প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ ( ১২ নং )

ফতওয়া বিভাগ
প্রচলিত তাবলীগ
জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
গবেষণা কেন্দ্র
মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
[ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোজা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়  সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর চতুর্দশ (১৪তম) ফতওয়া হিসেবে (৩৫তম সংখ্যা হতে বর্তমান ৪৬তম সংখ্যা পর্যন্ত) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া শেষ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]
[ বিঃদ্রঃ পাঠকগণের সুবিধার্থে ফতওয়ার ভুমিকার কিছু অংশ পুণরায় প্রকাশ করা হলো ]
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ
            মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
كنتم خير امة اخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.
অর্থঃ- তোমরা (হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হওয়ার কারণে) শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদেরকে মানুষের মধ্য হতে বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করবে এবং আল্লাহ্ পাক-এর প্রতি ঈমান আনবে।” (সূরা আল ইমরান/১১০)
            উপরোক্ত আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক তাবলীগ তথা সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের সাথে সাথে আরো একটি শর্ত যুক্ত করে দিয়েছেন। সেটা হলো- تؤمنون অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং দ্বীন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সঠিক ও পরিশুদ্ধ ঈমান আনা। অর্থাৎ তৎসম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা। তবেই সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের মাধ্যমে পরিপূর্ণ ফায়দা বা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব হবে।
            স্মরণযোগ্য যে, বর্তমান প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের বেশকিছু লেখনী, বক্তব্য, বিবৃতি, আমল ও আক্বীদা ইত্যাদি সম্পর্কে সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের মনে নানাবিধ সংশয় ও প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারপাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষ হতে মাসিক আল বাইয়্যিনাতেরআকর্ষণীয় ও নির্ভরযোগ্য বিভাগ সুওয়াল-জাওয়াববিভাগে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে প্রচারিত বেশকিছু আপত্তিজনক আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ উল্লেখ করে অসংখ্য চিঠি আসে। কারণ আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন কালামে পাকে এরশাদ করেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لاتعلمون.
অর্থঃ- যদি তোমরা না জান, তবে আহ্লে যিকির বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা নহল/৪৩ ও আম্বিয়া/৭)
অর্থাৎ তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা যাঁরা জানেন, তাঁদের নিকট জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
            অতএব, যাঁরা জানেন, তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থঃ- যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা হয়,  জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযা, আহ্মদ, মেশকাত, বজলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ¡া আগুনের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া হবে।
            কাজেই উপরোক্ত হাদীস শরীফে, যে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকারঅগণিত পাঠক, গ্রাহক ও সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের প্রেরিত সুওয়ালসমূহে উল্লেখকৃত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহের শরীয়তসম্মত তথা কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে জাওয়াব বা ফতওয়া দেয়া হলো।
প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়
            এখানে বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, মূলতঃ আমাদের সাথে কারো যেরূপ বন্ধুত্ব নেই, তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ্ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
            এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বজলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            বস্তুতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীস শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
            কাজেই মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতসম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো- প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কেউল্লেখকৃত আক্বীদাসমূহের সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান এবং প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের দাওয়াতের কাজে যারা মশগুল রয়েছে, তাদের মধ্যে যারা উক্ত আক্বীদাসমূহ জেনে হোক বা না জেনেই হোক বিশ্বাস করে এবং তা জনসাধারণের নিকট প্রচার করে, নিজেদের ও জনসাধারণের ঈমান ও আমলের বিরাট ক্ষতি করছে, তাদের সে ঈমান ও আমলের হিফাযত করা ও সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ করতে পারে।
            মূলতঃ মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মুমিন অপর মুমিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে যে,                                  
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থঃ- এক মুমিন অপর মুমিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বজলুল মাজহুদ)
            এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত আনছার এবং মোহাজিরগণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহ্কামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব (রাঃ) দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইব্নে সাঈদ (রাঃ) বললেন, “যদি আপনি এরূপ করেন, তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ তীরকে সোজা করা হয়।এ কথা শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বললেন, “তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মাআরেফ)
            সুতরাং উপরোক্ত হাদীস শরীফের আলোকে অসংখ্য, অগণিত পাঠকগণের পূণঃ পূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষে বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহের শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, সমঝদার মুসলমান ও প্রচলিত তাবলীগকারীগণ সে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে সঠিকভাবে দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও খেদমত করে আল্লাহ্ পাক ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
            এখানে উল্লেখ্য যে, দ্বীনের তাবলীগ যা খাছ ও আম তা শত-সহস্র লোক করবে এবং অবশ্যই করতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করতে হবে। কারণ আক্বীদা শুদ্ধ না হলে দ্বীনী কোন খিদমতই আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে কবুলযোগ্য নয়। উপরন্ত কুফরী আক্বীদা থাকার কারণে তাকে হতে হবে চির জাহান্নামী।
            আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে বিশুদ্ধ আক্বীদার সাথে দ্বীনী তাবলীগ (যা আম ও খাছ) করার তৌফিক দান করুন।(আমীন)
সুওয়াল ঃ- আমরা শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে সঠিক তত্ত্ব জানতে আগ্রহী। কারণ আমরা অনেকদিন যাবত তাবলীগ জামায়াতের সাথে জড়িত ছিলাম এবং এখনো তাবলীগ জামায়াতের অনেক লোকের সাথে আমাদের মেলামেশা আছে। তাতে তাদের বেশ কিছু বক্তব্য বা আক্বীদা, যা আমরা অতীতেও জেনেছি এবং এখনো তা অবহিত হচ্ছি। তার মধ্যে অনেকগুলো তাদের লেখা কিতাবেও উল্লেখ আছে। সে সমস্ত আক্বীদাসমূহ আমাদের মনে হয় ইসলামের দৃষ্টিতে আপত্তিকর। সেগুলো আমরা নিম্নে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করলাম -
(৬৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা পরিচালিত ও প্রকাশিত পাক্ষিক আত্ তুরাগপত্রিকার ১লা জুন ১৯৯৩ সংকেতঃ ৯০-এর ৬নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট আমীর মুফতী জয়নুল আবেদীন ৯৩ সনের বিশ্ব ইজ্তেমার এক বয়ানে বলেন, “টঙ্গীর এই মাঠে যারা এখন আছেন, তারা যদি সবাই জোনায়েদ বাগদাদী হয়ে যান, আব্দুল কাদির জ্বিলানী আর হাসান বছরী হয়ে যান, তবুও আপনারা কখনো দ্বীনের উপরে টিকে থাকতে পারবেন না যদি আপনাদের ঘরের মহিলারা বা স্ত্রী দ্বীনের উপর না আসে। যদি আপনিও হাসান বছরী হয়ে গেলেন আর আপনার স্ত্রীও রাবেয়া বছরী হয়ে গেলেন তবুও আপনি নিজের বাড়ীতে থাকতে পারবেননা, দূর গ্রামে গিয়ে বা জঙ্গলে গিয়ে ঝুপড়ীর ভিতর থাকতে হবে। যদি না আপনি নিজের ছেলেকে হেদায়েতের মেহনত না করান।
(৬৮) আমাদের টঙ্গী বাড়ীস্থ মটুকপুর গ্রামে ব্যাপারী বাড়ীর সম্মুখস্থ মাদ্রাসায় গত ৬/৫/৯৭ইং তারিখে, একটি সামাজিক মিটিং বসেছিল। উক্ত মিটিং-এ প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের কথা উঠায়, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো- তাবলীগ বড়, না কোরআন শরীফ বড়? তখন সেখানে উপস্থিত চট্টগ্রামস্থ হাটহাজারী মাদ্রাসা হতে ফারেগ, মাওলানা আব্দুস সালাম বলে উঠলো- কোরআন থেকে তাবলীগ বড়অর্থাৎ কোরআন শরীফ থেকে বর্তমান প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুলী তাবলীগ বড় বা মর্যাদা সম্পন্ন।
            উপরোক্ত সুওয়ালের আলোকে এখন আমরা জানতে চাই, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য বা আক্বীদাসমূহ শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু ঠিক? এবং তা শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু প্রয়োজনীয় ও কোন স্তরের আমলের অন্তর্ভূক্ত? কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে জাওয়াব দিয়ে ঈমান ও আমল হিফাযত করণে সাহায্য করবেন।
জাওয়াব ঃ- (আপনাদের তরফ থেকে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে বিভিন্ন সুওয়ালসহ প্রায় শতাধিক (শত শত) চিঠি এসে পৌঁছেছে। তার মধ্যে যেসব সুওয়ালগুলি মানুষের ঈমান ও আমলের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত এবং যেগুলির জবাব না দিলেই নয়, সেরূপ অর্ধ শতাধিক সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে গত (৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০  ৪১ এবং (৪২, ৪৩ ও ৪৪), ৪৫তম সংখ্যায় যথাক্রমে (৭+৩২+৬+৮+৭+১+২+১+২) মোট = ৬৬টি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হয়েছে। বর্তমান (৪৬তম) সংখ্যায় দুটি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হলো। অর্থাৎ প্রদত্ত ফতওয়ায় সর্বমোট ৬৮টি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হলো।
            আপনাদের বর্ণিত সুওয়াল মোতাবেক যদি প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হয়ে থাকে, তাহলে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবশ্যই আপত্তিজনক, যা গোমরাহীমূলক, বিভ্রান্তিকর ও জেহালতপূর্ণ এবং তারমধ্যে কোন কোনটিতে কুফরীমূলক বক্তব্যও রয়েছে।
            তবে আপনারা যেহেতু দলীল ভিত্তিক জাওয়াব চেয়েছেন, তাই আমরা উপরোক্ত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই শরীয়তসম্মত তথা কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের ভিত্তিতে জাওয়াব দিব। (ইন্শাআল্লাহ্)
            কারণ আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে বলেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.   
অর্থঃ- তোমরা যারা জাননা, যারা জানেন, তাদের কাছ থেকে জেনে নাও।” (সূরা নহল/৪৩)
            আর আল্লাহর রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,   
من سئل عن علم علمه ثم كتمه الجميوم القيامة بلجام من النار.
অর্থঃ- যাকে ইল্মের বিষয় সর্ম্পকে কোন প্রশ্ন করা হয়, আর সে জানা থাকা সত্ত্বেও তা চুপিয়ে রাখে, তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের বেড়ী পড়িয়ে দেয়া হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাযাহ্, আহমদ, মেশকাত, বজলুল মাজহুদ, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, উরফুশ্শাজী, তালীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্, লুময়াত)
            অন্য হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, “তার জিব কেটে দেয়া  হবে ইত্যাদি।
            তাই নিম্নে পর্যায়ক্রমে আপনাদের প্রেরিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর বক্তব্য বা আক্বীদাসমূহের কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের অকাট্য দলীলসমূহের ভিত্তিতে শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো-
তাবলীগের অর্থ ও প্রকারভেদ
            [সুওয়াল সমূহের জাওয়াব দেয়ার পূর্বে প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয়ে আলোচনা করা অতি জরুরী। কারণ তাবলীগ সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে তা কত প্রকার ও কি কি এবং তার অর্থ কি, তা জানতে হবে।
            তাবলীগ(تبليغ)  অর্থ হলো- প্রচার করা। তাবলীগ দুপ্রকার অর্থাৎ সাধারণতঃ ইসলাম দুভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে- (১) তাবলীগে আম  (عام)বা    সাধারণভাবে,  (২) তাবলীগে খাছ  (خاص)বা বিশেষভাবে।  আবার দ্বীন প্রচারকারী (মুবাল্লিগ) ও দুপ্রকার- (১) মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক) ও (২) মুবাল্লিাগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক)।
মুবাল্লিগে আম ও তার
হিদায়েতের ক্ষেত্র
 মুবাল্লিগে আম অর্থাৎ সাধারণ মুবাল্লিগ (দ্বীন প্রচারক)- তার বিশেষ কোন যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। শুধু দ্বীনী সমঝ বা বুঝ থাকলেই চলবে। সে খাছ বা বিশেষভাবে যেমন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী, ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজী ও কর্মচারী তথা তার অধীনস্থ সকলকে দ্বীনী আমলের জন্য তথা দ্বীনদারী হাছিলের জন্য তাকীদ বা উৎসাহিত করবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক কোরআন শরীফের সূরা তাহ্রীমের ৬নং আয়াত শরীফে বলেন,
يا ايها الذين امنوا قوا انفسكم واهليكم نارا.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে বাঁচাও।
            আর হাদীস শরীফে আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الا كلكم راع وكلكم مسئول عن رعيته.
অর্থঃ- সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই (নিজের অধীনস্থদের ব্যাপারে) রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বোখারী, মুসলিম, মেশকাত, ফতহুল বারী , ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
            আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
بلغوا عنى ولو اية.
অর্থঃ- তোমরা আমার থেকে একটি আয়াত (হাদীস) হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌঁছে দাও।” (বোখারী শরীফ, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী)
            অন্য হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- তখন হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমরা সৎ কাজের আদেশ দিব না? অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সমস্ত খারাবী হতে ক্ষান্ত হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি অসৎ কাজে নিষেধ করবো না? সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- না, বরং তোমরা সৎকাজের আদেশ দান করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করতে না পার। তদ্রুপ মন্দ কাজে নিষেধ করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে তা থেকে বেঁচে থাকতে না পার। (তিবরানী শরীফ)
            সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
الدين نصيحة.
অর্থঃ- দ্বীন হচ্ছে নছীহত স্বরূপ।
            হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণ জিজ্ঞাসা করলেন, কাদের জন্য? নবীজী বললেন, “আল্লাহ্র জন্য এবং আল্লাহ্র প্রিয় রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য এবং মুসলমানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য।” (মুসলিম শরীফ, শরহে নববী, ফতহুল মুলহিম)
            উপরোক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফসমূহ মুবাল্লিগে আম ও মুবাল্লিগে খাছ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। অর্থাৎ এর হুকুম কারো জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি।
            কাজেই যারা মুবাল্লিগে আম, তারা তাদের দায়িত্ব ও ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত হাদীস শরীফের আমল করবেন। আর যারা মুবাল্লিগে খাছ, তারাও তাদের দায়িত্ব ও যোগ্যতা এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত হাদীস শরীফের উপর আমল করবেন।
            ৃঅতএব প্রত্যেক মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তার ক্ষেত্র হচ্ছে- তার অধীনস্থগণ। যাদেরকে তার তরফ থেকে দ্বীনের জন্য তালীম দেয়া ও তাকীদ করা দায়িত্ব ও কর্তব্য। অর্থাৎ এটা হচ্ছে তাবলীগে খাছ যা করা- মুবাল্লিগে আম-এর জন্য ফরজে আইনের অন্তর্ভূক্ত। (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, ফতহুল ক্বাদীর, খাযেন, বাগবী, কুরতুবী, ইব্নে কাছীর, কবীর)
মুবাল্লিগে খাছ ও তার হিদায়েতের ক্ষেত্র
            মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), মুবাল্লিগে আম-এর মত নয়। অর্থাৎ তিনি কেবল তার অধীনস্থদেরই নয় বরং তিনি আমভাবে সকল উম্মতকেই হিদায়েত করার উপযুক্ত। পক্ষান্তরে মুবাল্লিগে আম কেবল তার অধীনস্থদেরই বলার যোগ্যতা রাখেন।             আর যাঁরা খাছ মুবাল্লিগ অর্থাৎ বিশিষ্ট দ্বীন প্রচারক, তাঁদের প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
ولتكن منكم امة يدعون الى الخبير ويأمرون بالمعروف وينهون عن المنكرو اولئك هم المفلحون.
অর্থঃ- তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের (কোরআন-সুন্নাহ্ তথা ইসলামের) দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে এবং বদ্ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই মূলতঃ কামিয়াব।” (সূরা ইমরান/১০৪)
 অর্থাৎ তাঁকে অবশ্যই দ্বীনী বিষয়ে বিশেষ যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে এবং ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফে বিশেষ দক্ষতা তথা ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত পরিমাণ ইল্ম, আমল এবং ইখ্লাছ হাছিল করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
فلولا نفر من كل فرقة منهم طانفة ليتفقهوا فى الدين ولينذروا قومهم اذا رجعوا اليهم لعلهم يحذرون. 
অর্থঃ- কেন তাদের প্রত্যেক ক্বওম বা ফেরক্বা থেকে একটি দল বের হয়না এজন্য যে, তারা দ্বীনী ইল্মে দক্ষতা অর্জন করবে এবং তাদের ক্বওমকে ভয় প্রদর্শন করবে, যখন তারা তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। আশা করা যায়, তারা বাঁচতে পারবে।” (সূরা তওবা/১২২) (তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, ফাতহুল ক্বাদীর, কাশশাফ, হাশিয়ায়ে সাবী, যাদুল মাসীর, খাজেন, বাগবী, কুরতুবী, কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)
            আর আল্লাহ্র রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

تعلموا لعلم وعلموه الناس.                
অর্থঃ- তোমরা দ্বীনী ইল্ম শিক্ষা কর এবং  মানুষকে তা শিক্ষা দাও।” (দারেমী, দারে কুত্নী, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্, লুময়াত ইত্যাদি))
            মূলতঃ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, তাঁদেরকে অবশ্যই ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানী হতে হবে। আর হক্কানী, রব্বানী আলেমগণের প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক কোরআন শরীফে এরশাদ করেন,
انما يخشى الله من عباده العلماء.                    
অর্থঃ- নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই আল্লাহ্ পাককে ভয় করেন।” (সূরা ফাতির/২৮)
            এ আয়াত শরীফের তাফসীর হযরত ইমাম আহ্ম্মদ বিন হাম্বল (রঃ)কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার মধ্যে যতবেশী আল্লাহ্ ভীতি রয়েছে, তিনি তত বড় আলেম।
            আর হাদীস শরীফে রয়েছে,
من ارباب العلم؟ قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟ قال الطمع.
অর্থঃ- “(জিজ্ঞাসা করা হলো) আলেম কে? উত্তরে বললেন, যাঁরা ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন। পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ জিনিস আলেমের অন্তর থেকে ইল্মকে বের করে দেয়? তিনি বললেন, লোভ (দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা)।  (দারেমী, মেশকাত, মেরকাত, মোজাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মিরআতুল মানাজীহ্, লুময়াত ইত্যাদি)
            অর্থাৎ যিনি ইল্ম অনুযায়ী আমল করেন, তিনিই হক্কানী-রব্বানী আলেম।
            কাজেই যিনি ইল্ম, আমল ও ইখ্লাছ হাছিল করেছেন, তিনিই হক্কানী আলেম, আর তিনিই নবী (আঃ)গণের ওয়ারিছ। যাঁদের শানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
العلماء ورثة الانبياء.
অর্থঃ-আলেমগণ হলেন- নবীগণের ওয়ারিছ বা উত্তরাধিকারী।” (আহ্মদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, বজলুল মাজহুদ, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্, উরফুশ্শাজী, তালীকুছ্ ছবীহ্)
            অর্থাৎ নবী (আঃ)গণের দাওয়াত ও তাবলীগ, তালীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র যেমন আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য, তদ্রুপ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, তাঁরা নবী (আঃ)গণের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে তাঁদেরও দাওয়াত ও তাবলীগ, তালীম ও তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য। আর এ আম তালীম বা তাবলীগ ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত। যা অতীতে ও বর্তমানে ওলামায়ে হক্কানী- রব্বানীগণ তাসাউফ শিক্ষা দিয়ে, মাদ্রাসায় পড়িয়ে, মসজিদে ইমামতি করে, কিতাবাদি লিখে, ওয়াজ-নছীহত করে ইত্যাদি নানানভাবে দাওয়াত ও তালীম-তালক্বীন দিয়ে হিদায়েতের কাজ করে মুবাল্লিগে খাছ-এর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, তাবলীগে আম-এর (ফরজে কেফায়ার) ও তাবলীগে খাছ-এর (ফরজে আইনের) খেদমতের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।
মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তাবলীগে আম করার হুকুম এবং মুবাল্লিগে খাছ-এর যোগ্যতা ও তাবলীগে আম-এর শর্ত
            স্মরণীয় যে, যারা মুবাল্লিগে আম এবং যাদের জন্য শুধু তাবলীগে খাছ করা ফরজে আইন, তাদের জন্য কোন ক্রমেই এবং কষ্মিনকালেও তাবলীগে আম বা ব্যাপকভাবে দ্বীন প্রচার করা (যা মুবাল্লিগে খাছ তথা ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণের জন্য নির্দিষ্ট তা) জায়েয নেই।
            এ প্রসঙ্গে হযরত ইব্নে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, একদিন এক লোক তাঁর সাক্ষাতে আসলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি কর?” সে জাওয়াব দিল, দ্বীন প্রচার করি। তখন তিনি তাকে বললেন, “তুমি কি ঐ সকল আয়াত শরীফের আমল করেছ?” যা কোরআন শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে-
(১) সূরা সফের ২নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,

يا ايها الذين امنوا لم تقولون مالا تفعلون.
অর্থঃ- হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা করনা, তা কেন বল?”
            তুমি কি এ আয়াত শরীফের আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।
(২) তিনি আবার বললেন যে, আল্লাহ্ পাক সূরা বাক্বারার ৪৪নং আয়াত শরীফে বলেছেন,   

اتأمرون الناس بالبر وتنسون انفسكم وانتم تتلون الكتاب.

অর্থঃ- তোমরা কি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ কর, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করে থাক।
তুমি কি এ আয়াত শরীফের আমল করেছ?” সে জাওয়াব দিল, না।
(৩) পুণরায় তিনি বললেন, “তুমি কি ঐ আয়াত শরীফের আমল করেছ? যা হযরত শোয়াইব (আঃ) তাঁর ক্বওমকে বলেছিলেন,
 وما اريد ان اخالفكم الى ما انهاكم عنه.
অর্থঃ- আমি এটা চাইনা যে, তোমাদেরকে যে কাজ থেকে নিষেধ করি, আমি তার খেলাফ করি। অর্থাৎ আমি যা বলি, তা করি আর যা বলিনা, তা করিনা।” (সূরা হুদ/৮৮)
            তুমি কি এ আয়াত শরীফের আমল করেছ? সে জাওয়াব দিল, না।
            তখন হযরত ইব্নে আব্বাস (রাঃ) তাকে বললেন, “তুমি প্রথমে এ আয়াত শরীফসমূহের আমল কর, অতঃপর তুমি দ্বীন প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত কর।অর্থাৎ উপরোক্ত আয়াত শরীফের আমল ব্যতিরেকে তাবলীগে আম করা জায়েয নেই।
            উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, তাবলীগে খাছ মুবাল্লিগে আম ও খাছ উভয়ের জন্যেই ফরজে আইন। আর তাবলীগে আম শুধুমাত্র মুবাল্লিগে খাছ তথা হক্কানী আলেমগণের জন্যেই প্রযোজ্য, যা তাঁদের জন্যে ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত। অতএব, মুবাল্লিগে আম বা সাধারণ লোকদের জন্যে তাবলীগে আম করা কখনো শুদ্ধ হবেনা বরং তাদের জন্যে তা করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম হবে।
            বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, “বর্তমানে প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগযাকে তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাবলীগে আম বলে থাকে, (যা আমাদের নিকট মক্তবী শিক্ষার অন্তর্ভূক্ত যদি আক্বীদা শুদ্ধ হয়ে থাকে) যদি তাদের কথা মোতাবেক তাকে তাবলীগে আম ধরা হয়, তাহলে তো অবশ্যই তা মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য করা উচিৎ ছিল। অথচ তা এমন সব লোকেরা করে থাকে যারা মুবাল্লিগে খাছ তো নয়ই, বরং তাদের মধ্যে অনেকেই মুবাল্লিগে আম-এরও উপযুক্ত নয়। যদিও কিছু সংখ্যক মুবাল্লিগে আম রয়েছে।
            অতএব তাবলীগে আম মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্যই করা ফরজে কেফায়া। যা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। আর সাধারণ লোকেরতো প্রশ্নই উঠেনা।
            এখন হয়তো কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অনেক সময় দেখা যায় এমন কতক লোক, যারা মুবাল্লিগে খাছ ও আম কোনটাই নয়, তারা অনেকেই নামাজের জামায়াতে যাওয়ার সময় বা নামাজ পড়ার সময় অন্যকে নামাজে ডেকে নিয়ে যায়, রোজার মাসে রোজা রাখার কথা বলে, ইত্যাদি অনেক নেক কাজের কথাই বলে থাকে, যা তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিলনা তবে তার ফায়সালা কি? এটাও কি নাজায়েয ও হারাম?
            এর ফায়সালা হলো, ঐ সকল লোক মুসলিম শরীফের বর্ণিত হাদীস শরীফ-       
الدين نصيحة.
অর্থাৎ দ্বীন হচ্ছে অপরের ভাল কামনা করা।এর মেছদাক বা নমুনা। অর্থাৎ এদেরকে কেউ হিদায়েতের দায়িত্ব দেয়নি বা এরা হিদায়েতের ব্যাপারে কোন দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। এরা হচ্ছে মানুষের খয়েরখাঁ বা হিতাকাঙ্খী।
            এখানে আরো উল্লেখ্য যে, তিবরানী শরীফের উপরোক্ত হাদীসে দেখা যাচ্ছে যে, সৎকাজ না করলেও অপরকে সৎ কাজ করতে বলা হয়েছে। অথচ কোরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন, “তোমরা ঐ কথা বল কেন, যা তোমরা নিজেরা করোনা।
            তাহলে এই আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফের বক্তব্যের মধ্যে ফায়সালা কি?
            মূলতঃ এর ফায়সালা ওলামায়ে মুহাক্কিক, মুদাক্কিকগণ দিয়েছেন। তাঁদের মতে তিবরানী শরীফের হাদীস শরীফে সৎ কাজ না করলেও সৎ কাজের দাওয়াত দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক)-এর জন্য। যেমন কোন বাবা নিজে নামাজ বা অন্যান্য নেক কাজ না করা সত্বেও তার সন্তান ও অধীনস্থদের নামাজ বা অন্যান্য নেক কাজের জন্য বলতে পারেন।
            আর কোরআন শরীফের উক্ত আয়াত শরীফে নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা বলার জন্য যে নিষেধবাণী করা হয়েছে, তা হলো- মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য। অর্থাৎ মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে তা করতে বলা জায়েয নেই।
            এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে যে,
عن انس قال- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم مررت ليلة اسرى بى بقوم تقرض شفاههم بمقاربض من النار- فقلت يا جبريل من هؤلاء- قال هؤلاء خطباء امتك الذين يقولون مالا يفعلون.

অর্থঃ- হযরত আনাস ইব্নে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মিরাজ শরীফের রাত্রে এমন একটি ক্বওমের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাদের ঠোঁটগুলো আগুনের কেঁচি দ্বারা কাটা হচ্ছিল। আমি হযরত জিব্রাঈল (আঃ)কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? জবাবে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) বলেন, এরা আপনার উম্মতদের মধ্যে ঐ সকল ওয়ায়েজ বা বক্তা, যারা এমন কথা বলতো, যেটা তারা নিজেরা আমল করতোনা।” (তিরমিযী, মেশকাত, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, উরফুশ শাজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্)
            অতএব, প্রমাণিত হলো যে, যারা মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক), তারা তিবরানী শরীফের বর্ণনা মোতাবেক সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন। আর যারা মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), তারা কোরআন শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ মোতাবেক নিজে সৎকাজ না করে অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে পারবেন না। কারণ যদি সকলের জন্যে আমভাবে একথা বলা হয় যে, সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজের কথা বলা জায়েয, তবে মিরাজ শরীফের হাদীসে বর্ণিত লোকদের জিহ¡া কাটা হলো কেন? এতে বুঝা গেল যে, তিবরানী শরীফের উক্ত হুকুম সকলের জন্যে প্রযোজ্য নয়। বরং যারা মুবাল্লিগে আম, তাদের জন্যেই প্রযোজ্য। আর কোরআন শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ ও মিরাজ শরীফ সম্পর্কিত হাদীস শরীফখানা যারা মুবাল্লিগে খাছ, তাদের জন্যে প্রযোজ্য।
            সুতরাং হাক্বীক্বতে উক্ত হাদীস শরীফ ও আয়াত শরীফের মধ্যে কোনই দ্বন্দ্ব নেই। অনেকে এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানার ও না বুঝার কারণে এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলে থাকে। মূলতঃ উক্ত আয়াত শরীফ ও হাদীস শরীফ যার যার ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রযোজ্য ও অনুসরণীয়।]
সুওয়াল সমূহে উল্লেখকৃত
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের
আপত্তিকর বক্তব্য সমূহের জাওয়াব -
৬৭নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব
সুওয়াল ঃ- প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা পরিচালিত ও প্রকাশিত পাক্ষিক আত্ তুরাগপত্রিকার ১লা জুন ১৯৯৩ সংকেতঃ ৯০-এর ৬নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট আমীর মুফতী জয়নুল আবেদীন ৯৩ সনের বিশ্ব ইজ্তেমার এক বয়ানে বলেন, “টঙ্গীর এই মাঠে যারা এখন আছেন, তারা যদি সবাই জোনায়েদ বাগদাদী হয়ে যান, আব্দুল কাদির জ্বিলানী আর হাসান বছরী হয়ে যান, তবুও আপনারা কখনো দ্বীনের উপরে টিকে থাকতে পারবেন না, যদি আপনাদের ঘরের মহিলারা বা স্ত্রী দ্বীনের উপর না আসে। যদি আপনিও হাসান বছরী হয়ে গেলেন আর আপনার স্ত্রীও রাবেয়া বছরী হয়ে গেলেন তবুও আপনি নিজের বাড়ীতে থাকতে পারবেননা, দূর গ্রামে গিয়ে বা জঙ্গলে গিয়ে ঝুপড়ীর ভিতর থাকতে হবে। যদি না আপনি নিজের ছেলেকে হেদায়েতের মেহনত না করান।
            এখন আমাদের সুওয়াল বা জানার বিষয় হলো- প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য ও আক্বীদা কতটুকু কোরআন-সুন্নাহ্ সম্মত, সঠিক জবাব দানে বাধিত করবেন।
জাওয়াব ঃ-  প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য ও আক্বীদা নেহায়েতই জেহালতপূর্ণ, সম্পূর্ণই কোরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী ও কুফরীমূলক। কারণ প্রথমতঃ তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, হিদায়েতের মালিক মানুষ। অর্থাৎ কোন বাবা বা স্বামী যদি নিজ দ্বীনদারী টিকিয়ে রাখতে চায়, তবে নিজ সন্তান বা স্ত্রী, যারা দ্বীনের বা হিদায়েতের উপর নেই, তাদেরকে হিদায়েত করা উক্ত বাবা বা স্বামীর উপর ফরজ বা অবশ্য কর্তব্য।
            অথচ এটা কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের সম্পূর্ণ খেলাফ। কারণ কাউকে দ্বীনের উপর আনা বা হিদায়েত করার ক্ষমতা মানুষের হাতে দেয়া হয়নি। বরং হিদায়েতের মালিক হচ্ছেন- মহান আল্লাহ্ পাক। মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে- এ ব্যাপারে যোগ্যতা অনুযায়ী কোশেশ করা। যেমন- এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকের সূরা তাহ্রীমের ৬নং আয়াত শরীফে এরশাদ করেন,
قوا انفسكم واهليكم نارا.
অর্থঃ- নিজেকে এবং পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচাও।অর্থাৎ তাদেরকে দ্বীনের বা হিদায়েতের পথে আনার জন্য কোশেশ বা চেষ্টা কর। আর জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্ পাক।
            আর হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الاكلكم راع وكلكم مسؤل عن رعيته.
অর্থঃ- সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই রক্ষক এবং তোমরা প্রত্যেকেই তোমাদের রক্ষিত বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।” (বোখারী, মুসলিম, মেশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
            অর্থাৎ প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমাদের অধীনস্থদেরকে দ্বীনে বা হিদায়েতে আনার জন্য কোশেশ বা চেষ্টা করেছ কিনা? তাকে একথা বলা হবেনা যে, তোমার অধীনস্থরা হিদায়েত বা দ্বীনদারী লাভ করলোনা কেন? কারণ হিদায়েতের মালিক মানুষ নয়, হিদায়েতের মালিক হচ্ছেন- আল্লাহ্ পাক। যেমন আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন,
انك لا تهدى من احببت ولكن الله يهدى من يشاء.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই আপনি (তোমরা) যাকে ইচ্ছা হিদায়েত দান করতে পারবেন না। বরং আল্লাহ্ পাক যাকে ইচ্ছা হিদায়েত দান করেন।” (সূরা কাছাছ/৫৬)
            মানুষের দায়িত্ব হলো- তার সাধ্য ও যোগ্যতা অনুযায়ী নিজ অধীনস্থদেরকে দ্বীনে বা হিদায়েতে আনার কোশেশ করে যাওয়া। কোশেশের পর কেউ হিদায়েত লাভ করতে পারে, আর কেউ নাও লাভ করতে পারে। তাই বলে কোশেশের পরও যে ব্যক্তি হিদায়েত লাভ করবেনা, তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে, তা নয়। যদি প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্য মোতাবেক কোশেশের পরও কেউ হিদায়েত লাভ না করার কারণে জবাবদিহি করতে হয়, তবে তাদের বক্তব্য মোতাবেক সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও জবাবদিহি করতে হবে, কেননা তাঁর কোশেশ করার পরও আবূ জেহেল, আবূ লাহাব ও আবু তালিব হিদায়েত লাভ করেনি। যা বিশেষ কুফরী। (নাউযুবিল্লাহ্)
            মূলতঃ মানুষকে সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি। যে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
لايكلف الله نفسا الاسعها.
অর্থঃ- মহান আল্লাহ্ পাক কাউকেও তার সাধ্যের বাইরে কষ্ট দেননা।” (সূরা বাক্বারা/২৮৬)
            সুতরাং যদি তাই হয়ে থাকে, তবে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্য বা আক্বীদা কিরূপে কোরআন-সুন্নাহ্ সম্মত হতে পারে যে, প্রত্যেক বাবা বা স্বামী তার দ্বীনদারীকে টিকিয়ে রাখতে হলে সন্তান বা স্ত্রীকে অবশ্যই হিদায়েত বা দ্বীনদারী দান করতে হবে।
            বস্তুতঃ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য বানোয়াট, চরম বিভ্রান্তিকর, কুফরীমূলক ও সম্পূর্ণ কোরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী।
            দ্বিতীয়তঃ তাদের উক্ত বক্তব্য আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাক্বীক্বী ওয়ারিছ হযরত আওলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণের প্রতি চরম ধৃষ্টতার শামিল। সাথে সাথে মানুষের অন্তর থেকে আওলিয়া-ই-কিরাম বা আহ্লে তাসাউফগণের মহব্বত ও তাযীম-তাকরীম দূরীভূত করার অপচেষ্টা বৈ কিছুই নয়, যা সূক্ষ্মভাবে ফিকির করলে নবী-রাসূল ও সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের মহব্বত নষ্টকরণের প্রচেষ্টার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে।
            কারণ তারা যে বলেছে, “কোন ব্যক্তি যদি হযরত আব্দুল কাদির জ্বিলানী (রঃ), জোনায়েদ বাগদাদী, হাছান বছরী (রঃ)গণের ন্যায় ওলী আল্লাহ্ও হয়ে যায়, আর তার স্ত্রী বা সন্তান যদি দ্বীনের উপর না থাকে, তবে সে দ্বীনদার থাকতে পারবেনা। অর্থাৎ গোমরাহ্ হয়ে যাবে।
            তবে এ বক্তব্য দ্বারা কি এটা বুঝা যায় না যে, গাউছুল আযম, বড় পীর আব্দুল কাদির জ্বিলানী (রঃ), সাইয়্যিদুত্ ত্বাইফাহ্, হযরত জোনায়েদ বাগদাদী (রঃ) ও ইমামুশ্ শরীয়ত ওয়াত্ ত্বরীক্বত হযরত হাসান বছরী (রঃ)গণের স্ত্রী বা সন্তানগণ যদি দ্বীন বা হিদায়েতের উপর না থাকতেন, তবে তারা এতবড় ওলী আল্লাহ্ হওয়া সত্বেও দ্বীনের উপর থাকতে পারতেন না বা গোমরাহ্ হয়ে যেতেন? (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক)
            আরো প্রমাণিত হয় যে, পূর্ববর্তী যে সকল নবী-রাসূল, সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) ও আওলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণের স্ত্রী বা সন্তানগণ দ্বীনের উপর ছিলেন না, তাঁরা নিজেদের দ্বীনদারীকে টিকিয়ে রাখতে পারেননি বা গোমরাহ্ হয়ে গেছেন (নাউযবিল্লাহ মিন যালিক)। এ ধরণের আক্বীদা পোষণ করা বা বক্তব্য পেশ করা মারাত্মক কুফরী।
            মূলতঃ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের এ বক্তব্য স্ত্রী বা সন্তান দ্বীনের উপর না থাকলে দ্বীনদারী টিকিয়ে রাখা বা হিদায়েতের উপর থাকা সম্ভব নয়।মারাত্মক আপত্তিকর, ডাহা মিথ্যা, গোমরাহীমূলক ও নবী-রাসূল (আঃ) এবং আওলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণের শানের খেলাফ হওয়ার কারণে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
            কেননা হযরত আওলিয়া-ই-কিরাম (রঃ) কেন, এমন অনেক নবী-রাসূল (আঃ) ছিলেন, যাঁদের অনেকের স্ত্রী বা সন্তান দ্বীনের উপর ছিলেন না। তাই বলে কি তাঁরা দ্বীনের উপর ছিলেন না বা গোমরাহ্ হয়ে গেছেন, তারা কি জংগলে বা ঝুপড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন?
            যেমন- হযরত লুত (আঃ)-এর স্ত্রী, হযরত নূহ্ (আঃ)-এর স্ত্রী ও পুত্র কেনান, হযরত আদম (আঃ)-এর ছেলে কাবিল তারা দ্বীনের উপর ছিলনা বা হিদায়েত লাভ করেনি।      অনুরূপ অনেক হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের মা-বাবা, ভাই-বোন, ইসলাম গ্রহণ করেনি বা হিদায়েত লাভ করেনি। আরো উল্লেখ করা যেতে পারে, মির্জা মাজহার জানজানান শহীদ (রঃ)-এর কথা, যিনি হাফেজে মাদারজাত ছিলেন, অথচ তাঁর স্ত্রী দ্বীনের উপর ছিলেন না।
            কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁরা সকলেই দ্বীনের উপর বা হিদায়েতের উপর পরিপূর্ণভাবে কায়েম ছিলেন। আরো বলতে হয় যে, কারো স্ত্রী বা সন্তান দ্বীনের উপর থাকলেই যে স্বামী বা পিতা দ্বীনের উপর থাকবে, তাও শুদ্ধ নয়। কেননা ফেরাউনের স্ত্রী হযরত আছিয়া (রাঃ) দ্বীনের উপর থাকা সত্ত্বেও ফেরাউন কাফের হয়ে মারা গিয়েছে। অনুরূপ হযরত আলী (রাঃ) বিশিষ্ট সাহাবী ও খোলাফা-ই-রাশেদীন-এর অন্তর্ভূক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁর পিতা আবূ তালিব ইসলাম গ্রহণ করেনি, এরূপ আরো বহু মেছাল মওজুদ রয়েছে।
            যদি তাই হয়ে থাকে, তবে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য কি করে শরীয়তসম্মত হতে পারে? বরং তাদের উপরোক্ত বক্তব্য শরীয়তের খেলাফ তো অবশ্যই, উপরন্ত নবী-রাসূল (আঃ), সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) ও আওলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণের শানের খেলাফ হওয়ার কারণে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। এ ধরণের বক্তব্য প্রদান ও আক্বীদা পোষণ করা হতে বিরত থাকা ও খালেছ তওবা করা তাদেরসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্যই ফরজ-ওয়াজিব।
৬৮নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব
সুওয়াল ঃ- আমাদের টঙ্গী বাড়ীস্থ মটুকপুর গ্রামে ব্যাপারী বাড়ীর সম্মুখস্থ মাদ্রাসায় গত ৬/৫/৯৭ইং তারিখে, একটি সামাজিক মিটিং বসেছিল। উক্ত মিটিং-এ প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের কথা উঠায়, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো- তাবলীগ বড়, না কোরআন শরীফ বড়? তখন সেখানে উপস্থিত চট্টগ্রামস্থ হাটহাজারী মাদ্রাসা হতে ফারেগ, মাওলানা আব্দুস সালাম বলে উঠলো- কোরআন থেকে তাবলীগ বড়অর্থাৎ কোরআন শরীফ থেকে বর্তমান প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুলী তাবলীগ বড় বা মর্যাদা সম্পন্ন।
            এখন আমাদের মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে সুওয়াল হলো- তার উক্ত বক্তব্যটি কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে কতটুকু সত্য? এর সঠিক জাওয়াব দিয়ে আমাদের ঈমান ও আমল হিফাযতে সাহায্য করবেন।
জাওয়াব ঃ-  হাটহাজারী মাদ্রাসা হতে ফারেগ, মাওলানা আব্দুস সালামের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই মনগড়া, বিভ্রান্তিকর, ধোকাবাজীমূলক ও কুফরী হয়েছে।
প্রথমতঃ চট্টগ্রামস্থ হাটহাজারী মাদ্রাসাহতে ফারেগ, তথাকথিত মাওলানা আব্দুস সালামের উক্ত বক্তব্য, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর নাযিলকৃত, আসমানী কিতাবসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কিতাব ও মহান আল্লাহ্ পাক-এর পবিত্র কালাম- কোরআন শরীফের এহানত ও অবমাননা হয়েছে, যা স্পষ্টতঃ গোমরাহী ও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। এ ধরণের লোকদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ করেন,
يضل به كثيرا ويهدى به كشيرا وما يضل به الا الفاسقين.
অর্থঃ- কোরআন শরীফকে (এহানত বা অবমাননা করার কারণে) বহু লোক গোমরাহ বা কাফের হয়ে গেছে। আর কোরআন শরীফকে (তাযীম-তাকরীম করার কারণে) বহু লোক হিদায়েত প্রাপ্ত হয়েছে। মূলতঃ ফাসেক ব্যতীত কেউ গোমরাহ হয়না।” (সূরা বাক্বারা/২৬)
অর্থাৎ যারা চরম পর্যায়ের ফাসেক, তারাই কোরআন শরীফের এহানত বা অবমাননা করে, যার ফলে তারা হিদায়েতের পরিবর্তে গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে কাফেরে পরিণত হয়ে যায়। যেমনটি হয়েছে- ফাসেক মাওলানা আব্দুস সালামের ক্ষেত্রে।
            এ প্রসঙ্গে আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বর্ননা করেন যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেন,
ان الله يرفع بهذا الكتاب اقواما ويضع به اخرين.
অর্থঃ- নিশ্চয় আল্লাহ্ পাক এ কোরআন শরীফের দ্বারা অনেক সম্প্রদায় বা লোকদেরকে সম্মাণিত করেছেন। আর এ কোরআন শরীফকে অবমাননা করার কারণে অনেক লোক ধ্বংস বা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।” (মুসলিম, মেশকাত, শরহে নববী, মেরকাত ুময়াত, আশয়াতুল ুময়াত শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)
                        অর্থাৎ যাঁরা কোরআন শরীফকে তাযীম-তাকরীম ও অনুসরণ-অনুকরণ করেছেন, তাঁরা সম্মাণিত ও হিদায়েত প্রাপ্ত হয়েছেন, তাঁরা মহান আল্লাহ্ পাক-এর সন্তুষ্টি লাভ করেছেন। আর যারা কোরআন শরীফকে অনুসরণ-অনুকরণ করেনি বরং কোরআন শরীফকে এহানত বা অবমাননা করেছে, তারা গোমরাহী ও কুফরীতে নিপতিত হয়েছে তথা; আল্লাহ্ পাক-এর অসন্তুষ্টির কারণে চির জাহান্নামী হয়েছে।
            মেছাল স্বরূপ উল্লেখ করা যেতে পারে, কাট্টা কাফের, ইসলামের পরাজিত শত্রূ, চির লানতী আবূ জেহেলের কোরআন শরীফের প্রতি বিদ্বেষ, এহানত ও অবমাননা করার পরিণাম সম্পর্কিত ঘটনাটি।
            কিতাবে উল্লেখ আছে যে, মহান আল্লাহ্ পাক যখন সূরা আর রাহ্মাননাযিল করলেন, তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণকে লক্ষ্য করে বললেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছ কি? “সূরা আর রাহ্মানপবিত্র ক্বাবা শরীফে গিয়ে তিলাওয়াত করতে পারবে?” তখন বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) দাঁড়িয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমি তিলাওয়াত করতে পারবো। নির্দেশ পেয়ে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) পবিত্র ক্বাবা শরীফে গিয়ে সূরা আর রাহ্মানতিলাওয়াত করতে লাগলেন,এমতাবস্থায় আবু জেহেল এসে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কান মোবারকে খুব জোরে আঘাত করলো, যার ফলে তাঁর একটি কান নষ্ট হয়ে যায়। তিনি আঘাত পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে হাজির হন।  তখনই  হযরত জিব্রাঈল (আঃ) অপর দিক থেকে হাসতে হাসতে উপস্থিত হলেন। হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে জিব্রাঈল! আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কাঁদছে, আর আপনি হাসছেন? হযরত জিব্রাঈল (আঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, এ কথার জবাব কিছুদিন পরে দিব।
            এদিকে মদীনা শরীফে হিজরত করার পর যখন বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়, সে যুদ্ধে কোরআন শরীফকে অবমাননাকারী আবূ জেহেল নিকৃষ্টভাবে মারা যায়। যুদ্ধ শেষে হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) যুদ্ধের ময়দানে যেয়ে আবু জেহেলকে অর্ধমৃত অবস্থায় দেখতে পান। অতঃপর তরবারী দ্বারা আবূ জেহেলের মস্তক শরীর থেকে পৃথক করে, কানের ভিতর রশি ঢুকিয়ে ছেঁচড়াতে ছেঁচড়াতে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবার শরীফে উপস্থিত হন। আর তখনই হযরত জিব্রাঈল (আঃ) হাসতে হাসতে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সেদিন হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) কাঁদতে কাঁদতে আপনার দরবারে উপস্থিত হয়েছিলেন, আর আমি হাসতে হাসতে এসেছিলাম। তার কারণ বর্ণনা করার জন্যই আমি আজ এখানে উপস্থিত হয়েছি।
            হযরত জিব্রাঈল (আঃ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবূ জেহেল মক্কা শরীফে কোরআন শরীফকে অবমাননা করে, হযরত আব্দুল্লাহ্্ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কানে আঘাত করে, কান নষ্ট করে দিয়েছিল। ফলে আল্লাহ্ পাক হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ)কে কানের বদলে কান আর অতিরিক্ত দিয়েছেন মাথা। অর্থাৎ এর কারণে আবূ জাহেল কাফের হিসেবে মরে চির জাহান্নামী হয়েছে।
            হাটহাজারীর উক্ত জাহেল মাওলানা যেহেতু কোরআন শরীফকে এহানত বা অবমাননা করেছে, সেহেতু সে যদি জন সমক্ষে খালেছ তওবা না করে, তবে তার অবস্থাও আবূ জেহেলের ন্যায় হবে।
দ্বিতীয়তঃ হাটহাজারী ফারেগ উক্ত জাহেল মাওলানার বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, মাওলানা ইলিয়াস সাহেব প্রবর্তিত প্রচলিত ৬ (ছয়) উসূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের মর্যাদা বা ফযীলত মহান আল্লাহ্ পাক-এর চেয়েও বেশী। (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক) যা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণই খেলাফ এবং কাট্টা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
            মূলতঃ আল্লাহ্ পাক-এর যেরূপ মর্যাদা, আল্লাহ্ পাক-এর কালাম পবিত্র কোরআন শরীফেরও তদ্রুপ মর্যাদা। পবিত্র কোরআন মজীদের মর্যাদা-মর্তবা ও মাহাত্ম-বড়ত্ব সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,
القران هو كلام الله الذى نزل به روح الامينعلى قلب رسول الله محمدبن عبد اله صلى الله عليه وسلم بالفاظ العربية معنيها الحقة المبؤبسورة الفاتحة والمختوم بسورة الناس المنقول الينا بالتواتر وانه محفوظ فى الزيادة والنقصان.
অর্থঃ- পবিত্র কোরআন শরীফ হলো মহান আল্লাহ্ পাক-এর কালাম, যা হযরত জিব্রাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে হযরত আব্দুল্লাহ্ (রাঃ)-এর সম্মানিত পুত্র হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপরে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। যার সম্পূর্ণ অর্থ সত্য ও সঠিক। যার শুরু সূরা ফাতিহা ও শেষ সূরা নাস। যা আমাদের নিকট মাতওয়াতির বর্ণনায় পৌঁছেছে এবং উহা (সকল প্রকার) বেশী কম (পরিবর্তন, পরিবর্ধন) থেকে সংরক্ষিত (ইল্মু উছূলিল ফিক্বহ্ও সমূহ উসূলের কিতাব)
            মহান আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন শরীফের মর্যাদা-মর্তবা ও বিশুদ্ধতা সম্পর্কে বলেন,
ذالك الكتاب لاريب فيه.
অর্থঃ- ইহা এমন এক কিতাব যাতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই।অর্থাৎ বিন্দুমাত্রও ভুল-ত্রুটি নেই। (সূরা বাক্বারা/২)
            উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কোরআন শরীফ আল্লাহ্ পাক-এর কালাম, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর নাযিলকৃত, যার মধ্যে কমানো-বাড়ানো কুফরী এবং যার মধ্যে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই, যা সম্পূর্ণই বিশুদ্ধ ও নির্ভুল। যার উপর ঈমান আনা সকলের জন্যই ফরজ। আর প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ হচ্ছে- মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের স্বরচিত বা প্রবর্তিত মত-পথ, যা  বিদ্য়াত। এছাড়া মিথ্যা, বানোয়াট ও কুফরীমূলক আক্বীদা মিশ্রিত। সুতরাং এরূপ ভুল-ত্রুটি যুক্ত ও কুফরী আক্বীদা মিশ্রিত একটি জামায়াতকে কি করে কোরআন শরীফের চেয়ে বড় ও মর্যাদা সম্পন্ন বলা যেতে পারে? মূলতঃ এরূপ বলা স্পষ্ট কুফরী। যে এরূপ বলবে বা আক্বীদা পোষণ করবে, সে কাফের হয়ে যাবে।   
            আল্লাহ্ পাক অন্যত্র বলেছেন, 
كتاب انزلناه اليك لتخرح الناس من الظلمات الى النور.
অর্থঃ- পবিত্র কোরআন শরীফ এমন কিতাব যা আমি (আল্লাহ্) আপনার উপরে অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষকে গোমরাহী থেকে হিদায়েতের দিকে নিতে পারেন।” (সূরা ইব্রাহীম/১)
            উক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কোরআন শরীফ মানুষদেরকে গোমরাহী থেকে হিদায়েতের দিকে নিয়ে যায়। আর মাসিক আল বাইয়্যিনাতে প্রদত্ত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কিত ফতওয়া ও হাটহাজারী হতে ফারেগ  জাহেল মাওলানা আব্দুস সালামের বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত মানুষদেরকে হিদায়েত থেকে গোমরাহীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যদি তাই হয়ে থাকে, তবে সে জামায়াতকে কোরআন শরীফের চেয়ে বড় ও মর্যাদাবান বলা কি করে জায়েয হতে পারে। মূলতঃ সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়েয।    আল্লাহ্ পাক আরো বলেন,
انا نحن نزلنا الذكر واناله لحافظون.
অর্থঃ- নিশ্চয়ই আমি কোরআন শরীফ অবতীর্ণ করেছি আর আমি নিজেই উহার হিফাযতকারী” (সূরা হিজর/৯)
            আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআন শরীফের মর্যাদা-মর্তবা ও সংরক্ষণ সম্পর্কে আরো বলেন,

بل هو قران محيد فى لوح محفوظ.
অর্থঃ- বরং ইহা এমন সম্মানিত কিতাব, যা লৌহে মাহ্ফুজে সংরক্ষিত ছিল (সূরা বুরূজ/২১-২২)
            আর আখেরী নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فضل كلام الله على سائر الكلام كفضل الله على خلقه.
অর্থঃ- অন্য সমস্ত বাক্যের (কথার) উপরে আল্লাহ্ পাক-এর কালাম (কোরআন শরীফ)-এর এত অধিক ফযীলত যেমন মহান আল্লাহ্ পাক-এর ফযীলত সমস্ত মাখলুকাতের উপরে। (তিরমিযী, দারেমী, বায়হাক্বী, মেশকাত, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতর লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)
            অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ পাক হচ্ছেন- সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা। আর যা তিনি সৃষ্টি করেছেন তা সব হচ্ছে মাখলুকাত। কিন্তু কোরআন শরীফ হলো গায়রে মাখলুক ও আল্লাহ্ পাক-এর কালাম।         সুতরাং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ পাক-এর সাথে যেমন কোন সৃষ্ট জীবের তুলনা হতে পারেনা তদ্রুপ আল্লাহ্ পাক-এর পবিত্র কালাম (কোরআন শরীফ যা গায়রে মাখলুক)-এর কোন তুলনা হতে পারেনা।           তাই আল্লাহ্ পাক সূরা ইখলাছে এরশাদ করেন,

ولم يكن له كفوا احد.
অর্থঃ- আল্লাহ্ পাক-এর সমকক্ষ কেউ নয়।
            বড় হওয়ার তো প্রশ্নই উঠেনা।
            উপরোক্ত দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, কোরআন শরীফকে প্রচলিত তাবলীগের চেয়ে ছোট ও কম মর্যাদা সম্পন্ন মনে করা চরম জাহেলী ও স্পষ্ট কুফরী।
            কারণ প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ-এর বাণী মাওলানা ইলিয়াছ সাহেব ১৩৪৫হিঃ সনে অর্থাৎ প্রায় ৭৩ বছর পূর্বে নিজের সমঝ অনুযায়ী প্রচলিত তাবলীগের উদ্ভাবন করে। যার নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা সম্পূর্ণরূপেই ইলিয়াস সাহেবের তৈরীকৃত যা স্বয়ং আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ), ইমাম-মুজ্তাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরাম (রঃ)গণ যে নিয়মে তাবলীগ করেছেন, তার পরিপন্থী। যদিও ইলিয়াস সাহেবের এই তাবলীগে সামান্যতম কিছু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে। তারপরেও প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূলী, ইলিয়াসী তাবলীগকে শুধুমাত্র মক্তবী শিক্ষার সাথে তুলনা করাও দুস্কর। কারণ সম্পূর্ণ ইসলামী শিক্ষাকে ১০০ ভাগ ধরলে প্রচলিত তাবলীগের ৬ (ছয়) উছুলে মাত্র ৫% মানের ইসলামী শিক্ষাও দেয়া হয় না। (এ বিষয় মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৪১তম সংখ্যায় বিস্তারিত ছকসহ আলোচিত হয়েছে)
 এ ছাড়াও প্রচলিত তাবলীগের মধ্যে রয়েছে বহু মাওলানা আব্দুস সালাম, যাদের কুফরী মূলক আক্বীদা ও অসংখ্য ভুলভ্রান্তি। যা মুসলমানদেরকে ঈমান ও ইসলাম থেকে গোমরাহী ও কুফরীর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যার কিছুমাত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৩৫ থেকে ৪৬তম সংখ্যা পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে।
            তাহলে কিভাবে প্রচলিত তাবলীগকে কোরআন শরীফের চেয়ে বড় অর্থাৎ কোরআন শরীফ তাবলীগের চেয়ে কম মর্যাদাবান বলা যেতে পারে?
            মূলতঃ এ সকল লোকদের সম্পর্কেই মহান আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেছেন,
افلا يتدبرون ......... على قلوبهم اقفالها.
অর্থঃ- তারা কি কোরআন শরীফ সম্পর্কে ফিকির করেনা? নাকি তাদের অন্তরে তালা (মোহর) মারা হয়েছে?” (সূরা মুহাম্মদ/২৪)
            মহান আল্লাহ্ পাক অন্যত্র আরো বলেছেন,

لهم قلوب لايفقهون بها ولم اعين لا يبصرون بها ولهم اذان لا يسمعون بها انولئك كالا نعام بل هم اضل اولئك هم الغافلون.
অর্থ ঃ- তাদের অন্তর রয়েছে, কিন্তু তারা কিছুই বুঝেনা, তাদের চক্ষু রয়েছে, অথচ তারা দেখেনা। তাদের কান রয়েছে উহা দ্বারা তারা শ্রবণ করেনা। তারা প্রকৃতপক্ষে চতুষ্পদ জন্তুর মত এবং তার চেয়ে নিকৃষ্ট। প্রকৃতপক্ষে তারাই গাফেল।” (সূরা আরাফ/১৭৯)
            উল্লেখ্য যে, সাধারণভাবে তাবলীগ বলতে যা বুঝায় তা অনেক ব্যাপক। তবে তাও কোরআন শরীফের অসংখ্য হুকুম- আহ্কামের মধ্যে একটি হুকুম। যে সম্পর্কে আল্লাহ্ পাক বলেন,
يا ايها الرسول بلغ ماانزل اليك من ربك.
অর্থঃ- হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার নিকট আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, আপনি তা প্রচার করুন।” (সূরা মায়েদা/৬৭)
            আর এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
بلغوا عنى ولو اية.
অর্থঃ- যদি আমার থেকে একটিমাত্র আয়াত ও তোমরা শিক্ষা কর তবে উহা প্রচার করো।” (বোখারী, ফাতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী)
            কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের উপরোক্ত নির্দেশ মোতাবেক তাবলীগ করেছেন সমস্ত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ), তাবেঈন (রঃ), ইমাম মুজ্তাহেদীন এবং আওলিয়া-ই-কিরাম (রঃ) ও বুযুর্গানে দ্বীন (রঃ)গণও। আর বর্তমানে যারা নায়েবে নবী বা ওয়ারেছাতুল আম্বিয়া তাঁরাও অনুরূপ তাবলীগ করছেন।এছাড়া যারা মাদ্রাসায় দর্স দিচ্ছেন,  কিতাবাদী লিখছেন, ইমামতী করছেন,   ওয়াজ-নছীহত ইত্যাদি করছেন তাদের   মাধ্যমেও তাবলীগের কাজ হয়।
            মূলতঃ উপরোক্ত সব কয়টাই তাবলীগের শাখা। প্রচলিত ছয় উছুলী ইলিয়াসী তাবলীগ ঐগুলোর তুলনায় যৎসামান্য ব্যতীত নয় (যদি আক্বীদা শুদ্ধ থাকে)।
তৃতীয়তঃ মাওলানা আব্দুস সালামের উপরোক্ত বক্তব্য থেকে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, সে ও তার সম আকীদাভুক্ত ব্যক্তিরা এরূপ মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, ধোকাবাজী ও অজ্ঞতামূলক কুফরী কথাগুলো সারা বিশ্বে প্রচার করে সাধারণ বা মুর্খ মানুষকে গোমরাহ্ করছে। এছাড়াও তারা তাদের দলে লোক ভিড়ানোর জন্য বিভিন্ন রকম ধোকাবাজীমূলক মিথ্যা কথার আশ্রয় নেয়, এদের সম্পর্কেই সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عن ابى هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- يكون فى اخر الزمان دجالون كازبون يأتونكم من الا حاديث يمالم تسمعوا اننم ولا ابائكم فاياكم واياهم لا يضلونكم ولا يفتنونكم.
অর্থঃ- হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত- হুজুরে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আখেরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবদিী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমনসব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি, সাবধান! তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাকবে, তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ্ করতে পারবে না এবং ফিৎনায় ফেলতে পারবেনা।” (মুসলিম, মেশকাত, শরহে নববী মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব)) 
            ধোকাবাজী সর্ম্পকে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
من غش فليس منا. 
অর্থঃ-যে ধোকা দেয়, সে আমার উম্মত নয়।
            আর মিথ্যা সম্পর্কে কোরআন শরীফে সূরা নহলে ১০৫নং আয়াত শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেন,
انما يفترى الكذب الذين لا يؤمنون.     
অর্থঃ-     নিশ্চয় যাদের ঈমান নেই, কেবল তারাই মিথ্যা বলে থাকে।
 এবং সূরা হজ্বের ৩০নং আয়াত শরীফে এরশাদ হয়েছে,

واجتنبوا قول الزور-                                  
অর্থঃ- তোমরা মিথ্যা কথা থেকে বিরত থাক।
            আল্লাহ্ পাক সূরা বাক্বারার ১০নং আয়াত শরীফে আরো বলেন,                      
ولهم عذاب اليم بما كانوا يكذبون.
অর্থঃ- তাদের মিথ্যারোপের কারণে তাদের জন্য কঠিন, যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।
            আর হাদীস শরীফে বলা হয়েছে,
انما الكذب لكل الذنوب ام-
অর্থঃ- নিশ্চয়ই মিথ্যা সমস্ত গুণাহের মূল।
            হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, “মুমিনের মধ্যে অন্য সকল দোষই অল্প-বিস্তর থাকা সম্ভবপর। কিন্তু গচ্ছিত সম্পদ আত্মসাত করা এবং মিথ্যা কথা বলার দোষ কিছুতেই থাকতে পারেনা।” (আহমদ, বায়হাক্বী)
            মূলতঃ তাদের এহেন ধোকাবাজীমূলক অপচেষ্টা কখনোই পূর্ণ হবেনা। কারণ আল্লাহ্ পাক বলেছেন,

وقل جاء الحؤ الباطل ان الباطل كان زهوقا.
অর্থঃ- হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি বলে দিন (তোমরা জেনে রাখ) সত্য এসেছে, মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে। আর মিথ্যা (অসত্য) অবশ্যই দূরীভূত হবে।” (সূরা বাণী ঈসরাঈল/৮১)
            উপরোক্ত সর্ব প্রকার আলোচনা থেকে এটা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, হাটহাজারীর ফারেগ জাহেল  মাওলানা আব্দুস সালামের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপেই কুফরী হয়েছে। যা আল্লাহ্ পাক-এর পবিত্র কালাম, সে কোরআন শরীফকে এহানত বা অবমাননা করা হয়েছে। ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক এরূপ ব্যক্তির ফায়সালা হলো- তাকে খালেছ তওবা করতে হবে। কেননা যে কুফরী করে, তার মাসায়ালা হলো- তার স্ত্রী তালাক হয় (যদি বিবাহিত হয়), হজ্ব বাতিল হয় (যদি হজ্ব করে থাকে), তার সকল নেক আমল বিনষ্ট হয়ে যায়। তওবা করে বিবাহ না দোহ্রালে স্ত্রীর সাথে সংসার করা যাবেনা। যদি সংসার করে তবে জ্বিনাকারীর গুণাহ্ হবে। সন্তান হলে, তা হালাল হবেনা। যদি হজ্বের সামর্থ্য থাকে, তবে পুণরায় হজ্ব করতে হবে, যদিও সে পূর্বে হজ্ব করে থাকে। তা না করলে কবীরা গুণাহ্ হবে এবং তার ওয়ারিছ সত্ব বাতীল হয়ে যাবে।
(১) আল্ ফিক্বহুল আকবর, (২) শরহে আক্বাইদে নস্ফী, (৩) আক্বাইদে হাক্কা, (৪) তাক্মীলুল ঈমান, (৫) দুররুল মোখতার, (৬) তাতারখানিয়া, (৭) ফতওয়ায়ে কাজীখান, (৮) বাহ্রুর রায়েক, (৯) ফতওয়ায়ে আলমগীরী, (১০) ফতওয়ায়ে আল্ বারুরিয়া, (১১) জামিউল ফুছুলীন এবং (১২) আল্ বায্যাজিয়া)
            অতএব মাওলানা আব্দুস সালাম ও প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের জন্য এ ধরণের কুফরীমূলক আক্বীদা ও বক্তব্য থেকে বিরত থাকা ফরজ/ওয়াজিব।
            আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে সকল প্রকার কুফরী আক্বীদা ও কুফরী আক্বীদাভূক্ত লোকদের থেকে হিফাযত করুন।    
পরিশিষ্ট
            সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক-এর, যাঁর খাছ মেহেরবাণীতে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে এত বিস্তারিত ও দলীল-আদিল্লা ভিত্তিক ফতওয়া শেষ করা সম্ভব হলো। এজন্য সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, শাফীউল মুজনেবীন, খতামুন্নাবিয়্যীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি জানাই অবর্ণনীয় ছালাত ও সালাম।
            প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রদত্ত ফতওয়ার ভুমিকায় প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ ও উদ্দেশ্য এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাতের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্তমান প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের বেশ কিছু লেখনী, বক্তব্য, বিবৃতি, আমল এবং আক্বীদা সত্যান্বেষী ও সমঝদার মুসলমানদের মাঝে নানাবিধ সংশয়সহ প্রশ্নের বা সুওয়ালের উদ্রেক করেছে। সেসব সুওয়ালসমূহ যা সংখ্যায় মোট ৬৮টি, তা মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৩৫তম সংখ্যা হতে বর্তমান ৪৬তম সংখ্যায় বিবৃত করা হয়েছে। এবং এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, প্রদত্ত ৬৮টি সুওয়ালের বাইরে আরো শত শত সুওয়াল আমাদের নিকট মওজুদ রয়েছে। ফতওয়ার কলেবর বৃদ্ধি হওয়ার কারণে সেগুলোর জাওয়াব দেয়া সম্ভব হলোনা। তবে বিশেষ প্রয়োজনে ভবিষ্যতে সেগুলোর জাওয়াব দেয়া যাবে ইন্শাআল্লাহ্। আর প্রদত্ত ফতওয়ার যেসব সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হয়েছে, তা যথাযথভাবে কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের তথা কিতাবের দলীলের ভিত্তিতেই জাওয়াব দেয়া হয়েছে। প্রদত্ত ফতওয়ার আলোকে সাব্যস্ত হয় যে-
(১)  আল্লাহ্ পাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, ইবাদতে জাহেরার সাথে সাথে ইবাদতে বাতেনাহ্ অর্থাৎ ইরফানে খোদাওয়ান্দী বা আল্লাহ্ পাক-এর মারিফত, মহব্বত হাছিল করার জন্য, যা কেবল ছদেক্বীন তথা ওলী আল্লাহ্গণের সোহবতের দ্বারাই সম্ভব।
(২) ইখলাছ ব্যতীত আমলের কোন মূল্যই আল্লাহ্ পাক-এর কাছে নেই। এজন্য ইল্মে তাসাউফ অর্জন করা ফরজে আইন। আর আহ্লে তাসাউফগণই কামিয়াব এবং তাসাউফের পথেই কামিয়াবী।
(৩) তাবলীগ দুপ্রকার- (ক) তাবলীগে আম, (খ) তাবলীগে খাছ। তাবলীগে আম- ফরজে কেফায়া আর তাবলীগে খাছ- ফরজে আইন।
(৪) মুবাল্লিগ দুপ্রকার- (ক) মুবাল্লিগে আম, যিনি শুধু তাবলীগে খাছ করবেন। তাবলীগে আম করা তার জন্য হারাম। আর মুবাল্লিগে খাছ- যিনি তাবলীগে আম ও খাছ উভয়টাই করবেন। মুবাল্লিগে খাছকে অবশ্যই হক্কানী-রব্বানী আলেম হতে হবে।
(৫) মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তাবলীগে আম করা হারাম। কিন্তু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অধিকাংশ লোক মুবাল্লিগে খাছ তো নয়ই, এমনকি তাদের মধ্যে অনেকেই মুবাল্লিগে আমও নয়।
(৬) দ্বীন প্রচার বা নেক আমল করার সাথে সাথে ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে, বিশেষ করে মৌলিক বিষয়সমূহে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে হবে এবং মুবাল্লিগে খাছ তথা হক্কানী ওলী আল্লাহ্গণের ন্যায় তাবলীগ করতে হবে।
(৭) প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের শিক্ষা মক্তবী শিক্ষার ন্যায়, যা মোট ইসলামী শিক্ষার একশত ভাগের পাঁচ ভাগ বা ৫% মাত্র। এটি কখনো একমাত্র রাস্তা নয়, বরং নিতান্তই মক্তবীমানের শিক্ষা।
(৮) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে মনে করে থাকে, তারা নবীওয়ালা ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের মত দ্বীনের কাজ করে থাকে, তা সম্পূর্ণই ভুল।
(৯) প্রচলিত তাবলীগের পথে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কোশেশ করলেও আল্লাহ্ পাক-এর মনোনীত তাবলীগের হুকুম আদায় হবেনা এবং আল্লাহ্ পাক-এর মহব্বত-মারিফত ও সন্তুষ্টির বিন্দুমাত্রও হাছিল হবেনা।
(১০) প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতে শুধুমাত্র ইল্মে ফিক্বাহ্রই যৎসামান্য শিক্ষা দেয়া হয়। আর ইসলামী শিক্ষার অর্ধেক ইল্মে তাসাউফের কিছুই শিক্ষা দেয়া হয়না। কাজেই তাদের শিক্ষা অসম্পূর্ণ বা নাকেছ। তাই সারা জীবন এখানে ব্যয় করলে চলবেনা বরং পরবর্তী শিক্ষা, বিশেষ করে ফরজ পরিমাণ ইল্মে তাসাউফ অর্জন করতে হবে, নচেৎ ফরজ তরকের গুণাহ্ তথা ফাসেক-ফুজ্জারের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকতে হবে।
(১১) ইখলাছ অর্জন করতে হলে, হুজুরী ক্বাল্বের সাথে নামাজ আদায় করতে হলে এবং অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হলে অবশ্যই একজন কামিল মুর্শিদের নিকট বাইয়াত হয়ে অন্ততঃ বেলায়েতে আম হাছিল করতে হবে, যা সকলের জন্যই ফরজে আইন। নচেৎ ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাবলীগ করলেও ইখলাছ অর্জিত হবেনা।
(১২) মাওঃ ইলিয়াস সাহেব যে বুঝের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সূচনা করেছেন, তা পরিপূর্ণরূপেই গোমরাহী ও ওয়াসওয়াসা মূলক। বিশেষতঃ তিনি মাদ্রাসায় পড়ানো ও মুরীদ করা সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা চরম আপত্তিকর, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক এবং এর সাথে তিনি যে ৬ (ছয়) উছূল বা ৫% ইসলামী শিক্ষাকে একমাত্র পথ বলেছেন, তাও গোমরাহীমূলক।
(১৩) মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের মলফুযাতসহ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত যে সকল কিতাবসমূহে আপত্তিকর, কোরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী ও কুফরীমূলক লেখা রয়েছে, সে সকল কিতাবসমূহ সংশোধন করা অথবা সেগুলো বাদ দিয়ে ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীর কিতাবসমূহ পড়া বা অনুসরণ করা ফরজ।
(১৪) যদি প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা হক্ব মত ও হক্ব পথে কায়েম থাকতে চায়, তবে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে তাদের যে সকল আপত্তিকর, কোরআন-সুন্নাহ্ বিরোধী ও কুফরীমূলক আক্বীদা লেখনী ও বক্তব্য বিবৃত হয়েছে, তার থেকে খালেছ তওবা করতে হবে এবং তারা যে এ আক্বীদায় বিশ্বাসী নয়, তা কিতাব লিখে প্রকাশ্যে ঘোষণা দিতে হবে এবং ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানী তথা আওলিয়া-ই-কিরামগণের অনুকরণে তাবলীগ করতে হবে।
            নিম্নে প্রদত্ত ফতওয়ায় বিবৃত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবের ও তাদের মাঝে প্রচলিত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো-
* তাদের মধ্যে স্বয়ং আল্লাহ্ পাক সম্পর্কে ভুল ও মনগড়া আক্বীদা রয়েছে (৩৮, ৫১নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মর্যাদা সম্পর্কিত গোমরাহী ও কুফরীমূলক আক্বীদা রয়েছে। (৩৯, ৪১, ৪২, ৬১নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          অন্যান্য আম্বিয়া (আঃ)-এর প্রতিও বিশেষ কুফরীমূলক আক্বীদা রয়েছে- (৫, ২৬, ৪০, ৪৩, ৪৬নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)-এর প্রতিও কুফরী আক্বীদা রয়েছে- (২৮, ৩০, ৩৩, ৪৪, ৪৫নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          পবিত্র কোরআন শরীফ সম্পর্কে মনগড়া ও গোমরাহীমূলক আক্বীদা রয়েছে- (৯, ১২, ১৯নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          হাদীস শরীফ সম্পর্কেও ভুল ও গোমরাহী আক্বীদা রয়েছে- (৩৪, ৬২নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          সম্মানিত আলেম বা আহ্লে তাসাউফ, ওলী আল্লাহ্গণ, তথা পীর সাহেবগণ সম্পর্কে চরম মিথ্যা, গোমরাহী ও কুফরীমূলক আক্বীদা রয়েছে- (৬, ১৫, ১৮, ৪৬, ৫২, ৬০নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          উম্মতে মুহম্মদী বা মুসলমানদের সম্পর্কে মারাত্মক মনগড়া, বিশেষ কুফরী ও চরম গোমরাহী মূলক আক্বীদা রয়েছে- (১১নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          ইল্মে তাসাউফ সম্পর্কে বিশেষ গোমরাহী ও বিদ্য়াতী আক্বীদা রয়েছে- (৭, , ২৯, ৬৪নং সুওয়াল-জাওয়াব)
*          ইল্মে ফিক্বাহ্ সম্পর্কেও তারা চরম গোমরাহীতে রয়েছে- (২৩, ২৯, ১৪নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          এমনকি সাধারণ মাসায়েল সম্পর্কেও তাদের মাঝে গোমরাহী রয়েছে। (৪৮, ৫০, ৫৩নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          বিধর্মীদের সাথে মোশাব্বা রাখাও তারা জায়েয মনে করে- (৫৪, ২৭নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তারা তাদের উছুলভূক্ত দাওয়াতের ক্ষেত্রে কোরআন-হাদীস বহির্ভূত ফযীলত বর্ণনা করাও জায়েয মনে করে- (৫৫নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তারা তাদের উছুল ভিত্তিক আমল ও মারকাজ সম্পর্কে চরম বিভ্রান্তিকর ও গোমরাহীমূলক আক্বীদা পোষণ করে- (১০, ১৭, ৫৬নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তারা মনে করে, তাদের আক্বীদাভূক্ত লোকেরাই যাকাত পাবার হক্বদার। (২০নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তারা মনে করে থাকে, তাদের ৬ (ছয়) উছুলের দ্বারাই জ্বিহাদে আকবরের কাজ হচ্ছে- (২১নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তারা তাদের গাশ্ত করা সম্পর্কে নানা কুফরী গোমরাহী ও বিদ্য়াতী আক্বীদা পোষণ করে থাকে- (২৫, ২২, ৬৩নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তারা তাদের চিল্লা সম্পর্কেও চরম আপত্তিকর ও কুফরী আক্বীদা পোষণ করে থাকে- (৬, , ১৮নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তাদের ইজতেমা সম্পর্কেও বিশেষ গোমরাহী ও কুফরীমূলক আক্বীদা পোষণ করে থাকে- (১৩, ১৬নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তারা তাদের ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক শিক্ষাকেই পরিপূর্ণ ইসলামী শিক্ষা মনে করে থাকে, অথচ যা মান হিসেবে মোট ইসলামী শিক্ষার ৫%ও নয় (৬২নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তাদের উছুল ভিত্তিক দাওয়াতের ক্ষেত্রে তারা মনগড়া, ভিত্তিহীন কোরআন-হাদীসের খেলাফ মুরুব্বীর দলীল দেয়া জায়েয মনে করে এবং তারা দাওয়াত সম্পর্কে হাজারো মনগড়া, ভুল, গোমরাহী ও কুফরীমূলক আক্বীদা পোষণ করে থাকে। যথা- (১৫, ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৪৪, ৪৭, ৪৯, ৫১, ৫২, ৫৪নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তারা মনে করে, তাদের উছুল ভিত্তিক কাজই অন্য সকল দ্বীনী কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। যার তুলনায় অন্য কোন শ্রেষ্ঠ কাজ হতে পারেনা এবং তাদের উছুল ভিত্তিক তাবলীগে অংশ গ্রহণ না করলে ও চিল্লা না দিলে ঈমান, এক্বীন সহীহ্ হয়না। তারাই একমাত্র হিদায়েতের উপর রয়েছে, বাকী সকলেই গোমরাহ। আসল কাজের তরীক্বা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত থেকেই শিখতে হবে এবং তাবলীগ জামায়াতই একমাত্র  নাযাতের পথ এবং ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফ ব্যতিরেকেই ও উছুল ভিত্তিক তাবলীগ এবং তদীয় দোয়া ও তাসবীহ্র দ্বারাই দিল ইছলাহ্ হয় ও ইখলাছ হাছিল হয়। (১, , , ৪ ও ৬৪নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
*          তাদের মতে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ফযীলত বা মর্যাদা কোরআন শরীফের চেয়েও বেশী। (৬৮নং সুওয়াল ও জাওয়াব)
            পাঠকগণের সুবিধার্থে  মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৩৫-৪৬তম সংখ্যায় প্রকাশিত ও সুওয়াল সমূহে উল্লেখকৃত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর ও কুফরীমূলক বক্তব্য ও আক্বীদাসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো ঃ-
(১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের লিখিত কিতাবে একথা উল্লেখ আছে যে, মূর্খ হোক, আলেম হোক, ধনী হোক, দরিদ্র হোক, সকল পেশার সকল মুসলমানের জন্য তাবলীগ করা ফরজে আইন। (হযরতজীর মাল্ফূযাত-৪ পৃষ্ঠা-৭, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৫৩, তাবলীগে ইসলাম পৃষ্ঠা-৩, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ পৃষ্ঠা-২২)
(২) মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের মাল্ফুযাতসহ আরো কিছু কিতাবে লেখা আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত অনন্য ধর্মীয় তরীক্বা, যা সকল দ্বীনী আন্দোলনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত, যার থেকে ভাল তরীক্বা আর হতে পারেনা। (হযরতজীর মাল্ফূযাত-২৯ পৃষ্ঠা-২২, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৫, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন পৃষ্ঠা-৪৯, তাবলীগ জামায়াতের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত ১ম; খন্ড, পৃষ্ঠা-৫৬)
(৩) প্রচলিত তাবলীগের কেউ কেউ বলে থাকে যে, প্রচলিত ছয় উছূলী তাবলীগে অংশ গ্রহণ না করলে ও চিল্লা না দিলে ঈমান ও এক্বীন সহীহ্ হয়না। তাই সাধারণ লোক ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন চিল্লার দরকার।
(৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের কেউ কেউ অনেক সময় বলে থাকে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা ছাড়া আর সকলেই গোমরাহ্। অর্থাৎ একমাত্র তারাই হিদায়েতের উপর রয়েছে।
(৫) মুহম্মদ মুযাম্মিলুল হক লিখিত- তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে ১০ দফানামক কিতাবের ১৪নং পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, “প্রচলিত তাবলীগ হচ্ছে নবীওয়ালা কাজ।
(৬) প্রচলিত তাবলীগ ওয়ালারা বলে থাকে যে, পীর সাহেবগণের যেখানে শেষ, তাবলীগ ওয়ালাদের সেখানে শুরু। অতএব পীর সাহেবদের ইছলাহ্র জন্য দশ চিল্লার দরকার।
(৭) তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের মাল্ফূযাতের ৫৩নং পৃষ্ঠার ৮০নং মল্ফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগের বা অতরীক্বত পন্থীদের, তাসাউফের বা সূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়।
(৮) হযরতজীর মলফুযাত নামক কিতাবের ১৫ পৃষ্ঠার ৩নং মলফূযে ও তাবলীগ জামাতের হাক্বীক্বত নামক কিতাবের ৭২ পৃষ্ঠায় একথা উল্লেখ আছে যে, “তরীক্বত পন্থায় কিছু কিছু বিদ্য়াত রয়েছে।
(৯) দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন (মুহম্মদ ওবায়দুল হক রচিত) ১১৬ পৃষ্ঠা, পস্তী কা ওয়াহেদ এলাজ ৯ পৃষ্ঠা, মূলঃ- মাওঃ এহ্তেশামুল হাসান কান্দলভী, অনুবাদক- ছাখাওয়াত উল্লাহ। তাবলীগী নেছাব ১১ পৃষ্ঠা, ফাজায়েলে তাবলীগ (মূলঃ- হযরত মাওলানা জাকারিয়া, অনুবাদক- আম্বর আলী) ৯ পৃষ্ঠা, তাবলীগে ইসলাম, লেখক- আব্দুস সাত্তার ত্রিশালী ৯ পৃষ্ঠা ও মাওলানা শাহ্ মনিরুজ্জামান লিখিত- আমি কেন তাবলীগ করি ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “তাবলীগ তথা দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কারণেই হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতকে শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া হয়েছে, অন্য কোন কারণে নয়।দলীল স্বরূপ তারা সূরা ইমরানের ১১০নং আয়াত শরীফ-
كنتم خيرامة اخرجت للناس- الخ
পেশ করে থাকে। (১০) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বেশ কিছু লোককে বলতে শুনেছি যে, তিন তাস্বীহ্ পাঠ করলেই বেহেশ্তে যাওয়া যাবে, অন্যথায় নয়।
(১১) মলফূযাতের ৪৩ পৃষ্ঠার ৪২নং মলফূযে এবং নবুওয়ত ও মাওঃ ইলিয়াছ নামক কিতাবের ৩০-৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “মুসলমান দুপ্রকার- একদল প্রচলিত তাবলীগের জন্য হিজরত করবে, দ্বিতীয় দল নুছরত বা সাহায্য করবে, এ দুদলই মুসলমান। অর্থাৎ যারা প্রচলিত তাবলীগও করবেনা আর তাবলীগ কারীদেরকে সাহায্যও করবেনা, তারা মুসলমান নয়।” (অনুরূপ তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মোঃ ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী ১৭৪ পৃষ্ঠা, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন? (লেখক- ওবায়দুল হক) ২১ পৃষ্ঠ, হযরতজীর কয়েকটি স্বরণীয় বয়ান, ২য় খন্ড ১১ পষ্ঠায় উল্লেখ আছে।)
(১২) ফাজায়েলে তাবলীগ-এর ৪নং পৃষ্ঠায়, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন, (লেখক- ওবায়দুল হক) ১১৮ পৃষ্ঠা ও তাবলীগে ইসলাম (লেখক- আব্দুল সাত্তার ত্রিশাল) নামক কিতাবের ৯ পৃষ্ঠার বক্তব্য দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, “সূরা হামীম সিজ্দার ৩৩নং আয়াত শরীফ-
(ومن احسن قولا ممن دعا الى الله- الخ)
প্রচলিত তাবলীগের জন্য খাছ। অর্থাৎ একমাত্র প্রচলিত তাবলীগ কারীরাই এ আয়াত শরীফের পূর্ণ মেছদাক্ব বা নমুনা।
(১৩) টঙ্গীর ইজ্তেমা এলে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রায় লোক সাধারণ লোকদের মাঝে একথা প্রচার করে থাকে যে, “বিশ্ব ইজ্তেমাই হচ্ছে- গরীবের হজ্ব। কেননা টঙ্গীর বিশ্ব ইজ্তেমায় গেলে হজ্বের সওয়াব পাওয়া যায়।
(১৪) মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের মলফূযাতের ১৮ পৃষ্ঠার ২৯নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, নামাজ-রোজা উচ্চাঙ্গের ইবাদত কিন্তু দ্বীনের সাহায্যকারী নয়।
(১৫) দাওয়াতে তাবলীগ” (আম্বর আলী কর্তৃক প্রণীত) নামক কিতাবের প্রথম খন্ড ৩৯ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকজন ইজ্তেমায়ী আমল করে, যার জন্য তারা আহ্লে তাসাউফগণ যারা ইনফেরাদী আমল করেন, তাদের থেকে অনেক বেশী সওয়াবের ভাগীদার হয়।
(১৬) আমাদের এলাকার তাবলীগ জামায়াতের এক আমীর আমাদের বললো যে, “টঙ্গীতে যে কয়দিন ইজ্তেমা সংঘটিত হয়, সে কয়দিন স্বয়ং হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে উপস্থিত থাকেন।
(১৭) প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ সাহেবের মলফূযাতের৪৯ পৃষ্ঠার, ৭৪নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, শুধুমাত্র জিহ¡ার দ্বারাই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, যা প্রচলিত তাবলীগ ওয়ালাদের মাঝেই বিদ্যমান।
(১৮) তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে- মূর্খ লোক চিল্লা দিলে আলেমের চেয়ে বেশী ফযীলত প্রাপ্ত হয়, আর মূর্খ লোক ইছলাহ্ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য তিন চিল্লা দরকার এবং তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে তেরো দফানামক কিতাবে ৭ পৃষ্ঠায় যা মুযাম্মিলুল হক উল্লেখ করেছেন, “মূর্খ লোক আমীর হওয়ার জন্য তিন চিল্লাহ্ যথেষ্ট, আর আলেমের জন্য প্রয়োজন সাত চিল্লার।
(১৯) প্রচালিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, প্রচলিত তাবলীগে গেলে সূরা তওবার ১১৯নং আয়াত শরীফ-
كونوا مع الصادقين.
অর্থঃ- তোমরা ছদেক্বীনদের সোহ্বত বা সংসর্গ লাভ কর।
            এ আয়াত শরীফের আমল করা হয়। অর্থাৎ তাবলীগে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে- ছদেক্বীনদের সোহ্বত লাভ করা।
(২০) মলফুযাতে ইলিয়াছনামক কিতাবের ৪৮ পৃষ্ঠার বক্তব্য দ্বারা বুঝা যায় যে, প্রচলিত তাবলীগ ওয়ালারাই যাকাত পাবার প্রকৃত হক্বদার।
(২১) তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্বনামক কিতাবের (লেখক- মাওঃ ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী) ১০৯ পৃষ্ঠায় ও তাবলীগে দাওয়াত কি এবং কেন?” নামক কিতাবের (লেখক- ওবায়দুল হক) ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে জ্বিহাদ পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান বা ছয় উছূলী তাবলীগই হচ্ছে- জ্বিহাদুল আক্বর। অনুরূপ তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা ও তার জবাব নামক কিতাবের যার মূল হযরত জাকারিয়া কর্তৃক লিখিত ৮৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে।
(২২) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা গাশ্তের গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে বলে থাকে যে, গাশ্ত ক্বাজা করা, নামাজ ক্বাজা করার চেয়েও কঠিন গুণাহের কারণ।
(২৩) হযরতজীর মালফুযাত নামক কিতাবের ১২৮ পৃষ্ঠার ২০১নং মালফুয এবং (মাওলানা ইসমাইল হোসেন, দেওবন্দী লিখিত) তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরুদায়িত্বনামক কিতাবের ১০১ পৃষ্ঠায় একথা লেখা আছে যে, ফাযায়েলের মর্যাদা মাসায়েলের চেয়ে বেশী।
(২৪) আপনাদের মাসিক আল বাইয়্যিনাতের২৬তম সংখ্যায় লিখেছেন যে, ভোট গণতন্ত্রের একটি অংশ আর গণতন্ত্র ইসলামে হারাম। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত, “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্বনামক কিতাবের ৭৫ ও ১২৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, ভোট দান প্রচলিত তাবলীগের ৬নং উছূলের মধ্যে পড়ে। অর্থাৎ ভোট দেয়াও তাবলীগের অন্তর্ভূক্ত।
(২৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা সাধারণ লোকদের তাবলীগের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যে গাশ্তের ফযীলত সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, গাশ্তকারীরা যে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, সে রাস্তায় যে ঘাস হয়, সে ঘাস যে গরু খায়, সে গরুর দুধ বা গোশ্ত যারা পান করবে বা খাবে, তারাও বেহেশ্তে যাবে।
(২৬) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সমর্থনপুষ্ট প্রায় কিতাবেই একথা লেখা আছে যে, নবী (আঃ)গণ কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল করেছিলেন। যেমন- হযরত আদম (আঃ) গন্দম খেয়ে  ভুল করেছিলেন ও হযরত ইউনুস (আঃ) দাওয়াত না দিয়ে ভুল করেছিলেন ইত্যাদি। (মালফুযাতে শায়খুল হাদীস পৃষ্ঠা ২৩১, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন, দেওবন্দী পৃষ্ঠা ৬১)
(২৭) মৌলভী মুহম্মদ ইব্রাহীম কর্তৃক লিখিত- তাবলীগ জামায়তের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতনামক কিতাবের ১ম খন্ড ৩৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, খৃীষ্টান মিশনারীদের ন্যায় প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত কৃতিত্বের দাবীদার।
(২৮) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, বিদায় হজ্বের (খূৎবা) ভাষণ শ্রবণকালে হযরত সাহাবা ক্বিরাম (রাঃ)-এর, যাঁর ঘোড়ার মুখ যেদিকে ছিল, ভাষণ (খূৎবা) শেষ হওয়া মাত্র উনারা সেদিকেই প্রচলিত তাবলীগের কাজে ছুটেছেন।
(২৯) হযরত জাকারিয়া (রঃ) প্রণীত- তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা ও জবাব ৪৪ পৃষ্ঠায়, হযরতজীর মালফূযাত ২২ পৃষ্ঠা, মলফূয ২৯ পৃষ্ঠা, তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, (লেখক- মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী) ১১৫ পৃষ্ঠার বক্তব্য সমূহ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, “প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মাদ্রাসা কিতাবের প্রচার-প্রসার পছন্দ করেনা, খানকাহ্ শরীফ সম্পর্কেও ভাল ধারণা রাখেনা এবং মনে করে যে, সেগুলোর দ্বারা কমই ইসলামের খেদমত হয়ে থাকে। 
(৩০) মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী লিখিত তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্বনামক কিতাবের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, লক্ষাধিক সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের মধ্যে অধিকাংশই মূর্খ ছিলেন। (অনুরূপ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব, যার মূল হযরত জাকারিয়া (রঃ) প্রণীত- ১৩ পৃষ্ঠা, তাবলীগী জামায়াতের প্রধানের তর্ক ও ইচ্ছা নামক কিতাবের ৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে)
(৩১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা আরো বলে থাকে যে, টঙ্গীর ইজ্তেমায় অনেক বেশী লোক হয়, তাই নামাজে বড় জামায়াত হয়। আর বড় জামায়াতের ফযীলত বেশী এবং সেই উদ্দেশ্যও টঙ্গীর ইজ্তেমায় হাজির হওয়া উচিৎ।
(৩২) হযরতজীর মলফূযাত, পৃষ্ঠা-৪৭, ৫০নং মলফুয, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাবলীগী নেছাব পৃষ্ঠা ১৫, হযরতজী ইনয়ামের তর্ক ও বাহাছ পৃষ্ঠা ১২, তাবলীগ পরিচয় পৃষ্ঠা ১৭, তাবলীগ দর্পণ পৃষ্ঠা ৬২ ইত্যাদি কিতাবসমূহের বর্ণনা অনুযায়ী ইলিয়াস সাহেব বিশেষ স্বপে¦র মাধ্যমে এ তাবলীগের নির্দেশ পেয়েছেন। আবার কারো কারো মতে হিন্দু জমিদারদের কারণে মুসলমানগণ প্রায় হিন্দু হয়ে পড়লে, ইলিয়াস সাহেব এ তাবলীগের উদ্যোগ নেন। তাবলীগের কাজ হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পর ইলিয়াস সাহেবই পূনরুজ্জীবিত করেন।  
(৩৩) দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন” (লেখক- ওবায়দুল হক) নামক কিতাবের ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, তাবলীগের কাজ করার কারণেই মাত্র দশ হাজার সাহাবা কিরাম (রাঃ)-এর মাজার মক্কা ও মদীনা শরীফে আছে। উল্লেখ্য প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেক লোকও এই কথা বলে থাকে।
(৩৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে যে, তাদের প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের অনুসরণ করা উচিৎ, কেননা তারা বড় জামায়াত। কারণ হাদীস শরীফে রয়েছে যে, “তোমরা বড় জামায়াতের অনুসরণ কর। 
(৩৫) হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান লেখক, মাওলানা নোমান আহ্মদনামক কিতাবের ১৩ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা প্রতিয়মান হয় যে, সারা বছর প্রতি মাসে তিন দিন করে সময় লাগালে পুরা বছর আল্লাহ্র রাস্তায় কাটানো হয়েছে বলে গণ্য হবে। কারণস্বরূপ বলা হয়েছে, প্রতিটি নেক কাজের দশ গুণ সওয়াব হিসেবে এক দিনের কাজে ত্রিশ দিনের সওয়াব পাওয়া যাবে।
(৩৬) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের ফাযায়েল-ফযীলত সম্পর্কে নানা রকম কথা বলে থাকে। সে সমস্ত ফাযায়েল-ফযীলতের দলীল-আদিল্লা তলব করলে তারা তাদের মুরুব্বীদের দলীল দিয়ে থাকে। কোন অবস্থায়ই তারা কোরআন-সুন্নাহ্র দলীল পেশ করেনা। যা দাওয়াতে তাবলীগ, (আম্বর আলী লিখিত) ৮২ পৃষ্ঠা সুন্নী পরিচয় ও তাবলীগ পরিচয় কিতাব যা রেদওয়ানুল হক ইসলামাবাদী প্রণীত সে কিতাবের ৫৬ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারাও প্রতীয়মান হয়।
(৩৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের স্ত্রী লোকেরা মাহ্রাম পুরুষ ব্যতীত এক এলাকা বা শহর থেকে অন্য এলাকায় বা শহরে সফর করে থাকে, প্রচলিত তাবলীগের তালীম দেয়ার জন্য।
(৩৮) আল্লাহ্র রাস্তায় বের হলে ঘর সংসার আল্লাহ্ পাকই দেখবেন।একথা বলে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা অন্য লোকদেরকে প্ররোচিত করে। যার কারণে অনেক লোকই ঘর-সংসারের যথাযথ ব্যবস্থা না করে প্রচলিত তাবলীগে বের হয়ে যায়। অথচ এর ফলে তাদের বাড়ীর লোকজন প্রায়ই বিভিন্ন বর্ণনাতীত অসুবিধায় ভোগে। উল্লেখ্য আত্ তুরাগ, সম্পাদক হামীদ রশীদ মে/১৯৯৩ পৃষ্ঠা, দাওয়াতে তাবলীগ কি ও কেন নামক কিতাব, (লেখক- ওবায়দুল হক) ১৭ থেকে ২৬ পৃষ্ঠার  বর্ণনা দ্বারাও এই বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায়।
(৩৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, রাসূলের চেয়ে দ্বীনের মর্যাদা বেশী এবং আলাহ্ পাক নবী-রাসূলদের দ্বীনের জন্য কষ্ট দিয়েছেন, আর নবী-রাসূলগণও দ্বীনের জন্য কষ্ট করেছেন।
(৪০) হযরত ইউনুস (আঃ) সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হলো যে, দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ্ পাক হযরত ইউনুস (আঃ)কে বিপদে ফেলেছিলেন এবং তিনি সেখানে নিজের অপরাধ স্বীকার করে চল্লিশ দিন কাঁদা-কাটার পর আল্লাহ্ পাক তাঁর অপরাধ ক্ষমা করেন। এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, “দাওয়াত বন্ধ করার কারণে, আল্লাহ্ পাক হযরত ইউনুস (আঃ)কে অবশ্য গযবে ফেলিলেন .......।” “....... হযরত ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে ৪০ দিন আবদ্ধ থাকিয়া নিজ ক্রটি স্বীকার করিয়া তওবা .... করার কারণে বিপদ হইতে উদ্ধার পাইলেন।” (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব লেখক ইসাইল হোসেন দেওবন্দী পৃঃ৬২ ও ৮৯)
(৪১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা আরো বলে থাকে যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গারে হেরায় চিল্লা দেয়ার উছীলাই কোরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে বিবৃত হয়েছে- হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ৪০ দিন পর্যন্ত গারে হেরাপর্বতে থাকিয়া আল্লাহ্র ধ্যান ও যেকেরে চিল্লা দিলেন, যাহার ফলে তিনিও কোরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হইলেন। (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৯, লেখক ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী)
(৪২) হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অধিকাংশ লোকের আক্বীদা হলো যে, দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন। যেমন তাদের কিতাবে লিখিত হয়েছে, “হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম.... দীর্ঘকাল পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে প্রথমে ঈমানকে পরিপোক্ত করিয়াছেন ......। (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৭০ লেখক- ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী)
(৪৩) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, উম্মতে মুহম্মদীর কারামত আর পূর্ববর্তী নবীদের মোযেযা সমান কথা। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে লিখিত রয়েছে যে, “পূর্বেকার নবীদের মোযেযা আর হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মতের কারামত একই সমান।” (মালফুযাতে শায়খুল হাদীস পৃষ্ঠা-৩৬, মূল- মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী, অনুবাদক- আঃ জলীল)
(৪৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে থাকে যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) দীর্ঘকাল পর্যন্ত তাবলীগ করেই ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন। তাই ঈমান পরিপোক্ত ও সাহাবা-ই-কিরামদের মত কাজ করতে হলে প্রচলিত তাবলীগ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তদের বিশিষ্ট আমীর, মাওলানা ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী লিখিত তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্বনামক কিতাবের ৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, “হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)গণের ঈমান দীর্ঘকাল তাবলীগ করার কারণেই পরিপোক্ত বা মজবুত হয়েছে। তাই যার ঈমানের দাওয়াতের আমল নাই, তার ঈমান থাকিতে পারেনা।
(৪৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোাকেরা ক্ষেত্র বিশেষে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ) ভুল ত্রুটি করেছেন, একথা প্রচার করে থাকে। যা তাদের আমীর, মুরুব্বী এমনকি হযরতজীদের বয়ানে শোনা যায় ও লেখনীতে পাওয়া যায়। যেমন- হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়াননামক কিতাবের ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, “কিছু সাহাবী ওহুদ যুদ্ধে ভুলের স্বীকার হয়ে চীজ-আসবাব (গণীমতের মাল)-এর দিকে দৃষ্টি দিয়ে, গিরিপথ থেকে সরে এসে রাসূলের নির্দেশ অমান্য করায় ওহুদ যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে.....।অর্থাৎ কিছু সাহাবী অর্থলোভী ছিলেন, যার জন্যে ওহুদ যুদ্ধে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশ অমান্য করেন।
(৪৬) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, হিদায়েতের ক্ষেত্রে মূর্খরাই সমধিক উপযুক্ত। যেক্ষেত্রে নবীগণ এবং আলেমরা ফেল করে, সেখানেও মূর্খরা কৃতিত্ব দেখায়। এ প্রসঙ্গে ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী লিখিত তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্বনামক কিতাবের ১১৬ পৃষ্ঠায় একথা লেখা আছে যে, “..... অনেক স্থলে নবীগণ পর্যন্ত হিদায়েতে বিরাট সংকটে ও বিপদে পড়িয়াছিলেন, তাই অনেক স্থলে বিরাট আলেমও ফেল পড়িতেছে। কিন্তু মূর্খগণ তথায় দ্বীন জয় করিতেছে।
(৪৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রায়ই বলে থাকে যে, “ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগের তরতীব মোতাবেক সকল স্থানের সকল লোককে দাওয়াত দেয়া ফরজ বা জরুরী এবং এ দাওয়াত না দেয়ার কারণে যারা ঈমান হারা হয়ে মারা যাবে, তাদের জন্য যারা দাওয়াতের কাজ করবেনা অথবা জড়িত থাকবেনা, তাদেরকে আল্লাহ্ পাক-এর কাছে জবাবদিহি করতে হবে এবং তারা পাকড়াও হবে।উল্লেখ্য আম্বর আলী প্রণীত- দাওয়াতে তাবলীগ কিতাবের ৪৯ পৃষ্ঠায় এরূপ সমার্থবোধক বর্ণনা রয়েছে।
(৪৮) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের অনেকের আক্বীদা হলো যে, ধুমপান করা মোবাহ্। যার কারণে তাদের অনেককেই ধূমপান করতে দেখা না গেলেও তাদের মধ্যে যারা ধুমপান করে, তাদের প্রতি বিশেষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেখা যায়না। তাদের সাপ্তাহিক বয়ান এবং বার্ষিক ইজ্তেমায়ও নয়। তদুপরি তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা- ইলিয়াস সাহেবের বক্তব্যে ধুমপান দ্বারা বা হুক্কা-পানি দ্বারা যাতে দাওয়াতীদিগকে আপ্যায়ন করা হয়, সে পরামর্শ রয়েছে। যা হজরতজী মাওঃমুহম্মদ ইলিয়াছনামক কিতাবের ১৪৪ পৃষ্ঠায় (মূল- সৈয়দ আবুল হাসান নদভী, সংকলক- মুহীউদ্দীন খান, সম্পাদক- মাসিক মদীনা) লিপিবদ্ধ রয়েছে।
(৪৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, দাওয়াতের কাজে আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তা দিয়ে সাহায্য করে থাকেন। যদিও সে মূর্খ হয়ে থাকুক না কেন? আর শুধুমাত্র ইবাদতের কাজে আল্লাহ্ পাক ফেরেশ্তা দিয়ে সাহায্য করেন না, যদিও তিনি আল্লাহ্র রাসূল হয়ে থাকেন না কেন। এর উদাহারণ স্বরূপ তারা বলে থাকে যে, যেমন মক্কা শরীফে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজ পড়ছিলেন, তখন কাফেররা এসে তাঁর পিঠ মোবারকের উপর উটের নাড়ি-ভূড়ি চাপিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ফেরেশ্তারা এসে তাকে সাহায্য করেননি। তখন হযরত ফাতেমা (রাঃ) এসে সেই নাড়ি-ভুড়ি সরিয়ে ছিলেন। অপরদিকে তিনি যখন তায়েফে গিয়েছিলেন দাওয়াতের কাজে, তখন ফেরেশ্তারা এসে তাকে সাহায্য করেছিল। অর্থাৎ প্রথম ক্ষেত্রে মক্কা শরীফে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন শুধু নামাজ বা ইবাদতে রত ছিলেন, তখন ফেরেশ্তারা সাহায্য করতে আসেননি, কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তায়েফের ময়দানে দাওয়াতের কাজ হওয়ায় তখন আল্লাহ্ পাক-এর নির্দেশে ফেরেশ্তারা তাঁকে সাহায্য করেছিলেন।
(৫০) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেরই আক্বীদা হলো যে, সূরা ফাতিহার মধ্যে দোয়াল্লীন-এর স্থলে যোয়াল্লীন পড়াই শুদ্ধ মত এবং এ বিষয়ে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট লোকদের লিখিত কিতাবের বর্ণনাও রয়ে গেছে। যেমন- আঃ সাত্তার ত্রিশালী লিখিত তাবলীগে ইসলাম বা দ্বীনের দাওয়াত নামক কিতাবের ৩৫ পৃষ্ঠায় এরূপ বক্তব্য রয়েছে।
(৫১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, ক্বিয়ামতের দিন স্বয়ং আল্লাহ্ পাক দাঈকে (যে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করে) হিসাব দিবেন। আর যারা দাঈ নয় (যারা দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করেনা), তারা আল্লাহ্ পাক-এর কাছে হিসাব দিবেন।
(৫২) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, আলেম-জাহেল সকলেই দ্বীন প্রচার করবে এবং দ্বীনের তাবলীগের জন্য আলেম হওয়ার কোনই জরুরত নাই। কারণ তারা মনে করে যে, দ্বীন প্রচার শুধু আলেমের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে দ্বীন ধ্বংস হয়ে যেত এবং এখনো যাবে। অর্থাৎ জাহেল লোক তাবলীগ করার কারণে দ্বীন টিকে ছিল এবং ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে। যা তাদেরই লেখা কিতাব তাবলীগ জামায়াতের সমালোচনা  ও উহার সদুত্তর, নামক কিতাবের ৯৫ পৃষ্ঠার (লেখক- মূল শাঃহাঃ জাকারিয়া সাহেব, অনুবাদক- মাওলানা মুহিব্বুর রহ্মান আহমদ) এবং তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, নামক কিতাবের ৯৪ পৃষ্ঠার (লেখক- মাওলানা ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী) বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয়।
(৫৩) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অধিকাংশ লোকদের আক্বীদা হলো যে, মাগরিব ও বিত্রের উমরী ক্বাজা, ক্বাজায়ে আদা-এর ন্যায় আদায় করতে হবে। এ কথার প্রমাণ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা প্রকাশিত মাসিক আত্ তুরাগ পত্রিকা, সম্পাদক- হামীদ রশীদ, ১১তম খন্ড ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।
(৫৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই ধারণা করে থাকে যে, দ্বীন ইসলামের বাইরেও বিধর্মীদের মাঝে, এমন অনেক শিক্ষণীয়, নছীহতপূর্ণ ও অনুসরণীয় বিষয় রয়েছে, যদ্বারা ইছলাহ্ বা পরিশুদ্ধতা লাভ করা যায়। এ কথার প্রমাণ তাদের লেখা কিতাবেও রয়েছে। যেমন- তাবলীগ-ই-উত্তম জিহাদনামক কিতাবের ৬২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “হিন্দু যোগীরা ইবাদতে আলস্য দূর করার জন্যে সারা রাত একই অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে, এসব দৃষ্টান্ত থেকে অন্তরের চিকিৎসার পদ্ধতি জানা যায়।অর্থাৎ হিন্দু যোগীদের মধ্যেও শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয় অনেক কিছু রয়েছে। আর মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের মলফুযাতের৯৫ পৃষ্ঠায় ১৩৬নং মলফুযে একথা লেখা আছে যে, আমাদের এই কাজ (প্রচলিত তাবলীগ) এক প্রকার যাদুমন্ত্রের মত।
(৫৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বেশ কিছু মুরুব্বী ও আমীর এবং তাদের অনুসারীরা মনে করে থাকে যে, তাদের প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য বা তাবলীগ জামায়াতের প্রতি উৎসাহিত করার জন্য কোরআন-হাদীস বহির্ভূত বিষয়ে এবং কোরআন-হাদীসে বর্ণিত পরিমাণের বাইরে বহু বহু ফযীলতের বর্ণনা করা জায়েয।
(৫৬) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, “মসজিদে নববী ছাড়া বিশ্বের যে তিনটি দেশে, তিনটি মসজিদে প্রচলিত তাবলীগের বিশেষ মারকায, সেখানেই চব্বিশ ঘন্টা আমল জারী থাকে। যেমন- প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা লিখিত এক মুবাল্লিগের পয়লা নোট বইনামক কিতাবের (সংকলক- এঞ্জিনীয়ার মু.জু.আ. মজুমদার) ৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “সারা বিশ্বে মাত্র ৪টি মসজিদে ২৪ঘন্টা আমল চালু থাকে। যথা- (১) কাকরাইল, ঢাকা (২) নিজামুদ্দীন বস্তী, দিল্লী (৩) রায়বন্ড, লাহোর। (৪) মসজিদে নববী, মদীনা শরীফ।
(৫৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত-এর লোকেরা বলে থাকে যে, তারা কোরআন শরীফের সূরা ইমরানের ১০৪নং আয়াত শরীফ-
ولتكن منكم امة يدعون الى الخير- يأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر واولئك هم المفلحون.
অর্থঃ- তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় হওয়া জরুরী, যারা (মানুষকে) কল্যাণের দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও বদ্ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই মূলতঃ কামিয়াব।এর আমল করে থাকে যা তাদের ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক কাজের দ্বারাই সাধিত হয়।
(৫৮) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকেই মনে করে থাকে যে, তাদের ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগের দাওয়াত মোতাবেক যাদের জীবন পরিবর্তিত হবে, শুধুমাত্র তাদের দ্বারাই আল্লাহ্ পাক হিদায়েত বা দ্বীনের কাজ নিবেন। যেমন- হযরতজীর কয়েকটি স্বরণীয় বয়াননামক কিতাবের (সংকলক- মাওলানা নোমান আহ্মদ) ২য় খন্ড ২০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, যাদের জীবন দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন অর্জিত হবে, তাদের দ্বারা আল্লাহ্ পাক হিদায়েত ছড়াবেন, .....। যাদের জীবনে দাওয়াত মোতাবেক পরিবর্তন আসবেনা, তাদের মাধ্যমে আল্লাহ্ তায়ালা দ্বীনের প্রকৃত কাজ নিবেন না।
(৫৯) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, তাদের ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক দোয়া ও তাস্বীহ্ পড়াই সুন্নত। যা করলেই যিকির-এর হক্ব আদায় হয়ে যায়। এবং তার দ্বারাই অনেক অনেক ফযীলত, রহ্মত ও বরকত পাওয়া যায়। আর এর দ্বারাই দিল ইছলাহ্ হয়। অর্থাৎ তাসাউফ ভিত্তিক ক্বাল্বী যিকিরের আর দরকার হয়না। অপরদিকে তাদের কথানুযায়ী তাসাউফী বা ক্বাল্বী যিকির হলো- নফল এবং যার ফযীলত নগণ্য। আর এসব কথা নাকি তাদের হযরতজীর মলফুযাতএবং মাওলানা ইসমাইল হোসেন দেওবন্দীর তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্বনামক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
(৬০) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা প্রচার করে থাকে যে, পীর সাহেবদের দ্বারা দ্বীনের ব্যাপক খেদমত কখনোই সম্ভব নয়। তাই তারা পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়া বা ইল্মে তাসাউফ চর্চা করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয় না। একথার সত্যতা তাদেরই লোক দ্বারা লিখিত আয়নায়ে তাবলীগনামক কিতাবের (লেখক- মুহম্মদ দাউদ আলী) ৮৮ পৃষ্ঠায় নিম্নোক্ত বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত হয়। ইক্ত কিতাবে লিখা হয়েছে- তাবলীগের মধ্যে পীর-মুরীদীর প্রচলন সম্ভব নহে, কেননা পীরী-মুরীদীর দ্বারা সাধারণতঃ গন্ডিবদ্ধ একটা দলের সৃষ্টি হইয়া থাকে। ..... এইরূপ একটা দলের দ্বারা ব্যাপক কোন কাজ করা সম্ভব নহে। .... তাই বাধ্য হইয়া তাবলীগ এই পথ এড়াইয়া চলিয়া থাকে।
(৬১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মাওলানা আব্দুস্ সাত্তার ত্রিশালী লিখিত- তাবলীগে ইসলাম বা দ্বীনের দাওয়াত নামক কিতাবের ৭৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, “থানবী সাহেব তরীকায়ে মীলাদ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, মীলাদ অনুষ্ঠান শরীয়তে একবারেই নাজায়েয ও পাপের কাজ।আবার তাদের মধ্যে কারো কারো আক্বীদা হলো এই যে, “আল্লাহ্ পাক শেরেকের গুণাহ্ মাফ করবেন কিন্তু মীলাদ-ক্বিয়াম করার গুণাহ্ কখনো মাফ করবেন না।তাই দেখা যায়, তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মীলাদ শরীফ পাঠ করেনা বা মীলাদ মজ্লিসে বসেনা।
(৬২) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে বা প্রচার করে থাকে যে, মাওলানা ইলিয়াস সাহেব প্রবর্তিত তাবলীগ জামায়াতই আসল ও একমাত্র নাযাতের পথ।যে প্রসঙ্গে মাওলানা ইলিয়াস সাহেব ও তার মলফূযাতের২৪নং মলফূযে বলেছেন, “আসল কাজের তরীক্বা তাবলীগ হতে শিখতে হবে।তাই তারা সাধারণ লোকদেরকে তাবলীগ জামায়াতের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য আরো বলে থাকে যে, “প্রচলিত তাবলীগের কাজ হযরত নূহ্ (আঃ)-এর কিশ্তীর ন্যায়, তাতে যারা আরোহন করলো, তারাই নাযাত পেলো।এ কথার প্রমাণ তাবলীগ কা মুকামী কাম পৃষ্ঠা-৩৯ ও ভ্রান্তির বেড়াজালে বর্তমান তাবলীগ জামায়াত পৃষ্ঠা-১২ কিতাবদ্বয়ে উল্লেখ আছে।
            আবার তারা এ কথাও প্রচার করে থাকে যে, হাদীস শরীফে ৭৩টি দলের মধ্যে যে দলটিকে নাযী বা নাযাত প্রাপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতই উক্ত নাযাত প্রাপ্ত দল।
(৬৩) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের প্রবর্তিত গাশ্তের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে বলে থাকে যে, “কিছু সময় গাশ্তে বের হওয়া শবে বরাত ও শবে ক্বদরের রাত্রে হাজরে আসওয়াদকে সামনে নিয়ে দাড়িয়ে থাকার চেয়েও বেশী ফযীলত।
(৬৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা বা ইখলাছ অর্জন করাকে মোটেও গুরুত্ব দেয়না। যে কারণে তাদের বয়ানে ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা করা বা ইখলাছ হাছিল সম্পর্কে কোন আলোচনাই করতে দেখা যায়না। পক্ষান্তরে ইল্মে তাসাউফ শিক্ষার মাধ্যমে ইখলাছ হাছিল করতঃ তায্কিয়ায়ে ক্বালববা অন্তর পরিশুদ্ধ করার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো- ইল্মে তাসাউফ শিক্ষা ব্যতীত কেবল চিন্তা দ্বারা ও প্রচলিত তাবলীগ করার মাধ্যমেই ইখালছ হাছিল করা, অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুজুরী ক্বাল্ব-এর সাথে নামাজ আদায় করা সম্ভব। এর জন্যে ক্বাল্বী যিকিরের কোনই প্রয়োজন নেই, বরং বিভিন্ন প্রকার দোয়া-দরূদ ও তাস্বীহ্-তাহ্লীলের মাধ্যমেই তা অর্জিত হয়।
(৬৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা কোরআন শরীফের
(اتبعوا من لا يسئلكم اجرا وهم مهتدون)
অর্থাৎ তোমরা এরূপ ব্যক্তিকে অনুসরণ কর, যারা তোমাদের নিকট কোন বিণিময় চাননা, অথচ তাঁরা হিদায়েত প্রাপ্ত।সূরা ইয়াসীন/২১) এ আয়াত শরীফকে দলীল হিসেবে পেশ করে বলে থাকে যে, মক্তব, মাদ্রাসা ও মসজিদে দ্বীন প্রচার বা তাবলীগের কাজে যারা নিয়োজিত আর যে সকল আলেমওলামাগণ ওয়াজ-নছীহতে ব্যস্ত, তারা সকলেই বেতন বা বিণিময় গ্রহণ করেন। আবার দ্বীন প্রচারের কাজে নিয়োজিত পীর সাহেবগণও হাদিয়া (তাবলীগ জামায়াতের মতে বিণিময়) গ্রহণ করেন। কিন্তু একমাত্র প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতই উক্ত আয়াত শরীফের পূর্ণ অনুসারী, যারা দ্বীন প্রচার করে যাচ্ছে অথচ কোন বিণিময় গ্রহণ করেনা। কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতই একমাত্র অনুসরণীয় দল।
(৬৬) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওঃ ইলিয়াস সাহেব তাঁর জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে কিছু কথা বলেন। যাতে ব্যক্ত হয় যে, তিনি কেন এই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সূচনা করেছেন। তিনি বলেন যে, তিনি প্রথমাবস্থায় মাদ্রাসায় পড়াতেন এবং সেখানে ভাল ভাল ছেলেদের আগমণ বেড়েই চললো। কিন্তু এক সময় তিনি মনে করলেন যে, এভাবে আলেম বনার পর কেউ হয়তোবা হাকিম হবে, কেউ চাকুরী করবে অথবা কেউ মাদ্রাসায়ই পড়াবে। কিন্তু তাতে কোন ফায়দা হবেনা। একথা ভেবে মাদ্রাসায় পড়ানো হতে তার মন ফিরে গেল।
            এরপর তাঁর পীর সাহেব যখন তাকে খিলাফত দিলেন, তখন কিছুদিন তিনি মুরীদ করলেন ও ইল্মে তাসাউফের তালীম দিতে লাগলেন এবং তাঁর কথানুযায়ী তাতে মুরীদগণের তরক্কীও হতে লাগলো। কিন্তু তাতে তিনি ভাবলেন যে, এতে কি হবে? তাঁর ভাষায়- বেশীর চেয়ে বেশী ইহা হইবে যে, কিছু যিকির শোগল করনেওয়ালা লোক বাহির হইবে। অতঃপর মানুষের মধ্যে তাহাদের খুব সুনাম ছড়াইয়া পড়িবে। তখন হয়তো কেউ মোকদ্দমায় জিতিবার জন্য দোয়ার প্রার্থণা করিবে, কেউ আওলাদের জন্য তাবীজের দরখাস্ত করিবে। কেউ কারবার-ব্যবসার তরক্কীর জন্য দোয়া চাইবে। আর বেশীর চেয়ে বেশী হইবে যে, তাহাদের দ্বারা ভবিষ্যতে আরো কিছু জাকেরীনের জামায়াত তৈয়ার হইবে। এই চিন্তা করিয়া সেইদিক হইতেও আমার মন ফিরিয়া গেলঅতঃপর তিনি যা করলেন, তা হলো- বর্তমান ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগের প্রচলন এবং সেক্ষেত্রে তার বক্তব্য হলো- যদি এই কাজ হইতে থাকে, তবে এখন হইতে হাজার গুণ বেশী মাদ্রাসা এবং খানকাহ্ কায়েম হইয়া যাইবে। বরং প্রত্যেক মুসলমান স্বশরীরে একটি মাদ্রাসা এবং খানকাহ্ বনিয়া যাইবে।
(৬৭) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক দ্বারা পরিচালিত ও প্রকাশিত পাক্ষিক আত্ তুরাগপত্রিকার ১লা জুন ১৯৯৩ সংকেতঃ ৯০-এর ৬নং পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট আমীর মুফতী জয়নুল আবেদীন ৯৩ সনের বিশ্ব ইজ্তেমার এক বয়ানে বলেন, “টঙ্গীর এই মাঠে যারা এখন আছেন, তারা যদি সবাই জোনায়েদ বাগদাদী হয়ে যান, আব্দুল কাদির জ্বিলানী আর হাসান বছরী হয়ে যান, তবুও আপনারা কখনো দ্বীনের উপরে টিকে থাকতে পারবেন না যদি আপনাদের ঘরের মহিলারা বা স্ত্রী দ্বীনের উপর না আসে। যদি আপনিও হাসান বছরী হয়ে গেলেন আর আপনার স্ত্রীও রাবেয়া বছরী হয়ে গেলেন তবুও আপনি নিজের বাড়ীতে থাকতে পারবেননা, দূর গ্রামে গিয়ে বা জঙ্গলে গিয়ে ঝুপড়ীর ভিতর থাকতে হবে। যদি না আপনি নিজের ছেলেকে হেদায়েতের মেহনত না করান।
(৬৮) আমাদের টঙ্গী বাড়ীস্থ মটুকপুর গ্রামে ব্যাপারী বাড়ীর সম্মুখস্থ মাদ্রাসায় গত ৬/৫/৯৭ইং তারিখে, একটি সামাজিক মিটিং বসেছিল। উক্ত মিটিং-এ প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের কথা উঠায়, এক ব্যক্তি প্রশ্ন করলো- তাবলীগ বড়, না কোরআন শরীফ বড়? তখন সেখানে উপস্থিত চট্টগ্রামস্থ হাটহাজারী মাদ্রাসা হতে ফারেগ, মাওলানা আব্দুস সালাম বলে উঠলো- কোরআন থেকে তাবলীগ বড়অর্থাৎ কোরআন শরীফ থেকে বর্তমান প্রচলিত ৬ (ছয়) উছুলী তাবলীগ বড় বা মর্যাদা সম্পন্ন।
            বলাবাহুল্য, উপরোক্ত বক্তব্য ও আক্বীদাসমূহ যে বিশেষরূপে ভুলযুক্ত, কুফরী ও গোমরাহীমূলক, তা প্রদত্ত ফতওয়ায় কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। যার দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, এ সম্পর্কিত ফতওয়া দেয়া ইসলাম এবং ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সংশ্লিষ্টসহ সকল শ্রেণীর মুসলমানদের জন্য একান্ত আবশ্যক ছিল। যে কারণে প্রদত্ত ফতওয়া প্রকাশের পর থেকেই এটি যেমন সমঝদার লোকদের নিকট বিশেষভাবে আদরণীয় ও গ্রহণীয় হয়েছে, তেমনি তার সাথে সাথে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সংশ্লিষ্ট অনেকের জন্যই বর্ণিত ভুল আক্বীদা ছেড়ে তওবা নছীবের কারণ হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে।
            মূলতঃ এখানেই মাসিক আল বাইয়্যিনাতে প্রকাশিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশের সার্থকতা। যেমন হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু (রাঃ)কে উদ্দেশ্য করে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে আলী! তোমার দ্বারা যদি একটি লোকও হিদায়েত হয়, তবে তা আসমান-যমীনে যা রয়েছে, তা থেকে উত্তম। 
ইলিয়াস সাহেবের প্রবর্তিত
তাবলীগের পথ সংস্কারযোগ্য কিনা?
            উল্লেখ্য ইলিয়াস সাহেবের জীবনী ও তার মলফুযাত পাঠে তার প্রবর্তিত ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের প্রচলনের পেছনে বিভিন্নমুখী বক্তব্য পাওয়া যায়। তবে একথা গৃহীত হয় যে, সংস্কারের উদ্দেশ্যে এ পথের প্রবর্তন তিনি করেছিলেন। সেক্ষেত্রে তার সে সংস্কারকৃত কাজ যদি নিজস্ব দূর্বলতা ও ত্রুটিযুক্ত হয়ে থাকে অথবা তার অনুসারীদের মাঝে যদি বিভিন্ন বাতিল আক্বীদা ও আমল প্রবেশ করে থাকে, তবে এ দুটি কারণে তাও পূণঃসংস্কারযোগ্য, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা।            আর এ দুটি বিশেষ অবস্থাই বিরাজ করছে বর্তমান প্রচলিত তাবলীগের ক্ষেত্রে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে একদিকে যেমন তার জন্মলগ্ন দৃষ্টিভঙ্গীটাই ত্রুটিযুক্ত ছিল, তেমনি সময়ের সাথে বিভিন্ন বাতিল ও কুফরী আক্বীদাও সে সাথে যুক্ত হয়েছে।
            বলাবাহুল্য, ইলিয়াস সাহেবের মলফুযাত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ প্রামাণ্য দলীল। এ মলফুযাতে বেশ কিছু স্ববিরোধী বক্তব্য রয়েছে। তবে তাতে যেসব বক্তব্য দ্বারা হিদায়েতের আসল পথ খুঁজে পাওয়া যায় তথা নিজেদের ভুল সম্পর্কে জানা যায়, তা মানা কেবল ইলিয়াস সাহেবেরই কথা নয় বরং তা ইসলামেরই নির্দেশ। ইলিয়াস সাহেব তার নিজের সম্পর্কে বলেন, “আমার মর্যাদা একজন সাধারণ মোমেন হইতে উপরে মনে করিবেন না। শুধু আমার কথার উপর আমল করা বদ্দ্বীনি। আমি যাহা বলি উহাকে কিতাব ও সুন্নাহ্র সহিত মিলাইয়া এবং নিজে চিন্তা ফিকির করিয়া নিজের জিম্মাদারীর উপর আমল কর। আমিত শুধু পরামর্শ দিয়া থাকি।” (২১৩নং মলফুযাত)
            স্মরণযোগ্য যে, এখানে ইলিয়াস সাহেব কোরআন-হাদীসের সাথে মিলিয়ে ফিকির করতে এবং নিজের জিম্মাদারীর উপর আমল করতে বলেছেন। কাজেই এ প্রেক্ষিতে অপর এক (১৪০নং) মলফুযাতে ইলিয়াস সাহেব যে বলেছেন- শুধু এই কথাই বলিতে থাক যে, ইহাই একমাত্র রাস্তা, যে যত বেশী করিবে, তত বেশী পাইবে।একথা বিশেষভাবে ফিকির করতে হবে।
ইলিয়াস সাহেব অনুসরণীয় বুযুর্গগণের
কথা বললেও তিনি নিজেই তাঁদের মোখালেফ করেছেন।
            প্রদত্ত ফতওয়ায় আমরা দেখেছি যে (৬২নং সুওয়াল ও জাওয়াব), প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত মোট ৫% ইসলামী শিক্ষার সাথেও জড়িত নয়। অতএব ৫% মানের সেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতকেই ইলিয়াস সাহেব একমাত্র রাস্তা বলে বিশেষ ভুল করেছেন। অপরদিকে এক মলফুযাতে (১৪৩নং) ইলিয়াস সাহেব নিজেই বলেন, “আমাদের এই তাবলীগের সিলসিলার উছুল হইল এই যে, স্বাধীনভাবে ও নিজের মনমত না চলা। বরং নিজেকে ঐসব বুজুর্গের পরামর্শানুযায়ী চালু করা যাহাদের উপর আমাদের পূর্ববর্তী বুজুর্গরা বিশ্বাস ও আস্থা জ্ঞাপন করিয়া গিয়াছেন এবং যাহাদের আল্লাহ্র সাথে খাছ সম্পর্ক রহিয়াছে।
            আর উপরোক্ত বুযুর্গগণ সবাই ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফ শিক্ষাকে ফরজে আইন বলেছেন এবং আক্বীদা শুদ্ধ সাপেক্ষে তাবলীগ করাকে ফরজে কেফায়া বলেছেন। তদুপরি তাঁরা তাবলীগ করার ক্ষেত্রে মুবাল্লিগে আম ও খাছের সীমারেখা বর্ণনা করেছেন। কিন্তু কেবলমাত্র ইলিয়াস সাহেবই তাঁদের সকলের মত-পথের খেলাফ করেছেন। তিনি মুবাল্লিগে খাছ না হয়েও, এমনকি মুবাল্লিগে আম না হওয়া সত্ত্বেও সকলকে তাবলীগে আম করার জন্য বলেছেন। তার জীবনীগ্রন্থে রয়েছে- এক লোককে তিনি দাওয়াতের কাজ করতে বললে সে লোকটি উত্তর দিল, “হুজুর আমি তো কিছুই জানিনা।জবাবে ইলিয়াস সাহেব বললেন, “তুমি যে কিছুই জাননা সেটাই সকলকে জানিয়ে দাও।   কাজেই দেখা যাচ্ছে যে, ইলিয়াস সাহেব অনুসরণীয় বুযুর্গদের অনুসরণের কথা বললেও কার্যতঃ তিনি নিজেই তাদের মোখালেফ হয়ে গোমরাহী করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে বলা হয়েছে- আমার সকল উম্মত গোমরাহীর উপর এক হবেনা।সুতরাং সংশ্লিষ্ট সকলের উচিত- প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতকেই একমাত্র রাস্তা না মনে করে তাদের ৫% ইসলামী শিক্ষার বাইরে বাকী ৯৫% ইসলামী শিক্ষা তালাশ করা। বিশেষতঃ ইল্মে তাসাউফ অর্জন করা এবং মুবাল্লিগে খাছ না হওয়া পর্যন্ত তাবলীগে আম না করা।
একটি মনগড়া দল গঠনই
ইলিয়াস সাহেবের উদ্দেশ্য ছিল
            কার্যতঃ, ইলিয়াস সাহেব ও তার প্রবর্তিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাসাউফ শিক্ষার প্রতি আগ্রহী না থাকলেও ইলিয়াস সাহেবের মলফুযাতে ইলিয়াস সাহেব যে ইল্ম ও যিকিরের কথা ব্যক্ত করেছেন, তাতে প্রকারন্তরে ইল্মে তাসাউফের ক্বাল্বী যিকিরের কথাই প্রকাশ পায়। যেমন- ইলিয়াস সাহেব তার মলফুযাতের বিভিন্ন মলফুযাত যথা (৬, ৩৫, ৬৯, ২৮১) ইত্যাদিতে বিশেষভাবে ইল্ম ও যিকিরের কথা বলেছেন। তিনি বলেন মূলকথা ইল্মের মধ্যে নুর আসে যিকিরের দ্বারা। আবার ইল্মে দ্বীন ব্যতীত যিকিরের প্রকৃত বরকত ও ফলাফল হাছিল হয়না বরং অনেক সময় এমন জাহেল সুফীদিগকে শয়তান নিজের হাতিয়ার স্বরূপ ব্যবহার করে। কাজেই তাবলীগী মেহনতে ইল্ম ও যিকিরের কথা কখনো ভুলিবে না। তা না হলে তোমাদের এই তাবলীগ আন্দোলন একটি ভবঘুরে আন্দোলনের মত হইয়া যাইবে। আর খোদা না করুক উহা তোমাদের জন্য ভীষণ ক্ষতিরই কারণ হইয়া দাঁড়াইবে।” (৩৫নং মলফুযাত)
            উল্লেখ্য, প্রদত্ত মলফুযাতে ইলিয়াস সাহেব যিকিরের সাথে সুফীর সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন। অর্থাৎ এ কথায় ইল্মে তাসাউফের যিকির সাব্যস্ত হয়। এছাড়া ১৬৫, ৬নং ও আরো অনেক মলফুযাতে ইলিয়াস সাহেব ইখলাছের কথা স্বীকার করেছেন এবং তা ব্যতীত তাবলীগের সমস্ত মেহনতই বরবাদ তাও মুক্ত কক্তে বলেছেন। এবং ইখলাছের ক্ষেত্রে ১৮১নং মলফুযাতে তিনি ক্বাল্ব সম্পর্কেও বলেছেন। কিন্তু ক্বাল্বী যিকির ও ইল্মে তাসাউফ অর্জনের জন্য শায়খের হাতে বা পীর সাহেবের নিকট বাইয়াত হওয়ার জন্য তিনি অনুসরণীয় ইমাম, মুজ্তাহিদ ও ওলী আল্লাহ্গণের মত বলতে করুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এক্ষেত্রে হয়তোবা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মনগড়া একটি দল গঠনই তার কারণ ছিল। যে কারণে জাফর আহ্মদ ওসমানী সাহেবকে তিনি বলেন, “আমি জানি তুমি তাবলীগের কাজ কর। জলসা সমূহে বক্তৃতা দিয়া থাক, তোমার ওয়াজে উপকার হয় সত্য কিন্তু আমি যাহা চাই ইহা সেই তাবলীগ নয়।” (৩৬নং মলফুযাত) আরেক স্থানে থানভী সাহেব সম্পর্কে তিনি বলেন, “তালীম হবে তার আর তাবলীগের ত্বরীকা হবে আমার।” (৫৬নং মলফুযাত) কিন্তু তার এ তরীক্বা সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত নয়, কারণ তাতে মুবাল্লিগে খাছ না হয়েও তাবলীগে আম করার প্রচলন রয়েছে।
আমরা তাবলীগ অপছন্দ করিনা,
অনুসরণীয় বুযুর্গানে দ্বীনের তাবলীগ
অবশ্যই বরণীয় ও গ্রহণীয়।
            স্মর্তব্য যে, আমরা তাবলীগ করতে নিষেধ করিনা বা তাবলীগ করা নাজায়েয বলিনা। বরং আমরা এটাই বলছি যে, সুওয়ালসমূহে উল্লেখকৃত আপত্তিকর ও বদ্ আক্বীদাসমূহ পরিত্যাগ করে, মাসিক আল বাইয়্যিনাতে বর্ণিত শরীয়তসম্মত পদ্ধতিতে তাবলীগ করতে হবে। অর্থাৎ পূর্বতন হক্কানী আওলিয়া-ই-কিরাম, যাঁরা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্যিকার উত্তরাধিকারী তথা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফের পূর্ণ অধিকারী এবং আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের পূর্ণ অনুসারী। যেমন- ইমামুল আইম্মা, গাউসুল আযম, দাস্তগীর, পীরানে পীর, মুহিউদ্দীন হযরত বড় পীর আব্দুল ক্বাদির জিলানী (রঃ),  ইমামুল আইম্মা, খাজা গরীবে নেওয়াজ, সুলতানুল হিন্দ, হাবীবুল্লাহ্ হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি (রঃ), আফজালুল আওলিয়া, কাইয়ূমুজ্জামান, হযরত মুজাদ্দিদে আল্ফে সানী (রঃ), ইমামুল আইম্মা, হযরত ফরীদ উদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর (রঃ), হযরত নিযামুদ্দীন আওলিয়া (রঃ) এবং এ ধরণের যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের তর্জ-তরীক্বায় তাবলীগ করতে হবে। তাঁরা যে পদ্ধতি বা পন্থায় দ্বীনের তাবলীগ করেছেন, দ্বীন প্রচারের ক্ষেত্রে সে পদ্ধতি বা পন্থা অনুসরণ করাই কোরআন-সুন্নাহ্র নির্দেশ। যেমন এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পাক বলেন,
واتبع سبيل من اناب الى.
অর্থঃ- তাঁদের পথকে অনুসরণ কর, যাঁরা আমার দিকে রুজু হয়েছেন।” (সূরা লোকমান/১৫)
আহ্লে তাসাউফগণই মুবাল্লিগে খাছ-এর যথাযথ চিত্র এবং তাঁদের পথেই কামিয়াবী
            মূলতঃ যাঁরা এরূপ হক্ব ওলী আল্লাহ্ বা কামিল পীর সাহেব, তাঁরা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফে পরিপূর্ণভাবে পারদর্শী হওয়ায় তাঁরাই মুবাল্লিগে খাছ-এর যথাযথ চিত্র। তাঁরাই দ্বীনের তাবলীগ যথাযথভাবে করেছেন, এখনো করছেন, এবং ভবিষ্যতেও করবেন। এ ধারাবাহিকতায় আমরা দেখতে পাই- ভারত উপমহাদেশসহ খোদ বাংলা মুলুকে অসংখ্য, অগণিত মহান ওলী আল্লাহ্র মাজার শরীফ। যাঁদের অনেকে স্বয়ং হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তরফ হতে নির্দেশ ও দোয়াপ্রাপ্ত হয়ে এখানে এসে হিদায়েতের কাজ চালিয়ে ইন্তেকাল করেন। যেমন রযেছেন- ভারতে আজমীর শরীফে ইমামুল আইম্মা, সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, খাঁজায়ে খাঁজেগা, হযরত মঈনুদ্দীন চীশ্তি আজমিরী সানজীরি (রঃ), সিলেটে হযরত শাহ্জালাল (রঃ)। এছাড়া খুলনায় হযরত খান জাহান আলী (রঃ), চট্টগ্রামে অসংখ্য আওলিয়া-ই-কিরাম (রঃ), ঢাকার হাইকোর্টে হযরত শরফুদ্দীন চীশ্তি (রঃ), হযরত পীর ইয়ামেনী (রঃ), ঢাকার মীরপুরে হযরত শাহ্ আলী বোগদাদী (রঃ), নেত্রকোণায় হযরত সুলতান রুমী (রঃ)সহ অসংখ্য অগণিত ওলী আল্লাহ্গণ।
            উল্লেখ্য, তাঁদের উছীলায় বিধর্মীরা ঈমান পেয়েছে এবং ঈমানদাররা সকলে ইল্মে ফিক্বাহ্ ও ইল্মে তাসাউফের পরিপূর্ণ তালীম লাভ করেছেন। আরো উল্লেখ্য যে, তাঁরা ইল্মে তাসাউফ ও ফিক্বাহে পূর্ণতা হাছিল করে মুবাল্লিগে খাছ হওয়ার পর বা মহান আল্লাহ্ পাক কর্তৃক মনোনীত হবার পর হিদায়েতের কাজে নেমেছিলেন বলেই তাঁদের দ্বারা হিদায়েতের কাজে এত বরকত হয়েছিল।
            এখানে স্মর্তব্য যে, এরূপ ওলী আল্লাহ্র সংখ্যা যত বেশী হবে, হিদায়েতের কাজ ততই সঠিক ও সমৃদ্ধ হবে। দুনিয়াবী উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায় যে, জরুরী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যত বাড়ানো হবে, ততই শিক্ষার মান বাড়বে। কাজেই ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষার ভেতরেই সারা জীবন মত্ত না থেকে নিজের জরুরী পরবর্তী শিক্ষা তথা ইল্মে ফিক্বাহ্ ও তাসাউফ হাছিল করলেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যেমন মুবাল্লিগে খাছ হয়ে তাবলীগে আম করার যোগ্যতা পাবে, তেমনি তখন তাদের কাজে বিশেষ বরকত ও সফলতা আসবে।       
            উল্লেখ্য, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে থাকে যে, তারা যে মক্তবী শিক্ষার প্রচার-প্রসার করে থাকে, তাতেই বুঝি মহান আল্লাহ্ পাক তাদের প্রতি খুব বেশী সন্তুষ্ট রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেন,
فلا تزكوا انفسكم فو اعلم بمن اتقى.
অর্থঃ- তোমরা নিজেরা নিজেদের সাফাই বর্ণনা করোনা, আল্লাহ্ পাকই জানেন তোমাদের মাঝে কে ইছলাহ্ প্রাপ্ত ও মুত্তাকী।” (সূরা নজম/৩২)
            তারা আরো মনে করে থাকে যে, উক্ত মক্তবী শিক্ষার প্রচার-প্রসারের জন্য তাদের ন্যায় এরূপ ঘোরাঘুরির দ্বারাই বুঝি ইসলামের কাজ বেশী হয়। আর এক্ষেত্রেও একটি দুনিয়াবী উদাহরণ পেশ করা যায় যে, যেমন কোন ফেরীওয়ালা সারাদিন সারা শহর ঘুরে ঘুরে অবেশেষে ৩০/৩৫ টাকা লাভ করে থাকে। অপরদিকে কোন অভিজাত মার্কেটের অভিজাত ব্যবসায়ী তার সুসজ্জিত আরামদায়ক দোকানে বসে বসে একবারেই কোটি কোটি টাকা লাভ করে থাকে। এ প্রেক্ষিতে বলতে হয়, তারা যে ৫% ইসলামী শিক্ষা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় (তাও যদি আক্বীদা শুদ্ধ থাকে), তাতে তারা দ্বীনের ক্ষেত্রে ফেরীওয়ালার অনুরূপ ফায়দাই পেয়ে থাকে। পক্ষান্তরে আহ্লে তাসাউফগণ তাদের খানকাহ্ শরীফে বসেই লক্ষ লক্ষ লোককে হিদায়েতের উছীলায় তাদের চেয়ে কোটি কোটিগুণ বেশী ফায়দা লাভ করে থাকেন।            উল্লেখ্য, যারা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের মত ঘুরে বেড়ায় অথচ যারা মুবাল্লিগে খাছ তো নয়ই এমনকি তাদের মধ্যে অনেকে মুবাল্লিগে আমও নয়, তারা মূলতঃ উক্ত ফেরীওয়ালার চেয়েও অধম। কারণ প্রদত্ত ফতওয়ায় দেখা যাচ্ছে যে, তারা এমন সব আক্বীদা পোষণ করছে, যাতে তাদের পক্ষে মুসলমান থাকাই দুস্কর।
প্রদত্ত ফতওয়ার দ্বারা ইলিয়াস সাহেব ও প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সংশ্লিষ্ট
সকলের প্রতি প্রকৃত বন্ধুর ন্যায়
বিশেষ ইহ্ছান করা হয়েছে
            মূলতঃ এহেন পরিপ্রেক্ষিতে গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ-এর তরফ থেকে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া দিয়ে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সংশ্লিষ্টদের প্রতি এক বিশেষ উপকার সাধন করা হয়েছে এবং এর প্রবর্তক ইলিয়াস সাহেবের প্রতিও অশেষ ইহ্ছান করা হয়েছে। যেহেতু তাদের প্রবর্তক ইলিয়াস সাহেবের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ীই বা তার স্বীকারোক্তি অথবা মলফুযাত অনুযায়ী তিনি উক্ত জামায়াতটির ন্যায় একটি ত্রুটিপূর্ণ জামায়াত তৈরী করে গেছেন এবং বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে এটি তার বক্তব্য অনুযায়ীই একটি ভবঘুরে আন্দোলন ব্যতীত কিছুইনা। এবং যাতে স্পষ্টতঃই ইলিয়াস সাহেব কর্তৃক উচ্চারিত শয়তান প্রায়ই মানুষকে কম নেক কাজের দিকে আকৃষ্ট করে আসল ও জরুরী বড় নেক কাজ থেকে বিরত রাখে।সেরূপ ওয়াসওয়াসা বিরাজমান এবং শুধু তাই নয়, বর্তমানে তাদের মাঝে অনেক কুফরী, বিদ্য়াতী ও গোমরাহী আক্বীদাও বিরাজমান, যা পোষণ করে কাজ করলে তাদের নিজেদের ফায়দা কিছুই থাকবেনা।            কারণ, দ্বীনী তাবলীগ বা যে কোন নেক আমল আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হচ্ছে- ঈমান আনা বা বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা। তাই আল্লাহ্ পাক পবিত্র কালামে পাকে দ্বীনের তাবলীগ এবং নেক আমল করার পূর্বে ঈমান আনয়ন বা বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করতে বলেছেন। যেমন আল্লাহ্ পাক বলেন,
والعصر- ان الانسان لقى خسر- الاالذين امنوا وعملوا الصالحات.
অর্থঃ- আছরের সময়ের কছম, নিশ্চয়ই সকল মানুষ ক্ষতিগ্রস্থের অন্তর্ভূক্ত, তবে একমাত্র তাঁরা ব্যতীত, যাঁরা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল সমূহ করেছে।” (সূরা আছর/১-৩)
            উল্লিখিত এ আয়াত এবং অনুরূপ আয়াত শরীফসমূহের দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় যে, দ্বীনের তাবলীগ বা যে কোন নেক আমলসমূহ করার পূর্বে ইসলাম সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয়ে বিশেষ করে মৌলিক বিষয় সম্পর্কে আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে হবে। কেননা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের খেলাফ শুধুমাত্র একটি আক্বীদাই মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ বা কাফের করে দিতে পারে। যেমন- কেউ ইসলামের সব বিষয়েই বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করলো কিন্তু শুধুমাত্র খতমে নুবুওওয়াতকে অস্বীকার করলো, ইসলামের দৃষ্টিতে সে কাট্টা কাফের। এ অবস্থায় মারা গেলে চির জাহান্নামী।
            আর এরূপ কুফরী আক্বীদা থাকার কারণেই অনেকাংশে ইসলাম পালন করা ও মুসলমান দাবী করা সত্ত্বেও খারেজী, শিয়া, ক্বদরিয়া, জাবারিয়া, মুতাযিলাসহ ৭২টি বাতিল ফিরকা এবং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আখেরী বা শেষ রাসূল হিসাবে অস্বীকারকারী কাদিয়ানী ও বাহাই সম্প্রদায় আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াত-এর ফতওয়া মোতাবেক কাফের বা অমুসলিম। এ ব্যাপারে প্রদত্ত ফতওয়ার ভূমিকায়ও বিস্তারিত ও সারগর্ভময় আলোচনা করা হয়েছে। অতএব বুঝা গেল যে, পরিপূর্ণ ঈমান বা বিশুদ্ধ আক্বীদা ব্যতীত দ্বীনের তাবলীগ বা কোন নেক আমলই গ্রহণযোগ্য নয়।
            এখানে উল্লেখ্য, ইসলামের কাজ হওয়াটাই মুখ্য নয়, বরং ইসলামের কাজ কে কি পদ্ধতিতে করছে সেটাই বড় কথা। যেমন আবু জাহেল, আবু লাহাব এদের দ্বারাও অনেক কাজ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে, “নিশ্চয়ই এ দ্বীনের কাজ অনেক ফাসেক-ফুজ্জার তথা বেদ্বীনের দ্বারাও হবে।
            উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- হিন্দু গিরীশ চন্দ্রের কথা। যে ব্যক্তি আল্লাহ্র কালাম কোরআন শরীফের অনুবাদ করেছে, আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফ, মেশকাত শরীফ এবং আল্লাহ্ পাক-এর ওলীগণের জীবনী গ্রন্থ তায্কেরাতুল আওলিয়া বাংলা ভাষায় অনুবাদ করে প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, তার কারণে মানুষ আল্লাহ্র কালাম, আল্লাহ্র রাসূল, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস শরীফ এবং আল্লাহ্র ওলীর জীবনী জানতে পেরেছে। কিন্তু সে নিজে কুফরী আক্বীদা পোষণ করায় কাফের অবস্থায় মারা গিয়ে জাহান্নামী হয়েছে।
            কাজেই আক্বীদা শুদ্ধ না রেখে আপাতঃভাবে ইসলামের কাজ করলেও তাতে কোনই ফায়দা নেই। তাতে মোমবাতির মত সামান্য আলো দিয়ে নিজেই জ্বলে পুড়ে নিঃশেষ হতে হবে। এজন্য মুবাল্লিগে খাছ না হয়ে তাবলীগে আম করনেওয়ালা সকলের জন্য এরূপ পরিণতি হওয়াই স্বাভাবিক।
            অতএব বলতে হয়, প্রদত্ত ফতওয়ার দ্বারা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রতি সবচেয়ে বেশী উপকার ও সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুজনের মত কাজ করা হয়েছে। যেরূপ কোন একান্ত বন্ধু তার অপর বন্ধুর দোষ-ত্রুটিগুলো শুধরিয়ে সরল ও সত্য পথে পরিচালিত করে। এ প্রসঙ্গে প্রদত্ত ফতওয়ার ভূমিকায় প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় শীর্ষক বিশেষ বক্তব্যে এক হাদীস শরীফ উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে এরশাদ হয়েছে, “এক মুমিন আরেক মুমিনের আয়না স্বরূপ।
            অন্যথায় শুধু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতই নয় অন্য কারো প্রতি আমাদের নেই যেরূপ কোন বিদ্বেষ, তেমনি নেই কোন বন্ধুত্ব। যেমন হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টি লাভের) জন্য মহব্বত বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবু দাউদ শরীফ, তিরমিযী শরীফ)
ইলিয়াস সাহেব নিজেও তার কাজকে মুজাদ্দিদে যামানের তাজ্দীদের মুখাপেক্ষী বলে স্বীকার করেছেন এবং তার প্রবর্তিত তাবলীগে তাজ্দীদ ঘটিয়ে সে তাজ্দীদী ফতওয়াই  বাইয়্যিনাতে প্রকাশিত হয়েছে
            উল্লেখ্য, ইলিয়াস সাহেব তার এক মলফুযাতে উল্লেখ  করেছেন, “ইলেম ও যিকিরের কাজ এখন পর্যন্ত আমাদের মোবাল্লেগীনদের আয়ত্তে আসে নাই এজন্য আমি খুবই চিন্তিত। আর উহার তরীক্বা তাবলীগ জামায়াতসমুহ আহ্লে ইল্ম এবং আহ্লে যিকিরদের নিকট পাঠাইতে হবে, যেন তাহারা ঐসব বুজুর্গদের তত্ত্বাবধানে থাকিয়া কাজ করতে পারে এবং তাহাদের ইল্ম ও সোহ্বত হইতে উপকৃত হইতে পারে।” (মলফুয নং ৫৪)
            কিন্তু এ শর্তানুযায়ী বর্তমান প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা চলছেনা। কারণ তাদের মাঝে ৯৯% লোক মুবাল্লিগে খাছ নয়। এমনকি তাদের অধিকাংশ লোক মুবাল্লিগে আমও নয়। আর তারা আহ্লে ইল্ম ও আহ্লে যিকির তথা আহ্লে তাসাউফগণের নিকট গিয়ে তাদের ছোহ্বত লাভ করছেনা বা বাইয়াত হয়ে তাদের তালীম-তালক্বীন অনুযায়ী চলছেনা। কিন্তু নিজের ইছলাহ্ তথা হিদায়েতের কাজ করতে হলে তাদের সকলেরই প্রদত্ত ফতওয়ায় বর্ণিত সকল গোমরাহী, বিদ্য়াতী ও কুফরী আক্বীদা থেকে পরহেজ হয়ে কামিল পীর সাহেবের হাতে বাইয়াত হওয়া ফরজ ওয়াজিব। যদিও এক্ষেত্রে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অনেকে বলতে পারেন যে, আমাদের এত শায়খ ও মুরুব্বীরা এতকাল যাবত এটা করে আসছেন, সুতরাং এ পথ কি নাহক্ব হতে পারে অথবা আমরা কি করে তা ছাড়তে পারি?
            সেক্ষেত্রে ১৬১নং মলফুযাতে ইলিয়াস সাহেব বলেছেন, “কিন্তু আমাদের বক্তব্য হইল এই যে, যেই জিনিস দ্বীনের জন্য উপকারী এবং খুব বেশী উপকারী হওয়া দলীল এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা সাব্যস্ত হইয়াছে, উহাকে শুধু এইজন্য পরিত্যাগ করা যে আমাদের শায়েখ করে নাই ইহা বড় ভুল কথা। শায়খ তো শুধুমাত্র শায়খ তিনিও আল্লাহ্র বান্দা।
            পূর্বেই বলা হয়েছে- ইলিয়াস সাহেব অনুসরণীয় ইমাম, মুজ্তাহিদ ও ওলী আল্লাহ্গণকে অনুসরণের কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে তিনি নিজেই তা পালন করেননি। বরং তার সাবধান বাণী শয়তান অনেক সময় অনেক অপেক্ষাকৃত কম নেক কাজে মশগুল রেখে আসল ও বেশী নেক থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়” (২১৪নং মলফুয) এরূপ শয়তানী ওয়াসওয়াসায় নিজেই নিজের অজান্তে পড়ে গিয়ে মক্তবী মানের নেকীর পথের প্রচলন করতে গিয়ে আসল ও জরুরী নেকীর কাজ থেকে দূরে সরে গোমরাহী ও বিদ্য়াত এবং বদ্ আক্বীদা সংশ্লিষ্ট এক জামায়াতের প্রবর্তন করেছেন। এবং এ পরিপ্রেক্ষিতে, “যে কোন নেক কাজের প্রবর্তন করলো অনুসরণকারীর সকল নেক সে পেলএর মেছদাক তো ইলিয়াস সাহেব ও তার অনুসারীরা হচ্ছেই না বরং ইল্মে ফিক্বাহ্র যৎসামান্য ও ইল্মে তাসাউফ বিহীন এই পথকে একমাত্র নাযাতের পথ বলে ও তাতে হাজার হাজার লোকদেরকে গোমরাহ্, বিদ্য়াতী ও কুফরী আক্বীদার সাথে যুক্ত করে, সর্বপোরী ৯৫% ইসলামী শিক্ষা সম্পর্কে মূর্খ রেখে  বিভ্রান্ত করার কারণে সেই সাথে ইখলাছ ও ইল্মে তাসাউফ সম্পর্কে অজ্ঞ রাখার ও গোমরাহ্ করার কারণে তারা যে একটি বদ্ কাজের প্রবর্তন করলো এবং যতগুলো লোক তাতে অংশগ্রহণ করলো, তাদের সকলের বদী বদ্ প্রবর্তনকারীর গায়েই পড়বে”- এরই মেছদাক হচ্ছে। তার উদ্ভাবিত সিলসিলায় আজ বর্ণিত বিভিন্ন কুফরী ও বিদ্য়াত এবং গোমরাহীযুক্ত হচ্ছে। কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত সংশ্লিষ্ট সকলেরই কাজ হবে- উপরোক্ত গোমরাহী, বিদ্য়াতী পথ ছেড়ে তওবা করা এবং ইল্মে ফিক্বাহ্ বিশেষ করে ইল্মে তাসাউফের জন্য কামিল পীর সাহেবের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করা।
             যেহেতু এ পথকেই অনুসরণীয় সকল ইমাম, মুজ্তাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরামগণ গ্রহণ করেছেন এবং ইসলামের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এ পথই দ্বীনের পূর্ণ শিক্ষা এবং ইখ্লাছ হাছিলের ন্যায় জরুরী ও মুবাল্লিগে খাছ হওয়ার মত উপকারী বলে দলীল ও অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
  কাজেই ইলিয়াস সাহেবকে যারা শায়খ মানতে আগ্রহী, উপরোক্ত কথার আলোকে তাদের জন্য কেবলমাত্র ইলিয়াস সাহেব ব্যতীত অনুসরণীয় সকল ইমাম, মুজ্তাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরাম (রঃ) তাবলীগের ক্ষেত্রে যে নির্দেশিকা দিয়েছেন, তা মানাই তাদের কর্তব্য। আর তাঁরা সকলেই মুবাল্লিগে খাছ না হওয়া পর্যন্ত তাবলীগে আম না করাকে নিষেধ করেছেন এবং ইল্মে তাসাউফ অর্জন করা ও তার জন্য কামিল পীর সাহেবের হাতে বাইয়াত হওয়া ফরজে আইন সাব্যস্ত করেছেন।
            উল্লেখ থাকে যে, ইলিয়াস সাহেব নিজেও তার প্রবর্তিত উছূলভুক্ত কাজের সংশোধন চেয়েছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে ৬৭নং মলফুযাতে ইলিয়াস সাহেব বলেন, “আমিও যেহেতু নিজকে এই কাজের না কাবেল মনে করি, তাই এ চেষ্টায় রত আছি যে, আমার চেষ্টা দ্বারা কাজকে আল্লাহ্ পাক কোন যোগ্য লোকের নিকট পৌঁছাইয়া দিবেন।
            মূলতঃ এ মলফুযাতের প্রেক্ষিতে ইলিয়াস সাহেবের ব্যক্তিগত যোগ্যতার বা  অযোগ্যতার পরও যেটি বিশেষ বিবেচ্য, তা হলো- তার কাজটি আসলে সামান্য যোগ্যতারও দাবীদার নয়। ৬ (ছয়) উছুল ভিত্তিক যে তাবলীগী কাজের প্রচলন তিনি করেছেন, তা নানা দিক থেকে বিদ্য়াতী, গোমরাহী ও কুফরী আক্বীদাযুক্ত। এতদ্বপ্রেক্ষিতে মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মাধ্যমে ইলিয়াস সাহেবের প্রবর্তিত মক্তবী মানের বদ্আক্বীদা, বিদ্য়াতী ও গোমরাহীযুক্ত কাজে যোগ্য তাজ্দীদ ঘটিয়ে সে তাজ্দীদপূর্ণ ফতওয়াই আল্লাহ্ পাক প্রকাশ করিয়েছেন, যা মূলতঃ অনুসরণীয় সকল ইমাম, মুজ্তাহিদ ও আওলিয়া-ই-কিরামগণের আমল ও আক্বীদার তথা কোরআন-সুন্নাহ্র সাথে যথাযথরূপে সঙ্গতিপূর্ণ।
            মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে প্রদত্ত ফতওয়া মোতাবেক আমল করার তৌফিক দান করুন এবং বিশেষ করে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের সকল লোকদেরকে ফতওয়ায় বর্ণিত আপত্তিকর ও কুফরীমূলক আক্বীদা ও বিদ্য়াতী আমল পরিত্যাগ করে সহীহ্ ও সঠিক পথ অনুসরণ তথা অনুসরণীয় ইমাম, মুজ্তাহিদ, বুযুর্গানে দ্বীন, আওলিয়া-ই-কিরাম বা কামিল-মুকাম্মিল পীর সাহেবগণের মত সুন্নতী তরীক্বা অনুযায়ী তাবলীগ করার তৌফিক দান করুন।
(আমীন) (সমাপ্ত)