বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ২ নং )

তারাবিহ ২০ রাকাত
পিডিএফ লিংক- https://drive.google.com/open?id=1a1HeE3IicD8BG6kLtzUs7G88JJAPC8aR


বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া ( ২ নং ) 
বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া
গবেষণা কেন্দ্র- মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ
( পূর্ব প্রকাশিতের পর )
        সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আ’লামীন উনার এবং অসংখ্য দুরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ্ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ্ পাক উনার অশেষ রহ্মতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র “মুহম্মদিয়া জামিয়া শরীফ” ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের আতঙ্ক “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার নামায ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাযের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ইনজেকশন নেয়া রোজা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্-এর নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করার পর দ্বাদশ ফতওয়া হিসাবে তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করতে পারায় মহান আল্লাহ্ পাক উনার দরবারে অসংখ্য শুকরিয়া।

তারাবীহ্ নামায আট রাকায়াত হওয়ার দাবী খ-ন

        উল্লেখিত ছহীহ্ হাদীছ শরীফ ও ইজমায়ে আযীমতের বর্ণনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ রমযান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়েছেন।

        অতএব তারাবীহ্ নামায আট রাকায়াত হওয়ার প্রশ্নই উঠতে পারেনা। তথাপিও যারা মনগড়া, বানোয়াট বক্তব্য ও জঈফ হাদীছ শরীফ-এর ভিত্তিতে তারাবীহ্ নামায আট রাকায়াত প্রমাণে ব্যর্থ প্রয়াস চালায় এবং সাথে সাথে সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত, তাদেরকে সহীহ্ বুঝ দেয়ার উদ্দেশ্যে, তারা আট রাকায়াতের স্বপক্ষে মনগড়া ও বানোয়াট দলীল পেশ করে, তা এখন খন্ডানো হবে ইন্শাআল্লাহ্।

          প্রথমতঃ যারা বলে তারাবীহ্ নামায আট রাকায়াত পড়া সুন্নত, তারা দলীল হিসাবে নিম্নোক্ত  হাদীছ শরীফ পেশ করে থাকে। যেমন  হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে, 

عن ابى سلمة بن عبدالر حمن انه سأل عائشة رضى الله عنهما كيف كان صلوة رسول الله صلى الله عليه وسلم فى رمضان؟ فقالت ماكان رسول الله صلى الله عليه وسلم يزبد فى رمضان ولا فى غيره على احدى عشر ركعة يصلى اربعا. (بخارى شريف ج صفه ১৫৪)

অর্থঃ- হযরত আবূ সালমাহ্ ইবনে আব্দুর রহ্মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম  তিনি রমযান মাসে কত রাকায়াত নামায পড়তেন? তখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন, “সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি  রমযান মাসে ও রমযান মাস ব্যতীত অন্য মাসে এগার রাকায়াতের অধিক নামায পড়তেন না। আর তিনি তা চার, চার রাকায়াত করে পড়তেন।” (বুখারী শরীফ, ১ম খ-, পৃষ্ঠা ১৫৪)

আমাদের জবাব ঃ- কয়েকটি কারণে উপরোক্ত  হাদীছ শরীফ দ্বারা কখনোই তারাবীহ্ নামায আট রাকায়াত প্রমাণিত হয়না।

১নং কারণ ঃ- উপরোক্ত  হাদীছ শরীফে فى رمضان (রমযান মাসে)  এর  সাথে   সাথেولا فى غيره    (অর্থাৎ রমযান মাস ব্যতীত অন্য মাসে) একথাও উল্লেখ আছে। অর্থাৎ বলা হয়েছে যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অন্য মাসে এরূপ এগার রাকায়াত নামায পড়তেন তদ্রুপ  রমযান মাসেও এগার রাকায়াত নামায পড়তেন। এখন প্রশ্নহলো- রমযান মাসে না হয় তারাবীহ্ নামায পড়েছেন কিন্তু গায়রে রমযান অর্থাৎ রমযান ব্যতীত অন্য মাসে তারাবীহ্ নামায পড়বেন কিভাবে? তারাবীহ নামায তো শুধু রমযান মাসে পড়তে হয়।

মূলতঃ এ হাদীছ শরীফে তারাবীহ্ নামাযের কথা বলা হয়নি বরং তাহাজ্জুদ নামাযের কথা বলা হয়েছে। কেননা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সারা বৎসরই তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত মুহাদ্দিস, আল্লামা শায়খ শামসুদ্দীন কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

اما المراد بها صلوة الوتر- والسوال والجواب واردان عليه. (كوكب الدرارى)

অর্থঃ- হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার উক্ত হাদীছ শরীফ দ্বারা তাহাজ্জুদ নামাযকে বুঝানো হয়েছে। হযরত আবূ সালমার প্রশ্ন ও হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার জবাব তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। (কাওকাবুদ্ দুরারী শরহে বুখারী)

          উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাখ্যায় হযরত শাহ্ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহ্লভী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

ঊদূ লেখা ঢুকবে..................দ

وصحيح انست كه ا............................

অর্থঃ- বিশুদ্ধ বা সহীহ্ মত এটাই যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুঊআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিত্রসহ যে এগার রাকায়াত নামায পড়েছেন, সেটা তাহাজ্জুদ নামায ছিল। (আশয়াতুল লুময়াত)

          এ প্রসঙ্গে শাহ্ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিস দেহ্লভী  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,



ঊদূ লেখা ঢুকবে..................দ

অর্থঃ- “হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সম্পর্কিত, যা রমযান ও গায়রে রমযানে একই সমান ছিল।” (মুজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে আযীযী)

আর হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উহার ব্যাখ্যায় বলেন,

وقد او تر رسول الله صلى الله عليه وسلم- بر كعة وهلاث وخمس وهكذا با لاو تار الى احدى عشر ركعة والرواية مترودة فى ثلاث عشرة وفى حديث شاذ سبع عشرة وكان هذه الر كعات اعتسى ما سمينا جملتها وترأ صلاة لا لليل وهو التهجد. (احياء علوم الدين)



অর্থঃ- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক, তিন, পাঁচ, সাত, নয় এবং এগারো রাকায়াত বিত্র আদায় করতেন। তেরো রাকায়াতের বর্ণনাটি (مترود) পরিত্যাজ্য, আর একখানা (شاذ)  হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে সতরো রাকায়াতের কথাও উল্লেখ আছে। আর এসকল নামাযের রাকায়াত যার সাথে আমি বিত্র শব্দটি ব্যবহার করেছি, তা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত্রিবেলায় আদায় করতেন। আর এটাই হলো তাহাজ্জুদ নামায। (ইহ্ইয়াউ উলুমুদ্দীন)

          উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, হযরত আবূ সালমা হতে বর্ণিত বুখারী শরীফের উক্ত হাদীছ শরীফখানা তারাবীহ্ নামাযের পক্ষে মোটেও দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়, বরং ওটা তাহাজ্জুদ নামাযের দলীল হিসাবেই গ্রহণযোগ্য।

          ২নং কারণ ঃ- তাছাড়া উক্ত হাদীছ শরীফখানা যে তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কিত, তার আরো একটি অকাট্য দলীল হলো এই যে,  হাদীছ শাস্ত্রের ইমামগণ উক্ত হাদীছ শরীফখানা উনাদের স্ব স্ব কিতাবে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। যেমন- হযরত ইমাম মুসলিম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুসলিম শরীফ’-এর ১ম জিঃ ২৫৪ পৃষ্ঠায়। হযরত ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘সুনানে আবূ দাউদ’-এর ১ম জিঃ ১৯৬ পৃষ্ঠায়। হযরত ইমাম তিরমিযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘তিরমিযী শরীফ’-এর ১ম জিঃ ৫৮ পৃষ্ঠায়। হযরত ইমাম নাসাঈ  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘নাসাঈ শরীফ’-এর ১ম জিঃ ১৫৪ পৃষ্ঠায় ও হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ‘মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক’-এর ৪৭ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদীছ শরীফকে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে বর্ণনা করেন।

          আর যদি কোন কিতাবে উক্ত হাদীছ শরীফকে রমযানের ইবাদত হিসাবে তারাবীহ্র অধ্যায়ে বর্ণনা করেও থাকে, তথাপিও ওটা তারাবীহ্ নামাযের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করা শুদ্ধ বা গ্রহণযোগ্য হবেনা। কারণ উসূল রয়েছে-

 لماجاء الا حتمال بطل الاستد لال.

অর্থাৎ যখন কোন (হাদীছ শরীফ-এর মধ্যে) সন্দেহ্ বা মতবিরোধ দেখা দিবে, তখন ওটা দলীল হিসাবে পরিত্যাজ্য হবে।

৩নং কারণঃ- তাছাড়া হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত উক্ত হাদীছ  শরীফকে হযরত মুহাদ্দিসীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা(مضطرب) সন্দেহযুক্ত বলেছেন। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে-

اشكلت روايات عائشة رضى الله تعالى عنها على كثير من اهل العلم حتى نسب بعضهم حديثهاالى الاصطراب. (فتح الباوى شرح بخارى)

অর্থঃ- অধিকাংশ আলিমগণ উক্ত হাদীছ শরীফ-এর ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। এমন কি কেউ কেউ উক্ত  হাদীছ শরীফকে (مضطرب) সন্দেহযুক্ত বলে আখ্যায়িত করেন। (ফাত্হুল বারী শরহে বুখারী)

          কারণ, স্বয়ং হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে সহীহ্ সনদে তেরো রাকায়াতের বর্ণনাও রয়েছে। কাজেই مضطرب সন্দেহযুক্ত হওয়ার কারণে উক্ত হাদীছ শরীফকে তারাবীহ্ নামাযের দলীল হিসাবে পেশ করা হাদীছ শরীফ-এর উসূল মোতাবিক সম্পূর্ণই অশুদ্ধ ও অগ্রহণযোগ্য।

          কারণ, উসুল হলো- (مضطرب) সন্দেহযুক্ত  হাদীছ শরীফ-এর (اضطراب) বা সন্দেহ যতক্ষণ পর্যন্ত দূর করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত উক্ত হাদীছ শরীফ দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবেনা। অতএব, উক্ত হাদীছ শরীফকে দলীল হিসাবে পেশ করতে হলে, প্রথমে উহার (اضطراب) বা সন্দেহ দূর করতে হবে।

