যে ৫টি কাজ মুসলমান উনাদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে ফরজ-



৫টি কাজ মুসলমান উনাদের জন্য জরুরী ভিত্তিতে ফরজ-
ক) একজন হক্কানী ওলী আল্লাহ উনার নিকট বাইয়াত হওয়া ফরজ।
বিস্তারিত পড়ুন-

খ) সবক নেয়া ফরজ।

গ) ক্বলবী জিকির করা ফরজ।
খলিক মালিক রব আল্লাহ পাক কুরআন শরীফ উনার সূরা যুখরুফ শরীফ উনার ৩৬ নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন - .
وَمَن يَعْشُ عَن ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ

যে ব্যক্তি খলিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার স্মরণ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে নেয়, আল্লাহপাক  তার জন্য একজন শয়তান নির্দিষ্ট করে দেন, অতঃপর সে-ই হয় তার সঙ্গী হয়।
অর্থাৎ- ক্বলবী যিকির না করা পর্যন্ত একজন মানুষ কখনই ঈমান ও মুসলমান হতে পারে না ।  তাই ক্বলবী যিকির করা ফরয ।
বিস্তারিত পড়ুন- https://khawajarazi.blogspot.com/2020/07/blog-post_896.html

ঘ) ছোহবত ইখতিয়ার করা ফরজ।
বিস্তারিত পড়ুন- https://khawajarazi.blogspot.com/2020/07/blog-post_908.html
ঙ) ফয়েজ-তাওয়াজ্জুহ হাসিল করা ফরজ।
এই ৫টি কাজ ব্যতিত কোন মুসলমান কশ্মিনকালেও কামিয়াবি হাসিল করতে পারবে না এই বিষয়টা ব্যাপক প্রচার করা ও বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে লেখা।
হক্কানী ওলী আল্লাহ চেনার ৪টি উপায় -
ক. তিনি হারাম ছবি তুলবেন না।
ছবি ফতোয়া
খ. তিনি হারাম ভোট-গণতন্ত্র-নির্বাচন করবেন না।
গণতন্ত্র করা হারাম ফতোয়া ।  লিংক-

গ. তিনি বেপর্দা হবেন না।
হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ। বিস্তারিত পড়ুন।

ঘ. তিনি শাসক শ্রেণীর শরীয়তবিরোধী কাজে সমর্থন জানাবেন না।
যেসব শাসকেরা সম্মানীত শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ করবে ও করার জন্য আদেশ নির্দেশ দিবে সে সব শাসককে কখনই অনুসরণ করা শরীয়ত সম্মত নয় ।  যেমন- ভোট দিতে বাধ্য করা , ভোটার আইডি কার্ডে ছবি তোলা , গণতন্ত্র করা , ছোঁয়াচে নাম দিয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে বাঁধা দেওয়া , ওলামায়ে সূ দের অনসরণ করতে বলা ইত্যাদি ।


পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত,  গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত,
গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا اتقوا الله وكونوا مع الصادقين.
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো এবং ছাদিক্বীন বা সত্যবাদীগণ উনাদের সঙ্গী হয়ে যাও।”  (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক করেন যে, তোমরা ছাদিক্বীন বা আল্লাহওয়ালাগণ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করো। আর খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক পালন করা হচ্ছে বান্দার জন্য ফরয-ওয়াজিব উনার অন্তর্ভুক্ত।
পবিত্র ছোহবত মুবারক উনার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে হয় যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন। সেজন্য খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট। উনাদের সমস্ত আমল-আখলাক্ব মুবারক উনাদের প্রতি সন্তুষ্ট। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছে-
عن حضرت جابر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم لاتمس النار مسلما رانى و راى من رانى
অর্থ: “হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবেনা উনাদেরকে, যাঁরা আমাকে দেখেছেন। শুধু তাই নয়, যাঁরা আমাকে দেখেছেন উনাদেরকে যারা দেখবেন উনাদেরকেও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। সুবহানাল্লাহ! (মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ, মিরকাত শরীফ)
এত মর্যাদা উনাদেরকে দেয়া হয়েছে একমাত্র খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক উনার কারণে। ঠিক একইভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনিও ইরশাদ মুবারক করেন-
والسابقون الاولون من المهجرين والانصار والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم روضوا عنه واعدلهم جنت تجرى تحتها الانهار خالدين فيها ابدا ذلك الفوز العظيم.
অর্থ: “মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে ঈমান আনয়নে পূর্ববর্তীদের মধ্যে যাঁরা অগ্রবর্তী উনারা এবং উনাদেরকে যাঁরা (ক্বিয়ামত পর্যন্ত) উত্তমভাবে অনুসরণ করবে, উনাদের উপর খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্ট এবং উনারাও খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট। উনাদের জন্য খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি এরূপ বেহেশত নির্ধারিত রেখেছেন, যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবে, উনারা সর্বদা সে বেহেশত উনার মধ্যে অবস্থান করবেন, এটা উনাদের বড় সফলতা বা কামিয়াবী।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)
যারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে পবিত্র ঈমান উনার সাথে দেখেছেন উনারা তো অবশ্যই জান্নাতী। শুধু তাই নয়, ক্বিয়ামত পর্যন্ত যারা উনাদের সঙ্গে তায়াল্লুক রাখবে, মুহব্বত রাখবে, উনাদেরকে অনুসরণ করবে উনাদের প্রতিও খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি সন্তুষ্টি মুবারক প্রকাশ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
এত মর্যাদার কারণ হচ্ছে উনারা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন। সেজন্য কিতাবে উল্লেখ করা হয় যে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিনি এক সেকে- ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করেছেন ঈমান উনার সাথে, ঈমান উনার সাথে যমীনে অবস্থান করেছেন এবং  ঈমান উনার সাথে ইন্তিকাল মুবারকও করেছেন উনি ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। উনার মর্যাদা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত উম্মত উনাদের চাইতেও বেশি। সুবহানাল্লাহ! 
বলা হয়, খইরুত তাবিয়ীন হযরত ওয়ায়িছ আল ক্বরনী রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনার সম্পর্কে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনা করেছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت عمر رضى الله تعالى عنه قال سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول ان خير التابعين رجل يقال له وائس وله والدة كان به بياض فمروه فليستغفر لكم.
অর্থ: “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি শুনেছি, নিশ্চয়ই তাবিয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছেন ওই ব্যক্তি যিনি হযরত ওয়ায়িছ আল ক্বরনী রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি ক্বরন দেশে ছিলেন। সেখানে উনার মা ছিলেন। তিনি উনার মা উনার খিদমতের জন্য খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে পারেননি। খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি তোমরা উনার সাক্ষাৎ পাও, উনাকে বলো, উনি যেন তোমাদের জন্য দোয়া করেন। উনি দোয়া করলে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমাদেরকে কবুল করে নিবেন। সুবহানাল্লাহ! (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
এতবড় মর্যাদা-মর্তবা উনার। উনার মা উনার খিদমতে মশগুল থাকার কারণে তিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাৎ মুবারক করতে পারেননি। কোনো কোনো বর্ণনায় রয়েছে, উনি একবার এসেছিলেন কিন্তু খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাক্ষাৎ মুবারক পাননি। ফিরে চলে গেছেন। কিন্তু এত মর্যাদা থাকার পরেও উনি তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি হয়েছেন, ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে পারেননি। একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যিনি একবারমাত্র খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দেখেছেন ঈমান উনার সাথে, ঈমান উনার সাথে যমীনে অবস্থান করেছেন এবং ঈমান উনার সাথে বিদায় নিয়েছেন, উনার মর্যাদা একজন তাবিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে লক্ষ কোটি গুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র ছোহবত মুবারক উনার গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে হযরত শায়েখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একটা ঘটনা বর্ণনা করেছেন উনার কিতাবের মধ্যে-
پسر نوح بابداں بنشست+ خاندان نبوتش گم شد
سگ اصحاب کھف روزے چند+ پئے نیگاں گرفت مردم شد
অর্থ: “হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ছেলে কেনান খারাপ লোকদের ছোহবতে থাকায় নুবুওওয়াতী খান্দানের মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামী হলো। আর আছহাবে কাহাফ উনাদের কুকুর নেককার উনাদের ছোহবত মুবারকে থাকার কারণে মানুষের ছূরতে জান্নাতী হবে।” সুবহানাল্লাহ! (গুলেস্তাঁ)
অর্থাৎ হযরত নূহ আলাইহিস সালাম উনার ছেলে কেনান কাফিরদের ছোহবতে থাকার কারণে নুবুওওয়াতী খান্দান হারিয়ে ফেললো। শেষ পর্যন্ত ঈমান উনাকেও হারালো। অথচ সে নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম উনার সন্তান। নবী ও রসূল আলাইহিস সালাম উনার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও কাফিরদের ছোহবতে থাকার কারণে নুবুওওয়াতী খান্দান হারিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে গেলো। আর সেই আছহাবে কাহাফ উনাদের কুকুর যে আছহাবে কাহাফ উনাদের বর্ণনা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে। উনাদের সাত জনের সাথে একটা কুকুর ছিল। যেটাকে উনারা নিতে প্রথমে রাজি ছিলেন না, শেষ পর্যন্ত উনাদের মধ্যে যিনি মূল ছিলেন, উনার কথায় কুকুরটাকে নেয়া হয়েছিল উনাদের পাহারা দেয়ার জন্য, আপদ-বিপদে কাজে লাগানোর জন্য। সে কুকুরটা উনাদের সাথে ছিল, এখনো রয়েছে। হযরত শায়েখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একথার ব্যাখ্যায় লিখেছেন, আছহাবে কাহাফ উনারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার নেককার উম্মত। সেই আছহাবে কাহাফ উনাদের কুকুরটা উনাদের ছোহবত মুবারকে থাকার কারণে মানুষ হয়ে গেছে অর্থাৎ ক্বিয়ামতের দিন বনী ইসরাইলের সেই মরদুদ দরবেশ বালআম বিন বাউর যে জাহান্নামী হবে তার ছূরতে কুকুরটা জান্নাতে যাবে। সুবহানাল্লাহ! 
তাহলে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যাঁরা নেককার উম্মত হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ছোহবত মুবারক যদি কেউ ইখতিয়ার করে সে কত বেমেছাল ফযীলত, বুযুর্গী, সম্মান মুবারক হাছিল করবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। 
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت بهذ بن حكيم عن ابيه عن جده رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من استقبل العلماء فقد استقبلنى ومن زار العلماء فقد زارنى ومن جالس العلماء فقد جالسنى ومن جالسنى فكانما جالس ربى وفى رواية من زار عالما فكانما زارنى ومن زارنى فكانما زار الله ومن زار الله فقد غفر له.
অর্থ: হযরত বাহয ইবনে হাকীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পিতা থেকে, তিনি উনার পিতামহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি উলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ উনাদেরকে অভ্যর্থনা বা সম্মান করলো সে মূলত আমাকেই অভ্যর্থনা বা সম্মান করলো এবং যে উনাদের মুবারক যিয়ারত লাভ (সাক্ষাৎ) করলো প্রকৃতপক্ষে সে আমারই পবিত্র যিয়ারত মুবারক লাভ করলো এবং যে উনাদের সাথে বসলো প্রকৃতপক্ষে সে আমার সাথে বসলো আর যে আমার সাথে বসলো সে মূলত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথেই বসলো। অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে, “যে ব্যক্তি কোনো হক্কানী-রব্বানী আলিম, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনার যিয়ারত মুবারক করলো, সে প্রকৃতপক্ষে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক করলো। আর যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যিয়ারত মুবারক করলো সে প্রকৃতপক্ষে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে যিয়ারত মুবারক করলো। আর যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিয়ারত মুবারক করলো খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তাঁকে ক্ষমা করে দিবেন।” সুবহানাল্লাহ! (কানযুল উম্মাল, র্আ রাফিয়ী)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের ব্যাখ্যায় একাধিক ঘটনা বর্ণিত রয়েছে যে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী চীশতিয়া খান্দান উনার বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, আল্লাহওয়ালা উনাদের ছোহবত মুবারক উনার কতটুকু ফায়দা রয়েছে। তিনি বলেন, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যে ব্যক্তি কাট্টা যালিম ছিল। সে তার যামানার ইমাম, মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের অনেকের উপর যুলুম করেছে। যেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সকলে মনে মনে ধারণা করেছিলেন যে, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ইন্তিকাল করলে সরাসরি জাহান্নামের অতল গহ্বরে তলিয়ে যাবে। হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যখন ইন্তিকাল করলো তার কিছুদিন পর একজন বুযুর্গ ব্যক্তি তাকে স্বপ্নে দেখলেন। দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে হাজ্জাজ! তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি খুব সুখ-শান্তিতে রয়েছ? এর পিছনে কি কারণ? তুমি যে যুলুম করেছ, অন্যায় অত্যাচার করেছ, আমরা তো মনে করেছিলাম তুমি জাহান্নামে যাবে, কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি পবিত্র জান্নাত উনার মধ্যে তুমি বিচরণ করছো। এর পিছনে কি কারণ রয়েছে?” হাজ্জাজ বিন ইউসুফ জাওয়াব দিল, হে মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী! আপনি সত্যই বলেছেন। যমীনে আমি বুঝতে পারিনি, অনেক যুলুম-অত্যাচার করেছিলাম। যার বদলা জাহান্নাম ব্যতীত কিছুই ছিলনা। কিন্তু তারপরেও আমার একটা আমল খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পছন্দ করেছেন। যার বিনিময়ে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার জীবনের সমস্ত গুনাহখতা মাফ করে জাহান্নাম না দিয়ে পবিত্র জান্নাত নছীব করেছেন।  সুবহানাল্লাহ!
জিজ্ঞাসা করা হলো, তোমার কোন্ আমল খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি কবুল করেছেন? হাজ্জাজ বিন ইউসুফ বললো, আমি একবার রাস্তা দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলাম কিছু সৈন্য-সামন্ত নিয়ে। যেহেতু রাজকীয় ক্ষমতা ছিল, ক্ষমতার গর্বে গর্বিত হয়ে শান-শওকত প্রকাশ করে আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় দেখতে পেলাম এক স্থানে কিছু লোক জমা হয়েছে। মনে হচ্ছে সেখানে ওয়াজ-নছীহত মুবারক হচ্ছে, আমি লোকদের জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে কি হচ্ছে? লোকজন বললো, এখানে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার বিশিষ্ট ওলী, বিশিষ্ট তাবিয়ী, ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি নছীহত মুবারক করছেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ বললো, তখন আমার মনে একটা চিন্তা হলো, উনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী কি না- সেটা পরীক্ষা করতে হবে। যেহেতু হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সাথে অনেক সৈন্য-সামন্ত ছিল, লোকজন ছিল, সে ক্ষমতার গর্বে গর্বিত ছিল, সে উদ্ধতভাবে ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সেই দরবার শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করলো। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ বললো, আমি যখন প্রবেশ করলাম আমি দেখতে পেলাম, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার চেহারা মুবারক উনার উপর কোনোই ছাপ পড়লো না। আমার শান-শওকত, রাজকীয় ক্ষমতা, আমার গর্ব, উদ্ধত অবস্থা, এটা উনাকে কোনো ক্রিয়া করলো না। আমি বুঝতে পারলাম, নিশ্চয়ই উনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হবেন। আমি আদবের সাথে বসলাম। কিছু নছীহত মুবারক শুনলাম। শোনার পর মনে মনে ফিকির করলাম, নিশ্চয়ই উনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী। সেই খেয়ালে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে, সন্তুষ্টি মুবারক হাছিলের লক্ষ্যে, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হাত মুবারক মাঝে চুম্বন করলাম। সেই চুম্বনের ওসীলায় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে মৃত্যুর পর ডেকে বললেন, হে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ! তুমি যে যুলুম করেছ, অন্যায়-অত্যাচার করেছ, এর বদলা জাহান্নামে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমার বিশিষ্ট ওলী, আমার মাহবুব, যিনি উনার যামানায় ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত ছিলেন, হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে তুমি সম্মান করে, তা’যীম-তাকরীম করে, আমার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে উনার হাত মুবারক মাঝে চুম্বন করেছিলে সেই কারণে আমি তোমার গুনাহখতা মাফ করে জাহান্নামের পরিবর্তে পবিত্র জান্নাত দিয়ে দিলাম। সুবহানাল্লাহ!
শায়খুল ইসলাম, ইমামুল  আইম্মাহ হযরত বাবা ফরীদুদ্দীন মাসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কাট্টা যালিম ছিল। এত যুলুম, অন্যায়-অত্যাচার করার পরেও একজন খালিছ ওলী উনার সাথে মুহব্বত, ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার, হস্ত মুবারক চুম্বন করার কারণে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি তাকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে যারা অন্যান্য লোক রয়েছে তারা যদি সত্যিই আল্লাহওয়ালা উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করে, মুহব্বত করে, অবশ্যই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদেরকেও ক্ষমা করে দিবেন। সুবহানাল্লাহ!
সেটাই বলা হয়েছে যে, আল্লাহওয়ালা উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করো। যাঁরা আল্লাহওয়ালা উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবে তারা প্রকৃতপক্ষে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনারই ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করলো। সেটাই কিতাবে এসেছে, বিশিষ্ট বুযুর্গ হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন-
ہر کے خواہد  ہمنشینی باخدا +گو ناشیند در حضور اولیاء
অর্থ: “যদি কোনো ব্যক্তি চায় খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে উঠা-বসা করতে, তাহলে সে যেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওলীগণ উনাদের সাথে উঠা-বসা করে।” সুবহানাল্লাহ!
যেটা আরবীতে বলা হয়েছে-
من اراد ان يجلس مع الله فليجلس مع اهل التصوف
“কেউ যদি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে উঠা-বসা করতে চায়, সে যেন আহলে তাছাউফ বা আল্লাহওয়ালা উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করে, উনাদের সাথে যেন উঠা-বসা করে, তাহলে সে প্রকৃতপক্ষে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সাথেই উঠা-বসা করলো।” সুবহানাল্লাহ! 
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, একবার আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরযু করলেন, “হে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন সঙ্গী উত্তম? আপনার পরে আমরা কার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবো?”
খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন-
من ذكركم الله رؤيته وزاد فى علمكم منطقه وذكركم بالاخرة عمله
অর্থ: “যাঁকে দেখলে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার কথা স্মরণ হয়, যাঁর কথা শুনলে দ্বীনি ইলম বৃদ্ধি হয়ে থাকে। যাঁর আমল দেখলে পরকালের আমল করতে ইচ্ছে হয়।” (মুসনাদে আহমদ, ক্ববাসুম মিন নূরে মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
এই তিনটি গুণ যাঁর মধ্যে থাকবে তিনি অবশ্যই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিশিষ্ট তাবিয়ী ইমামুশ শরীয়ত ওয়াত তরীক্বত হযরত ইমাম হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
انما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب الى الاخرة والبصير بذنبه والمداوم على عبادة ربه والوارع والكاف عن اعراض المسلمين والعفيف عن اموالهم والناصح لجماعتهم.
অর্থ: “ফক্বীহ বা আল্লাহওয়ালা ওই ব্যক্তি, যিনি দুনিয়া হতে বিরাগ, পরকালের প্রতি ঝুঁকে আছেন, গুনাহের প্রতি সতর্ক, সর্বদা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত উনাতে মশগুল, পরহেযগার বা সুন্নত মুবারক উনার পাবন্দ, মুসলমানের মান-সম্মান নষ্ট করেন না, তাদের সম্পদের প্রতি লোভ করেন না এবং অধীনস্তদেরকে নছীহত মুবারক করেন।” (হিলইয়াতুল আওলিয়া)
এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনিও ইরশাদ মুবারক করেন-
واصبر نفسك مع الذين يدعون ربهم بالغدوة والعشى يريدون وجهه ولاتعد عينك عنهم تريد زينة الحيوة الدنيا.
অর্থ: “ওই সমস্ত লোকদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করো, যারা সকাল-সন্ধ্যা তথা দায়িমীভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্য যিকির-ফিকির করে থাকেন। দুনিয়ার চাকচিক্য দেখে বা দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্ত হয়ে উনাদের থেকে তোমাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।” (পবিত্র সূরা কাহফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে হযরত আবূ ইউসুফ হামদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি নকশবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বা উনার বিশিষ্ট বুযুর্গ যিনি হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পীর ভাই ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, তিনি একদিন নছীহত মুবারক করছিলেন। উনার যারা মুরীদ-মু’তাক্বিদ ছিলেন উনাদের মাঝে। তিনি বললেন দেখ, খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল করেছেন, তোমাদেরকে বলা হয়েছে, যে সমস্ত লোক সকাল-সন্ধ্যা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল থাকেন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার লক্ষ্যে, তোমরা উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবে। প্রতিদিন উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবে। তখন সেখানে একজন লোক ছিলেন ব্যবসায়ী। যিনি সারাবিশ্বে অর্থাৎ নানান দেশে ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করতেন। সে ব্যক্তি আদবের সাথে দাঁড়িয়ে বললেন, হে আমার শায়েখ! আপনি যে বলেছেন, প্রতিদিন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার জন্য। আপনি দলীলও পেশ করেছেন। আমরা অবশ্যই সেটা মেনে নিয়েছি। তারপরেও আমার একটা কথা রয়েছে। কি কথা রয়েছে? আমি দেশ বিদেশে ঘুরে থাকি। আর সবস্থানে তো খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী পাওয়া সম্ভব নয়। আর যদি থেকেও থাকেন আমার সেটা জানা থাকে না। তাহলে কি করে আমি প্রতিদিন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবো? তখন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার খালিছ ওলী হযরত আবূ ইউসুফ হামদানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, যদি তোমাদের এমন হয়, প্রতিদিন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে না পারো, তাহলে আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক, সাওয়ানেহ উমরী মুবারক থেকে কমপক্ষে ৮ পৃষ্ঠা করে পাঠ করবে। প্রতিদিন ৮ পৃষ্ঠা হযরত আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের জীবনী মুবারক থেকে, তাযকিরাতুল আওলিয়া থেকে পাঠ করবে। ফলে ছোহবত মুবারক উনার যে নিয়ামত তা হাছিল হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! যেটা আফদ্বালুল আওলিয়া হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন-
الـمكتوب نصف الـملاقة
অর্থাৎ “চিঠি হচ্ছে অর্ধেক সাক্ষাৎ।” 
একবার উনার এক মুরীদ উনাকে চিঠি লিখেছিলেন। হে আমার শায়েখ হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি তাগিদ করেছেন আপনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করার জন্য। কিন্তু আমার পক্ষে তো সেভাবে ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাহলে আমি কি করবো? তখন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছিলেন, “আমার যে চিঠিটা তোমার কাছে রয়েছে সেটা তুমি পাঠ কর। সে চিঠি পাঠ করলেই আমার অর্ধেক ছোহবত মুবারক তোমার হাছিল হয়ে যাবে।” সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে পঞ্চদশ হিজরী শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও ইমাম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল ইমাম রাজারবাগ শরীফ উনার হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক মুরীদের জন্য স্থান-কালের পার্থক্য অনুযায়ী স্বীয় মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে হবে। সেই সাথে উনার পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনার আক্বীদা ও আমল সম্বলিত, শরীয়ত ও সুন্নত উনাদের পথিকৃত, যামানার তাজদীদী মুখপত্র দৈনিক আল ইহসান শরীফ, মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ পাঠ এবং আনজুমানে আল বাইয়্যিনাত উনার মজলিস করতে হবে।”
উল্লেখ্য, হযরত শায়েখ বা  মুর্শিদ  ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করা সম্পর্কে জামানার ইমাম ও মুজতাহিদ, জব্বারিউল আউওয়াল, ছাহিবু সুলতানিন নাছির, সাইয়্যিদুনা হযরত মুজাদ্দিদে আয’ম আলাইহিস সালাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “যারা নিকটে অবস্থান করে তারা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে পাঁচবার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবে। যারা একই মহল্লায় থাকে তারা প্রতিদিন কমপক্ষে একবার। যারা একই শহর বা গ্রামে থাকে তারা সপ্তাহে কমপক্ষে দু’বার। যারা সেই শহর বা গ্রামের বাইরে বসবাস করে তারা সপ্তাহে কমপক্ষে একবার। যারা পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বসবাস করে তারা মাসে অন্ততপক্ষে একবার। যারা দূরবর্তী জেলাগুলোতে অবস্থান করে তারা কমপক্ষে তিন মাসে একবার। যারা নিকটবর্তী দেশে অবস্থান করে তারা কমপক্ষে ছয় মাসে একবার। আর যারা  দূরদেশে বসবাস করে তারা কমপক্ষে বৎসরে একবার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবে। তবে যে ব্যক্তি তার শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার যতবেশি ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করবে তার মর্যাদা-মর্তবা ততবেশি হবে। পবিত্র ইছলাহ বা পরিশুদ্ধি, তায়াল্লুক, নিসবত এবং নৈকট্য মুবারক ততবেশি হাছিল হবে।” সুবহানাল্লাহ!
পিডিএফ লিংক- https://drive.google.com/file/d/1rcCw3RnJoIwLbieEIHqIQeVG2ieHG8Tt/view?usp=sharing

পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে পবিত্র ক্বলবী যিকির উনার গুরুত্ব

পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে পবিত্র ক্বলবী যিকির উনার গুরুত্ব

মূলত অন্তর পরিশুদ্ধ করা ও হুযূরী ক্বলব হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে পবিত্র “ক্বলবী যিকির”। অর্থাৎ পবিত্র ইলমে তাছাউফ তথা মুহলিকাত ও মুনজিয়াত সম্পর্কিত পবিত্র ইলম অর্জন করার সাথে সাথে ক্বলবী যিকির করতে হবে, তবেই অন্তর পরিশুদ্ধ হবে ও হুযূরী ক্বলব অর্জিত হবে এবং নামাযসহ সকল ইবাদত-বন্দিগী শুদ্ধভাবে বা পবিত্র ইখলাছ উনার সাথে আদায় করা সম্ভব হবে। যার ফলে ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা পবিত্র ক্বলবী যিকির করাকে ফরয বলেছেন।

এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার পবিত্র কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
الا بذكر الله تطمئن القلوب
অর্থ: “সাবধান! খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির মুবারক দ্বারাই ক্বলব (অন্তর) ইতমিনান বা পরিশুদ্ধ হয়। অর্থাৎ হুযূরী বা খুশু-খুযূ হাছিল হয়।” (পবিত্র সূরা রা’দ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم انه كان يقول لكل شىء صقالة وصقالة القلوب ذكر الله
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “প্রত্যেক জিনিস পরিষ্কার করার উপকরণ রয়েছে, আর ক্বল্ব্ বা অন্তর পরিষ্কার (পরিশুদ্ধ) করার উপকরণ (মাধ্যম) হচ্ছে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির (ক্বলবী যিকির)।” (বাইহাক্বী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ, মিরকাত শরীফ)  

অর্থাৎ পবিত্র ক্বলবী যিকির দ্বারা ক্বলব পরিষ্কার হয়ে পবিত্র ইখলাছ তথা খুশু-খুযূ বা হুযূরী হাছিল হয়।
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারা বুঝা গেলো যে, অন্তর পরিশুদ্ধ অর্থাৎ ইখলাছ তথা হুযূরী বা খুশু-খুযূ হাছিল করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে যিকির অর্থাৎ পবিত্র “ক্বলবী যিকির।”

হযরত ইমাম-মুজতাহিদ ও আওলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দৃষ্টিতে ইজতিহাদ করতঃ পবিত্র যিকির উনাকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন- লিসানী যিকির অর্থাৎ মৌখিক যিকির এবং পবিত্র ক্বলবী যিকির অর্থাৎ অন্তরের যিকির।
লিসানী যিকির হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার তাসবীহ-তাহলীল, দোয়া-দুরূদ, পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, ওয়াজ-নছীহত ইত্যাদি। মূলত লিসানী যিকির উনার দ্বারা সার্বক্ষণিক বা দায়িমীভাবে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল থাকা সম্ভব নয়। কারণ উল্লিখিত যিকিরসমূহ সময় ও স্থান বিশেষে করা সম্পূর্ণই অসম্ভব। যেমন ওযূ-ইস্তিঞ্জা, খাওয়া-দাওয়া, কথাবার্তা, নিদ্রা ইত্যাদি। অথচ পবিত্র শরীয়ত উনার নির্দেশ মুবারক হচ্ছে সার্বক্ষণিক বা দায়িমীভাবে যিকিরে মশগুল থাকা। কারণ বান্দা যে মুহূর্তে বা সময়ে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির করা থেকে গাফিল বা অমনোযোগী হয়, তখনই শয়তান তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে পাপ বা নাফরমানীতে লিপ্ত করে দেয়। এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
ومن يعش عن ذكر الرحمن نقيض له شيطنا فهو له قرين. وانهم ليصدونهم عن السبيل ويحسبون انهم مهتدون.
অর্থ: “যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকির থেকে বিরত (গাফিল) থাকে, আমি (খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক) তার জন্য একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই। অর্থাৎ তার গাফলতীর কারণেই তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। অতঃপর সেই শয়তান তার সঙ্গী হয় এবং তাকে সৎ পথ থেকে ফিরিয়ে রাখে অর্থাৎ পাপ কাজে লিপ্ত করে দেয়। অথচ তারা মনে করে, তারা সৎ পথেই রয়েছে।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬, ৩৭)


আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم الشيطان جاثم على قلب ابن ادم فاذا ذكر الله خنس واذا غفل وسوس
অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, শয়তান আদম সন্তানের ক্বলবে আসন পেতে বসে থাকে। যখন সে পবিত্র যিকির করে, তখন শয়তান পালিয়ে যায়। আর যখন সে পবিত্র যিকির থেকে গাফিল হয়, তখন শয়তান ওয়াসওয়াসা দেয়।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মাছাবীহুস সুন্নাহ শরীফ)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ উল্লেখ আছে যে-
فيه اشارة الى ان من دوام على ذكر الرحمن لم يقربه الشيطان بحال قال بعضهم من نسى الله وترك مراقبته ولم يستحى منه او اقبل على شىء من حظوظ نفسه قيض الله له شيطانا يوسوس له فى جميع انفاسه ويغرى نفسه الى طلب هواها حتى يتسلط على عقله وعلمه وبيانه.
অর্থ: “উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা এটাই বুঝানো হয়েছে, যে ব্যক্তি সর্বদা খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র যিকিরে মশগুল থাকে, শয়তান কোনো অবস্থাতেই তার নিকটবর্তী হতে পারেনা। হযরত মুফাসসিরীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিমগণ উনারা বলেন, যে ব্যক্তি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভুলে যায় এবং উনার মুরাক্বাবা পরিত্যাগ করে এবং যতক্ষণ সে তার এ অবস্থা থেকে ফিরে না আসে অর্থাৎ যিকির-আযকার, মুরাক্বাবা-মুশাহাদা না করে, অথবা সে খাহেশাতে নফসের কোনো একটির প্রতি অগ্রসর হয় তখন খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি তার জন্য একটা শয়তান নিযুক্ত করে দেন। অর্থাৎ তার গাফলতীর কারণেই তার সাথে একটা শয়তান নিযুক্ত হয়ে যায়। উক্ত শয়তান প্রতি মুহূর্তে তাকে ওয়াসওয়াসা দেয় এবং ধোঁকা দেয় খাহেশাতে নফসকে অনুসরণের জন্য। পরিণামে খাহেশাতে নফস তার আক্বল, ইলম ও বয়ানের উপর প্রবল হয়।” নাউযুবিল্লাহ!

এ প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
ولا تطع من اغفلنا قلبه عن ذكرنا واتبع هوه وكان امره فرطا
অর্থ: “ঐ ব্যক্তিকে অনুসরণ করোনা, যার ক্বলবকে আমার পবিত্র যিকির থেকে গাফিল করেছি। অর্থাৎ যার ক্বলবে আমার পবিত্র যিকির নেই, সে নফসকে (শয়তানকে) অনুসরণ করে। ফলে তার কাজগুলো (আমলগুলো) হয় পবিত্র শরীয়ত উনার খিলাফ।” (পবিত্র সূরা কাহফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
অতএব বুঝা গেলো যে, পবিত্র ক্বলবী যিকির ব্যতীত শয়তান ও শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা যেমন অসম্ভব তদ্রƒপ শরীয়ত উনার খিলাফ কাজ থেকে বেঁচে থাকাও অসম্ভব।
তাই অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হলে বা শয়তানী ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচতে হলে পবিত্র ক্বলবী যিকির করতে হবে। কারণ পবিত্র ক্বলবী যিকিরই সার্বক্ষণিক বা দায়িমী যিকির উনার একমাত্র মাধ্যম। 

যেমন দায়িমী বা পবিত্র ক্বলবী যিকির সম্পর্কে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার কালাম পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
واذكر ربك فى نفسك تضرعا وخيفة ودون الجهر من ا لقول بالغدو والاصال ولا تكن من الغفلين.
অর্থ: “সকাল-সন্ধ্যা স্বীয় অন্তরে, সবিনয়ে, সভয়ে, অনুচ্চ আওয়াজে তোমার রব তায়ালা উনার পবিত্র যিকির (স্মরণ) কর। আর (এ ব্যাপারে) তুমি গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা।” (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২০৫)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির, ইমামুল মুফাসসিরীন হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার জগদ্বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে কবীরে’ উল্লেখ করেন-
من الناس من قال ذكر هذين الوقتين والمراد مداومة الذكر والمواظبة عليه بقدر الامكان.
অর্থ: “কেউ কেউ বলে, শুধুমাত্র সকাল-সন্ধ্যা যিকির করার কথা উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলা হয়েছে। মূলত উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে সকাল-সন্ধ্যা যিকির করার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো দায়িমী বা সার্বক্ষণিক যিকির এবং সাধ্যানুযায়ী যিকিরে মশগুল থাকা।” অনুরূপ ‘তাফসীরে রূহুল বয়ান’ উনার মধ্যেও উল্লেখ আছে।
প্রমাণিত হলো যে, অন্তরের পরিশুদ্ধতা ও দায়িমী হুযূরী অর্জন করতে হলে অবশ্যই পবিত্র ক্বলবী যিকির করতে হবে। কারণ পবিত্র ক্বলবী যিকির ব্যতীত যেরূপ অন্তরের পরিশুদ্ধতা লাভ করা সম্ভব নয়, তদ্রƒপ দায়িমী বা সার্বক্ষণিক হুযূরীও হাছিল করা সম্ভব নয়। তাই “তাফসীরে মাযহারী”তে উল্লেখ করা হয়েছে-
دوام الحضور بالقلب اذ لايتصور دوام الذكر باللسان.
অর্থ: “দায়িমী হুযূরী বা যিকির কেবলমাত্র ক্বলবের দ্বারাই সম্ভব। কেননা লিসান বা মুখ দ্বারা দায়িমী বা সার্বক্ষণিকভাবে পবিত্র যিকির করা সম্ভব নয়।” 
তাই সকলেই পবিত্র ইলমে তাছাউফ উনার কিতাবসমূহে “পবিত্র ক্বলবী যিকির” করাকে ফরয বলেছেন। 

স্মর্তব্য, ইতিপূর্বে মুহলিকাত, মুনজিয়াতসহ দশ লতিফার ইলমী বিষয়াদি আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু তা আমলে রূপায়িত করার জন্য প্রথমত একজন কামিল পীর ছাহেব বা মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার নিকট বাইয়াত হয়ে মুরাক্বাবা-মুশাহাদা করে পবিত্র ইলমে তাছাউফ হাছিল করতে হবে। তবেই সত্যিকার অর্থে মুহলিকাত তথা বদ খাছলতসমূহ দূর হবে এবং মুনজিয়াত তথা সৎ খাছলতসমূহ অর্জিত হবে। 

ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হওয়া প্রসঙ্গে
লতিফাসমূহে পবিত্র যিকির জারির অর্থ উক্ত লতিফাসমূহে সর্বক্ষণ আল্লাহ আল্লাহ যিকির মুবারক হওয়া। অর্থাৎ যার যে লতিফার যিকির জারি হবে, সে ব্যক্তির চলা-ফেরা, উঠা-বসা, আহার-নিদ্রা, ওযূ-ইস্তিঞ্জা সর্বাবস্থায় সর্বক্ষণ সে লতিফা আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করবে। আর তাতে তার উক্ত লতিফা সংশ্লিষ্ট বদ স্বভাবসমূহ বিদূরীত হবে এবং সৎ গুণসমূহ অর্জিত হবে। যেমন- ক্বলব লতিফাকে বলা হয় তওবার মাক্বাম। যার ক্বলবে পবিত্র যিকির জারি হবে অর্থাৎ যার ক্বলব ইচ্ছা-অনিচ্ছায় সর্বক্ষণ আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করবে, তখন তওবার মাক্বামের গুণ হিসেবে তার দ্বারা যদি কোনো গুনাহও হয়, তবে গুনাহ করার পর গাফিল থাকার মানসিকতা দূর হবে এবং গুনাহ করার সাথে সাথে খাছ তওবা করার যোগ্যতা পয়দা হবে। এছাড়াও ক্বলবের মাক্বামের আরো অনেক তাৎপর্য রয়েছে। 

অনুরূপ ক্বলবের পরে যথাক্রমে রূহ, সির, খফি, আখফা, নফ্স্, আব, আতেশ, খাক, বাদ অর্থাৎ দশ লতিফার প্রত্যেকটিতে পবিত্র যিকির জারি হলে সে লতিফার সংশ্লিষ্ট বদ গুণাবলী বর্জিত হয় এবং সৎ গুণাবলী অর্জিত হয়। হক্ব মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার হাত মুবারকে বাইয়াত হয়ে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে পবিত্র যিকির করলে সাধারণত প্রতিটি লতিফার যিকির জারি হতে এক মাস সময় লাগে। তবে কোশেশ ও ইখলাছের তারতম্যের কারণে কম-বেশি সময় লাগতে পারে। 

‘পবিত্র সুলত্বানুল আযকার’ যিকির মুবারক প্রসঙ্গে
দশ লতিফার প্রত্যেকটিতে আলাদা আলাদা পবিত্র যিকির জারি হওয়ার পর সম্মিলিতভাবে দশ লতিফার যিকির করতে হয়। আর একেই বলা হয় পবিত্র সুলত্বানুল আযকার বা যিকিরের বাদশাহ। এতে প্রথমে প্রত্যেক পশমের গোড়ায় গোড়ায় অতঃপর পর্যায়ক্রমে চামড়া, গোশত, রক্ত, হাড় ও তার মজ্জায় অর্থাৎ সমগ্র শরীরে আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক জারি হয়ে যায়, তখন মাথার তালু হতে পায়ের তলা পর্যন্ত শরীরের সবকিছুই আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করতে থাকে। 
উল্লেখ্য, পবিত্র সুলত্বানুল আযকার যিকির মুবারক উনার তিনটি পর্যায় বা স্তর রয়েছে। 
প্রথমত: সালিক বা মুরীদ দেখতে পাবে যে, তার শরীরের সবকিছুই আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করছে।

দ্বিতীয়ত: সালিক দেখতে পাবে যে, তার আশেপাশের গাছ-পালা, তরুলতা সবকিছুই আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করছে।
তৃতীয়ত: সালিক দেখতে পাবে যে, তাহতাচ্ছারা হতে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত সবকিছুই আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করছে। অর্থাৎ খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ব্যতীত যত কায়িনাত বা মাখলূকাত রয়েছে, সবই আল্লাহ আল্লাহ উনার যিকির মুবারক করছে। যে প্রসঙ্গে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- 
تسبح له السموت السبع والارض ومن فيهن وان من شىء الا يسبح بحمده ولكن لا تفقهون تسبيحهم انه كان حليما غفورا
অর্থ: “সাত আসমান ও যমীন এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা কিছু রয়েছে, সব কিছুই উনার (খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার) তাসবীহ পাঠ করছে। এমন কিছুই নেই, যা উনার প্রশংসা মুবারক জ্ঞাপন করেনা। কিন্তু তোমরা তা বুঝনা। নিশ্চয়ই খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ধৈর্যশীল ও ক্ষমাশীল।” (পবিত্র সূরা বনী ইসরাঈল শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৪)

পবিত্র ইলমে তাছাউফ উনার পরিভাষায় একেই পবিত্র সুলত্বানুল আযকার উনার শেষ স্তর বলা হয়। এ সবক বা মুরাক্বাবা-মুশাহাদার দ্বারাই মুহলিকাত বা বদ গুণাবলী দূর হয়ে অন্তরে পবিত্র মুনজিয়াত বা সৎ গুণাবলী পয়দা হয়, যার ফলে সালিক পবিত্র বিলায়েত উনার দরজা তথা পবিত্র বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করে। তাই পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, পবিত্র ইজমা ও পবিত্র ক্বিয়াস উনার ছহীহ বর্ণনা সাপেক্ষে সকল হযরত ইমাম-মুজতাহিদ, আওলিয়ায়ে কিরাম ও মাশায়িখে ইযাম আজমাইন উনারা এরূপভাবে যিকির-ফিকির, মুরাক্বাবা-মুশাহাদা উনাদের মাধ্যমে ক্বল্ব্ তথা দশ লতিফায় পবিত্র যিকির জারি করতঃ অন্ততপক্ষে পবিত্র বিলায়েতে আমুল খাছ হাছিল করাকে ফরয-ওয়াজিব বলে ফতওয়া দেন। উনাদের মতে, অন্তর পরিশুদ্ধ করে পবিত্র ইখলাছ অর্জন করার এটাই একমাত্র উপায় বা পদ্ধতি।
পিডিএফ লিংক - https://drive.google.com/file/d/1Z6c6jNF-RowAwkPfjVUm99F5Saum6Tap/view?usp=sharing
৫১৪ নং- সুওয়াল : কোন লোক দুনিয়াবী কোন কাজের শিথিলতার ন্য কোন আলেমকে বললো, তোমার মত আলেম দরকার নেই, তোমার মত কত আলেম ঘোড়ার ঘাস কাটে। ইহাতে কি হবে?
সুওয়াল : কোন লোক দুনিয়াবী কোন কাজের শিথিলতার ন্য কোন আলেমকে বললো, তোমার মত আলেম দরকার নেই, তোমার মত কত আলেম ঘোড়ার ঘাস কাটে। ইহাতে কি হবে? 
জাওয়াব : একজন আলেমকে এরূপ অবমাননা সূচক কথা বলা কবীরা গুনাহ। তার জন্য তওবা করে আলেমের কাছে ক্ষমা চাওয়া ওয়াজিব।
আবা-২৯
৫১৩ নং- সুওয়াল : মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার সময় কবরের কোন দিক হতে নামাতে হবে?
সুওয়াল : মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার সময় কবরের কোন দিক হতে নামাতে হবে?
জাওয়াব : পশ্চিম দিক হতে নামানো মোস্তাহাব। (দুররুল মুহতার)
আবা-২৯
৫১২ নং- সুওয়াল : লোক লজ্জার কারণে ফরয গোসল ফজরের পূর্বে না করে দ্বিপ্রহরের পূর্বে করলে কি হবে?
সুওয়াল : লোক লজ্জার কারণে ফরয গোসল ফজরের পূর্বে না করে দ্বিপ্রহরের পূর্বে করলে কি হবে?
জাওয়াব : কবীরা গুনাহে গুনাহগার হবে। নামায ক্বাযা করার কারণে কঠিন শাস্তি পাবে। (ফতওয়ায়ে আমিনীয়া।)
আবা-২৯
৫১১ নং- সুওয়াল : যবেহকালে প্রাণীর মাথা দেহ হতে আলাদা হয়ে গেলে ওটা খাওয়া কি?
সুওয়াল : যবেহকালে প্রাণীর মাথা দেহ হতে আলাদা হয়ে গেলে ওটা খাওয়া কি?
জাওয়াব : যবেহটা মাকরূহ তানযীহি হবে, কিন্তু গোশত খাওয়া হালাল হবে। (দুররুল মুখতার, ফতওয়ায়ে আমিনীয়া।)
আবা-২৯
৫১০ নং- সুওয়াল : জুমুয়ার খতীব সাহেব উপস্থিত না থাকলে যদি কোন উম্মি লোক ৩ বার সূরা ইখলাছ (খুৎবার পরিবর্তে) পাঠ করে, ইমাম হয়ে নামায আদায় করে, তাতে নামায হবে কি?
সুওয়াল : জুমুয়ার খতীব সাহেব উপস্থিত না থাকলে যদি কোন উম্মি লোক ৩ বার সূরা ইখলাছ (খুৎবার পরিবর্তে) পাঠ করে, ইমাম হয়ে নামায আদায় করে, তাতে নামায হবে কি?
জাওয়াব : যদি মুক্তাদিগণ উনাদের মধ্যে কেউ আলিম বা ক্বারী সাহেব না থাকে, তবে এরূপ নামায ও খুৎবা উভয়ই জায়িয হবে। (ফতওয়ায়ে আমিনীয়া।)
আবা-২৯
৫০৯ নং- সুওয়াল : স্বামী তার স্ত্রীর লাশ বহন করতে পারবে কি?

সুওয়াল : স্বামী তার স্ত্রীর লাশ বহন করতে পারবে কি?
জাওয়াব : হ্যাঁ, লাশের খাট বহন করে নিতে পারবে। (ফতওয়ায়ে আমিনীয়া।)
আবা-২৯
৫০৮ নং- সুওয়াল : ফিৎরার টাকা বেতন হিসাবে খতীব সাহেবকে দেয়া জায়িয হবে কি? ঐ টাকা দ্বারা ঈদগাহ তৈরি করা জায়িয কিনা? কুরবানীর চামড়ার টাকা ঐরূপ কাজে লাগানো জায়িয হবে কি?
সুওয়াল : ফিৎরার টাকা বেতন হিসাবে খতীব সাহেবকে দেয়া জায়িয হবে কি? ঐ টাকা দ্বারা ঈদগাহ তৈরি করা জায়িয কিনা? কুরবানীর চামড়ার টাকা ঐরূপ কাজে লাগানো জায়িয হবে কি?

জাওয়াব : খতীব সাহেবকে বেতন হিসাবে ঐ টাকা দেয়া জায়িয নেই। দান করা যেতে পারে। যদি খতীব সাহেবের নেছাব না হয়। ঐরূপ টাকা দ্বারা ঈদাগহ তৈরি করাও জায়িয নেই। কুরবানীর চামড়ার টাকা ঐরূপ কাজে ব্যবহার জায়েয নেই। (ফতওয়ায়ে আমিনীয়া, আলমগীরী, শামী।)
আবা-২৯
৫০৭ নং- সুওয়াল : জুমুয়া ও ঈদের খুৎবা মুখস্ত পড়া কি?
সুওয়াল : জুমুয়া ও ঈদের খুৎবা মুখস্ত পড়া কি?
জাওয়াব : খুৎবা মুখস্ত পড়াই সুন্নত। আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়ীন, নূরে মুজাসসাম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা মুখস্ত খুৎবা পড়তেন। (সমূহ ফিক্বাহর কিতাব।)
আবা-২৯
৫০৬ নং- সুওয়াল : হারামখোর ও জেনাখোরের পিছনে নামাযের ইক্তেদা করা কি?

সুওয়াল : হারামখোর ও জেনাখোরের পিছনে নামাযের ইক্তেদা করা কি?

জাওয়াব : মাকরূহ তাহরীমী। (ফতওয়ায়ে আমিনীয়া, ফতওয়ায়ে শামী।)
আবা-২৯