হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৪০৪-১৬৭৬) (ড)


সম্মানিত সারিয়্যাতুল র্কুরা বা বি’রে মাঊনাহ উনার ঘটনা:
 সম্মানিত বি’রে মাঊনাহ উনার ঘটনা সংঘটিত হয় ৪র্থ হিজরী পবিত্র ছফর মাসে। যা সম্মানিত উহুদ জিহাদ উনার চার মাস পর।
  হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, সম্মানিত বি’রে মাঊনাহ উনার ঘটনা সম্পর্কে আমার পিতা যিনি হযরত ইসহাক্ব ইবনে ইয়াসার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার নিকট মুগীরা ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে হারিছ ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ বকর ইবনে মুহম্মদ ইবনে আমর ইবনে হাযম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সূত্রে যা বর্ণনা করেছেন। তা হলো-
 আবূ বারা আমির ইবনে মালিক ইবনে জা’ফর নামীয় এক কাট্টা কাফির নেতা সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট এসে উপস্থিত হয়। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মুখে কিছু হাদিয়া উপস্থিত করে, কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা কবুল করেন নি।
 فَعَرَضَ عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْإِسْلَامَ وَدَعَاهُ إلَيْهِ فَلَمْ يُسْلِمْ وَلَمْ يَبْعُدْ مِنْ الْإِسْلَامِ وَقَالَ يَا حَضْرَتْ مُحَمّدُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَوْ بَعَثْت رِجَالًا مِنْ أَصْحَابِك إلَى أَهْلِ نَجْدٍ، فَدَعَوْهُمْ.
 অর্থ: “অতঃপর  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক  ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দেন। কাট্টা কাফির আবূ বারা আমির ইবনে মালিক সে দাওয়াত কবুলও করল না, প্রত্যাখ্যানও করল না। সে জবাবে বলল, আপনি যদি নজদ এলাকায় লোকজনদেরকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দেওয়ার জন্যে আপনার কিছু হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে আমার সাথে পাঠিয়ে দেন, তাহলে আশা করি সে এলাকায় লোকজন এ দাওয়াত মুবারক কবুল করে মুসলমান হতেন।”
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
إنّي أَخْشَى عَلَيْهِمْ أَهْلَ نَجْدٍ.
নজদ এলাকার লোকজন থেকে আমি বিপদ আশংকা করছি।”
  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত কথা মুবারক শুনে কাট্টা কাফির আবূ বারা বলল, সে বিষয় আমি জিম্মাদারী নিচ্ছি। অতঃপর তার ওয়াদা গ্রহণের প্রেক্ষিতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৭০ জন  হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একটি দলকে তার সাথে পাঠান। (দালায়িলুন নবুওওয়াহ, উমদাতুল ক্বরী, আল মু’জামুল কাবীর লিত-ত্ববারানী, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মা’রিফাতুছ ছাহাবা, জাওয়ামিউস সীরাত, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
  অপর এক বর্ণনায় রয়েছে,
 فَبَعَثَ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حَضْرَتْ الْمُنْذِرَ بْنَ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، أَخَا بَنِي سَاعِدَةَ الْمُعْنِقَ لِيَمُوتَ فِي أَرْبَعِينَ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِهِ مِنْ خِيَارِ الْمُسْلِمِينَ مِنْهُمْ حَضْرَتْ الْحَارِثُ بْنُ الصّمّةِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ حَرَامُ بْنُ مِلْحَانَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ أَخُو بَنِي عَدِيّ بْنِ النّجّارِ وَ حَضْرَتْ عُرْوَةُ بْنُ أَسَمَاءَ بْنِ الصّلْت السّلَمِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَ حَضْرَتْ نَافِعُ بْنُ بُدَيْلِ بْنِ وَرْقَاءَ الْخُزَاعِيّ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ وَ حَضْرَتْ عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ مَوْلَى حَضْرَتْ أَبِي بَكْرٍ الصّدّيقِ عَلَيْهِ السَّلَامُ فِي رِجَالٍ مُسَمّينَ مِنْ خِيَارِ الْمُسْلِمِينَ.
 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ৪০ জন শীর্ষস্থানীয় হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে হযরত মুনযির ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে পাঠিয়ে দিলেন। হযরত মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি ছিলেন, বানূ সায়িদার সম্মানিত ভাই। উনার লক্বব মুবারক আল-মু’নিক্ব লিয়ামূত অর্থাৎ বিদায়ীকে দ্রুত আলিঙ্গনকারী। উনার সঙ্গীগণ ছিলেন হযরত হারিছ ইবনে ছিম্মা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, আদী ইবনে নাজ্জার গোত্রের হযরত হারাম ইবনে মিলহান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত উরওয়াহ ইবনে আসমা ইবনে সালত সুলামী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত নাফি’ ইবনে বুদায়ল ইবনে ওয়ারকা খুযায়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবার আলাইহিস সালাম উনার মাধ্যমে পরাধীন থেকে স্বাধীন হওয়া হযরত আমির ইবনে ফুহাইরাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু প্রমুখ।"
 এই দলের সবাই ছিলেন সম্মানিত হাফিয ও ক্বরী ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের অন্তর্ভূক্ত। তাই এ সম্মানিত কাফিলাকে সারিয়্যাতুল  র্কুরা বা ক্বরী উনাদের কাফিলা বলে অভিহিত করা হয়েছে। এই সমস্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের ছানা-ছিফত মুবারক কত বেমেছাল তা বলার অপেক্ষাই রাখে না। উনারা সকলে ছিলেন পবিত্র চরিত্র মুবারকের অধিকারী এবং দ্বীনদারীতে বড়ই উচ্চমাক্বামের অধিকারী। সুবহানাল্লাহ! উনারা দিনভর লাকড়ি সংগ্রহ করে সন্ধ্যাবেলা তা বিক্রয় করতেন, যে সামান্য অর্থ আসতো তা দিয়ে খাবারের আয়োজন করে আসহাবে সুফফার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে খাওয়াতেন। আর রাতের একাংশে উনারা পবিত্র কুরআন শরীফ তিলওয়াত মুবারক ও তা’লীম-তালক্বীনে মশগুল থাকতেন, রাতের অপর এক অংশে পবিত্র তাহাজ্জুদ নামায ও নফল ইবাদত-বন্দিগীতে কাটাতেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহনা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, হায়াতুছ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)
 এ কাফিলা বি’রে মাঊনাহ নামক স্থানে পৌঁছে যাত্রাবিরতী করেন। বি’রে মাঊনাহ একটি কুপের নাম। এ কুয়াটি বানূ আমিরের আবাসভূমি ও বানূ সুলাইমের প্রস্তরময় এলাকার মাঝখানে অবস্থিত। উভয় এলাকাই কুয়াটির নিকটবর্তী ছিলো, তবে বানূ সুলাইমের আবাস ছিল অপেক্ষাকৃত বেশী কাছে। বানূ আমির গোত্রের সরদার আমির ইবনে তুফায়িল ছিলো আবূ বারার ভ্রাতুষ্পুত্র। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কাট্টা কাফির আমির ইবনে তুফায়িলের নামে একটি মহাসম্মানিত পত্র মুবারক লিখেন এবং তা পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। যখন এ কাফিলা বি’রে মাঊনাহ উনার  এলাকায় পৌঁছেন তখন এ পত্র হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মামা হযরত হারাম ইবনে মিলহান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার হাতে পৌঁছানো হয়, উনাকে এ মহাসম্মানিত পত্র মুবারকটি আমিরের নিকট পৌঁছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।
 হযরত হারাম ইবনে মিলহান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যখন সম্মানিত পত্র মুবারকটি নিয়ে আমিরের মাজলিসে উপস্থিত হলেন, তখন সেই দুরাচার মহাসম্মানিত পত্র মুবারক পড়ার পূর্বেই মাজলিসে উপস্থিত অপর এক ব্যক্তিকে ইশারায় হযরত হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করার আদেশ করে, লোকটি হযরত হারাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু উনার পিছনে দাঁড়ানো ছিলো। পিছন থেকে সে একটি ছোট বর্শা নিক্ষেপ করল। বর্শাটি হযরত হারাম ইবনে মিলহান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দেহ মুবারক ভেদ করে সম্মুখে দিয় বের হয়ে আসলো, তিনি সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক গ্রহণ করলেন। উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করার সময় তিনি বলে উঠেন,
فُزْتَ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ
 অর্থ: “পবিত্র কা’বা শরীফের রব উনার ক্বসম! আমি কামিয়াব।”
 এরপর কাট্টা কাফির আমির ইবনে তুফায়িল তার গোত্রের লোকদেরকে অন্যান্য হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে শহীদ করতে প্ররোচিত করলেও তারা আবূ বারার নিরাপত্তাদানের প্রেক্ষিতে আর কাউকে শহীদ করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা বলল, আমরা আবূ বারার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারব না। সে উনাদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন। অগত্যা সে বানূ সুলাইমের শাখা উসায়্যা, রি’ল ও যাকওয়ান গোত্রের সহযোগিতা চাইলো। তারা সাহায্য করতে সম্মত হল এবং সেই মুহূর্তে তারা হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের চারদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলল। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে তারা দেখামাত্র তরবারি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং অপর দিকে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সম্মানিত জিহাদ মুবারক করতে করতে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক গ্রহণ করলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাদের উপর বেমেছাল রহমত মুবারক বর্ষণ করুন। আমীন! তবে একমাত্র হযরত কা’ব ইবনে যায়িদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি গাজী হিসাবে ফিরে আসেন। তিনি ছিলেন দীনার ইবনে নাজ্জার গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তি। কাফির মুশরিকরা তিনি শহীদ হয়েছেন ভেবে রেখে গিয়েছিল। তারপর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। অবশেষে তিনি সম্মানিত খন্দক জিহাদে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক গ্রহণ করেন। সুবহানাল্লাহ! (দালায়িলুন নবুওওয়াহ, আল মু’জামুল কাবীর লিত-ত্ববারানী, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, শরহে কুসত্বলানী, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, তারিখুল খ¦মীস, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক)
 কাফির মুশরিকদের এ আক্রমণের সময় দু’জন সম্মানিত ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুমা উনারা পশুপাল চারানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। একজন হযরত আমর ইবনে উমাইয়া দ্বামরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, অপরজন আমর ইবনে আওফ গোত্রের জনৈক আনসার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উনার নাম মুবারক, হযরত মুনযির ইবনে মুহম্মদ ইবনে উকবা ইবনে উহাইহা ইবনে জুলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। 
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা উনাদের সঙ্গী-সাথী উনাদের সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশের বিষয়টি টের পাননি। কিন্তু যখন উনাদের সম্মুখে ঘটনাস্থলে এক ঝাঁক পাখি উড়তে দেখলেন, তখন উনাদের সন্দেহ হল। উনারা বললেন,  মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! নিশ্চয়ই পাখিগুলো উড়ার পিছনে কোন না কোন রহস্য আছে। উনারা বিষয়টি দেখার জন্য অগ্রসর হলেন। উনারা দেখতে পেলেন উনাদের সাথী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সবাই রক্তের উপর অবস্থান মুবারক করছেন। কাফির মুশরিক ঘাতকরাও সেখানে উপস্থিত। তখন আনসার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে লক্ষ করে বললেন, আপনার মত কি? এখন আমাদের কি করা উচিত? হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জবাবে বললেন, আমার মতে আমাদেরকে পবিত্র মদীনা শরীফে গিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ সংবাদ মুবারক জানানো।
কিন্তু হযরত আনছার ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন,
 لَكِنْ مَا كُنْت لِأَرْغَبَ بِنَفْسِي عَنْ مَوْطِنٍ قُتِلَ فِيهِ حَضْرَتْ الْمُنْذِرَ بْنَ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ، وَمَا كُنْت لِتُخْبِرَنِي عَنْهُ الرّجَالُ ثُمّ قَاتَلَ الْقَوْمَ حَتّى قُتِلَ
 অর্থ: “যে জায়গায় হযরত মুনযির ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন আমি সে জায়গা ছেড়ে যেতে চাই না। আমি নিজে কখনও লোকমুখে এ সম্মানিত শহীদ উনাদের সংবাদ শোনার জন্য বসে থাকি নাই। এই বলে তিনি কাফির মুশরিকদের সাথে জিহাদে অবতীর্ণ হলেন এবং সম্মানিত জিহাদ মুবারক করতে করতে পবিত্র শহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন।” সুবহানাল্লাহ!
 আর হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শত্রুদের হাতে বন্দী হলেন। তিনি যখন তাদের জানালেন যে, তিনি মুদার গোত্রের লোক, তখন তাদের মধ্য হতে আমির ইবনে তুফাইল সে উনার মাথার অগ্রভাগের চুল কেটে দিল এবং মায়ের একটি মানতের বিনিময় বাবদ উনাকে আযাদ করে দিল। (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, আল-মু’জামুল কাবীর লিত-ত্ববারানী, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, তারিখুল খ¦মিস, উসদুল গবা)
 হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আযাদী শান গ্রহণ করে পবিত্র মদীনা শরীফের দিকে ফিরছিলেন। তিনি যখন কানাত উপত্যকার উপকন্ঠে কারকারা নামক স্থানে পৌঁছলেন। তখন বানূ আমির গোত্রের দু’টি লোকের সাথে উনার সাক্ষাৎ হলো। তারা সকলে একই গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিলেন।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, লোক দু’টি ছিল বানূ আমির শাখার কিলাব গোত্রের। হযরত আবূ আমর মাদানী বলেন, তারা ছিল সুলাইম গোত্রের লোক।
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, উক্ত লোক দু’টি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি ও নিরাপত্তাপ্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার তা জানা ছিল না। তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, আপনারা কোন গোত্রের লোক? তারা বলল, আমরা বানূ আমির গোত্রের। এরপর তিনি ক্ষনিকের জন্য অমনোযোগিতার ভান করলেন, পরে তারা ঘুমিয়ে গেল। যখন তারা ঘুমে অচেতন হয়ে গেল, তখন তিনি তরবারি নিয়ে তাদের দু’জনকে হত্যা করলেন। তিনি মনে করেছিলেন, বানূ আমির গোত্র নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে যে শহীদ করেছে, এর দ্বারা তিনি কিছুটা হলেও তার প্রতিশোধ নিতে পেরেছেন।
হযরত আমর ইবনে উমাইয়া রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে সমস্ত ঘটনা পেশ করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
لَقَدْ قَتَلْت قَتِيلَيْنِ لَأَدِيَنّهُمَا
 আপনি যে, দু’ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন আমাকে তাদের রক্তপণ (দিয়াত) পরিশোধ করতে হবে।” সুবহানাল্লাহ!
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থ সমূহে বর্ণিত রয়েছে,
 ثُمّ قَالَ رَسُولُ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ هَذَا عَمَلُ أَبِي بَرَاءٍ، قَدْ كُنْت لِهَذَا كَارِهًا مُتَخَوّفًا . فَبَلَغَ ذَلِكَ أَبَا بَرَاءٍ فَشَقّ عَلَيْهِ إخْفَارُ عَامِرٍ إيّاهُ وَمَا أَصَابَ أَصْحَابَ رَسُولِ اللّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِسَبَبِهِ وَجِوَارِهِ وَكَانَ فِيمَنْ أُصِيبَ عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ
 অর্থ: “অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, এটা বারা’র কাজ। আমি শুরুতেই উনাদেরকে পাঠাতে অপছন্দ করেছিলাম। এরূপ ঘটাতে পারে বলে আমার আশংকা ছিল। (মূলতঃ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুই জানেন। সুবহানাল্লাহ!) একথা আবূ বারা’র কর্ণগোচর হলে সে ভীষণ মর্মাহত হলো। তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার কারণে আমীরের প্রতি তার অন্তরে ক্ষোভ সঞ্চার হলো। তার কারণে এবং তার প্রদত্ত নিরাপত্তা সত্ত্বেও নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা যে জুলুমের শিকার হলেন, সেজন্য তার দুঃখের সীমা থাকল না। এ ঘটনায় যারা সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন উনাদের মধ্যে হযরত আমির ইবনে ফুহাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অন্যতম।” (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, আল ফুছূলু ফি-রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল কামিলু ফিত্-তারিখ) 
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত হিশাম ইবনে উরওয়াহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমার নিকট উনার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন,
 كَانَ يَقُولُ مَنْ رَجُلٌ مِنْهُمْ لَمّا قُتِلَ رَأَيْته رَفَعَ بَيْنَ السّمَاءِ وَالْأَرْضِ حَتّى رَأَيْت السّمَاءَ مِنْ دُونِهِ؟ قَالُوا هُوَ حَضْرَتْ عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ
 অর্থ: “আমির ইবনে তুফাইল (লোকদেরকে) জিজ্ঞাসা করছিল, আমি সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশকারী উনাদের মধ্যে একজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখলাম যে, উনাকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে এবং তিনি যেতে যেতে এক সময় চোখের আড়াল হয়ে গেলেন, তিনি কে ছিলেন? লোকেরা বলল, তিনি ছিলেন হযরত আমির ইবনে ফুহাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি।” সুবহানাল্লাহ!
 বানূ সুলামীর সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের কারণ প্রসঙ্গে বলা হয়। হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, জাবার ইবনে সালমা ইবনে মালিক ইবনে জা’ফর খান্দানের জনৈক ব্যক্তি আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, কাট্টা কাফির ও ঘাতক আমিরের সাথে যোগদানকারীদের একজন ছিলেন, হযরত জাবার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। তিনি পরবর্তীকালে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলতেন, যে ঘটনাটি আমাকে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছে তা এই যে, বি’রে মাঊনাহ উনার ঘটনার দিন আমি বর্শা দিয়ে উনাদের মধ্যে এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দু’কাঁধের মাঝখানে আঘাত করি। উনার বক্ষ মুবারক ভেদ করে বর্শাটি যখন বের হয়ে আসলো, তখন আমি শুনতে পাই, তিনি বলছেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমি সফল হয়েছি। আমি একথা শুনে মনে মনে বললাম, উনার কিসের সাফল্য। তিনিতো আমার হাতে সম্মানিত শাহাদাত মুবারক গ্রহণ করলেন। পরে আমি অনেকের কাছে উনার এ উক্তি বর্ণনা করি। তারা আমাকে বলল, উনার সাফল্য হচ্ছে, সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক গ্রহণ করা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক নিয়ে বিদায় গ্রহণ করা। সুবহানাল্লাহ! আমি বিষয়টি উপলব্ধি করলাম, হ্যাঁ মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! এ সাফল্য তথা কামিয়াবী হচ্ছে হাক্বীক্বি কামিয়াবী। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বারা’র সন্তানদেরকে কাট্টা কাফির আমির ইবনে তুফাইলের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলার জন্য নি¤œাক্ত কবিতা আবৃত্তি করেন,
·      بَنِي أُمّ الْبَنِينَ أَلَمْ يَرْعَكُمْ ... وَأَنْتُمْ مِنْ ذَوَائِبِ أَهْلِ نَجِدْ
 হে উম্মুল বানীন- এর পুত্ররা! তোমরা নাজদের শীর্ষস্থানীয় লোক হয়েও লক্ষ্য করলে না-
تَهَكّمْ عَامِرٌ بِأَبِي بَرَاءٍ ... لِيُخْفِرَهُ وَمَا خَطَأٌ كَعَمْدِ
আমির ইবনে তুফাইল কি আচরণ করল আবূ বারা’র সাথে? তারতো ইচ্ছাই ছিল আবূ বারা’র প্রতিশ্রুতির অবমাননা করা। ইচ্ছাজনিত অপরাধ কি অনিচ্ছাকৃত অন্যায়ের সমান হতে পারে?
أَلَا أَبْلِغْ رَبِيعَةَ ذَا الْمَسَاعِي ... فَمَا أَحْدَثْت فِي الْحَدَثَانِ بَعْدِي
 সাবধান! সম্মানিত পুরুষ রবী’য়াকে সংবাদ পৌঁছাও। শুনে তিনি বলবেন, আমার পরে তোমরা এ কি নতুন নিয়ম উদ্ভবন করলে?
أَبُوك أَبُو الْحُرُوبِ أَبُو بَرَاءٍ ... وَ خَالُك مَاجِدٌ حَكَمُ بْنُ سَعْدِ
তোমার পিতা আবূ বারা’ ছিলো একজন লড়াকু ব্যক্তি। আর তোমার মামা হাকাম ইবনে সা’দ ছিলেন অত্যন্ত সম্মানিত লোক। (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, আল মু’জামুল কাবীর লিত-ত্ববারানী, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, উয়ূনুল আছার, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলক)
 হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অত্র কবিতায় উল্লেখ্য হাকাম ইবনে সা’দ ও উম্মুল বানীনের সম্পর্কে বলা হয়।
 হযরত ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হাকাম ইবনে সা’দ হচ্ছে, কাইন ইবনে জাসর গোত্রের লোক। আর উম্মুল বানীন বলতে আমর ইবনে আমির ইবনে রাবী’য়া ইবনে আমির ইবনে ছা’ছা’য়াহ-এর কন্যাকে বোঝানো হয়েছে। তিনি ছিলেন, আবূ বারা’র মাতা। যার নাম ছিল লায়লা।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, রাবী’য়া ইবনে আমির ইবনে মালিক নামক এক ব্যক্তি সে একদিন আমির ইবনে তুফাইলের উপর আক্রমণ চালায়। এক আঘাতে তাকে খুন করতে গিয়ে ভুলবশত তিনি আঘাত করে বসেন তার উরুতে। কিন্তু মারাত্মক আহত অবস্থায় ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যায়। সে বলে উঠে, এটা আবূ বারা’-এর কাজ। আমি যদি এতে মারা যাই, তবে আমার রক্তের দায়ী আমার চাচার অধিকারে থাকল। আর যদি বেঁচে যাই, তবে আমার করণীয় আমিই দেখব।
 ইবনে ওয়ারাকার হত্যা সম্পর্কে বলা হয়। আনাস ইবনে আব্বাস সুলামী ছিল তুয়াইমা ইবনে ’আদী ইবনে নাওফালের মামা। সে বি’রে মাঊনার দিন হযরত নাফি’ ইবনে বুদাইল ইবনে ওয়ারাকা খুযাইয়ী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে শহীদ করেছিল। সেদিন সে নিম্নের কবিতাটি আবৃত্তি করেছিল:
تَرَكْت ابْنَ وَرْقَاءَ الْخُزَاعِيّ ثَاوِيًا ... بِمُعْتَرَكِ تَسْفِي عَلَيْهِ الْأَعَاصِرُ
আমি ওয়ারাকা খুযাইর সন্তানকে যুদ্ধের ময়দানে ফেলে রেখে এসেছি, যেখানে ধূলা-বালি মিশ্রিত প্রচন্ড বায়ু প্রবাহিত হয়।
ذَكَرْت أَبَا الرّيّانِ لَمّا رَأَيْته ... وَأَيْقَنْت أَنّي عِنْدَ ذَلِكَ ثَائِرُ
উনার এ অবস্থায় দেখে আমার আবূ রাইয়ানের কথা মনে পড়ল। আমি ভেবে নিশ্চিত হলাম যে, তার হত্যার প্রতিশোধ নিতে পেরেছি।
 আবূ রাইয়ান হচ্ছে, ত্বয়াইমা ইবনে ’আদীর উপনাম।
 হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত নাফি’ ইবনে বুদাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি শোক প্রকাশ করে বলেন,
رَحِمَ اللّهُ حَضْرَتْ نَافِعَ بْنَ بُدَيْلٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ ... رَحْمَةَ الْمُبْتَغِي ثَوَابَ الْجِهَادِ
মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমত বর্ষণ করুন হযরত নাফি’ ইবনে বুদাইল রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার প্রতি, যেমন রহমত বর্ষিত হয় সম্মানিত জিহাদের সাওয়াব প্রত্যাশী তথা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের রেজামন্দী-সন্তুষ্টি মুবারক তালাশী ব্যক্তির উপর। সুবহানাল্লাহ!
صَابِرٌ صَادِقٌ وَفِيّ إذَا مَا ... أَكْثَرَ الْقَوْمُ قَالَ قَوْلَ السّدَادِ
 তিনি ছিলেন ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, বিশ্বাসী, আর মানুষ যখন আবোল-তাবোল বলতো তখনও তিনি সঠিক ও সত্য কথা বলতেন। সুবহানাল্লাহ!
 হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বি’রে মাঊনাহ উনার মধ্যে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশকারী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করে এই কবিতাটি আবৃত্তি করেন। এতে বিশেষভাবে হযরত মুনযির ইবনে আমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কথা উল্লেখ রয়েছে,
 عَلَى قَتْلَى مَعُونَةَ فَاسْتَهِلّي ... بِدَمْعِ الْعَيْنِ سَحّا غَيْرَ نَزْرِ
 হে চোখ, অশ্রু বর্ষণ করো বি’রে মাঊনাহর শহীদ উনাদের প্রতি. অশ্রু বহাও অঝোর ধারায়, সামান্য নয় কিছুতেই।
عَلَى خَيْلِ الرّسُولِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ غَدَاةَ لَاقَوْا ... مَنَايَاهُمْ وَلَاقَتْهُمْ بِقَدْرِ
কাঁদো নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুজাহীদ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনাদের প্রতি, সেদিনের স্মরণে যেদিন উনারা চির বিদায়কে আলিঙ্গন করেছিলেন, আর মউতও উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে বুকে তুলে নিয়েছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!
أَصَابَهُمْ الْفَنَاءُ بِعَقْدِ قَوْمٍ ... نُخُوّن عَقْدُ حَبْلِهِمْ بِغَدْرِ
 নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত মুজাহিদ ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কাফির মুশরিকদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে শহীদ হলেন, আর উনারা ছিলেন কাফির মুশরিকদের বিশ্বাসঘাতকতার রশিতে আবদ্ধ। নাউযূবিল্লাহ!
فَيَا لَهْفِي لِمُنْذِرِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ إذْ تَوَلّى ... وَأَعْنَقَ فِي مَنِيّتِهِ بِصَبْرِ
 হায় আফসুস! হযরত মুনযির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি গেলেন আর ফিরে আসলেন না। তিনি ছবর বা ধৈর্যের সাথে দ্রুত সম্মানিত শাহাদাত গ্রহণের দিকে এগিয়ে গেলেন।
وَكَائِنٌ قَدْ أُصِيبَ غَدَاةَ ذَاكُمْ ... مِنْ أَبْيَضِ مَاجِدٍ مِنْ سِرّ عَمْرِو
 সেদিন সকালে তিনি সম্মানিত শাহাদাতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, তিনি ছিলেন সম্মানী ও সুদর্শন পুরুষ এবং আমরের শ্রেষ্ঠ সন্তান। সুবহানাল্লাহ!
হযরত কা’ব ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বি’রে মাঊনাহ উনার ঘটনা প্রস্েঙ্গ বানূ জা’ফর ইবনে কিলাবের নিন্দায় আবৃত্তি করেন,
تَرَكْتُمْ جَارَكُمْ لِبَنِي سُلَيْمٍ ... مَخَافَةَ حَرْبِهِمْ عَجْزًا وَهُونَا
(হে বানূ জা’ফর!) তোমরা যুদ্ধভয়ে ভীত ও নতজানু হয়ে আপন প্রতিবেশীকে বানূ সুলাইমের হাতে ছেড়ে দিলে,
فَلَوْ حَبْلًا تَنَاوَلَ مِنْ عُقَيْلٍ ... لَمَدّ بِحَبْلِهَا حَبْلًا مَتِينَا
অতঃপর উনারা যদি বানূ উক্বাইল গোত্রের অংশীদারের রশি ধারণ করতেন, তবে তা হতো উনাদের জন্য এক সৃদৃঢ় রশি।
أَوْ القرُطَاء مَا إنْ أَسْلَمُوهُ ... وَقِدْمًا مَا وَفَوْا إذْ لَا تَفُونَا
 কিংবা উনারা যদি কুরত্বা’ গোত্রের আশ্রয় গ্রহণ করতেন, তবে তারা উনাদেরকে এমনভাবে পরিত্যাগ করত না; কেননা, অঙ্গীকার পূরণে তাদের ঐতিহ্য রয়েছে, যেখানে তোমরা অঙ্গীকার রক্ষা কর না। (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, আর রওদ্বূল উনূফ)
 এক বর্ণনায় রয়েছে, রবী’য়া ইবনে আবূ বারা’ আমির ইবনে তুফাইলের পিছু ধাওয়া করেছিলো। তার ক্বওমের লোকদের সহযোগিতায় সে তার ভাতিজার দিকে তীর ছুঁড়তে ছুঁড়তে তাড়া করছিল। তার ইচ্ছা করেছিলো যে তাকে চিরতরে শেষ করে দিবে। কিন্তু তার আশা পূরণ হয়নি। পরে সে উটের তাউন  প্লেগ (রোগের মতো এক রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।) শেষে অশ্বপৃষ্ঠে আরোহণ অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
 স্মরণীয় যে, হযরত যাহহাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আমির ইবনে ফুহাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত শহাদতী শান মুবারক প্রকাশ ও উনার পরবর্তী ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ লিখে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট চিঠি পাঠিয়েছিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি চিঠির জবাবে ইরশাদ মুবারক করেন,
إِنَّ الْمَلَائِكَةَ وَارَتْ جُثتَهُ وَأُنْزِلَ عِلِّيِّينَ.
 অর্থ: “নিশ্চয়ই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা (হযরত আমির ইবনে ফুহাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) উনার পবিত্র জিসম মুবারক ঢেকে ইল্লিনে নিয়ে গিয়েছেন।” সুবহানাল্লাহ! (সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, দালায়িলূন নুবুওওয়াহ, উয়ূনুল আছার, সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 সম্মানিত বি’রে মাঊনাহ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনাদেরকে কাফির মুশরিকরা কঠিন জুলুম-নির্যাতন করে শহীদ করে। যার ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক কষ্ট মুবারক পান এবং সেই সমস্ত কাফির মুশরিকদের বিরুদ্ধে বদদোয়াও করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যে কষ্ট দেয় সে সমস্ত লোকদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে কঠিন লা’নত ও আযাব-গযব রয়েছে। নাউযূবিল্লাহ!
 মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
 اِنَّ الَّذِيْنَ يُؤْذُوْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ لَعَنَهُمُ اللهُ فِـى الدُّنْيَا وَالْاٰخِرَةِ وَاَعَدَّ لَـهُمْ عَذَابًا مُّهِيْنًا.
 অর্থ: “নিশ্চয়ই যারা মহান আল্লাহ পাক উনাকে এবং উনার রসূল, উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে কষ্ট দেয়, তাদের উপর মহান আল্লাহ পাক উনার লা’নত দুনিয়া ও আখিরাতে এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ- ৫৭)
  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সারিয়্যাতুল কুররা উনাদের সাথে কাফির মুশরিকদের ঘৃণ্য আচরণ সম্পর্কে শুনলেন তখন তিনি হুজনী শান মুবারক গ্রহণ করলেন। এমন হুজনী শান মুবারক গ্রহণ করলেন যা তিনি আর অন্য সময় গ্রহণ করেননি। এমতাবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ফজর  নামায বা’দ প্রায় একমাস কুনুতে নাযিলা পাঠ করেন।
 এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
  عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه قَالَ قَنَتَ رَسُولُ اللَّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ شَهْرًا حِينَ قُتِلَ الْقُرَّاءُ، فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ حَزِنَ حُزْنًا قَطُّ أَشَدَّ مِنْهُ‏.
 অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (বি’রে মাঊনাহ উনার ঘটনায়) হযরত ক্বরী ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশের পর মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র ফজর  নামাযের পর এক মাস যাবত কুনূতে নাযিলা পাঠ করেন। (বর্ণনাকারী বলেন,) নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে আমি আর কখনো এর চেয়ে অধিক হুজনী শান মুবারক প্রকাশ্য করতে দেখিনি। সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ: পবিত্র হাদীছ শরীফ নং- ১৩০০, শরহে ইবনে বাত্বাল, উমদাতুল ক্বারী, ফয়জুল বারী)
  সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, ¦তামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক মাস মতান্তরে চল্লিশ দিন কুনূতে নাযিলা পাঠ করার পর আর কখনও তা পাঠ করেননি। বরং কুনূতে নাযিলা পাঠ করা ছেড়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
 মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
  عَنْ حَضْرَتْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه" أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَنَتَ شَهْرًا يَدْعُو عَلَى عُصَيَّةَ وَذَكْوَانَ وَرِعْلٍ وَلِحْيَانَ "
অর্থ: “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উছায়্যাহ, যাকওয়ান, রি’ল ও লিহইয়ান গোত্রের উপর বদদোয়া করার লক্ষ্যে একমাস কুনূতে নাযিলা পাঠ করেন।” (মুসনাদে আবূ ইয়া’লা, সুনানে কুবরা লিল-বাইহাক্বী, মা’রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার, উমদাতুল ক্বরী, মায়ানিল আছার)
 উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমাস ফজর  নামাযে কুনূতে নাযিলা পাঠ করেছেন। আর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে একথাও স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ثُمَّ تَرَكَهُ   অতঃপর তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
 এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللَّهِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه، قَالَ: ্রلَمْ يَقْنُتْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الصُّبْحِ إِلَّا شَهْرًا، ثُمَّ تَرَكَهُ لَمْ يَقْنُتْ قَبْلَهُ وَلَا بَعْدَهُগ্ধ
 অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমাস পবিত্র ফজর  নামাযে কুনূতে নাযিলা পাঠ করেছেন। অতঃপর তিনি উহা পরিত্যাগ করেছেন। এর পূর্বে ও পরে কখনই তিনি আর পবিত্র ফজর নামযে কুনূতে নাযিলা পাঠ করেননি।”  সুবহানাল্লাহ! (শরহু সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাছাবীহ)
 স্মরণীয় যে, আমাদের হানাফী মাযহাব মতে পবিত্র ফজর  নামাযে কুনূত পাঠ করার হুকুম ও আমল মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। যেমন, এ প্রসঙ্গে বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘উমদাতুল ক্বরী’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মতে, যখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর
لَيْسَ لَكَ مِنَ الأَمْرِ شَيْءٌ
 এ বিষয় আপনার আর কিছু করার প্রয়োজন নেই।” (পবিত্র সূরা আলে-ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১২৮) অর্থাৎ এ পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর থেকেই পবিত্র ফজর  নামাযে কুনূতে নাযিলা পাঠ করা মানসূখ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ!
 এ প্রসঙ্গে ‘হিদায়া’ কিতাবের ‘শরাহ আইনী’ কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
 وَلِاَبِىْ حَضْرَتْ حَنِيْفَةَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ وَحَضْرَتْ مُحَمَّدِ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ )اَنَّهُ( اَىْ اَنَّ الْقُنُوْتَ فِىْ الْفَجْرِ )مَنْسُوْخٌ ( ....... )وَلَامُتَابِعَةٌ فِيْهِ( اَىْ فِى الْمَنْسُوْخِ لِاَنَّ الْاِتِّبَاعَ فِيْهِ لَا يَجُوْزُ.
 অর্থ: “হযরত ইমামে আ’যম আবূ হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের মতে অর্থাৎ হানাফী মাযহাব মতে ফজর নামযে কুনূতে নাযিলা পাঠ করার বিধান মানসূখ বা রহিত হয়ে গেছে। আর মানসূখ বা রহিত বিষয়কে অনুসরণ করা বা এর উপর আমল করা সম্পূর্ণ নাজায়িয বা হারাম। আর মানসূখ হয়ে যাওয়ার কারণেই পরবর্তীতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনারা উনাদের সময়ে বহু জিহাদ ও বালা-মুছীবত সংঘটিত হওয়া সত্ত্বেও নামাযে কুনূতে নাযিলা পাঠ করেননি। (আল বিনায়া ফি শরহিল হিদায়া/৫৯৭ পৃষ্ঠা)
 হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কুনূতে নাযিলা পাঠ করাকে বিদয়াত তথা বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ বলে উল্লেখ করেছেন।
 মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حَضْرَتْ إِبْرَاهِيمَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ، أَنَّ حَضْرَتْ ابْنَ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْه ্রلَمْ يَقْنُتْ هُوَ وَلَا أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ حَتَّى فَارَقَ الدُّنْيَا يَعْنِي فِي صَلَاةِ الْفَجْرِগ্ধ
 অর্থ: “হযরত ইবরাহীম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। নিশ্চয়ই হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনিসহ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কেউ জীবনে কখনো পবিত্র ফজর  নামাযে কুনূত পাঠ করেননি।” (আল আছার ফি-মুহম্মদ ইবনে  হাসান)
 কাজেই যারা কুনূতে নাযিলা পাঠ করা জায়িয বালে তারা অজ্ঞ ও গোমরাহ হওয়ার কারণে এরূপ বলে থাকে। নাউযূবিল্লাহ!
 কাজেই সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত যে, মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ফজর  নামাযে কুনূত পাঠ করেছেন একথা যেরূপ সত্য তদ্রুপ পরবর্তীতে তা মানসূখ হয়ে যাওয়ায় তিনি তা পরিত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ এর পূর্বে ও পরে তিনি এবং উনার হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়াল আনহুম উনারা কখনো ফজর  নামাযে কুনূত পাঠ করেননি বরং এটাকে বিদয়াত বলে রায় দিয়েছেন- এটাও সত্য। (মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ: ১৩২ থেকে ১৫২ তম সংখ্যা)

0 Comments: