সুমহান ২৫শে যিলহজ্জ শরীফ















সুমহান ২৫শে যিলহজ্জ শরীফ:
ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত খিলাফত উনার দায়িত্ব মুবারক গ্রহণ দিবস

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই। অপরদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদরের দুলালী উম্মু আবীহা, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত আহাল। দ্বিতীয় হিজরী সনে উনাদের নিসবাতুল আযীম মুবারক অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মানিত ইসলামী খিলাফত উনার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিলাফত আমলে পরামর্শদাতা ছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশের পর হিজরী ৩৫ সনের ২৫শে যিলহজ্জ শরীফ সম্মানিত খিলাফত উনার মসনদে সমাসীন হন। চার বছর প্রায় পৌনে নয় মাস যাবৎ এ  দায়িত্ব মুবারক যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করেন। সুবহানাল্লাহ!

*********************************************
ইমামুল আউওয়াল, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক

হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয হচ্ছে- আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।”
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি তোমাদের জন্য দুটি মুবারক নিয়ামত রেখে যাচ্ছি। প্রথমটি হলো, মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব মুবারক। যার মধ্যে রয়েছে হিদায়েত ও নূর মুবারক। তোমরা কিতাবুল্লাহ শরীফ উনাকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরো। তিনি কিতাবুল্লাহ শরীফ উনার প্রতি উৎসাহ প্রদান করলেন। অতঃপর বললেন, দ্বিতীয়টি হলো, আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম (আওলাদগণ) বংশধরগণ উনারা। উনাদের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করছি। উনাদের ব্যাপারে তোমাদের সতর্ক করছি।” সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র নাম মুবারক:
উল্লেখ্য, আমীরুল মু’মিনীন ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম। ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মূল নাম মুবারক হযরত আলী আলাইহিস সালাম। উপনাম মুবারক-আবূল হাসান (হাসান উনার পিতা) ও আবূ তুরাব (মাটির পিতা)। পিতার নাম: আবূ ত্বালিব, সম্মানিতা মাতা উনার নাম মুবারক: হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। বিশেষ উপাধি মুবারক: আসাদুল্লাহ (মহান আল্লাহ পাক উনার সিংহ), হায়দার (বাঘ), মুরতাদ্বা (সন্তষ্টিপ্রাপ্ত)। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র বংশ মুবারক:
 তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই। কুরাইশ বংশের হাশিমী শাখায় উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ। পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয় দিক থেকে তিনি কুরাইশ বংশোদ্ভূত। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
তিনি বিশুদ্ধ মতে পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ১৩ তারিখ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক প্রকাশের দশ বছর পূর্বে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজে প্রতিপালনের দায়িত্ব  গ্রহণ করেন এবং উনার ভাই হযরত জাফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে পিতৃব্য হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অভিভাবকত্বে সোপর্দ করেন। (তাফসীরে তাবারী শরীফ)
পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ:
একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদেরকে নামায পড়তে দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কি করছেন? উত্তরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দ্বীন। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনাকে আমরা সেই দায়িত্ব দিচ্ছি। তখনই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম  গ্রহণকালে উনার বয়স মুবারক দশ বছর ছিলো। তিনি হলেন সর্বসম্মতিক্রমে বালক উনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম পবিত্র দ্বীন ইসলাম কবুলকারী। সুবহানাল্লাহ!
শিয়াবে আবী তা’লিবে অবস্থান:
পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কঠিন সঙ্কট ও কঠিন অগ্নি পরীক্ষার তেরটি বৎসর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক সাহচর্যে থেকে অতিবাহিত করেন। এর মধ্যে আবূ ত্বালিব গিরিতে অর্থাৎ শিআবে আবি ত্বালিবের তিন বৎসরের জীবন ছিলো সর্বাপেক্ষা রহস্যময়। সে সময় হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভ্রাতা হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি আহলিয়াসহ আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন। কিন্তু সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি এরূপ কঠিন মুহূর্তেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করেন, যতদিন না তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফ হিজরত মুবারক করার অনুমতি পেলেন। সুবহানাল্লাহ!
জিহাদে বীরত্বের পরিচয়:
দ্বিতীয় হিজরী সনের পবিত্র ১৭ রমাদ্বান শরীফ পবিত্র বদরের জিহাদে মুসলমান ও মুশরিক উভয় বাহিনী পরস্পর মুখোমুখি হয়। তৎকালীন যুদ্ধরীতি অনুযায়ী পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে আগত মুশরিকদের পক্ষ হতে উতবা, শায়বা এবং ওলিদ নামক তিন জন সদর্পে ময়দানে অবতরণ করে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীকে যুদ্ধে আহবান জানালে তাদের মোকাবেলায় সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামজা আলাইহিস সালাম, হযরত উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদেরকে পাঠানো হয়। সাইয়্যিদুনা হযরত হামজা আলাইহিস সালাম এবং হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের হাতে উনাদের স্ব স্ব^ প্রতিদ্বন্দ্বী নিহত হয়। অতঃপর হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উবায়দা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাহায্যার্থে অগ্রসর হন এবং প্রতিপক্ষ শায়বা নিহত হয়। অতঃপর সর্বাত্মক জিহাদ শুরু হয়ে যায়। এই পবিত্র জিহাদে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বীরত্বের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেন। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে তাবারী শরীফ)
হিজরী তৃতীয় সালে সংঘটিত উহুদের জিহাদে মুশরিকরা মুসলমানদেরকে আক্রমণ করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে। কিন্তু হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের সমস্ত দুরভিসন্ধিই ব্যর্থ করে দেন। মুশরিক বাহিনীর পতাকাবাহী আবূ সা’দ ইবনে আবি তালহাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার  আহবান জানালে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক আঘাতেই তাকে ধরাশায়ী করেন; কিন্তু তার অসহায়তা ও হতবিহ্বলতা দেখে তিনি তাকে হত্যা করেননি। (ইবনে হিশাম)
হিজরী ৭ম সনে খাইবরের পবিত্র জিহাদ সংঘটিত হয়। এই পবিত্র জিহাদে খাইবরের সর্বাধিক সুদৃঢ় দুর্গ ‘কামুস’-এর অধিকর্তা মারহাব নামক এক ইহুদী বীরকে হত্যা করে তিনি অতুলনীয় বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দান করেন। অতঃপর কয়েকদিন অবরোধের পর তিনি দুর্গ অধিকারে সক্ষম হন। এই পবিত্র জিহাদে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুদৃঢ় দুর্গ ‘কাছরে মারহাব’ জয় করে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। (ইবনে হিশাম)
নিসবাতুল আযীম মুবারক:
একদিকে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু  ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই। অপরদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদরের দুলালী, উম্মু আবীহা, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত যাওজ। দ্বিতীয় হিজরীতে উনাদের বরকতময় নিসবাতুল আযীম মুবারক অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মানিত খিলাফত পরিচালনায়:
সম্মানিত ইসলামী খিলাফত উনার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তিনি আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিলাফত আমলে পরামর্শদাতা ছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর হিজরী ৩৫ সনের ২৫শে যিলহজ্জ শরীফ সম্মানিত খিলাফতের মহান দায়িত্ব গ্রহন করেন। প্রায় চার বছর  পৌনে ৯ মাস যাবৎ এ  দায়িত্ব মুবারক যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করেন। সুবহানাল্লাহ!
অবদান:
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবদান অপরিসীম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানার সমস্ত পবিত্র জিহাদে অনেক বেশি সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় তিনিই দেন। সুবহানাল্লাহ! এ কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ‘হায়দার’ লক্বব মুবারকসহ ‘যুলফিকার’ নামক একখানা তরবারি মুবারক হাদিয়া করেন। একমাত্র তাবুক অভিযান ছাড়া সমস্ত পবিত্র জিহাদেই তিনি অংশগ্রহণ করেন। বদরে উনার সাদা পশমী রুমাল মুবারক উনার জন্য তিনি ছিলেন বিখ্যাত। বদরসহ প্রতিটি পবিত্র জিহাদে তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পতাকাবাহী। সুবহানাল্লাহ!
ফযীলত:
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “হযরত হারুন আলাইহিস সালাম তিনি যেমন ছিলেন হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট, তেমনি আপনি হচ্ছেন আমার নিকট। অর্থাৎ খলীফা। তবে আমার পরে কোনো নবী আলাইহিস সালাম নেই।’’ সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন নবী খান্দানের সদস্য। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শিক্ষা মুবারক লাভ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি ইলম উনার নগরী, আর হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই নগরীর প্রবেশদ্বার।’’ সুবহানাল্লাহ! তিনি ছিলেন, পবিত্র কুরআনে হাফিয, শ্রেষ্ঠ মুফাস্সির এবং অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনাকারী রাবী। সুবহানাল্লাহ!
তরীক্বতের সিলসিলা:
আমীরুল মু’মিনীন হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তরীক্বতপন্থী উনাদের ইমাম। তরীক্বতের অধিকাংশ সিলসিলা উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রূহানী তা’লীম তথা আধ্যাত্মিক শিক্ষা মুবারক উনার প্রচার-প্রসারে যে সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বিশেষভাবে অবদান রাখেন হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদের মধ্যে বিশিষ্টতম। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের অনেক তরীক্বতের সিলসিলা (যেমন ক্বাদিরিয়া, চিশ্তিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া ইত্যাদি) অদ্যাবধি উনারই মাধ্যমে ফায়েয মুবারক হাছিল সাধনা করে আসছে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
হিজরী ৪০ সনের ১৬ রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার ফযর নামাযে গমনকালে মুনাফিকদের যড়যন্ত্রে ইবনে মুলজিম নামক খারিজী ঘাতকের তলোয়ারে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ১৭ রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুস সাব্ত বা শনিবার পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার জ্যোষ্ঠ আওলাদ সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি উনার পবিত্র জানাযার নামায পড়ান। কূফার নাজফে আশরাফে জামে মসজিদের পাশে উনার পবিত্র রওযা শরীফ অবস্থিত অর্থাৎ সেখানে তিনি মুবারক অবস্থান গ্রহণ করেন। গ্রহণযোগ্য মতে, সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশকালে উনার বয়স মুবারক হয়েছিলো ৬৩ বছর। সুবহানাল্লাহ!
উপসংহার:
মূলকথা হচ্ছে- হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হলেন হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম, হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদের মধ্যে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তাই উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক জেনে ও উনাকে মুহব্বত করে এবং অনুরসণ-অনুকরণ করে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খাছ রেযামন্দি মুবারক হাছিল করা আমাদের সকলের দায়িত্ব-কর্তব্য। বিশেষ করে বাংলাদেশ সরকারসহ বিশ্বের সকল মুসলিম-অমুসলিম সরকারের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী বা পবিত্র জীবনী মুবারক সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে সে তাওফীক দান করুন। আমীন!

*************************
সাইয়্যিদুনা ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন নবী খান্দানের অন্যতম সদস্য

মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে উনার রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরিচয় ও ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনার পাশাপাশি উনাদের পবিত্রতাও ঘোষণা করেছেন।
উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর চাচা আবু ত্বালিব তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দেখা-শুনার দায়িত্ব মুবারক গ্রহণ করেন। চাচার হক্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নিজ দায়িত্বে নিয়ে নেন। এভাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বড় হয়ে উঠেন। আর তিনি শিরক, কুফর ও জাহিলিয়াতের বদ তাছীর হতে সম্পূর্ণরূপেই মুক্ত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
*************************************
আসাদুল্লাহিল গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন বেমেছাল মর্যাদা ও ফযীলত উনার অধিকারী

মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “উনারা (হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট মহান আল্লাহ পাক তিনিও উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট।”
উপরোক্ত পবিত্র আয়াতে কারীমা উনার হুবহু মিছদাক্ব হচ্ছেন আসাদুল্লাহিল গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবদান অপরিসীম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানার সমস্ত জিহাদে সবচেয়ে বেশি সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় তিনিই দেন। সুবহানাল্লাহ! এ কারণে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ‘হায়দার’ লক্ববসহ  ‘যুলফিকার’ নামক একখানা তরবারি হাদিয়া মুবারক করেন। একমাত্র তাবুক অভিযান ছাড়া সমস্ত জিহাদেই তিনি অংশগ্রহণ করেন। বদরে উনার সাদা পশমী রুমালের জন্য তিনি ছিলেন বিখ্যাত। বদরসহ প্রতিটি জিহাদেই তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পতাকাবাহী। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “সাইয়্যিদুনা হযরত হারুন আলাইহিস সালাম তিনি যেমন ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত মূসা আলাইহিস সালাম উনার নিকট, তেমনি আপনি হচ্ছেন আমার প্রতিনিধি। তবে আমার পরে কোনো নবী নেই।” সুবহানাল্লাহ!
আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন নবী খান্দানের একজন সম্মানিত সদস্য। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শিক্ষা মুবারক লাভ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “আমি পবিত্র ইলম উনার নগরী আর ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই নগরীর প্রবেশদ্বার।”
তিনি ছিলেন পবিত্র কুরআনে হাফিয, শ্রেষ্ঠ মুফাসসির এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনাকারী বিশ্বস্ত রাবী। সুবহানাল্লাহ!

**********************************************
এক নজরে খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মুরতাজা সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক

পরিচিতি: নাম মুবারক- আলী।  উপনাম আবূল হাসান ও আবূ তুরাব। সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক- আবূ ত্বালিব। সম্মানিতা মাতা উনার নাম মুবারক- হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। বিশেষ উপাধি- আসাদুল্লাহ, হায়দার, মুরতাজা। তিনি আব্দুল্লাহ নামে প্রসিদ্ধ। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই। হাশিমী আল কুরাইশী বংশোদ্ভূত।
পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের দশ বছর পূর্বে পবিত্র ১৩ রজবুল হারাম তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণ: একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদেরকে নামায পড়তে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি করছেন? উত্তরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দ্বীন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনাকেও আমরা সেই দায়িত্ব দিচ্ছি। তখনই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করেন। তখন উনার বয়স মুবারক ছিলো ১০ বৎসর। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্পর্ক: একদিকে তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই; অপরদিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার বানাত সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আহাল। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত খিলাফত উনার দায়িত্ব গ্রহণ: আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর হিজরী ৩৫ সনের পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের ২৫ তারিখ তিনি খিলাফত উনার বিশাল দায়িত্ব মুবারক গ্রহণ করেন। প্রায় চার বছর সাড়ে আট মাস যাবৎ এ দায়িত্ব মুবারক যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ: হিজরী ৪০ সনের ১৬ পবিত্র রমাদ্বান ইয়াওমুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার ফজর নামাযে গমনকালে ইবনে মুলজিম নামক খারিজী ঘাতকের তলোয়ারের আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ১৭ রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুস সাবত বা শনিবার ৬৩ বছর বয়স মুবারকে তিনি পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

***********************************

আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন
এক বেমেছাল উজ্জ্বল তারকা
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা প্রত্যেকেই হলেন আকাশের তারকা সদৃশ। উনাদের যে কাউকে যেকোনো বিষয়ে যেকোনো ব্যক্তি অনুসরণ করবে সেই হিদায়েত প্রাপ্ত হয়ে যাবে।” সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার হাক্বীক্বী মিছাদক্ব হচ্ছেন- আসাদুল্লাহিল গালিব, শেরে খোদা ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট। আর উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছেন। সুবহানাল্লাহ!
শুধু তাই নয়, এমনকি মহান আল্লাহ পাক তিনি অন্যত্র ইরশাদ মুবারক করেন, “যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, তাদের প্রতিও মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট এবং তাঁরাও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন।” সুবহানাল্লাহ! উপরোক্ত পবিত্র আয়াতে কারীমা উনার হাক্বীক্বী মিছদাক্ব হচ্ছেন- আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
সূক্ষ্মভাবে ফিকির করলে উনার মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনার অনেকগুলো স্তর বেরিয়ে আসে। যেমন প্রথমত, তিনি হলেন হযরত ছাহাবী। দ্বিতীয়ত, বালকদের মধ্যে তিনি প্রথম পবিত্র দ্বীন ইসলাম কবুল করেন। তৃতীয়ত, তিনি হচ্ছেন কুল-কায়িনাতের সৃষ্টির উসীলা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জামাতা বা দামাদ। চতুর্থত, তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আলামীন, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার যাওজ।  পঞ্চমত, তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম ও সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাদের সম্মানিত পিতা। ষষ্ঠত, তিনি হচ্ছেন পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চতুর্থ খলীফা। সপ্তমত, উনার মুবারক ইমামতিতেই খায়বার দুর্গ বিজয় হয়েছিলো। সুবহানাল্লাহ!
এমনিভাবে ফিকির করলে উনার লক্ষ-কোটি মর্যাদা-মর্তবা মুবারক উনার দ্বার খুলে আসবে। বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত আছে, হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে বলেন, হযরত মুসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার নিকট হযরত হারুন আলাইহিস সালাম উনার যে মর্যাদা ছিলো আপনিও আমার নিকট সেই পর্যায়ে রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তবে পার্থক্য হলো এই যে, আমার পরে কোনো হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনারা আসবেন না।
হযরত সাহল ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র খায়বর জিহাদের সময় বললেন, আগামীকাল আমি এই ঝা-া এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব উনার হাতে প্রদান করবো, যাঁর হাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি খায়বার দুর্গ জয় করাবেন। যিনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকে মুহব্বত করেন এবং মহান আল্লাহ পাক তিনিও উনাকে ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও উনাকে মুহব্বত করেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর ভোর হওয়ার সাথে সাথে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমতে এসে উপস্থিত হলেন। উনারা প্রত্যেকেই মনে মনে এই আশা পোষণ করছেন যে, ঝা-া হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেই প্রদান করা হবে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত আলী ইবনে আবি ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি কোথায়? হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! উনার চোখ মুবারক-এ অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, উনাকে ডেকে আনার জন্য কাউকে পাঠানো হোক। অতঃপর মুবারক নির্দেশ মুতাবিক সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে ডেকে আনা হলো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার চোখ মুবারক-এ নূরুল বারাকাত মুবারক লাগিয়ে দিলেন। এতে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন, যেন উনার চোখ মুবারক-এ কোনোরূপ রোগই ছিলো না। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র জিহাদের ঝা-া ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাত মুবারকেই দিলেন। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, “আমি যাঁর অভিভাবক ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনিও তার অভিভাবক।” (তিরমিযী শরীফ)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ নেয়ার পর মুহাজির ও আনছার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেন। এই সময় হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি অশ্রু সিক্ত নয়নে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহু ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করে দিলেন। কিন্তু আমাকে কারো সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করলেন না। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে বললেন, দুনিয়া-আখিরাতে উভয় স্থানে আপনি আমার ভাই। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ)
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, একদা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে খাওয়ার জন্য একটি ভুনা পাখি রাখা ছিলো। যা জনৈক আনছারী মহিলা ছাহাবীয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি হাদিয়া করেছিলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়া করলেন, ইয়া আল্লাহ পাক! আপনি মাখলুকাতের মধ্যে আপনার নিকট যিনি সবচেয়ে প্রিয় উনাকে আপনি পাঠিয়ে দিন। যেন তিনি আমার সাথে এই পাখিটি খেতে পারেন। এর পরপরই হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আসলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সেই পাখিটির গোশত মুবারক খেলেন। সুবহানাল্লাহ!
উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কোনো মুনাফিক ব্যক্তি মুহব্বত করে না। আর কোনো মু’মিন ব্যক্তি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজজাহূ আলাইহিস সালাম উনার প্রতি হিংসা রাখে না। সুবহানাল্লাহ! (আহমদ ও তিরমিযী শরীফ)
উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মে সালামা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে গালি দিলো, সে যেন আমাকেই গালি দিলো।” নাঊযুবিল্লাহ! (আহমদ শরীফ)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, আসাদুল্লাহিল গালিব, শেরে খোদা, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে বেমেছাল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে উনার শান, মান, ফাযায়িল-ফযীলত জেনে উনাকে হাক্বীক্বীভাবে মুহব্বত করে উনার ইত্তিবা করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।

*********************************************************
আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বেমেছাল মর্যাদা-মর্তবা মুবারক
হযরত আবূ মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ আন নূরুর রবি’য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম আমরা সকলেই ক্বিয়ামতের দিন পবিত্র আরশ উনার গুম্বজ মুবারক উনার নিচে অবস্থান করবো।” সুবহানাল্লাহ! (মাজমাউয যাওয়ায়িদ, কানযুল উম্মাল, লিসানুল-মীযান, শরহুল মুওয়াত্তা লিযযুরকানী)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, “হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ উম্মু আবীহা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম, হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনারা পবিত্র জান্নাতুল ফিরদাউসে ধবধবে সাদা গম্বুজ মুবারক উনার নিচে অবস্থান করবেন, যেই গম্বুজ মুবারক উনার ছাদ হবে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র আরশ।” (কানযুল উম্মাল শরীফ, ইবনে আসাকির শরীফ)
সুতরাং এখান থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে, হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা-মর্তবা কতটুকু। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সবাইকে উনার বেমেছাল, সুমহান মর্যাদা-মর্তবা হাক্বীক্বীভাবে উপলব্ধি করার তাওফীক্ব দান করুন।
********************************************
ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মুহব্বত করা পবিত্র জান্নাত লাভের কারণ

সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদা সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ হযরত ইমামুছ ছালিছ আলাইহিস সালাম উনাদের হাত মুবারক ধরে বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে এবং এই দুইজনকে মুহব্বত করবে, সাথে সাথে উনাদের পিতা-মাতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করবে, সে ব্যক্তি ক্বিয়ামত দিবসে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে। সুবহানাল্লাহ! (তিরমিযী শরীফ, মুসনাদে আহমদ শরীফ, ত্ববারনী শরীফ, তাহযীবুত তাহযীব শরীফ ইত্যাদি)
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি বৃক্ষ আর সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি সেই মুবারক বৃক্ষের ডালস্বরূপ। সাইয়্যিদুনা ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই মুবারক বৃক্ষের প্রস্ফুটিত পাপড়ি এবং সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ, ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা হচ্ছেন সেই মুবারক বৃক্ষের ফল। আর যারা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করবে তারা সেই মুবারক বৃক্ষের পাতা, তারা প্রত্যেকেই পবিত্র জান্নাতে প্রবেশ করবে। এটা দিবালোকের ন্যায় সত্য কথা। সুবহানাল্লাহ! (দায়লামী শরীফ)

*************************
ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হলেন সর্বসম্মতিক্রমে বালক উনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম পবিত্র দ্বীন ইসলাম কবুলকারী।
পবিত্র ‘তাফসীরে তাবারী শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াত প্রকাশের দশ বছর পূর্বে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম  তিনি পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ উনার পর স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে প্রতিপালনের  দায়িত্ব  গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এবং উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদেরকে একদা নামায পড়তে দেখে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কি করছেন? উত্তরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র দ্বীন। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা সাইয়্যিদাতুনা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনাকেও আমরা সেই দায়িত্ব দিচ্ছি। তখনই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করেন। সুবহানাল্লাহ! পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণকালে উনার বয়স মুবারক ছিল দশ বছর। তিনি হলেন সর্বসম্মতিক্রমে বালক উনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম পবিত্র দ্বীন ইসলাম কবুলকারী। সুবহানাল্লাহ!

*****************************************************************************************************
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহূ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পতাকাবাহী।


পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অবদান অপরিসীম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানার সমস্ত জিহাদে অনেক বেশি সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় তিনিই দেন। এ কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ‘হায়দার’ লক্ববসহ ‘যুলফিকার’ নামক একখানা তরবারি মুবারক হাদিয়া করেন। একমাত্র তাবুক অভিযান ছাড়া সমস্ত জিহাদেই তিনি অংশগ্রহণ করেন। বদর জিহাদে উনার সাদা পশমী রুমালের জন্য তিনি ছিলেন বিখ্যাত। বদর জিহাদসহ প্রতিটি জিহাদে তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পতাকাবাহী।

***************************************
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহূ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার ইলমী যোগ্যতা


সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  হলেন নবী খান্দানের সদস্য। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে শিক্ষা মুবারক লাভ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “আমি পবিত্র ইলম উনার নগরী, আর ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই নগরীর প্রবেশদ্বার।” তিনি ছিলেন, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার হাফিয, শ্রেষ্ঠ মুফাস্সির এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী সম্মানিত রাবী। সুবহানাল্লাহ!

***********************************************
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহূ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশের সঠিক তারিখ

হিজরী ৪০ সনের পবিত্র ১৬ই রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুল জুমুয়াহ বা জুমুয়াবার ফজর নামাযে গমনকালে ইবনে মুলজিম নামক খারিজী ঘাতকের তলোয়ারে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পবিত্র ১৭ই রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুস সাব্ত বা শনিবার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার জ্যেষ্ঠ পুত্র সাইয়্যিদে শাবাবি আহলিল জান্নাহ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার পবিত্র জানাযা নামায পড়ান। কূফার নাজফে আশরাফ জামে মসজিদের পাশে উনার পবিত্র রওযা শরীফ অবস্থিত। গ্রহণযোগ্য মতে, সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশকালে উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ৬৩ বছর।
**************************************

সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার হায়দারী শান মুবারক উনার বাস্তব প্রমাণ

  ‘হায়দার’ শব্দের আভিধানিক অর্থ- বীর, সুপুরুষ, সুঠাম দেহের অধিকারী ইত্যাদি। যা ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একখানা বিশেষ লক্বব মুবারক। উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক হতে এই লক্বব মুবারক উনার বাস্তব অনেক নমুনা পাওয়া যায়। নিম্নে এ সম্পর্কে একখানা ওয়াকেয়া আলোচনা করা হলো:
   খাইবার জিহাদের ঘটনা। কয়েকদিন যাবৎ কাফিরদের সাথে বেশ জিহাদ সংঘটিত হয়। কিন্তু প্রতিদিনই চূড়ান্ত কোনো ফায়ছালা না হয়েই জিহাদ শেষ হয়ে যায়। এমনিভাবে একদিন জিহাদ শেষে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন যে, আগামীকাল সকালে আমি এমন এক মহান ব্যক্তি উনার হাত মুবারকে ইসলামী ঝা-া মুবারক অর্পণ করবো, উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম বাহিনীকে বিজয় হাদিয়া করবেন। অতপর সকালে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার দস্ত মুবারকে ইসলামী ঝা-া মুবারক অর্পণ করলেন। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সেনাপতিত্বে কাফিরদের সাথে তুমুল জিাহদ হলো। এক পর্যায়ে কাফিররা পালিয়ে খাইবার দুর্গে আশ্রয় নিলো। তখন ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খাইবার দুর্গের প্রধান ফটক ধরে সজোরে টান দিলেন। ফলশ্রুতিতে লোহার সেই বিশাল ফটক উনার হাত মুবারকে চলে আসলো।
অতপর কাফিরদের সাথে পুনরায় তুমুল জিহাদ শুরু হলো। আর জিহাদের সেই সময়ে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুর্গের সেই ফটককে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করলেন। কাফিররা নাস্তানাবুদ হলো। অন্যান্য জিহাদের ন্যায় খাইবার জিহাদেও মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম বাহিনীকে সুমহান ফাতহুম মুবীন হাদিয়া করলেন।
জিহাদ শেষে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত দুর্গের সেই ফটককে ফেলে দিলেন। তখন আশিজন পালোয়ান একত্রিত হয়েও ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত সেই ফটক উঠাতে পারলো না। অর্থাৎ ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধু বীরই নন, এমনকি তিনি আশিজন পালোয়ানেরও অধিক শক্তি রাখেন। সুবহানাল্লাহ!
মূলত, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারক এমনটিই হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ তিনি তো হায়দার লক্বব মুবারকে ভূষিত। উনার হায়দার লক্বব মুবারক স্মরণ করলেও সাধারণ মানুষ শক্তি, জোশ এবং বীরত্ব লাভ করে। যার কারণে এখনো সশস্ত্র বাহিনীতে অস্ত্র পরিচালনাকালে হায়দার লক্বব মুবারক স্মরণ করতে হয়। ফলশ্রুতিতে অসম্ভবকে সম্ভব করার কুওওয়ত অর্জিত হয়। যা উনার আখাছছুল খাছ কারামতও বটে।
মহান আল্লাহ পাক তিনি মুসলিম উম্মাহকে হায়দারী শান মুবারক উনার হিসসা নছীব করুন। (আমীন)

*******************************************


আসাদুল্লাহিল গালিব ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত পরিচিতি মুবারক

 আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম। কুরাইশ বংশের হাশেমী শাখায় উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ ঘটে। পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয় দিক থেকে তিনি কুরাইশ বংশোদ্ভূত। সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মতে তিনি পবিত্র রজবুল হারাম মাস উনার ১৩ তারিখে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচাতো ভাই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াত প্রকাশের দশ বছর পূর্বে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম গ্রহণকালে উনার বয়স মুবারক দশ বছর ছিল। তিনি হলেন সর্বসম্মতিক্রমে বালক উনাদের মধ্যে সর্বপ্রথম পবিত্র দ্বীন ইসলাম কবুলকারী। উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক করেন। উনাদের পবিত্র নিযবাতুল আযীম মুবারক দ্বিতীয় হিজরীর যিলহজ্জ মাস অর্থাৎ হিজরী সালের দ্বিতীয় বর্ষ বদরের জিহাদের কিছুদিন পর সম্পন্ন হয়।
সম্মানিত ইসলামী খিলাফত পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিলাফত আমলে পরামর্শদাতা ও উপদেষ্টা ছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের পর হিজরী ৩৫ সনে খিলাফতের মসনদে সমাসীন হন। প্রায় চার বছর সাড়ে আট মাস যাবৎ এ দায়িত্ব যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালন করেন।
পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অবদান অপরিসীম। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানার সমস্ত জিহাদে অনেক বেশি সাহসিকতা ও বীরত্বের পরিচয় তিনিই দেন। এ কারণে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে ‘হায়দার’ লক্ববসহ ‘যুলফিকার’ নামক একখানা তরবারি মুবারক হাদিয়া করেন। একমাত্র তাবুক অভিযান ছাড়া সমস্ত জিহাদেই তিনি অংশগ্রহণ করেন। পবিত্র বদর জিহাদে উনার সাদা পশমী রুমালের জন্য তিনি ছিলেন বিখ্যাত। পবিত্র বদর জিহাদসহ প্রতিটি জিহাদে তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পতাকাবাহী। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি গনী, উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গনী, উনার আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাও গনী। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু মানুষ সেটার অপব্যাখ্যা করে থাকে। একটা ওয়াকিয়া উল্লেখ করা যেতে পারে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাশরীফ নিয়েছেন। এখন মেহমানদারী করতে হবে। মেহমানদারী করবেন, উনারা তো সবসময় মেহমানদারী করতেছেন। কোনো সায়িল বা সুওয়ালকারী কোনো কিছু চাইলে উনারা সবই দিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ উনারা বেহিসাব দান-খয়রাত করতেন। সুবহানাল্লাহ!
এখন ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চিন্তা করলেন, তাহলে কিছু তো বাজার থেকে মেহমানদারীর জন্য আনা প্রয়োজন। তিনি রওয়ানা হলেন, যখন বাজারের দরজার মুখে গেলেন একজন ব্যক্তি একটা ঘোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তিনি চিন্তা করলেন টাকা-পয়সার কোনো একটা ব্যবস্থা করবেন। এমতাবস্থায় ওই ঘোড়াওয়ালা ব্যক্তি উনাকে ডেকে বলতেছেন, হে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনি কি আমার এই ঘোড়াটা খরিদ করবেন?
ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমি যে আপনার ঘোড়া খরিদ করবো সে লক্ষ্যে আমি তো কোনো টাকা পয়সা আনিনি। তখন ওই ব্যক্তি জাওয়াব দিলেন যে, এখন আমাকে নগদ টাকা-পয়সা না দিলেও চলবে, ঘোড়াটা বিক্রি করে টাকা-পয়সা দিলেও চলবে। কত এটার মূল্য রয়েছে? ছয় দিনার। ঠিক আছে। উনি সেটা নিয়ে রওয়ানা দিলেন, বাজারের ভিতরে প্রবেশ করলেন। আরেকজন ব্যক্তি নিজের থেকেই ডেকে বললেন, হে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনি কি আপনার এই ঘোড়াটা বিক্রি করবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি বিক্রি করার জন্য এনেছি। আপনার এটার মূল্য কত? স্বয়ং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি কত দিয়ে নিবেন? ওই ব্যক্তি নিজ থেকে বললেন, আমি দশ দিনার দিবো। তিনি বললেন, ঠিক আছে!
এখন উনি দশ দিনার নিয়ে ওই ব্যক্তির ছয় দিনার পরিশোধ করে অবশিষ্ট চার দিনার যা লাভ করলেন সেটা দিয়ে কিছু খাদ্য দ্রব্য কিনে সরাসরি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতে পৌঁছলেন অর্থাৎ উনার মুবারক খিদমতে পেশ করলেন। মুবারক খিদমতে যখন পেশ করা হলো অর্থাৎ খাবারের জন্য পেশ করা হলো, তখন স্বয়ং হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হাসি মুবারক দিয়ে বলতেছিলেন, ইয়া রসূলাল্লাহু ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে। কি ঘটনা ঘটেছে?
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কিন্তু সবকিছু জানেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি যখন মুবারক তাশরীফ এনেছেন আমাদের এখানে, তখন তো আপনার মেহমানদারী করার জন্য কিছু প্রয়োজন রয়েছে। বাজারে গিয়েছিলাম মেহমানদারীর ব্যবস্থা করার জন্য। হঠাৎ গিয়ে দেখলাম বাজারের মোড়ে একজন লোক দাঁড়িয়ে আছেন একটা ঘোড়া নিয়ে। সে ব্যক্তি আমাকে বলতেছেন যে, আপনি কি ঘোড়াটা খরিদ করবেন? সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি বললাম- ঘোড়া খরিদ করার জন্য তো টাকা আনিনি। তখন সে ব্যক্তি বললেন, আপনি বাকিতে নিয়ে যান। আমি বাকিতে নিলাম। কত? দাম- ছয় দিনার।
এদিকে বাজারে প্রবেশ করতে না করতেই একজন লোক এসে বললো: আপনি কি এটা বিক্রি করবেন? আমি বললাম: হ্যাঁ, কত দিয়ে কিনবেন আপনি? কত মূল্য? সে ব্যক্তি নিজ থেকে বললো দশ দিনার। আমি দশ দিনারে বিক্রি করে ছয় দিনার ঋণ শোধ করে চার দিনার দিয়ে আপনার জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য নিয়ে এসেছি। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাসি মুবারক দিয়ে বললেন যে, আসলে হে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনি লোক দুটিকে চিনেছেন কি? তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি তো উনাদেরকে চিনতে পারিনি। তখন স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আসলে যেহেতু আমি আপনাদের হুজরা শরীফ উনার মধ্যে মুবারক তাশরীফ এনেছি তাই আমার মেহমানদারী আপনারা করবেন। ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেছেন আপনারা। এখন কিভাবে করবেন, চিন্তিত হয়ে গেছেন। এখন এখানে দুটি বিষয় একটা হচ্ছে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মেহমানদারী তো অবশ্যই করতে হবে, এটা ফরয-ওয়াজিব। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি চিন্তিত হয়ে গেছেন। সাইয়্যিদাতুন নিসা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি চিন্তিত থাকুন- এই বিষয়টা মহান আল্লাহ পাক তিনি পছন্দ করেন না। সেজন্য কি করলেন সাথে সাথে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে একটা ঘোড়া দিয়ে পাঠালেন যে, আপনি যান, পথে দেখবেন ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বাজারে আসতেছেন কিছু খাদ্যদ্রব্য কেনার জন্য। আপনি ঘোড়াটা নিয়ে যান যেয়ে বলবেন, আপনি কি ঘোড়াটা খরিদ করবেন? 
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যদি রাজি হন, তাহলে আপনি ছয় দিনারে বিক্রি করবেন বাকিতে। আর পিছনে রয়ে গেলেন হযরত মীকাইল আলাইহিস সালাম তিনি দশ দিনার নিয়ে অপেক্ষা করতেছেন। তিনি যখন বাজারে প্রবেশ করবেন ঘোড়াটি নিয়ে তখন আপনি বলবেন, আপনি কি বিক্রি করবেন? তিনি বলবেন, হ্যাঁ। তাহলে আপনি উনাকে দশ দিনার দিয়ে দিবেন। তিনি দশ দিনার নিয়ে ছয় দিনার শোধ করবেন। চার দিনার থাকবে তা দিয়ে তিনি খাদ্যদ্রব্য নিয়ে যাবেন। সুবহানাল্লাহ! স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, একজন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম আর একজন হযরত মীকাইল আলাইহিস সালাম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পাঠিয়েছেন আপনাকে এই চার দিনার হাদিয়া দেয়ার জন্য। সুবহানাল্লাহ! এখন বিষয়টা খুব সূক্ষ্ম বিষয়।
এর মধ্যে অনেক ইবরত-নছীহত রয়েছে। একদিক থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমতের আঞ্জাম দেয়া ফরয-ওয়াজিব। আরেক দিক থেকে উনারা চিন্তিত। মহান আল্লাহ পাক তিনি বরদাশত করলেন না। উনারা চিন্তিত থাকবেন এটা কি করে হতে পারে। উনাদেরকে চিন্তা মুক্ত করতে হবে সেজন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি স্বয়ং হাদিয়া পাঠিয়ে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!

***************************************

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন ইনছাফগার বা ন্যায়বিচারক

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে তাক্বওয়া সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ.

অর্থ: “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক সম্মানিত যিনি সবচেয়ে বেশি মুত্তাকী বা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত।” (পবিত্র সূরা হুজরাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন সে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আদেশ নিষেধগুলো মেনে চলেন এবং কখনো মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে নাফরমানি করেন না।
আর ন্যায়বিচার প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ.
অর্থ: “নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়ের বিদ্বেষ যেন তোমাদেরকে তাদের প্রতি অবিচার করতে উদ্বুদ্ধ না করে। তোমরা সকলের প্রতি সুবিচার বা ন্যায়বিচার করবে। ইহা তাক্বওয়ার অধিক নিকটবর্তী অর্থাৎ ইহাই তাক্বওয়া এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছুই জানেন যা তোমরা করে থাকো।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৮)
অর্থাৎ ইনছাফ বা ন্যায়বিচার করাটা অবশ্যই তাক্বওয়া উনার অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি যত বেশি তাক্বওয়াপূর্ণ তিনি ততো বেশি ন্যায় বিচারক হবেন এটা পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের থেকে প্রমাণিত।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে কত বড় ইনছাফগার বা ন্যায়বিচারক তা আমরা একটা ওয়াকিয়া থেকেই স্পষ্ট বুঝতে পারবো। ওয়াকিয়াটি নিম্নরূপ:
তিনজন লোক পথ দিয়ে যাচ্ছিল। একজনের কাছে পাঁচটি রুটি এবং সেই পরিমাণ তরকারী, দ্বিতীয়জনের কাছে তিনটি রুটি এবং সেই অনুপাতে তরকারী ছিলো আর তৃতীয় ব্যক্তির নিকট কিছুই ছিলো না। খাওয়ার সময় তিনজন একসঙ্গে বসে খেয়েছে। তৃতীয় ব্যক্তি খাওয়ার সময় অপর দুইজনকে খাবারের দামস্বরূপ আট আনা পয়সা দিয়ে চলে গেলো। আট আনা পয়সা ভাগ করার সময় দুইজনের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হলো। প্রথম ব্যক্তি দাবি হলো আমার রুটি ছিলো পাঁচটি আর তোমার রুটি ছিলো ৩টি। সুতরাং তুমি তিন আনা পাবে আর আমি পাঁচ আনা। কিন্তু দ্বিতীয় ব্যক্তির দাবি আমার রুটি তিনটি এবং তোমার পাঁচটি- কথা ঠিকই বলেছো। কিন্তু খাওয়ার সময় আমরা সকলেই সমান খেয়েছি সুতরাং পয়সাও সমান সমানভাগ হবে। অর্থাৎ আমি চার আনা আর তুমি চার আনা পাবে। কেউই নিজের দাবি ছেড়ে দিতে রাজি নন। শেষ পর্যন্ত তারা আমিরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার খিদমতে বিচার পেশ করলেন। ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উভয়ের কথা শ্রবণ করার পর দ্বিতীয় ব্যক্তি অর্থাৎ যার রুটি ৩টি ছিলো তাকে বললেন ‘আমি তোমাকে প্রথম ব্যক্তি অর্থাৎ যার রুটি পাঁচটি ছিলো তার প্রস্তাব গ্রহণ করার পরামর্শ দিচ্ছি। দ্বিতীয় ব্যক্তি বললো, হুযূর! আমি আপনার বিচার চাই। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, যদি আমার বিচার চাও তাহলে তুমি পাবে এক আনা আর প্রথম ব্যক্তি পাবে সাত আনা। লোকটি হতভম্ভ হয়ে গেলো। ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি তাকে বুঝিয়ে দিলেন কেন তিনি এই বিচার করেছেন। তিনি বললেন, ‘তোমার রুটি ছিলো তিনটা আর প্রথম ব্যক্তির রুটির সংখ্যা ছিলো পাঁচটি, মোট আটটি। তোমরা তিনজনে সমান ভাগ করে খেয়েছো। আটটি রুটি তিনজনের মধ্যে যেহেতু সমান ভাগ হয় না; তাই প্রত্যেকটি রুটিকে সমান তিনটি ভাগে ভাগ করা হলো। তোমার তিনটি রুটিতে মোট ৯ খ- হলো। আর সেটা থেকে তুমি নিজেই আট খ- খেয়েছো এবং মাত্র ১ খ- তৃতীয় ব্যক্তিকে দিয়েছো। আর প্রথম ব্যক্তির পাঁচ রুটিতে মোট পনেরটা টুকরা হয়েছিলো। সে নিজে আট খ- খেয়েছে এবং তৃতীয় ব্যক্তিকে সাত খ- দিয়ে দিয়েছে। তাই তুমি এক আনা পাবে এবং প্রথম ব্যক্তি পাবে সাত আনা। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত ঘটনা থেকে আমরা জানতে পারলাম এবং বুঝতে পারলাম যে- ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি কত বড় ন্যায় বিচারক ছিলেন। একমাত্র তাক্বওয়া পরিপূর্ণ হওয়ার কারণেই এত সুবিচার করা সহজ এবং সম্ভব হয়েছে।
তাই আমাদের সকলের উচিত তাক্বওয়া অর্জন করা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য আমাদের সকলের জন্য আবশ্যক হচ্ছে- সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে অনুসরণ করা। মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি আমাদের সকলকে সেই তাওফীক দান করুন। (আমীন)
***************************************
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিলাফত সম্পর্কে কিঞ্চিত পর্যালোচনা

আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের সকলের ঐকমত্যে- আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম এবং সম্মানিত হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে চতুর্থতম সম্মানিত খলীফা। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে উনার মুবারক খিলাফতকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়কাল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুবারক শানে অপবাদ লেপনে সচেষ্ট এবং ইসলামবিদ্বেষী তথাকথিত ঐতিহাসিক মহল খিলাফতবিরোধী তাদের মনোভাবকে চিত্রিত করতে তারা এই সময়কে বেছে নিয়েছে; যা তাদের লিখিত ইতিহাসে সুস্পষ্ট।
একথা দিবালোকের ন্যায় সত্য যে, ৩৫ হিজরী সনের পবিত্র হজ্জ সম্পাদিত হওয়ার কয়েক দিন পরেই পবিত্র ১৮ই যিলহজ্জ শরীফে মহাসম্মানিত মদীনা শরীফে আমীরুল মু’মিনীন খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে মুনাফিকরা অন্যায়ভাবে শহীদ করে। এই জঘন্য কাজে সংশ্লিষ্ট মুনাফিকরা নিজেদেরকে বিচারের আওতামুক্ত রাখতে পুরো মদীনা শরীফ জুড়ে গণহারে কয়েক দিনব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টি করে রাখে। অন্য কথায়, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদকারীদেরকে যেন গ্রেফতার করা না যায়, সেজন্য মুনাফিকরা তাদের কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খলাকে আরো ত্বরাম্বিত করে। বলা হয়, মুনাফিকদের পরিচালিত বিশৃঙ্খলার দরুন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র রওযা শরীফ স্থাপন করা কয়েকদিন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
ইতিহাসের এই নাজুক পরিস্থিতিতে মুসলিম মিল্লাতকে সমূহ ফিতনা হতে রক্ষার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ত্রাণকর্তাস্বরূপ আভির্ভূত হন। সম্মানিত হাদীছ শরীফ অনুযায়ী বিশিষ্ট হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মুবারক অনুরোধে তিনি বাইয়াত গ্রহণ করেন। যা মূলত মুসলমানদের প্রতি উনার বিশেষ দয়া ইহসান।
কায়িনাত জুড়ে রহমত-বরকতেপূর্ণ মুবারক স্থানসমূহের মধ্যে পবিত্র মদীনা শরীফ সর্বশীর্ষে। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুনাফিকরা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার ইজ্জত-হুরমত বিনষ্টের অপচেষ্টা চালিয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা অতীব প্রয়োজন। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত খিলাফত উনার মুবারক দায়িত্ব গ্রহণ করতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক ইজাযত নিয়ে রাজধানী পবিত্র মদীনা শরীফ হতে কুফায় স্থানান্তর করেন। কিন্তু এ বিষয়টি ইসলামবিদ্বেষীদের মনপুত হয়নি।
ইসলামবিদ্বেষী তথাকথিত ঐতিহাসিকরা বলে যে, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ হতে রাজধানী স্থানান্তরিত করে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার গুরুত্ব তাৎপর্য বিনষ্ট করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! তারা সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ হতে রাজধানী সরিয়ে নেয়ায় পবিত্র মদীনা শরীফ উনার গুরুত্ব কোনোভাবেই হ্রাস পায়নি। বরং পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নিরাপত্তা আরো সুসংহত হয়েছে। ইসলামবিরোধীদের ষড়যন্ত্রের বাঁকা চোখ পবিত্র মদীনা শরীফ হতে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে।
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নতুন রাজধানীতে তাশরীফ মুবারক রেখে শুরুতেই সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারকের সাথে জড়িতদেরকে গ্রেফতার করতে তদন্ত শুরু করেন। কুচক্রী মুনাফিকরা দেখলো যে- এখন তারা ধরা পড়ে যাবে। কাজেই যেকোনো মূল্যে এই কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে হবে। তাই তারা নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করলো।
উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সেই বছর পবিত্র হজ্জ মুবারক করার জন্য পবিত্র মক্কা শরীফে গমন করেছিলেন। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শাহাদাতে তিনি অত্যন্ত কষ্ট পান। তিনি যখন পবিত্র মক্কা শরীফ হতে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পথ ধরলেন, তখন মুনাফিকরা উনার চতুষ্পাশে জমা হতে শুরু করলো। উনার মুবারক খিদমতে যত সব মিথ্যা প্রোপাগান্ডা শুরু করলো। তারা বললো, আপনি উম্মুল মু’মিনীন। আপনি সকলের মাতা। আপনি সকলের অভিভাবক। আপনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার বিচার অবশ্যই চেয়ে থাকেন। কিন্তু নতুন খলীফা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বিচার করতে চান না। বরং তিনি আসামীদেরকে প্রশ্রয় দেন। নাউযুবিল্লাহ! তাদের এসব মিথ্যা অপবাদ শুনে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত খলীফা উনার সাথে আলোচনা করার ইচ্ছা মুবারক পোষণ করেন। তাই তিনি কুফা অভিমুখে রওনা হন। মুনাফিকরা দেখলো- যদি উনারা দু’জন আলোচনায় একত্রিত হন, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়ে যাবে। তাই তারা আলোচনার পরিবর্তে যুদ্ধ বাঁধানোর অপচেষ্টা শুরু করলো।
মুনাফিকরা সম্মানিত খলীফা উনার বিরুদ্ধে লোক জমানো শুরু করলো। অপরদিকে খলীফা উনার নিকট সংবাদ পৌঁছানো হলো যে, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি আপনার বিরুদ্ধে বিশাল বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসছেন। সংবাদ শুনে তিনি আশ্চর্যবোধ করলেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনি অগ্রসর হলেন। বসরার নিকটবর্তী এক স্থানে সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার শিবির দেখা গেল। বিধায় অপরদিকে তিনিও শিবির স্থাপন করালেন। উনারা দু’জনই আলোচনায় একত্রিত হতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু মুনাফিকরা বারবারই তা বাধাগ্রস্ত করলো। এভাবে দিন গিয়ে রাত এলো। গভীর রাতে দু’শিবিরের সকলেই ঘুমন্ত। কিন্তু মুনাফিকরা সজাগ। তারা দু’দলে বিভক্ত হয়ে অন্ধকারে দু’শিবিরে হামলা চালায়। শুরু হয়ে যায় হৈ হুল্লোড়, চিৎকার চেঁচামেচি। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বলা হলো যে, উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার লোকেরা হামলা চালিয়েছে। আবার উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বলা হলো যে, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার লোকেরা হামলা চালিয়েছে। শুরু হয়ে গেল ঘোরতর যুদ্ধ। কিন্তু উনারা দু’জনই এজন্য আফসুস করলেন। যুদ্ধ বন্ধের জন্য কৌশল অবলম্বন করতে লাগলেন।
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি যুদ্ধ বন্ধের জন্য বারবার কৌশল অবলম্বন করেন। আর মুনাফিকরা যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করতে অপচেষ্টা চালায়। পরিশেষে উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে বহনকারী উটের পা কেটে দিয়ে উনার হাওদা মুবারক সরিয়ে নিলে যুদ্ধ থেমে যায়। অত্যধিক তা’যীম তাকরীমের সহিত উনাকে পবিত্র মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ যুদ্ধকে ইতিহাসে জঙ্গে জামাল হিসেবে অভিহিত করা হয়।
মুনাফিকরা জঙ্গে জামালের মাধ্যমে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাত মুবারক উনার বিচার বিঘিœত করার পাশাপাশি উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম এবং ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাদেরকেও শহীদ করার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হয়নি। তাই মুনাফিকরা ষড়যন্ত্রে আরো মরিয়া হয়ে উঠে।
খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিলাফতকাল হতে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সিরিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মুনাফিকরা তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য এবার সিরিয়ায় একত্রিত হতে থাকে। ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আলোচনার জন্য এগিয়ে যান। অপরদিকে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিও আলোচনার জন্য এগিয়ে আসেন। উনারা দু’জনই ফোরাত নদীর তীরে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করেন। জঙ্গে জামালের অনুকরণে মুনাফিকরা আবারো যুদ্ধ বাঁধায়। মুনাফিকরা ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার লোকদের উপর রাতের আঁধারে হামলা চালিয়ে বলে যে, হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার লোকেরা হামলা করেছে। অনুরূপভাবে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার লোকদের উপর হামলা চালিয়ে মুনাফিকরা বলে যে, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার লোকেরা হামলা চালিয়েছে। আবারো শুরু হয় ঘোরতর যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ৭০ হাজার মুসলমান শহীদ হন। ইতিহাসে তা সিফফিনের যুদ্ধ হিসেবে খ্যাত।
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিদ্বেষী তথাকথিত ঐতিহাসিকরা জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনকে কেন্দ্র করে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধী মনোভাবকে কাগজে অঙ্কনের বেশ অপচেষ্টা চালিয়েছে। বাজারে প্রাপ্ত অধিকাংশ ইতিহাস বইতে একই কথা। উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম এবং কাতিবে ওহী হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের মুবারক শানের বিরোধী বক্তব্যে সেগুলো ভরপুর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উনাদেরকে দোষারোপ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ! উনাদের সমালোচনা করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
মূলত, উনারা হচ্ছেন ঈমান। উনাদের মুহব্বত ঈমানের মূল। উনাদের ইতায়াত আমলের মূল। উনাদের রেযামন্দি মুবারক নাজাতের মূল। উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা কুফরী এবং জাহান্নামী হওয়ার কারণ। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে অন্যায়ভাবে শহীদ করার সাথে মুনাফিকরা যেরূপ সংশ্লিষ্ট,  তদ্রƒপ জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফীনের ঘটনাতেও তারা জড়িত এবং এককভাবে তারাই দায়ী। আর এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের সহীহ আক্বীদা। এর ব্যতিক্রম আক্বীদা পোষণ করা সুস্পষ্ট গুমরাহী।
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারককে কেন্দ্র করে কয়েকটি বাতিল ফিরক্বার উদ্ভব ঘটেছে। উনার মুবারক শানে অতি বাড়াবাড়ি করে শিয়া বা রাফিযী সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে। এ ফিরক্বার লোকেরা বাহ্যিকভাবে উনার প্রতি অত্যধিক মুহব্বত দেখিয়ে সূক্ষ্মভাবে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে অবমাননা করে। তাদের মতে, খিলাফতের জন্য কেবল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিই উপযুক্ত। প্রথম তিনজন খলীফা নন। বরং উনারা জোরপূর্বক শাসন ক্ষমতা দখল করে রেখেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! তাদের এ বক্তব্য সুস্পষ্টভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের বিরোধী হওয়ায় তা বাতিল ও পরিত্যাজ্য। তারাও বাতিল। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত উনাদের সহীহ ফতওয়া অনুযায়ী- শিয়া বা রাফিযী সম্প্রদায় কাফির।
এদিকে ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার খিলাফত মুবারকের বিরোধিতা করে খারিজী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটে। এরা উনার খিলাফত মুবারক মেনে নেয়নি। এরাই উনাকে শহীদ করে। এরাও বাতিল ফিরক্বার অন্তর্ভুক্ত। সম্মানিত শরীয়ত অনুযায়ী এরাও কাফির।
মূল কথা হচ্ছে, ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার খিলাফত মুবারক মুসলিম উম্মাহর ঈমান, আমল এবং আক্বীদার সাথে সম্পৃক্ত ও সংশ্লিষ্ট। সর্বক্ষেত্রে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা পোষণ করতে হবে। ভিন্ন আক্বীদা পোষণ করলে ঈমানদার থাকা যাবে না।
মহান আল্লাহ পাক তিনি মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক উসীলায় সকলকে ছহীহ সমঝ এবং হুসনে যন দান করুন। আমীন।

***********************************
ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি অনন্য খুছুছিয়ত মুবারক আর বাবুল ইলমী শানে মহীয়ান
প্রবাদ আছে, ‘হার গুলেরা রঙ্গো বুয়ে দিগারাস্ত’। অর্থাৎ ‘একেক ফুলের একেক রকম রং ও ঘ্রাণ’। সমস্ত উম্মতের মাঝে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের শ্রেষ্ঠত্ব। আবার উনাদের মাঝে বদরী ছাহাবীগণ উনাদের রয়েছে বিশেষ ফযীলত। আবার মুহাজিরগণ উনাদের রয়েছে ব্যতিক্রম শান মুবারক। অপরদিকে খিলাফতের ক্ষেত্রে কুরাইশগণ উনাদের রয়েছে একক প্রাধান্য। সর্বোপরি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে হযরত খুলাফায়ে রাশেদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের জন্য স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য মুবারক নির্ধারিত।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا مدينة السخاء و حضرت ابو بكر عليه السلام بابها وانا مدينة الشجاعة و حضرت عمر عليه السلام بابها وانا مدينة الحياء و حضرت عثمان عليه السلام بابها وانا مدينة العلم و حضرت على عليه  السلام بابها.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- আমি দানশীলতার মুবারক শহর এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উনার দরজা মুবারক স্বরূপ। আমি বীরত্বের মুবারক শহর এবং সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার দরজা মুবারক স্বরূপ। আমি লজ্জাশীলতার মুবারক শহর এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উনার মুবারক দরজাস্বরূপ। আমি ইলম উনার শহর মুবারক এবং ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার দরজা মুবারক স্বরূপ। (নুজহাতুল মাজালিস)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن  مسعود رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال حضرت ابو بكر الصديق عليه السلام تاج السلام وحضرت عمر بن الخطاب عليه السلام حلة الاسلام وحضرت عثمان عليه السلام اكليل الاسلام وحضرت على بن ابى طالب عليه السلام طبيب الاسلام.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মুকুটস্বরূপ। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার লিবাসস্বরূপ। সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার অলংকারস্বরূপ। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার চিকিৎসক স্বরূপ। (কিতাবুল ফিরদাউস)
অর্থাৎ হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রত্যেকের আলাদা বা স্বতন্ত্র খুছুছিয়ত মুবারক রয়েছে। সঙ্গতকারণেই সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার খুছুছিয়ত মুবারক বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি কায়িনাতে একক ব্যক্তিত্ব। যিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন। উনার পূর্বে অন্য কেউই পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেননি। আর ক্বিয়ামত পর্যন্ত কেউই এরূপ করতে সামর্থ্যবান হবেন না।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت انس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا مدينة العلم وحضرت ابو بكر عليه السلام اساسها وحضرت عمر عليه السلام حيطانها وحضرت عثمان عليه السلام سقفها وحضرت على عليه السلام بابها.
অর্থ: হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি ইলমের শহর মুবারক। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খুঁটিস্বরূপ। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার দেয়ালস্বরূপ। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ছাদস্বরূপ। এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার দরজাস্বরূপ। (নুজহাতুল মাজালিস)
অর্থাৎ হযরত খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই ইলমের জামে’। তবে ইলম প্রকাশিত হবে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে। যা অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت حبيرة رحمة الله عليه قال خطبنا الحسن بن على عليهما السلام فقال لقد فارقكم رجل بالامس لـم يسبقه الاولون بعلم ولا يدركه الاخرون.
অর্থ: হযরত হুবায়রা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি শাহাদাতী শান মুবারক গ্রহণ করার পর ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত হাসান আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র খুতবা মুবারক প্রদানকালে ইরশাদ মুবারক করেন, গতকাল এমন একজন মহান ব্যক্তিত্ব তোমাদের থেকে পর্দা করেছেন যিনি ইলম প্রকাশের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তীগণ উনাদের চেয়ে অগ্রগামী। আর পরবর্তীরা তো উনার নাগালই পায়নি। (মুসনাদে আহমদ শরীফ)
সত্যিই সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইলম মুবারক প্রকাশের ক্ষেত্রে সকলের অগ্রগামী। বলা হয়, ইলম দু’ প্রকার। জাহিরী এবং বাতিনী তথা ইলমে ফিক্বহ এবং ইলমে তাসাউফ।
ইলমে তাসাউফের অনেকগুলো সিলসিলা বা ত্বরীক্বা মুসলিম উম্মাহর মাঝে চালু রয়েছে। তবে শুধুমাত্র নকশবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা ব্যতিত অন্য সব তরীক্বা উনার মাধ্যমেই জারি হয়েছে। মুজাদ্দিদে আ’যম, সাইয়্যিদুনা ইমামুল উমাম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত শাজরা শরীফ তার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
ইলমে ফিক্বহর প্রথম আলোচ্য বিষয় ইলমে তাফসীর। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক ইলমে তাফসীর সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه قال ان القران انزل على سبعة احرف ما منها حرف الا له ظاهر وباطن وان على بن ابى طالب عليه السلام عنده منه علم الظاهر وعلم الباطن.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয়ই পবিত্র কুরআন শরীফ সাত হরফে নাযিল হয়েছে। প্রতিটি হরফেরই একটি জাহিরী এবং একটি বাতিনী অর্থ রয়েছে। আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিকট জাহিরী-বাতিনী উভয় প্রকার ইলম মুবারকই রয়েছে। (মানাকিবু আসাদিল গালিব)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قسمت الحكمة عشرة اجزاء فاعطى على عليه السلام تسعة اجزاء والناس جزء واحدا
অর্থ: ইলম ও হিকমতকে দশ (১০) ভাগ করা হয়েছে। তন্মধ্যে নয় (৯) ভাগ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে হাদিয়া করা হয়েছে। আর এক ভাগ মানুষদের বণ্টন করা হয়েছে।  (আবূ নুয়াইম)
তাই তো, তাফসীর, হাদীছ শরীফ, ফিক্বাহ, উছূল, ক্বাওয়ায়িদ, বালাগাত, ফাসাহাত, ফারায়েয, ইলমে তিব্ব, ইলমে হুনুরসহ সমস্ত প্রকার ইলম প্রকাশের ক্ষেত্রে উনার মুবারক পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। ইলম হাছিল করতে হলে উনার আনুষ্ঠানিক নিসবত প্রয়োজন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا مدينة العلم وعلى عليه السلام بابها فمن اراد العلم فلياته من بابه.
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি ইলম মুবারক উনার শহর। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উনার দরজাস্বরূপ। অতএব, যে ইলম হাছিল করতে চায়, সে যেন ইলমের দরজা দিয়ে আসে। (আবু নুয়াইম)
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ উনার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, জাহিরী ইলম তো অবশ্যই এমনকি বাতিনী ইলম তথা এমনকি বাতিনী নিয়ামত হাছিল করতে হলেও সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার নিসবত মুবারক বা উনাকে উসীলা হিসেবে গ্রহণ করা অতীব জরুরী।
কিতাবে উল্লেখ করা হয়, গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি মানুষদেরকে নসীহত করুন। তিনি আরজ করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি তো অনারবী। আরবীদেরকে কিভাবে নসীহত মুবারক করবো। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুখ মুবারক-এ নূরুল বারাকাত মুবারক প্রদান করলেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিও নূরুল বারাকাত মুবারক প্রদান করলেন। আর সেই মুবারক দিন হতেই হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তা’লীম দেয়া শুরু করেন।
অনুরূপভাবে নিসবত মুবারকের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি নির্দেশ মুবারকে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা ইমামুল উমাম হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনাকে জামিউল ইলম পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার তা’লীম মুবারক প্রদান করেছেন। সুবহানাল্লাহ! যে সুদীর্ঘ ঘটনা অনেকেরই জানা।
কাজেই উম্মাহর দায়িত্ব-কর্তব্য হলো সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শান জেনে হুসনে যন পোষণ করত উনার নিসবত মুবারক হাছিল করে রেযামন্দি হাছিলের কোশেশ করা।
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।
************************

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ১২ ইমাম আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে যিনি প্রথম ইমাম আলাইহিস সালাম

আমিরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। বর্ণিত রয়েছে, সম্মানিত কুরাইশ গোত্রের শ্রেষ্ঠতম বীর হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। উনার বীরত্ব ও সাহসিকতার কারণে উনাকে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি “আসাদুল্লাহ” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার সিংহ লক্বব বা উপাধি মুবারক-এ ভূষিত করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
উনার ছানা-ছিফত মুবারক বর্ণনায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, যে ব্যক্তি আবুল বাশার হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ইলিম মুবারক, হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার আক্বল মুবারক. হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ছবর বা ধৈর্য মুবারক, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার তাক্বওয়া বা পরহেযগারী মুবারক এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বাতিনীরূপ দেখতে বাসনা রাখে, সে যেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে। কেননা তিনি হচ্ছেন এই সমস্ত গুণ মুবারক-এর জীবন্ত প্রতীক। সুবহানাল্লাহ! (তাফসীরে রাযী)
অপর এক হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, যদি সমস্ত আসমান ও যমীনকে এক পাল্লায় আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহি সালাম উনার ঈমানকে অপর পাল্লায় রেখে ওজন করা হয়, তাহলে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার ঈমানের পাল্লাটিই ভারে নুয়ে পড়বে। সুবহানাল্লাহ! (নুযহাতুল মাজালিস)
************************

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ব্যাপক ইলম মুবারক উনার অধিকারী

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বপ্রকার নাজ নিয়ামতের মালিক বানিয়েছেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সমস্ত নিয়ামতের মালিক এবং মহাসম্মানিত বণ্টনকারী। তিনি যাবতীয় নিয়ামত কায়িনাতের মাঝে বণ্টন করেন। তিনি আখাচ্ছুল খাছ ব্যক্তিত্বগণ  উনাদেরকে বিশেষ খুছুছিয়ত মুবারকে বৈশিষ্ট্যম-িত করেছেন। তেমনিভাবে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে অগণিত বৈশিষ্ট্য মুবারকে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করা হয়েছে।
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক শানে অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে একখানা বিশেষ হাদীছ শরীফে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
انا مدينة العلم و حضرة على عليه السلام بابها
অর্থ: “আমি হলাম ইলম মুবারক উনার শহর তথা ভা-ার। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সেই ভা-ার মুবারক উনার দরজা বা দ্বার।”
অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি যেহেতু বাবুল ইলম, সেহেতু অনেক অজানা ও গোপন বিষয় উনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিতাবে অসংখ্য ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে উনার বাবুল ইলম হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ‘কিতাবু কালয়ুবী’তে একখানা বিশেষ ঘটনা মুবারক বর্ণিত হয়। যা নিম্নরূপ-
একদা একদল ইহুদী পাদ্রী তারা ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলো: হে আমীরুল মু’মিনীন! আমাদের কতিপয় সুওয়াল রয়েছে। আপনি যদি সেগুলোর জওয়াব দিতে পারেন, তাহলে আমরা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণ করবো। অন্যথায়  আমরা ধরে নিবো আপনারা বাতিল। আমাদের প্রশ্ন হলো, আসমানসমূহ হতে বড় কোন বিষয়? কোন বিষয় যমীন হতে অধিক প্রশস্ত? আগুন হতে অধিক গরম কোন জিনিস?  কোন বিষয় বাতাস হতে অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন? কোন বিষয় সাগর হতে অধিক ধনী? কোন বিষয় পাথর হতে অধিক শক্ত? কোন বিষয় আমরা দেখি কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি সেদিকে মুবারক নজর দেন না? কোন বিষয় মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য? আর কোন বিষয় বান্দাদের জন্য? কোন বিষয় মহান আল্লাহ পাক এবং বান্দাদের মাঝে বিদ্যমান?
তারা বললো, ঘোড়া, উট, গরু, গাধা, বকরী, কুকুর, শিয়াল, বিড়াল, সিংহ, ঈগল, কাক, চিল, কবুতর, ব্যাঙ, হুদহুদ পাখি, তিতির পাখি, ঘুঘু পাখি, কুমবুরাহ বা ভরত পাখি, চড়–ই পাখি, বুুলবুলি পাখি, মোরগ, মুরগি প্রভৃতি প্রাণী ও পাখি তারা তাদের ডাকে কি বলে? অর্থাৎ তাদের ডাকের অর্থ কি?
তারা বললো, আগুন ও বাতাস তাদের শো শো শব্দে কি ব্যক্ত করে? তাছাড়া যমীন, আসমান, সমুদ্র, সূর্য এবং চন্দ্র তারা কি বলে?
আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, নিশ্চয়ই আমার নিকট ইলম মুবারক উনার ষাটটি দরজা মুবারক রয়েছে। প্রত্যেক দরজার ইলম মুবারক বহনে কমপক্ষে এক হাজার বাহন প্রয়োজন। (অর্থাৎ উনার ইলম মুবারক উনার কোনো সীমা নির্ধারণ অসম্ভব বিষয়।) কাজেই হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা আমাকে যেকোনো বিষয়ে সুওয়াল করতে পারো। তোমাদের সুওয়ালের জাওয়াব আমার নিকট অত্যধিক সহজ।
অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা শুনে রাখো। সৎ ব্যক্তির উপর অপবাদ আসমান হতে বড়। হক্ব যমীন হতে প্রশস্ত। সম্পদ জমা করার ক্ষেত্রে লোভীর অন্তর আগুন হতে গরম। মজলুমের দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বাতাস হতে অধিক দ্রুতগতি সম্পন্ন। অল্পে তুষ্ট অন্তর সমুদ্র হতেও অধিক ধনী। আর বদকার ব্যক্তির অন্তর পাথর হতেও অধিক শক্ত। আমাদের রূহ মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য আর আমাদের আমল আমাদের নিজেদের জন্য। আমাদের দায়িত্ব দোয়া করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করার মালিক।
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঘোড়া তার হ্রেষা ধ্বনিতে বলে- “আয় আল্লাহ পাক! মুসলিম উম্মাহকে সম্মানিত করুন এবং কাফিরদেরকে লাঞ্ছিত করুন।”
উট বলে, “পরকালীন পাথেয় না থাকা সত্ত্বেও যে আমলের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রীয় থাকে, তার জন্য আশ্চর্য।”
গরু বলে, “হে গাফিল ব্যক্তি! মৃত্যু তোমার জন্য অবধারিত। তাই তুমি আমলে মশগুল হও। হে গাফিল ব্যক্তি! তুমি অতি অল্প সময়ের জন্য দুনিয়াতে আগমনকারী। হে গাফিল ব্যক্তি! যা তুমি পরকালের জন্য প্রেরণ করেছ, সেটাই কেবল তোমার জন্য রয়ে যাবে। অতি শীঘ্রই তুমি তোমার আমলের বদলা লাভ করবে।”
গাধা বলে, “আয় আল্লাহ পাক! সুদ প্রদানকারী এবং সুদের মাধ্যমে উপার্জনকারীর উপর লা’নত বর্ষণ করুন।”
বকরী বলে, “হে মৃত্যু! কে তোমাকে বেদনাদায়ক করলো। কে তোমাকে পরিতৃপ্ত করলো। কে তোমাকে কর্তিত করলো। হে বনী আদম! কে তোমাকে গাফিল বানালো।” কুকুর বলে, “আয় আল্লাহ পাক! আমি রহমত হতে মাহরুম। তাই যে আমার উপর রহম করে আপনিও তার উপর রহম করুন।”
শিয়াল বলে, “হে রিযিকের বণ্টনকারী! আমার জন্য যা নির্ধারণ করেছেন, তা আমার জন্য যথেষ্ট করুন।”
বিড়াল তার ডাকে পবিত্র তাওরাত শরীফ উনার দশখানা আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে।
সিংহ বলে, “আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আপনার নাফরমানী করে, আমাকে তার উপর কর্তৃত্ব দিন।”
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, ঈগল বলে, “যত দিন ইচ্ছা বেঁচে থাকো কিন্তু একদিন মৃত্যুবরণ করতে হবে। যা ইচ্ছা সঞ্চয় করো কিন্তু একদিন তরক করতে হবে। যাকে ইচ্ছা মুহব্বত করো কিন্তু একদিন পৃথক হতে হবে।”
কাক বলে, “হে উম্মত! নিয়ামত সরে যাওয়াকে ভয় করো। গযব  নাযিল হওয়াকে ভয় করো।”
কবুতর বলে, “যে ব্যক্তি তোমার সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করেছে, তার সাথে সদাচরণ করো। যে ব্যক্তি তোমার উপর যুলুম করেছে, তাকে ক্ষমা করো। যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে, তাকে তুমি দান করো। যে তোমার সাথে পর্দা করেছে, তার সাথে কথা বলো। তাহলে জান্নাত হবে তোমার আবাস্থল।”
ব্যাঙ বলে, “সুবহানাল্লাহ! সমুদ্রের তলদেশে, পাহাড়ের চূড়ায় এবং গর্তে অবস্থানকারী সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার তাসবীহ মুবারক পাঠ করে। জিব্বা ও জবানওয়ালা সকলেই মুবারক তাসবীহতে মশগুল রয়েছে।”
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ইহুদীদের প্রশ্নের জবাবে আরো ইরশাদ মুবারক করেন, হুদহুদ পাখি বলে, “আয় আল্লাহ পাক! আমি নিজের নফসের উপর যুলুম করেছি। আপনি আমার গুনাহ ক্ষমা করুন। আপনি ব্যতীত গুনাহ ক্ষমা করার কেহ নেই।”
তিতির পাখি বলে, “রহমান মহান আল্লাহ পাক আরশে আ’যীমে ইসতাওয়া হয়েছেন। সমস্ত কিছু উনার রবুবিয়াতের সাথে সম্পৃক্ত। সর্ব বিষয়ে তিনি অবগত।”
ঘুঘু পাখি বলে, “মৃত্যু নিকটবর্তী। প্রত্যাশা অপূরণীয়। আমলের প্রতিদান গ্রহণ অত্যাবশকীয়।”
কুমবুরাহ বা ভরত পাখি বলে, “আয় আল্লাহ পাক! নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীগণের প্রতি লা’নত বর্ষণ করুন।”
চড়ই পাখি বলে, “মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত গোপন বিষয় সম্পর্কে অবগত। হে বিপদ ও বালা মুছিবত দূরকারী! যে ব্যক্তি আপনার হক্ব আদায় করে না, আমাকে তার শস্য ক্ষেতে আধিপত্য দান করুন।”
বুলবুলি পাখি বলে, “দুনিয়াবী নিয়ামত যখন আমার জন্য যথেষ্ট হয়, তখন আমি শুকরিয়া আদায় করি।”
মোরগ বলে, “মহিমাময় পূত-পবিত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত রব। হে গাফিল সম্প্রদায়। মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করো।”
মুরগি বলে, “আয় আল্লাহ পাক! আপনি হক্ব। আপনার ওয়াদা মুবারকও হক্ব।”
ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, আগুন বলে “আয় আল্লাহ পাক! আমি জাহান্নামের আগুন হতে পানাহ চাই।”
বাতাস বলে, “আমি আদিষ্টিত। আয় আল্লাহ পাক! যে আমাকে দোষারোপ করে আপনি তার উপর লা’নত বর্ষণ করুন।”
পানি বলে, “সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক পবিত্রতা সম্পর্কে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ অবগত নন।”
প্রতিদিন যমীন বলে, “হে আদম সন্তান! তুমি আমার পিঠের উপর নাফরমানী করছো। আমার পেটের ভিতর (কবরে) তোমাকে বিষাক্ত পোকা ভক্ষণ করবে।”
প্রতিদিন আসমান বলে, “আয় আল্লাহ পাক! আমার নিচে অবস্থানকারী সকলের ব্যাপারে আমি সাক্ষী।”
সমুদ্র বলে, “আয় আল্লাহ পাক! যে ব্যক্তি আপনার নাফরমানী করে, তাকে ডুবিয়ে মারতে আমাকে মুবারক অনুমতি প্রদান করুন।”
প্রতিদিন অস্ত যাওয়ার সময় সূর্য বলে, “আয় আল্লাহ পাক! আমার আলো যাদের উপর পতিত হয়েছে, আমি তাদের সকলের আমলের সাক্ষীস্বরূপ।”
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সমস্ত পশু-পাখি, কীটপতঙ্গসহ পুরো কায়িনাতবাসীর ভাষা সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত ছিলেন এবং সেই ইলম মুবারক তিনি প্রকাশও করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিই সর্বপ্রথম আরবী ক্বাওয়ায়িদ বা ব্যাকরণের মূল উছূল প্রণয়ন করেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক বিষয় উনারই মুবারক অবদান। আধুনিক বিজ্ঞানের মৌলিক কতিপয় সূত্র তিনি উদ্ভাবন করেন। যা পরবর্তীতে হযরত জা’ফর সাদিক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বাস্তবায়িত করেন। তাছাড়া নকশবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া ত্বরীক্বা ব্যতীত ইলমে তাসাউফ উনার সমস্ত ত্বরীক্বা উনার মুবারক উসীলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর এ সমস্ত বিষয়ের মাধ্যমে উনার বাবুল ইলম শান মুবারক বারবার জাহির হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
*****************************

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী পরিবারে তিনি লালিত পালিত হন। সুবহানাল্লাহ!


ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি একেবারে শিশু বয়স মুবারক থেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী পরিবারে লালিত পালিত হন। উনার বয়স মুবারক যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চাচা আবু তালিবের কাছ থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে আসেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সাহচর্যে থেকেই তিনি বড় হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নিজেই বলেন, আমি যখন শিশু ছিলাম তখনই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে উনার আশ্রয় মুবারক-এ নিয়েছিলেন। তিনি আমাকে উনার বুক মুবারক-এ জড়িয়ে ধরতেন এবং উনার পাশে শয়ন করাতেন। আমি উনার জিসিম মুবারক স্পর্শ করেছি এবং উনার জিসিম মুবারক উনার ঘ্রাণ মুবারক নিয়েছি। উনার সুরক্ষার জন্য দিন-রাত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা নিয়োজিত ছিলেন। আমি উনাকে অনুসরণ করতাম যেমন উট শাবক তার মাকে অনুসরণ করে। সুবহানাল্লাহ!
আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াত প্রকাশের পর পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আহকাম প্রচার করতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন উনার সহকারী ও সাহায্যকারী হিসেবে কাউকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানালেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ছাড়া আর কেউ এগিয়ে আসেননি। তখন তিনি একজন অল্প বয়স্ক কিশোর মাত্র। এভাবে শুরু থেকেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একান্ত সহকারী হিসেবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার জন্যে ত্যাগ স্বীকার করার ব্যাপারে এগিয়ে এসেছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!
***************************************************

ইমামুল আউওয়াল হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরে বিলাদতী
শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!

আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন, বাবুল ইলম, আসাদুল্লাহিল গালিব সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ২৩ হিজরী পূর্বাব্দের ১৩ রজব জুমুয়াহ শরীফ দিন পবিত্র কা’বা ঘর উনার অভ্যন্তরে বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। বর্ণিত আছে, পবিত্র কা’বা ঘর উনার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম সাইয়্যিদুনা উনার আম্মা আলাইহাস সালাম উনার প্রসব বেদনা শুরু হলে তিনি সেখানেই বসে পড়েন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন। সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি ওইসময় সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখতে পান কুদরতিভাবে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার দেয়াল ফাঁক হয়ে গেছে। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার আম্মা সেই ফাঁক দিয়ে পবিত্র কা’বা শরীফ উনার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তারপর সেই ফাঁক বন্ধ হয়ে যায়। এই আশ্চর্য ঘটনা দেখে সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস আলাইহিস সালাম তিনি এবং উনার সাথের লোকজন অবাক হয়ে যান। উনারা দৌড়ে এসে পবিত্র কা’বা ঘর উনার দরজা মুবারক খোলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছুতেই দরজা মুবারক খুলতে পারলেন না। এই অলৌকিক ঘটনার খবর সবখানে ছড়িয়ে পড়ে।
পবিত্র কা’বা ঘর উনার ভিতরে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। শিশু সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নিয়ে উনার মা পবিত্র কা’বা ঘর উনার বাইরে এসে প্রথমেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখতে পান। নবজাতক শিশু আলাইহিস সালাম উনাকে কোল মুবারক-এ নেয়ার জন্যে তিনি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি দু’হাত মুবারক বাড়িয়ে শিশু আলাইহিস সালাম উনাকে বুকে তুলে নেন। শিশু সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহ ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি চোখ খুলেই আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সালাম জানালেন ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রসূলাল্লাহ’। তা শুনে সকলেই অবাক হয়ে যান। পবিত্র কা’বা শরীফ উনার অভ্যন্তরে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বিলাদত শরীফ এক অনন্য সাধারণ ঘটনা।
*********************************************************

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনিই বিজয়ী বীর সাইয়্যিদুনা হযরত আসাদুল্লাহ (মহান আল্লাহ পাক উনার সিংহ) আলাইহিস সালাম

মদীনা শরীফে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার কাজ করে চলেছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার কাজে বাধা দেয়ার জন্য কাফির শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র আরম্ভ করে দিলো। এক পর্যায়ে মুসলমান এবং কাফিরদের মধ্যে প্রথম যে ঐতিহাসিক জিহাদ সংঘটিত হয় তা বদরের জিহাদ নামে খ্যাত। এই জিহাদে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করে সবাইকে অবাক করে দেন। দ্বীন ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক জিহাদ করেছেন। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত সকল জিহাদে অংশগ্রহণ করে যে শৌর্য-বীরত্বের পরিচয় দেন তা আজো কিংবদন্তী হয়ে আছে।
উহুদের জিহাদে এক পর্যায়ে মুসলমানগণ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। এ সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ক্ষতি করার লক্ষ্যে উনাকে অসংখ্য কাফির এসে ঘিরে ফেলে। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি এ খবর জানতে পেরে নিজের অবস্থান থেকে তলোয়ার চালাতে চালাতে ছুটে আসেন। একাকী লড়াই করে তিনি কাফির দলের বুহ্য ভেদ করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক-এ এসে উনার অবস্থান মুবারক উনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। সুবহানাল্লাহ! ঐতিহাসিকগণ বর্ণনা করেছেন, উহুদের জিহাদে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অসীম সাহস ও বীরত্ব দেখে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারাও উনার প্রশংসা করেছিলেন।
খন্দকের জিহাদেও তিনি অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। কাফিরদের কথিত মহাবীর আমর ইবনে আব্দে উদ দ্বন্দ্ব-জিহাদ আহ্বান করলে কেউ যেতে সাহস করেননি। সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বিসমিল্লাহ বলে এগিয়ে যান এবং বিস্ময়কর ক্ষিপ্রতার সাথে তলোয়ারের এক আঘাতে সেই কথিত মহাবীরের দেহ দ্বিখ-িত করে ফেলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশি হয়ে বলেছিলেন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার এক আঘাত আসমান ও যমীনের সকলের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
বিখ্যাত খায়বরের জিহাদেও সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমেই বিজয় সুসম্পন্ন হয়েছিল। সুবহানাল্লাহ!

***********************************

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একান্ত আপন ও উৎসর্গীত। সুবহানাল্লাহ!

নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একান্ত আপন ছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। হিজরতের সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের বিছানায় উনাকে শুইয়ে রেখে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পথে রওয়ানা হন। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী সম্মনিত পরিবার উনার একজন সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। মদীনা শরীফে যাওয়ার সময় অনেক লোকের টাকা পয়সা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে জমা ছিল। তিনি সেই সকল ধন-সম্পদ মালিকদের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে দায়িত্ব দিয়ে যান। তিনি সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন। অতঃপর তিনিও মদীনা শরীফ গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হন।
পবিত্র মদীনা শরীফ উনার লোকেরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেন। সকল মুসলমানের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলার জন্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে আগত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের সাথে মদীনা শরীফ অবস্থানকারী আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনাদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেন। শুধু বাকি রয়ে গিয়েছিলেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। এ সময় তিনি অশ্রুসজল নয়নে এসে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সকলের মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করলেন, অথচ আমাকে কারো সাথে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করলেন না। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সহাস্য বদন মুবারকে বললেন, আমার সাথে আপনার বন্ধন। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থানেই আপনি আমার ভাই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেছেন, হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনাদের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল, আমার ও আপনার মধ্যেও সেই সম্পর্ক। সুবহানাল্লাহ। পার্থক্য এতটুকু যে, আমার পরে আর কোন নবী নেই।
**********************************************

ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি পূত-পবিত্র ও অতীব সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মহান সদস্য

মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন। একবার পবিত্র সূরা তওবা শরীফ উনার কয়েকখানি পবিত্র আয়াত শরীফ মক্কাবাসীদের নিকট পাঠ করে শোনাবার জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আবু বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম উনাকে পাঠান। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ নিয়ে রওয়ানা হওয়ার পরে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানান যে, এই পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ পড়ে শোনাতে স্বয়ং উনি কিংবা উনার পবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের কেউ যান। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে এ কাজের জন্য তাড়াতাড়ি প্রেরণ করেন। অতঃপর তিনি রওয়ানা হয়ে পথিমধ্যে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট থেকে সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং পবিত্র মক্কা শরীফ-এ গিয়ে জনগণকে সেই পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ পাঠ করে শোনান। সুবহানাল্লাহ!
**********************************************

আল ইমামুল আউওয়াল সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুবারক নসবনামা

হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলুন, (হে বিশ্ববাসী!) আমি তোমাদের নিকট কোনো প্রতিদান চাই না। আর তোমাদের পক্ষে তা দেয়াও সম্ভব নয়, তবে যেহেতু তোমাদের ইহকাল ও পরকালে কামিয়াবী হাছিল অর্থাৎ রেযামন্দি ও সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করতে হবে। সেহেতু তোমাদের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হচ্ছে- আমার সম্মানিত আত্মীয়-স্বজন উনাদের তথা বংশধর উনাদের সাথে সদাচরণ করবে।” উল্লেখ্য, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের অন্যতম।
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপনাম আবূল হাসান (হাসান উনার পিতা) ও আবূ তুরাব (মাটির পিতা)। সম্মানিত পিতা উনার নাম মুবারক আবূ তালিব, সম্মানিতা মাতা উনার নাম মুবারক হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ আলাইহাস সালাম। বিশেষ উপাধি মুবারক আসাদুল্লাহ (মহান আল্লাহ পাক উনার সিংহ), হায়দার (বাঘ), মুরতাদ্বা (সন্তষ্টি-প্রাপ্ত)। তিনি আব্দুল্লাহ নামে প্রসিদ্ধ। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই। কুরাইশ বংশের হাশেমী শাখায় পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ। পিতৃকুল ও মাতৃকুল উভয় দিক থেকে তিনি কুরাইশ বংশোদ্ভূত। সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মতে তিনি পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ মাস উনার ১৩ তারিখে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
*********************************************

মহা সম্মানিত পবিত্র আহলু বাইতি রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সুমহান বেমেছাল শান-মান মর্যাদা ফযীলত মুবারক জানা শুনা এবং সে অনুযায়ী আমল করা প্রত্যেক ঈমানদার বান্দা-বান্দী উনাদের জন্য ফরয।

খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক করেন-
قل لا اسئلكم عليه اجرا الا الـمودة فى القربى
অর্থ: “(হে আমার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি জানিয়ে দিন, আমি তোমাদের নিকট কোনো বিনিময় চাচ্ছি না। আর চাওয়াটাও স্বাভাবিক নয়; তোমাদের পক্ষে দেয়াও কস্মিনকালে সম্ভব নয়। তবে তোমরা যদি ইহকাল ও পরকালে হাক্বীক্বী কামিয়াবী হাছিল করতে চাও; তাহলে তোমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- আমার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম-তাকরীম মুবারক করা, উনাদের খিদমত মুবারক উনার আনজাম দেয়া।” (পবিত্র সূরা শুরা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৩)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
انـما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهركم تطهيرا.
অর্থ: নিশ্চয়ই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি চান হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করতে অর্থাৎ উনাদেরকে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টি করেছেন। (সুবহানাল্লাহ!) (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৩)
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
ان الله و ملائكته يصلون على النبى يايها الذين امنوا صلوا عليه وسلموا تسليما.
অর্থ: নিশ্চয়ই খলিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দুরূদ শরীফ পাঠ করে থাকেন। কাজেই হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্রতম নূরানী শান মুবারকে দুরূদ শরীফ পাঠ করো এবং সালাম দেয়ার যথার্থ নিয়মে সালাম দাও। (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৬)
যেমন পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
سلام على ال ياسين.
এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেন-
سلام على ال ياسين.
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আল-আওলাদ আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপরে সালাম। (পবিত্র সূরা আছছফাত শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩০)
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انى تركت فيكم ما ان اخذتم به لن تضلوا كتاب الله وعترتى و اهل بيتى.
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি তোমাদের জন্য যা রেখে গেলাম তা তোমরা গ্রহণ করলে কখনোই গুমরাহ হবে না; তা হচ্ছেন পবিত্র কিতাবুল্লাহ এবং আমার সম্মনিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা। (তিরমিযী শরীফ, জামিউছ ছগীর)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت ابى ذر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الا ان مثل اهل بيتى فيكم مثل سفينة حضرت نوح عليه السلام من ركبها نجا و من تخلف عنها هلك.
অর্থ: হযরত আবু যর গিফারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “সাবধান! নিশ্চয়ই আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মেছাল মুবারক হলো হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার কিশতি মুবারকের ন্যায়। যিনি তাতে আরোহণ করেছেন তিনি নাজাত পেয়েছেন; আর যে খিলাফ করেছে (আরোহণ করেনি) সে ধ্বংস হয়েছে।”  (মুসনাদুল বাজ্জার শরীফ, মুস্তাদরাক শরীফ, ত্ববারানী শরীফ) নাউযুবিল্লাহ!
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
احبوا اهل بيتى لـحبى.
অর্থ: আমার সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করো আমার মুহব্বতে। (তিরমিযী শরীফ)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
انا واهل بيتى شجرة فى الجنة واغصانها فى الدين فمن تمسك دينا اتخذ ربه سبيلا.
অর্থ: আমি এবং আমার সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা হলাম পবিত্র জান্নাত উনার গাছ উনার ন্যায়। সম্মানিত পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে শাখা-প্রশাখা রয়েছে। যে সম্মানিত দ্বীন উনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে সঠিক পথ দান করবেন। সুবহানাল্লাহ!
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت على عليه  السلام قال قال النبى صلى الله عليه وسلم ادبوا اولادكم حب نبيكم وحب اهل بيته و قرائة القران والحديث.
অর্থ: তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এবং উনার সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুহব্বত মুবারক শিক্ষা দাও। তাদেরকে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদেরকে তিলাওয়াত করার শিক্ষা দাও। (আল ফাতাওয়াল হাদীসিয়্যাহ শরীফ, জামিউছ ছগীর লিছছুয়ূতী)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
عن حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه قال قال النبى صلى الله عليه وسلم حب ال محمد صلى الله عليه وسلم يوما خير من عبادة سنة ومن مات عليه دخل الجنة.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “একদিন (বা একমুহূর্ত) সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা সারা বছর পবিত্র ইবাদত-বন্দেগী করার চেয়েও উত্তম। আর যে উনাদের পবিত্র সম্মানিত মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো, সে পবিত্র জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সুবহানাল্লাহ!
عن حضرت جابر بن عبد الله البجلى رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من مات على حب ال محمد صلى الله عليه وسلم مات شهيدا. الا ومن مات على حب محمد صلى الله عليه وسلم مات مغفورا له.
অর্থ: হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহিল বাজালী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো; সে শহীদী মৃত্যু পেলো। সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো; সে অবশ্যই ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্থায় ইন্তেকাল করলো।
الا من مات على حب ال محمد صلى الله عليه وسلم مات مؤمنا مستكمل الايمان.
অর্থ: সাবধান! যে ব্যক্তি সম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো; সে পরিপূর্ণ ঈমানওয়ালা মু’মিন অবস্থায় ইন্তেকাল করলো। সুবহানাল্লাহ!
من مات على حب ال رسول الله صلى الله عليه وسلم بشره حضرت ملك الـموت عليه السلام بالجنة ثم منكر ونكير عليهما السلام.
অর্থ: যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো; উনাকে হযরত মালাকুল মউত, মুনকার এবং নাকীর আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র বেহেশত উনার সুসংবাদ দিবেন।
من مات على حب ال رسول الله صلى الله عليه وسلم يزف الى الجنة كما تزف العروس الى بيت زوجها.
অর্থ: যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের পবিত্র মুহব্বত মুবারক উনার উপর ইন্তেকাল করলো; উনাকে এমনভাবে সুসজ্জিত করে পবিত্র জান্নাতে নেয়া হবে, যেমনভাবে নবদুলহানকে সাজিয়ে বাসর ঘরে নেয়া হয়। (তাফসীরুল কাশশাফ, তাখরীজু আহাদীসিল কাশশাফ, লিজযায়লায়ী)
আর যারা সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সুমহান মর্যাদা-সম্মান মুবারক রক্ষা করবে না, বরং উনাদের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ রাখবে; তাদের পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। যেমন হয়েছে কাট্টা কাফির ইয়াযীদ লা’নতুল্লাহ আলাইহির উপর। বর্তমানে সেই লা’নতপ্রাপ্ত ইয়াযীদের অনুসারী হচ্ছে খারিজী ফিরক্বা, ওহাবী, দেওবন্দী, সালাফী, মওদুদী, জামাতী, তাবলীগী, লা-মাযহাবী। সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান-মান, বেমেছাল ইজ্জত সম্মান মুবারক শুনলে তাদের শরীরে আগুন লেগে যায়। নাউযুবিল্লাহ!
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে-
من مات على بغض ال محمد صلى الله عليه وسلم جاء يوم القيامة مكتوبا بين عينيه ايس من رحمة الله.
অর্থ: যদি কেউ সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হিসেবে মারা যায়, তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তার লা’নতপ্রাপ্ত কপালে লিখা হবে- ‘এই ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র রহমত থেকে নিরাশ/বঞ্চিত।’ (নাঊযুবিল্লাহ)
من مات على بغض ال محمد صلى الله عليه وسلم مات كافرا.
অর্থ: যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হিসেবে মারা যায়, সে কাফির অবস্থায় মারা গেলো। (নাঊযুবিল্লাহ)
من مات على بغض ال محمد صلى الله عليه وسلم لم يشم راحة الجنة.
অর্থ: যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী হিসেবে মারা যায়, সে পবিত্র বেহেশত উনার সুঘ্রাণও পাবে না।
من ابغض اهل البيت فهو منافق.
অর্থ: যে ব্যক্তি সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে, সে মুনাফিক (আর মুনাফিকের স্থান জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে)। (তাফসীরুল কাশশাফ, তাখরীজু আহাদীসিল কাশশাফ লিজযায়লয়ী)
এদের সম্পর্কে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে-
لو ان رجلا صعد بين الركن والمقام فصلى وصام ثم مات وهو مغبض لاهل بيت محمد صلى الله عليه وسلم دخل النار.
অর্থ: যদি কোনো ব্যক্তি সম্মানিত রুকনে ইয়ামিন ও পবিত্র মাক্বামে ইবরাহীমে আরোহণ করে অতঃপর সে নামায পড়ে এবং রোযা রাখে কিন্তু সে সম্মানিত পবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করে, চু-চেরা ক্বীল-ক্বাল করে তবে সে নিশ্চিত জাহান্নামে প্রবেশ করবে। নাউযুবিল্লাহ!
কাজেই, কায়িনাতবাসী সকলের জন্যই ফরয ওয়াজিব হচ্ছে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত করা, তা’যীম করা, উনাদের খিদমত মুবারক করা এবং উনাদের বিরোধিতা বা বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে বিরত থাকা।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সকলকে তাওফীক দান করুন। আমীন।

**************************************

ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাবুল ইলিম ওয়াল হিকাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ
আলাইহিস সালাম উনার কতিপয় সম্মানিত লক্বব মুবারক

নাম মুবারক হযরত আলী আলাইহিস সালাম।  উপনাম আবূল হাসান ও আবূ তুরাব। পিতার নাম আবূ তালিব। মাতার নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ। বিশেষ উপাধি আসাদুল্লাহ, হায়দার, মুরতাজা। তিনি আব্দুল্লাহ নামে প্রসিদ্ধ। তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই। হাশিমী আল কুরাইশী বংশোদ্ভূত।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নুবুওওয়াত মুবারক লাভের দশ বছর পূর্বে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
একদা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম উনাদেরকে নামায পড়তে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি করছেন? উত্তরে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এটা মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত দ্বীন। উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা হযরত কুবরা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, আপনাকেও আমরা সেই দায়িত্ব দিচ্ছি। তখনই তিনি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করেন। পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে গ্রহণকালে উনার বয়স মুবারক দশ বছর ছিল। তিনি হলেন সর্বসম্মতিক্রমে বালকদের মধ্যে সর্বপ্রথম পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকে কবুলকারী। সুবহানাল্লাহ!
একদিকে তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচাতো ভাই। অপর দিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদরের দুলালী আন নূরুর রবিয়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আহাল আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত খিলাফত গ্রহণের পূর্বে তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার এবং হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিলাফত আমলে তিনি পরামর্শদাতা ছিলেন। হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতের পর হিজরী ৩৫ সনে খিলাফতের মসনদে সমাসীন হন। প্রায় চার বছর সাড়ে আট মাস যাবত এ দায়িত্ব মুবারক যথাযোগ্য মর্যাদা মুবারক উনার সাথে পালন করেন। সুবহানাল্লাহ!
হিজরী ৪০ সনের ১৬ই পবিত্র রমযান শরীফ জুমুয়াবার পবিত্র ফজর উনার নামাযে গমনকালে ইবনে মুলজিম নামক খারিজী ঘাতকের তলোয়ারের আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ১৭ই পবিত্র রমাদ্বান শরীফ ইয়াওমুস সাবত (শনিবার) শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
উনার জ্যেষ্ঠ পুত্র ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জানাযার নামায পড়ান। পবিত্র কুফার নাজফে আশরাফে জামে মসজিদ উনার পাশে উনার রওজা শরীফ স্থাপন করা হয়। গ্রহণযোগ্য মতে শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশকালে উনার বয়স মুবারক হয়েছিলো ৬৩ বছর। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “হযরত হারূন আলাইহিস্ সালাম তিনি যেমন ছিলেন হযরত মূসা কালিমুল্লাহ আলাইহিস্ সালাম উনার, তেমনি আপনি হচ্ছেন আমার প্রতিনিধি। তবে আমার পরে কোন নবী আলাইহিমুস সালাম নেই।”
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি পবিত্র ইলম মুবারক উনার নগরী আর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সেই নগরীর প্রবেশদ্বার।” তিনি ছিলেন, সম্মানিত কুরআনে হাফিয, শ্রেষ্ঠ মুফাস্সির এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী রাবী। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মর্যাদা-ফযীলত মুবারক সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে যত পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে, অন্য কোন হযরত ছাহাবায়ে ক্বিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে তা হয়নি। সুবহানাল্লাহ!
নিম্নে উনার অসংখ্য লক্বব মুবারক হতে সংক্ষিপ্তাকারে কতিপয় লক্বব মুবারক তুলে ধরা হলো-

১। صَاحِبُ التَّقْوٰى (ছাহিবুত্ তাক্বওয়া) তাক্বওয়ার  অধিকারী। ২। صَاحِبُ كَلِمَةِ التَّقْوٰى (ছাহিবু কালিমাতিত্ তাক্বওয়া) প্রকৃত  তাক্বওয়ার অধিকারী। ৩। صَاحِبُ الْاِيْـمَانِ (ছাহিবুল ঈমানি) পবিত্র ও সম্মানিত ঈমান উনার অধিকারী। ৪। كَارِهُ الْكُفْرِ (কারিহুল কুফ্রি) কুফরী অপছন্দকারী। ৫। كَارِهُ الْفُسُوْقِ (কারিহুল ফুসূক্বি) পাপকে অপছন্দকারী। ৬। كَارِهُ الْعِصْيَانِ (কারিহুল ইছ্ইয়ানি)  নাফরমানীকে ঘৃণাকারী। ৭। صَاحِبُ نِعْمَةِ اللهِ (ছাহিবু নি’মাতিল্লাহি) মহান আল্লাহ পাক উনার নিয়ামতপ্রাপ্ত। ৮। صَاحِبُ هِدَايَةٍ (ছাহিবু হিদাইয়াতিন) হিদায়াতের অধিকারী। ৯। اَلسَّابِقُ (আস্ সাবিকু) উম্মতের অগ্রগামী ব্যক্তি। ১০। اَلْاَوَّلُ   (আল্ আউয়ালু) পবিত্র ও সম্মানিত ঈমান গ্রহণে প্রথম বা উম্মতের প্রধান। ১১। اَلْاُمَّةُ الْوَ سَطُ (আল্ উম্মাতুল্ ওয়াসাতু) শ্রেষ্ঠতম উম্মত।
১২। اَلشَّا هِدُعَلَى النَّاسِ (আশ্ শাহিদু আলান্ নাসি) পূর্ববর্তী উম্মতের স্বাক্ষী স্বরূপ। ১৩। خَيْرُ اُمَّةٍ  (খইরু উম্মাতিন) শ্রেষ্ঠতর উম্মত। ১৪। اَلرَّا شِدُ  (র্আরাশিদু)  হিদায়াতপ্রাপ্ত। ১৫। اَلصَّادِقُ (আছ্ ছাদিকু) সত্যনিষ্ঠ। ১৬। اَلْاٰمِرُ بِالْمَعْرُوْفِ  (আল্ আমিরু বিল্ মা’রূফি) সৎ কাজের আদেশ দানকারী। ১৭। اَلْمُفْلِحُ (আল্ মুফ্লিহু)  সফলতা লাভকারী।
১৮। اَلنَّاهِىُ عَنِ الْمُنْكَرِ (আন্ নাহিউ আনিল মুনকারি) অন্যায় কাজে বাধা  প্রদানকারী। ১৯। رَضِىَ اللهُ عَنْهُ (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট। ২০। رَضِىَ عَنْهُ (রদিয়া আনহু)  তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি অনুগত। ২১। اَلنَّاسُ الْمُؤْمِنُ (আন্ নাসুল মু’মিনু) ঈমানদার ব্যক্তি। ২২। صَاحِبُ الْـحُسْنٰـى (ছাহিবুল হুসনা) উত্তম পরিণতির অধিকারী। ২৩। اَلْمُبْعَدُ (আল্ মুব্আদু) জাহান্নাম থেকে দূরে অবস্থানকারী। ২৪।اَلْمُسْلِمُ  (আল্ মুসলিমু)  মুসলমান। ২৫। اَلْمُؤْمِنُ  (আল্ মু’মিনু) ঈমানদার। ২৬। اَلْقَانِتُ (আল্ ক্বানিতু) অনুগত। ২৭। اَلصَّا بِرُ (আছ্ ছাবিরু)  ধর্যশীল। ২৮। اَلْـخَا شِعُ (আল্ খাশিঊ) বিনয়ী। ২৯। اَلْمُتَصَدِّقُ (আল্ মুতাছদ্দিকু) দানকারী। ৩০। اَلصَّآئِمُ (আছ্ ছায়িমু)  রোযাদার। ৩১। اَلْـحَافِظُ (আল্ হাফিযু) ইজ্জত-আবরু হিফাযতকারী। ৩২। اَلذَّاكِرُ (আয্ যাকিরু) যিকিরকারী। ৩৩। صَاحِبُ مَغْفِرَة  (ছাহিবু মাগফিরাতিন) ক্ষমাপ্রাপ্ত। ৩৪। اَهْلُ الذِّكْرِ (আহ্লুয্ যিক্রি) আহলে যিকির বা আল্লাহওয়ালা। ৩৫। صَاحِبُ اَجْرٍ عَظِيْمٍ (ছাহিবু আজরিন আযীমিন) মহান পুরস্কারের অধিকারী। ৩৬। اُولِـى الْاَمْرِ (উলিল আমরি) আদেশ দানকারী।
৩৭। اُولُو الْاَلْبَابِ (উলুল আলবাবি)  বিচক্ষণ বা জ্ঞানী। ৩৮। اَلشَّاكِرُ (আশ্ শাকিরু) কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী। ৩৯। وَارِثُ النَّبِـىِّ (ওয়ারিছুন্ নাবিয়্যি) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী। ৪০। نَائِبُ رَسُوْلِ اللهِ (নায়িবু রসূলিল্লাহি) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার স্থলাভিষিক্ত। ৪১। اَلَّذِ يْنَ مَعَه (আল্লাযীনা মায়াহু) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গী। ৪২। اَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ (আশিদ্দাউ আলাল কুফ্ফারি) কাফিরদের প্রতি কঠোর। ৪৩। رُحَـمَآءُ بَيْنَهُمْ (রুহামাউ বাইনাহুম) নিজেদের মাঝে সহানুভূতিশীল। ৪৪। صَاحِبُ الْفَضْلِ (ছাহিবুল ফাদ্ব্লি)  কল্যাণের অধিকারী। ৪৫। صَاحِبُ الرِّضْوَانِ  (ছাহির্বু  রিদ্ব্ওয়ানি)  সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত। ৪৬। اَلسَّاجِدُ (আস্ সাজিদু)  সিজদাকারী। ৪৭। اَلرَّاكِعُ (র্আ রাকিউ)  রুকুকারী। ৪৮।  اَبْهَا اُمَّةِ النَّبِـىِّ (আবহা উম্মাতিন্ নাবিয়্যি)  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের মধ্যে অত্যধিক মর্যাদা মুবারক সম্পন্ন ব্যক্তি।
৪৯। اَلْقَآئِمُ (আল্ ক্বায়িমু)  ক্বিয়ামকারী। ৫০। طَيِّبُ الْاِسْلَامِ (তইয়্যিবুল ইসলামি) পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সেরা ব্যক্তি। ৫১। اَوْسَمُ اُمَّةِ النَّبِـىِّ (আওসামু উম্মাতিন্ নাবিয়্যি) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের প্রতীক। ৫২। اَلَبُّ اُمَّةِ النَّبِـىِّ (আলাব্বু উম্মাতিন্ নাবিয়্যি) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তিত্ব। ৫৩। اَسَمُّ اُمَّةِ النَّبِـىِّ (আসাম্মু উম্মাতিন্ নাবিয়্যি) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের নিদর্শন। ৫৪। اَقَضُّ الْاُمَّةِ (আক্বাদ্দুল উম্মাতি)  উম্মতের শ্রেষ্ঠ শাসক। ৫৫। اَبُوْ تُرَابٍ  (আবূ তুরাবিন)  মাটির জনক (উপনাম)। ৫৬।  شَيْخُ الشُّيُوْخِ  (শায়খুশ্ শুয়ূখি) পথ প্রদর্শক বা ক্বওমের প্রধান ব্যক্তি। ৫৭। خَيْرُ اُمَّةِ النَّبِـىِّ (খইরু উম্মাতিন্ নাবিয়্যি) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের শ্রেষ্ঠতম ব্যক্তি। ৫৮। سَيِّدُ الْعَرَبِ (সাইয়্যিদুল আরাবি) আরববাসীদের সাইয়্যিদ বা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। ৫৯। مَوْلَا اللهِ (মাওলাল্লাহি) মহান আল্লাহ পাক উনার মাওলা বা বন্ধু। ৬০। بَابُ مَدِ يْنَةِ الْعِلْمِ (বাবু মাদীনাতিল ইলমি) ইলমি শহর উনার দরজা বা প্রবেশপথ। ৬১। اَمِيْنٌ فِـىْ اَهْلِ الْاَرْضِ (আমীনুন্ ফী আহলিল আরদ্বি) যমীনবাসীদের মধ্যে বিশ্বস্ত ব্যক্তি।
৬২। بَابُ الْـحِكْمَةِ  (বাবুল হিকমাতি)  হিকমত বা জ্ঞানের দরজা।
৬৩। اَمِيْنٌ فِـىْ اَهْلِ السَّمَآءِ (আমীনুন্ ফী আহ্লিস্ সামায়ি) আসমানবাসীদের নিকট বিশ্বস্ত ব্যক্তি। ৬৪। اَلْهَادِىُ (আল্ হাদিউ)  সঠিক পথপ্রদর্শক। ৬৫। اَلْمَهْدِىُ (আল্ মাহদিউ) সঠিক পথের অনুসারী। ৬৬। اَلشَّهِيْدُ (আশ্ শাহীদু) শহীদ। ৬৭। خَيْرُ صَحْبٍ (খইরু ছহ্বিন) শ্রেষ্ঠতম ছাহাবী। ৬৮। اَزْيَدُ شَرْفًا (আযইয়াদু শারাফান) অত্যধিক মর্যাদাবান। ৬৯। وَلِىُّ كُلِّ مُؤْمِنٍ (ওয়ালিয়্যু কুল্লি মু’মিনিন) প্রত্যেক মু’মিনের বন্ধু বা অভিভাবক। ৭০। سَيِّدُ الْقَوْمِ (সাইয়্যিদুল ক্বওমি) ক্বওমের সাইয়্যিদ বা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। ৭১। مُحِبُّ الْمَشْهُوْدِ (মুহিব্বুল মাশহূদি) কিয়ামত দিবসের প্রেমিক। ৭২। مَحْبُوْبُ الْمَعْبُوْدِ (মাহবূবুল মা’বূদি) মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয়। ৭৩। بَابُ مَدِ يْنَةِ الْعِلْمِ وَالْعُلُوْمِ (বাবু মাদীনাতিল ইলমি ওয়াল উলূমি) জ্ঞান-বিজ্ঞানের শহরের দরজা। ৭৪। رَأْسُ الْمُخَاطِبَاتِ (রা’সুল মুখাত্বিবাতি)  বক্তাগণের প্রধান। ৭৫। مُسْتَنًبِطُ الْاِ شَارَاتِ (মুস্তাম্বিতুল ইশারাতি) সূত্র আবিষ্কারক।
৭৬। رَايَةُ الْمُهْتَدِيْنَ (রাইয়াতুল মুহ্তাদীনা) হিদায়েতপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের ঝা-া স্বরূপ। ৭৭।  اَقْدَمُ الْعَادِلِيْنَ اِجَا بَةً وَاِيْـمَانًا(আক্বদামুল আদিলীনা ইজাবাতান ওয়া ঈমানান) ঈমানের স্বীকৃতি দানের ক্ষেত্রে ন্যায় পরায়ণগণের অগ্রবর্তী। ৭৮। اَقْوَمُ الْعَادِلِيْنَ قَضِيَّةً وَاِيْقَانًا (আক্বওয়ামুল আদিলীনা ক্বদ্বিয়্যাতান ওয়া ঈক্বানান)                        সঠিক ফায়ছালা প্রদানে দৃঢ় ন্যায় বিচারক। ৭৯। اَعْظَمُ الْعَادِلِيْنَ حِلْمًا (আ’যামুল আদিলীনা হিলমান) ধৈর্যশীল শ্রেষ্ঠ সুবিচারক। ৮০। اَوْفَرُ الْعَادِلِيْنَ عِلْمًا (আওফারুল আদিলীনা ইলমান) ন্যায় বিচারকগণের মধ্যে পরিপূর্ণ পবিত্র ইলম মুবারক উনার অধিকারী। ৮১। قُدْوَةُ الْمُتَّقِيْنَ (কুদওয়াতুল মুত্তাক্বীনা) পরহেযগারগণের আদর্শের প্রতীক। ৮২। زِيْنَةُ الْعَارِفِيْنَ (যীনাতুল আরিফীনা) মহান আল্লাহ পাক উনার পরিচয় লাভকারী বান্দাগণের শোভা। ৮৩। اَلْمُنَبِّئُ عَنْ حَقَائِقِ التَّوْ حِيْدِ (আল্ মুনাব্বিউ আন হাক্বায়িক্বিত্ তাওহীদি) তাওহীদ বা একত্ববাদের প্রকৃত খবর দানকারী। ৮৪। اَلْمُشِيْرُ اِلٰـى لَوَامِعِ عِلْمِ التَّفْرِيْدِ (আল্ মুশীরু ইলা লাওয়ামিয়ি ইলমিত্ তাফরীদি) পবিত্র ইলম মুবারক উনার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার দিক নির্দেশ প্রদানকারী। ৮৫। نُوْرُ الْمُطِيْعِيْنَ (নূরুল মুত্বীয়ীনা) নেক কর্মশীলগণের পথ প্রদর্শক।
৮৬। وَلِـىُّ الْمُتَّقِيْنَ (ওয়ালিয়্যুল মুত্তাক্বীনা) খাদাভীরুগণের বন্ধু।
৮৭। اِمَامُ الْعَادِلِيْنَ (ইমামুল আদিলীনা) ন্যায় বিচারকগণের ইমাম।
৮৮। وَاضِعُ الْقَا سِطِيْنَ (ওয়াদ্বিউল ক্বাসিত্বীনা) ন্যায় বা ইনসাফকারীগণের  প্রতিষ্ঠাতা।
৮৯। صَاحِبُ الْقَلْبِ الْعُقُولِ (ছাহিবুল ক্বলবিল উকূলি) প্রজ্ঞা সম্পন্নœ আত্মার অধিকারী। ৯০। صَاحِبُ الْاُذُنِ الْوَاعِىِّ (ছাহিবুল উযুনিল ওয়ায়িয়্যি) মনোযোগী  শ্রবণকারী। ৯১। صَاحِبُ الْعَهْدِ الْوَافِـىِّ (ছাহিবুল আহ্দিল ওয়াফিয়্যি) ওয়াদা পূরণকারী। ৯২। فُقَآءُ عُيُوْنِ الْفَتَنِ (ফুক্বাউ উয়ূনিল ফিতানি) ফিৎনা-ফাসাদ, ষড়যন্ত্র নিশ্চিহ্নকারী। ৯৩।وَاقِىٌ مِّنْ فُنُوْنِ الْمِحَنِ  (ওয়াক্বিউন মিন ফুনূনিল মিহানি) বিভিন্ন পরীক্ষা বা কষ্ট থেকে পরিত্রাণ লাভকারী। ৯৪। دَافِعُ النَّاكِثِيْنَ (দাফিউন নাকিছীনা) সীমালঙ্ঘনকারীদের প্রতিহতকারী।
৯৫। صَاحِبُ اللِّسَانِ السُّؤُوْلِ (ছাহিবুল লিসানিস সুয়ূলি) প্রার্থনাকারী যবানের অধিকারী।
৯৬। دَامِغُ الْمَارِقِيْنَ (দামিগুল মারিক্বীনা) বাদ্যযন্ত্র পরিচালকদের দমনকারী। ৯৭। سَيِّدُ الْمُسْلِمِيْنَ (সাইয়্যিদুল মুসলীমিনা) মুসলমানগণের প্রধান। ৯৮। اَلْمَمْسُوْسُ فِـىْ ذَاتِ اللهِ (আস্ মাম্সূসু ফী যাতিল্লাহি) মহান আল্লাহ পাক উনার অস্তিত্বে বিলীন। ৯৯। حَامِلُ رَايَةِ النَّبِـىِّ (হামিলু রাইয়াতিন নাবিয়্যি) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পতাকাবাহী। ১০০।   اَهْلُ بَيْتِ النَّبِـىِّ (আহ্লু বাইতিন নাবিয়্যি)  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের তথা পরিবারের সদস্য। ১০১। اَسَدُ اللهِ (আসাদুল্লাহি) মহান আল্লাহ পাক উনার সিংহ। ১০২। اَمِيْرُالْمُؤْمِنِيْنَ (আমীরুল মু’মিনীনা) মু’মিনগণের আমীর বা শাসনকর্তা। ১০৩। خَلِيْفَةُ الْمُسْلِمِيْنَ (খলীফাতুল মুসলিমীনা) মুসলমান উনাদের খলীফা বা প্রতিনিধি। ১০৪। زَوْجُ فَاطِمَةَ عليها السلام (যাওজু ফাতিমাতা আলাইহাস সালাম) সাইয়্যিদাতুন্ নিসা আন্নূরুর রাবিআহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত আহাল আলাইহিস সালাম। ১০৫। ال رسول الله (আলু রসূলিল্লাহি) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারভুক্ত। ১০৬।   اِبْنُ عَمِّ النَّبِـىِّ (ইবনু আম্মিন্ নাবিয়্যি) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চাচার ছেলে বা চাচাতো ভাই। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুল আলক্বাব ৩য় খ-, ৬৮-৭৭ পৃষ্ঠা)
মূলত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি উল্লিখিত লক্বব মুবারক ছাড়াও আরো বহু লক্বব মুবারক উনার অধিকারী।
প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ মহিলা সকলের জন্য ফরয হচ্ছে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উল্লেখিত গুণে গুণান্বিত হওয়া অর্থাৎ উনাকে স্ক্ষূাতিসূক্ষ্ম ও পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসরণ অনুকরণ করা।

********************************************************
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার জন্য সম্মানিত বিশেষ দো‘আ মুবারক

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَن حَضْرَتْ بُرَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ فَلَمَّا كَانَ لَيْلَةُ الْبِنَاءِ قَالَ يَا عَلِيُّ لاَ تُحْدِثْ شَيْئًا حَتَّى تَلْقَانِي فَدَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِـمَاءٍ فَتَوَضَّأَ مِنْهُ ثُـمَّ أَفْرَغَهُ عَلَى عَلِيٍّ فَقَالَ اللَّهُمَّ بَارِكْ فِيهِمَا وَبَارِكْ عَلَيْهِمَا وَبَارِكْ لَهُمَا فِي شِبْلِهِمَا. وفى رواية وَبَارِكْ فِي نَسْلِهِمَا.
অর্থ: “হযরত বুরায়দাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রাবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদের ‘সম্মানিত লাইলাতুল বিনা’ শরীফ’ (অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত নিসবতে আ’যীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সম্মানিত প্রথম রাত্রি মুবারক-এ) সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে উদ্দেশ্য করে ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনি আমার সম্মানিত আদেশ মুবারক ব্যতীত কোনো কাজ করবেন না। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পানি মুবারক তলব করেন। তারপর তা দিয়ে সম্মানিত ওযু মুবারক করেন। অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার উপর পানি ঢেলে দেন। তারপর সম্মানিত দু’য়া মুবারক করেন,
اللَّهُمَّ بَارِكْ فِيهِمَا وَبَارِكْ عَلَيْهِمَا وَبَارِكْ لَهُمَا فِي شِبْلِهِمَا
আয় বারে ইলাহী! আপনি উনাদের মধ্যে বরকত দান করুন এবং উনাদের উভয়ের জন্য উনাদের মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমুস সালম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে বরকত দান করুন। সুবহানাল্লাহ!
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
وَبَارِكْ فِي نَسْلِهِمَا
অর্থঃ “উনাদের উভয়ের জন্য উনাদের মহাসম্মানিত বংশধর আলাইহিমুস সালাম ও আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে বরকত দান করুন।”(মুসনাদুল বাযযার-১০/৩৩৯, আস সুনানুল কুবরা-৯/১০৬, আল মু’জামুল কাবীর-১/৪৯৫, মুসনাদুর রূয়ানী-১/১৪, আত ত্ববাক্বাতুল কুবরা-৮/২১, আস সীরতুল হালবিয়্যাহ-২/৪৭৩, যাখাইরুল  ‘উক্ববা-১/৩৩, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ-১১/৪৩ ইত্যাদি।)

***************************************

সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনাদের সম্পর্কে সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن على كرم الله وجهه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم أتانى ملك فقال يا محمد إن الله تعالى يقول لك إنى قد امرت شجرة طوبى أن تحمل الدر والياقوت والمرجان وان تنثره على من قضى عقد نكاح فاطمة من الملائكة والحور العين وقد سر بذلك سائر أهل السموات وانه سيولد بينهما ولدان سيدان في الدينا وسيسودان على كهول أهل الجنة وشبابها وقد تزين أهل الجنة لذلك فاقرر عينا يا محمد فانك سيد الاولين والآخرين صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমার নিকট একজন সম্মানিত ফেরেশতা আলাইহিস সালাম তিনি এসেছেন। তারপর তিনি আমাকে বলেছেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিশ্চয়ই যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে বলেছেন যে, নিশ্চয়ই আমি (মহান আল্লাহ পাক) সম্মানিত তূবা বৃক্ষকে সম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিয়েছি মুক্তা, ইয়াকূত ও মারজান বহন করার জন্য এবং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের ও চিত্তাকর্ষী নয়ন বিশিষ্টা হুর উনাদের মধ্য থেকে যাঁরা সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রাবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার আযীমুশ শান সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন উনাদের উপর ছিটানোর জন্য। সুবহানাল্লাহ! আর এই কারণে সমস্ত আসমানবাসী খুশি মুবারক প্রকাশ করেছে। সুবহানাল্লাহ! আর অতিশীঘ্রই (সাইয়্যিদাতুনা আন নূরুর রাবি‘য়াহ হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ) উনাদের উভয়ের মাধ্যমে উনাদের দুই মহাসম্মানিত আওলাদ আলাইহিমাস সালাম উনারা মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করবেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা জগতবাসী সকলের সাইয়্যিদ। সুবহানাল্লাহ! আর উনারা দু’জন সম্মানিত জান্নাতবাসী সকল পৌঢ় এবং যুবক উনাদের প্রত্যেকের সাইয়্যিদ হবেন। সুবহানাল্লাহ! এই কারণে সম্মানিত জান্নাতবাসীগণ সুসজ্জিত হয়েছেন। ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি সম্মানিত চক্ষু মুবারক শিতল করুন। কেননা আপনি হচ্ছেন ‘সাইয়্যিদুল আউওয়ালীন ওয়াল আখিরীন’ তথা শুরু-শেষসহ সকলের সাইয়্যিদ।” সুবহানাল্লাহ! (যাখায়েরুল ‘উক্ববাহ শরীফ ১/৩২)

************************************************

আসাদুল্লাহিল গালিব, বাবুল ইলিম ওয়াল হিকাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু নছীহতপূর্ণ ও শিক্ষণীয় ঘটনা

(১)
হঠাৎ করে একদিন এক অশ্বারোহীর অশ্বের পদাঘাতে মরুর বালু উড়ছিল। সে বাতাসের বেগে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে ছুটে আসছিল, আর চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলো, হে মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল, কুরাইশরা চুক্তি ভঙ্গ করেছে।
কুরাইশদের পক্ষ থেকে চুক্তি ভঙ্গ করার পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ অভিযানের প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। তখন হযরত হাতিব বিন আবু বালতা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কুরাইশদেরকে পবিত্র মক্কা শরীফ আক্রমণের সংবাদ দিয়ে একটি চিঠি লিখলেন। তার সে চিঠি এক মহিলার দ্বারা মক্কাবাসীদের নিকট পাঠালেন। তিনি সে মহিলাকে কুরাইশদের কাছে সেই চিঠিটি পৌঁছিয়ে দেয়ার জন্যে কিছু সম্পদের বিনিময়ে রাজি করালেন। মহিলাটি চিঠিটি তার মাথার চুলের ভেতর লুকিয়ে নিলো। এরপর সে দ্রুত পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে পবিত্র মক্কা শরীফ উনার দিকে রওয়ানা দিলো।
মহিলাটি পবিত্র মক্কা শরীফ পৌঁছার আগেই মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র ওহী মুবারক অনুযায়ী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাটির কাছ থেকে চিঠি উদ্ধার করে নিয়ে আসতে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে এবং হযরত মিক্বদাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদেরকে প্রেরণ করলেন। কোনো কোনো বর্ণনায় হযরত মিক্বদাদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরিবর্তে হযরত যুবাইর বিন আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক এসেছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাদেরকে বললেন, আপনারা দুইজন অমুক জায়গায় এক মহিলাকে পাবেন, যে মহিলা হযরত হাতিব বিন আবু বালতা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার লেখা চিঠি নিয়ে মক্কাবাসীর কাছে যাচ্ছে। যে চিঠিতে আমরা কুরাইশদের বিরুদ্ধে যা করছি সে সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে।
তখন ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সঙ্গীকে নিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলতে লাগলেন। যেতে যেতে উনারা মহিলাটিকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বলে দেয়া জায়গায় পেলেন। উনারা মহিলাটিকে বললেন, তোমার কাছে একটি চিঠি আছে। মহিলাটি ভীত হয়ে বললো, না, আমার কাছে কোনো চিঠি নেই।
তখন উনারা দুইজন মহিলাটির সাথে থাকা আসবাবপত্র সবকিছু তল্লাশি করেও কোনো কিছু পেলেন না। কিন্তু পরক্ষণেই ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পূর্ণ ইয়াক্বীনের সাথে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর কখনো ভুল ওহী মুবারক নাযিল হয় না, তিনি আমাদেরকে কখনো সত্য ব্যতীত বলেন না। মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! হয় তুমি চিঠি বের করো, না হয় আমরা তোমাকে পরিপূর্ণভাবে তল্লাশি করবো। যখন মহিলা উনাদের দৃঢ়তা দেখলো, তখন সে বললো, আপনারা আমার থেকে অন্যদিকে ফিরে দাঁড়ান। তখন উনারা অন্য দিকে ফিরে দাড়ালেন। এরপর সে তার চুলের গোছা থেকে চিঠিটি বের করে দিলো।
চিঠি বের করার সাথে সাথে খুশিতে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চেহারা মুবারক উজ্জ্বল হয়ে গেলো। তিনি চিঠিটা নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট ছুটে এলেন। সুবহানাল্লাহ! (তারিখুত ত্ববারী ৩য় খ-, ৪৮-৪৯ পৃষ্ঠা)
(২)
এক লোক খুব ভয়ের সাথে দৌড়ে এসে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বলতে লাগলেন, আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান। তিনি আশ্চর্য্য হয়ে বললেন, কার থেকে বাঁচাবো?
ঐ ব্যক্তি ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে ইশারা করে বললো, উনার থেকে, যিনি আপনার সাথে বসে আছেন।
একথা শুনার পর হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত পিতা আপনি আপনার বাঁদীর সাথে গিয়ে বসুন।
তখন হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার বাঁদীর সাথে গিয়ে বসলেন। তারপর উনাদের মাঝে ফায়ছালা হলো। ফায়ছালার পর হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আবার হযরত ফারুক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার কাছে গিয়ে বসলেন। হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি উনার চেহারা মুবারকের দিকে লক্ষ্য করে উনার মাঝে অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করলেন।
তখন তিনি উনাকে বললেন, হে হযরত ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পিতা! আপনার চেহারা মুবারকের রং বদলে যেতে দেখছি, যা হয়েছে তা কি আপনি অপছন্দ করেছেন?
তিনি বললেন, জি হ্যাঁ।
খলীফাতুছ ছানী হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি কোনটি অপছন্দ করেছেন?
তখন ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি কেন আমাকে সম্মানের সাথে উপনামে ডেকেছেন, আপনি আমাকে এভাবে বলতে পারেননি যে, আপনার বাঁদীর সাথে বসুন।
উনার কথা মুবারক শুনে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার চেহারা মুবারক খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেলো। তিনি উনার কাঁধ মুবারকে কাঁধ মুবারক মিলালেন এবং চুমু খেলেন। তারপর বললেন, আপনাদের জন্য আমার পিতা কুরবান হোক। আপনাদের দ্বারাই মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে হিদায়েত দান করেছেন আর আপনাদের দ্বারাই আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে এনেছেন। সুবহানাল্লাহ! (তারায়িফু ওয়া নাওয়াদিরু মিন উয়ূনিত তুরাছ-১ম খ-, ১৫ পৃষ্ঠা)
(৩)
হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে গচ্ছিত থাকা আমানত অর্থাৎ সম্পদ মালিকদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ তিন দিন অবস্থান মুবারক করলেন। তিনদিন পর তিনি রাতে পবিত্র হিজরত করার জন্যে উনার লাঠি মুবারক ও পুরাতন ধনুক নিয়ে রওয়ানা দিলেন।
এরপর হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার দিকে যাত্রা শুরু করলেন। তিনি রাতে ভ্রমণ করতেন আর দিনে বিশ্রামে থাকতেন। দীর্ঘ সফরের কারণে উনার পা মুবারক ফুলে উঠলো।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একথা জানতে পেরে বললেন, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমার কাছে ডেকে আনুন।
কেউ একজন উনাকে ডেকে আনতে গেলেন। কিন্তু দীর্ঘ সফরের কারণে উনার পা মুবারক ফুলে গিয়েছিল তাই আসতে কষ্ট হচ্ছিল। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজেই উনাকে দেখার জন্য তাশরীফ মুবারক নিলেন। তিনি এসে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শুয়ে থাকতে দেখলেন। উনার এ অবস্থা দেখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চক্ষু মুবারক দিয়ে নূরুল মুহব্বত মুবারক ঝরতে থাকলো। তখন তিনি খুব মুহব্বতের সাথে উনার দিকে ঝুঁকে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পা মুবারক এ স্বীয় পবিত্র হাত মুবারক বুলিয়ে দিলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাত মুবারক উনার বরকতে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পা মুবারক পরিপুর্ণ সুস্থ হয়ে গেল। এমনকি এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত উনার পায়ে কোনো ধরনের অসুখ হয়নি। সুবহানাল্লাহ! (আল কামিলু লি ইবনিল আছীর ২য় খ-, ৩-৭ পৃষ্ঠা)
(৪)
তরবারির ঝনঝন আওয়াজে, তীর বর্শার সাজে সজ্জিত হয়ে অশ্বের উপর আরোহন করে সৈন্যদের সম্মুখে গিয়ে মুসলমানদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে আমর বিন আব্দ বললো, তোমাদের মধ্যে কোনো মল্লযোদ্ধা আছে কি?
তার আওয়াজে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কেউ সাড়া দিলেন না। উনাদের মাঝে নীরবতা বিরাজ করছিল। আমরের ধারণা, তার সাথে কে এমন আছে যে মল্লযুদ্ধ করতে যাবে। তার সামনে যে মল্লযুদ্ধ করতে যাবে সে নির্ঘাত মৃত্যুমুখে পতিত হবে।
হঠাৎ নীরবতা ভেঙ্গে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি এর মোকাবিলা করবো। উনার মাঝে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত আরো বৃদ্ধি পেলো। তিনি আমরের ডাকে ছুটে যেতে লাগলেন।
কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার দিকে মুহব্বতের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, আপনি বসুন, সে কিন্তু আমর। (অর্থাৎ সে সাধারণ যোদ্ধা নয়)
এরপর আমর আবার চিৎকার দিয়ে বললো, আমার মোকাবিলা করার মতো কী কোনো লোক নেই। আপনাদের সেই জান্নাত কোথায়? যা আপনারা ধারণা করেন যে, আপনাদের কেউ শহীদ হলে তিনি জান্নাতে যাবেন। আপনাদের কেউ কি আমার মোকাবিলায় আসবেন না? আপনারা কি জান্নাত চান না?
তখন আবার হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উঠে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এর মোকাবিলা আমি করবো।
তখন আবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আপনি বসুন, সে তো আমর (অর্থাৎ সে সাধারণ যোদ্ধা নয়)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশনা মুতাবিক হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বসে গেলেন। ওই দিকে আমর কিন্তু বসে নেই।
সে আরো বেশি অহঙ্কারের সাথে হাঁক ডাক দিতে লাগলো। আর কবিতা আবৃত্তি করতে লাগলো-
ولَقَدْ بُحِحْتُ من النداء ...لجمعكم هَلْ مِنْ مُبارزْ
وَقفْتُ إذ جَبنَ المُشجَّعُ ... مَوقفَ القرن المناجِزْ
ولذالك انى لم ازل ... متسرعا قبل الهزاهز
ان الشجاعة فى الفتى ... والجود من الغرائز
আমি তাদের সাড়া পাইনি।
যখন বলেছি কোনো যোদ্ধা আছে কী?
আমি সেখানে অবস্থান করেছি
যেখানে বীর দুর্বল হয়ে যায়।
আমি তো মৃত্যুর পূর্বে গলার
গড় গড় শব্দ হওয়ার আগে যাব না।
বীরত্ব তো যুবকদের মাঝে
দানশীলতা তো স্বভাবগতই।

তার এমন কবিতা কান ছেদ করে অন্তরে আঘাত করছিল। হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মনে হচ্ছিল এ ছন্দগুলো উনার অন্তর মুবারকে তীরের মতো আঘাত করছিলো। তিনি বসে থাকতে পারছিলেন না। উনার ধৈর্যের বাঁধ মানছিলো না। তিনি আবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে ছুটে গিয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই নাদান ব্যক্তির মোকাবিলা আমি করবো।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি বসুন, সে তো আমর (অর্থাৎ সে সাধারণ যোদ্ধা নয়)
ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের উপর পরিপূর্ণ অটল, অবিচল থেকে বললেন, হোক না সে আমর।
একথা বলে তিনি দৃঢ়তার সাথে সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন আর আবৃত্তি করতে লাগলেন-
لا تعجلن فقد اتاك ... مجيب صوتك غير عاجز
فى نية و بصيرة ... والصدق منجى كل فائز
من ضربة نجلا ...  يبقى ذكرها عند الهزاهز

তুমি তাড়াহুড়া করো না
তোমার ডাকে সাড়াদানকারী আসছে
নিয়ত ও স্ক্ষ্মূদৃষ্টির সাথে
সত্যই সব মুক্তিকামীকে রক্ষা করে
এক আঘাতে যার স্মরণ মৃত্যুর পূর্বে
গলার গড়গড় শব্দ চলার সময়েও থাকবে।
হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বীরের মতো আমরের দিকে ছুটে গেলেন। তিনি যখন তার কাছে পৌঁছলেন তখন সে অবাক চোখে তাকিয়ে বললো, হে যুবক আপনি কে?
তিনি বললেন, আবু তালিবের ছেলে হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সে বললো, ভাতিজা আপনার থেকে বড় কেউ নেই। কেননা আমি আপনার রক্ত প্রবাহিত করতে অছন্দ করছি।
তিনি বললেন, তুমি না মহান আল্লাহ পাক উনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছ যে, যদি কুরাইশদের কোনো লোক তোমাকে বন্ধুত্বের দিকে আহ্বান করে তবে তুমি তা গ্রহণ করবে। সে বললো, হ্যাঁ।
তিনি বললেন, তাহলে শুনো, আমি তোমাকে মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ও সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাদের দিকে আহ্বান করছি।
তখন সে হেসে বললো, এসব আমার কোনো প্রয়োজন নেই। নাউযুবিল্লাহ!
 তিনি বললেন, তাহলে আমি তোমাকে লড়াই করতে আহ্বান করছি।
সে বললো, কেন ভাতিজা? লাতের ক্বসম! আমি আপনার রক্ত মুবারক প্রবাহিত করতে পছন্দ করি না।
তিনি বললেন, কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! আমি তোমার রক্ত প্রবাহিত করতে পছন্দ করি।
উনার এমন কথাতে আমরের খুব রাগ হলো। সে তার তরবারি ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে হাঁকাতে লাগলো। উভয়ের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার ঢাল মুবারক নিয়ে আমরের সামনের দিকে এগিয়ে আসেন। আমর এমন আঘাত করলো যে, উনার ঢাল মুবারক চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেলো।
অন্যদিকে ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমরের ঘাড়ের শাহ রগে আঘাত করলেন। এতে আমর মাটিতে পড়ে গেল। তার রক্তে মাটি লাল হয়ে গেল।
এ কাফির নিহত হওয়ার পর মুসলমানদের মাঝে তাকবীর ধ্বনি শুরু হয়ে গেলো।
উনারা বলতে লাগলেন, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ব্যতীত কোনো যুবক নেই। সুবহানাল্লাহ!
তিনি ফিরে আসলে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি কী তার ঢাল নিয়ে আসতে পারেননি। কেননা আরবে তার থেকে উত্তম ঢাল কেউ ব্যবহার করতো না।
হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিু ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আমার চাচাতো ভাইয়েরা লজ্জা পাবে তাই আমি তার ঢাল নিয়ে আসতে পারিনি। সুবহানাল্লাহ! (সীরাতু ইবনে হিশাম ৩য় খ- ২৩৭ পৃষ্ঠা)

****************************************************************************
সর্বপ্রথম যাঁরা জান্নাতে প্রবেশ করবেন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি হচ্ছেন উনাদের মধ্যে অন্যতম

সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيٍّ عَلَيْهِ السَّلَامُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ্রأَنَا وَحَضْرَتْ فَاطِمَةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ وَحَضْرَتْ حَسَنٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَحَضْرَتْ حُسَيْنٌ عَلَيْهِ السَّلَامُ مُجْتَمِعُونَ وَمَنْ أَحَبَّنَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ، نَأْكُلُ وَنَشْرَبُ حَتَّى يُفَرَّقَ بَيْنَ الْعِبَادِগ্ধ .
অর্থ: “ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারীদের মধ্যে আমি (হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম), উম্মু আবীহা সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়িদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি, ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি এবং ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা। তখন আমি বললাম, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদেরকে যাঁরা মুহব্বত করবে, তাঁরা কোথায় থাকবে? তিনি বললেন, আপনাদের পিছনে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!
(মুসতাদরাকে হাকিম শরীফ, কানযুল উম্মাল শরীফ, তারীখে দামেশক, আস সাওয়াইকুল মুহরিক্বাহ শরীফ, মুহিব্বে তাবারী শরীফ ইত্যাদি)
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
عَنْ حَضْرَتْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَالَ: شَكَوْتُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَسَدَ النَّاسِ إِيَّايَ، فَقَالَ: " أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ رَابِعَ أَرْبَعَةٍ: أَوَّلُ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ أَنَا وَأَنْتَ وَالْحَسَنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَالْحُسَيْنُ عَلَيْهِ السَّلَامُ.
 অর্থ: “ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললাম যে, লোকেরা আমার ব্যাপারে হাসাদ বা হিংসা করে। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন- আপনি কি এ ব্যাপারে সন্তুষ্ট নন যে, জান্নাতে সর্বপ্রথম প্রবেশকারী চারজনের মধ্যে আপনি হবেন চতুর্থ জন? আর সেই চারজন হচ্ছি, আমি, আপনি এবং ইমামুছ ছানী মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এবং ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অর্থাৎ আমরা।” সুবহানাল্লাহ! (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ত্বাবারণী শরীফ, মাজমাউয যাওয়াইদ শরীফ, মুহিব্বে তাবারী শরীফ, আছ ছাওয়াইকুল মুহরিক্বাহ শরীফ  ইত্যাদি)
***********************************************************
চতুর্থ খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বিশেষ খুছুছিয়াত তথা বৈশিষ্ট্য এবং গুণাবলী মুবারক

শেরে খোদা, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার খুছুছিয়াত ও গুণাবলী মুবারক বহুবিধ। প্রথমত তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ঘনিষ্ঠতম আত্মীয়, উনার জামাতা তথা উনার লখতে জিগার সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মু আবীহা, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়িদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত জাওযুজুম মুর্কারাম আলাইহিস সালাম এবং তিনি হচ্ছেন হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের মধ্যে অন্যতম একজন বিশেষ ব্যক্তিত্ব মুবারক ও ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ!
উপরন্তু তিনি সম্মানিত বংশ মর্যাদায়ও পিতা উনার দিক থেকে ছিলেন আবূ ত্বালিব ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম উনার পুত্র। অপর দিক থেকে উনার মাতা ছিলেন হযরত আসাদ ইবনে হিশাম আলাইহিস সালাম উনার কন্যা। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার মুহতারামা আম্মাজান উনার নাম মুবারক ছিলো সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ আলাইহাস সালাম। উনার মুবারক শানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমার মহাসম্মানিতা আম্মাজান আলাইহাস সালাম উনার পর সাইয়্যিদাতুনা হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ আলাইহাস সালাম তিনিই ছিলেন আমার মা। সুবহানাল্লাহ! আবূ তালিব তিনি ব্যবসা করতেন। ফলে উনার এখানে দাওয়াতী মেহমান থাকতো। আমরা সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করতাম। উনার আহলিয়া হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ আলাইহাস সালাম উনার মুবারক আদত (অভ্যাস) ছিলো এই যে, মেহমানদের খানা থেকে কিছু খানা রেখে দিতেন যাতে আমি পরে খেতে পারি।” (মুস্তাদরাকে হাকিম, ইযালাতুল খফা)
সাইয়্যিদুনা শেরে খোদা ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আরেকটি বিশেষ খুছূছিয়াত তথা বৈশিষ্ট্য মুবারক হচ্ছে এই যে, তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। পবিত্র কাবা শরীফ উনার ভিতরে উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার বিষয়ে কোনো বিতর্কের অবকাশ নেই। কারণ শেরে খোদা হযরত ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র কা’বা শরীফ উনার ভিতরে পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার বর্ণনাটি মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌঁছেছে। (ইযালাতুল খফা)
সাইয়্যিদুনা শেরে খোদা, ইমামুল আউওয়াল মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য মুবারক হলো তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার অনুগ্রহে অল্প বয়স মুবারক-এ তথা ১০ বৎসর বয়স মুবারক-এ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার জিম্মাদারী নিয়ে নেন। সুবহানাল্লাহ! ফলে উনার সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে নামায আদায়ের ব্যাপারটি অল্প বয়স মুবারক-ই সম্পন্ন হয়েছে। সুবহানাল্লাহ! (ইযালাতুল খফা)
***************************************

সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার বেমেছাল অনন্য খুছূছিয়াত মুবারক

‘নুযহাতুল মাজালিস’-এ বর্ণিত রয়েছে,
قال الكسائي وغيره لما خلق الله آدم خلق من ضلعه الأيسر حواء وهو في الجنة وأودعها حسن سبعين حوراء فصارت حواء بين الحور العين كالقمر بين الكواكب وكان آدم نائما فلما استيقظ مد يده إليها فقيل له حتى تؤدي مهرها قال وما هو قال أن تصلي على محمد ثلاث مرات وقيل حتى تعلمها معالم دينها وكان آدم عليه السلام أودعه الله من الحسن والكمال حتى أن خده الأيمن يغلب شعاع الشمس وكان نور محمد صلى الله عليه وسلم في خده الأيسر يغلب على القمر وكان يوسف عليه السلام فيه فلما نظر آدم في وجه حواء نظرت حواء في وجه آدم قال يا حواء ما أرى أن الله تعالى خلق خلقا أحسن منك ومني فأوحى الله تعالى إلى جبريل خذ بيد حواء وآدم إلى الفردوس الأعلى وافتح لهما قصرا من القصور ففتح باب قصر من الياقوت الأحمر فيه قُبَّة مِنَ الْكَافُوْرِ على قوائمه الزبرجد في روضة من زعفران ففتح جبريل باب القبة فرأى سريرا من الذهب قوائمه من الدر عليه جارية لها نور وشعاع على رأسها تاج من ذهب مُرَصَّع بالجواهر لم ير آدم أحسن منه عليه صورة جميلة قال آدم يا رب من هذه الصورة قال فاطمة بنت نبي محمد صلى الله عليه وسلم قال يا رب من يكون بعلها فقال الله تعالى يا جبريل إفتح باب قصر من ياقوت ففتح له فرأى فيه قبة من الكافورفيها سرير من ذهب عليه شاب حسنه كحسن يوسف عليه السلام فقال هذا بعلها علي بن أبي طالب فقال يا رب هل لهم أولاد فأمر الله تعالى جبريل عليه السلام أن يفتح باب قصر من اللؤلؤ ففتح باب قصر من اللؤلؤ فيه قبة من الزبرجد فيها سرير من العنبر عليه صورة الحسن والحسين رضي الله عنهما فرجع آدم إلى موضعه
অর্থ: “হযরত ইমাম কুসায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেকে বলেন, জান্নাতে যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করার পর উনার বাম পাঁজরের হাড় মুবারক থেকে উম্মুল বাশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে সৃষ্টি করেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মুল বাশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনার মধ্যে ৭০ জন হুরের সৌন্দর্য মুবারক হাদিয়া করেন। সুবহানাল্লাহ! ফলে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত সৌন্দর্য মুবারক সকল হুরদের মঝে এরূপভাবে ফুটে উঠলো যেমন সমস্ত তারকারাজির মাঝে চন্দ্রের সৌন্দর্য। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উম্মুল বাশার সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনাকে বেমেছাল সম্মানিত সৌন্দর্য মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ! আবুল বাশার সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। যখন তিনি ঘুম থেকে উঠলেন, তখন তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার দিকে স্বীয় হাত মুবারক বাড়ালেন। তখন উনাকে বলা হলো, সম্মানিত মোহরানা মুবারক আদায় করা ব্যতীত সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনাকে স্পর্শ করা যাবে না। সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, উনার সম্মানিত মোহরানা মুবারক কী? মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর তিনবার দুরূদ শরীফ পাঠ করুন। সুবহানাল্লাহ! আর কেউ কেউ বলেন (কোনো কোনো বর্ণনা মতে), আপনি উনাকে সম্মানিত দ্বীনী তা’লীম দিবেন- এই শর্তে স্পর্শ মুবারক করতে পারবেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে বেমেছাল সৌন্দর্য মুবারক এবং পূর্ণতা মুবারক হাদিয়া মুবারক করলেন। ফলে উনার সম্মানিত ডান গাল মুবারক উনার সৌন্দর্য মুবারক সূর্যের আলোকোজ্জ্বলকে হার মানালো। যা ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূর মুবারক উনার এক অংশ মুবারক। সুবহানাল্লাহ! আর সম্মানিত বাম গাল মুবারক-এ এমন সৌন্দর্য মুবারক রাখা হলো, যা চন্দ্রের আলো থেকে সমুজ্জ্বল। আর এটা সাইয়্যিদুনা হযরত ইঊসুফ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত সৌন্দর্য মুবারক ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর যখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত চেহারা মুবারক উনার দিকে এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত চেহারা মুবারক উনার দিকে দৃষ্টি মুবারক দিলেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম! আমার দেখা মতে মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার এবং আমার চেয়ে আর কাউকে এতো অধিক সৌন্দর্য মুবারক হাদিয়া মুবারক করেননি। সুবহানাল্লাহ!
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত ওহী মুবারক করলেন, (হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম!) আপনি সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল বাশার আলাইহাস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইসি সালাম উনার সম্মানিত হাত মুবারক ধরে উনাদেরকে ‘ফিরদাউসে ‘আলা’ উনার নিকট নিয়ে যান এবং উনাদের জন্য সেখানকার প্রাসাদসমূহ থেকে দুইটি প্রাসাদ মুবারক খুলে দিন। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি লাল ইয়াকুত পাথরের একটি প্রাসাদের দ্বার উন্মুক্ত করে দিলেন, সেখানে জাফরানের বাগানের মধ্যে কর্পূরের একখানা সম্মানিত গম্বুজ মুবারক ছিলো, যার পায়া ছিলো গোমেদ তথা পীতবর্ণের মণিবিশেষ দ্বারা তৈরি। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত গম্বুজ মুবারক উনার দরজা মুবারক উন্মুক্ত করে দিলেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সেখানে একখানা স্বর্ণ নির্মিত খাট মুবারক দেখতে পেলেন, যার পায়াগুলো ছিলে মুক্তার। তিনি উক্ত খাট মুবারক-এ একজন সম্মানিতা মহিলা দেখতে পেলেন, যেই সম্মানিত মহিলা উনার থেকে অবিরত ধারায় সম্মানিত নূর মুবারক এবং রশ্মি মুবারক বিচ্ছূরিত হচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মাথা মুবারক-এ জাওহার খচিত স্বর্ণের তাজ মুবারক শোভা পাচ্ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত সম্মানিত মহিলা উনার থেকে এতো অধিক বিস্ময়কর খুব ছূরত মুবারক উনার অধিকারিণী আর কাউকে কখনো দেখেননি। সুবহানাল্লাহ! তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আয় বারে এলাহী মহান আল্লাহ পাক! এতো অধিক বেমেছাল বিস্ময়কর সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারিণী এই সুমহান ব্যক্তিত্বা মুবারক তিনি কে? মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, তিনি হচ্ছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার লখতে জিগার, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়িদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে বারে এলাহী মহান আল্লাহ পাক! উনার মহাসম্মানিত যাওজুম মুকাররাম আলাইহিস সালাম কে হবেন? অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি ইয়াকুত নির্মিত প্রাসাদের দরজা মুবারকখানা খুলে দিন। তারপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উক্ত প্রাসাদের দরজা মুবারকখানা খুলে দিলেন। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সেখানে একখানা কর্পূর নির্মিত গম্বুজ বা তাবু মুবারক উনার ভিতর স্বর্ণের খাট মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত ইঊসুফ আলাইহিস সালাম উনার ন্যায় অত্যধিক সৌন্দর্য মুবারক উনার অধিকারী একজন সম্মানিত যুবক  উনাকে দেখতে পেলেন। সুবহানাল্লাহ! তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, ইনিই হচ্ছেন সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, আন নূরুর রবি‘য়াহ সাইয়িদাতুনা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত জাওযুম মুকাররাম সাইয়্যিদুনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ইবনে আবী ত্বালিব আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! তখন সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আয় বারে এলাহী মহান আল্লাহ পাক! উনাদের কী কোনো আওলাদ রয়েছেন? তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে লু’লু’ তথা অতি মূল্যবান মুক্তা মুবারক দ্বারা নির্মিত একখানা প্রাসাদ মুবারক উনার দ্বার মুবারক খুলে দিতে নির্দেশ মুবারক দিলেন। ফলে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত প্রাসাদ মুবারক উনার দ্বার মুবারক উন্মুক্ত করে দিলেন। সেখানে জমরূদ নির্মিত একখানা গম্বুজ মুবারক ভিতর একখানা আম্বরের খাট মুবারক-এ সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ ইমামুছ ছানী সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম উনার এবং সাইয়্যিদু শাবাবি আহলিল জান্নাহ ইমামুছ ছালিছ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম উনার  অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত ছূরত মুবারক শোভা পাচ্ছিলেন। (উনাদেরকে দেখে, সবশেষে) সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার স্থানে ফিরে আসলেন। সুবহানাল্লাহ! (নুযহাতুল মাজালিস ২ খ- ১৭২ পৃ.)
******************************************************************************

খলীফাতুল মুসলিমীন, আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার খলীফা মনোনীত হওয়ার সঠিক ইতিহাস

আমীরুল মু’মিনীন, খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করার পূর্বে অর্থাৎ আহত অবস্থায় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনারা আরজ করলেন উনার পরবর্তী খলীফা মনোনীত করার জন্য। তখন তিনি বললেন, আমি ছয় জনের নাম মুবারক ঘোষণা করে যাচ্ছি। উনাদের মধ্য হতে যে কোনো একজনকে তিন দিনের মধ্যে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
উল্লেখিত ছয়জন হচ্ছেন- আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি, হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি, হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবং হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। সুবাহানাল্লাহ!
স্মরণীয় যে, উপরোক্ত ছয়জনই ছিলেন, “আশারায়ে মুবাশশারার” অন্তর্ভুক্ত। উল্লেখিত ছয় জনের নাম মুবারক ঘোষণা করে আমীরুল মু’মিনীন ফারূক্বে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দায়িত্ব দিলেন তিন দিনের মধ্যে যেকোনো একজনকে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করার জন্য।
যেহেতু সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পর খলীফা হবেন হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি, অতঃপর আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ! যেমন আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
اِنَّ حَضْرَتْ اَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَـــلِـىْ مِنۢ بَعْدِىْ ثُـمَّ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنۢ بَعْدِهٖ ثُـمَّ حَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنۢ بَعْدِهٖ ثُـمَّ حَضْرَتْ عَلِـــىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنۢ بَعْدِهٖ.
অর্থ: “আমার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর প্রথমে খলীফা হবেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি, অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি, তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি, অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি।” সুবহানাল্লাহ! (গুনিয়াতুত ত্বলিবীন ১ম খ- ১৫৯ পৃষ্ঠা, মাকতুবাত শরীফ)
তাই উনারা উল্লেখিত পাঁচ জনের মধ্য হতে হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করেন। সুবহানাল্লাহ!
আর দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনোনীত হন আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। যার ফলশ্রুতিতে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা হিসেবে সম্মানিত খিলাফত মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ!
দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘তারীখুল খুলাফাতে’ এবং দ্বাদশ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘ইযালাতুল খফাতে’ উল্লেখ করেন,
فَلَمَّا فُرِغَ مِنْ دَفْنِهِ اجْتَمَعَ هَؤُلَاءِ الرَّهْطُ فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ اجْعَلُوا أَمْرَكُمْ إِلَى ثَلَاثَةٍ مِنْكُمْ فَقَالَ الزُّبَيْرُ قَدْ جَعَلْتُ أَمْرِي إِلَى عَلِيٍّ فَقَالَ طَلْحَةُ قَدْ جَعَلْتُ أَمْرِي إِلَى عُثْمَانَ وَقَالَ سَعْدٌ قَدْ جَعَلْتُ أَمْرِي إِلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ أَيُّكُمَا تَبَرَّأَ مِنْ هَذَا الْأَمْرِ فَنَجْعَلُهُ إِلَيْهِ وَاللَّهُ عَلَيْهِ وَالْإِسْلَامُ لَيَنْظُرَنَّ أَفْضَلَهُمْ فِي نَفْسِهِ فَأُسْكِتَ الشَّيْخَانِ فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ أَفَتَجْعَلُونَهُ إِلَيَّ وَاللَّهُ عَلَيَّ أَنْ لَا آلُ عَنْ أَفْضَلِكُمْ قَالَا نَعَمْ فَأَخَذَ بِيَدِ أَحَدِهِمَا فَقَالَ لَكَ قَرَابَةٌ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْقَدَمُ فِي الْإِسْلَامِ مَا قَدْ عَلِمْتَ فَاللَّهُ عَلَيْكَ لَئِنْ أَمَّرْتُكَ لَتَعْدِلَنَّ وَلَئِنْ أَمَّرْتُ عُثْمَانَ لَتَسْمَعَنَّ وَلَتُطِيعَنَّ ثُمَّ خَلَا بِالْآخَرِ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ فَلَمَّا أَخَذَ الْمِيثَاقَ قَالَ ارْفَعْ يَدَكَ يَا عُثْمَانُ فَبَايَعَهُ فَبَايَعَ لَهُ عَلِيٌّ وَوَلَجَ أَهْلُ الدَّارِ فَبَايَعُوهُ
অর্থ: “আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার দাফন মুবারক সম্পন্ন করে উল্লেখিত ছয়জন পরামর্শে বসে গেলেন।
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আপনারা মিলে এ ব্যাপারটি তিন জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নিন। হযরত যুবায়ের ইবনে আওয়াম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি আমার দায়িত্ব আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার অনুকূলে পরিত্যাগ করলাম। হযরত ত্বলহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি আমার দায়িত্ব সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার অনুকূলে ছেড়ে দিলাম। হযরত সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাছ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি আমার দায়িত্ব হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর অর্পণ করলাম। তখন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অপর দু’জনকে অর্থাৎ আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা  হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে এবং আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে বললেন, আপনাদের দু’জনের কে সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার দাবি ছেড়ে দিতে পারেন, যাঁর হাত মুবারক-এ আমি খলীফা মনোনীত করার দায়িত্ব দিতে পারি? তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি দৃষ্টি রেখে উত্তম ব্যক্তিকে খলীফা মনোনীত করবেন। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি এবং আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি অর্থাৎ উনারা উভয়ই চুপ থাকলেন। (কারণ উনারা চেয়ে ছিলেন, যেহেতু হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব আমীরুল মু’মিনীন হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি স্বয়ং হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে খলীফা যিনি হবেন উনার সম্মানিত নাম মুবারক প্রকাশ করার বা ঘোষণা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাই হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিই যেন খলীফা যিনি হবেন উনার সম্মানিত নাম মুবারক প্রকাশ করেন বা ঘোষণা করেন। আর হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার এই বিষয়টিও জানা রয়েছে যে, স্বয়ং আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পর খলীফা হবেন আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি। অতঃপর হবেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি।) তখন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার দাবি ত্যাগ করলাম। আপনারা আমার উপর বিষয়টি ছেড়ে দিন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনাকে সাক্ষী রেখে আপনাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত হক্বদার ব্যক্তিকে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করবো। তখন উনারা দু’জন হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রস্তাব মেনে নিলেন। সাথে সাথে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে বললেন, আপনি আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকটাত্মীয় এবং আপনি প্রথম সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। মহান আল্লাহ পাক উনাকে সাক্ষী রেখে আমি আপনার কাছ থেকে এ প্রতিশ্রুতি মুবারক নিচ্ছি যে, আমি যদি আপনাকে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করি, তাহলে আপনি তা সম্মানিত ইনসাফ মুবারক উনার সাথে সম্মানিত খিলাফত মুবারক পরিচালনা করবেন। আর যদি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করি তাহলে আপনি অবশ্য অবশ্যই উনার কথা মতো চলবেন এবং উনাকে ইতায়াত তথা অনুসরণ-অনুকরণ করবেন। জবাবে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই আমি তা করবো। অতঃপর তিনি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নুরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে একই প্রতিশ্রুতি মুবারক নিলেন। যখন উভয়ের প্রতিশ্রুতি মুবারক নেয়া শেষ হলো, তখন তিনি বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম! আপনি আপনার হাত মুবারক প্রসারিত করুন। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হাত মুবারক বাড়ালেন। (যেহেতু সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে আমীরুল মু’মিনীন সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পর খলীফা হবেন আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা  হযরত যুন নূরাইন আাইহিস সালাম তিনি)। সুবহানাল্লাহ! তাই প্রথমে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা  হযরত যুন নূরাইন আাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত হলেন।  সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বাইয়াত হলেন। অবশেষে সব মুসলমানগণ উনারা দলে দলে এসে বাইয়াত গ্রহণ করলেন। (বুখারী শরীফ : বাব : কিছ্ছাতুল বাই‘য়াতি ওয়াল ইত্তিফাক্বি ‘আলা উছমান ইবনে আফফান ওয়া ফীহি মাক্বতালু উমর ইবনিল খত্ত্বাব রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা, ছহীহ ইবনে হিব্বান ১৫/৩৫৪, আস সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ৮/২৫৯, ইযালাতুল খফা ৪/৭০, তারীখুল খুলাফা ১০৭ নং পৃ:)
ষষ্ঠ হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, হযরত বড়পীর আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘গুনিয়াতুত ত্বলিবীন’-এ উল্লেখ করেন, হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে প্রস্তাব মুবারক করলেন। তিনি বললেন, আমি মহান আল্লাহ পাক উনার, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের এবং সমস্ত মুসলমান উনাদের দিকে চেয়ে আপনাদের কোনো একজনকে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করবো। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত নির্দেশ মুবারক মুতাবিক, উনাদের ইচ্ছা মুবারক অনুযায়ী আপনাদের দু’জনের একজনকে খলীফা হিসেবে ঘোষণা করবো। (কেননা সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা  হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পরে খলীফা হবেন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি, অতঃপর হবেন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!)
একথা বলেই তিনি প্রথমেই আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম! আপনার উপর মহান আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত জিম্মাদারী ও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিম্মাদারীর রক্ষণাবেক্ষণ করা অবশ্য কর্তব্য। আমরা আপনার হাত মুবারকে বাইয়াত হওয়ার পর আপনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্থাৎ উনাদের সম্মানিত রেযামন্দি-সন্তুষ্টি মুবারক এবং মুসলমানদের ভালাই ও কল্যাণ কামনায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। আর আপনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, আমীরুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার এবং আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার অর্থাৎ উনাদেও সম্মানিত সুন্নত মুবারক পালন করতে হবে। {(যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে এই প্রতিশ্রুতি মুবারক নিয়েছিলেন যে, উনার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার পর প্রথমে খলীফা হবেন আমীরুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্ব আকবর আলাইহিস সালাম তিনি, তারপর আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি, অতঃপর আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা  হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি, তারপর আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা  হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি। সুবহানাল্লাহ!) (গুনিয়াতু ত্বলিবীন)}
তাই আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার দায়িত্ব মুবারক এড়িয়ে যাওয়ার কোশেশ করলেন। অতএব, তিনি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রস্তাবে সাড়া প্রদান করা থেকে বিরত থাকলেন। অতঃপর হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক ধরে অনুরূপ প্রস্তাব মুবারক পেশ করলেন। (যেহেতু সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার পর হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি খলীফা হবেন। তাই) তিনি উক্ত প্রস্তাব মুবারক কবূল করলেন এবং হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সঙ্গে সঙ্গে উনার হাত মুবারক-এ বাইয়াত মুবারক গ্রহণ করলেন। পরের দিন বাইয়াতে আম অনুষ্ঠিত হলো।
হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ করেন, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার পর মুসলমানগণ উনারা সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত হুজরা শরীফ-এ প্রবেশ করতঃ সংবাদ মুবারক দিলেন যে, আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে শহীদ করা হয়েছে। এখন মুসলমান উনাদের জন্য খলীফা প্রয়োজন। আমাদের মতে আপনি ছাড়া অপর কোনো দ্বিতীয়জন নেই, যে ব্যক্তি বর্তমানে খলীফা হবেন। আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনারা আমাকে খলীফা মনোনীত করার খেয়াল ত্যাগ করুন। আমি খলীফা হওয়ার চেয়ে আপনাদের জন্য পরামর্শদাতা হওয়া ভালো মনে করি। সুবহানাল্লাহ!
দশম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব “তারীখুল খুলাফাতে” উল্লেখ করেন,
عَنْ أَبِي وَائِلٍ ، قَالَ : قُلْتُ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ : كَيْفَ بَايَعْتُمْ عُثْمَانَ وَتَرَكْتُمْ عَلِيًّا ، قَالَ : مَا ذَنْبِي قَدْ بَدَأْتُ بِعَلِيٍّ فَقُلْتُ : أُبَايِعُكَ عَلَى كِتَابِ اللهِ ، وَسُنَّةِ رَسُولِهِ ، وَسِيرَةِ أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ ، قَالَ : فَقَالَ : فِيمَا اسْتَطَعْتُ قَالَ : ثُمَّ عَرَضْتُهَا عَلَى عُثْمَانَ فَقَالَ نَعَمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ ওয়াইল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললাম, আপনারা আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনাকে বাদ দিয়ে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে খিলাফত মুবারক উনার বাইয়াত গ্রহণ করলেন? তিনি বললেন, এখানে আমার ত্রুটি কোথায়? এখানে আমার কোনো ত্রুটি নেই। আমি হযরত আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম উনার দ্বারাই শুরু করেছিলাম। আমি উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলাম, আমি কি সম্মানিত কিতাবুল্লাহ, সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সীরাতে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম ও আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম অনুযায়ী আপনার হাত মুবারক-এ সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার বাইয়াত মুবারক গ্রহণ করবো? জবাবে আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, যখন আমার পক্ষে তা সম্ভব হবে। (অর্থাৎ এখন নয়, এখন আপনারা আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারক-এ খিলাফত মুবারক উনার বাইয়াত গ্রহণ করুন। কেননা আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট এই প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন যে,
اِنَّ حَضْرَتْ اَبَا بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَـــلِـىْ مِنۢ بَعْدِىْ ثُـمَّ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنۢ بَعْدِهٖ ثُـمَّ حَضْرَتْ عُثْمَانُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنۢ بَعْدِهٖ ثُـمَّ حَضْرَتْ عَلِـــىٌّ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنۢ بَعْدِهٖ.
অর্থ: “আমার মহাসম্মানিত বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর প্রথমে খলীফা হবেন সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি, অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি, তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত সাইয়্যিদুনা যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি, অতঃপর হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি।” সুবহানাল্লাহ! (গুনিয়াতুত ত্বলিবীন ১/৫৯, মাকতুবাত শরীফ)}
অতঃপর আমি আমীরুল মু’মিনীন, সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট অনুরূপ আরজ করলাম। তিনি জবাবে বললেন, হ্যাঁ। অর্থাৎ আপনি সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার বাইয়াত মুবারক গ্রহণ করুন। (তারীখুল খুলাফা/১২২, মুসনাদে আহমদ ১/৭৫)
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করার এক সপ্তাহ পর ২৫শে যিলহজ্জ শরীফ সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি খিলাফতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
*******************************