৬৩৮ নং- সুওয়াল : তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের মালফূযাতের ৫৩নং পৃষ্ঠার ৮০নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগের বা অতরীক্বত পন্থীদের, তাসাউফের বা সূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়।  উল্লেখিত কিতাবের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য? কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তার সমাধান কামনা করি।

সুওয়াল : তাবলীগ জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াছ ছাহেবের মালফূযাতের ৫৩নং পৃষ্ঠার ৮০নং মলফূযে একথা উল্লেখ আছে যে, প্রচলিত তাবলীগের বা অতরীক্বত পন্থীদের, তাসাউফের বা সূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়।
উল্লেখিত কিতাবের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু শুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য? কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসের দৃষ্টিতে তার সমাধান কামনা করি।

জাওয়াব : উপরোক্ত বক্তব্যের জবাবে বলতে হয় যে, তাসাউফের বা ছুফীদের কিতাবে তাসাউফ সম্পর্কে যে সুক্ষ্ম বর্ণনা রয়েছে, তা প্রচলিত তাবলীগওয়ালা বা অতরীক্বত পন্থীদের পক্ষে বোঝা সত্যিই খুব দুরূহ ব্যাপার। সেজন্য তাদেরকে ইলমে তাসাউফ থেকে ফিরিয়ে রাখা কখনই জায়েয হবেনা। কারণ প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জরুরত আন্দাজ ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করা ফরয।
কাজেই অতরীক্বত পন্থীদের তাসাউফ বা সূফীদের বই পড়া উচিৎ নয়একথা বলার অর্থ হলো- পূর্ণ ইসলামী শিক্ষা থেকে মাহরুম করা ও অন্তর পরিশুদ্ধ করে ইখলাছ অর্জনে বাধা সৃষ্টি করা, যা সম্পূর্ণই শরীয়ত বিরোধী কাজ। কারণ কোন লোক যখন ইলমে তাসাউফ অর্জন বা ক্বালবী যিকির থেকে বিরত থাকে, তখন শয়তান তার সঙ্গী হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
ومن يعش عن ذكر الوحمن نقيض له شيطانا فهوله قرين.
অর্থ : যে ব্যক্তি আমার যিকির থেকে বিরত থাকে, তার জন্যে একটি শয়তান নির্দিষ্ট হয়ে যায়, সে তাকে ওয়াসওয়াসা দিয়ে গোউনারাহ করে দেয়।” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ৩৬)
(তাফসীরে জালালাইন, আবি সউদ, মাদারেক, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, মাযহারী )
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে,
الشيطان جائم على قلب بنى ادم فاذا ذكر الله خنش واذا غغل وسوس.
অর্থ : শয়তান মানুষের অন্তরে বসে, যখন সে যিকির করে, তখন পালিয়ে যায়। আর যখন যিকির থেকে গাফেল থাকে, তখন ওয়াসওয়াসা দেয়।” (বোখারী)
কাজেই প্রমাণিত হলো যে, ইলমে তাসউফ চর্চা থেকে বিরত রাখার অর্থ হলো- লোকদেরকে শয়তানের সঙ্গী করে দেয়া বা গুমরাহীতে নিপতিত করা।
আরো উল্লেখ্য যে, সূফীদের বই পড়া বা ইলমে তাসাউফ থেকে বিরত রাখার মানে হচ্ছে, দ্বীন ইসলামের অর্ধ শিক্ষা ও অর্ধ আমল থেকে বিরত রাখা। অথচ মহান আল্লাহ পাক পরিপূর্ণভাবে দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে দাখিল হতে বলেছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
يا ايها الذين امنوا ادخلوا فى السلم كافة.
অর্থ : হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণরূপে দ্বীন ইসলামে দাখিল হও।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ২০৮)
অন্যত্র মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন
اليوم الكملت لكم دينكم.
অর্থ : আজ আমি তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।” (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ৩)
তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য মহান আল্লাহ পাক উনার বিধানের বিপরীত, যা দ্বীনের মধ্যে তাহরীফের শামিল ও কুফুরীর অন্তর্ভূক্ত।
মূলতঃ তারা চায়, একথা বলে ইলমে তাসাউফকে নিশ্চিহ্ন করতে বা ইলমে তাসাউফের শিক্ষা থেকে সাধারণ লোকদেরকে দূরে রেখে নিজেদের দল ভারী করতে। মূলতঃ এটা কস্মিন কালেও সম্ভব নয। কারণ মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
يريدون ليطفؤا نورالله يافوائهم والله متم نووه ولو كره الكافرون.
অর্থ : তারা চায়, মহান আল্লাহ পাক উনার নূরকে ফূ দিয়ে নিভিয়ে দিতে। মহান আল্লাহ পাক উনার নূরকে পরিপূর্ণ করবেন, যদিও কাফিররা তা পছন্দ করেনা।” (পবিত্র সূরা ছফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ৮)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নূরের ব্যাখ্যায় মুহাক্কিক, মুদাক্কিক ও অনুসরণীয় মুফাসসিরীন-ই-কিরামগণ বলেন, “নূর হচ্ছে- দ্বীন ইসলাম। আর ইসলাম হচ্ছে- ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফের সমন্বয়। (তাফসীরে মাযহারী, ইবণে কাছীর, রুহুল মায়ানী, রুহুল বয়ান, কবীর, ফতহুল ক্বাদীর, তাবারী, আবী সউদ ইত্যাদি)
অতএব, ইলমে তাসাউফ থেকে ফিরিয়ে রাখা অর্ধ দ্বীন থেকে ফিরিয়ে রাখার নামান্তর, যা কুফরীর শামিল।
সুতরাং ইলমে তাসাউফ, যা দ্বীন ইসলাম পরিপূর্ণভাবে অনুসরণ করার মূল ও একমাত্র মাধ্যম, তা কারো পক্ষেই নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয় বরং তা ক্বিয়ামত পর্যন্তই বহাল থাকবে।
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণই শরীয়ত বিরোধী। কাজেই একথা বলা তাদের উচিৎ হয়নি। বরং তাদের উচিৎ হবে একথা বলা যে, যারা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক বা অতরীক্বতপন্থী, তারা যেন কোন হক্কানী পীরানে তরীক্বত, আওলিয়া-ই-কিরাউেনার কাছে বাইয়াত হয়ে তাসাউফ শিক্ষা ও কিতাবাদি পাঠের মাধ্যমে ফরজ পরিমাণ ইলম অর্জন করে। (দুররুল মুখতার, শামী, তাফসীরে মাজহারী, তাফসীরে কবীর, তাফসীরে রুহুল মায়ানী, মকতুবাত শরীফ, এহইয়াউলুমুদ্দীন, কিমিয়ায়ে সায়াদাত, ফতহুর রব্বানী, আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ ইত্যাদি) (অসমাপ্ত)
(পরবর্তী সংখ্যার জন্য অপেক্ষায় থাকুন)


আবা-৩৫
৬৩৭ নং- সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ ওয়ালারা বলে থাকে যে, পীর ছাহেবগণের যেখানে শেষ, তাবলীগ ওয়ালাদের সেখানে শুরু। অতএব পীর সাহেবদের ইছলাহর জন্য দশ চিল্লার দরকার।  তাদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত বা সত্য, বিস্তারিতভাবে জানার বাসনা রাখি।

সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ ওয়ালারা বলে থাকে যে, পীর ছাহেবগণের যেখানে শেষ, তাবলীগ ওয়ালাদের সেখানে শুরু। অতএব পীর সাহেবদের ইছলাহর জন্য দশ চিল্লার দরকার।
তাদের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত বা সত্য, বিস্তারিতভাবে জানার বাসনা রাখি।

জাওয়াব :  একথা সম্পূর্ণ শরীয়ত উনার খিলাফ, যা বলা নিহায়েত অজ্ঞতা, ধৃষ্ঠতাপূর্ণ, বেয়াদবীমূলক, অমার্জনীয় অপরাধ ও কুফরীর শামিল।
যদি কোন ব্যক্তি উপরোক্ত আক্বীদা পোষণ করে, তাহলে সে ঈমান হারা হয়ে কুফরীতে নিপতিত হবে।
