আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহকাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ৪ নং )


গবেষণা কেন্দ্র-মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে  ফতওয়া

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
[সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের এবং অসংখ্য দরূদ ও সালাম আল্লাহ্ পাক-এর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতপত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইন্জেকশন নেয়া রোযা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাজে বা অন্যান্য সময় কোরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্ নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, দাড়ী ও গোঁফের শরয়ী আহ্কাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া  প্রকাশ করার পর (১৫তম) ফতওয়া হিসেবে আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।]

ছানী আযান সম্পর্কিত
কতিপয় সংশয় নিরসন
(৬)
উল্লেখ্য, কেউ কেউ বলে থাকে যে, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছানী আযানের প্রবর্তন করলেও যে, তাঁর সময় যে, মসজিদের ভিতরে আযান দেয়া হতো, এর কোন প্রমাণ নেই। কেননা কিতাবে উল্লেখ  আছে,          
اذن المؤذن بين يديه.
অর্থঃ-মুয়াজ্জিন তাঁর (হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর) সম্মুখে আযান দিয়েছেন।
            এখানে বাইনা ইয়াদাইহি  (بين يديه) শব্দের দ্বারা মসজিদের ভিতরে হওয়ার চেয়ে বাইরে হওয়াই অধিক প্রমাণিত হয়। কেননা হাদীস শরীফে স্পষ্টই উল্লেখ আছে,
....... يؤذن بين يدى رسول الله ...... على باب المسجد.
অর্থঃ-“ .......... রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মুখে ...... মসজিদের দরজার উপরে আযান দেয়া হতো।এখানে (بين يديه) বাইনা ইয়াদাই  শব্দও উল্লেখ আছে। সাথে সাথে  على باب المسجد))  আলা বাবিল মাসজিদও উল্লেখ আছে। যদি বাইনা ইয়াদাই অর্থ ভিতরে ধরা হয়, তবে তার অর্থ দাঁড়ায়- মসজিদের ভিতরে দরজার উপর। কাজেই একই সাথে মসজিদের ভিতরে ও দরজার উপর আযান দেয়া সম্পূর্ণই অসম্ভব। সুতরাং বাইনা ইয়াদাই শব্দের অর্থ হলো- মসজিদের বাইরে। তাছাড়া হাদীস শরীফে স্পষ্টই আলা বাবিল মাসজিদ উল্লেখ আছে। তাই জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের বাইরে দেয়াই সুন্নত।
            এ প্রসঙ্গে প্রথমতঃ বলতে হয় যে, বাইনা ইয়াদাইহি (بين يديه) সম্পর্কিত তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও মনগড়া। কারণ বাইনা ইয়াদাইশব্দের অর্থ অবশ্যই সম্মুখে বা সন্নিকটে। হাদীস শরীফে বাইনা ইয়াদাইআলা বাবিল মাসজিদএকই সাথে উল্লেখ করার কারণ হলো- যদি শুধুমাত্র আলা বাবিল মাসজিদউল্লেখ করা হতো আর বাইনা ইয়াদাইশব্দ উল্লেখ না করা হতো, তবে প্রশ্ন থেকে যেত যে, “আলা বাবিল মাসজিদঅর্থাৎ মসজিদের দরজায় আযান দেয়া হতো, এখন তা কোন্ দরজায় দেয়া হতো? ডানে? বায়ে? না সম্মুখস্থ দরজায়? কেননা তখন মসজিদে নববীতে তিনটি দরজা ছিল।
            সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমুয়ার দিন মিম্বরে বসার পর তাঁর ডান দিকে যে দরজাটি ছিল, যেটি দিয়ে তিনি হুজরা শরীফ থেকে মসজিদে প্রবেশ করতেন, সে দরজাটির নাম হলো- (باب النبى) বাবুন্ নবী। আর তার বাম দিকে যে দরজাটি ছিল, যেটি দিয়ে আছহাবে ছুফ্ফাহ্গণ মসজিদে আসা-যাওয়া করতেন, সে দরজাটির নাম হলো- باب الرحمة)) বাবুর রহ্মত। আর তার সম্মুখস্থ মূল যে দরজাটি ছিল, যেটি দিয়ে সাধারণতঃ হযরত জিব্রাঈল (আঃ) মসজিদে নববীতে প্রবেশ করতেন, সে দরজাটির নাম হলো- (باب جبرائيل) বাবু জিব্রাঈল।
            উল্লিখিত তিনটি দরজার মধ্যে কোন্ দরজায় আযান দেয়া হতো, তা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্যই আলা বাবিল মাসজিদেরসাথে বাইনা ইয়াদাইশব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। যদ্বারা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মুখস্থ দরজায় অর্থাৎ বাবে জিব্রীলের উপর আযান দেয়া হতো। এটাই আলা বাবিল মাসজিদ”-এর সাথে সাথে বাইনা ইয়াদাইশব্দ উল্লেখ করার মূল কারণ।
            দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে, যারা আলা বাবিল মাসজিদএ হাদীস শরীফের দ্বারা বাইরে আযান দেয়া সুন্নত বলে থাকে, তাদের সে বক্তব্য সম্পূর্ণই ভুল ও অবান্তর। কারণ আলা বাবিল মাসজিদসংক্রান্ত হাদীস শরীফখানা মূলতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং দুখলীফায়ে রাশেদাহ্- হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময়কার জুমুয়ার আযানের দলীল। অর্থাৎ এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই যে, তাঁদের সময়ে জুমুয়ার দিন খুৎবার আযান মসজিদের দরজায় দেয়া হতো, যা আমরা পূর্বে বহুবার বলেছি এবং এখনো বলছি। কিন্তু তৃতীয় খলীফায়ে রাশেদাহ্- হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃগণের পরামর্শক্রমে জুমুয়ার দিনে একটি আযান বৃদ্ধি করেন, যা মসজিদের বাইরে যাওরা নামক স্থানে দেয়ার নির্দেশ দেন। আর পূর্বেকার দরজার আযানকে স্থানান্তরিত করে মসজিদের ভিতর, মিম্বরের সন্নিকটে দেয়ার আদেশ দেন। যার উপর পরবর্তীতে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্মায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তখন থেকে অদ্যাবধি সেই একই নিয়মে আযানে ছানী মসজিদের ভিতর, মিম্বরের নিকটে দেয়া হয়। তাই বর্তমানেও আযানে ছানী মসজিদের ভিতর, মিম্বরের নিকটে দেয়াই সুন্নত। কারণ উল্লিখিত হাদীস শরীফখানার আমলের হুকুম হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্মা দ্বারা মানসুখ বা মাশরুহ্ অর্থাৎ ব্যাখ্যা হয়ে পরিবর্তন হয়েছে। এ সম্পর্কে গত সংখ্যায় দলীল সহকারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
            তৃতীয়তঃ বলতে হয় যে- যারা আলা বাবিল মাসজিদ”, এ হাদীস শরীফের প্রেক্ষিতে বলে থাকে যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময়েও আযানে ছানী মসজিদের বাইরে দেয়া হতো এবং তাঁর সময়ে আযানে ছানী মসজিদের ভিতরে; দেয়া হতো, এরূপ কোন প্রমাণ নেই। তাদের এ বক্তব্য নেহায়েতই অজ্ঞতামূলক ও কল্পনা প্রসূত। কারণ হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময় যে, আযানে ছানী মসজিদের দরজায় বা বাইরে দেয়া হতো না, উক্ত হাদীস শরীফই তার বাস্তব প্রমাণ। কেননা উক্ত হাদীস শরীফে আলা বাবিল মাসজিদস্পষ্টই উল্লেখ আছে। কিন্তু হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সম্পর্কিত বর্ণনায় শুধুমাত্র বাইনা ইয়াদাইহিউল্লেখ আছে, “আলা বাবিল মাসজিদউল্লেখ নেই। এখন কথা হলো- বাইনা ইয়াদাইহিশব্দের অর্থ সম্মুখে বা সন্নিকটে, এখন তা কতটুকু সম্মুখে বা সন্নিকটে? তা স্পষ্ট করে দেয়ার জন্যই তাফসীর, ফতওয়া ও ফিক্বাহ্রে কিতাবে বাইনা ইয়াদাইহির   সাথে সাথে (عند المنبر) ইন্দাল মিম্বর, (تحت المنبر) তাহ্তাল মিম্বর,
  (بين يدى الخطيب والامام) বাইনা  ইয়াদাইয়্যিল খতীব ওয়াল ইমাম ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। মূলতঃ হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময় যে, আযানে ছানী মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে দেয়া হতো, তার বহু প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু তাঁর সময় ছানী আযান মসজিদের দরজায় দেয়া হতো, এরূপ একখানা দুর্বল দলীলও কেউ পেশ করতে পারবেনা।
            অতএব, যদি তাই হয়ে থাকে, তবে একথা কি করে সত্য হতে পারে যে, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময় আযানে ছানী মসজিদের বাইরে দেয়া হতো এবং তাঁর সময়ে মসজিদের ভিতরে ছানী আযান দেয়ার কোন প্রমাণ নেই। বস্তুতঃ তাদের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই মিথ্যা ও মনগড়া প্রমাণিত হলো।
            উল্লেখ্য, যারা (بين يديه) (বাইনা ইয়াদাইহি) শব্দের অর্থ করে- মসজিদের বাইরে বা মিম্বর থেকে দূরে, তাদের সে অর্থ সম্পূর্ণই ভুল। বরং হাদীস শরীফ, তাফসীর, ফিক্বাহ্ ও লোগাতের বর্ণনা সমূহ তাহ্ক্বীক্ব করার পর এটাই সাব্যস্ত হয় যে, উক্ত بين يديه-এর অর্থ হলো- ইমাম বা খতীবের সম্মুখে বা সন্নিকটে।অর্থাৎ মুয়াজ্জিন খতীবের সম্মুখে বা সন্নিকটে আযান দিবে। যেমন বিখ্যাত ও মশহুর লোগাতের কিতাব- লিসানুল আরব, আল মুজামুল ওয়াজীয, কামূসূল কোরআন, আল্ মুনজিদ, মিছবাহুল লোগাত ইত্যাদিতে বাইনা ইয়াদাইহি (بين يديه)-এর অর্থ- সম্মুখে বা সন্নিকটে বলে উল্লেখ আছে।
            আর  বাইনা ইয়াদাইহিশব্দের অর্থ যে সম্মুখে বা অতি সন্নিকটে, তার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই বোখারী শরীফের ১ম জিঃ ৭৩ পৃষ্ঠায়। যেখানে উল্লেখ আছে যে,
قال حدثنا ابو صالح السمان قال رأيت ابا سعيد الخدرى فى يوم حمعة يصلى الى شئى يستره من االناس فار اد شاب من بنى ابى معيط- ان يجتاز بين يديه- فدفع ابو سعيد فى صدره.
অর্থঃ- হযরত আবু সালেহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি জুমুয়ার দিন হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে কোন এক বস্তুর দিকে নামাজ পড়তে দেখেছি। তিনি উক্ত বস্তুকে মানুষের থেকে (নামাজের) ছূতরা করেছেন। অতঃপর বণী আবূ মুয়াইত গোত্রের এক যুবক তার সামনে দিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলো। তখন হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার বুকে আঘাত করলেন।   উল্লেখ্য, উক্ত হাদীস শরীফেও বাইনা ইয়াদাইশব্দ উল্লেখ আছে। অথচ নামাজী ও নামাজী ব্যক্তির সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী উক্ত ব্যক্তিদ্বয়ের মধ্যে ব্যবধান বা দূরত্ব হলো- প্রায় দুহাতের মত। কারণ এর চেয়ে বেশী দূরত্ব হলে নামাজে থেকে কাউকে আঘাত করা সম্ভব নয়। অনুরূপ মেশকাত, শরীফের দুখানা হাদীস শরীফের বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, “বাইনা ইয়াদাই”-এর অর্থ হলো- সম্মুখে বা সন্নিকটে। যেমন এক হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে,
عن عبد الرحمن بن العوف قال- عممنى رسول الله صلى الله عليه وسلم فسد لها بين يدى ومن خلف.
অর্থঃ- হযরত আব্দুর রহ্মান ইবনুল আওফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার মাথায় পাগড়ী বেঁধে দিয়েছেন। পাগড়ীর এক অংশ আমার সম্মুখে ও অপর অংশ আমার পিছনে ঝুলিয়ে দিয়েছেন।” (মেশকাত, মেরকাত,  আশয়াতুল লুময়াত, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব,্)
            এ হাদীস শরীফেও বাইনা ইয়াদাইহিউল্লেখ আছে। যার অর্থ হলো- সম্মুখে বা একেবারেই নিকটে। আর অন্য হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
عن عكراش رضى الله عنه قال- اكل رسول الله صلى الله عليه وسلم من بين يديه.
           