৪নং কারণ ঃ-    হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা  আলাইহাস  সালাম উনার কর্তৃক বর্ণিত হাদীছ শরীফখানা যে তাহাজ্জুদ নামায সম্পর্কিত, তার আরো একটি প্রমাণ হলো- উক্ত  হাদীছ  শরীফ-এ (يصلى اربعا) অর্থাৎ তিনি তা চার চার রাকায়াত করে পড়তেন, একথা উল্লেখ আছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সেটা তারাবীহ্ নামায নয়। কারণ তারাবীহ্ নামায দুই-দুই রাকায়াত করে আদায় করা হয়।

          মূলকথা হলো- উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হলো যে, আট রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের স্বপক্ষে বিদ্য়াতীরা মূল দলীল হিসাবে ‘বুখারী শরীফ’-এর  যে হাদীছ শরীফখানা  পেশ করে থাকে, ওটা মোটেও তারাবীহ্ নামাযের দলীল নয় বরং ওটা তাহাজ্জুদ নামাযের দলীল। কাজেই আট রাকায়াতের ব্যাপারে তাদের উক্ত দলীল মনগড়া, বানোয়াট ও কল্পনাপ্রসূত। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, সিহাহ্ সিত্তায় আট রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের কোন বর্ণনা বা প্রমাণ নেই।

দ্বিতীয়তঃ তারা আট রাকায়াতের স্বপক্ষে দলীল হিসাবে নি¤œাক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে।  হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

حدئنا محمد بن حميد الرازى ثنا يعقوب بن عبد الله ثنا عيمسى بن جارية عن جابر رضى الله عنه قال- صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فى رمضان ليلة ثمان ركعة والوتر- (قيام لليل) 

অর্থঃ- হযরত মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী, ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ্ হতে, তিনি ঈসা ইবনে জারিয়া হতে, তিনি হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম,  রমযান মাসে রাত্রে আট রাকায়াত নামায পড়েছেন এবং বিত্র নামায আলাদা আদায় করেছেন। (ক্বিয়ামুল লাইল)

আমাদের জবাব ঃ- কয়েকটি কারণে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত উক্ত হাদীছ শরীফখানা আট রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের পক্ষে দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রথম কারণ ঃ- মুহাদ্দিসগণ উনাদের মতে উক্ত  হাদীছ শরীফখানা জঈফ বলে প্রমাণিত। ঊননা উক্ত  হাদীছ শরীফের তিনজন রাবী জঈফ বলে প্রমাণিত হয়েছেন। তার মধ্যে একজন হলেন- মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী, যার সম্পর্কে কিতাবে নিম্নোক্ত মত পেশ করা হয়েছে-

১। হাফেজ যাহাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, وهو ضعيفঅর্থাৎ মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী জঈফ রাবী।

২। হযরত ইয়াকুব ইবনে শায়বা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, كثير المناكير অর্থাৎ তিনি অনেক মুনকার  হাদীছ বর্ণনাকারী।

৩। হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, فيه نظر অর্থাৎ উনার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।

৪। كذبه ابوزرعه অর্থাৎ হযরত ইমাম আবূ যুরা  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, তিনি মিথ্যাবাদী।

৫। হযর ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ليس بثقةঅর্থাৎ তিনি গ্রহণযোগ্য নন। (মিযানুল ই’তেদাল)

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত হাদীছ শরীফখানার প্রথম রাবী মুহম্মদ ইবনে হুমাইদুর রাযী জঈফ।

          উক্ত হাদীছ শরীফ-এর দ্বিতীয় জঈফ রাবী হলেন- ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ্, উনার প্রসঙ্গে হযর ইমাম দারে কুৎনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন(وهو ليس بالقوى)  অর্থাৎ তিনি শক্তিশালী রাবী নন (বরং দূর্বল)।

          উক্ত  হাদীছ শরীফের তৃতীয় রাবী হলেন- ঈসা ইবনে জারিয়া, তিনিও জঈফ রাবী। ওনার প্রসঙ্গে বলা হয় যে,

১। হযরত ইবনে মুঈন  রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, عنده مناكير অর্থাৎ তার নিকট বঊমুনকার  হাদীছ রয়েছে।

২। হযরত ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, منكر الحديثঅর্থাৎ তিনি মুনকার হাদীছ বর্ণনাকারী।

৩। হযরত ইমাম নাসাঈ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, هو متروك الحديث অর্থাৎ তার হাদীছগুলো পরিত্যাজ্য।

৪। “মিযানুল ই’তিদাল” কিতাবে তাকে জঈফ রাবীদের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে।

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত  হাদীছ শরীফখানা জঈফ।

          কাজেই জঈফ হাদীছকে সহীহ্ হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের বিরুদ্ধে দলীল হিসাবে পেশ করা আহমকী ও জিহালত বৈ কিছুই নয়।

দ্বিতীয় কারণ ঃ- অগত্যা হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত জঈফ হাদীছখানা যদিও ছহীহ্ হিসাবে ধরে নেই এবং সাথে সাথে হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার হতে বর্ণিত তাহাজ্জুদ নামাযের হাদীছ শরীফখানাকে যদিও তারাবীহ্ নামাযের দলীল হিসাবে গ্রহণ করা হয়, তথাপিও  হাদীছ শরীফ-এর উসূল মুতাবিক ওটার দ্বারা আট রাকায়াত নামায পড়া জায়েয হবেনা।  কেননা উসূল হলো- যদি কোন বিষয়ে দুই বা ততোধিক মত যুক্ত  হাদীছ শরীফ পাওয়া যায়, তবে দেখতে হবে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের আমল কোন্ হাদীছ শরীফ-এর উপর। উনাদের আমল যে হাদীছ শরীফ-এর উপর হবে, সে হাদীছ শরীফ অনুযায়ীই আমল করতে হবে। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়-

১। হযরত ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি  তিনি বলেন,

اذا تناوع الخبر ان عن النبى صلى اللهعليه وسلم ينطر بما اخذيه اصحابه. (ابودود شريف)

অর্থঃ- যখন দুই হাদীছ শরীফের মধ্যে বিরোধ দেখা দিবে, তখন লক্ষ্য করতে হবে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ কোন্ হাদীছ শরীফ-এর উপর আমল করেছেন। অর্থাৎ হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ যে  হাদীছ শরীফ মুতাবেক আমল করবেন, ওটাই গ্রহণযোগ্য হবে। (আবূ দাউদ)

২। হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কিতাবে উল্লেখ করেন 

اذاجاء عن النبى صلى الله عليه وسلم- حديشان مختلفان وبلغنا ان ابابكر وعمر عملا با حد الحديثين وتركا الاخر كان ذالكدليلا على ان الحق فيما عملابه. (التعليق الممجد على مؤظا امام محم)

অর্থঃ- যখন হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে কোন বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়, আর এর মধ্য হতে একটির উপর হযরত আবূ বকর সিদ্দীক আলাইহিস সালাম ও হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাদের আমল প্রমাণিত হয়, তখন উক্ত হাদীছ শরীফখানার উপর ওনাদের আমল থাকবে, এটাই দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য হবে।

৩। ইমামুল মুজ্তাহীদীন হযরত আবূ বকর জাস্স্ছা  রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,

 متى روى عن النبى صلى الله عليه وسلم- خبران متضادان وظهر عمل السلف با حدهما كان الذى ظهر عمل السلف به اولى لا لاثبات.(احكام القران للجصاص)

অর্থঃ- যখন কোন বিষয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে দু’টি বিরোধপূর্ণ হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়, আর এর মধ্যে কোন একটির উপর সল্ফে সালিহীনগণ আমল করেছেন বলে যদি প্রমাণিত হয়, তবে উক্ত হাদীছ শরীফ-এর উপর সল্ফে সালেহীনগণ উনারা আমল করেছেন, এটাই উত্তম দলীল হিসাবে সাব্যস্ত হবে। (আহ্কামুল কুারআন)

          উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে এটাই সাব্যস্ত হয় যে, তারাবীহ্ নামাযের পক্ষে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হতে বর্ণিত  হাদীছ শরীফখানাই দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য। আর হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম ও হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের হতে বর্ণিত  হাদীছ শরীফ বা এ ধরণের যত হাদীছ শরীফ রয়েছে তারাবীহ্ নামাযের ব্যাপারে, তা সম্পূর্ণই পরিত্যাজ্য। কারণ একমাত্র বিশ রাকায়াত সম্পর্কিত হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাদীছ শরীফ-এর উপরই খুলাফা-ই-রাশেদীন, হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, সল্ফে সালিহীন, খল্ফে সালিহীন, ইমাম, মুজতাহিদ প্রত্যেকেরই আমল রয়েছে। অর্থাৎ উল্লিখিত সকলেই বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়তেন।

          অতএব, সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ নামায বিশ রাকায়াত। তারাবীহ্ নামায আট রাকায়াত এ দাবী সম্পূর্ণই বাতিল, অমূলক, মনগড়া ও অজ্ঞতাপ্রসূত।

তৃতীয়তঃ কেউ কেউ আবার আট রাকায়াতের স্বপক্ষে নিম্নোক্ত হাদীছ শরীফখানা পেশ করে থাকে। যেমন-  হাদীছ শরীফ-এ উল্লেখ আছে যে,

مالك عن محمد بن يوسف عن السائب بن يزيد انه قال- امر عمربن الخطاب رضى الله عنه ابى بن كعب وبميما الذارى رضى الله عنهما ان يقوما للناس احد عشرة ركعة. (مؤطا مالك) 

অর্থঃ- হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুহম্মদ ইবনে ইউসূফ হমতুল্লাহি আলাইহি হতে, তিনি সায়েব ইবনে ইয়াযীদ হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন- হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব  আলাইহিস সালাম, হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত তামীম দারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এগার রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (মুয়াত্তায়ে মালিক)

আমাদের জবাব ঃ- নিম্নোক্ত কারণে ওটা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

১। উক্ত   হাদীছ  শরীফখানা (مضطرب المتن) অর্থাৎ সন্দেহযুক্ত ইবারত। কারণ মুহম্মদ ইবনে ইউসূফের পাঁচজন ছাত্রের মধ্যে তিনজন এগার রাকায়াত, একজন তেরো রাকায়াত ও অপরজন একুশ রাকায়াতের কথা বর্ণনা করেছেন। আবার যে তিনজন এগার রাকায়াতের পক্ষে মত পেশ করেছেন, তাদের বর্ণনার মধ্যেও একজনের ইবারতের সাথে অপরজনের ইবারতের পার্থক্য রয়েছে। কাজেই উক্ত  হাদীছ শরীফখানা যেহেতু  مضطرب المتن (সন্দেহযুক্ত ইবারত) তাই ওটা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

২। হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত  হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেন, স্বয়ং তিনিই উক্ত  হাদীছ শরীফকে তারাবীহ্ নামাযের ব্যাপারে আমলের উপযুক্ত মনে করেন না, আর তাই তিনি আট রাকায়াতের স্বপক্ষে কোন মত পেশ করেননি। বরং বিশ রাকায়াতের স্বপক্ষেই রায় দিয়েছেন ও বিশ রাকায়াতের মতকেই গ্রহণ করেছেন।

           যেমন হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,

عن زيدبن رومان قال- كان الناس بقومون فى زمن عمرين الخطاب بئلاث وعشرين وكعة. (مؤطا امام مالك صفه. ৩= وكذا فى البيهقى)

অর্থঃ- হযরত ইয়াযীদ ইবনে রোমান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময় লোকেরা বিত্রসহ তেইশ রাকায়াত (তারাবীহ্) নামায পড়তেন। (মুওয়াত্তায়ে ইমাম মালেক পৃষ্ঠা-৪০, অনুরূপ বায়হাক্বী শরীফে উল্লেখ করা হয়)

          এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-

فاختار مالك فى احد قوليه وابو خيفة والشافعى واحمد وداود رحمهم الله تعالى- القيام بعشرين ركعة سوىالوتر. (بداية المجتهد)

অর্থঃ- হযরত ইমাম মালেক রহমতুল্লাহি আলাইহি (উনার দু’টি মত হতে), হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ইমাম আহ্মদ রহমতুল্লাহি ও হযরত ইমাম আবূ দাউদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা বিত্র নামায ব্যতীত বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের মতকেই গ্রহণ করেছেন। (বিদায়াতুল মুজ্তাহিদ)

৩। যদি প্রকৃতপক্ষেই হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব  আলাইহিস সালাম তিনি আট রাকায়াতের নির্দেশ দিতেন, তবে পরবর্তীতে হযরত ওসমান  যিন নূরাইন আলাইহিস সালাম ও হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম অথবা অন্যান্য হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ হতেও এরূপ বর্ণনা বা আমল পাওয়া যেত, কিন্তু কোথাও এর প্রমাণ নেই। বরং এর বিপরীত বিশ রাকায়াতের বর্ণনা কিতাবে ঠিকই বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়-

كانوا يقومون على عهد عمر رضى الله تعالى عنه- بعشرين ركعة وعلى عهد عشمان وعلى مثله. (رواه البيهقى با سناد صحيح)

অর্থঃ- লোকেরা হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়তেন। অনুরূপ হযরত ওসমান আলাইহিস সালাম ও হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালেও বিশ রাকায়াত নামায পড়া হতো। (এটা বায়হাক্বী সহীহ্ সনদে বর্ণনা করেন)

          কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-

ان على بن ابى طالب امر رجلا يصلى بنا خمس ترويحات عشرين ركعة. (سنن الكبرى للبيهقى- كنز العمال)

অর্থঃ- “নিশ্চয় হযরত আলী আ এক ব্যক্তিকে,

আমাদের নিয়ে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (বায়হাক্বী, কান্যুল উম্মাল)

৪। যদিও ধরে নেই যে, প্রথম দিকে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি এগার রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন, তথাপি ওটা দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, সহীহ্ রেওয়াতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম, হযরত ওসমান আলাইহিস সালাম ও হযরত আলী আলাইহিস সালাম উনারাসহ সকল হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ পরবর্তীতে অর্থাৎ নিয়মিতভাবে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায আদায় করেন এবং বিশ রাকায়াতের উপরই ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর কারো পক্ষেই প্রমাণ করা সম্ভব না যে, আট রাকায়াতের উপর ইজমা হয়েছে। কাজেই এ দৃষ্টিকোন থেকেও আট রাকায়াতের দাবী সম্পূর্ণ অবান্তর প্রমাণিত হলো।

          অতএব প্রমাণিত হলো যে, আট রাকায়াতের স্বপক্ষে উক্ত হাদীছখানা মোটেও গ্রহণযোগ্য বা অনুসরণীয় নয়। আট রাকায়াতের পক্ষে তাদের এ দলীলখানাও অগ্রাহ্য ও বাতিল বলে প্রমাণিত হলো।

মোটকথা হলো- আট রাকায়াতের স্বপক্ষে তারা মজবুত, অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য কোন দলীলই পেশ করতে পারবেনা। পক্ষান্তরে সহীহ্ হাদীছ, ইজমাযে আযীমত, আমলে উম্মত ও অসংখ্য অকাট্য, নির্ভরযোগ্য দলীলের দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসে জামায়াতের সাথে ও জামায়াত ব্যতীত সর্বাবস্থায় বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায আদায় করেছেন।

তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামাযের পার্থক্য

          বিদ্য়াতীদের কেউ কেউ, আট রাকায়াতের স্বপক্ষীয় দলীলগুলোর সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা না দিতে পেরে বলে থাকে যে, তারাবীহ্ নামায ও তাহাজ্জুদ নামায একই নামায। রমযান মাসে এটাকে তারাবীহ্ বলে ও রমযান ব্যতীত অন্য মাসে তাহাজ্জুদ বলে।

আমাদের জবাব ঃ-        মূলতঃ বিদ্য়াতীদের উপরোক্ত বক্তব্য এটাই প্রমাণ করে যে, তারা অর্থাৎ বিদ্য়াতীরা শরীয়তের ইল্ম সম্পর্কে নেহায়েতই অজ্ঞ। কারণ, তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামায একই নামায নয়।

          প্রথমতঃ এটা তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হয়।

          ১। তারাবীহ্ শব্দের তাহ্ক্বীক্বী অর্থ ঃ-

والترويحة فى شهر رمضان= سميت بذالك لا ستراحة القوم بعد كل اربغ ركعات- وفى الحديث صلاة التراويح لا نهم كانوا يستر حون بين كل تسلمتين- والتراويح جمع ترويحة= (لسان العرب جصفه ১৭৬৮، وكذافى القاموس المحيط.

অর্থঃ- রমযান মাসে (তারাবীহ্ নামাযে) প্রতি চার রাকায়াত পর মুসল্লীদের বিশ্রাম নেয়াকে “তারবীহাতুন বলে। প্রতি চার রাকায়াত পর পর মুসল্লীরা বিশ্রাম নেয় বলেই এটাকে তারাবীহ্ নামায বলে। আর “তারাবীহ্” বহুবচন হলো “তারবীহাতুন”-এর। (লিসানুল আরব ১ম জিঃ পৃষ্ঠা-১৭৬৮, অনুরূপ কামূস আল মুহীতে উল্লেখ আছে)

ঊদূ লেখা ঢুকবে..................দ



অর্থঃ- “তারাবীহ্” বহুবচন হলো- “তারবীহাতুন”-এর। যার সাধারণ অর্থ হলো- বসা, অর্থাৎ রমযানের রাত্রে (তারাবীহ্ নামাযে) চার রাকায়াত পর বিশ্রাম নেয়ার জন্যে বসা। প্রত্যেক চার রাকায়াত নামাযকে তারবীহাতুন (ترويحة) বলে। আর পুরো বিশ রাকায়াত নামাযকে তারাবীহ্ (تراويح) বলে, যা  রমযান মাসে পড়া হয়। (মিছবাহুল লোগাত পৃষ্ঠা-৩২২, অনুরূপ আল্ মুনজিদেও উল্লেখ আছে।)



ঊদূ লেখা ঢুকবে..................দ

.........

অর্থঃ- “তারাবীহ্” শব্দের অর্থ হলো- বিশ্রাম নেয়া, ঐ বিশ রাকায়াত সুন্নত নামায, যেটা এশার পর ও বিত্রের পূর্বে পড়া হয়। যেহেতু প্রত্যেক চার রাকায়াত পর পর কিছু সময় বিলম্ব এবং বিশ্রাম নিতে হয়, তাই এটাকে তারাবীহ্ নামায বলে। (ফিরুযুল লোগাত পৃষ্ঠা-৩৫৩)

          অর্থাৎ তারাবীহ্ (تعراويح) শব্দটি হলো- (جمع) বা বহুবচন। তার (واحد) বা একবচন হলো- (ترويحة) তারবীহাতুন। মুহাদ্দিসীনগণের মত হলো- চার রাকায়াত নামাযকে এক “তারবীহাতুন” (ترويحة)  বলে, এরূপ পাঁচ তারবীহাতুন (ترويحة) -এ এক তারাবীহ্ (تراريح) অর্থাৎ ৪ঢ৫=২০, অতএব বিশ রাকায়াতে এক তারাবীহ্।

          এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফ-এর বিখ্যাত শরাহ্ উমদাতুল ক্বারীতে উল্লেখ আছে যে,

يقال الترحة اسم لكل اربع ركعة انمافى الاصلى ايصال الراحة وهى الجلسة. (عمدة القارى)

অর্থঃ- প্রতি চার রাকায়াত নামাযকে “তারবীহাতুন” বলা হয়, আর উহা মূলতঃ বিশ্রাম নেয়ার জলসা।

          অর্থাৎ প্রতি চার রাকায়াত নামাযের পর বিশ্রাম নেয়া হয় বলেই এটাকে তারবীহাতুন বলে। আর এরূপ পাঁচ তারবীহাতুনে যে বিশ রাকায়াত নি¤œাক্ত বর্ণনা দ্বারা তা স্পষ্টই প্রমাণিত হয়। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে –

ان على بن ابى طالب امر رجلا يصلى بنا خمس ترويحات عشربن ركعة. (سنن الكبرى للبيهقى- كنزالعمال)

অর্থঃ- নিশ্চয় হযরত আলী আলাইহিস সালাম তিনি এক ব্যক্তিকে আমাদেরকে নিয়ে পাঁচ “তারবীহাত” অর্থাৎ বিশ রাকায়াত নামায পড়ার আদেশ দিয়েছেন। (বায়হাক্বী, কানযুল উম্মাল)

          উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে , “পাঁচ তারবীহাতুন”-এ বিশ রাকায়াত, অর্থাৎ বিশ রাকায়াতে এক “তারাবীহ্”। অতএব, তারাবীহ্ শব্দের অর্থ দ্বারাও বিশ রাকায়াত নামায সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।

          ২। তাহাজ্জুদ শব্দের তাহ্ক্বীক্বী অর্থ ঃ-

ঊদূ লেখা ঢুকবে..................দ



অর্থঃ- তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ হলো- রাত্রের নামায, আর রাত্রে ঘুম হতে উঠে নামায আদায়কারীকে বলে মুতাহাজ্জিদ। আয্হারী বলেন, আরবী ভাষায় রাত্রে শয়নকারীকে হাজিদ বলে, আর ঘুম হতে উঠে নামায আদায়কারীকে মুতাহাজ্জিদ বলে। (মিছবাহুল লুগাত পৃষ্ঠা-৯৭৭, অনুরূপ লিসানুল আরব, কামূস আল মুহীত ও আল মুন্জিদেও উল্লেখ আছে)

ঊদূ লেখা ঢুকবে..................দ



অর্থঃ- “তাহাজ্জুদ” শব্দের অর্থ হলো- রাত্রে জাগ্রত হওয়া, ঐ নামায যা অর্ধ রাত্রে উঠে পড়া হয়। (ফিরোজুল লুগাত, পৃষ্ঠা-৩৯৩)

          অতএব, “তারাবীহ” ও “তাহাজ্জুদ” শব্দদ্বয়ের তাহ্ক্বীক্ব বা বিশ্লেষণ দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামায একই নামায নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন নামায। কারণ তারাবীহ্ নামাযের সময় হলো- এশার পর অর্থাৎ তারাবীহ্ নামায যেমন এশার পর পর আদায় করলেও হয়, তদ্রুপ মধ্য রাত্রে ও শেষ রাত্রে অর্থাৎ এশার নামাযের পর হতে সুব্হে সাদিকের আগ পর্যন্ত যে কোন সময় তারাবীহ্ নামায আদায় করা যায়। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম রাত্রে, মধ্য রাত্রে ও শেষ রাত্রেও তারাবীহ্ নামায আদায় করেছেন।

          আর তাহাজ্জুদ নামায মধ্য রাত্রের পূর্বে আদায় করলে ওটা তাহাজ্জুদ নামায হিসাবে গণ্য হবেনা। বরং ওটা রাত্রের নফল নামায হিসাবে গণ্য হবে। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাযের সময় হলো মধ্য রাত্রের পর হতে সুব্হে সাদিকের আগ পর্যন্ত। তবে তাহাজ্জুদ নামায মধ্য রাত্রের পর ঘুম হতে উঠে আদায় করাই আফজল বা উত্তম।

          মূলতঃ হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব  আলাইহিস সালাম উম্মতে হাবীবীর ইহ্সানের জন্য ও উম্মতে হাবীবীকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহ্ হতে হেফাজতের জন্য অর্থাৎ পরবর্তী উম্মতে হাবীবীর জন্য ঘুম হতে উঠে উহা আদায় করা সম্ভব নাও হতে পারে, যদি তারা ঘুমের কারণে উহা আদায় করতে না পারে, তবে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহে গুণাহ্গার হবে, তাই তিনি তারাবীহ্ নামাযকে এশার পর পর নিয়ে আসেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেন,

والتسى تنامون عنها افضل منالتى تقو مون يريد اخر لليل وكان الناس يقومون اوله.(بخارى شريف)

অর্থঃ- “তোমরা যে সময় ইবাদত না করে ঘুমায়ে থাক, যে সময় হতে ঐ সময়টুকু উত্তম, যে সময় তোমরা নামায পড়। (আব্দুর রহ্মান রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন) উত্তম সময় বলতে তিনি শেষ রাত্রকেই বুঝায়েছেন, কেননা তখন (হযরত উমর  উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময়) লোকেরা প্রথম রাত্রেই তারাবীহ্ নামায পড়তেন।” (বুখারী শরীফ)      

          অর্থাৎ তারাবীহ্ নামায শেষ রাত্রে পড়াই উত্তম ছিল, কিন্তু হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উম্মতে হাবীবীর ইহ্সানের জন্য তারাবীহ্ নামায প্রথম রাত্রে এশার নামাযের পর নিয়ে আসেন।

          অতএব, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সময় হতেই নিয়মিতভাবে এশার নামাযের পর তারাবীহ্ নামায আদায় হয়ে আসছে এবং বর্তমানেও সেই সুন্নত তরীক্বাই চালু রয়েছে।

          দ্বিতীয়তঃ তারাবীহ্ নামাযে (تداعى) ঘোষণা দেয়া জায়েয। অর্থাৎ তারাবীহ্ নামায ঘোষণা দিয়ে জামায়াতের সাথে আদায় করা হয় বরং তারাবীহ্ নামায জামায়াতে আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। আর তাহাজ্জুদ নামায (تداعى) অর্থাৎ ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্, চাই তা রমযান মাসে হোক অথবা গায়রে রমযানে হোক।

          এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে- 

جماعت در تماز تهجد بتداعى مكروه است وبغير تداعى كه اتفاقا ايك دو كس يا سه كس اقتدائى تهحد نمايند مكروه نيست- التداعى بان يقتدى اربعة بواحد كما فى الدرر كذا فى الدرالمختار فاضل ... درحاشيهء شرح وقاية مى ارد- الجماعة فى التهجد الذى هى نافلة بدعة قطعا. (مجموعهء فتاو .. سعديه)

অর্থঃ- ঘোষণা দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর ঘোষণা ব্যতীত একা তাহাজ্জুদ আদায়কারীর পিছনে যদি ঘটনাক্রমে ঊর্দ্ধে তিনজন লোক এক্তেদা করে, (মতবিরোধ রয়েছে, কেউ কেউ বলেন, মাকরূহ্ হবে, কেউ কেউ বলেন, হবেনা) তবে মাকরূহ্ হবেনা। কিন্তু চারজন এক্তেদা করলে (সর্বসম্মতিক্রমে) মাকরূহ্ তাহ্রীমী হবে। অনুরূপ বর্ণনা দুরার ও দুররুল মুখতার কিতাবেও রয়েছে। আল্লামা ফাযেল চলপী  রহমতুল্লাহি আলাইহি শরহে বেকায়ার হাশিয়ায় উল্লেখ করেন যে, তাহাজ্জুদ নামায যেটা নফল নামাযের অন্তর্ভূক্ত, এটা জামায়াতে আদায় করা বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। (মজ্মুয়ায়ে ফতওয়ায়ে সা’দিয়াহ্)

          সুতরাং এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ নামায ও তাহাজ্জুদ নামায অভিন্ননামায নয়, যদি অভিন্নবা একই নামায হতো, তবে তারাবীহ্ নামাযও জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ হতো। কারণ ওলামা-ই-কিরামগণের মতে তাহাজ্জুদ নামায রমযান মাসেও জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্। মূলকথা হলো- তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ একই নামায নয় বরং ভিন্নভিন্ননামায।

          তাহাজ্জুদ নামায যে সর্বদা ঘোষণা দিয়ে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্, এ সম্পর্কে আরো বিস্তারীত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১৩তম সংখ্যা পাঠ করুন। সেখানে ৭৬টি অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে ফতওয়া দেয়া হয়েছে।

তৃতীয়তঃ তাহাজ্জুদ নামায প্রথমে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম  উনার প্রতি ফরজ ছিল, পরবর্তীতে মহান আল্লাহ্ পাক উনার ওহীর মাধ্যমে ওটা মানছূখ বা রদ্ করে দেন। এখন প্রশ্নঊহলো- তাহাজ্জুদ নামাযের ফরজের হুকুম যদি রদ্ই হয়ে থাকে, তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কেন বললেন,

انى خشيت ان يفرض عليكم.

অর্থাৎ “আমার আশঙ্কা হচ্ছে, তোমাদের উপর এটা ফরজ হয়ে যায় কিনা।”

          মূলতঃ যেটা একবার রদ্ হয়ে গেছে, পূণরায় তা ফরজ হওয়ার কোনই আশঙ্কা থাকতে পারেনা।

সুতরাং এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামায একই নামায নয় বরং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসে তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সাথে তারাবীহ্ নামায আলাদা বা পৃথক আদায় করেছেন। আর এই তারাবীহ্ নামায ফরজ হয়ে যাওয়ারই আশঙ্কা করেছেন।

চতুর্থতঃ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি তাহাজ্জুদ নামাযের নির্দেশ কুরআন শরীফ-এর মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ্ পাক তিনি বলেন,

ومن الليل فتهجد ببه نافلة لك ...........

অর্থঃ- রাত্রের কিছু অংশ কুরআন শরীফ পাঠসহ (নামায পড়ার জন্য) জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত। (বণী ইস্রাইল)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,

ياايها المزمل قم الليل الاقليلا.....

অর্থঃ-  হে বস্ত্রাবৃত, রাত্রিতে দন্ডায়মান হোন কিছু অংশ বাদ দিয়ে ........ (সূরা মুযযাম্মিল) 

          আর তারাবীহ্ নামায সম্পর্কে হাদীছ শরীফ-এ ইরশাদ হয়েছে,

ان الله تبارك وتعالى فرض صيام رمضان عليكم وسننت لكم قيامه. (نسائى شريف)

অর্থঃ- “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন, তোমাদের প্রতি রমযান মাসের রোজাকে ফরজ করেছেন। আর আমি তোমাদের প্রতি তারাবীহ্ নামাযকে সুন্নত করলাম।”

          এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামায ভিন্ন ভিন্ন নামায। কারণ তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন শরীফ অর্থাৎ ওহীয়ে মাত্লূ-এর মাধ্যমে এসেছে। আর তারাবীহ্ নামায হাদীছ শরীফ অর্থাৎ ওহীয়ে গায়রে মাত্লূ-এর মাধ্যমে এসেছে। অতএব, এদিক থেকেও উভয় নামাযের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।

পঞ্চমতঃ  হাদীছ শরীফ-এ তারাবীহ্ নামাযকে قيام رمضان বলা হয়েছে। অর্থাৎ তারাবীহ্ নামায শুধু রমযান মাসের জন্যই খাছ বা নির্দিষ্ট। আর তাহাজ্জুদ নামাযকে বলা হয়েছে, (صلاة لليل) রাত্রের নামায। অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাযকে রমযান মাসের  জন্য  খাছ  বা  নির্দিষ্ট করা হয়নি বরং সারা বৎসরের জন্যই খাছ বা নির্দিষ্ট।

          অতএব, এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ ভিন্ন ভিন্ন নামায।

ষষ্টতঃ তাহাজ্জুদ নামাযের আদেশ মক্কা শরীফ-এ দেয়া হয়েছে, আর তারাবীহ্ নামাযের আদেশ মদীনা শরীফ-এ দেয়া হয়েছে।

সপ্তমতঃ অনুসরণীয় ইমাম মুজ্তাহিদগণ উনাদের কিতাবে তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামাযকে পৃথক নামায হিসাবে উল্লেখ করেছেন। যেমন হাম্বলী মায্হাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল মুকান্নাত’-এ উল্লেখ আছে-

التراويح وهى عشرون ركعة يقوم بهافى رمضان فى جماعة ويوتر بعدها فى الجماعة فان كان له تهجد يوتر بعده.

অর্থঃ- রমযান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করবে এবং উহার পর বিত্র নামাযও জামায়াতে আদায় করবে। আর যদি কারো তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস থাকে, তবে বিত্র তাহাজ্জুদের পর আদায় করবে।

          অতএব যদি তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ একই হতো, তবে আলাদাভাবে তাহাজ্জুদের কথা উল্লেখ করার কোন প্রয়োজন ছিলনা। সুতরাং এর দ্বারাও প্রমাণিত হলো যে, উল্লেখিত নামাযদ্বয় ভিন্ন ভিন্ন নামায। সাথে সাথে এটাও বুঝা গেলো যে, হযরত ইমাম আহ্মদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতেও তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ ভিন্ন ভিন্ন নামায।

অষ্টমতঃ হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার হতেও অনুরূপ বর্ণিত আছে-



ঊদূ লেখা ঢুকবে..................দ

.................................................



অর্থঃ- হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি রাত্রের প্রথম ভাগে নিজ ছাত্রদের সাথে তারাবীহ্ নামায জামায়াতে আদায় করতেন এবং তাতে একবার কুরআন শরীফ খতম করতেন। আর সাহ্রীর সময় তাহাজ্জুদ নামায একাকী আদায় করতেন। (লুময়াতুল মাছাবীহ্)

          সুতরাং যেখানে হযরত ইমাম বুখারী  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামাযকে পৃথক নামায মনে করতেন ও পৃথক পৃথকভাবে তা আদায় করতেন, ঊখানে উক্ত নামাযদ্বয়কে একই নামায বলা মূর্খতা ও গুমরাহী বৈ কিছুই নয়।

নবমতঃ তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামায পৃথক পৃথক নামায বলেই মুহাদ্দিসীনে কিরাম, হাদীছ শরীফ-এর কিতাবে ও ফুক্কাহায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা ফিক্বাহের কিতাবে উক্ত নামাযদ্বয়কে পৃথক পৃথক অধ্যায়ে বর্ণনা বা উল্লেখ করেছেন।

অতএব, যদি একই নামায হতো, তবে তো পৃথক পৃথক অধ্যায় রচনা করার কোন প্রয়োজন ছিলনা। বরং একটি অধ্যায়ই যথেষ্টছিল। এর দ্বারাও উক্ত নামাযদ্বয়ের ভিন্নতা প্রমাণিত হয়।

দশমতঃ তাহাজ্জুদ নামাযের রাকায়াতের সংখ্যা নির্দিষ্ট রয়েছে অর্থাৎ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম, ঊর্ধ্বে তেরো রাকায়াত ও নি¤œ সাত রাকায়াত তাহাজ্জুদ নামায পড়েছেন বিত্রসহ। আর তারাবীহ্ নামায সম্পর্কে আট রাকায়াত দাবীদারদের অনুসরণীয় ব্যক্তিবর্গেরই বক্তব্য হলো- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে তারাবীহ্ নামাযের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা প্রমাণিত নেই। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে-

قال علامة السبكى اعلم انه لم ينقل كم صلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فى تلك لليالى هل هو عشرون او اقل. (شرح المنهاج)

অর্থঃ- আল্লামা সুবকী বলেন, রমযান মাসে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ পড়েছেন, না কম পড়েছেন, উহা বর্ণিত নেই। (শরহে মিনহাজ)

          এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, যদিও তাদের উপরোক্ত বক্তব্যটি অশুদ্ধ বা ভুল, তথাপি তাদের উক্ত বক্তব্য দ্বারাও প্রমাণিত হয় যে, তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ একই নামায নয়, যদি একই হতো, তবে (তাদের মতে) তারাবীহ্ নামাযের রাকায়াতের সংখ্যা অনির্দিষ্টহতোনা বরং তাহাজ্জুদ নামাযের ন্যায় নির্দিষ্টই হতো।

উপরোক্ত বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা এটা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামায কখনোই এক নামায নয়, বরং ভিন্ন ভিন্ন নামায। উক্ত নামাযদ্বয়কে একই নামায হিসাবে আখ্যায়িত করা মূলতঃ নিজেদের মূর্খতা ও গুামরাহীকে আরো সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত করারই নামান্তর। সাথে সাথে এটাও প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ নামায যেহেতু একই নামায নয়, সেহেতেু হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম বর্ণিত ‘বুখারী শরীফ’-এর হাদীছ শরীফখানাও আট রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযের পক্ষে দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয় বরং উক্ত হাদীছ শরীফখানা তাহাজ্জুদ নামাযের দলীল হিসাবেই গ্রহণযোগ্য।

          কাজেই উপরোক্ত খন্ডনমুলক আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ নামায আট রাকায়াত, এ দাবী বা বক্তব্য সম্পূর্ণই অমূলক, বিভ্রান্তিকর, মনগড়া, বানোয়াট, অজ্ঞতাপ্রসূত ও অপপ্রচার মাত্র। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে এ ধরণের গুমরাহী ও অপপ্রচার থেকে হিফাজত করুন। (আমীন)



বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পুরুষ-

মহিলা উভয়ের জন্যেই সুন্নতে মুয়াক্কাদা

        

উপরোল্লিখিত বিস্তারিত ও নির্ভরযোগ্য আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়তেন ও হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে তারাবীহ্ নামায পড়ার জন্যে ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করতেন, কিন্তু ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সরাসরি তাক্বীদ বা আদেশ দিতেন না। তবে পরবর্তীতে হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা বিশেষ করে আমীরুল মু’মিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকাল হতে (তাওয়ারাছ) তথা নিয়মিতভাবে রমযান মাসে এহ্তেমামের সাথে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায আদায় হয়ে আসছে। এর উপর ভিত্তি করে পরবর্তী ইমাম মুজ্তাহিদগণ ফতওয়া দেন যে,

التراويح سنة مؤكدة لمواظبة الخلفاء الراشدين للرجال والنساء اجماعا. (ردالمحتارجصفه ৬৫৯)

অর্থঃ- হযরত খুলাফা-ই-রাশেদীনগণ উনাদের (مواظبة) বা নিয়মিত আমলের কারণে পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যে তারাবীহ্ নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা সাব্যস্ত হলো। (রদ্দুল মুহতার ১ম জিঃ পষ্ঠা-৬৫৯)

          এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত ফিক্বাহের কিতাব “মারাক্বিউল ফালাহ্”তে উল্লেখ আছে যে,      

التراويح سنة مؤكدة وهى عشرون ركعة. (مراقى الفلاح)

অর্থঃ- বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। (মারাক্বিউল ফালাহ্)

          অতএব প্রমাণিত হলো যে, বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়া শুধু পুরুষের জন্যেই সুন্নতে মুয়াক্কাদা নয় বরং পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যেই সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। তাছাড়া আবূ দাউদ শরীফ-এর হাদীছ শরীফ-এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রমযান মাসে পরিবারের মহিলাদেরকে তারাবীহ্ নামায পড়ার জন্য একত্রিত করেছেন। কাজেই তারাবীহ্ নামায পুরুষদের জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা, মহিলাদের জন্য নয়, একথা বলার কোনই অবকাশ নেই। বরং ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য মত হলো- পুরুষ ও মহিলা যাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ, তাদের জন্য রমযানে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায আদায় করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। শরয়ী ওজর ব্যতীত বিশ রাকায়াতের চেয়ে এক রাকায়াতও কম পড়া যাবেনা।

জামায়াতে তারাবীহ্

পুরুষের জন্যে সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া

          তারাবীহ্ নামায ব্যক্তিগতভাবে যদিও পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যেই সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে আইনী, তবে পুরুষের জন্যে জামায়াতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। অর্থাৎ এক মসজিদে কিছু লোক জামায়াতে আদায় করলেই সকলের জামায়াতের হক্ব আদায় হয়ে যায়। তবে মসজিদে তারাবীহ্ নামাযের কোন জামায়াতই যদি না হয়, তবে মহল্লার সকলেই সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহে গুণাহ্গার হবে। তাই সকলেরই উচিৎ তারাবীহ্ নামায জামায়াতে আদায় করা। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

قال ابن عابدين رحمة الله عليه تحت قول صاحب التنوير والجماعة فيها سنة على الكفاية. (ردالمحتار)    

অর্থঃ- হযরত ইবনে আবেদীন রহমতুল্লাহি আলাইহি “সাহেবে তানবীরের” বরাত দিয়ে বলেন, তারাবীহ্ নামাযের জামায়াত সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। (রদ্দুল মুহ্তার)

          মূলতঃ তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চার রাত্র হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে নিয়ে তারাবীহ্ নামায জামায়াতে আদায় করেন। তবে তিনি ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তারাবীহ্ নামায নিয়মিতভাবে জামায়াতে আদায় করেননি। এ অনিয়মিত তারাবীহ্ নামাযের জামায়াত, খলীফাতুল রসূলিল্লাহ্, হযরত আবূ বক্বর সিদ্দীক  আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকাল পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। কিন্তু পরবর্তীতে আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালে, ওনারই মহৎ উদ্যেগে  রমযান মাসে নিয়মিতভাবে মসজিদে তারাবীহ্ নামাযের জামায়াত অনুষ্ঠিত হতে থাকে। এ প্রসঙ্গে  হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে যে,

عن عبد الرحمن بن عبد القارى قال- خرجت مع عمربن الخطاب ليلة الى المسجد فاذا الناس اوزاع متفرقون يصلى الرجل لنفسه ويصلى الرجل فيصلى بصلاته الرهط فقال عمربن الخطاب- انى لو جمعت هؤلاء على قارى راحد لكان امثل ثم عزم فجعهم على ابى بن كعب قال ثم خرجت معه ليلة اخرى والناس بصلون بصلاة قارئهم- قال عمر نعمة البدعة هذه .... (رواه البخارى)

অর্থঃ- হযরত আব্দুর রহ্মান ইবনে আব্দুল কারী  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি (রমযানের) এক রাত্রে খলীফাতুল মুসলিমীন, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার সাথে মসজিদে (নববীতে) পৌঁছলাম, দেখলাম যে, লোক সকল বিভিন্ন দলে বিভক্ত, কেউ একা নিজের নামায পড়ছে আর কারো পিছনে ছোট একদল নামায পড়ছে। এ অবস্থা দেখে, হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, যদি আমি এদেরকে এক ইমামের পিছনে একত্র করে দেই, তবে অনেক উত্তম হবে। অতঃপর তিনি এ ব্যাপারে দৃঢ় ইচ্ছা ও পূর্ণ সংকল্পগ্রহণ করেন এবং হযরত উবাই ইবনে কা’ব  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পিছনে সকলকে একত্রিত করে নেন। হযরত আব্দুর রহ্মান  রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, অতঃপর আমি আরেক দিন উনার (খলীফার) সাথে মসজিদে নববীতে গেলাম, দেখলাম যে, সকল লোক উনাদের ইমাম (হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার পিছনে নামায আদায় করছেন। এটা দেখে হযরত ওমর আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, এটা কত উত্তম পদ্ধতি (আবিস্কার) ......... (বুখারী শরীফ)

          উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা এটাই প্রতিয়মান হয় যে, আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি মূলতঃ নিয়মিতভাবে তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়ার ব্যবস্থা করেন, নচেৎ তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। আর পরবর্তীতে ইমাম, মুজ্তাহিদগণ, বিশেষ করে হানাফী মায্হাবের ইমামগণ, তারাবীহ্ নামাযের জামায়াতের উপর হযরত ছাহাবা-ই-কিরাম  রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনারা নিয়মিত আমলের কারণে “তারাবীহ্ নামায” জামায়াতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া ফতওয়া দেন।

          অতএব, মূলকথা হলো- তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া শুধুমাত্র পুরুষদের জন্যই সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া, মহিলাদের জন্যে নয়, কারণ মহিলাদের জন্য সর্ব প্রকার নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী।

মহিলাদের জন্য তারাবীহ্ নামায মসজিদে গিয়ে জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী

          এখন কেউ বলতে পারেন যে, মহিলারা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে রমযান মাসে তারাবীহ্ নামায জামায়াতের সাথে আদায় করেছেন বলে হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হয়, তবে এটার ফায়সালা কি?

          এটার ফায়সালা হলো- মহিলারা শুধু তারাবীহ্ নামায জামায়াতে আদায় করেছেন তা নয়, বরং সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানায় মহিলারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায, জুমুয়া, ঈদ, তারাবীহ্ নামাযের জামায়াতসহ সকল অনুষ্ঠানাদিতে উপস্থিত হতেন, যার বর্ণনা হাদীছ শরীফে রয়েছে। তবে এ ধারা আমীরুল মু’মিনীন, হযরত ওমর ইবনুল খত্তাব  আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতের পূর্ব পর্যন্ত জারী থাকে। অর্থাৎ উনার খিলাফতকালেই মহিলাদের জামায়াতের জন্য মসজিদে আসতে নিষেধ করা হয়। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি যখন এ নিষেধাজ্ঞা জারী করেন, তখন মহিলারা হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার নিকট অভিযোগ করেন। তখন হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বলেন,

لوان رسول الله صلى الله عليه وسلم- رأى ما احدثت النساء لمنعهن. (ابو دود شريف)

অর্থঃ- যদি হাবীবুল্লা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহিলাদের বর্তমান অবস্থা দেখতেন, তবে তিনিও তোমাদেরকে (মসজিদে আসতে) নিষেধ করতেন। (আবূ দাউদ শরীফ)

          তাছাড়া শরীয়তের কোথাও মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়া আবশ্যক করা হয়নি এবং মহিলাদের মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায পড়ার ব্যাপারে কোন সাওয়াবও বর্ণিত হয়নি। বরং অসংখ্য হাদীছ শরীফে মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার ব্যাপারে অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন  হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে,

عن ام سلمة قالت قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- خير مساجد النساء قعربيوتهن. (رواه احمد مؤطامالك)

অর্থঃ- হযরত উম্মে সালমা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুঊআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহিলাদের জন্য উত্তম মসজিদ (নামাযের স্থান) হলো- তার ঘরের গোপন প্রকোষ্ঠ।” (আহ্মদ, মুয়াত্তায়ে মালেক) অন্য  হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে যে,

عن عبد الله- عن النبى صلى الله عليه وسلم- ماصلت امراة صلاة احب الى الله من صلاتها فى اشد بيتها طلمة. (بيهقى شريف)

অর্থঃ-  হযরত আব্দুল্লাহ্ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হতে বর্ণনা করেন যে, মহিলাদের অন্যান্য নামাযের চেয়ে নিজ ঘরের অন্ধকার কুঠরীর নামায মহান আল্লাহ্ পাক উনার নিকট অধিক প্রিয়। (বায়হাক্বী শরীফ)

          ঘরে নামায পড়ার ফযীলত সম্পর্কে হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে,

عن ابن عمر- عن النبى صلى الله عليه وسلم- صلاة المرأة تفضل على صلاتها فى الجمع خمسا وعشرين درجة. (مشند الفردوس للديلمى)

অর্থঃ- হযরত ইবনে উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “মহিলাদের মসজিদে জামায়াতে নামায পড়ার চেয়ে ঘরে নামায পড়ায় ২৫ গুণ বেশী ফযীলত।” (দাইলমী শরীফ)

          আর পরবর্তীতে ইমাম, মুজ্তাহিদগণ পর্দার গুরুত্ব, মহিলাদের ঘরে নামায পড়ার উৎসাহ ও ফযীলতপূর্ণ হাদীছ শরীফ, হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম উনার নিষেধাজ্ঞা ও হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার সমর্থনের দৃষ্টিতে ইজ্তিহাদ করতঃ ফতওয়া দেন যে,

يكره لهن حضور الجماعة يعنى الشواب منهن وافتى المشئخ المتاخرون بمنعها اى العحوو من حضور القلوات كلها كالشابة. (اوجز المسالك شرح مؤظامالك)البرهان، نيل المارب، شرح الكبير- التو شيح.  

অর্থঃ- যুবতী মহিলাদের জামায়াতে যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। আর ওলামায়ে মুতাআখ্খেরীনগণের ফতওয়া হলো- বৃদ্ধা মহিলাদেরও যুবতীদের ন্যায় মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ বা মাকরূহ্ তাহ্রীমী, যে কোন নামাযেই হোক না কেন। (আওযাযুল মাসালিক শরহে মুয়াত্তায়ে মালিক, আল বুরহান, নাইলুল মায়ারিব, শরহুল কবীর, আত্ তাওশীহ্)

          এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে,

يكره تحربما جما عة النساء ولو فى التراويح-(ردالمحتار)

অর্থঃ- মহিলাদের জামায়াতে নামায পড়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী, যদিও তারাবীহ্ নামাযে হোক না কেন। (রদ্দুল মোহ্তার)

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মহিলাদের তারাবীহ্ নামাযসহ যে কোন নামাযের জামায়াতে উপস্থিত হওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে এটার উপর উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে,

قد اجمعت الامة على كراهة خروج النساء الى الجماعة. (امداد الاحكام)

অর্থঃ- মহিলাদের জামায়াতের জন্যে মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী হওয়ার ব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (ইমদাদুল আহ্কাম)

          এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, আজকাল কেউ কেউ মহিলাদের জন্য আলাদা মসজিদ তৈরীর চিন্তাভাবনা করছেন। মূলতঃ যেখানে জামায়াতে যাওয়াই মাকরূহে তাহ্রীমী সেখানে মহিলাদের জন্য আলাদাভাবে মসজিদ তৈরী করা জায়েয হয় কি করে?

মূলতঃ মহিলাদের জন্য আলাদা বা পৃথক কোন মসজিদ তৈরী করাও সম্পূর্ণ বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ। কেননা খাইরুল কুরুনে অর্থাৎ হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত  ছাহাবা-ই-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত     তাবেয়ীন এমনকি তৎপরবর্তী সময়েও মহিলাদের জন্য আলাদা বা পৃথক কোন মসজিদ তেরী হয়েছে বলে কোন দলীল কেউ পেশ করতে পারবেনা। কাজেই মহিলাদের জন্য আলাদা বা পৃথক মসজিদ তৈরী করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্।

          এ সম্পর্কে  হাদীছ শরীফে এসেছে-

كل بدعة ضلالة وكل ضلالة فى النار. (مشكوة)

অর্থঃ- “প্রত্যেক বিদয়াতই (সাইয়্যেয়াহ) গুমরাহী ও প্রত্যেক গুমরাহ্ লোক জাহান্নামে যাবে।” (মিশকাত)

          মোটকথা হলো- মহিলাদের জন্যে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তারাবীহ্ নামাযসহ অন্যান্য সকল নামায জামায়াতে আদায় করার জন্য মসজিদে যাওয়া মাকরূহ্ তাহ্রীমী। এ ব্যাপারে আরো বিস্তারিতভাবে জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ১১তম সংখ্য পড়–ন, সেখানে ৬৫টি অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাহ দ্বারা ফতওয়া দেয়া হয়েছে যে, মহিলাদের জন্যে মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামায আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।

তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নতে কিফায়া

           রমযান মাসে প্রতি শহরে অথবা শহর যদি বড় হয়ে থাকে, তবে প্রতি এলাকার একটি মসজিদে তারাবীহ্ নামাযে একবার কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নতে কিফায়া। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয় –

والختم مرة سنة ومر تين فضيلة وثلاثا افضل ولا يترك الختم لكسل القوم. (ردالمحتار)

অর্থঃ- তারাবীহ্ নামাযে একবার কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নত অর্থাৎ সুন্নতে কিফায়া। দুই বার খতম করার মধ্যে ফযীলত রয়েছে, তিনবার খতম করা উত্তম। লোকদের গাফলতীর কারণে কুরআন খতম তরক করা উচিৎ হবেনা। (রদ্দুল মুহ্তার)

          মূলতঃ তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করার নিয়ম চালু করেন, তৃতীয় খলীফা আমীরুল মু’মিনীন, হযরত উসমান আলাইহিস সালাম। যেহেতু সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি প্রতি রমযান মাসে যতটুকু কুরআন শরীফ নাযিল হতো, ততটুকু হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে শুনাতেন এবং হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম হতে শুনাতেন। আর রমযান মাসে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করার ফযীলত যেহেতু অনেক বেশী, সেহেতু হযরত ওসমান আলাইহিস সালাম তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুন্নত অর্থাৎ রমযান মাসে হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে কুরআন শরীফ শুনানো ও কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের ফযীলতের দিকে লক্ষ্য রেখে রমযান মাসে তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করার ব্যবস্থা করেন। তিনি প্রতিদিন বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামাযে বিশ রুকু করে তিলাওয়াত করতেন এবং ২৭ দিনে কুরআন শরীফ খতম করতেন। (২০ী২৭ = ৫৪০) যার কারণে কুরআন শরীফে ৫৪০টি রুকু রয়েছে। যদিও পরবর্তীতে  কেউ কেউ বেশি বলেছেন কিন্তু ছহীহ্ মত হলো রুকু ৫৪০টি।

          মোটকথা হলো- তারাবীহ্ নামাযে কমপক্ষে একবার কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নতে কিফায়া অর্থাৎ কোন শহর বা বড় এলাকায় কোন এক মসজিদে যদি কুরআন শরীফ খতম করা হয়, তবে অন্যান্য মসজিদেও কুরআন শরীফ খতমের সুন্নত আদায় হয়ে যাবে। অথচ কিছু জাহেল লোক বলে থাকে- কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। যদি মুয়াক্কাদাই হয়, তবে তো পৃথিবীর প্রতিটি মসজিদে কুরআন খতম অবশ্যই করতে হবে, নচেৎ সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহে গুণাহ্গার হবে। অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক স্থান রয়েছে, যেখানে কুরআনে হাযে পাওয়া অসম্ভব, সেখানে কি করে কুরআন শরীফ খতম করা হবে?

          তাছাড়া খতমে কুরআন যদি মুয়াক্কাদা হয়ে থাকে, তবে তারাবীহ্ নামাযের জামায়াতও মুয়াক্কাদা বলতে হবে, কিফায়া বলা যাবেনা, কারণ কিফায়া হলে তো কিছু লোক একাও নামায পড়তে পারেন।

অতএব, যারা একা নামায পড়বেন, তারা যদি হাফেযে কুরআন না হন, তবে খতম তারাবীহ্ কি করে পড়বেন? খতমে কুরআন যদি মুয়াক্কাদা হয়, তবে প্রত্যেককেই তো তা আদায় করতে হবে। অতএব, খতমে কুরআন কখনো মুয়াক্কাদা নয় বরং সুন্নতে কিফায়া।

          এখানে লক্ষণীয় বিষয় এই যে, যারা বলে তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা, তারাই আবার বলে থাকে যে, বিনা উজরতে খতম করনেওয়ালা হাফেয না পাওয়া পেলে সূরা তারাবীহ্ পড়াই উত্তম। যদি কুরআন খতম করা মুয়াক্কাদাই হয়ে থাকে, তবে সূরা তারাবীহ্ পড়লে সুন্নতে মুয়াক্কাদা তরকের গুণাহ্ হবে না?

          মূলতঃ তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করা মুয়াক্কাদায়ে আইনী নয় বরং সুন্নতে কিফায়া। তাছাড়া সকলের মতেই রমযান মাসে সূরা তারাবীহ্ পড়া জায়েয ও সুন্নতে রসূল ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম। অতএব, খতম তারাবীহ্ যদি মুয়াক্কাদা হয়ে থাকে, তবে সূরা তারাবীহ্র প্রশ্নই উঠতে পারেনা।

তারাবীহ্ নামাযে ইমামতি বা কুরআন শরীফ খতম করে উজরত গ্রহণ করা

           রমযান মাসে তারাবীহ্ নামাযে ইমামতী বা কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা বা দেওয়া জায়েয। মূলতঃ ওলামায়ে মুতাকাদ্দেমীন (পূর্ববর্তী আলেম) উনাদের মতে সর্বপ্রকার ইবাদত যেমন- ইমামতী, শিক্ষকতা, জ্বিহাদ ইত্যাদির বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা নাজায়েয। আর ওলামায়ে মুতাআখ্খেরীন (পরবর্তী আলেম) উনাদের অধিকাংেশের মতে ইমামতী, শিক্ষকতা, জ্বিহাদ, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, ওয়াজ ইত্যাদি ইবাদতের বিণিময়ে উজরত গ্রহণ করা জায়েয।

          মূলতঃ দ্বিতীয় মতটিই গ্রহণযোগ্য ও ফতওয়াগ্রাহ্য মত। এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে–

وافتى المتأخرون بصحة الاجرة للاذان والاقامة و التذ كير والتدريس والحج والغزو وتعليم القران والفقه وقرأتهما لفتور الر غبات اليوم. (تفسير روح البيان ج صفه ৮২)

অর্থঃ- বর্তমানে দান খয়রাতে আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণে ওলামায়ে মুতাআখ্খেরীনগণ উনারা আযান, ইক্বামত, ওয়াজ, শিক্ষকতা, হজ্ব, জ্বিহাদ, কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ্ শিক্ষা দিয়ে ও ফিক্বাহ্ এবং কুরআন শরীফ পাঠ করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সহীহ্ অর্থাৎ জায়েয ফতওয়া দিয়েছেন। (তাফসীরে রুহুল বয়ান, ২য় খ-, পষ্ঠা-৮২)

          এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-

 اختلفوافى الاستيجار على قرأة القران عند القبر مدة معلومة قال بعضهم يجوز وهو المختار- كذا فى السراج الوهاج- (فتاو .. عالمكيرية ج صفه ৪২৮)

অর্থঃ- সময় নির্দিষ্টকরে কবরের নিকট কুরআন শরীফ পাঠ করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করার ব্যাপারে আলেমগণ উনারা মতভেদ করেছেন, অনেকে জায়েয বলেছেন, আর এটাই গ্রহণযোগ্য মত। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী) অনুরূপ সিরাজুল ওহ্হাজ কিতাবে উল্লেখ আছে।

          আর ফিক্বাহের বিশ্ববিখ্যাত কিতাব ‘বাহ্রুর রায়েক’-এ উল্লেখ আছে,

ان المفتى به جواز الاخذ على القرأة.

অর্থঃ- নিশ্চয়ই ফতওয়াগ্রাহ্য মতে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয।

          এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে,

                   

محققين علماء قاعده مقرر كرده اند كه ... هرجه در حق شخص عبادت با شد- خواه فرض عين خواه فرض كفاية خواه سنت مؤكده بران اجرت كر فتن جئز نيست مثل تعليم قران، وحديث وفقه ونماز وروزه ونلاوت وذكر وتسبيح وانجه بهيج وجه عباجت نيست مباح محض است بران اجرت كر فتن جائزا ست مثل رقبه كردن بقران يا تعويذ نو شنن وامثال ذالك- وعبادات كه سبب تعيين مدت يا تخصيص مكان مباح ميشوند- نيز برانها اجرت كر فتن جائزاست- مثل تعليم قران بطفل كشى درخائه ء او ازصبح تا شام.

অর্থঃ- “মুহাক্কিক (সূক্ষ্ম তত্ত্ববিদ) আলেমগণ একটি মূল্যবান (কায়েদা) নিয়ম স্থির করেছেন যে, ওনারা বলেন, যা মানুষের প্রতি ইবাদত হিসাবে সাব্যস্ত,  যেমন- ফরজে আইন হোক অথবা ফরজে কিফায়া বা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্ হোক, যথা- কুরআন শরীফ,  হাদীছ শরীফ ও ফিক্বাহ্ পাঠ করে এবং নামায, রোজা, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত, যিকির ও তাস্বীহ্ পাঠ করে ইত্যাদির বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয নেই। আর যে সকল ইবাদতসমূহ কারো জন্যে ইবাদত নহে (অর্থাৎ ফরজ-ওয়াজিব নহে) বরং স্পষ্ট মুবাহ্ কাজ হিসাবে সাব্যস্ত, যেমন- কুরআন শরীফ পাঠ করে শরীরে ফুক দেয়া, তাবীজ লেখা ইত্যাদির বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয এবং যে সকল ইবাদত সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করাতে মুবাহ্ হয়ে যায়, যেমন- কারো সন্তানকে তার ঘরে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্তকুরআন শরীফ শিক্ষা দিবে, এরূপ ইবাদতের বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয।” (তাফসীরে আযিযী পৃষ্ঠা-২০৮)

          উল্লিখিত ইবারতে মূলতঃ তিনটি সুরত বা অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে- (১) যে সকল ইবাদতগুলো ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্, তার বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা হারাম। (মুতাকাদ্দেমীন উনাদের মতে)

(২) যে সকল ইবাদতগুলো খাঁটি মুবাহ্ কাজ, তার বিণিময়ে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয, যেমন- তাবীজ লিখে।

(৩) (মুতাআখ্খেরীন উনাদের মতে) সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়াতে ইবাদতসমূহ মুবাহ্ কার্যে পরিণত হয়ে যায়, তখন তার উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করাও জায়েয হয়ে যায়। কারণ সে সময় অথবা স্থানের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়।

          অতএব, তাকে যে উজরত বা পারিশ্রমিক দেয়া হবে, ওটা তার সময় অথবা স্থানে আবদ্ধ থাকার কারণে, ইবাদতের বিণিময়ে নয়। সুতরাং সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করে দেয়ার কারণে আযান, ইমামতি, হজ্জ্ব, জ্বিহাদ, কুরআন শরীফ ও ফিক্বাহ্ শিক্ষা দিয়ে যেরূপ উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয, তদ্রুপ কুরআন শরীফ খতম বা পাঠ করেও উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয।

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, সময় অথবা স্থান নির্ধারণ করার শর্ত সাপেক্ষে হাফেয ছাহেব তারাবীহ্ নামাযে ইমামতী বা কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারবেন। এটা পরবর্তী অধিকাংশ আলিমগণের ফতওয়াগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য মত। এ ব্যাপারে বিস্তারীত জানতে হলে মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার ২৩ ও ২৪তম সংখ্য দু’টি পাঠ করুন। খানে ৫১টি অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীলের দ্বারা উজরত বা পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয ফতওয়া দেয়া হয়েছে। তাছাড়াও আরো দলীল আমাদের কাছে রয়েছে, প্রয়োজনে আমরা তা পেশ করবো ইন্শাআল্লাহ্।

 রমযান মাসে বিত্র নামায জামায়াতে পড়া

           রমযান মাসে তারাবীহ্ নামাযের পর বিত্র নামায জামায়াতে আদায় করা মুস্তাহাব। রমযান ব্যতীত অন্য মাসে বিত্র নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তান্যীহী। সকলেই এ ব্যাপারে এক মত।  এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে –

وقال علامة الطحطاوى- الجماعة سنة عين الا فى التراويح فا نها فيها سنة كفاية- ووتر رمضان فانها فيه مستحبة. (طحطاوى وكذا كتاب الفقه)

অর্থঃ- আল্লামা তাহ্তাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামায জামায়াতে পড়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। রমযান মাসে তারাবীহ্ নামায জামায়াতে পড়া সুন্নতে কিফায়া। আর রমযান মাসে বিত্র নামায জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব। (তাহ্তাবী, অনুরূপ কিতাবুল ফিক্বাহ্তে উল্লেখ আছে)

          কিতাবে আরো উল্লেখ আছে,

الاقتداء فى الوتر خارج رمضان يكرة- قال الرملى ويرتربجماعة فى رمضان فقط- وان الكراهة كراهة تنزية. (بحرالرائق، مراقى الفلاح، خلاصة الفتاوى)

অর্থঃ- রমযান মাস ব্যতীত বিত্র নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্। রমলী বলেন, শুধুমাত্র রমযান মাসেই বিত্র নামায জামায়াতে পড়া যাবে। আর নিশ্চয়ই (রমযান মাস ছাড়া) বিত্র নামায জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তান্যীহীর অন্তর্ভূক্ত। (বাহ্রুর রায়েক, মারাকিউল ফালাহ্, খুলাছাতুল ফতওয়া)

          আর বিখ্যাত ফিক্বাহ্র কিতাব ‘ফত্হুল ক্বাদীর’ উল্লেখ আছে –

ولايصلى الوتر بجماعة فى غير شهر رمضان عليه اجماع المسلمين. (فتح القدير، كفاية، شرح النقاية)

অর্থঃ- বিত্র নামায রমযান মাস ব্যতীত জামায়াতে পড়া নিষেধ অর্থাৎ মাকরূহ্ তান্যীহী। এটার উপর সকল মুসলমানগণ একমত। (ফতহুল ক্বাদীর, কিফায়া, শরহে বিকায়া)

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত হলো যে, রমাযান মাসে বিত্র নামায জামায়াতে পড়া মুস্তাহাব। আর রমযান ব্যতীত অন্য মাসে বিত্র নামায জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তান্যীহী। এ ব্যাপারে সকল মুসলমানদের ইজমা বা ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তারাবীহ্ নামাযের পর হাত উঠায়ে, সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা

          তারাবীহ্ নামাযের প্রতি চার রাকায়াত পর পর অথবা বিশ রাকায়াত পর হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব। তবে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আমল হিসাবে হাদীছ শরীফে এর উল্লেখ নেই। যেহেতু সাধারণভাবে (مطلقا) নামাযের পর মুনাজাত করার আদেশ  হাদীছ শরীফ-এ এসেছে, তাই ফক্বীহ্গণ ফরজ নামাযের ন্যায় তারাবীহ্ নামাযের পর মুনাজাত করা মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া শরীয়তের কোথাও তারাবীহ্ নামাযের পর মুনাজাত করাকে নিষেধ করা হয়নি। আর যেহেতু মুনাজাতের মধ্যে হাত উঠানো আদব ও সুন্নতের অন্তর্ভূক্ত এবং  হাদীছ শরীফে সম্মিলিত মুনাজাত কবুল হয় বলে উল্লেখ আছে, যেহেতু তারাবীহ্ নামাযের প্রতি চার রাকায়াত পর পর অথবা বিশ রাকায়াত পর হাত উঠায়ে, সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব। কারণ কেউ প্রমাণ করতে পারবেন না যে, শরীয়তের কোথাও তারাবীহ্ নামাযের পর হাত উঠায়ে, সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা বিদ্য়াত বা নাজায়েয বলা হয়েছে।

          এ প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে-

ঊদূ লেখা ঢুকবে...............................................................

অর্থঃ- তারাবীহ্ নামায শেষ করার পর মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব। সল্ফ ও খল্ফ উনার আমলের অন্তর্ভূক্ত। (ফতওয়ায়ে দেওবন্দ)

          এ প্রসঙ্গে কিতাবে আরো উল্লেখ হয়েছে-

ঊদূ লেখা ঢুকবে...............................................................



অর্থঃ- তারাবীহ্ নামাযে প্রত্যেক চার রাকায়াত পর পর বিশ্রাম নেয়া মুস্তাহাব। চাই ঐ সময় তাস্বীহ্ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, চাই নফল নামায এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াতে মশগুল থাকবে অথবা ঐ সময়টুকু মুনাজাতে কাটিয়ে দিবে। (ফতওয়ায়ে মাহ্মুদীয়াহ্ অনুরূপ সাকাবুল আনহারে উল্লেখ আছে)

          এখানে উল্লেখ্য যে, মুজাদ্দিদে যামান, কুতুবুল আলম, আমীরুশ শরীয়ত ওয়াত্ব ত্বরীক্বত, হুজ্জাতুল ইসলাম, কাইউমুয্ যামান, শায়খুল মাশায়েখ, রঈসুল মুহাদ্দিসীন, বাহ্রুল উলুম, মুহীয়্যূস্ সুন্নাহ্, তাজুল মুফাস্সিরীন, ফখরুল ফুক্বাহা হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক ফুরফুরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘মত ও পথ’ নামক কিতাবে বর্ণিত আছে যে, তিনি- (১) পাঁচ ওয়াক্ত আযান ও জুময়ার ছানী আযানের জাওয়াব দিতেন এবং সর্বদা হাত উঠায়ে মুনাজাত করতেন।

(২) জানাযা নামাযের পর কাতার ভঙ্গ করে মৃত ব্যক্তির জন্যে হাত উঠায়ে মাগফিরাতের মুনাজাত করতেন।

(৩) তারাবীহ্ নামাযের প্রতি চার রাকায়াত পর পর হাত উঠায়ে মুনাজাত করতেন।

(৪) কবর জিয়ারতের সময় কবরের দিকে হাত রেখে মুনাজাত করতেন।

          উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, তারাবীহ্ নামাযে প্রতি চার রাকায়াত পর পর হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব। মুনাজাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত’ পত্রিকার ১৪-২০তম সংখ্যাগুলো পাঠ করুন।







উপসংহার

          উল্লিখিত অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য, বিস্তারিত আলোচনা দ্বারা এটাই  প্রমাণিত হলো যে,

(১) রমযান মাসে বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায পড়া পুরুষ-মহিলা উভয়ের জন্যই সুন্নতে মুয়াক্কাদা, এটা সহীহ্  হাদীছ শরীফ, ইজ্মায়ে আযীমত  ও অনুসরণীয় ইমাম, মুজ্তাহিদগণ উনাদের আমল ও ক্বওল দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত।

(২) তারাবীহ্ নামায আট রাকায়াত, এ দাবী সম্পূর্ণই মনগড়া, বানোয়াট, কাúনক, অজ্ঞতা প্রসূত ও গুমরাহীর নামান্তর। উপরুন্ত সহীহ্ হাদীছ শরীফ ও ইজমায়ে আযীমতকে অস্বীকার করার শামিল।

(৩) তারাবীহ্ ও তাহাজ্জুদ ভিন্ন ভিন্ননামাজ, এ দু’টোকে একই নামায বলা জিহালত বৈ কিছুই নয়।

(৪) বিশ রাকায়াত তারাবীহ্ নামায জামায়াতে আদায় করা পুরুষের জন্যে সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া।

(৫) মহিলাদের তারাবীহ্ নামাযসহ সকল নামায মসজিদে গিয়ে জামায়াতে আদায় করা মাকরূহ্ তাহ্রীমী।

(৬) তারাবীহ্ নামাযে কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নতে কিফায়া।

(৭) তারাবীহ্ নামাযে বা অন্যান্য সময় কুরআন শরীফ খতম বা পাঠ করে উজরত গ্রহণ করা জায়েয।

(৮) তারাবীহ্ নামাযের প্রতি চার রাকায়াত পর পর হাত উঠায়ে সম্মিলিতভাবে মুনাজাত করা জায়েয ও মুস্তাহাব।

          মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে হক্ব মত ও হক্ব পথে কায়েম রাখুন ও উল্লিখিত ফতওয়া মুতাবেক আমল করে মহান আল্লাহ্ পাক উনার ও হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ মারিফত, মুহব্বত ও সন্তুষ্টি হাসিল  করার তাওফিক দান করুন।

[ বিঃ দ্রঃ- পরবর্তী র্পব হতে উল্লিখিত বিষয়ে অকাট্য ও নির্ভরযোগ্য দলীল-আদিল্লাসমূহ পেশ করা হবে ইন্শাআল্লাহ্ ]


0 Comments: