাব্বত ও মারিফত হাছিল করার তাওফিক দিন। (আমীন) (সমাপ্ত