ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া -পর্ব-১


ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা
, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া 
হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আযম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত। এ পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়া প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধ করা। এ জন্যেই মূলতঃ যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। এবং সর্বশেষ নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর প্রত্যেক শতাব্দীর মাঝে প্রেরিত হয়ে আসছেন তাঁর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা যামানার মুজাদ্দিদগণ।
কাজেই, বান্দা ও উম্মত যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, রহমত ও নাজাত পেতে চায়, হাক্বীক্বী বান্দা ও হাক্বীক্বী উম্মত হতে চায়, প্রকৃত মুমিন, মুসলমান ও মুত্তাক্বী হতে চায় তাহলে তার জন্য যামানার মুজাদ্দিদের অনুসারী হওয়া ব্যতীত বিকল্প কোন পথ নেই। সেটা কাছে থেকে হোক কিংবা দূরে থেকে হোক। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
واتبع سبيل من اناب الى.
অর্থঃ- ঐ ব্যীক্তর পথ অনুসরণ করে  চলো যিনি আমার দিকে রুজু রয়েছেন।” (সূরা লুক্বমান-১৫)
স্মরণীয় যে, আজকে মুসলমানরা তাদের আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, আচার-আচরণ গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহবান করছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। সুতরাং তাঁর মুবারক আহবানে সাড়া দেয়ার সময় এখনই। এ লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকার পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিভাগ সুওয়াল-জাওয়াবফতওয়াবিভাগে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থঃ- যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
তাই প্রেরিত সুওয়ালসমূহের প্রেক্ষিতে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া  ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পেশ করা হলো।
প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়
মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ মুসলমানের বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের মাধ্যমে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المؤ من مرأة المؤمن اذا رأى فيه عيبا اصلحه.
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, মুসলমানগণ এ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
সুওয়ালকারীদের নাম-ঠিকানা    

সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন.গঞ্জ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল
মুহম্মদ  হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী,  চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল


সুওয়াল
আগামী ২০০৭ সালে পুনরায় সংসদ নির্বাচনঅনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে তথা প্রার্থী দিবে। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় অর্থাৎ তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে। কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের  প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়। বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি  প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
উল্লেখ্য এ বিষয়ে মাসিক মুহীনুল ইসলাম সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বর-২০০৬ সংখ্যাগুলোতে একই ধরণের বক্তব্য প্রদান করা হয়েছে।
আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মায়ারিফুল কুরআন ও জোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা৪ ভোটকে জায়িয বলেছেন।
এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
১।   ইসলাম আর গণতন্ত্র কি একই বিষয়? উভয়ের মধ্যে কি কোন পার্থক্য নেই? এ সম্পর্কে জামাত নেতার এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত?
২।  নির্বাচন ও ভোট প্রথার উৎপত্তি কোথায় এবং কবে? কোন নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীন ভোট ও নির্বাচন করেছেন কি?
৩।  ইসলাম বা শরীয়তের  দৃষ্টিতে পদপ্রার্থী হওয়া বা ভোট চাওয়া জায়িয কিনা?
৪।  ভোট একটি আমানত, স্বাক্ষ্য ও উকিল নিয়োগ মুফতী শফী ও শামছুল হক ফরীদপুরী ছাহেব ও তার অনুসারীদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক ও দলীল ভিত্তিক।
৫।   ভোট দেয়া আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরয-ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘ভোট একটি আমানতআল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, ‘সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।বায়তুল মুকাররম মসজিদের খতীবের একথা কতটুকু শরীয়ত ও দলীল সম্মত?
৬।   (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে- ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
মাহিউদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
৭।   খুলাফায়ে রাশিদীন কি পদপ্রার্থী হয়েছিলেন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে খলীফা নির্বাচিত হয়েছেন?
৮।   একটি পদের জন্য কি একাধিক প্রার্থী ছিলেন? এবং তাঁদের কি কোন  মার্কা ছিল?
৯।   খলীফাগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন, না খিলাফত?
১০। খলীফাগণ মানবরচিত বিধানে, না শরয়ী বিধানে খিলাফত পরিচালনা করেছেন?
১১।  খলীফা নিয়োগদান পদ্ধতি নির্বাচন, না মনোনয়ন?
১২।  গণতান্ত্রিক বহুদলীয় নির্বাচনে প্রার্থীকে ভোট দেয়া ওয়াজিব কিনা?
১৩।  যদি ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? আমরা জানি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরযে আইন। তবে কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজি, জিহাদ বা জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যাবে?
১৪।  যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে তারা হক্কানী  আলিম কিনা? তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রাথী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক্ব, নিজামী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক্ব- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। নিম্নে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(১)
ইসলাম আর গণতন্ত্র কি একই বিষয়? উভয়ের মধ্যে কোন কি পার্থক্য নেই? এ সম্পর্কে জামাত নেতার এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, ইসলাম ও গণতন্ত্র কস্মিনকালেও এক বিষয় নয়, বরং সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়। যারা ইসলাম ও গণতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য করে না বরং একই বিষয় বলে থাকে তারা একদিক থেকে কাট্টা কাফির অপরদিক থেকে তারা যেরূপ ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ তদ্রুপ গণতন্ত্র সম্পর্কেও তারা নেহায়েতই অজ্ঞ অর্থাৎ তারা আশাদ্দুদ দরজার জাহিল। তাই তারা দুয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য খুজে পায় না। তাদের কথা মুতাবিক ইসলাম ও গণতন্ত্র যদি একই হয় তাহলে বলতে হয় সারাবিশ্বে ইসলামী হুকুমত জারী আছে। কারণ আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা, এশিয়া, পাক ভারত, বাংলাদেশসহ সব দেশেই গণতন্ত্র জারী রয়েছে। তাহলে আর ইসলামী আন্দোলনের কি প্রয়োজন? প্রকৃতপক্ষে এই সমস্ত লোকগুলো হাক্বীক্বীভাবে আশাদ্দুদ্ দরজার জাহিল।
নিম্নে ইসলাম ও গণতন্ত্রের পার্থক্য উল্লেখসহ এ সম্পর্কে বিস্তারিত দলীল-আদিল্লাহ পেশ করা হলো।
ইসলাম কাকে বলে ?
ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত, একমাত্র পরিপূর্ণ, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, নিয়ামতপূর্ণ ও মনোনীত দ্বীন। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক সূরা আলে ইমরানের১৯নং আয়াত শরীফে বলেন,
ان الد ين عند الله الاسلام.
অর্থ ঃ- নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহ্ পাক-এর কাছে একমাত্র দ্বীন।আর আল্লাহ্ পাক সূরা মায়িদার৩নং আয়াত শরীফে ঘোষণা করেন,
اليوم اكملت لكم د ينكم واتممت عليكم نعمتى ور ضيت لكم الاسلام دينا.
অর্থঃ- আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে (দ্বীন ইসলামকে) কামিল বা পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত তামাম বা পূর্ণ করে দিলাম এবং আমি তোমাদের দ্বীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট রইলাম।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه ان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بنسخة من التورة فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه نسخة من التورة فسكت فجعل يقم أ ووجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتغير فقال ابو بكر ثكلتك الثوا كل ما ترى ما بوجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظر عمر الى وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال اعوذ بالله من غضب الله وغضب رسوله رضينا بالله ربا و بالا سلام د ينا وبمحمد نبيا فقال رسول  الله صلى الله عليه وسلم والذى نفس محمد صلى الله عليه وسلم بيده لو بدا لكم موسى عليه السلام فاتبعتموه وتر كتمو نى لضللتم عن سواء السبيل ولو كان حيا وادر ك نبوتى لاتبعنى.
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট তাওরাত শরীফের একটি কপি এনে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি তাওরাত শরীফের একটি কপি। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক লাল হতে লাগলো। অর্থাৎ অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। এটা দেখে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার জন্য আফসুস! আপনি কি দেখছেন না যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক কি রূপ ধারণ করছে। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারকের দিকে তাকালেন এবং অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর অসন্তুষ্টি থেকে এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি থেকে আল্লাহ পাক-এর নিকট পানাহ চাচ্ছি। এবং আমরা আল্লাহ পাককে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি। তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেই আল্লাহ পাক-এর কছম! যার অধিকারে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে, এ সময় যদি তোমাদের নিকট হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম (যার উপর তাওরাত কিতাব নাযিল হয়েছে) জাহির বা প্রকাশ হতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ করতে তবুও তোমরা সরল পথ থেকে অবশ্যই বিচ্যুত অর্থাৎ গোমরাহ হয়ে যেতো। এমনকি তিনি যদি এখন হায়াতে থাকতেন আর আমাকে পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)
আল্লাহ্ পাক দ্বীন ইসলামকে শুধুমাত্র পরিপূর্ণ সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ও নিয়ামতপূর্ণ করেই নাযিল করেননি সাথে সাথে দ্বীন ইসলামকে মনোনীতও করেছেন। তাই দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য সমস্ত ধর্ম যা ওহী দ্বারা নাযিল করা হয়েছিল যেমন, তাওরাত শরীফ, যাবূর শরীফ, ইনজীল শরীফ ও ১০০ খানা ছহীফা এবং মানব রচিত মতবাদ যেমন গণতন্ত্র ইত্যাদি যা পূর্বে ছিল এবং বর্তমানে যা রয়েছে, যেমন: রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, মার্কসবাদ, লেলিনবাদ, মাওবাদ ইত্যাদি ও ভবিষ্যতে যা হবে সেগুলোকে তিনি বাতিল ঘোষণা করেছেন।
এ প্রসঙ্গে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,
هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الد ين كله وكفى بالله شهيدا. محمد رسول الله.
অর্থঃ- তিনি (আল্লাহ্ পাক) তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে (সমস্ত দ্বীনকে বাতিল ঘোষণা করে তা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত হোক  অথবা মানব রচিত হোক আর তা পূর্বে হোক অথবা পরে হোক) এবং এ বিষয়ে আল্লাহ্ পাক-এর স্বাক্ষ্যই যথেষ্ট। (যার সাক্ষী আল্লাহ্ পাক) আর রসূল হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (সূরা ফাতহ্-২৮, ২৯)
অর্থাৎ ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত, একমাত্র, পরিপূর্ণ, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, নিয়ামতপূর্ণ ও মনোনীত দ্বীন। যা বাড়ানো-কমানো বা ইফরাত-তাফরীত কোনটিই জায়িয নেই। যে বাড়াবে-কমাবে সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়ে যাবে। যেমন কাদিয়ানী সম্প্রদায়। তারা সব মানে এমনকি আখিরী নবী  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লামকেও মানে। শুধুমাত্র শেষ নবী ও রসূল হিসেবে মানেনা। সেজন্য তারা কাট্টা কাফির ও চিরজাহান্নামী হয়েছে।
কারণ আল্লাহ্ পাক সূরা হুদের৬নং আয়াত শরীফে বলেন,
كل فى كتب مبين.
অর্থঃ- সমস্ত কিছুই প্রকাশ্য কিতাবে রয়েছে।
সূরা আনয়ামের৩৮নং আয়াত শরীফে আরো বলেন,
ما فرطنا فى الكتب من شىء.
অর্থঃ- আমি কিতাবে কোন কিছুই তরক করিনি।
তিনি সূরা আনয়ামের৫৯নং আয়াত শরীফে আরো বলেন,
ولا رطب ولايا بس الا فى كتب مبين
অর্থঃ- ভিজা এবং শুক্না সব কিছুর বর্ণনাই প্রকাশ্য কিতাবে রয়েছে।
কাজেই, ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন বা মতবাদ অর্থাৎ তা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত হোক বা মানব দ্বারা রচিত হোক কোনটাই আল্লাহ পাক গ্রহণ করবেন না। বরং জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
من يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الا خرة من الخسرين.
অর্থঃ- যে  ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের নিয়ম-নীতি তালাশ করে তার থেকে সেটা কবুল করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
আল্লাহ পাক আরো বলেন,
كيف يهدى الله قو ما كفروا بعد ايما نهم وشهد وا ان الر سول حق وجائهم البينت والله لا يهدر القوم الظلمين اولئك جزاؤهم ان عليهم لعنة الله والملئكة والناس اجمعين خلد ين فيها لا يخفف عنهم العذاب ولاهم ينظرون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক কি করে ঐ সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে এবং তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য এবং তাদের নিকট কুরআন-সুন্নাহর দলীল আসার পর। আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। ঐ সমস্ত লোকদের শাস্তি হলো, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর, ফেরেশতাগণের এবং সমস্ত মানুষের লানত। অনন্তকাল ধরে সেই লানতের মধ্যে তারা থাকবে। তাদের উপর শাস্তি লাঘব করা হবেনা এবং তাদেরকে অবসরও দেয়া হবেনা।” (সূরা আলে ইমরান-৮৬, ৮৭, ৮৮)
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক নিজেই বলেন, যারা ঈমান আনার পর এবং আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী-রসূল হিসেবে স্বাক্ষ্য দেয়ার পর আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রদত্ত বিধান কুরআন-সুন্নাহ পাওয়ার পর ইসলামের বিপরীত নিজের মনগড়া, নিয়মনীতি বা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে তাদেরকে আল্লাহ পাক জালিম ও মালউন হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। যেমন, ইবলিস ও কাফিরদেরকে আল্লাহ পাক মালউন ও জালিম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।
অতএব, যারা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন নিয়মনীতি ইসলামের নামে যেমন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি গ্রহণ করবে তারা ইবলিস ও কাফিরদের মতো অনন্তকাল ধরে মালউন ও জালিম হিসেবে গণ্য হবে। আর কোন মালউন ও  জালিম হিদায়েত লাভ করতে পারেনা। তাহলে ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা কি করে জায়িয হতে পারে?
যার ব্যাখ্যায় হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
عن جابر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم حين اتاه عمر رضى الله تعالى عنه فقال انا نسمع احاد يث من يهود تعجبنا افبرى ان نكتب بعضها فقال امتهو كون انتم كما تهو كت اليهود والنصارى لقد جئتكم بها بيضاء نقية ولو كان موسى حيا ماو سعه الا اتباعى.
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদি¦য়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমরা ইহুদীদের থেকে তাদের কিছু ধর্মীয় কথা শুনে থাকি, যাতে আমরা আশ্চর্যবোধ করি, এর কিছু আমরা লিখে রাখবো কি? হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরাও কি দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছ? যে রকম ইহুদী-নাছারারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে? অবশ্যই আমি তোমাদের নিকট পরিপূর্ণ, উজ্জ্বল ও পরিষ্কার দ্বীন নিয়ে এসেছি। হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও যদি দুনিয়ায় থাকতেন, তাহলে তাঁকেও আমার অনুসরণ করতে হতো।” (মুসনাদে আহ্মদ, বাইহাক্বী, মিশকাত, মিরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্ ইত্যাদি)
ওহী
আল্লাহ পাক ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ওহীর মাধ্যমে নাযিল করেছেন।
আর ওহী সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
وما ينطق عن الهوى. ان هو الا وحى يوحى.
অর্থঃ- তিনি ওহী ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না।” (সূরা নজম-৩,৪)
ওহী হচ্ছে দুপ্রকার- (১) ওহীয়ে মাত্লু (২) ওহীয়ে গায়রে মাত্লু।
ওহীয়ে মাত্লু হচ্ছে- যা হুবহু তিলাওয়াত বা পাঠ করতে হয়। যার তাহ্রীফ ও তাবদীল সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। ওহীয়ে মাত্লুর সমষ্টি হচ্ছে কুরআন শরীফ, যা আল্লাহ্ পাক সূরা ইউসুফের৩নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেন,
اوحينا اليك هذا القران.
অর্থ ঃ- আমি এই কুরআন শরীফকে আপনার প্রতি ওহী করেছি বা নাযিল করেছি
          এর মধ্যে দ্বীন ইসলামের বিধি-বিধান, আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ইত্যাদি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। যার নাযিলকারী ও সংরক্ষণকারী স্বয়ং আল্লাহ পাক। যা সূরা হিজরের৯নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
انا نحن نز لنا الذكر وانا له لحفظون.
অর্থ ঃ- নিশ্চয়ই আমিই কুরআন শরীফকে নাযিল করেছি এবং নিশ্চয়ই আমিই এর হিফাযতকারী
আর ওহীয়ে গায়রে মাত্লু হচ্ছে হাদীছ শরীফ। যা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে নাযিল হয়েছে কিন্তু তার ভাষা হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর। যা কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা স্বরূপ।
উল্লেখ্য, ওহীয়ে মাত্লু বা কুরআন শরীফের তাহ্রীফ, তাবদীল যেমন নাজায়েয ও কুফরী, তেমনি তাফসীর র্বি রায় বা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা করাও নাজায়িয ও কুফরী। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قال فى القران برايه فليتبوأ مقعده من النار وفى رواية من قال فى القران بغير علم فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে মনগড়া কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে ইলম্ ব্যতীত অর্থাৎ বিনা প্রমাণে মনগড়া কোন কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান দোযখে করে নেয়।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من فسر القران برايه فقدكفر.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করলো, সে কুফরী করলো।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)
আর ওহীয়ে গায়রে মাতলু সম্পর্কে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتقوا الحد يث عنى الا ماعلمتم فمن كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যে পর্যন্ত না তা তোমরা আমার বলে নিশ্চিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
মূলতঃ ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত দ্বীন, যা বাড়ানো-কমানো বা ইফরাত-তাফরীত যেমন কুফরী তেমনি তার মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকে মিথ্যারোপ করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
তার মেছাল বা উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানী সম্প্রদায়। কাদিয়ানীরা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস সবই মানে এবং তা স্বীকারও করে থাকে। এমনকি কাদিয়ানীরা  خاتم النبيين (খতামুন নাবিয়্যীন) এ   রহ্মতপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ বাক্যাংশটিও তারা শব্দগতভাবে অস্বীকার করে না কিন্তু নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী মনগড়া অর্থ করে। আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মোতাবেক খতামুন্ নাবিয়্যীন-এর অর্থ হচ্ছে শেষ নবী। হাদীছ শরীফে ইরশাদ  হয়েছে,
عن ثوبان رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا خاتم النبين لا نبى بعدى.
অর্থঃ- হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমিই শেষ নবী। আমার পর কোন নবী নেই।” (মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, আহমদ, ইবনে মাজাহ, কানযুল উম্মাল)
কাদিয়ানীরা আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবীও স্বীকার করে এবং মানেও। কিন্তু খতামুন্ নাবিয়্যীন-এর অর্থ করে, তিনি নবী সত্য তবে শেষ নয়, নবীদের মোহর। (নাউযুবিল্লাহ্)
অর্থাৎ কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামের সমস্ত কিছু মানা সত্বেও এমনকি কুরআন শরীফের রহ্মত ও বরকতপূর্ণ বাক্যাংশ খতামুন্ নাবিয়্যীন শব্দগতভাবে মানা সত্বেও অর্থের দিক থেকে শুধু মাত্র খতমশব্দের অর্থ শেষ না করে মোহর করার কারণে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়েছে।
তাহলে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত দ্বীন, ইসলামের কোন বিষয় বাড়ানো-কমানো বা ইফরাত-তাফরীত করা বা কুরআন শরীফের কোন শব্দের তাহ্রীফ-তাবদীল করা অথবা মনগড়া তাফসীর ইত্যাদি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ যা নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। যারা বাড়াবে ও কমাবে বা তাহ্রীফ-তাবদীল অথবা মনগড়া তাফসীর ইত্যাদি করবে তারাও কাফির হয়ে যাবে। যেমন কাদিয়ানী সম্প্রদায় কাফির হয়ে গেছে।
উপরোক্ত আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্ পাক দ্বীন ইসলামকে মনোনীত ও পরিপূর্ণ করে নাযিল করেছেন। আর পূর্ববর্তী ওহী দ্বারা নাযিলকৃত এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানব রচিত সমস্ত ধর্ম, নিয়মনীতি, আইন-কানুন, তর্জ-তরীক্বা বাতিল ঘোষণা করে ইসলাম নাযিল করেছেন। যাতে আইন-কানুন, নিয়মনীতি, তর্জ-তরীক্বা ইত্যাদি নতুন করে দেয়া হয়েছে যা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ইত্যাদি প্রতিক্ষেত্রেই পালনীয়। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যার কারণে মুসলমানগণকে অন্য কোন ধর্ম বা সম্প্রদায় থেকে কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা, আইন-কানুন কর্জ করতে হবেনা। বরং ইসলাম থেকেই সকলকে কর্জ করতে হবে।
গণতন্ত্র কাকে বলে?
গণতন্ত্র হচ্ছে- মানব রচিত শাসন ব্যবস্থা। যার আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা মানুষের দ্বারা রচিত। মূলতঃ গণতন্ত্র শুধু মানব দ্বারাই রচিত নয় বরং তা বিধর্মীদের দ্বারা বিশেষ করে ইহুদীদের দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত। আর খ্রিস্টানদের দ্বারা সংস্কারকৃত শাসন পদ্ধতি। যা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত নয়। বরং পূর্ববর্তী যামানায় আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে নাযিলকৃত আসমানী কিতাব বিকৃত হওয়ায় অর্থাৎ নফসানিয়াতের দরুন  উক্ত কিতাব বিকৃতি বা পরিত্যাগ করার পর বিধর্মীরা তাদের দেশ পরিচালনা করার জন্য, খোদায়ী আইনের পরিবর্তে নিজেরা যে সব আইন প্রণয়ন করেছিল, পরবর্তী সময় সেগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গণতন্ত্র, যা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রীসে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং  বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
গণতন্ত্রের ইংরেজী হচ্ছে- Democracy। যা এসেছে গ্রীক 'Demos' এবং 'Kratos' থেকে। 'Demos'  অর্থ জনগণ এবং 'Kratos' অর্থ শাসন। পলিটিক্যাল সাইন্স বা রাষ্ট্র বিজ্ঞান বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গণতন্ত্র শব্দের অর্থ হচ্ছে- গণঅর্থ জনগণ, আর তন্ত্রঅর্থ নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণের নিয়ম-কানুন বা পদ্ধতি অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা বা সরকার পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে আধুনিক গণতন্ত্রের প্রবক্তা আব্রাহাম লিঙ্কনের উক্তি উল্লেখ্য। তার ভাষায়- "Democracy is a Government of the people, by the people and for the people" যার অর্থ হলো- গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য।
তাই গণতন্ত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বা সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে একমাত্র জনগণ। আর এই সার্বভৌম ক্ষমতা বা সমস্ত ক্ষমতার মালিক হওয়ার কারণেই গণতন্ত্রীরা নিজেরাই নিজেদের জন্য আইন-কানুন, তর্জ-তরীকা, নিয়ম-নীতি ইত্যাদি প্রণয়ন করে থাকে। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধিরা একমাত্র আইন প্রণেতা। তাই গণতান্ত্রিক আইন সভায় যদি কোন কুরআন-সুন্নাহ্র অর্থাৎ শরয়ী কোন আইন পেশ করা হয় আর যদি সেটা তাদের গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার খেলাফ হয় বা মনোপুত না হয় তাহলে সে সব শরয়ী আইন সেখানে উপেক্ষিত হয় বা আদৌ গৃহীত হয়না। কারণ গণতান্ত্রিক বিধি অনুযায়ী তাদের অধিকাংশ আইন প্রণেতা যে বিষয় একমত পোষণ করবে সেটাই আইন হিসেবে গৃহীত হবে।
অর্থাৎ ইসলাম আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত, একমাত্র, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, মনোনীত ও পরিপূর্ণ দ্বীন। তার সাথে গণতন্ত্রের বা মানুষের কোনই সম্পর্ক নেই। কারণ ইসলামের আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ও তর্জ-তরীক্বা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে নাযিল করা হয়েছে। আর গণতন্ত্রের যে আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ও তর্জ-তরীক্বা রয়েছে, তা মানুষের দ্বারা তৈরী করা হয়েছে বা হয়। যার সাথে আল্লাহ্ পাক-এর কোন সম্পর্ক নেই, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কোন সম্পর্ক নেই, ওহীর কোন সম্পর্ক নেই। এক কথায় ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্রীরা যে আইন প্রণয়ন করেছে তা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রদত্ত আইনের খিলাফ হওয়া সত্ত্বেও তাদের কাছে তা গৃহীত হয়েছে এবং তা বাস্তবায়িত করার জন্য তারা সর্বপ্রকার ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে।  (নাঊযুবিল্লাহ)
শুধু তাই নয় তাদের ভাষায় ইসলামী আইন-কানুন যা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে প্রদত্ত হয়েছে তা থেকে অনেক আইন কানুনই পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংস্কার করতে হবে এবং করতে শুরুও করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
নিম্নে তার কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হলোঃ
১. ওয়ারিছ সত্ত্বের ক্ষেত্রে
কুরআন-সুন্নাহ্ অনুযায়ী শরীয়তের ফতওয়া হলো- দাদা জীবিত থাকতে পিতা ইন্তিকাল করলে নাতি ওয়ারিছ হবেনা। যা আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে সূরা নিসার ১১-১২নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেন।
অথচ ১৯৬১ সনে প্রেসিডেন্ট আইউব খানের কথিত গণতান্ত্রিক সরকার কুরআন-সুন্নাহ্ অনুযায়ী শরীয়তের উক্ত ফতওয়াকে ইয়াতিমের জন্য ক্ষতিকারক বলে রদ বা বাতিল ঘোষণা করে। (নাঊযুবিল্লাহ)
অতঃপর উক্ত কথিত গণতান্ত্রিক সরকার কথিত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ জারী করে কুরআন-সুন্নাহ্র পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন ও সংযোজনের মাধ্যমে মনগড়া নতুন আইন জারী করে যে, দাদা জীবিত থাকতে পিতা ইন্তিকাল করলেও নাতি ওয়ারিছ হবে। (নাঊযুবিল্লাহ) যা উক্ত অধ্যাদেশের ৪নং ধারায় বলা হয়েছে- যাহার সম্পত্তি মিরাসে বণ্টন হইবে, তাহার পূর্বে তাহার কোন পুত্র বা কন্যা মারা গেলে এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাহার সম্পত্তি বণ্টনের সময় উক্ত পুত্র বা কন্যার কোন সন্তানাদি জীবিত থাকলে তাহারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ঐ অংশ পাইবে যাহা তাহাদের পিতা অথবা মাতা জীবিত থাকলে পাইতো।” (নাঊযুবিল্লাহ) যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।
এখানে উল্লেখ্য, গণতন্ত্রীরা আল্লাহ পাক প্রদত্ত আইনকে বাতিল বলে ঘোষণা করে তাদের মনগড়া আইন ইসলামের নামে চাপিয়ে দিয়েছে যা মানা ও আমল করা উভয়টাই কাট্টা কুফরী। তাহলে ইসলামের নামে গণতন্ত্র কি করে জায়িয হতে পারে? অথচ আল্লাহ পাক বলেন,
قاتلوا الذين لا يؤمنون بالله ولا باليوم الاخر ولا يحرمون ما حرم الله ورسوله ولا يد ينون دين الحق.
অর্থঃ- তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করুন যারা আল্লাহ পাক-এর প্রতি এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখে না এবং সেই বস্তুগুলিকে হারাম মনে করেনা যেগুলিকে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হারাম করেছেন এবং সত্য দ্বীন (ইসলাম) গ্রহণ করে না। (সূরা তওবা-২৯)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক যে দ্বীনে হক্ব তথা ইসলাম দিয়েছেন সেটাকে না মেনে বিপরীত কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা, তন্ত্র-মতবাদ যারা গ্রহন করবে আল্লাহ পাক তাদেরকে কতল করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তাহলে ইসলামের নামে গণতন্ত্র কি করে জায়িয হতে পারে?
এক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ্র ফায়সালা হলো, “দাদা জীবিত থাকতে পিতা ইন্তিকাল করার কারণে যে নাতি-নাতিনী ইত্যাদি যারা লা ওয়ারিছ হয়, তাদের জন্য দাদার পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ওছিয়ত করার নির্দেশ রয়েছে। যদি কেবল দাদার গাফলতীর কারণে ওছিয়ত না করার জন্য লা ওয়ারিছ নাতি-নাতিনীরা কষ্টের স্বীকার হয়, তাহলে উক্ত দাদা কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে।
উল্লেখ্য যে, কুরআন-সুন্নাহ্তে ওছিয়ত করার যে নির্দেশ রয়েছে, তা একমাত্র যারা লা ওয়ারিছ বা ওয়ারিছ নয়, তাদের জন্যই। কেননা যারা ওয়ারিছ, তাদের জন্য ওছিয়ত করা নাজায়িয ও হারাম।
স্মর্তব্য যে, কুরআন-সুন্নাহ্তে যেরূপ নাতি দাদার ওয়ারিছ নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তদ্রুপ কুরআন-সুন্নাহ্তেই অভাবগ্রস্থ নাতির জন্য দাদার ওছিয়ত করা অবশ্যই কর্তব্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কুরআন-সুন্নাহ্ সম্পর্কে অজ্ঞতা, জিহালত ও মূর্খতার কারণেই কথিত গণতন্ত্রীরা আল্লাহ্ পাক-এর এ আদেশকে ইয়াতিমের জন্য ক্ষতিকারক বলে উল্লেখ করেছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে যা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।
২. বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রেঃ
কুরআন-সুন্নাহ্ অনুযায়ী ছেলে ও মেয়েকে বিয়ে করার ও বিয়ে দেয়ার জন্য কোন বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ ৫, ১০, ১৫ ইত্যাদি বছরের কমে অথবা ৪০, ৬০, ৮০ ইত্যাদি বছরের চেয়ে বেশী বয়সে বিয়ে করা যাবে বা যাবেনা এমন কোন শর্ত-শারায়িত বর্ণনা করা হয়নি।
কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকার তাদের গণতান্ত্রিক নিয়ম-নীতি অনুযায়ী কোন মেয়ের বিয়ে বসা বা বিয়ে দেয়ার জন্য কমপক্ষে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আইন বা শর্ত করে দিয়েছে এবং ১৮ বছর বয়সের নীচে কোন মেয়েকে বিয়ে দেয়া, বিয়ে করা বা কোন মেয়ের জন্য বিয়ে বসা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ) যেমন- এ প্রসঙ্গে ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ২এর (ক) উপধারায় বলা হয়েছে- শিশু বা নাবালক বলিতে ঐ ছেলে ও মেয়েকে বুঝাইবে, যাহার বয়স ছেলে হইলে একুশ বছরের নীচে এবং মেয়ে হইলে আঠার বছরের নীচে হইবে।
আর এরূপ নাবালকের বিয়ের শাস্তি প্রসঙ্গে এই আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে- একুশ বৎসরের অধিক বয়স্ক কোন পুরুষ বা আঠার বৎসরের অধিক বয়স্কা কোন মহিলা কোন শিশুর সহিত বিবাহের চুক্তি সম্পাদন করিলে, তাহার একমাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড কিংবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকারের দণ্ডই হতে পারে।” (নাঊযুবিল্লাহ)
উল্লেখ্য, এ আইনের ৫ ও ৬ ধারায় এরূপ বিবাহ সম্পন্নকারী ও অভিভাবকের জন্যও একই শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
এক্ষেত্রে স্মরনীয় যে, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি স্বয়ং নিজেই হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সাথে উনার ৬ বছর বয়স মুবারকে আক্বদ্ মুবারক সম্পন্ন করেছিলেন ও ৯ বছর বয়স মুবারকে ঘরে তুলে নিয়েছিলেন। তাহলে কি আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর পিতা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাদের গণতান্ত্রিক নিয়ম-নীতি অনুযায়ী দন্ডনীয় হবেন? (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক)। যা কেউ কল্পনা করলেও কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে।
এখানে উল্লেখ্য, গণতন্ত্রীরা স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দোষী সাব্যস্ত করা ও উনাকে দণ্ডনীয় অপরাধে অপরাধী হিসেবে সাবস্ত্য করার জন্য ইসলামী আইন বাতিল করে এই আইন ইসলামের নামে চাপিয়ে দিয়েছে। যা মানা ও বিশ্বাস করা কাট্টা কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। গণতন্ত্রীদের এই আইন যদি কোন মুসলমান মেনে নেয় তাহলে সে কি করে ঈমানদার থাকতে পারে? তাহলে ইসলামের নামে কি করে গণতন্ত্র করা যেতে পারে?
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
ماكان لمؤمن ولا مؤ منة اذا قضى الله ورسوله امرا ان يكون لهم الخيرة من امر هم ومن يعص الله ورسوله فقد ضل ضللا مبينا.
অর্থঃ- কোন মুমিন নর-নারীর জন্য জায়িয হবেনা আল্লাহ পাক এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ফয়সালা করেছেন, সেই ফয়সালার মধ্যে স্বীয় মত পেশ করে। (যে ব্যক্তি স্বীয় মত পেশ করলো, সে নাফরমানী করল) আর যে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাফরমানী করে, সে প্রকাশ্য গোমরাহীতে গোমরাহ হয়ে যাবে।” (সুরা আহ্যাব-৩৬)
অর্থাৎ. আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল কিংবা ফায়ছালাকৃত বিষয় সম্পর্কে বিন্দু থেকে বিন্দুতম যে চু-চেরা, ক্বীল-ক্বাল করবে সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়ে যাবে।
একইভাবে গণতন্ত্রীরা যিনি আফদ্বালুন নাস্, বাদাল আম্বিয়া অর্থাৎ নবীদের পর শ্রেষ্ঠ মানুষ তাঁকেও দণ্ডনীয় অপরাধে অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। (নাউযুবিল্লাহ) কেননা তিনি তাঁর মেয়ে হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর অভিভাবক পিতা। অথচ কোন ছাহাবীকে দোষী সাব্যস্ত করা কাট্টা কুফরী। যারা দোষী বা অপরাধী সাব্যস্ত করবে তারা কাট্টা কাফির ও লানতগ্রস্ত হবে। আল্লাহ পাক বলেন,
ليغيظ بهم الكفار.
অর্থাৎ, একমাত্র কাফিররাই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের বিরোধিতা ও বিদ্বেষ পোষণ করে(সূরা ফাত্হ-২৯)
আর হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عمر رضى الله تعالى عته قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا رايتم الذين يسبون اصحابى فقولوا لعنة الله على شر كم.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমরা কাউকে আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে মন্দ বলতে বা গালি দিতে দেখবে তখন তোমরা তাদেরকে বলবে, এ মন্দ কর্মের জন্য তোমাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর লানত বর্ষিত হোক। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উল্লেখ্য, ইসলামে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য বিয়ের বয়স নির্ধারণ করে দেয়া হয়নি। তার শত-সহস্র কারণ রয়েছে। বিয়ে করা সাধারণভাবে সুন্নাত। আর ক্ষেত্র বিশেষে ফরয ও হারাম। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عائشة رضى الله تعالى عنها قالت قال النبى صلى الله عليه وسلم النكاح من سنتى فمن لم يعمل بسنتى فليس منى.
অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, বিয়ে করা হলো আমার সুন্নত, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত আমল করবে না সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (ইবনে মাজাহ, দাইলামী, আয্ যাওয়ায়িদ)
আর যে ব্যক্তির পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, অথচ বিয়ে করার সামর্থ্য রয়েছে, এরূপ ব্যক্তির জন্য বিয়ে করা ফরয।
আর যে ব্যক্তি বিয়ে করলে তার পক্ষে বিয়ের হক্ব পুরোপুরিভাবে আদায় করা সম্ভব নয়, তার জন্য বিয়ে করা হারাম।এ প্রকার লোকদেরকে (অন্যায়-অসৎ কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনায়) হিফাযত করার লক্ষ্যে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোযা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই যদি কেউ বিয়ের বয়স নির্ধারণ করে দেয়, তবে সেটা সম্পূর্ণ নাজায়িয হারাম ও কুফরী হবে।
কাজেই, ইসলামের নামে গণতন্ত্রের নিয়ম-নীতি গ্রহণ করা তো দূরের কথা সমর্থন করলেও সে মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে ইবলিসের মতো কাট্টা কাফির ও চির মালউন হবে।
৩. সাক্ষীর ক্ষেত্রেঃ
আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
واستشهدوا شهيدين من رجالكم فان لم يكو نا رجلين فر جل وامراتن.
অর্থঃ- তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দুজন স্বাক্ষী দাঁড় করাও। যদি দুজন পুরুষ না পাওয়া যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ কর।” (সূরা বাক্বারা-২৮২)
অর্থাৎ ইসলামে দুজন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের স্বাক্ষ্যের সমান। কিন্তু গণতন্ত্রে তথা ভোট প্রথায় একজন পুরুষের স্বাক্ষ্য একজন মহিলার স্বাক্ষ্যের  সমান।
উপরোক্ত আয়ত শরীফে আল্লাহ পাক দুজন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের স্বাক্ষ্যের সমান বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধিরা একজন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের স্বাক্ষ্যের সমান বলে ধার্য্য করেছে।  এটা প্রকাশ্য কুফরীর শামিল। আল্লাহ পাক-এর বিধানের বিপরীত যারা আইন প্রণয়ন করবে তারা কাট্টা কাফির, জালিম ও ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
من لم يحكم بما انزل الله فاولئك هم الكفرون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা কাফির।” (সূরা মায়িদা- ৪৪)
من لم يحكم بما انزل الله فاولئك هم الظلمون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা যালিম।” (সূরা মায়িদা- ৪৫)
من لم يحكم بما انزل الله فاولئك هم الفسقون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা ফাসিক।” (সূরা মায়িদা- ৪৭)
কাজেই ইসলামের নামে যারা গণতন্ত্র করবে, তারা কাফির, যালিম ও ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত।
৪. পর্দার ক্ষেত্রেঃ
কুরআন শরীফে  সূরা নিসা, সূরা নূর ও সূরা আহযাবইত্যাদি সূরাসমূহে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোর আদেশ-নির্দেশ করা হয়েছে।
যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل للمؤمنين يغضوا من ابصا رحم ويحفظوا فرو جهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤ منت يغضضن من ا بصارهن ويحفظن فرو جهن ولا يبد ين زينتهن.
অর্থঃ- “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মুমিনাদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর-৩০,৩১)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى يا على لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الاجرة.
অর্থঃ- হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুণাহ্ লেখা হয়ে থাকে। (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن الحسن مرسلا قال بلغنى ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال لعن الله الناظر والمنظور اليه.
অর্থঃ- হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, আমার নিকট এই হাদীছ শরীফ পৌছেছে, যে দেখে এবং দেখায় তার প্রতি আল্লাহ পাক-এর লানত।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাক এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন।
গবেষণা করে দেখা গেছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক, সে প্রতি দুসেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশটি এবং এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীর্ াগুনাহ্ লিখা হয়। এ হিসাব একজন পুরুষ ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে। আর যদি কোন মিটিং মিছিলে উপস্থিত মহিলা-পুরুষের পরস্পর পরষ্পরের দৃষ্টির হিসাব করা হয় তাহলে গুনাহর পরিমাণ আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ধরা যাক, কমপক্ষে মিটিং-মিছিলের সময় ৩ ঘণ্টা আর পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ১০০+ ১০০= ২০০ জন। এখন একজন পুরুষ ও একজন  মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি করার কারণে এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরাহ গুনাহ  হয় তাহলে একশ জন পুরুষ ও একশ জন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে ৩৬ লক্ষ এবং তিন ঘণ্টায় হবে  ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ।
অথচ একজন মানুষ যদি একশ বছর হায়াত পায়। আল্লাহ পাক না করুন সে যদি  নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত (ফরয হওয়া সত্ত্বেও) কিছুই না করে তারপরও ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ হবেনা। যেমন, একশ বছরে অর্থাৎ জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয তা না করার কারণে ১টা কবীরা গুনাহ। যাকাত একশ বছরে একশটা ফরয তা না দেয়ার কারণে ১০০টা কবীরা গুনাহ। রোযা ২৯ বা ৩০ টা। হিসাবের সুবিধার্থে যদি ৩০টা ধরে নেয়া হয়  তা না রাখার কারণে একশ বছরে ৩,০০০ কবীরা গুনাহ। এরপর নামায দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ৫টা, এক ওয়াক্ত ওয়াজিব ১টা, সুন্নতে মুয়াক্কাদা- ফজরের ফরযের পূর্বে ১টা, যুহরের ফরযের আগে-পরে ২টা, মাগরিবের ফরযের পর ১টা, ইশার ফরযের পর ১টা মোট ৫টা তা আদায় না করার কারণে সবমিলে দৈনিক ১১টা কবীরা গুনাহ। বছরে  ত্রিশ তারাবীহ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা) তা আদায় না করার কারণে ৩০টা এবং দুঈদ (ওয়াজিব) তা আদায় না করার কারণে ২টা মোট ৩২টা কবীরা গুনাহ। এক বছরে নামায- ৪৪৭০০,  যাকাত- ১০০, রোযা- ৩০০০, হজ্জ- ১টা, সর্বমোট ৪,৭৮,০০১টা।
অর্থাৎ একশ বছর কোন ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত না করলে তার সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহর পরিমাণ হলো মাত্র চার লাখ সাত  হাজার আটশএকটা।
আর একজন পুরুষ কিংবা মহিলা যদি কোন মিটিং-মিছিলে যোগ দেয় যে মিটিং-মিছিলে পুরুষ বা মহিলার সংখ্যা কমপক্ষে একশজন এবং সেখানে একঘণ্টা অবস্থান করে তাহলে শুধু চোখের দৃষ্টির কারণে তার কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে আঠারো  লক্ষ। আর লোক সংখ্যা বেশী হলে এবং বেশী সময় অবস্থান  করলে কত লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহ হবে তা  বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে পর্দার কত গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
কাজেই যেসমস্ত মাওলানারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র করতে গিয়ে বেপর্দা হচ্ছে, তারা দৈনিক যে কত কোটি কোটি কবীরা গুনাহ্ করে থাকে তা আল্লাহ পাকই বেহ্তর জানেন।
এটা তো শুধু চোখের গুণাহর কথা বলা হলো। এমনিভাবে প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা গুনাহ হয়ে থাকে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم العينان زناهما النظر والاذ تان زناهما الاستماع واللسان زناه الكلام واليد زناها البطش والرجل زناها الخطى والقلب يهوى ويتمنى ويصدق ذلك الفرج ويكذ به.
অর্থঃ- হযরত আবু হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “চোখের ব্যভিচার হলো দৃষ্টি করা, কানের ব্যভিচার হলো শ্রবণ করা, মুখের ব্যভিচার হলো কথা বলা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো ধাবিত হওয়া, অন্তর চায় ও আকাঙ্খা করে এবং লজ্জাস্থান সেটাকে সত্য অথবা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।” (বুখারী, মুসলিম, কানযুল উম্মাল)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
الد يوث لايد خل الجنة.
অর্থঃ- দাইয়্যূছ বেহেশ্তে প্রবেশ করতে পারবেনা।দাইয়্যূছ ঐ ব্যক্তি যে নিজে পর্দা করেনা এবং তার অধীনস্ত মহিলাদেরও পর্দা করায়না।” (মুসনাদে আহমদ)
অর্থাৎ যারা বেপর্দা হয়ে থাকে হাদীছ শরীফের বর্ণনা মুতাবিক তারা সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দ্বারা অবৈধ কাজ তথা ব্যভিচারে মশগুল বা লিপ্ত।
পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে আরো উল্লেখ্য যে, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
النبى اولى بالمؤمنين من انفسهم وازواجه امهتهم.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ট এবং তাঁর আহলিয়াগণ তাদের মাতা।” (সূরা আহযাব-৬)
ما كان لكم ان تؤ ذوا رسول الله ولا ان تنكحوا ازوا جه من بعده ابدا ان ذلكم كان عند الله عظيما.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর বেছাল শরীফের পর তাঁর আহলিয়াগণকে আক্বদ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহ পাক-এর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।  (সূরা আহযাব-৫৩)
স্মরণীয় যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আহলিয়াগণ হচ্ছেন মুমিনগণের মাতা। যাদেরকে আক্বদ করা বা আক্বদের চিন্তা করাটাও উম্মতের জন্য হারাম ও কুফরী এবং সেটা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কষ্ট দেয়ার শামীল এবং স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর কাছে গুরুতর অপরাধ অর্থাৎ কুফরী। তারপরও উম্মুল মুমিনীনগণ যে কিরূপ পর্দা করেছেন তা নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ থেকে অনুধাবন করা যায়।
যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ام سلمة رضى الله تعالى عنها انها كانت عند رسول الله صلى الله عليه وسلم وميمو نة رضى الله عنهما اذ اقبل ابن ام مكتوم فد خل عليه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم احتجبا منه فقلت يا رسول الله صلى الله عليه وسلم اليس هو اعمى  لايبصر نا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم افعميا وان انتما الستما تبصرانه.
অর্থঃ- হযরত উম্মু সালামা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণিত, একবার তিনি এবং হযরত মাইমূনা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলেন। এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলেন অন্ধ ছাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মুমিনীনগণকে বললেন, আপনারা দুজন তাঁর থেকে পর্দা করুন। আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না। উত্তরে হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনারাও কি অন্ধ? আপনারাও কি তাঁকে দেখতে পাচ্ছেন না?” (মুসনাদে আহমদ, আবূ দাঊদত্ম
এখানে ফিকিরের বিষয় যে, কুরআন শরীফে যাদেরকে মুমিনগণের মাবলা হয়েছে, যাদের ব্যাপারে অন্তরে কোন প্রকার খারাপ চিন্তাও উদয় হওয়া সম্ভব নয়। তাদেরকেও পর্যন্ত আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্দা করার জন্য কঠোর তাকিদ দিয়েছেন।  তাহলে সাধারণ লোকের জন্য পর্দার কতটুকু গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
অর্থাৎ ইসলামে পর্দা করা ফরয। বেপর্দা  হওয়া শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ। কিন্তু গণতন্ত্রে বেপর্দা হওয়াতে দোষের কিছু নেই।
ইবলিস সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহ পাক তাকে অনেক নিয়ামত দিয়েছিলেন। সে ফেরেশ্তাদের মুয়াল্লিম ছিল। তাদেরকে সে দর্স-তাদরীস,  তালীম-তালক্বীন, ওয়ায-নছীহত করেছিল। লক্ষ লক্ষ বছর সে ইবাদত-বন্দিগীও করেছিল, আসমান-যমীন, বেহেশ্ত সবখানেই সে ইবাদত করেছে। এরপরও আল্লাহ পাক-এর মাত্র একটা আদেশ-অমান্য করার কারণে সে জান্নাত থেকে, আল্লাহ পাক-এর রহমত থেকে চির বিতাড়িত হলো, চির লানতগ্রস্ত হয়ে গেল।
আল্লাহ পাক যখন আদেশ করলেন,
اسجد والا دم فسجد وا الا ابليس ابى واستكبر وكان من الكفرين.
অর্থঃ- হে ফেরেশ্তারা (ইবলিসসহ) তোমরা সকলেই প্রথম নবী, রসূল ও খলীফা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা কর। ইবলিস ব্যতীত সকলেই সিজদা করলেন। ইবলিস সিজদা করতে অস্বীকার করলো এবং অহঙ্কার করলো। তাই সে কাফিরের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।” (সূরা বাক্বারা-৩৪)
আল্লাহ পাক আরো বলেন,
فاخرج منها فانك رجيم. وان عليك لعنتى الى يوم الد ين.
অর্থঃ তুমি জান্নাত থেকে বের হয়ে যাও। নিশ্চয়ই তুমি চির অভিশপ্ত। আর নিশ্চয়ই ক্বিয়ামত পর্যন্ত আমার লানত তোমার উপর।” (সূরা ছদ- ৭৭, ৭৮)
এখানে আরো উল্লেখ্য, যে সমস্ত মাওলানা ইসলামের নামে বেপর্দা হচ্ছে এবং বলছে যে, এত পর্দার প্রয়োজন নেই তারা আল্লাহ পাক-এর আদেশ অমান্য করে কোটি কোটি কবীরা গুণাহ করছে যা শক্ত নাফরমানীর অন্তর্ভূক্ত। তারা যদি হক্ব হয় তাহলে ইবলিছ যে ৬ লক্ষ বছর ইবাদত-বন্দেগী করলো এবং লাখ লাখ বছর ফেরেশ্তাদেরকে তালিম দিল সে কেন হক্ব হবে না? আর ইবলিছ যদি হক্ব হয় তাহলে সে কেন মালউন হলো?
আর ইবলিস যদি মালউন হয় তাহলে তারা কেন মালউন হবেনা। আর যে মালউন হবে সে চির জাহান্নামী হবে। কাজেই যে সমস্ত মাওলানারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র করতে গিয়ে বেপর্দা হচ্ছে তারা চির মালউন তথঅ চির জাহান্নামী।
৫. ছবির ক্ষেত্রেঃ
বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফইত্যাদি সমস্ত বিশ্বস্ত হাদীছ শরীফের কিতাবসমূহে ছবি তোলা শক্ত হারামবলে  বর্ণনা করা হয়েছে।  যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذ ابا عند الله المصورون.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ)
عن معاوية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان من اشد اهل النار يوم القيا مة عذا با المصورون.
অর্থঃ- হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই ক্বিয়ামতের দিন দোযখবাসীদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির কঠিন শাস্তি হবে, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে বা তোলে।” (মুসলিম শরীফ)
عن ابن عمر رضى الله تعالى عنه ان النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اصحاب هذه الصور الذ ين يصنعو نها يعذ بون يوم القيمة ويقال لهم احيوا ما خلقتم.
অর্থঃ হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু  তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় প্রাণীর ছবি তৈরীকারীদের ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা যে ছবিগুলো তৈরী করেছ তার মধ্যে প্রাণ দাও (কিন্তু তারা প্রাণ দিতে সক্ষম হবেনা)।” (নাসায়ী শরীফ)
عن ابن عباس رضى الله نعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من صور صورة عذ به الله حتى ينفخ فيها يعنى الروح وليس ينا فخ فيها.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোন প্রাণীর ছবি তৈরী করবে, আল্লাহ্ পাক তাকে ঐ ছবির মধ্যে প্রাণ না দেয়া পর্যন্ত শাস্তি দিবেন। কিন্তু সে তার মধ্যে প্রাণ দিতে সক্ষম হবে না।” (তিরমিযী শরীফ)
অর্থাৎ ইসলামে ছবি তোলা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কিন্তু গণতন্ত্রে ছবি তোলা হারাম নয়। বরং গণতন্ত্রে এ হারাম কাজকেই সব সরকারী কাজে তথা বেসরকারী কাজে বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকেও আমলে আনা হয়না।
৬. টিভি চ্যানেলের ক্ষেত্রেঃ
গণতন্ত্রে টিভি চ্যানেলগুলোকে তথাকথিত সংস্কৃতির বাহন ছাড়াও ইসলাম প্রচারের মিডিয়া হিসেবে গ্রহণ করা  হয়। এক্ষেত্রে বলা  হয় যে, টিভি চ্যানেলে ইসলামী প্রোগ্রাম দ্বারা ইসলামের প্রচার হয়ে থাকে। মুলতঃ এটা সম্পূর্ণই গোমরাহী কথা। বরং টিভিতে ইসলামী প্রোগ্রাম দ্বারা ইসলামের ক্ষতি হয়। কারণ, টিভিতে একদিকে ছবি আরেকদিকে বেপর্দা উভয়টিই আলাদাভাবে শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ্। এর দ্বারা হারাম ও কবীরা গুনাহরই প্রসার হয়ে থাকে। এছাড়া টিভিতে যারা ইসলামী প্রোগ্রাম করে তারা কেউই হক্কানী আলিম নয়। তারা হচ্ছে উলামায়ে ছূআর উলামায়ে ছূরা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে। তাই তাদের থেকে দ্বীন শিক্ষা করা সম্পূর্ণ নাজায়িয। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن سيرين رحمة الله عليه قال ان هذا العلم دين فا نظر وا عمن تا خذ ون دينكم.
