হুযুরপাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র জীবনী মুবারক । (পর্ব- ১৪০৪-১৬৭৬) (ছ)


হযরত আসিম ইবনে ছাবিত আবুল আফলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘটনা:
হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক: আসিম, উনার কুনিয়াত নাম মুবারক: আবূ সুলাইমান। উনার পিতার নাম: ছাবিত ইবনে আবিল আফলাহ কায়িস এবং উনার মাতার নাম: আশ-শামস বিনতু আবী আমীর। তিনি ছিলেন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার বিখ্যাত আউস গোত্রের।
  নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরিফ মুবারক গ্রহণের পূর্বে তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা শরীফে তাশরিফ মুবারক গ্রহণ করার পর উনাকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাথে ভ্রাতৃসম্পর্ক গড়ে দেন।
 হযরত আসিম ইবনে ছাবিত আবূল আফলাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত বদর ও সম্মানিত উহুদ জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন। সম্মানিত বদর জিহাদের পূর্বে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সকল মুজাহিদ হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের একত্র করে সম্মানিত জিহাদ মুবারক সম্পর্কে পরামর্শ মুবারক করেন।
 এ সম্পর্কে মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ بَدْرٍ كَيْفَ تُقَاتِلُونَ؟ فَقَامَ حَضْرَتْ عَاصِمُ بْنُ ثَابِتِ بْنِ أَبِي الْأَفْلَحِ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ فَأَخَذَ الْقَوْسَ، وَأَخَذَ النَّبْلَ، فَقَالَ: أَيْ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، إذَا كَانَ الْقَوْمُ قَرِيبًا مِنْ مِائَتَيْ ذِرَاعٍ أَوْ نَحْوِ ذَلِكَ، كَانَ الرَّمْيُ بِالْقِسِيِّ، وَإِذَا دَنَا الْقَوْمُ حَتَّى تَنَالَهُمْ الْحِجَارَةُ، كَانَتْ الْمُرَاضَخَةُ، فَإِذَا دَنَوْا حَتَّى تَنَالَهُمْ الرِّمَاحُ، كَانَتْ الْمُدَاعَسَةُ حَتَّى تَتَقَصَّفَ الرِّمَاحُ، ثُمَّ كَانَتْ الْمُجَالَدَةُ بِالسُّيُوفِ فَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهَذَا أُنْزِلَتْ الْحَرْبُ، مَنْ قَاتَلَ فَلْيُقَاتِلْ قِتَالَ حَضْرَتْ عَاصِمٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ.
 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত বদর জিহাদের দিন ইরশাদ মুবারক করলেন, হে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম! আপনারা কিভাবে জিহাদ মুবারক করবেন?’ তখন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্য থেকে হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তীর-ধনুক হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! শত্রুরা যদি দু’শ হাত অথবা তার চেয়ে কাছাকাছি অবস্থান করে তবে তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করবো। তার চেয়ে আরো নিকটবর্তী হলে তাদেরকে পাথর মেরে চূর্ণবিচূর্ণ করবো এবং তার চেয়ে আরো নিকটে এলে বর্শা দিয়ে আঘাত করে তাদেরকে পদদলিত করবো এবং বর্শার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করবো। এরচেয়েও আরো নিকটে এলে তাদের সাথে তরবারি দিয়ে জিহাদ করবো। উনার একথা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ‘সম্মানিত জিহাদ মুবারকের করার এটাই তারতীব। হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যেভাবে জিহাদ মুবারক করেন, আপনারাও সেভাবে জিহাদ মুবারক করবেন’।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম!  (মাউসূয়ায়ে আত্বরাফুল হাদীছ, কানযুল উম্মাল, আল বদরুল মুনীর, উসুদুল গাবাহ, আল ইসাবা)
 অত্র মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে সম্মানিত জিহাদ মুবারক করার সম্মানিত সুন্নত মুবারক উনার বিষয়টি সুস্পষ্ট ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। এই সম্মানিত জিহাদে কাফির মুশরিকদের পতাকাবাহীরা একের পর এক নিহত হলে এক পর্যায় কাট্টা কাফির মুসাফি ইবনে ত্বলহা পতাকা তুলে নেয়। হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কাফিরটাকে মুহূর্তের মধ্যে হত্যা করেন। তারপর তার ভাই কাট্টা কাফির আল জুলাস ইবনে ত্বলাহ মতান্তরে কাট্টা কাফির কিলাব ইবনে ত্বলাহ পতাকাটি নিলে তাকেও তিনি তীর নিক্ষেপ করে হত্যা করেন।
উল্লেখ্য যে, এই কাট্টা কাফির উকবা সম্পর্কে বলা হয়, সে ছিলো খুবই নীচ প্রকৃতির লোক। সে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার চরম দুশমনদের মধ্যে একজন। সে নানাভাবে কষ্ট দেয়ার চেষ্টায় দিন অতিবাহিত করতো। ঝুড়ি ভরে ময়লা-আবর্জনা এনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হুজরা শরীফ উনার দরজা মুবারকে ফেলে রাখতো। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! একদিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সিজদা মুবারকে অবস্থান মুবারক করছিলেন, এমতাবস্থায় এই কাট্টা কাফির, নরাধম কোথা থেকে ছুটে এসে নূরে মুজসসাম হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত নূরুল হুদা তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাথা মুবারক উনার উপর এমন ভাবে চেপে বসে যে, নূরে মুজাসসাম মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অনেক তাখলিফী শান মুবারক প্রকাশ করেন। আর একদিনের ঘটনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত সিজদা মুবারকে অবস্থান মুবারক করছিলেন। এই পাষন্ড কোথা থেকে মরা ছাগলের নাড়িভুঁড়ি কাঁধে করে এনে উনার নূরুল হুদা তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র মাথা মুবারক উনার উপর ঢেলে দেয়। নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! নাউযূবিল্লাহ! এক বর্ণনায় রয়েছে, এই কাট্টা কাফির পাপিষ্ঠ উকবা সে সম্মানিত বদর জিহাদে মুসলমান উনাদের হাতে বন্দী হয়েছিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারকে হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এই কাফিরকে হত্যা করেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি, আল ইসাবা, আনসাবুল আশরাফ, আছহাবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জীবন কথা)
 প্রসিদ্ধ তারিখ ও সীরত গ্রন্থ সমূহে উল্লেখ রয়েছে,
 হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদে অংশগ্রহণ করেন এবং তিনি কাট্টা কাফির মুসাফি ইবনে ত্বলহা ও তার ভাই কাট্টা কাফির জুল্লাস ইবনে ত্বলহাকে হত্যা করেন। হযরত আসিম ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উভয় কাফিরের উপর একের পর এক তীর নিক্ষেপ করেন। তাদের এক একজন করে (মারাত্মকভাবে আহত হয়ে) তাদের মা সুলাফার কাছে পেীঁছে নিজের মাথা তার কোলে রাখে। তাদের মা তাদের দু’জনকে জিজ্ঞাসা করে, হে বৎ! কে তোমাদের আহত করেছে? তারা প্রত্যেকে বলল, তাতো জানি না, তবে আমি আমার উপর তীর নিক্ষেপ করার সময় এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছি এই নাও, আমি আবূল আফলাহর ছেলে। তখন তাদের মা প্রতিজ্ঞা করলো যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি যদি তাকে সুযোগ দেন, তবে সে হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার মাথা মুবারকের খুলিতে মদ পান করবে। নাউযূবিল্লাহ! অপর দিকে হযরত আসিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে দুয়া মুবারক করেছিল যে,
أَنْ لَا يَمَسَّ مُشْرِكًا أَبَدًا. وَلَا يَمَسّهُ مُشْرِكٌ.
অর্থ: ‘তিনি নিজে কখনও কোন মুশরিককে স্পর্শ করবেন না। আর উনাকেও যেন কোন মুশরিক স্পর্শ করতে না পারে।’ (মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, মাছাবিহুল জামি’, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ)
 কাট্টা কাফির উছমান ইবনে আবূ ত্বলহা সম্মানিত উহুদের জিহাদের সময় এই কবিতা আবৃত্তি করেছিল, তখন সে মুশরিকদের পতাকাবাহী ছিল,
 إنَّ عَلَى أَهْلِ اللِّوَاءِ حَقَّا ... أَنْ يَخْضِبُوا الصَّعْدَةَ أَوْ تَنْدَقَّا.
 অর্থ: ‘মনে রেখ! পতাকাবাহীদের দায়িত্ব হলো, তারা নিজ তীরগুলোকে (শত্রুর রক্তে) ক্রমাগত রঞ্জিত করতে থাকবে, যতক্ষণ না তা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে যায়।’ নাউযূবিল্লাহ!
 যখন কাট্টা কাফির উছমান ইবনে আবূ ত্বলহা উক্ত কবিতা আবৃত্তি করছিল, তখন সাইয়্যিদুশ শুহাদা সাইয়্যিদুনা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি তাকে হত্যা করেন। (রওদ্বুল উনূফ, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, মাগাযিউল ওয়াক্বিদী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক)

হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম কর্তৃক হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গোসল মুবারক প্রসঙ্গে:
হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত নাম মুবারক হানযালা। উনার লক্বব মুবারক ‘গাসীলুল মালায়িকা’ ও তাকী। তিনি ছিলেন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার  আউস গোত্রের ‘আমর ইবনে আউফ’ শাখার। উনার পিতার নাম আবূ আমির।
 সম্মানিত উহুদ জিহাদ তুমুল ভাবে চলাকালে হযরত হানযালা ইবনে আবূ আমির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা পরস্পর মুখোমুখি হলেন। হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কাবু করে ফেললেন। এমন সময় কাট্টা কাফির শাদ্দাদ ইবনে আসওয়াদ ইবনে শাউব লক্ষ্য করলো, হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে কাবু করে ফেলেছেন। তখন সে হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে যমীনে ফেলে দেয়। অতপর হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন শুনে ইরশাদ মুবারক করলেন,
إنَّ صَاحِبَكُمْ، يَعْنِي حَنْظَلَةَ لَتُغَسِّلَهُ الْمَلَائِكَةُ.
 অর্থ: ‘নিশ্চয়ই তোমাদের সঙ্গী অর্থাৎ হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে এখন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা গোসল মুবারক দিচ্ছেন।’ (সীরতে ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হুলিয়্যাতুল আওলিয়া’, সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ)
 হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পরিবারস্থ লোক ও উনার সম্মানিতা আহলিয়া উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কি অবস্থায় ছিলেন? উনার সম্মানিত আহলিয়া তিনি জবাবে বললেন, তিনি যখন সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার ঘোষণা শোনেন তখন তিনি গোসল ফরয থাকা অবস্থায় বেরিয়ে পড়েন।
 মহাপবিত্র ও মহাসম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 خَيْرُ النَّاسِ رَجُلٌ مُمْسِكٌ بِعِنَانِ فَرَسِهِ، كُلَّمَا سَمِعَ هَيْعَةَ طَارَ إلَيْهَا.
 অর্থ: “(নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,) সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হলেন তিনি, যে উনার ঘোড়ার লাগাম ধরে অপেক্ষা করেন এবং সম্মানিত জিহাদের ঘোষণা শুনামাত্রই সম্মানিত জিহাদের দিকে ধাবিত হন।”(সীরাতুন নাবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, সীরতে হালাবিয়্যাহ, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ)
 মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন,
لِذَلِكَ غَسَّلَتْهُ الْمَلَائِكَةُ.
 অর্থ: ‘এজন্যই তো উনাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা গোসল মুবারক দিয়েছেন।’ সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম! (সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, মুসতাদরিকে হাক্বীম, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, মা’রিফাতুছ ছাহাবা, ফায়জুল ক্বদীর)
 হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, কাট্টা কাফির শাদ্দাদ ইবনে আসওয়াদ সে হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশে এই কবিতা আবৃত্তি করেছিল,
 لَأَحْمِيَنَّ صَاحِبِي وَنَفْسِي ... بِطَعْنَةِ مِثْلِ شُعَاعِ الشَّمْسِ
 আমি আমার বন্ধুকে এবং আমার নিজেকে এমন বর্শা দ্বারা হিফাযত করবো, যা সূর্যের কিরণের মত ঝলমলে হবে।’
 এদিকে হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সেদিন উনার ধৈর্য্য ধারণের কথা ও হযরত হানযালা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বিরুদ্ধে ইবনে শা’উবের সাহায্য করার কথা উল্লেখ করে বলেন,
وَلَوْ شِئْتُ نَجَّتْنِي كُمَيْتٌ طِمَرَّةٍ ... وَلَمْ أَحْمِلْ النَّعْمَاءَ لِابْنِ شَعُوبِ
যদি আমি চাইতাম, তবে আমার তেজস্বী সাদা-কালো ঘোড়া আমাকে উদ্ধার করে নিত। আর আমার জন্য ইবনে শা’উবের অনুগ্রহ নেয়ার প্রয়োজন হত না।
أُقَاتِلُهُمْ وَأَدَّعِي يَا لَغَالِبٍ ... وَأَدْفَعُهُمْ عَنِّي بِرُكْنٍ صَلِيبِ
 আমি তাদের সাথে লাগাতার লড়তে থাকি এবং হে বানূ গালিব বলে আহ্বান করতে থাকি এবং আমি দৃঢ় শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ করি।
أَبَاكِ وَإِخْوَانًا لَهُ قَدْ تَتَابَعُوا ... وَحُقَّ لَهُمْ مِنْ عَبْرَةٍ بِنَصِيبِ
 হে বানূ গালিব! আপনাদের বাপ ও ভাইদের প্রতি খুব কান্না করে নিন। যারা একের পর এক নিহত হচ্ছিলেন, (এতে কোন ভর্ৎসনাকারীর ভর্ৎসনার প্রতি ভ্রƒক্ষেপ করা উচিত নয়), আর না অশ্রু ঝরাতে ক্লান্ত হওয়া উচিত। কেননা উনাদের কিছু হলেও আপনাদের অশ্রুর হক্বদার ছিলেন।
وَسَلَّى الَّذِي قَدْ كَانَ فِي النَّفْسِ أَنَّنِي ... قَتَلْتُ مِنْ النَّجَّارِ كُلَّ نَجِيبِ
 আর ঐসব লোকদের সান্তনা দিন, যাদের মনে একথা রয়েছে যে, আমরা বানূ নাজ্জারের সকল সম্ভ্রান্ত লোকদের কেন হত্যা করে ফেললাম।
وَمِنْ هَاشِمٍ قَرْمًا كَرِيمًا وَمُصْعَبًا ... وَكَانَ لَدَى الْهَيْجَاءِ غَيْرُ هَيُوبِ
এবং সম্মানিত বানূ হাশিমের অভিজাত এক ব্যক্তিকে কেন শাহাদতী ঘাঁটিতে পৌঁছে দিয়েছি, যিনি ছিলেন, অত্যন্ত কঠোর এবং জিহাদের ময়দানে নির্ভয়ে লড়াইকারী (অর্থাৎ সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম তিনি)
وَلَوْ أَنَّنِي لَمْ أَشْفِ نَفْسِي مِنْهُمْ ... لَكَانَتْ شَجًا فِي الْقَلْبِ ذَاتَ نُدُوبِ
অথচ উনাকে শহীদ করে আমার অন্তর যদি ঠান্ডা না করে নিতাম, তবে আমার অন্তরে এমন ক্ষত থেকে যেত, যার দাগ কখনও মুছতো না। নাউযূবিল্লাহ!
 হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার কবিতার জবাব কাবিতা মুবারকের মাধ্যমে জবাব প্রদান করেন।
 হযরত ইবনে হিশার রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। হযরত হাসসান বিন ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কবিতার জবাবে এই কবিতা মুবারক রচনা করেন,
ذَكَرْتَ الْقُرُومَ الصَّيْدَ مِنْ آلِ هَاشِمٍ ... وَلَسْتَ لِزُورٍ قُلْتَهُ بِمُصِيبِ
আপনি হাশিম বংশীয় বীর-বাহাদুর হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কথা উল্লেখ করেছেন। (নিঃসন্দেহে আপনি ভুল বলেননি, সত্যিই বলেছেন।) তাই বলে আপনার ভুল কথা সত্য হতে পারে না।
أَتَعْجَبُ أَنْ أَقَصَدْتُ حَضْرَتْ حَمْزَةَ عَلَيْهِ السَّلَامِ مِنْهُمْ ... نَجِيبًا وَقَدْ سَمَّيْتَهُ بِنَجِيبِ
 আপনি কি এ ব্যাপারে গর্বিত যে, আপনি হাশিম বংশীয় সাইয়্যিদুশ শুহাদা হযরত হামযা আলাইহিস সালাম উনার মত অভিজাত ব্যক্তিকে অভিজাত বলে স্বীকার করেও শহীদ করছেন?
أَلَمْ يَقْتُلُوا عَمْرًا وَعُتْبَةُ وَابْنَهُ ... وَشَيْبَةَ وَالْحَجَّاجَ وَابْنَ حَبِيبِ
 বলুনতো, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা কি আমর, উতবা ও উতাইবার ছেলে শায়বা, হাজ্জাজ ও ইবনে হাবীবাকে হত্যা করেননি?
غَدَاةَ دَعَا الْعَاصِي حَضْرَتْ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَامِ فَرَاعَهُ ... بِضَرْبَةِ عَضْبٍ بَلَّهُ بِخَضِيبِ
 এ ঘটনা কি সেদিন সকালের নয় যেদিন সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে সম্মানিত জিহাদ মুবারকে আহ্বান করেছিল আস। আর সাইয়্যিদুনা হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি তাকে এমন তরবারির আঘাতে স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন, যা রঙ্গীন রক্তে সিক্ত হচ্ছিল?
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। কাট্টা কাফির ইবনে শা’উব হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বলে,
وَلَوْلَا دِفَاعِي يَا ابْنَ حَرْبٍ وَمَشْهَدِي ... لَأَلْفَيْت يَوْمَ النّعْفِ غَيْرَ مُجِيبِ
হে ইবনে হারব! আমি যদি উপস্থিত থেকে আপনাকে রক্ষা না করতাম, তবে উহুদ যুদ্ধের সময় আপনাকে এমন অবস্থায় পাওয়া যেত যে, আপনার আওয়াজ শোনার মত কোন লোকই থাকতো না।
وَلَوْلَا مَكَرّي الْمُهْرِ بِالنّعْفِ قَرْقَرْت ... ضِبَاعٌ عَلَيْهِ أَوْ ضِرَاءُ كَلِيبِ
 যদি আমি উহুদ পাহাড়ে আমার ঘোড়া না ছাড়তাম, তবে শৃগাল হযরত আবূ সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপর চারদিক থেকে ঝাপিয়ে পড়ত এবং খেয়ে ফেলত।
 হযরত যিয়াদ ইবনে সাকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ:
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার কাছে হযরত হুসাইন ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আমর ইবনে সা’দ ইবনে মুয়ায রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। তিনি হযরত মাহমূদ ইবনে আমর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সম্মানিত উহুদের জিহাদে যখন কাফির মুশরিকরা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দিচ্ছিল, তখন তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, কে আছেন আমার জন্যে জীবনকে দিয়ে দিবেন? এ কথা শুনে হযরত যিয়াদ ইবনে সাকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। কারো কারো মতে, হযরত যিয়াদ ইবনে সাকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি পাঁচ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। উনারা সকলেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক উনার জন্যে একে একে উনাদের জীবনকে বিলায়ে দিলেন। উনাদের মধ্যে সর্বশেষ ব্যক্তি ছিলেন হযরত যিয়াদ ইবনে সাকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। অন্য বর্ণনায় এসেছে, হযরত আম্মারা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সম্মানিত জিহাদ মুবারক করতে থাকেন, যতক্ষণ না আঘাতের পর আঘাতে জর্জরিত হয়ে এক স্থানে পড়ে যান। এরপর একদল হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা দাঁড়িয়ে যান এবং কাফির মুশরিকদের পিছু ধাওয়া করেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তাদেরকে অনেক দূরে সরিয়ে দেন।
 স্মরণীয় যে, হযরত যিয়াদ ইবনে সাকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
أَدْنُوهُ مِنّي
 অর্থ: “উনাকে আমার কাছে নিয়ে আসুন।” উপস্থিত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা হযরত যিয়াদ ইবনে সাকান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে নিয়ে আসলেন। এরপর তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুদ দারাজাত তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ক্বদম মুবারকে মাথা রেখেই সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, সুবুলুল হুদা ওয়া রাশাদ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলূক)

হযরত কাতাদা ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চোখের পুতলী বের হয়ে যাওয়া:
 হযরত কাতাদা ইবনে নু’মান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে দাঁড়িয়ে আমার চেহারা দুশমনদের দিকে ফিরালাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, আমার চেহারা ক্ষত বিক্ষত হোক, কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুর রহমত তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চেহারা মুবারক অক্ষত ও নিরাপদ থাকুক। কাফির মুশরিকদের শেষ যে তীর আমার চেহারায় এসে বিদ্ধ হয় তাতে আমার চোখের পুতলি এমনভাবে বাইরে চলে এল, যে আমি তা আমার হাতে নিয়ে নিলাম। এ অবস্থাতে আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সামনে যখন উপস্থিত হলাম। তখন তিনি আমার জন্য দোয়া মুবারক করলেন। ‘ইয়া বারী ইলাহী, মহান আল্লাহ পাক! হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি যেভাবে আপনার নবী নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুর রহমত তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র চেহারা মুবারক হিফাযত করেছেন আপনিও সেভাবে উনার চেহারা মুবারককে হিফাযত করুন এবং উনার এ চোখ অপর চোখ থেকে আরো অধিক সুন্দর ও অধিক দীপ্তিময় করে দিন।’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এ মহাসম্মানিত দোয়া মুবারক করার সময় আমার চোখের পুতলি যথাস্থানে পুনরায় বসিয়ে দিলেন। সাথে সাথে তা স্বাভাবিকভাবে চোখের কোটরে বসে গেল, পুরোপুরি সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে গেল। আর এ চোখটি অপর চোখ থেকে আরো বেশি দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (তাবারানী, দালায়িলে আবূ নূয়াইম, সীরতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 হযরত ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। আমার কাছে হযরত আসিম ইবনে আমর ইবনে কাতাদা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত কাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার চোখটি স্বীয় নূরুল মাগফিরাহ তথা মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাত মুবারক দিয়ে স্বস্থানে বসিয়ে দিলেন; যার ফলে উনার এ চোখটি আগের চাইতে অধিক দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ও সুন্দর হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)

হযরত ইয়ামান ও ওয়াক্শ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদের শাহাদতী শান মুবারক গ্রহণ সম্পর্কে:
হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। সম্মানিত উহুদ জিহাদের দিন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের মধ্যে কেউ কেউ দল থেকে আলাদা হয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে দূরে চলে যান। এমন কি অনেকে মুনাক্কা নামক এলাকা পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন, যা পবিত্র মদীনা শরীফ উনার পূর্ব প্রান্তে আওয়ায এলাকার কাছে ছিল।
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন সম্মানিত উহুদ জিহাদের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন, তখন হযরত হুসাইল ইবনে জাবির উরফে ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু, হযরত আবূ হুযাইফা ইবনে ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত ছাবিত ইবনে ওয়াক্শ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে মহিলা ও শিশুদের সাথে গুহায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। উনারা দু’জন অত্যন্ত বৃদ্ধ ছিলেন। উনারা একে অপরকে বললেন, কিসের অপেক্ষা করছেন? মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমাদের দু’জনের কারো বয়স বেশি বাকী নেই। আজ না হয় কাল আমরা ইন্তেকাল করবো। আমরা তরবারি নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দিতে চলে যাচ্ছি না কেন? তাবেই তো আশা করা যাবে মহান আল্লাহ উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভে ধন্য হওয়া। এ কথা বলে উনারা উভয়েই তরবারি নিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে পড়লেন এবং সম্মানিত জিহাদের ময়দানে ঢুকে পড়লেন। উনাদের এ বিষয়টি কেউ কিছুই জানতোনা। হযরত ছাবিত ইবনে ওয়াক্শ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একপর্যায় কাফিরদের আঘাতে সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। আর হযরত হুসাইল ইবনে জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের তরবারি মুবারকের আঘাতে শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন। তখন হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলে উঠলেন, তিনিতো আমার পিতা। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা উনাকে চিনতে পারি নাই। তখন হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের সবাইকে ক্ষমা করুন, তিনি অত্যন্ত দয়াবান। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার দিয়াত তথা রক্তপণ দিতে চাইলেন। কিন্তু হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনার পক্ষ থেকে ক্ষমা করে দিলেন। ফলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনার মর্যাদাকে আরও বৃদ্ধি করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (মুসতাদরিক, মা’রিফাতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, জাওয়ামিউস সীরাত, তারিখুল খ¦মিস, উয়ূনুল আছার, হায়াতুছ ছাহাবা, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি)

হযরত উসাইরিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাহাদতী শান মুবারক সম্পর্কে:
 মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
 عَنْ حَضْرَتْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ قَالَ كَانَ يَقُولُ حَدّثُونِي عَنْ رَجُلٍ دَخَلَ الْجَنّةَ لَمْ يُصَلّ قَطّ، فَإِذَا لَمْ يَعْرِفْهُ النّاسُ سَأَلُوهُ مَنْ هُوَ؟ فَيَقُولُ حَضْرَتْ أُصَيْرِمُ بَنِي عَبْدِ الْأَشْهَلِ عَمْرُو بْنُ ثَابِتِ بْنِ وَقْشٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ.
 অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, তিনি লোকদেরকে জিজ্ঞাস করতেন আচ্ছা, আমাকে এমন একজন লোকের কথা বলুনতো, যিনি জান্নাতে প্রবেশ করলেন অথচ তিনি কোনদিন ছলাত তথা নামায আদায় করেননি। লোকেরা তা বলতে না পারলে, তারা উনাকেই জিজ্ঞাসা করতেন, আপনিই বলুন, তিনি কে? হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলতেন তিনি হলেন, বানূ আব্দুল আশহালের হযরত উসাইরিম আমর ইবনে ছাবিত ইবনে ওয়াক্শ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, মা’রিফাতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, উয়ূনুল আছার ফি ফুয়ূনুল মাগাযী)
 হযরত ইবনে ইসহাক্ব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি হযরত মাহমূদ ইবনে আসাদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, হযরত উসাইরিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার ঘটনা কি ছিল? তিনি বললেন, হযরত উসাইরিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নিজ ক্বওমের সামনে সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনাকে অস্বীকার করতেন। কিন্তু যখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সম্মানিত উহুদ জিহাদ মুবারকের জন্য বের হলেন, তখন হযরত উসাইরিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সম্মানিত দ্বীন ইসলামের প্রতি আগ্রহ জন্মিল এবং তিনি সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন। তারপর তরবারি হাতে নিয়ে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সাথে সম্মানিত জিহাদে শামিল হয়ে গেলেন এবং জিহাদ মুবারক করতে থাকলেন। এমন কি জখম উনাকে কাবু করলো। বানূ আব্দুল আশাহালের লোকেরা যখন সম্মানিত জিহাদের ময়দানে উনাদের শহীদদেরকে খুঁজতে গিয়ে হযরত উসাইরিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দেখতে পেলেন, তখন উনারা বললেন, ইনি যে হযরত উসাইরিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু? তিনি এখানে কি করে এলেন? আমরাতো উনাকে এ বিষয়ে অস্বীকারকারী অবস্থায় ছেড়ে এসেছি, তারপর উনারা উনাকেই জিজ্ঞাসা করলেন, কি হে আমর! এখানে কি করে এলেন? আপনার ক্বওমের প্রতি দরদী হয়ে, না সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে? তিনি জবাব দিলেন, সম্মানিত দ্বীন ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েই আমি মহান আল্লাহ উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছি। তারপর আমি তরবারি নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সম্মানিত জিহাদে শরীক হয়েছি এবং সম্মানিত জিহাদ মুবারক করতে করতে এই অবস্থায় পৌঁছেছি। একথা বলার পরই হযরত উসাইরিম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি উনাদের সামনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন অর্থাৎ সম্মানিত শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করলেন। তারপর উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খিদমত মুবারকে উনার সম্পর্কে আলোচনা মুবারক করলেন। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
إِنَّهُ لَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ
 অর্থ:“তিনি নিঃসন্দেহে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত।” সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদূহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! (মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, মা’রিফাতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, সীরাতুল হালাবিয়্যাহ, সীরাতুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইবনে হিশাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, উয়ূনুল আছার ফি ফুয়ূনুল মাগাযী)

হযরত সা’দ ইবনে রবী’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শাহাদত মুবারক প্রকাশ:
 কুরাইশ কাফির মুশরিকরা যখন সম্মানিত উহুদ জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করলো তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত যায়িদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে নির্দেশ মুবারক দিলেন যে, হযরত সা’দ ইবনে রবী’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি কোথায় কি অবস্থায় রয়েছেন তা অনুসন্ধান করতে। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
 إِنْ رَأَيْتَهُ فَأَقْرِئْهُ مِنِّي السَّلاَمَ، وَقُلْ لَهُ يَقُولُ لَكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَيْفَ تَجِدُكَ؟
 অর্থ: “যদি আপনি (হযরত সা’দ ইবনে রবী’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জীবিত অবস্থায়) উনার সাক্ষাৎ পান তবে উনাকে আমার পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছাবেন এবং উনাকে বলবেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আপনার কাছে জানতে চেয়েছেন আপনি কি অবস্থায় রয়েছেন?”
 হযরত যায়িদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আমি হযরত সা’দ ইবনে রবী’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে খুঁজতে খুঁজতে যখন সন্ধান পেলাম তখন পর্যন্ত উনার জীবন বাতি নিভে যায়নি। তবে জীবনের শেষ মুহূর্তে তিনি উপস্থিত। হযরত সা’দ ইবনে রবী’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার শরীরে তীর তরবারির ৭০ টি আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছিলেন। আমি উনাকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত সালাম মুবারক ও সুওয়ালের কথা শোনালাম। হযরত সা’দ ইবনে রবী’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জবাবে বললেন,
 عَلَى رَسُولِ اللهِ السَّلاَمُ، وَعَلَيْكَ السَّلاَمُ قُلْ لَهُ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَجِدُنِي أَجِدُ رِيحَ الْجَنَّةِ، وَقُلْ لِقَوْمِي الأَنْصَارِ لاَ عُذْرَ لَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَنْ يَخْلُصَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
 অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি সালাম মুবারক এবং আপনাকেও সালাম। আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলবেন, আমি এখন সম্মানিত জান্নাত মুবারক উনার সুঘ্রাণ পেতে শুরু করেছি। আর আমার সম্প্রদায়ের আনছার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ভাইদের বলবেন, যদি উনাদের একজনকেও দেখতে পান (অর্থাৎ উনাদের মধ্যে একজনও যদি জীবত থাকেন) আর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকের আঞ্জাম দেয়া না হয় তাহলে মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে উনাদের কোন ক্ষমা নেই।”
 এ কথা মুবারকগুলো বলার পর পরই তিনি চোখ বন্ধ করলেন, এ জগত থেকে উনার রূহ মুবারক পরজগতে আরোহণ করে গেলেন। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার উপর সন্তুষ্ট থাকুন। (মুসতাদরিকে হাকীম, দালায়িলুন নুবুওওয়াহ, তারিখুল ইসলাম, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 অপর এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে, হযরত সা’দ ইবনে রবী’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত যায়িদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন,
 أَخْبِرْ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِّي فِي الأَمْوَاتِ وَأَقْرِئْهُ السَّلاَمَ، وَقُلْ لَهُ يَقُولُ حَضْرَتْ سَعْدٌ رَضِىَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُ جَزَاكَ اللَّهُ عَنَّا وَعَنْ جَمِيعِ الآمَّةِ خَيْرًا.
 অর্থ: “আপনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সংবাদ পৌঁছিয়ে দিবেন, আমি এখন শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ করছি। উনাকে আমার পক্ষ থেকে সালাম জানাবেন এবং বলবেন, হযরত সা’দ ইবনে রবী’ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেছেন, আপনাকে আমার পক্ষ থেকে এবং সমগ্র কায়িনাতবাসীদের পক্ষ থেকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সর্বোত্তম বিনিময় হাদিয়া করুন। (মুসতাদরিকে হাকীম, হায়াতুছ ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
 হযরত ইবনে আব্দুল বার রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। হযরত উবাই ইবনে কা’ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, হযরত যায়িদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এসে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সম্মানিত খিদমত মুবারকে হযরত সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অবস্থা ও শেষ কথাগুলো পেশ করলেন। তা শুনে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন,
 رَحَمَهُ اللهُ نَصَحَ لِلّهِ وَلِرَسُوْلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيَّا وَمَيِّتَا.
 অর্থ: “মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার উপর সম্মানিত রহমত মুবারক নাযিল করুন, তিনি দুনিয়াতে থাকা কালে এবং শাহাদতী শান মুবারক প্রকাশ কালেও তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শুকরিয়া কামনা করেছেন এবং বিশ্বাস ভাজন থেকেছেন। সুবহানাল্লাহ! সুবহানা রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! সুবহানা মামদুহ হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম! ( সীরতে হালাবিয়্যাহ, শুহাদায়ে উহুদ, উসদুল গাবা, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সীরাতে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)


0 Comments: