প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ ( ৩ নং খ )

প্রচলিত তাবলীগ জামায়াত ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া গবেষণা কেন্দ্র মুহম্মদীয়া জামিয়া শরীফ
৪১নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব

সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা আরো বলে থাকে যেনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গারে হেরায়” চিল্লা দেয়ার উসীলাই কুরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হয়েছেন। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে বিবৃত হয়েছে- হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  ৪০ দিন পর্যন্ত গারে হেরা” পর্বতে থাকিয়া আল্লাহ পাক উনার ধ্যান ও যেকেরে চিল্লা দিলেনযাহার ফলে তিনিও কুরআন ও নুবুওওয়াত প্রাপ্ত হইলেন। (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৮৯লেখক ইসমাইল হোসেন দেওবন্দী)
      প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য ও দলীলভিত্তিকনির্ভরযোগ্য দলীলের ভিত্তিতে জাওয়াব দিয়ে ঈমান হিফাযত করণে সাহায্য করবেন।
জাওয়াব : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্য ডাহা মিথ্যা ও নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যা তোহমতের শামিলযা সম্পূর্ণ অশুদ্ধ।
প্রথমতঃ নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চিল্লা হিসেবে গারে হেরাতে কখনো একাধারে চল্লিশ দিন ব্যয় করেননি। বরং যখন তাঁর বয়স মুবারক তেত্রিশ থেকে চৌত্রিশতখন থেকে তিনি মাঝে মাঝে গারে হেরাতে গিয়ে মুরাক্বাবা করতেন। যা উনার সীরাত কিতাবসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা তাদের প্রচলিত চিল্লাকে সুন্নত প্রমাণ করতে গিয়ে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেযা কুফরী হয়েছে। যে প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
من كذب على متعمدا فليتبؤا مقعده من النار.
অর্থ :যে আমার নামে মিথ্যা বলেসে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (বোখারীফতহুল বারীওমদাতুল ক্বারীএরশাদুস্ সারীতাইসীরুল ক্বারীমেশকাতমেরকাতআশয়াতুল লুময়াতলুময়াতশরহুত্ ত্বীবীতালীকুছ্ ছবীহ্মোযাহেরে হক্ব)
দ্বিতীয়তঃ নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেগারে হেরাতে ধ্যান ও যিকিরে চিল্লা দেয়ার ফলে কুরআন ও নুবুওওয়ত দেয়া হয়েছেতাদের একথাও মিথ্যা ও অশুদ্ধ। কারণ কোন নবী আলাইহিস সালাম উনাকে নুবুওওয়ত ও কোন রসূল আলাইহিস সালাম সাল্লাম উনাকে রেসালত দেয়ার জন্য রিয়াযত-মুশাক্কাতমোরাক্বাবা-মুশাহাদাশর্ত করা হয়নি। অর্থাৎ রিয়াযত-মুশাক্কাত বা মোরাক্বাবা-মুশাহাদার বিণিময়ে বা বদলে অথবা কোশেশের কারণে কাউকেও নুবুওওয়ত বা রেসালত দেয়া হয়নি। বরং বিশেষভাবে উল্লেখ্য যেরিয়াযত-মুশাক্কাতমোরাক্বাবা-মুশাহাদা ইত্যাদি কোশেশের দ্বারা অলী-আল্লাহ হওয়া যায়নবী-রসূল হওয়া যায়না। হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ সম্পর্কে এ প্রকার শর্ত আরোপ করা উনাদের শানের খেলাফযদ্বারা উনাদেরকে হানত করা হয। আর নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদেরকেইহানত করা কাট্টা কুফরী।
আরো উল্লেখ্য যে কাফেরেরা হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ সম্পর্কে নানা প্রকার মন্তব্য পেশ করার ফলে কে নবী-রাসূল হবেনসে প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
الله اعلم حيث يجعل رسالته.
অর্থ :মহান আল্লাহ পাকই সবচেয়ে অধিক জানেনকোথায় উনার রেসালত রাখতে হবে। অর্থাৎ কাকে নবী এবং কাকে রসূল হিসেবে মনোণীত করতে হবেতা মহান আল্লাহ পাক সমধিক জ্ঞাত।” (পবিত্র সূরা আনআম শরীফপবিত্র আয়াত শরীফ ১২৪)
মহান আল্লাহ পাক সূরা হজ্বের ৭৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো বলেন,
الله يصطفى من الملئكة رسلا ومن الناس.
অর্থ :মহান আল্লাহ পাক ফেরেশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রসূল মনোনীত করেন।”          
মূলত উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যেসমস্ত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদেরকেই মহানআল্লাহ পাক মনোনীত ও নির্বাচিত করেন। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)
সেখানে যিনি সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীনখতামুন্নাবিয়্যীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামযাঁর শান সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা ইমরান শরীফ উনার ৮১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
واذ اخذا لله ميثاق النبيين لما اتيتكم من كتاب وحكمة ثم جاء كم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنضرنه قال اقررتم واخذتم على ذلكم اصرى قالوا اقررنا قال فا شهدوا وانا معكم من الشاهدين.
অর্থ :এবং যখন মহান আল্লাহ পাক হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের কাছ থেকে অঙ্গীকার বা শপথ গ্রহণ করলেন যেআমি কিতাব ও হিকমত থেকে তোমাদেরকে যা দান করেছি। অতঃপর তোমাদের নিকট তোমাদের কিতাবকে সত্য প্রতিপাদন করার জন্য কোন রসূল আসেনতখন নিশ্চয়ই সে রসূল উনার প্রতি ঈমান আনবে এবং উনাকে সাহায্য করবে। মহান আল্লাহ পাক বললেনতোমরা কি শপথ করছ এবং এ শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছউনারা বললেনআমরা স্বীকার করে নিলাম। মহান আল্লাহ পাক বললেনতোমরা স্বাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে স্বাক্ষী রইলাম।
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছেএই যে ওয়াদা নেয়া হয়েছেতা আলমে আরওয়াহ্য়রোজে আযলে বা অন্য কোথাও। তবে এ বিষয়ে সকলে একমত যেওয়াদা যেখানেই নেয়া হোক না কেনতবে তা সৃষ্টির শুরুতে নেয়া হয়েছে। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)
      আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
عن ابى هريرة رضى الله قال قالوا يا رسول الله صلى الله عليه وسلم متى وجيت لك النبوة قال كنت نبيا وادم بين الروح والجسد.
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আল্লাহ পাক উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেনহে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল! আপনি কখন থেকে নবীতিনি বললেন, “আমি তখনো নবী ছিলামযখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম রূহ্ এবং শরীরে ছিলেন।” (তিরমিযীমিশকাতউরফুশ্ শাজীতোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযীমায়ারেফুস্ সুনানমেরকাতআশয়াতুল লুময়াতলুময়াততালীকুছ্ ছবীহ্শরহুত্ব ত্বীবী)অন্য রেওয়ায়েতে রয়েছে,
كنت نبنا وادم بين الماء والطين.
অর্থ :আমি তখনো নবী ছিলামযখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম মাটি ও পানিতে ছিলেন।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মাধ্যমে এ কথাই সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যেতিনি তখনো নবী ছিলেনযখন হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টিই হয়নি। আর কোন নবী আলাইহিস সালাম উনাকে নুবুওওয়ত দেয়া হয়নিকোন রসূলকে রেসালত দেয়া হয়নিআল্লাহ পাক উনার রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রেসালতের উপর ঈমান না আনা পর্যন্ত। অথচ সমস্ত নবী-রাসূল আলাইহিস সালাম উনার নুবুওওয়ত ও রেসালত দেয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে সেই রোজে আযলেই। (সমূহ তাফসীরের কিতাব)
তাহলে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের এ কথা কি করে শুদ্ধ হতে পারে যেমহান আল্লাহ পাক উনার রাসূল, নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে নুবুওওয়ত দেয়া হয়েছেগারে হেরাতে ধ্যান ও যিকিরে চিল্লা দেয়ার কারণে।
আর পবিত্র কুরআন শরীফযা মহান আল্লাহ পাক নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে দিয়েছেনতা সম্পর্কেও তাদের বক্তব্য মিথ্যা। কারণগারে হেরায় যিকির ও ধ্যানে চিল্লা দেয়ার কারণে আল্লাহ পাকমহান আল্লাহ পাক উনার রাসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেপবিত্র কুরআন শরীফ দেননি বরং আল্লাহ পাক উনার রাসূলহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেমহান আল্লাহ পাক রসূল হিসেবে তৈরী করেছেনসে জন্যই পবিত্র কুরআন শরীফ দিয়েছেন। মূলত তাদের উক্ত বক্তব্য মহান আল্লাহ পাক উনার রসুলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ ও উনার শান ইহানতকারী উক্তিযা কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে,
من كذب على متعمدا فليتبؤا مقعده من النار.
অর্থ :যে আমার নামে স্বেচ্ছায় মিথ্যা কথা বলেসে যেন দুনিয়ায় থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারণ করে নেয়।” (বোখারীফতহুল বারীওমদাতুল ক্বারীএরশাদুস্ সারীতাইসীরুল ক্বারীমেশকাতমেরকাতলুময়াতআশয়াতুল লুময়াতশরহুত্ ত্বীবীতালীকুছ্ ছবীহ্মোযাহেরে হক্ব)
স্মরণীয় যেমহান আল্লাহ পাক উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে চল্লিশ বছর বয়সে নুবুওওয়ত দেয়া হয়েছে। এ কথার অর্থ হলোএই যে- মহান আল্লাহ পাকনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকেউনার চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে নুবুওওয়তের ঘোষণা আনুষ্ঠানিকভাবে দিয়েছেন। কিন্তু নবী হিসেবেই নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তৈরী হয়েছেন।
অতএব প্রতীয়মান হলো যেনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধারে চল্লিশ দিন পর্যন্ত গারে হেরায় চিল্লা দেয়ার ফলে কুরআন ও নুবুওওয়ত প্রাপ্ত হয়েছেন। একথা সম্পূর্ণ ভুলযা মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নামে মিথ্যা তোহ্মত দেয়ার শামিল এবং যা উনার শান ও আদবের খেলাফ হওয়ার কারণে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। তাই এ আক্বীদা পোষণ করা থেকে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই তওবা করা ফরজ/ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত।

৪২নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব

সুওয়াল :নূরেমুজাসসামহাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের অধিকাংশ লোকের আক্বীদা হলো যেদীর্ঘদিন পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করেহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন। যেমন তাদের কিতাবে লিখিত হয়েছে, “হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম.... দীর্ঘকাল পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে প্রথমে ঈমানকে পরিপক্ত করিয়াছেন ......। (তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব পৃষ্ঠা-৭০ লেখক- ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী)

জাওয়াব : তাদের উপরোক্ত বক্তব্য ও আক্বীদা ডাহা মিথ্যা ও অশুদ্ধ। কেননা তাদের এ বক্তব্যের দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যেআল্লাহ পাক সকল নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদেরকে নুবুওওয়ত ও রেসালত দেয়ার জন্য এমন এক ব্যক্তির নুবুওওয়ত ও রেসালতের প্রতি ঈমান আনার শর্ত আরোপ করলেনআর আল্লাহ পাক এমন এক ব্যক্তির প্রতি নুবুওওয়ত ও রেসালত দান করলেন আর উনার নুবুওওয়তের আনুষ্ঠানিকতাও ঘোষণা করলেন চল্লিশ বছর বয়স মুবারকে এবং ঘোষণা করে কিতাবও দান করলেনযিনি মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি তখনো পরিপোক্তভাবে ঈমান আনেননি।
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক নুবুওওয়তরেসালত ও কিতাব দান করা সত্বেও ঈমান পরিপোক্ত হবেনাঈমানের তাবলীগ না করা পর্যন্ত। অথচ এটি সম্পূর্ণই মনগড়া বক্তব্যযা অমূলক ও গোমরাহীর নামান্তর।
উল্লেখ্য আমাদের হানাফী মাযহাব মোতাবেক ঈমান বাড়েও না এবং কমেও নাবরং ঈমানের কুওওয়াত বা শক্তি বাড়ে বা কমে। আর যদি শাফেয়ী মায্হাব মোতাবেক ধরে নেয়া হয় ঈমান বাড়ে-কমেতবে তা কাদের সম্পর্কেহযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের না উম্মতদের?
মূলতঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের ঈমান যেমন কখনো বাড়েওনা বা কমেওনাতেমনি উনাদের ঈমানের কুওওয়াতও কখনো বাড়েওনা এবং কমেওনা। অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণের প্রত্যেককেই উনাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ঈমান ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক বিষয় পরিপূর্ণ করে নুবুওওয়ত দান করেন। অথবা নুবুওওয়ত ও রেসালত দান করার কারণে উনাদের ঈমান ও অন্যান্য সব বিষয়াদি পরিপূর্ণতা প্রাপ্ত হয়।
প্রকৃতপক্ষে উম্মতদেরই ঈমানের কুওওয়াত বাড়ে বা কমে। যে প্রসেঙ্গ মহান আল্লাহ পাক সূরা নিসা শরীফ ১৩৬নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
يا ايها الذين امنوا امنوا بالله ورسوله والكتب الذى نزل على رسوله رالكتب الذى انزل من قبل.
অর্থ :হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ঈমান আনমহান আল্লাহ পাক উনার উপর এবং উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর এবং কিতাবের উপরযা নাযিল করেছেনউনার রসূল নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি এবং সে সমস্ত কিতাবের উপরযা ইতিপূর্বে নাযিল করেছেন।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যেমহান আল্লাহ পাক ঈমানদেরকে পরিপূর্ণভাবে ঈমান আনতে বলেছেন। এখানে মহান আল্লাহ পাক নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ঈমান পরিপূর্ণ করতে বলেননিবরং উম্মতদেরকে ঈমান পরিপূর্ণ করতে বলেছেন।
আর ঈমান পরিপূর্ণ করতে বলেছেনমহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ও কিতাবসমূহের উপর।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে,
قال فا خبرنى عن الا يمان قال ان تؤمن بالله وملئكته وكتبه ورسله واليوم الاخر وتؤمن بالقدر خيره وشره.
অর্থ : হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম বলেনএকদিন হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম এসে আল্লাহ পাক উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বলেনহে আল্লাহ পাক উনার রসূল! আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন বা সংবাদ দিন অর্থাৎ ঈমান কাকে বলেনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঈমান হলো মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং উনার ফেরেশ্তাগণ উনাদের প্রতি এবং উনাদের কিতাবসমূহের প্রতি এবং উনার রসূলগণ উনাদের প্রতি এবং পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভাল-মন্দের প্রতি।” (বোখারীমুসলিমমেশকাতফতহুল বারীওমদাতুল ক্বারীএরশাদুস্ সারীতাইসীরুল ক্বারীশরহে নববীফতহুল মুল্হিমমেরকাতলুময়াতআশয়াতুল লুময়াতশরহুত্ ত্বীবীতালীকুছ্ ছবীহ্)
অর্থাৎ ঈমান হচ্ছে- উপরোক্ত বিষয়সমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। আর ঈমান বৃদ্ধি বা ঘাটতি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা আনআম উনার ২নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ করেন,
انما المؤمنون الذين اذا ذكرا لله وجلت قلوبهم واذا تلبت عليهم اياته زادتهم ايمانا وعلى ربهم يتوكلون.
অর্থ :নিশ্চয়ই ঈমানদারগণ এরূপযখন (তাদের সম্মুখে) মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির করা হয়তখন তাদের অন্তরসমূহ ভয়ে কেঁপে উঠে এবং যখন (তাদের সম্মুখে) মহান আল্লাহ পাক উনার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শুনানো হয়তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি হয় এবং তাদের রবের উপর তারা তায়াক্কুল করে।
মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা হজ্ব শরীফ উনার ৩৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে আরো বলেন,
الذين اذا ذكر الله وجلت قلوبهم.
অর্থ :যাদের (বিনয়ীদের) অন্তর মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরের দ্বারা ভীত হয়।” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরের দ্বারা আল্লাহ ভীতি পয়দা হয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে,
عن ابى هريرة رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم جددوا ايمائكم قيل يا رسول الله كيف نجدد ايماننا قال اكئروا من قول لا اله الا الله.
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রশাদ মুবারক করেন, “তোমরা তোমাদের ঈমানকে (কুওওয়াত) বৃদ্ধি কর।” বলা হলো- হে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কিভাবে ঈমান (কুওওয়াত) বৃদ্ধি করবোতিনি বললেন, “বেশী বেশী লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহু যিকিরের দ্বারা।” (আহ্মদতিবরানীহাকিমমেশকাতমেরকাতলুময়াতআশয়াতুল লুময়াতশরহুত্ ত্বীবীতালীকুছ্ ছবীহ্মোযাহেরে হক্ব)
অর্থাৎ ঈমানের কুওওয়াত বৃদ্ধি করতে হলে বেশী বেশী যিকির করতে হবে।
উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা বুঝা গেল যেযিকিরের দ্বারাই ঈমানের কুওওয়াত বৃদ্ধি ও আল্লাহ ভীতি পয়দা হয় এবং পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত উনার দ্বারা ঈমানের কুওওয়াত বৃদ্ধি পায়। তাই ঈমান বৃদ্ধি করতে হলে যিকিরের সাথে সাথে পবিত্র কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করতে হবে। আর এ লক্ষ্যে যিকির দ্বারা ফায়দা হাছিলের ক্ষেত্রে ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণ তাসাউফের তর্জ-তরীক্বার যিকিরকেই ফর বলে নির্ধারণ করেছেন। নতুবা তার আসল ফযীলত ও মকসুদ হাছিল আদৌ সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে হুজ্জাতুল ইসলামহযরত ইমাম গাজ্জালী রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর কিমিয়ায়ে সায়াদাতহইয়াউল উলুমুদ্দীনগাউসুল আযমমুহিউদ্দীনহযরত বড় পীর আব্দুল ক্বাদির জ্বিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তাঁর ফতহুর রব্বানীআফজালুল আওলিয়াহযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহিউনার মকতুবাত শরীফ এবং শায়খ আহ্মদ রেফায়ী রহমতুল্লাহি আলাইহিউনার আল বুনিয়ানুল মুশাইয়্যাদ ইত্যাদি কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
অপরদিকে ঈমানের কুওওয়াত বৃদ্ধি বা আল্লাহ ভীতি পয়দা করার পক্ষে ইসলামে অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও তাবলীগ করাকে শর্ত করা হয়নি বা তাবলীগ করাকে শর্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি বরং উল্লেখ রয়েছে যেকেউ যদি আল্লাহ ভীতি ও ঈমানী কুওওয়াত বৃদ্ধি করতে চায়তাহলে তাকে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকিরের সাথে সাথে পবিত্র কুরআন শরীফও রীতিমত তিলাওয়াত করতে হবে।
অতএবউপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রতীয়মান হলো- প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে বলে থাকে- নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীর্ঘকাল পর্যন্ত ঈমানের তাবলীগ করে প্রথমে ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেনসে কথা সম্পূর্ণই মিথ্যা অপবাদগোমরাহীমূলকবিভ্রান্তিকরমনগড়াজেহালতপূর্ণ এবং নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের শানে চরম বেয়াদবীযা সর্বোত অংশেই ঈমান হানিকর এবং যা থেকে বেঁচে থাকা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতসহ সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য ফরজ/ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত।

৪৩নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব

সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা বলে থাকে যেউম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কারামত আর পূর্ববর্তী নবীদের মোযেযা সমান কথা। যেমন এ প্রসঙ্গে তাদের কিতাবে লিখিত রয়েছে যে, “পূর্বেকার নবীদের মোযেযা আর হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মতের কারামত একই সমান।” (মালফুযাতে শায়খুল হাদীছ পৃষ্ঠা-৩৬মূল- মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভীঅনুবাদক- আঃ জলীল)
তাদের উপরোক্ত আক্বীদা এবং উক্ত কিতাবের উদ্ধৃতি কতটুকু সত্যজানতে বাসনা রাখি।

জাওয়াব : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের উপরোক্ত আক্বীদা গোমরাহীমূলকআম্বিয়া আলাইহিস সালামগণ উনাদের শানের খেলাফ যা বেয়াদবিপূর্ণ।
উল্লেখ্যقدرت(কুদরত),معجزات(মোযেযাত)كرامات(কারামত) এ তিনটি শব্দতিনটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। শব্দগুলির প্রয়োগের ক্ষেত্রেও ভিন্ন ভিন্ন। অর্থাৎ শব্দগুলি কার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে হবে তা আলাদা আলাদা।
প্রথমটি অর্থাৎ কুদরত প্রয়োগ করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহ পাক-এর শানে। দ্বিতীয়টি অর্থাৎ মোযেযা শব্দ প্রয়োগ করতে হবে শুধু হযরত আম্বিয়া আলাইহিস সালামগণ উনাদের শানে। তৃতীয়টি অর্থাৎ কারামত শব্দটি প্রয়োগ করতে হবে শুধুমাত্র হযরত আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের শানে।
উল্লেখ্য কুদরত” শব্দের অর্থ হলো শক্তি বা ক্ষমতা। অর্থাৎ যে সকল কাজসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার ক্ষমতা বলে বা খোদায়ী শক্তিতে সম্পাদিত বা সংঘটিত হয়ে থাকে বা হয় যা মহান আল্লাহ পাক ছাড়া গায়রুল্লাহ্র কোন ক্ষমতা দ্বারা সম্পাদিত করা বা সংঘটিত হওয়া কখনই সম্ভব নয় সে প্রকার কাজগুলি সংঘটিত হলেই বলা হয় যেমহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে হয়েছে। এক কথায় মহান আল্লাহ পাক উনার দুনিয়াতে বা সৃষ্টিজগতের মাঝে যা কিছু সংঘটিত হয় সমস্ত কিছু মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতের অন্তর্ভূক্ত।
কুদরত” হচ্ছে- দুপ্রকার। যথা : কুদরতে আম ও কুদরতে খাছ।
যে সমস্ত কাজসমূহ সদা-সর্বদা স্বাভাবিকভাবে সংঘটিত হয়ে আসছে বা হচ্ছে সেগুলি কুদরতে আম-এর অন্তর্ভূক্ত। যা মানুষ স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে।
আর যে সমস্ত কাজসমূহ সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে সমস্ত মানুষ তাদের ইলমসমঝআকল ও ক্ষমতা দ্বারা বুঝতে পারেনাসে সমস্ত কাজসমূহ সংঘটিত হলে মানুষ বলে যেতা মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে সংঘটিত হয়েছে এবং এটি মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতে খাছের অন্তর্ভূক্ত।
আর মোযেযা” শব্দের অর্থ হচ্ছে- অক্ষম করে দেয়া। অর্থাৎ যে অক্ষম করে দেয়। যে সকল কাজ সমূহ হযরত আম্বিয়া আলাইহিস সালামগণ ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে করা সম্ভব ছিলনাসে সমস্ত কাজসমূহ যখন তাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছেতখন সেগুলিকে বলা হয়- আম্বিয়া আলাইহিস সালামগণ উনাদের মোযেযা।
উল্লেখ্য যেহযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মোযেযামহান আল্লাহ পাক উনার কুদরতেরই অন্তর্ভূক্ত।
আর কারামত” শব্দের অর্থ হচ্ছে- সম্মান বা বুযুর্গী। যে সমস্ত কাজগুলি আউলিয়ায়ে কিরামগণ ব্যতীত অন্য কারো দ্বারা হওয়া সম্ভব নয়সে সমস্ত কাজগুলি যখন আউলিয়ায়ে কিরামগণ-এর দ্বারা সংঘটিত হয়তখন তাকে বলে- হযরত আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের কারামত
উল্লেখ্য যেহযরত আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের কারামত হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মোযেযারই অন্তর্ভূক্ত।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা ও ফতওয়া হচ্ছে উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মর্যাদা অন্যান্য উম্মতদের তুলনায় অধিক। তাই বলে অন্যান্য হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের থেকে বেশী তো নয়ই বরং উনাদের সমপরিমাণও নয়। অবশ্য অনেকে
علماء امتى كا نبياء بنى اسرائيل.
অর্থ :আমার উম্মতের আলেমগণ বণী ইস্রাইলের নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ন্যায়।
এই পবিত্র হাদীছ শরীফ পেশ করে বলে থাকে যেউম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বণী ঈস্রাইলের নবী আলাইহিস সালামগণ উনাদের অনুরূপ মর্যাদাবান বা সম্মানিত
মূলত তাদের এ কথাটি শুদ্ধ নয়। এই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার শত-সহস্র ব্যাখ্যা রয়েছেতার মধ্যে মূল ব্যাখ্যা হচ্ছে-                                        
العلماء ورثة الانبياء.
অর্থ :আলেমগণ হলেন নবীগণের ওয়ারিছ।” (আবূ দাউদবনে মাযাতিরমিযীআহ্মদবযলুল মাজহুদউরফুশ্শাজীমায়ারেফুস্ সুনানমেশকাতমেরকাতশরহুত ত্বীবীতালীক ছবীহ,আশয়াতুল লুময়াতলুময়াত)
অর্থাৎ হযরত নবী আলাইহিস সালামগণ যেমন ইলমের (ফিক্বাহ্ ও তাসাউফ) ধারক ও বাহক এবং দাওয়াতে ও তাবলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তদ্রুপ ওলামায়ে হক্কানী-রব্বানীগণও ইলমের (ফিক্বাহ্ ও তাসাউফ) ধারক ও বাহক এবং দাওয়াত ও তাবলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত।
মূলত উম্মতগণ সব সময়ই নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের তাবে’ বা অনুসারী। এ প্রসঙ্গে বলা হয় যেহযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালামযিনি খলীফাতু রাসুলিল্লাহ্ছাহিবু রাসুলিল্লাহ্যাকে মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে এক আয়াত শরীফ উনার মধ্যে (পবিত্র সূরা তওবা শরীফপবিত্র আয়াত শরীফ ৪০) তিনবার প্রশংসা করেছেন এবং সে আয়াত শরীফ ছাড়াও আরো অনেক পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহানআল্লাহ পাক যাঁর প্রশংসা করেছেনযাঁর শানেমহান আল্লাহ পাক উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لو كنت متخذا خليلا غيرربى لا تخذت ابابكر خليلا.
অর্থ :যদি আমি মহান আল্লাহ পাক ছাড়া কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতামতাহলে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনাকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতাম।” (বোখারীমুসলিমফতহুল বারীওমদাতুল ক্বারীশরহে নববীমেশকাতমেরকাতশরহুত্ ত্বীবীতালীকুছ্ ছবীহ্আশয়াতুল লুময়াত)
আর বিশেষভাবে উল্লেখ্য যেউনারর শানেই নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
افضل الناس بعد الانبياء.
অর্থ :হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের পরে তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো রশাদ মুবারক হয়েছে,
قال كنا نقول ورسول الله صلى الله عليه وسلم حى افضل امة النبى صلى الله عليه وسلم بعده ابوبكر رضى الله عنه.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেনআমরা নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার হায়াতে ত্বয়্যেবায়ই বলতামনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পর শ্রেষ্ঠ উম্মত হলেনহযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম” (আবূ দাউদমিশকাত শরীফবযলুল মাজহুদমিরকাত শরীফলুময়াতআশয়াতুল লুময়াতশরহুত ত্বীবীতালীকুছ ছবীহমুযাহেরে হক্বমিরআতুল মানাজীহ)
তাই পবিত্র কুরআন শরীফপবিত্র হাদীছ শরীফইজমা ও ক্বিয়াস দ্বারা এটাই সাব্যস্ত হয়েছে যেহযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম তিনিই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত অর্থাৎ উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বেশী সম্মানিত ও মর্যাদাবানকিন্তু তিনি নবী নন।
তাহলে কি করে অন্যান্য উম্মতদের কারামত পূর্ববর্তী হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মুযিযার সমান বলা যেতে পারেযেহেতু কারামত আর মুযিযা সমান বলার অর্থই হচ্ছেহযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনার মান আর উম্মতের মান সমান করা।
উল্লেখ্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিজ ক্ষেত্রে হযরত নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান সম্পর্কে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
تلك ابرسل فضلنا بعضهم على بعض.
অর্থ :এই রসূলগণআমি উনাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দিয়েছি।” (পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফপবিত্র আয়াত শরীফ ২৫৩)
অর্থাৎ আল্লাহ পাক নবী-রাসূল আলাইহিস সালামগণদের কাউকে কারো উপর সম্মানিত করেছেন।
আর মহান আল্লাহ পাক পবিত্র সূরা বাক্বারা শরীফ উনার ২৮৫নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মুসলমান বা উম্মতগণ হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের সম্পর্কে কি আক্বীদা পোষণ করবে সে সম্পর্কে বলেন,
لا نفرق بين احد من رسله.
অর্থ :আমরা (মহান আল্লাহ পাক উনার) হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মাঝে কোন পার্থক্য করিনা।
আর এই পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তাফসীরে মহান আল্লাহ পাক উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ولا تفضلوا بين انبياء الله.
অর্থ : তোমরা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণ উনাদেরকে ফযীলতের দিক থেকে পার্থক্য করোনা।” (মায়ারেফুল কুরআন)
অর্থাৎ সকল হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামগণই নবী এবং সকলেই নবী হিসেবেই ফযীলত প্রাপ্ত।
তাই যেখানে হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের পরস্পর-পরস্পরের মধ্যে ফযীলতের দিক থেকে তুলনা করা নিষিদ্ধসেখানে হযরত নবী-রসূল আলাইহিস সালামগণ উনাদের সাথে উম্মতকে কি করে তুলনা করা যেতে পারেমূলতঃ নবী আর উম্মতের মাকামই সম্পূর্ণ আলাদা।
আর নবী ও উম্মতের মাঝে যেরূপ পার্থক্য বিদ্যমান মোযেযা আর কারামতের মধ্যে পার্থক্যও তদ্রুপ। অর্থাৎ কারামত আর মোযেযা কখনও সমান নয়। সাথে সাথে নবী-রাসূল আলাইহিস সালামগণের মর্যাদার মাঝে পার্থক্য করা যেরূপ গুণাহ কাজ তেমনি উম্মতের কারামতকে নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের মুযিযার সমান বলা অনুরূপ গুণাহ কাজ।
কাজেই উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের আলিম সম্প্রদায় আর পূর্ববর্তী যুগের হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ সমান মর্যাদার অধিকারী এবং উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের কারামত ও পূর্ববর্তী হযরত নবী আলাইহিমুস সালামগণ উনাদের কারামত সমানএ ধরণের কথা বা আক্বীদা থেকে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের এবং সংশ্লিষ্ট সকলের তওবা করা ফর-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত।

৪৪নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব

সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা মনে করে থাকে যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু দীর্ঘকাল পর্যন্ত তাবলীগ করেই ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন। তাই ঈমান পরিপোক্ত ও ছাহাবায়ে কিরামদের মত কাজ করতে হলে প্রচলিত তাবলীগ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তদের বিশিষ্ট আমীরমাওলানা ইসমাঈল হোসেন দেওবন্দী লিখিত তাবলীগ গোটা উম্মতের গুরু দায়িত্ব” নামক কিতাবের ৭০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে যে, “হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ঈমান দীর্ঘকাল তাবলীগ করার কারণেই পরিপোক্ত বা মজবুত হয়েছে। তাই যার ঈমানের দাওয়াতের আমল নাইতার ঈমান থাকিতে পারেনা।
এখন আমাদের সুওয়াল হলো- ঈমান পরিপোক্ত হওয়া সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য ও শরীয়তসম্মতদলীল ভিত্তিক জাওয়াব দানে বাধিত করবেন।

জাওয়াব : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য অত্যন্ত আপত্তিকরঅজ্ঞতামূলকবিভ্রান্তিকর ও পবিত্র কুরআন শরীফপবিত্র সুন্নাহ শরীফইজমাক্বিয়াস উনাদেরও বিরোধী।
কেননা তাদের উপরোক্ত বক্তব্য দ্বারা একথাই বুঝানো হয়েছে যেঈমান পরিপোক্ত হওয়ার উপায় হলোদ্বীনের তাবলীগ করা। অর্থাৎ দ্বীনের তাবলীগের কারণেই ঈমান পরিপোক্ত হয়।
মূলত পবিত্রকুরআন শরীফপবিত্র সুন্নাহ শরীফইজমাক্বিয়াস উনাদের কোথাও ঈমান পরিপোক্ত করার জন্য তাবলীগ করাকে শর্ত করা হয় নাই। বরং ঈমান পরিপোক্ত বা মজবুত করার একমাত্র প্রধান উপায় হলোঅন্তর পরিশুদ্ধ করাকারণ যার অন্তর পরিশুদ্ধ নয় তার ঈমান কখনো পরিপোক্ত বা মজবুত হতে পারেনা। কেননা ঈমানের সম্পর্ক সম্পূর্ণরূপেই অন্তরের সাথে। যার কারণে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে অন্তর পরিশুদ্ধ করার জোর নির্দেশ এসেছে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে বলেন,
قد افلح من زكها وقد خاب من دسها.
অর্থ :নিশ্চয় ওই ব্যক্তি সফলতা অর্জন করেছেযে তার অন্তরকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর ওই ব্যক্তি বিফল হয়েছেযে তার অন্তরকে কলুষিত করেছে।” (পবিত্র সূরা শামস শরীফপবিত্র আয়াত শরীফ ৯-১০)
আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন,
فى ان الجسد مضغة اذا صلحت صلح الجسدكله واذا قسدتفسد الجسد كله الا وهى القلب.
অর্থ :নিশ্চয় মানুষের শরীরে একটি গোশতের টুকরা রয়েছেতা সংশোধন হলে গোটা শরীর সংশোধন বা পরিশুদ্ধ হবে। আর তা বিনষ্ট হলে গোটা শরীরটাই বিনষ্ট হবে।” (বুখারী শরীফফতহুল বারীওমদাতুল ক্বারীরশাদুস সারীমিশকাত শরীফমিরকাত শরীফশরহুত ত্বীবীতালীকুছ ছবীহ,আশয়াতুল লুময়াতমুযাহেরে হক্ব)
অর্থাৎ অন্তর পরিশুদ্ধ হলে ঈমান পরিপোক্ত হবেআর ঈমান পরিপোক্ত হলেই দ্বীনের তাবলীগসহ সব আমলই সঠিকভাবে সম্পাদিত হবে। আর অন্তর পরিশুদ্ধ না হলে ঈমান পরিপোক্ত বা মজবুত হবেনা আর ঈমান পরিপোক্ত না হলে দ্বীনের তাবলীগ কেনকোন আমলই সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়।
অতএবপ্রমাণিত হলো যেঈমান পরিপোক্ত করার উপায় হলো- অন্তর পরিশুদ্ধ করা। আর এ অন্তর পরিশুদ্ধ করতে হলেঅন্তর পরিশুদ্ধ করার যে ইলম রয়েছেতা অর্জন করতে হবে। অর্থাৎ ইলমে তাসাউফ অর্জন করতে হবে। কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেইরশাদ মুবারক হয়েছে,
العلم علمان علم فى القلب فذاك علم النافع علم على اللسان فذالك حجة الله عز وجل على ابن ادم.
অর্থ :“(দুপ্রকার ইলম অর্জন করা ফর) (১) ক্বাল্ব পরিশুদ্ধকরণ ইলম,যা উপকারী ইলম। (২) লেসানী ইলম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ্ বা শরীয়তযা আল্লাহ পাক-এর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য দলীল।” (দারেমীতারগীবতারীখদায়লমীআব্দুল বারমিশকাত শরীফমিরকাত শরীফশরহুত ত্বীবীতালীকুছ্ ছবীহ্)
আর ইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহিতিনি বলেন,
من تفقه ولم بتصوف فقد تفسق ومن تصوف ولم يتفقة فقد تزندق- ومن جمع بينهما فقد تحقق.
অর্থ :যে ব্যক্তি শুধু ইলমে ফিক্বাহ্ অর্জন করলো কিন্তু ইলমে তাসাউফ অর্জন করলোনাসে ব্যক্তি ফাসিক। আর যে ব্যক্তি তাসাউফ করে কিন্তু শরীয়তকে স্বীকার করেনাসে কাফের। আর যে ব্যক্তি উভয় ইলম অর্থাৎ ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফ অর্জন করলোসে ব্যক্তিই মুহাক্কিক।” (মিরকাত শরীফ)
এ আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যেইমাম মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মতে যার অন্তর পরিশুদ্ধ নয়সে ফাসেকের অন্তর্ভূক্ত। অর্থাৎ তার ঈমান পরিপোক্ত নয় বা সে মুমিনে কামেল নয়। আর অন্তর পরিশুদ্ধ করার একমাত্র উপায় হলোইলমে তাসাউফ অর্জন করা।
এখন কেউ যদি ইলমে তাসাউফ অর্জন করে অন্তর পরিশুদ্ধ করতে চায়তবে তাকে অবশ্যই এমন একজন আল্লাহওয়ালা লোকের সোহ্বত লাভ করতে হবেযিনি ইলমে শরীয়ত ও ইলমে তাসাউফে পূর্ণতা প্রাপ্ত।
আর তাই মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যেইরশাদ মুবারক করেন,
يا ايها الذين امنةا اتقوا لله وكونوا مع الصادقين.
অর্থ :হে ঈমানদারগণমহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর এবং সত্যবাদীগণের সাথী হও।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফপবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
তাই দেখা যায়হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যত ইমামমুজতাহিদআউলিয়ায়ে কিরাম তথা হক্কানী-রাব্বানী আলেমগণ এসেছেনপ্রত্যেকেই ছদেক্বীনদের সোহ্বত এখতিয়ার করে ইলমে তাসাউফ চর্চা করার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করেছেন। তথা নিজ ঈমানকে পরিপোক্ত বা মজবুত করেছেন।
আর তাই ইমামে আযমআবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
لولا سنتان لهلك ابو نعمان.
অর্থ :আমি (ইমামে আযম) যদি দুটি বৎসর না পেতামতবে আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম। অর্থাৎ আমি যদি ইমাম জাফর সাদিক আলাইহিস সালাম উনার ছোবতে দুবৎসর থেকে ইলমে তাসাউফ অর্জন করে অন্তর পরিশুদ্ধ বা ঈমান মজবুত না করতামতবে আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম।” (সাইফুল মুকাল্লেদীন)
এখানে বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় বিষয় এই যেযিনি ইমামে আযমযিনি বিশ্ববাসীকে হানাফী মায্হাব নামক শ্রেষ্ঠ একটি মায্হাব উপহার দিয়েছেনযার ইলমের প্রশংসায় স্বয়ং হযরত ইমাম শাফেয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
الفقهاء كل عيال ابى حنيفة رحمة الله تعالى.
অর্থ :সকল ফক্বীহগণ ইলমের দিক দিয়ে ইমামে আযম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি নিকট সন্তান তুল্য।” (লাউস্ সুনানমানাকেবে আবূ হানীফা)
যিনি আজীবন দ্বীনের তাবলীগে বা ইলমের দর্সে নিয়োজিত ছিলেনসেই ইমামে আযমআবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেনআমি আল্লাহওয়ালাদের ছোহবতে গিয়ে ইলমে তাসাউফ অর্জন না করলে মুমিনে কামেল হতে পারতাম না বা আমার ঈমান পরিপোক্ত হতোনা।
উল্লেখ্য তাবলীগ করলেই যদি ঈমান পরিপোক্ত হতোতাহলে এত অবর্ণনীয় ইলম ও সমঝের অধিকারী হযরত ইমামে আযমআবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি তো একথাও বলতে পারতেন যেতাবলীগ না করলে বা ইলমের দর্স না দিলে আমি ধ্বংস হয়ে যেতাম। কিন্তু তিনি তা বলেননি।
তাই এর দ্বারা একথাই প্রমাণিত হয় যেক্বিয়ামত পর্যন্ত তাবলীগ করলেও ঈমান পরিপক্ত হবেনাযতক্ষণ পর্যন্ত হক্কানী-রব্বানী আল্লাহ ওয়ালাগণের সোহ্বত লাভ করে ইলমে তাসাউফ চর্চার মাধ্যমে অন্তর পরিশুদ্ধ করা না হবে।কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা যে লিখেছেদীর্ঘকাল তাবলীগ করার কারণেই হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ঈমান পরিপোক্ত হয়েছে। তা ডাহা মিথ্যামনগড়াবানোয়াটবিভ্রান্তিকর ও পবিত্র কুরআন শরীফপবিত্র সুন্নাহইজমাক্বিয়াস বহির্ভূত।
বস্তুত: হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরও ঈমান পরিপোক্ত হয়েছে সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বরকতময় ছোহবত হাছিলের মাধ্যমে বা কারণে। তাবলীগ বা দাওয়াতের কারণে নয়। কারণ যদি বলা হয়দীর্ঘকাল তাবলীগ করার কারণে উনাদের ঈমান পরিপোক্ত হয়েছিলতবে প্রশ্ন জাগেযে সকল ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ঈমান আনার সাথে সাথে শহীদ হয়েছেন বা ইন্তেকাল করেছেনঅর্থাৎ যাঁরা সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করার পর দীর্ঘকাল তাবলীগ করতে পারেননিতবে কি উনাদের ঈমান পরিপোক্ত ছিলনাপ্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্য মোতাবেক বুঝা যায় যেউনাদের ঈমান পরিপোক্ত ছিলনা। (নাউযুবিল্লাহ) মূলত এ ধরণের আক্বীদা পোষণ করা কুফরী।
মূলকথা হলোহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ঈমান কখনোই তাবলীগ করার কারণে পরিপোক্ত হয়নি। বরং সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরানী দৃষ্টিবরকতময় ছোহবতই উনাদের ঈমান পরিপোক্ত হওয়ার কারণ। যার সুস্পষ্ট নিদর্শন আমরা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দেখতে পাই। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
لا يؤمن احدكم حتى يكون لله رسوله احب اليه من نفسه وماله ورالده ووالده والناس اجمعين.
অর্থ :তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত (পরিপূর্ণ) মুমিন হতে পারবেনা বা তোমাদের ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপোক্ত হবেনাযতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের জান-মালপিতা-মাতাসন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় না হবেন।” (বোখারীমুসলিমমেশকাতফতহুল বারীওমদাতুল ক্বারীরশাদুস্ সারীশরহে নববীমিরকাতআশয়াতুল লুময়াততালীকুছ্ ছবীহ্শরহুত্ ত্বীবী)
কিতাবে উল্লেখ আছে যেসাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীন,নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এ পবিত্র হাদীছ শরীফখানা বর্ণনা করেনতখন সেখানে হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেনইয়া রাসুলাল্লাহইয়া হাবীবাল্লাহছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আপনাকে সবকিছু থেকে অধিক মুহব্বত করতে পেরেছিকিন্তু আমার জীবনের চেয়ে নয়। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালামআপনি এখনও মুমিনে কামিল হতে পারেননি” একথা শুনে হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বাচ্চা শিশুদের ন্যায় গড়া-গড়ি দিয়ে কাঁদতে লাগলেন। (কারণ তিনি মনে করলেনযেজন্য তিনি পিতা-মাতাভাই-বোনবাড়ী-ঘরধন-সম্পদআত্মীয়-স্বজনজ্ঞাতি-গোষ্ঠী ইত্যাদি সব ছেড়ে ঈমান গ্রহণ করলেনসে ঈমানই যদি পরিপূর্ণ বা মজবুত না হয়তবে এতকিছু ত্যাগ করার সার্থকতাআল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূলহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পরম সন্তুষ্টি পাওয়ার অবকাশ কোথায়?)
হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার এই আকুতি দেখে সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালামআপনি আমার নিকটবর্তী হ” হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি উনার নিকটবর্তী হলেসাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত মুবারকউনার সিনা মুবারক উনার উপর রাখলেন (তাছাউফের ভাষায়ফয়েজে ইত্তেহাদী দিলেন)। সাথে সাথে হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বলেনইয়া রাসুলাল্লাহইয়া হাবীবাল্লাহআমার এখন এরূপ অবস্থা হয়েছে যেআমি একজন কেনআমার ন্যায় শত-সহস্র ওমর আপনার জন্যে জান-কুরবান করতে প্রস্তুত। (ইনশাআল্লাহ)। একথা শুনে সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম! এতক্ষণে আপনি মুমিনে কামিল হয়েছেন। (সুবহানাল্লাহ)
উল্লিখিত ঘটনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ঈমান তাবলীগের কারণে পরিপোক্ত হয়নিবরং সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার খাছ ছোহবত ও মুবারক ফয়েজতাওয়াজ্জুহ উনার কারণেই উনাদের ঈমান পরিপোক্ত বা মজবুত হয়েছে। কেননা যদি তাবলীগের কারণেই ঈমান পরিপোক্ত হতোতবে সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামহযরত মর ইবনুল খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বলতেনতুমি বেশী-বেশী তাবলীগ কর। তোমার ঈমান পরিপোক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি একথা না বলেউনাকে ফয়েজতাওয়াজ্জুহ্ দিয়ে উনার ঈমান পরিপোক্ত করে দিলেনঅর্থাৎ মুমিনে কামিল বানিয়ে দিলেন।
কাজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ যেরূপ সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ছোহবত লাভ করে ইলমে ফিক্বাহ ও ইলমে তাসাউফে পূর্ণতা লাভ করেন এবং পূর্ণ ইছলাহ প্রাপ্ত হয়ে নিজ ঈমানকে পরিপোক্ত করেছেন ও মুমিনে কামিল হয়েছেন।
তদ্রুপ বর্তমানেও যদি কেউ নিজ ঈমানকে পরিপোক্ত করতে চায়তবে হক্কানী-রাব্বানী আলেম তথা ছদেক্বীনগণের ছোহবত লাভ করে ইলমে ফিক্বাহ্ ও ইলমে তাছাউফে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়ে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ঈমান পরিপোক্ত হওয়া সম্পর্কিত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উল্লিখিত বক্তব্য ডাহা মিথ্যামনগড়াবিভ্রান্তিকরজেহালতপূর্ণ ও শরীয়ত বিরোধী তো অবশ্যই। এ ধরণের বক্তব্য পেশ করা থেকে বিরত থাকা সকলের জন্যেই ফর/ওয়াজিব।
অতঃপর তাদের আরো বক্তব্য হচ্ছে যেযার ঈমানের দাওয়াতের আমল নাইতার ঈমান থাকিতে পারেনা। অর্থাৎ যে তাবলীগ করেনাসে বেঈমান।
মূলত প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এই বক্তব্যটিও অত্যন্ত আপত্তিকরজেহালতপূর্ণ ও শরীয়ত বিরোধী। কারণ শরীয়ত ঈমান থাকা বা না থাকার জন্যে তাবলীগ করা বা না করাকে শর্ত করেনি। অর্থাৎ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের  কোথাও একথা বলা হয়নি যেতাবলীগ না করলে ঈমান থাকবেনা।
বস্তুতঃ তাবলীগে আম হলো ফরজে কিফায়াযা কিছুসংখ্যক হক্কানী-রাব্বানী আলেমগণ আমল করলে সকলেরই হক্ব আদায় হয়ে যায়। অথচ প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উক্ত বক্তব্য দ্বারা একথাই বুঝানো হয়েছে যেতাবলীগে আম ফরজে আইনযা সকলের জন্যেই করা ফরজনচেৎ ঈমান থাকবেনা। আসলে এটা সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফপবিত্র সুন্নাহ্ শরীফইজমাক্বিয়াস উনাদের বিপরীত।
কাজেই প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের একথা যার ঈমানের দাওয়াতের আমল নেইতার ঈমান নেই বা সে বে-ঈমান।” যদি সত্য ধরে নেয়া হয়তবে এটাই সাব্যস্ত হয় যেফরজে কেফায়া হিসেবে যেসকল হক্কানী-রব্বানী আলেমগণ তাবলীগে আমে নিয়োজিত আছেনতাঁরা ব্যতীত যারা তাবলীগে আমে নিয়োজিত নয় বা যারা তাবলীগ বা দাওয়াতের কাজ করছেন নাতারা সকলেই বে-ঈমান বা কাফের। অথচ যা সম্পূর্ণই কুফরীমূলক কথা।
কেননা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে এসেছেযখন কোন ব্যক্তিকে কাফের ফতওয়া দেয়া হয়তখন সে কথাটা আকাশের দিকে যায়আকাশের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর সেকথা যমীনের দিকে নামেতখন যমীনেরও দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। অতঃপর উক্তকথা যাকে বলা হয়েছেসে যদি তার উপযুক্ত হয়ে থাকে অর্থাৎ কাফের হয়ে থাকেতবে তার উপর পতিত হয়। আর যদি সে কাফের না হয়ে থাকেতবে যে কাফের ফতওয়া দিয়েছেতার উপরই পতিত হয় এবং সে কাফের হয়ে মারা যায়। (ফতওয়ায়ে আলমগীরী)
এ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা মুতাবিক প্রমাণিত হয় যেযারা বলবে, “তাবলীগ না করলে ঈমান থাকতে পারেনা বা তারা বেঈমান”, তবে তাদের উপরই সে হুকুম বর্তাবে। কারণ তাদের পক্ষে কস্মিনকালেও প্রমাণ করা সম্ভব হবেনা যেপবিত্র কুরআন শরীফপবিত্র হাদীছ শরীফইজমা ও ক্বিয়াস উনার কোথাও একথা উল্লেখ আছে যেতাবলীগ বা দাওয়াতের কাজ না করলে ঈমান থাকেনা। বরং খোদা নাখাস্তসকলেই যদি তাবলীগ করা থেকে বিরত থাকেবড়জোড় ফরজে কিফায়া তরক করার কারণে কবীরা গুণাহে গুণাহ্গার হবে। হ্যাঁকেউ যদি ফরজে কিফায়াকে অস্বীকার করেতবে সে কাফির হতে পারে।
কিন্তু তাবলীগ না করলে ঈমান থাকতে পারেনাএকথা সম্পূর্ণই পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বহির্ভূতডাহা মিথ্যাবিভ্রান্তিকর ও কুফরীমূলক। এ ধরণের আক্বীদা থেকে তওবা করা প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোক বা যারা এরূপ আক্বীদা পোষণ করে তাদের সকলের জন্যেই ফর/ওয়াজিব।

৪৫নং সুওয়াল ও তার জাওয়াব

সুওয়াল : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকেরা ক্ষেত্র বিশেষে হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম ‍উনারা ভুল ত্রুটি করেছেন একথা প্রচার করে থাকে। যা তাদের আমীরমুরুব্বী এমনকি হযরতজীদের বয়ানে শোনা যায় ও লেখনীতে পাওয়া যায়। যেমন- হযরতজীর কয়েকটি স্মরণীয় বয়ান” নামক কিতাবের ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠার বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যেকিছু সাহাবী ওহুদ যুদ্ধে ভুলের স্বীকার হয়ে চীজ-আসবাব (গণীমতের মাল)-এর দিকে দৃষ্টি দিয়েগীরীপথ থেকে সরে এসে রাসূলের নির্দেশ অমান্য করায় ওহুদ যুদ্ধে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে.....। অর্থাৎ কিছু সাহাবী অর্থলোভী ছিলেনযার জন্যে ওহুদ যুদ্ধে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ অমান্য করেন।
এখন আমাদের সুওয়াল হলো প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের হযরতজীমুরুব্বী ও আমীরগণ যেতাদের বয়ানে এবং লেখনীতে হযরত সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ভুল-ত্রুটি করেছেনএ ধরণের কথা বলে ও লিখে এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের সম্পর্কে ক্ষেত্রবিশেষে সমালোচনা করেতা কতটুকু শরীয়তসম্মত?

জাওয়াব : প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের উপরোক্ত বক্তব্য ও কাজ নিতান্তই অজ্ঞতামূলকবিভ্রান্তিকর এবং হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের প্রতি গালি দেয়ার শামিল। অথচ পবিত্রকুরআন শরীফপবিত্র হাদীছ শরীফইজমা ও ক্বিয়াস উনাদর ভিত্তিতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের সমালোচনা করাউনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা ও উনাদেরকে গালি দেয়া সম্পূর্ণ হারামনাজায়েয ও কুফরী।
এ প্রসঙ্গে কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে যে,
ان الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله فى الدنيا والاخرةواعد لهم عذابا مهينا.
অর্থ : নিশ্চয় যারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (পবিত্র সূরা আহযা শরীফপবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)
মূলত উপরোক্ত আয়াত শরীফ দ্বারা হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। কারণ হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করাতিরস্কার করাসমালোচনা করাগালি দেয়া ইত্যাদি সবই মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার শামিল। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যে,
الله الله فى اصحابى لا تتخذو هم غرضا من بعدى فمن احبهم فبحبى احبهم ومن ابغضهم فيغض ابغضهم ومن اذاهم فقد اذانى ومن اذانى فقد اذى الله ومن اذى الله فيوشك ان ياخذه.
অর্থ : সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাকউনাকে ভয় কর। আমার ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় কর। আমার ওফাত মুবারকের পরে উনাদেরকে তোমরা তিরস্কারের লক্ষ্যস্থল করনা। যে ব্যক্তি উনাদেরকে মুহব্বত করলোসে আমার প্রতি মুহব্বত করার কারণেই করলো। আর যে ব্যক্তি উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করলোসে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করার কারণেই তা করলো। আর যে ব্যক্তি উনাদেরকে কষ্ট দিলসে যেন আমাকেই কষ্ট দিল। আর যে ব্যক্তি আমাকে কষ্ট দিলসে মূলতঃ মহান আল্লাহ পাক উনাকেই কষ্ট দিল। আর যে মহান আল্লাহ পাক উনাকে কষ্ট দিবেমহান আল্লাহ পাক তাকে অতি শীঘ্রই পাকড়াও করবেন।” (তিরমিযী শরীফমিশকাত শরীফতোহফাতুল আহওয়াযীমায়ারেফুস্ সুনানউরফুশ্ শাজীমেরকাতআশয়াতুল লুময়াতলুময়াতশরহুত্ ত্বীবীতালীকুছ্ ছবীহ্মোযাহেরে হক্ব)
এ আলোচনা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হলো যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করাউনাদেরকে তিরস্কার করাঅর্থলোভী ইত্যাদি বলে গালি দেয়ামহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে লানত প্রাপ্তি ও জাহান্নামের আযাবের উপযুক্ত হওয়ার কারণ। শুধু তাই নয়এ ধরণের লোকদের প্রতি লানতের বদদুআ করার নির্দেশ বান্দাদেরকেও দেয়া হয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن عبد الله بن عمر- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم- اذا رأيتم الذين يسبون اصحابى فقولوا لعنة الله على شركم.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত- সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যখন তোমরা দেখ যেকেউ আমার ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে গালি দিচ্ছেতখন তোমরা বল- তোমার এ জঘন্যতম কাজের জন্য তোমার প্রতি আল্লাহ পাক-এর লানত।” (তিরমিযীমেশকাততোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযীমায়ারেফুস্ সুনানউরফুশ্ শাজীমেরকাতআশয়াতুল লুময়াতশরহুত্ ত্বীবীতালীকুছ্ ছবীহ্লুময়াত)
আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষিত হয়েছে,
فمن سبهم فعليه لعنة الله والملاءكة والناس اجمعين ولا يقبل الله منه سرفا ولا عدلا.
অর্থ :যে ব্যক্তি হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে গালি দেয়উনাদের প্রতি শুধু মহান আল্লাহ পাক উনার লানত নয় বরং হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালামমানুষ এমনকি সকল মাখলুকাতের পক্ষ থেকেই তাদের প্রতি লানত বর্ষিত হয়। (যারফলে) তাদের কোন ফর ও নফল ইবাদত মহানআল্লাহ পাক কবুল করেননা।” (মোযাহেরে হক্ব)
অতএব প্রমাণিত হলো যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করাউনাদের কোন প্রকার সমালোচনা করাউনাদেরকে নাক্বেছ বা অপূর্ণ বলাউনাদেরকে অর্থলোভী ইত্যাদি অশালীন ভাষায় গালি দেয়া হারাম ও নাজায়েয। সাথে সাথে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহ সকল মাখলুকাতের পক্ষ হতে লানত বর্ষণের কারণ। যা জাহান্নামী হওয়ার কারণও বটে।
উল্লেখ্য কিছু লোক রয়েছেযারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের প্রতি অজ্ঞতাহেতুহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের অশেষ ও অবর্ণনীয় মর্যাদা-মর্তবা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে এবং কিছু সংখ্যক ইসলাম ও সাহাবী বিদ্বেষী ঐতিহাসিকদের পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ বিরোধীমনগড়াইতিহাস পাঠ করেআর সে দলীল দিয়ে মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সবচেয়ে অধিক প্রিয়পাত্রন্যায়ের মূর্তপ্রতীকসত্যের চরম নিদর্শনহক্বের পূর্ণ মাপকাঠিদ্বীন ইসলামের ভিত্তি স্থাপনকারী এবং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তসম্মানিতহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেসমালোচনা করেতিরস্কার করে ও অশালীন ভাষায় গালি দেয়। মূলত এ সকল লোক যেরূপ মহানআল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ  হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শত্রুতদ্রুপ দ্বীন ইসলাম উনারও শত্রু। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রত্যেকেরই দায়িত্ব ও কর্তব্য।
মূলকথা হলোমহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ ‍উনাদের অশেষ ও সীমাহীন মর্যাদা-মর্তবা বর্ণনা করেছেনযা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের প্রায় সর্বত্র সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তন্মধ্যে নিম্নোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফখানাই আক্বলমন্দের জন্যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের মর্যাদা-মর্তবা অনুধাবনে যথেষ্ট। যেমন মহান আল্লাহপাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন
والسابقون الاولون من المهاجرين والانصار والذين اتبعوهم باحسان رضى الله عنهم ورضوا عنه واعد لهم جنت تحبرى من تحتها الانهار خالدين فيها ابدا ذالك الفوز العظيم.
অর্থ :“(ঈমান ও আমলে) সর্বপ্রথম প্রথম স্থান অধিকারী আনছার ও মুহাজির অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ এবং ইখলাছের সাথে উক্ত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের অনুসরণকারী সকলের প্রতিই মহান আল্লাহ পাক সন্তুষ্ট এবং উনারাও মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি সন্তুষ্ট। হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও উনাদের অনুসারীদের জন্য মহান আল্লাহ পাক এরূপ বেহেশ নির্ধারিত করে রেখেছেনযার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত হতে থাকবেতারা চিরদিন সে বেহেশতে অবস্থান করবেনযা উনাদের বিরাট সফলতা।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফপবিত্র আয়াত শরীফ ১০০)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা প্রমাণিত হলো যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সকলের প্রতিই মহান আল্লাহ পাক পূর্ণ সন্তুষ্ট এবং উনারা সকলেই নিশ্চিত জান্নাতী। শুধু তাই নয়সাথে সাথে যারা উনাদেরকে অর্থাৎ হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে ইখলাছের সাথে অনুসরণ করবেউনাদের প্রতিও মহান আল্লাহ পাক তদ্রুপ সন্তুষ্ট এবং উনাদের জন্যেও তদ্রুপ বেহেশ নিশ্চিত। (সুবহানাল্লাহ)
আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের মর্যাদা-মর্তবা যথাযথভাবে অবগত হয়েউনাদেরকে ইখলাছের সহিত পরিপূর্ণ অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن عبد الله بن مسعود قال- من كان مستنا فليستن بمن قدمات فان الحى لا تؤمن عليه الفتنة اولئك اصحاب محمد صلى الله عليه وسلمكانوا افضل هذه الامة- ابرها قلوبا واعمقها علما واقلها تكلفا- اختارهم الله لصحبة نبيه ولاقامة دينه- فاعوفوالهم فضلهم واتبعوا على اثرهم وبمسكوا بما استطعتم من اخلاقهم وسيرهم فانهم كانوا على الهدى الميتقيم.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত॥ যে ব্যক্তি শরীয়তের সঠিক তরীক্বা অনুসরণ করতে চায়তার উচিত নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রিয় ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের অনুসরণ করা। ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণই উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তমউনারা আত্মার দিক দিয়ে অধিক পবিত্রইলমের দিক দিয়ে গভীর ইলমের অধিকারীউনারা লোক দেখানো কোন আমল করতে জানেন না। আল্লাহ পাক উনাদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথী হিসাবে মনোনীত করেন। সুতরাং উনাদের মর্যাদা-মর্তবাফাযায়েল-ফযীলতশান-শওকত সম্পর্কে অবগত হও এবং উনাদের কথা ও কাজের অনুসরণ কর এবং যথাসম্ভব উনাদের সীরত-ছূরতকে গ্রহণ করকারণ উনারা হিদায়েত ও সিরাতুল মুস্তাক্বীম”-এর উপর দৃঢ়চিত্ত ছিলেন।” (রজীনমেশকাতমেরকাতলুময়াতআশয়্যাতুল লুময়াততালীক্বশরহুত্ ত্বীবীমোযাহেরে হক্বমিরআতুল মানজীহ্)
এখন প্রশ্ন হলোযাঁদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক স্বয়ং সন্তুষ্টযাঁদের জন্য জান্নাত নিশ্চিতযাঁদের অনুসরণকারীগণও মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রাপ্তযাঁরা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম উম্মতযাঁরা আত্মার দিক দিয়ে অধিক পবিত্রযাঁরা গভীর ইলমের অধিকারীযাঁদের অন্তর ইখলাছে পরিপূর্ণযাঁদেরকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাহাবী মনোনীত করা হয়েছেযাঁরা ছিরাতুল মুস্তাক্বীমের উপর অত্যন্ত দৃঢ়যাঁদের সমূহ সীরত-ছূরতকে অনুসরণ করার জোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেখানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের বক্তব্য মোতাবেক উনারা যদি অর্থলোভী ও রাসূলের নির্দেশ অমান্যকারী হনতবে সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে- তাহলে কি নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অর্থলোভী ও উনার নির্দেশ অমান্যকারীদের আদর্শ অনুসরণ করতে বলেঅর্থলোভ ও নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ অমান্য করার মত জঘন্য অপরাধকে স্বীকৃতি দিয়েছেন? (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক)। যে ব্যক্তিই এরূপ আক্বীদা পোষণ করবেসে ব্যক্তিই ঈমান হারা হবে।
মূলত হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কস্মিনকালেও অর্থলোভী ও নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ অমান্যকারী ছিলেন না। বরং উনাদের পক্ষে এগুলো করার কথা চিন্তাও করা যায় না।
কাজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ ওহুদ যুদ্ধে দুনিয়াবী চীজ-আসবাবের মোহে বা অর্থের লোভে নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ অমান্য করেছিলেনপ্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের এ বক্তব্যও সম্পূর্ণই মনগড়াবানোয়াটবিভ্রান্তিকর ও কুফরীর অন্তর্ভূক্ত। সাথে সাথে সঠিক ও গ্রহণযোগ্য ইতিহাসের সম্পূর্ণ বিপরীত।
কারণ প্রথমতঃ বলতে হয় যেউনাদের অর্থের প্রতি লোভ করার তো প্রশ্নই উঠে নাকেননা যাঁরা মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূল নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বতে ও নির্দেশে নিজস্ব বাড়িঘরধন-সম্পদছেলে-মেয়েস্ত্রীপিতা-মাতাভাই-বোন ও সবকিছু ত্যাগ করেছেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার এক কথায় সমস্ত ধন-সম্পদ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় ব্যায় করেছেন। এমন কি মহান আল্লাহ পাক ও উনার রসূলনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রাণকেও বিলিয়ে দিয়েছেন। উনারা ওহুদ যুদ্ধের সামান্য কিছু চীজ-আসবাব বা গণীমতের মালের প্রতি লোভ করবেনতা কি করে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারেউল্লেখ্য নিজস্ব ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ যেকতটুকু ছখী বা দানশীল ছিলেন এবং দান করার ক্ষেত্রে যেসর্বদা প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ হতেননিম্নে তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত পেশ করা হলো- যার দ্বারা স্পষ্টতঃই প্রমাণিত হবে যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের পক্ষে কস্মিনকালেও দুনিয়াবী চীজ-আসবাবের দিকে দৃষ্টি দেয়া বা অর্থলোভী হওয়া সম্ভব নয়।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছেহযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন,
عن عمر قال- امرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ان نتصدق ووافق ذالك عندى مالا فقلت البوم اسبق ابابكر سبقته يوما. قال فجئت بنصف مالى- فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما ابقيت لا هلك فقلت مثله واتى ابوبكر بكل ما عنده فقال يا ابابكر ماابقيت لا هلك فقال ابقيت لهم الله ورسوله- قلت لا اسبقه الى شئ ابدا.

অর্থ :হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, (তাবুকের যুদ্ধের সময়) সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামআমাদের (হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদেরকে) দান-খয়রাত করার নির্দেশ দিলেন। আর সে সময় আমার নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণ সম্পদ ছিল। আমি বললাম (মনে করলাম)আজকে আমি দান করার ক্ষেত্রে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম থেকে অগ্রগামী হয়ে যাব। একথা ভেবে আমি আমার সম্পদের অর্ধেক নিয়ে আসলাম। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, “হে হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালামআপনিআপনার পরিবারবর্গের জন্য কি রেখে এসেছ?” আমি বললামযতটুকু নিয়ে এসেছিততটুকু রেখে এসেছি। এমন সময় হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার নিকট যা ছিল (টাকা-পয়সাহাড়ি-পাতিলঘটি-বাটি এমন কি ঝাড়ুসহ)সব নিয়ে আসলেন। সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বললেন, “হে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালামআপনি পরিবারবর্গের জন্য কি রেখে আসলে?” হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম বললেনআমার পরিবারবর্গের জন্য আল্লাহ পাক ও তাঁর রাসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রেখে এসেছি। (আর কিছুই রেখে আসিনিসবই নিয়ে এসেছি)। হযরত উমর ইবনুল খত্তাব আলাইহিস সালাম বলেন, (আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম) আমার পক্ষে দান করার ক্ষেত্রে হযরত আবূ বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম থেকে অগ্রগামী হওয়া কখনো সম্ভব নয়।” (আবূ দাউদতিরমিযীমেশকাতবযলুল মাজহুদতোহ্ফাতুল আহ্ওয়াযীউরফুশ্ শাযীমায়ারেফুস্ সুনানমেরকাতলুময়াততালীকুছ্ ছবীহ্আশয়াতুল লুময়াতমোযাহেরে হক্বমিরআতুল মানাযীহ্)
স্মরণীয় যেমূলত হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের সকলেই দান করার ক্ষেত্রে গোপনে গোপনে অনুরূপ প্রতিযোগীতা করতেন। যারমধ্যে কারোটা প্রকাশ পেয়েছেআর কারোটা প্রকাশ পায়নি।
অতএবউপরোক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ দ্বারা যেখানে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যেহযরত সাহাবা-কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ,ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশে নিজস্ব ধন-সম্পদ অকাতরে আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করেছেন এবং দান করার ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সেখানে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের লোকদের একথা বলা কি করে শুদ্ধ বা শরীয়ত সম্মত হতে পারে যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ চীজ-আসবাব বা অর্থের লোভে রাসূলের নির্দেশ অমান্য করেছেনমূলত তাদের এ বক্তব্য সম্পূর্ণই অশুদ্ধ ও শরীয়তের খেলাফযা হানতের কারণ। আর হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের প্রতি এহানতের শামিল হওয়ার কারণে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যেওহুদ যুদ্ধে হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ গিরি পথ থেকে সরে এসেযেরূপ ভুলের স্বীকার হননিতদ্রুপ ওমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মোটেও অমান্য করেননি। বরং তা ছিল হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজতিহাদ।
কারণ সীরাতের কিতাবে উল্লেখ আছেসাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামহযরত আব্দুল্লাহ্ বিন জুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আমীর করে কতিপয় হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ উনাকে নির্দেশ দিলেন, “তোমরা পর্বতের এ গিরি পথে অবস্থান করবে এবং তীর নিক্ষেপ করতে থাকবেযেন পিছন দিক থেকে শত্রুরা আক্রমণ করতে বা ময়দানে ঢুকতে না পারে।” হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যথাযথভাবেই সে দায়িত্ব ও নির্দেশ পালন করেছেন। যখন যুদ্ধে কাফেররা পরাজিত হয়ে ময়দান ছেড়ে পলায়ন করেতখন গিরি পথে” অবস্থানকারী কিছু ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে ধারণা করে গিরিপথ ছেড়ে ময়দানে চলে আসেন। আর হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন যুবায়ের রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুসহ কিছু সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ধারণা করলেনপরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমাদেরকে এখানে অবস্থান করা উচিত। আর যাঁরা সেখান থেকে চলে এসেছেনতাঁদের ধারণা ছিল যেনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ হয়তো যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্তই
বস্তুতঃ এটা ছিলহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ইজতিহাদ। আর এ ব্যাপারে হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের উভয়ের (যাঁরা গিরিপথ থেকে সরেননি এবং যাঁরা সরেছেন) ইজতিহাদই গ্রহণযোগ্য ও শুদ্ধ ছিল।
উল্লেখ্যপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের এরূপ ইজতিহাদের বহু প্রমাণ রয়েছে। যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে যেসাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের একটি দল বণী কোরায়জায় প্রেরণ করেনতখন উনাদের প্রতি এ নির্দেশ প্রদান করেন যে,
لا يصلين احدكم العصر الا فى بنى قريظة.
অর্থ :তোমাদের কেউ বণী কুরায়জায় না পৌঁছা পর্যন্ত আছর নামা পড়বেনা।” (বোখারীমুসলিমফতহুল বারীওমদাতুল ক্বারীতাইসীরুল ক্বারীএরশাদুস্ সারীশরহে নববীআস্ সুন্নাহ্ ওয়া মাকানাতুহা ফী তাশরীঈল ইসলামী)
কিন্তু কিছু সংখ্যক ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বণী কুরায়জায় যাত্রাকালে আছর নামাজের সময় হলেপথিমধ্যেই আছর নামা আদায় করে ফেললেন। উনাদের ধারণা ছিলবণী কুরায়জায় গিয়ে নামা আদায় করলেনামাজের সময় থাকবেনা। আর কিছু সংখ্যক ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মনে করলেনযেহেতু নূরেমুজাসসামহাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবণী কুরায়জায় গিয়ে নামা পড়ার নির্দেশ দিয়েছেনসেহেতু সেখানে নিয়েই নামাজ আদায় করতে হবেতাই উনারা সেখানে গিয়েই মাগরীবের সময় আছর নামা আদায় করলেন। উনারা সেখান থেকে ফিরে এসেব্যাপারটি নূরেমুজাসসামহাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানালেন। জবাবে সাইয়্যিদুল মুরসালীনইমামুল মুরসালীননূরেমুজাসসামহাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “হে ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এ ব্যাপারে তোমাদের উভয় দলের ইজতিহাদ বা আমলই সঠিক হয়েছে।
অতএবএখানে যেরূপ হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণনূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ অমান্য বা ভুল করেননি বরং সঠিক ও নির্ভূল ইজতিহাদ করেছেন। তদ্রুপ ওহুদ যুদ্ধেও উনারা নির্দেশ অমান্য করেননি বরং সঠিক ও নির্ভূল ইজতিহাদ করেছেন।
মূলত হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ইজতিহাদইখতিলাফ বা মতবিরোধ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণেইপ্রচলিত তাবলীগ জামায়অতের লোকেরা হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ সম্পর্কে এরূপ আপত্তিমূলক কথা বলে থাকে।
স্মরণীয় যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণের ইজতিহাদ ও উনাদের পরস্পরের মধ্যে ইখতিলাফ বা মতবিরোধ প্রত্যেকটিই বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য এবং খাছ রহ্মত স্বরূপ। যার প্রমাণ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। যেমন পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যেমহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন,
قل كل يعمل على شاكلته فربكم اعلم بمن هو اهدى سبيلا.
অর্থ : আপনি বলুনপ্রত্যেকেই উনার অভ্যাস অনুযায়ী কাজ করেতবে তোমাদের রব ভালো জানেনকে অধিক সুপথে।” (পবিত্র সূরা বণী ইস্রাঈল শরীফপবিত্র আয়াত শরীফ ৮৪)
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার পরিপ্রেক্ষিতে মুফাসসিরীনে কিরামগণ বলেনপথ দুটি। একটি হলো- সুপথঅন্যটি হলো- অধিক সুপথ।
কাজেই হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের মধ্যে ইজতিহাদের ক্ষেত্রে পরস্পর যে ইখতিলাফ দেখা দিয়েছেতার মধ্যে উভয়েই হক্বের উপর ছিলেন। তবে কেউ অধিক হক্বের উপরআর কেউ হক্বের উপরকেউই নাহক্বের উপর ছিলেন না। যার প্রমাণ পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যেও রয়েছে।
যেমন পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে,
عن عمربن الخطاب رضى الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم سألت ربى عن اختلاف اصحابى من بعدى فاوحى الى يا محمد ان اصحابك عندى بمنزلة النجوم بعضها اقوى من بعض لكل نور فمن اخذ بشئ مماهم عليه من اختلافهم فهو عندى على هدى فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اصحابى كالنجوم با يهم اقتديتم اهتديتم.
অর্থ : হযরত মর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার থেকে বর্ণিত- নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রশাদ মুবরক করেন, “আমি আমার বিছাল শরীফ উনার পরে আমার ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ইখতিলাফ (মতবিরোধ) সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনাকে জিজ্ঞাসা করেছি।” মহান আল্লাহ পাক আমাকে বললেন, “হে হাবীব নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!নিশ্চয় আপনারহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ আমার নিকট তারকা সমতুল্য। কারো আলোর চেয়ে কারো আলো বেশীতবে প্রত্যেকেরই আলো রয়েছে। সুতরাং উনাদের যেকোন ইখতিলাফকে যারা আঁকড়িয়ে ধরবেতারা হিদায়েত পেয়ে যাবে। কারণ উনাদের ইখতিলাফগুলো আমার নিকট হিদায়েত হিসাবে গণ্য।” আর তাই নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমার ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ (প্রত্যেকেই) তারকা সাদৃশ্যউনাদের যে কেউকে তোমরা অনুসরণ করবেহিদায়েত প্রাপ্ত হবে।” (রজীনমেশকাতমেরকাতলুময়াতআশয়্যাতুল লুময়াতশরহুত্ ত্বীবীতালীকুছ্ ছবীহ্মোযাহেরে হক্বমিরআতুল মানাজীহ্)
তাই বুঝা গেল যেহযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ উনাদের ইখতিলাফও হিদায়েতের কারণ ছিল এবং মহান আল্লাহ পাক-উনার নিকটও তা গ্রহণযোগ্য ছিল।
অতএব প্রমাণিত হলো যেওহুদ যুদ্ধে হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ ভুলের স্বীকার হয়ে নূরে মুজাসসামহাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ বিন্দুমাত্রও অমান্য করেননি বরং নিখুঁত ও বিশুদ্ধ ইজতিহাদ করেছেন। আর ইজতিহাদের ক্ষেত্রে উভয়দলই ছিলেন হক্বের উপর। কেউ অধিক হক্বের উপরআর কেউ হক্বের উপর।
সুতরাং ওহুদ যুদ্ধে হযরত ছাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের ক্ষেত্রে গিরিপথ ত্যাগ করার ব্যাপারে প্রচলিত তাবলীগ জামায়াতের হযরতজীর বক্তব্য- হযরত ছাহাবায়ে কিরামরদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগণ ভুল-ত্রুটি করেছেন। তাদের এরূপ আক্বীদাসমূহ সম্পূর্ণ মনগড়াবিভ্রান্তিকর,জেহালতপূর্ণ ও কুফরীমূলক। যা থেকে পরহেয হওয়া ফর
(অসমাপ্ত)

0 Comments: