গবেষণা
কেন্দ্রমুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
[সমস্ত
প্রশংসা মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন উনার এবং
অসংখ্য দরূদ ও সালাম মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্নাবিয়্যীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি। মহান আল্লাহ পাক উনার অশেষ রহমতে আমাদের গবেষণা কেন্দ্র, “মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ”-এর ফতওয়া বিভাগের তরফ থেকে, বহুল প্রচারিত, হক্বের অতন্দ্র প্রহরী, বাতিলের
আতঙ্ক ও আহ্লে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের একমাত্র দলীল ভিত্তিক মুখপত্র “মাসিক আল বাইয়্যিনাত” পত্রিকায় যথাক্রমে টুপির ফতওয়া, অঙ্গুলী চুম্বনের বিধান, নিয়ত করে মাজার শরীফ জিয়ারত করা, ছবি ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় হারাম হওয়ার ফতওয়া, জুমুয়ার
নামাজ ফরজে আইন ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ফতওয়া, মহিলাদের
মসজিদে গিয়ে জামায়াতে নামাজ পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী সম্পর্কে ফতওয়া, কদমবুছী ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তাহাজ্জুদ
নামাজ জামায়াতে পড়া মাকরূহ্ তাহরীমী ও বিদ্য়াতে সাইয়্যিয়াহ্ এবং তার সংশ্লিষ্ট
বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, ফরজ নামাজের পর মুনাজাত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া,
ইন্জেকশন নেওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয়
সম্পর্কে ফতওয়া,
তারাবীহ্-এর নামাজে বা অন্যান্য সময় পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করে উজরত বা
পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়িয ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া, তারাবীহ্
নামাজ বিশ রাকায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া এবং দাড়ি ও গোঁফের শরয়ী আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে
ফতওয়া প্রকাশ করার পর চতুর্দশ (১৪তম) ফতওয়া হিসেবে (৩৫তম সংখ্যা থেকে) প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া প্রকাশ করে আসতে পারায় মহান আল্লাহ পাক-এর দরবারে
অসংখ্য শুকরিয়া।]
[বিঃদ্রঃ
পাঠকগণের সুবিধার্থে ফতওয়ার ভুমিকার কিছু অংশ পুণরায় প্রকাশ করা হলো]
“প্রচলিত তাবলীগ
জামায়াত সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার কারণ”
মহান
আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
كنتم
خير امة اخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله.
অর্থ :“তোমরা (নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত হওয়ার কারণে) শ্রেষ্ঠ উম্মত, তোমাদেরকে মানুষের মধ্য হতে বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের
নিষেধ করবে এবং মহান আল্লাহ
পাক উনার প্রতি
ঈমান আনবে।”
(পবিত্র সূরা আল ইমরান শরীফ, পবিত্র
আয়াত শরীফ ১১০)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তাবলীগ তথা সৎ
কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের সাথে সাথে আরো একটি শর্ত যুক্ত করে দিয়েছেন। সেটা
হলো- تومنونঅর্থাৎ মহান আল্লাহ
পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এবং দ্বীন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে সঠিক ও পরিশুদ্ধ ঈমান আনা। অর্থাৎ
তৎসম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষণ করা। তবেই সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের
মাধ্যমে পরিপূর্ণ ফায়দা বা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি লাভ করা সম্ভব হবে।
স্মরণযোগ্য
যে, বর্তমান প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের লোকদের বেশকিছু লেখনী, বক্তব্য,
বিবৃতি, আমল ও আক্বীদা ইত্যাদি সম্পর্কে
সত্যান্বেষী সমঝদার মুসলমানগণের মনে নানাবিধ সংশয় ও প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। যার
ফলশ্রুতিতে “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার” পাঠক, গ্রাহক, শুভাকাঙ্খী ও শুভানুধ্যায়ীদের পক্ষ হতে “মাসিক আল
বাইয়্যিনাতের”
আকর্ষণীয় ও নির্ভরযোগ্য বিভাগ “সুওয়াল-জাওয়াব” বিভাগে,
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে
প্রচারিত বেশকিছু আপত্তিজনক আক্বীদাসমূহ উল্লেখ করে অসংখ্য চিঠি আসে। কারণ মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আ’লামীন পবিত্র কালামে
পাক উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
فاسئلوا اهلالذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থ :“যদি তোমরা না জান, তবে আহলে যিকির
বা হক্কানী আলেমগণের নিকট জিজ্ঞাসা করো।” (পবিত্র সূরা নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩ ও পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ, আয়াত
শরীফ ৭)
অর্থাৎ
তোমরা যারা জাননা বা দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান রাখনা, তারা
যাঁরা জানেন,
উনাদের নিকট
জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।
অতএব, যাঁরা জানেন, উনাদের পবিত্র
দায়িত্ব হলো- প্রশ্নকারীর প্রশ্নের শরীয়তসম্মত জাওয়াব প্রদান করা। কারণ যারা জানা
থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নকারীর প্রশ্নের জবাব প্রদান হতে বিরত থাকবে, তাদের জন্যে কঠিন শাস্তির কথা হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে। যেমন সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
من
سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থ :“যাকে দ্বীন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন
করা হয়, জানা থাকা সত্ত্বেও যদি সে তা
গোপন করে অর্থাৎ জবাব না দেয়, তবে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের
বেড়ী পরিয়ে দেয়া হবে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে
মাযা,
আহ্মদ, মেশকাত, বজলুল
মাজহুদ,
উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীক,
আশয়াতুল লুময়াত, মোজাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার মধ্যে বলা হয়েছে, “তার জ্বিহ্বা আগুনের কেঁচি দ্বারা কেটে দেয়া
হবে।”
কাজেই
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেযে ভয়াবহ শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তার থেকে বাঁচার জন্যে অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূলনূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করার লক্ষ্যে “মাসিক আল
বাইয়্যিনাত পত্রিকার” অগণিত পাঠক, গ্রাহক ও সত্যান্বেষী সমঝদার
মুসলমানগণের প্রেরিত সুওয়ালসমূহে উল্লেখকৃত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর
আক্বীদাসমূহের শরীয়তসম্মত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও
ক্বিয়াস উনাদের
দৃষ্টিতে জাওয়াব বা ফতওয়া দেয়া হলো।
প্রকৃত বন্ধুর পরিচয়
এখানে
বিশেষভাবে স্মরণীয় এই যে, মূলত আমাদের সাথে কারো যেরূপ
বন্ধুত্ব নেই,
তদ্রুপ নেই বিদ্বেষ। অর্থাৎ যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তসম্মত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই। আর যাদের আক্বীদা ও আমল শরীয়তের
খেলাফ বা বিপরীত, তাদের সাথে আমাদের কোন প্রকার বন্ধুত্ব নেই। কারণ বন্ধুত্ব
বা বিদ্বেষ একমাত্র আল্লাহ পাক-এর জন্যেই হতে হবে।
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে
যে,
من
احب لله وابغض لله واعطى لله ومنع لله ف৬قد استكمل الايمان.
অর্থ :“যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার (সন্তুষ্টি লাভের) জন্যে মুহব্বত
বা বন্ধুত্ব করে, বিদ্বেষ পোষণ করে, আদেশ করে, নিষেধ
করে, তার ঈমান পরিপূর্ণ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বজলুল মাজহুদ, উরফুশ্শাজী, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াজী, মায়ারেফুস্ সুনান, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্
ত্বীবী,
তালীক, মোজাহেরে হক্ব, লুময়াত,
মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
বস্তুতঃ
মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকার প্রতিটি লেখা, বক্তব্য, সুওয়াল-জাওয়াব, ফতওয়া, প্রতিবাদ, প্রতিবেদন, মতামত ইত্যাদি সবই উপরোক্ত হাদীছ শরীফের মূলনীতির ভিত্তিতেই প্রকাশিত হয়ে থাকে।
কাজেই “মাসিক আল বাইয়্যিনাত পত্রিকায়” প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক ‘তাবলীগ জামায়াত’ সম্পর্কে ফতওয়া দেয়ার মূল লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হলো- “প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে” উল্লেখকৃত
আক্বীদাসমূহের সঠিক, বিশুদ্ধ ও শরীয়তসম্মত ফায়সালা প্রদান এবং প্রচলিত ৬ (ছয়)
উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াতের দাওয়াতের কাজে যারা মশগুল রয়েছে, তাদের মধ্যে যারা উক্ত আক্বীদাসমূহ জেনে হোক বা না জেনেই হোক বিশ্বাস করে এবং
তা জনসাধারণের নিকট প্রচার করে, নিজেদের ও জনসাধারণের ঈমান ও
আমলের বিরাট ক্ষতি করছে, তাদের সে ঈমান ও আমলের হিফাযত করা
ও সত্যান্বেষী বা হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণের নিকট সত্য বা হক্ব বিষয়টি ফুটিয়ে
তোলা। যার মাধ্যমে প্রত্যেকেই তাদের ইহ্লৌকিক ও পারলৌকিক এত্মিনান ও নাযাত লাভ
করতে পারে।
মূলতঃ
মানুষ মাত্রই ভুল হওয়া স্বাভাবিক, তাই এক মু’মিন অপর মু’মিনের ভুল ধরিয়ে দেয়া ঈমানী আলামত। কারণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
المؤمن مرأة المؤمن.
অর্থ :“এক মু’মিন অপর
মু’মিনের জন্যে আয়না স্বরূপ।” (আবূ দাউদ শরীফ, বজলুল মাজহুদ)
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, আমীরুল মু’মিনীন,
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি স্বীয় খিলাফতকালে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রীতিনীতি প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে সমবেত হযরত আনছার এবং মুহাজির ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “যদি আমি দ্বীনের হুকুম-আহকামকে সহজতর করার উদ্দেশ্যে শরীয়ত
বিরোধী কোন আদেশ দান করি, তবে তোমরা কি করবে?” উপস্থিত লোকেরা নীরব রইল। হযরত উমর ইব্নুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম দ্বিতীয় এবং তৃতীয়বার একই কথার পূণরাবৃত্তি করলেন। তখন হযরত বশীর ইবনে সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুতিনি বললেন, “যদি আপনি
এরূপ করেন,
তবে আমরা আপনাকে এরূপ সোজা করবো, যেরূপ
তীরকে সোজা করা হয়।” এ কথা শুনে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বললেন,
“তোমরাই আমার প্রকৃত বন্ধু, দ্বীনের
কাজে সাহায্যকারী।” (আওয়ারেফুল মা’আরেফ)
সুতরাং
উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনাদের আলোকে
অসংখ্য,
অগণিত পাঠকগণের পূণঃ পূণঃ অনুরোধের প্রেক্ষিতে মুসলমানদের
আক্বীদা ও আমল হিফাযতের লক্ষে বর্তমানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর আক্বীদা
ও বক্তব্যসমূহের শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো। যাতে করে সত্যান্বেষী, সমঝদার মুসলমান ও প্রচলিত তাবলীগকারীগণ সে আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের সঠিক শরয়ী
ফায়সালা অবগত হন, যার ফলশ্রুতিতে সকলেই উক্ত আপত্তিকর আক্বীদা ও বক্তব্যসমূহ
থেকে নিজেদের ঈমান ও আমলের হিফাযত করে সঠিকভাবে দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও খেদমত করে
আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে
মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
খাছ সন্তুষ্টি হাছিল করতে পারেন।
এখানে
উল্লেখ্য যে,
দ্বীনের তাবলীগ যা খাছ ও আম তা শত-সহস্র লোক করবে এবং
অবশ্যই করতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে আক্বীদা শুদ্ধ রেখে শরীয়ত সম্মতভাবে করতে হবে।
কারণ আক্বীদা শুদ্ধ না হলে দ্বীনী কোন খিদমতই মহান আল্লাহপাক উনার দরবারে কবুলযোগ্য নয়। উপরন্ত
কুফরী আক্বীদা থাকার কারণে তাকে হতে হবে চির জাহান্নামী।
মহান
আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে বিশুদ্ধ আক্বীদার সাথে দ্বীনী তাবলীগ (যা আম ও খাছ) করার
তৌফিক দান করুন। (আমীন)
সুওয়াল : আমরা শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল
ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত সম্পর্কে সঠিক তত্ত্ব জানতে আগ্রহী। কারণ আমরা অনেকদিন
যাবত তাবলীগ জামায়াতের সাথে জড়িত ছিলাম এবং এখনো তাবলীগ জামায়াতের অনেক লোকের সাথে
আমাদের মেলামেশা আছে। তাতে তাদের বেশ কিছু বক্তব্য বা আক্বীদা, যা আমরা অতীতেও জেনেছি এবং এখনো তা অবহিত হচ্ছি। তার মধ্যে অনেকগুলো তাদের
লেখা কিতাবেও উল্লেখ আছে। সে সমস্ত আক্বীদাসমূহ আমাদের মনে হয় ইসলামের দৃষ্টিতে
আপত্তিকর। সেগুলো আমরা নিম্নে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করলাম –
(৪০) হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের
আক্বীদা হলো যে,
দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস
সালাম উনাকে বিপদে ফেলেছিলেন এবং তিনি সেখানে নিজের অপরাধ স্বীকার করে চল্লিশ দিন
কাঁদা-কাটার পর মহান আল্লাহ
পাক উনার অপরাধ
ক্ষমা করেন। এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, “দাওয়াত
বন্ধ করার কারণে, আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে অবশ্য গযবে
ফেলিলেন .......।” “....... হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম
মাছের পেটে ৪০ দিন আবদ্ধ থাকিয়া নিজ ক্রটি স্বীকার করিয়া তওবা .... করার কারণে
বিপদ হইতে উদ্ধার পাইলেন।” (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব
লেখক ইসাইল হোসেন দেওবন্দী পৃঃ৬২ ও ৮৯)
(৪১) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা আরো বলে থাকে যে, হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গারে হেরায় চিল্লা দেয়ার উসীলাই কুরআন ও
নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে বিবৃত হয়েছে- “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪০ দিন পর্যন্ত “গারে হেরা”
পর্বতে থাকিয়া আল্লাহ ধ্যান ও যেকেরে চিল্লা দিলেন, যাহার ফলে তিনিও কুরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হইলেন। (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু
দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৯, লেখক ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী)
(৪২) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ
জামায়াতের অধিকাংশ লোকের আক্বীদা হলো যে, দীর্ঘদিন পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ
করে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন। যেমন
তাদের কিতাবে লিখিত হয়েছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম.... দীর্ঘকাল পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে প্রথমে ঈমানকে পরিপোক্ত করিয়াছেন
......। (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু
দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৭০ লেখক- ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী)
(৪৩) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যে, উম্মতে
মুহম্মদীর কারামত আর পূর্ববর্তী নবীদের মো’যেযা
সমান কথা। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে লিখিত রয়েছে যে, “পূর্বেকার
নবীদের মো’যেযা আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের কারামত একই
সমান।”
(মালফুযাতে শায়খুল হাদীছ পৃষ্ঠা-৩৬, মূল-
মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী, অনুবাদক- আঃ জলীল)
(৪৪) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে থাকে যে, হযরত ছাহাবায়ে
কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দীর্ঘকাল পর্যন্ত তাবলীগ করেই ঈমানকে পরিপোক্ত
করেছেন। তাই ঈমান পরিপোক্ত ও ছাহাবায়ে কিরামদের মত কাজ করতে হলে প্রচলিত তাবলীগ
করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তদের বিশিষ্ট আমীর, মাওলানা ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী
লিখিত “তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত
আছে যে,
“হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ঈমান
দীর্ঘকাল তাবলীগ করার কারণেই পরিপোক্ত বা মজবুত হয়েছে। তাই যার ঈমানের দাওয়াতের আমল
নাই, তার ঈমান থাকিতে পারেনা।
(৪৫) প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা ক্ষেত্র বিশেষে হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু ভুল ত্রুটি করেছেন একথা প্রচার করে থাকে। যা তাদের আমীর, মুরুব্বী এমনকি হযরতজীদের বয়ানে শোনা যায় ও লেখনীতে পাওয়া যায়। যেমন- “হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান” নামক কিতাবের ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠার
বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, “কিছু সাহাবী ওহুদ যুদ্ধে ভুলের
স্বীকার হয়ে চীজ-আসবাব (গণীমতের মাল)-এর দিকে দৃষ্টি দিয়ে, গিরিপথ
থেকে সরে এসে রাসূলের নির্দেশ অমান্য করায় ওহুদ যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে.....।” অর্থাৎ কিছু সাহাবী অর্থলোভী ছিলেন, যার জন্যে ওহুদ যুদ্ধে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ অমান্য করেন।
উপরোক্ত
সুওয়ালসমূহের আলোকে এখন আমরা জানতে চাই, প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত
বক্তব্য বা আক্বীদাসমূহ শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু ঠিক? এবং তা
শরীয়তের দৃষ্টিতে কতটুকু প্রয়োজনীয় ও কোন স্তরের আমলের অন্তর্ভূক্ত? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের দৃষ্টিতে জাওয়াব দিয়ে ঈমান ও আমল হিফাযত করণে সাহায্য করবেন।
জাওয়াব : (আপনাদের তরফ থেকে মাসিক আল বাইয়্যিনাত
পত্রিকার সুওয়াল-জাওয়াব বিভাগে প্রচলিত ৬ (ছয়) উছূল ভিত্তিক তাবলীগ জামায়াত
প্রসঙ্গে বিভিন্ন সুওয়ালসহ প্রায় শতাধিক (শত শত) চিঠি এসে পৌঁছেছে। তার মধ্যে
যেসব সুওয়ালগুলি মানুষের ঈমান ও আমলের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত এবং যেগুলির জবাব
না দিলেই নয়,
সেরূপ প্রায় অর্ধ শতাধিক সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। তার মধ্যে গত (৩৫ ও ৩৬তম) সংখ্যা দু’টিতে (৭+৩২) = ৩৯টি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হয়েছিল। বর্তমান (৩৭তম) সংখ্যায় ৬টি সুওয়ালের জাওয়াব দেয়া হলো। বাকীগুলোর জাওয়াব
পর্যায়ক্রমে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।)
আপনাদের
বর্ণিত সুওয়াল মোতাবেক যদি প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হয়ে থাকে, তাহলে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবশ্যই আপত্তিজনক, যা
গোমরাহীমূলক,
বিভ্রান্তিকর ও জেহালতপূর্ণ এবং তারমধ্যে কোন কোনটিতে
কুফরীমূলক বক্তব্যও রয়েছে।
তবে
আপনারা যেহেতু দলীল ভিত্তিক জাওয়াব চেয়েছেন, তাই আমরা
উপরোক্ত প্রত্যেকটি প্রশ্নেরই শরীয়তসম্মত তথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনাদের ভিত্তিতে জাওয়াব দিব। (ইনশাআল্লাহ)
কারণ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামে পাক উনার মধ্যে বলেন,
فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون.
অর্থ :“তোমরা যারা জাননা, যারা জানেন,
তাদের কাছ থেকে জেনে নাও।” (পবিত্র সূরা
নহল শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩)
আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে
মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
من
سئل عن علم علمه ثم كتمه الجم يوم القيامة بلجام من النار.
অর্থ :“যাকে ইলমের বিষয় সর্ম্পকে কোন
প্রশ্ন করা হয়,
আর সে জানা থাকা সত্ত্বেও তা চুপিয়ে রাখে, তাহলে ক্বিয়ামতের দিন তার গলায় আগুনের বেড়ী দেয়া হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী,
ইবনে মাযাহ্, আহমদ, মেশকাত, বজলুল মাজহুদ, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারেফুস্
সুনান,
মেরকাত, উরফুশ্শাজী, তালীক,
শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্, লুময়াত)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, “তার জিব কেটে দেয়া হবে ইত্যাদি।”
তাই
নিম্নে পর্যায়ক্রমে আপনাদের প্রেরিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের আপত্তিকর বক্তব্য বা
আক্বীদাসমূহের পবিত্র কুরআন
শরীফ,
পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও
ক্বিয়াস উনাদের অকাট্য
দলীলসমূহের ভিত্তিতে শরয়ী ফায়সালা প্রদান করা হলো-
তাবলীগের অর্থ ও প্রকারভেদ
তাবলীগ
সম্পর্কে বুঝতে হলে প্রথমে তা কত প্রকার ও কি কি এবং তার অর্থ কি, তা জানতে হবে।(تبليغ) তাবলীগ অর্থ হলো- প্রচার করা। তাবলীগ দু’প্রকার অর্থাৎ সাধারণতঃ ইসলাম দু’ভাবে প্রচার করা হয়ে থাকে- (১)
তাবলীগে(عام)আমবাসাধারণভাবে, (২) তাবলীগে(خاص) খাছ বা
বিশেষভাবে। আবার দ্বীন প্রচারকারী (মুবাল্লিগ) ও দু’প্রকার-
(১) মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক) ও (২) মুবাল্লিাগে খাছ (বিশেষ দ্বীন
প্রচারক)।
মুবাল্লিগে আম ও তার হিদায়েতের ক্ষেত্র
মুবাল্লিগে
আম অর্থাৎ সাধারণ মুবাল্লিগ (দ্বীন প্রচারকারী)- তার বিশেষ কোন যোগ্যতার প্রয়োজন
নেই। শুধু দ্বীনী সমঝ বা বুঝ থাকলেই চলবে। সে খাছ বা বিশেষভাবে যেমন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী,
ভাই-বোন, ভাতিজা-ভাতিজী ও কর্মচারী তথা তার
অধীনস্থ সকলকে দ্বীনী আমলের জন্য তথা দ্বীনদারী হাছিলের জন্য তাকীদ বা উৎসাহিত
করবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ
পাক তিনি পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র সূরা তাহরীম শরীফ উনার ৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
يا ايها الذين امنوا قوا انفسكم واهليكم نارا.
অর্থ :“হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদেরকে
এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে বাঁচাও।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
الا كلكم راع وكلكم مسئول عن رعيته.
অর্থ : “সাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই (নিজের
অধীনস্থদের ব্যাপারে) রক্ষক এবং প্রত্যেকেই তার রক্ষিত বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত
হবে।”
(বোখারী, মুসলিম, মেশকাত, ফতহুল বারী , ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, শরহে নববী, ফতহুল মুল্হিম, মেরকাত,
লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, শরহুত্ ত্বীবী, তা’লীকুছ ছবীহ্, মিরআতুল মানাজীহ্ ইত্যাদি)
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে
মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন,
بلغوا عنى ولو اية.
অর্থ :“তোমরা আমার থেকে একটি আয়াত (হাদীছ)
হলেও তা (মানুষের নিকট) পৌঁছে দাও।” (বোখারী শরীফ, ফতহুল বারী,
ওমদাতুল ক্বারী, তাইসীরুল ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী)
অন্য পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে- তখন হযরত ছাহাবায়ে
কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা আরজ করলেন,
ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!যতক্ষণ
পর্যন্ত না আমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে আমল করবো, ততক্ষণ
পর্যন্ত কি আমরা সৎ কাজের আদেশ দিব না? অথবা যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা
সমস্ত খারাবী হতে ক্ষান্ত হবো, ততক্ষণ পর্যন্ত কি অসৎ কাজে নিষেধ
করবো না?
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন- “না,
বরং আপনারা সৎকাজের আদেশ দান করবে, যদিও তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে
আমল করতে না পার। তদ্রুপ মন্দ কাজে নিষেধ করবে, যদিও
তোমরা নিজেরা পুরোপুরিভাবে তা থেকে বেঁচে থাকতে না পার। (তিবরানী শরীফ)
সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো বলেন,
الدين نصيحة.
অর্থ :“দ্বীন হচ্ছে নসীহত স্বরূপ।”
হযরত ছাহাবায়ে
কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, কাদের জন্য? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য
এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রিয় রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার
জন্য এবং মুসলমানের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের জন্য এবং সাধারণ মুসলমানদের জন্য।” (মুসলিম শরীফ, শরহে নববী, ফতহুল মুলহিম)
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফসমূহ মুবাল্লিগে আম ও
মুবাল্লিগে খাছ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। অর্থাৎ এর হুকুম কারো জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়া
হয়নি।
কাজেই
যারা মুবাল্লিগে আম, তারা তাদের দায়িত্ব ও ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত হাদীছ শরীফের
আমল করবেন। আর যারা মুবাল্লিগে খাছ, তারাও তাদের দায়িত্ব ও যোগ্যতা
এবং ক্ষেত্র অনুযায়ী উপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার উপর আমল
করবেন।
অতএব
প্রত্যেক মুবাল্লিগে আম-এর জন্য তার ক্ষেত্র হচ্ছে- তার অধীনস্থগণ। যাদেরকে তার
তরফ থেকে দ্বীনের জন্য তা’লীম দেয়া ও তাকীদ করা দায়িত্ব ও
কর্তব্য। অর্থাৎ এটা হচ্ছে তাবলীগে খাছ যা করা- মুবাল্লিগে আম-এর জন্য ফরজে আইনের
অন্তর্ভূক্ত। (তাফসীরে মাযহারী, রুহুল বয়ান, রুহুল মায়ানী, ফতহুল ক্বাদীর, খাযেন, বাগবী, কুরতুবী,
ইব্নে কাছীর, কবীর)
মুবাল্লিগে খাছ ও তার হিদায়েতের ক্ষেত্র
মুবাল্লিগে
খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), মুবাল্লিগে আম-এর মত নয়। অর্থাৎ
তিনি কেবল তার অধীনস্থদেরই নয় বরং তিনি আমভাবে সকল উম্মতকেই হিদায়েত করার উপযুক্ত।পক্ষান্তরে
মুবাল্লিগে আম কেবল তার অধীনস্থদেরই বলার যোগ্যতা রাখেন।
আর যাঁরা
খাছ মুবাল্লিগ অর্থাৎ বিশিষ্ট দ্বীন প্রচারক, উনাদের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
ولتكن
منكم امة يدعون الى الخير ويأمرون بالمعروف وينهون عن المنكر وارلئك هم المفلحون.
অর্থ : “তোমাদের মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায়
হওয়া জরুরী,
যারা (মানুষকে) কল্যাণের (পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ তথা দ্বীন ইসলাম উনার) দিকে ডাকবে এবং সৎ কাজের আদেশ
করবে এবং বদ্ কাজ থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই মূলতঃ কামিয়াব।” (পবত্রি সূরা ইমরান শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৪)
অর্থাৎ উনাকে অবশ্যই দ্বীনী বিষয়ে বিশেষ
যোগ্যতার অধিকারী হতে হবে এবং ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাসাউফে বিশেষ দক্ষতা তথা ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নত পরিমাণ ইলম, আমল এবং ইখলাছ হাছিল
করতে হবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
قلولا
نفر من كل فر قة منهم طائفة ليتفقهوا فى الدين ولينذروا قومهم اذا رجعوا اليهم
لعلهم يحذرون.
অর্থ :“কেন তাদের প্রত্যেক ক্বওম বা
ফেরক্বা থেকে একটি দল বের হয়না এজন্য যে, তারা দ্বীনী ইলমে দক্ষতা অর্জন
করবে এবং তাদের ক্বওমকে ভয় প্রদর্শন করবে, যখন তারা
তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে। আশা করা যায়, তারা
বাঁচতে পারবে।”
(পবিত্র সূরা তওবা
শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১২২)
(তাফসীরে মাজহারী, রুহুল মা’য়ানী, রুহুল
বয়ান,
ফাতহুল ক্বাদীর, কাশশাফ, হাশিয়ায়ে
সাবী,
যাদুল মাসীর, খাজেন, বাগবী, কুরতুবী,
কবীর, ইবনে কাছীর ইত্যাদি)
আর মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
تعلموا العلم وعلموه الناس
অর্থ :“তোমরা দ্বীনী ইলম শিক্ষা কর
এবং মানুষকে তা শিক্ষা দাও।” (দারেমী,
দারে কুত্নী, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্ ত্বীবী, তালীকুছ্ ছবীহ্, আশয়াতুল লুময়াত, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্, লুময়াত ইত্যাদি)
মূলত
যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, উনাদেরকে
অবশ্যই উলামায়ে
হক্কানী-রব্বানী হতে হবে। আর হক্কানী, রব্বানী আলেমগণের প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
انما يخشى الله من عباده العلماء.
অর্থ :“নিশ্চয়ই বান্দাদের মধ্যে আলেমরাই আল্লাহ
পাককে ভয় করেন।”
(পবিত্র সূরা ফাতির
শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীর হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহিকে
জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যার মধ্যে যতবেশী আল্লাহ ভীতি
রয়েছে,
তিনি তত বড় আলেম।”
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে রয়েছে,
من
ارباب العلم؟ قال الذين يعملون بما يعلمون قال فما اخرج العلم من قلوب العلماء؟
قال الطمع.