কারণ যাঁরা হক্কানী-রব্বানী পীর ছাহেব, উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলীর অন্তর্ভূক্ত। আর ইছলাহ প্রাপ্ত তারা তাদের শায়খ বা পীর ছাহেব-উনার ছোহবত ইখতিয়ার করে অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাছাউফ উভয়টিতেই পারদর্শীতা লাভ করে বা পূর্ণ ইছলাহ প্রাপ্ত হয়ে স্বীয় পীর ছাহেব উনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছ থেকে খিলাফত প্রাপ্ত হন। অতঃপর তারা তাদের শায়খ বা পীর সাহেবের নির্দেশে আম মানুষকে ইছলাহ করার কাজে তথা দ্বীন প্রচারের কাজে নিয়োজিত হন। অতএব তাদের ইছলাহ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য চিল্লার কোনই জরুরত নেই।
মূলতঃ চিল্লার দ্বারা কোন মানুষের পক্ষেই ইছলাহ প্রাপ্ত হওয়া সম্ভব নয়। যাঁরা খাছ, উনাদের তো প্রশ্নই উঠে না। আর যারা আম বা সাধারণ লোক, তারাও চিল্লার মাধ্যমে ইছলাহ প্রাপ্ত হবে, এ কথাটিও সম্পূর্ণই অবান্তর।
সুতরাং যারা বলে যে, পীর সাহেবদের ইছলাহ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য দশ চিল্লার দরকার, সেটা পীর সাহেবগণ বা পীরানে তরীক্বত তথা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের শানে নিহায়েত অবমাননাকর উক্তি। যার দ্বারা উনাদের প্রতি ইহানত করা হয়, যা কুফরীর শামিল।
কেননা উনাদের শানে, উনাদের মর্যাদা সম্পর্কে অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছে। যা থেকে বোঝা যায়, উনারা সর্বোচ্চ স্তরের মর্যাদা ও মর্তবার অধিকারী। যার তুলনায় প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকগণ তিফলে মক্তব বা মক্তবের শিশু ব্যতীত নয়। যেমন হক্কানী আলিম বা আল্লাহ ওয়ালা উনাদের মর্যাদা-মর্তবা সম্পর্কে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
(ক)
الاان اولياء الله لا خوف عليهم ولا هم يحزنون.
অর্থ : সাবধান! যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী বা বন্ধু, উনাদের কোন ভয় ও চিন্তা নেই।” (পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ, ৬২)
(খ)
من عاد لو ليا فقد اذنته بالحرب
অর্থ : যে আমার ওলীর সাথে বেয়াদবী করে, আমি তার বিরুদ্ধে জ্বিহাদ ঘোষণা করি।” (পবিত্র হাদীসে কুদসী শরীফ, বোখারী শরীফ)
(গ)
ان اوليائى تحت قبائى لا يعرفو نهم الا غيرى.
অর্থ : ওলীআল্লাহ উনারা আমার কুদরতের নীচে অবস্থিত, আমি ছাড়া উনাদের কেউ চিনেনা।” (পবিত্র হাদীসে কুদসী শরীফ)
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, পৃথিবীর প্রায় সকল মুহাক্কিক-মুদাক্কিক, মুজতাহিদ ঈমামগণই পীর ছাহেব ছিলেন বা পীর ছাহেবের কাছে বাইয়াত ছিলেন এবং উনারা তাসাউফকেই চুড়ান্ত স্তর বা শেষ স্তর বলে নির্ধারণ করেছেন। যেমন- ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি,  যাঁর শানে শাফিয়ী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেছেন যে,
الفقهاء كل عيال ابى حنيفة (رح) فى الفقه.
অর্থ : সকল ফক্বীহগণ, ইলমের দিক দিয়ে (ফিক্বাহ শাস্ত্রে) ইমাম আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সন্তান তুল্য।” (লাউস সুনান)
সেই ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি পর্যায়ক্রমে ইমাম বাকির আলাইহিস সালাম ও ইমাম জাফর সাদিক আলাইহিস সালাম উনার কাছে বাইয়াত হন। আর বাইয়াত হয়ে ইমাম জাফর সাদিক আলাইহিস সালাম উনার দরবার শরীফে দুবছর থেকে ইলমে তাছাউফের তাকমীলে পৌঁছেন।
এ প্রসঙ্গে ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لولا سنتان لهلك ابو نعمان.
অর্থ : যদি দুবছর না পেতাম, তবে আমি ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি (ইলমে তাছাউফ অর্জন না করার কারণে) ধ্বংস হয়ে যেতাম।” (যদিও তিনি ইলমে ফিক্বাহে পূর্ণ পারদর্শী ছিলেন।) (সাইফুল মুকাল্লেদীন, ইছনা আশারিয়াহ, দুররুল মোখতার, সীরাতে ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ইত্যাদি)
উল্লেখ্য যে, ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, এতবড় ইমাম হওয়া সত্ত্বেও ইলমে তাছাউফ ব্যতীত খালিছ মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হতে পারতেন না বলে নিজেই স্বীকার করেছেন।
অতএব ইমামে আযম হওয়া সত্ত্বেও যদি উনার পক্ষে ইলমে তাসাউফ ব্যতীত ধ্বংস হওয়া থেকে বেঁঁচে থাকা সম্ভব না হয়, তবে সেখানে সাধারণ মানুষের পক্ষে কি করে ইলমে তাসাউফ ব্যতিরেকে ধ্বংস হতে বেঁঁচে থাকা সম্ভব?
আরো উল্লেখ্য যে, হযরত মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশ্ব বিখ্যাত আলেম হওয়া সত্ত্বেও পীর সাহেবগণের ফযীলত সম্পর্কে বলেছেন, “আমি মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি অসংখ্য কিতাবাদি পাঠ করে বিশ্ববিখ্যাত আলিম হওয়া সত্ত্বেও, আমি আমার পীর সাহেব হযরত শামস তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি-উনার কাছে বাইয়াত হওয়া তথা ইলমে তাসাউফ অর্জন করা ব্যতীত তাকমীলে পৌঁছতে পারিনি বা আল্লাহ ওয়ালা হতে পারিনি।” (মসনবী শরীফ)
সুতরাং পীর সাহেবগণের ফযীলত উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা সহজেই অনুধাবন করা যায়। আরো অনুধাবনীয় যে, সর্বশ্রেষ্ঠ আলেম হওয়া সত্ত্বেও ধ্বংস থেকে বেঁচে থাকা বা তাকমীলে পৌঁছা  বা মহান আল্লাহ পাক উনার ওলী হওয়া আদৌ সম্ভব নয়, পীর সাহেবের কাছে বাইয়াত হওয়া ব্যতীত অর্থাৎ ইলমে তাসাউফ অর্জন করা ব্যতীত।
তাহলে প্রচলিত তাবলীগকারীগণ, এক কথায় ইলমে ফিক্বাহ, ইলমে তাসাউফ শুন্য হওয়া সত্ত্বেও অর্থাৎ যতসামান্য শিক্ষা অর্জন করে এ কথা কি করে বলতে পারে যে, পীর সাহেবগণের যেখানে শেষ, তাবলীগ ওয়ালাদের সেখানে শুরু!
হুজ্জাতুল ইসলাম, ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আল-মুনকেযু মিনাদ্দালাল কিতাবে বলেছেন, “সবই অপূর্ণ, একমাত্র পীরানে তরীক্বত তথা আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারাই পূর্ণ।
কুতুবুল আলম, কুতুবুল আক্বতাব, হযরত খাজা বখতিয়ার কাকী আউসী, ছুম্মা দেহলভী, কুদ্দিসা সেররুহুল বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব, যাঁর অনুরূপ বুযুর্গ মহান আল্লাহ পাক উনার যমিনে খুব কমই পয়দা হয়েছেন। যাঁর উছিলায় উনার যামানায় সারা বিশ্বের অসংখ্য জ্বীন-ইনসান মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত-মারিফতের সুধা লাভ করেছেন এবং পৃথিবীর ইতিহাসে যে দুজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়, যাঁরা মায়ের পেট থেকে ত্রিশ পারা পবিত্র কুরআনে হাফিয অবস্থায় যমিনে তাশরীফ এনেছেন, উনাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি স্বীয় প্রনীত দলীলুল আরেফীনকিতাবের নবম মজলিসে সূফী সাহেবদের যে কত বড় ফযীলত রয়েছে, সে সম্পর্কে শায়খ মুহম্মদ আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ঘটনা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন যে, আমার শায়েখ সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেয়াজ, হাবীবুল্লাহ, খাজা মুঈনুদ্দীন চিশতী, সানজিরী, সুম্মা আজমিরী রহমতুল্লাহি আলাইহি, যিনি পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যাঁর উছিলায় আল্লাহ পাক এক কোটিরও বেশী লোককে ঈমান দিয়েছেন। এবং আরো উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর ইতিহাসে যে দুজন বিশিষ্ট ওলীআল্লাহ বিছাল শরীফ গ্রহণ করার পর উনাদের কপাল মুবারকে সোনালী অক্ষরে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল, “হাজা হাবীবুল্লাহ, মাতা ফী হুব্বিল্লাহ।অর্থাৎ ইনি আল্লাহ পাক উনার হাবীব, যিনি আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে বিছালা শরীফ গ্রহণ করেছেন। তিনি বর্ণনা করেন, একবার আমার শায়খ হযরত খাজায়ে খাজেগাঁ হযরত ওসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি, খাজা আওহাদুদ্দীন কিরমানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ও আমি যিয়ারত ও সফরে বের হয়ে সফর করতে করতে পর্যায়ক্রমে মদীনা শরীফ ও তার আশ-পাশ এলাকা যিয়ারত করে দামেশকে গিয়ে পৌঁছি। সেখানে বার হাজার হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের রওযা শরীফ যিয়ারতের জন্য কয়েকদিন অবস্থান করি।
একদিন দামেশকের এক মসজিদ যেখানে হযরত খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি নামে একজন বিশিষ্ট কামিল বুযুর্গ ব্যক্তি অবস্থান করতেন, সেখানে উনার মজলিশে হাজির হলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি নছীহত করছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন যে, ক্বিয়ামতের দিন সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণ হতে বুযুর্গগণও পর্যন্ত অর্থাৎ আলিম, দরবেশ ও বুযুর্গগণ সকলেই ফায়দা হাছিল করবেন। এককথায় হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ব্যতীত অন্য সকলেই সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণ থেকে ফায়দা হাছিল করবেন।
একথা বলার পর হযরত খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে এক ব্যক্তি বিতর্কে লিপ্ত হলো। সে বললো, আপনার বক্তব্যের পিছনে কোন দলীল আছে কি? অর্থাৎ এটা কোন কিতাবে আছে? উত্তরে খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, কিতাবের নামটা স্মরণ করতে পারছিনা। লোকটি বললো, কিতাবে লিখা না দেখানো পর্যন্ত বিশ্বাস করবোনা। খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি যিনি মুস্তাজাবু দ্দাওয়াত (যার দোয়া কবুল করা হয়) ছিলেন। তিনি স্বীয় মস্তক আকাশের দিকে উত্তোলন করে বললেন, কিতাবের নাম আমার মনে নেই, ‘ইয়া বারে ইলাহি, ভুলে যাওয়া কিতাবটি দেখিয়ে দিন।তৎক্ষণাৎ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক তিনি হুকুম দিলেন, যে কিতাবে ঐ কথা লিখা আছে, সেটা নিয়ে দেখাও। হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা ঐ কিতাব খুলে যেখানে ঐ কথা লিখা ছিল বের করে ঐ লোককে দেখিয়ে দিলেন, যে লোকটি খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছিল। তখন সে ব্যক্তি লজ্জিত হয়ে খাজা আরিফ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কদম মুবারকে পড়ে গেল এবং উনার নিকট মুরীদ হলো।