অর্থঃ-হযরত ইক্রাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ সম্মুখস্থ পাত্র থেকে খাদ্য খেয়েছেন।” (মেশকাত, মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্)
            এ হাদীস শরীফেও     بين يديه” (বাইনা ইয়াদাইহি) শব্দ উল্লেখ আছে। আর সম্মুখস্থ পাত্র থেকে খাদ্য গ্রহণ করতে কতটুকু দূরত্ব প্রয়োজন, তা বলা সম্পূর্ণই নিস্প্রয়োজন। কারণ আক্বলমন্দ মাত্রই তা স্পষ্ট বুঝে আসার কথা।
            আর ফিক্বাহের বিখ্যাত কিতাব ফতওয়ায়ে শামী ও বাদায়েউছ্ছানায়েকিতাবে বাইনা ইয়াদাই”-এর নিম্নরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে,
ويؤذن ثانيا بين يديه اى الخطيب.
অর্থঃ-ছানী আযান তার সম্মুখে দিবে অর্থাৎ খতীবের সম্মুখে দিবে।
            এখানে বাইনা ইয়াদাইদ্বারা খতীবের সম্মুখে বুঝানো হয়েছে, মসজিদের দরজায় নয়। কাজেই যারা বাইনা ইয়াদাই”-এর অর্থ করে মসজিদের দরজায়”, তারা চরম জাহেল ও বেআক্বেল।
            স্মর্তব্য যে, “বাইনা ইয়াদাইশব্দের সাথে সাথে অন্যান্য নির্ভরযোগ্য ও সর্বজন স্বীকৃত কিতাব সমূহের অসংখ্য বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বয়ং নিজেই ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে দেয়া শুরু করেন। যেমন এ প্রসঙ্গে তাফসীরে আহ্কামুল কোরআন লিল কুরতুবীতেউল্লেখ আছে,
ثم زاد عثمان رضى الله عنه اذانا ثانيا يؤذنون بمدينة الصلام وبعد اذان المنار بين يدى الامام تحت النبر.
অর্থঃ- অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনা শরীফে দ্বিতীয় আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন। আর মিনার-এর আযানের পর (ছানী আযান) ইমামের সম্মুখে, মিম্বরের নিকটে (দেয়ার নির্দেশ) দেন।
            আর তাফসীরে রুহুল মায়ানীতে উল্লেখ আছে,
اذا كان عشمان وكثر الناس زاد مؤذنا اخر- فامر با لتأذين الاولى على داره التى تسمى زوراء فاذا على المنبر اذن مؤذن الثانى بين يدى المنير.حلس.
অর্থঃ- হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খিলাফতে আসীন হবার পর জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে দ্বিতীয় আরেকটি আযান (বর্তমানের প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন। অতঃপর প্রথম আযানটি যাওরানামক স্থানে দেয়ার নির্দেশ দেন এবং ছানী আযানমিম্বরে বসার পর মিম্বরের সম্মুখে দেয়ার নির্দেশ দেন।
            অনুরূপ ফিক্বাহ্রে বিখ্যাত কিতাব ফতহুল ক্বাদীর ও মারাক্বিউল ফালাহ্তেউল্লেখ আছে,
الاذان الثانى عندا المنبر بين يدى الخطيب.
অর্থঃ-ছানী আযান মিম্বরের নিকট, খতীবের সম্মুখে দিতে হবে।
            উপরোক্ত কিতাব সমূহের বক্তব্য দ্বারা দুটি বিষয় সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়- প্রথমতঃ তাফসীরে আহ্কামুল কোরআন ও রুহুল মায়ানীরবক্তব্য দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয় যে, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বয়ং নিজেই ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়া শুরু করেন বা নির্দেশ দেন।
 দ্বিতীয়তঃ ফতহুল ক্বাদীর ও মারাক্বিউল ফালাহ্তে যেহেতু সুস্পষ্টভাবেই উল্লেখ আছে যে, ছানী আযান
عند المنبر بين يدى الخطيب.
মিম্বরের নিকটে, খতীবের সম্মুখে দিতে হবে। সেহেতু ছানী আযান মসজিদের ভিতরেই দিতে হবে, দরজায় নয়। কারণ, عند المنبر এর অর্থই হলো মসজিদের ভিতরে আযান দেয়া।          অতএব, بين يديه. (বাইনা ইয়াদাই) শব্দ ছাড়াও عند. المنبر (ইন্দাল মিম্বর),   تحت المنبر(তাহ্তাল মিম্বর),
بين يدى الخطيب(বাইনা ইয়াদায়্যিল খতীব),
ين يدى الامام(বাইনা ইয়াদায়্যিল ইমাম) ইত্যাদি শব্দ বা বাক্য সমূহ দ্বারাও সুস্পষ্ট ও অকাট্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, “ছানী আযানমসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকট, ইমাম বা খতীবের সম্মুখে দিতে হবে।
            আর এটা মূলতঃ হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্মায়ে আযীমত দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। যা পালন করা উম্মতে মুহম্মদীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। কেননা হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,


عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراسدين المهديين.
অর্থঃ- তোমাদের জন্য আমার সুন্নত ও খোলাফা-ই-রাশেদীনগণের সুন্নত অবশ্য পালনীয় বা পালন করা ওয়াজিব।” (মেশকাত, মেরকাত, আশয়াতুল লুময়াত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ ছবীহ্, মোযাহেরে হক্ব,্)
            উপরোক্ত বিস্তারিত ও দলীল ভিত্তিক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যেরূপ জুমুয়ার দিন একটি আযান বৃদ্ধি করেন, তদ্রুপ জুমুয়ার ছানী আযান মজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে, খতীবের সম্মুখে দেয়া তিনিই শুরু করেন। আর যারা বলে, “বাইনা ইয়াদাইশব্দ দ্বারা দরজার উপর আযান দেয়া বুঝায়, তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই জেহালতপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর, দলীলবিহীন, মনগড়া ও পরিত্যাজ্য। বরং শুধু বাইনা ইয়াদাইনয়, عند المنبر) ইন্দাল মিম্বর,      (تحت المنبر) তাহ্তাল মিম্বর,      بين يدى الخطيب)) বাইনা ইয়াদায়্যিল খতীব ইত্যাদি শব্দ বা বাক্য দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, ছানী আযান মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে, খতীবের সম্মুখে দিতে হবে বা দেয়া সুন্নত। আর বিশেষ করে, যেহেতু এর উপর ইজ্মায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই এটাকে অস্বীকার বা অবজ্ঞা করা নিঃসন্দেহেই কুফরী। এটাই আছাহ্, মুত্তাবা ও মোখতার মত। 

জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে ও খতীবের সম্মুখে দেয়া জায়েয ও সুন্নত হওয়ার নির্ভরযোগ্য ও অকাট্ট দলীল সমূহ
            উল্লেখ্য, ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে ও ইমামের সম্মুখে দেয়া যে, হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্মা তথা ইজ্মায়ে আযীমত দ্বারা প্রমাণিত এবং ছানী আযানমসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে খতীবের সম্মুখে দেয়াই যে খাছ সুন্নত, নিম্নে বিশ্ব বিখ্যাত, নির্ভরযোগ্য ও সর্বজনমান্য তাফসীর, হাদীস শরীফের শরাহ্, ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার কিতাব থেকে তাঁর অকাট্ট দলীল সমূহ পেশ করা হলো-
(১)
ما كان لرسول صلى الله عليه وسلم الا ؤذن واحد يؤذن اذا قعد على المنبر ثم يقيم اذا نزل ثم ابو بكر كذالك ثم عمر كذالك ثم عمر كذالك فلما كان عثمان وفشا الناس وكثروا زاد النداء الثالث. (احكام القران للجصاص-ج-صفه-৩৩৪)
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়ে একটি মাত্র আযান দেয়া হতো। আর তা দেয়া হতো- যখন তিনি মিম্বরে বসতেন। অতঃপর মিম্বর থেকে অবতরণ করার পর ইক্বামত দেয়া হতো। অনুরূপ হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময়েও একটি মাত্র আযান জারী ছিল। যখন হযরত ওসমান জিন্ নূরাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খলীফা হলেন এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলো ও বিস্তার লাভ করলো, তখন তিনি তৃতীয় আরেকটি আযান (বর্তমানের প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন।” ...... (তাফ্সীরে আহ্কামুল কোরআন লিল জাছ্ছাছ ৫ম জিল্দ, পৃষ্ঠা-৩৩৬)
(২)       
وقد كان الاذان على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم كما فى سائر الصلوات يؤذن واحد اذا حلس النبى على المنبر وكذ الك كان يفعل ابو بكر وعمر رضى الله عنهما ثم زاد عثمان رضى الله عنه اذانا ثانيا يؤذنون بمدينة السلام وبعد اذان المنار بين يدى الامام تحت المنبر- (تفسير الجامع الا حكام القران للفر طيى ১৮ج صفه ১০০)
অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম॥এর সময় জুমুয়ার দিন পাঁচ ওয়াক্ত আযানের ন্যায় একটি মাত্র আযানই প্রচলিত ছিল, যা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মিম্বরে বসার পর দেয়া হতো। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মদীনায় দ্বিতীয় আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন এবং দ্বিতীয় আযানটি অর্থাৎ মিনারের আযানের পর ইমামের সম্মুখে, মিম্বরের নিকট প্রথম আযান দেয়া শুরু করেন।” (তাফসীরে আহ্কামুল কোরআন লিলকুরতুবী ১৮জিঃ পৃঃ১০০)
(৩)       
وقد كان لرسول الله صلى الله عليه وسلم مؤذن واحد فكن اذا حلس على المنبر اذن على باب المسجد- فاذا انزل رسول الله صلى الله عليه وسلم اقامة الصلاة- ثم كان ابو بكر وعمر على ذالك حتى اذا كان عثمان وكثر الناس زاد مؤذنا اخر- فامر بالتاذين الاولى على داره التى تسمى زوراء فاذا حلس على المنبر اذن مؤذن الثانى بين يدى المنبر. ( تفسير روح المعانى ج ১৪ صفه ৯৮)

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামল মরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় একটিমাত্র আযান প্রচলিত ছিল, যা তিনি মিম্বরে বসার পর দরজায় দেয়া হতো। অতঃপর যখন তিনি মিম্বর হতে নামাজের জন্য দাঁড়াতেন, তখন নামাজের জন্য ইক্বামত দেয়া হতো। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পর্যন্ত একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু খিলাফতে আসীন হবার পর জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে দ্বিতীয় আরেকটি আযান (বর্তমানে প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন, অতঃপর প্রথম আযানটি যাওরানামক স্থানে দেয়ার হুকুম দেন ও দ্বিতীয় আযানটি মিম্বরে বসার পর মিম্বরের সম্মুখে দেয়ার আদেশ দেন।” (তাফসীরে রুহুল মায়ানী, ১৪জিঃ পৃঃ৯৮)
(৪)
(قوله اذا نودى) اى اذن الا ذان الواقع بين يدى الخطيب من الواقف حانب المنبر لا نه المعهود فى زمنه صلى الله عليه وسلم اما غيره فحادث فى زمن عشمان. (حاشية الشرقوى- ج-১- صفه ২৬০)
অর্থঃ- নুদিয়াদ্বারা মিম্বরের নিকটে, খতীবের সম্মুখে, যে আযান দেয়া হয় তাকেই বুঝানো হয়েছে। কেননা এ আযানটিই রাসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় ছিল। অপর আযানটি হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময়ে উদ্ভাবিত হয়েছে।” (হাশিয়াতুশ্ শারক্বাবী- ১ম জিল্দ, পৃষ্ঠা- ২৬০)
(৫) 
اذا اذن المؤذن بين يدى الامام وهو على المنبر فى يوم الجمعة للصلاة- فاتر كوا البيع واسعو لتسمعوا موعظة الامام فى خطبته. (تفسير مراغى ح১০ صفه ১০৩)
অর্থঃ- যখন জুমুয়ার দিন নামাজের জন্য ইমাম মিম্বরে বসার পর মুয়াজ্জিন তার সম্মুখে বা সন্নিকটে আযান দিবে, তখন তোমরা বেচা-কেনা বন্ধ করে দাও এবং ইমামের খুৎবা শুনার জন্য ধাবমান হও।” (তাফসীরে মোরাগী জিঃ১০ পৃঃ১০৩)
(৬)       
اور دوسری اذان خطبے کے وقت منبر کے سامنے ھوتی ھے- اور تیسری اذان یھی منارہ و الی ھے (تفسیر مظھری ج১৩ صفہ ২৮১)
অর্থঃ- ছানী আযান খুৎবার পূর্বে মিম্বরের সম্মুখে হবে এবং তৃতীয় আযান যা মিনারার উপর দেয়া হতো। (তৃতীয় এজন্য বলা হয়, কারণ ইক্বামতকেও আযান বলা হয়) মূলতঃ ওটাই প্রথম আযান।” (তাফসীরে মায্হারী ১৩জিঃ পৃঃ২৮১)
(৭)

نودی سے مراد قران مین وہ اذان ھے جو نزول ایت کے وقت تھی اس سے پھلی اذان بعد کو حضرت عثمان علیہ السلام کے عھد مین صحابہ کے اجماع سے مقرر ھوا ھے ( تفسیر عثمانی ج২৮ صفہ ৭১৮)

অর্থঃ- কোরআন শরীফে নুদিয়াদ্বারা ঐ আযানকেই বুঝান হয়েছে, যে আযান আয়াত শরীফ নাযিল হবার সময় ছিল অর্থাৎ বর্তমানে যে আযান ইমামের সামনে দেয়া হয়। কেননা এর পূর্বে যে আযান দেয়া হয়, তা হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময় হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্মার দ্বারা সাব্যস্ত করা হয়।” (তাফসীরে ওসমানী ২৮পারা, ৭১৮পৃঃ)
(৮)

وكان عمر رضى الله عنه امر ان يؤذن فى السوق ليقوم الناس عن سوقهم فاذا احتمعوا اذن فى المسجد- فجعله عثمان رضى الله عنه اذانين فى المسجد. (تفسير سراج المنير ح صفه ২৮৫)
অর্থঃ- হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বাজারে আযান দেয়ার জন্য আদেশ করেছেন যাতে করে মুছল্লীগণ বাজার হতে এসে নামাজ আদায় করতে পারে। অতঃপর মুছল্লীগণ একত্রিত হলে মসজিদের ভিতর আযান (ইক্বামত) দেয়া হতো। অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মসজিদের ভিতরে দুটি আযানের প্রচলন করেন।” (এটার দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হয় যে, খতীবের সামনের আযান অর্থাৎ ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার নিয়ম হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই জারী করেন।) (তাফসীরে সিরাজুম্ মুনীর ৪র্থ খন্ড ২৮৫ পৃঃ)
(৯-১০)
وقد كان الاذان فى عهد النبيى صلى الله عليه وسلم فى الحمعه كسانر الاذان فى مؤذن واحد- اذا حلس صلى الله عليه وسلم على المنبر وكذا لك كان يفعل عمر رضى الله عنه ثم زاد عثمان اذانا ثانيا على الزوراء حتى كنر الناس با لمدينة- ...... يؤذنون بعد اذان المنار بين يدى الامام تحت المنبر. (احكام القران لشفيع ج ه صفه ২০- ২১، وكذا فى احكام القران لابن العربى)

অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় থেকে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকাল পর্যন্ত জুমুয়ার নামাজে অন্যান্য নামাজের আযানের ন্যায় একটি মাত্র আযানই প্রচলিত ছিল। অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মদীনায় অবস্থিত যাওরানামক স্থানে দ্বিতীয় আরেকটি আযান (বর্তমানের প্রথম আযান) বৃদ্ধি করেন। .......... এবং মিনারার আযানের পর, প্রথম আযানটি (বর্তমানের দ্বিতীয় আযান) মিম্বরের নিকটে ইমামের সম্মুখে দেয়া শুরু করেন।” (তাফসীরে আহ্কামুল কোরআন লিশ শফী ৫ম জিঃ পৃষ্ঠা-৬০-৬১,        অনুরূপ আহ্কামুল কোরআন লি ইব্নিল আরাবিতেও উল্লেখ আছে)
(১১-১২)
اذا نودی- اس سے خطیب اور منبر کے سامنے کی اذان جمعہ مراد ھے کیونکہ اس سے پھلی کی اذان انحضرت صلی اللہ علیہ وسلم کے زمانہ مین رانج نھین ھوئی تھی- وہ نو حضرت عثمان علیہ السلام کے دور خلافت مین جب لوک زیادہ زیادہ ھو کئے اور کاروبار اور مشاغل برہ کئے- تو صحابہ کے مشورہ سے پھلےاذان کا اضافہ کیا گیا جو مقام "زوراء" پر چرہ کر کھا جاتی  تھی- اور  چونکہ سب صحابہ کا اس پر اجماع ھو گیاپس وہ خلیفہء راشد کی سنت ھے- (تفسیر کمالین جصفہ ৭৭،) تفسیر معارف القران ج صفہ ৪৪২
অর্থঃ- “(ইযা নুদিয়া) এটা দ্বারা জুমুয়ার দিন খতীব ও মিম্বরের সামনে যে আযান দেয়া হয়, তাই উদ্দেশ্য। কেননা বর্তমানের প্রথম আযান হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় প্রচলিত ছিল না। ওটা হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকালে লোকসংখ্যার আধিক্য ও কাজ-কর্মের ব্যস্ততার কারণে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের পরামর্শক্রমে বৃদ্ধি করা হয় এবং ওটা যাওরানামক স্থানে দেয়া হতো। যেহেতু এটার উপর হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্মা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এটা সুন্নতে খোলাফা-ই-রাশেদ অর্থাৎ হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সুন্নত।” (তাফসীরে কামালাঈন জিঃ৪ পৃঃ৭৭, তাফসীরে মায়ারিফুল কোরআন জিঃ৮ পৃঃ৪৪২)
            উল্লিখিত নির্ভরযোগ্য ও বিখ্যাত তাফসীর সমূহের বর্ণনা দ্বারা সুসস্পষ্ট ও অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হলো যে, জুমুয়ার ছানী আযানে মসজিদের ভিতরে দেয়ার প্রচলন হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু স্বয়ং নিজেই করেছেন এবং এর উপর হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্মা তথা ইজ্মায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অতএব ছানী আযান মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে দেয়াই ইজ্মা সম্মত।
(১৩-১৪)è
والظاهر انه كان لمطلق الا علام لخصوص لانصات نعم لما زيد الاذان الاول كان الذى يدى الخطيب للانصات- (فتح البارى فى شرح البخارى ج صفه ৩৯৩، اعلاء السنن ج صفه ৬৯)

অর্থঃ- প্রকাশ থাকে যে, নিশ্চয় (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম॥এর সময়কার) আযান সাধারণতঃ মানুষদেরকে নামাজ ও খুৎবার সংবাদ জানানোর জন্যই দেয়া হতো। (তাই ওটা মসজিদের বাইরে দেয়া হতো, যাতে সকলে নামাজ ও খুৎবায় অংশ গ্রহণ করতে পারে) যখন ওটার পূর্বে আরো একটি আযান বৃদ্ধি করা হলো, তখন খতীবের সামনের আযানটি মূলতঃ মসজিদে উপস্থিত লোকদের চুপ হবার উদ্দেশ্যে দেয়া হয় (তাই সানী আযান মসজিদের ভিতরেই দেয়া হয়)।” (ফতহুল বারী শরহে বোখারী জিঃ২ পৃঃ৩৯৩, এলাউস সুনান জিঃ৮ পৃঃ৬৯)
(১৫)
كان الاذان فى عهد النبى صلى الله عليه وسلم وصاحبيه واحدا ولعله كان خارح المسجد- فاذا كثر الناس زاد عثمان رضى الله عنه اذانا اخر على الزوراء خارح المسجد ايمتنع الناس عن اليع والشراء- والظاهران الاذان الثانى هوالاول انتقل الى داحل المسجد- (فيض البارى فى شرح البخارى ج صله ৩৩৫)
অর্থঃ- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুরু করে হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতকাল পর্যন্ত একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল, আর সম্ভবত তা মসজিদের বাইরে দেয়া হতো, অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মসজিদের বাইরে যাওরানামক স্থানে আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন, যাতে করে মানুষ আযান শুনে বেচা॥কেনা বন্ধ করে (নামাজে অংশ গ্রহণ করতে পারে)। প্রকাশ থাকে যে, ছানী আযান যা মুলে প্রথম আযান ছিল, তা (মসজিদের বাহির হতে) স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের ভিতরে নিয়ে আসা হয়।” (ফয়জুল বারী শরহে বোখারী জিঃ২ পৃঃ৩৩৫)
(১৬)
فظن العوام بك كشبر من اهل العلم ان هذا الاذان فيكون امام الخطيب موا جهة فجعلو مقام المؤذن فى مواجهة الخطيب. (شرح الحامع الصحيح ج صفه ৩৯৩)
অর্থঃ- আহ্লে ইল্মদের অধিকাংশের মত হলো- ছানী আযান খতীবের সামনে হবে, সুতরাং মুয়াজ্জিন খতীবের সম্মুখে দাঁড়াবে।” (শরহে জামেউস সহীহ্ জিঃ২ পৃঃ৩৯৩)
(১৭)
المشهور ان الاذان فى عهد النبى صلى الله عليه وسلم كان واحد اوخارح المسحد عند الشروع فى الخطبة وكذا لك فى عهدا لشيخبر ثم قرر عثمان اذانا اخر قبل الشروع فى الخطة خارح المسجد على الزوراء حين كثر المسلمون- وهذا لاذان كان قبل الاذان بين يدى الخطيب بعد الزول فا ننقل الاذان الذى كان فى عهده عليه الاسلام الى داخل المسجد هذا هوا لصحيح.(العرف الشذى جصفه ১১২)
অর্থঃ- জুমুয়ার ছানী আযানের ব্যাপারে সবচেয়ে অধিক প্রসিদ্ধ বর্ণনা এই যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হযরত ওমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু পর্যন্ত জুমুয়ার জন্য একটিমাত্র আযানই প্রচলিত ছিল, যা খুৎবা শুরু করার সময় মসজিদের বাইরে দেয়া হতো। অতঃপর হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময় যখন মদীনায় মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, তখন খুৎবার আযানের পূর্বে যাওরানামক স্থানে আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন। আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম॥এর সময়কার আযানটি (বর্তমানের ছানী আযান) স্থান পরিবর্তন করে মসজিদের বাহির থেকে ভিতরে নিয়ে আসেন, আর এ বর্ণনাটিই সবচেয়ে অধিক সঠিক ও বিশুদ্ধ বর্ণনা।” (আল আরফুশ শাজী শরহে তিরমিযী জিঃ১ পৃঃ১১৬)
            উপরোক্ত কিতাবের বরাত দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, ছানী আযান মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে দেয়ার বর্ণনা বা মতটিই অধিক প্রসিদ্ধ ও সহীহ্।
(১৮)è
وكان الاذان على عهد رسول الله صلى الله عليه وسلم وابى بكر وعمر اذانين يوم الحمعة اى اذان واقامة- وزاد النداء الثالث على الزوراء- وامر بالاذان الاول خارح المسجد ليسمع الناس نم الاذان (يعنى الثانى) بن يديهه. (مرقاة فى شرح مشكوة ج صفه ২৬৫)
অর্থ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত দুটি আযান প্রচলিত ছিল অর্থাৎ আযান ও ইক্বামত (ইক্বামতকেও আযান বলা হয়)। হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যাওরানামক স্থানে তৃতীয় আরেকটি আযান বৃদ্ধি করেন এবং তার প্রবর্তিত আযানটি (বর্তমানের প্রথম আযান) মসজিদের বাইরে দেয়ার হুকুম দেন, যাতে করে মানুষ আযান শুনতে পায়। অতঃপর (বর্তমানের দ্বিতীয়) আযান (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কার প্রথম আযানটি) তার সামনে দেয়ার হুকুম দেন।” (মেরকাত শরহে মেশকাত জিঃ৩ পৃঃ২৬৪)
            হাদীস শরীফের উপরোক্ত শুরুহাত বা ব্যাখ্যা গ্রন্থসমূহের বর্ণনা দ্বারাও সাবেত হয় যে, আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুই ছানী আযান মসজিদের ভিতর, মিম্বরের নিকটে স্থানান্তরিত করেন, তাই ছানী আযান মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে দেয়াই দলীলসম্মত।
(১৯-২২)
واذا صعد الامام المنبر وجلس وسؤذنون ثانيا بين يدى الخطيب- (هدايه ج صفه ১৫৪، ردا لمحتار ج صفه. ৭৭، عينى شرح هذايه ج صفه ১০১৪، الجو هرة النيره صفه ১১৮)
অর্থঃ- ইমাম যখন মিম্বরে উঠে বসবেন, তখন মুয়াজ্জিন খতীবের সামনে আযান দেবে।” (কাজেই খতীবের  সম্মুখে আযান দেয়ার অর্থ হলো মসজিদের ভিতরে আযান দেয়া)। (হেদায়া জিঃ১ পৃঃ১৫৪, রদ্দুল মোহতার জিঃ১ পৃঃ৭৭০, আইনী শরহে হেদায়া জিঃ১ পৃঃ১০১৪, আল জাওহারাতুন নাইয়ারা পৃঃ১১৮)
(২৩-২৫)
مؤذن اذان دے دوسری بار سامنے خطیب کے- (غایۃ الاوطار جصفہ ৩৮০، در المختار، القھستنی)
অর্থঃ- মুয়াজ্জিন দ্বিতীয়বার (অর্থাৎ ছানী) আযান খতীবের সামনেই দিবে।” (গায়াতুল আওতার জিঃ১ পৃঃ৩৮০, দোররুল মোখতার, আল কাহেসতানী)
(২৬-২৭)   
اذان الثانى الذى يكون بين يدى المنبر لا نه لم يكن فى زمنه عليه الصلام (بحر الرائق ج صفه ১৫৬، هدايه مع الدرايه ج صفه ১৭১)
অর্থঃ- ছানী আযান যা মিম্বরের সম্মুখে বা সন্নিকটে দেয়া হয়, কেননা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় এটা ছিলনা।” (বাহরুর রায়েক জিঃ২ পৃঃ১৫৬, হেদায়া মায়াদ্দেরায়া জিঃ১ পৃঃ১৭১)
 (২৮-২৯)
        وقال ابو حعفر الطحاوى الحنفى وكان المعتبر هو الاذان الثانى عندا المنبر بين يدى الخطيب-(فتح القدير ج صفه ১২، مراقى الفلاحج صفه ২৮২) 
অর্থঃ- হানাফী মায্হাবের একজন শ্রেষ্ঠ ইমাম হযরত আবু জাফর তাহাবী (রঃ) বলেন, নির্ভরযোগ্য মত হলো- জুমুয়ার দিন খতীবের সামনে, মিম্বরের নিকট যখন খুৎবার জন্য আযান দিবে, তখন হতে মসজিদের দিকে তাড়াতাড়ী যাওয়া ওয়াজিব।” (ফাতহুল ক্বাদীর জিঃ২, পৃঃ১২০, মারাকিউল ফালাহ জিঃ২, পৃঃ২৮২)
(৩০)
اذا جلس الامام على المبر اذن المؤذن بين يديه الاذان الثانى للتوارث. (حلبى، كبير صفه ৫২১)
অর্থঃ- ইমাম সাহেব মিম্বরে বসার পর মুয়াজ্জিন তার সামনে (সন্নিকটে) ছানী আযান দিবে। এ নিয়ম বহু পূর্ব হতেই চলে আসছে।” (হালবিয়ে কবীর পৃঃ৫৬১)
(৩১-৩৫)         
واذاجلس على المنبر اذن ثانيا بين يديه اى المنبر. (شرح وقاية ج صفه ১৭৪- شرح النقاية صفه ২৯৭ شرح السقاية ج صفه ২৮৩ فتاو . شربعت صفه ৮৪- اسلامى فقه ج صفه ১২৯)
অর্থঃ- যখন ইমাম মিম্বরে বসবে, তখন তার সামনে অর্থাৎ মিম্বরের সম্মুখে বা সন্নিকটে ছানী আযান দিবে।” (শরহে বেক্বায়া জিঃ১ পৃঃ১৭৪, শরহে নেক্বায়া পৃঃ২৯৭, শরহে সেক্বায়া জিঃ১ পৃঃ২৮৩, ফতওয়ায়ে শরীয়ত পৃঃ৮৪, ইসলামী ফিক্বাহ জিঃ১ পৃঃ১২৯)
(৩৬-৩৭) 
اذا حلس الامام على المنبر اذن اذانا ثانيا بين يديه اى بين الحهتين المسمتين لميمن المتبر اوالامام. (جامع الرموز- اعلاء السنن ج صفه ২৯)   
অর্থঃ- ইমাম মিম্বরে বসার পর মুয়াজ্জিন ইমামের সম্মুখে ছানী আযান দিবে, অর্থাৎ মিম্বর অথবা ইমামের ডানে।” (জামেউর রুমূজ, এলাউস সুনান জিঃ৮ পৃঃ৬৯)
(৩৮)
الاذان الاول با عنيا رالمشرو عية وهوا لذى بين يدى المنبر. (كبيرى جصفه ৫১৫)
অর্থঃ- যে আযান মিম্বরের নিকট দেয়া হয়, অর্থাৎ ছানী আযান শরীয়তের দৃষ্টিতে ইহাই প্রথম আযান।” (কবীরী ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-৫১৫)
(৩৯)
وكان الطحاوى يقول المعتبر هوالاذان عندالمنبر.
অর্থঃ- ইমাম তাহাবী (রঃ) বলেন, ছানী আযান মিম্বরের নিকট দেয়াই অধিক গ্রহণযোগ্য।” (এনায়া ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-৪২১)
(৪০)
اذا صعد الامام المنبر حلس واذان المؤذنون بين يدى المنبر بذا الك حرى الوارث من زمان عثمان. (كفاية صفه ১০৪)
অর্থঃ- ইমাম যখন মিম্বরে আরোহন করে বসবেন, তখন মুয়াজ্জিন মিম্বরের সন্নিকটে (দাঁড়িয়ে) আযানে ছানী দিবেন। আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকেই এ নিয়ম চলে আসছে।” (কেফায়া পৃষ্ঠা-১০৪)
(৪১)
اذا صعد الامام المنبرز لذن المؤذنوبين يدى المنبر. (المختصر القدورى صفه ৩৫)
অর্থঃ- ইমাম সাহেব যখন মিম্বরে আরোহণ করে বসবেন, তখন মুয়াজ্জিন মিম্বরের সন্নিকটে (ছানী) আযান দিবেন।” (আল মুখ্তাছারল কুদূরী, পৃষ্ঠা-৩৫)
(৪২)
فلاتكره اجابة الاذان الذى يؤذن بين يدى الخطيب. (عمدة الرعاية ج صفه ২২৪)
অর্থঃ-খতীবের সম্মুুখে যে আযান দেয়া হয় সে আযানের জবাব দেয়া মাকরূহ্ নয়।
(৪৩-৪৫)
جب امام منبر پر اکر بیطہ جائے تو منبر کے سامنے کھارے ھو کر مؤذن اذان دے- (قدوری صفہ ৪৮- علم الفقہ جصفہ ৭১- بھشتی زیور ج১১ صفہ ৮১)
অর্থঃ- ইমাম মিম্বরে এসে বসার পর মুয়াজ্জিন মিম্বরের সম্মুখে দাঁড়িয়ে আযান দেবে।” (কুদুরী পৃঃ৪৮, ইলমুল ফিক্বাহ জিঃ২ পৃঃ৮১, বেহেস্তী জিওর জিঃ১১ পৃঃ৮১)
            উপরোক্ত সর্বজন মান্য ও নির্ভরযোগ্য ফিক্বাহের কিতাব সমহের বর্ণনা দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, ছানী আযান মসজিদের ভিতর, মিম্বরের নিকটে দেয়াই গ্রহণযোগ্য ও শরীয়তসম্মত।
(৪৬)
او قبل جلوسه على المنبر وقبل شروع المؤذن فى الا ذان بين يدى الخطيب. (المجموع شرح المهذب – حصفه ৫০০)
অর্থঃ- “....... অথবা ইমাম মিম্বরে বসার পূর্বে এবং মুয়াজ্জিন খতীবের সম্মুখে আযান দেয়ার পূর্বে। (মুছল্লীগণ সুন্নত আদায় করবে)। (আল মাজমু শরহুল মুহায্যাব, ৪র্থ জিঃ পৃষ্ঠা- ৫০০)
(৪৭)          
اذا صعد ويسلم عليهم ويجلس ثم يؤذن بين يديه. (تحفة المحتاج بشر ح المنهاج- ج- صفى ৩৭০)
অর্থঃ- ইমাম যখন মিম্বরে উঠে মুছল্লীদেরকে সালাম দিবে এবং বসবে। অতঃপর মুয়াজ্জিন তাঁর সম্মুখে বা সন্নিকটে দাঁড়িয়ে ছানী আযান দিবে। (তোহ্ফাতুল মোহ্তাজ বি শরহিল মিনহাজ, ৩য় জিঃ পৃষ্ঠা-৩৭০)
(৪৮) 
    واختلفوا- هل يؤذن بين يدى الامام مؤذن واحد فقط او اكثر من واحد. انما يؤذن بين يدى الامام مؤذن واحد فقط ...... (بداية المجتهد – جصفه ২৩২) 
অর্থঃ- ইমামের সম্মুখে বা সন্নিকটে একটি আযান হবে না একাধিক? এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। .... মূলতঃ ইমামের সম্মুখে বা সন্নিকটে শুধুমাত্র একবারই আযান হবে।” ...... (বেদায়াতুল মুজতাহিদ- ২য় জিল্দ পৃষ্ঠা-৩৩২)
(৪৯)
(ويجيب السعى وترك البيع با لا ذان الاول) ....... وقيل بالا ذان الثانى لكن الاول هو الاصح وهو المختار شسس الائمة لا نه لو انتظر الاذان عند المنبر يفوته اداء ائسنة وسماع الخطبة وربما يفوت الحمعة- اذا كان بينه بعيدا من حامع فاذا حلس على المنبر اذن بين يديه ثانيا وبذالك حرى التوارث. (شرح ملتقى الابحر- ج১- صفه ১৭১)
অর্থঃ- “(কেউ কেউ বলেন) প্রথম আযানের সময় থেকেই মসজিদের দিকে ধাবিত হওয়া এবং বেচা-কেনা বন্ধ করা ওয়াজিব। আর কেউ কেউ বলেন ছানী আযানের সময় থেকে। কিন্তু প্রথমটি অধিক ছহীহ্ মত। শামসুল আইম্মা (রঃ) এ মতকেই গ্রহণ করেছেন। কেননা যদি মিম্বরের নিকট যে আযান দেয়া হয়, সে পর্যন্ত অপেক্ষা করে, তবে তার সুন্নত পড়া ও খুৎবা শ্রবণ করা ফওত হয়ে যাবে। কখনো কখনো জুমুয়া ফওত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে, যদি তার ঘর জামে মসজিদ থেকে দূরে হয়। যখন ইমাম মিম্বরের উপর বসবে, তখন মুয়াজ্জিন তাঁর সম্মুখে ছানী আযান দিবে। ইহা তাওয়ারাছান বা নিয়মিতভাবে চলে আসছে।” (শরহু মুলতাক্বাল আবহুর- ১ম জিল্দ, পৃষ্ঠা- ১৭১)
(৫০)
     
فاذا حلس الامام على المنبر اذن بين يديه ثاذيا. (مجمع الانهر- ج১- صفه ১৭১)
অর্থঃ- ইমাম যখন মিম্বরে বসবে, মুয়াজ্জিন তাঁর সম্মুখে বা সন্নিকটে দ্বিতীয়বার আযান দিবে।”(মাজমাউল আনহুর-১ম জিঃ পৃঃ-১৭১)
(৫১)  
والمراد بالنداء هوالاذان الثانى الذى يكون بين يدى الخطيب عند المنبر-(اعلاء السنن ج صفه ১৭)
অর্থঃ- নেদার দ্বারা মূলতঃ ছানী আযানকেই বুঝান হয়েছে, যা খতীবের সম্মুখে মিম্বরের নিকটে দেয়া হয়।” (এলাউস সুনান জিঃ৮ পৃঃ১৭)
(৫২)
فان جلس علی المنبر اذن بین یدی الامام طحاوی فرماتے ھین کہ جو اذان منبر کے سامنے دیجاتی ھے وہ مراد ھے- (معدن الحقائق فی شرح کنز الدقائق ج صفہ ১৭৪)
অর্থঃ- অতঃপর যখন ইমাম মিম্বরে বসবে তখন ইমামের সামনে আযান দিবে। ইমাম তাহাবী (রঃ) এর ব্যাখ্যায় বলেন, এটা দ্বারা মিম্বরের সামনের আযানকেই বুঝান হয়েছে।” (মাদানুল হাক্বায়েক্ব শরহে কান্যুদ দাক্বায়েক্ব জিঃ১ পৃঃ১৭৪)
(৫৩) 
   فدل على ان الاذان الثانى محله عند المنبر وهو المراد بين يديه- (اعلاء السنن ج صفه ৯)
অর্থঃ- সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, জুমুয়ার ছানী আযান এর স্থান হলো- মিম্বরের নিকটে, খতীবের সামনে।” (এলাউস সুনান জিঃ৮ পৃঃ২৯)
(৫৪-৫৫)
اذا جلس الامام على المنبر اذن بين يديه واقيم بعد تمام الخطبة بذلك جرى التوارث. (فتاو .. عالمكيرى ج صفه ৭৭،عين الهداية ج صفه ৬৫৮)
অর্থঃ- ইমাম মিম্বরে বসার পর তার সামনে মিম্বরের নিকট আযান দেবে এবং খুৎবা শেষে ইক্বামত দেবে। এ নিয়ম পূর্ব হতেই প্রচলিত।” (আলমগীরী ১ম জিঃ ৭৭পৃঃ, আইনুল হেদায়া জিঃ১ পৃঃ৬৫৮)
(৫৬)

وقال الطحاوى الحنفى يجب السعى ويكره البيع عند اذان المنبر. (فتاو .. عالمكيرى ج صفه ৭৭)
অর্থঃ- হানাফী মায্হাবের ইমাম, তাহাবী বলেন- মিম্বরের নিকট আযান দেয়ার সময় সায়ী (তাড়াতাড়ী) করা ওয়াজিব ও বেচা-কেনা নিষিদ্ধ।” (এটা দ্বারা বুঝা যায় ছানী আযান মসজিদের ভিতরেই দিতে হবে) (ফতওয়ায়ে আলমগীরী জিঃ১ পৃঃ৮৮)
(৫৭-৫৮)
ويؤذن ثانيا بين يديه اى الخطيب- (فتاوى شامى-بدائع الصنائع)     
অর্থঃ- ছানী আযান খতীবের সামনে দিতে হবে।” (এখানে খতীবের সামনে দ্বারা মসজিদের ভিতরকেই বুঝান হয়েছে) (ফতওয়ায়ে শামী, বাদায়েউস সানায়ে)
(৫৯) 
جمعہ کی اذان ثانی حنفیہ کے نزدیک مسجد مین منبرکے پاس ھونا سنت- کیونکہ تمام کتب فقہء معتبرہ مین اس اذان منبر کے پاس خطیب کے سامنے ھونے کو لکھا ھے- (فتاوے دار العلوم دیوبند جصفہ ২৬৩)

অর্থঃ- জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে দেয়া হানাফী মায্হাবের ইমামগণের নিকট সুন্নত। কেননা সমস্ত নির্ভরযোগ্য্র ফিক্বাহ্র কিতাবে জুমুয়ার ছানী আযান মিম্বরের নিকট, খতীবের সামনে দেয়ার কথা উল্লেখ আছে।” (ফতওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ জিঃ১ পৃঃ২৬৩)
(৬০-৬২)   
اذان خطبہء جمعہ سامنے منبر کے مسجد کے اندر جیسا کہ جملنہ بلاد اسلام وحر منین شریفین مین ھوتی ھے بلاکراھت درست ھے اور مراقی الفلاح اور طحاوی مین اس اذان مین قید عند المنبر مصرحا مذکور ھے- جس سے یہ امر بخوبی ثابت ھے کہ ھمارے فقھاء کا مطلب و بین یدی سے یھی ھے کہ مسجد مین منبر کے قریب یہ اذان ھونا مسنون ھے- پس اسکو بدعت کھنا سخت جرائت اور مخالفت فقھاء حنیفہ کی ھے- (عزیز الفتاوے جصفہ ২৭০، کفایۃ- نھایۃ)
অর্থঃ- জুমুয়ার দিনে খুৎবার আযান সমস্ত ইসলামী রাষ্ট্রসমূহ ও হারামাইন শারীফাইন-এর ন্যায় মসজিদের ভিতরে মিম্বরের সামনে দেয়া বিনা মাকরূহে জায়েয। মারাকিউল ফালাহ, তাহাবী ইত্যাদি কিতাবে ছানী আযান মিম্বরের নিকট দেয়ার কথা স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয় যে, আমাদের ফক্বীহ্গণের উদ্দেশ্য ব্দশুঞ্জম্ফদ্বারা এটাই  যে, ছানী আযান মসজিদের ভিতরে মিম্বরের নিকটে দেয়া সুন্নত-এর অর্ন্তভূক্ত। সুতরাং ওটাকে বিদ্য়াত বলা কঠিন গুণাহ্ এবং প্রকাশ্যভাবে হানাফী ফক্বীহদের বিরোধিতা করা।” (আযীযুল ফতওয়া জিঃ১ পৃঃ২৭০, কেফায়া, নেহায়া)
(৬৩) 
یہ امر تو محقق ھے کہ اذان ثانی یوم الجمعۃ کی داخل مسجد جائز ھے- بلکہ یھی متوارث- ولہ اذانان اذان خارج المسجد اذان بعدہ بین یدی المنبر اذا جلس الخطیب- (امداد الفتاوی ج صفہ ১৭৪) 
অর্থঃ- জুমুয়ার দিন ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়াই সঠিক ও জায়েয কাজ, বরং এভাবেই পূর্ব হতে প্রচলিত। (যেমন কিতাবে উল্লেখ করা হয়) হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সময় দুটি আযান প্রচলিত ছিল। একটি মসজিদের বাইরে, অপরটি খতীব মিম্বরে বসার পর তার সামনে দেয়া হতো।” (এমদাদুল ফতওয়া জিঃ১ পৃঃ৭০)
(৬৪)     
چنانچہ جمعہ کی اذان ثانی کا اندرون مسجد ھی تعالم ھے کیونکہ اس صرف حاضرین تک اواز پھنچانا مقصود ھے- (احسن الفتاوی جصفہ ২৯৪)
অর্থঃ- সুতরাং জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়াই স্বীকৃত, কেননা ছানী আযানের দ্বারা মসজিদে উপস্থিত সকলে আওয়াজ শুনাই উদ্দেশ্য।” (আহ্সানুল ফতওয়া জিঃ২ পৃঃ২৯৪)
            উপরোল্লিখিত কিতাবসমূহের বরাত দ্বারা এটা স্পষ্টই প্রমাণিত হলো যে, জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের সম্মুখে দেয়া হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু॥ই জারী করেন এবং এটার উপর হযরত সাহাবা॥ই॥কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্মা তথা ইজ্মায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সুতরাং এটা সুন্নতে সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
পরিশিষ্ট
            রাহ্মানুর রাহীম আল্লাহ্ পাক-এর অশেষ রহ্মতে আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটিশেষ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক-এর দরবারে অশেষ শুকরিয়া। আর আখেরী রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি অশেষ ছালাত ও সালাম।
            প্রদত্ত ফতওয়ার শুরুতেই ছানী আযান সম্পর্কিত ফতওয়া প্রকাশ করার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছে। মূলতঃ পাঠকগণের পুনঃ পুনঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে ছানী আযান সম্পর্কিত ফিৎনা সমূলে উৎপাটনের লক্ষ্যে, সর্বোপরি মহান আল্লাহ্ পাক ও সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ সন্তুষ্টি হাছিলের উদ্দেশ্যেই ছানী আযান সম্পর্কে বিস্তারিত ও আরো অধিক দলীল-আদিল্লাসহ পুণরায় ফতওয়া পেশ করা হয়েছে। যাতে করে হক্ব তালাশী ও সমঝদার মুসলমানগণ ছানী আযান সম্পর্কিত সঠিক শরয়ী ফায়সালা ভালরূপে অবগত হতে পারে এবং যারা ছানী আযানের ব্যাপারে নানাবিধ সংশয় ও বিভ্রান্তিতে রয়েছে, তাদের সে সংশয় ও বিভ্রান্তি চিরতরে দূরীভূত হয়ে তারা হক্ব মত ও হক্ব পথে কায়েম থাকতে পারে।      
            উল্লেখ্য, বহুল প্রচারিত, বাতিলের আতঙ্ক, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীলভিত্তিক মুখপত্র মাসিক আল বাইয়্যিনাতকর্তৃপক্ষ যেরূপ কারো সাথে বন্ধুত্ব রাখেনা, তদ্রুপ কারো সাথে বিদ্বেষও রাখেনা। হ্যাঁ মাসিক আল বাইয়্যিনাত তাদের সাথেই বন্ধুত্ব রাখে, যাদের আক্বীদা ও আমল কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস তথা আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের অনুরূপ। আর তাদের প্রতিই বিদ্বেষ পোষণ করে, যাদের আক্বীদা ও আমল এর বিপরীত। মাসিক আল বাইয়্যিনাতের মূলনীতি এটাই। যে সম্পর্কে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে,
من احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله فقد استكمل الايمان.
অর্থঃ- যে ব্যক্তি আল্লাহ্ পাক-এর (সন্তুষ্টির) জন্য মহব্বত করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে ও নিশেধ করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, মেশকাত, বজলুল মাযহুদ, মেরকাত,  আশয়াতল লুময়াত, শরহত্ ত্বীবী, তালীকছ ছবীহ্, মোযাহেরে )
            কাজেই সকলেরই উচিৎ অন্ধ অনুসরণ ও নফসানিয়্যাতের মোহ পরিত্যাগ করতঃ মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ন্যায় উক্ত হাদীস শরীফের মেছদাক্ব হওযার কোশেষ করা। তবেই হক্ব মত ও হক্ব পথে ক্বায়েম থাকা সম্ভব।
            স্মর্তব্য যে, যারা সমঝদার ও হক্ব তালাশী, তাদের জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাতের ৪৭তম সংখ্যা হতে ৫০তম সংখ্যা পর্যন্ত ছানী আযানসম্পর্কে যে দলীল-আদিল্লা পেশ করা হয়েছে, তাই যথেষ্ট। যদিও আমরা এ ব্যাপারে আরো অধিক দলীল-আদিল্লা পেশ করতে সক্ষম ইন্শাআল্লাহ্।
            আর যারা অন্ধ অনুসরণে মত্ত্ব ও গোমরাহীতে দৃঢ়, তাদের নিকট লক্ষ-কোটি দলীলও মূল্যহীন। তাদেরকে যতই দলীল পশ করা হোক না কেন, তারা তা মানতে সম্পূর্ণই নারাজ। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়- এক বিশাল বিত্তশালী একদিন কথা প্রসঙ্গে বললো- আমাকে যদি কেউ অমুক বিষয় বুঝিয়ে দিতে পারে, তবে আমি তাকে আমার স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি লিখে দিব। তখন তার স্ত্রী বললো, এমন অনেকেই রয়েছে, যে আপনার এ বিষয়টি বুঝিয়ে দিতে সক্ষম। কাজেই তখন আপনার সম্পত্তি তাকে দিয়ে দিতে হবে। লোকটি বললো- এটা কখনোই সম্ভব নয়, কারণ সে যতই বুঝাক না কেন, আমি বলবো- আমি বুঝিনি। কাজেই সে আমাকে বুঝাতেও পারবেনা আর সম্পত্তির মালিকও হতে পারবেনা।
            অতএব, যারা অন্ধ অনুসরণ ও নফসানিয়্যাতের মোহে মোহগ্রস্থ এবং গোমরাহীতেই দৃঢ় তাদেরকে যতই দলীল দেয়া হোক না কেন, তারা বলবে, এ দলীল গ্রহণযোগ্য নয়, আমাদের সিলসিলার পূর্ববর্তী লোকেরা এর বিপরীত বলেছেন বা করেছেন অথবা এগুলো আমাদের বুঝে আসেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন তাদের জন্য এ দোয়াই করতে হয় যে, “হে আল্লাহ্ পাক! আপনি তাদেরকে সহীহ্ সমঝ দান করুন এবং হিদায়েতের উপর ক্বায়েম রাখুন।
            স্মরণযোগ্য যে, প্রদত্ত আযান ও ছানী আযান মসজিদের ভিতরে দেয়ার আহ্কাম এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়ার প্রেক্ষিতে যে বিষয়গুলো সাব্যস্ত হয়েছে, তা হলো-
১। ফতওয়া দানে তাক্বওয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। তাক্বওয়া ব্যাতীত তাহ্ক্বীক্বের মাদ্দা হাছিল হয়না, আর বিনা তাহ্ক্বীক্বে কোন ফতওয়া, বক্তব্য বা বিবৃতি বিশুদ্ধ হতে পারেনা। তাই ভালরূপে তাহ্ক্বীক্ব করে ফতওয়া দেয়া জরুরী।
২। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হায়াত মোবারকে ও পবিত্র মদীনা শরীফে আযানের উৎপত্তি হয়। আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য দৈনিক পাঁচ বার প্রত্যেক মসজিদে আযান দেয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্, যা তরক করলে ওয়াজিব তরকের গুণাহ্ হবে।
৩। এখলাছের সহিত আযান দানকারী ক্বিয়ামতের দিন অশেষ ফযীলত লাভ, তথা আল্লাহ্ পাক ও তাঁর হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর খাছ রেজামন্দী হাছিল।
৪। আমাদের হানাফী মায্হাব মোতাবেক আযানের মধ্যে তরজী করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। তরজী বলা হয়- আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুআশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্বাক্যদ্বয়কে প্রথমে নিম্নস্বরে দুবার উচ্চারণ করার পর পুণরায় উচ্চস্বরে দুবার উচ্চারণ করাকে।
৫।         আযানের মধ্যে মুয়াজ্জিন সাহেব যখন আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্বলবে, তখন শ্রোতাদের জন্য তা শ্রবণ করা মাত্র প্রথমবার ছল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্
(صلى الله عليك يا رسول الله)                        বলা। আর
দ্বিতীয় বার কুররাতু আইনী বিকা ইয়া রাসূলাল্লাহ্” (قرة عينى بك يا رسول الله) বলা।
            অতঃপর বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করতঃ উভয় চোখে মসেহ্ করা মুস্তাহাব, যা সহীহ্ হিসেবে মরফু ও মওকুফ হাদীস শরীফ দ্বারাও প্রমাণিত।
৬। হানাফী মায্হাবের ইমামগণের নিকট প্রাধান্য প্রাপ্ত ও জাহেরে রেওয়ায়েত মোতাবেক আযান শ্রবণকারীর জন্য আযানের লেসানী বা মৌখিক জাওয়াব দেয়া ওয়াজিব।
৭। আযানের ন্যায় খুৎবার আযান বা ছানী আযানেরজাওয়াব দেয়াও ওয়াজিব। স্বয়ং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুৎবার আযানের ও হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ ছানী আযানের জাওয়াব দিয়েছেন।
৮। আযান ও ছানী আযানের পর দোয়ায়ে উসীলা পাঠ করা ও উভয় হাত তুলে মুনাজাত করা সুন্নতে যায়েদাহ্। সাথে সাথে ফযীলত ও শাফায়াত লাভের কারণ।
৯। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময়কালে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আযানের ন্যায় জুমুয়ার দিনেও একটি মাত্র আযান জারী ছিল, যা মসজিদের বাইরে সম্মুখস্থ দরজার উপর দেয়া হতো। অনুরূপ খলীফাতু রাসূলিল্লাহ্ হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওমর ইব্নুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফত কালেও জুমুয়ার নামাজে একটি মাত্র আযান জারী ছিল।
১০। মত্লক্ব আযান অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আযান ও জুমুয়ার প্রথম আযান মসজিদের বাইরে দেয়া সুন্নত, আর তা মসজিদের ভিতরে দেয়া মাকরূহ্ তানযীহী।
১১। বর্তমানে জুমুয়ার প্রথম আযান আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর প্রবর্তিত সুন্নত, যা মসজিদের বাইরে যাওরা নামক স্থানে দেয়া হতো। আর বর্তমানের ছানী আযান, তা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সময় মসজিদের বাইরে, দরজার উপর দেয়া হতো। আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তা স্থানান্তরিত করে মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে, ইমামের সম্মুখে নিয়ে আসেন।
১২। জুমুয়ার নামাজের জন্য একটি আযান বৃদ্ধি করা (বর্তমানের প্রথম আযান) ও ছানী আযানকে মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে, ইমামের সম্মুখে স্থানান্তরিত করা, এটা মূলত আমীরুল মুমিনীন, হযরত ওসমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইজ্তিহাদ। যার উপর পরবর্তীতে হযরত সাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজ্মা তথা ইজ্মায়ে আযীমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের ইমাম-মুজ্তাহিদগণও এ ব্যাপারে একমত।
১৩। ইজ্মায়ে আযীমত কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের মতই শরীয়তের একটি অকাট্য দলীল, যা এন্কার বা অস্বীকার করা সুস্পষ্ট কুফরী।
১৪। আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের মতে- শুধু কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফই শরীয়তের দলীল নয়, বরং কোরআন শরীফ ও হাদীস শরীফের সাথে সাথে ইজ্মা ও ক্বিয়াসও শরীয়তের দলীল।
১৫। মসজিদের দরজায় আযান দেয়া সংক্রান্ত হাদীস শরীফের আমলের হুকুম ইজ্মায়ে আযীমতের কারণে মান্সূখ বা মাশরূহ্ (ব্যাখ্যা) হয়ে পরিবর্তন হয়েছে।
১৬। ফতওয়ায়ে রেজভিয়া, আহ্কামে শরীয়ত, ওমদাতুর রেয়ায়া, শরহুস্ সেক্বায়া ও তাফসীরে মাওয়াহিবুর রহ্মানের ছানী আযানসম্পর্কিত বক্তব্য বা ফায়সালা ইজ্মায়ে আযীমতের খেলাফ হওয়ার কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। 
১৭। বিশ্ববিখ্যাত, সর্বজন স্বীকৃত ও অনুসরণীয় তাফসীর, হাদীস শরীফের শরাহ্, ফিক্বাহ্ ও ফতওয়ার প্রায় ৬০টিরও অধিক দলীলের দ্বারা অকাট্যভাবেই প্রমাণিত হয়েছে যে, জুমুয়ার ছানী আযান মসজিদের ভিতরে, মিম্বরের নিকটে, ইমামের সম্মুখে দেয়া ইজ্মায়ে আযীমত। আর বাইরে দেয়া ইজ্মায়ে আযীমতের খেলাফ, আর এটাকে অস্বীকার করা কুফরী।
            কাজেই যারা বলে- ছানী আযান মসজিদের বাইরে দেয়া সুন্নত, আর ভিতরে দেয়া বিদ্য়াত মাকরূহ্ ও নাজায়েয। তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণই মনগড়া দলীলবিহীন ও ইজ্মায়ে আযীমতের খেলাফ হওয়ার কারণে সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য। পক্ষান্তরে মাসিক আল বাইয়্যিনাতে প্রদত্ত ফতওয়াই সহীহ্ দলীল ভিত্তিক ও কোরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজ্মা ও ক্বিয়াস সম্মত হওয়ার কারণে গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয়।
            মহান আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে প্রদত্ত ফতওয়া মোতাবেক আমল করার, সহীহ্ সমঝ হাছিল করার ও হক্ব মত, হক্ব পথে ক্বায়েম থাকার তৌফিক দান করুন। আর সারা বিশ্ব থেকে ছানী আযান সম্পর্কিত যাবতীয় ফিৎনা চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দিন। (আমীন)
(সমাপ্ত)

0 Comments: