পবিত্র লাইলাতুর রগাইব শরীফ (১লা রজবুল হারাম শরীফ)

 

পবিত্র লাইলাতুর রগাইব শরীফ (১লা রজবুল হারাম শরীফ)


رغائب (রগায়িব) শব্দ মুবারকটি رغيب উনার বহুবচন। যার অর্থ কাঙ্খিত বিষয়, প্রচুর দান। (মিছবাহুল লুগাত-২৯৮)
পারিভাষিক বা ব্যবহারিক অর্থে- আখিরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যে মুবারক রাত্রিতে উনার সম্মানিত আম্মা আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পবিত্র নূর মুবারক হিসেবে কুদরতীভাবে তাশরীফ মুবারক নিয়েছেন সেই মুবারক রাতকে ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ বলা হয়।
দু’আ মুবারক: اَللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِىْ رَجَبَ وَ شَعْبَانَ وَ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ
অর্থ : ‘হে আল্লাহ পাক! আপনি সম্মানীত রজবুল হারাম মাস ও পবিত্র শা’বান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাদেরকে মহাসম্মানীত রামাদ্বান শরীফ মাস পর্যন্ত (হায়াত দিন) পৌঁছার তাওফীক্ব দান করুন। (বায়হাকি শরীফ, শুআবুল ঈমান, হাদিস শরীফ : ৩৫৩৪)
দোয়া কবুল: : ৫ রাত : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন, রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
اِنَّ الدُّعَاءَ يُسْتَجَابُ فِـىْ خَـمْسِ لَيَالٍ اَوَّلُ لَيْلَةٍ مّنْ رَجَبَ وَلَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ وَلَيْلَةُ الْقَدْرِ الْـمُبَارَكَةِ وَلَيْلَتَا الْعِيْدَيْنِ
অর্থ : “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।” (মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ, আমালুল ইয়াত্তমি ওয়াল লাইলাতি)
হযরত আবু রসূলিনা আলাইহিস সালাম-বিলাদত শরীফ: “সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সম্মানিত হিজরত মুবারক উনার প্রায় ৭৮ বছর ৮ মাস ১০ দিন পূর্বে ২রা রজবুল হারাম শরীফ লাইলাতুস সাবত্ শরীফ সম্মানিত মক্কা শরীফ উনার সম্মানিত কুরাইশ বংশ উনার হাশিমী গোত্রে মহাসম্মানিত বরকতময় বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।” সুবহানাল্লাহ!
হযরত উম্মু রসূলিনা আলাইহাস সালাম-বিলাদত শরীফ: তিনি আনুষ্ঠানিক নবুওয়ত প্রকাশের ৫৯ বছর পূর্বে, হিজরতের ৭২ বছর পূর্বে, ঈসায়ী ৫৫২ সন মুতাবিক শামসী পূর্ব ৮১ সনে পবিত্র মদীনা শরীফ উনার নাযযার গোত্রের বনী যুহরায় সাইয়্যিদুশ শুহূর পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ উনার ৫ই তারিখ পবিত্র জুময়াহ শরীফ পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন।
পবিত্র নিসবতে আযীম মুবারক: আবূ রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম এবং উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত হাবীবাতুল্লাহ আলাইহাস সালাম উনাদের সম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ দিবস, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের ৮ মাস ১২ দিন পূর্বে, ১ রজবুল হারাম শরীফ লাইলাতুল জুম‘য়াহ। সুবহানাল্লাহ! তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার বয়স মুবারক ছিলেন ২৪ বছর ১১ মাস ২৯ দিন এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বয়স মুবারক ছিলেন ১৮ বছর ৩ মাস ২৫ দিন। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত মোহরানা মুবারক: সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত নিসবতে আযীম শরীফ উনার সম্মানিত মোহরানা মুবারক ছিলো নগদ এক উকিয়া স্বর্ণ ও এক উকিয়া রৌপ্য। সুবহানাল্লাহ!
সম্মানিত ওলীমা মুবারক: সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ছিলেন সমস্ত কুরাইশ সম্প্রদায় উনাদের সাইয়্যিদ। তিনি তো জিন-ইনসানকে খাওয়াতেনই; শুধু তাই নয়, বরং বন্যপশু-পাখীদেরকেও খাদ্য খাওয়াতেন। সুবহানাল্লাহ! তাই তিনি সকলের মাঝে‘মুত্ব‘ইমুল ইন্সি ওয়াল ওয়াহ্শি ওয়াত ত্বইর’ তথা মানুষ, বন্য পশু ও পাখীদেরকে খাদ্যদানকারী এই সম্মানিত লক্বব মুবারক-এ পরিচিত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ! কিতাবের এক বর্ণনায় দেখা যায় যে, তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যাবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত ওলীমা মুবারক উপলক্ষে একশত উট, একশত গরু, একশত বকরী জবাই করে প্রচুর পরিমাণে খাবার প্রস্তুত করেছেন এবং সম্মানিত মক্কা শরীফ ও তৎসংলগ্ন এলাকার সবাইকে দাওয়াত করে মেহমানদারী মুবারক করেছেন। এই সম্মানিত মেহমানদারী মুবারক চারদিন পর্যন্ত চলেছে। সুবহানাল্লাহ!
খুতবা মুবারক: সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সুন্নতী তারতীব মুবারক অনুযায়ী প্রথমে মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা ও ছানা-ছিফত মুবারক করেন।
তারপর সকলের উদ্দেশ্যে সম্মানিত নছীহত মুবারক করেন। এভাবে সাইয়্যিদুনা খাজা হযরত ওয়াহাব ইবনে আবদে মানাফ আলাইহিস সালাম তিনি উনার সংক্ষিপ্ত নছীহত মুবারক শেষ করেন। তারপর সাইয়্যিদুনা হযরত জাদ্দু রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দোয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন।
সর্বশ্রেষ্ঠ রাত: ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি: হযরত মাওলানা শাহ কারামত আলী জৌনপুরী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার বিশ্বখ্যাত কিতাব, “বারাহীনুল ক্বতইয়াহ ফী মাওলিদী খাইরিল বারীয়াহ” নামক কিতাবে বিষয়টি উল্লেখ করেছেন, এ মুবারক রাত্রির ফযীলত বা শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে হাম্বলী মাযহাবের সম্মানিত ইমাম হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি যখন ফতওয়া করলেন, ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব’ শরীফ উনার ফাযায়িল-ফযীলত, মর্যাদা-মর্তবা হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাত অর্থাৎ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর, পবিত্র লাইলাতুল বরাতসহ অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রি অপেক্ষা লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। (সুবহানাল্লাহ!)
তখন সমসাময়িক ইমাম ও ফক্বীহগণ উনার নিকট জানতে চাইলেন, হে হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি! লাইলাতুল ক্বদর এবং লাইলাতুল বরাত উনাদের ফযীলত সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন। কিন্তু ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ উনার ফযীলত সম্পর্কে কোথাও বর্ণনা করা হয়নি। তাহলে আপনি কিসের ভিত্তিতে ফতওয়া দিলেন যে, পবিত্র ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ উনার ফযীলত উক্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রিগুলো অপেক্ষাও বেশি?
হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জবাবে বলেন, আপনারা কি জানেন-লাইলাতুর রগাইব কি?
পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর ও পবিত্র লাইলাতুল বরাত উনাদের ফযীলত পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে সত্যিই; কিন্তু লাইলাতুল ক্বদর ও লাইলাতুল বরাতসহ অন্যান্য সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রির সৃষ্টি হয়েছে পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ উনার উসীলায়। অর্থাৎ ‘পবিত্র লাইলাতুর রগায়িব শরীফ’ না হলে ‘লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতুল বরাতসহ’ ফযীলতপূর্ণ কোনো রাত্রির সৃষ্টিই হতো না। এ কারণেই উক্ত রাত মুবারক উনার ফযীলত সমস্ত ফযীলতপূর্ণ রাত্রির চেয়ে লক্ষ-কোটিগুণ বেশি। সুবহানাল্লাহ!
বিশেষ ওয়াকেয়া: জান্নাতে মেহমানদারি: ১৪৪০ হিজরী: ১লা রজবুল হারাম শরীফ যদি বড় করে করা হয় তাহলে জান্নাতে মেহমানদরীর ব্যবস্থা করা হবে। ২২ জুমাদ্বাল উলা ১২ পদের করা হয়েছিলা, ১ লা রজবুল হারাম ১৩ পদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।