অর্থ :“(জিজ্ঞাসা করা হলো) আলেম কে? উত্তরে বললেন, যাঁরা ইলম অনুযায়ী আমল করেন। পুণরায় জিজ্ঞাসা করলেন, কোন্ জিনিস আলেমের অন্তর থেকে ইলমকে বের করে দেয়? তিনি
বললেন,
লোভ (দুনিয়ার সম্পদ, সম্মান
ইত্যাদি হাছিলের আকাঙ্খা)।” (দারেমী,
মেশকাত, মেরকাত, মোজাহেরে
হক্ব,
শরহুত্ ত্বীবী, তালীক, আশয়াতুল
লুময়াত,
মিরআতুল মানাজীহ্, লুময়াত ইত্যাদি) অর্থাৎ যিনি ইলম অনুযায়ী আমল করেন, তিনিই হক্কানী-রব্বানী আলেম।
কাজেই
যিনি ইলম,
আমল ও ইখলাছ হাছিল করেছেন, তিনিই হক্কানী আলেম, আর তিনিই
নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের ওয়ারিছ। যাঁদের শানে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
العلماء ورثة الا نبياء.
অর্থ :“আলেমগণ হলেন- নবীগণের ওয়ারিছ বা
উত্তরাধিকারী।”
(আহ্মদ, তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনে মাযাহ্, মেশকাত, মেরকাত, শরহুত্
ত্বীবী,
বজলুল মাজহুদ, তোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযী, মায়ারেফুস্ সুনান, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাজীহ্, উরফুশ্শাজী,
তা’লীক)
অর্থাৎ
নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও
তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র যেমন আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য, তদ্রুপ যাঁরা মুবাল্লিগে খাছ, উনারা নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের ওয়ারিছ হওয়ার কারণে উনাদেরও দাওয়াত ও তাবলীগ, তা’লীম ও
তালক্বীন এবং হিদায়েতের ক্ষেত্র আম বা ব্যাপকভাবে উম্মতদের প্রতি প্রযোজ্য। আর এ
আম তা’লীম বা তাবলীগ ফরজে কেফায়ার অন্তর্ভূক্ত। যা অতীতে ও বর্তমানে ওলামায়ে
হক্কানী- রব্বানীগণ তাসাউফ শিক্ষা দিয়ে, মাদ্রাসায় পড়িয়ে, মসজিদে ইমামতি করে, কিতাবাদি লিখে, ওয়াজ-নছীহত করে ইত্যাদি নানানভাবে দাওয়াত ও তা’লীম-তালক্বীন
দিয়ে হিদায়েতের কাজ করে মুবাল্লিগে খাছ-এর দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে, তাবলীগে আম-এর (ফরজে কেফায়ার) ও তাবলীগে খাছ-এর (ফরজে আইনের) খেদমতের আঞ্জাম
দিয়ে যাচ্ছেন।
মুবাল্লিগে আম উনার জন্য তাবলীগেআম করার হুকুম এবং মুবাল্লিগে
খাছ উনার যোগ্যতা ও
তাবলীগে আম-এর শর্ত
স্মরণীয়
যে, যারা মুবাল্লিগে আম এবং যাদের জন্য শুধু তাবলীগে খাছ করা ফরজে আইন, তাদের জন্য কোন ক্রমেই এবং কষ্মিনকালেও তাবলীগে আম বা ব্যাপকভাবে দ্বীন প্রচার
করা (যা মুবাল্লিগে খাছ তথা ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণের জন্য নির্দিষ্ট তা) জায়েয
নেই।
এ প্রসঙ্গে
হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত রয়েছে যে, একদিন এক লোক উনার সাক্ষাতে আসলে তিনি তাকে
জিজ্ঞাসা করলেন,
“তুমি কি কর?” সে জাওয়াব দিল, দ্বীন প্রচার করি। তখন তিনি তাকে বললেন, “তুমি কি
ঐ সকল পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার আমল
করেছ?”
যা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ
করা হয়েছে-
(১) পবিত্র সূরা সফ উনার ২নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহানআল্লাহ পাক তিনি বলেন,
يا ايها الذين امنوا لم تقولون مالا تفعلون.
অর্থ :“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা করনা, তা কেন বল?”
“তুমি কি এ পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার আমল
করেছ?”
সে জাওয়াব দিল, না।
(২) তিনি আবার বললেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ৪৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেছেন,
اتأمرون
الناس بالبر وتنسون انفسكم وانتم تتلون الكتاب.
অর্থ :“তোমরা কি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ
কর, আর নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও? অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াত করে
থাক।”
“তুমি কি এ পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার আমল
করেছ?”
সে জাওয়াব দিল, না।
(৩) পুণরায় তিনি বললেন, “তুমি কি ঐ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার আমল করেছ?যা হযরত শোয়াইব আলাইহিস সালামউনার ক্বওমকে বলেছিলেন,
وما اريد ان اخالفكم الى ماانهاكم عنه.
অর্থ :“আমি এটা চাইনা যে, তোমাদেরকে যে কাজ থেকে নিষেধ করি, আমি তার খেলাফ করি। অর্থাৎ আমি যা
বলি, তা করি আর যা বলিনা, তা করিনা।” (পবিত্র সূরা হুদ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৮)
তুমি কি
এ পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার আমল
করেছ?
সে জাওয়াব দিল, না।
তখন হযরত
ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু তাকে বললেন, “তুমি প্রথমে এ পবিত্র আয়াত শরীফসমূহ উনাদের আমল কর, অতঃপর
তুমি দ্বীন প্রচারের কাজে নিজেকে নিয়োজিত কর।” অর্থাৎ
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার আমল
ব্যতিরেকে তাবলীগে আম করা জায়িয নেই।
উপরোক্ত
আলোচনা দ্বারা এই প্রমাণিত হলো যে, তাবলীগে খাছ মুবাল্লিগে আম ও খাছ
উভয়ের জন্যেই ফরজে আইন। আর তাবলীগে আম শুধুমাত্র মুবাল্লিগে খাছ তথা হক্কানী
আলেমগণের জন্যেই প্রযোজ্য, যা তাঁদের জন্যে ফরজে কিফায়ার অন্তর্ভূক্ত। অতএব, মুবাল্লিগে আম বা সাধারণ লোকদের জন্যে তাবলীগে আম করা কখনো শুদ্ধ হবেনা বরং
তাদের জন্যে তা করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম হবে।
বিশেষভাবে
উল্লেখযোগ্য যে,
বর্তমানে প্রচলিত ছয় উছূল ভিত্তিক তাবলীগ যাকে তাবলীগ
জামায়াতের লোকেরা তাবলীগে আম বলে থাকে, (যা আমাদের নিকট মক্তবী শিক্ষার
অন্তর্ভূক্ত যদি আক্বীদা শুদ্ধ হয়ে থাকে) যদি তাদের কথা মোতাবেক তাকে তাবলীগে আম
ধরা হয়,
তাহলে তো অবশ্যই তা মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য করা উচিৎ ছিল।
অথচ তা এমন সব লোকেরা করে থাকে যারা মুবাল্লিগে খাছ তো নয়ই, বরং তাদের মধ্যে অনেকেই মুবাল্লিগে আম-এরও উপযুক্ত নয়। যদিও কিছু সংখ্যক
মুবাল্লিগে আম রয়েছে।
অতএব
তাবলীগে আম মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্যই করা ফরজে কেফায়া। যা মুবাল্লিগে আম-এর জন্য
করা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। আর সাধারণ লোকেরতো প্রশ্নই উঠেনা।
এখন হয়তো
কেউ প্রশ্ন করতে পারে যে, অনেক সময় দেখা যায় এমন কতক লোক, যারা মুবাল্লিগে খাছ ও আম কোনটাই নয়, তারা অনেকেই নামাজের জামায়াতে
যাওয়ার সময় বা নামায পড়ার সময় অন্যকে নামাযে ডেকে নিয়ে যায়, রোযার মাসে রোযা রাখার
কথা বলে,
ইত্যাদি অনেক নেক কাজের কথাই বলে থাকে, যা তাদের দায়িত্বের অন্তর্ভূক্ত ছিলনা তবে তার ফায়সালা কি?
এর
ফায়সালা হলো,
ঐ সকল লোক মুসলিম শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ-
الدين نصيحة
অর্থাৎ “দ্বীন হচ্ছে অপরের ভাল কামনা করা।” এর মেছদাক বা নমুনা। অর্থাৎ
এদেরকে কেউ হিদায়েতের দায়িত্ব দেয়নি বা এরা হিদায়েতের ব্যাপারে কোন দায়িত্ব গ্রহণ
করেনি। এরা হচ্ছে মানুষের খয়েরখাঁ বা হিতাকাঙ্খী।
এখানে
উল্লেখ্য যে,
তিবরানী শরীফ উনার উপরোক্ত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দেখা যাচ্ছে যে, সৎকাজ না করলেও অপরকে সৎ কাজ করতে বলা হয়েছে। অথচ পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেমহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, “তোমরা ঐ
কথা বল কেন,
যা তোমরা নিজেরা করোনা।”
তাহলে এই
পবিত্র আয়াত
শরীফ ও পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার
বক্তব্যের মধ্যে ফায়সালা কি?
মূলত এর
ফায়সালা ওলামায়ে মুহাক্কিক, মুদাক্কিকগণ দিয়েছেন। উনাদের মতে তিবরানী শরীফ উনার হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সৎ কাজ না করলেও সৎ কাজের
দাওয়াত দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, তা মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন
প্রচারক)-এর জন্য। যেমন কোন বাবা নিজে নামাজ বা অন্যান্য নেক কাজ না করা সত্বেও
তার সন্তান ও অধীনস্থদের নামাজ বা অন্যান্য নেক কাজের জন্য বলতে পারেন।
আর পবিত্রকুরআন শরীফ উনার উক্ত আয়াত শরীফ উনার মধ্যে নিজে সৎ কাজ না করে অপরকে
তা বলার জন্য যে নিষেধবাণী করা হয়েছে, তা হলো- মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য।
অর্থাৎ মুবাল্লিগে খাছ-এর জন্য নিজে কোন সৎ কাজ না করে অপরকে তা করতে বলা জায়েয
নেই।
এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ
আছে যে,
“সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল
মুরসালীন,
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মি’রাজ শরীফে যান, তখন দেখলেন কিছু লোকের জিহ্বা আগুনের কেচি দ্বারা কাটা হচ্ছে। তখন জিজ্ঞাসা করা হলো- এরা কারা? হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, এরা ঐসকল লোক, যারা অন্যকে নেক কাজের উপদেশ দিতো কিন্তু নিজেরা তা করতো না।” (সিহাহ্ সিত্তাহ্, সমূহ সীরাতের কিতাব)
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, যারা মুবাল্লিগে আম (সাধারণ দ্বীন প্রচারক), তারা তিবরানী শরীফের বর্ণনা মোতাবেক সৎকাজ না করেও অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে
পারবেন। আর যারা মুবাল্লিগে খাছ (বিশেষ দ্বীন প্রচারক), তারা কুরআন
শরীফের উক্ত আয়াত শরীফ মোতাবেক নিজে সৎকাজ না করে অপরকে সৎকাজ করার কথা বলতে
পারবেন না। কারণ যদি সকলের জন্যে আমভাবে একথা বলা হয় যে, সৎকাজ না
করেও অপরকে সৎকাজের কথা বলা জায়েয, তবে পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত
লোকদের জিহ্বা কাটা
হলো কেন?
এতে বুঝা গেল যে, তিবরানী শরীফ উনার উক্ত হুকুম সকলের জন্যে
প্রযোজ্য নয়। বরং যারা মুবাল্লিগে আম, তাদের জন্যেই প্রযোজ্য। আর পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও মি’রাজ শরীফ সম্পর্কিত হাদীছ শরীফখানা যারা মুবাল্লিগে খাছ, তাদের জন্যে প্রযোজ্য।
সুতরাং
হাক্বীক্বতে উক্ত পবিত্র হাদীছ
শরীফ ও আয়াত শরীফ উনার মধ্যে
কোনই দ্বন্দ্ব নেই। অনেকে এর সঠিক ব্যাখ্যা না জানার কারণে এ ব্যাপারে বিভ্রান্তিমূলক
কথাবার্তা বলে থাকে। মূলত উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও হাদীছ শরীফ যার যার ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রযোজ্য ও অনুসরণীয়।
সুওয়াল সমূহে উল্লেখকৃত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের
আপত্তিকর বক্তব্যসমূহের জাওয়াব
৪০নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব
সুওয়াল : হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম সম্পর্কে প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াতের লোকদের আক্বীদা হলো যে, দাওয়াতের কাজ বন্ধ করার কারণে আল্লাহ
পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে বিপদে ফেলেছিলেন এবং তিনি সেখানে নিজের অপরাধ
স্বীকার করে চল্লিশ দিন কাঁদা-কাটার পর আল্লাহ পাক তাঁর অপরাধ ক্ষমা করেন। এ
প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, “দাওয়াত বন্ধ করার কারণে, আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে অবশ্য গযবে ফেলিলেন .......।” “.... হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে ৪০ দিন আবদ্ধ থাকিয়া নিজ ক্রটি স্বীকার
করিয়া তওবা .... করার কারণে বিপদ হইতে উদ্ধার পাইলেন।” (তাবলীগ
গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব, লেখক- ইসাইল হোসেন দেওবন্দী পৃঃ৬২
ও ৮৯)
এখন
আমাদের জিজ্ঞাস্য হলো- হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের
উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু শরীয়তসম্মত, সঠিক ও গ্রহণযোগ্য? পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস উনার দৃষ্টিতে জাওয়াব দানে আমাদের ঈমান-আমল হিফাযতে বিশেষ সহায়তা করিবেন।
জাওয়াব : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য
নেহায়েতই অজ্ঞতামূলক, বিভ্রান্তিকর, ও হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের শানের সম্পূর্ণ খেলাফ। মূলত হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালাম উনাদের সম্পর্কিত সহীহ্ ও গ্রহণযোগ্য
ইসলামী আক্বীদাগত অজ্ঞতা হেতুই তারা এরূপ আপত্তিকর আক্বীদা পোষণ করে থাকে।
হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কিত সহীহইসলামী আক্বীদা
বস্তুতঃ
সকল হযরত নবী-রসূলআলাইহিমুস সালামগণ উনারা ছিলেন মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ও মনোনীত বান্দাহগণ উনাদের অন্তর্ভূক্ত। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
الله يجتبى اليه من يشاء.
অর্থ :“মহান আল্লাহ পাক যাকে ইচ্ছা (হযরত নবীআলাইহিমুস সালামগণ উনাদেরকে) মনোনীত করেন।” (পবিত্র সূরা শুয়ারা শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১৩)
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা হজ শরীফ উনার ৭৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো বলেন,
الله يصطفى من الملئكة رسلا ومن الناس.
অর্থ :“মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম ও
মানুষের মধ্য থেকে রসূল মনোনীত করেন।”
অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদেরকেমহান আল্লাহ পাক তিনিই খাছভাবে মনোনীত করেন। কারো
পক্ষে সাধনা বা রিয়াজত মুশাক্কাত করে কস্মিনকালেও নবী-রসূল হওয়া সম্ভব নয়।
আর উনারা প্রত্যেকেই ছিলেন ওহীর দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত। পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার একাধিক
স্থানে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
نوحى اليهم.
অর্থ :“আমি উনাদের (হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের) প্রতি ওহী পাঠাতাম।” (পবিত্র সূরা ইউসূফ শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ১০৯,
পবিত্র সূরা নহল
শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৩,
পবিত্র সূরা আম্বিয়া
শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৭)
অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের যাবতীয় কার্যাবলীই ওহীর দ্বারা
(আল্লাহ পাক কর্তৃক) পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বাইদের কিতাবে বর্ণিত
হয়েছে,
الانبياء عليهم السلام كلهم معصوم.
অর্থ : “সকল আম্বিয়া (হযরত নবী-রসূল) আলাইহিস সালামগণ মাছূম
বা নিস্পাপ।”
আরো
উল্লেখ করা হয়েছে যে,
الانبياء
عليهم السلام كلهم منزحون عن الصعائر والكبائر والكفر والقبائح.
অর্থ :“সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনারা ছগীরা, কবীরা, কুফরী এবং অপছন্দনীয় কাজ হতেও পবিত্র।”
এ উছূলের
ভিত্তিতে আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো- কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা কখনও
ভুল-ত্রুটি করেননি। ইচ্ছাকৃত তো নয়ই, অনিচ্ছাকৃতও নয়। অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনারা কোন ভুল-ত্রুটিই করেননি। (শরহে
আক্বাইদে নসফী,
ফিক্বহে আকবর, তাকমীলুল ঈমান, আক্বাইদে হাক্কাহ)
অতএব
যারা হযরত নবী-রসূল
আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের ভুল সম্পর্কে বলে থাকে, তারা আক্বাইদ ও ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ বা মূর্খ থাকার কারণে এবং পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সঠিক ব্যাখ্যা না বুঝার কারণে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের শানে
এরূপ বেয়াদবীমূলক ও কুফরী কথাবার্তা বলে থাকে। উল্লেখ্য যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের সাথে
কতটুকু আদব রক্ষা করতে হবে, সে প্রসঙ্গে কিতাবে, হযরত ইমাম র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর ঘটনা উল্লেখ করা হয় যে,
ইমাম সাররী সাকতীরহমতুল্লাহি আলাইহিউনার যামানায় মহান আল্লাহ পাক উনার লক্ষ্যস্থল ছিলেন। তিনি ইমামুশ্
শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ছিলেন। তিনি একবার মহান
আল্লাহ পাক উনার নবী,
হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম উনাকেস্বপ্নেদেখে প্রশ্ন করেছিলেন, হে মহান আল্লাহ
পাক উনার নবী, হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম! আপনার অন্তরে যদি মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বত সত্যিকার ভাবেই প্রবল
হতো, তাহলে আপনি কি করে আপনার ছেলে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার জুদাইয়ের (বিচ্ছেদের) কারণে উনার মুহব্বতে চল্লিশ বছর যাবত কেঁদে
কেঁদে আপনার চক্ষু মুবারক নষ্ট করেছিলেন? একথা বলার সাথে সাথে গায়েব থেকে নেদা (আওয়াজ) হলো, “হে সাররী সাকতী! মুখ শামলিয়ে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে
কথা বলুন।” এরপর হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম
উনাকেউনার সামনে পেশ করা হলে তিনি বেহুশ হয়ে পড়েন এবং এভাবে একাধারা
তের দিন,
তের রাত্র বেহুশ থাকার পর হুঁশ ফিরে পান। তখন গায়েব থেকে
নেদা হয়,
“মহান আল্লাহ পাক
উনার হযতর নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে আদবের খেলাফ কথা বললে এরূপই শাস্তি হয়ে থাকে।” (তাজকেরাতুল
আওলিয়া)
উপরোক্ত
ওয়াকিয়ার আলোকে প্রতিভাত হয় যে, আদব কত সুক্ষ্ম জিনিস এবং হযরত
নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের শানে কতটুকু আদবের সাথে কথা
বলতে হবে এবং উনাদের সাথে
বেয়াদবির কি পরিণতি? বেয়াদব সম্পর্কে হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি
বলেন,
بے
ادب محروم گشت از لطف رب
অর্থ :“বেয়াদব মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত থেকে বঞ্চিত।” (মসনবী
শরীফ)
অতএব, অনুধাবণীয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি কতটুকু আদব রক্ষা করা
দরকার।
উল্লেখ্য
যে, হযরত র্সারী সাক্তী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুজ্জামান, ইমামুশ্
শরীয়ত ওয়াত্ব তরীক্বত ও মহান আল্লাহ পাক উনার
লক্ষ্যস্থল হওয়া সত্ত্বেও উনার প্রতি সতর্কবাণী ও সাবধানবাণী উচ্চারিত হয়েছে।
এখানে
বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি যথাযথ আদব রক্ষা করার
উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের বরকতময় জীবনীতেও রয়েছে। যেমন এ
প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ
আছে যে,
একদা জনৈক ছাহাবী,
হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু আপনি বড় না নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বড়? জবাবে বিশিষ্ট ও মর্যাদাবান
সাহাবী,
হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অত্যন্ত হেকমতপূর্ণ
জবাব দিলেন এই বলে যে,
هواكبر منى انا اسن منه.
অর্থাৎ
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই আমার চেয়ে অনেক বড়
(মর্যাদাবান)। তবে আমি দু’বছর আগে জন্ম গ্রহণ করেছি।
(সুবহানাল্লাহ্)
অতএব, বিশিষ্ট সাহাবী, হযরত আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপরোক্ত হেকমতপূর্ণ ঘটনা দ্বারা
এটাই প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে খুব আদব ও সতর্কতার
সাথে কথা বলতে হবে।
স্মরণীয়
যে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ভুল করা
তো দূরের কথা,
কোন প্রকার অপছন্দনীয় কাজও উনারা করতেন না। বরং সর্ব প্রকার
অপছন্দনীয় কাজ থেকেও উনারা বেঁচে থাকতেন বা পবিত্র থাকতেন, এ প্রসঙ্গে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পবিত্র সীরত মুবারক থেকে
একটি ঘটনা উল্লেখ করা যায়-
“একবার মহান আল্লাহ উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম হুজরা শরীফ উনার মধ্যে বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি এসে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার সাথে সাক্ষাত করার অনুমতি
চাইলেন। এ সংবাদ উম্মুল মু’মিনীন, হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম নূরে মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার নিকট পৌঁছালেন। তখন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সে ব্যক্তিকে অপেক্ষা করতে বল। একথা বলেছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারহুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পাগড়ী মুবারক, জামা বা কোর্তা মুবারক ইত্যাদি গুছগাছ করে নিলেন। এমন কি
হুজরা শরীফ থেকে বের হওয়ার মূহুর্তে পানির গামলাতে নিজের চেহারা মুবারক দেখে
গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। তা দেখে সে সময় হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম তিনি বললেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনিও কি এরূপ করেন?
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন,
“কিরূপ করি?” হযরত আয়িশা ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম বললেন, “এরূপ
পরিপাটি।”
এর জবাবে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন,
“আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী।
আমাদের কোন কাজ কারো অপছন্দ হলে, সে ঈমান হারা হয়ে যাবে।” (আল মুরশিদুল আমীন)
অতএব, হযরত নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা যে
কতটুকু অপছন্দনীয় কাজ থেকে বেঁচে থাকতেন, এ হাদীছ শরীফের বর্ণিত ঘটনা তারই
প্রমাণ। তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে বা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে যে, নবী-রাসূল আলাইহিস সালামগণ ভুল-ত্রুটি করেছিলেন? বস্তুতঃ
এরূপ আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।
আরো
উল্লেখ্য যে,
মহান আল্লাহ পাক
উনার রসূল, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হাদীছ শরীফ বর্ণনা কারীদেরকে
রাবী বলা হয়। এই রাবীগণের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর, উনাদেরকে বলা হয় ছেক্বাহ রাবী।
পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদগণ, ছেক্বাহ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জবত।
জবত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন
যে, একবার শুনলে আর ভুলেনা।
আর
আদালত-এর মধ্যে চারটি শর্ত রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান হলো- দু’টি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত।
(ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফরী, শেরেকী, বিদয়াতী, ফাসেকী
কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরাহগুণাহ থেকে, এমনকি
ছগীরাহ্ গুণাহ্ও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা। (খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে- অশালীন, অশোভনীয়,
অপছন্দনীয়, এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত
থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায়
অট্টহাস্য করা,
চিৎকার করা ইত্যাদি। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়খ, মীযানুল আখবার)
এখন
ফিকিরের বিষয় এই যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ
উনার বর্ণনাকারী ছেক্বাহ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং
তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদ
উম্মতে মুহম্মদীর নিকট যদি ছেক্বাহ রাবী হিসেবে হাদীছ বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য
ছগীরাহ গুণাহ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার নবী
হিসেবে মনোনীত করলেন এবং যারা মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম
বর্ণনাকারী হলেন, উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক কি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন বা উনাদের ক্ষেত্রে কতটুকু মা’ছূম ও মাহফুজ হওয়া
নির্দিষ্ট করছেন তা অতি গুরুত্বের সাথে অনুধাবনীয়।
মূলত
এতক্ষণের আলোচনায় হযরত নবী-রসূল
আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের শান ও উনাদের প্রতি আদব সম্পর্কিত যে
দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, সে আলোকে হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ
জামায়াতের আক্বীদাসমূহ পর্যালোচনা করলে তাদের জেহালত, বেয়াদবি, ভ্রান্তি ও গোমরাহী খুব সহজেই প্রতিভাত হয়। এবং ক্ষেত্র বিশেষে তাদের কিছু কিছু
বক্তব্য কুফরী পর্যন্ত পৌঁছে।
কাজেই
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে থাকে, দাওয়াত
বন্ধ করার কারণে মহান আল্লাহ
পাক, হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে অবশ্য গযবে ফেলিলেন .......। হযরত ইউনুস আলাইহিস
সালাম মাছের পেটে ৪০ দিন আবদ্ধ থাকিয়া নিজ ক্রটি স্বীকার করিয়া তওবা .... করার
কারণে বিপদ হতে উদ্ধার পাইলেন।
তা
সম্পূর্ণ মনগড়া,
বানোয়াট, বিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। মূলত
তারা নবী হিসেবে হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম
উনার মর্যাদা না বুঝার কারণে এবং উনার সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস বা তথ্য
না জানার কারণে এরূপ গোমরাহী ও কুফরীমূলক কথা বলে থাকে।
নিম্নে
আমরা হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরলাম।
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হযরত
ইউনুস আলাইহিস সালাম যখন উনার সম্প্রদায়কে বা ক্বওমকে ঈমান ও সৎকাজের জন্য দাওয়াত দিলেন ও নসীহত করলেন, তখন তারা অবাধ্যতা প্রদর্শন করলো। এতে হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তাদের বললেন, তোমরা যদি এরূপ কর, তবে মহান আল্লাহ পাক উনার আযাব তোমাদের পাকড়াও করবে। একথা
শুনে উক্ত ক্বওম বললো, “ঠিক আছে, আপনি যদি পারেন, তবে মহান আল্লাহ পাক উনার আযাব আনুন।” তখন হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামমহান আল্লাহ পাক উনার
নির্দেশে তিনদিন পর আযাব আসার সংবাদ শুনিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনারই নির্দেশে নিজের অবস্থান থেকে
বাইরে চলে যান।
অতঃপর
যখন আযাবের কিছু কিছু চিহ্ন বা আলামত প্রকাশ পেল, তখন ঐ
ক্বওম কুফরী ও শেরেকী থেকে তওবা করে।আর আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকলে জঙ্গলে চলে যায়।
সাথে তাদের চতুস্পদ জন্তুগুলিকেও নিয়ে যায়। অতঃপর তারা নিজ নিজ বাচ্চাদেরকে মা
থেকে আলাদা করে দিয়ে সকলে মিলে কান্নাকাটি শুরু করে এবং কাকুতি-মিনতি সহকারে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে তওবা করে। আর বাচ্চারা
তাদের মা থেকে আলাদা হওয়ার কারণে করুণ স্বরে কান্নাকাটি করতে থাকে। তখন আল্লাহ পাক
তাদের তওবা কবুল করে আযাব দূর করে দেন।
এদিকে
তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর, হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম সংবাদ
পেলেন যে,
উনার ক্বওম
আযাবে ধ্বংস হয়নি। তখন তিনি চিন্তা করলেন যে, মহান আল্লাহ
পাক যে,
উনাকে সরে
যেতে বলেছিলেন,
তা কি সরা হয়েছে? না কিছু বাকী রয়েছে। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার নবীগণ যে স্থানে অবস্থান করেন, সে স্থানে গযব নাযিল হয়না। উনারা নির্দিষ্ট স্থান ত্যাগ করার পরই গযব নাযিল হয়, একথা
চিন্তা করে তিনি আরো সরতে লাগলেন।
উল্লেখ্য
হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনার ক্বওমের মধ্যে নিয়ম ছিল যে, কেউ মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হলে তার
শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। তাই নির্দিষ্ট স্থান ত্যাগ না করার কারণে যদি তাদের প্রতি গযব না আসে এবং উনাকে তারা মিথ্যাবাদী বলে, তবে তাদের সকলের পরকালে আরো বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, একথা চিন্তা করে তিনি আরো সরতে লাগলেন।
পথিমধ্যে
নদী পড়লো,
হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম একটি নৌকায় আরোহণ করলেন। নৌকায়
লোক অতিরিক্ত হওয়ার কারণে ডুবে যাওয়ার উপক্রম হলো। তখন মাঝিরা বললো, আপনাদের মধ্যে একজনকে নেমে যেতে হবে। কে নামবে, তা লটারী
করা হলো। লটারীতে একবার, দু’বার, তিনবার হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনারই নাম মুবারক উঠলো।
যদিও
লোকজনের ইচ্ছা ছিলনা হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে নামিয়ে দেয়া, তা সত্ত্বেও তিনি অতিরিক্ত কাপড় খুলে নদীতে নেমে গেলেন। আর মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে এক বিশেষ মাছ উনাকে তা’যীম-তাকরীমের
সাথে পেটে ধারণ করলো এবং মাছ বললো, হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হযরত
ইউনুস আলাইহিস সালাম! আপনি চিন্তিত হবেন না, আমাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি খাছ করে আপনার জন্য তৈরী করেছেন, আমার পেটকে আপনার জন্য ইবাদতখানা হিসেবে নির্ধারিত করেছেন এবং আমার সমস্ত
শরীরে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির জারী রয়েছে।
একথা
শুনে হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম সে মাছের পেটে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির-আযকার ও ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল হলেন।
মূলত মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, হযরত
ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে প্রবেশ করার পেছনে শত-সহস্র কারণ রয়েছে। তার মধ্যে
একটি হলো এই যে,
সে যামানায় পানির নীচে যত মাছ ছিল, সমস্ত
মাছ রোগাক্রান্ত হয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার কাছে
সুস্থতার জন্য আরজু করছিল। আর মহান আল্লাহ পাক তাদের বলেছিলেন “অপেক্ষা কর।”
যখন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী, হযরত
ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে অবস্থান নিলেন, তখন আল্লাহ
পাক মাছদেরকে নির্দেশ দিলেন, “তোমরা আমার নবী হযরত ইউনুস আলাইহিস
সালাম যে মাছের পেটে অবস্থান করছেন, সে মাছকে শুঁক বা ঘ্রাণ নাও। যারা
উনাকে শুঁকবে
বা ঘ্রাণ নিবে,
তারা সুস্থতা লাভ করবে এবং দূরবর্তী যেসব মাছ রয়েছে, যারা সরাসরি হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে ধারণকৃত মাছকে শুঁকতে বা ঘ্রাণ
নিতে পারবে না,
সে সমস্ত মাছ যদি ঐ সমস্ত মাছ, যারা
হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে ধারণকৃত মাছকে শুঁকে বা ঘ্রাণ নিয়ে সুস্থ্যতা লাভ
করেছে,
তাদেরকে শুঁকবে বা ঘ্রাণ নিবে, তবে
তারাও সুস্থতা লাভ করবে।
উল্লেখ্য
এভাবে সমস্ত মাছের সুস্থতা লাভ করতে প্রায় চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। অতঃপর আল্লাহ
পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে ধারণকৃত মাছকে নির্দেশ দিলেন যে, “তুমি আমার রসূল, হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে তা’যীম-তাকরীমের
সহিত নদীর পাড়ে পৌঁছে দাও।” তখন সে মাছ মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশে উনাকে নদীর পাড়ে এক কদু বা লাউ গাছের
নীচে তা’যীম-তাকরীমের সহিত পেট থেকে বের করে রাখলো।
মূলত এই
হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনার চল্লিশ দিন যাবত মাছের পেটে অবস্থান করার সঠিক তথ্য বা ইতিহাস। যা
তাফসীরসমূহে ও হযরত নবী-রসূল
আলাইহিমুস সালাম উনাদের নির্ভরযোগ্য সীরাতের কিতাবে
উল্লেখ রয়েছে।
অতএব
প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে, দাওয়াত বন্ধ করার কারণে মহান আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস
সালাম উনাকে গযবে
ফেললেন,
সেকথা আদৌ শুদ্ধ নয়।
কারণ
যেখানে মহান আল্লাহ
পাক উম্মতদের মধ্যে যারা নেককার,
মহান আল্লাহ পাক
উনার রহমত উনাদের
নিকটবর্তী বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন
শরীফ উনার মধ্যে সূরা আ’রাফ শরীফ উনার ৫৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
ان رحمة الله قريب من المحسنين.
অর্থ :“নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক উনার রহমত মুহসীনীন (নেক্কারদের) নিকটবর্তী।” সেখানে যিনি মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, উনার প্রতি কি করে মহান আল্লাহ পাক গযব নাযিল করতে পারেন?
মূলত হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের উপর গযব নাযিল হওয়ার প্রশ্নই
উঠেনা। বরং উনারা যে
স্থানে অবস্থান করেন, সে স্থানে সবসময় মহান
আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে রহমত বর্ষিত
হয়। যার কারণে আমরা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার অনেক
স্থানেই দেখতে পাই যে, মহান আল্লাহ পাক যে ক্বওমকে তাদের নাফরমানির কারণে শাস্তি
দিতে ইচ্ছে পোষণ করেছেন, তখন সে ক্বওমের নবী উনাকে সে নির্দিষ্ট স্থান ত্যাগ করার
নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ মহান আল্লাহ পাক উনার নবী বা
রসূল আলাইহিস সালামগণ যতক্ষণ পর্যন্ত সে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করবেন ততক্ষণ
পর্যন্ত ঐ স্থানে আযাব-গযব নাযিল হবেনা। মূলত হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের অস্তিত্বই সার্বক্ষণিক রহমতের কারণ।
অতএব
হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনার গযব সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণ জেহালতপূর্ণ
ও গোমরাহীমূলক।
এরপর আরো
বলা হয়েছে যে,
“হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম ৪০ দিন পর্যন্ত মাছের পেটে থেকে, নিজ ত্রুটি স্বীকার করে তওবা করার ফলে বিপদ হইতে উদ্ধার পাইলেন।” অর্থাৎ তিনি ত্রুটি করেছেন এবং ত্রুটি স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে
মহান আল্লাহ
পাক উনাকে ক্ষমা
করেছেন।
প্রচলিত
তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্যটিও সম্পূর্ণ মনগড়া, বিভ্রান্তিকর
ও হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনার শানের খেলাফ। আর পূর্বেই প্রমাণিত হয়েছে যে, হযরত
নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ ছগীরা, কবীরা, কুফরী, শেরেকী,
ভুল-ক্রটি, এমনকি অপছন্দনীয় কথা বা কাজ হতেও
পবিত্র। কারণ উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার ওহী দ্বারা সম্পূর্ণ
নিয়ন্ত্রিত।
কাজেই এ
ব্যাপারে হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনার কোন ত্রুটিই ছিলনা। বরং তা ছিল, মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশেরই অন্তর্ভূক্ত। এখন
কেউ বলতে পারে- যদি তা মহান আল্লাহ পাক উনার
নির্দেশই হয়ে থাকে, আর হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনার যদি কোন প্রকার ত্রুটিই না হয়ে
থাকে,
তবে তিনি একথা কেন বললেন যে,
لا اله الا انت سبحانك انى كنت من الظالمين.
অর্থ :“আপনি পবিত্র, মহান আল্লাহ পাক ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। আর আমি জালেমদের অন্তর্ভূক্ত।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৭)
অর্থাৎ
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল,
হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম মাছের পেটে প্রবেশ করার পর চিন্তা
করলেন যে,
আমাকে স্বাভাবিকভাবে যমীনের উপর অথবা পানির উপর দিয়ে চলার
কথা ছিল,
কিন্তু আমি মাছের পেটে প্রবেশ করলাম কেন, আমার দ্বারা কি জুলুম হয়ে গেল? তখন তিনি দোয়া করতে লাগলেন, আর দোয়ার মধ্যে উল্লিখিত বাক্য পাঠ করলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি জবাবে বললেন,
فاستجبنا له ونجيناه من الغم وكذا لك ننجى المؤمنين.
অর্থ :“আমি উনার (হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনার) আহ্বানের জবাব দিলাম এবং উনাকে নাযাত দিলাম দুঃশ্চিন্তা থেকে।
আমি এমনিভাবে মুক্তি দিয়ে থাকি মু’মিনদেরকে।” (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ, পবিত্র আয়াত শরীফ ৮৮)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক হযরত ইউনুস আলাইহিস
সালাম উনাকে জানিয়ে
দিলেন যে,
আপনি আপনার দ্বারা জুলুম হয়ে যাওয়ার যে চিন্তায় মশগুল আছেন, আপনাকে সে চিন্তা থেকে নাযাত দেয়া হলো। অর্থাৎ আপনি কোন জুলুম করেননি এবং
জালেমও নন।
এখানে
স্মরণযোগ্য যে,
আল্লাহ পাক উনাকে বান্দাদেরকে মুছীবতের দ্বারা পরীক্ষা করে থাকেন, তার
কয়েকটি অবস্থা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা
বাক্বারা শরীফ উনার ১৫৫
হতে ১৫৭নং পবিত্র আয়াত
শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
ولنبلو
نكم بشئ من الخوف والجوع ونقص من الاموال والانفس والشمرات وبشر الصابرين. الذين
اذا اصابتهم مصيبة قالوا انا لله وانا اليه راجعون. اولتك عليهم صلوات من ربهم
ورحمة واولئك هم المهتدون.
অর্থ :“নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা
করবো কিছু বিষয় দ্বারা, যেমন- ভয়, ক্ষুধার
দ্বারা,
মাল ও জানের ক্ষতি করে এবং ফসল ও ফলাদি নষ্ট করার মাধ্যমে
এবং সুসংবাদ দান করুন সবরকারীদেরকে, যখন তারা মুছীবতে পতিত হয়, তখন তারা বলে নিশ্চয়ই আমরা সকলেই মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য
এবং নিশ্চয়ই আমরা সকলেই উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করবো। উনারাই ঐ সমস্ত লোক, যাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার অফুরন্ত
রহমত রয়েছে
এবং উনারাই
হিদায়েত প্রাপ্ত।”
আর এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে, বান্দাদেরকে তিন কারণে মুছীবতগ্রস্থ করা হয়।
(১) নাফরমানীর কারণে গযব নাযিল করা হয়। (২) গুণাহ্ মাফ করার জন্য মুছীবতগ্রস্থ
করা হয়।
(৩) মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য মুছীবতগ্রস্থ করা হয়।
আর এ তিন
প্রকার মুছীবতের তিনটি লক্ষণ রয়েছে। যার
দ্বারা প্রত্যেক বান্দার জন্যই বুঝা সহজ হয়ে যায় যে, এ মুছীবত
কোন কারণে পতিত হয়েছে।
(১) যখন কোন বান্দার প্রতি অতিরিক্ত নাফরমানীর কারণে গযব নাযিল হয়, তার লক্ষণ হলো- সে মহান আল্লাহ পাক উনাকে অশ্লীল
ভাষায় গালি-গালাজ করতে থাকে।
(২) যখন কোন বান্দার গুণাহ্ মাফ করার
জন্য,
মুছীবতগ্রস্থ করা হয়। তার লক্ষণ হলো- সে স্বাভাবিক অবস্থায়
থাকবে।
(৩) যখন কোন বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করার জন্য মুছীবতগ্রস্থ করা হয়। অথচ বান্দা
গুণাহ্গার নয়,
এক্ষেত্রে তার লক্ষণ হলো- সে মুছীবতগ্রস্থ হয়ে বেশী বেশী
এস্তেগফার করতে থাকে। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)
উল্লেখ্য
যে, সমস্ত হযরত নবী-রসূল
আলাইহিস সালামগণ কোন মুছীবতগ্রস্থ হলে, বেশী বেশী ইস্তিগফার করতেন। এর
দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, হযরত নবী-রসুল আলাইহিস সালামগণ উনাদের প্রতি যে সকল মুছীবত এসেছে, তা উনাদের
মর্যাদা বৃদ্ধিরই কারণ।
স্বয়ং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে
মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আকাশ একটু অন্ধকার দেখলেই
মসজিদে প্রবেশ করে ইস্তিগফার করতেন।
তদ্রুপ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, হযরত
ইউনুস আলাইহিস সালাম মুছীবতগ্রস্থ হয়ে ইস্তিগফার করেছেন,
তাও উনার মর্যাদা বৃদ্ধির কারণেই, কোন গুণাহ বা ত্রুটি করার কারণে
নয়।
এ ইস্তিগফার
করার অর্থ এই নয় যে, গুণাহ্ বা ত্রুটি রয়েছে। বোখারী ও মুসলিম শরীফ উনারপবিত্র হাদীছ শরীফএ বর্ণিত রয়েছে, স্বয়ং মহান আল্লাহ পাকউনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম প্রতিদিন সত্তর থেকে একশতবার ইস্তিগফার করতেন। অর্থাৎ অসংখ্যবার ইস্তিগফার
করতেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ হয়েছে যে,
والله
انى لا ستغفر الله واتوب اليه فى اليوم اكشر من سبعين مرة.
অর্থ :“মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ, আমি প্রতিদিন
মহান আল্লাহ
পাক উনার দরবারে
সত্তর বারেরও বেশী ইস্তিগফার ও তওবা করে থাকি।” (বোখারী
শরীফ,
ওমদাতুল ক্বারী, ফতহুল বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী)
অথচ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কোন গুণাহ বা
ত্রুটি কিছুই ছিলনা।
এ
প্রসঙ্গে কিতাবে উল্লেখ আছে যে, বিশ্বখ্যাত কবি, বিশিষ্ট সূফী সাধক, হযরত মাওলানা জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি
আলাইহি যখন উনার পীর
সাহেব,
হযরত শামসে তাবরীজী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বাইয়াত হওয়ার আরজু করলেন, তখন হযরত শামসে তাবরীজী রহমতুল্লাহি
আলাইহি মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহিকে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন। তার মধ্যে একটি
হলো- তিনি বললেন, হে মাওলানা রুমী! বলতো দেখি, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরেমুজাসসাম, হাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে, প্রতিদিন সত্তর থেকে একশতবার ইস্তিগফার পাঠ করতেন, তার কি
কারণ?
উনাদের কি কোন
গুণাহখাতা ছিল? জবাবে মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি বললেন, না, উনাদের কোন গুণাহখাতা ছিলনা। বরং উম্মতকে তা’লীম দেয়ার জন্য ও রফয়ে দারাজাত বা মর্যাদা বৃদ্ধির ফলে তিনি ইস্তিগফার করতেন।
অতএব, প্রমাণিত হলো যে, হযরত নবী-রসূলআলাইহিমুস সালামগণ,
যে ইস্তিগফার বা তওবা করেছেন, তা বিণয়
প্রকাশ বা মর্যাদা বৃদ্ধির ফলে করেছেন।
কাজেই
যদি বলা হয়,
হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম ত্রুটি বা ভুল করার কারণে তওবা
করেছেন,
তবে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে
বলতে হবে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো
বেশী ভুল বা ত্রুটি করেছেন, যার কারণে তিনি প্রতিদিন সত্তর
থেকে একশতবার তওবা করতেন। (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক)
মূলত
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেরূপ ত্রুটি বা ভুল
করার কারণে তওবা করেননি, বরং বিণয় প্রকাশ বা মর্যাদা
বৃদ্ধির ফলে করেছেন, তদ্রুপ হযরত ইউনুস আলাইহিস সালামও ভুল বা ত্রুটি করার কারণে
তওবা করেননি,
বরং বিণয় প্রকাশার্থে ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণেই তওবা
করেছেন।
উল্লেখ্য
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক ফরমান,
لا تفوقونى فوق يونس بن متى.
অর্থ :“তোমরা হযরত ইউনুস ইবনে মাত্তা আলাইহিস
সালাম উনার উপর আমাকে প্রাধান্য দিওনা।”
সাইয়্যিদুল
মুরসালীন,
ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন,
ولا اقول ان احذا افضل من يونس بن متى.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমি বলিনা যে, নিশ্চয় কেউ হযরত ইউনুস ইবনে মাত্তা আলাইহিস সালাম থেকে অধিক
উত্তম।”
(মায়ারেফুল কুরআন)
পবিত্র হাদীছ
শরীফ উনার মধ্যে এ
প্রসঙ্গে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
عن
ابى هريرة رضى الله عنه- قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما ينبغى لعبد ان
يقول انى خير من يونس بن متى.
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রাহরদ্বিয়াল্লাহু
তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
“কারো জন্যে একথা বলা উচিৎ হবেনা যে, আমি হযরত
ইউনুস ইব্নে মাত্তা আলাইহিস সালাম হতে উত্তম।” (বোখারী, মুসলিম,
মেশকাত, ফতহুল বারী, ওমদাতুল ক্বারী, এরশাদুস্ সারী, তাইসীরুল ক্বারী, শরহে নববী,
মেরকাত, লুময়াত, আশয়াতুল
লুময়াত,
তা’লীকুছ্ ছবীহ্, শরহুত্ ত্বীবী, মোযাহেরে হক্ব, মিরআতুল মানাযীহ্)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে
মুজাসসাম,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বা অন্য কোন হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদেরকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে, যেন হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনাকে হীন বা খাট না করা হয়।
উল্লেখ্য
মহান আল্লাহপাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
সমস্ত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের নবী,
রসূল
আলাইহিমুস সালাম উনাদের রসূল। তিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন। কোন নবী আলাইহিস সালাম উনাদেরকে নুবুওওয়াত দেয়া হয়নি এবং কোন রসূল
আলাইহিস সালাম উনাদেরকে রেসালত
দেয়া হয়নি,
উনার প্রতি
ঈমান আনা ব্যতীত, যা মহান আল্লাহ পাক তিনি সূরা
ইমরান শরীফ উনার ৮১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেছেন। সেই মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
যেখানে হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনার মর্যাদা হীন বা খাট করতে নিষেধ করার সাথে
সাথে তা’যীম-তাকরীম করতে আদেশ করেছেন, সেখানে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পক্ষে মহান আল্লাহ
পাক উনার রসূল,
হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম উনার মর্যাদা হানিকর উক্তি করা
যেমন- উনাকে গযবে
ফেলা হয়েছে,
তিনি ত্রুটি করেছেন, অতঃপর
তওবা করার পর উনাকে মাফ করা
হয়েছে ইত্যাদি মন্তব্য করা বা আক্বীদা পোষণ করা কি করে জায়েয হতে পারে? এবং তা কতটুকু গুরুতর অপরাধ হতে পারে তা বিশেষভাবে অনুধাবনীয়।
মূলত
হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য
সম্পূর্ণ আপত্তিকর, বিভ্রান্তিমূলক, হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের শানের খেলাফ, আহলে সুন্নাত
ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার সম্পূর্ণ বিপরীত, যা
স্পষ্টতঃ কুফরীর অন্তর্ভূক্ত এবং যা থেকে তওবা করে বিরত থাকা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত।
0 Comments:
Post a Comment