সুমহান ২৯ শে জুমাদাল উলা শরীফ


Image result for ২৯ জুমাদাল উলা শরীফএক নজরে-
সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা
বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত পরিচিতি মুবারক

সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি হচ্ছেন হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বা মুবারক। সুবহানাল্লাহ! তিনি শুধু যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নন এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি নন; এছাড়া সমস্ত শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত, বুযূর্গী-সম্মান মুবারক উনাদের অধিকারিণী হচ্ছেন তিনি। সুবহানাল্লাহ! উনার সম্মানিত মুহব্বত মুবারকই হচ্ছেন সম্মানিত ঈমান। সুবহানাল্লাহ!
নিম্নে এক নজরে উনার সম্মানিত পরিচিতি মুবারক তুলে ধরা হলো-
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসম বা নাম মুবারক: সাইয়্যিদাতুনা হযরত রমলাহ্ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক: সইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু হাবীবাহ্ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ! তিনি এই সম্মানিত কুনিয়াত মুবারকেই সকলের মাঝে পরিচিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত লক্বব মুবারক: উম্মুল মু’মিনীন, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতু নিসায়ি আহলিল জান্নাহ, মুত্বহ্হার, মুত্বহ্হির, আছ ছমাদ, আত্ব ত্বাহিরাহ, আত্ব ত্বইয়্যিবাহ্, মালিকাতুল জান্নাহ, মালিকাতুল কায়িনাত, যাতুল হিজরাতাইন এছাড়াও আরো অসংখ্য-অগণিত। সুবহানাল্লাহ!
যেই সম্মানিত লক্বব মুবারক-এ সম্মানিত পরিচিতি মুবারক গ্রহণ করেছেন: উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম: সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম: সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছফিয়্যাহ্ বিনতে আবিল ‘আছ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত বংশ মুবারক: কুরাইশ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ: আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসম্মানিত নুবুওওয়াত ও রিসালত মুবারক প্রকাশের ১৭ বছর পূর্বে ২৯শে জুমাদাল ঊলা শরীফ ইয়াওমুছ ছুলাছা’ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত অবস্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মক্কা শরীফ, সম্মানিত ও পবিত্র হাবশাহ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ: সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার সূচনালগ্নে। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত হিজরত মুবারক: দুইবার। প্রথবার সম্মানিত ও পবিত্র হাবশাহ শরীফ। দ্বিতীবার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ‘আযীমুশ শান মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নিসবতে ‘আযীম শরীফ: ৭ম হিজরী শরীফ উনার ৩রা ছফর শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (লাইলাতু ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ)। সুবহানাল্লাহ!
আযীমুশ শান মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উনার সম্মানিত বয়স মুবারক: ৩৬ বছর ৮ মাস ৪ দিন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেয়া: ৪ বছর ১ মাস ৯ দিন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ: ৪৪ হিজরী শরীফ উনার ১৭ই শা’বান শরীফ ইয়াওমুল খমীস শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করার সম্মানিত স্থান মুবারক: মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
দুনিয়ার যমীনে সম্মানিত অবস্থান মুবারক: ৭৩ বছর ২ মাস ১৮ দিন। সুবহানাল্লাহ!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রওযা শরীফ: সম্মানিত জান্নাতুল বাক্বী’ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় নসবনামাহ মুবারক
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা’ বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নসব মুবারকগত দিক থেকে সম্মানিত কুরাইশ বংশীয়। সুবহানাল্লাহ! উনার মহাসম্মানিত পিতা হচ্ছেন সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফিয়ান আলাইহিস সালাম। উনার মূল নাম মুবারক হচ্ছেন- সাইয়্যিদুনা হযরত ছখ্র আলাইহিস সালাম। তিনি ছিলেন সম্মানিত কুরাইশ বংশ উনার বিশেষ শাখা বনূ উমাইয়্যাহ গোত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব মুবারক। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিত পিতা আলাইহিস সালাম উনার দিক থেকে ৬ষ্ঠ পুরুষে যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন-
اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ اُمُّ حَبِيبَةَ بِنْتُ أَبِي سُفْيَانَ بْنِ حَرْبِ بْنِ أُمَيّةَ بْنِ عَبْدِ شَمْسِ بْنِ عَبْدِ مَنَافِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ
১.  اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ اُمُّ حَبِيبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু হাবীবাহ্ আলাইহাস সালাম।
২. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ اَبُوْ سُفْيَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ সুফইয়ান আলাইহিস সালাম।
৩. حَرْب عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত র্হাব আলাইহিস সালাম।
৪. أُمَيّة عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত উমাইয়্যাহ্ আলাইহিস সালাম।
৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ شَمْسٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আব্দু শাম্স আলাইহিস সালাম।
৬. عَبْدُ مَنَافٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আব্দু মানাফ আলাইহিস সালাম।
সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আব্দু মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
(মিরআতুল আনসাব-২৪, আল আহাদ ওয়াল মাছানী ৫/৪১৮, আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ২৩/২১৯, ইবনে হিশাম ২/৬৪৮, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ্ লিলবাইহাক্বী ৭/২৮৫, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/১৪৪, শারহুয যারক্বানী ৪/৩৬০, মাওয়াহিবুল লাদুন নিয়্যাহ ১/৪৯১, বিদায়া-নিহায়া ৫/৩১৫ ইত্যাদী)
মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনার দিক থেকে-
সাইয়্যিদাতু নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, আফদ্বলুন নাস ওয়ান নিসা’ বা’দা রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিতা আম্মাজান হচ্ছেন- সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার আপন ফুফু সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছফিয়্যাহ্ বিনতে আবুল ‘আছ আলাইহাস সালাম। সুবহানাল্লাহ!। সুবহানাল্লাহ! তিনিও ছিলেন সম্মানিত বনী উমাইয়্যাহ্ গোত্রের। সুবহানাল্লাহ! উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি উনার মহাসম্মানিতা মাতা আলাইহাস সালাম উনার দিক থেকেও ৬ষ্ঠ পুরুষ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবদু মানাফ আলাইহি সালাম উনার নিকট যেয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মিলিত হয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যেমন-
اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ اُمُّ حَبِيبَةَ بِنْتُ صَفِيَّةُ بِنْتُ أَبِي الْعَاصِ بْنِ أُمَيَّةَ بْنِ عَبْدِ شَمْسٍ، بْنِ عَبْدِ مَنَافِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ
১. اُمُّ الْمُؤْمِنِيْنَ سَيِّدَتُناَ حَضْرَتْ اُمُّ حَبِيبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু হাবীবাহ্ আলাইহাস সালাম।
২.سَيِّـدَتُنَـا حَضْرَتْ صَفِيَّةُ عَلَيْهَا السَّلَامُ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছফিয়্যাহ্ আলাইহাস সালাম।
৩. أَبو الْعَاصِ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত আবুল ‘আছ আলাইহিস সালাম।
৪. أُمَيّة عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত উমাইয়্যাহ্ আলাইহিস সালাম।
৫. سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ عَبْدُ شَمْسٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবদু শাম্স আলাইহিস সালাম।
৬. عَبْدُ مَنَافٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ سَيِّـدُنَـا حَضْرَتْ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবদু মানাফ আলাইহিস সালাম।
সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আবদু মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পূর্বপুরুষ উনাদের অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
(মিরআতুয যামান ৭/৬৪, ‘উয়ূনুল আছার ২/৩৭৩, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/১৯৩, তারীখে ত্ববারী ১১/৬০৩, আনসাবুল আশরাফ ৫/৬ ইত্যাদী)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাইয়্যিদাতুন নিসায়ি ‘আলাল ‘আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ
প্রথম শাদী মুবারক:
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ আসার পূর্বে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার শাদী মুবারক হয়েছিলো ‘উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশের সাথে। তখন ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাবীবাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা’ নামে উনার একজন সম্মানিতা আওলাদ বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। উনার সম্মানিত নাম মুবারকেই তিনি ‘সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু হাবীবাহ আলাইহাস সালাম’ এই সম্মানিত কুনিয়াত মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! ‘উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশ ছিলো উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আস সাবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার ভাই। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি এবং উনার আহাল ‘উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার সূচনালগ্নেই সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সম্মানিত ঈমান মুবারক প্রকাশ করেন। তারপর উনারা হাবশায় সম্মানিত হিজরত মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার আহাল ‘উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশসহ হাবশায় সম্মানিত হিজরত মুবারক করেন। ‘উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশ সেখানে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে এবং খ্রিষ্টান অবস্থায় সেখানে মারা যায়। না‘ঊযুবিল্লাহ!
এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
قَالَتْ أُمُّ حَبِيبَةَ: رَأَيْتُ فِيَ النَّوْمِ عُبَيْدَ اللَّهِ بْنَ جَحْشٍ زَوْجِي بَأَسْوَأِ صُورَةٍ وَأَشْوَهِهِ فَفَزِعْتُ. فَقُلْتُ: تَغَيَّرَتْ وَاللَّهِ حَالُهُ. فإذا هو يقول حَيْثُ أَصْبَحَ: يَا أُمَّ حَبِيبَةَ إِنِّي نَظَرْتُ فِي الدِّينِ فَلَمْ أَرَ دِينًا خَيْرًا مِنَ النَّصْرَانِيَّةِ وَكُنْتُ قَدْ دِنْتُ بِهَا. ثُمَّ دَخَلْتُ فِي دِينِ مُحَمَّدٍ ثُمَّ قَدْ رَجَعْتُ إِلَى النَّصْرَانِيَّةِ. فَقُلْتُ: وَاللَّهِ مَا خَيْرٌ لَكَ. وَأَخْبَرْتُهُ بِالرُّؤْيَا الَّتِي رَأَيْتُ لَهُ فَلَمْ يَحْفَلْ بِهَا وَأَكَبَّ عَلَى الْخَمْرِ حَتَّى مَاتَ
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, একবার আমি আমার আহাল ‘উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশকে স্বপ্নে অতি নিকৃষ্ট এবং কুৎসিত ও বিকৃত আকৃতিতে দেখে ভীত-শঙ্কিত হয়ে গেলাম। তখন আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তার অবস্থার পরিবর্তন হয়ে গেছে। তারপর সকাল সে আমাকে বললো, হে উম্মু হাবীবাহ্ আলাইহাস সালাম! আমি ধর্মের ব্যাপারে গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। কিন্তু খ্রিষ্টান ধর্মের চেয়ে উত্তম কোনো ধর্ম আমি দেখিনি। প্রথমে আমি খ্রিষ্টন ধর্মের উপরই ছিলাম। তারপর আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দ্বীন তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছি। অতঃপর এখন আমি পূণরায় খ্রিষ্টান ধর্মে ফিরে গেলাম। নাঊযুবিল্লাহ! তখন আমি তাকে বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এতে আপনার জন্য কল্যাণ নেই। আমি তাকে কেন্দ্র করে যে স্বপ্ন দেখেছি, সেই স্বপ্নও তাকে বর্ণনা করে শুনালাম। কিন্তু সে এ বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপই করলো না। সে মদের মধ্যে ডুবে গেলো এবং এ অবস্থায় মারা গেলো।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (ইবনে সা’দ, আল মিছবাহু মুদ্বী, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ, তারীখুল ইসলাম, তারীখে ত্ববারী, শারহুয যারক্বানী ইত্যাদী)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার পূর্বাভাস:
উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশ খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করে; কিন্তু উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি সম্মানিত ও পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার উপর অবিচল থাকেন। সুবানাল্লাহ! তারপর ‘উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশ যখন খ্রিষ্টান অবস্থায় মারা যায়, তখন তিনি একখানা বিশেষ বরকতময় স্বপ্ন মুবারক দেখেন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فَقَدْ رَجَعْتُ إِلَيْهَا فَأَخْبَرَتْهُ بِالرُّؤْيَا فَلَمْ يَحْفَلْ بِهَا وَأَكَبَّ عَلَى الخَمْرِ حَتَّى مَاتَ فَأَرَى فِي النَّوْمِ كَأَنَّ آتِياً يَقُوْلُ لِي: يَا أُمَّ المُؤْمِنِيْنَ! فَفَزِعْتُ فَأَوَّلْتُهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَزَوَّجُنِي
অর্থ: “(‘উবাইদুল্লাহ ইবনে জাহাশ বললো) এখন আমি পূণরায় খ্রিষ্টান ধর্মে ফিরে গেলাম। না‘ঊযুবিল্লাহ! (সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন) তখন আমি তাকে বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এতে আপনার জন্য কোনো কল্যাণ নেই। আমি তাকে কেন্দ্র করে যে স্বপ্ন দেখেছি, সেই স্বপ্নও তাকে বর্ণনা করে শুনালাম। কিন্তু সে এ বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপই করলো না। সে মদের মধ্যে ডুবে গেলো এবং এ অবস্থায় মারা গেলো। না‘ঊযুবিল্লাহ! তারপর আমি ঘুমের মধ্যে (স্বপ্ন মুবারক-এ) দেখি যে, একজন আগন্তুক এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, হে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম! এতে আমি চিন্তিত হলাম। তারপর আমি এই বরকতময় স্বপ্ন মুবারক উনার ব্যাখ্যা মুবারক করলাম যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ ৮/৭৭, আল মিছবাহু মুদ্বী ২/৩৮, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/১৯৪, তারীখুল খমীস ২/৫৯, তারীখে ত্ববারী ১১/৬০৫, মিরআতুয যামান ৪/২২, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৩/২৬৮ ইত্যাদী)
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
قالت أم حبيبة رضي الله عنها: رأيت في المنام كأن قائلا يقول لي: يا أم المؤمنين ففزعت، فأولتها بأن رسول الله صلى الله عليه وسلم يتزوجني،
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি স্বপ্ন মুবারক-এ দেখি যে, একজন আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, হে উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম! এতে আমি চিন্তিত হলাম। তারপর আমি এই বরকতময় স্বপ্ন মুবারক উনার ব্যাখ্যা মুবারক করলাম যে, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ-এ আবদ্ধ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতুল হালাবিয়্যাহ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব মুবারক:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ইদ্দত মুবারক পূর্ণ হওয়ার পর যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক অনুযায়ী সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘আমর ইবনে উমাইয়্যাহ্ দ্বম্রী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে বাদশাহ নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট প্রেরণ করেন উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব মুবারক দিয়ে। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فبعث رسول الله صلى الله عليه و سلم عمرو بن أمية الضمري إلى النجاشي ليخطب أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ أَبِي سُفْيَانَ لرسول الله صلى الله عليه وسلم
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘আমর ইবনে উমাইয়্যাহ্ দ্বম্রী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে বাদশাহ্ নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট প্রেরণ করেন, যাতে তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ আলাইহাস সালাম উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব দেন।” সুবহানাল্লাহ! (আস সীরাতু লিইবনে হিব্বান ১/৩৯৭)
তখন হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার দাসী হযরত আবরাহাহ্ রহমতুল্লালি আলাইহা উনার মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার নিকট মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব মুবারক পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
أَنَّ أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ أَبِي سُفْيَانَ قَالَتْ: مَا شَعَرْتُ وَأَنَا بِأَرْضِ الْحَبَشَةِ إِلَّا بِرَسُولِ النَّجَاشِيِّ جَارِيَةٍ يُقَالُ لَهَا: أَبَرْهَةُ. كَانَتْ تَقُومُ عَلَى ثِيَابِهِ وَدُهْنِهِ، فَاسْتَأْذَنَتْ عَلَيَّ فَأَذِنْتُ لَهَا فَقَالَتْ: إِنَّ الْمَلِكَ يَقُولُ لَكِ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَبَ إِلَيَّ أَنْ أُزَوِّجَكِهِ. فَقُلْتُ: بَشَّرَكِ اللَّهُ بِالْخَيْرِ. وَقَالَتْ: يَقُولُ لَكِ الْمَلِكُ: وَكِّلِي مَنْ يُزَوِّجُكِ. قَالَتْ: فَأَرْسَلْتُ إِلَى خَالِدِ بْنِ سَعِيدِ بْنِ الْعَاصِ، فَوَكَّلْتُهُ،
অর্থ: সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মীন আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি হাবশা ভুমিতে ছিলাম, নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দূত এবং দাসী হযরত আবরাহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি আমার কাছে না আসা পর্যন্ত আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারিনি। তিনি আমার নিকট উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলে আমি উনাকে অনুমতি দেই। তারপর তিনি বলেন, বাদশাহ্ আপনাকে বলেছেন, নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার নিকট এ মর্মে চিঠি মুবারক প্রেরণ করেছেন, আমি যেন (উনার পক্ষ থেকে উকীল হয়ে) উনার সাথে আপনার সম্মানিত নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার বিষয়টি ফায়ছালা করি। তখন আমি উনাকে বললাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে উত্তম সুসংবাদ দান করুন! তিনি আরো বললেন, আপনার উদ্দেশ্যে বাদশাহ আরো বলেছেন, আপনার পক্ষ থেকে একজন উকিল পাঠান যিনি আপনার পক্ষ থেকে সম্মানিত নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার বিষয়টি ফায়ছালা মুবারক করবেন। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, তারপর আমি আমি খালিদ ইবনে সা‘ঈদ ইবনে ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার নিকট লোক প্রেরণ করে আমি উনাকে উকীল মনোনীত করি।” সুবহানাল্লাহ! (আল মিছবাহ্, ইবনে সা’দ, বিদায়া-নিহায়া ইত্যাদী)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ সুসংবাদ মুবারক শুনার কারণে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খুশি মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,
وَأَعْطَيْتُ أَبَرْهَةَ سِوَارَيْنِ مِنْ فِضَّةٍ، وَخَدَمَتَيْنِ مِنْ فِضَّةٍ كَانَتَا عَلَيَّ وَخَوَاتِيمَ مِنْ فِضَّةٍ كَانَتْ فِي كُلِّ أَصَابِعِ رِجْلَيَّ؛ سُرُورًا بِمَا بَشَّرَتْنِي بِهِ،
অর্থ: “আবরাহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া মুবারক করার কারণে আমি অনন্দিত হয়ে, খুশি মুবারক প্রকাশ করে উনাকে আমার দুটি কাঁকন মুবারক, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পা মুবারক উনার দুটি রূপর গহনা মুবারক, একটি রূপর আংটি মুবারক এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র পা মুবারক উনাদের আঙ্গুল মুবারকসমূহ উনাদের সমস্ত রূপার আংটি মুবারকগুলো হাদিয়া মুবারক করি।” সুবহানাল্লাহ! (আল মিছবাহুল মুদ্বী ২/৩৮, ইবনে সা’দ)
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
فأعطيتها أَوْضَاحًا لي
অর্থ: “আমি আমার সমস্ত রূপর অলঙ্কারগুলো উনাকে হাদিয়া মুবারক করি।” সুবহানাল্লাহ! (আল মিছবাহু মুদ্বী ২/৩৮)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠান:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فَلَمَّا أَنْ كَانَ مِنَ الْعَشِيِّ أَمَرَ النَّجَاشِيُّ جَعْفَرَ بْنَ أَبِي طَالِبٍ وَمَنْ كَانَ هُنَاكَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ أَنْ يَحْضُرُوا، وَخَطَبَ النَّجَاشِيُّ وَقَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ السَّلَامِ الْمُؤْمِنِ الْمُهَيْمِنِ الْعَزِيزِ الْجَبَّارِ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّهُ الَّذِي بَشَّرَ بِهِ عِيسَى بْنُ مَرْيَمَ، أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَبَ إِلَيَّ أَنْ أُزَوِّجَهُ أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ أَبِي سُفْيَانَ، فَأَجَبْتُ إِلَى مَا دَعَا إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَدْ أَصْدَقْتُهَا أَرْبَعَمِائَةِ دِينَارٍ. ثُمَّ سَكَبَ الدَّنَانِيرَ بَيْنَ يَدَيِ الْقَوْمِ، فَتَكَلَّمَ خَالِدُ بْنُ سَعِيدٍ فَقَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ، أَحْمَدُهُ وَأَسْتَغْفِرُهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، أَرْسَلَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ، أَمَّا بَعْدُ، فَقَدْ أَجَبْتُ إِلَى مَا دَعَا إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَزَوَّجْتُهُ أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ أَبِي سُفْيَانَ، فَبَارَكَ اللَّهُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَدَفَعَ النَّجَاشِيُّ الدَّنَانِيرَ إِلَى خَالِدِ بْنِ سَعِيدٍ فَقَبَضَهَا
অর্থ: “সন্ধ্যায় হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত জা’ফর ইবনে আবূ ত্বালিব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে এবং সেখানে অবস্থানরত সমস্ত মুসলমান উনাদেরকে উনার দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য বললেন। তারপর হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার সম্মানিত খুতবা মুবারক পাঠ করেন,
الْحَمْدُ لِلَّهِ الْمَلِكِ الْقُدُّوسِ السَّلَامِ الْمُؤْمِنِ الْمُهَيْمِنِ الْعَزِيزِ الْجَبَّارِ وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّهُ الَّذِي بَشَّرَ بِهِ عِيسَى بْنُ مَرْيَمَ، أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَتَبَ إِلَيَّ أَنْ أُزَوِّجَهُ أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ أَبِي سُفْيَانَ، فَأَجَبْتُ إِلَى مَا دَعَا إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَدْ أَصْدَقْتُهَا أَرْبَعَمِائَةِ دِينَارٍ.
সমস্ত প্রশংসা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য, যিনি সারা কায়িনাতের মালিক, অতিশয় পূত-পবিত্র, শান্তি দানকারী, নিরাপত্তা দানকারী, সর্বনিয়ন্তা, মহাপরাক্রমশালী এবং মহাপ্রতাপশালী। সুবহানাল্লাহ! আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবূব হাবীব এবং মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনারই সুসংবাদ মুবারক হাদিয়া করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অত:পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার সাথে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তাব মুবারক দিয়েছেন। আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহ্বান মুবারক-এ সাড়া দিলাম এবং উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে মোহরানা স্বরূপ ৪০০ দীনার হাদিয়া মুবারক করলাম।’ সুবহানাল্লাহ!
এ সময় তিনি দীনারগুলো সকলের সম্মুখে উপস্থিত করেন। তারপর হযরত খালিদ ইবনে সা‘ঈদ ইবনে ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি খুতবা মুবারক পাঠ করেন,
الْحَمْدُ لِلَّهِ، أَحْمَدُهُ وَأَسْتَغْفِرُهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، أَرْسَلَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ، أَمَّا بَعْدُ، فَقَدْ أَجَبْتُ إِلَى مَا دَعَا إِلَيْهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَزَوَّجْتُهُ أُمَّ حَبِيبَةَ بِنْتَ أَبِي سُفْيَانَ، فَبَارَكَ اللَّهُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
সমস্ত প্রশংসার মালিক মহান আল্লাহ পাক তিনি। আমি উনার সম্মানিত প্রশংসা মুবারক করছি এবং উনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মাহবূব হাবীব এবং মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে অতীতের সম্মানিত ও পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নাযিলকৃত সমস্ত দ্বীন এবং অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মানবরচিত সমস্ত তন্ত্র-মন্ত্র- মতবাদকে বাতিল ঘোষণা করে দিয়ে সম্মানিত সত্য দ্বীন এবং সম্মানিত হিদায়াত মুবারকসহ পাঠিয়েছেন। যদিও মুশরিকরা এটা অপছন্দ করে থাকে। অতঃপর আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত আহ্বান মুবারক-এ সাড়া দিলাম এবং উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফে আবদ্ধ করলাম। সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার মাহবূব হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বরকত দান করুন!’
তারপর হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি দীনারগুলো হযরত খালিদ ইবনে সা‘ঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে অর্পন করেন এবং তিনি সেগুলো গ্রহণ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মুন্তাখাব লিত ত্ববারী, আল মিছবাহুল মুদ্বী)
সম্মানিত ওলীমা মুবারক:
হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মানিত ওলীমা মুবারক উনার ব্যবস্থা করেন। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
ثُمَّ أَرَادُوا أَنْ يَقُومُوا فَقَالَ: اجْلِسُوا، فَإِنَّ مِنْ سُنَّةِ الْأَنْبِيَاءِ إِذَا تَزَوَّجُوا أَنْ يُؤْكَلَ طَعَامٌ عَلَى التَّزْوِيجِ. فَدَعَا بِطَعَامٍ فَأَكَلُوا ثُمَّ تَفَرَّقُوا.
অর্থ: “মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠান শেষে যখন সকলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালো, তখন হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, আপনার সকলে বসুন। কারণ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হওয়ার পর খাবারের আয়োজন করা হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত সুন্নত মুবারক। তারপর তিনি খাবার নিয়ে আসার জন্য বলেন। অত:পর সকলে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে প্রস্থান করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মুন্তাখাব লিত ত্ববারী, আল মিছবাহুল মুদ্বীহ)
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার নিকট সম্মানিত মোহরানা মুবারক পৌঁছলে তিনি সেখান থেকে ৫০ দীনার আবরাহাহ্  রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে দেন, যিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার সম্মানিত সুসংবাদ মুবারক পেশ করেছিলেন।  কিন্তু হযরত আবরাহাহ রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি তা গ্রহণ করেননি। এ প্রসঙ্গে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,
فَأَبَتْ فَأَخْرَجَتْ حُقًّا فِيهِ كُلُّ مَا كُنْتُ أَعْطَيْتُهَا فَرَدَّتْهُ عَلَيَّ وَقَالَتْ عَزَمَ عَلَيَّ الْمَلِكُ أَنْ لا أَرْزَأَكِ شَيْئًا.
অর্থ: “অতঃপর হযরত আবরাহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি তাতে অত্যান্ত আদবের সাথে অক্ষমতা প্রকাশ করেন। তারপর তিনি একটা পাত্র বের করেন, যেখানে আমি উনাকে যা কিছু হাদিয়া মুবারক করেছিলাম সেগুলো ছিলো। তিনি সেগুলো আমার মুবারক খেদমতে অত্যান্ত আদবের সাথে পেশ করেন এবং বলেন, বাদশাহ আমাকে শপথ করিয়েছেন যেন আমি আপনার কাছ থেকে কোন কিছু গ্রহণ না করি।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ ৮/৯৮, আল মিছবাহুল মুদ্বী ২/৩৯)
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
قالت ام الـمؤمنيـن سيدتنا حضرت الـحادية عشر عليها السلام (سيدتنا حضرت أم حبيبة عليها السلام) فلما وصل إلى المال أعطيت حضرت أبرهة رحـمة الله عليها منه خمسين دينارا فردتها علي وردت على ما كنت أعطيتها أولا وقالت إن الملك عزم على بذلك.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, যখন আমার নিকট সম্মানিত মোহরানা মুবারক উনার অর্থ পৌঁছলো, তখন আমি হযরত আবরাহাহ্  রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে সেখান থেকে ৫০ দীনার হাদিয়া মুবারক করি। হযরত আবরাহাহ্  রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি অত্যান্ত আদবের সাথে তা গ্রহণ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে আমার মুবারক খেদমতে পেশ করেন এবং প্রথমবার আমি উনাকে যা হাদিয়া মুবারক করেছিলাম সেগুলোও অত্যান্ত আদবের সাথে গ্রহণে অক্ষমতা প্রকাশ করে আমার মুবারক খেদমতে পেশ করেন। আর বলেন, নিশ্চয়ই বাদশাহ্ আমাকে এই বিষয়ে শপথ করিয়েছেন (যেন আমি কোনো কিছু গ্রহণ না করি)।” সুবহানাল্লাহ! (শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মাওয়াহিব ৪/৪০৬)
অপর বর্ণনায় রয়েছে,
وهبت منها لأبرهة خمسين مثقالا، فلم تقبلها، وردت ما كَانَ أعطتها أولا. وذلك لأن النجاشي أمرها برده.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি হযরত আবরাহাহ্  রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে সেখান থেকে ৫০ মিছকাল হাদিয়া মুবারক করেন। কিন্তু হযরত আবরাহাহ্  রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি অত্যান্ত আদবের সাথে তা গ্রহণ করতে অক্ষমতা প্রকাশ করে আমার মুবারক খেদমতে পেশ করেন এবং প্রথমবার উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি হযরত আবরাহাহ্  রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে যা হাদিয়া মুবারক করেছিলেন, সেগুলোও অত্যান্ত আদবের সাথে গ্রহণে অক্ষমতা প্রকাশ করে আমার মুবারক খেদমতে পেশ করেন। এর কারণ হচ্ছে হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি হযরত আবরাহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে অত্যান্ত আদবের সাথে এগুলো গ্রহণে অক্ষমতা প্রকাশ করে মুবারক খেদমতে পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।” (আনসাবুল আশরাফ ১/৪৩৯)
কিতাবে  বর্ণিত রয়েছে,
وَقَدِ اتَّبَعْتُ دِينَ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَسْلَمْتُ لِلَّهِ وَقَدْ أَمَرَ الْمَلِكُ نِسَاءَهُ أَنْ يَبْعَثْنَ إِلَيْكِ بِكُلِّ مَا عِنْدَهُنَّ مِنَ الْعِطْرِ.
অর্থ: “হযরত আবরাহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি বলেন, নিশ্চয়ই আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত দ্বীন গ্রহণ করেছি এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করেছি। আর নিশ্চয়ই বাদশাহ্ তিনি উনার সকল আহলিয়াদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছেন উনাদের নিকট যত সুগন্ধিদ্রব্য রয়েছে সেগুলো যেন উনারা আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ হাদিয়া মুবারক পেশ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ ৮/৯৮, মুস্তাদরকে হাকিম ৪/২১, আস সীরাতুল হালবিয়্যাহ্ শরীফ ২/৭৫৯, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/১৯৫, আল মিছবাহুল মুদ্বী ২/৪০, তারীখুল খমীস ২/৬০, তারীখে ত্ববারী ১১/৬০৬, মিরআতুয যামান ৪/২২ ইত্যাদি)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
قَالَتْ فَلَمَّا كَانَ الْغَدُ جَاءَتْنِي بِعُودٍ وَوَرْسٍ وَعَنْبَرٍ وَزَبَادٍ كَثِيرٍ فَقَدِمْتُ بِذَلِكَ كُلِّهِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অতঃপর যখন সকাল হলো, তখন হযরত আবরাহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি অনেক ঊদ (এক প্রকার সুগন্ধি কাঠ), ওর্য়াস (গাছ থেকে তৈরী এক প্রকার রং। যা দ্বারা কাপড় রং করা হয়।), আম্বর এবং যাবাদ (মেশ্ক জাতীয় এক প্রকার সুগন্ধি) নিয়ে এসে অত্যান্ত আদবের সাথে আমার সম্মানিত খেদমত মুবারক-এ পেশ করেন। আমি এসব কিছু নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হই।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ ৮/৯৮, মুস্তাদরকে হাকিম ৪/২১, আস সীরাতুল হালবিয়্যাহ্ শরীফ ২/৭৫৯, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/১৯৫, আল মিছবাহুল মুদ্বী ২/৪০, তারীখুল খমীস ২/৬০, তারীখে ত্ববারী ১১/৬০৬ ইত্যাদি)
শামসুদ্দীন আবূ মুযাফফার ইঊসুফ ইবনে ক্বিযঊগিলী ইবনে আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিলাদত শরীফ : ৫৮১ হিজরী শরীফ, বিছাল শরীফ : ৬৫৪ হিজরী শরীফ) যিনি সিব্তু ইবনে জাওযী তথা আল্লামা ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দৌহিত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি উনার বিশ্বখ্যাত ‘মিরআতুয যামান’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
جاءتني بعودٍ وعَنْبرٍ ومسكٍ وحُلِيٍّ كثيرةٍ فقَدِمْتُ بذلك على رسول الله صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: “(সকালে) হযরত আবরাহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি অত্যান্ত আদবের সাথে আমার সম্মানিত খেদমত মুবারক-এ অনেক ঊদ, আম্বর, মেশ্ক এবং অলঙ্কার পেশ করেন। আমি এসব কিছু নিয়ে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ উপস্থিত হই।” সুবহানাল্লাহ! (মিরআতুয যামান ৪/২২)
আনসাবুল আশরাফে’ বর্ণিত রয়েছে,
وأهدى إلى رسول اللَّه صلى اللَّه عليه وسلم كسوة جامعة.
অর্থ: “হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনাকে সর্বপ্রকার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত তাক্বওয়া মুবারক (মহসম্মানিত ও মহাপবিত্র পোশাক-পরিচ্ছেদ মুবারক) সম্মানিত হাদিয়া মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (আনসাবুল আশরাফ ১/৪৩৯)
কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে, হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি উনাকে সম্মানিত কোর্তা মুবারক, সম্মানিত ইযার মুবারক, সম্মানিত পাগড়ী মুবারক, সম্মানিত চাদর মুবারক, সম্মানিত মোজা মুবারকসহ সমস্ত প্রকার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত তাক্বওয়া মুবারক (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লিবাস মুবারক) সম্মানিত হাদিয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
قَالَتْ حَضْرَتْ اَبْرَهَةُ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهَا فَحَاجَتِي إِلَيْكِ أَنْ تُقْرِئِي رَسُولَ اللَّهِ مِنِّي السَّلامَ وَتُعْلِمِيهِ أَنِّي قَدِ اتَّبَعْتُ دِينَهُ قَالَت ثُمَّ لَطَفَتْ بِي وَكَانَتِ الَّتِي جَهَّزَتْنِي فَكَانَتْ كُلَّمَا دَخَلَتْ عَلَيَّ تَقُولُ لا تَنْسَيْ حَاجَتِي إِلَيْكِ قَالَتْ فَلَمَّا قَدِمْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ أَخْبَرْتُهُ كَيْفَ كَانَتِ الْخِطْبَةُ وَمَا فَعَلَتْ بِي حَضْرَتْ اَبْرَهَةُ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهَا فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللَّهِ وَأَقْرَأَتْهُ مِنْهَا السَّلامَ فَقَالَ وَعَلَيْهَا السَّلامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ.
অর্থ: “হযরত আবরাহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে অত্যান্ত আদবের সাথে বলেন, আপনার সম্মানিত খেদমত মুবারক-এ আমার একটি আরজী, আপনি আমার পক্ষ থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সম্মানিত সালাম মুবারক পেশ করবেন এবং উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ আরো পেশ করবেন, নিশ্চয়ই আমি উনার সম্মানিত দ্বীন গ্রহণ করেছি। তারপর তিনি আমার অনেক সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন এবং তিনিই আমাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ আসার সময় প্রস্তুতি মুবারক গ্রহণ ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রয়োজনীয় সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন। তিনি যখনই আমার নিকট আসতেন, তখনই আমাকে বলতেন, আপনার সম্মানিত খেদমত মুবারক-এ আমার যে আরজী ছিলো, দয়া করে সেটা স্বরণে রখবেন (ভুলবেন না)। উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমি যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নিলাম, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পেশ করলাম, হযরত আবরাহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার প্রস্তাবনা কিরূপ ছিলো এবং তিনি আমার সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন। তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নূরুত তাক্বরীর মুবারক প্রকাশ করলেন (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র তাবাস্সুমী শান মুবারক যাহির করলেন, মুচকি হাসি মুবারক দিলেন)। সুবহানাল্লাহ! আমি হযরত আবরাহাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার পক্ষ থেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সালাম মুবারক পেশ করি, জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَعَلَيْهَا السَّلامُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ.
ওয়া আলাইহাস সালাম ওয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি ওয়া বারাকাতুহ্ তথা উনার প্রতিও সালাম এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুবারক ও বরকত বর্ষিত হোক।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে সা’দ ৮/৯৮, মুস্তাদরকে হাকিম ৪/২১, সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১১/১৯৫, আল মিছবাহুল মুদ্বী ২/৪০, তারীখুল খমীস ২/৬০ ইত্যাদি)
সম্মানিত হাবশাহ্ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ তারশরীফ মুবারক
তারীখুল খমীসসহ্’ আরো অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
وبعث حَضْرَتْ اَلنَّجَّاشِـىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ سَيِّدَتَنَا حَضْرَتْ اَلْـحَادِيَةَ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِدَتَنَا حَضْرَتْ اُمَّ حَبِـيْـبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) الى النبىّ صلى الله عليه وسلم مع حَضْرَتْ شُرَحْبِيْلَ بْنِ حَسَنَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ.
অর্থ: “হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে হযরত শুরাহ্বীল ইবনে হাসানাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকেসহ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ প্রেরণ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (তারীখুল খমীস ২/৬০)
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
وأرسل حَضْرَتْ اَلنَّجَّاشِـىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ إلى النواتي فقال انظروا ما يحتاج فيه هؤلاء القوم من السفن فقالوا يحتاجون إلى سفينتين فجهزهم.
অর্থ: “হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নাবিকদের নিকট লোক প্রেরণ করে তাদেরকে বলেন, দেখুন উনাদের মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার জন্য কয়টি জাহাজ প্রয়োজন। তারা বললো, উনাদের জন্য দুইটি জাহাজ দরকার। তারপর তিনি উনাদেরকে প্রস্তুত করে দেন।” সুবহানাল্লাহ! (ফুরসানুন নাহার, আনসাবুল আশরাফ)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
فقالت اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلْـحَادِيَةُ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِدَتُنَا حَضْرَتْ اُمُّ حَبِـيْـبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) فخرجنا في سفينتين وبعث حَضْرَتْ اَلنَّجَّاشِـىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ معنا الملاحين حتى قدمنا الجار ثم ركبنا الظهر إلى المدينة فوجدنا رسول الله صلى الله عليه وسلّم بخيبر فخرج من خرج إليه وأقمت بالمدينة.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুন হযরত আল হাদিয়াহ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, এরপর আমরা দুটি জাহাজে করে বের হলাম। আর হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদের সাথে দুইজন নাবিককে প্রেরণ করেন। আমরা নিরাপদ স্থানে এসে জাহাজের উপরিভাগে আরোহণ করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ পর্যন্ত এসে পৌঁছি। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খায়বরে অবস্থান মুবারক করছিলেন। কেউ কেউ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নেন। আর আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করতে থাকি।” সুবহানাল্লাহ!
আল্লামা হযরত ইমাম আহমদ ইবনে ইয়াহ্ইয়া ইবনে জাবির ইবনে দাঊদ বালাযূরী রহতুল্লাহি  আলাইহি (বিছাল শরীফ ২৭৯ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন,
ويقال إن حَضْرَتْ عَمْرَو بْنَ اُمَيَّةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وجميع من كَانَ بالحبشة قدموا جميعا فِي سفينتين أعدهما لَهُم حَضْرَتْ اَلنَّجَّاشِـىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ فوافوا فِي أيام خيبر وذلك الثبت.
অর্থ: “বলা হয় যে, নিশ্চয়ই হযরত আমর ইবনে উমাইয়্যাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এবং যে সকল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়াল আনহুম উনারা সম্মানিত হাবশায় অবস্থান করছিলেন উনারা সকলে দুইটি জাহাজে করে আগমন করেন। উনাদেরকে এই জাহাজ দুইটি হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন। উনারা খায়বারের জিহাদের সময় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ এসে উপস্থিত হন। এটাই নির্ভরযোগ্য কথা।” সুবহানাল্লাহ! (আনসাবুল আশরাফ ১/৪৩৯)
কিতাবে আরো বর্ণিত রয়েছে,
أنّ النبيّ أرسل حَضْرَتْ عمرو بن أمية رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ إلى حَضْرَتْ اَلنَّجَّاشِـىِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ
سنة ست الهجرية فعاد من سفارته سنة سبع الهجرية لأن مهاجري الحبشة وعلى رأسهم حَضْرَتْ جعفر بن أبي طالب رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عادوا من الحبشة إلى المدينة في أعقاب غزوة خيبر التي كانت في شهر محرم من سنة سبع الهجرية.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আমর ইবনে উমাইয়্যাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট প্রেরণ করেন ৬ষ্ঠ হিজরী শরীফ-এ। তিনি উনার সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করেন ৭ম হিজরী শরীফ-এ। কারণ হাবশায় হিজরকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এবং উনাদের রঈস হযরত জা’ফর ইবনে আবী ত্বালিব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম তিনি অর্থাৎ উনারা সকলে ৭ম হিজরী শরীফ উনার মুহররমুল হারাম শরীফ মাসে সংগঠিত খায়বারের জিহাদের শেষের দিকে হাবশাহ্ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ প্রত্যাবর্তন করেন।” সুবহানাল্লাহ! (ফুরসানুন নাহার)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুয যুফাফ শরীফ
উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আমরা যখন হাবশাহ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ তাশরীফ মুবারক নেই, তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খায়বরে অবস্থান মুবারক করছিলেন। কেউ কেউ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নেন।
وأقمت بالمدينة حتى قدم النبي صلى الله عليه وسلم فدخلت عليه
অর্থ: “আর আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করতে থাকি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খায়বর থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর আমি উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেই।” সুবহানাল্লাহ!
আল্লামা হযরত ইমাম আহমদ ইবনে ইয়াহ্ইয়া ইবনে জাবির ইবনে দাঊদ বালাযূরী রহতুল্লাহি  আলাইহি (বিছাল শরীফ ২৭৯ হিজরী শরীফ) বলেন,
فلما تقدم عَمْرو بن أمية بِاُمِّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلْـحَادِيَةِ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ حَبِـيْـبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) المدينة ابتنى بِهَا رَسُول اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “অতঃপর যখন হযরত ‘আমর ইবনে উমাইয়্যাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ আগমন করেন, তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার সাথে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লাইলাতুয্ যুফাফ শরীফ পালন করেন। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হুজরা শরীফ তুলে নেন।” সুবহানাল্লাহ! (আনসাবুল আশরাফ ১/৪৩৯)
এই সম্মানিত তারীখ মুবারকখানা ছিলেন- ৭ম হিজরী শরীফ উনার ৩রা ছফর শরীফ লাইলাতু সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আইয়্যাম শরীফ (লাইলাতু ইছনাইনিল ‘আযীম শরীফ)। তখন দুনিয়াবী দৃষ্টিতে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত বয়স মুবারক ছিলেন ৩৬ বছর ৮ মাস ৪ দিন। সুবহানাল্লাহ! তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ৪ বছর ১ মাস ৯ দিন সম্মানিত খিদমত মুবারক উনার আনজাম মুবারক দেন।  সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ওলীমা মুবারক:
হাবশায় যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হন, তখন হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সম্মানিত ওলীমা মুবারক উনার ব্যবস্থা করেন। সুবহানাল্লাহ! আর উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন তৃতীয় খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ফুফাতো বোন। সুবহানাল্লাহ! যার কারণে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি পুনরায় সম্মানিত ওলীমা মুবারক উনার ব্যবস্থা মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কে কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
وَأَوْلَمَ عَلَيْهَا عُثْمَانُ لَحْمًا.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার (‘আযীমুশ শান মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার) সম্মানার্থে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি গোশত খাওয়ানোর মাধ্যমে সম্মানিত ওলীমাহ্ মুবারক উনার ব্যবস্থা মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ! (উসদুল গ¦াবাহ্ ৩/৩৫৩, ‘আওনুল মা’বূদ ১০৫)
আল্লামা হযরত ইমাম আবুল হাসান আলী ইবনে আবুল কারাম মুহম্মদ ইবনে মুহম্মদ ইবনে আব্দুল কারীম ইবনে আব্দুল ওয়াহিদ আশ শাইবানী আল জায্রী ইয্যুদ্দীন ইবনে আছীর রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ : ৬৩০ হিজরী শরীফ) তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব ‘উস্দুল গ¦বাহ্ ফী মা’রিফাতিছ ছাহাবাহ্ শরীফ’ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
عقد عليها خالد بن سعيد بن العاص بن أميَّة، وأمهرها النجاشي عن رسول الله صلّى الله عليه وسلّم أربعمائة دينار، وأولم عليها عُثْمان لحما.
অর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আক্বদ মুবারক উনার বিষয়টি ফায়ছালা করেন হযরত খালিদ ইবনে সা‘ঈদ ইবনে ‘আছ ইবনে উমাইয়্যাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ ৪০০ দীনার সম্মানিত মোহরানা মুবারক হাদিয়া মুবারক পেশ করেন বাদশাহ্ হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং সম্মানিত ওলীমাহ্ মুবারক উনার ব্যবস্থা করেন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহি তিনি।” সুবহানাল্লাহ! (উস্দুল গ¦বাহ্ ৭/১১৬)
সম্মানিত মোহরানা মুবারক
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْـمٰنِ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ أَنَّهُ قَالَ سَأَلْتُ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَمْ كَانَ صَدَاقُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ كَانَ صَدَاقُهُ لِأَزْوَاجِهِ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ أُوقِيَّةً وَنَشًّا قَالَتْ أَتَدْرِي مَا النَّشُّ قَالَ قُلْتُ لَا قَالَتْ نِصْفُ أُوقِيَّةٍ فَتِلْكَ خَمْسُمِائَةِ دِرْهَمٍ فَهَذَا صَدَاقُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَزْوَاجِهِ.
অর্থ: “হযরত আবূ সালামাহ ইবনে আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনাকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (পক্ষ থেকে) সম্মানিত মোহরানা মুবারক কত ছিলেন? (জবাবে) উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের জন্য নূরে মুজাসসাম হাবীবুলল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (পক্ষ থেকে) সম্মানিত মোহরানা মুবারক ছিলেন ১২ আওক্বিয়াহ্ এবং ১ নাশ্শুন। সুবহানাল্লাহ! উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, আপনি কি জনানে নাশ্শুন কি? হযরত আবূ সালামাহ ইবনে আব্দুর রহমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি বললাম- না। উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, অর্ধ আওক্বিয়াহ্। সুবহানাল্লাহ! কাজেই সম্মানিত মোহ্রানা মুবারক হচ্ছেন ৫০০ দিরহাম। এটাই ছিলেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার (পক্ষ থেকে) হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের জন্য সম্মানিত মোহ্রানা মুবারক।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজাহ্ শরীফ, সুনানে দারিমী ২/১৮৯, মুস্তাদরকে হাকিম ৪/২৩, মুসনাদে আহমদ ৬/৯৩, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী ৭/২৩৩, মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার লিল বাইহাক্বী ১০/২০৮, আস সুনানুছ ছুগরা লিল বাইহাক্বী ৬/২২১, শরহুস সুন্নাহ লিল বাগবী ৯/১২৩, মুসনাদুশ শাফি‘য়ী ১/৩১১, হিলয়াতুল আউলিয়া ৯/১৬১ ইত্যাদি)
আল্লামা হযরত ইমাম আবূ আব্দিল্লাহ হাকিম নীশাপূরী রহমতুল্লাহি আলাইহি (বিছাল শরীফ ৪০৫ হিজরী শরীফ) তিনি বলেন,
هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الإِسْنَادِ وَعَلَيْهِ الْعَمَلُ وَإِنَّمَا أَصْدَقَ حَضْرَتْ اَلنَّجَّاشِـىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اُمَّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ سَيِّدَتَنَا حَضْرَتْ اَلْـحَادِيَةَ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِدَتَنَا حَضْرَتْ اُمَّ حَبِـيْـبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ)  أَرْبَعَمِائَةِ دِينَارٍ.
অর্থ: “এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সনদখানা ছহীহ এবং উনার উপরই আমল জারি রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! যদিও উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ্ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৪০০ দিনার মোহরানা মুবারক হাদিয়া মুবারক করেন।” সুবহানাল্লাহ!  (মুস্তাদরকে হাকিম ৪/২২)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ‘আযীমুশ শান নিসবতে ‘আযীম শরীফ উনার কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খুশি মুবারক প্রকাশ:
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
فقالت اُمُّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ سَيِّدَتُنَا حَضْرَتْ اَلْـحَادِيَةُ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِدَتُنَا حَضْرَتْ اُمُّ حَبِـيْـبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) فخرجنا في سفينتين وبعث حَضْرَتْ اَلنَّجَّاشِـىُّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ معنا الملاحين حتى قدمنا الجار ثم ركبنا الظهر إلى المدينة فوجدنا رسول الله صلى الله عليه وسلّم بخيبر فخرج من خرج إليه وأقمت بالمدينة حتى قدم رسول الله صلى الله عليه وسلّم فدخلت عليه وكان يسألني عن حَضْرَتْ اَلنَّجَّاشِـىِّ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وقرأت عليه من أبرهة السلام فرد رسول الله صلى الله عليه وسلّم وقال لا أدري أنا بفتح خيبر أشد أم بقدوم حَضْرَتْ جَعْفَرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ وأنزل الله تعالى عَسَى اللَّهُ أَنْ يَجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ الَّذِينَ عادَيْتُمْ مِنْهُمْ مَوَدَّةً يعني سَيِّدَنَا حَضْرَتْ اَبَا سُفْيَانَ عَلَيْهِ السَّلَامُ مودة بتزويج اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْـنَ سَيِّدَتِنَا حَضْرَتْ اَلْـحَادِيَةِ عَشَرَ عَلَيْهَا السَّلَامُ (سَيِدَتِنَا حَضْرَتْ اُمِّ حَبِـيْـبَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ) فقيل لأبي سفيان وهو يومئذ مشرك يحارب النبي صلى الله عليه وسلّم إنّ محمّدا قد نكح ابنتك قال ذاك الفحل لا يقرع أنفه.
অর্থ: “তারপর উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ ‘আশার আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, এরপর আমরা দুটি জাহাজে করে বের হলাম। আর হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাদের সাথে দুইজন নাবিককে প্রেরণ করেন। আমরা নিরাপদ স্থানে এসে জাহাজের উপরিভাগে আরোহণ করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ পর্যন্ত এসে পৌঁছি। সুবহানাল্লাহ! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খায়বরে অবস্থান মুবারক করছিলেন। কেউ কেউ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ তাশরীফ মুবারক নেন। আর আমি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে সম্মানিত অবস্থান মুবারক করতে থাকি। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খায়বর থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেয়ার পর আমি উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নেই। তিনি আমাকে হযরত নাজ্জাশী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা মুবারক করেন। তখন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার পক্ষ থেকে সম্মানিত সালাম মুবারক পেশ করলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সালামের জওয়াব মুবারক দিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন,
لا أدري أنا بفتح خيبر أشد أم بقدوم حَضْرَتْ جَعْفَرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ.
আমি জানি না, আমি বেশী খুশি খায়বর বিজয়ের কারণে নাকি (সম্মানিত ও পবিত্র হাবশাহ্ থেকে উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে নিয়ে) হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার (মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ) আগমনে। অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খায়বর বিজয়ের কারণে যতটুকু খুশি মুবারক প্রকাশ করেছেন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আল হাদিয়াহ ‘আশার আলাইহাস সালাম উনাকে সম্মানিত ও পবিত্র হাবশাহ থেকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ নিয়ে আসার কারণে তার চেয়ে অনেক বেশী সম্মানিত খুশি মুবারক প্রকাশ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আর মহান আল্লাহ পাক তিনি নাযিল করেন-
عَسَى اللَّهُ أَنْ يَجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ الَّذِينَ عادَيْتُمْ مِنْهُمْ مَوَدَّة.
অবশ্যই মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের মধ্যে এবং যারা আপনাদের শত্রু তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল কাশফু ওয়াল বয়ান ‘আন তাফসীরিল কুরআন ৪/৯৯)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
পরিচিতি মুবারক:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত নাম মুবারক হচ্ছেন হযরত উম্মে হাবীবা বিনতে আবি সুফিয়ান আলাইহাস সালাম। তিনি কুরাইশ গোত্রের উমাইয়া শাখার অন্তর্ভূক্ত। হযরত হাবীবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার মেয়ের নাম, সেজন্য হযরত উম্মে হাবীবা আলাইহাস সালাম এই কুনিয়াত মুবারকেই তিনি প্রসিদ্ধ হয়েছেন। উনার প্রকৃত নাম মুবারক ছিল হযরত রামলা আলাইহাস সালাম। উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে কুরাঈশ নেতা ছিলেন।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আসল নাম ছিল ছখর ইবনে হারব (ইছাবা)। তিনি ছিলেন এক বড় ব্যবসায়ী। শাম (সিরিয়া), রোম ও আজমে (অনারব দেশ সমূহ) তিনি কাফেলা পাঠাতেন। মাঝে মাঝে কাফেলার সাথে তিনি নিজেই যেতেন। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তিন মেয়ের মধ্যে এক মেয়ের নাম হযরত যায়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা। তিনি প্রখ্যাত ধনী ছাহাবী হযরত উরওয়া ইবনে মাসউদ আছ-ছাকাফী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া ছিলেন। উনার শাদী মুবারক হয়েছিল ইসলাম-পূর্ব জীবনে। তখন হযরত ‘উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়ার সংখ্যা ছিল দশ জন। তন্মধ্যে চার জন কুরাইশ বংশীয়া এবং হযরত যয়নব বিনতে আবী সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা ছিলেন উনাদের অন্যতমা। হযরত উরওয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ইসলাম গ্রহণ করলে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নির্দেশ মুবারক দেন, তিনি যেন চারজন আহলিয়াকে রেখে অবশিষ্টদেরকে ত্যাগ করেন। সুতরাং তিনি চারজনকে বাছাই করে নেন। উনাদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত যায়নাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অপর দুই মেয়ে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে হাবীবাহ আলাইহাস সালাম এবং হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের শাদী হয় উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশ এবং হযরত আবু আহমদ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের সাথে, যারা ছিলেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আস-সাদিসাহ আলাইহাস সালাম অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন হযরত যায়নব বিনতে জাহাশ আলাইহাস সালাম উনার দুই ভাই।
হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আহলিয়া হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উহুদের জিহাদে (ঈমান গ্রহণ না করা অবস্থায়) নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত চাচা, সাইয়্যিদুশ শুহাদা, হযরত হামযাহ আলাইহিস সালাম উনার কলিজা মুবারক চিবিয়ে ছিলেন। হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা পরে ইসলাম গ্রহণ করে ছাহাবিয়া হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন। তিনি ছিলেন উমাইয়া খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাতা। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অন্য আহলিয়া যিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিতা মাতা ছিলেন উনার নাম হযরত ছফিয়া আলাইহাস সালাম যিনি তৃতীয় খলীফা, সাইয়্যিদুনা হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিতা ফুফু ছিলেন। কাজেই উমাইয়া খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়াতা আশার আলাইহাস সালাম উনার বৈমাত্রিয় ভাই।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার পিতার পরিবার পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয় পর্যন্ত ইসলামের প্রতি বিদ্বেষী থাকলেও সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম এবং উনার অন্য দুই বোন হযরত যায়নব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা এবং হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাদের জাওয মুকাররমের পরিবার দ্বীন ইসলাম উনার সূচনা পর্বেই মুসলমান হয়ে যান। কাজেই উনারাও উনাদের জাওয মুকাররম উনাদের সাথে পবিত্র ইসলাম কবুল করেন। হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং উনার আহলিয়া হযরত হিন্দা বিনতে উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনারা পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়ের সময় ইসলাম গ্রহণ করেন এবং দুই জনই ছাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম সম্মানিত নবুওয়ত মুবারক প্রকাশের ১৭ বছর পূর্বে, ২৯ জুমাদাল উলা শরীফ, ইয়াওমুছ ছুলাছা শরীফ (মঙ্গলবার) বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন (ইছাবা, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
দ্বীন ইসলাম গ্রহণ ও হিজরত:
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার প্রথম শাদী হয়েছিল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশের সঙ্গে (তার ঔরসেই হযরত হাবীবাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বিলাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেন)। অতঃপর দ্বীন ইসলাম উনার প্রাথমিক যুগে উভয়ে এক সঙ্গে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার আহাল উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশের সাথে হাবশায় হিজরত করেছিলেন। উনার অপর এক বোন হযরত ফারিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাও ইসলাম গ্রহণ করে উনার জওয মুকাররম হযরত আবু আহমদ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সঙ্গে হাবশায় হিজরত করেছিলেন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ:
হাবশায় কিছুদিন অবস্থানের পর উবায়দুল্লাহ বিন জাহাশ দ্বীন ইসলাম ত্যাগ করে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করে। উবায়দুল্লাহ ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করার কিছুদিন পূর্বে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তিনি একটি স্বপ্ন মুবারক দেখেন। স্বপ্নে তিনি উনার আহাল উবায়দুল্লাহকে বিভৎসরূপে দেখেন। তিনি ভীত-শঙ্কিত হয়ে আপন মনে বলেন, নিশ্চয়ই তার কোন খারাপ পরিণতি হতে যাচ্ছে। সকাল বেলা উবায়দুল্লাহ উনাকে বলল: উম্মু হাবীবা ! আমি ধর্মের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করে দেখেছি। ঈসায়ী ধর্ম থেকে অন্য কোন ধর্ম ভাল বলে মনে হয়নি। যদিও আমি মুসলমান হয়েছি, তবে আমি ইহা ত্যাগ করে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করছি। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তার এহেন পথভ্রষ্টতায় যথেষ্ট তিরস্কার করলেন এবং নিজের স্বপ্নের কথাও তাকে বললেন। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হলো না। সে ঈসায়ী ধর্মে থেকে গেল। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তাকে ছেড়ে দিয়ে একাকী বসবাস করতে লাগলেন। অতঃপর উবায়দুল্লাহ বেপরোয়াভাবে জীবন যাপন করতে লাগল। সে একদিন মাত্রারিক্ত মদ পান করে, ফলে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। মতান্তরে অধিক মদ পান করে সে সাগরে ডুবে মারা যায়। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম আরো বলেন: উক্ত স্বপ্নের মধ্যে আমি আরও দেখলাম, কেউ আমাকে “ইয়া উম্মাল মু’মিনীন” বলে ডাকছেন। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি এর ব্যাখ্যা করলাম যে, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হয়ত আমার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হবে। (তাবাক্বাত, শরহুল মাওয়াহিব)।
ইতিমধ্যে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজরত মুবারক করে পবিত্র মদীনা শরীফে তশরীফ আনয়ন করেন। তিনি উবায়দুল্লাহ ইবনে জাহাশের ইসলাম ত্যাগ এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার ঈমানী দৃঢ়তার উপরোক্ত সংবাদ অবগত হন। অতঃপর নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনাকে হাবশার বাদশাহ নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট প্রেরণ করে উনার মাধ্যমে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার প্রস্তাব দেন। সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পক্ষ হতে হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা নামে জনৈকা দাসী নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উক্ত প্রস্তাব সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার নিকট উপস্থাপন করলে তিনি এই মুবারক এই সুসংবাদ উনার জন্য খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক উনার দরবার শরীফে শুকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে স্বীয় অলঙ্কার (২টি রূপার চুড়ি, কানের দুল ও একটি নকশা করা আংটি) উক্ত দাসীকে হাদিয়া করেন। অতঃপর সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার ভাই হযরত জাফর ত্বাইয়ার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনাকে রাজ দরবারে আহ্বান করে আনুষ্ঠানিকভাবে পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতঃ উপস্থিত সকলকে আপ্যায়ন করেন। সম্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে ৪০০ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) মোহরও আদায় করে দেন। মোহরের অর্থ সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার নিকট পৌঁছলে সেখান থেকে ৫০ দীনার তিনি দাসী হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনাকে দিতে চান। কিন্তু হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা তা গ্রহণ করতে অসম্মতি জানান এবং বলেন, ¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি আমাকে কিছু নিতে নিষেধ করেছেন। তাই তিনি ইতিপূর্বে উনাকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল তাও ফিরিয়ে দেন। এ সময় হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা নিজের দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কথা জানান এবং সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনাকে অনুরোধ করেন, তিনি যেন উনার দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কথা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অবহিত করেন এবং উনার তরফ থেকে উনার নিকট সালাম পৌঁছিয়ে দেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম বলেন: আমি পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত আবরাহা রহমতুল্লাহি আলাইহা উনার সব কথা বলি এবং তার সালাম পেশ করি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মৃদু হেসে উত্তর দেন-
و عليها السلام و رحمة الله و بركاته -
পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার তারিখ:
হিজরী ৭ম হিজরী সনের ৩ মাহে ছফর শরীফ, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ (সোমবার) এই পবিত্র নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার বয়স মুবারক হয়েছিলেন ৩৬ বছর ৮ মাস ৪ দিন (ইছাবা, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল-ইহসান শরীফ)।
বর্ণিত আছে যে, এই নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠানের সংবাদ যখন হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট পৌঁছে তিনি অসন্তুষ্ট হননি, যদিও তখন পর্যন্ত তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি। তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে তখন মন্তব্য করেছিলেন:
ذاك الفحل، لا يقرع أنفه
অর্থ: তিনি তো এমন সম্ভ্রান্ত কুফূ অর্থাৎ সমকক্ষ, যা প্রত্যাখ্যান করা যায়না।
অর্থাৎ এই নিসবাতুল আযীম শরীফ খুবই মানানসই হয়েছে (তাবাকাত)।
পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ আনয়ন:
নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেন। নিসবাতুল আযীম শরীফ উনার পর স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত জা’ফর ত্বাইয়ার বিন আবী তালিব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে একদল মুহাজিরের সাথে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনাকে জাহাজযোগে পবিত্র মদীনা শরীফে পাঠিয়ে দেন। এই কাফিলা যখন পবিত্র মদীনা শরীফে পৌঁছেন, তখন নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খায়বরে অবস্থান করছিলেন। সুবহানাল্লাহ ! (আবু দাউদ শরীফ, সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশারহ আলাইহাস সালাম উনার আক্দ মুবারক স¤্রাট নাজ্জাসী রহমতুল্লাহি আলাইহি সম্পন্ন করেছেন। এই ব্যাপারে ইজমা হয়েছে। তবে হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইমাম যুহরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের বর্ণিত একটি পবিত্র হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে, উনার আক্দ মুবারক সম্পন্ন হয়েছে পবিত্র মদীনা শরীফে হযরত যূন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার ব্যবস্থাপনায়। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা)। এই উপলক্ষে মুবারক ওলীমার ব্যবস্থা করা হয় এবং মেহমানদের গোশত খাওয়ানো হয়। সীরাত বিশেষজ্ঞগণ কেউ কেউ বলেছেন, হতে পারে পবিত্র মদীনা শরীফে আসার পর আবার একটি আক্দ মুবারক এবং ওলীমা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়। সুবহানাল্লাহ!
হযরত ইবনে আব্বাস আলাইহিস সালাম বলেন: নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়, তখন এই পবিত্র আয়াত শরীফটি নাযিল হয়-
عَسَى اللهُ أنْ يَّجْعَلَ بَيْنَكُمْ وَ بَيْنَ الّذِيْنَ عَادَيْتُمْ مِنْهُمْ مَوَدَّةً
অর্থ: যারা আপনাদের শত্রু খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের মধ্যে এবং আপনাদের মধ্যে শীঘ্রই বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ ! (সুরা আল মুমতাহিনা-৭)
বিছালী শান মুবারক প্রকাশ:
হিজরী ৪৪ সনের ১৭ মাহে শা’বান শরীফ ইয়াওমুল খামীস (বৃহস্পতিবার) ৭৩ বছর ২ মাস ১৮ দিন বয়স মুবারকে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়াহ আশার আলাইহাস সালাম উনার ভাই সাইয়্যিদুনা হযরত মু‘য়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আন্হু উনার খিলাফতের সময় তিনি বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন (আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান শরীফ)।
বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পূর্বে তিনি সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনাকে ডেকে বলেন: নবী পরিবারে আজওয়াজে মুতাহহারাত হিসাবে আমরা একসঙ্গে বসবাস করেছি। যদি কোন ব্যাপারে আপনার মনে কষ্ট দিয়ে থাকি, তবে আমাকে মাফ করে দিন এবং আমার জন্য দোয়া করুন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উত্তর দিলেন:
سررتنى سرك الله
(আপনি আমাকে খুশী করেছেন, মহান আল্লাহ পাক আপনাকে খুশী করুন। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা)।
ফযীলত ও মর্যাদা মুবারক:
সামগ্রিকভাবে সকল উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অপরিসীম মর্যাদা মর্তবার বিষয়ে খালিক, মালিক, রব্ব, মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালাম মজীদে ইরশাদ মুবারকে করেছেন,
لستن كاحد من النساء -
অর্থাৎ উনারা অন্য কোন নারীর মত নন।
সুরা আহযাবের ৬নং আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক উনাদেরকে উম্মাহাতুল মু’মিনীন বলে উল্লেখ করেছেন, যেমন-
ألنَّبِيُّ أوْلَى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ أنْفُسِهِمْ وَ أزْوَاجُهُ أمُّهَاتُهُمْ
(নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঈমানদারগণের নিকট উনাদের প্রাণের চেয়েও অধিক প্রিয়। আর উনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম উনারা মু’মিনগণের মাতা)।
খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক এই পবিত্র আয়াত শরীফে উনাদেরকে أمَّهَاتُ الْمُؤْمِنِيْنَ (মু’মিনগণের মাতা) এই সম্মানিত লক্বব মুবারকে উল্লেখ করেছেন। এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মর্ম থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়াগণ তিনি ব্যতীত অন্যান্য সকল মু’মিন অর্থাৎ হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মু’মিন দুনিয়াতে এসেছেন, এখন আছেন এবং ভবিষ্যতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবেন উনাদের সকলেরই মহা সম্মানিত মাতা। সুবহানাল্লাহ ! সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
পবিত্র হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
الجَنّةُ تَحْتَ أقْدَامِ الْأُمُّهَاتِ -
অর্থাৎ সম্মানিত জান্নাত সম্মানিতা মাতা উনাদের পায়ের নিচে। সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা সকলেই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে একই সম্মানিত জান্নাত মুবারকে একই সাথে অবস্থান মুবারক করবেন। সুবহানাল্লাহ! এ থেকে বুঝা যায়, হযরত উম্মুহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের শান-মান, ফাযায়েল ফযীলত, বুযুর্গী সম্মান কত বে-মেছাল, যা তামাম কায়েনাতবাসীর চিন্তা ও ফিকিরের উর্দ্ধে।
খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদেরকে বেমেছাল পুতঃপবিত্রা ও সুমহান চরিত্র মুবারকের অধিকারিণী করে আল্লাহ পাক উনার হাবীব-উনার জন্য খাছ করে সৃষ্টি করেছেন সেজন্য উনাদের আরেকটি লক্বব মুবারক হচ্ছে أزواج مطهرات (আযওয়াজে মুত্বাহহারাত অর্থাৎ পুতঃপবিত্রা আহলিয়াগণ) অর্থাৎ উনাদের চরিত্র সকল প্রকার কলুষ-মুক্ত। সুবহানাল্লাহ !
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম সংখ্যায় ১৩ জন ছিলেন। উনাদের সকলই অনেক বৈশিষ্ঠ্যপূর্ণ গুণাবলীতে গুণান্বিতা ছিলেন। সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনারও অনেক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গুণাবলী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
কুরাইশ নেতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করার পূর্বে পবিত্র মক্কা শরীফ থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। উনার এই সম্মানিতা মেয়ে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম াদাস উনার পিতা কুফরী অবস্থায় থাকাকালীন সময়েই ইসলামের জন্য স্বীয় জন্মভূমি ত্যাগ করে সুদূর হাবশায় হিজরত করেন এবং সেখানে উনার আহাল বিধর্মী হয়ে গেলেও তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে পরিত্যাগ করেন। ফলত তিনি সমুদয় বিপদ তুচ্ছ করে পবিত্র ঈমানী দৃঢ়তায় দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি প্রগাঢ় মুহব্বত ও মাহাত্মের পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি বেমেছালভাবে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র সুন্নত মুবারক অনুসরণ করতেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সূত্রে যাঁরা পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন, উনাদের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন: হযরত হাবীবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা, হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দুই ছেলে হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত উতবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উতবা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে সাঈদ ছাক্বাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সালিম ইবনে সাওয়ার রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবুল জাররাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাফিয়া বিনতে শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহা, হযরত যায়নব বিনতে উম্মে সালামা রহমতুল্লাহি আলাইহা, হযরত উরওয়া ইবনে যুবায়র রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু সালিহ আস সাম্মান রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শাহর বিন হাওশাব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আনবাসা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শুতাইর ইবনে শাকাল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবু মালীহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমির হুযালী রহমতুল্লাহি আলাইহি, প্রমূখ। সুবহানাল্লাহ! (ইছাবা)
মুহাদ্দিছে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হিসাব মতে রাবীদের বর্ণনা অনুযায়ী উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা বলা হয়েছে ৬৫ খানা। তবে প্রকৃতপক্ষে সকল উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ পবিত্র সুন্নতের পাবন্দ। কাজেই উনাদের কাজকর্ম, কথা-বার্তা, আচার ব্যবহার সবই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার অন্তর্ভূক্ত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে উনার নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয় হিজরী ৭ সনে এবং উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশিত হয় হিজরী ৪৪ সনে। প্রায় ৩৭ বছর তিনি উম্মতের হিদায়েতের কাজে ব্যাপৃত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার মেয়ে হযরত হাবিবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার গৃহেই প্রতিপালিত হন। ছাক্বীফ গোত্রের এক বড় নেতার সাথে উনার শাদী মুবারক হয়েছিলেন।
একবার উনার পিতা কুরাইশ নেতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তখনও তিনি মুসলমান হননি) হুদায়বিয়ার সন্ধির মেয়াদ বৃদ্ধি করার জন্য পবিত্র মদীনা শরীফে আগমন করেন। এ উপলক্ষে তিনি উনার মেয়ে সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাক্ষাত করতে উনার ঘরে আসেন। তিনি ঘরে প্রবেশ করে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছানা মুবারকে বসছিলেন, ঠিক এ সময় সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তিনি উক্ত বিছানা মুবারক উল্টিয়ে ফেলেন। উনার পিতা উনাকে জিজ্ঞেস করলেন: আপনার এ বিছানা কি আপনার পিতা অপেক্ষা অধিকতর প্রিয়? সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম উত্তর দিলেন: ইহা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিছানা মুবারক। আপনি যেহেতু মুশরিক, আপনি অপবিত্র। তাই এ বিছানায় আপনি বসতে পারেন না। সুবহানাল্লাহ! (তাবাকাত, আল-বিদায়া)।
হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রসঙ্গে বলেন: বংশের দিক থেকে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের মধ্যে কেউই উনার চেয়ে বেশী নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অধিক নিকটের ছিলেন না। উনার চেয়ে বেশী মোহর অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের সময় ছিল না। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে অন্য কোন উম্মুল মু’মিনীন আলাইহাস সালাম উনার চেয়ে বেশী দূরে অবস্থান করা অবস্থায় নিসবাতুল আযীম শরীফ অনুষ্ঠিত হয়নি। সুবহানাল্লাহ! (সিয়ারু আলামিন নুবালা)
বর্ণিত আছে যে, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন হাদিয়া আশার আলাইহাস সালাম তিনি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট থেকে শুনেছিলেন যে, যে ব্যক্তি দৈনিক ১২ রাকাত নফল নামায পড়ে, জান্নাত তার আবাসস্থল হবে। যখন হতে তিনি এ পবিত্র হাদীছ শরীফ শুনেছেন, এই নামায কখনও তিনি পরিত্যাগ করেননি (বুখারী শরীফ)। গরীব দুঃখী ইয়াতীমদের প্রতি তিনি খুব লক্ষ্য করতেন। একবার এক মুসলমানের মৃত্যু হলে তার সব সন্তান সন্ততিকে তিনি লালন পালনের ভার গ্রহণ করেন এবং তাদের বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত তাদের লালন পালন করেন। সুবহানাল্লাহ !
নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফের উপর তিনি কঠোরভাবে আমল করতেন। উনার পিতা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যখন বিছাল শরীফ লাভ করেন, তিন দিন পরই তিনি সুগন্ধি চেয়ে নিয়ে নিজ কপাল মুবারকে মাখেন এবং বলেন: আমি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, খালিক, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক ও পরকালে বিশ্বাসী কোন মহিলার একমাত্র আহাল (স্বামী) ব্যতীত অন্য কোন মৃত ব্যক্তির জন্য তিন দিনের বেশী শোক পালন করা জায়েয নেই। আহালের (স্বামীর) জন্য চার মাস দশ দিন শোক করতে হবে। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত)
(সুত্র সমূহ: উসুদুল গাবা, ইছাবা, তাবাক্বাত, সিয়ারু আলামিন নুবালা, আসাহহুস সিয়ার, দৈনিক আল ইহসান শরীফ)


0 Comments: