হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৪০৪-১৬৭৬) (ণ)

 স্মরণীয় যে, আখিরী নবী, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হচ্ছেন, সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাইয়্যিদ। উনার পরে আর কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা দুনিয়ায় আগমন করবেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনা, উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেয়া ও উনার ছানা-ছিফত মুবারক করাকে সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামসহ সমস্ত জ্বীন-ইনসান ও কুল কায়িনাতবাসীর জন্য ফরয করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
 وَإِذْ أَخَذَ اللَّـهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ ۚ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَىٰ ذَٰلِكُمْ إِصْرِي ۖ قَالُوا أَقْرَرْنَا ۚ قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِين.
 অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি সমস্ত হযরত নবী- রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের থেকে এ মর্মে ওয়াদা মুবারক নিলেন যে, আমি আপনাদের কিতাব ও হিকমত মুবারক হাদিয়া করবো। অতঃপর আপনাদের প্রদত্ত কিতাবের সত্য প্রতিপাদনকারী হিসাবে একজন রসূল (যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, যিনি ইমামুল মুরসালীন, যিনি খ¦তামুন নাবিইয়ীন, যিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি) আগমন করবেন! আপনারা অবশ্যই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে পেলে খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিবেন! মহান আল্লাহ পাক তিনি বললেন, আপনারা কি আমার এ ওয়াদা মুবারক স্বীকার ও গ্রহণ করলেন? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন মহান পাক তিনি বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম”। সুবহানাল্লাহ! (পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৮১)
 মূলত; মহান আল্লাহ পাক উনার গোটা কায়িনাতবাসীকে সুষ্টির উদ্দেশ্যই হচ্ছে, আখিরী নবী, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারক করা, উনার গোলামী মুবারক করা, উনার ছানা-ছিফত মুবারক করা ও উনার প্রতি দায়িমী ছলাত-সালাম বা মীলাদ শরীফ ও ক্বিয়াম শরীফ পাঠ করা। অর্থাৎ অনন্তকাল ব্যাপী পবিত্র সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ পালন করা। সুবহানাল্লাহ! কাজেই সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সরাসরি উম্মত বা গোলামী মুবারক করার আর্জি মুবারক পেশ করেন। সকলের দোয়াই কবুল করা হয়। তবে সরাসরি উম্মত হিসেবে একমাত্র সাইয়্যিদুনা হযরত ঈসা রূহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনিই আখিরী যামানায় আসবেন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হিসাবে। সুবহানাল্লাহ!
 অতএব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করার পর যে কোন ধর্মের অনুসারী হোক না কেন, তাদের চূ-চেরা করার কোন সুযোগ নেই। ইহুদী-নাছারাসহ সমস্ত জ্বীন-ইনসানের জন্য ফরয ওয়াজিব হচ্ছে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান আনা, উনাকে পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ অনুকরণ করা।  যে ব্যক্তি উনার প্রতি ঈমান আনবে না সে কাট্টা কাফির ও চির জাহান্নামীদের অন্তর্ভূক্ত। নাউযূবিল্লাহ!
 বানূ নাযীর সম্পর্কিত কবিতাবলী: বানী নাযীর সম্পর্কে প্রসিদ্ধ সীরত ও তারিখ গ্রন্থ সমূহে যে সমস্ত কবিতা উল্লেখ রয়েছে তারমধ্য থেকে কিছু কবিতা এখানে উল্লেখ করা হলো।
 বানূ নাযীর সম্পর্কে রচিত কবিতাসমূহের মধ্যে হযরত ইবনে লুকাইম আইছামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবিতা উল্লেখযোগ্য। যথা:
أَهْلِي فِدَاءٌ لِامْرِئِ غَيْرِ هَالِكٍ ... أَحَلّ الْيَهُودَ بِالْحِسّيّ الْمُزَنّمِ
আমার পরিবারবর্গ সেই অমর বা চিরজীবী মহাসম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি উৎসর্গ, যিনি ইহুদীদেরকে পরদেশে তাড়িয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
يَقِيلُونَ فِي جَمْرِ الغَضَاةِ وَبَدّلُوا ... أُهَيْضِبَ عُودِي بِالْوَدِيّ الْمُكَمّمِ
এখন তারা (অর্থাৎ ইহুদীরা) গাদ্বাহ বৃক্ষের জলন্ত কয়লার উপর দ্বিপ্রহরের নিদ্রা যায়। উদীর উঁচু ভূমির পরিবর্তে তারা ছোট ছোট খেজুর গাছ বিশিষ্ট নি¤œভূমি লাভ করেছে।
فَإِنْ يَكُ ظَنّي صَادِقًا بِمُحَمّدِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ... تَرَوْا خَيْلَهُ بَيْنَ الصّلَا وَيَرَمْرَمِ
যদি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্পর্কে আমার আক্বীদা সঠিক হয়, তবে আপনারা উনার সৈন্য বাহিনীকে দেখবেন ছলা ও ইয়ারামরামের মাঝখানে।
يَؤُمّ بِهَا عَمْرَو بْنَ بُهْثَةَ إنّهُمْ ... عَدُوّ وَمَا حَيّ صِدّيقٌ كَمُجْرِمِ
তিনি সেই বাহিনী দ্বারা আমর ইবনে বুহছাকে বহিস্কার করবেন, আসলে তারা ঘোরতর শত্রু। বন্ধু কি শত্রুতুল্য হতে পারে?
عَلَيْهِنّ أَبْطَالٌ مَسَاعِيرُ فِي الْوَغَى ... يَهُزّونَ أَطْرَافَ الْوَشِيجِ الْمُقَوّمِ
সেই সম্মানিত বাহিনীতে থাকবেন বীর আশ্বারোহী দল, যারা সম্মানিত জিহাদের ময়দানে (বা রণক্ষেত্রে) দাবানল সৃষ্টি করবেন, উনারা আন্দোলিত করবেন সোজা বর্শার ফলক। সুবহানাল্লাহ! 
وَكُلّ رَقِيقٍ الشّفْرَتَيْنِ مُهَنّدٌ ... تُوُورِثْنَ مِنْ أَزْمَانِ عَادٍ وَجُرْهُمِ
উনারা আন্দোলিত করবেন দোধারী (বা দুই দিকে ধার বিশিষ্ট) শাণিত হিন্দুস্থানের তৈরি তরবারি মুবারক, যা উনারা আদ ও জুরহাম গোত্র হতে বংশ পরস্পরায় লাভ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
 فَمَنْ مُبَلّغٌ عَنّي قُرَيْشًا رِسَالَةً ... فَهَلْ بَعْدَهُمْ فِي الْمَجْدِ مِنْ مُتَكَرّمِ
অতপর কে পৌঁছে দিবেন কুরাইশ কাফির মুশরিকদের কাছে আমার এই বার্তা যে, তাদের পরেও কি দুনিয়াতে সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী কেউ আছে?
بِأَنّ أَخَاكُمْ فَاعْلَمُنّ حَضْرَتْ مُحَمّدًا صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ... تَلِيدُ النّدَى بَيْنَ الْحَجُونِ وَزَمْزَمِ
 নিশ্চয়ই তারা যেনে রাখুক, তোমাদের  যিনি নবী ও রসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হাজূন ও পবিত্র যমযম কুপের মাঝখানে সর্বশ্রেষ্ট দানশীলতা ও মহানুভবতার এক সুমহান সর্বশ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! 
 فَدِينُوا لَهُ بِالْحَقّ تَجْسُمْ أُمُورُكُمْ ... وَتُسْمُوا مِنْ الدّنْيَا إلَى كُلّ مِعْظَمِ
 অতএব তোমরা উনার আনুগত্য স্বীকার করো (অর্থাৎ উনার প্রতি ঈমান আনো), তা হলে তোমাদের মর্যাদা-মর্তবা বেমেছাল ভাবে বেড়ে যাবে। আর তোমরা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদার শীর্ষে পৌঁছতে পারবে। সুবহানাল্লাহ!
نَبِيّ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ تَلَاقَتْهُ مِنْ اللّهِ رَحْمَةٌ ... وَلَا تَسْأَلُوهُ أَمْرَ غَيْبٍ مُرَجّمِ
 তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুবহানাল্লাহ! উনার উপর নাযিল বা বর্ষিত হয় বেমেছাল মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত (অর্থাৎ তিনি স্বয়ং রহমাতুল্লিল আলামীন)। সুবহানাল্লাহ! তোমরা উনার কাছে কাল্পনিক গায়িব বা অদৃশ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না (কারণ তিনি মুত্ত্বলা’ আলাল গইব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। সুবহানাল্লাহ!
فَقَدْ كَانَ فِي بَدْرٍ لَعَمْرِي عِبْرَةٌ ... لَكُمْ يَا قُرَيْشًا وَالْقَلِيبُ الْمُلَمّمِ
 ক্বসম! সম্মানিত বদর জিহাদের ঘটনার মধ্যে তোমাদের জন্য বড় শিক্ষা নিহিত রয়েছে। হে কুরাইশ কাফির মুশরিকরা! লক্ষ্য করো তোমাদের তথা তোমাদের মধ্যে যারা সম্মানিত বদর জিহাদে নিহত হওয়ার পর নিক্ষিপ্ত হয়েছিল কুয়ায়, আর  সেই কুয়া তাদের লাশে ভরে গিয়েছিল। নাউযূবিল্লাহ!
غَدَاةَ أَتَى فِي الْخَزْرَجِيّةِ عَامِدًا ... إلَيْكُمْ مُطِيعًا لِلْعَظِيمِ الْمُكَرّمِ
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বানূ খাযরাজকে সাথে নিয়ে সেদিকে প্রভাতে তোমাদের বিরুদ্ধে সম্মানিত জিহাদ করার জন্য যেখানে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছিলেন, তিনি স্বয়ং খ¦লিক মারিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারকেই সেখানে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
مُعَانًا بِرُوحِ الْقُدُسِ عَلَيْهِ السَّلامُ يُنْكِي عَدُوّهُ ... رَسُولًا صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مِنْ الرّحْمَنِ حَقّا بِعَلَمِ
তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম কর্তৃক খিদমত  মুবারক গ্রহণ করেছিলেন, যিনি শত্রুদেরকে মারাত্মকভাবে ধ্বংস করছিলেন। তিনি হক্ব বা সত্য রসূল তথা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসাবে মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে এ সম্মানিত উঁচু ভূমিতে তাশরীফ মুবারক গ্রহণ করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
رَسُولًا صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ مِنْ الرّحْمَنِ يَتْلُو كِتَابَهُ ... فَلَمّا أَنَارَ الْحَقّ لَمْ يُتَلَعْثَمْ
তিনি খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক যিনি রহমান উনার রসূল বা হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তিনি উনার সম্মানিত কিতাব তিলওয়াত মুবারক করেন (অর্থাৎ তিনি উম্মতকে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলওয়াত মুবারকের তা’লীম মুবারক দিয়ে থাকেন)। সুবহানাল্লাহ! যখন হক্ব বা সত্য উদ্ভাসিত হলো, তখন আর কোন দ্বিধা-সংশয় থাকলো না। সুবহানাল্লাহ!

أَرَى أَمْرَهُ يَزْدَادُ فِي كُلّ مَوْطِنٍ ... عُلُوّا لِأَمْرِ حَمّهُ اللّهُ مُحْكَمِ
আমি দেখতে পাচ্ছি, উনার সম্মানিত কাজ ক্রমেই সর্বত্র বিস্তার লাভ করছে, এগিয়ে চলেছে বেমেছাল উন্নতির দিকে যা মহান আল্লাহ পাক তিনি (সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। সুবহানাল্লাহ!
 কারো কারো মতে উক্ত কবিতাটি হযরত কাইস ইবনে বাহর ইবনে তারীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার রচিত।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এটি হযরত কাইস ইবনে বাহর আলজায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবিতা। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, নি¤œর পবিত্র কবিতা মুবারক সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার রচিত। আবার কেউ কেউ বলেন, এই কবিতাখানা অন্য কোন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার।
 সম্মানিত কবি বলেন,
عَرَفْت وَمَنْ يَعْتَدِلْ يَعْرِفْ ... وَأَيْقَنْت حَقّا وَلَمْ أَصْدِفْ
 আমি হক্ব বা সত্যকে জেনেছি। সুবহানাল্লাহ! আর যে ছহীহ সমঝ বা সঠিক ইলমের অধিকারী সেও একদিন জানতে পারবে, আমি হক্ব বা সত্যে বিশ্বাস এনেছি অর্থাৎ আমি মুসলমান হয়েছি। আর আমি কখনও মুখ ফিরিয়ে নেইনি ও নিবওনা। ইনশায়াল্লাহ!
عَنْ الْكَلِمِ الْمُحْكَمِ اللّاءِ مِنْ ... لَدَى اللّهِ ذِي الرّأْفَةِ الْأَرْأَفِ
সেই প্রজ্ঞাময়, সুদৃঢ় কালাম পাক হতে যা অবতীর্ণ হয়েছেন সুমহান দয়াবান ও পরম করুণাময় মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট থেকে। সুবহানাল্লাহ!
رَسَائِلُ تُدْرَسُ فِي الْمُؤْمِنِينَ ... بِهِنّ اصْطَفَى حَضْرَتْ أَحْمَدَ الْمُصْطَفَى صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ
 উহা এমন কালাম পাক, যা তিলওয়াত মুবারক করেন মু’মিন তথা মুসলমান উনারা, আর এই কালামুল্লাহ শরীফ উনার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি মনোতি করে রেখেছেন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে। সুবহানাল্লাহ!
فَأَصْبَحَ حَضْرَتْ أَحْمَدُ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِينَا عَزِيزًا ... عَزِيزَ الْمُقَامَةِ وَالْمَوْقِفِ
 ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি সমাদর প্রাপ্ত তথা সবচেয়ে বেশি মুহব্বত ও সম্মানের, উনার বেমেছাল শান-মান, ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক আমাদের অন্তরে সুপ্রতিষ্ঠিত। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
فَيَا أَيّهَا الْمُوعِدُوهُ سَفَاهًا ... وَلَمْ يَأْتِ جَوْرًا وَلَمْ يَعْنُفْ
অতএব হে ঐ সমস্ত লোকেরা! যারা নির্বুদ্ধিতা, অজ্ঞতা, জিহালতী বশতঃ  উনাকে ভয় দেখাতে চাও। নাউযূবিল্লাহ! অথচ তিনি কখনও কারো প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুম-নির্যাতন ও দুর্ব্যবহার করেননি। সুবহানাল্লাহ!
أَلَسْتُمْ تَخَافُونَ أَدُنَى الْعَذَابِ ... وَمَا آمِنُ اللّهِ كَالْأَخْوَفِ
 তোমরা কি মহান আল্লাহ পাক উনার লাঞ্ছনাকর কঠিন শাস্তিকে ভয় কর না? আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ হতে নিরাপত্তাপ্রাপ্ত, তিনিতো তাদের মত নন, যাদের জীবন ভয় ও ত্রাসের মধ্যে অতিবাহিত হয়।
وَأَنْ تَصْرَعُوا تَحْتَ أَسْيَافِهِ ... كَمَصْرَعِ كَعْبٍ أَبِي الْأَشْرَفِ
তোমরা কি ভয় কর না, তোমাদেরকে তরবারির নীচে ধরাশায়ী করে হত্যা করা হবে, যেমন করা হয়েছিল কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফকে। নাউযূবিল্লাহ!
غَدَاةَ رَأَى اللّهُ طُغْيَانَهُ ... وَأَعْرَضَ كَالْجَمْلِ الْأَجْنَفِ
(আর কাট্টা কাফির কা’বকে সেদিন হত্যা করা হয়েছিল) যে দিন স্বয়ং খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি দেখলেন যে, তার অবাধ্যতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে এবং সে অবাধ্য উটের মত হক্ব বা সত্য সম্মানিত দ্বীন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নাউযূবিল্লাহ!
فَأَنْزَلَ حَضْرَتْ جِبْرِيلَ فِي قَتْلِهِ ... بِوَحْيِ إلَى عَبْدِهِ مُلْطَفِ
 অতপর খ¦লিক মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি কাট্টা কাফির কা’বকে হত্যা করার জন্য হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত ওহী মুবারক নিয়ে সাইয়্যিদুল মুরসালান, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে পাঠালেন। (অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সবচেয়ে প্রিয়তম হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানিয়ে দিলেন যে, আপনি এই কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফকে মৃত্যুদন্ড দিন।) সুবহানাল্লাহ!
 فَدَسّ حَضْرَتْ الرّسُولُ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ رَسُولًا لَهُ ... بِأَبْيَضَ ذِي هِبَةٍ مُرْهَفِ
 সে মোতাবেক মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার একজন সম্মানিত হযরত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে একটি চকচকে শাণিত তরবারি মুবারক তুলে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
فَبَاتَتْ عُيُونٌ لَهُ مَعُولَاتٍ ... مَتَى يُنْعَ كَعْبٌ لَهَا تَذْرِفُ
 অবশেষে যখন কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের মৃত্যুর সংবাদ ঘোষিত হলো, তখন বিলাপকারিণী নারীরা সজোরে ক্রন্দন করে অশ্রু ঝরাতে লাগলো। নাউযূবিল্লাহ!
 وَقُلْنَ لِأَحْمَدَ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ذَرْنَا قَلِيلًا ... فَإِنّا مِنْ النّوْحِ لَمْ نَشْتَفِ
 তারা (তথা ঐ নারীরা) বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমাদের কাঁদতে দিন, বিলাপে আমরা এখনও পরিতৃপ্ত হইনি। নাউযূবিল্লাহ!
 فَخَلّاهُمْ ثُمّ قَالَ اظْعَنُوا ... دُحُورًا عَلَى رَغْمِ الْآنِفِ
তিনি তাদের কিছুক্ষণ অবকাশ দিলেন, পরে বললেন, আর নয়, এবার এখান থেকে গ্লানি বা ধ্বংসের দিকে চলে যাও।
وَأَجْلَى النّضِيرَ إلَى غُرْبَةٍ ... وَكَانُوا بِدَارِ ذَوِي زُخْرُفِ
তিনি বানূ নাযীরকে নির্বাসিত দিলেন তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বিতাড়িত করে দিলেন, অথচ তারা জাকজমকপূর্ণ আবাসস্থানে বসবাস করতো। নাউযূবিল্লাহ!
إلَى أَذَرِعَاتٍ رِدَافِي وَهُمْ ... عَلَى كُلّ ذِي دَبَرِ أَعْجَفِ
 তিনি তাদের বহিস্কার করে পাঠালেন আযরিয়াতের দিকে, তখন তাদের দুর্দশার শেষ ছিলো না। আহত ও কৃশকায় উটের পিঠে চড়ে তারা একজনের পিছনে আরেকজন যাচ্ছিল। নাউযূবিল্লাহ! (সীরতে ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আর রওদ্বুল উনূফ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, বানূ নাযীরের বাহিস্কার ও কাট্টা কাফির কা’ব ইবনে আশরাফের হত্যার ঘটনা উল্লেখ করে হযরত কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিম্নের কবিতা আবৃত্তি করেন,
 لَقَدْ خَزِيَتْ بِغَدْرَتِهَا الْحُبُورُ ... كَذَاك الدّهْرُ ذُو صَرْفٍ يَدُورُ
অবশ্যই ইহুদী পন্ডিতরা তাদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছে। যুগ এ রকমই পরিবর্তনশীল যা চক্রাকারে আবর্তিত হয়।
وَذَلِكَ أَنّهُمْ كَفَرُوا بِرَبّ ... عَزِيزٍ أَمْرُهُ أَمْرٌ كَبِيرُ
এ কারণে তারা মহাপরাক্রমশালী রব তায়ালা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কুফরী করেছিল। তারা অমান্য করেছিল উনার সম্মানিত নির্দেশ মুবারক। অথচ উনার আদেশ ও নির্দেশ মুবারক হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ মুবারক।
 وَقَدْ أُوقُوا مَعًا فَهْمًا وَعِلْمًا ... وَجَاءَهُمْ مِنْ اللّهِ النّذِيرُ
 অথচ তাদের একই সাথে বোধশক্তি ও জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। আর মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে তাদের নিকট এসেছিলেন একজন সম্মানিত ভয় প্রদর্শনকারী (যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, যিনি হায়াতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি শাহিদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, যিনি মুত্ত্বলা’ আলাল গইব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মহাসম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
نَذِيرٌ صَادِقٌ أَدّى كِتَابًا ... وَآيَاتٍ مُبَيّنَةً تُنِيرُ
 তাদের নিকট এসেছেন বেমেছাল সত্যবাদী ও সতর্ককারী। তিনি জ্বীন-ইনসানের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন মহান আল্লাহ পাক উনার মহাসম্মানিত কিতাব কালামুল্লাহ শরীফ এবং সুস্পষ্ট ও প্রোজ্জ্বল আয়াত বা নিদর্শনসমূহ।
فَقَالُوا مَا أَتَيْت بِأَمْرِ صِدْقٍ ... وَأَنْتَ بِمُنْكَرِ مِنّا جَدِيرُ
 কিন্তু তারা বলল, আপনি কোন হক্ব বা সত্য দ্বীন নিয়ে আসেননি। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! আপনি আমাদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়াই উপযুক্ত। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ!
فَقَالَ بَلَى لَقَدْ أَدّيْت حَقّا ... يُصَدّقُنِي بِهِ الْفَهْمُ الْخَبِيرُ
অতপর তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আমিতো আমার হক্ব আদায় করেছি (অর্থাৎ সত্য এবং হক্ব বিষয়টি প্রচার করেছি ও পৌঁছায়ে দিয়েছি)। বুদ্ধিমান ও জ্ঞানীরা অবশ্যই আমার সম্পর্কে অবগত এবং তারা আমার প্রতি ঈমান আনেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
فَمَنْ يَتْبَعْهُ يُهْدَ لِكُلّ رُشْدٍ ... وَمَنْ يَكْفُرْ بِهِ يُجْزَ الْكَفُورُ
সুতরাং যারা উনার অনুসরণ করবেন, উনারা হাক্বীক্বি কল্যাণপ্রাপ্ত, সর্বপ্রকার হিদায়াত ও সত্য পথের দিশা পাবেন। আর যারা উনাকে অস্বীকার করবে তারা তাদের কুফরীর শাস্তিভোগ করবে।
فَلَمّا أُشْرِبُوا غَدْرًا وَكُفْرًا ... وَحَادَ بِهِمْ عَنْ الْحَقّ النّفُورُ
এবং যখন তারা (অর্থাৎ ইহুদীরা) বিশ্বাসঘাতকতা ও কুফরী স্বভাবে-প্রকৃতিতে নিমজ্জিত ছিল, আর হক্ব বা সত্যচ্যুতি ও সত্য থেকে পলায়ন তাদেরকে সত্য হতে বিমুখ করলো। নাউযূবিল্লাহ!
أَرَى اللّهُ النّبِيّ بِرَأْيِ صِدْقٍ ... وَكَانَ اللّهُ يَحْكُمُ لَا يَجُورُ
তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সঠিক ফায়সালা মুবারক হাদিয়া করলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি ফয়সালা মুবারক করেন, এমন ফায়সালার মধ্যে কারো উপর বিন্দুমাত্র জুলুম ও অবিচার থাকে না। সুবহানাল্লাহ!
فَأَيّدَهُ وَسَلّطَهُ عَلَيْهِمْ ... وَكَانَ نَصِيرُهُ نِعْمَ النّصِيرُ
মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে মদদ বা সাহায্য করলেন এবং তাদের উপর বিজয়ী করলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাকে সাহায্য করেন, তিনি সর্বশ্রেষ্ট সাহায্যপ্রাপ্ত। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
فَغُودِرَ مِنْهُمْ كَعْبٌ صَرِيعًا ... فَذَلّتْ بَعْدَ مَصْرَعِهِ النّضِيرُ
ফলে তাদের মধ্য থেকে কাট্টা কাফির কা’ব বিন আশরাফ জঘন্যভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। তার নিহত হওয়ার পরপরই বানূ নাযীরও অপদস্ত ও লাঞ্ছিত হয়ে পড়ল।
عَلَى الْكَفّيْنِ ثُمّ وَقَدْ عَلَتْهُ ... بِأَيْدِينَا مُشَهّرَةٌ ذُكُورُ
খাপমুক্ত শাণিত তরবারি আমাদের হস্তগত হলো, যার কারণে তারা দু’হাত জোড় করে নত হলোকাট্টা কাফির কা’বের উপর আমাদের প্রসিদ্ধ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বিজয়ী হলেন। সুবহানাল্লাহ!
بِأَمْرِ حَضْرَتْ مُحَمّدٍ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إذْ دَسّ لَيْلًا ... إلَى كَعْبٍ أَخَا كَعْبٍ يَسِيرُ
 এটা মুলত; নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারকে, তিনি যখন রাতে কা’ব এর ভাইকে কাট্টা কাফির কা’বের উদ্দেশ্যে এগিয়ে যেতে বললেন (তাকে হত্যা করার জন্যে)।
فَمَا كَرِهَ فَأَنْزَلَهُ بِمَكْرِ ... وَمَحْمُودٌ أَخُو ثِقَةٍ جُسُورُ
মহাসম্মানিত নির্দেশমত তিনি গিয়ে হিকমত মুবারক অবলম্বন করলেন, তিনি তাকে নামিয়ে আনলেন নিচের দিকে। তার সাথে ছিলো অতি নির্ভরযোগ্য ও সাহসী সাথী মাহমূদ।
فَتِلْكَ بَنُو النّضِيرِ بِدَارِ سَوْءٍ ... أَبَارَهُمْ بِمَا اجْتَرَمُوا الْمُبِيرُ
ঐ বানূ নাযীর খুবই নিকৃষ্ট তাদের অবস্থান। তাদের অপরাধ ও দুষ্কর্মের কারণে ধ্বংসকারী উনারা তাদেরকে ধ্বংস করেছেন।
غَدَاةَ أَتَاهُمْ فِي الزّحْفِ رَهْوًا ... رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ وَهُوَ بِهِمْ بَصِيرُ
এটা ঘটেছিল সেই দিন, যে দিন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বীরত্বের সাথে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের নিয়ে তাদের উপর আক্রমণ করেছিলেন। বস্তুত তিনি ছিলেন তাদের সম্পর্কে সর্বাধিক অবহিত। সুবহানাল্লাহ!
وَغَسّانَ الْحَمَاةَ مُوَازِرُوهُ ... عَلَى الْأَعْدَاءِ وَهُوَ لَهُمْ وَزِيرُ
 সাহসী গাসসান গোত্র শত্রুর বিরুদ্ধে (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উনার সহযোগিতা বা খিদমতকারী ছিলেন। আর তিনি ছিলেন, গাসসান গোত্রের পরামর্শদাতা।
 فَقَالَ السّلْمُ وَيْحَكُمْ فَصَدّوا ... وَحَالَفَ أَمْرَهُمْ كَذِبٌ وَزُورُ
তিনি তাদেরকে বললেন, সাবধান! তোমরা আত্মসমর্পন করো (তথা ঈমান আনো)। কিন্তু তারা উল্টোপথ অনুসরণ করল। মিথ্যা ও অসারতা তাদের কর্মকান্ডকে ভুলপথে পরিচালিত করল। নাউযূবিল্লাহ!
 فَذَاقُوا غِبّ أَمْرِهِمْ وَبَالًا ... لِكُلّ ثَلَاثَةٍ مِنْهُمْ بَعِيرُ
 সুতরাং তারা তাদের ভুল পদক্ষেপে ও দুষ্কৃতির জন্যে শাস্তি ভোগ করল। তারা বেরিয়ে গেল প্রতি তিনজনে একটি করে উট নিয়ে।
 وَأَجْلَوْا عَامِدِينَ لِقَيْنُقَاعَ ... وَغُودِرَ مِنْهُمْ نَخْلٌ وَدُورُ
 তারা স্বেচ্ছায় দেশ ছেড়ে চলে গেল বানূ কাইনুকা গোত্রের সাথে মিলিত হওয়ার উদ্দেশ্যে। আর পিছনে তাদের খেজুর বাগান ও ঘর-বাড়ী পড়ে থাকলো। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুবুলুল হুদা ওয়া রাশাদ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আর রওদ্বুল উনূফ)
 আমর ইবনে আওফ গোত্রের হযরত খাউওয়াত ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কাট্টা কাফির আব্বাস ইবনে মিরদাসের কবিতার জবাবে বলেন,
تَبْكِي عَلَى قَتْلَى يَهُودَ وَقَدْ تَرَى ... مِنْ الشّجْوِ لَوْ تَبْكِي أَحَبّ وَأَقْرَبَا
তুমি ইহুদীদের নিহত ব্যক্তিদের শোকে চোখের পানি ফেলছ। অথচ তুমি জানো শোক অপেক্ষা কান্না প্রকাশ করাই তোমার কাছে অধিক প্রিয়।
فَهَلّا عَلَى قَتْلَى بِبَطْنِ أُرَيْنِق ... بَكَيْت وَلَمْ تُعْوِل مِنْ الشّجْوِ مُسْهَبًا
বাত্বনে উরাইনিক্ব নামক স্থানে যারা শহাদতি শান মুবারক প্রকাশ করেছেন, উনাদের জন্যে তুমি কাঁদলে না কেন? তুমিতো উনাদের শোকে হাউ-মাউ করে কাঁদলে না?
 إذَا السّلْمُ دَارَتْ فِي صَدِيقٍ رَدَدْتهَا ... وَفِي الدّينِ صُدّادًا وَفِي الْحَرْبِ ثَعْلَبًا
 এক বন্ধুর ব্যাপারে যখন সন্ধির আলোচনা চলছিল, তখন তুমি তা পন্ড করে দিলে, সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার বিষয়ে বাধা দানে তুমি তৎপর, অথচ জিহাদের ময়দানে তুমি খেকশিয়াল।
عَمِدْت إلَى قَدْرٍ لِقَوْمِك تَبْتَغِي ... لَهُمْ شَبَهًا كَيْمَا تَعِزّ وَتَغْلِبَا
তুমি তোমার স্বগোত্রের সমতুল্য হওয়ার জন্য তাদের আভিজাত্যের নিশান ধরেছ। আসলে তুমি একজন ক্ষমতার উচ্চাকাক্সক্ষী লোভী।  নাউযূবিল্লাহ!
كَلِفْت تَمَدّحًا ... لِمَنْ كَانَ عَيْبًا مَدْحُهُ وَتَكَذّبَا
তুমি যাদের প্রশংসায় মত্ত রয়েছে, আসলে তাদের প্রশংসাতো প্রশংসা নয় বরং তা দূষণীয় এবং মিথ্যাচারে ভরা।
رَحَلَتْ بِأَمْرِ كُنْت أَهْلًا لِمِثْلِهِ ... وَلَمْ تُلْفِ فِيهِمْ قَائِلًا لَك مَرْحَبَا
 তুমি যে দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছ, তা তোমার মত অথর্ব ব্যক্তিরাই এ কাজ করে থাকে। আর সে জন্যই তোমার গোত্রে তোমাকে ধন্যবাদ দেওয়ার মত একজন লোকও পেলে না।
فَهَلّا إلَى قَوْمٍ مُلُوكٍ مَدَحْتهمْ ... تَبْنُوا مِنْ الْعِزّ الْمُؤَثّلِ مَنْصِبَا
আচ্ছা, তুমি সেই সম্মানিত বাদশাহী ব্যক্তিত্বধারী সম্প্রদায়ের কেন প্রশংসা করলে না, অথচ উনারা ঐতিহ্যবাহী মর্যাদায় আকাশচুম্বী ইমারত নির্মাণ করেছেন। সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
إلَى مَعْشَرٍ صَارُوا مُلُوكًا وَكُرّمُوا ... وَلَمْ تُلْفِ فِيهِمْ طَالِبُ الْعُرْفِ مُجْدِبًا
যে জাতি আপন গৌরব বা সম্মানে বাদশাহী প্রতিষ্ঠা করেছেন তার বিনিময় উনারা পেয়েছেন অশেষ মর্যাদা-মর্তবা। (উনাদের আত্মমর্যাদা বা আত্মসম্মান বোধ ছিলো এমন যে) চরম দুর্ভিক্ষের সময়ও উনদেরকে কারো কৃপাপ্রার্থী হতে দেখা যায়নি। সুবহানাল্লাহ! (মুলত; ইহা ছিল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বেমেছাল শান-মান)।
 أُولَئِكَ أُخْرَى مِنْ يَهُودَ بِمِدْحَةِ ... تَرَاهُمْ وَفِيهِمْ عِزّةُ الْمَجْدِ تَرْتُبَا
 ইহুদী অপেক্ষা উনারা হচ্ছেন বেমেছাল ও সর্বাধিক প্রশংসারযোগ্য ও ছানা-ছিফত মুবারকের হক্বদার। আর তুমি উনাদেরকে দেখবে, উনাদের মাঝে মান-মর্যাদা কত মজবুতভাবে প্রতিষ্ঠিত (যা বলার অপেক্ষা রাখে না)। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 হযরত খাউওয়াত ইবনে জুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবিতার জবাবে কাট্টা কাফির ইবনে মিরদাস বলল,
هَجَوْت صَرِيحَ الْكَاهِنَيْنِ وَفِيكُمْ ... لَهُمْ نَعَمْ كَانَتْ مِنْ الدّهْرِ تُرْتُبا
আপনি (ইহুদী) কাহিন (নামক) কুলীন গোত্রদ্বয়ের (অর্থাৎ বানূ কুরাইযা ও বানী নাযীরের) প্রতি দোষক্রটি তুলে ধরলেন, অথচ আপনাদের প্রতি রয়েছে তাদের অশেষ অনুগ্রহ, যা যুগ যুগ ধরে প্রতিষ্ঠিত। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ!
أُولَئِكَ أَحْرَى لَوْ بَكَيْت عَلَيْهِمْ ... وَقَوْمُك لَوْ أَدّوْا مِنْ الْحَقّ مُوجِبَا
তারাতো এমন কিছু পাওয়ার যোগ্য ছিল, আপনি তাদের সহমর্মিতায় চোখের পানি ফেলতেন এবং আপনার জাতিও তাদের কৃর্তজ্ঞতা আদায়ের কর্তব্য পালন করতেন। নাউযূবিল্লাহ!
 مِنْ الشّكْرِ إنّ الشّكْرَ خَيْرٌ مَغَبّةً ... وَأَوْفَقُ فَعَلَا لِلّذِي كَانَ أَصْوَبَا
 বস্তুত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হচ্ছে উৎকৃষ্ট বদলা। একজন সঠিক বিবেকবানের জন্য এটাই শ্রেষ্ঠ কর্মপন্থা।
فَكُنْت كَمَنْ أَمْسَى يَقْطَعُ رَأْسَهُ ... لِيَبْلُغَ عِزّا كَانَ فِيهِ مُرَكّبَا
কিন্তু আপনিতো সেই ব্যক্তির মত হয়ে গেছেন, প্রতিপত্তি লাভ যার একমাত্র উদ্দেশ্য, আর এজন্য যে আপনি নিজের মাথা কেটে দিতেও প্রস্তুত।
 فَبِك بَنِي هَارُونَ عَلَيْهِ السَّلَامِ وَاذْكُرْ فَعَالَهُمْ ... وَقَتْلَهُمْ لِلْجُوعِ إذْ كُنْت مُجْدِبَا
আপনারতো উচিত হযরত হারূন আলাইহিস সালাম উনার বংশধরদের প্রতি চোখের পানি ফেলা এবং তাদের অবদানের কথা স্মরণ করা। আপনারা ভুলে যাবেন না, অনাহারে যখন শহীদ হচ্ছিলেন তারা তখন আপনাদের জন্য কিভাবে পশু যবাই করত।
أَخَوّاتُ أَذْرِ الدّمْعَ بِالدّمْعِ وَابْكِهِمْ ... وَأَعْرِضْ عَنْ الْمَكْرُوهِ مِنْهُمْ وَنَكّبَا
 হে হযরত খাউওয়াত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! তাদের অশ্রুর বিনিময়ে আপনিও অশ্রু প্রবাহিত করুন। তাদের জন্য কাঁদুন এবং যা তাদের জন্য পীড়াদায়ক ও অপসন্দনীয় তা পরিহার করুন। নাউযূবিল্লাহ!
فَإِنّك لَوْ لَاقَيْتهمْ فِي دِيَارِهِمْ ... لَأُلْفِيت عَمّا قَدْ تَقُولُ مُنَكّبَا
আপনি যদি তাদের দেশে গিয়ে তাদের সাথে মিশতেন, তা হলে এখন যা কিছু বলছেন তা থেকে অবশ্যই নিজেকে দূরে রাখতেন। নাউযূবিল্লাহ!
سِرَاعٌ إلَى الْعُلْيَا كِرَامٌ لَدَى الْوَغَى ... يُقَالُ لِبَاغِي الْخَيْرِ أَهْلًا وَمَرْحَبَا
 তারা উর্ধ্বগামিতায় বেগবান, রণক্ষেত্রে সজ্জন, কল্যাণপ্রার্থীর জন্য তাদের দুয়ার সদা খোলা, তারা তাকে জানায় স্বাগতম। নাউযূবিল্লাহ!
 কাট্টা কাফির ইবনে মিরদাসের কবিতার জবাবে হযরত কা’ব ইবন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কঠোর জবাব কবিতার মাধ্যমে প্রদান করেন।  কিংবা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এর জবাব দেন। হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উল্লেখ করেন,
لَعَمْرِي لَقَدْ حَكّتْ رَحَى الْحَرْبِ بَعْدَمَ ... أَطَارَتْ لُؤَيّا قَبْلُ شَرْقًا وَمَغْرِبَا
আমার জীবনের ক্বসম! যুদ্ধচক্র ইতঃপূর্বে লুয়াঈ’ গোত্রকে পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ানোর পর, এখন আবার পিষ্ট করছে,
 بَقِيّةُ آلِ الْكَاهِنَيْنِ وَعِزّهَا ... فَعَادَ ذَلِيلًا بَعْدَمَا كَانَ أَغَلَبَا
কাহীন গোত্রদ্বয়ের অবশিষ্ট লোকদের মান-ইজ্জতকেও। তারা ছিল প্রভাব প্রতিপত্তিশালী, কিন্তু  এখন তা লাঞ্ছনায় পর্যবসিত হয়েছে।
فَطَاحَ سَلّامٌ وَابْنُ سَعْيَةَ عَنْوَةً ... وَقَيْدَ ذَلِيلًا لِلْمَنَايَا ابْنُ أَخَطَبَا
কাজেই সালাম ও ইবনে সা’ইয়াহকে শক্তি প্রয়োগ করে ধ্বংস করা হয়েছে। আর আখতাবের ছেলেকে শিকল পরিয়ে অত্যন্ত হীন অবস্থায় মৃত্যু দিয়েছেন।
 وَأَجْلَبَ يَبْغِي الْعِزّ وَالذّلّ يَبْتَغِي ... خِلَافَ يَدَيْهِ مَا جَنَى حِينَ أَجْلَبَا
 (আখতারের ছেলে) সে তো নিজ মর্যাদা কায়েম রাখার জন্য শেষ চেষ্টা স্বরূপ লোক জড়ো করতে চাচ্ছিল, কিন্তু তার কৃত অপরাধরাশি অপরদিকে লাঞ্ছনা কামনা করছিল।
كَتَارِكِ سَهْلِ الْأَضّ وَالْحُزْنُ هَمّهُ ... وَقَدْ كَانَ ذَا فِي النّاسِ أَكْدَى وَأَصْعَبَا
 সেতো ঐ ব্যক্তির মত, যে সুগম বা সুলভ ভূমি পরিহার করেছে, আর দুর্গম ভূমি তাকে ক্রমে টেনে নিচ্ছেল নিজের দিকে। বস্তুত এটা মানুষের কাছে অতি কঠিন ও কষ্টদায়ক হয়ে থাকে।
وَشَأْسٌ وعَزّال وَقَدْ صَلِيَا بِهَا ... وَمَا غَيْبًا عَنْ ذَاكَ فِيمَنْ تَغَيّبَا
শাস ও আযযালও যুদ্ধ করেছিল এবং তারাও যুদ্ধচক্রের কষ্ট স্বীকার করেছিল, কিন্তু এজন্য তাতে তারা অনুপস্থির থাকেনি।
 وُعُوفُ بْنُ سَلْمَى وَابْنُ عَوْفٍ كِلَاهُمَا ... وَكَعْبٌ رَئِيسُ الْقَوْمِ حَانَ وَخُيّبَا
আর আওফ ইবনে সালমা ও ইবনে আওফ উভয়ে এবং গোত্রপতি কাট্টা কাফির কা’ব ধ্বংসের সম্মুখীন হয় এবং ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে তারা সকলে বিদায় নেয় ও নিশ্চিন্ন হয়।
 فَبُعْدًا وَسُحْقًا لِلنّضِيرِ وَمِثْلُهَا ... إنْ أَعْقَبَ فَتْحٌ أَوْ إنّ اللّهَ أَعْقَبَا
বানূ নাযীর এবং তাদের অনুরূপ লোকদের প্রতি লা’নত ও অভিশাপ, হয়ত বিজয় তাদের সঙ্গ ত্যাগ করেছে অথবা মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের থেকে বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে তা অন্যদেরকে দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি,  আর রওদ্বুল উনূফ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 স্মরণীয় যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে সেই সমস্ত সম্পদ বন্টন করে দিলেন যা ইহুদীদের থেকে গনীমত হিসাবে লাভ করেছিলেন।  এখানে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ইচ্ছা মুবারক ছিলেন, হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনাদেরকে কত বেমেছাল ভাবে মুহব্বত মুবারক করেন সেই বিষয়টি প্রকাশ করা। অর্থাৎ এর মাধ্যমে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতকে তা’লীম মুবারক দিলেন যে, হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি দায়িমী ফানা ও বাকা মুবারক ছিলেন যেভাবে হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ফানা ও বাকা ছিলেন। সুবহানা মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!।
  উল্লেখ্য যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত মুহাজির ও আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সকলকে একত্রিত করলেন। তিনি উনাদের উদ্দেশ্য করে খ¦লিক মালিক মহান আল্লাহ পাক উনার হামদ ও শুকর তথা প্রশংসা মুবারক আদায় করলেন। অতপর হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা যে, হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে উত্তম আচরণ মুবারক করে আসছেন তা উল্লেখ করলেন এবং তিনি উনাদের বেমেছালভাবে প্রশংসা মুবারকও প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
এরপর তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হে হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম! আপনারা যদি চান তাহলে বানূ নাযীর গোত্রের রেখে যাওয়া সম্পদ আপনাদের ও হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে বন্টন করে দেই। সেক্ষেত্রে আপনারা পূর্বের ন্যায় হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ভার বহন করবেন, উনারা আপনাদের সাথেই এক সাথে থাকবেন। অথবা উক্ত সম্পদ শুধু হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে বন্টন দিলে উনারা আপনাদের ঘর খালি করে দিবেন। হযরত সা’দ ইবনে উবাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত সা’দ ইবনে মুয়াজ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা ছিলেন হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় দু’জন সম্মানিত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা। উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি দয়া করে এ সমুদয় সম্পদ হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে বন্টন করে দিন। আপনি যেভাবে বন্টন মুবারক করেন সে ভাবেই আমরা আপনার মতে মত ও পথে পথ রয়েছি। তবে আমাদের আর্জি উনারা পূর্বের ন্যায় আমাদের ঘর-বাড়িতেই থাকবেন এবং আমাদের সাথে খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদি পূর্বের ন্যায় করবেন। সুবহানাল্লাহ! 
 এক বর্ণনায় রয়েছে, হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনারা জবাবে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি এ সমুদয় সম্পদ হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে দিয়ে দিন, আমাদের সহায় সম্পদ থেকেও যে পরিমাণ উনাদেরকে দেওয়া আপনি আবশ্যক ও পছন্দ মুবারক মনে করেন দয়া করে তা আপনি উনাদেরকে দিয়ে দিন। আপনি যা ফায়সালা মুবারক করবেন তাতে আমাদের বিন্দু থেকে বিন্দু মাত্র কোন দ্বিমত নেই। হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কথা মুবারক শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অত্যন্ত খুশি মুবারক প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ!
এবং তিনি উনাদের জন্যে সম্মানিত দোয়া মুবারক করলেন,
اللَّهُمَّ ارْحَمِ الْأَنْصَارَ وَأَبْنَاءَ الْأَنْصَارِ وَأَبْنَاءَ أَبْنَاءِ الْأَنْصَارِ
 অর্থ: “ইয়া বারী ইলাহী! আপনি হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের এবং উনাদের সন্তানদের প্রতি বিশেষ দয়া দান করুন  এবং হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের পরবর্তী বংশধর উনাদের প্রতিও আপনি রহমত ও দয়া দান করুন।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম তিনিও হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রশাংসায় বলেন,
 يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ جَزَاكُمُ اللَّهُ خَيْرًا، فَوَاللَّهِ مَا مَثَلُنَا وَمَثَلُكُمْ إِلَّا كَمَا قَالَ طُفَيْلٌ الْغَنَوِيُّ لِبَنِي حَضْرَتْ جَعْفَرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه
 অর্থ: “হে হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বোত্তম প্রতিদান দিন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমাদের এবং আপনাদের অবস্থা ঠিক সেইরূপ যেরূপ তুফাইল গানাভী কবি উনার কবিতায় বর্ণনা করেছেন বানী জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে।
 جَزَى اللَّهُ عَنَّا حَضْرَتْ جَعْفَرًا رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه حِينَ أُزْلِفَتْ ... بِنَا نَعْلُنَا فِي الْوَاطِئِينَ فَزَلَّتِ
أَبَوْا أَنْ يَمَلُّونَا، وَلَوْ أَنَّ أُمَّنَا ... تُلَاقِي الَّذِي يَلْقَوْنَ مِنَّا لَمَلَّتِ"
অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে উত্তম প্রতিদান দিন, যখন আমাদের পা পিছলে গিয়েছিল তখন তিনি আমাদের মনপ্রাণভরে সাহায্য সহায়তা প্রদান করেছেন। এমন পরিস্থিতি যদি আমাদের মায়েরও সম্মুখীন হত তাহলে তিনিও বিরক্ত হয়ে যেতেন, কিন্তু হযরত জা’ফর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এমন পরিস্থিতিতেও মোটেও বিরক্ত হননি।” সুবহানাল্লাহ! (মা’রিফাতুস সুনান, হুলইয়াতুল আউলিয়া, আশ-শারীয়াতু লিল্আজরী, তারিখুল মাদীনাহ, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, উয়ূনুল আছার, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, আল হাদী ওয়াল মাহদী, ফুতুহুল বুলদান)
 উল্লেখ্য যে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বানী নাযীর গোত্রের যাবতীয় সম্পদ হযরত মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মাঝে বন্টন করে দিলেন। শুধু মাত্র হযরত আনছার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে হযরত আবূ দুজানা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত সাহল ইবনে হানীফ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের দু’জনকে কিছু হাদিয়া করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
 পরিশেষে বলতে হয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বানী নাযীর ইহুদী গোত্রকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ইহুদীদের অন্যান্য গোত্রগুলোও পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে একে একে পালিয়ে যায় এবং তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
أَخْرِجُوا الْمُشْرِكِينَ مِنْ جَزِيرَةِ الْعَرَبِ
 অর্থ: তোমরা মুশরিকদেরকে (অর্থাৎ ইহুদী-নাছারা, কাফির-মুশরিক তথা সমস্ত বেদ্বীন-বদদ্বীন ও বিধর্মীকে) মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র আরব দেশ থেকে বের করে দাও (তথা গোটা পৃথিবী থেকে তাদেরকে বের করে দাও)।” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, সুনানে আবূ দাউদ শরীফ)
 স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সর্বপ্রথম ইহুদী গোত্র বানী নাযীরকে পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে বের করে দিয়েছিলেন, অতপর বানূ কাইনুকাকে, পরবর্তীতে খুলাফায়ে রাশিদীন আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র আরব দেশসহ অনেক দেশ থেকে কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা তথা সমস্ত বিধর্মীকে বের করে দিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! পর্যায়ক্রমে তাদেরকে সারা পৃথিবী থেকেও বের করে দেয়া হচ্ছে এবং হবে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মুজাদ্দিদ ও ইমাম, খলীফাতুল্লাহ, খলীফাতু রসূলিল্লাহ, হুজ্জাতুল ইসলাম, সাইয়্যিদে মুজাদ্দিদে আ’যম, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ঘোষণা মুবারক দিয়েছেন, আমরা সারা পৃথিবী থেকে সমস্ত কাফির-মুশরিক, বেদ্বীন-বদদ্বীন, ইহুদী-নাছারা ও মুনাফিকদেরকে বের করে দিবো। ইনশায়াল্লাহ!