মহামারি ও আযাব-গযব বলতে কি বুঝায়? এদের মধ্যে পার্থক্য কী?

* মহামারি ও আযাব-গযব বলতে কি বুঝায়? এদের মধ্যে পার্থক্য কী?
জাওয়াব: আযাব-গযব একটা আলাদা বিষয় আর মহামারি একটা আলাদা বিষয়। আযাব-গযব শুধু কাফির-মুশরিক ও মুনাফিকদের প্রতি নাযিল। যেমন- হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমের ৭২-৮২জন ঈমানদার ব্যতীত বাকি সবাই আযাবে-গযবে পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। অনুরূপভাবে আদ জাতি, ছামূদ জাতি, নমরূদ ও তার দলবল, শাদ্দাদ ও তার দলবল, ফেরাউন ও তার দলবল, হামান, কারূন, আবরাহা ও তার দলদল আযাব-গযবে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!
আর মহামারি ঈমান
দেরও হতে পারে। এটা হচ্ছে আলাদা একটা বিষয়। কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি। যেটাকে তাঊন বলা হয়। কোন ঈমানদার যদি মহামারিতে ইন্তেকাল করেন, তাহলে তিনি শহীদী দরজা লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
وعن أنس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الطاعون شهادة لكل مسلم
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, মহামারী প্রত্যেক মুসলমানের জন্য শাহাদাতস্বরূপ।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহামারি এটা ঈমানদারদেরও হতে পারে। যেমন- আমওয়াসের মহামারী। এটা ১৮ হিজরী শরীফে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহি সালাম উনার যামানায় মিশর ইরাক্বের মাঝামাঝি স্থানে হয়েছিলো। অনেক ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা এই মহামারিতে শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেছিলেন। এটা হচ্ছে মহামারী।
অনুরূপভাবে মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার যামানায় মহামারী দেখা দিয়েছিলো। অনেক লোক শহীদ হচ্ছিলেন। মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একজন আওলাদ ছিলেন। উনি বললেন- বারে এলাহী! ঠিক আছে মহামারী যখন আসছে, অনেক লোক শহীদ হচ্ছে। এতো লোক শহীদ না হয়ে, সেটা আমাকে দিয়ে দেয়া হোক। তিনি সেটা গ্রহণ করলেন। কিছু দিন পর তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। মহামারী বন্ধ হয়ে গেলো। সুবহানাল্লাহ! এটা হচ্ছে মহামারি।
কাজেই মহামারি ঈমানদেরও হতে পারে। এটা হচ্ছে আলাদা একটা বিষয়। কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি। যেটাকে তাঊন বলা হয়। কোন ঈমানদার যদি মহামারিতে ইন্তেকাল করেন, তাহলে তিনি শহীদী দরজা লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ! আর কাফেরদের জন্য এটা লানত। না‘ঊযুবিল্লাহ! আর আযাব-গযব হচ্ছে আলাদা একটা বিষয়। আযাব-গযব শুধু কাফির-মুশরিক ও মুনাফিকদের হবে। ঈমানদারদের উপর কখনও আযাব-গযব হবে না।
আর করোনা ভাইরাস হচ্ছে কাট্টা গযব। কাফেররা কুফরী করার কারণে এই গযব নাযিল হয়েছে তাদের দেশে। মুসলমানদের দেশে আসতে পারে না। যদি আসে ঐ কাফেরের গোলাম যারা আছে, এদেরকে পাকড়াও করবে। না‘ঊযুবিল্লাহ! কোনো মুসলমানকে কিন্তু পাকড়াও করবে না।
জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি এগুলো হওয়া কি সুন্নত?

* সুওয়াল: জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি এগুলো হওয়া কি সুন্নত? এগুলোকে খারাপ বলা কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
জওয়াব: হ্যাঁ, জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি ও কাশি হওয়া খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। এ সম্পর্কে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে, “একদিন হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যিনি খালিক্ব যিনি মালিক যিনি রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে আপনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ দুইটি বিষয় দিয়ে পাঠিয়েছেন, একটি দয়া করে আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। ১. মহামারী। যেমন- কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি। ২. সর্দি, জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি ইত্যাদি। (সর্দি, জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, হালকা মাথা ব্যাথা ইত্যাদি।) এই দুইটির মধ্যে একটি আপনি দয়া করে গ্রহণ করুন। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তাহলে আমি জ্বর, সর্দি, কাশি, ঠাণ্ডাকে গ্রহণ করলাম।” সুবহানাল্লাহি ওয়া রসূলিহী ওয়া আহলি বাইতিহী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক রয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود قال دخلت على النبي صلى الله عليه وسلم وهو يوعك فمسسته بيدي فقلت يا رسول الله إنك لتوعك وعكا شديدا فقال النبي صلى الله عليه وسلم أجل إني أوعك كما يوعك رجلان منكم قال فقلت ذلك لأن لك أجرين فقال أجل ثم قال ما من مسلم يصيبه أذى من مرض فما سواه إلا حط الله تعالى به سيئاته كما تحط الشجرة ورقها
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গেলাম, তখন তিনি (মহাসম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক) জ্বর গ্রহণ করেছিলেন। আমি আমার হাত দ্বারা উনাকে স্পর্শ করলাম এবং বললাম- ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি তো প্রবল (মহাসম্মানিত মারীদ্বী শান মুবারক) জ্বর মুবারক গ্রহণ করেছেন! তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ, আপনাদের দুজনে যা ভোগ করেন, আমি তা গ্রহণ করেছি। হযরত ইবনে মাস‘ঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি বললাম- এটা এই কারণে যে, আপনার জন্য দুই গুণ পুরুস্কার রয়েছে। (অর্থাৎ কোনো ব্যাক্তি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যদি খেয়াল করেন যে, এটা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক, তাহলে তিনি দুই গুণ ফযীলত লাভ করবেন। সুবহানাল্লাহ!) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হ্যাঁ। তারপর তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোনো মুসলমানের প্রতি যেকোনো কষ্ট পৌঁছুক না কেনো, হোক সেটা রোগ-বালা বা অন্য কোনো কিছু, মহান আল্লাহ পাক তিনি তা দ্বারা ঐ ব্যক্তি উনার গুনাহ্সমূহ এমনভাবে ঝেড়ে দেন, যেভাবে গাছ তার পাতা ঝাড়ে।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক রয়েছে,
وعن جابر قال دخل رسول الله صلى الله عليه وسلم على أم السائب فقال مالك تزفزفين قالت الحمى لا بارك الله فيها فقال لا تسبي الحمى فإنها تذهب خطايا بني آدم كما يذهب الكير خبث الحديد
অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত উম্মুস সায়িব রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার নিকট সম্মানিত তাশরীফ মুবারক নিয়ে ইরশাদ মুবারক করেন, আপনার কি হয়েছে? কান্না করছেন কেনো? তিনি জবাব দিলেন, জ্বর। মহান আল্লাহ পাক তিনি জ্বরের ভালো না করুন! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনি জ্বরকে গালি দিবেন না। কেননা, এটা মানুষের গুনাহ্সমূহকে এমনভাবে দূর করে, যেভাবে হাপর লোহার মরিচা দূর করে।” সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আরো ইরশাদ মুবারক রয়েছে,
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْعُطَاسَ
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হাঁচি পছন্দ করেন।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার আরো ইরশাদ মুবারক রয়েছে,
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُشَمَّتُ الْعَاطِسُ ثَلَاثًا فَمَا زَادَ فَهُوَ مَزْكُومٌ
অর্থ: “হযরত সালামাহ ইবনে আকওয়া’ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হাঁচি দাতা ৩ বার হাঁচি দিবে। কেউ যদি এর বেশি হাঁচি দেয়, তাহলে সে সর্দিগ্রস্ত।” সুবহানাল্লাহ! (ইবনে মাজাহ্ শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩৭১৪)
কাজেই জ্বর, ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি হওয়া এটা একটা খাছ সুন্নাত উনার অন্তর্ভূক্ত। এটাকে খারাপ বলা কাট্টা কুফরী। কেননা আকাইদের কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
اِهَانَةُ السُّنَّةِ كُفْرٌঅর্থ: “সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার ইহানত করা কুফরী।”
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ১০ম খলীফা সাইয়্যিদুনা ইমাম খলীফাতুল্লাহ হযরত আস সাফফাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি হওয়া এটা একটা খাছ সুন্নাত উনার অন্তর্ভূক্ত। এখন এর মধ্যে এরা করোনা ভাইরাসকে প্রবেশ করায়ে বলতেছে, এটা করোনা ভাইরাসের রোগীদের হয়ে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! এটাতো আলাদা একটা জিবানু। যেটা হাদীছ শরীফে রয়েছে, প্রত্যেকটা রোগের একটা আকৃতি রয়েছে। রোগগুলো তো এভাবে আসে না। আসমান থেকে নাযিল হয়। নাযিল হয়ে রোগ যখন চলাচল শুরু করে, যেই যেই এলাকা দিয়ে যায়, যাকে সে স্পর্শ করে, তারই এই রোগ হবে। আর যাকে স্পর্শ করবে না, তার মধ্যে রোগ হবে না। আর সে তো সবাইকে স্পর্শ করবে না। যিনি খালিক্ব যিনি মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যাদের জন্য পাঠিয়েছেন, তাদেরকেই স্পর্শ করবে, তাদেরই এই রোগ হবে। অন্য কারো হবে না। আর এই করোনা ভাইরাস যেটা, এটা কাট্টা একটা গযব। এটা মহামারী না। এটা কাফেরদের প্রতি কঠিন একটা গযব। আর ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশির নাম দিয়ে তারা করোনা ভাইরাসের কথা বলে থাকে। এটা আরেকটা কুফরী। এরা বাল্যবিবাহ নিয়ে যেমন কুফরী করে থাকে, ঠিক একইভাবে ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি নিয়েও কুফরী করে যাচ্ছে। না‘ঊযুবিল্লাহ! আমাদের দেশে মুসলমানদের সারা বছরই ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশি হয়ে থাকে। সে জন্য তার তো সেই অসুখ হয়নি। এটা আলাদা একটা জিবানু। এটা গযব। সেই গযবটা যার ভিতর প্রবেশ করবে, সে অবশ্যই মারা যাবে।” না‘ঊযুবিল্লাহ!
ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাসীদের’ ভ্রান্ত যুক্তির দাঁতভাঙ্গা জবাব (১)

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে অকাট্য দলীল-আদিল্লাহর ভিত্তিতে ‘ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাসীদের’ ভ্রান্ত যুক্তির দাঁতভাঙ্গা জবাব (১)













ক্বিল্লতে ইলম ও ক্বিল্লতে ফাহাম তথা কম জ্ঞান ও কম বুঝের কারণে কিছু সংখ্যক উলামায়ে সূ’ ১খানা আছার এবং ২খানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে বলেছেন, ‘ছোঁয়াচে বলতে কোনো রোগ নেই’ এ বিষয়টি অস্বীকার করতে চায় এবং ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ আছে বলে প্রমাণ করতে চায়। না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ!
১) আছারটি হচ্ছে-
كَانَ فِي وَفْد ثَقِيف رَجُل مَجْذُوم فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاك فَارْجِعْ
অর্থ: “বনী সাক্বীফের প্রতিনিধ দলে একজন ব্যক্তি কুষ্ঠরোগী ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ ব্যক্তি উনার নিকট সংবাদ পাঠিয়ে বললেন, নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে বাই‘আত করে নিয়েছি। সুতরাং আপনি ফিরে যান।”
আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দুইখানা হচ্ছেন-
১ নং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ-
وَفِّرْ مِنْ الْمَجْذُوم فِرَارك مِنْ الْأَسَد
অর্থ: “সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো।”
২ নং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ-
لَا يُورِد مُمْرِض عَلَى مُصِحّ
এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা উনার অর্থ একেক জন একেকভাবে তুলে থাকে। যেমন-
* ‘অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির সামনে উপস্থিত করা যাবে না।’
* ‘চর্মরোগাক্রান্ত উটের মালিক যেন সুস্থ উটের পালে তার উট না নিয়ে যায়।’
উপরোক্ত আছারটি নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদের বিপরীতে ইখতিলাফপূর্ণ আছার দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। আল্লামা ইবনে হাজার আসক্বালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুষ্ঠরোগীকে বাইয়াত করানো থেকে দূরে থাকার বিষয়টি’ অর্থাৎ উপরোক্ত আছারটি খ-ন করে দিয়েছেন। আর উপরোক্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দুইখানা ছালফে ছালিহীনগণ প্রত্যাখান করেছেন। কেউ কেউ বানোয়াটও বলেছেন। আবার কাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিসহ আরো অনেকে মানসূখ বলেছেন। বিশেষ করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে (وَفِّرْ مِنْ الْمَجْذُوم فِرَارك مِنْ الْأَسَد) এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা প্রত্যাখান করেছেন এবং তিনি বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কস্মিনকালেও এরূপ বলেননি। তাছাড়া উপরোক্ত আছার এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দুইখানা উনাদের মাধ্যমে ছোঁয়াচে রোগের অস্থিত্ব কস্মিনকালেও প্রমাণ হয় না। অন্যদিকে অনেক সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ এবং অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিশুদ্ধ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে কোনো রোগ নেই। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ এবং মহাসম্মানিত ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ দ্বারা কেউ কস্মিনকালেও প্রমাণ করতে পারবে না যে, ছোঁয়াচে বা সংক্রমাক রোগ আছে। আর যারা বলে থাকে, তারা মনগড়াভাবে ও বানিয়ে বলে থাকে এবং ইবলীসের মত ভিত্তিহীন যুক্তি প্রদান করে থাকে। না‘ঊযুবিল্লাহ! যা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইসলামী শরীয়ত মুবারক উনার দৃষ্টিতে কস্মিনকালেও গ্রহণযোগ্য নয়।
মূলত, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ছোঁয়াচে বলতে কোনো রোগই নেই। কোনো রোগের কোনো ক্ষমতা নেই যে, মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছা ব্যতীত কাউকে রোগাক্রান্ত করে। আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত জিন-ইনসান ও প্রাণী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের হায়াত-মাউত, বালা-মুছীবত, বিপদ-আপদ, রোগ-বালাই এবং রিযিক্বসমূহ সবকিছুই পূর্ব থেকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ! আইয়্যামে জাহিলীয়াতের যুগে মুশরিকরা ছোঁয়াচে রোগ বিশ্বাস করতো। অনেক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ এবং অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা রোগী থেকে দূরে থাকা সংক্রান্ত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফগুলো মানসূখ হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ!
কিতাবে বর্ণিত রয়েছে,
كَانَ فِي وَفْد ثَقِيف رَجُل مَجْذُوم فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاك فَارْجِعْ هَذَا مُوَافِق لِلْحَدِيثِ الْآخَر فِي صَحِيح الْبُخَارِيّ (وَفِّرْ مِنْ الْمَجْذُوم فِرَارك مِنْ الْأَسَد) وَقَدْ سَبَقَ شَرْح هَذَا الْحَدِيث فِي بَاب ( لَا عَدْوَى ) وَأَنَّهُ غَيْر مُخَالِف لِحَدِيثِ (لَا يُورِد مُمْرِض عَلَى مُصِحّ) قَالَ الْقَاضِي قَدْ اِخْتَلَفَ الْآثَار عَنْ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قِصَّة الْمَجْذُوم فَثَبَتَ عَنْهُ الْحَدِيثَانِ الْمَذْكُورَانِ وَعَنْ جَابِر رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ أَنَّ النَّبِيّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكَلَ مَعَ الْمَجْذُوم وَقَالَ لَهُ كُلْ ثِقَة بِاَللَّهِ وَتَوَكَّلَا عَلَيْهِ وَعَنْ عَائِشَة قَالَتْ مَوْلَى مَجْذُوم فَكَانَ يَأْكُل فِي صِحَافِي وَيَشْرَب فِي أَقْدَاحِي وَيَنَام عَلَى فِرَاشِي قَالَ وَقَدْ ذَهَبَ عُمَر رَضِيَ اللَّه عَنْهُ وَغَيْره مِنْ السَّلَف إِلَى الْأَكْل مَعَهُ وَرَأَوْا أَنَّ الْأَمْر بِاجْتِنَابِهِ مَنْسُوخ .
অর্থ: “বনী সাক্বীফের প্রতিনিধি দলে একজন ব্যক্তি কুষ্ঠরোগী ব্যক্তি ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ ব্যক্তি উনার নিকট সংবাদ পাঠিয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে বাই‘আত করে নিয়েছি। সুতরাং আপনি ফিরে যান।” এই আছারটির মুয়াফিক্ব বুখারী শরীফ-এ একখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছেন, ‘সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো।’ এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা ‘ছোঁয়াচে বলতে কোনো রোগ নেই।’ নামক অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। অনুরূপ আরেকখানা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ ‘অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির সামনে উপস্থিত করা যাবে না বা চর্মরোগাক্রান্ত উটের মালিক যেন সুস্থ উটের পালে তার উট না নিয়ে যায়।’ ইমাম কাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কুষ্ঠরোগীর ঘটনা (বাই‘য়াত) সম্বলিত আছারটি নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। (অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে বাই‘আত করে নিয়েছি। সুতরাং আপনি ফিরে যান। এরূপ ঘটনা ঘটেছে কিনা, এ বিষয়ে ইখতিলাফ রয়েছে।) আলোচ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দুইখানা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে ছাবিত বা প্রমাণিত। আর হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া-দাওয়া করেছেন এবং তিনি কুষ্ঠরোগী উনাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক নিয়ে উনার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে এবং পূর্ণ ভরসা করে খাবার গ্রহণ করুন।” আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমার একজন আযাদকৃত কুষ্ঠরোগী খাদেমা ছিলেন। তিনি আমার প্লেট মুবারক বা পাত্র মুবারক-এ খাবার খেতেন, আমার বাটি মুবারক-এ পানি পান করতেন এবং আমার বিছানা মুবারক-এ ঘুমাতেন।’ সুবহানাল্লাহ! আর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি, (সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি, হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি) এবং সালফে ছালেহীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের আরো অনেকে কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া-দাওয়া করেছেন এবং উনারা বর্ণনা করেছেন, কুষ্ঠরোগী বা অন্যান্য রোগীর থেকে দূরে থাকা বা রোগীদেরকে দূরে রাখার আদেশ মুবারকখানা মানসূখ হয়ে গেছে।” সুবহানাল্লাহ! (ইকমালুল মু’লিম, শারহুন নববী লিমুসলিম ৭/৩৭২, নাইলুল আওত্বার ৭/২২০)
অনুরূপভাবে হযরত ঈসা ইবনে দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও রোগীদেরকে দূরে রাখার বিষয়ে বর্ণিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা মানসূখ বলেছেন। যেমন- তিনি বলেন,
وَلَكِنَّهُ عِنْدِي مَنْسُوخٌ بِقَوْلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَا عَدْوَى.
অর্থ: “আমার মতে ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে কোনো রোগ নেই’ এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা (অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির সামনে উপস্থিত করা যাবে না বা চর্মরোগাক্রান্ত উটের মালিক যেন সুস্থ উটের পালে তার উট না নিয়ে যায়।’) এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা মানসূখ হয়ে গেছে।” সুবহানাল্লাহ! (আল মুন্তাক্বা ৪/৩৬৬)
ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وَحَكَى الْمَازِرِيّ وَالْقَاضِي عِيَاض عَنْ بَعْض الْعُلَمَاء أَنَّ حَدِيث (لَا يُورِد مُمْرِض عَلَى مُصِحّ ) مَنْسُوخ بِحَدِيثِ (لَا عَدْوَى)
অর্থ: “হযরত ইমাম মাযিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হযরত কাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি অর্থাৎ উনারা কতিপয় ইমাম মুজতাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক বলে কোনো রোগ নেই’ এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা (অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির সামনে উপস্থিত করা যাবে না বা চর্মরোগাক্রান্ত উটের মালিক যেন সুস্থ উটের পালে তার উট না নিয়ে যায়।’) এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা মানসূখ হয়ে গেছে।” সুবহানাল্লাহ! (শারহুন নববী আলা মুসলিম ৭/৩৭২)
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وقال الطبري: اختلف السلف في صحة هذا الحديث -أي حديث: "فرَّ من المجذوم فرارك من الأسد"- فأنكر بعضهم أن يكون عليه السلام أمر بالبعد من ذي عاهة جذامًا كان أو غيره، قالوا: قد أكل مع مجذوم وأقعده معه، وفعله أصحابه المهديون، روى عبد الرحمن بن القاسم، عن أبيه: "أن وفد ثقيف أتوا أبا بكر الصديق رضي الله عنه فأتى بطعام فدعاهم، فتنحى رجل، فقال: ما له؟ قال: مجذوم، فدعاه وأكل معه". وكان ابن عمر وسلمان رضي الله عنهم يصنعان الطعام للمجذومين ويأكلان معهم، وعن عكرمة: "أنه تنحى من مجذوم، فقال له ابن عباس: لعله خير مني ومنك".
وعن عائشة: "أن امرأة سألتها. أكان رسول الله عليه السلام قال: فروا من المجذومين فراركم من الأسد؟ فقالت: عائشة كلَّا والله، ولكنه قال: لا عدوى، وقال: فمن أعدى الأول، وكان مولى لنا أصابه ذلك الداء، فكان يأكل في صحافي ويشرب في أقداحي وينام على فراشي".
قالوا: وقد أبطل رسول الله العدوى.
অর্থ: “হযরত ইমাম ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সালফে ছালিহীনগণ উনারা ‘সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো।’ এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা ছহীহ কিনা এ বিষয়ে ইখতিলাফ করেছেন। উনাদের মধ্যে কতিপয় সালফে ছালিহীনগণ উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কুষ্ঠরোগী গোলাম বা অন্য কারো ব্যাপারে এরূপ আদেশ হওয়ার বিষয়টি প্রত্যাখান করেছেন, অস্বীকার করেছেন। উনারা বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অবশ্যই কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া-দাওয়া করেছেন এবং কুষ্ঠরোগীকে উনার সাথে বসিয়েছেন। আর এটা উনার আমল মুবারক এবং উনার সুপথপ্রাপ্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের আমল মুবারক। সুবহানাল্লাহ! “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে ক্বাসিম আলাইহিস সালাম তিনি উনার পিতা সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বাসিম ইবনে মুহম্মদ ইবনে আবূ বকর আলাইহিমুস সালাম উনার থেকে বর্ণনা করেন। সাইয়্যিদুনা হযরত ক্বাসিম ইবনে মুহম্মদ ইবনে আবূ বকর ছিদ্দীক্ব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, একদা সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার নিকট ছাক্বীফ গোত্র থেকে এক প্রতিনিধি দল আসলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি খাবার মুবারক নিয়ে এসে উনাদের সবাইকে ডাকলেন। তখন এক ব্যক্তি দেখে দূরে সরে গেলো। সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, উনার কি হয়েছে? তিনি বললেন, কুষ্ঠরোগী। তিনি উনাকে ডাকলেন এবং উনার সাথে খাওয়া-দাওয়া করলেন। সুবহানাল্লাহ! আর ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি এবং হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা উভয়ে কুষ্ঠরোগীদের জন্য খাবার তৈরী করতেন এবং কুষ্ঠরোগীদের সাথে খাওয়া-দাওয়া করতেন। আর হযরত ইকরামাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি একবার কুষ্ঠরোগীর কাছ থেকে দূরে সরে গেলেন। তখন হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি উনাকে বলেন, হতে পারে এই কুষ্ঠরোগী ব্যক্তি তিনি আমার এবং আপনার থেকে উত্তম। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, একদা উনাকে একজন মহিলা জিজ্ঞাসা করলো যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কি এরূপ বলেছেন যে, তোমরা সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো? জবাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! কস্মিনকালেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এরূপ বলেননি। বরং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলতে কিছুই নেই। তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেছেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে সংক্রামিত করলো?’ আর আমাদের একজন আযাকৃত খাদেমা ছিলেন, যাঁর কুষ্ঠরোগ হয়েছিলো। তারপরেও উক্ত খাদেমা তিনি আমার প্লেট বা পাত্র মুবারক-এ খাবার খেতেন, আমার বাটি মুবারক-এ পানি পান করতেন এবং আমার বিছানা মুবারক-এ ঘুমাতেন। সুবহানাল্লাহ! উনারা বলেন যে, আবশ্যই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগকে নাকচ করেছেন, বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (নাখবুল আফকার ফী তানক্বীহি মাবানিইল আখবার ফী শারহি মা‘আনিইল আছার লিবাদরিদ্দীন আইনী হানাফী ১৪/৯৩, উমদাতুল ক্বারী ২১/২৪৭, শারহু ছহীহিল বুখারী লিইবনে বাত্ত্বাল ৯/৪১০, আত তাওদ্বীহ লিশারহিল জামিয়িছ ছহীহ লিইবনে মুলক্বিন ২৭/৪২৪)
আল্লামা বাদরুদ্দীন আইনী হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
مَا قَالَه عِيَاض اخْتلفت الْآثَار فِي المجذوم فجَاء عَن جَابر أَن النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم أكل مَعَ مجذوم وَقَالَ ثِقَة بِاللَّه وتوكلاً عَلَيْهِ قَالَ فَذهب عمر رَضِي الله عَنهُ وَجَمَاعَة من السّلف إِلَى الْأكل مَعَه وَرَأَوا أَن الْأَمر باجتنابه مَنْسُوخ
অর্থ: “হযরত কাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যা বলেছেন, ‘কুষ্ঠরোগীর বিষয়ে ইখলিফপূর্ণ হাদীছ আছারসমূহ বর্ণিত রয়েছে।’ হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া-দাওয়া মুবারক করেছেন এবং তিনি কুষ্ঠরোগী উনাকে উনার সাথে বসিয়েছেন এবং তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক নিয়ে উনার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে এবং পূর্ণ ভরসা করে খাবার গ্রহণ করুন। সুবহানাল্লাহ! তিনি বলেন, দ্বিতীয় খলীফা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এবং সালফে ছালিহীন উনাদের একদল কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া-দাওয়ার বিষয়টি সমর্থন করেছেন এবং উনারা বর্ণনা করেছেন যে, কুষ্ঠরোগী থেকে দূরে থাকার আদেশটি মানসূখ হয়ে গেছে।” সুবহানাল্লাহ! (উমদাতুল ক্বারী ২১/২৪৭)
ইমাম কাযী আয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
وقد اختلفت الآثار عن النبى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فى قصة المجذوم وحكمه فروى عنه ما تقدم وقد ذكر الطبرى عن جابر أن النبى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ واكل مجذوماً وأقعده معه وقال كل ثقة بالله وتوكلاً عليه وعن عائشة وقد سألتها امرأة عن الحديث المتقدم فى الفرار منه فقالت كلا والله ولكن رسول الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال لا عدوى فمن أعدى الأول وقد كان لنا مولى أصابه ذلك فكان يأكل فى صحافى ويشرب فى أقداحى وينام على فراشى. وهذا يدل من فحوى كلام عائشة أنها لم تنكر الحديث الأول ولكنها ذهبت إلى نسخه بقوله لا عدوى وبفعله عليه السلام وقد روى أيضاً ذلك عن أئمة السلف عمر وغيره.
অর্থ: ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে কুষ্ঠরোগীর বাই‘আত সংক্রান্ত আছারটি নিয়ে এবং আছারের হুকুম নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। (অর্থাৎ আছারে যে রয়েছে, বনী সাক্বীফের প্রতিনিধি দলে একজন ব্যক্তি কুষ্ঠরোগী ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঐ ব্যক্তি উনার নিকট সংবাদ পাঠিয়ে বলেছেন “নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে বাই‘আত করে নিয়েছি। সুতরাং আপনি ফিরে যান। এরূপ ঘটনা ঘটেছে কিনা, এ বিষয়ে ইখতিলাফ রয়েছে।) যা উনার থেকে বর্ণিত হয়েছে, তা পূর্বে আলোচনা হয়েছে। ইমাম ত্ববারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুষ্ঠরোগীর সাথে খাওয়া-দাওয়া মুবারক করেছেন এবং তিনি কুষ্ঠরোগী উনাকে উনার সাথে বসিয়েছেন এবং তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক নিয়ে উনার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে এবং পূর্ণ ভরসা করে খাবার গ্রহণ করুন। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত রয়েছে, একদা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনাকে একজন মহিলা পূর্বে আলোচিত কুষ্ঠরোগী থেকে পালানোর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ (সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো। এ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। জবাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! কস্মিনকালেও না। বরং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলতে কিছুই নেই। তাহলে প্রথম উটটিকে কে সংক্রামিত করলো?’ আর অবশ্যই আমাদের একজন আযাকৃত খাদেমা ছিলেন, যাঁর কুষ্ঠরোগ হয়েছিলো। তারপরেও উক্ত খাদেমা তিনি আমার প্লেট বা পাত্র মুবারক-এ খাবার খেতেন, আমার বাটি মুবারক-এ পানি পান করতেন এবং আমার বিছানা মুবারক-এ ঘুমাতেন। সুবহানাল্লাহ! মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার কথার তাৎপর্য থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, তিনি প্রথম মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ তথা ‘সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো।’ এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফখানা শুধু প্রত্যাখানই করেননি; বরং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে ইরশাদ মুবারক করেছেন, ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলতে কোনো রোগ নেই।’ এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল মুবারক দ্বারা ঐ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ তথা ‘সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো’ এটাকে মানসূখ প্রমাণ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! অনুরূপভাবে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার এবং আরো অন্যান্য পূর্ববর্তী অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব মুবারক (যেমন- সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার, হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার এবং হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার অর্থাৎ উনাদেরসহ আরো অন্যান্য) উনাদের থেকে অনুরূপ বর্ণিত রয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (ইকমালুল মু’লিম ৭/১৬৩)
অতএব, উপরোক্ত বর্ণনা থেকে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো যে, ছোঁয়াচে বলে কোনো রোগ নেই। আর ‘সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো, কুষ্ঠরোগীর থেকেও সেভাবে পলায়ন করো’ এবং ‘অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির সামনে উপস্থিত করা যাবে না বা চর্মরোগাক্রান্ত উটের মালিক যেন সুস্থ উটের পালে তার উট না নিয়ে যায়’ এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দুইখানা মানসূখ হয়ে গেছে। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার বর্ণনা থেকে, উনার আমল মুবারক থেকে এবং উনার ক্বসম দিয়ে অত্যন্ত দৃঢ়চিত্ত বক্তব্য মুবারক প্রদান উনার পর অন্য কারো কোনো কথাই গ্রহণযোগ্য হবে না। আর এ বিষয়টি সকলের জানা রয়েছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনারা যখন কোনো বিষয়ে ইখতিলাফে পতিত হতেন, তখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার কাছ থেকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতেন। তিনি যেই ফায়ছালা মুবারক দিতেন, তা সকলে মেনে নিতেন। আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বওল মুবারক এবং আমল মুবারক, মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বওল মুবারক এবং আমল মুবারক, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার ক্বওল মুবারক এবং আমল মুবারক, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার আমল মুবারক, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার ক্বওল মুবারক এবং আমল মুবারক এবং হযরত সালমান ফার্সী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার আমল মুবারক এবং হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার আমল মুবারকসহ আরো অন্যান্য অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব মুবারক উনাদের আমল মুবারক ও ক্বওল মুবারক দ্বারাও এই বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন এবং অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ ব্যক্তির সামনে না আনা বা রোগীদের সামনে না যাওয়া সম্পর্কিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফগুলো মানসূখ হয়ে গেছে। তার পাশাপাশি এই বিষয়টিও দিবালোকের ন্যায় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, কুষ্ঠরোগী বা যে কোনো রোগীদের সাথে উঠা-বসা করা, শরীর ঘেঁষে বসা, হাতের সাথে হাত লাগানো, একই পাত্রে খাওয়া-দাওয়া করা, তারা যেই পাত্রে খায় ও পান করে এবং যে বিছানায় ঘুমায়, সেই পাত্রে খাওয়া ও পান করা এবং সেই বিছানায় ঘুমানো এবং রোগীরা হাত দিয়ে পাত্রের যেই স্থান থেকে খাবার খায়, হুবহু সেই স্থান থেকে সেই খাদ্য খাওয়া মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!

(দলীল সমূহ: 
(১) ইকমালুল মু’লিম,
(২) নাখবুল আফকার ফী তানক্বীহি মাবানিইল আখবার ফী শারহি মা‘আনিইল আছার লিবাদরিদ্দীন আইনী হানাফী,
(৩) নাইলুল আওত্বার, 
(৪) আল মুন্তাক্বা,
(৫) শারহুন নববী আলা মুসলিম, 
(৬) উমদাতুল ক্বারী,
(৭) শারহু ছহীহিল বুখারী লিইবনে বাত্ত্বাল, 
(৮) আত তাওদ্বীহ লিশারহিল জামিয়িছ ছহীহ লিইবনে মুলক্বিন, (৯) মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, 
(১০) তিরমিযী শরীফ, 
(১১) আবূ দাউদ শরীফ, 
(১২) সুনানে ইবনে মাজাহ্, 
(১৩) মুসনাদে আবী ইয়া’লা, 
(১৪) আল মুন্তাখাব মিন মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমাইদ, 
(১৫) আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাতি, 
(১৬) আল আদাবু লিল বাইহাক্বী, 
(১৭) শু‘আবুল ঈমান, 
(১৮) শারহু সুনানি ইবনে মাজাহ লিস সুয়ূত্বী, 
(১৯) বাযলুল মাজহূদ ফী হাল্লি সুনানি আবী দাঊদ, 
(২০) আনীসুস সারী, 
(২১) আওনুল মা’বূদ, 
(২২) আল মাসালিক ফী শারহি মুয়াত্ত্বাই মালিক, 
(২৩) সিলাহুল মু’মিন ফীদ দো‘আ ওয়ায যিক্র, 
(২৪) তুহ্ফাতুয যাকিরীন, 
(২৫) তুহফাতুল আহওয়যী, 
(২৬) তাহ্যীবুল আছার, 
(২৭) জামি‘উল আহাদীছ, 
(২৮) জামি‘উ বায়ানিল ইলম ওয়া ফাদ্ব্লিহী, 
(২৯) মুয়াত্তা শরীফ, 
(৩০) মিশকাত শরীফ, 
(৩১) মিরক্বাত শরীফ, 
(৩২) তাফসীরে মাযহারী, 
(৩৩) জামি‘উল উছূল লি ইবনে আছীর, 
(৩৪) দায়লামী শরীফ, 
(৩৫) যখীরতুল উক্ববা, 
(৩৬) মাফতুহল মুনয়িম, 
(৩৭) আল বাহ্রুল মুহিত, 
(৩৮) আল মুফহিম, 
(৩৯) আল কাওকাবুল ওয়াহ্হাজ 
(৪০) ফাতহুর রব্বানী ইত্যাদি)
আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতালের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকি আজ ।

আজ ৩রা শাবান ১৪৪১ হিজরী।
ঠিক ৬ বছর পুর্বে এই তারিখে ১৪৩৫ হিজরীতে ঢাকার রাজারবাগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতাল।
===============
" মহিলা দ্বারা মহিলাদের উন্নত চিকিৎসার গ্রহনের সর্বোত্তম নির্ভরযোগ্য হাসপাতাল" এই শ্লোগান নিয়ে শুরু হয়েছিল আল মুতমাইন্নার পথচলা।
যে শ্লোগানকে সামনে রেখে আজো আল মুতমাইন্নাহ এগিয়ে চলছে।

একজন পর্দানশীন মহিলা হওয়া সত্ত্বেও পর্দার সুব্যবস্থা সম্পন্ন হাসপাতাল না থাকার কারণে বা খোঁজ না পাওয়ার কারণে তিনি নিজেকে বেপর্দা থেকে হিফাযত করতে পারেন না।
বর্তমানে বাংলাদেশসহ গোটা পৃথিবীতে এমন কোন হাসপাতাল নেই যেখানে বড় বড় রোগের অপারেশনের ক্ষেত্রে সাধারনত পুরুষ ব্যতিত শুধুমাত্র মহিলা দ্বারা অপারেশন করা হয়।
কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার যমীনে এমন একটি হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে মহিলাদের যাবতীয় চিকিৎসা শুধুমাত্র মহিলা ডাক্তারের মাধ্যমেই করানো হয়। এমনকি বড় কোন অপারেশনের ক্ষেত্রেও পুরুষ ডাক্তার ব্যতীতই মহিলা ডাক্তারের মাধ্যমেই চিকিৎসা হয়ে থাকে।
চিকিৎসার জন্য যেন কোন মহিলাকে বেপর্দা হতে না হয় তার আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতাল।
একজন স্বর্ণকার স্বর্ণ চিনে, কামার কখনো স্বর্ণ চিনে না। ঠিক তদ্রপ যিনি পর্দা করেন, পর্দার মূল্য বুঝেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করেন। যিনি নিজের ইজ্জত-সম্মান ও পর্দা রক্ষা করতে চান তিনি ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করার জন্য অবশ্যই আল-মুতমাইন্নাহ আসবেন।
মূলতঃ আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতাল হচ্ছেন- সকল মহিলাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এক বিশেষ নিয়ামত।
অতএব, মুসলমান হিসেবে আমাদের প্রত্যেক মহিলাদের জন্য এবং আহালের ( স্বামী ) জন্য ফরয হচ্ছে তার আহলিয়াকে ( স্ত্রী ) মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রেযামন্দি-সন্তষ্টি হাছিলের লক্ষ্যে খাছ পর্দার সাথে শরীয়তসম্মতভাবে আল মুতমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতাল থেকে সু-চিকিৎসা গ্রহণ করা।
ঠিকানাঃ
৫ , আউটার সার্কুলার রোড,
রাজারবাগ, ঢাকা ১২১৭
( রাজারবাগ পুলিশ লাইন ৩ নং গেইটের বিপরীতে )
যোগাযোগঃ ০১৭১১০৫২৩৬৬
যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৬)
পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা হারাম ও শিরকের অন্তর্ভূক্ত, সূতরাং যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৬)
বালিত ফির্কার লোকেরা ছোঁয়াচে রোগ প্রমাণ করতে যে হাদীছ শরীফখানা মূল দলীল হিসাবে উপস্থাপন করে থাকে তা হচ্ছে,
عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ عنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: إذَا سمِعْتُمْ الطَّاعُونَ بِأَرْضٍ، فَلاَ تَدْخُلُوهَا، وَإذَا وقَعَ بِأَرْضٍ، وَأَنْتُمْ فِيهَا، فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَاহযরত উসামা ইবনে যাইদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, “যখন তোমরা শুনবে যে, কোন স্থানে প্লেগ রোগ হয়েছে, তাহলে সেখানে প্রবেশ করো না। আর যখন কোন স্থানে সেই রোগের প্রাদুর্ভাব হয় এবং তোমরা সেখানে থাকো, সেখান থেকে বের হয়ে যেয়ো না।” (বুখারী শরীফ ৫৭২৮, মুসলিম শরীফ ৫৯০৫)
এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকারক হাফিজুল হাদীছ হযরত ইমাম কাস্তালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি কয়েকটি কারন উল্লেখ করেছেন,
১) যখন কোন এলাকায় মহামারী বিস্তার লাভ করে তখন সে এলাকার নির্দিষ্ট কিছু লোকদের উপর আল্লাহ পাক উনার ফয়সালা কায়েম হয়ে যায়। অর্থাৎ সে ঐ এলাকায় থাকলেও তার সে রোগ হবে অথবা সে এলাকা ত্যাগ করলেও তা থেকে সে বাঁচতে পারবে না। তাই সে এলাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
২) যদি মানুষেরা মহামারী দেখে সে এলাকা থেকে বের হয়ে যায় তখন ঐ এলাকার আক্রান্ত ব্যক্তি চরম বিপদে পতিত হয়। কারন আক্রান্ত ব্যক্তিকে দেখাশোনা করার কেউ থাকে না এমনকি সে মারা গেলেও তাকে দাফনের কেউ থাকে না। আক্রান্ত ব্যক্তিকে এহেন বিপদের মধ্যে ফেলে তাই এলাকা ত্যাগ করতে না করা হয়েছে।
৩) কোন মাহামারীর কারনে যদি মানুষ সে এলাকা থেকে বের হয়ে যেতে শুরু করে তখন সবার দেখা দেখি সুস্থ ও শক্তিশালী লোকেরাও বের হয়ে যাবে। এর ফলে দুর্বল ব্যক্তিদের মন ভেঙ্গে যাবে। উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি এ বিষয়কে জিহাদের ময়দান থেকে পালয়নের সাথেও তুলনা করেছেন। কারন জিহাদের ময়দান থেকে কেউ পালালে তাদের দেখে দুর্বল লোকেদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে এবং শত্রুপক্ষ সম্পর্কে ভীতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।
৪) বাহিরে বের হয়ে যাওয়া লোকেরা মনে করে যদি আমরা আক্রান্ত স্থানে থাকি তাহলে আমরাও আক্রান্ত হয়ে যাব আর ওখানে অবস্থানকারী লোকেরা ধারনা করে আমরা যদি বের হয়ে যাই তবে বেঁচে যাব। এটা ঈমানহানীকর বিষয়। তাই নিষেধ করা হয়েছে।
হযরত আরিফ ইবনে আবি জামরা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কোন বিপদ নাযিল হওয়ার থাকলে ঐ স্থানে অবস্থানকারীদের নিয়ন্ত্রন করা হয়, জমিনের ঐ অংশ (অর্থাৎ যেখানে মহামারী হচ্ছে) নিয়ন্ত্রিত হয়না। সূতরাং মহান আল্লাহ পাক যার উপর মহামারী নাযিল করার সিদ্ধান্ত নিবেন তার উপর নাযিল হবেই সে যেখানেই বা যে এলাকাতেই যাক না কেন তার উপর সেটা নাযিল হবেই।
আর মহামারী আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করার হেতু হচ্ছে ঐ এলাকায় গেলে আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় যদি সে লোক আক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে ছোঁয়াচে রোগের ধারনা করে ঈমান নষ্ট করে বসবে। তাই এই ধরনে আক্বীদার লোকদের আক্রান্ত এলাকায় প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। (শরহে বুখারী, মাওয়াহেবু ল্লাদুন্নিয়াহ, শরহে যারকানী)
সর্বোপরি, বুখারী শরীফের এই হাদীছ শরীফ দ্বারা যা প্রমাণ হয়, মহামারী কবলিত স্থানে কেউ থাকলে তাকে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে এ আক্বীদার ভিত্তিতেই যে, ছোঁয়াচে রোগ বলতে কোন রোগ নেই। আর এ আক্বীদা যেন তার মনে স্থান না পায় এ এলাকায় থাকলে সে আক্রান্ত হবে আর ছেড়ে
অপরদিকে উক্ত হাদীছ শরীফের মধ্যে মহামারী কবলিত স্থানে কাউকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে এ জন্য যে, যাতে সেখানে গিয়ে আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় সে রোগে আক্রান্ত হয়ে যাতে ধারনা করে না বসে এ এলাকায় প্রবেশ করার কারনে সে আক্রান্ত হয়েছে।
চলে গেল সে আক্রান্ত হবে না।
হযরত ইবনে আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ বিষয়টা পরিষ্কার করে উনার কিতাবে বলেন,
أَمَّا قَوْلُهُ لَا عَدْوَى فَمَعْنَاهُ أَنَّهُ لَا يُعْدِي شَيْءٌ شَيْئًا وَلَا يُعْدِي سَقِيمٌ صَحِيحًا وَاللَّهُ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ لَا شَيْءَ إِلَّا مَا شَاءَঅর্থ: ‘ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছুই নেই’ এ হাদীছ শরীফের অর্থ হচ্ছে, কোন কিছুই কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না এবং কোন রোগী কোন সুস্থ ব্যক্তিকে সংক্রামিত করতে পারেনা। বরং মহান আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় সবকিছু হয়। উনার ইচ্ছার বাইরে কোন কিছু হয় না।” (আল ইস্তিযকার ৮/৪২২; প্রকাশনা: দারু কুতুব আল ইলমিয়া, বৈরুত লেবানন)
সূতরাং মুসলমানদের আক্বীদা হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম ছাড়া কারো কোন রোগ হতে পারে না। সেই ভিত্তিতে প্রথম জনের যেভাবে মহান আল্লাহ পাকের হুকুমে রোগ হয়েছে, তেমনি অন্যজনেরও যদি হয় মহান আল্লাহ পাকের হুকুমেই সেই রোগ হবে। আর মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুম না হলে কিছুতেই তার সেই রোগ হবে না। এমনকি আক্রান্ত রোগীর সাথে একাসথে খেলে, থাকলে, স্পর্শ করলে কোন অবস্থাতেই না। এটাই আক্বীদা, এ আক্বীদাই সকল মুসলমানদের পোষন করতে হবে। (চলবে...)
যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৫)
পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা হারাম ও শিরকের অন্তর্ভূক্ত, সূতরাং যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৫)
বাতিল ফির্কার লোকেরা ছোঁয়াচে রোগ প্রমাণ করার জন্য বুখারী শরীফ থেকে আরেকটি দলীল দেয়ার চেষ্টা করে,
وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الأَسَدِকুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো। (বুখারী শরীফ ৫৭০৭)
অর্থাৎ তাদের বক্তব্য হচ্ছে কুষ্ঠরোগ যেহেতু ছোঁয়াচে তাই এ রোগ থেকে বাঁচার জন্য বাঘের হাত থেকে বাঁচার মত সতর্ক হতে বলা হয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে যারা হাদীছ শরীফখানার এ অংশ তুলে দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তারা এই হাদীছ শরীফের পূর্ণাংশ উল্লেখ করে না। এই হাদীছ শরীফের প্রথমেই বলা হয়েছে,
سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ عَدْو‘ى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الأَسَدِহযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই, কুলক্ষণ বলে কিছু নেই, পেঁচা অশুভের লক্ষণ নয়, সফর মাসের কোন অশুভ নেই।”
হাদীছ শরীফের শুরুতেই বলে নেয়া হয়েছে ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ অর্থাৎ আক্বীদার বিষয়টা পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। তাহলে পরের অংশ ‘কুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে দূরে থাকো যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাকো’ এ কথার তাৎপর্য কি? আর ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি কুষ্ঠরোগীর সাথে একসাথে এক পাত্রে খাবার খাওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তাহলে এর ফয়সালা কি?
এ মর্মে হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
فَإِنَّهُ لَا يُصِيبُكَ مِنْهُ شَيْءٌ إِلَّا بِتَقْدِيرِ اللَّهِ تَعَالَى، وَهَذَا خِطَابٌ لِمَنْ قَوِيَ يَقِينُهُ، أَمَّا مَنْ لَمْ يَصِلْ إِلَى هَذِهِ الدَّرَجَةِ فَمَأْمُورٌ بِعَدَمِ أَكْلِهِ مَعَهُ كَمَا يُفِيدُهُ خَبَرُ: (فِرِّ مِنَ الْمَجْذُومِ)“উক্ত বর্ণনায় কুষ্ঠরোগী বা সে ধরনের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি বিনয় ও ঈমান পোষণ করে খাবার খাওয়ার জন্য বলা হয়েছে এ কারণে যে, সেই রোগীর থেকে কোনকিছু তোমার নিকট মহান আল্লাহ পাকের ফয়সালা ব্যাতিত পৌঁছবে না। আর এ সম্বোধন ঐ ব্যক্তির জন্য যার ঈমান ও ইয়াকীন মজবূত। কিন্তু যে ব্যক্তি সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে নি, তার জন্য হুকুম হলো, সে ঐ ধরনের রোগীর সাথে খাবে না। যেমন এ ব্যাপারে অপর হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, তুমি কুষ্ঠরোগী থেকে পলায়ন করো।” (ফাইদ্বুল ক্বাদীর শরহু জামিউছ ছগীর, ৫/ ৪৩ )
অর্থাৎ যাদের ঈমান ও ইয়াকিন দূর্বল যারা ছোঁয়াচে রোগের ধারনা করে বসে নিজের মূল্যবান ঈমান হারিয়ে বসতে পারে তাদের জন্য কুষ্ঠরোগী থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। কারন কুষ্ঠরোগীর কাছে তারা যদি যায়, আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় তাদের যদি কুষ্ঠরোগ হয়ে যায় তখন তারা যদি আক্বীদা পোষন করে কুষ্ঠরোগীর সংস্পর্শে যাওয়ার কারনে ছোঁয়াচে রোগের হেতু তাদের এ রোগ হয়েছে সেটা শিরিক ও কুফরী হয়ে ঈমান নষ্ট হবে। এই ধরনের দুর্বল ঈমানের মানুষের জন্য সর্তকবাণী স্মরূপ কুষ্ঠরোগী থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে।
আর যারা সূদৃঢ় আক্বীদার অধিকারী যাদের বিশ্বাসে কোন অবস্থাতেই ফাটল ধরবে না সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমের প্রতি অবিচল আস্থা থাকবে ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস রেখে ঈমান হারাবে না তাদের কুষ্ঠরোগীর সাথে একসাথে খাবারও খাওয়ার ব্যাপারেও উৎসাহিত করা হয়েছে। যা আমরা বিগতপর্বে আলোচনা করেছি।
এ ধরনের বিশুদ্ধ আক্বীদার মানুষের জন্য বরং হাদীছ শরীফের মধ্যে বলা হয়েছে,
عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ كُلْ مَعَ صَاحِبِ الْبَلَاءِ تَوَاضُعًا لِرَبِّك وَإِيمَانًاহযরত আবু যর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সাথে খাও তোমার প্রতিপালকের প্রতি বিনয় এবং উনার প্রতি দৃঢ় ঈমানের সাথে। (আওনুল মা’বুদ শরহে সুনানে আবু দাউদ ৯/৮৭৫, জামিউস ছগীর ২/১৬৬, ফতহুল কবীর ২/৩০০, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ ১২/১৭২)
সূতরাং প্রমাণ হয়ে গেলো, কুষ্ঠরোগী থেকে বাঘের মত বেঁচে থাকার কথা শুধুমাত্র দুর্বল ঈমানের লোকদের জন্যই বলা হয়েছে। (চলবে..)
যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৪)
পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা হারাম ও শিরকের অন্তর্ভূক্ত, সূতরাং যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৪)
গতপর্বে আমরা দেখেছি বাহ্যিক কিছু রেওয়ায়েত আছে যা দেখে কিছু মানুষ ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস করে বসে। অথচ ঐসকল বর্ণনা দ্বারাই বরং প্রমাণ হয় ছোঁয়াচে রোগের আক্বীদা রাখা যাবে না। কেউ তেমন বিশ্বাস করে বসলে ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। এ ধরনের আরো একটি বর্ণনা হাদীছ শরীফের কিতাবে বর্ণিত আছে,
عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ
হযরত আমর ইবনে শারীদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, বনী সাক্বীফের প্রতিনিধি দলে একজন ব্যক্তি কুষ্ঠরোগী ছিলেন। তখন হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ব্যক্তির নিকট সংবাদ পাঠিয়ে বললেন, “নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বাইয়াত করে নিয়েছি সুতরাং আপনি ফিরে যান।” (মুসলিম শরীফ ২২৩১)
এই হাদীছ শরীফ দেখিয়ে বাতিল ফির্কার লোকেরা বলে থাকে কুষ্ঠরোগ ছোঁয়াচে বলেই সেই কুষ্ঠরোগীকে আসতে না করা হয়েছে। উল্লেখ্য উক্ত ব্যক্তিকে ছোঁয়াচে রোগের কারনে আসতে না করা হয়নি। বরং যেহেতু কুষ্ঠের মত কষ্টসাধ্য রোগে তিনি আক্রান্ত ছিলেন তাই উনাকে কষ্ট আসতে না করা হয়েছে। যিনি রহমাতুল্লীল আলামীন ছল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন দয়া করে ইহসান করে উক্ত ব্যক্তির উপর রহম করে বলেছেন আপনার বাইয়াত নেয়া হয়েছে, কষ্ট করে আপনাকে আসতে হবে না, আপনি ফিরে যান। ছোঁয়াচে রোগের কারনে উনাকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে এমন আক্বীদা রাখা স্পষ্ট কুফরী। কারন আমরা আগেই জেনেছি ছোঁয়াচে রোগ বলতে ইসলাম উনার মধ্যে কিছু নেই।
এই বক্ত্যেবে স্বপক্ষে সহীহ হাদীছ শরীফ মওজুদ রয়েছে। ইমাম হযরত তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِ مَجْذُومٍ فَأَدْخَلَهُ مَعَهُ فِي الْقَصْعَةِ ثُمَّ قَالَ كُلْ بِسْمِ اللَّهِ ثِقَةً بِاللَّهِ وَتَوَكُّلًا عَلَيْهِ
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে যে, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন কুষ্ঠরোগীর হাত ধরলেন, অতঃপর তার হাতকে উনার সাথে (খাবার খাওয়ানোর জন্য) স্বীয় খাবারে পাত্রে প্রবিষ্ট করলেন। এরপর বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নামে খান, মহান আল্লাহ পাকের উপর ভরসা রাখুন।” (তিরমিযী শরীফ ১৮১৭)
এখানে প্রশ্ন আসে যদি কুষ্ঠরোগ ছোঁয়াচে হওয়ার কারনে বনী সাক্বীফ গোত্রের সেই ব্যক্তিকে ফিরে যেতে বলা হয় তাহলে এই হাদীছ শরীফে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত একজনের হাত ধরলেন, একই পাত্রে খাবার খেলেন এর ব্যাখ্যা বাতিল ফির্কার লোকেরা কি দিবে? ব্যাখ্যা হচ্ছে সেটাই, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত কুষ্ঠরোগীর হাত ধরে, একই পাত্রে খাবার খাইয়ে এটাই দেখিয়ে দিয়েছেন যে ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই। আর বনী সাক্বীফের সে ব্যক্তিকে ফিরে যেতে বলার কারন সে ব্যক্তির অসুস্থ হওয়ার কারনে এত রাস্তা অতিক্রম করে আসতে যেন কষ্টে পতিত হতে না হয়।
এ কারনে আমরা পবিত্র হাদীছ শরীফের মাধ্যমে জানতে পারি, কুষ্ঠরোগীর সাথে নির্দ্বিধায় সুস্থ মানুষের থাকা খাওয়া ইত্যাদির বর্ণনাও রয়েছে,
عَنْ عَائِشَة قَالَتْ لَنَا مَوْلًى مَجْذُوم فَكَانَ يَأْكُل فِي صِحَافِي وَيَشْرَب فِي أَقْدَاحِي وَيَنَام عَلَى فِرَاشِي
উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাদের একজন আযাদকৃত গোলাম ছিলো যে কুষ্ঠরোগী ছিলো। সে আমার থালায় খাবার খেতো, আমার পেয়ালায় পানি পান করতো এবং আমাদের (বাড়ির) বিছানায় ঘুমাতো।” (তাহযিবুল আছার লি তাবারী ৪/৬, ফতহুল বারী ১০/১৫৯, শরহে সহীহুল বুখারী লি ইবনে বাত্তাল ৯/৪১০, শরহে নববী আলা মুসলিম ৭/৩৯৩, তুহফাতুল আহওয়াযী ৫/২০, আওনুল মা’বুদ ৯/৮৭৬)
কুষ্ঠরোগের মত রোগ যদি ছোঁয়াচেই হতো তাহলে কি করে একজন কুষ্ঠরোগীকে একই পাত্রে খাবার, পানি, সেইসাথে বিছানা দেয়া হলো?
সূতরাং প্রমাণ হলো কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়। ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা স্পষ্ট হাদীছ শরীফের বিরোধিতা ও কুফরী। (চলবে..)
যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৩)
পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা হারাম ও শিরকের অন্তর্ভূক্ত, সূতরাং যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ৩)
বিগত পর্বের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পেরেছি পবিত্র দ্বীন ইসলামের আক্বীদা হচ্ছে ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই। সেই সাথে ছোঁয়াচে রোগের বিশ্বাস রাখা হচ্ছে জাহিলী যুগের বৈশিষ্ট। কিন্তু বিভ্রান্ত বদ আক্বীদাধারী কিছুলোক স্পষ্ট দলীল থাকার পরও ছোঁয়াচে রোগ প্রমাণ করার জন্য বিভিন্ন দলীলের অবতারনা করে। উল্লেখ্য, যেহেতু পবিত্র বিশুদ্ধ রেওয়ায়েত দ্বারা স্পষ্ট শব্দে প্রমাণিত হচ্ছে হয়েছে, لاَ عَدْوى বা ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই। (বুখারী শরীফ ৫৭১৭) সেক্ষেত্রে অন্য কোন রেওয়ায়েত যদি পাওয়া যায় যা আপাতদৃষ্টিতে ব্যতিক্রম মনে হয় তাহলে ব্যতিক্রম রেওয়ায়েতের ব্যাখ্যা খুঁজতে ও বুঝতে হবে। সরাসরি এসকল রেওয়ায়েত দেখে ছোঁয়াচে রোগ আছে এমন কথা বলা, আক্বীদা রাখা, প্রচার করা কুফরী হবে। কারন এসকল রেওয়ায়েতের হাক্বীকত সম্পূর্ণ ভিন্ন বরং এসকল রেওয়ায়েত দ্বারাই ছোঁয়াচে রোগ আছে বিশ্বাস করার মাধ্যমে ঈমান হারানো থেকে বাঁচার পথ দেখানো হয়েছে।
যেমন, একটা হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ‏:‏ لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ‏.‏হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রোগাগ্রস্থ উট যেন সুস্থ উটের সাথে না রাখা হয়।” (মুসলিম শরীফ ৫৯০৫)
বাহ্যিকভাবে এ বর্ণনা দেখে হয়তো মনে হবে ছোঁয়াচে রোগ না থাকলে সুস্থ উটকে অসুস্থ উটের কাছ থেকে আলাদা রাখতে বলার কারন কি?
করনও পরিষ্কার। আমরা ইতিপূর্বে দেখেছি ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী। এ শিরক ও কুফর থেকে বাঁচানোর জন্যই মূলত সুস্থ উটকে অসুস্থ উটের কাছ থেকে আলাদা রাখতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ কেউ যদি তার সুস্থ পশুকে কোন রোগাক্রান্ত পশুর সাথে রাখলো এবং স্বভাবিক প্রক্রিয়ায় সেখানকার কোন সুস্থ পশুও অসুস্থ হয়ে গেলো এমতাবস্থায় তার মনে যদি কোনভাবে এ ধারণার উদ্রেক হয় যে, তার সুস্থ পশুকে সেই অসুস্থ পশুর সাথে রাখার কারণেই সেই রোগ সংক্রামিত হয়েছে। তাহলে এ ধারনার কারনে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। সূতরাং ঈমানী দুর্বতলার কারনে কেউ যাতে শিরক কুফর করে না বসে তাই সতর্কতামূলক পন্থা অবলম্বন করে সুস্থ উটকে অসুস্থ উটের থেকে আলাদা রাখতে বলা হয়েছে, ছোঁয়াচের কারনে নয়।
বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করে বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুনানুল কুবরা বায়হাকী শরীফে এ বিষয়ে হাদীছ শরীফ বর্ণনা করার জন্য একটা অধ্যায় কয়েম করেছেন এবং তার শিরোনাম দিয়েছেন,
باب‏:‏ لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ فَقَدْ يَجْعَلُ اللَّهُ تَعَالَى بِمَشِيئَتِهِ مُخَالَطَتَهُ إِيَّاهُ سَبَبًا لِمَرَضِهِঅধ্যায়: অসুস্থ উট সুস্থ উটের সাথে রাখবে না। যেহেতু কখনো মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় অসুস্থের সাথে সুস্থেকে রাখার পর (সুস্থ পশু) সেই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।” (সুনানে কুবরা বায়হাকী ৭ম খন্ড ৩৫২ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: দারু কুতুব আল ইলমিয়া , বৈরুত লেবানন)
এধরনের আক্রান্ত হওয়া ঈমানী পরীক্ষার অন্তর্ভূক্ত। তাই দূর্বল ঈমানের অধিকারীরা যাতে সুস্থ পশুকে অসুস্থ পশুর সাথে রাখার কারনে ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়েছে এ আক্বীদা পোষন না করতে পারে তাই সর্তকতামূলক অসুস্থ উট সুস্থ উটের সাথে রাখবে না এ হাদীছ শরীফ এসেছে।
সূতরাং এ ক্ষেত্রে মুসলমান ঈমানদারমাত্রই এ আক্বীদা রাখতে হবে, অসুস্থ ব্যক্তি বা পশুর সংস্পর্শে আসার কারনে তার সেই রোগ স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংক্রমণ হয়নি। বরং উক্ত রোগ মহান আল্লাহ পাক উনার হুকুমেই হয়েছে বলে বিশ্বাস রাখতে হবে। (চলবে....)
যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ২)
পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা হারাম ও শিরকে অন্তর্ভূক্ত, সূতরাং যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ২)
জাহিলী যুগের ছোঁয়াচে রোগের বদ আক্বীদা রোধ করার জন্য ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ এই হাদীছ শরীফের অবতারনা:
হাদীছ শরীফে বলা হয়েছে, لاَ عَدْوى বা ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই। অর্থাৎ কোন রোগের নিজস্ব এ ক্ষমতা নেই যে, কাউকে সংক্রমণ করবে। মহান আল্লাহ পাকের তরফ থেকে রোগ আসে এর শিফাও মহান আল্লাহ পাক দিয়ে থাকেন। রোগের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই যে সে কোন প্রানীকে সংক্রমিত করবে।
‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ এ পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা জাহিলী যুগের সেই বিশ্বাসকে বন্ধ করা হয়েছে যে, জাহিলী যুগে লোকেরা বিশ্বাস করতো রোগীর সংস্পর্শে থাকলে রোগ তার নিজস্ব ক্ষমতায় অন্যের দেহে চলে আসে। অথচ রোগের সংক্রমণ করার ক্ষমতাকে বিশ্বাস করা শিরক ও কুফরী বিশ্বাস। সেই কুফরী বিশ্বাসকে এ পবিত্র হাদীছ শরীফের মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে। বিখ্যাত মুহাদ্দিছ হযরত ইমাম বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সুনানে কুবরা বায়হাকীতে ছোঁয়াচে রোগের আলোচনা করতে গিয়ে একটা অধ্যায়ের শিরোনামে বিষয়টা স্পষ্ট করেছেন,
باب‏:‏ لاَ عَدْوَى عَلَى الْوَجْهِ الَّذِى كَانُوا فِى الْجَاهِلِيَّةِ يَعْتَقِدُونَهُ مِنْ إِضَافَةِ الْفِعْلِ إِلَى غَيْرِ اللَّهِ تَعَالَى“অধ্যায়: ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই এই নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে জাহিলী যুগের মানুষের আক্বীদার কারনে। তারা এটা গাইরুল্লাহর দিকে সম্বন্ধযুক্ত করতো। ” [অর্থাৎ তাদের ধারনা ছিলো রোগ ব্যাধির নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে যেকারনে কোন সুস্থ মানুষ কোন রোগীর সংস্পর্শে গেলে সেও সংক্রমিত হবে। তাদের এ শিরকি আক্বীদা রদ করতে হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছেন ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই] (সুনানে কুবরা বায়হাকী ৭ম খন্ড ৩৫১ পৃষ্ঠা, প্রকাশনা দারু কুতুব আল ইলমিয়া, বৈরূত লেবানন)
যেকারনে আমরা দেখতে পাই, পরবর্তীতে এ প্রসঙ্গে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম উনারা প্রশ্ন করেছেন যাতে আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা অর্জন করতে পারি ও বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষন করতে পারি। পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে,
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ عَدْوى وَلاَ صَفَرَ وَلاَ هَامَةَ فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَمَا بَالُ إِبِلِي تَكُونُ فِي الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ فَيَأْتِي الْبَعِيرُ الأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ بَيْنَهَا فَيُجْرِبُهَا فَقَالَ فَمَنْ أَعْدَى الأَوَّلَ.হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই, ছফর মাসের কোন অশুভ আলামত নেই, পেঁচার মধ্যেও কোন আশুভ আলামত নেই। তখন এক বেদুঈন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ইয়া রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তাহলে আমার এ উটের এ অবস্থা কেন হয়? সেগুলো যখন চারণ ভূমিতে থাকে তখন সেগুলো যেন মুক্ত হরিণের পাল। এমন অবস্থায় চর্মরোগাগ্রস্থ উট এসে সেগুলোর পালে ঢুকে পড়ে এবং এগুলোকেও চর্ম রোগে আক্রান্ত করে ফেলে। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাহলে প্রথমটিকে চর্ম রোগাক্রান্ত কে করেছে? (বুখারী শরীফ ৫৭১৭, মুসলিম শরীফ ২২২০)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফের মাধ্যমে আক্বীদা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। কেউ যাতে কোনভাবেই ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস না করে সেটা পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। কারন পবিত্র হাদীছ শরীফে প্রথমেই হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফয়সালা মুবারক করেছেন ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’। এরপর যখন উনাকে চর্মরোগে আক্রান্ত উটের সাথে অন্য উট রাখার কারনে তাদের মধ্যেও কিছু উটের চর্মরোগ হওয়ার বিষয়টা বলা হলো তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ‘ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই’ এটা আরো স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে গিয়ে বলেছেন, প্রথম উটটি যেভাবে আক্রান্ত হয়ে এগুলোও সেভাবে হয়েছে। অর্থাৎ প্রথম উট কারো সংস্পর্শ ছাড়া যেভাবে আল্লাহ পাক উনার প্রদত্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছে অন্য উটও সেভাবে রোগাক্রান্ত হয়েছে, কোন ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হয়নি। কেননা ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিন্দুমাত্রও যদি কোন কারন থাকতো (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক) তাহলে সেটা উল্লেখ করা হতো চর্মরোগে আক্রান্ত উট বিষয়ক প্রশ্নে উত্তর। কিন্তু এ ধরনের জাহিলী আক্বীদার দরজা বন্ধ করার জন্য স্পষ্ট করে অন্য উটগুলো কিভাবে অক্রান্ত হলো তার কারনও হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলে দিলেন। আর এটাই আক্বীদা ও ঈমান। এর ব্যতিক্রম আক্বীদা রাখলে সে স্পষ্ট শিরক করবে। নাউযুবিল্লাহ। (চলবে.......)

যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ১)
পবিত্র দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা হারাম ও শিরকের অন্তর্ভূক্ত। সূতরাং যারা করোনা গজবকে ছোঁয়াচে বলছে তারা কুফরী করছে (পর্ব ১)
বর্তমান সময়ে করোনা নামক গজবকে কেন্দ্র করে মুসলমান নামধারী কিছু মানুষ ছোঁয়াচে রোগের কথা সমাজে খুব প্রচার করছে। এরা ছোঁয়াচে রোগের কথা বলে পবিত্র মসজিদে নামায বন্ধের মত কাজও করে যাচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ। তাদের এই ঈমান ধ্বংসী ফতোয়াতে বিভ্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ঈমান নষ্ট করছে। নাউযুবিল্লাহ। তাই মুসলমানদের এ বিষয়ে কি আক্বীদা থাকা দরকার সে বিষয়ে পবিত্র শরীয়ত কি বলে সে বিষয়ে আলোকপাত করা হলো,
ছোঁয়াচে রোগ বিষয়ে মুসলমানদের মৌলিক যে আক্বীদা রাখতে হবে:
وَقَالَ عَفَّانُ حَدَّثَنَا سَلِيمُ بْنُ حَيَّانَ حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مِينَاءَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ عَدْوى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ.হযরত আবু হুরায়রাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, ছোঁয়াচে বলে কোন রোগ নেই, কুলক্ষণ বলে কিছু নেই, পেঁচা অশুভের লক্ষণ নয়, ছফর মাসে কোন অশুভ নেই। (বুখারী শরীফ ৫৭০৭, বুখারী শরীফ ৫৭১৭, মুসলিম শরীফ ৫৯২০, ইবনে মাজাহ ৮৬, মুসনাদে আহমদ ১৫৫৪, সহীহ ইবনে হিব্বান ৫৮২৬, মুসনাদে বাযযার ৭১৪৭, মুসনাদে তয়লাসী ২০৭৩, সুনানে কুবরা নাসাঈ ৯২৩২, মুসনাদে আবু ইয়ালা ৭৯৮, সুনানে কুবরা বায়হাকী ১৪৬১৯)
হযরত সা’দ ইবনু মালিক রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ ‏ "‏ لاَ هَامَةَ وَلاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَহুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, পেঁচা অশুভ নয়, ছোঁয়াচে রোগ নেই এবং কোন জিনিস অশুভ হওয়া ভিত্তিহীন। (আবু দাউদ শরীফ ৩৯২১, ৩৯১৬, ৩৯১২ )
উপরোক্ত ছহীহ হাদীছ শরীফ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, দ্বীন ইসলামে ছোঁয়াচে রোগের কোন অস্তিত্ব নেই। কারন স্বয়ং হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছোঁয়াচে রোগ বলে কোন রোগ না থাকার বিষয়কে স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা মানে এটা বিশ্বাস করা রোগের নিজস্ব ক্ষমতা আছে, নিজ ক্ষমতায় রোগ কারো উপর সংক্রমন করতে পারে। যা স্পষ্ট শিরক। রোগ দেয়ার মালিক মহান আল্লাহ পাক। এরপরও কেউ যদি ছোঁয়াচে রোগের কথা বিশ্বাস করে সে তাহলে এ বিষয়ে মৌলিক আক্বীদা থেকে বিচ্যুৎ হয়ে পথভ্রষ্ট হিসাবে চিহিৃত হবে। কারন পবিত্র দ্বীন ইসলাম এ কোন একটা বিষয়ে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা করা হলে কেউ সেটা অস্বীকার করলে কুফরী হবে।
ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাস করা জাহেলী যুগের বৈশিষ্ট:
এ বিষয়ে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ لَنْ يَدَعَهُنَّ النَّاسُ النِّيَاحَةُ وَالطَّعْنُ فِي الأَحْسَابِ وَالْعَدْوَى أَجْرَبَ بَعِيرٌ فَأَجْرَبَ مِائَةَ بَعِيرٍ مَنْ أَجْرَبَ الْبَعِيرَ الأَوَّلَ وَالأَنْوَاءُ مُطِرْنَا بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌহযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আমার উম্মতের মাঝে জাহিলী যুগের চারটি বিষয় আছে। তারা কখনও এগুলো (পুরোপুরি) ছাড়তে পারে না: মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ সহকারে ক্রন্দন করা, বংশ তুলে গালি দেওয়া, ছোঁয়াচে রোগ সংক্রমিত হওয়ার ধারণা করা, যেমন একটি উট সংক্রমিত হলে একশ’টি উটে তা সংক্রমিত হওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হলো, প্রথমটি কিভাবে সংক্রমিত হল? আর নক্ষত্রের প্রভাব মান্য করা অর্থাৎ অমুক অমুক নক্ষত্রের প্রভাবে আমাদের উপর বৃষ্টি হলো। নাউযুবিল্লাহ। (তিরমিযী শরীফ ১০০১)
জাহিলী যুগের বৈশিষ্ট সমূহের একটা বৈশিষ্ট হচ্ছে ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা। সূতরাং পবিত্র হাদীছ শরীফ থেকে প্রমাণ হলো, ছোঁয়াচে রোগের প্রতি বিশ্বাস রাখা মু’মিনদের আক্বীদা না বরং জাহেলী যুগের আক্বীদা। তাই যারা আজ ছোঁয়াচে রোগের কথা বিশ্বাস করে এবং এ আক্বীদা প্রচার করে তারা হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু অলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভবিষ্যৎবানী অনুযায়ী জাহেলী যুগের বৈশিষ্ট বহন করছে। (চলবে...)
অকাট্য দলীল-আদিল্লাহর ভিত্তিতে ‘ছোঁয়াচে রোগে বিশ্বাসী মুশরিকদের’ ভ্রান্ত যুক্তির দাঁতভাঙ্গা জবাব-২

মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ইসলামী শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী ছোঁয়াচে রোগ বা সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। ছোঁয়াচে রোগ বিশ্বাস করা কাট্টা হারাম, কুফরী এবং শিরকীর অন্তর্ভুক্ত-২
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا طِيَرَةَ، وَلَا هَامَةَ وَلَا عَدْوَى، وَلَا صَفَرَ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّا لَنَأْخُذُ الشَّاةَ الْجَرْبَاءَ، فَنَطْرَحُهَا فِي الْغَنَمِ فَتَجْرَبُ الْغَنَمُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَنْ أَعْدَى الْأَوَّلَ.অর্থ: “হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, অশুভ বা কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই, পেঁচার মধ্যে কোন কুলক্ষণ নেই, ছোঁয়াচে রোগ বলে কিছু নেই এবং সম্মানিত ছফর শরীফ মাসে কোন খারাপী নেই। তখন একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! নিঃসন্দেহে অবশ্যই আমরা একটি খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত একটি বকরী এনে আমাদের ছাগল পালের মধ্যে ছেড়ে দেই। তারপর আমাদের ছাগলগুলো খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত হয়ে যায়। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তাহলে প্রথম বকরীটিকে সংক্রামিত করলো? (মুসনাদে আহমদ ৫/১৫৯, আস সুন্নাহ্ লিইবনে আবী ‘আছিম ১/১২২, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৪/২২১, ছহীহ ইবনে হিব্বান ১৩/৪৮৬, আল মু’জামুল কাবীর লিত ত্ববারনী ১১/২৮৮, আল আহাদীছুল মুখতারাহ্ ১২/৬১, যাওয়াইদে ইবনে হিব্বান ১/৩৪৬ ইত্যাদি)
‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার ব্যখ্যাগ্রন্থ ‘মু‘আমিলুস সুনান’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
قوله لا عدوى يريد أن شيئاً لا يعدي شيئاً حتى يكون الضرر من قبله وإنما هو تقدير الله جل وعز وسابق قضائه فيه ولذلك قال فمن أعدى الأول . يقول إن أول بعير جرب من الإبل لم يكن قبله بعير أجرب فيعديه وإنما كان أول ما ظهر الجرب في أول بعير منها بقضاء الله وقدره فكذلك ما ظهر منه في سائر الإبل بعد .অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’ উনার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন কিছুই কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না। আর ক্ষতি (রোগ) যেটা হয়, সেটা তার থেকেই হয়। আর নিঃসন্দেহে এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পূর্বনির্ধারিত এবং পূর্বফায়ছালাকৃত। আর এ কারণে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, প্রথম উটটিকে কে সংক্রামিত করলো? তিনি বলেন, নিশ্চয়ই উট হতে যে উটটি প্রথম খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত হলো, তার পূর্বে তো কোন উট খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত হয়নি যে, তাকে সংক্রামিত করবে। আর নিশ্চয়ই উটের মধ্য হতে প্রথম উটের মধ্যে যে খুঁজলি-পাঁচড়া প্রকাশ পেয়েছে, এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফায়ছালাকৃত, যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। অনুরূপভাবে প্রথম উটটির পর বাকি যেই উটগুলোর মধ্যে খুঁজলি-পাঁচড়া প্রকাশ পেয়েছে, সেটাও মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পূর্বনির্ধারিত ফায়ছালা।” সুবহানাল্লাহ! (মু‘আমিলুস সুনান ৪/২৩৩)
ইমাম বাগভী রহমতুল্লাহি উনার লিখিত ‘শারহুস সুন্নাহ শরীফ’ উনার মধ্য রয়েছে,
فقوله : " لا عدوى " يريد أن شيئا لا يعدي شيئا بطبعه ، إنما هو بتقدير الله عز وجل ، وسابق قضائه ، بدليل قوله للأعرابي : " فمن أعدى الأول " يريد أن أول بعير جرب منها ، كان جربه بقضاء الله وقدره ، لا بالعدوى ، فكذلك ما ظهر بسائر الإبل من بعد.
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’ উনার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন কিছুরই এমন কোন শক্তি নেই যে, সে অন্য কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে। অর্থাৎ কোন কিছুই কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না। নিশ্চয়ই রোগ যেটা হয়, সেটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পূর্বনির্ধারিত এবং পূর্বফায়ছালাকৃত। এ বিষয়ে বেদুঈন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে উদ্দেশ্য করে বলা ‘প্রথম উটটিকে কে সংক্রামিত করলো?’ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক দ্বারা দলীল সাব্যস্ত হয়েছে। তিনি উদ্দেশ্য করেছেন, নিশ্চয়ই উটের পাল হতে যে উটটি প্রথম খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত হলো, তার পূর্বে তো কোন উট খুঁজলি-পাঁচড়া যুক্ত হয়নি যে, তাকে সংক্রমিত করবে। আর উটের পাল হতে প্রথম উটের মধ্যে যে খুঁজলি-পাঁচড়া প্রকাশ পেয়েছে, এটা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে ফায়ছালাকৃত, যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্ধারণ করে রেখেছিলেন। এটা ছোঁয়াচের কারণে হয়নি। অনুরূপভাবে প্রথম উটটির পর বাকি যেই উটগুলোর মধ্যে খুঁজলি-পাঁচড়া প্রকাশ পেয়েছে, সেটাও মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পূর্বনির্ধারিত এবং ফায়ছালাকৃত।” সুবহানাল্লাহ! (শারহুস সুন্নাহ শরীফ ১২/১৬৯)
আল্লামা ইবনে আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,
أَمَّا قَوْلُهُ لَا عَدْوَى فَمَعْنَاهُ أَنَّهُ لَا يُعْدِي شَيْءٌ شَيْئًا وَلَا يُعْدِي سَقِيمٌ صَحِيحًا وَاللَّهُ يَفْعَلُ مَا يَشَاءُ لَا شَيْءَ إِلَّا مَا شَاءَঅর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামিত রোগ বলে কিছুই নেই’ উনার অর্থ হচ্ছে, কোন কিছুই কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না এবং কোন রোগী কোন সুস্থ ব্যক্তিকে সংক্রামিত করতে পারে। অর্থাৎ কোন রোগী কোন সুস্থ ব্যক্তিকে রোগী বানাতে পারে না। বরং মহান আল্লাহ পাক তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন। উনার ইচ্ছার বাইরে কোন কিছু হয় না।” সুবহানাল্লাহ! (আল ইস্তিযকার ৯/৩৮৫)
মুয়াত্ত¡া শরীফ উনার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘আল মুন্তাক্বা শরীফ’ উনার মধ্যে রয়েছে,
قَوْلُهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم لَا عَدْوَى قَالَ :عِيسَى بْنُ دِينَارٍ مَعْنَاهُ لَا يُعْدِي شَيْءٌ شَيْئًا أَيْ لَا يَتَحَوَّلُ شَيْءٌ مِنْ الْمَرَضِ إِلَى غَيْرِ الَّذِي هُوَ بِهِঅর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। হযরত ঈসা ইবনে দীনার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার অর্থ হচ্ছে, কোন কিছুই কোন কিছুকে সংক্রামিত করতে পারে না অর্থাৎ রোগী যেই রোগে ভুগছে, সেই রোগ থেকে কোনো কিছুই অন্যের নিকট স্থানান্তরিত হয় না।” সুবহানাল্লাহ! (আল মুনতাক্বা ৭/২৬৩, তানওইরুল হাওলিক ২/২৩১)
মুসলিম শরীফ উনার বিশ্বখ্যাত শরাহগ্রন্থ ‘আল মু’লিম বিফাওয়াইদিল মুসলিম’ উনার মধ্যে রয়েছে,
وقوله: لاَ عَدوى.تفسيره أن العرب كانت تعتقد أنّ المرض يعدي وينتقل إلى الصحيح فأنكر صلى الله عليه وسلم اعتقادهم.অর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। উনার ব্যাখ্যা হচ্ছেন- নিশ্চয়ই জাহিলী যুগে আরবরা এটা বিশ্বাস করতো যে, রোগ অসুস্থ ব্যক্তির থেকে সুস্থ ব্যক্তির দিকে সংক্রমিত হয়, স্থানান্তরিত হয়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের এই বিশ্বাসকে অস্বীকৃত জ্ঞাপন করেছেন, বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন।” সুবহানাল্লাহ! (আল মু’লিম বিফাওয়াইদিল মুসলিম)
মুসলিম শরীফ উনার বিশ্বখ্যাত শরাহগ্রন্থ ‘আল কাওকাবুল ওয়াহ্হাজ’ উনার মধ্যে রয়েছে,
(لا عدوى) أي لا سراية لمرض عن صاحبه إلى غيرهঅর্থ: “নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কথা মুবারক ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। অর্থাৎ রোগ তার ছাহিব তথা রোগীর থেকে অন্যের দিকে কখনোই স্থানান্তরিত হয় না।” সুবহানাল্লাহ! (আল কাওকাবুল ওয়াহ্হাজ ২২/২৯৮)
এ জন্যই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِ مَجْذُومٍ فَأَدْخَلَهُ مَعَهُ فِي الْقَصْعَةِ ثُمَّ قَالَ كُلْ بِسْمِ اللَّهِ ثِقَةً بِاللَّهِ وَتَوَكُّلًا عَلَيْهِঅর্থ: “হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একজন কুষ্ঠরোগীর হাত ধরলেন। অতঃপর তার হাতকে উনার সাথে (খাবার খাওয়ানোর জন্য) উনার পাত্র মুবারক-এ প্রবেশ করালেন। তারপর ইরশাদ মুবারক করলেন, মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক নিয়ে উনার উপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে এবং পূর্ণ ভরসা করে খাবার গ্রহণ করুন।” (তিরমিযী শরীফ, হাদীছ শরীফ নং ১৮১৭/ আবূ দাউদ শরীফ হাদীছ শরীফ নং ৩৯২৫, সুনানে ইবনে মাজাহ্ হাদীছ শরীফ নং ৩৫৪২, মুসনাদে আবী ইয়া’লা ৩/৩৫৪, মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ শরীফ ৫/১৪১, আল মুন্তাখাব মিন মুসনাদে আব্দ ইবনে হুমাইদ ১/৩২৯, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাতি ১/৪১২, আল আদাবু লিল বাইহাক্বী ১/১৪৬, শু‘আবুল ঈমান ২/৪৮৮, শারহু সুনানি ইবনে মাজাহ লিস সুয়ূত্বী ১/২৭১, বাযলু মাজহূদ ফী হাল্লি সুনানি আবী দাঊদ ১১/৬৫৩, আনীসুস সারী, আওনুল মা’বূদ ২১/২৪৭, আল মাসালিক ফী শারহি মুয়াত্ত¡াই মালিক ৭/৪১ ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ لَنَا مَوْلَى مَجْذُومٌ فَكَانَ يَأْكُلُ فِي صِحَافِي وَيَشْرَبُ فِي أَقْدَاحِي وَيَنَامُ عَلَى فِرَاشِيঅর্থ: “উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ্ সাইয়্যিদাতুনা হযরত ছিদ্দীক্বাহ্ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের একজন কুষ্ঠরোগী গোলাম ছিলেন। তিনি আমার পাত্র মুবারক-এ খাবার খেতেন, আমার বাটি মুবারক-এ পানি পান করতেন এবং আমার বিছানা মুবারক-এ ঘুমাতেন।” (শারহুন নববী, তুহফাতুল আহওয়যী, আওনুল মা’বূদ, নাইলুল আওত্বার ইত্যাদি)
মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে,
عن أبي ذر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كُلْ مَعَ صَاحِبِ الْبَلَاءِ تَوَاضُعًا لِرَبِّك وَإِيمَانًاঅর্থ: “হযরত আবূ যর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তুমি তোমার রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি বিনয়ী হয়ে এবং পূর্ণ বিশ্বাস রেখে রোগ-মুছীবতগ্রস্ত ব্যক্তির সাথে খাদ্য গ্রহণ করো।” (নাখবুল আফকার ফী তানক্বীহি মাবানিইল আখবার ফী শারহি মা‘আনিইল আছার লিবাদরিদ্দীন আইনী হানাফী ১৪/৯৪, আওনুল মা’বূদ ১০/৩০০, আত তানওইর ৮/২২১, আল ফাতহুল কাবীর ২/৩০০, জাম‘উল জাওয়ামি’ ৬/৪৪৩, ফাইযুল ক্বাদীর, জামিউছ ছগীর ইত্যাদি)
‘মুয়াত্ত শরীফ’ উনার বিশ্বখ্যাত শরাহগ্রন্থ ‘শারহুয যারক্বানী’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
্রأَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَا عَدْوَى أَيْ لَا يُعْدِي شَيْءٌ شَيْئًا، أَيْ لَا يَسْرِي، وَلَا يَتَجَاوَزُ شَيْءٌ مِنَ الْمَرَضِ إِلَى غَيْرِ مَنْ هُوَ بِهِ،অর্থ: “নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। অর্থাৎ কোন কিছুই কোন কিছুকে সংক্রমিত করতে পারে না অর্থাৎ রোগী যেই রোগে ভুগছে, সেই রোগ থেকে কোনো কিছুই অন্যের নিকট ভ্রমণ করে না এবং যায় না।” সুবহানাল্লাহ! (শারহুয যারক্বানী ‘আলাল মুওয়াত্ত¡া ৪/৪২৪)
মুয়াত্ত শরীফ উনার বিশ্বখ্যাত শরাহগ্রন্থ ‘আল মুন্তাক্বা উনার মধ্যে রয়েছে,
أن العرب كانت تعتقد أن الصحيح إذا جاور المريض أعداه مرضه أي تعلق به أو انتقل إليهঅর্থ: “জাহিলী যুগে আরবরা এটা বিশ্বাস করতো যে, কোন সুস্থ ব্যক্তি যখন কোন রোগীকে দেখতে যায়, তখন অসুস্থ ব্যক্তির রোগ সুস্থ ব্যক্তিকে সংক্রমিত করে। অর্থাৎ সুস্থ ব্যক্তির সাথে ঐ রোগটা সংগযুক্ত হয় অথবা রোগীর রোগটা সুস্থ ব্যক্তির নিকট স্থানান্তরিত হয়।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল মুনতাক্বা ৭/২৬৩)
‘আবূ দাঊদ শরীফ’ উনার ব্যখ্যাগ্রন্থ ‘আউনুল মা’বূদ’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
)لَا عَدْوَى (نَفْي لِمَا كَانُوا يَعْتَقِدُونَهُ مِنْ سِرَايَة الْمَرَض مِنْ صَاحِبه إِلَى غَيْرهঅর্থ: “ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। এই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে ‘যারা এই আকীদা পোষণ করে থাকে যে, রুগ্ন ব্যক্তির রোগ তার থেকে অন্যের উপর যায়।’ তার আক্বীদাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (আওনুল মা’বূদ শারহু সুনানি আবী দাঊদ ৯/৮৫৯)
মুয়াত্ত শরীফ উনার বিশ্বখ্যাত শরাহগ্রন্থ ‘শারহুয যারক্বানী’ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে,
(لا عدوى) أي لا سراية لعلة من صاحبها لغيره يعني أن ما يعتقده الطبائعيون من أن العلل المعدية مؤثرة لا محالة باطل بل هو متعلق بالمشيئة الربانيةঅর্থ: “(নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,) ‘ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ বলে কিছুই নেই’। অর্থাৎ রোগ তার ছাহিব তথা রোগীর থেকে অন্যের দিকে স্থানান্তরিত হয় না। সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ প্রকৃতিবাদী বা নাস্তিকরা যেটা বিশ্বাস করে যে, ‘সংক্রামক রোগসমূহ হচ্ছে ক্রিয়াশীল।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! তাদের এই বক্তব্য নিঃসন্দেহে ভিত্তিহীন, বাতিল। বরং রোগের বিষয়টি খোদায়ী ইচ্ছা তথা মহান আল্লাহ পাক উনার ইরাদার সাথে সম্পৃক্ত।” সুবহানাল্লাহ! (ফাইযুল ক্বাদীর ৬/৫৬১)
সুতরাং করোনা কোন ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটা হচ্ছে- কাফির-মুশরিকদের প্রতি এবং তাদের গোলামদের প্রতি এক কাট্টা কঠিন গযব। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র শরীয়ত উনার ফতওয়া অনুযায়ী ছোঁয়াচে রোগ বা সংক্রামক রোগ বলতে কিছু নেই। ছোঁয়াচে রোগ বিশ্বাস করা কাট্টা হারাম, কুফরী ও শিরকীর অন্তর্ভুক্ত। যা অসংখ্য মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। সুবহানাল্লাহ!
মূলত, মুসলমান দেশে আযান পরিবর্তন, দ্বীনি মাহফিল বন্ধ, জুমুয়া ও জামাতে আসতে নিষেধ করা এবং পবিত্র মসজিদসমূহ বন্ধ করা ইত্যাদি সবই কাফির-মুশরিকদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র। যা বর্তমান সময়ে কাফির-মুশরিকদের দোসর উলামায়ে সূ, মুনাফিক ও গোমরাহ শাসকরা করোনার অযুহাতে জারী করতে চাচ্ছে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
কাজেই, করোনার অযুহাতে কাফির-মুশরিকদের ষড়যন্ত্র জারী করার অপচেষ্টা হতে বিরত থাকা সকলের জন্য ফরজে আইন। একইভাবে কাফির-মুশরিকদের ষড়যন্ত্র জারী করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া, প্রতিবাদ করা, প্রতিরোধ করা সকলের জন্য ফরজে আইন এবং ঈমানী দায়িত্ব।
মহান আল্লাহ পাক তিনি সবাইকে তাওফীক্ব দান করুন। আমীন!