জানাযার নামাযের নিয়ম ও মাসালা মাসায়েল
Image result for জানাযার সঠিক নিয়ম


জানাযার নামাযের নিয়ম

জানাযার নামায পড়ার পূর্বে মাইয়্যিতের অলী বা অভিভাবককে জিজ্ঞাসা
করতে হবে যে, মাইয়্যিতের কোন ঋণ আছে কি না? যদি থাকে তাহলে সেগুলো
কে এবং কিভাবে পরিশোধ করবে তা জানতে হবে।  নামায ও রোযা কাযা আছে
কিনা? যদি থাকে তাহলে তার কাফফারা দিতে হবে। সেটা কে বা কিভাবে
আদায় করবে তা জানতে হবে।
(
বিতরসহ দৈনিক ছয় ওয়াক্ত নামাযের কাফফারা দিতে হবে।  যত ওয়াক্ত নামায কাযা থাকবে তার প্রতি ওয়াক্তের জন্য এক ফিতরা পরিমাণ কাফফারা
দিতে হবে।  একইভাবে প্রতিটি রোযার জন্য এক ফিতরা।  তবে প্রতি রোযা বা
নামাযের জন্য ২ কেজি আটা বা ময়দা কিংবা তার সমপরিমাণ মূল্য দেওয়া
আফযল বা উত্তম)

অতঃপর বিজোড় সংখ্যায় কাতার করতে হবে।  লোকসংখ্যা বেশি হলে
মুকাব্বির থাকবে। মাইয়্যিত পুরুষ না মহিলা, ছেলে না মেয়ে তা উপস্থিত মুছল্লীদেরকে জানিয়ে দিতে হবে। এভাবে বলতে পারে, মাইয়্যিত বয়স্ক পুরুষ/বয়স্কা মহিলা/নাবালিগ ছেলে/নাবালিগা মেয়ে।

 
যারা আরবীতে নিয়ত করতে পারেন তারা আরবীতে নিয়ত করবেন।  যারা
আরবীতে নিয়ত করতে পারেন না তারা বাংলাতে এভাবে নিয়ত করবেন-
ফরযে কিফায়া জানাযার নামায, চার তাকবীরের সাথে উক্ত ইমাম ছাহেবের
পিছনে আদায় করার নিয়ত করছি।  আল্লাহু আকবার ।
তারপর ছানা পড়তে হবে।  যাদের জানাযার নামাযের জন্য নির্ধারিত ছানা
জানা আছে তারা সেই ছানাই পড়বেন।  যদি জানা না থাকে তাহলে নামাযের
মধ্যে পঠিত ছানা পড়লেও চলবে।  অতঃপর দ্বিতীয় তাকবীর হবে।  সেই তাকবীরে কান পর্যন্ত হাত তুলতে হবে না।  তারপর দরূদ শরীফ পড়বেন।
যাদের জানাযার নামাযের জন্য নির্ধারিত দরূদ শরীফ জানা আছে তারা সেই
দরূদ শরীফই পড়বেন।  আর যাদের জানা নেই তারা নামাযের মধ্যে যে দরূদ
শরীফ পাঠ করেন সেই দরূদ শরীফ পড়বেন।  তারপর তৃতীয় তাকবীর হবে।
সেই তাকবীরেও হাত উঠাতে হবে না।  অতঃপর দোয়া পাঠ করবেন। যারা
দোয়া জানেন তারা সেই দোয়াই পাঠ করবেন।  আর যারা জানে না তারা পড়বেন-
اللهم اغفرلي وله
আর মহিলা হলে
اللهم اغفرلي ولها
তারপর চতুর্থ তাকবীর হবে।  সেই তাকবীরেও হাত তুলতে হবে না।  এরপর
সালাম ফিরানো হবে।  ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় ডান হাত, বাম দিকে
সালাম ফিরানোর সময় বাম হাত ছেড়ে দিবেন। তারপর কাতার ভঙ্গ করে সামনে
আসবেন ।  ছওয়াব রেসানী করে মুনাজাত করা হবে।

জানাযার নামাযের নিয়ত (পুরুষের)
نَوَيْتُ اَنْ اُؤَدِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى اَرْبَعَ تَكْبِيْرَاتِ صَلَوةِ الْجَنَازةِ فَرْضَ الْكِفَايَةِ َالثَّنَاءُ لِلَّهِ تَعَالَى وَالصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم وَالدُّعَاءُ لِهَذَا الْمَيِّتِ اِقْتِدَتُ بِهَذَا الاِمَامِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ


 মহিলা বা মেয়েদের বেলায় لهذا الميت -এর স্থলে لهذه الميت  বলিতে হবে ।

(১ম তাকবীর)
জানাযার নামাযের ছানা
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ  وَبِحَمْدِكَ  وَتَبَارَكَ اسْمُكَ  وَتَعَا لَى  جَدُّكَ  وَجَلَّ ثَنَاءُكَ  وَلاَ اِلَهَ غَيْرُكَ

(২য় তাকবীর)
জানাযার নামাযের দরূদ শরীফ
اللهم صل على سيدنا محمد وعلى ال سيدنا محمد كما صليت وسلمت وباركت ورحمت وترحمت على سيدنا ابراهيم وعلى ال سيدنا ابراهيم انك حميد مجيد

দরুদে ইবরহীম শরীফ
   اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى سيدنا مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ سيدنا مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى سيدنا اِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى اَلِ سيدنا اِبْراهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى سيدنا مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ سيدنا مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى ا سيدنا ِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ سيدنا
দরূদে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম অর্থাৎ নামাযের দরূদ শরীফও পাঠ
করা যায়।
(৩য় তাকবীর)

জানাযার নামাযের দোয়া (বালিগ/বালিগাদের জন্য)
اَلَّهُمَّ اغْفِرْلحَيِّنَاوَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَاُنْثَانَا اَللَّهُمَّ مَنْ اَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَاَحْيِهِ عَلَى الاِسْلاَمِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ على الايمان بِرَحْمَتِكَ يَاَارْحَمَالرَّحِمِيْنَ
জানাযার নামাযের দোয়া নাবালিগ ছেলের জন্য
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًاوْ اَجْعَلْهُ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا-
জানাযার নামাযের দোয়া নাবালিগা মেয়ের জন্য
اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَ لَنَا فَرْطًا وَاجْعَلْهَ لَنَا اَجْرً اوَذُخْرًا وَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعًة وَمُشَفَّعًة
(৪র্থ তাকবীর)

السلام عليكم ورحمة الله
অর্থাৎ ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় ডান হাত, বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময় বাম হাত ছেড়ে দিয়ে কাতার ভঙ্গ করে একত্রিত হয়ে ছওয়াব রেসানী করার পর হাত তুলে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করবে কেননা জানাযা নামাযের পর কাতার ভঙ্গ করে সকলে একত্রিত হয়ে হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা খাছ সুন্নত।
দাফনের আগে ও পরে মুনাজাত করাও সুন্নত। (দলীল- মাসিক আল বাইয়্যিনাত।
শরীফ : ১০১-১১১তম সংখ্যা)

ছওয়াব রেসানীর নিয়ম:
১. ইস্তিগফার (৩ বার)
২. সূরা ফাতিহা শরীফ (১বার)।
৩. সূরা ইখলাছ (৩ বার)
৪. যে কোন দরূদ শরীফ (৫ বার)
অতঃপর মুনাজাত:

জানাযা সম্পর্কিত আরো কিছু জরুরী মাসয়ালা-

কতকগুলো লাশ একত্রে আসলে পৃথক পৃথক জানাযা পড়াই উত্তম। তবে
 
যদি সবগুলোর একত্রে জানাযা পড়তে চায় তাও দুরস্ত আছে। কিন্তু তেমন
 
অবস্থায় সবগুলো লাশের মাথা এমন ভাবে একদিকে রাখবে যেন ইমাম
 
প্রত্যেকটির সিনা বরাবর দাঁড়াতে পারেন।

 
যদি মহিলা, পুরুষ, নাবালিগ, নাবালিগা বিভিন্ন প্রকার মৃতের লাশ একত্রিত
হয় তাহলে প্রথম পুরুষের, তারপর নাবালিগ ছেলেদের তারপর নাবালিগা
মেয়েদের পরে মহিলাদের লাশ রাখবে জানাযার নামাযের জামায়াত আরম্ভ
হওয়ার পর যদি কেউ এসে জানাযায় শরীক হতে চায়, তবে কাতারে দাঁড়িয়ে
অপেক্ষা করবে।  ইমাম যখন আর একবার তাকবীর বলবেন তখন তাকবীরে
তাহরীমা করবে।

 
ইমাম সালাম ফিরালে পর বাকী তাকবীর নিজে নিজে আদায় করবে।
 
জানাযার লাশের সঙ্গে গমনকারীদের জানাযার পিছনে পিছনে যাওয়া মুস্তাহাব।
ঘোড়া ও গাড়িতে আগে আগে যাওয়া মাকরূহ।  জানাযার লাশের পিছে পায়ে
হেঁটে যাওয়া মুস্তাহাব।  জানাযার সঙ্গে যাওয়াতে অনেক ছওয়াব আছে কিন্তু
 
যাওয়ার সময় উচ্চস্বরে দোয়া-কালাম পড়া মাকরূহ।  কবরস্থানে হাসি-ঠাট্টা করা বা বাজে আলাপ করা মাকরূহ।

দাফন করার সুন্নত তরীক্বা
জানাযার নামায পড়া যেমন ফরযে কিফায়া, দাফন করাও ফরযে কিফায়া।
জানাযা শেষ হওয়া মাত্রই লাশকে দাফন করার জন্য কবরস্থানে নিয়ে যেতে
হবে।  মুর্দাকে নিয়ে গেলে ৪০টি গুনাহ মাফ হয়ে যায়। কবেরর কাছে পৌঁছালে
মাইয়্যিতের খাট না রাখা পর্যন্ত কারো পক্ষে বসা মাকরূহ।  প্রত্যেকে লাশ নিজ
নিজ ডান কাঁধে নিয়ে দ্রুত হেঁটে যাবে, তবে দৌড়াবেনা।

মুর্দা কবের রাখার পর ঐ কবর হতে যত মাটি উঠানো হয়েছে, তা সবই
কবেরর উপর দিবে।  তাছাড়া অতিরিক্ত মাটি আবশ্যক না হলে দেওয়া মাকরূহ।
এক বিঘতের চেয়ে বেশি উঁচু হয়ে যায় তবে মাকরূহ হবেনা।  কবেরর উপরটা
চতুষ্কোণ করা মাকরূহ।  বিঘতখানেক উঁচু করে উটের পিঠের ন্যায় মাঝখানে উঁচু এবং দুদিকে ঢালু করা মুস্তাহাব।  দাফন কার্যে উপস্থিত সকলেরই কবের তিন
তিন বার মাটি দেওয়া মুস্তাহাব।  মাটি মাথার দিক হতে উভয় হাতে দিবে।
প্রথম মাটি দেওয়ার সময় পড়বে
منها خلقتم
অর্থ: “মাটি থেকে তোমাদেরকে অর্থাৎ তোমাদের পিতা হযরত আদম।
আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।”
২য় মুষ্টির সময় পড়বে
وفيها نعيدكم
অর্থ: “মাটিতেই তোমরা ফিরে যাবে।”
৩য় মুষ্টি দেওয়ার সময় পড়বে
ومنها نخرجكم تارة أخرى
অর্থ: “মাটি থেকে পুনরায় তোমাদেরকে উঠানো হবে।”
অতঃপর এই দোয়া পড়বে
اللهم ادخله الجنة برحمتك
 
অর্থ: “হে বারে এলাহী! আপনার রহমতে তাকে জান্নাত দান করুন।”
 
দাফন করার পর কিছুক্ষণ কবেরর নিকট অপেক্ষা করা উচিত। মৃত ব্যক্তির
জন্য দোয়ায়ে মাগফিরাত করা মুস্তাহাব। মাথার দিকে দাঁড়িয়ে সুরা বাকারার
 
প্রথম তিন এবং পায়ের দিকে দাঁড়িয়ে সূরায়ে বাকৃারার শেষ তিন আয়াত পড়া
মুস্তাহাব।  মাটি দেওয়ার পর কবের পানি ছিটিয়ে দেওয়া মুস্তাহাব।

কবেরর উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া, ঘাস বা বৃক্ষ কাটা, কবর চুম্বন করা,
কবেরর মাটি দিয়ে শরীর মুছা নাজায়িয। ছােট বা বড় কোন ঘরের মধ্যে কবর
দেওয়া নিষেধ। ঘরের মধ্যে কবর দেওয়া অর্থ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস
সালাম উনাদের জন্য খাছ। কবেরর উপর গম্বুজ করা কবর লেপা, কবেরর উপর
পাকা ঘর তৈরি করা হারাম।

দাফনের পর মৃত ব্যক্তিকে তালক্বীন দেওয়া সুন্নত
দাফনের পর তালক্বীন করার নিয়ম:
মৃতকে দাফন করার পর কবেরর নিকট শিয়রে বসে তিনবার বলবে (হে অমুকেরপুত্র অমুক)।
يا فلان بن فلان اذكر ما خرجت عليه من الدنيا شهادة أن لا إله الا الله وان
محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه وسلم وقل رضيت بالله ربا وبالإسلام
دینا محمد صلی الله عليه وسلم نبيا بالقران اماما.
অর্থ: হে অমুকের পুত্র অমুক! তুমি দুনিয়া থেকে যা নিয়ে এসেছে তা স্মরণ কর ।
অর্থাৎ তুমি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ পাক ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, আর নিশ্চয়
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান
আল্লাহ পাক উনার খাছ বান্দা ও রসুল।  তুমি বল- আমি আল্লাহ পাক উনাকে রব।হিসেবে, ইসলামকে দ্বীন হিসেবে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনাকে নবী ও রসূল হিসেবে এবং কুরআন শরীফকে ইমাম বা হিদায়েতকারী
হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট।

কবের আযান দেওয়া বিদয়াত
মৃত ব্যক্তির কবের আযান দেওয়া জায়িয নেই। তা কুরআন শরীফ ও হাদীছ
 
শরীফ-এর খিলাফ ও প্রকাশ্য বিদয়াতের অন্তর্ভুক্ত যা গুমরাহী। মৃত ব্যক্তিকে
 
দাফন করার পর তার কবের ‘তাল্বকীন’ দিতে হবে। যা কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ
তথা মুস্তাহাব-সুন্নত।
 
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে, “হযরত আবু উমামা রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যখন তোমাদের কোন
মুসলমান ভাই ইন্তিকাল করবে, তখন তাকে কবের রেখে তার উপর ভালভাবে
মাটি দিয়ে অর্থাৎ দাফন করে তার মাথার নিকট দাড়িয়ে বলবে, 'হে অমুকের
সন্তান অমুক’ তখন মৃত ব্যক্তি এটা শুনবে কিন্তু কোন জবাব দিবে না। তারপর
বলবে, হে অমুকের সন্তান অমুক' এটা শুনে মৃত ব্যক্তি উঠে বসবে। অতঃপর
আবার বলবে, 'হে অমুকের সন্তান অমুক' এটা শুনে মৃত ব্যক্তি বলবে কি
বলছেন? (যদিও তার কথা শুনা যাবে না। )  তখন তোমরা বলবে তুমি এসময়
বলো (দুনিয়ায় থাকাকালীন অবস্থায় তুমি যার উপর কায়িম ছিলে) আল্লাহ পাক
ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই, তিনিই একমাত্র প্রতিপালক।  ইসলাম তোমার
দ্বীন, হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার নবী, কুরআন শরীফ আপনার পথ প্রদর্শক।  এ সময় মুনকার এবং নকীর একে অপরের হাত ধরে
বলবে, এখান থেকে চলো এর নিকট বসে কি করবে? একে তো আখিরাতের
দলীল শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অতঃপর আল্লাহ পাক তার এই কথাগুলো লিখে নেন। অমুকের পুত্র অমুকের স্থলে মৃত ব্যক্তি ও তার মাতার নাম উল্লেখ করবে। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন,
 
ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যদি তার মাতার নাম জানা না
 
থাকে তখন উপায় কি? নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, তাহলে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারক উল্লেখ করে বলবে, হে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনার পুত্র অমুক।"

আর কোন কোন র্বণনায় রয়েছে মাইয়্যতিকে দাফন করার পর উপস্থিত ব্যক্তবর্গ থেকে একজন প্রশ্ন করবে, মার রব্বুকা? অন্যান্য সবাই বলবে,রব্বিইআল্লাহ।  এরপর বলবে ওয়া মান নাবিয়্যূকা ? অন্যান্য সকলইে বলবে,নাবিয়্যী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।  অতঃপর বলবে ওয়ামা দ্বীনুকা? সকলেই বলবে,  দ্বীনি আল ইসলাম।
তালক্বীন' সর্ম্পকে হাফিযুল হুফফায, সুলতানুল আরিফীন হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “যখন মৃত ব্যক্তিকে তালক্বীন করবে তখন তার মায়ের নাম নিয়ে বলবে, হে অমুকের সন্তান অমুক!
তুমি বলো ।  আর যদি মায়ের নাম জানা না থাকে তাহলে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনার নাম মুবারক ধরে বলবে যে, হে হযরত হাওয়া আলাইহাস সালাম উনার সন্তান অমুক! তুমি বলো রব্বি আল্লাহ আমার রব আল্লাহ পাক।  ওয়া দ্বীনি আল ইসলাম আমার দ্বীন হচ্ছে ইসলাম।' ওয়া নাবিয়্যিই। মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নবী হচ্ছেন হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।' কোন কোন র্বণনায় উল্লখে করা হয়েছে যে, প্রথমে তিনবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে উপরাক্তে কথাগুলো বলবে ।
ফতওয়ায়ে শামী’ কিতাবে উল্লেখ আছে ,  হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণিত , তিনি দাফনের পর তালক্বীন দেওয়ার  নির্দেশ দিয়েছেন।  কররের পাড়ে দাঁড়িয়ে বলবে হে অমুকের পুত্র অমুক, তুমি যে দ্বীনের উপর ছিলে সে দ্বীনকে স্মরণ কর ।
হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে “যখন মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে কবের তালক্বীন দেওয়া হয় তখন মুনকার ও নকীর ফরেশেতাদ্বয় পরস্পর পরস্পররে হাতে ধরে বলেন যে, তাকে প্রশ্ন করে কি হবে তাকে তো সব শিখিয়ে দেওয়া  হয়েছে  চল আমরা চলে যাই।  অর্থাৎ  তালক্বীনের কারণে  সে সুওয়াল-জাওয়াব থেকে নিষ্কৃতি ও নাযাত পায়।” সুবহানাল্লাহ!
শরীয়তের, উছুল হচ্ছে যে আমল সর্ম্পকে সরাসরি কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ রয়েছে সে আমল সর্ম্পকে ক্বিয়াস করাই নিষিদ্ধ। অতএব, সে আমল সম্পর্কে ক্বিয়াস করে কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশের ফিলাফ কোন মত বা প্রথা জারি করা সুস্পষ্ট গুমরাহী যা হারাম ও কুফরী।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম যারা সরাসরি আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি লাভ করেছেন উনারা আরো বেশি সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমল বাড়াতে চেয়েছিলেন তখন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শক্ত নির্দেশ মুবারক দিলেন, “যদি কেউ আমার সুন্নতের খিলাফ কোন আমল বাড়ায় বা কমায় তাহলে তা কখনই গ্রহণযাগ্যে হবে না।  শুধু তাই নয় বরং সে সরাসরি উম্মত থেকে খারিজ হয়ে যাবে" এর দ্বারা এটাই ছাবতি হয় যে , যে বিষয়ে যে সুন্নত সাব্যস্ত হয়েছে তার। খিলাফ কোন ক্বিয়াসই শরীয়তে কস্মনিকালেও গ্রহণযাগ্যে নয় বা হবে না।।
কাজেই মৃত ব্যক্তির কবের সুন্নত তরীকায় তালকীন দেওয়া হচ্ছে খাছ মুস্তাহাব-সুন্নত।  এখানে যদি কেউ তালক্বীনের শব্দগুলোর উপর ক্বিয়াস করে আযান দেওয়ার প্রথা চালু করে তাহলে তা অবশ্যই বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ হবে। যা স্পষ্ট গুমরাহী  নাজায়িয ও কুফরীর অর্ন্তভুক্ত।  যদি কেউ এরপরও ক্বিয়াস করে তাহলে সে উম্মতে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে এমন বিদয়াত চালু করলো যা আমাদের দ্বীন ইসলামে নেই তা অবশ্যই পরিতজ্য।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত)
এ প্রসঙ্গে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “যখন কোন সম্প্রদায় একটি বিদয়াত কাজ করে তখনই তৎপরিবর্তে একটি সুন্নত বিলুপ্ত হয়। সুতরাং এমতাবস্থায় বিদয়াত ছেড়ে দিয়ে সুন্নতেরই অনুসরণ করতে হবে” (আহমদ, মিশকাত)

মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, “তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মধ্যইে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব : আয়াত শরীফ ২১) র্অথাৎ জ্বীন-ইনসান সকলের জন্যই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আদর্শ।  সে আদর্শ মুতাবকি চলা সকলের জন্যই ফরয।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “তোমাদের নিকট রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো আর যা হতে নিষেধ করছেনে তা হতে বিরত থাক।  আর এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর।  নিশ্চয় আল্লাহ পাক কঠোর শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর : আয়াত শরীফ ৭)
মূলকথা হলো মৃত ব্যক্তির কবের আযান দেওয়া জায়িয নেই। তা কুরআন- সুন্নাহর খিলাফ ও প্রকাশ্য বিদয়াতের অর্ন্তভুক্ত যা গুমরাহী।  মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর তার কবের ‘তালক্বীন’ দিতে হবে যা কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশ তথা মুস্তাহাব সুন্নত।
তবে তালকীন-এর যেহেতু একাধিক পদ্ধতি বর্ণিত রয়েছে, তাই বর্তমানে তালক্বীন দেওয়ার সহজ পদ্ধতি হচ্ছে মাইয়্যিতকে দাফন করার পর উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ থেকে একজন প্রশ্ন করবে  من ربك         মাররব্বুকা? অন্যান্য সবাই বলবে ربى الله    রব্বিআল্লাহ।  এরপর বলবে ومن نبيك য়া মান নাবিয়্যূকা? অন্যান্য সকলেই বলবে نبى محمد رسول الله صلى الله عليه   নাবিয়্যি মুহম্মদুর রসূলিল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।  অতঃপর বলবে,  وما دينك ওয়ামা দ্বীনুকা? সকলেই বলবে, دينى الاسلام দ্বীনী আল ইসলাম।
কবর যিয়ারত
কবর যিয়ারতের অর্থ কবর দেখে মৃত্যুর স্মরণকে অন্তরে প্রবশে করিয়ে পার্থিব লাভে-লালসা, মায়া-মোহে ও গুনাহর র্কাযকলাপ ত্যাগ করে পরকালের সম্বল নেক আমলের জন্য মনকে উদ্বুদ্ধ করা এবং কবরস্থ ব্যক্তির মাগফিরাতে জন্য দোয়া করা। শুধু এই নিয়তে কবর যিয়ারত করা জায়িয এবং ছাওয়াবের কাজ। যে কোন দিন কবর যিয়ারত করা জায়িয, তবে সোমবার ও শুক্রবার দিনই কবর যিয়ারতের জন্য উত্তম।  দাঁড়িয়ে কবর যিয়ারত করা সুন্নত।
কবর যিয়ারতের নিয়ম
কবর যিয়ারতের নিয়ত করলে বাড়িতে শুধু দুই রাকায়াত নফল নামায আদায় করবে।  প্রত্যকে রাকায়াতে সূরা ফাতিহার পর আয়াতুল কুরসী একবার ও সুরায়ে ইখলাছ তিনবার পাঠ করবে অতঃপর এর ছওয়াব মৃতের আত্মার প্রতি বখশিয়ে দিবে।  এর ফলে আল্লাহ পাক মৃতের কবের একটা নূররে জ্যোতি পাঠিয়ে দিবেন।  তারপর কবেরর দিকে রওয়ানা হবে রাস্তায় কোন প্রকার ? বাক্যালাপ করবেন না।  কবরস্থানে যেয়ে জুতা খুলে কবরবাসীর মুখ বরাবর দাঁড়িয়ে নিম্নলিখিত সালাম পাঠ করবে ,
السلام عليكم يا أهل القبور يغفر الله لنا ولكم ونحن بالأثر وانا انشاء الله
بكم لا حقون
অর্থ: “হে কবরবাসী! তোমাদের প্রতি সালাম বা শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ পাক আমাদের ও তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত  হবো ।
তার পর সূরায়ে ইয়াসীন পাঠ করবে সূরায়ে বাকারার প্রথম থেকে মুফলিহুন পর্যন্ত , আয়াতুল কুরসী, সূরা মূলক, সূরায়ে তাকাছুর ও সূরায়ে ইখলাছ- ৩/৭/১০ বার পড়ে এবং বেশি বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করে দোয়া মুনাজাতের মাধ্যমে মৃতের রূহে বখশে দিবে অথবা তিন বার ইস্তিগফার, আউযুবল্লিাহ-
বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতিহা একবার, বিসমিল্লাহ সহ সূরা ইখলাছ শরীফ তিনবার এবং দুরূদ শরীফ পাঁচ বার পাঠ করে হাত উঠিয়ে দোয়া মুনাজাত করবে ।

মাসয়ালা
কবর যিয়ারতের সময় দুনিয়াদারী কথা বললে চল্লশি বছরের নফল ইবাদত নষ্ট হয়ে যায় ( তাফসীরে আহমদিয়া )।
কবর দেওয়ার পর কবর খুঁড়ে র্মুদাকে বের করা দুরস্ত নয়, তবে অন্য বান্দার হক নষ্ট হলে র্অথাৎ অন্যের যমীনে কবর দেওয়া হলে যদি জমির মালিক মূল্য দেওয়া সত্ত্বেও  দাবি ছাড়তে রাজি না হয় অথবা কারো মূল্যবান জিনিস কবরে ছাড়া পড়লে কবর খোঁড়া জায়িয হবে নিজের জন্য কাফন তৈরি করে রাখা জায়িয ।  কিন্তু কবর তৈরি করে রাখা মাকরূহ  মেয়ে লোকের জন্য কবর জিয়ারত করা জায়িয নেই।  এক কবরে এক জনের বেশি দাফন করা জায়িয নেই।  তবে যদি নরিুপায় হয়ে একাধিক জনকে দাফন করতে হয়, এমতাবস্থায় সকল মুর্দাই যদি পুরুষ হয়।  তবে যে সব চেয়ে ভাল, তাকে সামনে ও কবিলার দিকে রাখবে ।  যদি মহিলা, পুরুষ, বালক, বালিকা হয়, তবে প্রথম পুরুষ, তারপর বালককে তারপর বালিকা তারপর স্ত্রী লোককে রাখতে হবে যদি কোন বয়ঃপ্রাপ্ত, সজ্ঞান মুসলমান পাক থাকাবস্থায় বিনা অপরাধে মজলুম বা অত্যাচারিত হয়ে অন্য কোন মুসলমান বা জিম্মি দ্বারা ধারালো অস্ত্র দ্বারা নিহত হয় এবং সেইরুপ হত্যার অপরাধে মালের বিনিময়ে নির্ধারিত না হয় বরং
কিছাছেরই বিধান হয়, অথবা যুদ্ধক্ষেত্রে মারা যায় অথবা যুদ্ধদক্ষেত্র হতে অজ্ঞান অবস্থায় বের করার পর দুনযি়াবী কোন কথা বলার পূর্বেই মারা যায় অথবা কোন কাফির, ডাকাত বা রাষ্ট্রদ্রোহী দ্বারা নিহত হয়, তবে সেইরূপ নিহত ব্যক্তিকে শহীদ বলে গণ্য করতে হবে।
সেইরুপ শহীদের জন্য হুকম এই যে, তার শরীর হতে রক্ত মুছে ফেলবেনা। তবে সুন্নত তরীকার চেয়ে বেশি হলে যেমন জুতা, টুপি অস্ত্র ইত্যাদি খুলে ফেলবে এবং সুন্নত তরীকার চেয়ে কম হলে পূরণ করে দিবে।  জানাযা ও দাফন কার্য  অন্যান্য মুসলমানের ন্যায় করবে।  (শরহে বিকায়া)