অর্থঃ- হযরত ইবনে সিরীণ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই ইলম্ই হচ্ছে দ্বীন। অতএব তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছো, তাকে দেখে নেও।অর্থাৎ তার আক্বীদা-আমল কুরআন-সুন্নাহ সম্মত কিনা? তা যাছাই-বাছাই করে নেও।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এছাড়া হাদীছ শরীফে সরাসরি উলামায়ে ছূদের থেকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ্ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ويل لامتى من علماء السوء يتخذ ون هذا العلم تجارة يبيعو نها من امراء زما نهم ربحا لا نفسهم لااربح الله تجار تهم.
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, উলামায়ে ছূদের কারণে আমার উম্মতের ক্ষতিসাধন হবে অর্থাৎ জাহান্নামী হবে। তারা ইল্মকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করতঃ তাদের যুগের শাসকদের নিকট থেকে অর্থ ও পদ লাভের প্রচেষ্টা চালাবে। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ সকল উলামায়ে ছূদের বিরুদ্ধে এই বলে বদ্দোয়া করেন যে, “আয় আল্লাহ পাক! যারা নিজেদের ইল্ম দ্বারা দুনিয়াবী সরকারের সাথে ব্যবসা করতে চায় তাদের ব্যবসায় বরকত দিবেন না।” (কানযুল উম্মাল, মিশকাত শরীফ)
আখিরী রসূল, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো  ইরশাদ করেন,
عن زياد بن حدير رحمة الله عليه قال قال لى عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه هل تعرف ما يهد م الاسلام قال قلت لا قال يهد مه زلة العالم وجد ال المنا فق بالكتا ب وحكم الائمة المضلين.
অর্থঃ- হযরত যিয়াদ বিন হুদাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমাকে হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন,  তুমি কি জান কোন্ জিনিস ইসলামকে ধ্বংস করে? আমি বললাম- না, আমি জানিনা। তখন তিনি বললেন, ইসলামকে ধ্বংস করে আলিমের পদস্খলন, মুনাফিকদের কিতাব সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক এবং গোমরাহ শাসকদের আদেশ-নির্দেশ।” (দারিমী, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم يكون فى اخر الز مان دجالون كذا بون يأ تونكم من الاحاديث بما لم تسمعوا انتم ولا اباؤكم فاياكم واياهم لايضلو نكم ولايفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, ফতহুল মুলহিম)         
কেউ কেউ বলে, “টিভিতে অনেক কিছু শিক্ষণীয় বিষয় আছে।
এর জাওয়াব আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকেই দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে,
يسئلونك عن الخمر والميسر قل فيهمااثم كبير ومنا فع للناس واثمهما اكبر من نفعهما.
অর্থঃ- হে হাবীব! ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনাকে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে মদ ও জুয়া সম্পর্কে। আপনি বলে দিন, এতদুভয়ের মধ্যে রয়েছে মহাপাপ। আর মানুষের জন্য উপকারিতাও রয়েছে। তবে এগুলোর পাপ উপকারিতা অপেক্ষা অনেক বড়।” (সূরা বাক্বারা-২১৯)
এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, আল্লাহ্ পাক নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মদ ও জুয়ার মধ্যে ফায়দা রয়েছে। মদ পান করলে স্বাস্থ্য ভাল হয়, জুয়া খেললে রাতারাতি অনেক টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু এগুলোর মধ্যে ফায়দার চেয়ে গুণাহ্ বেশী বলে এগুলোকে হারাম করা হয়েছে। মদ ও জুয়ার মধ্যে উপকারীতার জন্য কেউ যদি তা জায়িয মনে করে, সে কুফরী করলো। তদ্রুপ টিভিতে প্রাণীর ছবির মাধ্যমে প্রচারিত শিক্ষণীয় বিষয়কে কেউ যদি জায়িয মনে করে এবং বলে এর দ্বারা ইসলামের প্রচার হচ্ছে তবে সেও কুফরী করলো।
অতএব, ইসলাম প্রচারের অজুহাত দিয়ে যারা টিভিকে জায়িয বলবে তারা কাফির হয়ে যাবে।  আর মুসলমান হয়ে যারা টিভিকে জায়িয বলবে তারা মুরতাদ হয়ে যাবে।
এখানে উল্লেখ্য ইসলামে ছবি তোলা, আঁকা, সম্পূর্ণ হারাম অথচ গণতন্ত্রীরা ছবি তুলতে বাধ্য করে থাকে তাদের মনগড়া আইন দ্বারা অর্থাৎ গণতন্ত্রীরা তাদের মনগড়া আইন ইসলামের নামে চাপিয়ে ইসলামী আইন বাতিল করতে চায়। অথচ হাজার হাজার হাদীছ শরীফ দ্বারা ছবি তোলা ও আঁকা হারাম বর্ণিত রয়েছে। এরপরও কি করে ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা জায়িয বলা যেতে পারে?
উল্লেখ্য, বণী ইসরাইল দরবেশ বালআম বিন বাউরা তিনশ বছর সাধনা করে আল্লাহ পাক-এর কিছু নিয়ামত হাছিল করেছিল। বর্ণিত রয়েছে, সে উপরের দিকে তাকালে আল্লাহ পাক-এর আরশে মুয়াল্লা দেখতে পেত এবং নিচের নিকে তাকালে তাহ্তাস্সারা পর্যন্ত দেখতে পেত। তার দরবারে প্রতিদিন দশ থেকে বারো হাজার আলিম তালীম নিতো। সে কোন দুয়া করলে তা কবুল করা হতো।
একবার সে তার স্ত্রীর প্রলোভনে পড়ে আল্লাহ পাক-এর নবী হযরত মুসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম ও হযরত ইউশা বিন নূন আলাইহিস্ সালাম-এর বিরোধিতা করে উনাদের বিরুদ্ধে বদ দুয়া করে। এ কারণে তার প্রতি আল্লাহ পাক-এর লানত বর্ষিত হয়। তার চেহারা বিকৃত হয়ে কুকুরের চেহারায় পরিণত হয় এবং এ অবস্থায় সে মারা যায়।
তাহলে যে সমস্ত মাওলানারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ফতওয়ার বিরুদ্ধে ফতওয়া দেয় অর্থাৎ তিনি হাজার হাজার হাদীছ শরীফে ছবি তোলা, আঁকা হারাম ফতওয়া দিয়েছেন; এর বিরোধিতা করে ইসলামের নামে গণতন্ত্র করার নাম দিয়ে ছবি তোলা ও আঁকাকে জায়িয ফতওয়া দেয় তাহলে তারা কি পরিমাণ লানতগ্রস্থ হবে এবং তাদের কতটুকু আকৃতি বিকৃতি হবে সেটা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়।
আল্লাহ পাক-এর হাবীব যেহেতু রহমতুল্লিল আলামীন সেহেতু তাঁর উম্মত হওয়ার কারণে হায়াতে আকৃতি বিকৃতি হতে দেখা যায় না। কিন্তু মৃত্যুর পর কিংবা কবরে অবশ্যই বিকৃতি ঘটবেই। কারো শূকুরের, কারো কুকুরের, কারো বানরের ইত্যাদি ছূরতে।         
এমনিভাবে গণতন্ত্রে আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা কুরআন-সুন্নাহ তথা ইসলামী বিধানের খিলাফ। যথা-
৭. ইসলামে খিলাফত পরিচালনার জন্য তথা খলীফা হওয়ার জন্য যে সমস্ত শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে তাহলো- মুসলমান হওয়া, পুরুষ হওয়া, আক্বল হওয়া, স্বাধীন হওয়া, বালেগ হওয়া, বাকশক্তি সম্পন্ন হওয়া, শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন হওয়া, দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন হওয়া, সাহসী ও শক্তি সম্পন্ন হওয়া, আদেল ও পরহিযগার হওয়া মুজাহিদ হওয়া, কুরাইশ হওয়া।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى بكرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه سلم لن يفلح قوم ولوا امرهم امراة.
অর্থঃ হযরত আবূ বাকরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ ক্বওম কখনই কল্যান বা সফলতা লাভ করতে পারে না যারা তাদের শাসনভার কোন মহিলার উপর ন্যাস্ত করেছে।” (বুখারী, তিরমিযী, নাসায়ী)
অর্থাৎ ইসলামী খিলাফতে মহিলা কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব ও খলীফা হওয়া কখনো গ্রহনযোগ্য নয়। বরং হারাম ও নাজায়িয।
আর গণতন্ত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তথা রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন, ফাসিক-ফুজ্জার, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজুসি, জাহিল-যালিম ইত্যাদি যে কেউ হতে পারে।
গণতন্ত্রে মহিলা কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব ও প্রধান হওয়াটা সব অবস্থায়ই গ্রহনযোগ্য। এমনকি মুসলমান ও কাফির হওয়ার মধ্যেও কোন পার্থক্য নেই।
উল্লেখ্য, খলীফা হওয়ার জন্য যেসব শর্ত নির্ধারণ বা ধার্য্য করা হয়েছে তা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে। অর্থাৎ ওহী দ্বারা ফয়সালাকৃত। আর রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার জন্য যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা মানব রচিত আইনের দ্বারাযার সাথে ওহীর কোন সম্পর্ক নেই।
৮. গণতন্ত্রে অধিকাংশের মত গ্রহনযোগ্য। অর্থাৎ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি যে মত বা রায় পেশ করবে সেটাই কার্যকরী হবে। তা দ্বীনি হোক বা বেদ্বীনি হোক, কুফরী হোক অথবা শেরেকী হোক তা দেখার বিষয় নয়। বরং দেখার বিষয় হলো অধিকাংশ জনগণ কি চায় সে অনুযায়ী ফয়সালা হবে।
কিন্তু ইসলামে অধিকাংশের মতকে প্রাধান্য দেয়া হয় না বা তার কোন গুরুত্ব নেই। বরং প্রাধান্য দেয়া হয় কুরআন ও সুন্নাহর বিধানকে। অর্থাৎ ওহীর নির্দেশকে। যদিও তা একজনের পক্ষ থেকে বলা হোক এবং তিনি যত সাধারণ ব্যক্তিই হোন না কেন। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عن العرباض بن سارية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم والسمع والطاعة وان كان عبدا حبشيا.
অর্থঃ হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঐ ব্যক্তির কথা শুন এবং মান্য কর যদিও তিনি হাবশী কৃতদাসও হয়ে থাকেন।” (মিশকাত শরীফ)
৯. গণতন্ত্রের আইন পরিবর্তন ও পরিবর্ধনযোগ্য। এবং অবশ্যই তা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে হবে। কারণ- গণতন্ত্র একটা নাক্বিছ তথা অপূর্ণ মানব রচিত শাসন ব্যবস্থা। তাই তা প্রয়োজন অনুযায়ী পার্লামেন্ট বা সংসদ বসে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের মন মতো ও সুবিধামত আইন তৈরি করে থাকে এবং ভেঙ্গেও থাকে। যেহেতু গণতন্ত্রের সাথে ওহীর কোন সম্পর্ক নেই।
কিন্তু ইসলামের বিধান অপরিবর্তনীয়। কারণ তা ওহীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর ওহীর দরজা যেহেতু বন্ধ হয়ে গেছে সেহেতু তা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার প্রশ্নই আসতে পারে না। ইসলামী বিধানের পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের চেষ্টা করার অর্থ হলো ওহী দাবী করা। আর ওহী দাবী করার অর্থ হলো নবী দাবী করা। আর যে নবী দাবী করবে সে কাট্টা কাফির হবে। যেমন কাদিয়ানী নবী দাবী করে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়েছে।
 আরো উল্লেখ্য ইসলাম শুধু কামিল বা পরিপূর্ণ শাসন ব্যবস্থায়ই নয় বরং ইসলাম হচ্ছে কামিল বা পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবন বিধান।
১০. গণতন্ত্র যেহেতু কোন জীবন বিধান নয় বরং নাক্বিছ বা অপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা মাত্র। সেহেতু গণতন্ত্রে হালাল-হারাম, ফরজ-ওয়াজিব, ইবাদত-বন্দেগী ইত্যাদির বিধান বা আদেশ নির্দেশ নেই। বরং ইসলামের অনেক হারামকে তারা জরুরী ও প্রয়োজন বলে করতে বাধ্য করে। আর ক্ষেত্র বিশেষে অনেক ফরজ-ওয়াজিবকে অপ্রয়োজনীয় বলে করতে বাধাও দিয়ে থাকে। কারণ তা মানব রচিত ও  তাতে মানবের মতকে প্রাধান্য দেয়া হয়।
আর ইসলাম যেহেতু ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেহেতু ইসলামে হালাম-হারাম, ফরজ-ওয়াজিব, ইবাদত-বন্দেগী অর্থাৎ আক্বায়েদ, ইবাদত, মুয়ামিলাত, মুয়াশিরাত, তাছাওওফ দ্বীন ও দুনিয়ার সব প্রকার সমস্যার সমাধানের বিধান বা হুকুম-আহকাম বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে।
মূলতঃ যে কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সংবিধানের প্রস্তাবনা, মৌলিক অধিকার, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ তথা দেওয়ানী ও ফৌজদারী দণ্ডবিধি ইত্যাদি বিষয়ে অনেক অনেক অনৈসলামিক আইন তথা আইনের উৎস সম্পৃক্ত থাকে যার প্রেক্ষিতে দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই অনৈসলামিক আইন ও প্রবাহ সূচিত হয় এবং কথিত গণতান্ত্রিক আবহে তার নিরসন কখনও সম্ভব নয়।
গণতন্ত্রে সার্বভৌমত্ব জনগণের কিন্তু
ইসলামে সার্বভৌমত্ব আল্লাহ্ পাক-এর
উল্লেখ্য, পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে,    গণতন্ত্রের মূল বিষয় বা ভিত্তিসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো সার্বভৌমত্ব জনগণের। অর্থাৎ জনগণই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল। অথচ আল্লাহ্ পাক সূরা মায়িদার”- ১২০নং আয়াত শরীফে বলেন,
لله ملك السموت والارض وما فيهن وهو على كل شىء قدير.
অর্থঃ- আসমান ও জমিন এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সমস্ত কিছুরই মালিক আল্লাহ পাক। আর তিনিই সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
কালামুল্লাহ্ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
هو الله الخالق البا رئ المصور له الاسماء الحسنى يسبح له ما فى السموت والا رض وهو العزيز الحكيم.
অর্থঃ- তিনিই আল্লাহ্ তায়ালা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামসমূহ তাঁরই। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।” (সূরা হাশর-২৪)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
قل اللهم ملك الملك تؤتى الملك من تشاء وتنزع الملك ممن تشاء وتعز من تشاء وتذل من تشاء بيدك الخير انك على كل شىء قد ير.
অর্থঃ- বলুন, {হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম} আয় আল্লাহ্ পাক! সমগ্র রাজ্যের মালিক আপনি। আপনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য প্রদান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা করেন তার থেকে রাজ্য ছিনিয়ে নেন। আর যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন। আপনারই হাতে যাবতীয় কল্যাণ নিহিত। নিশ্চয়ই আপনিই সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।” (সূরা আলে ইমরান-২৬)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
ولله ما فى السموت وما فى الا رض يغفر لمن يشاء ويعذب من يشاء والله غفور رحيم.
অর্থঃ- আর যা কিছু আসমান ও জমিনে রয়েছে, সে সবই মহান আল্লাহ্ পাক-এর। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা আযাব দান করবেন। আর আল্লাহ পাক হচ্ছেন ক্ষমাকারী, করুণাময়।” (সূরা আলে ইমরান-১২৯)
এছাড়া অনুরূপ আয়াত সূরা আনয়াম-১৭,৫৭, সূরা ফাতির-১০, সূরা বাক্বারা-১১৭, সূরা শুরা-৭৩, সূরা আনয়াম-৯৫, সূরা মুমিন-৬৮, সূরা ফুরকান-২, সূরা হাদীদ-৩, সূরা ছাফফাত-১৮০-১৮২, সূরা জাছিয়াত-৩৬,৩৭ সহ আরো অনেক আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক-এর সার্বভৌমত্বের কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে।
কাজেই, “সার্বভৌমত্ব জনগণেরএকথা বলা ও মানা কুফরী। অবশ্য যদিও কেউ কেউ বলে থাকে যে, “সার্বভৌমত্ব জনগণেরএটা আমরা মানিনা, অথচ তারা পূর্ণরূপেই ইসলামের নামে গণতন্ত্র মানে ও করে।  তাদের জন্য আফসুস! তারা এত অজ্ঞ যে, তারা গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের সাথে যে কি সম্পর্ক এবং সার্বভৌমত্বই বা কাকে বলে সে বিষয়ে তাদের বিন্দুতম জ্ঞান নেই বললেই চলে।
কারণ গণতন্ত্রে জনগণকে যে সার্বভৌমত্বের অধিকারী বলা হয়েছে, সে সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণ ভোট দেয়ার ব্যাপারে কারো মুখাপেক্ষী নয় এবং সে ভোট কাকে দেবে বা দেবেনা, সে বিষয়েও কারো কাছে তাকে জবাবদিহী করতে হয়না।
অতএব, যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বা তা সমর্থন করে, তারা সার্বভৌমত্ব যে জনগণের, আল্লাহ্ পাক-এর নয়, তা ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায়ই হোক মেনে নেয় এবং ভোট দানের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن عمرو بن شعيب عن ابيه عن جده ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ليس منا من تشبه بغير نا.
অর্থঃ- হযরত আমর বিন শুয়াইব তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তি আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়, যে বিজাতীয়দের সাথে সাদৃশ্য রাখে।” (মিশকাত)
কেননা এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদের দলভুক্ত এবং তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (মুসনদে আহমদ, সুনানে আবূ দাউদ)
উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট  ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলাম হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক-এর পক্ষ হতে তাঁর পিয়ারা হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত একমাত্র, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, মনোনীত ও পরিপূর্ণ দ্বীন। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আর গণতন্ত্র হচ্ছে- ইহুদী-খ্রিস্টান তথা বিধর্মীদের দ্বারা রচিত  তথা মানবরচিত একটি অপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা মাত্র। যার সাথে ইসলামের ও ওহীর কোনই সম্পর্ক নেই। যদি তাই হয়ে থাকে তবে ইসলাম ও গণতন্ত্রকে কি করে এক বলা যেতে পারে?
মুলতঃ ইসলাম ও গণতন্ত্রকে এক বলার অর্থ হলো ইসলামকে মানব রচিত মতবাদ হিসেবে আর বিধর্মীদের মতবাদ গণতন্ত্রকে ওহী হিসেবে সাব্যস্ত করা; যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং ইসলাম ও গণতন্ত্র এক নয় বরং সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
অতএব সার্বভৌমত্ব যদি জনগণের হয় তাহলে ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা কি করে জায়িয হতে পারে? অর্থাৎ ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা সম্পূর্ণরূপে নাজায়িয ও হারাম। আর জায়িয মনে করা  কাট্টা কুফরী।
(২)
নির্বাচন ও ভোট প্রথার উৎপত্তি কোথায় এবং কবে? কোন নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীন ভোট ও নির্বাচন করেছেন কি?
এর জবাবে বলতে হয় যে, কোন নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীন ও ইমাম-মুজতাহিদ ভোট ও নির্বাচন করেননি। আরো উল্লেখ্য যে, তাঁরা ভোট ও নির্বাচন করেছেন এমন কোন প্রমাণও কেউ  পেশ করতে পারবে না। আর প্রমাণ করার  জন্য ক্বিয়ামত পর্যন্ত সময় দেয়া হলো।
কারণ, ভোট প্রথার উৎপত্তিই হয়েছে ইহুদী-খ্রিষ্টান তথা বিধর্মীদের দ্বারা এবং তা ইদানিংকালে আধুনিক গণতন্ত্রের নামে ব্যাপক প্রচার ও প্রসার লাভ করেছে।
নিম্নে দলীল-প্রমাণের মাধ্যমে ভোটের উৎপত্তি ও ইতিহাস তুলে ধরা হলো-
নির্বাচনের ইতিহাসঃ প্রাচীন ইতিহাস
প্রাচীন গ্রীসে খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্বাচন প্রথা চালু ছিল। এছাড়া রোমান সিনেটেও এ পদ্ধতি চালু ছিল।
Election সম্পর্কে ধর্ম, মিথলজি বিষয়ক Encyclopedia Man, Myth's Magic-এ বলা হয়েছে- Election, the world is derived from the Greek word eloge (choice). The idea is basic to the traditional structure of Christian theology. অর্থাৎ ইলেকশন বা নির্বাচন শব্দটি উৎসরিত হয়েছে বা উৎপত্তি লাভ করেছে গ্রীক শব্দ Eloge হতে যার অর্থ ছিল পছন্দ। নির্বাচনের ধারণা প্রাচীন খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের ব্যাখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত।
এ ব্যাখ্যাটি এরূপ যে, তাদের God নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিবর্গ অথবা জাতিকে বিশেষভাবে পছন্দ করতেন তার রাজত্বে বিশেষ কিছু ভূমিকা পালনের জন্য, যাকে বলা হত নির্বাচন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, The idea that God specially choses certain individuals or nations for some peculiar role in the scheme of his providence is khown as election.
উল্লেখ্য, খ্রীষ্টান ধর্মতত্ত্বে নির্বাচনের ধারণাটি অদৃষ্টবাদ থেকে এসেছে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ In Christian theology the idea of election became associated with predestination, খ্রীষ্টানদের আরো ধারণা যে, তাদের খোদার পছন্দনীয় বা elected অবশ্যই স্বল্প হবে। Many are called but few are chosen (Mathew- 22-14)
মূলকথা হচ্ছে, নির্বাচন খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত একটি বিষয়।  এ বিষয়ে Man, Myth & Encyclopedia Magic-এ আরো বলা হয়েছে, "However that the doctrine of election found its most notable expression in Christianity.

আধুনিক কালের ইতিহাস
তবে আধুনিক ভোটদান ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে। ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে বিপ্লবের পর রাজনৈতিক ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে চলে যায়। পার্লামেন্ট ১৮৩২ সালে প্রথম সংস্কার আইনে সমস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে ভোটাধিকার দেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৮৬৭ সালে কারখানার শ্রমিকদের, ১৮৮৪ সালে কৃষি মজুরদের, ১৯১৮ সালে সীমিত সংখ্যক নারীদের এবং ১৯২৮ সালে সকল নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়। ১৯১৮ সালের পূর্বে বৃটেনে বিশ্ব বিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা সাধারণ কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র এ দুটি কেন্দ্রের ভোটাধিকারী ছিল। পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে এ সকল পদ্ধতির সমাপ্তি ঘটিয়ে একুশ বছর বা তদুর্ধ বয়সের সকল সম্প্রদায়ের জন্য সার্বজনীন ভোটাধিকার দেয়া হয়।
অপরদিকে আমেরিকায় ১৮৭০ খৃষ্টাব্দে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয় যে, কোন ব্যক্তিকে তার জাতি, ধর্ম অথবা পূর্ব দাসত্বের জন্য ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা। ১৯৩৩ সালে সপ্তদশ সংশোধনীতে সিনেট সদস্যদের, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯২০ সালে মহিলা ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়। ১৯৭১ সালে ভোটারদের বয়স সীমা কমিয়ে ১৮ বছরে আনা হয়।
ভোটের প্রকারভেদ ও ব্যালট প্রথা
উল্লেখ্য, ভোট হলো দুপ্রকার- (১) প্রকাশ্য ভোটদান, (২) গোপনে ভোটদান।
প্রকাশ্য ভোটদান ব্যবস্থায় ভোটদানকারীরা বিপরীত পক্ষীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এটি সর্বত্রই পরিত্যক্ত হয়েছে।
আর গোপনে ভোটদান ব্যবস্থায় ভোটদানকারীরা কারো দ্বারা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা, তারা তাদের ভাষায় নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে ভোট প্রদান করতে পারে। তাই ব্যালট পেপারের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা প্রায় সর্বত্রই চালু রয়েছে।
ব্যালট
ব্যালট হচ্ছে একটি কাগজের শীট, যার দ্বারা গোপন ভোট প্রদান করা হয়। Ballot শব্দটি এসেছে ইটালী ব্যালোটা Ballotia হতে। যার অর্থ হচ্ছে- ছোট বল। এটি এভাবে উৎপত্তি হয়েছে যে, প্রাচীনকালে এর দ্বারা ভোট গ্রহণ করা হতো এবং গ্রীসে এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল। জনতার দরবারে অথবা আইন সভায় খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এবং কখনো কখনো রোমান সিনেটে এই পদ্ধতি চালু ছিল। সাধারণতঃ সাদা এবং কালো বল হ্যাঁ এবং না বোধক ভোটে ব্যবহৃত হতো।
অপরদিকে আমেরিকায় উপনিবেশিক কালের শুরুতে সীম শস্যকণা ব্যালট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
উল্লেখ্য, কোন কোন সংগঠন এখনো নতুন সদস্য গ্রহণে ভোটাভুটিতে সাদা এবং কালো বলের ব্যবহার করে থাকে।
বর্তমানে গণতান্ত্রিক দেশসমূহে কাগজের ব্যালট বা ব্যালট পেপার নির্বাচনে ভোটারদের ছদ্মনাম হিসেবে কাজ করে এবং এভাবেই অধিকাংশ ভোটারের ইচ্ছা প্রকাশ পায়।
গোপন ভোটদানের পদ্ধতি হিসেবে ব্যালট পেপার ব্যবহারের প্রথম প্রামাণিক ঘটনা ঘটে ১৬২৯ সালে আমেরিকার চার্চে। অতঃপর আমেরিকান ঔপনিবেশে এই ব্যালট পেপারের প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে। এরপরে ধীরে ধীরে ব্যালট পেপারের অনেক সংস্কার হয় এবং পরবর্তীতে একই কলামে বিভিন্ন দলের প্রতীক সংযুক্ত হয়, যা সাধারণতঃ বর্ণমালা অনুযায়ী সংযুক্ত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালের মধ্যে এই ব্যালট প্রথা প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
সাধারণভাবে নির্বাচন বলতে বুঝায়, “একাধিক পদপ্রার্থী থেকে ভোটদানের মাধ্যমে একজনকে নির্বাচিত করা।যে বা যারা পদের মুখাপেক্ষী তারা তাদের পদের জন্য মানুষের নিকট তাদের মুখাপেক্ষীতা প্রকাশ করে থাকে তখন মানুষ তাদের বিবেচনায় যাকে উপযুক্ত মনে করে তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। উল্লেখ্য, নির্বাচিত ব্যক্তি পদের মুখাপেক্ষী, পদ নির্বাচিত ব্যক্তির মুখাপেক্ষী নয়।
আর ভোট হচ্ছে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার পদ্ধতি যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি পারে তার পছন্দনীয়কে চিহ্নিত করতে বা প্রকাশ করতে এবং যে পছন্দের সংখ্যা বেশী হয়, তাই গ্রহণযোগ্য হয়।    
উল্লেখ্য, সংবিধানে ভোটদানের জন্য কিছু শর্ত-শারায়েত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- দুটি। (১) বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া, (২) ভোটদাতার বয়স আঠারো বছরের কম নয়।
আর এক্ষেত্রে যে অযোগ্যতা, তা হলো- (১) কোন যোগ্য আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেনি। (২) ১৯৭২ সালের বাংলাদেশে যোগসাজসকারী (বিশেষ ন্যায় পীঠ) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত হননি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এসব শর্ত দ্বারা ইসলাম পালিত হয় না।
প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। কেননা নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র বাস্তবায়িত হয়। আর নির্বাচনের প্রয়োজন তখনই হয় যখন কোন পদে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হয়। একাধিক প্রার্থীর মধ্যে উক্ত পদ একজনকে দেয়ার লক্ষ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর উক্ত নির্বাচন ভোট প্রয়োগের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়।
উল্লেখ্য, বর্তমান গণতান্ত্রিক নির্বাচন, তার পদপ্রার্থী হওয়া ও পদপ্রার্থীকে ভোট দেয়া ইত্যাদি কাজগুলোকে ইসলামের নামে ফরজ-ওয়াজিব হিসেবে উল্লেখ করা নাজায়েয ও হারাম।
আরো উল্লেখ্য, গণতন্ত্রের মূল বিষয় বা ভিত সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো সার্বভৌমত্ব জনগণের। অর্থাৎ জনগণই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল অথবা গণতন্ত্রে জনগণই সকল সার্বভৌমত্বের মালিক।
স্মরণীয়, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেহেতু বিশাল এলাকা ও জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত সেহেতু জনসাধারণের পক্ষে সরকার পরিচালনায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। তাই জনগণ ভোটদানের মাধ্যমে তাদের সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রতিনিধি নির্বাচন করে পরোক্ষভাবে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে।
অতএব, ভোটের ও নির্বাচনের উপরোক্ত ইতিহাস থেকে আমরা অবগত হলাম যে, ভোটের উৎপত্তি হয়েছে বেশী দিন নয়। কয়েক শবছর হবে। যদি তাই হয় তাহলে এ কথা বলা কি করে সঠিক বা জায়িয হতে পারে যে, নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীনগণ ভোট করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ)
মূলতঃ উনাদের সময় তো ভোটের কোন অস্তিত্বই ছিলনা। তাছাড়া ভোট যেহেতু বিধর্মীদের প্রবর্তিত নিয়মনীতি তাই নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীনগণ তা করার প্রশ্নই উঠেনা। মূলতঃ তাদের প্রতি এরূপ তোহমত দেয়া সুস্পষ্ট কুফরী।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথাই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, “নির্বাচনযার ইংরেজী হচ্ছে ইলেকশন” (Election) যা গ্রীক এ্যালোজি” (Eloge) শব্দ থেকে উৎসারিত বা উৎপত্তি লাভ করেছে। যা পরবর্তীতে খ্রীষ্ট ধর্মের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত হয়ে খ্রীষ্ট ধর্মের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার সাথে ইসলামের কোন দিক থেকে কোন প্রকার সম্পর্ক নেই।  বরং যা জনগণকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলে প্রতিপন্ন করে আর এই ভোট পদ্ধতি ইসলামের শুরা বা পদ্ধতি থেকেও অঙ্কুরিত হয়নি। বরং এর প্রতিটি অনুষঙ্গ যথা সার্বজনীন ভোটাধিকার, প্রার্থী হওয়া, ব্যালট প্রথা, গননা ও মূল্যায়ন ইত্যাদি সবকিছুই এসেছে ইহুদী-নাছারাদের থেকে।
তাই এই ভোটের রাজনীতি ইসলামের নামে করা শুধু অবৈধই নয় বরং একে ইসলামের নামে বৈধ বলাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত
আর গণতন্ত্রই যদি ইসলামে নাজায়িয হয় অর্থাৎ ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা হারাম হয়। আর নির্বাচন পদ্ধতিও যদি ইসলামে গ্রহণযোগ্য না হয়। অর্থাৎ ইসলামের নামে নির্বাচন করাও নাজায়িয হয় তাহলে ভোট প্রথা কি করে  ইসলামসম্মত হতে পারে? অর্থাৎ ভোট প্রথা ইসলামের নামে করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।  শরীয়তের মাসয়ালা হলো, হারামকে হালাল বলা ও হালালকে হারাম বলা কুফরী। তাহলে যা নাজায়িয ও হারাম তা কি করে ওয়াজিব হতে পারে? বরং ইসলামের নামে ভোট প্রথা সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম। জায়িয বলা কুফরী।
(৩)
ইসলামী শরীয়তের  দৃষ্টিতে পদপ্রার্থী হওয়া
বা ভোট চাওয়া জায়িয কিনা?
এর জবাবে বলতে হয় যে, ইসলামের নামে গণতন্ত্র করাই যেখানে হারাম সেখানে ইসলামের নামে ভোট, নির্বাচন করা, ভোট চাওয়া, পদপ্রার্থী হওয়া বা ভোট দেয়া কি করে জায়িয হতে পারে? মূলতঃ ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করা বা ভোট দেয়া ও চাওয়া সম্পূর্ণ হারাম।

ইসলামের নামে পদপ্রার্থী
হওয়াও হারাম
ভোট দেয়া, চাওয়া যেরূপ হারাম তদ্রুপ পদপ্রার্থী হওয়াও শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম। কারণ,আল্লাহ পাক-এর রাসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে পদপ্রার্থী হয় আমরা তাকে পদ দেইনা।
উল্লেখ্য, যারা পদপার্থী হয়, এমনকি যারা পদের আকাংখা করে, তাদেরকে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পদ দেননি। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
عن ابى موسى رضى الله تعالى عنه قال دخلت على النبى صلى الله عليه وسلم ا نا ورجلان من بنى عمى فقال احدهما يا رسول الله امر نا على بعض ما ولاك الله و قال الاخر مثل ذلك فقال انا والله لا نولى على هذا العمل احدا ساله ولا احدا حرص عليه وفى ر وا ية قال لا نستعمل على عملنا من ار اده.
অর্থঃ- হযরত আবূ মুসা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি ও আমার দুজন চাচাত ভাই হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট গেলাম। সে দুজনের একজন বললো, হে আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ পাক আপনাকে যে সকল কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন, আপনি আমাদেরকে ওটার মধ্য হতে কোন একটির শাসক নিযুক্ত করুন এবং দ্বিতীয়জনও অনুরূপই বললো। উত্তরে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আল্লাহ পাক-এর কসম! আমরা এ কাজে (শাসক পদে) এমন কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করিনা, যে ওটার প্রার্থী হয় এবং ঐ ব্যক্তিকেও নিয়োগ করিনা, যে ওটার লোভ বা আকাঙ্খা করে।” (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
عن عبد الرحمن بن سمرة رضى الله تعالى عنه قال قال لى رسول الله صلى الله عليه وسلم لاتسال الا مارة فانك ان اعطيتها عن مسئلة وكلت اليها وان اعطيتها عن غير مسئلة اعنت عليها.
অর্থঃ- হযরত আব্দুর রহ্মান বিন সামুরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ্ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, “(হে সামুরা!) তুমি নেতৃত্ব বা পদ চেওনা। কেননা, যদি তোমাকে ওটা চাওয়ার কারণে দেয়া হয়, তবে ওটা তোমার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। আর যদি ওটা তোমাকে চাওয়া ব্যতীত দেয়া হয়, তাহলে এ ব্যাপারে তোমাকে সাহায্য করা হবে।” (মুয়াত্তা শরীফ)
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم تجدون من خير الناس اشدهم كرا هية لهذا الامر حتى يقع فيه.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরায়রা রদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এই শাসনভারকে যারা কঠোরভাবে ঘৃণা করে, তাদেরকে তোমরা উত্তম লোক হিসেবে পাবে, যে পর্যন্ত তারা তাতে লিপ্ত না হয়।” (মুয়াত্তা)
অর্থাৎ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ব্যক্তিকে পদপ্রার্থী হতে নিষেধ করেছেন। গণতন্ত্রই যদি ইসলামের নামে করা হারাম হয়। আর ইসলামের নামে নির্বাচন করাও  যদি নাজায়িয হয়; তাহলে ভোট প্রথা কি করে  ইসলামসম্মত হতে পারে?
অর্থাৎ ভোট প্রথা ইসলামের নামে করা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারামশরীয়তের মাসয়ালা হলো, হারামকে হালাল বলা ও হালালকে হারাম বলা কুফরী। তাহলে যা নাজায়িয ও হারাম তা কি করে ওয়াজিব হতে পারে? বরং ইসলামের নামে ভোট প্রথা সম্পূর্ণই নাজায়িয ও হারাম।
উপরোক্ত  বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থাৎ ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া ইত্যাদি সবই হারাম।
অতএব যারা ইসলামের নামে গণতন্ত্র করে পদপ্রার্থী হওয়া ও ভোট চাওয়া জায়িয বলবে শরীয়তের ফতওয়া মোতাবেক তারা কাট্টা কাফির হবে। আর যে কাফির হয় সে চির জাহান্নামী হয়।
(৪)
ভোট একটি আমানত, স্বাক্ষ্য ও উকিল নিয়োগ-
মুফতী শফী ও শামছুল হক ফরীদপুরী ছাহেব
ও তার অনুসারীদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক
ও দলীল ভিত্তিক?
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, ভোট একটি আমানত, স্বাক্ষ্য, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ ইত্যাদি মুফতী শফী ও শামছুল হক্ব ফরীদপূরী ছাহেব ও তার অনুসারীদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই মনগড়া বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন  ও তাফসীর বির রায়ের অন্তর্ভুক্ত। নিম্নে উল্লেখিত প্রতিটি বিষয়ে পৃথক পৃথকভাবে দলীলভিত্তিক আলোচনা করা হলো-
 ভোট আমানত নয়
অতএব ভোট প্রথা ওয়াজিব বলার প্রশ্নই আসেনা বরং শুধু ইসলামের নামে জায়িয বলাটাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ভোট প্রদান হচ্ছে কথিত সুনাগরিকের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে ভোটকে  আমানত হিসেবে উল্লেখ করা হয় না। কারণ ভোটদাতাকে যদি আমানতদার বলা হয় তবে প্রশ্ন উঠে, তাকে এ আমানত দিল কে?
যারা ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করে থাকে তারা নিম্নের আয়াত শরীফকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। অথচ নিম্নের আয়াত শরীফের সাথে ভোটের কোনই সম্পর্ক নেই।
আমানত সংক্রান্ত আয়াত শরীফ, তার অর্থ, শানে নুযূল
ও ব্যাখ্যা  উল্লেখ করা হলো-
ان الله يامركم ان تؤ دوا الامنت الى اهلها واذا حكمتم بين الناس ان تحكموا بالعدل ان الله نعما يعظكم به ان الله كان سميعا بصيرا.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে আদেশ করেন যে, তোমরা আদায় করে দাও আমানতসমূহকে তার হকদারদেরকে এবং যখন তোমরা মানুষের মধ্যে ফায়সালা বা বিচার করবে, তখন ন্যায়ের সাথে বিচার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদেরকে উত্তম উপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা নিসা-৫৮)
শানে নুযুলঃ হিজরতের পূর্বে জাহিলিয়াতের যুগে, সপ্তাহে দুদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার কাবা শরীফের দরজা খোলা হতো। যাতে যারা কাবা শরীফে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক, তাঁরা যেন প্রবেশ করতে পারে। এবং উক্ত ঘরের চাবির জিম্মাদার ছিলেন উসমান বিন তাল্হা।
একদা কাবা শরীফের দরজা খোলার পর আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু সংখ্যক হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণকে নিয়ে প্রবেশ করতে আসলে, তখন সে বাঁধা প্রদান করে এবং কিছু কটু কথা বলে। এ সকল অশালীন ও অশোভনীয় আচরণ লক্ষ্য করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে উসমান! এমন একদিন আসবে, যেদিন তুমি এ কাবা ঘরের চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে এবং এ চাবি যাকে ইচ্ছা তাকে দেয়ার অধিকারও আমার থাকবে।ইত্যাদি আরো কিছু কথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিয়ারত করে চলে গেলেন। পরবর্তীতে যখন মক্কা শরীফ বিজয় হলো, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা শরীফে কাবা ঘরের চাবি উসমান বিন তালহার কাছ থেকে নিয়ে কাবা শরীফ খুলে তার মধ্যে প্রবেশ করে দুরাকায়াত নামায পড়লেন। অতঃপর যখন বের হলেন, তখন হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা তো পানি পান করানোর জিম্মাদারীতে আছি, সুতরাং আমাদেরকে কাবা ঘরের চাবিরও জিম্মাদার করে দিন।
এখন কাকে চাবি দেয়া হবে, তা উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করে তার মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক জানিয়ে দিলেন, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমান বিন তালহাকে ডেকে বললেন, “তোমার কি সেই কথা স্মরণ আছে যে, আমি বলেছিলাম কাবা ঘরের চাবি আমার হাতে আসবে এবং যাকে ইচ্ছা তাকে দেয়ার অধিকার আমার থাকবে।অতঃপর তার নিকট চাবি অর্পণ করলেন এবং বলেলন, এ চাবি ক্বিয়ামত পর্যন্ত তোমার বংশধরগণের নিকট থাকবে, যে এটি নিবে সে জালিমের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উক্ত ভবিষ্যৎবাণী সত্যে বাস্তবায়িত হওয়া দেখে তাঁর ইসলাম গ্রহণের পূর্ব সূক্ষ্ম আকাংখা প্রবল হয়ে উঠল এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন।
ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক আমানতসমূহের হকদার কে, তার প্রতিই তার প্রাপ্ত আমানত আদায় করার জন্য আদেশ করেছেন। এখন আমানত কাকে বলে এবং তা কি কি? এ প্রশ্নের জবাবে হযরত মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিগণ উল্লেখ করেন,  আমানতসমূহ প্রধানতঃ তিন প্রকার-
(১) الاما نة فى عبادة الله
অর্থঃ- আল্লাহ   পাক- এর ইবাদত সম্পর্কে আমানত।
(২)  الامانةمع النفس 
অর্থঃ- নফ্সের আমানত।
(৩) امانة العبد مع سائر عباد الله
অর্থঃ- বান্দার উপর অন্যান্য সকল আমানতসমূহ।
অর্থাৎ (১) আল্লাহ পাক-এর আদেশ ও নিষেধ সমূহ, যেমন- ওযু, গোসল, জানাবাত, নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি ইবাদতসমূহ আদায় করা এবং এর থেকে বিরত না হওয়া।
(২) আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে যে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন, যেমন- জিহ¡াকে হিফাযত করা মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী থেকে, চক্ষুকে হারাম দৃষ্টি থেকে, কানকে গান-বাজনা, অশ্লীল বা ফাহেশা কথা-বার্তা শোনা থেকে বিরত রাখা।
(৩) আল্লাহ্ পাক বান্দাদের পরস্পর পরস্পরের মধ্যে যে হক্ব দিয়েছেন। যেমন- মুয়ামেলাত, মুয়াশেরাত ইত্যাদি যথাযথভাবে আদায় করা।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قلما خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم الا قال لا ايمان لمن لا امانة له ولادين لمن لاعهد له.
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এরূপ উপদেশ খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথাগুলো বলেননি যে, যার আমানত নেই, তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়াদা ঠিক নেই, তার দ্বীনও নেই।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
অর্থাৎ যে আমানত খেয়ানত করবে, সে খালিছ ঈমানদার হতে পারবেনা। আর যে ওয়াদার খেলাফ করবে, সে খালিছ দ্বীনদার হতে পারবেনা।
এ ছাড়াও কুরআন শরীফে সূরা বাক্বারার২৮৩ নং আয়াত শরীফে লেন-দেন প্রসঙ্গে আমানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সূরা আনফালের’’২৭নং আয়াত শরীফে জিহাদ প্রসঙ্গে, “সূরা আহযাবের৭২ নং আয়াত শরীফে কুরআন শরীফ ও ইসলাম সম্পর্কে, “সূরা মুমিনুন৮নং আয়াত শরীফে, “সূরা মায়ারিজের৩২ নং আয়াত শরীফে, মুমিনের চরিত্র প্রসঙ্গে আমানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, সে যেন কোন অবস্থায়ই আমানতের খিয়ানত না করে।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের কোথাও ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের কোথাও আমানত বলে উল্লেখ করা হয়নি। কারণ ভোট প্রথা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ ইসলামের নামে করা সম্পূর্ণই হারাম।
যা ইসলামের নামে করা জায়িয নেই তা কি করে ঈমানদারদের জন্য আমানত বলে সাব্যস্ত হতে পারে? ভোটকে ইসলামের দৃষ্টিতে ও ইসলামের নামে আমানত বলা সম্পূর্ণ কুফরী। যে কুফরী করে সে কাফির হয়। আর যে কাফির হয় সে চির জাহান্নামী হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে ভোট সাক্ষ্য নয়
সাক্ষী প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক কুরআন  শরীফে উল্লেখ করেন,
يايها الذ ين امنوا كو نوا قومين بالقسط شهداء لله ولو على انفسكم او الو الد ين والا قر بين ان يكن غنيا او فقيرا فالله اولى بهما فلا تتبعوا الهوى ان تعد لوا وان تلوا او تعر ضوا فان الله كان بما تعملون  خبيرم
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইনছাফের উপর কায়িম থাক, আল্লাহ্ পাক-এর জন্য স্বাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে। যদি তা তোমাদের নিজেদের, পিতা-মাতার ও নিকট আত্মীয়দের বিরুদ্ধেও হয়। চাই সে ধনী হোক বা দরিদ্র হোক। অতঃপর আল্লাহ্ পাকই তাদের প্রতি অধিক কল্যাণকামী। তোমরা ইনছাফ করতে গিয়ে নফ্সের অনুসরণ করোনা। আর যদি তোমরা বর্ণনায় বক্রতা অবলম্বন কর অথবা সঠিক স্বাক্ষ্য দেয়া হতে বিরত থাক, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের কাজ সম্পর্কে সমধিক জ্ঞাত।” (সূরা নিসা-১৩৫)
يايها الذين امنوا كو نوا قو مين لله شهداء بالقسط ولا يجرمنكم شنان قوم على الا تعد لوا اعد لوا هو اقرب للتقوى واتقوا الله ان الله خبير بما تعملون.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ পাক-এর জন্য সঠিক স্বাক্ষ্য দেয়ার ব্যাপারে ইন্ছাফের উপর কায়িম থাক এবং কোন সম্প্রদায়ের শত্রুতা যেন তোমাদেরকে ন্যায় বিচার করা হতে বিরত না রাখে, তোমরা ন্যায় বিচার কর। এটি তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতির অধিক নিকটবর্তী এবং তোমরা আল্লাহ্ পাককে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদের কাজ সম্পর্কে সমধিক অবহিত।” (সূরা মায়িদা-৮)
শানে নুযুলঃ একদা একজন ধনী ও একজন গরীব লোক আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে পরস্পর পরস্পরকে অপরাধের জন্য দোষারোপ করতে লাগলো। অতঃপর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গরীবকে হক্বের উপর দেখে তার পক্ষে রায় দিলেন। তখন আল্লাহ্ পাক উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করলেন।
কারো মতে ত্বমা ইবনে আবরাক্ব নামক এক ব্যক্তির পক্ষে তার সম্প্রদায়ের লোকেরা তার বিরুদ্ধবাদীদের বিপক্ষে মিথ্যা ও বাতিল সাক্ষী দিয়েছিল। তাদের সম্পর্কে উপরোক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
ব্যাখ্যাঃ উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক প্রতি ক্ষেত্রে, সর্বাবস্থায়, সকলের জন্যই, চাই সে আত্মীয় বা অনাত্মীয়, শত্রু বা মিত্র, নিকটবর্তী বা দূরবর্তী যে কেউ হোক না কেন, এমন কি নিজের বিরুদ্ধে হলেও ইন্ছাফের সাথে স্বাক্ষ্য প্রদান করার জন্য আদেশ করেছেন। অনুরূপ সূরা মায়িদার৮নং আয়াত শরীফেও সঠিক বা ইন্ছাফের সাথে স্বাক্ষ্য প্রদান করার জন্য আল্লাহ্ পাক নির্দেশ করেছেন।
সংজ্ঞাঃ আর সাধারণ স্বাক্ষ্য হলো, অতীতের কোন সুনির্দিষ্ট কার্যাবলীর উপর বিবরণ পেশ করা। যার সাথে ভোট প্রথার মিল নেই। ভোটকে স্বাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করলে কুরআন শরীফকে অস্বীকার করা হয়। আল্লাহ্ পাক সূরা বাক্বারার২৮২ নং আয়াত শরীফে বলেন,
واستشهدوا شهيدين من رجالكم فان لم يكو نا رجلين فر جل وامراتن.
অর্থঃ- তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দুজন সাক্ষী দাঁড় করাও। যদি দুজন পুরুষ না পাওয়া যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ কর।অর্থাৎ ইসলামে দুজন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান।
আর ভোট প্রথায় একজন মহিলা একজন পুরুষের সমান যা কুরআন শরীফের আয়াতের খিলাফ। তাহলে ভোট প্রথা কি করে ইসলামের নামে বা দৃষ্টিতে স্বাক্ষ্য বলে গণ্য হতে পারে? ভোট প্রথাকে স্বাক্ষ্য হিসেবে হুকুম দেয়া বা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম।
এখানে গণতন্ত্রীরা ভোটকে স্বাক্ষ্য বলে মুসলমানদেরকে কুরআন শরীফের খিলাফ বিশ্বাস স্থাপন ও আমল করায়ে সরাসরি কাফির বানাতে চায়। অর্থাৎ আল্লাহ পাক বলেন, ১ জন পূরুষ ২ জন মহিলার সমান স্বাক্ষ্য হিসেবে, আর গণতন্ত্রীরা বলে, ১ জন পূরুষ ১ জন মহিলা স্বাক্ষ্য হিসেবে সমান।
এখন যদি কোন মুসলমান আল্লাহ পাক-এর আদেশ মান্য না করে গনতন্ত্রীদের মত মেনে নেয় তাহলে সে কি করে ঈমানদার থাকতে পারে অর্থাৎ সে কাট্টা কাফির হবে। আর যে কাফির হয় সে চির জাহান্নামী হবে। অতএব ইসলামের নামে ভোটকে স্বাক্ষ্য বলা কাট্টা হারাম ও কুফরী। শরীয়তে হারামকে হালাল বলা কুফরী। আর যে কুফরী করে সে চির জাহান্নামী হয়।
 ভোট সুপারিশ নয়
সুপারিশ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক বলেন-
من يشفع شفاعة حسنة يكن له نصيب منها ومن يشفع شفا عة سيئة يكن له كفل منها وكان الله على كل شىء مقيتا.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি সুপারিশ করবে কোন নেক কাজের জন্য, সে এর দরুন (ছওয়াবের) একটা অংশ পাবে। আর যে ব্যক্তি সুপারিশ করবে কোন পাপ কাজের জন্য, সে এর দরুন (গুণাহ্র) একটা অংশ পাবে এবং আল্লাহ্ তায়ালা সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।” (সূরা নিসা-৮৫)
শানে নুযুলঃ উল্লিখিত আয়াত শরীফ পরস্পর পরস্পরের মাঝে সুুপারিশ করার প্রসঙ্গে নাযিল হয়েছে। আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কেউ যদি শরীয়তসম্মত কোন নেক কাজের সুপারিশ করে, সে নেক কাজ সংঘটিত হোক বা না হোক সে নেকী লাভ করবে। তদ্রুপ কেউ যদি কোন পাপ কাজের সুপারিশ করে, তাহলে এর জন্য যা গুণাহ্ হবে, তার একটা অংশ তার উপর বর্তাবে।
উল্লেখ্য, শুপারিশ করাই শর্ত নয়। বরং যদি কেউ কোন নেক কাজের সমর্থন করে তাতে সে নেকী লাভ করে থাকে। আর যে পাপ কাজের সমর্থন করবে তাতে তার উপর গুণাহ্ বর্তাবে।       
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে রয়েছে,
عن العرس بن عميرة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال اذا عملت الخطيئة فى الارض من شهدها فكرهها كان كمن غاب عنها ومن غاب فرضيها كان كمن شهدها.
অর্থঃ- হযরত উরস্ বিন উমাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “যখন পৃথিবীতে কোথাও কোন পাপ কাজ সঙ্ঘটিত হয়, তখন যে ব্যক্তি উক্ত স্থানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও উহাকে ঘৃণা করে, সে ব্যক্তি এরূপ যেন উহা হতে দূরে ছিল। আর যে ব্যক্তি দূরে থেকেও উক্ত পাপের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, সে এরূপ যেন তথায় উপস্থিত ছিল।” (আবূ দাউদ, মিশকাত)
অতএব, ভোট প্রথাই যেখানে ইসলামের নামে জায়িয নেই বা হারাম সেখানে ইসলামের নামে ভোট প্রথা কি করে শুপারিশ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? মূলতঃ ইসলামের নামে ভোট প্রথাকে শুপারিশ বলা জায়িয নেই। আর কেউ যদি কোন হারাম কাজে সুপারিশ করে তাহলে হারাম আমলকারীর যত গুণাহ হবে শুপারিশকারীরও সম পরিমাণ গুণাহ হবে।
ভোট উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগ নয়     
উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগ করা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
ارءيت من اتخذ الهه هوه افانت تكون عليه وتيلا.
অর্থঃ- আপনি কি লক্ষ্য করেননি? যে ব্যক্তি তার নফ্স বা প্রবৃত্তিকে ইলাহ্ (উপাস্য) হিসেবে গ্রহণ করে, এরপরও কি আপনি তার উকিল হবেন?” (সূরা ফুরক্বান-৪৩)
শানে নুযূলঃ নজর বিন হারিছ ও তার সঙ্গী-সাথীরা নফ্সের চাহিদা মুতাবেক কোন বড় ও সুন্দর ধরণের পাথর বা অন্য কিছু দেখতো, তখন সেটিকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে নিত। আবার পরবর্তীতে তার চাইতে আরো বড় ও সুন্দর ইত্যাদি আকৃতির কোন কিছু দেখলে প্রথমটি বাদ দিয়ে পরবর্তীটিকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করতো। তাদের প্রসঙ্গে উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল হয়।
ব্যাখ্যাঃ যারা নফ্স বা প্রবৃত্তিকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করে, কিংবা নফ্সের অনুসরণে শরীয়তের তথা কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ কাজ করে বা তাতে অংশ গ্রহণ করে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের উকিল হওয়া সম্পূর্ণভাবে নাজায়িয ও হারাম। কেননা নফ্সের অনুসরণকারী ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর নাফরমানীতে লিপ্ত। অর্থাৎ তারা সর্বদা কুফরী, শেরেকী, হারাম ও নাজায়িয কাজে মশগুল। সে কারণেই আল্লাহ্ পাক নফ্সের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে,
ولئن اتبعت اهواءهم بعد الذى جاءك من العلم مالك من الله من ولى ولانصير.
অর্থাৎ- কারো নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণাদি আসার পর সে যদি তাদের (কাফিরদের) প্রবৃত্তির অনুসরণ করে তাহলে আল্লাহ্ পাক-এর পক্ষ হতে তার জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না।” (সূরা বাক্বারা-১২০)
উল্লেখ্য, উকিল বা প্রতিনিধি নির্ধারণ করতে হলে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর ইসলামের নামে নির্বাচন যেহেতু হারাম। কাজেই সে হারাম কাজের জন্য উকিল মনোনীত হতে চাওয়া অথবা মনোনীত করা কোনটিই জায়িয নেই। প্রত্যেকটাই কুফরী।
নির্বাচন যে ইসলামের নামে বা দৃষ্টিতে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয় সে প্রসঙ্গে স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
والله لا نولى على هذا العمل احدا ساله ولا احدا حرص عليه.
অর্থঃ- এই কাজে (শাসক পদে) যারা পদপ্রার্থী হয় বা পদের আকাঙ্খা করে আমরা তাদেরকে পদ দেই না।” (বুখারী, মুসলিম)
যেখানে স্বয়ং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্বাচন পদ্ধতি শুধু অপছন্দই করেননি সাথে সাথে নিষেধও করেছেন। তাহলে ইসলামের নামে নির্বাচন জায়িয কি করে বলা যেতে পারে?  তাই ইসলামের নামে নির্বাচন জায়িয বলা কুফরী।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো যে, ইসলামের নামে ভোট দেয়া ওয়াজিব বলা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। আরো সাব্যস্ত হলো, ভোটকে ইসলামের নামে আমানত, স্বাক্ষ্য, শুপারিশ এবং উকিল বা প্রতিনিধি নিয়োগের মাধ্যম বলাও সম্পূর্ণ কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব দেখা যাচ্ছে যে, এ ভোটদান সম্পূর্ণরূপে ইহুদী-খ্রীষ্টানদের রীতি হওয়ায় এবং ইসলামের কোন শর্ত শারায়িতের আলোকে না হওয়ায় তা সম্পূর্ণরূপে হারামের পর্যায়েই পড়ে।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্র ও তা বাস্তবায়িত করার মাধ্যম হচ্ছে নির্বাচন। আর নির্বাচনের মূল হচ্ছে ভোট প্রদান। এ প্রত্যেকটি ইহুদী-নাছারাদের দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত। যা অনুসরণ, অনুকরণ ও আমল করা আল্লাহ্ পাক সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছেন। যা সমগ্র কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশেষভাবে সূরা ফাতিহাতে বলা হয়েছে, “তোমরা দুয়া কর।যা আমরা দুয়া করে থাকি নামাযের প্রত্যেক রাকায়াতে রাকায়াতে-
اهد نا الصراط المستقيم.
অর্থঃ- “(আল্লাহ্ পাক) আমাদের সরলপথ প্রদর্শন করুন।” (সূরা ফাতিহা-৫)
কোন সরল পথ? বলা হয়েছে-
صراط الذ ين انعمت عليهم.
অর্থঃ- যাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে তাঁদের পথ।” (সূরা ফাতিহা-৬)
কাদেরকে নিয়ামত দেয়া হয়েছে? এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক অন্যত্র বলেন,
انعم الله عليهم من النبين و الصد يقين والشهداء والصلحين و حسن اولئك ر فيقا.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক নিয়ামত দিয়েছেন যাঁরা নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহ্ তাঁদেরকে এবং তাঁরাই উত্তম বন্ধু বা সঙ্গী।” (সূরা নিসা-৬৯)
অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক বান্দাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন তারা যেন নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও ছালেহ্গণের পথ তলব করে এবং তাঁরাই সকলের জন্য উত্তম সঙ্গী বা বন্ধু।
এরপর আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা বলো-
غير المغضوب عليهم ولا الضالين.
অর্থঃ- আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে তাদের পথ দিবেন না, যারা গযবপ্রাপ্ত ও পথহারা।” (সূরা ফাতিহা-৭)
অর্থাৎ বিশেষভাবে ইহুদী ও নাছারা, আর সাধারণভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী (অগ্নী উপাসক) কাফির, মুশরিক, বেদ্বীন, বদ্ দ্বীন, বিদ্য়াতী, বেশরা, গোমরাহ্ ইত্যাদি সকল প্রকার পথহারা গযবপ্রাপ্ত লোকদের পথ আমাদের দান করবেন না।
উল্লেখ্য, উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক শুধু মাত্র নবী, ছিদ্দীক, শহীদ, ছালেহ্গণের পথই তলব করতে বলেছেন এবং তাঁদেরকেই অনুসরণ-অনুকরণ করে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে বলেছেন।
আর যারা ইহুদী, নাছারা, হিন্দু, বৌদ্ধ, মজুসী, কাফির, মুশরিক ইত্যাদি পথহারা ও গযবপ্রাপ্ত তাদের পথ থেকে পানাহ্ তলব করতে বলেছেন। এবং তাদের সঙ্গী না হওয়ার জন্য আদেশ করেছেন।
অথচ গণতন্ত্র ও তা বাস্তবায়িত করার মাধ্যম নির্বাচন ও তার মূল ভোট প্রদান ইত্যাদি প্রত্যেকটিই ইহুদী-নাছারাদের দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত। তাহলে আল্লাহ্ পাক যেখানে বলেছেন যে, ইহুদী-নাছারা ইত্যাদিদের অনুসরণ-অনুকরণ করোনা, পথ তলব করো না এবং তাদেরকে সঙ্গী বা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। যা আমরা নামাযের প্রতি রাকায়াতেই বলে থাকি এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের শুরুতে বলে থাকি। তাহলে এরপরও কিভাবে আমরা ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ইত্যাদি করতে পারি?
এরপরেও দেখা যায়, অনেকেই তাদের কম ইলম্, কম বুঝের কারণে  এ ভোট দেয়াকে ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে, তারা তার কারণ স্বরূপ বলে যে, ভোট হচ্ছে, (১) একটি পবিত্র আমানত, (২) ভোট দেয়া হচ্ছে সাক্ষ্যদান করা, (৩) ভোটদান হচ্ছে শুপারিশ করা, (৪) ভোটদান প্রতিনিধি বা উকিল নিয়োগ করা।
তাদের উপরোক্ত কথা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ নাজায়িয, হারাম ও কুফরীর শামীল। কেননা গণতন্ত্রই যেখানে শরীয়তসম্মত নয় এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা যেখানে হারাম ও কুফরী সেখানে শরীয়তের দৃষ্টিতে ইসলামের নামে কি করে ভোট পবিত্র আমানত, সাক্ষী, সুপারিশ ও উকিল নিয়োগের মাধ্যম হতে পারে?
কাজেই ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা, নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ইত্যাদি প্রত্যেকটা কাজই হারাম-নাজায়িয ও কুফরী। আর যে কুফরী করে সে চির জাহান্নামী হয়।
সুতরাং কোন মুসলমানের জন্যই ইসলামের নামে কুফরী করা জায়িয নেই। বরং এ থেকে পরহিয করা ফরয-ওয়াজিব এর অন্তর্ভুক্ত।
(৫)
ভোট দেয়া আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরয-ওয়াজিব,
আল্লাহ বলেন, ভোট একটি আমানতখতীবের একথা কতটুকু শরীয়ত ও দলীল সম্মত?
এর জবাবে বলতে হয় যে, বায়তুল মুকাররমের তথাকথিত খতীব উবায়দুল হকের উপরোক্ত বক্তব্য খণ্ডন করতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ১৫৬তম সংখ্যা থেকে সুওয়াল জাওয়াব বিভাগে ধারাবাহিকভাবে জবাব দেয়া হয়েছে, পাঠকগণের সুবিধার্থে উল্লেখিত জাওয়াবখানা হুবহু এখানেও তুলে ধরা হলো-
“.... ভোট, নির্বাচন সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব ছাহেবের উপরোক্ত বক্তব্য মোটেও সঠিক ও শরীয়তসম্মত হয়নি। বরং সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক হয়েছে।
নিম্নে তথাকথিত খতীব ছাহেবের উল্লিখিত বক্তব্যের কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে শরীয়তসম্মত জাওয়াব দেয়া হলোঃ
তথাকথিত খতীবের প্রথম বক্তব্যের শরীয়তসম্মত জাওয়াব
খতীব বলেছে, “আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। ...
এর জাওয়াবে বলতে হয় যে, তথাকথিত খতীবের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ সে সরাসরি আল্লাহ পাক-এর নামেই মিথ্যারোপ করেছে। কেননা, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের কোথাও ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করেননি।
খতীবের প্রতি চ্যালেঞ্জ রইলো, সে প্রমাণ করুক কুরআন শরীফের কোন্ সূরার, কোন্ আয়াত শরীফে ভোটকে আমানত বলা হয়েছে। সে কস্মিনকালেও তা প্রমাণ করতে পারবে না।
কাজেই, ‘আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত’- তথাকথিত খতীবের এ বক্তব্য কাট্টা কুফরী হয়েছে ও আল্লাহ পাক-এর প্রতি চরম মিথ্যারোপ করা হয়েছে।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে ইরশাদ করেন,
فمن اظلم ممن افترى على الله كذ با ليضل الناس بغير علم ان الله لا يهدى القوم الظلمين.
অর্থঃ- অতএব, সে ব্যক্তি অপেক্ষা বড় যালিম আর কে হবে, যে ব্যক্তি বিনা প্রমাণে আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, মানুষদেরকে বিভ্রান্ত বা পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে; নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা আনয়াম-১৪৪)
অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তারা যালিম, তারা গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। সেজন্য তারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে মানুষদেরকে বিনা দলীলে গোমরাহ করতে চায়।
আল্লাহ পাক আরো ইরশাদ করেন,
ومن اظلم ممن افترى على الله الكذب وهو يدعى الى الاسلام والله لا يهدى القوم الظلمين.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি ইসলামের প্রতি আহুত হয়েও আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলে, তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? আর আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেননা।” (সূরা ছফ-৭)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক সম্পর্কে মিথ্যা বলা হচ্ছে সবচাইতে বড় যুলূম। কাজেই, যে বা যারা মুসলমান হওয়ার পরও আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে সে বা তারা চরম ও বড় যালিম এবং যালিম হওয়ার কারণে তারা হিদায়েত থেকে মাহরূম হয়ে থাকে। অর্থাৎ তারা চরম গোমরাহ। তাই এদের ফতওয়া শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে আরো ইরশাদ করেন,
ولاتقولوا لما تصف السنتكم الكذب هذا حلل وهذا حرام لتفتروا على الله الكذب ان الذين يفترون على الله الكذب لايفلحون.
অর্থঃ- তোমাদের মুখ থেকে সাধারণতঃ যেসব মিথ্যা বের হয়ে আসে, তেমনি করে তোমরা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে বলোনা যে, (আল্লাহ পাক) এটা হালাল এবং ওটা হারাম (করেছেন), নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক-এর প্রতি মিথ্যারোপ করে, তাদের জন্য কামিয়াবী নেই।” (সূরা নহল-১১৬) অর্থাৎ যারা আল্লাহ পাক-এর নামে মিথ্যা বলে তাদের জন্য কামিয়াবী তো নেই। শুধু তাই নয়, বরং তাদের জন্য কঠিন শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রয়েছে।
আল্লাহ পাক এ সম্পর্কে কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
لو تقول علينا بعض الاقاويل لاخذ نا منه باليمين. ثم لقطعنا منه الو تين. فما منكم من احد عنه حجزين.
অর্থঃ- কেউ যদি আমার নামে বানিয়ে কোন কথা বলে, তবে আমি তাঁর দক্ষিণ হস্ত ধরে তার গ্রীবা বা প্রাণ রগ কেটে দিব, তোমাদের কেউই এতে বাধা দিতে পারবে না।” (সূরা হাক্কা- ৪৪, ৪৫, ৪৬)
উপরোক্ত  আয়াত শরীফের শানে নুযূল সম্পর্কে বর্ণিত রয়েছে যে, কাফির, মুশরিকরা বলতো, নূরে মুজাস্সাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাকি আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা বলেন। (নাউযুবিল্লাহ) এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক এ আয়াত শরীফ নাযিল করে জানিয়ে দিলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনই আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলেন না। শুধু এতটুকুই নয় আরো জানিয়ে দিলেন, যারা আল্লাহ পাক-এর নাম মুবারকে মিথ্যা বলবে তাদের শাস্তি হলো মৃত্যুদণ্ড।
কারণ আল্লাহ পাক সম্পর্কে যে মিথ্যা বলে সে কুফরী করে, আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়। আর শরীয়তের ফতওয়া হলো, যে সমস্ত মুসলমান কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। আর যারা মুরতাদ হয়ে যায় তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। শরীয়তে তাদের তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে অন্যথায় শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।
অতএব, “যারা আল্লাহ পাক ও আল্লাহ পাক-এর কালাম কুরআন শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে। অর্থাৎ আল্লাহ পাক যা বলেননি তা বলেছেন বলে এবং কুরআন শরীফে যা উল্লেখ নেই তা আছে বলে”- তারা চরম যালিম, মুরতাদ ও কাফির।
কাজেই, “আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটা আমানত”- তথাকথিত খতীবের এ বক্তব্য আল্লাহ পাক ও কুরআন শরীফের নামে সুস্পষ্ট মিথ্যারোপ ও কাট্টা কুফরী। কারণ, কুরআন শরীফের কোথাও আল্লাহ পাক অনুরূপ কথা বলেননি।
আর খতীব যদি বলে যে, “আমি তো ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলক অর্থে বলেছি।
তার এ কথা কখনোই গ্রহনযোগ্য হবেনা। কারণ সে সরাসরি বলেছে আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানতকাজেই এখানে ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলকভাবে বলেছি এটা বলার কোন সুযোগ নেই। এরপরেও যদি আমরা একথা ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলক হিসেবে ধরি তথাপিও খতীবের উক্ত বক্তব্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, নির্ভরযোগ্য কোন তাফসীর বা ব্যাখ্যাগ্রন্থেই ভোটকে আমানত বলা  হয়নি। এটা খতীবের সম্পূর্ণই মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা।
খতীব হয়তো বলতে পারে, “পাকিস্তানের মুফতী শফী তো তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআনকিতাবে ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ  করেছে।
এর জাওয়াবে বলতে হয়, মুফতী শফীরও উক্ত বক্তব্য শুদ্ধ হয়নি। বরং তা মনগড়া ও কুফরী হয়েছে। কারণ, মুফতী শফীও এর পক্ষে কোন নির্ভরযোগ্য তাফসীর বা হাদীছ অথবা কোন ফিক্বাহ ও ফতওয়ার কিতাবের বরাত দিতে পারেনি। কাজেই ভোটকে আমানত বলে যে আয়াত শরীফ উল্লেখ করেছে, তার সাথে ভোটের কোন সম্পর্ক নেই। উক্ত আয়াত শরীফের অর্থ, শানে নুযূল ও ব্যাখ্যা আলোচনা করলেই তা সুস্পষ্টরূপে জানা যাবে। আয়াত শরীফখানা হলোঃ
ان الله يامر كم ان تؤدوا الا منت الى اهلها واذا حكمتم بين الناس ان تحكموا بالعدل ان الله نعما يعظكم به ان الله كان سميعا بصيرا.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তোমাদেরকে আদেশ করেন যে, তোমরা আদায় করে দাও আমানত সমূহকে তার হকদারদেরকে এবং যখন তোমরা মানুষের মধ্যে ফায়সালা বা বিচার করবে, তখন ন্যায়ের সাথে বিচার করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তোমাদেরকে উত্তম উপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা নিসা-৫৮)
শানে নুযূল
হিজরতের পূর্বে জাহিলিয়াতের যুগে, সপ্তাহে দুদিন সোমবার ও বৃহস্পতিবার কাবা শরীফের দরজা খোলা হতো। যাতে যারা কাবা শরীফে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক, তাঁরা যেন প্রবেশ করতে পারে। এবং উক্ত ঘরের চাবির জিম্মাদার ছিলেন উসমান বিন তাল্হা।
একবার কাবা শরীফের দরজা খোলার পর আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু সংখ্যক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণকে নিয়ে প্রবেশ করতে আসলে, তখন সে বাধা প্রদান করে এবং কিছু কটু কথা বলে। এ সকল অশালীন ও অশোভনীয় আচরণ লক্ষ্য করে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে উসমান! এমন একদিন আসবে, যেদিন তুমি এ কাবা ঘরের চাবি আমার হাতে দেখতে পাবে এবং এ চাবি যাকে ইচ্ছা তাকে দেয়ার অধিকারও আমার থাকবে।ইত্যাদি আরো কিছু কথা বলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যিয়ারত করে চলে গেলেন।  
পরবর্তীতে যখন মক্কা শরীফ বিজয় হলো, তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবা ঘরের চাবি উসমান বিন তালহার কাছ থেকে নিয়ে কাবা শরীফ খুলে তার মধ্যে প্রবেশ করে দুরাকায়াত নামায পড়লেন। অতঃপর যখন বের হলেন, তখন হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা তো পানি পান করানোর জিম্মাদারীতে আছি, সুতরাং আমাদেরকে কাবা ঘরের চাবিরও জিম্মাদার করে দিন।
তখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক-এর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকলেন, কাকে এ চাবি দেয়া হবে, তখন উক্ত আয়াত শরীফ নাযিল করে তার মাধ্যমে আল্লাহ পাক জানিয়ে দিলেন।
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমান বিন তালহাকে ডেকে বললেন, “তোমার কি সেই কথা স্মরণ আছে যে, আমি বলেছিলাম কাবা ঘরের চাবি আমার হাতে আসবে এবং যাকে ইচ্ছা তাকে দেয়ার অধিকার আমার থাকবে।অতঃপর তার নিকট চাবি অর্পণ করলেন এবং বললেন, এ চাবি ক্বিয়ামত পর্যন্ত তোমার বংশধরগণের নিকট থাকবে, যে এটি নিবে সে যালিমের অন্তর্ভুক্ত হবে।
আল্লাহ পাক-এর রসূল, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম, রহমতুল্লিল আলামীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উক্ত ভবিষ্যৎবাণী সত্যে বাস্তবায়িত হওয়া দেখে তাঁর ইসলাম গ্রহণের পূর্ব সূক্ষ্ম আকাংখা প্রবল হয়ে উঠল এবং তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন।
ব্যাখ্যা
উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক আমানতসমূহের হক্বদার কে, তার প্রতিই তার প্রাপ্য আমানত আদায় করার জন্য আদেশ করেছেন। এখন আমানত কাকে বলে? এবং তা কি কি? এ প্রশ্নের জাওয়াবে হযরত মুফাস্সিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উল্লেখ করেন,  আমানত সমূহ প্রধানতঃ তিন প্রকার-
(১) الامانة فى عنادة الله 
অর্থঃ- আল্লাহ  পাক- এর ইবাদত সম্পর্কে আমানত।
(২)  الامانة مع النفس
অর্থঃ- নফ্সের আমানত।
(৩) امانة العبد مع سائر عباد الله
অর্থঃ- বান্দার উপর অন্যান্য সকল আমানতসমূহ।
অর্থাৎ (১) আল্লাহ পাক-এর আদেশ ও নিষেধ সমূহ, যেমন- ওযু, গোসল, জানাবাত, নামায, রোযা, যাকাত ইত্যাদি ইবাদতসমূহ আদায় করা এবং এর থেকে বিরত না হওয়া।
(২) আল্লাহ পাক বান্দাদেরকে যে সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করেছেন, যেমন- জিহ¡াকে হিফাযত করা, মিথ্যা, গীবত, চোগলখুরী থেকে, চক্ষুকে হারাম দৃষ্টি থেকে, কানকে গান-বাজনা, অশ্লীল বা ফাহেশা কথা-বার্তা শোনা থেকে বিরত রাখা।
(৩) আল্লাহ পাক বান্দাদের পরস্পর পরস্পরের মধ্যে যে হক্ব দিয়েছেন। যেমন- মুয়ামেলাত, মুয়াশেরাত ইত্যাদি যথাযথভাবে আদায় করা।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن انس رضى الله تعالى عنه قال قلما خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم الا قال لا ايمان لمن لا امانة له ولادين لمن لاعهد له.
অর্থঃ- হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এরূপ উপদেশ খুব কমই দিয়েছেন যাতে এ কথাগুলো বলেননি যে, যার আমানত নেই, তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়াদা ঠিক নেই, তার দ্বীনও নেই।” (বাইহাক্বী, মিশকাত)
এছাড়াও কুরআন শরীফে সূরা বাক্বারার২৮৩নং আয়াত শরীফে লেন-দেন প্রসঙ্গে আমানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সূরা আনফালের’’ ২৭ নং আয়াত শরীফে জিহাদ প্রসঙ্গে, “সূরা আহযাবের৭২ নং আয়াত শরীফে কুরআন শরীফ ও ইসলাম সম্পর্কে, “সূরা মুমিনুন৮ নং আয়াত শরীফে, “সূরা মায়ারিজের৩২ নং আয়াত শরীফে মুমিনের চরিত্র প্রসঙ্গে আমানতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, সে যেন কোন অবস্থায়ই আমানতের খেয়ানত না করে।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের কোথাও ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করা হয়নি। শুধু তাই নয়, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের কোথাও আমানত বলে উল্লেখ করা হয়নি। কারণ ভোট প্রথা ইসলামের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ ইসলামের নামে করা সম্পূর্ণই হারাম।
যা ইসলামের নামে করা জায়িয নেই তা কি করে ঈমানদারদের জন্য আমানত বলে সাব্যস্ত হতে পারে?
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, মুফতী শফীর ভোটকে আমানত বলে উল্লেখ করাটাসম্পূর্ণরূপে তাফসীর র্বি রায় তথা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আসল কথা হলো, ‘তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআনেমনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ, মুফতী শফি ছাহেব পাকিস্তানের রেডিওতে তাফসীর করতো। তার তাফসীরের পর পরই শুরু হতো গান-বাজনা, অশ্লীল-অশালীন অনুষ্ঠান। এভাবে সে চৌদ্দ বছর তাফসীর অনুষ্ঠান করে; আর সেটারই সমষ্টি হচ্ছে তাফসীরে মায়ারিফুল কুরআন।
এখন মুফতী শফী ও তার ভক্ত মুফতীদের প্রতি জিজ্ঞাসা: কোন্ দলীলের ভিত্তিতে মুফতী শফী গান-বাজনার আধার রেডিওতে তাফসীর করলো? তার দলীল পেশ করতে পারবে কি? না তা কস্মিনকালেও পেশ করতে পারবে না।
শরীয়তের মাসয়ালা হচ্ছে, গোসলখানা- যেখানে মানুষ পবিত্রতা অর্জন করে থাকে। সেখানে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা মাকরূহ তাহরীমী। তাহলে যেখানে গান-বাজনা, অশ্লীল-অশালীন, হারাম, নাজায়িয কার্যকলাপ সংগঠিত হয় সেখানে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত ও তার তাফসীর করার মাসয়ালা কি হবে?
বলার অপেক্ষা রাখেনা, তা অবশ্যই হারাম ও কুফরী হবে। আর সেটাকে জায়িয মনে করলে মুরতাদ ও কাফির হবে।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের তাহরীফ, তাবদীল অর্থাৎ পরিবর্তন, পরিবর্ধন যেমন নাজায়িয ও কুফরী তেমনি তাফসীর বির রায় তথা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা করাও নাজায়িয ও কুফরী।
এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قال فى القران برايه فليتبوأ مقعده من النار. وفى القران برايه فليتبوأ مقعده من النار. وفى رواية من قال فى القران بغير علم فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে মনগড়া কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে ইলম্ ব্যতীত অর্থাৎ বিনা প্রমাণে মনগড়া কোন কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান দোযখে করে নেয়।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من فسر القر ان برايه فقد كفر.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করলো, সে কুফরী করলো।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)
কাজেই, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, উভয় দিক থেকেই খতীবের উপরোক্ত বক্তব্য কুফরীমূলক হয়েছে।
এখন তথাকথিত খতীবের দায়িত্ব হলো, খালিছ ইস্তিগ্ফার ও তওবা করা। অন্যথায় তার পিছনে নামায পড়া কারো জন্য জায়িয হবেনা। যদি কেউ পড়ে তবে তার নামায শুদ্ধ হবে না। সে নামায তরক্বের গুনাহে গুনাহ্গার হবে

তথাকথিত খতীবের দ্বিতীয় বক্তব্যের শরীয়তসম্মত জাওয়াব
খতীব দ্বিতীয়ত বলেছে- এ সম্পর্কে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে অসৎ লোককে ভোট দিল সে আল্লাহ পাক ও রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিয়ানত করলো।
এর জবাবে বলতে হয় যে, তথাকথিত খতীবের এ বক্তব্যও কাট্টা কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ সে সরাসরি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যারোপ করেছে। কেননা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনুরূপ কোন বক্তব্যই হাদীছ শরীফের কোথাও উল্লেখ নেই। খতীবের প্রতি  চ্যালেঞ্জ রইলো, যদি সে সত্যবাদী হয়ে থাকে তবে প্রমাণ করুক কোন হাদীছ শরীফে ভোটের ব্যাপারেঅনুরূপ বক্তব্য উল্লেখ আছে। খতীব তা কস্মিনকালেও প্রমাণ করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অসংখ্য স্থানে আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যারোপ করার ভয়াবহ পরিণতি ও কঠিন আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা কথা বলে বা বানিয়ে বানিয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে সে অবশ্যই কুফরী করে কঠিন আযাবের উপযুক্ত হয় আর যে আযাবের উপযুক্ত হয় সেই চির জাহান্নামী হয়।
এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক সূরা নহলের ১১৩নং আয়াত শরীফে ইরশাদ  করেন,
لقد جاءهم رسول منهم فكذ بوه فاخذهم العذاب وهم ظلمون.
অর্থঃ তাদের নিকট তাদের মধ্য থেকেই একজন রসূল আগমন করেছিলেন, অনন্তর তারা (কাফিরেরা) তাঁর প্রতি মিথ্যারোপ করলো। তখন আযাব এসে তাদেরকে পাকড়াও করলো এবং নিশ্চিত তারাই ছিল যালিম।
এ আয়াত শরীফ এটাই প্রমাণ করে যে, যারা কাফির ও যালিম তারা রসূলের প্রতি মিথ্যারোপ করে অর্থাৎ রসূল যা বলেন নাই তা বলেছেন বলে ও রসূল যা বলেছেন তা বলেন নাই বলে, মূলতঃ এদের জন্যই রয়েছে কঠিন আযাব বা শাস্তি। আর যারা আযাবের উপযুক্ত তারাই জাহান্নামী। তাই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফে উম্মতদেরকে এ ব্যাপারে কঠোরভাবে সতর্ক করে দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انقوا الحديث عنى الا ماعلمتم فمن كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যে পর্যন্ত না তা তোমরা আমার বলে নিশ্চিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن عمرو رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم بلغوا عنى ولو اية وحديوا عن بنى اسرائيل ولاحرج ومن كذ ب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে মানুষের নিকট পৌঁছে দাও যদি একটি আয়াত শরীফও হয়। বণী ইসরাঈলের নিকট হতে শুনা কথা বলতে কোন আপত্তি নেই। তবে যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় আমার নামে মিথ্যা বললো, সে যেন তার স্থান জাহান্নামেই নির্ধারণ করে নিলো।” (বুখারী, মিশকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن سمرةبن جندب والمغيرة بن شعبة رضى الله تعالى عنهما قالا ق قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من حدث عنى بحديث يرى انه كذب فهو احد الكاذ بين.
অর্থঃ হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব ও মুগীরা ইবনে শুবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কথা বললো যা সে মিথ্যা মনে করে তবে সেও মিথ্যুকদের একজন।” (মুসলিম, মিশকাত)
আর মিথ্যাবাদীদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
لعنت الله على الكذ بين
অর্থঃ- মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহ পাক-এর লানত।” (সূরা আলে ইমরান-৬১)
والله يشهد ان المنفقين لكذ بون.
অর্থঃ আল্লাহ পাকই সাক্ষী যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা মিথ্যাবাদী।” (সূরা মুনাফিকুন-১)
উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফসমূহ দ্বারা অকাট্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, যারা আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নামে মিথ্যা কথা বলে বা বানিয়ে বানিয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করে অর্থাৎ আল্লাহ পাক-এর হাবীব যা বলেন নাই তা বলেছেন বলে ও যা বলেছেন তা বলেন নাই বলে তারা চরম যালিম, মিথ্যাবাদী, মুনাফিক ও কাট্টা কাফির। তাদের স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। কারণ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে যে মিথ্যা বলে সে কুফরী করে, আর যে কুফরী করে সে মুরতাদ হয়ে যায়।
আর শরীয়তের ফতওয়া হলো, যে সমস্ত মুসলমান কুফরী করে তারা মুরতাদ হয়ে যায়। আর যারা মুরতাদ হয়ে যায় তাদের একমাত্র শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড। শরীয়তে তাদের তওবা করার জন্য তিনদিন সময় দেয়া হয়েছে অন্যথায় তাদের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যুদণ্ড।
সুতরাং তথাকথিত খতীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ও হাদীছ শরীফের নামে সুস্পষ্ট মিথ্যা বলেছে যা কাট্টা কুফরী হয়েছে। কারণ এটা কোন  হাদীছ শরীফ নয়। বরং এটা তথাকথিত খতীবের সম্পূর্ণ বানানো কথা। অর্থাৎ সে হাদীছ শরীফ জালকারী।
আর খতীব যদি বলে যে, “আমি তো ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলক অর্থে বলেছি।
তার একথা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবেনা। কারণ সে সরাসরি বলেছে, “এ সম্পর্কে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জেনে শুনে অসৎ লোককে ভোট দিল সে আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খিয়ানত করল।
কাজেই, এখানে ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলকভাবে বলেছি এটা বলার কোন সুযোগ নেই। এরপরেও যদি আমরা একথা ভাবার্থে বা ব্যাখ্যামূলক হিসেবে ধরি তথাপিও খতীবের উক্ত বক্তব্য কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কারণ নির্ভরযোগ্য কোন হাদীছ শরীফের শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থে ভোটের কোন কথাই উল্লেখ নেই। এটা খতীবের সম্পূর্ণই মনগড়া ও বানানো ব্যাখ্যা।
উল্লেখ্য, কুরআন শরীফের তাহরীফ, তাবদীল অর্থাৎ পরিবর্তন, পরিবর্ধন যেমন নাজায়িয ও কুফরী তেমনি হাদীছ শরীফেরও একই হুকুম। কাজেই, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, উভয় দিক থেকেই খতীবের উপরোক্ত বক্তব্য কুফরীমূলক হয়েছে। কারণ সে আল্লাহ পাক সম্পর্কে, কুরআন শরীফ সম্পর্কে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে এবং হাদীছ শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে। এখন তার দায়িত্ব হলো, খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করা। অন্যথায় তার পিছনে নামায পড়া কারো পক্ষে জায়িয হবেনা। যদি কেউ পড়ে তবে তার নামায শুদ্ধ হবে না। সে নামায তরক্বের গুনাহে গুনাহগার হবে।
(অসমাপ্ত)

0 Comments: