ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া -পর্ব-৪


ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া -পর্ব-৪


ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াপেশ করতে পারায় আল্লাহ পাক-এর দরবারে বেশুমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
উল্লেখ্য, হিজরী পঞ্চদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আযম, আওলাদে রসূল, ইমাম রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা মুদ্দা জিল্লুহুল আলী-এর প্রতিষ্ঠিত ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত যামানার তাজদীদী মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাত। এ পত্রিকায় এ যাবৎ যত লিখা বা ফতওয়া প্রকাশ বা পত্রস্থ করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে তার একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষের ঈমান-আক্বীদা ও আমল পরিশুদ্ধ করা। এ জন্যেই মূলতঃ যুগে যুগে প্রেরিত হয়েছেন এক লক্ষ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম। এবং সর্বশেষ নবী-রসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন নবীদের নবী, রসূলদের রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতঃপর প্রত্যেক শতাব্দীর মাঝে প্রেরিত হয়ে আসছেন তাঁর খাছ নায়িব বা ওয়ারিছ তথা যামানার মুজাদ্দিদগণ।
কাজেই, বান্দা ও উম্মত যদি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দীদার ও সন্তুষ্টি লাভ করতে চায়, রহমত ও নাজাত পেতে চায়, হাক্বীক্বী বান্দা ও হাক্বীক্বী উম্মত হতে চায়, প্রকৃত মুমিন, মুসলমান ও মুত্তাক্বী হতে চায় তাহলে তার জন্য যামানার মুজাদ্দিদের অনুসারী হওয়া ব্যতীত বিকল্প কোন পথ নেই। সেটা কাছে থেকে হোক কিংবা দূরে থেকে হোক। কারণ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাকে ইরশাদ করেন,
واتبع سبيل من اناب الى.
অর্থঃ- ঐ ব্যক্তির পথ অনুসরণ করে  চলো যিনি আমার দিকে রুজু রয়েছেন।” (সূরা লুক্বমান-১৫)
স্মরণীয় যে, আজকে মুসলমানরা তাদের আদর্শ-ঐতিহ্য ভুলে গিয়ে বিধর্মী-বিজাতীয়দের তর্জ-তরীক্বা, আচার-আচরণ গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাদের এই নাজুক অবস্থা কাটিয়ে ইসলামী আদর্শে আদর্শবান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আহবান করছেন যামানার মহান মুজাদ্দিদ মুদ্দা জিল্লুহুল আলী। সুতরাং তাঁর মুবারক আহবানে সাড়া দেয়ার সময় এখনই। এ লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকার পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীগণ মাসিক আল বাইয়্যিনাত”-এর আকর্ষণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিভাগ সুওয়াল-জাওয়াবফতওয়াবিভাগে ইসলামের নামে গণতন্ত্র ও নির্বাচন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া ও দেয়া হারাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শরীয়তের সঠিক ফায়ছালা জানার জন্য অসংখ্য সুওয়াল প্রেরণ করেন। যেহেতু আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন কালামে পাকে ইরশাদ করেন,
فسئلوا اهل الذ كر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা আল্লাহওয়ালাগণকে জিজ্ঞেস করে জেনে নাও।” (সূরা নহল-৪৩ ও সূরা আম্বিয়া-৭)
তাই প্রেরিত সুওয়ালসমূহের প্রেক্ষিতে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া  ইসলামের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে পেশ করা হলো।
প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়
মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খিলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ মুসলমানের বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লিখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়াদেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী মুসলমানগণের নিকট সঠিক বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযতের মাধ্যমে ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক ইত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে বা শুধরিয়ে দেয়া ঈমানী দায়িত্ব। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,
عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المؤمن مرأة المؤ من اذا رأى فيه عيبا اصلحه.
অর্থঃ- হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না। যখন সে তার মধ্যে কোন দোষত্রুটি দেখবে তখন সে তাকে সংশোধন করে দিবে।” (বুখারী, আবূ দাউদ, মিশকাত)
উপরোক্ত হাদীছ শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃপূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষ্যে ইসলামের নামে গণতন্ত্র, নির্বাচন, ভোট ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, মুসলমানগণ এ সম্পর্কে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
সুওয়ালকারীদের নাম-ঠিকানা    

সাইয়্যিদ মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন, ঢাকা
মুহম্মদ আনোয়ার হুসাইন, মুহম্মদপুর, ঢাকা
মুহম্মদ ছিদ্দীকুল আলম, চান্দিনা, কুমিল্লা
মুহম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, শালিখা, মাগুরা
মুহম্মদ আফতাবুদ্দীন, কোনাবাড়ী, গাজিপুর
মুহম্মদ মুহসিনুর রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
মুহম্মদ হারুনূর রশীদ, মাহিগঞ্জ, রংপুর
শাফিয়ী আহমদ, রাজারহাট, কুড়িগ্রাম
মুহম্মদ সদরুল আমীন গোলাপগঞ্জ, সিলেট
মুহম্মদ আশাদুজ্জামান, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
মুহম্মদ আশফাকুর রহমান, সিংড়া, নাটোর
মুহম্মদ ইছহাকুর রহমান, কসবা, বি.বাড়িয়া
মুহম্মদ শফিকুছ্ ছালেহীন, মতলব, চাঁদপুর
মুহম্মদ মাহবুবুর রহমান, প্রভাকরদী, এন.গঞ্জ
মুহম্মদ হারিছুর রহমান, রাজপাড়া, রাজশাহী
মুহম্মদ কাওছার হুসাইন, বানারীপাড়া, বরিশাল
মুহম্মদ  হাদীউল ইসলাম, পাহাড়তলী,  চট্টগ্রাম
মুহম্মদ কামরুজ্জামান, কুটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ
মুহম্মদ আবুল কাশেম, আক্কেলপুর, জয়পুরহাট
মুহম্মদ হাবীবুল্লাহ, কালীহাতি, টাঙ্গাইল


সুওয়াল
বর্তমান ২০০৭ সালে পুনরায় সংসদ নির্বাচনঅনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যাতে অন্যান্য দলগুলোর মতো নামধারী ইসলামী দলগুলোও সক্রিয়ভাবে উক্ত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবে তথা প্রার্থী দিবে। ইসলামের নামে যারা নির্বাচনে অংশ নেয় তারা সাধারণতঃ প্রচার করে থাকে যে, গণতন্ত্র আর ইসলাম একই বিষয় এবং তারা যে গণতন্ত্র করছে, সেটা হচ্ছে ইসলামী গণতন্ত্র। তারা গণতন্ত্রের ভিত্তি ভোটকে আমানত, শুপারিশ, উকিল নিয়োগ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলে প্রচার করে থাকে।
কেউ কেউ আবার ইসলামী দলকে ভোট দেয়া ফরয-ওয়াজিব বলে থাকে। আরো বলে থাকে যে, ইসলামী দলের  প্রার্থীকে ভোট দিলে জান্নাতের টিকেট পাওয়া যাবে। যেমন জামাত নেতারা কিছুদিন পূর্বে একটি দৈনিক পত্রিকার সাক্ষাতকারে বলেছে, ইসলাম ও গণতন্ত্র একই বিষয়।
বায়তুল মুকাররমের খতীব ওবায়দুল হক বলেছে, “ভোট দেয়া আল্লাহ পাক-এর নির্দেশ অর্থাৎ ফরয। আল্লাহ পাক বলেন, ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।” (দৈনিক সংগ্রাম ১লা জুলাই-২০০৬)
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি  প্রশ্নের উত্তরে লিখেছে, (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে, ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
অনুরূপ হাটহাজারী খারেজী  মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামের সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর০৬ সংখ্যায়ও ভোট-নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করতে  গিয়ে লিখেছে, (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার। (১) পাশ্চত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (২) ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছিলেন (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। (ঘ) কুরআন সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত, সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে ইত্যাদি অনেক ভুল তথ্য তারা উল্লেখ্য করেছে। পটিয়া খারেজী মাদ্রাসার মুখপত্র আত্ তাওহীদ” ...... সংখ্যায় ভোট বেচা-কেনা করাকেও জায়িয ফতওয়া দিয়েছে।
আর উল্লিখিত বিষয়ে তাদের নিকট দলীল তলব করলে তারা সাধারণতঃ মুফতী শফীর মায়ারিফুল কুরআন ও ভোটের ইসলামী শরয়ী বিধান এবং শামসুল হক ফরীদপুরী ছাহেবের বক্তব্য তুলে ধরে বলে থাকে যে, তারা ভোটকে জায়িয বলেছেন।
এখন আমাদের জানার বিষয় হলোঃ
১।   ইসলাম আর গণতন্ত্র কি একই বিষয়? উভয়ের মধ্যে কি কোন পার্থক্য নেই? এ সম্পর্কে জামাত নেতার এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত?
২।  নির্বাচন ও ভোট প্রথার উৎপত্তি কোথায় এবং কবে? কোন নবী-রসূল, ছাহাবী, তাবিয়ী, তাবে তাবিয়ীন ভোট ও নির্বাচন করেছেন কি?
৩।  ইসলাম বা শরীয়তের  দৃষ্টিতে পদপ্রার্থী হওয়া বা ভোট চাওয়া জায়িয কিনা?
৪।  ভোট একটি আমানত, স্বাক্ষ্য ও উকিল নিয়োগ মুফতী শফী ও শামছুল হক ফরীদপুরী ছাহেব ও তার অনুসারীদের উক্ত বক্তব্য কতটুকু সঠিক ও দলীল ভিত্তিক।
৫।   ভোট দেয়া আল্লাহর নির্দেশ তথা ফরয-ওয়াজিব। আল্লাহ বলেন, ‘ভোট একটি আমানত। আল্লাহ পাক-এর হাবীব বলেছেন, ‘সৎ লোককে ভোট দিতে হবে।বায়তুল মুকাররম মসজিদের খতীবের একথা কতটুকু শরীয়ত ও দলীল সম্মত?
৬।   (ক) ছহীহ্ অর্থে মুসলমানদের প্রকৃত শাসক হচ্ছে পবিত্র কুরআন এবং রসূলের সুন্নাহ্। (খ) প্রচলিত যে কোন শাসন ব্যবস্থায় যদি কুরআন-সুন্নাহ্র প্রাধান্য মেনে নেয়া হয় তবে তা মুসলিম জনগণ বিনা দ্বিধায় মেনে নিতে পারেন। (গ) ভোটের মাধ্যমে নেতা বা শাসক নির্বাচনের বর্তমান যে পদ্ধতি এটা অংকুরিত হয়েছে- ইসলামী শুরা পদ্ধতির মধ্য থেকে। সুতরাং এই পদ্ধতিতে ভোটের রাজনীতি ইসলামে বৈধ নয় এ কথা বলা যাবে না। (ঘ) এ যুগের ভোট প্রদান বাইয়াতের বিকল্প বিবেচিত হতে পারে।
মাহিউদ্দীনের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
৭।   খুলাফায়ে রাশিদীন কি পদপ্রার্থী হয়েছিলেন?
৮।   একটি পদের জন্য কি একাধিক প্রার্থী ছিলেন? এবং তাঁদের কি কোন  মার্কা ছিল?
৯।   খলীফাগণ রাষ্ট্র পরিচালনা করেছিলেন, না খিলাফত?
১০। খলীফাগণ মানবরচিত বিধানে, না শরয়ী বিধানে খিলাফত পরিচালনা করেছেন?
১১।  খলীফা নিয়োগদান পদ্ধতি নির্বাচন, না মনোনয়ন?
১২।  গণতান্ত্রিক বহুদলীয় নির্বাচনে প্রার্থীকে ভোট দেয়া ওয়াজিব কিনা?
১৩। (ক) গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুপ্রকার পাশ্চত্য গণতন্ত্র, বা নির্বাচন ও ইসলাম গণতন্ত্র বা নির্বাচন। (খ) খুলাফায়ে রাশেদীন ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছে। (গ) পদপ্রার্থী হওয়া জায়িয। ((ঘ) কুরআন-সুন্নাহয় ভোটকে স্বাক্ষী, আমানত সুপারিশ ও প্রতিনিধি নিয়োগ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
হাট হাজারী খারেজী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু সত্য ও দলীলসম্মত?
ভোট বেচাকেনাকে জায়িয ও তাওহীদ পত্রিকার এ বক্তব্য কতটুকু কুরআন-সুন্নাহ সম্মত?
১৫।  যদি ইসলামের দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন নাজায়িয হয় তবে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিভাবে? এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠিত হবে কিভাবে? আমরা জানি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা করা ফরযে আইন। তবে কি সশস্ত্র বিপ্লব বা বোমাবাজি, জিহাদ বা জঙ্গী কার্যকলাপের মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা যাবে?
১৬। আজকাল নামধারী প্রতিটি ইসলামী দলকেই দেখা যায় বিভিন্ন দলের সাথে ভোট বা চুক্তি করে থাকে। তাদেরকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তারা এটাকে হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তুলনা করে থাকে। হুদায়বিয়ার সন্ধির সাথে তাদের উক্ত জোট বা চুক্তিকে তুলনা করা সঠিক ও শরীয়তসম্মত কিনা?
১৭।  যে সকল কথিত মাওলানা, মুফতী, মুহাদ্দিছ, শাইখুল হাদীছ, খতীব, পীর, আমীর ইসলামের নামে গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন করছে, ভোটকে আমানত, স্বাক্ষ্য ফরয-ওয়াজিব বলছে এবং ক্ষমতার লোভে বাতিলের সাথে আতাত করছে তারা হক্কানী  আলিম কিনা?
             তাদের পিছনে নামায পড়া জায়িয কিনা? তাদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়ছালা কি?
উপরোক্ত প্রতিটি বিষয় দলীলভিত্তিক বিস্তারিত জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান-আক্বীদা ও আমল হিফাযত করবেন বলে আমরা আশাবাদি।
জাওয়াবঃ
ইসলামের নামে বা ইসলামের দোহাই দিয়ে গণতন্ত্র, ভোট, নিবার্চন করা, পদপ্রার্থী হওয়া, ভোট চাওয়া, নিজ দলকে ভোট দেয়া ওয়াজিব ও জান্নাতের টিকেট লাভের কারণ বলা এবং ভোটকে আমানত, সুপারিশ, স্বাক্ষ্য ইত্যাদি বলা সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। এটাই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস তথা শরীয়তের চুড়ান্ত, ছহীহ ও গ্রহণযোগ্য ফতওয়া।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ও পদপ্রার্থী হওয়া সম্পর্কিত তথাকথিত খতীব উবায়দুল হক, নিজামী, আহমদ শফী, মাহিউদ্দীন, আমিনী ও আযীযূল হক- ওহাবী, দেওবন্দী ও জামাতীগংদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ বিধায় তা ভুল, অশুদ্ধ, জিহালতপূর্ণ দলীলবিহীন ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
 নিম্নে সুওয়ালে উল্লেখিত তাদের প্রতিটি বক্তব্যের খণ্ডনমূলক জাওয়াব প্রদান করা হলো।
(ধারাবাহিক)
মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যা নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটদান সম্পর্কিত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে যে সকল প্রশ্ন উত্থাপিত হয় তার জাওয়াব-
(১২ )
বহু দলীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচন পদ্ধতিতে প্রার্থীকে ভোট দেয়া ওয়াজিব কি-না?
গণতান্ত্রিক বহুদলীয় নির্বাচন পদ্ধতিতে প্রার্থীকে ভোট দেয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে ওয়াজিব নয় বরং হারাম। ভোটকে ওয়াজিব বলা শরীয়তের দৃষ্টিতে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। তবে গণতন্ত্র ভিত্তিক বহুদলীয় রাজনীতিতে প্রার্থীকে নির্বাচনে ভোট দেয়া গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে অবশ্য কর্তব্য বলা হয়েছে। কারণ নির্দিষ্ট পরিমাণ ভোট না দিলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। আর নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে না।
উল্লেখ্য, ইসলামের নামে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে প্রার্থীকে ভোট দেয়া জায়েয নয়। প্রকৃতপক্ষে জায়িয বলাটাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। কেননা কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
كيف يهدى الله قوما كفروا بعد ايما نهم وشهدوا ان الر سول حق وجاءهم البينت والله لا يهدى القوم الظلمين. اولئك جزاؤ هم ان عليهم لعنة الله والملئكة والناس اجمعين. خلدين فيها لا يخفف عنهم العذاب ولاهم ينظرون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক কি করে ঐ সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করবেন যারা ঈমান আনার পর কুফরী করে অর্থাৎ হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করে, ইসলাম বাদ দিয়ে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতি পছন্দ ও অনুসরণ করে এবং তা ইসলামের সাথে মিশ্রিত করে অথচ তারা স্বাক্ষ্য দিয়েছে যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য এবং তাদের নিকট কুরআন-সুন্নাহর দলীলও এসেছে। আল্লাহ পাক যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়েত দান করেন না। ঐ সমস্ত লোকদের শাস্তি হলো, তাদের প্রতি আল্লাহ পাক-এর, ফেরেশতাগণের এবং সমস্ত মানুষের লানত। অনন্তকাল ধরে সেই লানতের মধ্যে তারা থাকবে। তাদের উপর শাস্তি লাঘব করা হবেনা এবং তাদেরকে অবসরও দেয়া হবেনা।” (সূরা আলে ইমরান-৮৬, ৮৭, ৮৮)
যদি তাই হয়ে থাকে, তবে মাহিউদ্দীন ও তার সমগোত্রিয়রা কি করে হিদায়েত পেতে পারে? যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ঈমান এনেছে বলে দাবী করার পর হালাল, হারামের সুস্পষ্ট দলীল পাওয়ার পরও ইসলামের নামে হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করে অর্থাৎ ইসলামের নামে মানবরচিত বিধর্মীয় মতবাদ গণতন্ত্র, ভোট, নির্বাচন ইত্যাদি জায়িয ও ফরয ওয়াজিব বলে ফতওয়া দেয় বা ইসলাম বাদ দিয়ে মানবরচিত বিধর্মীয় তন্ত্র-মন্ত্র বা মতবাদকে গ্রহণ করে ও অনুসরণ করে। মুলতঃ তারা কস্মিনকালেও হিদায়েত পেতে পারে না। বরং তারা গোমরাহ, লানতপ্রাপ্ত ও ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত। মাহিউদ্দিন ও তার সমগোত্রীয়দের সম্পর্কেই কুরআন শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
ومن يبتغ غير الاسلام دينا قلن يقبل منه وهو فى الا خرة من الخسر ين.
অর্থঃ- যে  ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের নিয়ম-নীতি তালাশ করে তার থেকে সেটা কবুল করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
অতএব, বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, মাহিউদ্দীন ও তার সমগোত্রীয়রা নিঃসন্দেহে ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত। শুধু তাই নয়, যারা তাদেরকে অনুসরণ করবে তারাও ক্ষতিগ্রস্তের অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই তাদের থেকে দূরে থাকা সকলের জন্যই ফরয-ওয়াজিব।
মাহিউদ্দিন খান তার মাসিক মদীনা ডিসেম্বর/৯৯ সংখ্যায় নির্বাচন ভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোট দান সম্পর্কিত একটি  প্রশ্নের উত্তরে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, প্রতারণামূলক, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক বলে প্রমাণিত হলো।

মাহিউদ্দীনের প্রতারণার
কয়েকটি নমুনা
মাসিক মদীনার সম্পাদক হযরত শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর লিখিত হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা ও ইযালাতুল খাফাকিতাবদ্বয়ের উদ্বৃতি এনে একটা জঘণ্য প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে। তাহলো এই যে, খিলাফত পরিচালনা ও খলীফা মনোনয়নকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন ও ভোট প্রদানের দ্বারা রাষ্ট্রপ্রধান নির্ধারিত হওয়ার সাথে  মিলিয়ে দিয়েছে। অথচ এ দুটি বিষয় সম্পূর্ণই আলাদা।
মাসিক মদীনার সম্পাদক শুধু এ সংখ্যা ও এ উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রেই নয় বরং পূর্বের প্রায় সংখ্যায়ই সে দলীলবিহীন, মনগড়া ও ভুল উত্তর দিয়ে মানুষের সাথে চরম প্রতারণা করেছে যা মানুষের ঈমান, আক্বীদা ও আমলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
স্মর্তব্য, মদীনা সম্পাদক মাহিউদ্দীন এমন এক ব্যক্তি যে নিজ স্বার্থ রক্ষায় নিজেই নিজের বিরুদ্ধে লিখে থাকে। তার একটি জলন্ত প্রমাণ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি-
নামধারী আলিম তথা আলিমে ছূমাসিক মদীনা সম্পাদক তার পত্রিকা       মাসিক মদীনা জুন/২০০২ ঈসায়ী সংখ্যার, ১১০, ১১১ পৃষ্ঠায় এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছে-

মুহম্মদ আবূ জাফর সালেহ্
লাকসাম, কুমিল্লা
প্রশ্নঃ কোরআন এবং হাদীসের বিধান অনুযায়ী নারী নেতৃত্ব হারাম। অন্যান্য সংগঠনের কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলরা নারীর সাথে একমত পোষণ করে রাষ্ট্রীয় কোন আইন পাশ করতে পারবেন কিনা?
উত্তরঃ (১) ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারামএ ফতওয়া কে কোথায় কোন ভিত্তিতে দিলেন, তা আমাদের জানা নাই।
(২) তা ছাড়া এমন একটা ঢালাও বক্তব্যের পিছনে দলীল কি, তাও জানবার সুযোগ আমাদের হয়নি। পারস্য সাম্রাজ্যের সিংহাসনে পরলোকগত বা নিহত সম্রাটের এক কন্যার অভিষেক হওয়ার সংবাদ হযরত নবী (সাঃ) কে শোনানোর পর তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, “সে জাতির কল্যাণ হতে পারে না যে জাতির নেতৃত্ব নারীর হাতে  অর্পিত হয়।
           এই হাদীছখানার পরিপ্রেক্ষিতে ফেকাহবিদগণ নারীনেতৃত্ব অনুত্তম সাব্যস্ত করেছেন। হারাম সাব্যস্ত করেন নাই। ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ঈমানদার, সুস্থ মস্তিস্ক, সুবিবেচক ইত্যাদি গুণে গুণান্বিত হওয়ার শর্ত আরোপ করেছেন। সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন নয়, ফাছেক বা প্রমাণিত দুষ্কৃতকারীকে ইসলামী রাষ্ট্রের যে কোন ধরণেরই দায়িত্ব দেয়া নিষিদ্ধ। কিন্তু এমন কথা কোথাও রয়েছে বলে আমার জানা নেই যে, কোন অবস্থাতেই কোন নারীকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যাবে না। সুতরাং ইসলামের নামে ঢালাও ফতোয়া বা মন্তব্য করা কি ঠিক হবে?
(৩) অনেকে যুক্তি দেন যে, ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা খলীফাকে নামাযে ইমামতি করতে হয়। জেহাদের নেতৃত্ব দিতে হয়। ...... সুতরাং অগ্রপশ্চাত বিবেচনা না করেই এক কথায় হারাম সাব্যস্ত করে কোরাস গাইতে থাকা ঠিক কিনা তা ভেবে দেখা উচিত বলে মনে করি।
          আলোচ্য উত্তরের ১নং অংশে সে বলেছে, “ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারামএ ফতওয়া কে, কোথায়, কোন ভিত্তিতে দিলেন তা আমাদের জানা নেই।
ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারামএ ফতওয়া কে কোথায় কোন ভিত্তিতে দিলেন, তার অন্য কোন জবাব না দিয়ে মাহিউদ্দীনের দেয়া উত্তরই আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরছিঃ
          মাসিক মদীনার সম্পাদক মাহিউদ্দীন তার  মাসিক মদীনা পত্রিকার জানুয়ারী/৮৯ ঈসায়ী সংখ্যার এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছে-

মুহম্মদ আব্দুল হাই
তাড়াইল বাজার, কিশোরগঞ্জ
প্রশ্নঃ  কোন মহিলাকে মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বানানো শরীয়ত-সম্মত কিনা? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তরঃ কোন মুসলিম শাসনকর্তা যদি ইসলামী অনুশাসন অনুসরণ করতে যান তবে তার সর্বপ্রথম কর্তব্য দাঁড়ায় স্বীয় ইমামতিতে নামায প্রতিষ্ঠা করা ও জেহাদের নেতৃত্ব দেওয়া। এ দুটি ক্ষেত্রেই কিন্তু নারীর নেতৃত্ব চলেনা। একজন মহিলা যত বড় বিদূষী ও পূণ্যবতীই হোননা কেন, তাঁর পক্ষে নামাযের ইমামতি করার প্রশ্ন আসেনা। সে মতে কোন নারীর ইসলামী দেশের সর্বোচ্চ শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া ইসলামী শরীয়ত সমর্থিত নয়।
          এক হাদীসে রয়েছে আল্লাহর রসূল (সাঃ) এরশাদ করেছেন, তোমাদের শাসকগণ যখন হবে কৃপণ আর শাসন ক্ষমতা গিয়ে পড়বে নারীদের হাতে তখন দুনিয়ার পৃষ্ঠদেশ অপেক্ষা অভ্যন্তরভাগই তোমাদের জন্য অধিক মঙ্গল জনক বলে বিবেচিত হবে।
          হযরত রসূলে করীমের (সাঃ) সময়কালে পারস্য সম্রাট কিসরার এক কন্যাকে সিংহাসনে বসানো হয়েছিল। এ সংবাদ শুনে আল্লাহর রসূল (সাঃ) মন্তব্য করেছিলেন, “যে জাতি তাদের শাসনকর্তৃত্ব নারীদের হাতে তুলে দেয়, তাদের কখনও মঙ্গল হতে পারে না।
          উপরোক্ত দুটি হাদীছই সহীহ্ এবং হাদীসের প্রায় সব কয়টি বিখ্যাত কিতাবে রয়েছে।
          অতএব, পাঠক! বলতে হয় যে, ‘ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম এ ফতওয়া কে কবে কোথায় কিসের ভিত্তিতে দিয়েছেএ বিষয়টি যদি মদীনা সম্পাদকের সত্যিই জানা না থাকত তবে তাকে না জানার দলে আরবীতে যাকে বলা হয় জাহিলেরদলে অন্তর্ভুক্ত করা যেত।
          কিন্তু তার নিজের লিখনীই যখন প্রমাণ করে যে, ‘ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারামএ বিষয়টি তিনি শুধু জানেনই না বরং নিজে লিখে, নিজের মদীনা পত্রিকায় ছেপে প্রকাশ করেছেন; তখন শরীয়তী আদালত যদি তাকে শুধু কায্যাবই নয় বরং মুনাফিক বা মাহিউদ্দীন (দ্বীন ধ্বংসকারী) বলে সাব্যস্ত করে তখন আমাদের কি বলার থাকতে পারে?
          জুন/২০০২ ঈসায়ী  সংখ্যায় দীনা সম্পাদক বলেছে,
(২) তাছাড়া এমন একটি ঢালাও বক্তব্যের পিছনে দলীল কি তাও জানবার সুযোগ আমাদের হয়নি।
          এর প্রেক্ষিতে মদীনা সম্পাদক জানুয়ারী/৮৯ ঈসায়ীতে যে দুটো হাদীছ শরীফ তুলে ধরেছে তা পুনঃউল্লেখ না করে তার উত্তরের শেষ লাইন, “উপরোক্ত দুটো হাদীছ শরীফই ছহীহ্ এবং হাদীছ শরীফের প্রায় সব কয়টি বিখ্যাত কিতাবে রয়েছে।এই বক্তব্যটি যথেষ্ট।
(৩) নং বক্তব্যে সে বলেছে  অনেকে যুক্তি দেন যে, ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান বা খলীফাকে নামাযে ইমামতি করতে হয়, জিহাদে নেতৃত্ব দিতে হয়। অর্থাৎ জুন/২০০২ এর বক্তব্য মুতাবেক এই যুক্তি ঠিক নয়।
কিন্তু এই বক্তব্য ঠিক কিনা সে সম্পর্কে সেপ্টেম্বর/৯০ ও মার্চ/৯১  ঈসায়ী সালে মাহিউদ্দীন নিজেই লিখেছে,
মুহম্মদ আবদুশ শাকুর
জামেয়া ইসলামিয়া রোড, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্নঃ কুরআন-হাদীছ অনুযায়ী কোন মহিলা রাষ্ট্রনায়িকা হতে পারেন কিনা?
উত্তরঃ রাষ্ট্রনায়ক যুদ্ধের সেনাপতি এবং মসজিদের ইমামের পদ ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ।
মুহম্মদ গোলাম মোস্তফা
ভাসানীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ, রাজশাহী
প্রশ্নঃ মুসলিম রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান কোন মহিলা হতে পারে কিনা?
উত্তরঃ  রাষ্ট্রটি যদি খুলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শে ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত করতে হয় তবে কোন মহিলা সে রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন না। কেননা খলীফা মুসলিম জনগণের ইমামের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন।
আজকে চল্লিশ বছরের তথাকথিত ইসলামী পত্রিকার সম্পাদকের যে পরিচয় আমরা পেলাম তাতে ঐ হাদীছ শরীফেরই প্রত্যক্ষ প্রমাণ প্রতিভাত হয়, ‘মিশকাতশরীফের হাদীছে যা উল্লেখ আছে,
عن الاحوص بن حكيم عن ابيه قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان خير الخير خيار العلماء وان شر الشر شرار العلماء.
অর্থঃ  হযরত আহওয়াছ ইবনে হাকীম তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সৃষ্টির মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আলিম এবং সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব আলিম।” (দারেমী, মিশকাত)
একই প্রশ্নের উত্তর একেক বছর একেক রকমের দ্বারা, নিজের লিখার বিরুদ্ধে নিজের লিখার দ্বারা, নিজেই নিজের লিখার অস্বীকার করার দ্বারা মূলতঃ দুপয়সার লোভ আর ক্ষমতাসীনদের কাছে আদরনীয় তথা বেনিফিসিয়ারী হওয়ার দ্বারা মাহিউদ্দীনকে হাদীছ শরীফের উল্লিখিত নিকৃষ্টজনদের অন্যতম সাব্যস্ত করতে হয়।
নারী নেতৃত্ব হারাম জানুয়ারী/৮৯ ঈসায়ী এ কথা বলে একবার নয় বার বার বলে (সেপ্টেম্বর/৯০, মার্চ/৯০, মার্চ/৯১) কিরূপ অবলীলাক্রমে সেই একই পত্রিকার মাহিউদ্দীন জুন/২০০২ ঈসায়ী এ নারী নেতৃত্ব জায়িয বলতে পারল।
মূলতঃ এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “কোন্ জিনিস আলেমের অন্তর হতে ইল্ম্ বের করে দেয়? বলা হয়েছে, লোভ। দুনিয়ার লোভ আলেমের অন্তর থেকে ইল্ম্ বের করে নেয়।
মূলতঃ ক্ষমতার অংশিদারীত্ব, মহিলা নেতৃত্বের সুনজর কামনা তথা রাজ ক্ষমতার লোভ তার অন্তর থেকে যৎকিঞ্চিত ইল্ম্ যা ছিল তাও দূর করে দিয়েছে। সে এখন মিথ্যাবাদী দাজ্জালে পরিণত হয়েছে।
যে সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, “তোমরা তাদের কাছে যেয়ো না। তাদেরকেও তোমাদের কাছে আসতে দিও না তবে তারা তোমাদের গোমরাহ্ করতে পারবে না।
অর্থাৎ মহিলা নেতৃত্ব মেনে নেয়া বা জোটে যাওয়ার পূর্বে সে নারী নেতৃত্ব হারাম ফতওয়া দিয়েছিল। আর যখন সে মহিলা নেতৃত্ব মেনে নিল তখন নিজ ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষায় নিজেই নিজের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিল। এটা সুস্পষ্ট প্রতারণা নয় কি?
অতএব, হক্ব তালাশীদের জন্য করণীয় হচ্ছে, নিজের আক্বীদা ও আমল ছহীহ্ রাখার জন্য মাসিক মদীনা  ও তার সমমনা এবং সমপর্যায়ের পত্রিকা পড়া ও তার মাসয়ালা-মাসায়িল গ্রহণ করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা।
এ কথা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য  জানা ও মানা আবশ্যক যে, যে বা যারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের দলীল- কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের বিপরীত মনগড়া, দলীলবিহীন, ভুল মাসয়ালা প্রদান করবে তার বা তাদের সে মাসয়ালা গ্রহণ করা শরীয়তে যেরূপ নিষেধ তদ্রুপ এমন ব্যক্তিকে মাসয়ালা জিজ্ঞেস করাও নিষেধ।
(১৩)
হাটহাজারী খারেজী মাদ্রাসার অখ্যাত মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলামসেপ্টেম্বর ডিসেম্বর-০৬ সংখ্যাসমূহে গণতন্ত্র বা ভোট নির্বাচন সম্পর্কে প্রদত্ত বক্তব্যসমূহের খণ্ডনমূলক জবাব
হাটহাজারী খারিজী মাদ্রসার মুখপত্র মাসিক মুহীনুল ইসলাম সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর/০৬ সংখ্যায় ভোট নির্বাচন সম্পর্কিত আলোচনা দ্বারা হাটহাজারী মৌলভী  ছাহেবরা যা বুঝাতে চেয়েছে তা হলো-
(ক)
গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার- ১. পাশ্চাত্য গণতন্ত্র বা নির্বাচন, ২. ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন।
এর জবাবে বলতে হয় যে, গণতন্ত্র বা নির্বাচন সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে অজ্ঞতামূলক ও মূর্খতাসূচক হয়েছে। তবে এই সমস্ত মৌলভী ছাহেবদের জন্য এটাই স্বাভাবিক যে, এরা গণতন্ত্র সম্পর্কে ভুল ফতওয়া দিবে। কারণ, এরা গণতন্ত্র সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমাণ পড়াশুনা করে নাই। তবে আরো অধিক আশ্চর্য্যরে বিষয় এই যে, এরা জীবনভর ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করলো এবং করালো তারপরও তারা ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ইলম অর্জন করতে পারে নাই। তাই তাদের পক্ষে এ ধরনের ভুল, মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন ও কুফরীমূলক বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়েছে।
মূলতঃ গণতন্ত্র বা নির্বাচন সম্পূর্ণরূপেই পাশ্চাত্যের অর্থাৎ তা ইহুদীদের দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত আর নাছারাদের দ্বারা সংস্কারকৃত ও সংশোধিত হয়ে ব্যাপক প্রচার-প্রসার লাভ করে। আর তা পরবর্তীতে অর্থাৎ ইদানিংকালে অর্ধেক ইহুদী, অর্ধেক নাছারা আব্রাহাম লিংকন কর্তৃক আরো পরিশোধিত হয়ে আধুনিক গণতন্ত্র নামে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। যা সম্পূর্ণরূপেই মানবরচিত মতবাদ।
আর ইসলামী গণতন্ত্র বলতে কোন গণতন্ত্রেরই অস্তিত্ব আল্লাহ পাক-এর কায়েনাতে নেই। কারণ, ইসলামী গণতন্ত্র বিশ্বাস বা স্বীকার করলে সাথে সাথে এটাও বিশ্বাস করতে হয় যে, অর্ধেক আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে নাযিলকৃত আইন আর অর্ধেক মানবরচিত নিয়ম-কানুন পালন করতে হবে যা সম্পূর্ণরূপে কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। অথচ আল্লাহ পাক অনেক আয়াত শরীফ নাযিল করে বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। যেমন সূরা কাফিরূন”-এর মধ্যে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل يايها الكفرون لا اعبد ما تعبد ون ولا انتم عا بدون ما اعبد ولا انا عا بد ما عبد نم ولا انتم عا بدون ما اعبد لكم دينكم ولى دين.
অর্থঃ- হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, হে কাফিরের দল, তোমরা যার পূজা কর আমি তার ইবাদত করিনা আর আমি যাঁর ইবাদত করি তোমরা তাঁর ইবাদত করনা। আর তোমরা যার পূজা কর আমি তার ইবাদত করিনা আর আমি যাঁর ইবাদত করি তোমরা তাঁর ইবাদত করনা। তোমাদের নিয়ম-নীতি তর্জ-তরীক্বা তোমাদের আর আমার দ্বীন আমার।
অর্থাৎ মুসলমান ইসলাম তথা কুরআন-সুন্নাহও পালন করবে আবার সাথে সাথে বেদ্বীন-বদদ্বীনদের নিয়ম-নীতিও পালন করবে তা হবেনা। মুসলমানকে শুধুমাত্র কুরআন-সুন্নাহকেই পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এর সাথে অন্য কোন ধর্ম বা নিয়ম নীতি মিশ্রিত করতে পারবে না। করলে তা আল্লাহ পাক ও তাঁর হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টির কারণ হবে। এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن جا بر رضى الله تعالى عنه ان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه اتى رسول الله صلى الله عليه وسلم بنسخة من ا لتورة فقال يا رسول الله صلى الله عليه وسلم هذه نسخة من التورة فسكت فجعل يقرأ ووجه رسول الله صلى الله عليه وسلم يتغير  فقال ابو بكر ثكلتك الثوا كل ما ترى ما بوجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فنظر عمر الى وجه رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال اعوذ بالله من غضب الله وغضب رسوله رضينا بالله ربا وبالا سلام دينا وبمحمد نبيا فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم والذى نفس محمد صلى الله عليه وسلم بيده لو بدا لكم موسى عليه السلام فاتبعتموه  وتر كتمونى لضللتم عن سواء السبيل ولو كان حيا وادر ك نبوتى لا تبعنى.
অর্থঃ- হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, একদিন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট তাওরাত শরীফের একটি কপি এনে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি তাওরাত শরীফের একটি কপি। আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপ রইলেন। হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা পড়তে আরম্ভ করলেন। আর এদিকে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক লাল হতে লাগলো। অর্থাৎ অসন্তুষ্টির ভাব ফুটে উঠলো। এটা দেখে হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, হে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনার জন্য আফসুস! আপনি কি দেখছেন না যে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারক কি রূপ ধারণ করছে। তখন হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর চেহারা মুবারকের দিকে তাকালেন এবং অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বললেন, আমি আল্লাহ পাক-এর অসন্তুষ্টি থেকে এবং তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অসন্তুষ্টি থেকে আল্লাহ পাক-এর নিকট পানাহ চাচ্ছি। এবং আমরা আল্লাহ পাককে রব হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে ও আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে খুশী হয়েছি। তখন রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সেই আল্লাহ পাক-এর কছম! যার অধিকারে আমার প্রাণ মুবারক রয়েছে, এ সময় যদি তোমাদের নিকট হযরত মূসা আলাইহিস্ সালাম (যার উপর তাওরাত কিতাব নাযিল হয়েছে) জাহির বা প্রকাশ হতেন আর তোমরা আমাকে ছেড়ে তাঁর অনুসরণ করতে তবুও তোমরা সরল পথ থেকে অবশ্যই বিচ্যুত অর্থাৎ গোমরাহ হয়ে যেতো। এমনকি তিনি যদি এখন হায়াতে থাকতেন আর আমাকে পেতেন তাহলে তিনিও নিশ্চয়ই আমার অনুসরণ করতেন।” (দারিমী, মিশকাত, মিরকাত)
এখানে ফিকিরের বিষয় এই যে, আল্লাহ পাক-এর তরফ থেকে ওহী দ্বারা নাযিলকৃত আসমানী কিতাব তাওরাত শরীফেরএকখানা নসখা যা নাযিল হয়েছে জলীলূল ক্বদর নবী ও রসূল, কালিমুল্লাহ হযরত মুসা আলাইহিস্ সালাম-এর উপর- তা নিয়ে উপস্থিত হলেন এমন এক ব্যক্তিত্ব যার সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, 
عن عقبة بن عامر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لو كان بعدى نبى لكان عمر بن الخطاب رضى الله تعالى عنه.
অর্থাৎ হযরত উক্ববা ইবনে আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পর যদি কেউ নবী হতো তবে নবী হতেন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان الله جعل الحق على لسان عمر وقلبه.
অর্থঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক হযরত উমর ইবনুল খত্ত্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জবান ও অন্তরে হক্ব রেখেছেন।” (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
এছাড়াও যাঁর অনেক ফাযায়িল-ফয়ীলত, শান-শওক্বত ও বুযূর্গী কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে সেই হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তারপরও আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কঠিন অসন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন এবং বললেন, তাওরাত কিতাব যাঁর উপর নাযিল হয়েছে সেই হযরত মুসা আলাইহিস্ সালামও যদি এখন থাকতেন তবে তাঁর জন্যও তাওরাত কিতাব বাদ দিয়ে আমাকে অনুসরণ করা ফরজ ওয়াজিব হয়ে যেত। অর্থাৎ ইসলামের সাথে মিলিয়ে কিছু ইসলাম কিছু কিছু তাওরাত শরীফ আমল কস্মিনকালেও জায়িয নেই। এর বাস্তব প্রমাণ হচ্ছেন হযরত ঈসা আলাইহিস্ সালাম যিনি আখিরী যামানায় আসবেন এবং নিজের উপর নাযিলকৃত ইনজিল শরীফ বাদ দিয়ে আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ, নূরে মুজাস্সাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেই অনুসরণ করবেন অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহ মুতাবিক চলবেন।
এ প্রসঙ্গে কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে,
هو الذى ارسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهره على الد ين كله وكفى بالله شهيدا. محمد رسول الله.
অর্থঃ- তিনি (আল্লাহ্ পাক) তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হিদায়েত এবং সত্য দ্বীন সহকারে পাঠিয়েছেন সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দিয়ে (সমস্ত দ্বীনকে বাতিল ঘোষণা করে তা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত হোক  অথবা মানব রচিত হোক আর তা পূর্বে হোক অথবা পরে হোক) এবং এ বিষয়ে আল্লাহ্ পাক-এর স্বাক্ষ্যই যথেষ্ট। (যার সাক্ষী আল্লাহ্ পাক) আর রসূল হচ্ছেন হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।” (সূরা ফাতহ্-২৮, ২৯)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক দ্বীন ইসলামকে শুধুমাত্র পরিপূর্ণ সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত ও নিয়ামতপূর্ণ করেই নাযিল করেননি সাথে সাথে দ্বীন ইসলামকে মনোনীতও করেছেন। তাই দ্বীন ইসলাম ব্যতীত অন্য সমস্ত ধর্ম যা পূর্বৈ ওহী দ্বারা নাযিল করা হয়েছিল যেমন, তাওরাত শরীফ, যাবূর শরীফ, ইনজীল শরীফ ও ১০০ খানা ছহীফা এবং পূর্বের ও পরের মানব রচিত মতবাদ যেমন গণতন্ত্র ইত্যাদি যা পূর্বে ছিল এবং বর্তমানে যা রয়েছে, যেমন: রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, মার্কসবাদ, লেলিনবাদ, মাওবাদ ইত্যাদি ও ভবিষ্যতে যা হবে সেগুলোকে তিনি বাতিল ঘোষণা করেছেন।
যদি তাই হয়ে থাকে তবে ইসলামের নামে বা ইসলামের সাথে গণতন্ত্রকে মিশ্রিত করে, ইসলামী গণতন্ত্র নাম দিয়ে গণতন্ত্র চর্চা করা কি করে শরীয়ত সম্মত হতে পারে? মূলত: এগুলো সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।
আমরা যদি ইসলাম কাকে বলে বা ইসলামের পরিচয় কি তা উল্লেখ করার পাশাপাশি গণতন্ত্রের বা নির্বাচনের অর্থ সংজ্ঞা ও ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাতেই সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হবে যে গণতন্ত্র বা নির্বাচন সম্পর্কিত হাটহাজারী মৌলবী ছাহেবদের উপরোক্ত বক্তব্য মোটেও শুদ্ধ হয়নি বরং কুফরীমূলক হয়েছে। তাই নিম্নে ইসলাম ও গণতন্ত্র বা নির্বাচন সম্পর্কে দলীলভিত্তিক বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
দ্বীন ইসলামের পরিচিতি
ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত, একমাত্র পরিপূর্ণ, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, নিয়ামতপূর্ণ ও মনোনীত দ্বীন। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবত থাকবে। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক সূরা আলে ইমরানের১৯নং আয়াত শরীফে বলেন,
ان الدين عند الله الاسلام.
অর্থ ঃ- নিশ্চয়ই ইসলামই আল্লাহ্ পাক-এর কাছে একমাত্র দ্বীন।
আর আল্লাহ্ পাক সূরা মায়িদার৩নং আয়াত শরীফে ঘোষণা করেন,
اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتى ورضيت لكم الاسلام دينا.
অর্থঃ- আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে (দ্বীন ইসলামকে) কামিল বা পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত তামাম বা পূর্ণ করে দিলাম এবং আমি তোমাদের দ্বীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট রইলাম।
তাই আল্লাহ পাক সূরা বাক্বারার ২০৮ নং আয়াত শরীফে ঈমানদারদেরকে আদেশ করেন,
يا يها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة ولا تتبعوا خطوات الشيطان انه لكم عدو مبين.
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ কর। শয়তানকে অনুসরণ করনা। নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
কাজেই, ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন বা মতবাদ অর্থাৎ তা ওহী দ্বারা নাযিলকৃত হোক বা মানব দ্বারা রচিত হোক কোনটাই আল্লাহ পাক গ্রহণ করবেন না। বরং তা জাহান্নামী হওয়ার কারণ হবে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
ومن يبتغ غير الاسلام دينا فلن يقبل منه وهو فى الاخرة من الخسرين.
অর্থঃ- যে  ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মের নিয়ম-নীতি তালাশ করে তার থেকে সেটা কবুল করা হবেনা এবং সে পরকালে ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা আলে ইমরান-৮৫)
অতএব, যারা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন নিয়মনীতি ইসলামের নামে বা ইসলামের সাথে মিশ্রিত করে করতে চায়। যেমন ইসলামী গণতন্ত্র, ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী রাজতন্ত্র ইত্যাদি তা কি করে জায়িয হতে পারে?
না, ইসলামের সাথে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি মিশ্রিত করে ইসলামী গণতন্ত্র, ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী রাজতন্ত্র ইত্যাদি করা শরীয়তে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম যা করলে কেউ ঈমানদার থাকতে পারবে না।
ইসলাম ওহী দ্বারা নাযিলকৃত
আল্লাহ পাক দ্বীন ইসলাম তথা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ ওহীর মাধ্যমে নাযিল করেছেন।
আর ওহী সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেন,
وما ينطق عن الهوى ان هو الا وحى يوحى.
অর্থঃ- তিনি ওহী ব্যতীত নিজ থেকে কোন কথা বলেন না।” (সূরা নজম-৩,৪)
ওহী হচ্ছে দুপ্রকার- (১) ওহীয়ে মাত্লু (২) ওহীয়ে গায়রে মাত্লু।
ওহীয়ে মাত্লু হচ্ছে- যা হুবহু তিলাওয়াত বা পাঠ করতে হয়। যার তাহ্রীফ ও তাবদীল সম্পূর্ণ নাজায়িয ও হারাম। ওহীয়ে মাত্লুর সমষ্টি হচ্ছে কুরআন শরীফ, যা আল্লাহ্ পাক সূরা ইউসুফের৩নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেন,
اوحينا اليك هذا القران.
অর্থ ঃ- আমি এই কুরআন শরীফকে আপনার প্রতি ওহী করেছি বা নাযিল করেছি।
আর ওহীয়ে গায়রে মাত্লু হচ্ছে হাদীছ শরীফ। যা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে নাযিল হয়েছে কিন্তু তার ভাষা হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর। যা কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা স্বরূপ।
উল্লেখ্য, ওহীয়ে মাত্লু বা কুরআন শরীফের তাহ্রীফ, তাবদীল যেমন নাজায়েয ও কুফরী, তেমনি তাফসীর র্বি রায় বা মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা করাও নাজায়িয ও কুফরী। এ সম্পর্কে হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قال فى القران برا يه فليتبوأ مقعده من النار وفى روا ية من قال فى القران بغير علم فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে মনগড়া কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়। অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফ সম্পর্কে ইলম্ ব্যতীত অর্থাৎ বিনা প্রমাণে মনগড়া কোন কথা বলে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান দোযখে করে নেয়।” (তিরমিযী, মিশকাত, মিরকাত)
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
من فسر القران برايه فقد كفر.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের মনগড়া ব্যাখ্যা করলো, সে কুফরী করলো।” (ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন)
আর ওহীয়ে গায়রে মাতলু সম্পর্কে হাদীছ শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اتقوا الحد يث عنى الا ماعلمتم فمن كذب على متعمدا فليتبوأ مقعده من النار.
অর্থঃ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার পক্ষ হতে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যে পর্যন্ত না তা তোমরা আমার বলে নিশ্চিত হবে। কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে, সে যেন (দুনিয়ায় থাকতেই) তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নিল।” (তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত)
মূলতঃ ইসলাম হচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত দ্বীন, যা বাড়ানো-কমানো বা ইফরাত-তাফরীত যেমন কুফরী তেমনি তার মনগড়া তাফসীর বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারকে মিথ্যারোপ করাও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
তার মেছাল বা উদাহরণ হচ্ছে কাদিয়ানী সম্প্রদায়। কাদিয়ানীরা কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস সবই মানে এবং তা স্বীকারও করে থাকে। এমনকি কাদিয়ানীরা  خاتم النبيين (খতামুন নাবিয়্যীন) এ   রহ্মতপূর্ণ ও বরকতপূর্ণ বাক্যাংশটিও তারা শব্দগতভাবে অস্বীকার করে না কিন্তু নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী মনগড়া অর্থ করে। আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা মোতাবেক খতামুন্ নাবিয়্যীন-এর অর্থ হচ্ছে শেষ নবী। হাদীছ শরীফে ইরশাদ  হয়েছে,
عن ثوبان رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا خاتم النبين لا نبى بعدى.
অর্থঃ- হযরত ছাওবান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লাম ইরশাদ করেন, আমিই শেষ নবী। আমার পর কোন নবী নেই।” (মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, আহমদ, ইবনে মাজাহ, কানযুল উম্মাল)
কাদিয়ানীরা আল্লাহ্ পাক-এর রসূল, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবীও স্বীকার করে এবং মানেও। কিন্তু খতামুন্ নাবিয়্যীন-এর অর্থ করে, তিনি নবী সত্য তবে শেষ নয়, নবীদের মোহর। (নাউযুবিল্লাহ্) অর্থাৎ কাদিয়ানী সম্প্রদায় ইসলামের সমস্ত কিছু মানা সত্বেও এমনকি কুরআন শরীফের রহ্মত ও বরকতপূর্ণ বাক্যাংশ খতামুন্ নাবিয়্যীন শব্দগতভাবে মানা সত্বেও অর্থের দিক থেকে শুধু মাত্র খতমশব্দের অর্থ শেষ না করে মোহর করার কারণে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়েছে।
তাহলে বুঝা যাচ্ছে আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত দ্বীন, ইসলামের কোন বিষয় বাড়ানো-কমানো বা ইফরাত-তাফরীত অর্থাৎ কোন মতবাদ বা অন্য কোন ধর্মের সাথে মিশ্রিত করা বা কুরআন শরীফের কোন শব্দের তাহ্রীফ-তাবদীল করা অথবা মনগড়া তাফসীর ইত্যাদি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ যা নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। যারা বাড়াবে ও কমাবে বা তাহ্রীফ-তাবদীল বা কোন মতবাদ বা অন্য কোন ধর্মের সাথে মিশ্রিত করবে অথবা মনগড়া তাফসীর ইত্যাদি করবে তারাও কাফির হয়ে যাবে। যেমন কাদিয়ানী সম্প্রদায় কাফির হয়ে গেছে।
উপরোক্ত আয়াত শরীফ এবং হাদীছ শরীফের মাধ্যমে এটাই প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্ পাক দ্বীন ইসলামকে মনোনীত ও পরিপূর্ণ করে নাযিল করেছেন। আর পূর্ববর্তী ওহী দ্বারা নাযিলকৃত এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মানব রচিত সমস্ত ধর্ম, নিয়মনীতি, আইন-কানুন, তর্জ-তরীক্বা বাতিল ঘোষণা করে ইসলাম নাযিল করেছেন। যাতে আইন-কানুন, নিয়মনীতি, তর্জ-তরীক্বা ইত্যাদি নতুন করে দেয়া হয়েছে যা ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ইত্যাদি প্রতিক্ষেত্রেই পালনীয়। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। যার কারণে মুসলমানগণকে অন্য কোন ধর্ম বা সম্প্রদায় থেকে কোন নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা, আইন-কানুন কর্জ করতে হবেনা। অর্থাৎ ইসলামের জন্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি থেকে করজ নিয়ে ইসলামী গণতন্ত্র, ইসলামী সমাজতন্ত্র, ইসলামী রাজতন্ত্র ইত্যাদি করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং ইসলাম থেকেই সকলকে কর্জ করতে হবে।
গণতন্ত্র ও নির্বাচনের পরিচিতি
গণতন্ত্র হচ্ছে- মানব রচিত শাসন ব্যবস্থা। যার আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি, তর্জ-তরীক্বা মানুষের দ্বারা রচিত। মূলতঃ গণতন্ত্র শুধু মানব দ্বারাই রচিত নয় বরং তা বিধর্মীদের দ্বারা বিশেষ করে ইহুদীদের দ্বারা উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত। আর খ্রিস্টানদের দ্বারা সংস্কারকৃত শাসন পদ্ধতি। যা আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে ওহীর দ্বারা নাযিলকৃত নয়। বরং পূর্ববর্তী যামানায় আল্লাহ্ পাক-এর তরফ থেকে নাযিলকৃত আসমানী কিতাব বিকৃত হওয়ায় অর্থাৎ নফসানিয়াতের দরুন  উক্ত কিতাব বিকৃতি বা পরিত্যাগ করার পর বিধর্মীরা তাদের দেশ পরিচালনা করার জন্য, খোদায়ী আইনের পরিবর্তে নিজেরা যে সব আইন প্রণয়ন করেছিল, পরবর্তী সময় সেগুলো বিভিন্ন নামে পরিচিতি লাভ করে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গণতন্ত্র, যা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রীসে উৎপত্তি লাভ করেছে এবং  বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
গণতন্ত্রের ইংরেজী হচ্ছে- Democracy। যা এসেছে গ্রীক 'Demos' এবং 'Kratos' থেকে। 'Demos'  অর্থ জনগণ এবং 'Kratos' অর্থ শাসন। পলিটিক্যাল সাইন্স বা রাষ্ট্র বিজ্ঞান বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গণতন্ত্র শব্দের অর্থ হচ্ছে- গণঅর্থ জনগণ, আর তন্ত্রঅর্থ নিয়ম-নীতি বা পদ্ধতি। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণের নিয়ম-কানুন বা পদ্ধতি অনুযায়ী শাসন ব্যবস্থা বা সরকার পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে আধুনিক গণতন্ত্রের প্রবক্তা আব্রাহাম লিঙ্কনের উক্তি উল্লেখ্য। তার ভাষায়- "Democracy is a Government of the people, by the people and for the people" যার অর্থ হলো- গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের, জনগণের দ্বারা ও জনগণের জন্য। 
নির্বাচনের প্রাচীন ইতিহাস
প্রাচীন গ্রীসে খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শতাব্দীতে নির্বাচন প্রথা চালু ছিল। এছাড়া রোমান সিনেটেও এ পদ্ধতি চালু ছিল।
Election সম্পর্কে ধর্ম, মিথলজি বিষয়ক Encyclopedia Man, Myth's Magic-এ বলা হয়েছে- Election, the world is derived from the Greek word eloge (choice). The idea is basic to the traditional structure of Christian theology. অর্থাৎ ইলেকশন বা নির্বাচন শব্দটি উৎসরিত হয়েছে বা উৎপত্তি লাভ করেছে গ্রীক শব্দ Eloge হতে যার অর্থ ছিল পছন্দ। নির্বাচনের ধারণা প্রাচীন খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের ব্যাখ্যার উপর প্রতিষ্ঠিত।
এ ব্যাখ্যাটি এরূপ যে, তাদের God নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তিবর্গ অথবা জাতিকে বিশেষভাবে পছন্দ করতেন তার রাজত্বে বিশেষ কিছু ভূমিকা পালনের জন্য, যাকে বলা হত নির্বাচন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, The idea that God specially choses certain individuals or nations for some peculiar role in the scheme of his providence is known as election.
উল্লেখ্য, খ্রীষ্টান ধর্মতত্ত্বে নির্বাচনের ধারণাটি অদৃষ্টবাদ থেকে এসেছে। এ সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ In Christian theology the idea of election became associated with predestination, খ্রীষ্টানদের আরো ধারণা যে, তাদের খোদার পছন্দনীয় বা elected অবশ্যই স্বল্প হবে। Many are called buf few are chosen (Mathew- 22-14)
মূলকথা হচ্ছে, নির্বাচন খ্রীষ্টীয় ধর্মতত্ত্বের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত একটি বিষয়।  এ বিষয়ে Man, Myth & Encyclopedia Magic-এ আরো বলা হয়েছে, "However that the doctrine of election found its most notable expression in Christianity.
আধুনিক কালের ইতিহাস
তবে আধুনিক ভোটদান ব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে। ইংল্যান্ডে ১৬৮৮ সালে বিপ্লবের পর রাজনৈতিক ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে চলে যায়। পার্লামেন্ট ১৮৩২ সালে প্রথম সংস্কার আইনে সমস্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণীকে ভোটাধিকার দেয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৮৬৭ সালে কারখানার শ্রমিকদের, ১৮৮৪ সালে কৃষি মজুরদের, ১৯১৮ সালে সীমিত সংখ্যক নারীদের এবং ১৯২৮ সালে সকল নারীদের ভোটাধিকার দেয়া হয়। ১৯১৮ সালের পূর্বে বৃটেনে বিশ্ব বিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটরা সাধারণ কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র এ দুটি কেন্দ্রের ভোটাধিকারী ছিল। পরবর্তীতে অর্থাৎ ১৯৪৮ সালে এ সকল পদ্ধতির সমাপ্তি ঘটিয়ে একুশ বছর বা তদুর্ধ বয়সের সকল সম্প্রদায়ের জন্য সার্বজনীন ভোটাধিকার দেয়া হয়।
অপরদিকে আমেরিকায় ১৮৭০ খৃষ্টাব্দে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বলা হয় যে, কোন ব্যক্তিকে তার জাতি, ধর্ম অথবা পূর্ব দাসত্বের জন্য ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবেনা। ১৯৩৩ সালে সপ্তদশ সংশোধনীতে সিনেট সদস্যদের, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯২০ সালে মহিলা ভোটাধিকার স্বীকৃত হয়। ১৯৭১ সালে ভোটারদের বয়স সীমা কমিয়ে ১৮ বছরে আনা হয়।
ভোটের প্রকারভেদ ও ব্যালট প্রথা
উল্লেখ্য, ভোট হলো দুপ্রকার- (১) প্রকাশ্য ভোটদান, (২) গোপনে ভোটদান।
প্রকাশ্য ভোটদান ব্যবস্থায় ভোটদানকারীরা বিপরীত পক্ষীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই এটি সর্বত্রই পরিত্যক্ত হয়েছে।
আর গোপনে ভোটদান ব্যবস্থায় ভোটদানকারীরা কারো দ্বারা কোন প্রকার ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেনা, তারা তাদের ভাষায় নির্ভয়ে ও স্বাধীনভাবে ভোট প্রদান করতে পারে। তাই ব্যালট পেপারের মাধ্যমে এ ব্যবস্থা প্রায় সর্বত্রই চালু রয়েছে।
ব্যালট
ব্যালট হচ্ছে একটি কাগজের শীট, যার দ্বারা গোপন ভোট প্রদান করা হয়। Ballot শব্দটি এসেছে ইটালী ব্যালোটা Ballotia হতে। যার অর্থ হচ্ছে- ছোট বল। এটি এভাবে উৎপত্তি হয়েছে যে, প্রাচীনকালে এর দ্বারা ভোট গ্রহণ করা হতো এবং গ্রীসে এই পদ্ধতির প্রচলন ছিল। জনতার দরবারে অথবা আইন সভায় খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে এবং কখনো কখনো রোমান সিনেটে এই পদ্ধতি চালু ছিল। সাধারণতঃ সাদা এবং কালো বল হ্যাঁ এবং না বোধক ভোটে ব্যবহৃত হতো।
অপরদিকে আমেরিকায় উপনিবেশিক কালের শুরুতে সীম শস্যকণা ব্যালট হিসেবে ব্যবহৃত হতো।
উল্লেখ্য, কোন কোন সংগঠন এখনো নতুন সদস্য গ্রহণে ভোটাভুটিতে সাদা এবং কালো বলের ব্যবহার করে থাকে।
বর্তমানে গণতান্ত্রিক দেশসমূহে কাগজের ব্যালট বা ব্যালট পেপার নির্বাচনে ভোটারদের ছদ্মনাম হিসেবে কাজ করে এবং এভাবেই অধিকাংশ ভোটারের ইচ্ছা প্রকাশ পায়।
গোপন ভোটদানের পদ্ধতি হিসেবে ব্যালট পেপার ব্যবহারের প্রথম প্রামাণিক ঘটনা ঘটে ১৬২৯ সালে আমেরিকার চার্চে। অতঃপর আমেরিকান ঔপনিবেশে এই ব্যালট পেপারের প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে। এরপরে ধীরে ধীরে ব্যালট পেপারের অনেক সংস্কার হয় এবং পরবর্তীতে একই কলামে বিভিন্ন দলের প্রতীক সংযুক্ত হয়, যা সাধারণতঃ বর্ণমালা অনুযায়ী সংযুক্ত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালের মধ্যে এই ব্যালট প্রথা প্রায় সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
সাধারণভাবে নির্বাচন বলতে বুঝায়, “একাধিক পদপ্রার্থী থেকে ভোটদানের মাধ্যমে একজনকে নির্বাচিত করা।যে বা যারা পদের মুখাপেক্ষী তারা তাদের পদের জন্য মানুষের নিকট তাদের মুখাপেক্ষীতা প্রকাশ করে থাকে তখন মানুষ তাদের বিবেচনায় যাকে উপযুক্ত মনে করে তাকেই ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। উল্লেখ্য, নির্বাচিত ব্যক্তি পদের মুখাপেক্ষী, পদ নির্বাচিত ব্যক্তির মুখাপেক্ষী নয়।
আর ভোট হচ্ছে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার পদ্ধতি যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি পারে তার পছন্দনীয়কে চিহ্নিত করতে বা প্রকাশ করতে এবং যে পছন্দের সংখ্যা বেশী হয়, তাই গ্রহণযোগ্য হয়।    
উল্লেখ্য, সংবিধানে ভোটদানের জন্য কিছু শর্ত-শারায়েত করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- দুটি। (১) বাংলাদেশের নাগরিক হওয়া, (২) ভোটদাতার বয়স আঠারো বছরের কম নয়।
আর এক্ষেত্রে যে অযোগ্যতা, তা হলো- (১) কোন যোগ্য আদালত তাকে অপ্রকৃতিস্থ বলে ঘোষণা করেনি। (২) ১৯৭২ সালের বাংলাদেশে যোগসাজসকারী (বিশেষ ন্যায় পীঠ) আদেশের অধীন কোন অপরাধের জন্য দণ্ডিত হননি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এসব শর্ত দ্বারা ইসলাম পালিত হয় না।
প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। কেননা নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র বাস্তবায়িত হয়। আর নির্বাচনের প্রয়োজন তখনই হয় যখন কোন পদে একাধিক ব্যক্তি প্রার্থী হয়। একাধিক প্রার্থীর মধ্যে উক্ত পদ একজনকে দেয়ার লক্ষ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর উক্ত নির্বাচন ভোট প্রয়োগের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্রের মূল বিষয় বা ভিত সমূহের মধ্যে অন্যতম হলো সার্বভৌমত্ব জনগণের। অর্থাৎ জনগণই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল অথবা গণতন্ত্রে জনগণই সকল সার্বভৌমত্বের মালিক।
স্মরণীয়, আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র যেহেতু বিশাল এলাকা ও জনগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত সেহেতু জনসাধারণের পক্ষে সরকার পরিচালনায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ সম্ভব নয়। তাই জনগণ ভোটদানের মাধ্যমে তাদের সার্বভৌম ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রতিনিধি নির্বাচন করে পরোক্ষভাবে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এ কথাই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, “নির্বাচনযার ইংরেজী হচ্ছে ইলেকশন” (Election) যা গ্রীক এ্যালোজি” (Eloge) শব্দ থেকে উৎসারিত বা উৎপত্তি লাভ করেছে। যা পরবর্তীতে খ্রীষ্ট ধর্মের সাথে বিশেষভাবে সম্পৃক্ত হয়ে খ্রীষ্ট ধর্মের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার সাথে ইসলামের কোন দিক থেকে কোন প্রকার সম্পর্ক নেই।  বরং যা জনগণকে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বলে প্রতিপন্ন করে।
গণতন্ত্র যে কারণে ইসলাম সম্মত নয়
বা যে কারণে গণতন্ত্র ইসলামী গণতন্ত্র হতে পারেনা
গণতন্ত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক বা সকল ক্ষমতার উৎস হচ্ছে একমাত্র জনগণ। আর এই সার্বভৌম ক্ষমতা বা সমস্ত ক্ষমতার মালিক হওয়ার কারণেই গণতন্ত্রীরা নিজেরাই নিজেদের জন্য আইন-কানুন, তর্জ-তরীকা, নিয়ম-নীতি ইত্যাদি প্রণয়ন করে থাকে। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধিরা একমাত্র আইন প্রণেতা। তাই গণতান্ত্রিক আইন সভায় যদি কোন কুরআন-সুন্নাহ্র অর্থাৎ শরয়ী কোন আইন পেশ করা হয় আর যদি সেটা তাদের গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার খেলাফ হয় বা মনোপুত না হয় তাহলে সে সব শরয়ী আইন সেখানে উপেক্ষিত হয় বা আদৌ গৃহীত হয়না। কারণ গণতান্ত্রিক বিধি অনুযায়ী তাদের অধিকাংশ আইন প্রণেতা যে বিষয় একমত পোষণ করবে সেটাই আইন হিসেবে গৃহীত হবে।
উল্লেখ্য, গণতন্ত্রীরা যে আইন প্রণয়ন করেছে তা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রদত্ত আইনের খিলাফ হওয়া সত্ত্বেও তাদের কাছে তা গৃহীত হয়েছে এবং তা বাস্তবায়িত করার জন্য তারা সর্বপ্রকার ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে।  (নাঊযুবিল্লাহ)
শুধু তাই নয় তাদের ভাষায় ইসলামী আইন-কানুন যা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ থেকে প্রদত্ত হয়েছে তা থেকে অনেক আইন কানুনই পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংস্কার করতে হবে এবং করতে শুরুও করেছে। (নাঊযুবিল্লাহ) নিম্নে তার কয়েকটি উদাহরণ পেশ করা হলোঃ
১. ওয়ারিছ সত্ত্বের ক্ষেত্রেঃ
কুরআন-সুন্নাহ্ অনুযায়ী শরীয়তের ফতওয়া হলো- দাদা জীবিত থাকতে পিতা ইন্তিকাল করলে নাতি ওয়ারিছ হবেনা। যা আল্লাহ্ পাক কুরআন শরীফে সূরা নিসার ১১-১২নং আয়াত শরীফে উল্লেখ করেন।
অথচ ১৯৬১ সনে প্রেসিডেন্ট আইউব খানের কথিত গণতান্ত্রিক সরকার কুরআন-সুন্নাহ্ অনুযায়ী শরীয়তের উক্ত ফতওয়াকে ইয়াতিমের জন্য ক্ষতিকারক বলে রদ বা বাতিল ঘোষণা করে। (নাঊযুবিল্লাহ)
অতঃপর উক্ত কথিত গণতান্ত্রিক সরকার কথিত গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ জারী করে কুরআন-সুন্নাহ্র পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংশোধন ও সংযোজনের মাধ্যমে মনগড়া নতুন আইন জারী করে যে, দাদা জীবিত থাকতে পিতা ইন্তিকাল করলেও নাতি ওয়ারিছ হবে। (নাঊযুবিল্লাহ) যা উক্ত অধ্যাদেশের ৪নং ধারায় বলা হয়েছে- যাহার সম্পত্তি মিরাসে বণ্টন হইবে, তাহার পূর্বে তাহার কোন পুত্র বা কন্যা মারা গেলে এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাহার সম্পত্তি বণ্টনের সময় উক্ত পুত্র বা কন্যার কোন সন্তানাদি জীবিত থাকলে তাহারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ঐ অংশ পাইবে যাহা তাহাদের পিতা অথবা মাতা জীবিত থাকলে পাইতো।” (নাঊযুবিল্লাহ) যা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী।
এখানে উল্লেখ্য, গণতন্ত্রীরা আল্লাহ পাক প্রদত্ত আইনকে বাতিল বলে ঘোষণা করে তাদের মনগড়া আইন ইসলামের নামে চাপিয়ে দিয়েছে যা মানা ও আমল করা উভয়টাই কাট্টা কুফরী। তাহলে গণতন্ত্র কি করে ইসলামী হতে পারে?
এক্ষেত্রে কুরআন-সুন্নাহ্র ফায়সালা হলো, “দাদা জীবিত থাকতে পিতা ইন্তিকাল করার কারণে যে নাতি-নাতিনী ইত্যাদি যারা লা ওয়ারিছ হয়, তাদের জন্য দাদার পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত ওছিয়ত করার নির্দেশ রয়েছে। যদি কেবল দাদার গাফলতীর কারণে ওছিয়ত না করার জন্য লা ওয়ারিছ নাতি-নাতিনীরা কষ্টের স্বীকার হয়, তাহলে উক্ত দাদা কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে।
উল্লেখ্য যে, কুরআন-সুন্নাহ্তে ওছিয়ত করার যে নির্দেশ রয়েছে, তা একমাত্র যারা লা ওয়ারিছ বা ওয়ারিছ নয়, তাদের জন্যই। কেননা যারা ওয়ারিছ, তাদের জন্য ওছিয়ত করা নাজায়িয ও হারাম।
স্মর্তব্য যে, কুরআন-সুন্নাহ্তে যেরূপ নাতি দাদার ওয়ারিছ নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তদ্রুপ কুরআন-সুন্নাহ্তেই অভাবগ্রস্থ নাতির জন্য দাদার ওছিয়ত করা অবশ্যই কর্তব্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কুরআন-সুন্নাহ্ সম্পর্কে অজ্ঞতা, জিহালত ও মূর্খতার কারণেই কথিত গণতন্ত্রীরা আল্লাহ্ পাক-এর এ আদেশকে ইয়াতিমের জন্য ক্ষতিকারক বলে উল্লেখ করেছে (নাউজুবিল্লাহ)। অথচ তাদের এ আক্বীদা শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। এরূপ একটি কুফরী বা ইসলাম বিরোধী মতবাদকে কি করে ইসলামী গণতন্ত্র বলা যেতে পারে?
২. বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রেঃ
কুরআন-সুন্নাহ্ অনুযায়ী ছেলে ও মেয়েকে বিয়ে করার ও বিয়ে দেয়ার জন্য কোন বয়স নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ ৫, ১০, ১৫ ইত্যাদি বছরের কমে অথবা ৪০, ৬০, ৮০ ইত্যাদি বছরের চেয়ে বেশী বয়সে বিয়ে করা যাবে বা যাবেনা এমন কোন শর্ত-শারায়িত বর্ণনা করা হয়নি।
কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকার তাদের গণতান্ত্রিক নিয়ম-নীতি অনুযায়ী কোন মেয়ের বিয়ে বসা বা বিয়ে দেয়ার জন্য কমপক্ষে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আইন বা শর্ত করে দিয়েছে এবং ১৮ বছর বয়সের নীচে কোন মেয়েকে বিয়ে দেয়া, বিয়ে করা বা কোন মেয়ের জন্য বিয়ে বসা দণ্ডনীয় অপরাধ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ) যেমন- এ প্রসঙ্গে ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ২এর (ক) উপধারায় বলা হয়েছে- শিশু বা নাবালক বলিতে ঐ ছেলে ও মেয়েকে বুঝাইবে, যাহার বয়স ছেলে হইলে একুশ বছরের নীচে এবং মেয়ে হইলে আঠার বছরের নীচে হইবে।
আর এরূপ নাবালকের বিয়ের শাস্তি প্রসঙ্গে এই আইনের ৪ ধারায় বলা হয়েছে- একুশ বৎসরের অধিক বয়স্ক কোন পুরুষ বা আঠার বৎসরের অধিক বয়স্কা কোন মহিলা কোন শিশুর সহিত বিবাহের চুক্তি সম্পাদন করিলে, তাহার একমাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড কিংবা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকারের দণ্ডই হতে পারে।” (নাঊযুবিল্লাহ)
উল্লেখ্য, এ আইনের ৫ ও ৬ ধারায় এরূপ বিবাহ সম্পন্নকারী ও অভিভাবকের জন্যও একই শাস্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
এক্ষেত্রে স্মরনীয় যে, যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি স্বয়ং নিজেই হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর সাথে উনার ৬ বছর বয়স মুবারকে আক্বদ্ মুবারক সম্পন্ন করেছিলেন ও ৯ বছর বয়স মুবারকে ঘরে তুলে নিয়েছিলেন। তাহলে কি আল্লাহ্ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর পিতা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাদের গণতান্ত্রিক নিয়ম-নীতি অনুযায়ী দন্ডনীয় হবেন? (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক)। যা কেউ কল্পনা করলেও কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হবে।
এখানে উল্লেখ্য, গণতন্ত্রীরা স্বয়ং আল্লাহ পাক-এর হাবীব নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দোষী সাব্যস্ত করা ও উনাকে দণ্ডনীয় অপরাধে অপরাধী হিসেবে সাবস্ত্য করার জন্য ইসলামী আইন বাতিল করে এই আইন ইসলামের নামে চাপিয়ে দিয়েছে। (নাঊযুবিল্লাহ)
যা মানা ও বিশ্বাস করা কাট্টা কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার জন্য যথেষ্ট। গণতন্ত্রীদের এই আইন যদি কোন মুসলমান মেনে নেয় তাহলে সে কি করে ঈমানদার থাকতে পারে? তাহলে ইসলামের নামে কি করে গণতন্ত্র করা যেতে পারে?
৩. সাক্ষীর ক্ষেত্রেঃ
আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেন,
واستشهدوا شهيد ين من رجا لكم فان لم يكو نا رجلين فر جل وامراتن.
অর্থঃ- তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দুজন স্বাক্ষী দাঁড় করাও। যদি দুজন পুরুষ না পাওয়া যায় তাহলে একজন পুরুষ ও দুজন মহিলার স্বাক্ষ্য গ্রহণ কর।” (সূরা বাক্বারা-২৮২)
অর্থাৎ ইসলামে দুজন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের স্বাক্ষ্যের সমান। কিন্তু গণতন্ত্রে তথা ভোট প্রথায় একজন পুরুষের স্বাক্ষ্য একজন মহিলার স্বাক্ষ্যের  সমান।
উপরোক্ত আয়ত শরীফে আল্লাহ পাক দুজন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের স্বাক্ষ্যের সমান বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধিরা একজন মহিলার স্বাক্ষ্য একজন পুরুষের স্বাক্ষ্যের সমান বলে ধার্য্য করেছে।  এটা প্রকাশ্য কুফরীর শামিল। আল্লাহ পাক-এর বিধানের বিপরীত যারা আইন প্রণয়ন করবে তারা কাট্টা কাফির, জালিম ও ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
من لم يحكم بما انزل الله فاولئك هم الكفرون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা কাফির।” (সূরা মায়িদা- ৪৪)
من لم يحكم بما انزل الله فاولئك هم الظلمون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা যালিম।” (সূরা মায়িদা- ৪৫)
من لم يحكم بما انزل الله فاولئك هم الفسقون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা ফাসিক।” (সূরা মায়িদা- ৪৭)
কাজেই ইসলামের নামে যারা গণতন্ত্র করবে, তারা কাফির, যালিম ও ফাসিকের অন্তর্ভুক্ত। তাহলে কি করে গণতন্ত্রকে ইসলামী বলা যেতে পারে?
৪. পর্দার ক্ষেত্রেঃ
গণতন্ত্রে পর্দাকে মোটেও গুরুত্ব দেয়া হয় না বরং বেপর্দাকেই সর্বোতভাবে সমর্থন ও বাস্তবায়ন করে থাকে। অথচ ইসলামে পর্দা করা ফরযে আইন। কুরআন শরীফে  সূরা নিসা, সূরা নূর ও সূরা আহযাবইত্যাদি সূরাসমূহে পর্দা করার ব্যাপারে কঠোর আদেশ-নির্দেশ করা হয়েছে।
যেমন আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قل للمؤ منين يغضوا من ابصار هم ويحفظوا فروجهم ذلك ازكى لهم ان الله خبير بما يصنعون. وقل للمؤ منت يغضضن من ابصار هن ويحفظن فروجهن ولايبدين زينتهن.
অর্থঃ- “(হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতার কারণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ পাক তারা যা করে তার খবর রাখেন। আর আপনি মুমিনাদেরকে বলুন, তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং তাদের ইজ্জত-আবরু হিফাযত করে ও তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সূরা নূর-৩০,৩১)
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن بريدة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لعلى  يا على لاتتبع النظرة النظرة فان لك الاولى وليست لك الا خرة.
অর্থঃ- হযরত বুরাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-এর রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, দৃষ্টিকে অনুসরণ করোনা। প্রথম দৃষ্টি (যা অনিচ্ছা সত্ত্বে পতিত হয় তা) ক্ষমা করা হবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টি ক্ষমা করা হবে না।অর্থাৎ প্রতি দৃষ্টিতে একটি কবীরা গুণাহ্ লেখা হয়ে থাকে। (আহমদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, দারিমী, মিশকাত)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক তাঁর কালাম পাক এবং আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর হাদীছ শরীফ দ্বারা সরাসরি পর্দাকে ফরয করে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় বরং চোখের দৃষ্টিসহ সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে হিফাযত করে পর্দা করতে বলেছেন।
গবেষণা করে দেখা গেছে যে, “প্রত্যেক মানুষ পুরুষ কিংবা মহিলা হোক, সে প্রতি দুসেকেন্ডে পাঁচটি করে চোখের পলক বা দৃষ্টি ফেলে থাকে। সে হিসেবে প্রতি মিনিটে ১৫০টি পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। আর ঘণ্টা হিসেবে প্রতি ঘণ্টায় ৯০০০ (নয় হাজার) পলক বা দৃষ্টি করে থাকে। সে হিসেবে বেগানা পুরুষ ও মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে তাদের উভয়ের প্রতি এক মিনিটে তিনশটি এবং এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীর্ াগুনাহ্ লিখা হয়। এ হিসাব একজন পুরুষ ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে। আর যদি কোন মিটিং মিছিলে উপস্থিত মহিলা-পুরুষের পরস্পর পরষ্পরের দৃষ্টির হিসাব করা হয় তাহলে গুনাহর পরিমাণ আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। ধরা যাক, কমপক্ষে মিটিং-মিছিলের সময় ৩ ঘণ্টা আর পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা ১০০+১০০= ২০০ জন। এখন একজন পুরুষ ও একজন  মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি করার কারণে এক ঘণ্টায় আঠারো হাজার কবীরাহ গুনাহ  হয় তাহলে একশ জন পুরুষ ও একশ জন মহিলা পরস্পর পরস্পরের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার কারণে কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে ৩৬ লক্ষ এবং তিন ঘণ্টায় হবে  ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ।
অথচ একজন মানুষ যদি একশ বছর হায়াত পায়। আল্লাহ পাক না করুন সে যদি  নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত (ফরয হওয়া সত্ত্বেও) কিছুই না করে তারপরও ১ কোটি ৮ লক্ষ কবীরা গুনাহ হবেনা। যেমন, একশ বছরে অর্থাৎ জীবনে একবার হজ্জ করা ফরয তা না করার কারণে ১টা কবীরা গুনাহ। যাকাত একশ বছরে একশটা ফরয তা না দেয়ার কারণে ১০০টা কবীরা গুনাহ। রোযা ২৯ বা ৩০ টা। হিসাবের সুবিধার্থে যদি ৩০টা ধরে নেয়া হয়  তা না রাখার কারণে একশ বছরে ৩,০০০ কবীরা গুনাহ। এরপর নামায দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ৫টা, এক ওয়াক্ত ওয়াজিব ১টা, সুন্নতে মুয়াক্কাদা- ফজরের ফরযের পূর্বে ১টা, যুহরের ফরযের আগে-পরে ২টা, মাগরিবের ফরযের পর ১টা, ইশার ফরযের পর ১টা মোট ৫টা তা আদায় না করার কারণে সবমিলে দৈনিক ১১টা কবীরা গুনাহ। বছরে  ত্রিশ তারাবীহ (সুন্নতে মুয়াক্কাদা) তা আদায় না করার কারণে ৩০টা এবং দুঈদ (ওয়াজিব) তা আদায় না করার কারণে ২টা মোট ৩২টা কবীরা গুনাহ। এক বছরে নামায- ৪৪৭০০,  যাকাত- ১০০, রোযা- ৩০০০, হজ্জ- ১টা, সর্বমোট ৪,৭৮,০০১টা।
অর্থাৎ একশ বছর কোন ব্যক্তি নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত না করলে তার সর্বোচ্চ কবীরা গুনাহর পরিমাণ হলো মাত্র চার লাখ সাত  হাজার আটশএকটা।
আর একজন পুরুষ কিংবা মহিলা যদি কোন মিটিং-মিছিলে যোগ দেয় যে মিটিং-মিছিলে পুরুষ বা মহিলার সংখ্যা কমপক্ষে একশজন এবং সেখানে একঘণ্টা অবস্থান করে তাহলে শুধু চোখের দৃষ্টির কারণে তার কবীরা গুনাহর পরিমাণ হবে আঠারো  লক্ষ। আর লোক সংখ্যা বেশী হলে এবং বেশী সময় অবস্থান  করলে কত লক্ষ-কোটি কবীরা গুনাহ হবে তা  বলার অপেক্ষা রাখে না। তাহলে পর্দার কত গুরুত্ব রয়েছে তা চিন্তা-ফিকিরের বিষয়। আর যে গণতন্ত্র বেপর্দার মূ বা চাবি-কাঠি সেই গণতন্ত্র কিভাবে ইসলামী হতে পারে?
৫. ছবির ক্ষেত্রেঃ
বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফইত্যাদি সমস্ত বিশ্বস্ত হাদীছ শরীফের কিতাবসমূহে ছবি তোলা শক্ত হারামবলে  বর্ণনা করা হয়েছে।  যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان اشد الناس عذا با عند الله المصورون.
অর্থঃ- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আমি শুনেছি, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয় মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি তোলে বা আঁকে।” (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ ইসলামে ছবি তোলা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কিন্তু গণতন্ত্রে ছবি তোলা হারাম নয়। বরং গণতন্ত্রে এ হারাম কাজকেই সব সরকারী কাজে তথা বেসরকারী কাজে বাধ্যতামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকেও আমলে আনা হয়না। তাহলে সেই গণতন্ত্রকে ইসলামী গণতন্ত্র বলা কি  করে জায়িয হতে পারে?
৬. টিভি চ্যানেলের ক্ষেত্রেঃ
গণতন্ত্রে টিভি চ্যানেলগুলোকে তথাকথিত সংস্কৃতির বাহন ছাড়াও ইসলাম প্রচারের মিডিয়া হিসেবে গ্রহণ করা  হয়। এক্ষেত্রে বলা  হয় যে, টিভি চ্যানেলে ইসলামী প্রোগ্রাম দ্বারা ইসলামের প্রচার হয়ে থাকে। মুলতঃ এটা সম্পূর্ণই গোমরাহী কথা। বরং টিভিতে ইসলামী প্রোগ্রাম দ্বারা ইসলামের ক্ষতি হয়। কারণ, টিভিতে একদিকে ছবি আরেকদিকে বেপর্দা উভয়টিই আলাদাভাবে শক্ত হারাম ও কবীরা গুনাহ্। এর দ্বারা হারাম ও কবীরা গুনাহরই প্রসার হয়ে থাকে। এছাড়া টিভিতে যারা ইসলামী প্রোগ্রাম করে তারা কেউই হক্কানী আলিম নয়। তারা হচ্ছে উলামায়ে ছূ। আর উলামায়ে ছূরা ইসলামের অপব্যাখ্যা করে। তাই তাদের থেকে দ্বীন শিক্ষা করা সম্পূর্ণ নাজায়িয। হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابن سير ين رحمة الله عليه قال ان هذا العلم دين فا نظر وا عمن تا خذون دينكم.
অর্থঃ- হযরত ইবনে সিরীণ রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই ইলম্ই হচ্ছে দ্বীন। অতএব তোমরা কার নিকট থেকে দ্বীন শিক্ষা করছো, তাকে দেখে নেও।অর্থাৎ তার আক্বীদা-আমল কুরআন-সুন্নাহ সম্মত কিনা? তা যাছাই-বাছাই করে নেও।” (মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
অতএব, ইসলাম প্রচারের অজুহাত দিয়ে যারা টিভিকে জায়িয বলবে তারা কাফির হয়ে যাবে।  আর মুসলমান হয়ে যারা টিভিকে জায়িয বলবে তারা মুরতাদ হয়ে যাবে।
এখানে উল্লেখ্য ইসলামে ছবি তোলা, আঁকা, সম্পূর্ণ হারাম অথচ গণতন্ত্রীরা ছবি তুলতে বাধ্য করে থাকে তাদের মনগড়া আইন দ্বারা অর্থাৎ গণতন্ত্রীরা তাদের মনগড়া আইন ইসলামের নামে চাপিয়ে ইসলামী আইন বাতিল করতে চায়। অথচ হাজার হাজার হাদীছ শরীফ দ্বারা ছবি তোলা ও আঁকা হারাম বর্ণিত রয়েছে। এরপরও কি করে ইসলামের নামে গণতন্ত্র করা বা ইসলামের সাথে গণতন্ত্রকে মিশ্রিত করাকে জায়িয বলা যেতে পারে?
৭. নারী নেতৃত্ব মানার ক্ষেত্রেঃ
ইসলামে খিলাফত পরিচালনার জন্য তথা খলীফা হওয়ার জন্য যে সমস্ত শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে তাহলো- মুসলমান হওয়া, পুরুষ হওয়া, আক্বল হওয়া, স্বাধীন হওয়া, বালেগ হওয়া, বাকশক্তি সম্পন্ন হওয়া, শ্রবণ শক্তি সম্পন্ন হওয়া, দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন হওয়া, সাহসী ও শক্তি সম্পন্ন হওয়া, আদেল ও পরহিযগার হওয়া মুজাহিদ হওয়া, কুরাইশ হওয়া।
হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,
عن ابى بكرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه سلم لن يفلح قوم ولوا امر هم امراة
অর্থঃ হযরত আবূ বাকরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ঐ ক্বওম কখনই কল্যান বা সফলতা লাভ করতে পারে না যারা তাদের শাসনভার কোন মহিলার উপর ন্যাস্ত করেছে।” (বুখারী, তিরমিযী, নাসায়ী)
অর্থাৎ ইসলামী খিলাফতে মহিলা কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব ও খলীফা হওয়া কখনো গ্রহনযোগ্য নয়। বরং হারাম ও নাজায়িয।
আর গণতন্ত্রে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য তথা রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রেসিডেন্ট অথবা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন, ফাসিক-ফুজ্জার, ইহুদী-নাছারা, হিন্দু-বৌদ্ধ, মজুসি, জাহিল-যালিম ইত্যাদি যে কেউ হতে পারে।
গণতন্ত্রে মহিলা কর্তৃত্ব, নেতৃত্ব ও প্রধান হওয়াটা সব অবস্থায়ই গ্রহনযোগ্য। এমনকি মুসলমান ও কাফির হওয়ার মধ্যেও কোন পার্থক্য নেই।
উল্লেখ্য, খলীফা হওয়ার জন্য যেসব শর্ত নির্ধারণ বা ধার্য্য করা হয়েছে তা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে। অর্থাৎ ওহী দ্বারা ফয়সালাকৃত। আর রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার জন্য যে শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা মানব রচিত আইনের দ্বারা। যার সাথে ওহীর কোন সম্পর্ক নেই। এরূপ গণতন্ত্র কি করে ইসলামী গণতন্ত্র হতে পারে?
৮. অধিকাংশের মত গ্রহণ করার ক্ষেত্রেঃ
গণতন্ত্রে অধিকাংশের মত গ্রহনযোগ্য। অর্থাৎ অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি যে মত বা রায় পেশ করবে সেটাই কার্যকরী হবে। তা দ্বীনি হোক বা বেদ্বীনি হোক, কুফরী হোক অথবা শেরেকী হোক তা দেখার বিষয় নয়। বরং দেখার বিষয় হলো অধিকাংশ জনগণ কি চায় সে অনুযায়ী ফয়সালা হবে।
অথচ মহান আল্লাহ পাকসূরা আনয়ামের ১১৬নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
وان تطع اكثر من فى الارض يضلوك عن سبيل الله
অর্থাৎ তুমি যদি জমিনের অধিকাংশ লোককে অনুসরণ কর, তবে তারা তোমাকে গোমরাহ করে ফেলবে।তাহলে বুঝা গেল যে, অধিকাংশ লোকের মতকে গ্রহণ করা যাবে না। কারণ দুনিয়ার অধিকাংশ লোকই গোমরাহ বা বিভ্রান্ত।
অর্থাৎ ইসলামে অধিকাংশের মতকে প্রাধান্য দেয়া হয় না বা  ইসলামে তার কোন গুরুত্ব নেই। বরং প্রাধান্য দেয়া হয় কুরআন ও সুন্নাহর বিধানকে। অর্থাৎ ওহীর নির্দেশকে। যদিও তা একজনের পক্ষ থেকে বলা হোক এবং তিনি যত সাধারণ ব্যক্তিই হোন না কেন। যেমন হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عن العر باض بن سارية رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم والسمع والطا عة وان كان عبدا حبشيا.
অর্থঃ হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহ পাক-এর হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঐ ব্যক্তির (উলিল আমরের) কথা শুন এবং মান্য কর যদিও তিনি হাবশী কৃতদাসও হয়ে থাকেন।” (মিশকাত শরীফ)
অতএব গণতন্ত্রের উছূল হলো, অধিকাংশ জনগণ যা বলবে বা যা চাবে সেটাই করতে হবে। আর ইসলামের উছূল হলো, অধিকাংশ বা অল্প সংখ্যক জনগণ যা বলবে বা যা চাবে সেটার কোনই গুরুত্ব নেই। বরং গুরুত্ব হলো কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে যা বলা হয়েছে তার। সেই গণতন্ত্র কি করে ইসলামী গণতন্ত্র হতে পারে?
৯. আইন পরিবর্তন করার ক্ষেত্রেঃ
গণতন্ত্রের আইন পরিবর্তন ও পরিবর্ধনযোগ্য। এবং অবশ্যই তা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে হবে। কারণ- গণতন্ত্র একটা নাক্বিছ তথা অপূর্ণ মানব রচিত শাসন ব্যবস্থা। তাই তা প্রয়োজন অনুযায়ী পার্লামেন্ট বা সংসদ বসে জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের মন মতো ও সুবিধামত আইন তৈরি করে থাকে এবং ভেঙ্গেও থাকে। যেহেতু গণতন্ত্রের সাথে ওহীর কোন সম্পর্ক নেই।
কিন্তু ইসলামের বিধান অপরিবর্তনীয়। কারণ তা ওহীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর ওহীর দরজা যেহেতু বন্ধ হয়ে গেছে সেহেতু তা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করার প্রশ্নই আসতে পারে না।
من لم يحكم بما انزل الله فاولئك هم الكفرون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা কাফির।” (সূরা মায়িদা- ৪৪)
من لم يحكم بما اتزل الله فاولئك هم الظلمون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা যালিম।” (সূরা মায়িদা- ৪৫)
من لم يحكم بما انزل الله فاولئك هم الفسقون.
অর্থঃ- আল্লাহ পাক যা নাযিল করেছেন সে মুতাবিক যারা আদেশ-নির্দেশ করেনা তারা ফাসিক।” (সূরা মায়িদা- ৪৭)
افحكم الجا هلية يبغون ومن احسن من الله حكما لقوم يو قنون.
অর্থঃ- তোমরা কি জাহেলিয়াতের আইন-কানুন তালাশ কর বা চাও। অথচ আল্লাহ্ পাক হতে ঈমানদারদের জন্য উত্তম হুকুমদাতা বা আইন প্রণেতা কে রয়েছেন?” (সূরা মায়েদা/৫০)
ইসলামী বিধানের পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের চেষ্টা করার অর্থ হলো ওহী দাবী করা। আর ওহী দাবী করার অর্থ হলো নবী দাবী করা। আর যে নবী দাবী করবে সে কাট্টা কাফির হবে। যেমন কাদিয়ানী নবী দাবী করে অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহর আইনকে পরিবর্তন করে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামী হয়েছে। তাহলে ইসলামের সাথে গণতন্ত্রকে মিশ্রিত করা কি করে জায়িয হতে পারে।
১০. হালালকে হারাম করার ক্ষেত্রেঃ
গণতন্ত্র যেহেতু কোন জীবন বিধান নয় বরং নাক্বিছ বা অপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা মাত্র। সেহেতু গণতন্ত্রে হালাল-হারাম, ফরজ-ওয়াজিব, ইবাদত-বন্দেগী ইত্যাদির বিধান বা আদেশ নির্দেশ নেই। বরং ইসলামের অনেক হারামকে তারা জরুরী ও প্রয়োজন বলে করতে বাধ্য করে। আর ক্ষেত্র বিশেষে অনেক হালাল বিষয় বা ফরজ-ওয়াজিবকে অপ্রয়োজনীয় বলে করতে বাধাও দিয়ে থাকে।
অথচ আল্লাহ পাক সূরা মায়িদার৮৭ নং আয়াত শরীফে ইরশাদ করেন,
يا يها الذ ين امنوا لا تحرموا طيبات ما احل الله لكم ولاتعتد وا ان الله لايحب المعتدين.
অর্থাঃ- হে ঈমানদারগণ আল্লাহ পাক তোমাদের জন্য পবিত্র যে বিষয়গুলো হালাল করেছেন তোমরা তা হারাম করোনা এবং সীমালঙ্ঘন করো না। কেননা আল্লাহ পাক সীমালংঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।
অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
قاتلوا الذ ين لا يؤ منون بالله ولا باليوم الا خر ولايحر مون ما حرم الله ورسوله ولا يد ينون دين الحق.
অর্থঃ- তোমরা জিহাদ কর ঐ সমস্ত লোকদের সাথে যারা আল্লাহ পাক এবং পরকালের প্রতি ঈমান রাখেনা, আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মানেনা এবং দ্বীন ইসলামকে হক্ব, পরিপূর্ণ, মনোনীত দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করে না।” (সূরা তওবা-২৯)
ইসলাম যেহেতু ওহী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেহেতু ইসলামে হালাল-হারাম, ফরজ-ওয়াজিব, ইবাদত-বন্দেগী অর্থাৎ আক্বায়েদ, ইবাদত, মুয়ামিলাত, মুয়াশিরাত, তাছাওওফ দ্বীন ও দুনিয়ার সব প্রকার সমস্যার সমাধানের বিধান বা হুকুম-আহকাম বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে। অতএব যে গণতন্ত্রে হালাল-হারামের কোন বিধান নেই তা কি করে ইসলামী গণতন্ত্র হতে পারে?
১১. জনগণকে সার্বভৌমত্বের ক্ষমতা প্রদান করার ক্ষেত্রেঃ
গণতন্ত্রের মূল বিষয় বা ভিত্তিসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো সার্বভৌমত্ব জনগণের। অর্থাৎ জনগণই হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল। অথচ আল্লাহ্ পাক সূরা মায়িদার”- ১২০নং আয়াত শরীফে বলেন,
لله ملك السموت والارض وما فيهن وهو على كل شىء قدير.
অর্থঃ- আসমান ও জমিন এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সমস্ত কিছুরই মালিক আল্লাহ পাক। আর তিনিই সমস্ত কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
কালামুল্লাহ্ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,
هو الله الخا لق البارئ المصور له الا سماء الحسنى يسبح له ما فى السموت والارض وهو العز يز الحكيم.

অর্থঃ- তিনিই আল্লাহ্ তায়ালা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নামসমূহ তাঁরই। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।” (সূরা হাশর-২৪)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
قل اللهم ملك الملك تؤ تى الملك من تشاء وتنزع الملك ممن تشاء وتعز من تشاء وتذل من تشاء بيدك الخير انك على كل شىء قدير.
অর্থঃ- বলুন, {হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম} আয় আল্লাহ্ পাক! সমগ্র রাজ্যের মালিক আপনি। আপনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য প্রদান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা করেন তার থেকে রাজ্য ছিনিয়ে নেন। আর যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা লাঞ্ছিত করেন। আপনারই হাতে যাবতীয় কল্যাণ নিহিত। নিশ্চয়ই আপনিই সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল।” (সূরা আলে ইমরান-২৬)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
ولله ما فى السموت وما فى الا رض يغفر لمن يشاء ويعذب من يشاء والله غفور رحيم.
অর্থঃ- আর যা কিছু আসমান ও জমিনে রয়েছে, সে সবই মহান আল্লাহ্ পাক-এর। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, যাকে ইচ্ছা আযাব দান করবেন। আর আল্লাহ পাক হচ্ছেন ক্ষমাকারী, করুণাময়।” (সূরা আলে ইমরান-১২৯)
এছাড়া অনুরূপ আয়াত সূরা আনয়াম-১৭,৫৭, সূরা ফাতির-১০, সূরা বাক্বারা-১১৭, সূরা শুরা-৭৩, সূরা আনয়াম-৯৫, সূরা মুমিন-৬৮, সূরা ফুরকান-২, সূরা হাদীদ-৩, সূরা ছাফফাত-১৮০-১৮২, সূরা জাছিয়াত-৩৬,৩৭ সহ আরো অনেক আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ্ পাক-এর সার্বভৌমত্বের কথা লিপিবদ্ধ রয়েছে।
কাজেই, “সার্বভৌমত্ব জনগণেরএকথা বলা ও মানা কুফরী। অবশ্য যদিও কেউ কেউ বলে থাকে যে, “সার্বভৌমত্ব জনগণেরএটা আমরা মানিনা, অথচ তারা পূর্ণরূপেই ইসলামের নামে গণতন্ত্র মানে ও করে।  তাদের জন্য আফসুস! তারা এত অজ্ঞ যে, তারা গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের সাথে যে কি সম্পর্ক এবং সার্বভৌমত্বই বা কাকে বলে সে বিষয়ে তাদের বিন্দুতম জ্ঞান নেই বললেই চলে।
কারণ গণতন্ত্রে জনগণকে যে সার্বভৌমত্বের অধিকারী বলা হয়েছে, সে সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে। অর্থাৎ গণতন্ত্রে জনগণ ভোট দেয়ার ব্যাপারে কারো মুখাপেক্ষী নয় এবং সে ভোট কাকে দেবে বা দেবেনা, সে বিষয়েও কারো কাছে তাকে জবাবদিহী করতে হয়না।
অতএব, যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বা তা সমর্থন করে, তারা সার্বভৌমত্ব যে জনগণের, আল্লাহ্ পাক-এর নয়, তা ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায়ই হোক মেনে নেয় এবং ভোট দানের মাধ্যমে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। তাহলে এরূপ গণতন্ত্রকে ইসলামী গণতন্ত্র বলে বিশ্বাস করা কুফরী নয় কি?
উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীলভিত্তিক আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্ট  ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, ইসলাম হচ্ছে- মহান আল্লাহ পাক-এর পক্ষ হতে তাঁর পিয়ারা হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি ওহীর মাধ্যমে নাযিলকৃত একমাত্র, সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত, মনোনীত ও পরিপূর্ণ দ্বীন। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। আর গণতন্ত্র হচ্ছে- ইহুদী-খ্রিস্টান তথা বিধর্মীদের দ্বারা রচিত  তথা মানবরচিত একটি অপূর্ণ শাসন ব্যবস্থা মাত্র। যার সাথে ইসলামের ও ওহীর কোনই সম্পর্ক নেই। আর নির্বাচন সেই গণতন্ত্রেরই একটি প্রক্রিয়া। যদি তাই হয়ে থাকে তবে গণতন্ত্র বা নির্বাচনকে কি করে  ইসলামী বলা যেতে পারে? অর্থাৎ ইসলামী গণতন্ত্র  বা নির্বাচন বলতে কিছু আছে বলে বিশ্বাস করা কি করে জায়িয হতে পারে?
মুলতঃ গণতন্ত্র বা নির্বাচনকে ইসলামী বলার অর্থ হলো ইসলামকে মানব রচিত মতবাদ হিসেবে আর বিধর্মীদের মতবাদ গণতন্ত্রকে ওহী হিসেবে সাব্যস্ত করা; যা কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, হাটহাজারী খারিজী মাদ্রসার মৌলবী ছাহেবরা যে লিখেছে- গণতন্ত্র বা নির্বাচন দুই প্রকার- পাশ্চাত্ব গণতন্ত্র বা নির্বাচন ও ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচনতাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও ক্বিয়াসের খিলাফ ও কুফরীমুলক প্রমানিত হলো। ছহীহ ফতওয়া হলো ইসলামী গণতন্ত্র বা নির্বাচন বলতে শরীয়তে কিছুই নেই। যারা ইসলামী গণতন্ত্র দাবী করে তারা কাট্টা কাফির।
অসমাপ্ত


0 Comments: