হালাল সামা বনাম হারাম সঙ্গীত
















কুল কায়িনাতের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত
অনন্তকালব্যাপী জারীকৃত সুমহান সম্মানিত সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ উনার সুমহান সম্মানার্থে প্রকাশিত
بِسْمِ اللهِ الرَّحْـمٰنِ الرَّحِيْمِ

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَّشْتَرِي لَـهْوَ الْـحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَّيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ.
অর্থ : “লোকদের মধ্যে কিছু এরূপ আছে যে,لَـهْوَ الْـحَدِيثِ  “লাহওয়াল হাদীছ” বা সঙ্গীত বা গান-বাজনা করে, এ কারণে যে, (লোকদেরকে) বিনা ইলমে মহান আল্লাহ পাক উনার পথ হতে সরিয়ে দেয় এবং তা হাসি-ঠাট্টারূপে ব্যবহার করে। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।” (পবিত্র সূরা লুকমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
ইতিহাসের ধূম্রজালে
হালাল সামা বনাম হারাম সঙ্গীত
(প্রথম খণ্ড-)
“হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খেয়াল গানের জনক নন, তবলা এবং সিতারের আবিষ্কারক নন, তিনি জীবনে কখনোই হারাম সঙ্গীত চর্চা করেননি; বরং ‘সামা’ শরীফ পাঠ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন অত্যন্ত উঁচ্চ শ্রেণীর ওলীআল্লাহ।”
পিডিএফ লিংক- https://drive.google.com/open?id=1mHjGBc_YX7SmqA73NC0vkUPlDphm6I3b

الـمؤسس والـمشرف لـمركز البحث مـحمدية جامعة شريف والـمجلة الشهرية البينات والـجريدة اليومية الاحسان- خليفة الله، خليفة رسول الله، امام الشريعة والطريقة، قطب العالـم، الغوث الاعظم، سلطان الاولياء، مـخزن الـمعرفة، خزينة الرحـمة، معين الـملة، لسان الامة، تاج الـمفسرين، رئيس الـمحدثين، فخر الفقهاء، حاكم الـحديث، حجة الاسلام، سيد الـمجتهدين، مـحى السنة، ماحى البدعة، صاحب الالـهام، رسول نـما، سيد الاولياء، سلطان العارفين، امام الصديقين، امام الائـمة، الـمجدد الاعظم، قيوم الزمان، الـجبارى الاول، القوى الاول، سلطان نصير، حبيب الله، جامع الالقاب، اولاد الرسول، موالانا
سيدنا حضرت امام الامم عليه السلام
الـحسنى والـحسينى والقريشى والـحنفى والقادرى
والصيشتى والنقشبندى والـمجددى والـمحمدى
راجارباغ شريف، داكا

গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ, দৈনিক আল ইহসান শরীফ এবং মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ উনাদের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক- খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, আল ইমামুশ শরী‘য়াহ ওয়াত তরীক্বাহ, কুতুবুল ‘আলম, আল গওছুল আ’যম, সুলত্বানুল আওলিয়া, মাখযানুল মা’রিফাহ, খযীনাতুর রহমাহ, মুঈনুল মিল্লাহ, লিসানুল উম্মাহ, তাজুল মুফাসসিরীন, রঈসুল মুহাদ্দিছীন, ফখরুল ফুক্বাহা, হাকিমুল হাদীছ, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদুল মুজতাহিদীন, মুহইস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াহ, ছাহিবুল ইলহাম, রসূলে নুমা, সাইয়্যিদুল আওলিয়া, সুলত্বানুল ‘আরিফীন, ইমামুছ ছিদ্দীক্বীন, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামি‘উল আলক্বাব, আওলাদে রসূল, মাওলানা-
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম
আল হাসানী ওয়াল হুসাইনী ওয়াল কুরাইশী ওয়াল হানাফী ওয়াল ক্বাদিরী ওয়াল চীশতী ওয়ান নকশবন্দী ওয়াল মুজাদ্দিদী ওয়াল মুহম্মদী
রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা।

সুমহান ক্বওল শরীফ-

نَـحْمَدُه وَ نُصَلِّىْ وَ نُسلِّمُ عَلـٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْـمِ وَ اٰلِه وَ اَصْحَابِه اَجْـمَعِيْنَ.
গান-বাজনা করা হারাম ও কবীরা গুণাহের অন্তর্ভুক্ত। তা নবী তত্ত্ব, মুর্শিদী, জারী, কাওয়ালী, পল্লীগীতি, ভাওয়ালী, ভক্তিমূলক ইত্যাদি যে কোন প্রকার গানই হোক না কেন। তবে বাজনা বা বাদ্য-যন্ত্র ব্যতীত হামদ শরীফ, না’ত শরীফ, ক্বাছীদা শরীফ ইত্যাদি পাঠ করা ও শোনা জায়িয এবং সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। তাই কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ইলম দু’প্রকার। (১) ইলমে আরূজী অর্থাৎ ছন্দ প্রকরন যেমন- “বালাগাল উলা বিকামালিহী ......... ও মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে পাঠকৃত ক্বাছীদা শরীফসমূহ, যা গানের সূরে পাঠ করা হয় না। (২) “ইলমে মুসীক্বী” অর্থাৎ রাগ-রাগীনী বা গানের সূর। কাজেই বাদ্য-যন্ত্র বা বাজনাতো সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই নাজায়িয। সাথে সাথে বাদ্যবিহীন ইল্মে মুসীক্বীও নাজায়িয।
মূলতঃ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অকাট্য ও কেৎয়ী দলীল দ্বারা গান-বাজনা সুস্পষ্টভাবে হারাম সাব্যস্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার অসংখ্য স্থানে গান-বাজনা করতে ও শুনতে নিষেধ করেছেন। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَـهْوَ الْـحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ.
অর্থ : “লোকদের মধ্যে কিছু এরূপ আছে যে,لـهو الـحديث  “লাহওয়াল হাদীছ” বা সঙ্গীত বা গান-বাজনা করে, এ কারণে যে, (লোকদেরকে) বিনা ইলমে মহান আল্লাহ পাক উনার পথ হতে সরিয়ে দেয় এবং তা হাসি-ঠাট্টারূপে ব্যবহার করে। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
অনুসরণীয় হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত لـهو الـحديث দ্বারা “গান-বাজনাকে” সাব্যস্ত করেছেন। (তাফসীরে কুরতুবী, আহকামুল কুরআন, তাবারী, মাযহারী, দুররে মানছূর, মাদারিক, মায়ালিম, ইবনে কাছীর, ইত্যাদি সমূহ তাফসীর গ্রন্থ)
গান-বাজনা ও বাদ্য-যন্ত্র হারাম হওয়া সম্পর্কে অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফও বর্ণিত রয়েছে, যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عمر رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِسْتِمَاعُ الْـمَلاَهِىْ مَعْصِيَةُ وَّالْـجُلُوْسُ عَلَيْهَا فِسْقٌ وَّالتَّلَذُّذُ بِـهَا مِنَ الْكُفْرِ
অর্থ : “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, গান শোনা গুনাহের কাজ, গানের মজলিসে বসা ফাসিকী এবং গানের স্বাদ গ্রহণ করা কুফরী।” (বাহরুর রায়িক, মাবসূত)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَةْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْغِنَاءُ يُنْبِتُ النِّـفَاقَ فِى الْقَلْبِ كَمَا يُنْبِتُ الْـمَاءُ الزَّرْعَ 
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পানি যেরূপ যমীনে ঘাস উৎপন্ন করে গান-বাজনা তদ্রƒপ অন্তরে মুনাফিকী পয়দা করে।” (বায়হাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান শরীফ)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ مجاهد رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  بُعِثْتُ لِكَسْرِ الْـمَزَامِيْرِ وَالْاَصْنَامِ
অর্থ : “হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি বাদ্য-যন্ত্র ও মুর্তি-ছবি ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান)
পক্ষান্তরে ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হামদ্ শরীফ, না’ত শরীফ, ক্বাছীদা শরীফ ইত্যাদি লেখা বা রচনা করা, পাঠ বা আবৃত্তি করা এবং শ্রবণ করা সবই সুন্নত মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈমানদার, নেককার ও আল্লাহওয়ালা কবি ও উনাদের কবিতার ছানা-ছিফত করে পবিত্র শুআরা শরীফ ২২৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
اِلَّا الَّذِينَ اٰمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِـحَاتِ وَذَكَرُ‌وا اللهَ كَثِيْرً‌ا
অর্থ : “তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে খুব স্মরণ করে।” (পবিত্র সূরা শূয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২২৭)
বুখারী শরীফ উনার মধ্যে হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ مِنَ الشّعْرِ حِكْمَةً‏‏.
অর্থ : “নিশ্চয়ই কোন কোন কবিতা (ক্বাছীদা) হিকমতপূর্ণ।”
বুখারী শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত রয়েছে, “উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিশিষ্ট ছাহাবী কবি হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে একটি মিম্বর শরীফ স্থাপন করেছিলেন। তিনি উনার উপর দাঁড়িয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে গৌরবময় না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ অথবা কাফিরদের কুফরীমূলক এবং অশ্লীল ও অশালীন বক্তব্যের জাওয়াব স্বরূপ না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। আর ফখরে মওজুদাত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করতেন-
اِنَّ اللهَ يُؤَيّدُ حَسَّانَ بِرُوْحِ الْقُدْسِ مَا نَافَحَ اَوْ فَاخَرَ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা সাহায্য করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে গৌরবময় না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ অথবা কাফিরদের কুফরীমূলক এবং অশ্লীল ও অশালীন বক্তব্যের জাওয়াব স্বরূপ না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতে থাকেন।”
হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, খন্দকের জিহাদে (যখন) হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনারা পরিখা খনন করছিলেন এবং মাটি সরাচ্ছিলেন তখন উনারা (ক্বাছীদা শরীফ) পাঠ করতে লাগলেনঃ “আমরা নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক হাতে জিহাদের জন্য ‘বাইয়াত’ গ্রহণ করেছি- যে পর্যন্ত আমরা জীবিত থাকব।” আর উনাদের ক্বাছীদা শরীফ উনার প্রতুত্তরে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বাছীদা শরীফ উনার মাধ্যমে ইরশাদ মুবারক করেন-
اللهم لا عيش الا عيش الاخرة فاغفر الانصار والـمهاجرة
 “হে মহান আল্লাহ পাক! পরকালের জীবন ব্যতীত আর কোন জীবনই নেই। অতএব আপনি হযরত আনছার ও মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনাদেরকে ক্ষমা করে দিন।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ)
মূল কথা হলো- হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা, শোনা ও লেখা প্রত্যেকটিই সুন্নত মুবারক এবং অশেষ ফযীলত মুবারক হাছিলের কারণ। সুবহানাল্লাহ! অপরদিকে গান লেখা, গাওয়া, শোনা এবং গান-বাজনা ও নাচের অনুষ্ঠান দেখা ও শোনা প্রত্যেকটাই হারাম ও কুফরী এবং লা’নতগ্রস্ত ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ। নাউযুবিল্লাহ!

হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ কখনোই হারাম
গানের সুরে পাঠ করা যাবে না বরং বাদ্যযন্ত্র ও হারাম গানের
সুর বাদ দিয়ে ক্বাছীদা শরীফ উনার লেহানে পাঠ করতে হবে

আমরা আরবী ভাষাকে মুহব্বত করি। কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভাষা আরবী, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার ভাষা আরবী এবং আখিরাতের ভাষা আরবী। কিন্তু হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ বিভিন্ন ভাষায় পাঠ হয়ে থাকে। তাই যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হচ্ছে- যে ভাষায়ই হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা হোক না কেন তা যেন সঙ্গীত বা গানের সুরে পঠিত না হয়। অর্থাৎ পৃথিবীর সকল ভাষাতেই হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা জায়িয এবং সুন্নত; যদি তা সেই ভাষায় প্রচলিত সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্র থেকে মুক্ত হয়।
হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করার জন্য কোনো সার্বজনীন লেহান তৈরি করা বাস্তবিক পক্ষে কঠিন। কেননা ভাষা, ভাষার উচ্চারণ এবং সেই ভাষায় পঠনের তরতীবের কারণে হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পঠনেও ভিন্নতা প্রকাশ পাবে এবং এটাই স্বাভাবিক।
সারা বিশ্বের মুসলমানগণ বর্তমানে কয়েকটি পদ্ধতিতে হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেন এবং সামা মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন। যেমন-
১. বাদ্যযন্ত্রসহ হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ।
২. কোনো প্রকার বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার না করলেও দফ জাতীয় বাদ্য বাজিয়ে হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ।
৩. কোনো প্রকার বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার না করলেও মুখে যিকিরের ভঙ্গিতে শব্দ করে তাল-লয় রক্ষা করে পাঠ।
৪. কোনো প্রকার বাদ্যযন্ত্র ও মুখে শব্দ ব্যবহার না করলেও মেশিনে কৃত্রিম শব্দ যোগে পাঠ।
৫. কখনো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে, কখনো না করে কথিত ‘ছূফী-নৃত্য’ নামে এক ধরনের নাচের মাধ্যমে পাঠ।
৬. সর্বপ্রকার বাদ্যযন্ত্র, বাদ্যের মতো শব্দ ব্যতীত কিন্তু গানের সুরে পাঠ।
৭. সমস্ত প্রকার বাদ্যযন্ত্র ব্যতীত, রাগ রাগিনী ও প্রচলিত গানের সুর বিবর্জিত কিন্তু যে কোনো একটি সুর করে পাঠ।
৮. উপরের সমস্ত পদ্ধতিতে পাঠের সাথে পাঠকের ভিডিও ধারণপূর্বক উপস্থাপন; আবার প্রাণীর ছবি ও বাজনা ব্যতীত উপস্থাপন।
বাদ্যযন্ত্র, দফ এবং রাগ-রাগিনী এবং প্রচলিত গানের সুরে হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ হারাম এবং নাজায়িয। সর্বপ্রকার নর্তন-কুর্দন ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। সামা শুনে ওজুদের হাল হতে পারে তবে কথিত ছূফী-নৃত্যের নাম দিয়ে ইচ্ছাকৃত নর্তন-কুর্দন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয।
বর্তমানে একটি সম্প্রদায় দেখা যায়, যারা কোনো বাদ্যযন্ত্র, দফ, প্রচলিত গানের সুর ব্যবহার না করলেও তারা তাদের সামা পরিবেশনের সময় মুখে যিকিরের ভঙ্গিতে এক ধরনের শব্দ করে থাকে- এটিও সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী। কেননা যিকির শব্দের অর্থ মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ। আর যিকিরের ছবক করার জন্য প্রয়োজন হয় একজন কামিল মুর্শিদ বা শায়েখ উনার নিছবত। সারাজীবন যিকিরের ভঙ্গিতে শব্দ করলেও ফায়দা পাবে না, যদি না কোনো মহান ওলীআল্লাহ উনার হাত মুবারককে বায়াত হয়ে ছবক না নিবে।
এছাড়াও যিকিরের জন্য প্রয়োজন বিশুদ্ধ নিয়ত। প্রথমত যিকির করতে হয় মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টির জন্য আর যিকিরের পূর্বে যিনি কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ হবেন উনার প্রতি থাকতে হবে চূড়ান্ত হুসনে যন বা বিশুদ্ধ ধারণা, নতুবা যিকিরকারী কোনো ফায়দা পাবে না। বর্তমানে যারা সামা পরিবেশনে যিকিরের ভঙ্গিতে শব্দ করছে তারা একই সঙ্গে অনেকগুলো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যেমন-
১. মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণে যিকির না করে তাল রক্ষার্থে যিকির করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ হারাম।
২. যিকিরের ভঙ্গিতে সুরের তাল রক্ষার শব্দ করাতে যিকিরকে ইহানত বা অবজ্ঞা করা হচ্ছে, যা কুফরী।
৩. যিকিরের শব্দকে তাল-লয় হিসেবে ব্যবহার করায় বাদ্যযন্ত্রের সহযোগিতা নেয়ার মতো গুনাহ হচ্ছে, যা কবীরা গুনাহ।
৪. বিশুদ্ধ নিয়তবিহীন, মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ ব্যতীত যিকিরের ভঙ্গিতে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উচ্চারণে ইহানত করার কারণে দিল মুর্দা হয়ে গুমরাহ হয়ে যায়।
সুতরাং এ পদ্ধতিতে হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা সম্পূর্ণ হারাম ও নাজায়িয এবং কুফরীর অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও আরো একটি সম্প্রদায় রয়েছে, যারা মুখে কোনো যিকিরের ভঙ্গিতে শব্দ না করলেও মেশিনের সাহায্যে এক ধরনের কৃত্রিম শব্দ সৃষ্টি করে, যাতে ক্বাছীদা শরীফ পাঠের মধ্যে এক ধরনের ঝোঁক সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ঝোঁক সৃষ্টি করার নেপথ্যে থাকে আসলে তাল-লয় রক্ষার প্রবণতা। ফলে এ ধরনের শব্দ সৃষ্টি করাও জায়িয নয় বরং হারাম।
অনেকের আওয়াজকে বুলন্দ করার জন্য যে ইকো সৃষ্টি করা হয়, তা ভিন্ন ব্যাপার। কেননা এর উদ্দেশ্য থাকে ক্বাছীদা শরীফ উনার আওয়াজ ও শব্দগুলো স্পষ্ট করা।
আসলে ক্বাছীদা শরীফ লেখা, পাঠ করা, শোনা, শোনার আয়োজন করা, উপস্থিত থাকা, ইলমে আরূজীর তরতীবে বা লেহানে পাঠ করা (যা গানের সুর নয়) সব খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। এই সম্মানিত সুন্নত উনার আমলের মধ্যে যেহেতু যথেষ্ট খায়ের, বরকত রয়েছে, তাই যুগে যুগে ইবলিস এবং তার অনুসারী কাফির মুশরিকরা মুসলমানগণকে সামার সঠিক পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করেছে, করে যাচ্ছে। আমাদের অবশ্যই কাফিরদের এসব ষড়যন্ত্র থেকে বেঁচে থেকে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করার কোশেশ করে যেতে হবে।
যে কোনো কিছু পাঠের ক্ষেত্রে আমরা কণ্ঠের স্বর এবং লেহান ব্যবহার করি। গদ্য এবং কবিতা পাঠের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি স্বর এবং হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি স্বরের সঙ্গে লেহান। তাই সুরের বিষয়টি আমাদের বোঝা প্রয়োজন।
আমরা যখন কথা বলি তখন বাক্য ব্যবহার করি। আর একটি বাক্যে থাকে অনেক শব্দমালা। আর একটি শব্দ তৈরি হয় কয়েকটি বর্ণের সমন্বয়ে। এখন মানুষ যে ভাষাতেই কথা বলুক না কেন, তার সে ভাষায় রচিত একটি বাক্য বিশ্লেষণ করলে সে ভাষার বর্ণ পাওয়া যাবে। একইভাবে আমরা যখন কোনো সুর তৈরি করি বা কোনো সুরকে কণ্ঠে ধারণ করি, তখন সেই সুরকে বিশ্লেষণ করলে স্বরের বিন্যাস পাওয়া যাবে যাকে স্বরলিপি বা নোটেশন বলা হয়।
সঙ্গীত নিয়ে যারা কাজ করেছে তারা স্বর উপস্থাপনের কতগুলো পদ্ধতি বা ধরণ তৈরি করেছে। এগুলোকে সঙ্গীত শাস্ত্রে বলা হয় ঠাঁট। প্রতিটি ঠাঁটের স্বরের বিন্যাস নির্দিষ্ট। এই বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে রাগ-রাগিনী গাওয়া হয়। যেহেতু সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সঙ্গীত, রাগ-রাগিনী গাওয়া হারাম, ফলে কোনো সুরে হামদ শরীফ, না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করলে, সেই সুরের বিন্যাসের মধ্যে যদি ঠাঁটের বা রাগ-রাগিনীর বিন্যাস পাওয়া যায়, তবে সেই সুর অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
বিষয়টি সহজভাবে বলতে গেলে এভাবে বলা যেতে পারে- একটি বাক্যকে বিশ্লেষণ করলে অবশ্যই বর্ণ ও বর্ণের বিন্যাস পাওয়া যাবে। এখন কয়েকটি বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত কয়েকটি শব্দ যোগ করে একটি নছীহতমূলক বাক্য পাওয়া গেলে স্বরের বিন্যাসটি জায়িয কিন্তু কোন অশ্লীল বাক্য পাওয়া গেলে তা নাজায়িয।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো একটি সুরকে বিশ্লেষণ করলে কোনো একটি নির্দিষ্ট রাগের আবহ পাওয়া যায় না; বরং কয়েকটি রাগের মিশ্রণ পাওয়া যায়, সেগুলোও বর্জনীয়। আবার এমন অনেক সুর আছে, যা নির্দিষ্ট রাগ-রাগিনীতে না পড়লেও সেগুলো কোনো গানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। ফলে সেই সুর শুনলে কোনো নির্দিষ্ট গানেরই স্মরণ হয়, তাই সেই সুরগুলোও পরিত্যাজ্য। তাই কোনো ক্বাছীদা এমন কোনো সুরে পাঠ করা উচিত নয়, যা কোনো নির্দিষ্ট রাগের উপর রচিত কিংবা যেখানে কয়েকটি রাগের মিশ্রণ খুঁজে পাওয়া যাবে কিংবা কোনো নির্দিষ্ট রাগে না হলেও তা প্রচলিত কোনো গানের সুরে পঠিত।
রাগ-রাগিনী ছাড়াও পরিবেশনের উপর ভিত্তি করে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। যেমন একটি নির্দিষ্ট রাগে নজরুল সঙ্গীত এবং রবীন্দ্র সঙ্গীতের পরিবেশন ভিন্ন হয়। এটাকে বলা হয় গায়কী। ফলে ক্বাছীদা শরীফ পাঠের সময় এ বিষয়টিও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। পল্লীগীতি, লালনগীতি এগুলোও ভিন্ন ভিন্ন গায়কীতে পরিবেশন করা হয়।
পূর্বে বিভিন্ন সঙ্গীত শিল্পীরা যে সকল শাস্ত্রীয় শিল্পীদের ঘরে থেকে গান-বাজনা শিখতো তারা সেই বিশেষ স্টাইলে সঙ্গীত পরিবেশন করতো, এগুলোকে ঘারানা বলে। কোনো ক্বাছীদা পাঠ এমনভাবে পাঠ করা উচিত নয় যাতে নির্দিষ্ট ঘারানার স্টাইলকে উপস্থাপন করে।
একটি বিষয় উল্লেখ্য, যারা শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সম্পর্কে ধারণা রাখে না, তাদের জন্য রাগ-রাগিনীতে, ঘারানার স্টাইলে, নির্দিষ্ট গায়কীতে পাঠ করা সম্ভব নয়, যদি না কেউ অনুকরণ করার চেষ্টা করে। তবে প্রচলিত গানের সুরে পাঠ করার বিপদ থেকে যায় এ কারণে যে, যদি অন্য ভাষাভাষী (যেমন উর্দূ, হিন্দি, পাঞ্জাবীতে) কেউ কোনো ক্বাছীদা শরীফ বা হামদ শরীফ, না’ত শরীফ কোনো প্রচলিত গানের সুরে পাঠ করে থাকে আর অজ্ঞতার কারণে সেই সুরকে অনুসরণ করে নতুন কোনো ক্বাছীদা শরীফ বাংলা ভাষায় পাঠ করার চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে যারা এ বিষয়ে বুঝেন তাদের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে নতুবা মৌলিক লেহানে পাঠ করাই শ্রেয়।
‘মৌলিক লেহান’ বলতে সহজে যা বোঝানো হয় তাহলো, যা প্রচলিত কোনো গানের অনুরূপ নয়, কোনো রাগাশ্রয়ী সুর নয়, প্রচলিত কোনো গায়কী বা ঘারানার আদলে নয়- এমন একটি লেহান। অবশ্যই এটি একটি নতুন নামকরণ। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে মৌলিক লেহান বলতে বোঝায় বিশেষ একটি লেহানকে, যেখানে অন্য কোনো রাগের মিশ্রণ নেই। কিন্তু সেখানে মৌলিক লেহান নামকরণটি প্রচলিত নয়। বিশেষভাবে মৌলিক লেহান বলতে যা বোঝানো হচ্ছে তাহলো এটি ক্বাছীদা পাঠের লেহান, সামার মাহফিলের লেহান। এই লেহান শুনলে যেন ক্বাছীদা পাঠের কথাই স্মরণ হয়, সামার কথাই স্মরণ হয় অন্য কিছু নয়।
ইতিহাস থেকে আমরা স্পষ্টভাবে ধারণা করতে পারি না যে, বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কিভাবে না’ত শরীফ বা ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। তিনি কী কবিতা পাঠের মতো কেবল স্বর ব্যবহার করতেন নাকি বর্তমান ক্বাছীদা শরীফ পাঠের মতো লেহান ব্যবহার করতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে হযরত ছূফীয়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যখন সামা শুনতেন সেখানে যে লেহানের ব্যবহার ছিল তা ইতিহাস পড়লে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে জটিলতা যেটা রয়েছে তাহলো, আরব অঞ্চলের ছূফী সম্প্রদায় রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যে রকম লেহানে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন, পারস্য অঞ্চলের ছূফী সম্প্রদায় রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা ভিন্ন লেহানে পাঠ করেছেন। এটা সহজেই আমাদের উপলব্ধিতে আসে। কেননা ভাষা এবং অঞ্চলের কারণে সামা পরিবেশনে ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরেও সে সময়ে ক্বাছীদা শরীফ উনার লেহান শুনলে ছূফীগণ সেটাকে সামা উনার লেহান বা ক্বাছীদা উনার লেহান হিসেবেই গ্রহণ করতেন। সামা উনার লেহানকে কখনো গানের সুরে খেয়াল করেননি। সুতরাং সময়ের পরিক্রমায় যেহেতু ক্বাছীদা শরীফ এবং সামা শরীফ উনার সুন্নত প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলো। তাই সামা বা ক্বাছীদা শরীফ উনার লেহান হারিয়ে গিয়ে সেখানে ভারত উপমহাদেশে জায়গা করে নিয়েছে বাদ্যযন্ত্রসহ হারাম কাওয়ালী গানের সুর; যা কখনো শোনা জায়িয নেই। ফলে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সুরের বৈচিত্র্যতাকে পরিহার করে স্বাভাবিক সুললিত লেহানে ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা প্রয়োজন। এখানে লেহান শুধু পংক্তিগুলোকে স্পষ্টভাবে শ্রোতাকে হৃদয়ঙ্গম করার জন্যই ব্যবহৃত হবে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়।


মুক্বাদ্দিমাতুল কিতাব-
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এসেছেন মূর্তি এবং বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করতে। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে বাদ্যযন্ত্রসহ হোক বা বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই হোক- হারাম সঙ্গীতের কোনো স্থান নেই। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, ছূফী, দরবেশ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা কখনো সঙ্গীত চর্চা তো দূরে থাক, সঙ্গীতের পাশ দিয়েও হাঁটেননি। অথচ আজকে বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে মুসলমানগণের মধ্যে সঙ্গীত চর্চা শুরু হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! এ অঞ্চলের মুসলমানগণের মাঝে সঙ্গীত চর্চা প্রবেশের নেপথ্যে রয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক গোষ্ঠী, হিন্দু সম্প্রদায় এবং বিভ্রান্ত শাসকশ্রেণী।

ভারতের আজমীর শরীফ-এ শুয়ে আছেন ৭ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, সুলত্বানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৩৬-৬৩৩ হিজরী) এবং দিল্লীতে রয়েছেন ৮ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মাহবুব-ই-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৩৫-৭২৫ হিজরী) উনারা। এই মহান মুজাদ্দিদদ্বয় সম্মানিত সুন্নত উনার অনুসরণে হামদ শরীফ-নাত শরীফ-ক্বাছীদা শরীফ শুনতেন এবং সামা শরীফ উনার মাহফিলের আয়োজন করতেন। আজকে উনাদের মাযার শরীফ প্রাঙ্গনে আয়োজিত কাওয়ালী অনুষ্ঠান দিয়ে উনাদের সামা শরীফ শোনার বিষয়টি যেমনি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, তেমনি কিছু কিতাবী ইলম দিয়ে হযরত মুজাদ্দিদুয যামান রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়।

চিশতিয়া তরীক্বার যিনি মূল নক্ষত্র সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সামা শুনতেন এবং ব্যাপকভাবে এই সুন্নত উনার প্রচলন ঘটান। কিন্তু সুন্নতী সামা শরীফ নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির (অর্থাৎ বাদ্যযন্ত্রসহ কাওয়ালী পরিবেশনের) উপাদান এসেছে মাহবুব-ই-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট মুরীদ, মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ও মাহবুব ওলী হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে না পারার কারণে। সমালোচকগণ, হিন্দু ঐতিহাসিকরা পরবর্তীতে অনেক তথাকথিত মুসলিম ঐতিহাসিকরাও উনাকে খেয়ালের জনক, তবলা এবং সিতারের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নাউযুবিল্লাহ! যা বর্তমানে ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখা যায়।

শত শত বছর ভারতবর্ষ মুসলমান শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। হিন্দু কুচক্রীরা সবসময়ই ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। মুসলমান শাসকদের হাত থেকে ক্ষমতা সরিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে, মুসলমানগণের উন্নত চরিত্রকে কলুষিত করার ক্ষেত্রে, মুসলমানগণের স্থাপত্য শিল্পে অবদান নষ্ট করার ক্ষেত্রে, সর্বোপরি ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য অতীতে চলেছে এবং বর্তমানেও চলছে তাদের এই কূটকৌশল। মুসলমানগণের ইতিহাসকেও তারা বিকৃত করেছে পরিকল্পিতভাবে।
আর এক্ষেত্রে রাজা-বাদশাহরা তো রয়েছেই, ভারতবর্ষে আসা ওলীআল্লাহগণ উনাদেরকে তারা সমালোচনার লক্ষ্যস্থলে পরিণত করেছে। নাউযুবিল্লাহ! মুসলমানগণ যেন ছূফী-দরবেশ, ওলীআল্লাহগণ উনাদের কাছ থেকে দূরে থাকে- সে কারণে পরিকল্পিতভাবে মুনাফিকদের দ্বারা উনাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার সৃষ্টি করা হয়েছে।

সুলত্বানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বাদ্যযন্ত্রসহ গান-বাজনা, কাওয়ালী শুনতেন। নাউযুবিল্লাহ! এসব কথা হচ্ছে ইতিহাসের চরম মিথ্যাচারিতা। হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি অপবাদ দেয়া হয় যে, তিনি তবলা, সেতার, খেয়াল-এর জনক এবং উনারা বাদ্যযন্ত্রসহ কাওয়ালী করতেন। নাঊযুবিল্লাহ!
আমরা প্রথমে আলোচনা করেছি একজন মুজাদ্দিদ উনার পরিচয় সম্পর্কে এবং উনাদের আগমনের তাৎপর্য কী? এরপর আলোচনা করেছি বাল্য বয়স থেকেই একজন মুজাদ্দিদ উনার নেক ছোহবত প্রাপ্ত মানুষ এবং যিনি উচ্চ তাক্বওয়া পরহেযগারীসম্পন্ন এবং যিনি উনার কিতাবেই সঙ্গীতের বিরুদ্ধে আলোচনা করেছেন-সেই হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কখনো সঙ্গীত শ্রবণ করতে পারেন না, বাদ্যযন্ত্র বানাতে পারেন না। আমরা এরপর তুলে ধরেছি অনেকগুলো কারণ; ঐতিহাসিকরা যে কারণে বিভ্রান্ত হয়েছে, উনাদের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে। 
ইতিহাসে মিয়া তানসেন বিখ্যাত একজন সঙ্গীতজ্ঞ এবং মোঘলস¤্রাট আকবরের নবরতেœর একজন রতœ হিসেবে। তবে পরিণত একটি বয়সে সেই সময়কার একজন বিখ্যাত ওলীআল্লাহ হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ গাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবতে আসার পর মিয়া তানসেন সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কবুল করেন।

কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় তার সম্মানিত ইসলাম কবুলের বিষয়টিকে কখনো ভালো চোখে দেখেনি। ফলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কবুলের পর উনার সঙ্গীত বর্জনের বিষয়টি আলোচনায় না এনে আকবরের নবরতেœর একজন থাকা অবস্থায় সৃষ্ট রাগ-রাগিনীগুলো প্রচার-প্রসারেই ব্যস্ত রয়েছে। উনার সঙ্গীত প্রতিভাকে নিয়ে আলোচনা করেছে বিস্তর। আর এই আলোচনা করতে গিয়ে মিথ্যা গল্পের আশ্রয়ও নিয়েছে তারা। অথচ মিয়া তানসেনের জীবন ইতিহাসে আজো এসব মিথ্যা ইতিহাস চলে আসছে। এসব মিথ্যা ইতিহাস প্রচার করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে এবং এসবের জন্য দায়ী হিন্দু সম্প্রদায় এবং নফছের গোলামীতে মশগুল তথাকথিত কতিপয় মুসলমানরা। 

সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এসেছেন সঙ্গীত এবং বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করতে এটাই সঠিক এবং মিয়া তানসেনও তার জীবনের শেষে তা প্রমাণ করেছেন। হিজরী ৭ম শতকের মুজাদ্দিদ, সুলত্বানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং হিজরী ৮ম শতকের মুজাদ্দিদ, মাহবুব-এ ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এবং উনাদের সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত কোনো মুরীদ বা এই সিলসিলার হক্বপন্থী কোনো আউলিয়ায়ে কিরাম কখনো বাদ্যযন্ত্রসহ সামা শরীফ শোনেননি, কাওয়ালী করেননি।

হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খেয়ালের জনক নন, তবলা এবং সিতারের উদ্ভাবকও নন। এছাড়াও সঙ্গীত শিল্পী মিয়া তানসেন তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ গাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাতে বাইয়াত হওয়ার পর সঙ্গীত থেকে দূরে সরে ছিলেন। সুতরাং সকল আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সামা শরীফ-এর অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে, ক্বাছীদা শরীফ শোনার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে সুন্নত উনার অনুসরণ করতেন এবং ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে নিষিদ্ধ হারাম গান-বাজনা থেকে দূরে থাকতেন।

ছূফী সম্প্রদায় সব সময় সঙ্গীতকে হারাম জেনেছেন ও মেনেছেন-
কোনো কোনো মুসলমানরা একটি বিষয়ে অর্থহীন গর্ব করে। এই অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে গর্ব করতে গিয়ে তাদের নিজেদের অজান্তেই কুফরী করে থাকে। কোনো হারাম কাজ করে গর্ব প্রকাশ করার অর্থ হচ্ছে নিজেকে লা’নত পাওয়ার উপযুক্ত করা। বিষয়টি হচ্ছে- “সঙ্গীতে মুসলমানগণ শ্রেষ্ঠ।” নাঊযুবিল্লাহ!
বাস্তব সত্য হচ্ছে- হারাম বিষয় বাদ দিয়ে সমস্ত প্রয়োজনীয় বিষয় যেমন বিজ্ঞানে, সমরবিদ্যায়, আদর্শে, বুদ্ধিতে, প্রজ্ঞায়, বিচক্ষণতায়, সম্পদে মুসলমানগণ শ্রেষ্ঠ। কিন্তু কাফির-মুশরিকরা অপ্রয়োজনীয় একটি বিষয়ের ফিকির মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। এর নেপথ্য কারণ অনেক দীর্ঘ। 

মূর্তি আর বাদ্যযন্ত্রসহ সঙ্গীত ধর্মীয় অনুষঙ্গ হিসেবে হিন্দু ধর্মে মিশে আছে। আর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এসেছেন মূর্তি এবং বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করতে। বাদ্যযন্ত্রসহ হোক বা বাদ্যযন্ত্র ছাড়াই হোক- সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে হারাম সঙ্গীতের কোনো স্থান নেই। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, হযরত ইমাম মুজতাহিদ, ছূফী, দরবেশ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা কখনো সঙ্গীত চর্চা তো দূরে থাক, সঙ্গীতের পাশ দিয়েও হাঁটেননি। অথচ আজকে বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে মুসলমানগণের মধ্যে সঙ্গীত চর্চা শুরু হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! 

ভারত উপমহাদেশে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এসেছেন হযরত ছাহাবা আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং বিশিষ্ট মুজাদ্দিদ, ছূফী-দরবেশ এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মাধ্যমে। এ অঞ্চলের মুসলমানগণের মাঝে সঙ্গীত চর্চা প্রবেশের নেপথ্যে রয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক গোষ্ঠী, হিন্দু সম্প্রদায় এবং বিভ্রান্ত শাসকশ্রেণী। পর্যায়ক্রমে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।

৭ম শতকের মুজাদ্দিদ, সুলতানুল হিন্দ, হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৩৬-৬৩৩ হিজরী) এবং ৮ম শতকের মুজাদ্দিদ, মাহবুবে ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৩৫-৭২৫ হিজরী) ভারতের মাটিতে তাশরীফ নিয়ে আছেন।
উনাদের মাজার শরীফ প্রাঙ্গনে ঢোল, তবলা, হারমোনিয়াম বাজিয়ে ছূফী নামধারী একটি বিশেষ বাতিল শ্রেণী কাওয়ালী পরিবেশন করে। নাউজুবিল্লাহ! এরা নিজেদের চিশতিয়া খান্দানের অনুসারী বলেও দাবি করে থাকে। তাদের এই আচরণে মুসলমানগণের মধ্যে প্রধান দুটি ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।
একদল ভাবছে হয়তো প্রকৃতই এই মহান মুজাদ্দিদদ্বয় রহমতুল্লাহি আলাইহিম বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কাওয়ালী শুনতেন তাই তার ধারাবাহিকতা এখনো বিদ্যমান (নাঊযুবিল্লাহ), অপর দলটি পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের দলীলে এসব গায়ক-বাদকদের কাফির ফতওয়া দেয় এবং মাজার শরীফ যিয়ারতে বাধা দেয় এমনকি প্রকৃত ছূফী সম্প্রদায়ের প্রতিও বদ আক্বীদা পোষণ করছে।

সামা শরীয়তসম্মত এবং সম্মানিত সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত-
ভারতের আজমীর শরীফ-এ শুয়ে আছেন ৭ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, সুলত্বানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৩৬-৬৩৩ হিজরী) এবং দিল্লীতে রয়েছেন ৮ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ, মাহবুব-ই-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৩৫-৭২৫ হিজরী) উনারা। এই মহান মুজাদ্দিদদ্বয় সুন্নতের অনুসরণে হামদ-নাত-ক্বাছীদা শরীফ শুনতেন এবং সামা শরীফ উনার মাহফিলের আয়োজন করতেন। আজকে উনাদের মাযার শরীফ প্রাঙ্গনে আয়োজিত কাওয়ালী অনুষ্ঠান দিয়ে উনাদের সামা শরীফ শোনার বিষয়টি যেমনি উপলব্ধি করা সম্ভব নয়, তেমনি কিছু কিতাবী ইলম দিয়ে মুজাদ্দিদগণ উনাদের পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়। তবুও আমরা মুজাদ্দিদগণ উনাদের উপর কিছুটা আলোচনা করবো যাতে বোঝা যায় উনাদের পক্ষে কাওয়ালী শোনা কী আদৌ সম্ভব ছিল কিনা। যদিও এ রকম ধারণা করাও আদবের খিলাফ কিন্তু আমাদের লেখার স্বচ্ছতা এবং সাধারণের উপলব্ধিকে শানিত করার লক্ষ্যেই এই চেষ্টা।
পবিত্র হাদীছে কুদছী শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, যা আবূ দাউদ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে যে, “প্রত্যেক হিজরী শতকের শুরুতে মহান আল্লাহ পাক তিনি একজন মুজাদ্দিদ পাঠাবেন, যিনি দ্বীনের তাজদীদ করবেন।” একজন মানুষ কষ্ট সাধনা করে ওলীআল্লাহ হতে পারেন কিন্তু মুজাদ্দিদ হিসেবে আসা মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল নয়। মুজাদ্দিদগণ উনারা বিশেষভাবে মনোনীত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে দ্বীন রেখে গেছেন, মুজাদ্দিদগণ উনারা হচ্ছেন প্রকৃত ওয়ারিছ। উনারা হুবহু সেই দ্বীনকে আবার জাগরিত করেছেন, করে যাচ্ছেন এবং করবেন। সামান্য কমও নয়, বেশিও নয়।
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের যুগের পর প্রথম মুজাদ্দিদ হিসেবে আসেন হযরত ইমাম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি (৮০-১৫০ হিজরী)। এভাবে ৭ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন সুলত্বানুল হিন্দ খাজা গরীব নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫৩৬-৬৩৩ হিজরী) এবং ৮ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ ছিলেন মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৩৫-৭২৫ হিজরী)।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি প্রেরিত হয়েছি বাদ্যযন্ত্র ও মূর্তি ধ্বংস করার জন্য।”
সুতরাং মুজাদ্দিদগণ উনারা কিভাবে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কাওয়ালী শোনার বা গাওয়ার অনুমতি দেবেন? এসব বলা এবং ভাবাও চরম পর্যায়ের বেয়াদবি ও কুফরী। উনাদের অন্তরের পবিত্রতা সাধারণের উপলব্ধির বাইরে। কিন্তু যারা নফসের অনুসরণ করে তারাই অবলীলায় বলতে পারে- ভারতে শুয়ে থাকা এই মহান মুজাদ্দিদদ্বয় উনারা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সামা, কাওয়ালী শুনতেন। নাঊযুবিল্লাহ!
মুজাদ্দিদগণ উনারা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সুন্নত উনার আমল করেন এবং সেই সময়ের অবলুপ্ত সুন্নতগুলোও জিন্দা করার চেষ্টা করেন। ক্বাছীদা শরীফ শোনা, লেখা, পাঠ করা, শোনার আয়োজন করা, উৎসাহ দিয়ে লিখানো সবই খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে একটি আলাদা মিম্বর শরীফ বানিয়ে দিয়েছিলেন যেখানে বসে বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ক্বাছীদা শরীফ পরিবেশন করতেন।
পাশের মিম্বর শরীফ উনার মধ্যে বসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা শুনতেন এবং কখনো আওড়াতেন। মূলত, ৭ম এবং ৮ম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদগণ উনারা সেই সুন্নত উনার হুবহু অনুসরণে ক্বাছীদা বা সামা শরীফ শোনার আয়োজন করতেন। যা সম্পূর্ণ শরীয়তসম্মত এবং খাছ সুন্নত উনার অন্তর্ভুক্ত।

হারমোনিয়াম-তবলা বাজিয়ে কাওয়ালী পরিবেশনকারীরা বিভ্রান্ত-
মহান আল্লাহ পাক তিনি পকিত্র কুরআন মজীদ উনার পবিত্র সূরা শূয়ারা শরীফ উনার ২২৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন, “বিভ্রান্ত লোকেরাই কবিদের (মিথ্যুক, অশ্লীল, কুৎসা বর্ণনাকারী) অনুসরণ করে।”
আর একই পবিত্র সূরা শরীফ উনার ২২৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ বা উক্ত সূরা শরীফ উনার শেষাংশ যারা ঈমানদার ও নেককার কবিদের উত্তম, রুচিসম্পন্ন ও শরীয়তসম্পন্ন কবিতাসমূহ যে গ্রহণযোগ্য তা বুঝানো হয়েছে। সেখানে উল্লেখ রয়েছে “তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে খুব স্মরণ করে।”
সুতরাং ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা, লিখা, শোনা, আয়োজন করা মূলত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার নির্দেশ মুবারক উনারই অন্তর্ভুক্ত। আর যারা সঙ্গীত লিখে, গায়, শোনে তারা মূলত পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত বিভ্রান্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।

ফলে চিশতিয়া খান্দানের বুযূর্গগণ বিশেষত সুলতানুল হিন্দ খাজা গরিবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং মাহবুব-ই-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অনুসরণে সামার আয়োজন করতেন এবং শুনতেন। আর এখন উনাদের মাযার শরীফ প্রাঙ্গনে যারা তবলা-হারমোনিয়াম বাজিয়ে উনাদের শানে মিথ্যারোপ করে কাওয়ালী করছে তারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত বিভ্রান্ত শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।
চিশতিয়া তরীক্বার যিনি মূল নক্ষত্র সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সামা শুনতেন এবং ব্যাপকভাবে এই সম্মানিত সুন্নত উনার প্রচলন ঘটান। কিন্তু সুন্নতী সামা শরীফ নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির (অর্থাৎ বাদ্যযন্ত্রসহ কাওয়ালী পরিবেশনের) উপাদান এসেছে মাহবুব-ই-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট মুরীদ, খালিছ আল্লাহ পাক উনার মাহবুব ওলী হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে না পারার কারণে। সমালোচকগণ, হিন্দু ঐতিহাসিকরা পরবর্তীতে অনেক তথাকথিত মুসলিম ঐতিহাসিকরাও উনাকে খেয়ালের জনক, তবলা এবং সিতারের জনক হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। যা বর্তমানে ইতিহাসের পাতা উল্টালেই দেখা যায়। আর এসব বিভ্রান্তিকর ইতিহাসের কারণে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণের মনে এ রকম ধারণার জন্ম হতে পারে যে, মাহবুব-ই-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারসহ সামা শুনতেন। নাঊযুবিল্লাহ! আবার সামার ব্যাপক প্রচলন যেহেতু করেছিলেন সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও হয়তো এসব যন্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন দিতেন। নাঊযুবিল্লাহ!
তাহলে যদি প্রমাণ করা যায় যে, হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খেয়াল গানের জনক নন, তবলা এবং সিতারের আবিষ্কারক নন; এছাড়াও আমরা ইতিহাস থেকে তুলে ধরতে পারি- তিনি প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত উচ্চ শ্রেণীর ওলীআল্লাহ ছিলেন তখন সহজেই এই ভ্রান্তি কাটিয়ে উঠা সাধারণের পক্ষে সম্ভব হবে।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাবা ছিলেন তুর্কী বংশোদ্ভূত। আমীর আলাচিন হিসেবে খ্যাত হলেও উনার মূল নাম ছিল সাইফুদ্দিন মাহমুদ শামসী। মহাযালিম চেঙ্গিস খানের আক্রমণের সময় উনার মূল বাসস্থান কেশ (সমরখন্দের নিকট) থেকে বলখে চলে আসেন। তিনি ছিলেন হাজারা এলাকার সর্দার। দিল্লীর শাসনকর্তা শামসুদ্দীন আলতামাশ উনাকে দিল্লীতে আহ্বান করেন এবং এই সম্ভ্রান্ত আমীর এবং বিদ্যান ব্যক্তির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করেন। এটা ১২২৬ ঈসায়ী সনের কথা। তিনি বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের ইটাহতে বসবাস শুরু করেন। হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা মাতা ছিলেন দিল্লীর অধিবাসী। ১২৫১ (৬৪৮ হিজরী) সালে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি বিলাদত শরীফ লাভ করেন। উনার মূল নাম আবুল হাসান ইয়ামিনুদ্দিন খসরু (১২৫১-১৩২৫ ঈসায়ী; ৬৪৮-৭২৫ হিজরী)। উনার সম্মানিত পিতা অধিকাংশ সময় জিহাদে থাকতেন এবং ১২৬০ সালে একটি জিহাদে শহীদ হন।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা মাতা ছিলেন অত্যন্ত বিদুষী একজন মহিলা। তিনি উনার এই সন্তানের বিচক্ষণতা, বুদ্ধিমত্তা লক্ষ্য করে উনার ৮ বছর বয়স মুবারকেই বিশিষ্ট মুজাদ্দিদ মাহবুব-ই ইলাহী হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক ছোহবতে পাঠান। ৮ বছর বয়স মুবারক থেকেই উনার কাব্য প্রতিভা দেখা দেয়।
শায়েখ মুরীদ উনাদের গভীর নিছবত-
মায়ের আদেশে ৮ বছর বয়স মুবারকে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন প্রথম মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র দরবার শরীফ-এ আসেন। তিনি ভিতরে প্রবেশ না করে বাইরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে উনার আধ্যাত্মিকতার বিষয়টি উপলব্ধির জন্য কয়েকটি কবিতার লাইন রচনা করে পাঠ করেন।
তিনি বলেন (যার ভাবার্থ হলো)- “আপনি এমনি এক শাহেনশাহ, যেখানে একটি কবুতর বাজপাখিতে রূপান্তরিত হয়ে যায়। একজন অত্যন্ত সাধারণ মুসাফির আপনার দরজার ভেতরে প্রবেশ করবে কি করবে না?”
মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এ কথাগুলো শোনার সাথে সাথে একজন খাদিমকে দিয়ে উনার কথার উত্তর দেন। তিনি বলে পাঠান- (যার ভাবার্থ হলো)- “তুমি একজন বাস্তববাদী মানুষ ভেতরে আসো। তুমি অল্প সময়ের জন্য আমার প্রিয়ভাজন হতে পারো। যদি এ ব্যক্তি বুদ্ধিহীন হয় তবে সে যেভাবে এসেছে সেভাবেই ফেরত যেতে পারে।”
সুতরাং জীবনের শুরুতেই, বাইয়াতের শুরুতেই হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে শায়েখের যে নিছবত ছিল তাতেই উনার হাক্বীক্বী পরিচয় পাওয়া যায়।
মুজাদ্দিদুয যামান, মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে উনার বিশিষ্ট মুরীদ মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী, জগদ্বিখ্যাত কবি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে কী গভীর নিছবত ছিলো তা নিচের ঘটনা শুনলেই বোঝা যাবে।
একদিন এক ভিক্ষুক মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ এসে কিছু সাহায্যের জন্য আবেদন করলো। কিন্তু সে সময় দরবার শরীফ-এ সেই ভিক্ষুককে দেয়ার মতো কিছুই ছিল না। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার মহান ওলী খালি হাতে ভিক্ষুককে ফিরিয়ে দিতেও পছন্দ করলেন না। উনার কাছে নিজের এক জোড়া স্যান্ডেল (পাদুকা বা নালাইন শরীফ) দেখতে পেয়ে তিনি তাই সেই ভিক্ষুককে দান করে দিলেন। ভিক্ষুক সেই মুবারক স্যান্ডেল শরীফ নিয়ে যাওয়ার পথে দূর থেকে তাকে দেখতে পেলেন হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট তখন বেশ অর্থকড়ি ছিলো এবং মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীও ছিল। ভিক্ষুক উনার কাছে আসতেই তিনি বলে উঠলেন’ ‘ওহে ভিক্ষুক তোমার কাছে আমার শায়েখ উনার খুশবু পাই।’ ভিক্ষুক সব খুলে বললে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অর্থ বা মূল্যবান উপঢৌকনের বিনিময়ে স্যান্ডেল মুবারক ফেরত নিয়ে নেন। তিনি সেই স্যান্ডেল মুবারকসহ আবার উনার শায়েখ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন, তখন মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছিলেন, “হে আমীর খসরু! তুমি অতি সস্তায় এ স্যান্ডেল ফেরত নিয়েছো।”
এ ঘটনা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে বিশিষ্ট মুজাদ্দিদ মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে উনার বিশিষ্ট মুরীদ হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি উনার কী নিবিড় আত্মিক যোগ ছিল! এই আত্মিক বিকাশসম্পন্ন ওলীআল্লাহগণ উনাদের সম্পর্কে কাফিররাই অপবাদ ছড়ায় যে, উনারা হারমোনিয়াম-তবলাসহ কাওয়ালী শুনতেন। নাঊযুবিল্লাহ!
ছূফী সম্প্রদায় কখনোই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সামা করেননি-
মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পক্ষে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কাওয়ালী করা এবং তবলা এবং সেতার যন্ত্র আবিষ্কার করা যে সম্ভব নয়, তা উনার তাক্বওয়া, পরহেযগারী এবং উনার শায়েখের সঙ্গে নিছবতের বিষয়টি বুঝলে সহজেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। এখানে উনার আরো একটি মুবারক ঘটনা তুলে ধরা হলো।
বিশিষ্ট মুজাদ্দিদ, মাহবুব-এ ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ক্ষমতাবান লোকদের থেকে, বিশেষ করে দিল্লীর সুলতানদের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেন। এক সময় দিল্লীর সুলতান জালালুদ্দিন খিলজী হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ডেকে সেই সময়কার মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ওলী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি উনার সাথে দেখা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন। সুলতান নিজেই দিনক্ষণ ঠিক করেন কিন্তু সেই দিন তারিখ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জানাতে নিষেধ করেন।
কিন্তু হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই সংবাদ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জানিয়ে দিলে তিনি ভিন্ন জায়গায় চলে যান। ফলে সুলতান গিয়ে আর দেখা পাননি। পরে জালালুদ্দিন খিলজি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে ওয়াদা ভঙ্গের কারণ জিজ্ঞাসা করলে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুলতানকে উত্তর দেন ‘সুলতানের সাথে ওয়াদা ভঙ্গ করাতে শাস্তিস্বরূপ আমার জীবন সংহার হতে পারে। তবে আমার মুর্শিদ উনার সাথে একই রকম আচরণ করলে আমার ঈমানহানি হবে এবং পরকালে এর জবাবদিহি করতে হবে।’
এ ঘটনাটি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার তাক্বওয়া, পরহেযগারী এবং উনার শায়েখ উনার সঙ্গে হৃদ্যতার বিষয়টি বোঝার জন্য যথেষ্ট। যে সকল বদআক্বীদার লোক মাহবুব-ই-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কাওয়ালী করেছেন, সামা করেছেন বলে অপপ্রচার চালায় এবং এই অজুহাতে নিজেরাও এ সমস্ত হারাম কাজে লিপ্ত রয়েছে তাদের জবাব দেয়ার জন্য নিচের ঘটনাটিই যথেষ্ট।
একবার হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এ সামা শরীফ উনার অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেই সামা শরীফ উনার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। সামা শরীফ শুনতে শুনতে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাঝে হাল সৃষ্টি হয়ে যায় এবং উনার অজান্তেই তিনি দাঁড়িয়ে শরীর দোলাতে থাকেন। উনার এ অবস্থা দেখে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে এভাবে দুলতে বারণ করলেন এবং শিখিয়ে দিলেন এ অবস্থায় হাত উঠিয়ে মুনাজাতের ভঙ্গিতে দোয়া করতে এবং পা দ্বারা মাটিতে মাঝে মাঝে আঘাত করতে। পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করার অর্থ হচ্ছে পৃথিবীর মায়া-মোহকে পরিত্যাগ করা।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, সামা শরীফ শুনে হাল উঠলে এবং তাতে শরীর দুলালে যাতে নাচের মতো মনে না হয় এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক দৃষ্টি রেখেছিলেন মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি। ফলে তিনি কী করে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সামা করার অনুমতি দিতে পারেন? মূলত নফসের পূজারীরাই এ সমস্ত অপপ্রচার চালায়।
ওলীআল্লাহ উনাদের হাক্বীক্বত না বোঝার কারণে ঐতিহাসিকগণ বিভ্রান্ত হয়েছে-
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বলা হয় খেয়ালের জনক, তবলা এবং সেতার যন্ত্রের আবিষ্কারক। নাঊযুবিল্লাহ! কিতাবের পাতা উল্টালেই শুধু এই ইতিহাস চোখে পড়বে। আর সে কারণেই তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে যে, বিশিষ্ট মুজাদ্দিদ, মাহবুব-এ-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সঙ্গে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কী গভীর নিছবত ছিল এবং উনার তাক্বওয়া, পরহেযগারী কোন পর্যায়ের ছিল। এখানে আরো একটি বিষয় তুলে ধরা হলো। আশা করা যায়, কোনো বুদ্ধিমান এবং নেকবখত মানুষের জন্য এ ঘটনাই যথেষ্ট।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের মাত্র ছয় মাস পর পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন খাতুনে জান্নাত, সাইয়্যিদাতুন নিসা, উম্মু আবিহা হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম। এই ছয় মাস তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইশকের মধ্যেই গরক ছিলেন।
সেই সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ দেখতে পাই হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবনে। মাহবুব-এ-ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ লাভ করার মাত্র ছয় মাস পর বিছাল শরীফ লাভ করেন হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি।
বলা হয়, যদি সম্মানিত শরীয়ত উনার বিধান অনুযায়ী একই মাজার শরীফ-এ দু’জনকে রাখা জায়িয এবং আদব হতো তবে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে উনার শায়েখ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাজার শরীফ উনার মধ্যেই রাখা হতো। কিন্তু হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার শায়েখ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ উনার পাশেই শায়িত আছেন। একজন সঙ্গীত শিল্পী, বাদক, বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভাবক কখনো একজন মহান মুজাদ্দিদ উনার পাশে অবস্থান করার যোগ্যতা রাখে না। বরং তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী ছিলেন এবং হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অত্যন্ত সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত মুরীদ ছিলেন।
যে সকল ঐতিহাসিকরা হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে খেয়ালের জনক, তবলা ও সেতারের আবিষ্কারক বলেছে, তারা সুনির্দিষ্টভাবে ইতিহাসের সত্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। তারা ইতিহাস রচনার সময় ‘বলা হয়ে থাকে’, ‘ধারণা করা হয়’ এভাবে বাক্য ব্যবহার করেছে। যে বিষয়গুলো ঐতিহাসিকদের মধ্যে ধারণার জন্ম দিয়েছে যে তিনি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ‘খেয়াল’ গাইতেন, তবলা আবিষ্কার করেছেন- সে বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রথম কারণ : ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল ‘ধ্রুপদ’ জাতীয় সঙ্গীতের। মন্দিরে হিন্দু ধর্মীয় সঙ্গীত হিসেবে ধ্রুপদ পরিবেশন করা হতো। কিন্তু ধারণা করা হয় হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময় থেকে শুরু হয় খেয়াল গানের। আর খেয়াল গানের ঢং হচ্ছে পারস্যের সঙ্গীতের মতো। আর হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাবা যেহেতু পারস্য থেকে এসেছেন, তাই ধরে নেয়া হয় তিনিই পারস্য সঙ্গীতের অনুকরণে খেয়ালের প্রবর্তন করেন। নাঊযুবিল্লাহ!

দ্বিতীয় কারণ : ‘খেয়াল-এর মধ্যে থাকে- দুই প্রেমাস্পদের মধ্যে কথোপকথন। সেখানে কথায় একটি আবেগকে ফুটিয়ে তোলা হয়।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত সকল সাহিত্যকর্মকে চারভাগে ভাগ করা হয়েছে তার মধ্যে একটি ভাগ হচ্ছে ‘রোমান্টিক’ রচনা। আর এ বিষয়টির গূঢ় অর্থ না বোঝার কারণে ঐতিহাসিকরা বিভ্রান্ত হয়েছে।

তৃতীয় কারণ : সে সময়কার রাজা-বাদশাহদের দরবারে কাব্য ও সঙ্গীতচর্চা আয়োজন ছিল। হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবদ্দশায় মোট ৭ জন বাদশাহর রাজকবি হিসেবে মনোনীত ছিলেন। ফলে ঐতিহাসিকরা ধরে নিয়েছে তিনি রাজ দরবারে সঙ্গীত লিখে, সুর করে বাদ্যযন্ত্রসহ পাঠ করতেন। নাঊযুবিল্লাহ!
চতুর্থ কারণ : বাজারে অনেক ক্বাছীদা, কাওয়ালী পাওয়া যায়, যার রচয়িতা হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং সেগুলো বাদ্যযন্ত্রসহ পাঠ করা হয়। এ বিষয়টিতেও বিভ্রান্ত হয়েছে ঐতিহাসিকরা।

পঞ্চম কারণ : হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার অনুমতিক্রমে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সামা পরিবেশনে একটি নিজস্ব পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন আর তাতেই ঐতিহাসিকরা বিভ্রান্ত হয়েছে যে, তিনি হয়তো খেয়াল গানের জনক ছিলেন। নাঊযুবিল্লাহ!

ষষ্ঠ কারণ : মুসলমানগণকে আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য এবং উনাদের শানে অপবাদ দেবার লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে মুসলমান বিদ্বেষী ঐতিহাসিকরা ইতিহাস বিকৃতি করেছে। 
ভারতবর্ষে ‘ধ্রুপদ’ জাতীয় সঙ্গীতের প্রচলন ছিল। মন্দিরে হিন্দুদের ধর্মীয় সঙ্গীত হিসেবে ‘ধ্রুপদ’ গাওয়া হতো। পরবর্তীতে ভারতে ‘খেয়াল’-এর প্রচলন ঘটে। খেয়ালের ঢং যেহেতু পারস্য অঞ্চলসমূহের সঙ্গীতের মতো, তাই ধারণা করা হয়- ‘খেয়াল’-এর জনক হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি। নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই, হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা তুরস্ক-বলখ হয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশে আসেন। তিনি কখনো সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন না, ছিলেন উনার এলাকার আমীর। আর হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ভারতেই জন্মগ্রহণ করেন এবং উনার মাতা বিবি দৌলতনাজ ছিলেন দিল্লীর অধিবাসী।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৮ বছর বয়স মুবারক থেকে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক ছোহবত পান। তাহলে যিনি পারস্যের সংস্কৃতির পরিচয় পাননি, যিনি ৬ বছর বয়স মুবারকে বাবা হারিয়ে মাত্র ৮ বছর মুবারক থেকে মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত পান, তিনি কী করে পারস্য সঙ্গীতের অনুকরণে ‘খেয়াল’-এর জন্ম দিতে পারেন? কী করে তা ধরে নেয়া যায়?
সাধারণত একজন সন্তান মায়ের ভাষা এবং সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকেন। যদি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সম্মানিতা মাতা পারস্যের অধিবাসী এবং সাংস্কৃতিক পরিম-লে বড় হওয়া মানুষ হতেন তবুও কিছু যুক্তি দেয়া যেতে পারতো। কিন্তু উনার মাতা ছিলেন দিল্লীর অধিবাসী এবং আল্লাহওয়ালী। সঙ্গীতের কোনো ছোঁয়া হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সুবহানাল্লাহ! 
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমগ্র জীবনের সাহিত্যকর্ম-
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সমগ্র জীবনের সাহিত্যকর্মকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়-
১. দিওয়ান রচনা : কবিতাসমগ্র যেমন তুহফাত-উস-সিগার, ওয়াসতুল হায়াত ইত্যাদি।
২. ঐতিহাসিক রচনা : যেমন মিফতা-উল-ফাতহ। বাদশাহ জালালুদ্দিন খিলজীর চারটি বিজয় অভিযানের উপর রচিত।
৩. গদ্য রচনা : আফজালুল ফায়িয হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি উনার কর্তৃক দেয়া তালিমের উপর রচিত।
৪. রোমান্টিক রচনা : হাশত-বেহেশত, শিরিন ওয়া খসরু, মজনু ওয়া লাইলী ইত্যাদি।
উনার রচিত কিতাব সংখ্যা অনেক। এখানে উদাহরণের জন্য কয়েকটি নাম প্রকাশ করা হলো। তবে আমাদের আলোচ্য বিষয় উনার রোমান্টিক রচনাবলী নিয়ে। ঐতিাহিসকরা উনার রোমান্টিক রচনাবলীগুলোকে দুনিয়াবী প্রেমপ্রীতির বিষয় ধারণা করে, বস্তুগত প্রেম-ভালোবাসার গান, ‘খেয়াল’ রচনা মনে করে উনাকে ‘খেয়াল’-এর জনক, বাদ্যের আবিষ্কারক ইত্যাদি ভাবতে সাহস দেখিয়েছে। ঐতিহাসিকদের বিভ্রান্ত হবার একটা মূল কারণ এখানে তুলে ধরা প্রয়োজন মনে করছি।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রোমান্টিক রচনাসমগ্রকে বলা হয় ‘খামছা-এ-নিযামী’ এবং রচনাকাল ১২৯৮। সেখানে তিনি পাঁচটি অধ্যায় রচনা করেন।
১. হাশত- বেহেশত
২. মাতলাউল আনওয়ার
৩. শিরিন ওয়া খসরু
৪. মাজনু ওয়া লাইলী
৫. আয়না-ই সিকান্দারী।
কিন্তু উনার আরো অনেক আগে ১১৪১-১২০৯ ঈসায়ী সালে বৃহত্তম পারস্যের আজারবাইজান অঞ্চলের কবি নিযাম গানজাবী (নিযামুদ্দীন আবু মুহাম্মদ ইলিয়াস বিন ইউসুফ বিন যাক্কি) তিনি প্রথম ‘খামছা-এ-নিযামী’ রচনা করেন।
তার রচনাসমগ্রের মধ্যে ছিল
১. মাখযান আল আসরার
২. খসরু ও শিরিন
৩. লাইলী ও মজনু
৪. ইস্কান্দার নামা
৫. হাপ্ত পেকার।
কিন্তু নিযামী গানজাবী কোনো দরবারের কবি ছিল না এবং তার এই রচনা ছিল মূলত বস্তুগত প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে। আর এখানে নিযামী হলো লেখক নিজেই। পরবর্তীতে পারস্যের এবং অন্যান্য অঞ্চলের অনেক কবিগণ নিযামী গানজাবীর এই ধারা অনুযায়ী পাঁচ অধ্যায়ের রচনাসমগ্র তৈরি করেছিলেন। হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এরূপ রচনা করেন।
তবে তিনি উনার কিতাবের নামকরণ করেছিলেন উনার শায়েখ হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নাম মুবারক-এ এবং উনার রচনা বিষয় ছিল মহান আল্লাহ পাক উনার ইশক, শায়েখের নিছবত সেসব বিষয়ে। ঐতিহাসিকগণ উক্ত ‘খামছা-এ নিযামী’ নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকেও সস্তা রোমান্টিক গানের, ‘খেয়াল’-এর রচয়িতা হিসেবে অপব্যাখ্যা করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! 
আবার অনেক মুসলিম ছূফী কবি-সাহিত্যিক উনারা মুরীদ এবং শায়েখের নিছবতের বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে বান্দা এবং মহান আল্লাহ পাক উনার মধ্যে গভীর ইশকের বিষয়টি বোঝাতে গিয়ে ‘সুরা-সাকী’ এবং নানা রকম কল্পিত বিষয় উপমা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার রচিত ‘মজনু ওয়া লাইলী’, ‘শিরিন ওয়া খসরু’ ইশকের গভীরতার উপর রচিত। উনার রচিত এই রোমান্টিক রচনাসমূহ থেকে তারা ধারণা করেছে তিনি ‘খেয়াল’-এর জনক। কেননা ‘খেয়াল’-এর মধ্যে থাকা দুই প্রেমাস্পদের কথোপকথন। দুই থেকে আট লাইনের মধ্যে থাকে ‘খেয়াল’-এর কথাগুলো। কাল্পনিক একটি বিষয়কে ফুটিয়ে তোলা হয় ‘খেয়াল’-এর মাধ্যমে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যারা শায়েখ এবং মুরীদের বিষয়টি বোঝে না, মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মা’রিফাত মুহব্বতের বিষয়টি বোঝে না তারা হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইশকের উপর রচিত সাহিত্যকর্মকে রোমান্টিক কর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করবে এবং ‘খেয়াল’-এর জনক বলবে- এটাই স্বাভাবিক। কেননা যে যেমন সে আরেকজনকে তেমনি বিবেচনা করবে।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক জীবদ্দশায় দিল্লীতে তিনটি রাজবংশের শাসন পান। প্রথমত মামলুক (১২০৬-১২৯০) দ্বিতীয়ত খিলজী বংশ (১২৯০-১৩৩০), তৃতীয়ত তুঘলক বংশ (১৩২১-১৩৯৮)।
তিনি মামলুক বংশের শেষের দিকের সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের ভাতিজা এবং একটি প্রদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত গভর্নর মালিকে কাজুর দরবারের কবি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি গিয়াসুদ্দিন বলবনের ছেলে বুগরা খান বাংলার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পেলে তার দরবারের কবি হিসেবেও নিয়োজিত হন এবং বাংলা ছফর করেন। বলবনের দ্বিতীয় ছেলে সুলতান মাহমুদ তিনি মুলতানের দায়িত্ব পেলে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে মুলতান নিয়ে যান। এর পরেই আসে খিলজী বংশ এবং তিনি দিল্লীতেই থেকে যান।
খিলজী বংশের অনেক শাসকের শাসনামল পর্যন্ত তিনি দরবারের কবি হিসেবেই সম্মানিত ছিলেন। এরপরে আসে তুঘলক বংশ তুঘলক বংশের প্রথম সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক এবং দ্বিতীয় সুলতান মুহম্মদ বিন তুঘলক।
মুহম্মদ বিন তুঘলকের শাসনামলে মাহবুব-এ ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিছাল শরীফ গ্রহণ করেন এবং উনার বিছাল শরীফ উনার প্রায় ৬ মাস পর তিনিও বিছাল শরীফ লাভ করেন।
সুতরাং দেখা গেল যে, ক্ষমতার পট পরিবর্তনে নতুন রাজবংশ ক্ষমতায় এলেও তিনি দরবারের কবি হিসেবেই সম্মানিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন প্রদেশের গর্ভনরগণ উনাকে সভার কবি হিসেবে পেতে চাইতেন এবং সঙ্গে নিয়ে যেতেন। হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বেমেছাল যোগ্যতা, প্রতিভা, তাক্বওয়া, পরহেযগারী সবাইকে আকৃষ্ট করতো। তিনি একাধারে ফার্সী, হিন্দাভী এবং ব্রিজ ভাষায় (উত্তর প্রদেশে চালু এক প্রকার ভাষা) সাহিত্য রচনা করতেন। তিনি রাজ দরবারের কবি ছিলেন বলেই সঙ্গীত চর্চা করতেন, বাদ্য বাজাতেন, খেয়াল গেয়েছেন, রচনা করেছেন এসব বলা অবান্তর। রাজদরবারের কবি থাকাতে ঐতিহাসিকরা বিভ্রান্ত হয়েছে অথচ কোনো ইতিহাস প্রমাণ করে না তিনি সঙ্গীতের ধারে কাছেও ছিলেন। কিন্তু অসংখ্য মাসনাবী, কাছীদা রচনা করেছেন, ইতিহাস রচনা করেছেন, উনার শায়েখের নছীহত সঙ্কলন করেছেন এসবের প্রমাণ আজও বিদ্যমান। তিনি যে সুলতানদের তোয়াজ করে চলতেন না তার প্রমাণ পাওয়া যায় সুলতান জালালুদ্দিন খিলজীর ঘটনায়।
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একজন ছূফী-সাধক
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হওয়ার পরেও গান-বাজনা করেছেন, বাজনা বাজিয়েছেন- এ অজুহাত দিয়ে যে সকল তথাকথিত মুসলমানরা গান-বাজনা চর্চা করে যাচ্ছে, তাদের বিভ্রান্তির পেছনে দায়ী কিছু মুসলমান নামধারী ছূফী, সঙ্গীতশিল্পী, অনুবাদক এবং সাহিত্যিক। যেমন বাজারের সঙ্গীতশিল্পীরা নিজেরাই তাদের মতো করে সুর করে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখা অনেক কাছীদা বাদ্যযন্ত্রসহ গেয়েছে এবং এখনো গাইছে। অথচ এই সুর উনার দেয়া নয়।
আবার অনেক তথাকথিত ছূফী এবং সাহিত্যিক উনার অনেক লেখার মধ্যে নিজেদের মতো করে বাক্য সংযুক্ত করেছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য, ‘নামি দানাম চে মানজিল’ এই শিরোনামে একটি কাছীদা। বর্তমানে বাজারে পাওয়া এই কাছীদা শরীফ-এর মধ্যে অনেক নতুন বাক্য আছে, যা মূল কাছীদা শরীফ-এ নেই। 
এছাড়াও ‘জিহাল-এ-মিসকিন’ এই শিরোনামে লেখাটি তিনি ফার্সী এবং ব্রিজ ভাষার সমন্বয়ে লিখেছিলেন। একটি লাইন ফার্সীতে পরের লাইন ব্রিজ ভাষায়। অথচ বাজারে একই শিরোনামে, অনুকরণে এবং একটি ভাষায় লেখা পাওয়া যায়, যা লিখেছে অন্য এক লেখক। 
আবার ‘চাপ তিলক সাব চেনি রে মুঝে নায়না মিলাকে’ এই শিরোনামে লিখা হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার লিখিত একটি কাছীদা পড়লে মনে হয় যেন একজন প্রেমিক তার প্রেমাস্পদকে উদ্দেশ্য করে বলছে।
অথচ এই কাছীদার মধ্যে তিনি উনার শায়েখ উনার নাম যুক্ত করে বুঝিয়েছেন এটি হচ্ছে শায়েখ উনার প্রতি মুরীদের ইশক। কিন্তু সঙ্গীতশিল্পীরা তাদের দিলের চরম নাপাকির কারণে এই কাছীদা শরীফকে রোমান্টিক গানের মতো পরিবেশন করে থাকে। নাঊযুবিল্লাহ!
আর অনুবাদকদের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে শতগুণে। যেমন সামার অনুবাদে অনুবাদকগণ সামা শরীফকে গান হিসেবে উল্লেখ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! সামা শরীফ পরিবেশনের বিশেষ উপস্থাপনকে ‘রাগ’ পরিবেশন হিসেবে উল্লেখ করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! সামা শরীফ শুনে দাঁড়িয়ে ওজদ বা হাল প্রকাশকে নাচের সাথে তুলনা করেছে ইত্যাদি। নাঊযুবিল্লাহ! 
এ বিষয়গুলো আমাদের আবারো মনে করিয়ে দেয়- যে দেখে আর যে দেখে না, তা কখনো সমান হয় না।
মুজাদ্দিদগণ উনারা সুন্নত প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিদয়াত দূর করেন-
মুজাদ্দিদগণ উনারা সুন্নত প্রতিষ্ঠা ও বিদয়াত দূর করার পাশাপাশি উনাদের নিজ নিজ যুগে যদি নতুন কোনো বিষয় উপস্থিত হয়, যা পূর্বে ছিল না সেক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত পথে ইজতিহাদ করে তা প্রতিষ্ঠা করেন।
ভারতবর্ষে হিন্দুরা মন্দিরে ধর্মীয় সঙ্গীত হিসেবে ধ্রুপদ গাইতো। ধ্রুপদ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। সুলত্বানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময় থেকেই দলে দলে হিন্দুরা মুসলমান হতে থাকে। হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবার শরীফ-এও অসংখ্য বিধর্মী এসে ঈমান লাভ করেছিলো।
কিন্তু যেহেতু সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে গান-বাজনার কোনো সুযোগ নেই; কিন্তু সামা শরীফ বা কাছীদা শরীফ-এর সুযোগ ছিল; তাই সুন্নত উনার অনুসরণে উনারা সামা শরীফ শুনতেন। কিন্তু হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সামা শরীফ পরিবেশনের একটি নতুন পদ্ধতি উপহার দিয়েছিলেন, যা বাদ্যযন্ত্রহীন এবং রাগ-রাগিনী বিবর্জিত। মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেও ‘রুবাইয়া’ এবং ‘মাসনবী’ পাঠ করতেন। কিন্তু হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বিভিন্ন ভাষার সমন্বয়ে, বিভিন্ন অলঙ্কারে কাছীদা, কবিতা, মাসনবী রচনা করতেন। সূর দিয়ে পাঠ করার মধ্যেও নতুন বৈচিত্র্যতা এনেছিলেন। আর সেটাই উপলব্ধি না করে বিভ্রান্ত ঐতিহাসিকরা উনাকে ‘খেয়াল’-এর জনক বলেছে। উনাদের পক্ষে গান-বাজনা শোনা যে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়, তা একটি ঘটনা শুনলেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে। 
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নিজেই উনার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রাহাতুল মুহিব্বীন’-এ বর্ণনা করেন যে, উনার শায়েখ একদিন ইরশাদ করেন, “হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাসনা ছিলো শয়তানকে দেখবেন। এক রাত্রে শয়তানকে তিনি দেখতে পেয়ে ভীত হয়ে পড়লেন।
হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি শয়তানকে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন; তার মধ্যে একটি ছিলো, মহান আল্লাহ পাক উনার পথের পথিকদের উপর তোর কোনো কর্তৃত্ব চলে কিনা? উত্তরে ইবলিস বলেছিলো- যখন সামা শরীফ-এর মাহফিলে সে মহান আল্লাহ পাক উনার ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টিতে সামা শ্রবণ করে, তখন তার অন্তর অমনোযোগী হয়ে পড়ে, তখন আমি আমার কর্তৃত্ব চাপিয়ে পরাস্ত করি।” নাঊযুবিল্লাহ!
এ ঘটনা থেকে সহজেই বোঝা যায় উনারা শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার ইশকে নিমজ্জিত হয়েই সামা শরীফ শুনতেন। আর যেখানে সঙ্গীত এবং বাদ্যযন্ত্রের সুর অন্তরে নেফাকী সৃষ্টি করে, সেখানে কী করে উনারা সঙ্গীত চর্চা, বাদ্যচর্চা করতে পারেন? নাঊযুবিল্লাহ! শুধু কাফিররাই এ ধরনের অপবাদ ছড়াতে পারে।
শত শত বছর ভারতবর্ষ মুসলমান শাসকদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। হিন্দু কুচক্রীরা সবসময়ই ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে মুসলমানদের বিরুদ্ধে। মুসলমান শাসকদের হাত থেকে ক্ষমতা সরিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে, মুসলমানগণের উন্নত চরিত্রকে কলুষিত করার ক্ষেত্রে, মুসলমানগণের স্থাপত্য শিল্পে অবদান নষ্ট করার ক্ষেত্রে, সর্বোপরি ইসলামকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য অতীতে চলেছে এবং বর্তমানেও চলছে তাদের এই কূটকৌশল। মুসলমানগণের ইতিহাসকেও তারা বিকৃত করেছে পরিকল্পিতভাবে। আর এক্ষেত্রে রাজা-বাদশাহরা তো রয়েছেই, ভারতবর্ষে আসা ওলীআল্লাহগণ উনাদেরকে তারা সমালোচনার লক্ষ্যস্থলে পরিণত করেছে। নাউজুবিল্লাহ!
মুসলমানগণ যেন ছূফী-দরবেশ, ওলীআল্লাহগণ উনাদের কাছ থেকে দূরে থাকে- সে কারণে পরিকল্পিতভাবে মুনাফিকদের দ্বারা উনাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার সৃষ্টি করা হয়েছে। সুলত্বানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাহবুব-ই ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বাদ্যযন্ত্রসহ গান-বাজনা, কাওয়ালী শুনতেন- এসব কথা হচ্ছে ইতিহাসের চরম মিথ্যাচারিতা।
নামে মুসলমান কিন্তু হালাল-হারাম বাছ-বিচার করে না; যাদের আক্বীদা বিনষ্ট, বল্গাহীন চলাফেরা তাদের ব্যাপারে আমাদের এই আলোচনা নয়।
কিন্তু যারা মুসলমান হিসেবে দাবি করে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার উপর টিকে থাকতে চান কিন্তু বাদ্যযন্ত্রসহ সঙ্গীতকে হালাল মনে করেন এ কারণেই যে, পূর্বযুগের অনেক আউলিয়ায়ে কিরাম বাদ্যযন্ত্রসহ সামা শরীফ শুনতেন বলে বিশ্বাস করেন, তাদের জন্যই এই আলোচনা।
পূর্বেই আলোচিত হয়েছে, এ রকম বিশ্বাসীরা তাদের বিশ্বাসের উপাদান সংগ্রহ করেছে হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিশিষ্ট মুরীদ হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জীবন ইতিহাস থেকে। উনার প্রতি অপবাদ দেয়া হয় যে, তিনি তবলা, সেতার, খেয়াল-এর জনক এবং উনারা বাদ্যযন্ত্রসহ কাওয়ালী করতেন। নাঊযুবিল্লাহ!

প্রথমে আলোচনা করা হয়েছে একজন মুজাদ্দিদ উনার পরিচয় সম্পর্কে এবং উনাদের আগমনের তাৎপর্য কী? এরপর আলোচনা করা হয়েছে বাল্য বয়স থেকেই একজন মুজাদ্দিদ উনার নেক ছোহবত প্রাপ্ত মানুষ এবং যিনি উচ্চ তাক্বওয়া পরহেযগারীসম্পন্ন এবং যিনি উনার কিতাবেই সঙ্গীতের বিরুদ্ধে আলোচনা করেছেন- তিনি কখনো সঙ্গীত শ্রবণ করতে পারেন না, বাদ্যযন্ত্র বানাতে পারেন না। এরপর তুলে ধরা হয়েছে অনেকগুলো কারণ; ঐতিহাসিকরা যে কারণে বিভ্রান্ত হয়েছে, উনাদের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে। এ পর্যায়ে আলোচিত হবে প্রকৃতপক্ষে ‘খেয়াল’ এবং ‘তবলা’র উৎপত্তি কোন সময় থেকে। 
ইতিহাসের পাতায় হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি-
হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যে ‘খেয়াল’ সৃষ্টি করেননি তা ইতিহাস থেকেই সহজে প্রমাণ করা যায়।
একটি ইতিহাসে লেখা হয় ‘১৬ শতকে আমীর খসরু খেয়ালের রীতি বা ঢং চালু করেন এবং তারপর মুগল স¤্রাট মুহম্মদ শাহ রঙ্গীল (১৭১৯-১৭৪৮ ঈসায়ী)-এর দরবারের সঙ্গীত শিল্পী সদারং, আদারং এবং মানরং-এর দ্বারা ব্যাপক প্রচলন ঘটে।”
এই ইতিহাস থেকে দুটি বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে যে,
১. হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়কাল হচ্ছে ১২৫১-১৩২৫ ঈসায়ী (৬৪৮-৭২৫ হিজরী)। তাহলে ১৬ শতকে তিনি কিভাবে ‘খেয়াল’ আবিষ্কার করলেন?
২. যদি ১৬ শতকে আমীর খসরু ‘খেয়াল’ আবিষ্কার করে থাকে, তবে কী সে ভিন্ন কোনো আমীর খসরু?
অন্য একটি ইতিহাসে পাওয়া যায়, “১৭০০ সালের শুরু দিকে দিল্লীর নিয়ামত খাঁন ‘খেয়াল’ তৈরি করেন এবং ১৮ শতকে হাঁসু খান এবং হাদ্দু খান নামে গোয়ালিয়রের দুই ভাইয়ের মাধ্যমে এর প্রচার লাভ করে।”
এই ইতিহাস থেকে আবারো দেখা গেলো ‘খেয়াল’-এর জন্ম হয়েছে ১৬ শতক এবং ১৭ শতকের মধ্যে অর্থাৎ হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়কালে নয়।
আবার অন্য এক ইতিহাসে পাওয়া যায় “জৈনপুর-এর রাজা সুলতান হুসেইন শাহ শারকী ১৪৫২-১৪৮৯ ঈসায়ী সাল পর্যন্ত শাসন করেন এবং সে সময় নতুন ধরনের ‘খেয়াল’-এর সৃষ্টি হয় এবং তিনি কাওয়ালী চালু করেন। আমীর খসরু নামীয় একজন এসব চালু করেন।” 
এই ইতিহাসে থেকে যে সিদ্ধান্তগুলোতে উপনীত হওয়া যায় তা হচ্ছে-
১. এখানেও সময়কাল পাওয়া যাচ্ছে ১৫ শতক অর্থাৎ হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়কালের প্রায় ১২৭ বছর পর।
২. কিন্তু এই সময়ে আমীর খসরু নামীয় একজন ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে।
আবার অন্য এক ইতিহাসে পাওয়া যায় ১৮ শতকে ফকীর আমীর খসরু নামে একজন সঙ্গীত শিল্পী ছিলো যে স¤্রাট আকবরের নবরতেœর একজন মিয়া তানসেনের মেয়ের জামাই নহবত খানের বংশধর।
উল্লেখিত ইতিহাস থেকে প্রকৃতপক্ষে কে ‘খেয়াল’ তৈরি করেছেন এবং কারা প্রচার করেছেন তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না গেলেও একটি বিষয়ে কোনো মতপাথর্ক্য নেই যে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়কালে অর্থাৎ ১২৫১ থেকে ১৩২৫ সালে কোনো ‘খেয়াল’-এর সৃষ্টি হয়নি। বরং ইতিহাস থেকে জানা যায়, তিনি সামা শরীফ পরিবেশনের একটি রীতি চালু করেছিলেন। কিন্তু ‘সামা’ শরীফ আর ‘খেয়াল’ এক বিষয় নয়। সামা হালাল আর খেয়াল হারাম। সামা শরীফ-এ থাকে মহান আল্লাহ পাক উনার ইশকের বিষয় আর খেয়ালে থাকে বস্তুগত প্রেম-ভালোবাসার বিষয়। আমরা বলবো পরিকল্পিতভাবে এই ইতিহাস বিকৃতি ঘটানো হয়েছে, যাতে একজন মহান ওলীআল্লাহ উনার সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়। নাঊযুবিল্লাহ!
ইতিহাস থেকেই প্রমাণ করা হবে যে, হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সিতার এবং তবলা যন্ত্রের আবিষ্কারক নন। এসব বাদ্যযন্ত্রের আবিষ্কারক বলার অর্থ হচ্ছে উনার প্রতি মিথ্যারোপ করা।
প্রাচীন চিত্র এবং তথ্য প্রমাণ করে যে, ইসলাম আসার পূর্ব থেকেই ভারতবর্ষে ধর্মীয় উৎসবগুলোতে সিতারের মতো বাদ্যযন্ত্র ব্যবহৃত হতো। প্রকৃতপক্ষে ভারতে বীণা এবং সেনী- রবাব নামক দুটি তারের সুরের যন্ত্র এবং পাখোয়াজ নামক একটি বাদ্যযন্ত্র (ঢোলক জাতীয়) ব্যবহৃত হতো। পরবর্তীতে ঈসায়ী ১৮-১৯ শতকে বীণা যন্ত্র থেকে সেতার যন্ত্র, সেনী রবাব থেকে সরোদ যন্ত্র এবং পাখোরাজ থেকে তবলার আধুনিকায়ন ঘটে।
ভারতবর্ষে মুগল স¤্রাট আকবরের রাজ দরবারে নাচ-গানের প্রচলন ছিলো। নাঊযুবিল্লাহ! তার নবরতেœর একজন ছিলো মিয়া তানসেন। মিয়া তানসেনের সময়কাল হচ্ছে ১৫২০ থেকে ১৫৮৯ (৯২৬-৯৯৭ হিজরী) মিয়া তানসেন যে নিজে স¤্রাট আকবরের ফতেহপুর সিক্রী রাজ দরবারে বীণা, সেনী-রবাব এবং পাখোয়াজ ব্যবহার করতো, তা ইতিহাস থেকেই প্রমাণিত। যদি তানসেনের সময়কাল পর্যন্ত বীণা এবং পাখোয়াজের মতো যন্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকে, তবে তারও দুইশত বছর আগে কি করে হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সিতার এবং তবলা আবিষ্কার করতে পারেন?
এছাড়াও মুগল স¤্রাট আকবরের রাজ দরবারের ইতিহাস রচয়িতা আবুল ফাজিলের গ্রন্থে তবলা নামক যন্ত্রের ব্যবহারের কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। প্রকৃত ইতিহাস হচ্ছে- সিতার এবং তবলার জন্ম হয় ঈসায়ী ১৮ শতকের দিকে এবং সেই সময় আমীর খসরু নামক একজন সঙ্গীত শিল্পীর উপস্থিতির কথা ইতিহাসে পাওয়া যায়।
সুতরাং এ যাবৎ ইতিহাসের নিরীখে প্রমাণিত হলো- হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন অত্যন্ত উচ্চস্তরের একজন ওলীআল্লাহ।
তিনি কখনো সঙ্গীত চর্চা, সঙ্গীত শ্রবণ, সঙ্গীতের বাদ্যযন্ত্র বানানো এসবের ধারে কাছেও ছিলেন না। উনাকে ‘খেয়াল’-এর জনক এবং সিতার ও তবলার আবিষ্কারক বলার অর্থ হচ্ছে উনার প্রতি পরিকল্পিতভাবে মিথ্যারোপ করা।
তবে তিনি অত্যন্ত উচ্চমানের এবং প্রতিভাধর কবি ছিলেন, তিনি অসংখ্য ক্বাছীদা রচনা করেছেন এবং সুন্নত উনার অনুসরণে সামা শরীফ পাঠ করতেন, শুনতেন। ফলে যে সকল তথাকথিত ছূফী এবং মুসলমানরা ‘চিশতিয়া খান্দানের বুযূর্গগণ গান-বাজনা করতেন’ এই অজুহাতে সঙ্গীতকে জায়িয বলার অপচেষ্টা করে, তারা আসলে ধোঁকার মধ্যে নিমজ্জিত। তাদের এই কুফরী আক্বীদার কারণে জাহান্নামে নিক্ষেপ হওয়া ছাড়া আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না। এ সকল বাতিল আক্বীদার লোকগুলো সঙ্গীতকে জায়িয বলার আরো উপকরণ সংগ্রহ করে স¤্রাট আকবরের নবরতেœর এক রতœ মিয়া তানসেনের কাছ থেকে। সঙ্গীত শিল্পী মিয়া তানসেন এবং ছূফী মিয়া তানসেনের বিষয়ে এ পর্যায়ে আলোচিত হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রথম জীবনের সঙ্গীত শিল্পী মিয়া তানসেন পরবর্তীকালে ছূফী-
ইতিহাসে মিয়া তানসেন বিখ্যাত একজন সঙ্গীতজ্ঞ এবং মোঘল স¤্রাট আকবরের নবরতেœর একজন রতœ হিসেবে। মিয়া তানসেনের জন্ম গোয়ালিয়রের একটি গ্রামের হিন্দু ব্রাহ্মণ পরিবারে ১৪৯৩ সালে। তার বাবার নাম ছিল মাকরান্দ পান্ডে। মাকরান্দ পান্ডে ছিল একজন কবি এবং সঙ্গীত শিল্পী। যেহেতু হিন্দুধর্মের সঙ্গে সঙ্গীতের একটি যোগ রয়েছে, ফলে তানসেনও তার বাবার কাছে সঙ্গীত শিখেছিলো।
তানসেনের বাবা ছিল মন্দিরের গুরু এবং মন্দিরে সঙ্গীত পরিবেশন করতো। জীবনের দীর্ঘ সময় মিয়া তানসেন সঙ্গীত চর্চা করে এবং অনেক রাগ-রাগিনীও তৈরি করে। কিন্তু পরিণত একটি বয়সে সে সেই সময়কার একজন বিখ্যাত ওলীআল্লাহ হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ গাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবতে আসার পর ইসলাম কবুল করেন। হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ গাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ছিলেন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক বংশধর অর্থাৎ আওলাদে রসূল। মিয়া তানসেন ইন্তিকাল করেন ১৫৮৯ ঈসায়ী সালে। কিন্তু তিনিও শায়িত আছেন উনার প্রাণপ্রিয় শায়েখ হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ গাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পাশে। ইতিহাস তা সাক্ষী। মিয়া তানসেন উনার শায়েখের সংস্পর্শে আসার পর রাগ-রাগিনী করেছেন তার কোনো প্রমাণ কোনো ঐতিহাসিক দিতে পারবে না।
কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায় তার এই সম্মানিত ইসলাম কবুলের বিষয়টিকে কখনো ভালো চোখে দেখেনি। ফলে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কবুলের পর উনার সঙ্গীত বর্জনের বিষয়টি আলোচনায় না এনে আকবরের নবরতেœর একজন থাকা অবস্থায় সৃষ্ট রাগ-রাগিনীগুলো প্রচার-প্রসারেই ব্যস্ত রয়েছে। উনার সঙ্গীত প্রতিভাকে নিয়ে আলোচনা করেছে বিস্তর। আর এই আলোচনা করতে গিয়ে মিথ্যা গল্পের আশ্রয়ও নিয়েছে তারা।
যেমন মিয়া তানসেনের ইতিহাস পড়লেই দেখা যায় তাতে লেখা রয়েছে যে, তিনি রাগ পরিবেশন করে বৃষ্টি ঝরাতেন এবং আগুন জ্বালাতেন। নাঊযুবিল্লাহ! এসব কল্পকাহিনী বানিয়ে হিন্দুরা মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে।
মূলত মেঘমালার রাগ পরিবেশনে একটা আবহ সৃষ্টি হয় যেন বৃষ্টি ঝরছে আবার বৃন্দাবনি সারং রাগ পরিবেশনে মনে হয় যেন বাগানে ফুল ফুটছে এ রকম আবহ সৃষ্টি করা যায় সুরের মাধ্যমে। কিন্তু বাস্তবে রাগ পরিবেশনে বৃষ্টি ঝরানো, ফুল ফুটানো এগুলো নিছক কল্পকাহিনী। অথচ মিয়া তানসেনের জীবন ইতিহাসে আজো এসব মিথ্যা ইতিহাস চলে আসছে। এসব মিথ্যা ইতিহাস প্রচার করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে এবং এসবের জন্য দায়ী হিন্দু সম্প্রদায় এবং নফছের গোলামীতে মশগুল তথাকথিত কতিপয় মুসলমানরা। 
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম এসেছে সঙ্গীত এবং বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করতে এটাই সঠিক এবং মিয়া তানসেনও তার জীবনের শেষে তা প্রমাণ করেছেন। সুতরাং মিয়া তানসেন মুসলমান হয়ে একজন ওলীআল্লাহ উনার মুরীদ হয়েও সঙ্গীত চর্চা করেছেন বলে যারা দলীল দেয় তারা মূলত মিথ্যার আশ্রয় নেয়। এসব মিথ্যা দলীল দিয়ে বাদ্যযন্ত্রসহ সঙ্গীতকে জায়িয করার কোনো সুযোগ নেই। অবশ্য মিয়া তানসেন তা করে থাকলেও তা দলীল হতো না। দলীল হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র সুন্নাহ শরীফ। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে সামা শরীফ-এর মাহফিল করা, কাছীদা পাঠ করা, ক্বাছীদা লেখা, কাছীদা ছন্দাকারে পাঠ করা ইত্যাদি সুন্নত আর গান-বাজনা করা কাট্টা হারাম। কোনো ওলীআল্লাহ কখনো বাদ্য বাজিয়ে রাগ গেয়ে কখনো সামা শরীফ-এর মাহফিল করেননি।
শেষ কথা-
ইতোমধ্যেই আলোচিত হয়েছে, হিজরী ৭ম শতকের মুজাদ্দিদ, সুলত্বানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হিজরী ৮ম শতকের মুজাদ্দিদ, মাহবুব-এ ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উনাদের সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত কোনো মুরীদ বা এই সিলসিলার হক্বপন্থী কোনো আউলিয়ায়ে কিরাম কখনো বাদ্যযন্ত্রসহ সামা শরীফ শোনেননি, কাওয়ালী করেননি। আমরা এও আলোচনা করেছি হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি খেয়ালের জনক নন, তবলা এবং সিতারের উদ্ভাবকও নন। এছাড়াও সঙ্গীত শিল্পী মিয়া তানসেন তিনিও মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী হযরত সাইয়্যিদ মুহম্মদ গাউস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাতে বাইয়াত হওয়ার পর সঙ্গীত থেকে দূরে সরে ছিলেন। সুতরাং সকল আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা সামা শরীফ-এর অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে, ক্বাছীদা শরীফ শোনার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণভাবে সুন্নত উনার অনুসরণ করতেন এবং শরীয়তে নিষিদ্ধ হারাম গান-বাজনা থেকে দূরে থাকতেন। পূর্ববর্তী মুজাদ্দিদ এবং আউলিয়ায়ে কিরামগণের এই বিষয়টি বোঝার জন্য হিজরী ১৪ শতকের মুজাদ্দিদ হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহিল মারুফ মুহম্মদ আবু বকর ছিদ্দীক্বী ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি মুবারক ঘটনা তুলে ধরা হলো।
তিনি একবার সুলত্বানুল হিন্দ হযরত খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাযার শরীফ যিয়ারতে যান। মাযার শরীফ-এ অজ্ঞ মুসলমানদের সিজদা, বুছা দেখে, মাযার শরীফ-এর বাইরে গান-বাদ্য, কাওয়ালী-করতালী, নৃত্যগীত দেখে এসবের প্রতিকারার্থে তুমুল আন্দোলন অবশেষে তর্ক জিহাদ ঘোষণা করলেন। তিনি প্রবলভাবে ওয়াজ-নছীহত করলেন এবং বিদয়াত দমনের ইশতিহারসমূহ (যা তিনি কলিকাতা থেকে ছাপিয়ে নিয়ে এসেছিলেন) বিলিয়ে দিলেন। আলিমগণকে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ ও তাছাউফের দলীল দিলে হক্ব তালাশীগণ সমর্থন করলেন। শুধু অর্থলোভী বাতিল লোকগুলো উগ্রমূর্তি ধারণ করেছিলো। তিনি সমন্বরে সকলকে এ কথাই বলেছিলেন বাংলা-আসামের বহু মুসলমান এখানে এসে এই হারাম বিষয়গুলোকে জায়িয মনে করে গুমরাহ হয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে হিদায়েত করার জন্যই আমার এ স্থানে আগমন। (পীর ক্বিবলার জীবন চরিত্র- আব্দুস সাত্তার)
অর্থাৎ সমস্ত মুজাদ্দিদ উনারা গান-বাদ্য ধ্বংস করার জন্যই এসেছেন এবং উনাদের অনেকেই পবিত্র সুন্নত উনার অনুসরণে সামা শরীফ উনার প্রচলন করার কোশেশ করেছেন।
পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে গান-বাজনার শরয়ী ফায়ছালা-
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে গান-বাজনা করা হারাম ও কবীরা গুণাহের অন্তর্ভূক্ত। তা যে কোন গানই হোক না কেন। যেমন- নবী তত্ত্ব, মুর্শীদি, জারী, কাওয়ালী, পল্লীগীতি, ভাওয়ালী, ভক্তিমূলক ইত্যাদি যে কোন প্রকার গানেই হোক না কেন। তবে বাজনা বা বাদ্য-যন্ত্র ব্যতীত হাম্দ শরীফ, না’ত শরীফ, ক্বাছীদা শরীফ ইত্যাদি পাঠ করা ও শোনা জায়িয রয়েছে। তাই কিতাবে উল্লেখ আছে, ইল্ম দু’প্রকার। (১) “ইল্মে আরূদ্বী” অর্থাৎ ছন্দ প্রকরন যেমন- “বালাগাল উলা বিকামালিহী ......... ও মীলাদ শরীফ উনার মধ্যে পাঠকৃত ক্বাছীদাসমূহ, যা গানের সূরে পাঠ করা হয় না। (২) “ইল্মে মুসীক্বী” অর্থাৎ রাগ-রাগীনী বা গানের সূর।
কাজেই বাদ্য-যন্ত্র বা বাজনাতো সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণই নাজায়িয। সাথে সাথে বাদ্যবিহীন ইল্মে মুসীক্বীও নাজায়িয। মূলতঃ পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের অকাট্য ও কেৎয়ী দলীল দ্বারা গান-বাজনা সুস্পষ্টভাবে হারাম সাব্যস্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার অসংখ্য স্থানে গান-বাজনা করতে ও শুনতে নিষেধ করেছেন। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَـهْوَ الْـحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَـهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ.
অর্থ : “লোকদের মধ্যে কিছু এরূপ আছে যে,لـهو الـحديث  “লাহওয়াল হাদীছ” বা সঙ্গীত বা গান-বাজনা করে, এ কারণে যে, (লোকদেরকে) বিনা ইলমে মহান আল্লাহ পাক উনার পথ হতে সরিয়ে দেয় এবং তা হাসি-ঠাট্টারূপে ব্যবহার করে। তাদের জন্য রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।” (পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ‘লাহওয়াল হাদীছ’ অবলম্বন করে, সে দোজখের কঠিন শাস্তি প্রাপ্ত হবে, কাজেই তা হারাম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে ‘লাহওয়াল হাদীছ’ কি? উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত ‘লাহওয়াল হাদীছ’ শব্দ মুবারক উনার ব্যাখ্যায় তফসীরে ইবনে কাছীর ৮ম খ-, ৩/৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
لـما ذكر تعالى حال السعداء و هم الذين يهتدون بكتاب الله وينتفعون بسماعه (الى) عطف بذكر حال الاشقياء الذين اعرضوا عن الانتفاع بسماع كلام الله و اقبلوا على استماع الـمزامير و الغناء بالالـحان و الات الطرب كما قال حضرت ابن مسعود رضى الله تعالى عنه فى قوله تعالى و من الناس من يشترى لـهو الـحديث ليضل عن سبيل الله قال هو و الله الغناء. روى حضرت ابن جرير رحـمة الله عليه عن حضرت ابى الصهباء البكرى رحـمة الله عليه انه سـمع  حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه و هو يسئل عن هذه الاية و من الناس من يشترى لـهو الـحديث ليضل عن سبيل الله فقال حضرت عبد الله بن مسعود رضى لله تعالى عنه الغناء و الله الذى لا اله الا هو يرددها ثلاث مرأت، وكذا قال حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه و حضرت جابر رضى الله تعالى عنه وحضرت عكرمة رحـمة الله عليه و حضرت سعيد بن جبير رحـمة الله عليه و حضرت مـجاهد رحـمة الله عليه و حضرت مكحول رحـمة الله عليه و حضرت عمرو بن شعيب رحـمة الله عليه و حضرت على بن بذيـمة رحـمة الله عليه و قال حضرت الـحسن البصرى رحـمة الله عليه نزلت هذه الاية فى الغناء والـمزامير. 

অর্থ : “যখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উক্ত সৌভাগ্যবান ব্যক্তি উনাদের আলোচনা করলেন যারা মহান আল্লাহ পাক উনার কিতাব দ্বারা পথ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন এবং তা শ্রবণে উপকৃত হন, তখন উক্ত হতভাগ্যদের আলোচনায় প্রবৃত্ত হলেন যারা মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কুরআন শরীফ শ্রবণ করার উপকারিতা হতে বিমুখ হয়েছে এবং বংশীধ্বনীসমূহ, কন্ঠস্বর ও সঙ্গীতযন্ত্রসমূহ কর্তৃক অনুষ্ঠিত সঙ্গীত শ্রবণ করতে অগ্রসর হয়েছে, যেরূপ হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন- و من الناس من يشترى لـهو الـحديث ليضل عن سبيل الله এ পবিত্র আয়াত শরীফ সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ, তা (لـهو الـحديث) সঙ্গীত বা গান-বাজনা।
হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত আবুছ ছহাবাইল বিকরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে و من الناس من يشترى لـهو الـحديث ليضل عن سبيل الله এ পবিত্র আয়াত শরীফ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত অন্য মা’বুদ বা উপাস্য নেই। উনার শপথ করে বলছি, (لـهو الـحديث) ‘লাহওয়াল হাদীছ’ শব্দ মুবারক উনার অর্থ হচ্ছে সঙ্গীত বা গান-বাজনা। তিনি তিনবার এরূপ বলেছেন।
অনুরূপ হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত সাইদ ইবনে যুবাইর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মাকহূল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আলী ইবনে বুযাইমা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা لـهو الـحديث)) ‘লাহওয়াল হাদীছ’ শব্দ মুবারক উনার অর্থ সঙ্গীত বা গান-বাজনা বলেছেন। হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, ‘উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানা সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রসমূহ সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে।”
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হল যে, পবিত্র সূরা লুক্বমান শরীফ উনার ৬নং পবিত্র আয়াত শরীফখানা সঙ্গীত ও বাদ্যযন্ত্রসমূহ নিষিদ্ধ হওয়ার সম্বন্ধে নাযিল হয়েছে। তাই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও বহু তাবেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা لـهو الـحديث শব্দ মুবারক উনার অর্থ সঙ্গীত বা গান-বাজনা বলে উল্লেখ করেছেন।
গান-বাজনা হারাম হওয়া সম্পর্কিত ২য় পবিত্র আয়াত শরীফ হচ্ছে পবিত্র সূরা নজম শরীফ উনার ৫৯, ৬০ ও ৬১নং পবিত্র আয়াত শরীফ, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
أَفَمِنْ هَذَا الْـحَدِيثِ تَعْجَبُونَ- وَتَضْحَكُونَ وَلَا تَبْكُونَ- وَأَنتُمْ سَامِدُونَ.
অর্থ : “তোমরা কি এ কথার (পবিত্র কুরআন শরীফ উনার) উপর অবাক হচ্ছো ও হাসি-তামাশা করছো এবং ক্রন্দন করছো না, অথচ তোমরা সঙ্গীত বা গান-বাজনা করছো?”
এ পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ নাযিল হওয়ার কারণ সম্পর্কে তাফসীরে ইবনে জারীর, ২৭ খ-, ৪৩/৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে-
عن حضرت قتادة رحـمة الله عليه عن حضرت عكرمة رحـمة الله عليه عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قوله سامدون قال هو الغناء كانوا اذا سـمعوا القران بغنوا و لعبوا وهى لغة اهل اليمن.
অর্থ : “হযরত কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত ইকরামা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে, তিনি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে রেওয়ায়েত করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম  سامدون‘সামিদুন’ (সামুদ ধাতু হতে উৎপন্ন হয়েছে)। এ শব্দ মুবারক উনার অর্থ সঙ্গীত বা গান-বাজনা, যখন কাফিরেরা পবিত্র কুরআন শরীফ শ্রবণ করত, সঙ্গীত বা গান-বাজনা করত ও ক্রীড়া কৌতুকে লিপ্ত হত, এটা ইয়ামেনবাসীদের ভাষা।”
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে দুররে মানছুর, ৬ষ্ট খ-, ১৩১/১৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
اخرج حضرت عبد الرزاق و حضرت الفريابى و حضرت ابو عبيد و حضرت عبد بن حـميد و حضرت ابن ابى الدنيا و حضرت البزاز و حضرت ابن جرير و حضرت ابن الـمنذر و حضرت ابن ابى حاتـم و حضرت البيهقى رحـمة الله عليهم عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه فى قوله وانتم سامدون قال الغناء باليمانية كانوا اذا سـمعوا القران تغنوا و لعبوا. 
অর্থ : “হযরত আব্দুর রজ্জাক’ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ফারইয়াবি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আবূ উবাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আব্দ্ ইবনে হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আবিদ্দুনইয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বাজ্জাজ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনুল মুনযির রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইবনে আবী হাতেম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত বায়হাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম وَأَنتُمْ سَامِدُونَ উনার (ব্যাখ্যায়) হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে রেওয়ায়েত করেন, তিনি বলেন, ইয়ামেনবাসীদের ভাষায় (সামুদ শব্দের) অর্থ সঙ্গীত। যখন কাফিরেরা পবিত্র কুরআন শরীফ শ্রবণ করতো, সঙ্গীত ও ক্রীড়া-কৌতুক করতো।” নাঊযুবিল্লাহ!
অতএব, এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, সঙ্গীত বা গান-বাজনা হচ্ছে কাফিরদের খাছ আমল। যা সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।
গান-বাজনা হারাম হওয়া সম্পর্কে ৩য় পবিত্র আয়াত শরীফ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ.
অর্থ : “এবং (হে ইবলিস) তুই তাদের মধ্য হতে যাকে পারিস নিজের শব্দ দ্বারা পদস্খলিত কর।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৪)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে জারীর-এর ১৫/৭৬ পৃষ্ঠায় আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন-
عن حضرت مـجاهد رحـمة الله عليه قوله واستفزز من استطعت منهم بصوتك قال باللهو و الغناء عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه واستفزز من استطعت منهم بصوتك قال صوته كل داع دعا الى معصية الله. و اولى الاقوال فى ذالك بالصحة. فكل صوت كان دعاء اليه والى عمله وطاعته وخلافا للدعاء الى طاعة الله فهو داخل فى معنى صوته.
অর্থ : “হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ সম্বন্ধে বলেন, “শয়তানের শব্দ” অর্থ হচ্ছে ক্রীড়া ও সঙ্গীত বা গান-বাজনা। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, শয়তানের শব্দের অর্থ যে কোন আহ্বানকারী মহান আল্লাহ পাক উনার বিরুদ্ধাচরণের দিকে আহ্বান করে। এ মতগুলোর মধ্যে সমধিক ছহীহ এই যে, যে কোন শব্দে শয়তানের দিকে, এর কার্য্যরে ও আদেশ পালনের দিকে আহ্বান করা হয় এবং মহান আল্লাহ পাক উনার দিকে আহ্বানের বিপরীত হয়, তা শয়তানের শব্দের অন্তর্র্ভুক্ত হবে। এতে বুঝা যায় যে, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ব্যাপক অর্থ গ্রহণ করেছেন, অর্থাৎ সঙ্গীতও এর অন্তর্গত। হযরত ইবনে জারীর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই ব্যাপক অর্থ সমর্থন করেছেন।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার উপরোক্ত তিনখানা পবিত্র আয়াত শরীফ ও উনাদের ব্যাখ্যামূলক আলোচনা দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, সঙ্গীত বা গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি করা ও শোনা সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরা গুনাহ। গান-বাজনা ও বাদ্য-যন্ত্র হারাম হওয়া সম্পর্কে অসংখ্য পবিত্র হাদীছ শরীফও বর্ণিত রয়েছে, যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عمر رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِسْتِمَاعُ الْـمَلاَهِىْ مَعْصِيَةُ وَّالْـجُلُوْسُ عَلَيْهَا فِسْقٌ وَّالتَّلَذُّذُ بِـهَا مِنَ الْكُفْرِ
অর্থ : “হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, গান শোনা গুনাহের কাজ, গানের মজলিসে বসা ফাসিকী এবং গানের স্বাদ গ্রহণ করা কুফরী।” (বাহরুর রায়িক, মাবসূত)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَةْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلْغِنَاءُ يُنْبِتُ النِّـفَاقَ فِى الْقَلْبِ كَمَا يُنْبِتُ الْـمَاءُ الزَّرْعَ 
অর্থ : “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পানি যেরূপ যমীনে ঘাস উৎপন্ন করে গান-বাজনা তদ্রƒপ অন্তরে মুনাফিকী পয়দা করে।” (বায়হাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান শরীফ)
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ মুবারক করেন-
عَنْ حَضْرَتْ مجاهد رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  بُعِثْتُ لِكَسْرِ الْـمَزَامِيْرِ وَالْاَصْنَامِ
অর্থ : “হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি বাদ্য-যন্ত্র ও মুর্তি-ছবি ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান)
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে- 
عن حضرت نافع رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قال كنت مع حَضْرَتْ ابن عمر رضى الله تعالى عنه فى طريق فسمع مزمارا فوضع اصبعيه فى اذنيه وناعن الطريق الى الـجانب الاخر ثـم قال لى بعد ان بعد يا نافع رضى الله تعالى عنه هل تسمع شيئا قلت لا فرفع اصبعيه من اذنيه قال كنت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم فسمع صوت يراع فصنع مثل ما صنعت قال نافع رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ و كنت اذ ذاك صغيرا
অর্থ : হযরত না’ফে রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা কোন এক পথে আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার সাথে ছিলাম। এ সময় তিনি বাঁশীর সুর শুনতে পেলেন। তখনই তিনি নিজের দু অঙ্গুলী মুবারক দু কান মুবারক উনার মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দিলেন এবং সে রাস্তা হতে অপর রাস্তা দিয়ে সরে গেলেন। বহুদূর যাওয়ার পর আমাকে বললেন, হে নাফে’ রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু! এখন কি আপনি কোন কিছু শুনতে পান? আমি বললাম, না। এবার তিনি উভয় কান মুবারক হতে অঙ্গুলী মুবারক সরিয়ে ফেললেন।
অতঃপর বললেন, একবার আমি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে ছিলাম, তখন তিনি (কোথাও হতে) বাঁশীর আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং আমি যা করেছি তিনিও তা করলেন। হযরত নাফে’ রদ্বিয়ল্লাহু তা’য়ালা আনহু তিনি বলেন, তখন আমি ছোট ছিলাম। (আহমদ ও আবূ দাঊদ শরীফ) অর্থাৎ যে বাঁশীর সুর আমাদের প্রিয় নবী, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘৃণা করেছেন এবং যাকে শয়তানের বাদ্যযন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুম উনাদের থেকে শুরু করে পরবর্তী সর্বযুগের ইমাম ও ফকীহ রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যাকে হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছেন, তাকে চিত্ত-বিনোদনের নামে গ্রহণ করে নেয়ার কোন অবকাশ নেই। বরং তা সম্পূর্ণ হারাম।
স্মর্তব্য যে, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে হযরত ইমাম-মুজাতাহিদ তথা হযরত ফুক্বাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ফতওয়া দেন যে, গান-বাজনা বা বাদ্য-যন্ত্র সম্পূর্ণই হারাম। এটাকে হালাল বলা কুফরী।
যেমন আল্লামা শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলবী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “তাফসীরে আযীযী”-এর ১ম খন্ডের ৬৫ পৃষ্ঠায় লিখেন-
درمغنی گفتہ کہ لھو  الحدیث غناء است واں حرام است  بایں نص و مستحل اں کافر است
অর্থ : “মুগনী” কিতাবে উল্লেখ আছে, لـهو الـحديث হচ্ছে- গান-বাজনা, সঙ্গীত। এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা তা হারাম সাব্যস্ত হয়েছে। যে ব্যক্তি এটাকে হালাল জানবে সে কাফির হবে।”
“জামিউল ফতওয়াতে” উল্লেখ আছে-
استماع الـملاهى والـجلوس عليها وضرب الـمزامير والرقص كلها حرام ومستحلها كافر
অর্থ : “গান-বাজনা শ্রবন করা, গান-বাজনার মজলিসে বসা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, নর্ত্তন-কুর্দ্দন করা সবই হারাম। যে ব্যক্তি এগুলোকে হালাল মনে করবে সে ব্যক্তি কাফির।” 
অনুরূপ প্রায় সকল ফিক্বাহের কিতাবেই গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদিকে হারাম ফতওয়া দেয়া হয়েছে। সুতরাং পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের সংক্ষিপ্ত দলীল দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, গান-বাজনা, বাদ্যযন্ত্র ইত্যাদি সব হারাম ও নাজায়িয। এগুলোকে হালাল মনে করা কাট্টা কুফরী। কাজেই কোন অবস্থাতেই গান-বাজনা করা ও শোনার অনুমতি সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার মধ্যে নেই তা যে কোন প্রকার গানই হোক না কেন।
কেউ কেউ বলে সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গান-বাজনা করেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ) যারা এরূপ বলে তারা উনার উপর চরম মিথ্যা তোহ্মত দেয়। কারণ তিনি ছিলেন মহান আল্লাহ্ পাক উনার খাছ ওলী তথা “হাবীবুল্লাহ্”। যিনি সারা জীবন সম্মানিত সুন্নত উনার পুরিপূর্ণ অনুসরন-অনুকরণ করেছেন। উনার পক্ষে কি করে হারাম গান-বাজনা করা সম্ভব?
বিদ্য়াতীরা এ ব্যাপারে একটি দলীলও পেশ করতে পারবে না। তবে সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ্ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি “সামা” পাঠ করেছেন। আর বিদ্য়াতী, ভন্ড ও গুমরাহ ফক্বীরেরা এটাকেই প্রচার করছে গান-বাজনা বলে। অথচ গান-বাজনার সাথে “সামা” উনার বিন্দুমাত্রও মিল নেই।
এ প্রসঙ্গে “ফাওয়ায়েদুল ফুওয়াদ” নামক কিতাবে উল্লেখ আছে যে, একদা দিল্লীর ৫০০ আলিমের সাথে সুলত্বানুল আউলিয়া হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বাহাছ হয়। কারণ দিল্লীর সেই আলিমরা অপবাদ দিয়েছিল যে, হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গান-বাজনা করেন। বাহাছে যখন এ প্রশ্ন উত্থাপন করা হলো- তখন হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি কস্মিনকালেও গান-বাজনা করিনা বরং আমি সামা করি। আর আমার সামা পাঠের শর্ত হচ্ছে- (১) সেখানে কোন বাদ্য-যন্ত্র থাকবে না, (২) কোন বেগানা মহিলা থাকবে না, (৩) কোন নাবালেগ দাড়ীবিহীন বালক থাকবে না, (৪) যে ছন্দ বা ক্বাছীদাগুলো পাঠ করা হবে তা ইসলামী শরীয়ত সম্মত হতে হবে। (৫) তা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দিকে আকৃষ্টকারী হতে হবে, (৬) আর যাঁরা শুনবে, উনারা সবাই বুযুর্গ পরহিযগার ও আল্লাহওয়ালা হতে হবে।
যখন হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একথা বললেন, তখন দিল্লীর আলিমরা উনাকে হক্ব বলে মেনে নিলেন এবং নিজদের ভুলের জন্য লজ্জিত হলেন। কাজেই পূর্ববর্তী আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা যে সামা পাঠ করেছেন তা এরূপই ছিল। সেই সামা উনার সাথে বর্তমান জারী বা কাওয়ালীকে তুলনা করা কূফরী বৈ কিছুই নয়।
অতএব, প্রমাণিত হলো সুলত্বানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, খাজা মুঈনুদ্দীন চীশ্তি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জীবনে কখনোই গান-বাজনা করেননি। যারা উনার নামে মিথ্যা তোহমত দেয় তারা চরম ফাসিক ও কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার।
কেউ কেউ বলে “বুখারী শরীফ” উনার ৫ম খ-ে গান-বাজনা জায়িয লেখা আছে, তারা চরম জাহিল ও বিদ্য়াতী। আর জাহিল বলেই বুখারী শরীফ উনার ৫ম খন্ড দলীল হিসেবে পেশ করেছে। অথচ মুল বুখারী শরীফ উনার কোন ৫ম খ-ই নেই। সে ব্যক্তিকে শুধু এতটুকু বলতে হবে যে, “বুখারী শরীফ উনার যেখানে গান-বাজনা জায়িয বলা হয়েছে সে অংশটুকু বাংলায় অনুবাদ করে দাও।” তবেই তার মিথ্যা দলীলের হাক্বীক্বত প্রকাশ পেয়ে যাবে।
মূলতঃ বুখারী শরীফ উনার কোথাও যদি গান-বাজনা জায়িয লেখা থাকতো তবে ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার “আদাবুল মুফরাদ” কিতাবে গান-বাজনা হারাম বললেন কেন? কাজেই যারা এ ব্যাপারে বুখারী শরীফ উনার দলীল দেয় তারা চরম জাহিল, ভ-, বিদ্য়াতী ও প্রতারক।
মূলকথা হচ্ছে ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে বিবাহ অনুষ্ঠানসহ সকল স্থানেই গান-বাজনা করা হারাম। এটাকে হালাল বলা কুফরী।
এছাড়া মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন মজীদ উনার পবিত্র সূরা শূয়ারা শরীফ উনার ২২৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বিভ্রান্ত, গুমরাহ কবি-সাহিত্যিকদের সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَالشُّعَرَ‌اءُ يَتَّبِعُهُمُ الْغَاوُونَ
অর্থ : “বিভ্রান্ত লোকেরাই (মিথ্যা, অশ্লীলতা, কুৎসা বর্ণনাকারী) কবিদের অনুসরণ করে।”
এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর হযরত আব্দুল্লাহ বিন রাওহা রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু, হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা ক্রন্দনরত অবস্থায় নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, “ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমরা তো ক্বাছীদা, কবিতা রচনা করে থাকি। এখন আমাদের কি উপায়?” তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষাংশ পাঠ করুন।” 
اِلَّا الَّذِينَ اٰمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِـحَاتِ وَذَكَرُ‌وا اللهَ كَثِيْرً‌ا
অর্থ : “তবে তাদের কথা ভিন্ন, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং মহান আল্লাহ পাক উনাকে খুব স্মরণ করে।” (পবিত্র সূরা শূয়ারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২২৭)
অর্থাৎ পবিত্র সূরা শূয়ারা শরীফ উনার ২২৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বেদ্বীনদের অনর্থক, ভ্রান্ত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কুরুচিসম্পন্ন ও ইসলামী শরীয়তবিরোধী কবিতার সমালোচনা করা হয়েছে। আর ২২৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ বা উক্ত পবিত্র সূরা শরীফ উনার শেষাংশ দ্বারা ঈমানদার ও নেককার কবিদের উত্তম, নছীহতমূলক রুচিসম্পন্ন কবিতা বা কাছীদাসমূহের প্রশংসা করা হয়েছে।
অর্থাৎ ঈমানদার ও নেককার কবি ও উনাদের উত্তম রুচিসম্পন্ন ও ইসলামী শরীয়তসম্পন্ন কবিতাসমূহ যে গ্রহণযোগ্য সেটাই এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে শেষাংশ দ্বারা বোঝানো হয়েছে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُبَىَّ بْنَ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَخْبَرَهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ مِنَ الشّعْرِ حِكْمَةً‏‏.
অর্থ : হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কোন কোন কবিতা বা ক্বাছীদা হিকমত পূর্ণ। (বুখারী শরীফ)
অর্থাৎ ক্বাছীদা শরীফ উনার দ্বারা গভীর অর্থবোধক বিষয়কে সহজে প্রকাশ করা যায়। ‘হিকমত’ অর্থ সঠিক প্রজ্ঞাপূর্ণ ও সূক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তা।
এছাড়াও একটি অনেক বড় হাদীছ শরীফ, যা উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন- 
عَنْ حَضْرَتْ ام الـمؤمنين عَائِشَةَ الصِدّيْقَةٍ عَلَيْهَا السَّلَامُ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَضَعُ لـِحَسَّانٍ مِنْبَرًا فِى الْـمَسْجِدِ يَقُوْمُ عَلَيْهِ قَائِمًا يُفَاخِرُ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوْ يُنَافِحُ وَيَقُوْلُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ اللهَ يُؤَيّدُ حَسَّانَ بِرُوْحِ الْقُدْسِ مَا نَافَحَ اَوْ فَاخَرَ عَنْ رَّسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন হযরত ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিশিষ্ট ছাহাবী কবি হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য মসজিদে নববী শরীফ উনার মধ্যে একটি মিম্বর শরীফ স্থাপন করেছিলেন। তিনি উনার উপর দাঁড়িয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে গৌরবময় না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ অথবা কাফিরদের কুফরীমূলক এবং অশ্লীল ও অশালীন বক্তব্যের জাওয়াব স্বরূপ না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন। আর ফখরে মওজুদাত, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলতেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা সাহায্য করেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে গৌরবময় না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ অথবা কাফিরদের কুফরীমূলক এবং অশ্লীল ও অশালীন বক্তব্যের জাওয়াব স্বরূপ না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতে থাকেন।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
একটি হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দেখতে পাই, যা হযরত জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন- 
عَنْ حَضْرَتْ جُنْدُبٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِىْ بَعْضِ الْـمَشَاهِدِ وَقَدْ دَمِيَتْ اِصْبَعُه فَقَالَ هَلْ اَنْتَ اِلَّا اِصْبَعٌ دَمِيْتِ وَفِىْ سَبِيْلِ اللهِ مَالَقِيْتِ
অর্থ : “হযরত জুনদুব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, কোন এক জিহাদে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আঙ্গুল মুবারক উনার মধ্যে নূরুন নাজাত (রক্ত) মুবারক প্রকাশ হলে তিনি এই ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেছিলেন, যার অর্থ- ‘হে অঙ্গুলী মুবারক! আপনি কি সম্মানিত অঙ্গুলী মুবারক নন। আপনার মধ্যে নূরুন নাজাত মুবারক প্রকাশ পেয়েছেন, তবে যা কিছু হয়েছে তা মহান আল্লাহ পাক উনার পথেই হয়েছে। অর্থাৎ উনার জন্যই হয়েছে।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ)
উপরের আলোচনা থেকে কয়েকটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। বেদ্বীনদের অনর্থক, ভ্রান্ত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, আবেগ তাড়িত, কুরুচিসম্পন্ন ও ইসলামী শরীয়তবিরোধী কবিতা, গান-বাজনা ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হারাম। পক্ষান্তরে, ঈমানদার, নেককার কবিদের উত্তম, নছীহতমূলক, রুচিসম্পন্ন কবিতা, ক্বাছীদাসমূহ ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে জায়িয। এছাড়াও আরো কয়েকটি বিষয় অনুধাবন করা যায়। যথা :
ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা সুন্নত : কেননা স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করেছেন তবে পাঠক হিসেবে নয়, তা’লীম দেয়ার লক্ষ্যে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের দিয়ে পাঠ করিয়েছেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা পাঠক হিসেবে পাঠ করেছেন।
ক্বাছীদা শরীফ শোনা সুন্নত : কেননা নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ক্বাছীদা শরীফ শোনার জন্য মিম্বর শরীফ উনার মধ্যে বসতেন এবং পাশে একটি মিম্বর শরীফ থেকে হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি না’ত শরীফ ও ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করতেন।
ক্বাছীদা শরীফ উনার মাহফিল আয়োজন করা সুন্নত : যেহেতু নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজে, হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার জন্য আলাদা একটি মিম্বর শরীফ উনার ব্যবস্থা করেছিলেন এবং অন্যান্য হযরত ছাহাবা আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা উপস্থিত হয়ে ক্বাছীদা শরীফ শুনতেন।
ক্বাছীদা শরীফ রচনা করা/লেখা সুন্নত : আঙ্গুলি মুবারক উনার বিষয়ে পাঠ করা ক্বাছীদা শরীফখানি নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রচিত তবে কবি হিসেবে নয় বরং তা’লীম দেয়ার লক্ষ্যে।
তিনি হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উৎসাহ দিয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে জবাব তৈরি করিয়েছিলেন।
ক্বাছীদা শরীফ প্রচার করা সুন্নত : নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাফিরদের বিরুদ্ধে বিদ্রƒপাত্মক কবিতা রচনা করে জবাব দিয়ে প্রচার করার জন্য হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মুবারক নির্দেশ দেন।
ক্বাছীদা শরীফ উনার সুর করাও সুন্নত : উল্লেখ্য, সুরটা ইলমে মুসীক্বী হিসেবে নয় অর্থাৎ গানের সুরে নয় বরং ইলমে আরূদ্বী বা আরূজী অথবা ছন্দ প্রকরণ হিসেবে। নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নেন তখন হযরত ছাহাবা আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ‘তালায়াল বাদরু আলাইনা’ এ বিখ্যাত না’ত শরীফখানি ইলমে আরূদ্বীর আলোকেই পাঠ করেছিলেন। হযরত ছাহাবা আজমাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরবর্তী যুগে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা অনেকেই সামা শরীফ শুনতেন, ক্বাছীদা শরীফ রচনা করতেন, পাঠ করতেন।
এক্ষেত্রে আমরা বিশেষভাবে দেখতে পাই, যিনি চিশতীয়া তরীক্বার মূল সুলত্বানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেই সুন্নত উনার অনুসরণে ক্বাছীদা শরীফ লিখতেন, শুনতেন এবং উনার পরবর্তী সময়ে চিশতীয়া খানদানের অনেকেই সামা শরীফ উনার আয়োজন করতেন পাঠ করতেন এবং শুনতেন। মাহবুবে ইলাহী হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও সামা শরীফ শুনতেন এবং অনেক রুবাইয়াত রচনাও করেছেন। উনার বিশিষ্ট মুরীদ হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও অসংখ্য ক্বাছীদা শরীফ রচনা করেছেন। কিন্তু তখন সে শোনার আয়োজন ছিল দরবার শরীফ কেন্দ্রিক।
কিন্তু বর্তমান যামানার যিনি মুজাদ্দিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বর্তমান সময়ে ক্বাছীদা শরীফ উনার যে মুবারক ইজতিহাদ করেছেন, তিনি পরিপূর্ণভাবে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিপূর্ণ সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ করেছেন এবং মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার এই মুবারক ইজতিহাদ যে বর্তমান সময়ে কতটা প্রয়োজনীয় তা পর্যায়ক্রমে তুলে ধরা হবে ইনশাআল্লাহ।
পূর্ববর্তী মুজাদ্দিদ উনাদের সামা শরীফ শোনা আর বর্তমান সময়ে ক্বাছিদা শরীফ শোনা, লেখা, পাঠ করার যে আয়োজন রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি করেছেন, তা উপলব্ধির জন্য একটি দুনিয়াবী মিছাল দেয়া যেতে পারে। যেমন আপনার বাড়ির আঙ্গিনায় মাটি আছে, আপনি সেখানে বৃক্ষরোপণ করেন। এটা শুধু আপনার বাড়ির আঙ্গিনাতে সীমাবদ্ধ। আর দেশব্যাপী যখন বৃক্ষরোপণে অভিযান চালানো হয় তখন প্রয়োজনীয় পরিমাণ চারা, প্রয়োজনীয় পরিমাণ সার এবং আনুষঙ্গিক জিনিস বিতরণ করা হয়। এই বৃক্ষরোপণে অভিযান চলে দেশব্যাপী।
একইভাবে পূর্ববর্তী হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা শুধু সুন্নতের অনুসরণে ক্বাছীদা শরীফ শুনতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে মুহইস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামি‘উল আলক্বাব, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি যেভাবে ক্বাছীদা শরীফ উনার প্রচলন ঘটিয়েছেন, তা হচ্ছে পরিপূর্ণভাবে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ এবং বাতিলের মূলোৎপাটন।
সাইয়্যিদুনা মামদূহ হুযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ক্বাছীদা শরীফ পাঠ করা, শোনা, লেখা, প্রচার করা, আয়োজন করা এরকম সকল সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম সুন্নতসমূহের আমল করেছেন এবং উনার মুবারক ইজতিহাদে মাধ্যমে মানুষকে এ সকল সুন্নতে আমলের পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছেন।
রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি অসংখ্য ক্বাছীদা শরীফ উনার পাঠক তৈরি করেছেন। যাদের রেকর্ডকৃত ক্বাছীদা আজ দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পৌঁছেছে। রাজারবাগ শরীফ উনার মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি স্বয়ং এবং মুবারক আহলে পাক উনারা ক্বাছীদা শরীফ শোনেন। শুধু তাই নয়, বিশেষ বিশেষ ক্বাছীদা শরীফগুলো কখনো পাঠ করতে বলেন বা রেকর্ড শুনাতে বলেন। এছাড়াও সালিকদের শোনার জন্যও তিনি বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছেন। যেমন সামা শরীফ উনার আয়োজন, আনজুমান-এর মাহফিলগুলোতে, বাইরের মাহফিলগুলোতে, শুক্রবার সকালে সুন্নতী মসজিদে, বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে এবং বক্তাদের ওয়াজের ফাঁকে ফাঁকে ক্বাছীদা শরীফ পাঠের ব্যবস্থা করেন।
এছাড়াও তিনি ক্যাসেট, সিডি প্রকাশনার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, যেন মানুষ অবসর মুহূর্তে অথবা কাজের ফাঁকে ফাঁকে হলেও সেই মহান সুন্নাহ শরীফ উনার অনুসরণ করতে পারেন। শুধু তাই নয়, বিদেশে অবস্থিত মুসলমানদের জন্য তিনি প্যালটক এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন।
ক্বাছীদা শরীফ লেখা, পাঠ করা, শোনা, আয়োজন করা, প্রচার করা প্রতিটি সুন্নত। যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি এই সুন্নতসমূহ যথাযথভাবে আদায় করলেন- এর অন্তর্নিহিত কারণসমূহ কি কি হতে পারে? কয়েকটি কারণসমূহেই বোধগম্য যেমন-
১। সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার আমল করা মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের মুবারক সন্তুষ্টি হাছিলের কারণ।
২। সম্মানিত সুন্নত আমলে সম্মানিত সুন্নত জিন্দা হয় এবং বিদয়াত দূরীভূত হয়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরো অন্তর্নিহিত কারণ রয়েছে।
প্রথম কারণ : আক্বাঈদের নবায়ন। বর্তমান সময়ে মানুষ গান-বাজনায় এমনভাবেই মশগুল হয়ে আছে যে, ঘরে ঘরে ক্যাসেট প্লেয়ার, টেলিভিশন, ফাসিকদের আয়োজিত অনুষ্ঠান এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে, মুসলমানরা গান-বাজনার প্রতি অনুরক্ত হয়ে গেছে। নাঊযুবিল্লাহ! এদেশের এক তথাকথিত লেখিকা বলেছিলো- ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা ইবাদত তুল্য’। নাঊযুবিল্লাহ! সঙ্গীত মানুষের মন-মগজের কোথায় প্রবেশ করেছে তা সহজেই অনুমেয়। এই যে মানুষ হারামকে হালাল বলছে, ফলে মানুষের ঈমান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিয়ে করলে বিয়ে ফাসিদ হচ্ছে, হজ্জ করলে তা বাতিল হচ্ছে, সন্তান অবৈধ হচ্ছে। মুজাদ্দিদ যামান, মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মানুষকে এই কঠিন আক্বীদার সমস্যা থেকে হিফাজত করছেন, ক্বাছীদা শরীফ প্রচলনের মাধ্যমে।
দ্বিতীয় কারণ : শরীয়ত উনার নিষিদ্ধ বিষয় থেকে ফিরিয়ে রাখার জন্য। আজকাল মানুষ শুধু গান বাজনাই শোনে না, এর সাথে সাথে থাকে ভিডিও চিত্র। ফলে একই সাথে হারাম কবীরা গুনাহতে লিপ্ত হয় আর তার থেকে অসংখ্য অগণিত কোটি কোটি চোখের ব্যভিচার হতে থাকে। পাশাপাশি গান-বাজনা শোনার গুনাহতো রয়েছেই। সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ক্বাছীদা শরীফ প্রচলনের মাধ্যমে মানুষকে এই হারাম কাজ থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন।
তৃতীয় কারণ : মানুষকে জাহিরী এবং বাতিনীভাবে ইবাদতের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা। জাহিরী বিষয়টি বোঝা গেল যেমন মহান সুন্নত মুবারক উনার অনুসরণ, হারাম থেকে বেঁচে থাকা। জযবা তৈরি হওয়া ইত্যাদি। এসব বিষয় ইবাদত বন্দেগীর সহায়ক। বাতিনী বিষয়টি বুঝতে হলে একটু আলোচনা প্রয়োজন।
যারা স্কুল, কলেজ বা ইউনিভার্সিটিতে পড়েন, তাদের মধ্যে অনেকেই গান-বাজনা করে। তাদের কেউ হারাম জেনে করে, কেউ হালাল জেনে করে। যারা গান করে না তাদের যদি প্রশ্ন করা হয়- আপনি কি গান করেন? উত্তর আসে “আমি হচ্ছি বাথরুম সিঙ্গার।” এ কথাটার পেছনে একটা কারণ রয়েছে। গোসলের সময় মানুষ কিছুটা সময় পার্থিব ঝামেলা থেকে মুক্ত হয় বলে তার ভিতরের সত্তাটা গান করে বা গুনগুন করে উঠে। প্রশ্ন হচ্ছে- কেন সে সময় সাধারণ মানুষ গান গায়? কেন ক্বাছীদা শরীফ নয়? আর কেউ গুনগুন করে গান গাইলে তো আর তা জায়িয হবে না। কিন্তু কখনো ইচ্ছায়, কখনো অনিচ্ছায় সেটাই বেরিয়ে আসে। সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি চান কারো কণ্ঠে সুর থাকুক আর না থাকুক, কেউ লিখতে পারুক আর নাই পারুক। সে যেন কমপক্ষে ক্বাছীদা শরীফ শোনে। সবসময় ক্বাছীদা শরীফ শুনলে তার অলস মুহূর্তেও তার ভিতরের মানুষ ক্বাছীদা শরীফই পাঠ করবে, গান নয়। এভাবে সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি মানুষের অবচেতন মনকেও গান থেকে ফিরিয়ে রাখছেন এবং মানুষ নিয়ামত প্রাপ্ত হচ্ছে। সুবহানাল্লাহ!
চতুর্থ কারণ : কাফির-মুশরিকদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ। আসুন আবার পবিত্র সূরা শূয়ারা শরীফ উনার দিকে লক্ষ্য করি।
পবিত্র সূরা শূয়ারা শরীফ উনার ২২৪ নম্বর আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বেদ্বীনদের অনর্থক, ভ্রান্ত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, কুরুচিসম্পন্ন ও শরীয়তবিরোধী কবিতার সমালোচনা করা হয়েছে। আমাদের জানা রয়েছে যে, সঙ্গীতে থাকে (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) অনর্থক শব্দ, অনর্থক বিষয়, থাকে শালীনতা বিবর্জিত শব্দ এবং অর্থ। পৃথিবীর মুসলমানদের হক পথ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য চালানো হচ্ছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন (ঈঁষঃঁৎধষ অমমৎবংংরড়হ)। সূদুর মিশর, সউদী আরব, দুবাইসহ সারা মধ্যপ্রাচ্যে-মার্কেট দখল করে আছে ভারতীয় চলচ্চিত্র, ভারতীয় গান বাজনা। পাকিস্তানেও তাই। বাংলাদেশ তো ভারতের কলোনীর মতো। ভারতীয় সংস্কৃতি পালনের জন্য এদেশে হিন্দুরা বিভিন্ন কালচারাল সংগঠনের মাধ্যমে অর্থায়ন করে। ব্যাপকভাবে তাদের নাটক, সিনেমা, গান বাজনা প্রচার-প্রসারের আয়োজন করে। নাঊযুবিল্লাহ!
যামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদে আ’যম সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বিভিন্ন মানের ক্বাছীদা শরীফ লেখার উৎসাহ দিয়ে, পত্রিকায় প্রচার করে, ক্বাছীদা শরীফ উনার সিডি ক্যাসেট প্রকাশ করে, সামা শরীফ উনার অনুষ্ঠানে মানুষকে আগ্রহশীল করে এর সমুচিত শিক্ষা দিচ্ছেন। মূলত এটাও সুন্নত পালন।
কারণ অনেক ইহুদী লেখক যেমন কা’ব বিন আশরাফ এবং আবূ রাফে এবং আরো অনেকে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান-মান মুবারক উনার খিলাফ কথা লিখতো এবং প্রচার করে বেড়াতো। পরবর্তীতে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাদের কথার প্রতি উত্তর দেয়ার আয়োজন করেন।
সবশেষে ক্বাছীদা শরীফ এবং গান-বাজনার একটি তুলনামূলক আলোচনা করা যাক, যাতে মানুষ বুঝতে পারে কিভাবে মুহইস সুন্নাহ, মাহিউল বিদয়াহ, ইমামুল আইম্মাহ, মুজাদ্দিদে আ’যম, ক্বইয়ূমুয যামান, জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইয়্যুল আউওয়াল, সুলত্বানিন নাছীর, হাবীবুল্লাহ, জামি‘উল আলক্বাব, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি আমাদের হিফাজত করে যাচ্ছেন।

Mvb-evRbv
K¡vQx`v kixd
Bmjvgx kixqZ Dbvi `„wó‡Z nvivg
nvjvj Ges mybœZ|
AwaKvsk †ÿ‡Î kixqZ Dbvi wbwl× welq wb‡q iwPZ|
gnvb Avjøvn cvK Dbvi nvexe, b~‡i gyRvmmvg, nvexeyjøvn ûh~i cvK Qjøvjøvû AvjvBwn Iqv mvjøvg Dbvi, nhiZ Ave~ im~wjjøvn Qjøvjøvû AvjvBwn Iqv mvjøvg I nhiZ D¤§y im~wjjøvn Qjøvjøvû AvjvBwn Iqv mvjøvg Dbv‡`i, nhiZ D¤§vnvZzj gyÕwgbxb AvjvBwnbœvm mvjvg Dbv‡`i, nhiZ Avnjy evBZ kixd AvjvBwngym mvjvg Dbv‡`i,  mvBwq¨`ybv gvg`~n nhiZ gywk©` wK¡ejv AvjvBwnm mvjvg Dbvi Ges m¤§vwbZ Avn‡j evBZ kixd Dbv‡`i kvb gyeviK m¤ú‡K© wjwLZ nq|
m½xZ GKwU Am¤¢e Kíbvi RM‡Z wb‡q hvq|
GKwU wPi¯’vqx RM‡Zi w`‡K wb‡q hvq
m½x‡Zi mv‡_ Av‡Q kiv‡ei †hvM| d‡j m½xZ wkíxiv AwaKvsk †ÿ‡ÎB nq kive‡Lvi|
K¡vQx`v kixd Dbvi g‡a¨ _v‡K dvbv Ges evK¡vi welq| gvbyl gnvb Avjøvn cvK Dbvi nvexe, b~‡i gyRvmmvg, nvexeyjøvn ûh~i cvK Qjøvjøvû AvjvBwn Iqv mvjøvg Dbvi Ges IjxAvjøvn Dbv‡`i gyneŸZ-BkK Dbvi Zûiv cv‡b wbgw¾Z _v‡K|
m½x‡Z _v‡K ev`¨hš¿, hvi myi gvby‡li g‡b gybvwdKx m„wó K‡i|
K¡vQx`v kixd Dbvi kã, myi, evK¨ AšÍ‡i gnvb Avjøvn cvK Dbvi nvexe, b~‡i gyRvmmvg, nvexeyjøvn ûh~i cvK Qjøvjøvû AvjvBwn Iqv mvjøvg Dbvi Ges IjxAvjøvn Dbv‡`i gyneŸZ Dbvi BkK Z_v gyneŸZ e„w× K‡i|
gvbyl jvÕbZMÖ¯Í nq, d‡j wec`MÖ¯Í nq|
gvbyl ingZcÖvß nq|
Ab_©K K_vgvjvq _v‡K fiv|
_v‡K Mfxi A_©‡evaK iƒnvbxqvZ mg„× csw³gvjv|
wg_¨v cybt cybt AvIov‡j wg_¨vi Af¨vm nq| ü`q nq AÜKvi
Avi mZ¨ ejvi Af¨v‡m ü`q nq Av‡jvwKZ|
kqZvb mvnvh¨ K‡i|
nhiZ †d‡ikZv AvjvBwngym mvjvg Dbv‡`i KZ©„K mvnvh¨ cÖvß nq|
Øxb †_‡K mwi‡q iv‡L|
Øx‡b mvnvh¨ K‡i| A_©vr Øxb`vi ci‡nRMvi nq|
kixqZ Dbvi wb‡`©k Agvb¨ K‡i bvdigvbxg~jK KvR Kiv nq|
kixqZ Dbvi wb‡`©k cvjb Kiv nq| A_©vr Cgvb I Bmjvg Dbv‡`i Dci Bw¯ÍKvgZ nq|






আরো ব্যাখ্যা : যে সময়ে পবিত্র কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছিলো তখনকার আরবগণ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার কতটা ক্বদর করতেন তা বলাই বাহুল্য। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পবিত্র আয়াত শরীফ সমূহের তাৎপর্য ছিল স্পষ্ট। তথাপি তিনি বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত হাসসান বিন সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মসজিদে নববী শরীফ উনার মাঝে আলাদা একটা মিম্বর শরীফ তৈরি করে দিয়েছিলেন। এ বিষয়টি উম্মতের জন্য বড় একটি ইহসান। পবিত্র কুরআন শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম শরীফ। এর গভীরতা বোঝা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু ক্বাছীদা শরীফ যেহেতু মানুষ রচিত; তাই তো এটা মানুষকে আবেগপ্লুত করে, তাছির করে।
তাছাউরে শায়েখ বলে একটি ছবক আছে, যা মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। অর্থাৎ শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার চেহারা মুবারক কল্পনা করে ফয়েজ লাভ করা। যারা ক্বাছীদা শরীফ লিখেন, শোনেন, পাঠ করেন বর্ণনা করেন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় তারা সেভাবে একটা আলদা ফয়েয প্রাপ্ত হন। সুবহানাল্লাহ!
আজ সর্বত্র গান-বাজনার যে প্রচলন তা পরিকল্পিতভাবেই মুসলমানগণের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়েছে। মুসলমানদের উদাসীনতাও এক্ষেত্রে অনেকটা দায়ী। মুসলমানগণের উচিত সর্বপ্রকার হারাম গান-বাজনা বাদ দিয়ে সম্মানিত সুন্নত উনার অনুসরণে হামদ শরীফ-না’ত শরীফ, ক্বাছীদা শরীফ শোনা, পাঠ করা, লেখা। সকল প্রকার গান-বাজনার অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে সামায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। তাহলে অবশ্যই একদিন হারাম গান-বাজনার অভিশাপ থেকে মানুষ মুক্তি পেয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত দ্বারা সিক্ত হবে।


তথ্যসূত্র : 
১) মাসিক আল বাইয়্যিনাত (৭৪তম সংখ্যা) 
২) এহইয়াউলুল উলুমুদ্দীন’ (সামা অধ্যায়) - হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৩) রাহাতিল ক্বুলুব - মাহবুব-ই-ইলাহি হযরত খাজা নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
৪) ফুরফুরা শরীফ পীর ক্বিবলার জীবন চরিত্র - মুহম্মদ আব্দুস সাত্তার (পৃষ্ঠা ১০৪ )
৫) কত জনপদ কত ইতিহাস - ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন (অবঃ) 
৬) হযরত আমীর খসরু রহমাতুল্লাহি আলাইহি - অন লাইন সূত্র


গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ

প্রকাশনায় :
গবেষণা কেন্দ্র : মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
ফোন (পিএবিএক্স)  : ৯৩৩৮৭৮৭, ৮৩৩৩৯২৭, ৮৩৩৩০৮১ 
মোবাইল : ০১৭১১-২৩৮৪৪৭, ০১৭১১-২৬৪৬৯৪, ০১৭১২-৬৪৮৪৫৩
ইমেইল : dailyalihsan@gmail.com
ওয়েবসাইট :www.al-ihsan.net

প্রথম প্রকাশ :
পবিত্র যিলক্বদ শরীফ ১৪৩৬ হিজরী সন
ছালিছ ১৩৮৩ শামসী সন

প্রাপ্তিস্থান : 
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ (বিক্রয় কেন্দ্র)
৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
ফোন : ৮৩১৪৮৪৮ মোবাইল : ০১৭১২-১৫৬৪৬২

কম্পিউটার অলঙ্করণ :
মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ (কম্পিউটার বিভাগ)
৫/১, আউটার সার্কুলার রোড, রাজারবাগ শরীফ, ঢাকা-১২১৭
ফোন : ৮৩১৭০১৯ মোবাইল : ০১৭১২-৮৫৫৩৪৫

মুদ্রণে :
মুহম্মদিয়া বুক বাইন্ডিং অ্যান্ড প্রিন্টিং প্রেস 
১৩/২, গোলাপবাগ, ঢাকা
ফোন : ৭৫৪৭৭৯৬ মোবাইল : ০১৭১১-১৭৮৬৮৪ 

হাদিয়া : ৫০ টাকা

পিডিএফ লিংক- https://drive.google.com/open?id=1mHjGBc_YX7SmqA73NC0vkUPlDphm6I3b