উপরোক্ত ঘটনায় প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ পাক উনার যমিনের উপর যাঁরা সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বত, উনাদের কি বর্ণনাতীত ফযীলত রয়েছে। আবার কেবল যমিনের উপরই নয় বরং কবরে, হাশরে এবং ক্বিয়ামতের ময়দানেও সূফীয়ানে কিরামগণের ফযীলত বহাল থাকবে।
এ প্রসঙ্গে সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজে বর্ণনা করেন, “আমার এক প্রতিবেশী পীর ভাই, তরীক্বার আইন-কানুন মেনে চলতো না, হঠাৎ মারা গেল। নিয়ম অনুযায়ী তাকে কাফন-দাফন করে প্রত্যেকে যে যার কাজে চলে গেল। কিন্তু কৌতুহল বশতঃ আমি কবরের পাশেই দুনিয়া হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে খানিকক্ষণ বসে রইলাম। এমন সময় দুজন হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সলাম উনারা এসে কবরে অবতরণ করলো, দেখেই বুঝতে পারলাম উনারা আযাবের হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম। কবরে নেমেই উনারা আমার পীর ভাইকে শাস্তি প্রদানে উদ্যত হলো। এমন সময় আমার পীর ও মুর্শিদ খাঁজা উসমান হারুনী কুদ্দেসু সিররুহুল আজীজ হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে বললেন, “এ লোককে শাস্তি প্রদান করতে পারবে না, কারণ এ আমার মুরীদ।হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধুর সম্মানার্থে চলে গেলেন, কিন্তু একটু পরেই ফিরে এসে বললো, “হুযূর এ লোক আপনার মুরীদ, একথা সত্য কিন্তু সে আপনার তরীক্বার কাজ হতে বিরত ছিলো।হযরত উসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, “তার কাজ যাই হোক, সে তার জাতকে (অস্তিত্ব) আমার নিকট সমর্পণ করায় তার কাজ আমার কাজের সংগে সংযুক্ত হয়ে গেছে। অতএব, তার রক্ষণাবেক্ষণ আমার কর্তব্য।হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উনার বক্তব্য পেশ করার সাথে সাথেই হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি মহান আল্লাহ তায়ালা উনার হুকুম হলো, “আপনারা চলে আসুন, তাকে শাস্তি দিবেননা। আমি আমার বন্ধুর সম্মানে তাকে ক্ষমা করে দিলাম।” (আনিসুল আরওয়াহ)
ক্বিয়ামতের দিন সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণকে মহান আল্লাহ পাক যে বর্ণনাতীত ফযীলত দান করবেন, সে প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কুতুবুল আলম, কুতুবুল আক্বতাব, হযরত বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দলীলুল আরেফীনকিতাবে তদীয় পীর সাহেব, সুলতানুল হিন্দ, খাজা গরীবে নেওয়াজ, হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন। আর ইসরারুল আওলিয়া নামক কিতাবে বর্ণনা করা হয়েছে, শাইখুল ইসলাম, ইমামুল আইম্মা, হযরত ফরীদ উদ্দীন মসউদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি তদীয় শায়খ, কুতুবুল আলম, কুতুবুল আফতাব, হযরত বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে উল্লেখ করেন, “ক্বিয়ামতের দিন সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণকে কবর থেকে উঠানো হবে। এরপর আল্লাহ পাক সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণকে আহবান করবেন। তখন উনাদের প্রত্যেকেই কম্বল কাঁধে নিয়ে উপস্থিত হবেন এবং প্রত্যেক কম্বলে কম-বেশী একলাখ সুতা বা তার লাগানো থাকবে। প্রত্যেক সুতা বা তারে কম-বেশী একলাখ গিঁট থাকবে। তখন উনাদের মুরীদগণ, পুত্র-কন্যা, শিশু-বাচ্চা সমস্ত বংশধর সেই সুতা বা তার ধরে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত না হাশরের কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি না পাবে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা উনাদের পুলছিরাতে পৌঁছাবেন। অতঃপর সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণের সুতা বা তার ধরে থাকার বরকতে শায়েখের সাথে পুলছিরাতের ত্রিশ হাজার বছরের পথ চোখের পলকে পার হয়ে বেহেশতে পৌঁছে তাতে বিনা দ্বিধায় প্রবেশ করবে। কোথাও কোন বাঁধার সম্মুখীন হবেনা।” (সুবহানাল্লাহ)
আরো উল্লেখ্য যে, সূফীয়ানে কিরাম বা পীরানে তরীক্বতগণের মুরীদ-মুতাক্বিদ, মুহিব্বীনগণ সকলেই পুলছিরাত পার হয়ে বেহেশতে প্রবেশ না করা পর্যন্ত তাদের শায়খ বা পীর সাহেব পর্যায়ক্রমে হাশরের ময়দানে এসে উচ্চস্বরে বলতে থাকবেন, “আমার মুহেব্বীনগণ কোথায়? তোমরা আমার কম্বলের তার বা সুতা ধরে বেহেশতে মহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট চলে যাও।” (সুবহানাল্লাহ)
কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত ধৃষ্টতাপূর্ণ, কুফরী মূলক কথা, যা সকল সূফীয়ানে কিরাম, ইমাম-মুজতাহিদ, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং উলামায়ে মুহাক্কিক ও মুদাক্কিকগণের কথার সম্পূর্ণ খিলাফ, তথা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার খিলাফ, যা থেকে পরহেজ করা বা বিরত থাকা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের ও অন্য সকলের জন্যই ওয়াজিব ও ফরজের অন্তর্ভূক্ত।
আবার পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতে কেবল যৎসামান্য ইসলামী শিক্ষা দেয়া হয়। অথচ যাঁরা পীরানে তরীক্বত, উনারা ইসলামের প্রায় পূর্ণ শিক্ষাই গ্রহণ করে তাকমীল বা পুর্ণতায় পৌঁছে থাকেন।
আবা-৩৫

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ-  



৬৩৬ নং- সুওয়াল : মুহম্মদ মুযাম্মিলুল হক লিখিত- “তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে ১৩ দফা” নামক কিতাবের ১৪ পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, “প্রচলিত তাবলীগ হচ্ছে নবীওয়ালা কাজ।”  এ ব্যাপারে আমার প্রশ্ন হলো, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বাইরে যারা দ্বীনের কাজ করছেন, তাদেরগুলো কি নবীওয়ালা কাজ নয়? কুরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল সাপেক্ষে ইহার ফায়সালা কামনা করি

সুওয়াল : মুহম্মদ মুযাম্মিলুল হক লিখিত- তাবলীগ জামায়াত প্রসঙ্গে ১৩ দফানামক কিতাবের ১৪ পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, “প্রচলিত তাবলীগ হচ্ছে নবীওয়ালা কাজ।
এ ব্যাপারে আমার প্রশ্ন হলো, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বাইরে যারা দ্বীনের কাজ করছেন, তাদেরগুলো কি নবীওয়ালা কাজ নয়? কুরআন-সুন্নাহর অকাট্য দলীল সাপেক্ষে ইহার ফায়সালা কামনা করি

জাওয়াব : প্রচলিত তাবলীগকে তারা যেজন্য নবীওয়ালা কাজ বলতে চায়, সেটা হলো- তারা মনে করে যে, হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনারা যেভাবে দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দিয়েছেন, তারাও বুঝি সেভাবেই দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দেয়। কিন্তু হাক্বীক্বতে এ দুয়ের মধ্যে আকাশ পাতাল ফারাক (প্রার্থক্য)। কারণ নবী আলাইহিস সালামগণ সকলেই মারিফাতে পূর্ণ হয়ে দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দিয়েছেন এবং তা দেয়া হয়েছে কাফিরদেকে। সে কারণে বলা হয় যে, সকল হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের তাসাউফ এক, কিন্তু শরীয়ত আলাদা। কিন্তু প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের প্রায় সবাই একেবারেই তাসাউফ শুন্য হয়ে তাদের ছয় উছূল ভিত্তিক দাওয়াত দেয়। যে দাওয়াতটা কিনা মুসলমানদেরই মুখ্যতঃ দেয়া হয়।
কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত যা করে, তা মুসলমানকে সাধারণ তালীম-তালক্বীন দেয়া ব্যতীত কিছুই নয়।
প্রসঙ্গক্রমে এখানে আরো কথা এসে যায়, সেটা হচ্ছে এই যে, মাদ্রাসা-মক্তবে কিতাবী দর্স ও তালীম দেয়া, মসজিদে, জনসমাবেশে ওয়াজ-নছীহত করা, দ্বীনী ইলমের জন্য কিতাব প্রনয়ণ করা, সর্বোপরি, পীরানে তরীক্বত, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের খানকা শরীফে ও দরগায় এই ইলমে তাসাউফ ও ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা দেয়া কি তাহলে নবীওয়ালা কাজ নয়? তবে কি ইহা শয়তানওয়ালা কাজ? (নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক)
যদি কোন ব্যক্তি উপরোক্ত আক্বীদা পোষণ করে, তাহলে সে ঈমান হারা হয়ে কুফরীতে নিপতিত হবে।
উল্লেখ্য যে, যদিও প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা সুরতান নবীওয়ালা কাজ করে বলে দাবী করে, কিন্তু হাক্বীক্বতান তারা নবীওয়ালা কাজ করেনা। কারণ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
وان العلماء ورثة الانبياء وان الانبياء لم يورثوا دينارا ولا درهما وانما ورئراالعلم فمن اخذه اخذ بحظ وافر.
অর্থ : নিশ্চয়ই আলিমগণ নবী আলাইহিস সালামগণের ওয়ারিছ এবং নিশ্চয়ই নবী আলাইহিস সালামগণ কোন দিনার-দিরহাম রেখে যাননি বরং উনারা ইলমে দ্বীন রেখে গিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করলো, সে পূর্ণ অংশ (বিরাট সফলতা) লাভ করলো। (আহমদ, তিরমীযী)
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন,
العلم علمان علم فى القلب فذاك علم النافع وعلم على اللسان فذالك حجة الله عزوجل على ابن ادم.
অর্থ : ইলম দুপ্রকার, একটি হচ্ছে- ক্বালবী ইলম (ইলমে তাসাউফ) -যা উপকারী ইলম। অপরটি হচ্ছে- জবানী ইলম (ইলমে ফিক্বাহ) -যা মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে বান্দার প্রতি  দলীল স্বরূপ।” (দারেমী শরীফ, মিশকাত শরীফ, মিরকাত শরীফ, আশয়াতুল লোমায়াত, লোময়াত)
মিশকাত শরীফ উনার শারেহ, হযরত মোল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মিরকাত শরীফে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, মালিকী মাযহাবের ইমাম, হযরত ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন,     
من تفقه ولم يتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقه فقد تزندق ومن جمع بيتهما فقد تحقق.
অর্থ : যে ব্যক্তি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করলো, কিন্তু ইলমে তাসাউফ শিক্ষা করলো না, সে ব্যক্তি ফাসিকের অন্তর্ভূক্ত। আর যে ব্যক্তি তাসাউফ করে অর্থাৎ মারিফাত চর্চা করে অথচ ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করেনা অর্থাৎ শরীয়ত মানেনা বা অস্বীকার করে, সে কাফিরের অন্তর্ভূক্ত। আর যে উভয়টাই শিক্ষা করলো, সেই মুহাক্কিক অর্থাৎ সে ব্যক্তিই নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ বা হাক্বীক্বী আলিম।
উল্লেখ্য যে, যিনি ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফ হাছিল করেছেন, তিনিই হচ্ছেন- নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ বা নায়েবে নবী। যাঁরা নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ওয়ারিছ বা নায়িবে নবী, উনাদের পক্ষেই একমাত্র নবীওয়ালা কাজ পুর্ণভাবে করা সম্ভব। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উছূলের মধ্যে তাসাউফের কোন শিক্ষাই নেই। শুধু ইলমে ফিক্বাহর শিক্ষা যতসামান্যই রয়েছে, তাহলে কি করে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের পক্ষে হাক্বীক্বতান নবীওয়ালা কাজ করে বলে দাবী করা সম্ভব?
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, তাদের উপরোক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ মনগড়া, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর, যার থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
আবা-৩৫

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ-