কাদিয়ানি রদ - ৯

খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্র্র
খতমে নবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাফের
(ইসলামী শরীয়ত উনার হুকুম মুতাবেক যারা মুসলমান থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত হয় (যেমন- কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি) তাদের তওবার জন্য নির্ধাতিত সময় ৩দিন। এরপর তওবা না করলে, তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড। )

 [সমস্ত প্রশংসা মহামহিম আল্লাহ পাক উনার জন্য এবং সমস্ত দরূদ ও সালাম নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, খাতামুন নাবীয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য। অতীব দুঃখজনক হলেও সত্য যে, খোদ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায়ই ভন্ড ও মিথ্যাবাদী নবী দাবীদারদের উদ্ভব শুরু হয়েছিল তা অদ্যাবধি অব্যাহত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “আমার পরে ৭০ জন মিথ্যাবাদী নবী দাবীদারের আগমন ঘটবে। অর্থাৎ তারা খতমে নবুওওয়াত স্বীকারকারী হবে না। বর্তমানে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারীরা কাদিয়ানী, বাহাই ইত্যাদি নানা দলে, নানা নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। এরা মুসলিম বিশ্বে অনেকটা শক্তিশালী ও বিত্তশালী অবস্থানও তৈরী করে নিতে সক্ষম হয়েছে। সে সুবাদে তারা গোপনে গোপনে এবং ক্ষেত্রবিশেষে অবাধে তাদের কুফরী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আর অনেক মুসলমান তাদের ধোকায় ও প্রলোভনে পড়ে ঈমান হারাচ্ছে।          
মাসিক আল বাইয়্যিনাত প্রত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক আওলাদে রাসূল, ইমামুল আইম্মা, কুতুবুল আলম, মুহিয়্যুস সুন্নাহ্ হযরত পীর সাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম তিনি বরাবরই খতমে নবুওওয়াত অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষভাবে তৎপর। উনার প্রতিষ্ঠিত আল বাইয়্যনাতেএর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই (১ম বর্ষ ৫ম সংখ্যা, এপ্রিল ১৯৯২) কাদিয়ানীদের সকল ধোকাবাজীর দাঁতভাঙ্গা জবাব সমৃদ্ধ কিতাব কাদিয়ানী রদ’- যা হাফিযে হাদীছ, রইসুল মুহাদ্দেসীন, মুফতিয়ে আযম, পীরে কামেল আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী রুহুল আমিন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি রচনা করেছিলেন, তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হয়ে আসছে। এ কিতাবটিই সকল দিক থেকে কাদিয়ানীদের মুখোশ উন্মোচনসহ তাদের কাফের সাব্যস্ত করতে যথেষ্ট।
বলাবাহুল্য, খতমে নবুওওয়াত অস্বীকারকারী সম্প্রদায়ের মধ্যে কাদিয়ানীরাই বেশী সক্রিয়। হালে তাদের তৎপরতা তুলনামূলক অনেক বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন তারা এই প্রমাণে সচেষ্ট যে, ‘মুসলিম ধর্ম মত-পথের অভ্যন্তরেই কাদিয়ানীর একটি স্বতন্ত্র শাখা। এটা প্রতিষ্ঠার জন্য তারা বিভিন্ন প্রকার পুস্তক-পুস্তিকাসহ নানারকম পন্থা অবলম্বন করছে। কিন্তু তারা কখনই খতমে নবুওওতের অনুসারী নয়। এহেন অবস্থার প্রেক্ষাপটে হযরত পীর সাহেব ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার দোয়া, এযাযত ও নির্দেশক্রমে খতমে নুবুওওয়াত প্রচার কেন্দ্রখোলা হলো। মাসিক আল বাইয়্যিনাতে এ বিভাগের তরফ থেকে খতমে নুবুওওয়াত অস্বীকারকারী সকল সম্প্রদায়ের সকল প্রকার কুফরী মতবাদ তুলে ধরাসহ প্রাসঙ্গিক বিবিধ আলোচনা করা হবে। যার ফলে তারা যে পরিপূর্ণভাবে কাফের, তা জনসাধারণ খুব সহজেই উপলব্ধি করতে পারবে, তাদের ধোকা থেকে নাজাত পাবে এবং প্রতিরোধের পথ খুঁজে পাবে।  
করুণাময় মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের ক্ষমা করুন, রহমত করুন, কবুল করুন, মদদ করুন ও কামিয়াবী দান করুন।]  (আমীন)
  (১)
 কাদিয়ানি রদ !             
বাহরুল উলুম, ফখরুল ফুক্বাহা, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, তাজুল মোফাসসিরীন, হাফেযে হাদীছ, মুফতীয়ে আ’যম, পীরে কামেল, মুর্শিদে মুকাম্মিল হযরত মাওলানা আল্লামা শাহ্ সূফী মুহম্মদ রুহুল আমিন রহমতুল্লাহি আলাইহিম কর্তৃক প্রণীত কাদিয়ানি রদকিতাবখানা (৬ষ্ঠ খন্ডে সমাপ্ত) আমরা মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছি। যাতে কাদিয়ানিদের সম্পর্কে সঠিক ধারণাসহ সমস্ত বাতিল ফিরক্বা থেকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুসারীদের ঈমান আকীদার হেফাযত হয়। মহান আল্লাহ পাক আমাদের প্রচেষ্টার কামিয়াবী দান করুন (আমীন)!
উনার কিতাব থেকে হুবহু উদ্ধৃতি করা হলো, যদিও তখনকার ভাষার সাথে বর্তমানে প্রচলিত ভাষার কিছুটা পার্থক্য লক্ষ্যণীয়।

মির্জ্জা গোলাম আহমদ সাহেব প্রতিশ্রুত মাহদী হইতে পারেন কিনা?

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
 মোকাদ্দমায় শেখ আবদুল হক, ৭ পৃষ্ঠা;-
الاحاديث الصحيحة لم تنحصر فى صحيحيى البخاري ومسلم ولم بستو عبا الصحاح كلهنا بل هما. منحصر ان فيى الصحاح قال البخاريى مااو ردت. فيى كتابيى هذا الا ما صح ولقد تر كت كثيرا من الصحاح وقال مسلم الذيى او ردت فى هذا الكتاب من الا حا ديث صحبح ولا اقول ان ما تر كت ضعيف.
ছহীহ বুখারী শরীফ ও মুসলিম ছহীহ হাদীছ শরীফগুলির একমাত্র তুলাদন্ড নহে এবং উভয়ে যাবতীয় ছহীহ হাদীছ শরীফ লিপিবদ্ধ করেন নাই, বরং উভয় কেতাবে ছহীহ হাদীছ শরীফ লিপিবদ্ধ করা হইয়াছে। বুখারী বলিয়াছেন, আমি আমার এই কিতাবে ছহীহ হাদীছ শরীফব্যতীত উল্লেখ করি নাই। নিশ্চয়ই আমি বহু ছহীহ হাদীছ শরীফ লিপিবদ্ধ করি নাই। মোছলেম বলিয়াছেন, আমি এই কিতাবে যে হাদীছগুলি উদ্ধৃত করিয়াছি, তৎসমস্ত ছহীহ, আমি ইহা বলি না যে, যে পবিত্র হাদীছ শরীফ আমি ত্যাগ করিয়াছি, উহা জইফ।ইহাতে বুঝা যাইতেছে, ছহীহ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ না থাকিলে, উহা যে জইফ কিম্বা জাল হইবে, মির্জ্জা সাহেবের এই দাবি একেবারে বাতিল। আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাযাহ সেহাহছেত্তার অন্তর্গত, এই সমস্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কিতাবে ছহীহ সনদে উক্ত হাদীছ শরীফগুলি বর্ণিত আছে, কাজেই তৎসমুদয় যে ছহীহ হাদীছ শরীফ হইবে, ইহাতে সন্দেহ নাই মির্জ্জা ছাহেব নামায, রোজা ইত্যাদি এবং এবাদত সংক্রান্ত সহস্র মছলার উপর আমল করিয়া থাকেন, যে সমস্তের প্রমাণ ছহীহ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে নাই, বরং অন্যান্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের কিতাবে আছে, তিনি তৎসমস্ত জাল বলিয়া ত্যাগ করেন নাই কেন? তিনি নামাযে নাভির নীচে হাত বাঁধিতেন, ইহা বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ উনাদের মধ্যে আছে কি?
মিশকাত শরীফ, ৪৮০ পৃষ্ঠা;-
 وفيى رواية لهما قال كيف انتم اذا نزل ابن مريم فيكم وامامكم منكم.
বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ কিতাবের রেওয়াএতে আছে, ‘হজরত বলিয়াছেন, যে সময় তোমাদের মধ্যে ইবনে মরয়েম নাযিল হইবেন, অথচ তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য হইতে হইবে, সেই সময় তোমাদের অবস্থা কিরূপ হইবে? এই হাদিছে বুঝা যায় যে, শেষ যুগে যখন হজরত ইছা আলাইহিমুস সালাম আছমান হইতে নাজিল হইবেন, তখন আরবের বংশধর কেহ ইমাম হইবেন। ইহাই হাদীছের প্রকৃত অর্থ, কারণ ছহীহ মুসলিম শরীফ কিতাবের নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফ উনার এই অর্থ সমর্থিত হয়।              (অসমাপ্ত)



ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক কাদিয়ানীদের কাফের ঘোষণা!

( পূর্ব প্রকাশিতের পর )

সৈয়দ লুৎফর রহমান
এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট

[ বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- পাকিস্তানের ফেডারেল শরীয়ত আদালতের যে রায়ে কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের পাকিস্তানে বসবাসরত সকল দল-উপদলের সদস্যরা সেখানে অমুসলিম ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে ঘোষিত হয়, এখানে আমরা সেই রায়ের আংশিক অনুবাদ নিম্নে উপস্থাপন করছি এবং পরবর্তীতে বাকী অংশ ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ্।
উল্লেখ্য, যেহেতু শরীয়ত আদালতে রায় এবং যেহেতু বিষয়টি শরীয়ত সংক্রান্ত সেহেতু ইংরেজী ভাষায় প্রদত্ত উক্ত রায়ের ভাবানুবাদ না করে যতদূর সম্ভব আক্ষরিক অনুবাদ করা হলো।  অনুবাদক]

ফেডারেল শরীয়ত কোর্ট (পাকিস্তান)
উপস্থিতঃ ফখরে আলম, প্রধান বিচারপতি, চৌধুরী মুহাম্মদ সিদ্দীক, মাওলানা মালিক গোলাম আলী ও মাওলানা আবদুল কুদ্দুস কাসমি বিচারপতিবৃন্দ। শরীয়ত দরখাস্ত নং ১৭/আই ১৯৮৪ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য তিনজন-দরখাস্তকারী। বনাম পাকিস্তানের এটর্নী জেনারেলের মাধ্যমে পাকিস্তান ফেডারেল সরকার উত্তরকারী এবং শরীয়তী দরখাস্ত নং ২/এল, ১৯৮৪ ক্যাপ্টেন (অবঃ) আবদুল ওয়াজিদ ও আরেকজন-দরখাস্তকারী। বনাম পাকিস্তানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের এটর্নী জেনারেল/উত্তরকারী । রায়ের তারিখঃ ১২-০৮-১৯৮৪ ইং। রায় ফখরে আলম, প্রধান বিচারপতিঃ কাদিয়ানী গোষ্ঠী, লাহোরী গোষ্ঠী ও আহমদীগণের ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ (নিষিদ্ধকরণ ও শাস্তি) অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ নামে অভিহিত ১৯৮৪ সনের ২০নং অধ্যাদেশটি ১৯৮৪ সনের ২৬শে এপ্রিল তারিখের পাকিস্তান গেজেট অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রখ্যপণ করা হয়। উক্ত অধ্যাদেশ দ্বারা পাকিস্তান দন্ড সংহিতা (১৮৬০ সালের ৪৫নং অধ্যাইন), ১৮৯৮ সনের ফৌজদারী কার্যপ্রণালী সংহিতা (১৮৯৮ সনের ৫নং অধ্যাইন) এবং ১৯৬৩ সনের ছাপাখানা ও প্রকাশনা অধ্যাদেশের কতিপয় বিধানাবলী সংশোধন করা হয়।       ২। কাদিয়ানের মির্জা গোলাম আহমদ (এখানে এরপর থেকে মির্জা সাহেব নামে অভিতিহতব্য)-এর অনুসারী হওয়ার কারণে কথিত কাদিয়ানীগণ দুটি গোষ্ঠীতে বিভক্ত হওয়ার পরও উভয় গোষ্ঠীই আহমদী নামে অভিহিত হয়।
৩। কাদিয়ানী গোষ্ঠী হিসেবে সাধারণভাবে পরিচিত একটি গোষ্ঠী এই বিশ্বাস পোষণ করে যে, মির্জা সাহেব হলো প্রতিশ্রুত মেহদী, প্রতিশ্রুত মেসসিয়াহ্ এবং একজন নবী।
অপরদিকে লাহোরী গোষ্ঠী বলে যে, সে একজন মুজাদ্দিদ (পুণরুদ্ধারকারী), প্রতিশ্রুত মেহদী এবং প্রতিশ্রুত মেসসিয়াহ্।     
৪। কাদিয়ানী গোষ্ঠীর কিছু সদস্য এবং লাহোরী গোষ্ঠীর দুজন সদস্যের যথাক্রমে ১৯৮৪ সনের ১৭/আই ও ১৯৮৪ সনের ২/এল নম্বরের দুটি দরখাস্ত আলকোরআন ও রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আলসুন্নাহ্সহ উক্ত অধ্যাদেশের কর্তৃত্ব, মান্যতা বা বলবত্তা চ্যালেঞ্জ করার জন্য দায়ের করা হয়।         
৫। বিষয়টির উপর চার সপ্তাহেরও অধিক কাল ধরে সবিস্তার শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সনের ১৭/আই নম্বরের শরীয়ত দরখাস্তে দরখাস্তকারীদের একজন জনাব মজিবুর রহমান এবং ১৯৮৪ সনের ২/এল নম্বরের শরীয়ত দরখাস্তে দরখাস্তকারীদের একজন ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) আবদুল ওয়াজিব যথাক্রমে দরখাস্তকারীদের পক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করেন। (অপর দিকে) সরকারের পক্ষে বিষয়টির উপর যুক্তি পেশ করেন, এডভোকেট শেষ গিয়াস মুহাম্মদ এবং ডাঃ রিয়াজুল হাসান গিলানী। বিষয়টির সহিত সংশ্লিষ্ট ইস্যূ বা সাধ্য-বিষয় বা বিচার্য-বিষয়গুলোর উপর আদালতকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্য বিভিন্ন (শরীয়তী) মাযহাবের অন্তর্ভূক্ত।
--- নিম্নবর্ণিত আইন-পরামর্শদাতা ও ওলামাগণ আদালত কর্তৃক আমন্ত্রিত হন এবং বিষয়টির উপর বিস্তারিতভাবে যুক্তি পেশ করেন-
(১) কাজী মজিবুর রহমান; (২) অধ্যাপক মাহমুদ আহমদ গাজী; (৩) মাওলানা সদর উদ্দীন আলরিফাই; (৪) আল্লামা তাজ উদ্দীন হায়দারী; (৫) অধ্যাপক মুহাম্মদ আশরাফ; (৬) আল্লামা মীর্জা মুহাম্মদ ইউসূফ; (৭) অধ্যাপক মাওলানা তাহির-উল কাদরী।          ৬। ১৯৭৩ সনের (পাকিস্তান) সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ ও ২৬০ অনুচ্ছেদ সংশোধনের উদ্দেশ্যে ১৯৭৪ সনের সংবিধান (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাইন (১৯৭৪ সনের ৪৯নং অধ্যাইন) দ্বারা উক্ত সংবিধান সংশোধন করা হয়। (উক্ত সংশোধনী দ্বারা) নিঃশর্ত ও নিঃসন্দেহ খতমে নবুওতে বিশ্বাস করে না কিংবা হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরে যে কোন অর্থে বা যে কোন বর্ণনায় নবী হিসেবে দাবি করে কিংবা এরূপ দাবিদারকে নবী বা ধর্মীয় সংস্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, এমন ব্যক্তিদেরকে অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করার উদ্দেশ্যে (উক্ত সংবিধানের) ২৬০ অনুচ্ছেদের সাথে দফা (২) সংযোজন করা হয়। কাদিয়ানীদের উভয় গোষ্ঠী প্রাসঙ্গিকভাবেই এই সংজ্ঞার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয় এবং তারা স্বভাবতঃই অমুসলিম ঘোষিত হয়।    
৭। (পাকিস্তান সংবিধানের) ১০৬ অনুচ্ছেদ হলো- প্রাদেশিক পরিষদের গঠন সম্পর্কিত বিধান, যা উক্ত পরিষদের জন্য নির্বাচিতব্য সদস্যদের সংখ্যা, তাদের যোগ্যতা এবং উক্ত পরিষদে অমুসলিমদের অর্থাৎ খ্রীষ্টান, হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ও পার্সী সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত অতিরিক্ত আসন বিনির্দিষ্ট করে।
উপরিউক্ত ১৯৭৪ সনের দ্বিতীয় সাংবিধানিক সংশোধনী দ্বারা এই সকল সম্প্রদায়ের সাথে কাদিয়ানী গোষ্ঠী বা লাহোরী গোষ্ঠীর ব্যক্তিদেরকে (যারা নিজেদেরকে আহমদী নামে অভিহিত করে তাদেরকে)সংযোজিত করা হয়।
৮। এরূপে ১০৬ অনুচ্ছেদের কার্যকারিতা ২৬০ অনুচ্ছেদের (৩) উপ-অনুচ্ছেদে বর্ণিত ঘোষণা দ্বারা প্রদান করা হয়।          
৯। সংবিধানের এরূপ বিধানাবলী সত্বেও আহমদীগণ নিজেদেরকে মুসলিম নামে এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস বা আক্বীদাকে ইসলাম নামে অভিহিত করতে থাকে। তারা পাকিস্তানের (সংখ্যাগুরু) মুসলিমদের উদ্বেগ-উত্তেজনার অর্থাৎ তাদের এতদসংক্রান্ত উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি হঠকারীভাবে উদাসীনতা ও সংবেদনহীনতা (অর্থাৎ গুরুত্বহীনতা ক্রমাগতভাবে) প্রদর্শন করতে থাকে। অবশ্য, তাদের দ্বারা উপরোক্ত সাংবিধানিক বিধানাবলীর উল্লঙ্খন ছাড়াও উম্মুল মুমিনীন (মুমীনদের মাতা), আহলে বাইত, (রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারের সদস্যবৃন্দ), হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গীগণ), খোলাফা-ই-রাশেদীন (সৎ খলিফাবৃন্দ), আমীরুল মুমিনীন (মুমীনদের আমীর বা নেতা), খলিফাতুল মুমিনীন (মুমীনদের খলিফা বা শাসনকর্তা), খলিফাতুল মুসলিমীন (মুসলিমদের খলিফা বা শাসনকর্তা) এ সকল লক্বব, খেতাব, পদবী, উপাধী বা বর্ণনাগুলো মীর্জা সাহেবের যথাক্রমে স্ত্রী, পরিবারের সদস্য, সঙ্গী ও উত্তরাধিকারীদের ক্ষেত্রে অপব্যবহারের মাধ্যমে কলুষিত হতে থাকে। এই কারণে পবিতর সন্মানীয় ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্যের ব্যবহার পাকিস্তান দন্ড সংহিতার (১৮৬০ সনের ৪৫নং অধ্যাইনের) (১৯৮০ সনের ৪৪নং অধ্যাদেশ দ্বারা সম্প্রতি সংযোজিত) ২৯৮ক ধরার অধীনে শাস্তিযোগ্য ফৌজদারী অপরাধ (হিসেবে নির্দিষ্ট) করা হয়েছে। উক্ত ধারাটি নিম্নরূপ- ২৯৮ ক। পবিতর সন্মানীয় ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য ইত্যাদির ব্যবহার। যে কেউ হয় মৌখিক না হয় লিখিত শব্দ দ্বারা, কিংবা দৃশ্যমান চরিত্র রূপায়নের মাধ্যমে, কিংবা প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে কোনরূপ দোষারোপণ, ব্যাঙ্গোক্তি বা কটাক্ষপাত দ্বারা রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যে কোন স্ত্রী (উম্মুল মুমিনীন) বা পরিবারের সদস্য (আহলে বাইত) কিংবা সত্যনিষ্ঠ খলিফাদের (খোলাফা-ই-রাশেদীনের) বা রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গীদের যে কারো নাম মোবারক কলুষিত করে, সে তিন বছর পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য বা বর্ধিত হতে পারে এমন মেয়াদের যে কোন একটি বর্ণনার কারাবাসে কিংবা জরিমানায়, কিংবা উভয়বিধে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে         
১০। এই ধারাটি সর্বজনীন শব্দ প্রয়োগের দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং কেবলমাত্র আহমদীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য করা হয়নি। আহমদীদের অনড় অবস্থানের উপর মুসলিমদের উত্তেজনার কারণে বিরোধিত অধ্যাদেশটি উদঘোষিত হয়। উক্ত অধ্যাদেশের মাধ্যমে পাকিস্তান দন্ড সংহিতায় (১৮৬০ সনের ৪৫নং অধ্যাইনে) ২৯৮খ ও ২৯৮গ ধারা সংযোজন করা হয় এবং ফৌজদারী কার্যপ্রণালী সংহিতায় (১৮৯৮ সনের ৫নং অধ্যাইনে) ও ১৯৬৩ সনের পশ্চিম পাকিস্তান ছাপাখানা ও প্রকাশনা অধ্যাদেশে আনুষঙ্গিক সংশোধন সম্পন্ন করা হয়।
২৯৮খ ও ২৯৮গ ধারা নিম্নরূপঃ      
২৯৮খ।
পবিত্র সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ বা স্থানসমূহের জন্য সংরক্ষিত লক্বব, খেতাব, পদবি, উপাধি, বর্ণনা ইত্যাদির অপব্যবহার (১) কাদিয়ানী গোষ্ঠী বা লাহোরী গোষ্ঠীর (যারা নিজেদেরকে আহমদীবা অন্য কোন নামে অভিহিত করে তাদের) যে কোন ব্যক্তি হয় মৌখিক না হয় লিখিত শব্দ দ্বারা কিংবা দৃশ্যমান চরিত্র রূপায়নের মাধ্যমে-
(ক) কোন খলিফা বা হযরত রসূলে পাক মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন ছাহাবী ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে বা ব্যক্তি সম্পর্কে আমীরুল মুমিনীন”, “খলিফাতুল মুমিনীন”, “খলিফাতুল মুসলিমীন”, “সাহাবীবা রাজিয়াল্লাহু আনহুহিসেবে উল্লেখ বা সম্বোধন করে; (খ) রসূলে পাক হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে বা ব্যক্তি সম্পর্কে উম্মুল মুমিনীনহিসেবে উল্লেখ বা সম্বোধন করে; (গ) রসূলে পাক হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারের কোন সদস্য (আহলে বাইত) ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে বা ব্যক্তি সম্পর্কে আহলে বাইতহিসেবে উল্লেখ বা সম্বোধন করে; (ঘ) তার কোন উপাসনালয়কে বা উপাসনালয় সম্পর্কে মসজিদহিসেবে উল্লেখ নামকরণ বা অভিহিত করে;       সে তিন বছর পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য বা বর্ধিত হতে পারে, এমন মেয়াদের যে কোন একটি বর্ণনার কারাবাসে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে এবং জরিমানাধীনও হবে। (২) কাদিয়ানী গোষ্ঠী বা লাহোরী গোষ্ঠীর যারা নিজেদেরকে আহমদীবা অন্য কোন নামে অভিহিত করে তাদের) যে কোন ব্যক্তি হয় মৌখিক না হয় লিখিত শব্দ দ্বারা কিংবা দৃশ্যমান চরিত্র-রূপায়নের মাধ্যমে তার ধর্মীয় বিশ্বাস বা আক্বীদাযুক্ত উপাসনালয়ে আহরনের ধরণ বা করমকে আযানহিসেবে উল্লেখ করে, কিংবা মুসলিমদের দ্বারা যেরূপে প্রদত্ত বা ব্যবহৃত হয়, সেরূপে আযানদেয় বা আবৃত্তি বা ব্যবহার করে, সে তিন বছর পর্যন্ত বর্ধণযোগ্য বা বর্ধিত হতে পারে এমন মেয়াদের যে কোন বর্ণনার কারাবাসে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে এবং জরিমানাধীনও হবে
২৯৮গ।
কাদিয়ানী গোষ্ঠী ইত্যাদির যে কোন ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম নামে অভিহিত করা অথবা তার ধর্মীয় বিশ্বাস বা আক্বীদাকে প্রচার বা প্রসার করা কাদিয়ানী গোষ্ঠী বা লাহোরী গোষ্ঠীর (যারা নিজেদেরকে আহমদীবা অন্য কোন নামে অভিহিত করে তাদের) যে কোন ব্যক্তি সরাসরি নিজেকে মুসলিমহিসেবে দাবি বা জাহির করে, কিংবা তার ধর্মীয় বিশ্বাস বা আক্বীদাকে ইসলামহিসেবে অভিহিত করে বা উল্লেখ করে, কিংবা তার ধর্মীয় বিশ্বাস বা আক্বীদাকে (ইসলাম হিসেবে) প্রচার বা প্রসার করে, কিংবা অন্যদেরকে তার ধর্মীয় বিশ্বাস বা আক্বীদাকে গ্রহণ করার জন্য (ইসলামের নামে) আমন্ত্রণ বা দাওয়াত বা উৎসাহিত করে, কিংবা হয় মৌখিক না হয় লিখিত শব্দ দ্বারা বা দৃশ্যমান চরিত্ররূপায়নের মাধ্যমে বা অন্য যে কোন প্রকারে সে যাই হোক না কেন মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিকে অবমাননা করে, সে তিন বছর পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য বা বর্ধিত হতে পারে এমন যে কোন বর্ণনার কারাবাসে শাস্তিপ্রাপ্ত হবে এবং জরিমানাধীনও হবে    
১১। উপরোক্ত ধারাগুলো নিম্নবর্ণিত কাজগুলোকে একজন আহমদীর জন্য ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, যেমন (ক) নিজেকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুসলিম হিসেবে অভিহিত করা বা দাবি বা জাহির করা কিংবা তার ধর্মীয় বিশ্বাস বা আক্বীদাকে ইসলাম হিসেবে উল্লেখ করা; (খ) তার ধর্মীয় বিশ্বাস বা আক্বীদা প্রচার বা প্রসার করা বা আক্বীদা অন্যদেরকে গ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ করা কিংবা যে কোন প্রকারে সে যাই হোক না কেন মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিকে অবমাননা করা; (গ) আযান দিয়ে বা আবৃত্তি করে জনসাধারণকে উপাসনায় আহ্বান করা কিংবা তার উপাসনায়ে  আহ্বানের ধরন বা করমকে আযান হিসেবে উল্লেখ করা; (ঘ) তার উপসনালয়কে মসজিদ হিসেবে উল্লেখ বা অভিহিত করা; (ঙ) খলিফা বা হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গী ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে আমীরুল মুমিনীন, খলিফাতুল মুমিনীন, খলিফাতুল মুসলিমীন, সাহাবী বা রাদিয়াল্লাহ আনহু হিসেবে, হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আহলিয়া ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে উম্মুল মুমিনীন হিসেবে এবং হযরত রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরিবারের কোন সদস্য ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তিকে আহলে বাইত হিসেবে উল্লেখ করা।      
১২। যে প্রধান হেতুর (বা যুক্তির) উপর ভিত্তি করে এই (শরীয়ত) দরখাস্তগুলো দাখিল করা হয়েছে এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে যে প্রধান হেতুকে (বা যুক্তিকে) সমর্থন করা হয়েছে তা হলো উপরোক্ত বিরোধিত অধ্যাদেশটি দ্বারা শরীয়া এবং আহমদীদের ধর্মীয় আনুগত্য প্রকাশ ধমমচর্চা, এবং ধর্ম প্রচার বা প্রসার করার সাংবিধানিক অধিকার লংঘন করা হয়েছে।          
১৩। এটা প্রসঙ্গতঃ লক্ষ্যনীয় যে, (সুস্পষ্ট) সাংবিধানিক বিধানাবলী সত্বেও দরখাস্তকারীগণ তাদের যুক্তিতর্কে নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস বা আক্বীদাকে ইসলাম হিসেবে অভিহিত করার উপর জোর দিয়েছে এবং এই মুর্মে যুক্তি উপস্থাপন করেছে যে, উক্ত সাংবিধানিক সংশোধনীটি কোন ধর্মীয় সংস্থা কর্তৃক তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা হিসেবে গণ্য হবে না বরং সেই সময়ের শাসক দলের একটি আইন বা অধ্যাইন হিসেবে গণ্য হবে মাত্র। এই যুক্তির প্রেক্ষিতে দরখাস্তকারীদেরকে এই বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে যে, সাংবিধানিক সংশোধনীটি সকল দল কর্তৃক সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে এবং আহমদী সম্প্রদায়ের প্রধানসহ উভয় পক্ষের শুনানীপূর্বক প্রায় বিচারিক পদ্ধতিতেই উক্ত রায় দেওয়া হয়েছে।          
১৪। জনাব মুজিবুর রহমান (কাদিয়ানীদের পক্ষের একজন আইনজীবি এবং একজন কাদিয়ানী ও অন্যতম দরখাস্তকারী) প্রকাশ করেন যে, যেহেতু (শরীয়ত) কোর্ট কোন সাংবিধানিক বিধানাবলীর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিতে পারে না সেহেতু তিনি কাদিয়ানীরা মুসলিম বা অমুসলিম কিনা সেই প্রশ্ন এখানে উত্থাপন করতে চান না। তবে তিনি এই বিষয়ে জোরারোপ করার উপর অনড় থাকেন যে, কাদিয়ানীরা সত্যিকার অর্থে অমুসলিম নয় কিন্তু ইকতিদার-ই-আলা কর্তৃক উক্তরূপে ঘোষিত হয়েছে।          
১৫। অতঃপর তিনি স্পষ্ট করে বলেন, যদি সরকারী আইনজীবী যুক্তি দেখান যে, শরীয়া অনুযায়ী কাদিয়ানীরা অমুসলিম তাহলে তিনি সেই যুক্তি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে খন্ডন করতে রাজি আছেন।
আমরা (বিচারকবৃন্দ) (এই মামলায়) (পাকিস্তান) ফেডারেল সরকারের আইনজীবী জনাব রিয়াজুল হাসান গিল্লানীর নিকট থেকে জানতে চাইলাম যে, তিনি কাদিয়ানীরা সাংবিধানিকভাবে অমুসলিম ঘোষিত হয়েছে কেবলমাত্র এই ধারণার উপর (সীমাবদ্ধ রেখে) আলোচনা চালিয়ে যেতে চান নাকি স্বতন্ত্রভাবে শরীয়ার আলোকে তাদের অবস্থানের দিকটি সম্পর্কেও যুক্তি প্রদর্শন করতে চান তিনি শেষোক্ত প্রস্তাবের অনুকূলে মত দেন। এর ভিত্তিতে জনাব মুজিবুর রহমান (কাদিয়ানীদের আইনজীবী) নিবেদন করেন যে, তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ হুকুম-আহকামের আলোকে কাদিয়ানীদের অবস্থানের প্রশ্নটি সম্পর্কে যুক্তি ও বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করবেন।

কাদিয়ানি রদ - ৮

মির্জ্জা গোলাম আহমদ সাহেব প্রতিশ্রুত মাহদী হইতে পারেন কিনা?
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
          পক্ষান্তরে খৃষ্টান সৈন্যদল তাঁহাদের সম্মুখে উপস্থিত হইবে। হজরত এমামের সৈন্যদল তিন দল হইবে, একদল খৃষ্টানদিগের ভয়ে পলায়ন করিবে এবং এমাম ছাহেবের দল হইতে বিচ্ছিন্ন হইবে, খোদাতায়ালা ইহাদের তওবা কবুল করিবেন না। একদল শহিদ হইয়া ওহোদবদরেরশহিদগণের দরজা প্রাপ্ত হইবেন, অবশিষ্টদল যুদ্ধে জয়ী হইবেন।         তিনি চারি দিবস যুদ্ধ করিবেন, প্রথম তিন দিবসে বহু সৈন্য শহিদ হইবেন, চতুর্থ দিবসে আল্লাহ তাঁহাদিগকে সম্পূর্ণ জয়ী করিবেন। খৃষ্টানদিগের এত সৈন্য নিহত হইবে যে, তাহাদের মস্তিস্কে বাদশাহী করার ধারণা থাকিবে না, অবশিষ্ট সৈন্যরা লাঞ্জিত ও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পলায়ন করিবে, মুসলমানেরা তাহাদের পশ্চাৎধাবিত হইয়া তাহাদের অধিকাংশকে নিহত করিবেন।   তিনি এই যুদ্ধে জয়ী হইয়া বীর-যোদ্ধাদিগকে বহু পুরস্কার প্রদান করিবেন, কিন্তু লোকেরা বহু বংশের শত লোকের মধ্যে একজন জীবিত আছে দেখিয়া উক্ত পুরস্কারে সন্তুষ্ট হইতে পারিবেন না। হজরত এমাম ইছলাম রাজ্যগুলির সুব্যবস্থা করিয়া কনষ্টান্টিনোপল অধিকারের জন্য ধাবিত হইবেন। তিনি- বনু ইছহাক সম্প্রদায়ের ৭০ সহস্র লোককে উক্ত শহর অধিকারের জন্য নিয়োজিত করিবেন, তাঁহারা আল্লাহো আকবর শব্দ উচ্চারণ করিলে, সম্মুখের প্রাচীর খসিয়া পড়িবে। তখন তাঁহারা শহরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া শত্রু সৈন্যদিগের নিপাত সাধন করিবেন। তৎপরে তিনি দেশে সুবিচার ও শান্তি স্থাপনে মনোনিবেশ করিবেন। হজরত এমাম মাহ্দীর বয়য়ত হইতে এই সময় পর্য্যন্ত ছয় বৎসর গত হইবে, এমতাবস্থায় এই সংবাদ প্রচারিত হইবে যে, দাজ্জাল বাহির হইয়া আরব বংশের লোকদের উপর ফাছাদ ও অত্যাচার আরম্ভ করিয়া দিয়াছে। তিনি এই সংবাদ শ্রবণে প্রথমে ৯ জন লোককে ইহার অনুসন্ধানে প্রেরণ করিবেন এবং নিজেও শামের দিকে রওয়ানা হইবেন। অনুসন্ধানে উক্ত সংবাদ মিথ্যা বলিয়া প্রমানিত হইবে। কিছু দিবস পরে প্রকৃতপক্ষে দাজ্জাল বাহির হইয়া পড়িবে। এমাম মাহদী দাজ্জালের দেমাশ্কের নিকট উপস্থিত হওয়ার সংবাদ শুনিয়া তথায় যুদ্ধের আয়োজন করিতে থাকিবেন, নামাজের আজানের পরে হজরত ইছা আলাইহিস সালাম দুইজন ফেরেশতার স্কন্ধে টেক লাগাইয়া আছমান হইতে জামে মছজিদের পূর্ব্বমিনারায় নামিয়া আসিবেন।        
পাঠক, মির্জ্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানি ছাহেব আরবের, বরং দুনইয়ার বাদশাহ ছিলেন না, তিনি হজরতের বংশধর ছিলেন না, এমাম মাহদীর নাম মোহাম্মদ ও তাঁহার পিতার নাম আবদুল্লাহ হইবে, আর মির্জ্জা সাহেব মোগল বংশধর ছিলেন, ইহার নাম গোলাম আহমদ এবং ইহার পিতার নাম গোলাম মোরতজা। এমাম মাহদী মদিনাবাসী হইবেন, লোকে মক্কা শরিফে তাঁহার নিকট বয়য়ত করিবেন, তাঁহার মস্তকের উপরিস্থ একখন্ড মেঘ হইতে একজন ফেরেশতা ঘোষণা করিয়া বলিবেন যে, ইনি খোদার খলিফা মাহদী, ইহার তাবেদারি কর। মির্জ্জা সাহেব মক্কা ও মদিনায় গমন করেন নাই, তিনি মদিনাবাসি নহেন। এমাম মাহদী তোৎলা হইবেন, কিন্তু মির্জ্জা সাহেব তোৎলা ছিলেন না। তাঁহার প্রকাশিত হওয়ার পূর্ব্বে তুরস্ক রাজ্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হইবে, মদিনা শরিফ বিরান (উৎসন্ন) প্রায় হইয়া যাইবে, খয়বর অবধি মুছলমানদিগের অধিকারভূক্ত থাকিবে, তাঁহার খেলাফত বিঘোষিত হইলে, শামদেশ হইতে তাঁহার বিরুদ্ধে দুইদল সৈন্য প্রেরিত হইবে, একদল যুদ্ধে পরাস্ত হইয়া যাইবে, অন্যদল বয়দানামক স্থানে বিধ্বস্ত হইয়া যাইবে। তিনি খৃষ্টানদিগের সহিত ভয়ঙ্কর যুদ্ধ করিয়া জয়ী হইবেন, শাম ও কনষ্টান্টিনোপল অধিকার করিবেন।
মির্জ্জা সাহেবের সময় এই সমস্ত কিছুই সংঘটিত হয় নাই, বরং তিনি জেহাদের ভয়ে আত্মহারা হইয়া কত কিছু মন্তব্য প্রকাশ করিয়াছেন। এমাম মাহদীর সময়ে বহু পৌত্তলিক, য়িহুদী ও খৃষ্টান মুছলমান হইয়া যাইবে এমন কি যেন দুনইয়া ইছলামে পূর্ণ হইয়া যাইবে। মির্জ্জা সাহেবের সময়ে অধিকাংশ বিধর্মী মুছলমান হয় নাই, বরং তিনি নিজের সামান্য সংখ্যক জামায়াত ভিন্ন প্রায় ৪০ কোটি মুসলমানের উপর কাফেরি ফৎওয়া দিয়াছেন। এমাম মাহদীর সময়ে অর্থের এত আধিক্য হইবে যে, লোকে উহা বহন করিয়া লইয়া যাইতে কষ্ট অনুভব করিবে, পক্ষান্তরে মির্জ্জা সাহেবের সময়ে অর্থের এত অভাব ছিল যে, তিনি অনবরত লোকের নিকট হইতে চাঁদা সংগ্রহ করিতেন, এমন কি অর্থশালী হইয়াও জাকাতের টাকা গ্রহণ করিতেন।     
উপরোক্ত কারণে বেশ বুঝা যাইতেছে যে, এমাম মাহদী প্রকাশিত হওয়ার সময় এখনও উপস্থিত হয় নাই আর এমাম মাহদীর একটী চিহ্নও মির্জ্জা সাহেবের মধ্যে পাওয়া যায় না, কাজেই তিনি এমাম মাহদী হইতে পারেন না। মির্জ্জা সাহেব যখন দেখিলেন যে, এমাম মাহদীর চিহ্নগুলি তাহার মধ্যে নাই, তখন নিরাশ হইয়া এমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদীছগুলি জইফ ও বাতীল বলিয়া ফেলিলেন। তিনি ১৩০৮ হিজরির মুদ্রিত এজালাতোল আওহামের ২৬৬ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন।
.......................... 
কিন্তু সূক্ষাতত্ত্ববিদ বিদ্বান্গণের মতে (এমাম) মাহদীর আগমন বিশ্বাসযোগ্য বিষয় নহে।
          তিনি আরও হকিকাতোল মাহদীর ২০ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন;
ان الاحاديث التى جائت فى المهدى الغازري المحارب من نسل الفاطمة الزهراء كلها ضعيفة مجروحة بل اكشرها موضوة ومن قسم الافتراء ولاجل ذالك تر كها الامام البخاري والمسلم والامام الهمام صاحب الموطا.
 “(হজরত) ফাতেমা জোহরার বংশধর গাজি যোদ্ধা মাহদীর সম্বন্ধে যে হাদিছগুলি আসিয়াছে, সমস্তই জইফ, দোষান্বিত, বরং উহার অধিকাংশ জাল, অমূলক, এই হেতু এমাম বোখারী, মোছলেম ও মাননীয় এমাম মোয়াত্তা প্রণেতা উক্ত হাদিছগুলি উল্লেখ করেন নাই।   
পাঠক, এমাম মাহদী সংক্রান্ত হাদিছগুলি জইফ কিম্বা বাতীল নহে, মির্জ্জাজী বাতীল ধারণার বশবর্ত্তী হইয়া এইরূপ অন্যায় দাবি করিয়াছেন।     
কাজি সওকালি তওজিহ কিতাবে লিখিয়াছেন;
وجميع كت سبقناه بالغ حدالتواتر كما لا يخعيى عليى من له فضل اطلاع فتقرربجميغ ما سبقناء فيى هذا الجراب ان الاحاديث الواردة فيى المهديى المنتظر متواترة.
  আমি যে সমস্ত হাদিছ উল্লেখ করিয়াছি, উহা তওয়াতোরএর দরজায় পৌঁছিয়াছে, যে ব্যক্তি অধিক অবগত হইয়াছেন, তাহার পক্ষে অস্পষ্ট থাকিবেনা। এই জওয়াবে যে সমস্ত হাদিছ উল্লেখ করিয়াছি, ইহাতে প্রমানিত হইল যে, মাহদী মোন্তাজের সম্বন্ধে যে হাদিছগুলি আসিয়াছে উহা এত অধিক যে, তৎসমস্ত মিথ্যা হওয়া অসম্ভব, ইহাকে মোতাওয়াতেরবলা হয়।এই মোহাদ্দেছ প্রবর আল্লামা আবদুল হক দেহলবী আশেয়াতোল লাময়াতের ৪/৩৪২ পৃষ্ঠায়ও মোজাদ্দেদে আলফেছানি মকতুবাতের ২য় খন্ডে (১৩২ পৃষ্ঠায়) উক্ত হাদিছগুলিকে মোতাওয়াতের বলিয়াছেন, আর মোতাওয়াতের হাদিছ অকাট্য সত্য হইয়া থাকে।
          পাঠক, মির্জ্জা গোলাম আহমদ ছাহেব নিজে হাদিছ উল্লিখিত মাহদী হওয়া অসম্ভব ধারণা করিয়া যেরূপ উক্ত মোতাওয়াতের হাদিছগুলি জইফ ও অমূলক হওয়ার দাবি করিয়াছেন, সেইরূপ নেচারিদল মছিহএর আগমন সংক্রান্ত হাদিছগুলি ভ্রান্তিমূলক হওয়ার দাবি করিয়া উড়াইয়া দিবার চেষ্টা করিয়াছেন। মির্জ্জা সাহেব নিজের মছিহহওয়া বাতীল হওয়ার ধারণায় উহার কিরূপ উত্তর দিয়াছেন, তাহা পাঠকদিগের গোচরীভূত করিতেছি।      
তিনি এজালায় আওহামের দ্বিতীয় ভাগের ৩০৯/৩১০ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন; বর্ত্তমানের নেচারিদল যাহাদের অন্তরে আল্লাহ ও রাছুলের কথার গুরুত্ব বাকি নাই, অমূলক ধারণা পেশ করিয়া বলিয়া থাকেন যে, মরয়েমের পুত্র মছিহের যে হাদিছগুলি ছেহাহ (ছয় খণ্ড সহিহ হাদিছের) কেতাবে আছে তৎসমুদয় ভ্রান্তিমূলক,  বোধ হয় তাহাদের কথার উদ্দেশ্য এই যে, আমার দাবিকে অবজ্ঞা করিয়া বাতীল প্রতিপন্ন করা হইবে, কিন্তু তাহারা এত সংখ্যক মোতাওয়াতের হাদিছকে এনকার করিয়া নিজেদের ইমানকে বিপন্ন করিয়া তুলিতেছেন। ইহা স্বতঃসিদ্ধ কথা যে, তওয়াতোর অন্যান্য জাতির ইতিহাসে পাওয়া গেলে আমাদিগকে উহা মান্য করিয়া লইতে হয়। রামচন্দ্র ও কৃষ্ণ প্রভৃতি হিন্দুদের মানিত লোকদিগের কথা তাওয়াতোরভাবে ইতিহাস পুস্তকাদিতে উল্লিখিত হইয়াছে বলিয়া আমাদিগকে তাহাদের অস্তিত্ব মানিয়া লইতে হইতেছে, আমরা এইরূপ বলিতে পারিনা যে, রাজা রামচন্দ্র ও রাজা কৃষ্ণ কতকগুলি অমূলক নাম এখন বুঝিতে হইবে যে, যদিও এজমালিভাবে কোর॥আন সমধিক পূর্ণ কেতাব, কিন্তু দীনের অধিক পরিমাণ, এবাদত ইত্যাদির বিস্তারিত নিয়ম আমরা হাদিছ হইতে গ্রহণ করিয়াছি। যদি আমরা সমস্ত হাদিছকে অগ্রাহ্য ধারণা করি, তবে হজরত নবি ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া ছাল্লাম॥এর চারি খলিফার অস্তিত্ব ও ছাহাবা হওয়া প্রমাণ কষ্টকর হইবে, কেননা  কোর॥আন শরিফে তাঁহাদের নাম নাই। সমস্ত হাদিছকে অগ্রাহ্য ধারণা করা, মোতাওয়াতের ভবিষ্যদ্বানীগুলিকে যাহা ছাহাবা, তাবেয়ি ও তাবেয়িদিগের সময়েই সমস্ত ইছলাম রাজ্যে পরিব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছিল এবং সর্ব্ববাদিসম্মত মত বলিয়া গৃহীত হইয়াছিল জাল হাদিছগুলির মধ্যে দাখিল করা নিতান্ত দুরাদৃষ্ট ও ভ্রম হইবে। ইহা অব্যক্ত নহে যে, মছিহ বেনে মরয়েমের আগমনসূচক ভবিষ্যদ্বানী প্রথম শ্রেনীর ভবিষ্যদ্বানী, ইহা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করিয়া লইয়াছেন। এত প্রমাণকে অগ্রাহ্য করা এবং সমস্ত হাদিছকে জাল বলা উহাদের কার্য্য॥ যাহাদিগকে খোদা দীন ও সত্য বুঝিবার একটু জ্ঞান প্রদান করেন নাই।এক্ষণে আমরা কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে জিজ্ঞাসা করি, আপনাদের পীর মির্জ্জা ছাহেব মাহদী সংক্রান্ত মোতাওয়াতের হাদিছগুলিকে জাল বলিয়াছেন, তাহার দীন ও সত্য প্রাপ্তির জ্ঞান আছে কি? এমাম মাহদীর মোতাওয়াতের ভবিষ্যদ্বানী ছাহাবা, তাবেয়ি, তাবা-তাবেয়িদিগের সময়েই সমস্ত ইছলাম রাজ্যে পরিব্যপ্ত হইয়া পড়িয়াছিল এবং তাঁহাদের সর্বাদিসম্মত মত বলিয়া গৃহীত হইয়াছে, নচেৎ নানা দেশে নানা সময়ে মাহদী হওয়ার দাবিদারগণের সৃষ্টি হইত না, মির্জ্জা সাহেব এইরূপ ভবিষ্যদ্বানীকে জাল দাবি করিয়া ভ্রান্তি ও দুরাদৃষ্টির নিম্নস্তরে উপস্থিত হইয়াছেন কিনা? মির্জ্জা ছাহেব দাবি করিয়াছেন যে, মাহদী সংক্রান্ত হাদিছগুলি ছহিহ বোখারি ও মোছলেমে নাই, এই হেতু তৎসমস্ত জইফ কিংবা জাল, ইহা তাঁহার বাতীল দাবি।
                                      ( অসমাপ্ত )